জীবনানন্দ দাশের তিনটি 888sport alternative link : পরিবেশ ও প্রকৃতি

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) কবি, কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর কথা888sport live footballের যে বিপুল সম্ভার আবিষ্কৃত হয়েছে তা সকলের কাছেই বিস্ময়কর। কেননা এসব 888sport alternative link তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত 888sport alternative linkের তথ্য বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, মূলত দুটি পর্বে জীবনানন্দ দাশ 888sport alternative link রচনা করেন। ত্রিশের দশকে তাঁর প্রথম পর্ব এবং দ্বিতীয় পর্ব চলিস্নশের দশকে রচিত 888sport alternative linkসমূহ। তিনি যে-সময় কথা888sport live football চর্চা শুরু করেন, তখন একদিকে ছিল কল্লোলের উত্তাল আবহ, অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপর্যয়, ধ্বংসযজ্ঞ ও পুঁজিবাদী শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্য মার্কসীয় চেতনাপ্রবাহ। জীবনানন্দ দাশ সমকালের এসব আবেগ ও মতাদর্শের দিকে যাননি। তাঁর কথা888sport live footballে ব্যক্তির মানস ও চেতনার নানা প্রান্ত, ব্যক্তির নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব, মানসিক সংকট (অর্থনৈতিক সংকটও বটে), 888sport promo code-পুরুষের সম্পর্কের টানাপড়েন রূপায়ণের মধ্য দিয়ে এমন এক জগৎ নির্মিত হয়েছে, যা সমকালীন কথা888sport live footballিকদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। এ কারণে তাঁর 888sport alternative linkে শহরের পরিবেশ ও প্রকৃতিও ভিন্ন। তা যতটা বাস্তব, তার চেয়ে এসব 888sport alternative linkে শহরের পরিবেশ ও প্রকৃতিতে ধরা পড়েছে জীবনানন্দ দাশের কল্পনা ও নস্টালজিয়া-আক্রান্ত জগতের প্রতিচ্ছবি।

জীবনানন্দ দাশের 888sport alternative linkের নায়কেরা কলকাতায় আসে চাকরির খোঁজে। কিন্তু তাঁর নায়কেরা প্রায় সকলেই ব্যর্থ, অনেকটা নিষ্ক্রিয়। ফলে প্রায়শই তারা ফিরে যেতে চেয়েছে গ্রামে, তাদের চিন্তা ও কল্পনার মধ্যে প্রতিনিয়তই ফিরে এসেছে গ্রামজীবনের স্বাচ্ছন্দ্য, প্রশান্তি এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। তবু জীবনানন্দের নায়কদের কলকাতায় আগমন ও বসবাস সূত্রে তাঁর 888sport alternative linkে এই শহরের পরিবেশ ও প্রকৃতির টুকরো টুকরো ছবি ফুটে উঠেছে। আমরা তাঁর ত্রিশের দশকে রচিত নিরুপম যাত্রা (রচনাকাল ১৯৩৩), প্রেতিনীর রূপকথা (১৯৩৩) এবং চলিস্নশের দশকে রচিত মাল্যবান [১৯৪৮] 888sport alternative linkগুলো বিবেচনায় নিতে পারি।

 

দুই

নিরুপম যাত্রা এবং মাল্যবান 888sport alternative linkের কাহিনি কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কিন্তু প্রেতিনীর রূপকথা 888sport alternative linkের নায়ক চাকরির সন্ধানে কলকাতায় আসে। যদিও এই 888sport alternative linkের কাহিনির কোনো দিক থেকেই কোনো পরিণতি ঘটেনি। নায়ক চাকরির খোঁজে এসেছে কলকাতায়, কিন্তু এ শহরে সে স্থায়ী হয়নি। কলকাতা শহরের তুলনায় বরং প্রেতিনীর রূপকথা 888sport alternative linkে স্টিমার বা ট্রেন স্টেশনের পরিবেশ ও প্রকৃতির স্বরূপই অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নিরুপম যাত্রার প্রভাতও চাকরির সন্ধানে কলকাতায় আসে, কিন্তু তার মন পড়ে থাকে গ্রামে। সে প্রতিনিয়ত কলকাতার ঘিঞ্জি অসহ্য পরিবেশ ছেড়ে ফিরে যেতে চেয়েছে, কিন্তু তার ফেরা হয়নি, তার আগেই মেসে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে মাল্যবান 888sport alternative linkের নায়ক মাল্যবান কলকাতায় কেরানির চাকরি করে, কিন্তু এ জীবন তার ভালো লাগে না। মাল্যবানও ফিরে যেতে চেয়েছে তার ফেলে আসা গ্রামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ও অব্যবহিত পরে প্রায় পনেরো বছরের ব্যবধানে রচিত এসব 888sport alternative linkে কলকাতা শহরের পরিবেশ ও প্রকৃতির চেহারা খুব বেশি পালটায়নি। এসব 888sport alternative linkে শহরের পরিবেশ ও প্রকৃতির স্বরূপ কেমন?

