মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায়
জসীম উদ্দীনের আত্মজীবনী জীবনকথা যখন ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছিল চিত্রালী পত্রিকায়, জনৈক পাঠক চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, ‘জসীম উদ্দীনের জীবনকথা পড়িতেছি না মায়ের হাতে পিঠা খাইতেছি।’ ১৯৬৪-তে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত বইটির পান্ডুলিপি-নামটি কিন্তু ছিল ‘একটি গ্রাম্য বালকের আত্মজীবনী’। ‘বিভিন্ন সময়ে আত্মজীবন কথা ও তাঁর সমসাময়িকদেও যে-অমূল্য রেখাচিত্র এঁকে গেছেন তিনি, তার-ই একত্রিত ও অভিনন্দনীয় সংকলন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, পুলক চন্দ যার সম্পাদনা করেছেন। সংগত কারণেই বইটির নাম জসীম উদ্দীন 888sport sign up bonusকথাসমগ্র। এতে রয়েছে মোট পাঁচটি 888sport sign up bonusকথাকেন্দ্রিক গ্রন্থ – জীবনকথা, যাঁদের দেখেছি, ঠাকুরবাড়ির আঙ্গিনায়, 888sport sign up bonusর পট ও 888sport sign up bonusর সরণী বাহি। এছাড়া সংযোজন অংশে আছে আরো বেশকিছু লেখা, মোট চারটি, যার মধ্যে চতুর্থটি আবার কবিপত্নীর 888sport sign up bonusচারণ। ৮৪৮ পৃষ্ঠার গ্রন্থ। নবীনচন্দ্র সেনের আমার জীবন বাংলাভাষায় লেখা সর্ববৃহৎ আত্মজীবনী। সম্ভবত আয়তনের দিক থেকে এই বইটিকেই এর পরে গণ্য করতে হবে, যদিও পরিমল গোস্বামীর এজাতীয় লেখার সংকলনটি জসীম উদ্দীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াবে।
জসীম উদ্দীন ‘পল্লিকবি’। কে বা কারা এরকম আখ্যা দিয়েছেন তাঁকে শনাক্তকরণ জরুরি।
জসীম উদ্দীনকে ‘পল্লিকবি’ বলা যেতেই পারে, যিনি তাঁর এক 888sport liveে লিখেছেন, পাঠকের পক্ষে অবশ্য পাঠ্যবই হওয়া উচিত বিদ্যাপতি, কালিদাস, রবীন্দ্রনাথ। উচিত নুট হামসুন ও রুমি পড়া, হেমিংওয়ে আর হাফেজ, গোর্কি ও ভিক্টর হুগো, পুঁথি888sport live football এবং সহস্র এক আরব্য রজনী। এই পল্লিকবি পৃথিবীর একটি বৃহৎ অংশ 888sport slot game করেছেন, দেশ888sport slot gameের কাহিনি নিয়েও একাধিক গ্রন্থ আছে তাঁর। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯২৯-এ যখন তাঁর নক্সী কাঁথার মাঠ বেরোয়, ইউরোপের 888sport live footballভুবনে তখন ‘expressionism’ জুড়িয়ে ঠান্ডা হওয়ার মুখে। তখন নিভৃত বাংলায় বসে অ্যারিস্টটলের সংজ্ঞায় এক ‘Complex Tragedy’ লিখলেন তিনি, শেক্সপিয়রের রোমিও-জুলিয়েট পাঠের অভিভব নিয়ে এলো যে-কাব্য। এ-গ্রন্থপাঠে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেছেন মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়কে লেখা তাঁর চিঠিতে, ‘প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে।’ এ-বইয়ের বিস্তৃত সমালোচনা লিখবেন রবীন্দ্রনাথ, এ-কথাও বলেছিলেন জসীম উদ্দীনকে, আর তাঁকে আহবান করেছিলেন শান্তিনিকেতনে। এই পল্লিকবি কি না সে-সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়ছেন।
তাঁর 888sport sign up bonusকথায় রবীন্দ্রনাথ-অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গতার কথা আছে, আছে মুসলমান সমাজে মধ্যবিত্ত মানুষজনের কথা, তেমনি প্রান্তিক মানুষের কথাও আছে। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বিধৃত তাঁর এ-সমস্ত চরিত্রচিত্রণ ইতিহাসের সমান্তরাল পাঠ হিসেবে গ্রাহ্য হবে। জসীম উদ্দীনের শিকড় গ্রামে যেহেতু, গ্রামীণ মানুষের দৃষ্টির সূক্ষ্মতা ও অনুপুঙ্খতা অনুধ্যান, তাই তাঁর লেখায় প্রতিফলিত, ঠিক যেমন গ্রামের আবহে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্মিতি বলে তাঁর লেখাতেও ডিটেলিং, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে স্বভাব ও কৌতূহলের তারতম্য, গ্রামীণ পুজো-পার্বণ, ব্রতকথা, ছড়া ও হাজারো অনুষঙ্গ এসে অনায়াসে রচনার চালচিত্রে স্থান পায়।
একটি উদাহরণ দেওয়া যাক তাঁর 888sport sign up bonusর পট গ্রন্থ থেকে। রচনাটির শিরোনাম ‘আইজদ্দীর বউ’। আগের রচনাটি ছিল প্রথিতযশা সংগীত888sport live chatী আববাসউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাঁর 888sport sign up bonusমেদুরতার বিবরণ। প্রসঙ্গত, আববাসউদ্দীনের আত্মজীবনীতেও রয়েছে এর পরিপূরকতা, জসীম উদ্দীন নিয়ে যেখানে তিনি উদ্ভাসিত ও অনর্গল।
