জীবনদর্শনে অমিতাভ সূর্য

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 888sport app বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন। তাঁর ফেরার প্রতীক্ষায় ছিল দেশের লাখ লাখ মানুষ। তিনি বক্তৃতামঞ্চে ওঠেন। শুরু হয় ভাষণ। একপর্যায়ে বলেন,‘আপনারা আরো জানেন যে, আমার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবরও খোঁড়া হয়েছিল। আমি মুসলমান। আমি জানি, মুসলমান মাত্র একবারই মরে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের নিকট নতি স্বীকার করব না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে আমার সহকর্মীরা আমাকে চলে যেতে অনুরোধ করেন।আমি তখন তাঁদের বলেছিলাম, 888sport appsের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বিপদের মুখে রেখে আমি যাব না। মরতে হলে আমি এখানেই মরব। বাংলা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাজউদ্দীন এবং আমার অন্য সহকর্মীরা তখন কাঁদতে শুরু করেন।’

নিজের জাতিসত্তা এবং গণমানুষের আইডেনটিটির প্রশ্নে এমনই ছিল তাঁর রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনবোধ। বিশ্বের কোনো আধুনিক রাষ্ট্রই নিজের আপন পরিচয়ের বাইরে থাকতে পারে না। একমাত্র ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে নতজানু রাষ্ট্রই আত্মপরিচয়কে শৃঙ্খলিত করে রাখতে পারে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জাতিসত্তার পরিচয়ে ছিলেন আপসহীন। পাকিস্তান সরকারের নাকের ডগায় তিনি উচ্চারণ করেছিলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান না বলে আমাদের ভূখণ্ডকে পূর্ব বাংলা বলুন। পূর্ব পাকিস্তান বলতে হলে বাঙালির গণভোটের ব্যবস্থা করুন।’ তিনি সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, দেশটির নাম রাখা হবে 888sport apps।

স্বাধীনতালাভের আগেই তিনি দেশের নাম ঠিক করেছিলেন। তিনি দেশজুড়ে দেওয়া ভাষণে অনবরত বলেছেন গণমানুষের অধিকারের কথা। দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন মানুষ হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে বাস করার মৌলিক সত্য।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ জীবনে ‘সভ্যতার সংকট’ 888sport liveে আশা করেছিলেন এই দারিদ্র্যলাঞ্ছিত দেশে এক পরিত্রাণকর্তার দেখা পাবেন, যিনি মানুষকে মানুষের চরম আশ্বাসের কথা শোনাবেন। যে-পরিপ্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ এই কথাগুলো বলেন, সেটি 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।রবীন্দ্রনাথের এই স্বপ্নের সঙ্গে আমরা বঙ্গবন্ধুর কথাই মনে করতে পারি। তিনি আমাদের যেভাবে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, মানুষ হিসেবে মানুষকে যে আশ্বাসের কথা শোনাতে চেয়েছিলেন, এদেশে এমন আর কে চেয়েছেন! দূরদর্শী রাজনৈতিক জ্ঞানের গভীরতম আলো ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সে-সময়ের পূর্ববঙ্গ নামের ভূখণ্ডে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসী বাঙালির অমিতবিক্রম যুদ্ধে অর্জিত হয়েছে 888sport apps। রচিত হয়েছিল একটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি।

ইতিহাসে তিনিই অমর, যিনি সমগ্র জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন। ইতিহাস তাঁরই পক্ষে যিনি সময়ের বিচারে নিজেকে যোগ্য বলে প্রমাণ করতে পারেন। এ-সংজ্ঞায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের সেই মহামানব, সময় যাঁকে সৃষ্টি করেনি, যিনি সময়কে নিজের করতলে নিয়ে এসেছেন। যিনি কঠিন স্বরে নিজস্ব ভঙ্গিতে উচ্চারণ করেছিলেন সর্বকালের উপযোগী এবং সব দেশের জন্য প্রযোজ্য একটি অমর পঙ্ক্তি – ‘আর দাবায়ে রাখবার পারবা না’। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণে এই কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন। বর্তমান বিশ্বের আধুনিক রাষ্ট্রসমূহের সামনে এই পঙক্তি একটি মৌলিক দর্শন। কোনো দেশই পদানত হয়ে থাকার ন্যূনতম শর্ত গ্রহণ করে না। বঙ্গবন্ধু জাতির সামনে এই অমোঘ পঙক্তি উচ্চারণ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, বাঙালির জীবনে এই ঘটনার আর কোনো দিন পুনরাবৃত্তি হবে না।