প্রেতিনীর রূপকথা 888sport alternative linkের নায়ক শিক্ষিত, ইংরেজি 888sport live footballে এমএ। জর্মন জানে। 888sport live football-পাঠ তার ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু সে সামাজিক জীবনে ব্যর্থ, চাকরি নেই। যদিও তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন বিত্তবান, সেসব এখন 888sport sign up bonus। নায়ক অনেক চেষ্টা করেও চাকরি জোটাতে পারেনি, তাই মিথ্যা বলে মালতীকে বিয়ে করে। চাকরির খোঁজে সে কলকাতা আসে স্টিমারে। কখনো ট্রেনে। তাকে কখনো কখনো থামতে হয়েছে মাঝের কোনো ট্রেন স্টেশনে, যেমন সান্তাহার। কলকাতায় এসে মেসে থাকে। স্বল্পপরিসরের এই কাহিনিতে স্টিমারের আভ্যন্তর পরিবেশ, ট্রেন স্টেশনের পস্নাটফর্ম বা সামনের রাস্তার পরিবেশ ও প্রকৃতির রূপ ফুটে উঠেছে। স্টিমার বা ট্রেন দুটি যানবাহনই আধুনিক যান্ত্রিক ও শাহরিক সভ্যতার নিদর্শন। কিন্তু প্রেতিনীর রূপকথায় এসব যানবাহনের আভ্যন্তর বা বাইরের যে পরিবেশ জীবনানন্দ দাশ তুলে ধরেছেন তাতে এ-অঞ্চলের ওপর বিনয় ঘোষ-কথিত ব্রিটিশ কর্তৃক পুরনো গ্রাম্য সমাজকে চাপিয়ে দেওয়ার বাস্তব ছবিই প্রকট হয়ে উঠেছে। যেমন স্টিমারের পরিবেশ :

‘থার্ড ক্লাস ডেকের একটু ছোট্ট জায়গা রয়েছে দেখলাম – সেকেন্ড ক্লাস কেবিনের দরজাটার বাইরেই একটু উত্তর মুখ ঘেঁষে। স্টিমারের চোঙা থেকে বিস্তর কয়লার গুঁড়ো এসে পড়ে সেখানে – কে যেন একটু জলও ঢেলে রেখেছে।

কিন্তু জায়গাটা ডেকের একেবারে এক প্রান্তে – নদীর জলের গন্ধ ও অন্ধকারের বুকের ওপর যেন। ঝির ঝির করে বাতাস দিচ্ছে, এই গুমোটের ভেতর এ জায়গাটা একটা নিস্তারের মতো। অবাক হয়ে ভাবছিলাম কেউ এই জায়গায় বিছানা পাতেনি কেন – কয়লার গুঁড়ি নামে বলে?

… বিছানাটা আস্তে-আস্তে পাতলাম, শতরঞ্চিটা মেঝের জলে ভিজে গেল – কিন্তু তোশকটা তত ভিজবে না। এগুলো জল, না মানুষের পেচ্ছাপ? যাই হোক, বিছানার চাদরে লাগবে না তো,  বালিশেও না; কাল কলকাতায় গিয়ে শতরঞ্চিটা ধুয়ে নেব, তোশকটা রোদে শুকিয়ে নেওয়া যাবে।

প্যাসেঞ্জারদের ভেতর অনেকে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে – পেচ্ছাপের উপরেই বিছানা পেতেছি তা হলে?