‘আইজদ্দীর বউ’ রচনাটির নিবিড় পাঠ নিতে গেলে দেখব, পঞ্চাশের মন্বন্তরে মৃত্যু-আকীর্ণ হাজার হাজার গ্রাম, চরভদ্রাসন তারই একটি। গান শোনার আকুতি নিয়ে লেখক প্রায়শ যান সেখানে, বিশেষ করে যে-মুর্শিদা গান তাঁর প্রিয়, এ-গান নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থও আছে তাঁর, 888sport appর বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত। এ-লেখায় আইজদ্দী এবং তার স্ত্রীর 888sport sign up bonusচারণ live chat 888sportের কোলাজরীতিধর্মী। এই দম্পতিকে লেখক এঁকেছেন বিশ শতকের চারের দশকের প্রেক্ষাপটে, মেদিনীপুরে বন্যা ও একই সঙ্গে বিয়াল্লিশের আন্দোলনে মাতঙ্গিনীর শহিদ হওয়া, বাংলায় দুর্ভিক্ষ এবং তাতে পঞ্চাশ লাখ মানুষের মৃত্যু, ’৪৬-এর ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গার মধ্য দিয়ে।
একটিমাত্র ঘরসংবলিত কুঁড়েঘরের মালিক আইজদ্দী। পূর্ব বাংলার ভূমিহীন কৃষক, যার দৈনিক আয় পাঁচ-ছ আনা (আজকের মুদ্রায় চল্লিশ পয়সা), তাকে, তার পরিবারকে পড়তে হবে দুর্ভিক্ষের কবলে, যখন চালের মণ হবে, ওই লেখাতেই পাচ্ছি, আশি টাকা। সেই আইজদ্দী নিয়ে যায় লেখককে তার বাড়ি, আপ্যায়ন করে।
‘ভূমিহীন কৃষক’ কথাটির মধ্যে সাধারণ অভিজ্ঞা রয়েছে হৃতসর্বস্বতার, কিন্তু কোনো বার্তা নেই। জসীম উদ্দীন বার্তা দিলেন কিছু। ঘরে নিয়ে গিয়ে ছেঁড়া লুঙ্গি পেতে বসতে দিলো আইজদ্দী লেখককে। এত যার অভাব, ছেঁড়া চাটাই পর্যন্ত জোটে না, জসীম উদ্দীনকে তার আপ্যায়ন কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, নিজের অভাব দেখিয়ে সহানুভূতি আদায়ের ফিকির? না, না এবং না। হাজার হাজার বছর ধরে বয়ে চলা গ্রামীণ সংস্কৃতি, যাকে সমাজতাত্ত্বিকরা ‘Silent Culture’ আখ্যা দিয়েছেন, সেই নীরব ও অন্তস্রোতা ঐতিহ্যেরই সমরেখ আইজদ্দীর মেহমানদারি। দারিদ্র্য বস্ত্তত আইজদ্দীদের মহান হতে বাধা দিতে পারে না।
আইজদ্দীর দারিদ্র্য আরো খানিক উন্মোচিত হলো তার স্ত্রী যখন বলে, ওদের সন্তান নিয়ে একটি তথ্যপ্রদানের সূত্রে, ‘চেনি তো জনমেও পোলা দেখল না।’ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের সমূহ চিত্রটি যেন ফুটে ওঠে এই একটি সংলাপে। চিনি তো জোটেনি অপু-দুর্গারও, নইলে দুর্গার মুখে শুনব কেন ‘মিষ্টি যেন গুড়?’ উপনিবেশবাদ হিন্দু-মুসলমানে ভেদ রাখেনি কোনো।
অতএব বাড়িতে শাকসবজির চাষ, আর সেই ফসল উদরপূর্তির অন্যতম অবলম্বন। এই দুঃসময়তা কিন্তু জসীম উদ্দীনকে আইজদ্দীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনে বাধা দেয়নি। তাই লেখকের বোন নয় কেবল, ‘বুবুজান’ সে।
আজানুলম্বিত দারিদ্র্য, তবু সংগীত-অন্তপ্রাণ আইজদ্দী, দেখে জসীম উদ্দীনের বিস্ময় : ‘জীবনে যাহারা কিছুই পাইল না, পৃথিবীর সুন্দর ভোগের পাত্রখানি যাহাদের কাছে চিরকালের মতোই রুদ্ধ, এই বৈরাগ্যের গান তাহাদিগকে কে শিখাইল?… যুগে যুগে ভাঙ্গা ঘরে থাকিয়া খুদের জাউ খাইয়া ওরা সুখী হইয়া আছে?’
গা-ভরা রূপ আইজদ্দীবনিতার। সেই রূপ নিয়ে সে ফরিদপুর জেলা থেকে ষোলো মাইল দূরের চরভদ্রাসন, সেখানকার আবদুল ফকিরের ভদ্রাসনে মুর্শিদা গান, শুনছে সারিঙ্গা যন্ত্রযোগে। জসীম উদ্দীন মুর্শিদা গান গ্রন্থে জানিয়েছেন, বিলম্বিত লয়ের মুর্শিদা গানের সুর সারিঙ্গা যেমন অনুকরণ তৈরি করতে পারে, এরূপ আর কোনো বাদ্যযন্ত্রই পারে না। গানের কথা আর আইজদ্দীর বউয়ের রূপ যেন সমলয়ে বইছে, ‘সিঙ্গুরের বিন্দু বিন্দু কাঁজলের ফোঁটা। কালিয়া মেঘের আড়ে চাঁদে দিল ছটারে, আমি কি রূপ হেরিলাম রে।’
এই রূপ গোর নিল দুর্ভিক্ষের অসহ বিধুরতায়। কিন্তু তার আগে লেখক তাঁর বুবুজানের বাড়ি অতিথি হয়ে যাওয়ার আখ্যানটি জেনে নেব আমরা।
একবার আইজদ্দীর বাড়ি গিয়ে লেখক দেখেন, তাঁর বুবুজান পিত্রালয়ে। লেখকের ভগ্নি-আত্মতা তাঁকে আইজদ্দীর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ধর্মের বোনকে দেখে আসার প্ররোচিত করায় নৌকাযোগে গেলেন সেখানে। পথে গাছে গাছে কান্দালি ফুলের শোভা, আমবাগান থেকে পাখির ডাক, আর অন্তিমে তিনি বোনের বাড়ি পৌঁছান যখনও ‘ঘরের ভিতর হইতে চিড়া কোটার গন্ধ আসিতেছে।’ রচনার অনুপুঙ্খতা জসীম উদ্দীনের বৈশিষ্ট্য। live chat 888sportে যেন ক্লোজ শট, এরকমই লেখকের পরবর্তী বর্ণনা, ‘ওরা দুই বোন ঢেঁকি পারাইতেছে, মা আলাইতেছে আর একটি মেয়ে চিড়ার ধানগুলিকে কাটখোলায় আধা-ভাসা করিয়া দিতেছে।’ এরপর সদ্যভাজা চিড়ে দিয়ে আতিথ্য করা হলো 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জসীম উদ্দীনকে। এসব দৃশ্য সহসা পালটে যায় পঞ্চাশের মন্বন্তরে। জয়নুল আবেদিন-সোমনাথ হোর, চিত্তপ্রসাদের ছবিতে, কিংবা সুকান্ত ভট্টাচার্য-সম্পাদিত আকাল সংকলনে আর এ-সময়কার গল্প-888sport alternative linkে, বুলবুল চৌধুরীর ‘যেন ভুলে না যাই’ নৃত্যনাট্যে। কিন্তু এসবই তো বাইরে থেকে দেখা। জসীম উদ্দীনের বুবুজান যে তিলে তিলে মারা গেছে মন্বন্তরে, এ-হলো ভেতরের দৃশ্য, বড় অন্তরঙ্গ, হৃদয়ভঙ্গকারী, হাহাকারের ঘনিষ্ঠ উত্তাপ নিয়ে আসা বিরহগাথা, মর্সিয়া! দুর্ভিক্ষের ক্রান্তিলগ্নে বোন তার বড় ভাইকে যে ‘সুহি দুহি আমাগো খবর লইবেন’ বলেছিলেন, সেই বিবেচনাবোধ থেকে লেখক দশটি টাকা পাঠিয়েছিলেন এরোন ফকিরের ঠিকানায়। এরোন পাঁচ টাকা রেখে বাকি পাঁচ টাকা যেন আইজদ্দীকে দেয়। এই সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষে কে কাকে বাঁচাতে পারে। জসীম উদ্দীনের বেতন, এখানেই জানাচ্ছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরূপে, ১২৫ টাকা। সে-টাকা আদৌ পৌঁছায়নি এরোন-বাহিত হয়ে আইজদ্দীর কাছে, যখন সে লেখককে জানায়, ‘কবিসাব! এই দুর্দিনে কি টাকা কেউ কারে দেয়?’ হ্যাঁ, অভাবে স্বভাব নষ্ট, এ তো আপ্তবাক্য। এরপরই আইজদ্দীর আর্তি, ‘ভাইগো! আপনার বইন চিরজনমের মতন চইল্যা গ্যাছে।’ কি, দুর্ভিক্ষ একেবারে স্পর্শ করে গেল না আমাদের? এর পরেই কবি জসীম উদ্দীন দেখা দেন আমাদের, যখন আইজদ্দীর স্ত্রী, তাঁর নিজের সহোদরাপ্রতিম রূপের বন্যা নিয়ে সংসার যাপন করা বধূটি মন্বন্তরে লগ্নি হয়ে যায় তার চিড়া কুটবার 888sport sign up bonus ফেলে রেখে, তার মৃত্যুকে এভাবে উপস্থিত করেন তিনি, ‘দারুণ নিদাঘের দাহনে প্রথমেই লজ্জাবতীর কোমল লতাটি ঢলিয়া পড়ে’, যেমন – আমাদের এই বধূটি সেই লজ্জাবতীলতা।
আইজদ্দীর স্ত্রী-বিয়োগের কথা শুনে ফিরে আসছেন লেখক, জনৈক ব্যক্তি তাঁর পিছু নিল। জানাল, ‘মেয়েটি নিজের দোষেই মরিল।’ কেন? দারোগা সাহেবের কৃপাদৃষ্টি সে অবহেলা করেছে বলে। অশনিসংকেত 888sport alternative linkে বিভূতিভূষণ দেখিয়েছেন যেমন, কাপালিবৌ ছুটকি শহরে আসতে চাইলেও অনঙ্গ বউয়ের শুভেচ্ছায় পিচ্ছিল জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে সে যদুপোড়াকে নৈরাশ্যে ফেলে শহরে যাওয়া রদ করল। আইজদ্দীর বউয়ের মৃত্যু, অতএব মহান মৃত্যু, মৃতার সামনে নতজানু করে আমাদের। আইজদ্দীর স্ত্রী মূর্ত হয়ে থাকবে পাঠকের হৃদয়ে তার শির উন্নত রাখার বৈভবে।
‘আইজদ্দীর বউ’য়ের নিবিড় পাঠ নেওয়া হলো জসীম উদ্দীনের মানবপ্রীতির উৎসের পরিমাপ জানতে। অন্যত্র যেমন, এখানেও তিনি ব্যবহার করেছেন কিছু দেহাতি শব্দ, আঞ্চলিক ভাষা, মুসলমান বাঙালির কাছে অন্তরঙ্গ, জীবনযাত্রার অনিবার্য অঙ্গ হিসেবে আরবি-ফারসি শব্দের প্রয়োগ আর কিছু সুভাষিত। সে-রকমই একটি : ‘বোঝায়… স্বপ্ন দেখিয়ে মনের কথা মনে রাখে।’ রয়েছে জজ্বা লাগা (গান শুনে ecstatic হয়ে পড়া), সারিঙ্গা যন্ত্রের কথা। গ্রামীণ সংস্কৃতির অনুপুঙ্খতা বিশদ জানতে হলে জসীম উদ্দীনের লেখার সঙ্গে নিত্যসহবাস জরুরি।
888sport sign up bonusর পট গ্রন্থেই যেমন রয়েছে অখন্ড বাংলার প্রধানমন্ত্রী (মুখ্যমন্ত্রীর পরিবর্তে তখন ওই শব্দটিই প্রচলিত ছিল) শেরে বাংলা ফজলুল হকের কথা, রয়েছে লেখকের অন্তরতর বন্ধু আববাসউদ্দীনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ 888sport sign up bonusচারণ। তাছাড়া কবি গোলাম মোস্তফার কথা রয়েছে, রয়েছে বেশকিছু সাধারণ মানুষজনের কথাও।
ফজলুল হক জীবনীর সামান্য একটি ঝলক, তাঁকে নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অমলেন্দু দে বা সচ্চিদানন্দ দে বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানাতে পারেননি, ‘বৈঠকখানায় মামলাকাড়ী মক্কেলদের সঙ্গে পাওনাদার কাবুলিও বসিয়া থাকিত।’ ইচ্ছে থাকলেও কাজী নজরুল ইসলামকে সরকারি ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা তিনি করতে পারেননি। কেননা ‘তখনকার প্রধানমন্ত্রীর কাজ যে কত সীমিত ছিল তাহা কল্পনারও অতীত।’
কলকাতায় আববাসউদ্দীন, গোলাম মোস্তফার মতো লেখক একটিমাত্র ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। নিজেরাই রাঁধুনি, ফলে ‘কোনোদিন তরকারিতে বেশি নুন আবার কোনোদিন বেশি ঝাল।’ জসীম উদ্দীন বহু গান লিখেছিলেন আববাসউদ্দীনের জন্য, যে-গানগুলো রেকর্ড করে আববাসউদ্দীন তুমুল জনপ্রিয় হন। একটা আশ্চর্য তথ্য পাচ্ছি তাঁর লেখায়। প্রত্যেক শনিবার আববাসউদ্দীন তাঁর দেশ কোচবিহার যেতেন আর ফিরে আসতেন সোমবার। আটশো আটশো ষোলোশো কিলোমিটার পাড়ি প্রতি সপ্তাহে, মাত্র-ই চবিবশ ঘণ্টা কাটানোর মেয়াদে! পত্নীপ্রেম!