তিনিই বিশ্বের বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে সেই মানুষ যিনি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে নিজ মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে তিনিই সেই মানুষ, যিনি বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক দরবারে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাঙালির এই বড় অর্জন তাঁর রাষ্ট্রীয় দর্শনের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। 888sport apps ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের পর ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি সাধারণ পরিষদে তিনি বক্তৃতাদান করেছিলেন। বক্তৃতার শুরুতে বলেছিলেন, ‘আজ এই মহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সঙ্গে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির ভাগীদার যে, 888sport appsের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এই পরিষদের প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’ তিনি আরো বলেছিলেন, ‘যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত আছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সে আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন।’ এভাবে রাষ্ট্রের মর্যাদা, মানুষের মর্যাদা তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনের সময় তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। তিনি তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে লিখেছেন : ‘আমার কেবিনের একটা জানালা ছিল ওয়ার্ডের দিকে। আমি ওদের রাত একটার পরে আসতে বললাম। … রাতে কেউ আসে না বলে কেউ কিছু বলত না। পুলিশরা চুপচাপ পড়ে থাকে, কারণ জানে আমি ভাগব না। গোয়েন্দা কর্মচারী একপাশে বসে ঝিমায়। বারান্দায় বসে আলাপ হল এবং আমি বললাম, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে। … আবার ষড়যন্ত্র চলছে বাংলা ভাষার দাবিকে নস্যাৎ করার। এখন প্রতিবাদ না করলে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিম লীগ উর্দুর পক্ষে প্রস্তাব পাস করে নেবে। নাজিমুদ্দীন সাহেব উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথাই বলেন নাই, অনেক নতুন নতুন যুক্তিতর্ক দেখিয়েছেন। … সেখানেই ঠিক হল আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হবে এবং সভা করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কনভেনর করতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকেই জনমত সৃষ্টি করা শুরু হবে। আমি আরও বললাম, ‘আমিও আমার মুক্তির দাবি করে ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করব।’

মাতৃভাষার মর্যাদাকে তিনি রাজনৈতিক অধিকার বলে বুঝেছিলেন। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে ধ্বংস হয় মাতৃভাষার গৌরব। আজ বিশ্বের দরবারে ভাষার জন্য প্রাণদানকারী দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ইউনেস্কো ঘোষণা দিয়েছে এই দিবস পালন করার জন্য। আধুনিক রাষ্ট্র তার অর্জনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মধ্যে দেখতে চায়। 888sport apps সেই অর্জনে জয়ী হয়েছে। এই অর্জনের নেপথ্য ভূমিকায় বঙ্গবন্ধুর অবদান 888sport app download for androidীয়।

‘দুঃখী মানুষ’ বঙ্গবন্ধুর জীবনে দুটি শব্দ মাত্র ছিল না। তিনি তাঁর কৈশোর-তারুণ্যের সূচনা থেকেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অঙ্গীকার নিয়ে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছিলেন। স্কুল থেকে ফেরার পথে দরিদ্র বৃদ্ধ মানুষটিকে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজের গায়ের চাদর দিয়েছিলেন।গরিব ছাত্রবন্ধুকে ছাতা দিয়েছিলেন। অভাবের সময় অসহায় মানুষদের বাবার ধানের গোলা থেকে ধান দিতেন। এ সবকিছুই তাঁর কোনো তাত্ত্বিক ধারণা থেকে পাওয়া বিষয় নয়। তাঁর সহজাত প্রবণতার মধ্যেই বিষয়টি ছিল।

১০ই জানুয়ারি ভাষণের এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে বন্দি হওয়ার পূর্বে আমার সহকর্মীরা আমাকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। আমি তখন তাঁদের বলেছিলাম, 888sport appsের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে বিপদের মুখে রেখে আমি যাব না। মরতে হলে আমি এখানেই মরব। বাংলা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাজউদ্দীন এবং আমার অন্য সহকর্মীরা তখন কাঁদতে শুরু করেন।’ এই কথাগুলো গভীর বিশ্বাস থেকে উচ্চারিত সত্য।