… ধীরে-ধীরে জুতো পরে ডেকের উপর পায়চারি করতে থাকি – যে যেখানে খুশি আখের ছিবড়ে ও থুতু ছিটিয়ে ফেলছে, কলার বাকল, আমের খোশা সাবধানে এড়িয়ে চলতে হয়; এক-একটি জায়গায় জমাট পেচ্ছাপের গন্ধ; এক-একটি ক্যানভ্যাস পেচ্ছাপের গন্ধে জ্বলে যাচ্ছে যেন; মাথার উপরে দরমার ছাউনির নীচে ইলেকট্রিক বাতি কেরোসিনের কুপির চেয়েও অধম, এক-একবার জ্বলছে,
এক-একবার নিভে যাচ্ছে প্রায় জোনাকির জেল্লার মত, সমস্ত অভিষিক্ত করে বিড়ির গন্ধ, সব দিকে। সব সময়ই গুমোট।’

(প্রেতিনীর রূপকথা)

পরিবেশের যে কদর্যরূপ এখানে আমরা উল্লেখ করেছি তা ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেওয়া গ্রাম্যতার নিদর্শন। কেননা আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম বা শহুরে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ভারতবর্ষের রাষ্ট্রব্যবস্থা, শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়নি, হয়েছিল ব্রিটিশদের শাসন ও শোষণ পাকাপোক্ত করার জন্য। এ অঞ্চলের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই গ্রাম্যতা এ কারণেই কদর্য, কিন্তু প্রকৃতি ছিল তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে। তাই নদীর জলের গন্ধ বয়ে আনা ঝিরঝির বাতাস স্টিমারের ভেতরের গুমোট পরিবেশকে স্বস্তিদায়ক করে তুলতে সমর্থ হয়েছে। স্টিমারের নিচের ফ্ল্যাটেও চটের বস্তা, শুঁটকি মাছের গন্ধ, নোনা ইলিশের বাক্স, ফলের ঝুড়ি, কেরোসিন তেলের টিন,
তিসি-চালের বস্তা; এরই মধ্যে গলাগলি করে শুয়ে থাকা মানুষ এই পরিবেশের কদর্যতাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। একইভাবে মাল্যবান 888sport alternative linkে কলকাতায় মাল্যবানের ভাড়া করা দোতলা বাড়িটিকে স্টিমারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। স্টিমারের ওপরের ডেক এবং নিচের ফ্ল্যাটের পরিবেশ যেমন, তেমনি মাল্যবানের ভাড়াটে বাড়িটাও দোতলা : ‘কলেজ স্ট্রিটের বড় রাস্তার পাশেই মাল্যবানের এই দোতলা ভাড়াটে বাড়িটুকু; বাড়িটা দেখতে মন্দ নয় – কিন্তু খুব বড়-সড় নয় – পরিসর নেহাত কমও নয়। ওপরে চারটে ঘর আছে – তিনটে ঘরেই অন্য ভাড়াটে পরিবার থাকে – চিক দিয়ে ঘেরাও করে নিজেদের জন্যে তারা একটা আলাদা বস্নক তৈরি করে নিয়েছে – নিজেদের নিয়েই তারা স্বয়ংতুষ্ট …।’ যদিও স্টিমারের পরিবেশের মতো মাল্যবানের ভাড়াটে বাড়ির পরিবেশ তেমন কদর্য নয়, বরং তার স্ত্রী উৎপলা ওপরতলার একটি ঘরকেই ‘গুছিয়ে এমন সুন্দর করে রেখেছে যে দেখলে ভাল লাগে।’ কিন্তু এই বাহ্যিক পরিবেশটাও ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে। তাছাড়া মাল্যবানের নিচের ঘর, যেখানে সে রাত্রি যাপন করে, যে উন্মুক্ত চৌবাচ্চায় সে স্নান করে – এসবই কলকাতা শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের আবাসিক এলাকার পরিবেশ।  মাল্যবানের ওপরের ঘরের পরিবেশ, যেমন :

‘ধবধবে দেওয়ালে গোটা কয়েক ছবি টাঙানো; একটা ব্রোমাইড এনলার্জমেন্ট; প্রৌঢ়ের, উৎপলার বাবার হয়ত, তার মা-র একটা অয়েলপেন্টিং; মাল্যবানের শ্বশুর পরিবারের আরো কয়েকটি লোকের ফটোগ্রাফ – কয়েকটা হাতে আঁকা ছবি … – ঘরের ভেতর একটা পালিশ মেহগনি কাঠের খাট, খাটের পুরু গদির ওপর তোশকে বকপালকের মতো শাদা বিছানার চাদর সব সময়েই ছড়িয়ে আছে। … দোতলার এই ঘরটা বেশ বড়, মেঝে সব সময়েই ঝরঝরে, এক টুকরো কাগজ, ফিতে, সেফটি-পিন, পাউডারের গুঁড়ি পড়ে থাকে না কখনো; ঘরের ভেতর টেবিল চেয়ার সোফা কৌচ রয়েছে কতকগুলো; সবই বেশ পরিপাটি নয়, ছিঁড়ে গেছে, ময়লা হয়ে গেছে,  কিন্তু উৎপলার যত্নের গুণে খারাপ দেখাচ্ছে না।’                                        (মাল্যবান)