লেখাগুলোতে উনিশ-বিশ শতকের বাংলার অনবদ্য সমাজচিত্র উঠে আসে। মানুষ যে কত বিচিত্র, তিমিরান্তিক গ্রামেগঞ্জে হাটেমাঠেবাটে উজ্জ্বল মানবিকতার যে মরমি দীপশিখা, তার সম্মুখে নতজানু করে আমাদের। ‘বোষ্টমি ঠাকরুণ’ লেখাটিতে প্রান্তিক মানুষের বৈষ্ণব সহজিয়ানা, গান গেয়ে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে নান্দনিকতার প্রচার যেমন হিরের মতো ঝলসায়, তেমনি বোষ্টম-বোষ্টমির সুনিবিড় প্রেম, বোষ্টম মারা গেলে দূর প্রবাসে শিষ্যরা তাঁকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে বোষ্টমিকে টেলিগ্রামে জানিয়ে দিলে বোষ্টমির ছুটে আসা, পদ্মার তীর ধরে দিনের পর দিন কণ্ঠীবদলের স্বামীকে বোষ্টমির খুঁজে ফেরা এবং নলখাগড়ার বনে আটকেপড়া বোষ্টমের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া, মৃতদেহে ফুলচন্দনচর্চিত করে পাঁচুরিয়া স্টেশনের কাছে কালীবাড়ির চত্বরে সমাধিস্থ করা, সমাধি-ঘিরে ঘর গড়ে তোলা। আরো। বোষ্টমের সংসার জীবনে যে স্ত্রী ছিল, তাকে পর্যন্ত মাসে মাসে অর্থ সাহায্য করত বোষ্টমি। ভাবা যায়!
‘আহার একটি নিতান্ত গদ্যাত্মক ব্যাপার; কিন্তু এই অশিক্ষিত নমঃশূদ্র গৃহে ইহা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মতো হইয়া অপূর্ব 888sport live chatনৈপুণ্যে পরিণত হইয়াছে। থালার উপরে খই, মওয়া, নাড়ুগুলি এমন সুনিপুণ করিয়া সাজাইয়া দেওয়া হইয়াছে, তাহা যেন আমার সামনে কোনো সুদক্ষ 888sport live chatীর অাঁকা ছবির মতো মনে হইতেছিল।’ অাঁকার সেই silent culture এবং তা লক্ষ্য করছেন এক কবি, তাই ব্যর্থ হননি এই সৌন্দর্যনির্মাণে। এই কারণেই তাঁর লেখায় পাগলা কানাই, খাটুগান, চৈত্রপূজার অষ্টগান ইত্যাদি সমধিক গুরুত্ব পায়। কেননা এসবই silent culture-এর অন্তর্গত।
জসীম উদ্দীনের লেখা পড়ে জানা গেল, শরৎচন্দ্র মুগ্ধবোধ, কলাপ ব্যাকরণের পাঠ নিয়েছেন নির্ভুল বাংলা লেখার জন্য, অবনীন্দ্রনাথ খবরের কাগজ পড়তেন না, দীনেশচন্দ্র সেন ছিলেন অত্যন্ত অগোছালো, তাই প্রতিদিন কিছু না কিছু জিনিস হারাত তাঁর। লেখককে সখেদে বলেছেনও দীনেশচন্দ্র, ‘হারানো জিনিস খুঁজতে আমার যে সময় নষ্ট হয়, সেই সময় যদি আমার অপব্যয় না হত, তবে আমি যা লিখেছি তার ডবলসংখ্যক পুস্তক লিখতে পারতাম।’
তাঁর এই 888sport sign up bonusকথা দীর্ঘ আঠাশ বছর ধরে লেখা, ১৯৫১ থেকে ১৯৭৮। অতএব এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর বোধ, চিন্তাভাবনার পরিধির বহুবিধ পরিবর্তন হয়েছে, যার পরিচয় তাঁর ভাষা ব্যবহারে তাঁর ক্লান্তদর্শিতায় বিধৃত হয়ে আছে। কবি জসীম উদ্দীনের বলয় অতিক্রম করে তিনি এই সুদীর্ঘ সময়ে পরিচিত হচ্ছেন নাট্যকার, গবেষক, 888sport slot gameকাহিনিকার, এমনকি ঔপন্যাসিকরূপেও। ১৯৫১-র জগৎ ও জীবনের নিরাবিল ভাবনা খানখান হয়ে গেল ১৯৭১-এ এসে, এ-ও তো দেখতে হয়েছে তাঁকে।
গ্রামবাংলাকে একরকম দৃষ্টিতে অবলোকন করেছেন বিভূতিভূষণ, জসীম উদ্দীন অন্যভাবে। এবং তার প্রকাশভঙ্গিও আলাদা। বর্ষার বনের রূপ বর্ণনা দিচ্ছেন জসীম উদ্দীন এভাবে : ‘আষাঢ় মাসে বনের শোভা বড়ই সুন্দর রূপ ধারণ করে। এখানে-সেখানে শ্যামালতা, তৈলাকুচ লতা, আমগুরুজ লতা সবাই যুক্ত করিয়া সেই বেতবনের উপর নানারূপ সুনিপুণ কারুকার্য করিতে থাকে। এখানে-সেখানে দু-একটি হিজল গাছ রাশি রাশি রাঙা ফুল ছড়াইয়া সেই বনভূমিতে দেবকন্যাদের পায়ের অলক্তক রাগের চিহ্ন অাঁকিয়া দেয়। এ-ডালে ও-ডালে কানাকুয়া ডাকে, ঘুঘু ডাকে। দূরের ধানক্ষেত হইতে কোড়ার ডাক কানে আসে। আমি দুই চোখ মেলিয়া বনের শোভা দেখিতাম…’ (পৃ ১৮২)। আবার অন্যত্র লিখছেন, ‘রাশি রাশি হিজল ফুল মাটিতে পড়িয়া সমস্ত বনভূমিকে যেন আলতা পরাইয়া দিয়াছে। কোনো গোপন চিত্রকর যেন এই বনের মধ্যে বসিয়া