স্বাধীনতার পরে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি দেশ পুনর্গঠনের নানামুখী কর্মকাণ্ড গ্রহণ করতে শুরু করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ভৌত কাঠামো ভেঙে পড়েছে, শরণার্থীরা ফিরে আসতে শুরু করেছে, স্বজন হারানো মানুষের কান্না থামেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তিনি অস্ত্র জমা নিতে থাকেন। যুদ্ধের সময় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সাহায্যদানের ব্যবস্থা করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার জন্য রাস্তাঘাট, সেতু, রেললাইন ইত্যাদি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করার জন্য কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। পরিকল্পনা কমিশন গঠিত হয়। ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমির খাজনা মওকুফ করেন। পল্লী বিদ্যুৎ চালু করেন। 888sport live chatকারখানা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পরিচালনার ব্যবস্থা করেন। নতুন দেশের যাত্রা শুরুর কাজটি তিনি সুচিন্তিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৯৭২ সালের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণীত হয়। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল এই সংবিধানের মূলনীতি।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন হয়ে দেশে এসেছিলেন। লন্ডনে সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলেন, পাকিস্তান কারাগারে আপনি যখন দেখলেন আপনার কবর খোঁড়া হচ্ছে, তখন আপনার কার কথা মনে হয়েছিল? তিনি বলেছিলেন, দেশবাসীর কথা। দেশে এসে তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘ইয়াহিয়ার কারাগারে আমি মরতে প্রস্তুত ছিলাম। কারণ, আমি জানতাম আমার বাংলার মানুষ মুক্ত হবেই। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশকে স্বাধীনতার জন্য এত অল্প সময়ে এত প্রাণ বলি দিতে হয়নি। আমি জানতাম তারা আমাকে হত্যা করবে। কিন্তু তাদের কাছে আমার একটাই প্রার্থনা ছিল – তোমরা আমার মৃতদেহটি আমার সোনার বাংলায় পাঠিয়ে দিও।’

ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল তাঁর জীবন দর্শনের একটি অন্যতম দিক। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। যে-কোনো আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় এটি একটি মৌলিক শর্ত। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধলে তিনি দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় রিলিফের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। বিপন্ন মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারতের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্ত। তিনি ১৯৪৩ সাল থেকে ইসলামিয়া কলেজে শিক্ষকতা করতেন। তাঁর ষাট দশক শিরোনামের বইয়ে তিনি দাঙ্গার সময়ের 888sport sign up bonusচারণ করে লিখেছেন : ‘ইসলামিয়ার ছাত্ররা যে আমাদের জন্য কতটা করতে পারত তার প্রমাণ পেলাম ১৯৪৬-এর রক্তাক্ত সাম্প্র্রদায়িক দাঙ্গার সময়। বালিগঞ্জ থেকে ইসলামিয়া কলেজের রাস্তায় পদে পদে বিপদ। এই রাস্তা আমাদের ছাত্ররা পার করে দিত। ওরা বালিগঞ্জের কাছে অপেক্ষা করত আর সেখান থেকে ওয়েলেসলি স্ট্রিটে কলেজে নিয়ে যেত। আবার সেভাবেই ফিরিয়ে দিতে যেত। এখানে কৃতজ্ঞচিত্তে 888sport app download for android করি ইসলামিয়া কলেজের সেইসব মুসলমান ছাত্রদের, যারা আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে বিপজ্জনক এলাকাটা পার করে দিত। এইসব ছাত্রদের একজনের নাম ছিল শেখ মুজিবুর রহমান।’

১৯৬৪ সালের বাঙালি-বিহারি দাঙ্গার সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ সহিংসতার মধ্যে বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন। দাঙ্গাবিরোধী কমিটিতে থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ লিফলেট প্রকাশ করে বিতরণ করেছিলেন। দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ লিফলেট প্রচার করার দায়ে তাঁকে পাকিস্তান প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স এবং পাকিস্তান দ-বিধি প্রয়োগ করে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিনে মুক্তিলাভ করেন।