মাল্যবানের স্ত্রী উৎপলার ঘরের এই পরিবেশ আপাতদৃষ্টিতে স্নিগ্ধ, কিন্তু ওপরের ঘরে মাল্যবানের স্থান হয় না। পরিসরের কারণে নয়, স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে। মাল্যবান থাকে বাড়ির নিচের তলার ঘরে। তার ঘরের অভ্যন্তর ও বাইরের পরিবেশের যে বিবরণ জীবনানন্দ দাশ তুলে এনেছেন, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের কলকাতা শহরের বাস্তবতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন :

‘কলকাতার রাস্তার নানা রকম শব্দ কানে আসে; রাত তো দুটো, শীতও খুব হুজ্জুতে, কিন্তু কাদের ফিটন যেন রাস্তার ওপর দিয়ে খটখট করে চলেছে … ঘোড়ার খুরের আওয়াজ অনেক দূর অব্দি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল, এমন সময় এঞ্জিনের বিকট তড়পানিতে চারদিকের সমস্ত শব্দ গিলে খেল। এল, চলে গেল একটা লরি। মাল্যবানের মনে হল লরির এই লবেজান আওয়াজেরও একটা সার্থকতা আছে : যেমন বালির থেকে তেল বার করতে পারা যায়, সে-রকম; একে যদি চাকা-টায়ারের শব্দ না মনে করে বাদল রাতের ঝমঝম আওয়াজ ভেবে নেওয়া যায় তবে বেশ লাগে লরির – খানিকটা চুনবালি খসে পড়ল চাতালের থেকে মাল্যবানের নাকে-মুখে; … মাল্যবানের ঘরের পাশেই ড্রেনের কাছে একটা নেড়ি কুকুর ঘুর-ঘুর করে রাবিশের ভেতর থাবা নখ চালিয়ে বালি-ঘড়ির বাজনা বাজিয়ে চলেছে যেন অনেকক্ষণ থেকে … খানিকটা দূরে একটা বাড়ির ভেতরমহলে – হয়ত কলতলায়, ভাঁড়ার ঘরে, গুদোমে দুটো বেড়াল মরিয়া হয়ে ঝগড়া করছে …।’

(মাল্যবান)

ঘোড়ার গাড়ি থেকে শুরু করে ট্রাক, প্রাইভেট মোটর, ঘরে ইঁদুর-মশা-ছারপোকা-আরশোলার উপদ্রব, কলতলায় বিড়ালের ঝগড়া – মাল্যবানের ভাড়াটে বাড়ির নিচের ঘর, যেখানে সে রাত্রি যাপন করে, এই পরিবেশ স্বাভাবিক শাহরিক পরিবেশ নয়, যেখানে সুস্থ ও সৃষ্টিশীল মানুষের বসবাসের কোনো পরিবেশ বিরাজ করে না। তাছাড়া ওপরের তলায় বাথরুম থাকলেও মাল্যবানকে নিচে কলতলার চৌবাচ্চাতেই স্নান করতে হয়। চৌবাচ্চার পানি নোংরা, পঁচিশ দিন পরও সেটির জল বদলানো হয় না, শ্যাওলা জমে থাকে। শীতের দিনেও এই বাড়ির অন্য সদস্যদের কৌতূহলী দৃষ্টির সামনে মাল্যবানকে স্নান করতে হয়। জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘চৌবাচ্চাই কলকাতার পুকুর।’ এই পরিবেশে মাল্যবানের ‘হৃদয় শুকিয়ে যায় শুধু, কোনো তীরতট পাওয়া যায় না’, নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিতে হয় প্রায়ই। মাল্যবানের ঘরের পরিবেশ বর্ণনায় জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন :

‘আস্তে আস্তে সে [মাল্যবান] উঠে বসল; বিছানায় ছারপোকা আছে – কিন্তু ঘুমের ব্যাঘাত ছারপোকার জন্য নয়; এর চেয়ে ঢের বেশি আরশোলা, ইঁদুর, মশা, পিসুর ঘাঁটিতে লম্বা নির্বিবাদে চৌকশ ঘুমে কত রাত কাটিয়ে দিয়েছে। রাস্তার একটা গ্যাসল্যাম্পের আলো ঘরে ছিটকে পড়েছিল খানিকটা; …।’                                                                                                 (মাল্যবান)

মাল্যবানের ঘরের এই পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে নিরুপম যাত্রার প্রভাত যে মেসে থাকে সেখানকার পরিবেশের খুব একটা পার্থক্য নেই। চাকরির সন্ধানে প্রভাত গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় এসে একটা মেসে ওঠে। সে শিক্ষিত, দীর্ঘ চেষ্টার পর একটা চাকরি সে জোগাড় করেছিল, কিন্তু কলকাতার জীবন, বিশেষত মেসের বদ্ধ গুমোট পরিবেশে সে হাঁপিয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত সে ফিরে যেতে চেয়েছে তার গ্রামে। 888sport alternative linkের শেষে সে মেসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে, তার মৃত্যু মেসের সদস্যদের কাছে অত্যন্ত অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। তার মৃতদেহ সকলের কাছে হয়ে ওঠে অবাঞ্ছিত ও বিরক্তিকর বোঝা। প্রভাতের মেসের পরিবেশ যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ববর্তী কলকাতা শহরের পরিবেশকেই প্রতিনিধিত্ব করে। প্রভাতের মৃত্যু এবং মৃত্যু-পরবর্তী পরিস্থিতি জীবনানন্দ দাশ এই 888sport alternative linkে যেভাবে তুলে ধরেছেন তাতে কলকাতা শহরবাসী মধ্যবিত্তের পরিবেশের বাস্তবতা এবং এই পরিবেশ থেকে মুক্তি সম্ভব নয় :

‘প্রভাতের রুদ্ধ ঘরে মাছির ভনভনানি, অসহ্য গুমোট ও মশা এক এক সময় মৃতের পক্ষেও যেন অসহ্য হয়ে ওঠে।’

                                     (নিরুপম যাত্রা)

প্রভাত মৃত্যুবরণ করে, কিন্তু মাল্যবানের মৃত্যু হয়নি, বরং সে প্রতিনিয়ত শুকিয়ে যাওয়া হৃদয় নিয়ে গুমোট পরিবেশে হাঁপিয়ে উঠেছে। যদিও স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক এই হৃদয় শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ, এ-কথা 888sport app download for android রেখেও বলা যায়, মাল্যবানও প্রভাতের মতোই কলকাতার ‘কেরানির ডেস্কে-আঁটা নিখেট, নিরেস’ জীবন ও শহরের জটিল যান্ত্রিকতা থেকে মুক্ত হতে চেয়েছে, ফিরে যেতে চেয়েছে গ্রামে, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও উদারতার মধ্যে। তাদের বাড়িতে উৎপলার দাদা-বৌদি বেড়াতে এলে মাল্যবানকে কিছুদিনের জন্য মেসে উঠে যেতে হয়, ‘মেস ঠিক নয় – মাঝারিগোছের একটা বোর্ডিং।’ দুর্গন্ধময়, অন্ধকার ঘর; সেখানে সে ‘ফাঁপরে পড়ে গেল’। তবু মেসের ঘরের রেলিংয়ের ওপর কতগুলো কাক ডেকে উঠলে তার ভালো লাগে। কাক, দাঁড়কাক শহুরে পাখির ডাক মেসের পরিবেশে মাল্যবানকে প্রশান্তি দেয়। যদিও কাকের দল মেসের কোনো সদস্যের খাবারের ঠোঙা লোপাট করে, কিন্তু মাল্যবান কাকগুলোকে ডেকে খাবার দিতে চায়।

প্রেতিনীর রূপকথা 888sport alternative linkের ট্রেন স্টেশনের পরিবেশও খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। একসময় যেখানে রাতে কেরোসিনের মশাল জ্বলত, সেখানে এখন দশ-বারো বছরের ব্যবধানে গ্যাসের আলো জ্বালানো হচ্ছে। মেয়েদের কেবিনে ইলেকট্রিকের ছোট পাখা, মাকড়সার জাল। কলকাতা থেকে নায়কের দেশে যাওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে, সান্তাহার স্টেশনের, পস্নাটফর্ম বা ওয়েটিংরুমের পরিবেশ স্টিমারের ডেকের তুলনায় কোনোদিক থেকেই আলাদা নয়। যেমন :