পাকা তেলাকুঁচার রঙে, মাকাল ফলের রঙে আর হিজল ফুলের রঙে মিলাইয়া তার সবচাইতে সুন্দর, ছবিখানি অাঁকিয়া বসিয়া বসিয়া দেখিতেছে’ (পৃ ৪৯)। অপরূপ চিত্রকল্প! গাছে কাঁঠাল ঝুলতে দেখে তাঁর মনে হয়, বাড়ির ছোট ছেলেমেয়ে ঝুলছে যেন! আকাশের নীল আর সাগরের, এই নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ ‘আকাশের নীল আর সাগরের নীলে কত যে মেশামেশি কিন্তু উভয়ের রঙের সঙ্গে উভয়ের কত পার্থক্য। (পৃ ৫৬)। এই যে প্রকৃতিকে জান্তব প্রত্যক্ষ করা, প্রকৃতির মধ্যে সপ্রাণতা আরোপ, অলংকারশাস্ত্রে যাকে বলে সমাসোক্তি, তার নিদর্শন আকছার জসীম উদ্দীনের কী পদ্য কী গদ্যে, মাধুর্য নিয়ে আসে। আর একটি মাত্র উদাহরণ দিয়ে প্রসঙ্গটি শেষ করব। 888sport sign up bonusর পট গ্রন্থের অন্যতম রচনা ‘কবি গোলাম মোস্তাফা’। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বিশ্বনবী। একবার গোলাম মোস্তফা জসীম উদ্দীনের আহবানে ফরিদপুরে এসেছেন ফতেহা দোহাজ দাহাম অর্থাৎ হযরত মুহম্মদের জন্মদিন পালন উপলক্ষে। ফেরার পথে রাজাপুর যাবেন। জসীম উদ্দীনও সে নৌকোযাত্রায় তাঁর সঙ্গী। নৌপথের কী সুন্দর মনোহারি বর্ণনা, আর সেই মরমি সমাসোক্তি লক্ষ করা যাক, ‘গ্রামের অাঁকাবাঁকা নাওদাঁড়া দিয়ে আমাদের নৌকা ছুটল। বর্ষা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। পানির ওপরে লতা-বাহু জড়িয়ে কলমি ফুলগুলো হেসে কুটি কুটি।… খেজুর গাছের শাখা হতে বিলম্বিত লয়ে ঘুঘুর ডাকে দিগন্ত দুলে উঠছে’ (পৃ ৪৯৮)। মায়ের কোলে বসে পিঠে খাওয়ার উপমা তাহলে মিথ্যে নয়।
প্রকৃতি না মানুষ, অন্তিমে কাকে তিনি প্রাধান্য দিতে চান, এ-প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে ধন্দে পড়তে হয়। আত্মজীবনীকার কম নেই বাংলায়। এর মধ্যে জসীম উদ্দীন অনন্য একটিই কারণে, মানুষের হৃৎস্পন্দন, শহর ও গ্রাম, সাধারণ ও ব্যতিক্রমী, দেহাতি ও স্বনামধন্য, হিন্দু ও মুসলমান নির্বিশেষে মানুষ, হ্যাঁ, প্রকৃতির চেয়েও ব্যাপ্ত বিন্যাসে তিনি ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’, চন্ডীদাসের এই কবি বাক্যটিকেই শিরোধার্য করে গেছেন। সে-মানুষ রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, ফজলুল হক, আববাসউদ্দীনই হোক অথবা পাষাণ মন্ডল আর আনন্দের মতো নিতান্তই সাধারণ কেউ।
সাধারণ, নাকি প্রকৃত বিচারে এরাও অসাধারণ, দেবতার দীপ হাতে এসেছিলেন? ধরা যাক গ্রাম্য গান সংগ্রহ করতে জসীম উদ্দীন কিশোরগঞ্জে গিয়ে যেবার এক বৃদ্ধের বাড়িতে অতিথি হলেন। বৃদ্ধ কে? জসীম উদ্দীন জানালেন, ‘দৌড়ের নৌকা চলার তালে তালে নাচিয়া বৃদ্ধ রসঙ্গ রাজার কাহিনি গানে গানে বর্ণনা করিতেন।’ প্রচুর মেডেল পেয়েছেন সোনা, রুপোর, পরে দুঃখের দিন সেসব বিক্রি করে দিতে হয়েছে অন্নসংস্থানের জন্য। সেই বৃদ্ধের কাছ থেকে গান শুনে লিখে নিচ্ছেন জসীম উদ্দীন। সে-বাড়ির অতিথি তিনি, দারিদ্র্যপীড়িত ঘরে আহার থেকে বঞ্চিত হন না তাই বলে। আতিথেয়তাপর্ব কিন্তু শুরু হলো বৃদ্ধের স্ত্রী যখন নিজের অাঁচল দিয়ে জসীম উদ্দীনের ঘাম মুছিয়ে দিতেন বা পাখা দিয়ে তাঁকে বাতাস করতেন তার মধ্য দিয়ে।
এর পরের ঘটনা পড়লে পাঠক শিহরিত হবেন। পুরোটাই লেখকের বয়ানে পেশ করা যাক। ‘সেদিন ঘরের পিছনের দরজা দিয়া তিনি (অর্থাৎ বৃদ্ধের স্ত্রী, যিনি দুপুরে নিরুদ্দেশ হতেন রোজ) বাহিরে যাইতে ছিলেন। কি একটা কাজে আমি হঠাৎ সেখানে যাইয়া দেখি, তাঁহার কাঁধে ভিক্ষার ঝোলা। আমাকে দেখিয়া তাড়াতাড়ি ভিক্ষার ঝোলা অাঁচলের মধ্যে ঢাকিয়া ফেলিলেন। তারপর কতই যেন লজ্জার হাত হইতে রক্ষা পাইবার জন্য হন্ হন্ করিয়া চলিয়া গেলেন।’ পাঠক, বোঝা গেল কিছু? কেন এই বৃদ্ধা সম্পর্কে ‘তাহার’ না লিখে ‘তাঁহার’ লিখলেন জসীম উদ্দীন, হদিস মিলল তার?