এভাবে সাহসের সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। মানবতার দর্শন তাঁর মর্মমূলে ছিল। যেজন্য তাঁর দুঃখী মানুষের চেতনায় ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানুষের ধর্মই প্রধান ছিল। 888sport promo codeর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পরে নির্যাতিত 888sport promo codeদের তিনি ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল 888sport promo code পুনর্বাসন বোর্ড। নির্যাতিত 888sport promo codeদের পরিচর্যা এবং আবাসনের জন্য গঠিত হয়েছিল এ-বোর্ড। যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে এই কঠিন সমস্যা তিনি অনাবিলচিত্তে মোকাবিলা করেছিলেন। চেষ্টা করেছেন মেয়েদের সামাজিক অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।

অন্যদিকে 888sport promo codeর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদে 888sport promo codeদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করেছিলেন। স্বাধীন 888sport apps সরকারের মন্ত্রিসভায় 888sport promo codeদের মন্ত্রিত্ব দিয়েছিলেন।১৯৭৪ সালে মুসলিম বিবাহ এবং বিবাহ রেজিস্ট্রীকরণ আইন প্রণীত হয়েছিল। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে 888sport promo code-পুরুষের সমতার কথা উল্লেখ আছে। আজকের 888sport appsের স্বপ্ন সহিংসতা নয়, 888sport promo code-পুরুষের সমতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য।

কিশোর বয়স থেকেই তিনি মানুষের কথা ভেবেছেন। তাদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখেছেন। সেই বঞ্চিত মানুষদের কথা মনে রেখেই শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করেন। এই লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ‘888sport apps কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’। এই সংগঠনের ছোট নাম হয় ‘বাকশাল’। এর জন্য আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। ‘বাকশাল’কে দ্বিতীয় বিপ্লব বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু। ‘বাকশাল’-এর মূল লক্ষ্য ছিল চারটি : ক) গণমুখী প্রশাসন, খ) গণমুখী বিচারব্যবস্থা, গ) বাধ্যতামূলক বহুমুখী গ্রাম সমবায়, ঘ) শোষিতের গণতন্ত্র।

মাত্র সাড়ে তিন বছর সময়ে তিনি যে বিপুল কাজ করতে চেয়েছিলেন, সেটি ছিল পর্বতসমান কাজ।তারপরও তিনি সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন; কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সামনে বঙ্গবন্ধু নির্ভীক ছিলেন। নিজের জীবনের জন্য ভীত ছিলেন না।বাঙালি জাতিকে অবিশ্বাস করার মতো মানসিক দীনতাও তাঁর ছিল না। তিনি মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানোকে পাপ মনে করতেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমর বাণীটিকে তিনি ধ্রুবসত্য মেনেছিলেন। সেজন্য নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ বাসভবন ছেড়ে সরকারি বাসভবনে প্রহরীবেষ্টিত হয়ে থাকার কথা ভাবেননি। তাহলে তো গণমানুষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। মানুষকে ভালোবাসার মূল্য দিয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে।

আধুনিক রাষ্ট্রের মৌল চিন্তায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী এবং আধুনিক মনের অধিকারী। তিনি কখনো পশ্চাৎপদ মনোভাব নিয়ে দেশ ও জাতির ব্যাখ্যা করেননি। তাঁর সামনের সবটুকু ছিল প্রসারিত। তাঁর একটি অসাধারণ উক্তি – ‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়ে আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

বঙ্গবন্ধুর ডায়েরিতে একটি গান ছিল। তাঁর প্রিয় গান হিসেবে তিনি সেটি লিখে রেখেছিলেন।

Love isn’t love till you give it away

Love isn’t love till it’s free

The love in your heart 

Wasn’t put there to stay 

Oh love isn’t love till you give it away

You might think love is a treasure to keep 

Feeling to cherish and hold 

But love is a treasure for people to share

You keep it by letting it go  এটাই ছিল তাঁর জীবনদর্শনের অন্যতম দিক। Ôlove is a treasure for people to shareÕ Ñ এই অসাধারণ গানের বাণী তিনি নিজের দর্শনে অনুরণিত করেছেন।