‘ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে গেল। বেঞ্চির উপর থেকে উঠে বারান্দায় কতক্ষণ পায়চারি করলাম। চারদিকে শূন্য খাবারের ঠোঙা, চীনে বাদামের খোসা, আখের ছিবড়ে, বিড়ির টুকরো; কতগুলো কুকুর ইতস্তত ঘোরাঘুরি করছে – খাচ্ছে, শুঁকছে, লালসার উত্তেজনায় পরস্পরকে বিপর্যস্ত করে ছাড়ছে : এই তাদের ঋতুর সময়। … একটা লেড়ির [একটা নেড়ির] খুলির মত মাথায় একবার ঢাউসের মতন পেটে একবার একজন পয়েন্টম্যানের লাথি এসে পড়ল : কেঁউ কেঁউ করতে-করতে জানোয়ারটা একটা মালগাড়ির নীচে গিয়ে ঢুকল – সেখানেই হয়তো রক্তারক্তি হয়ে গেছে, হয়তো আধা সিদ্ধ ছানা কয়টি বেরিয়েও এসছে পেটের থেকে। স্টেশনের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম লাল কাঁকরের পথটা রৌদ্রে ভরে গেছে, স্টেশনের রাস্তা ইটের দেয়ালের উপরেও ভোরের বেলার খটখটে রোদ অপর্যাপ্ত হয়ে এসে পড়েছে, …।’                                                                         (প্রেতিনীর রূপকথা)

ট্রেন স্টেশনের এই পরিবেশটিই যেন পনেরো বছর পর কলকাতায় মাল্যবানের ভাড়াটে বাড়ির ছাদে উঠে এসেছে। মাল্যবানের বাড়ির ছাদের একাংশ অন্য ভাড়াটিয়ারা নিজেদের দখলে রেখেছে। মাল্যবানের দোতলার ঘরের লাগোয়া বাথরুম থেকে বেরিয়ে ছাদের একটা অংশ আছে। এখানে অনেক সময় আহার গ্রহণ, উৎপলার সেলাইকল চালানো বা হারমোনিয়ম-সেতার নিয়ে গান করা, মনুর পড়াশোনা, চেয়ার পেতে বিকেলবেলা কাটানো ইত্যাদি চলে। গ্রামে যেমন বাড়ির সদস্যরা উঠোনে বসে গল্প করে, শহর জীবনে ছাদই অবসর-যাপনের স্থান। যদিও মাল্যবান 888sport alternative linkে কলকাতা শহরে আছে থিয়েটার, সিনেমা দেখা, চিড়িয়াখানা বা গোলদিঘির পাড়ে কাটানোর ব্যবস্থা। কিন্তু শহরের কদর্যতা থেকে ছাদও কি মুক্ত হতে পেরেছে সবসময়? মাল্যবান-উৎপলার কথোপকথনে উঠে এসেছে ছাদের কদর্য পরিবেশের ছবি :

‘খেয়ে উঠতে-না-উঠতেই কাক চড়াই এসে সমস্ত এঁটো চারদিকে ছড়াবে, ছাদে যে-কাপড়গুলো শুকোতে দিই তার ওপর মাছের কাঁটা, আলু-মশলার হলুদের ছোপ, পাখির বিষ্ঠা; রাধার কলঙ্কের চেয়ে কেষ্টোর কলঙ্ক বেশি : ক্যাঁকড়ার গাঁধি, চিংড়ির দাঁড়া, ছিবড়ে পিঁপড়ে, মাছি সমস্ত ছাদে মই-মই করছে রে বাবা!’                              (মাল্যবান)

মধ্যবিত্ত মানুষের বাড়ির পরিবেশের সঙ্গে তৎকালীন কলকাতা শহরের বাহ্যিক পরিবেশের পার্থক্যও খুব বেশি ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য আদ্যিকালের ঘোড়ার গাড়ি থাকলেও শহরে অনেক আগেই যুক্ত হয়েছিল ট্রেন, ট্রাম, মোটরগাড়ি। কিন্তু পরিবেশের সার্বিক উত্তরণ ঘটেনি। রাস্তায় ময়লার গাড়ি ঘিনঘিন করে, সেখানে কাক উড়ে বেড়ায়। মাল্যবান-উৎপলা-মনু আলিপুর চিড়িয়াখানা দেখতে যাওয়ার সময় ট্রাম থেকে নেমে খিদিরপুর বাজারের ভেতরের পথটুকু হেঁটে যায়। খিদিরপুর বাজারের পথের পরিবেশটি মূলত স্টিমারের ডেক বা মাল্যবানের বাড়ির ছাদের পরিবেশেরই প্রতিচ্ছবি :