গান সংগ্রহ করার কাজে নিয়োজিত হয়ে (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়োগ দেয়) এমন সব বাড়িতে অতিথি হতে হয়েছে জসীম উদ্দীনকে, যেখানে হয়তো ছাগলের আস্তানা শয্যার পাশে বা অতিথিকে আহার্য হিসেবে ভাত আর সঙ্গে একটু ডাঁটার তরকারি ছাড়া কিছুই দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না গৃহকর্তার, তবু ওই নিতান্ত দারিদ্রে্যর মধ্যেও অতিথিকে বিমুখ হতে দেননি। এমন কত মানুষের পরিচয় এ-গ্রন্থে।
যেমন তাঁর ‘দুই মা’র কাহিনি। মোমেনশাহীতে গানের খোঁজে জসীম উদ্দীন। এবার যে-বাড়িতে আশ্রয় নিলেন, ‘মা’ বলে সম্বোধন করলেন তার কর্ত্রীকে। রাতে মা আহার করিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন লেখকের। বলেন, ‘মা ডাক ডাকিয়া আমাকে মায়ার বাঁধনে বাঁধিয়া গেলে। আবার যখন এই পথ দিয়া আসিবে, আমার সঙ্গে দেখা না করিয়া যাইও না।’ (লেখক ২২-২৩, ‘মা’ ২৬ বছরের) এগিয়ে দিতে এসে খানিক পর আমগাছের তলায় দাঁড়িয়ে। আগের রাতে তিন-চারজন গ্রাম্য লোক এসে পড়ায় ‘মা তাড়াতাড়ি তাঁর রান্নাবান্না ফেলিয়া তাহাদিগকে আড়ালে লইয়া গিয়া কানে কানে কি যেন বলিলেন।’ লেখক এরপর যখন সাত-আট মাইলের পর মোজাফফর গায়েনের বাড়ি এসে তাঁর সেই মায়ের অতিথিপরায়ণতার কথা বললেন, গায়েন জানালেন, ‘ওই মেয়েটি তো বেশ্যা।’ এ-লেখা পড়ে গায়েনের কথার প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হয়। না, মানুষ তিনি।
এমনই মানুষ ছিলেন, মহৎ ও কীর্তনীয় মানুষ ছিলেন পাষাণ মন্ডল। ফরিদপুরে নাকি কারণে-অকারণে নমঃশূদ্র আর মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা হয়। এরকমই সামান্য অজুহাতে দাঙ্গার প্রাক-মুহূর্তে উপস্থিত জসীম উদ্দীন এবং উভয়পক্ষের আয়োজন দেখে তাঁর প্রত্যয়, ‘ভাবিতেছি, আজ আমার মরণ নিশ্চয়।’ এহেন সময়ে হিন্দু-মুসলমান দুদলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজের ধর্মসম্প্রদায়কে এমনভাবে গালাগাল দিতে লাগলেন যে, হিন্দুরা হতভম্ব ও মুসলমানরা গলে জল! এভাবে যদি দেশের যাবতীয় দাঙ্গা থামিয়ে দেওয়া যেত, তাহলে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা নাজীবের মাত্র বাইশ বছরের জীবন দাঙ্গার অভিশাপে শেষ হয়ে যেত না। ১৯৪২-এ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বন্দে মাতরম্’ গানকে উপলক্ষ করে ছাত্রদের মধ্যে বচসা, মারামারি এবং তা থামাতে গিয়ে প্রাণ দিতে হলো নাজীবের। আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় নাজীবকে। ‘কেহ একটি ফুল লইয়া আসে নাই, একটি লোবান জ্বালাইয়া আনে নাই’ (পৃ ৪৯৭)। প্রসঙ্গত, জসীম উদ্দীন তাঁর জীবনকথা বইটি উৎসর্গ করেছিলেন ১৯৬৪-র দাঙ্গায় 888sport appতে হিন্দুদের বাঁচাতে গিয়ে আমির হোসেন চেŠধুরী, জিন্নাত আলী মাস্টারদের, যাঁরা সে-সময়ে শহিদ হন।
মানুষের মহত্ত্বই নয় কেবল, মানুষের ক্রূর স্বভাব, নীচতা-অজ্ঞতা-কুসংস্কারাচ্ছন্নতাও দৃষ্টি এড়ায়নি তাঁর। ধর্মে মুসলমান হয়েও ইসলামের গোঁড়ামিকে আঘাত করতে ছাড়েননি যেমন, তেমনি ডা. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষের সাহচর্যে এসে (ইনি ‘রাষ্ট্রগুরু’ সুরেন্দ্রনাথ নন) তিনি তাঁর প্রতি 888sport apk download apk latest version নিবেদন করার মুহূর্তে মুসলমানত্বের পরিচয় উপেক্ষা করে লেখেন, ‘আমি প্রতিমায় বিশ্বাস করি না। তবু কেহ যদি আজ ডাক্তারবাবুর প্রতিমা গড়িয়া কোথাও পূজা করে, আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ পূজাঞ্জলি সেইখানে আমি নিবেদন করিব’ (পৃ ১৮৯)।