‘খিদিরপুর বাজারের পথ দিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে উৎপলা নাক সিঁটকে বললে, ‘ছি, মুর্গি-খাসির বাজারের ভেতর দিয়ে -। কলকাতা শহরে কি আর-পথ ছিলো না!’

মনু বললে, ‘রামছাগলের বোটকা গন্ধ বেরুচ্ছে, বাবা। ইস, কী পেচ্ছাবের গন্ধ, ছ্যাঃ! ঐ দেখ একটা ছাগল কাটছে – ’

‘ওদিকে তাকিও না মনু – ’

আমাদের যদি একটা ছোট অস্টিন গাড়িও থাকত, তা হলে এই নালা-নর্দমা পচা কাদা আর মুতের গন্ধ কি আমাদের নাগাল পেত, মনু?’                             (মাল্যবান)

মধ্যবিত্ত জীবনের সংকট ও টানাপড়েন থেকে মুক্তি পেতে মাল্যবান-উৎপলা যায় সিনেমা দেখতে, কখনো চিড়িয়াখানায়। যদিও চিড়িয়াখানায়
বাঘ-সিংহের খাঁচা থেকে ‘ভক-ভক করে গন্ধ আসে’ এবং সিনেমা হলের মধ্যে দর্শক ‘পাশের সিটে বসে সিগারেট’ টানে। এমনকি মাল্যবানও ‘ঘাড় কাত করে একটা সিগারেট জ্বেলে’ নেয়। শাহরিক জীবনের এই উৎসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। থিয়েটার, মঞ্চনাটক বা যাত্রাভিনয়ের আরো গতিশীল ও ব্যয়বহুল বিনোদনমাধ্যম হিসেবে সিনেমার উদ্ভব। শহুরে জীবন ও পরিবেশের এই পরিবর্তনের ছবি মাল্যবান 888sport alternative linkে লক্ষণীয়।

মধ্যবিত্ত জীবনের এই সংকট ও কদর্য পরিবেশ থেকে প্রশান্তির খোঁজে মাল্যবান গোলদিঘির দিকে বেড়াতে যায়। কলকাতা শহরে এই গোলদিঘির পরিবেশ ও প্রকৃতি তাকে সাময়িক প্রশান্তি দেয়। এভাবেই হয়তো জীবনের সম্ভাবনা তৈরি হয়, শহর-জীবনের নানা সুবিধার মধ্যে ইলেকট্রিক লাইটের আলো, রাস্তায় ছেলেদের সাইকেল হাঁকিয়ে ছুটে চলা – এসব শাহরিক জীবনের নানা উপকরণের মূল্য কম নয়।

 

তিন

জীবনানন্দ দাশের 888sport app download apkয় বাংলার প্রকৃতি বিশেষ রূপে 888sport live chatময় হয়ে আছে। যদিও তাঁর কথা888sport live footballে শহরের প্রকৃতিতে নির্মল সবুজের ছোঁয়া খুব একটা দৃশ্যমান নয়। বরং বারবার জীবনানন্দের নায়কেরা কলকাতার শহুরে জীবনের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ফিরে যেতে চেয়েছে গ্রামে। এ কারণে তাঁর নায়কদের 888sport sign up bonus ও কল্পনায় গ্রামের প্রকৃতি নিবিড়ভাবে উঠে এসেছে এসব 888sport alternative linkে। তবু কখনো কখনো কলকাতায় শহরের যান্ত্রিক পরিবেশে দেখা মেলে সবুজ ঘাসের চত্বর, নিমগাছ, কুয়াশা, শীত রাত্রির অন্ধকার, শ্রাবণের মেঘ। প্রকৃতির এসব অনুষঙ্গ কখনো মনে হয় শহুরে শহুরে পরিবেশের মতোই নির্জীব, নিষ্প্রাণ। তবু সেসব প্রকৃতি জীবনানন্দের নায়কদের অত্যন্ত ক্ষীণ হলেও প্রশান্তি এনে দিয়েছে, আবার কখনো প্রকৃতি ব্যক্তির মানবিক জীবন ও পরিস্থিতিকে করে তুলেছে সংকেতময়। যেমন :