ডা. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে জসীম উদদীনের বড় ভাই, কারণে-অকারণে ছোট ভাইয়ের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার তাঁর জীবনকে কৈশোরে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। ভ্রামণিক অবস্থায় যেমন আতিথ্য পেয়েছেন, উপেক্ষা-অবহেলাও পেয়েছেন। তারই মর্মন্তুদ ইতিবৃত্ত ধরা আছে শান্তিনিকেতন 888sport slot gameপর্বের বর্ণনায়। সেখানে দিনেন্দ্রনাথ, প্রভাতকুমার, শান্তিদেব ঘোষ, সুরেন্দ্রনাথ কর, অমিতা সেন, ক্ষিতিমোহন সেন, জগদানন্দ রায় প্রমুখের সান্নিধ্যে সুখবিহার চলছে তাঁর। ১৯৩০-এর ঘটনা, আশ্রমগুরু রবীন্দ্রনাথ সে-সময়ে ইউরোপ-আমেরিকা সফরে বলে তাঁর সঙ্গে জসীম উদ্দীনের দেখা হয়নি সেবার। অন্তরঙ্গ বন্ধু নিশিকান্তের সঙ্গে সে-সময়ে তিনি ‘ঘরের কথা, পরের কথা, হাটের কথা, ঘাটের কথা, সমস্ত কথা মিলাইয়া কথার সরিৎসাগর’ জমাচ্ছেন। নিশিকান্ত তাঁকে এখানে পড়াতে প্রলুব্ধ করে যান, এখন সময় হিন্দু মহাসভায় এক বক্তা ম্যাজিক লণ্ঠন-সহযোগে ছবি দেখান। তাতে দেখা যায়, ‘একটি মেয়েকে টুকরো টুকরো করিয়া কাটিয়া ছালায় ভরিয়া মুসলমান গুন্ডারা নদীতে ফেলিয়া দিতে যাইতেছে’ (পৃ ২৮৯)। শান্তিনিকেতনের শিক্ষক ও ছাত্রদের সামনেই প্রদর্শিত হচ্ছিল এসব অথচ প্রতিবাদ আসেনি এমন অলীক উপস্থাপনার। বরং পরদিন থেকে তাঁদের সঙ্গে জসীম উদ্দীনের সম্পর্ক কেমন হয়ে উঠল। এজন্য একদিন প্রভাতকুমার সরাসরি জসীম উদ্দীনকে বলতে বাধ্য হলেন, ‘জসীম! তোমার বিরুদ্ধে এখানে ভীষণ আলোচনা চলছে। এখানকার কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা তুমি এখান থেকে চলে যাও।’ জসীম উদ্দীন কিছুতেই যুক্তি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্বিষ্ট বুধজনদের বোঝাতে পারেননি, এসবের পেছনে আছে সাম্প্রদায়িকতার মারণ-বীজ, সাধারণ সমাজ-বাস্তবতা এ-কথা বলে না। তবু শান্তিনিকেতন ছাড়তে হয় তাঁকে। রবীন্দ্রনাথের যে-স্বচ্ছতা হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে, বোঝা গেল, তা থেকে আশ্রমের শিক্ষকদের মানসিকতা বিষম মেরুতে। বিবেকানন্দের মৃত্যুর পরপরই তো দেখি, নিবেদিতাকে বেলুড় মঠ থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল; গুরুভ্রাতাদের গ্রহিষ্ণুতার অভাব!
চরিত্রগতভাবে বিচার করলে এই বৃহদাকার গ্রন্থটি (একক গ্রন্থ না বলে গ্রন্থ সমবায় বলাটাই যুক্তিযুক্ত) কখনো আত্মজীবনী, কখনো 888sport sign up bonusকথা, কখনো আবার ডায়রির বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিতকরণযোগ্য। আত্মজীবনী আর 888sport sign up bonusকথার মধ্যে পার্থক্য সুনির্দিষ্ট, যদিও ব্যাপক অর্থে দুটিকেই আত্মজীবনী আখ্যা দেওয়া হয়।
জসীম উদ্দীনের 888sport sign up bonusর পট বা 888sport sign up bonusর সরণী বাহি সেই পর্যায়ের রচনা। এই 888sport sign up bonusকথারই প্রকরণভেদ আত্মজীবনীমূলক গল্প-888sport alternative linkে লভ্য। জীবনকথা ছাড়া জসীম উদ্দীনের অন্য লেখাগুলোও তাই কোথাও কোথাও তথ্যর পাশাপাশি তিনি ঘটনার বিশ্লেষণের দিকে গেছেন, যা কিনা সন্দর্ভের এখতিয়ারভুক্ত। যেমন 888sport sign up bonusর পট-এর অন্তর্গত ‘আববাসউদ্দীন’। দীর্ঘ এই রচনাটিতে যেমন 888sport sign up bonusচারণ রয়েছে, ঠিক তেমনি রচনার স্থানে স্থানে পল্লিসংগীতের নানা তত্ত্বের কথাও এসে পড়েছে। এ-লেখাটিতে ‘কানুবিনে গীত নাই’য়ের চমৎকার বিশ্লেষণ আছে, যা কোনো 888sport liveের বিষয় হতে পারে। তাই তাঁর রচনাসমূহকে বিমিশ্র আঙ্গিকের বলতে হয়।
এমনকি ডায়েরির রসাস্বাদনও সম্ভব। তিনি ঠাকুরবাড়িতে ভাড়া ছিলেন কিছুকাল, দিনের পর দিন রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথের সঙ্গধন্য, প্রায় সাল-তারিখ মিলিয়ে লিখেছেন তিনি ঠাকুরবাড়ির আঙিনায় গ্রন্থে।
এ-লেখার মধ্যে জসীম উদ্দীন বুনে দিয়েছেন কতই না নিজের প্রিয় শব্দ, প্রিয় বোধ, প্রিয় ভালোলাগা। নদীতে স্নান করতে আসা বউ-ঝিদের শাড়ির রং-বাহারের বর্ণনা, ‘কত রঙের শাড়ি-ই না পরিয়া আসে বউরা সমস্ত নদীতটে যেন আকাশের খন্ড খন্ড মেঘেরা আসিয়া ভিড় করিয়াছে।’ আবার অন্যত্র ‘রাশি রাশি হিজল ফুল মাটিতে পড়িয়া সমস্ত বনভূমিকে যেন আলতা পরাইয়া দিয়াছে।’ আত্মজীবনী পাঠ করতে গিয়ে এসব ভাষার কারুকৃতি, বর্ণনার রূপকল্প আমাদের উপরি পাওনা হয়ে ওঠে। বাংলার কত অখ্যাত জনপদ-ই বাঙ্ময় আর প্রোজ্জ্বল হয়ে জেগে আছে তাঁর লেখনীতে। তেমনি কত যে লুপ্ত সংস্কৃতির সুলুক-সন্ধান মেলে তাঁর লেখায়। ইতিহাস, লোক-সংস্কৃতি আর সমাজতত্ত্ববিদ্যাচর্চার সূতিকাগৃহ যেন জসীম উদ্দীনের রচনাধারা। শিশুর জন্মের ছয়দিন পর ‘ছয় হাটুরে’ অনুষ্ঠান, কার্তিক পূজার রাতে মেয়েলি কণ্ঠের গান, মুসলমান মেয়েদের ওপর নদীতে স্নান করার নিষেধাজ্ঞা, বাঁশের কচি পাতা দিয়ে নতুন বউয়ের জন্য নথ গড়ানো, এমন সব তথ্যের অফুরান ভান্ডার এ-বইটি। একটি চমৎকার তথ্য পাচ্ছি এখানে, ‘আগেকার দিনে মুসলমান বধূরা মাথায় সিঁদুর দিত’ (পৃ ৫২)। আহার কাঁসার খাড়ুর কথা, তাম্বুলখানার পাত্র, প্রজাপতির-শুকতারার বাঁধন (চুলের), চাঁদপুরের দা আর কাঁচি, কেশপুরের দইয়ের প্রশস্তি। বাঘডাশা, ফেউ, ঢ্যাপ (শাপলা) ও ঢ্যাপের বীজ, কনে সাজানি শিম, কুশলী পিঠা, কানাইলাঠি, পরাঙ্গীধান, বাঁশের চিকন শলা, এই নিয়ে বাংলার প্রাণ, তা হারিয়ে গেছে অনেকটাই, তবে জসীম উদ্দীনের লেখায় তা বেঁচে থাকবে।
বিস্ময়কর এ-বইয়ের সম্পাদনা। বাংলা গ্রন্থের এহেন পরিশ্রমী, সুচারু আর মেধাবী সম্পাদনা দুর্লভ, সুদুর্লভ। একদা অজিতকুমার চক্রবর্তী যে-নিষ্ঠায় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী সম্পাদনা করেছিলেন বা পুলিনবিহারী সেন রবীন্দ্রনাথের রচনা বা এ-কালে অরুণ নাগের হুতোম প্যাঁচার নকশা সম্পাদনার মুন্শিয়ানা মনে পড়ে এ-গ্রন্থে পুলক চন্দের সম্পাদনার বৈদগ্ধ্যে আর অনুপুঙ্খতা দেখতে দেখতে। ২৬৬ পৃষ্ঠা ব্যয়িত হয়েছে টীকা রচনায়। এবং এজন্য তাঁকে কত যে গ্রন্থ ঘাঁটতে হয়েছে, ভাবলে তাঁকে সাধুবাদ দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলতে হয়।
একটু উদাহরণ দেওয়া যাক, জসীম উদ্দীন তাঁর লেখায় কুদরতউল্লাহ নিয়ে যা লিখেছেন তার টীকার রচনায় যদি কুদরতউল্লাহের লেখক-পরিচিতির বিস্তৃত খবর না জানাতেন পুলকবাবু বা জসীম উদ্দীন যে তাঁকে বাঙালীর হাসির গল্প (প্রথম খন্ড) উৎসর্গ করেছিলেন না জানাতেন, জসীম উদ্দীনের রচনার বাইরে কুদরত সম্পর্কে আর জানা হতো না আমাদের। আবার ডা. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু মহাসভায় যোগ দিয়েছিলেন বলে যে লিখেছেন জসীম উদ্দীন, যে-তথ্যের ভিত্তিহীনতা নিয়েও আলোকপাত করেছেন সম্পাদক। নাজীবের শহিদ হওয়ার বিস্তৃত তথ্যও তিনি পাঠকের গোচরে আনেন। তবে জানুয়ারি ২০১২-তে প্রকাশিত এ-গ্রন্থটিতে সম্পাদক কেন শামসুর রাহমানের পরিচিতি জানাতে গিয়ে তাঁর মৃত্যুর তারিখটি (১৭ আগস্ট, ২০০৬) উল্লেখ করলেন না বোঝা গেল না। অসাবধানতাবশতই হবে।
বিপুল নিষ্ঠায় বইটি ছেপেছে দে’জ। ‘প্রকাশকের কথা’য় জানাচ্ছেন সুধাংশু শেখর, ‘বাংলা 888sport live footballের আত্মজীবনী/ 888sport sign up bonusকথার সমৃদ্ধ সমাবেশে তাঁর 888sport sign up bonusচিত্রগুলি বিরল মর্যাদার অধিকারী।’ এই মর্যাদা আরো খানিক বেড়েছে গ্রন্থশেষে জসীম উদ্দীনের সহধর্মিণী বেগম মমতাজের অনবদ্য 888sport sign up bonusচারণ ‘আমার কবি’ যুক্ত হয়ে। সোনায় সোহাগা একেবারে!

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.