[ক]

‘স্টিমারে উঠে দেখলাম শ্রাবণের মেঘের সঙ্গে রাতের অন্ধকার এসে হাহাকার করে মিশছে। মাথা হেঁট করে ভাবলাম : আবার ভোর হবে – হবে না কি?’                                            (প্রেতিনীর রূপকথা)

[খ]

‘বিছানায় শুয়ে ধীরে-ধীরে ঘুম আসে; সমস্ত আকাশ মেঘে ভরে আছে; বৃষ্টি নেই তবু বাতাস আসছে, বড় আরাম।

… নদীর মুখের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। আকাশে ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘ, নিরবছিন্ন গভীর বাতাস, হাত-পা ঠা-া হয়ে যায়, শরীরের ভিতরে রক্ত। হেমন্তের গভীর রাত … স্টিমারের সার্চ লাইটের দিকে চীনা রেশমের মতো নরম ডানাওয়ালা অসংখ্য ধূসর পোকা উড়ে আসছে; এগুলোকে কী পোকা বলে! দু-একটা আমার হাতের উপরে মুখের উপর এসে পড়েছে – আলোর জন্য এরা পাগল – কচি শিশুর বুকের মতন পাখনা ধড়ফড় করছে, ডেকের চারপাশে এই সব মৃত পোকার দল মুহূর্তে-মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে, এক-একটা পাগলা ঢেউয়ের লেলিহান ঝর্ণায় সেই সব মৃত শরীর অতলে তলিয়ে যাচ্ছে।’                                                                             (প্রেতিনীর রূপকথা)

নদীর ওপর অন্ধকার রাত, শ্রাবণের মেঘ, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘনীলাভ মেঘের পাহাড়, হেমন্তের রাত, ধূসর পোকা, বাতাস, স্টেশনের পাশে ‘লাল কাঁকরের পথটা রৌদ্রে’ ভরা – প্রকৃতির এই অনুষঙ্গ জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার স্নিগ্ধ প্রকৃতি নয়। এই
প্রকৃতি শাহরিক, অনেকাংশে শহরের যান্ত্রিকতা-আক্রান্ত, মৃত্যুময় ও রুক্ষ। প্রেতিনীর রূপকথা 888sport alternative linkে মেঘ এবং অন্ধকার প্রকৃতি ফিরে ফিরে ব্যবহৃত হয়েছে। আছে দাঁড়কাকের উল্লেখ – ‘সন্ধ্যার বিষণ্ণ দাঁড়কাকের কলরবের ভিতর’ নায়ক তার জীবনের ব্যর্থতার কথা 888sport app download for android করে কামনা করে মরণের মতো ঘুম। মাল্যবান  888sport alternative linkে উৎপলার মেজদা সপরিবারে বেড়াতে এলে মাল্যবান কিছুদিনের জন্য মেসে ওঠে। তার ‘মেসের ঘরের কাছে রেলিঙের ওপর কতকগুলো কাক এসে’ ডাকাডাকি করে। ‘কুয়াশার ভেতর দিয়ে একটা একা কাক উড়ে এসে মাল্যবানের ঘরের পাশে ট্রামরাস্তার দিকের রোয়াকের রেলিঙের ওপর’ বসে। গোলদিঘির দেবদারু নিমগাছের দিকে কুয়াশার ভেতর কাক উড়ে যায়। দেবদারু নিতান্তই শহুরে বৃক্ষ। নিমগাছ 888sport appsের গ্রামের পথে-প্রান্তরেও প্রচুর দেখা যায়, তেমনি শহরেও নিমগাছ সুলভ। মাল্যবানের ঘরে বাসা বাঁধে পায়রা, তারা ডিম পাড়ে। এসব পাখি উৎপলা-মাল্যবানের সম্পর্কের মধ্যে একটি পরিপ্রেক্ষিত রচনা করে। তা হলো, মাল্যবান
পাখিদের সঙ্গে বসবাস করে, সে মনে করে ‘পাখিরা আর কদ্দুর কী করবে; মানুষরা পাখিদের চেয়ে শয়তান।’ আর উৎপলা পায়রার মাংস খেতে আগ্রহী। মাল্যবান-উৎপলার সম্পর্কের চিত্রকল্প যেন এসব পাখি :

‘… উৎপলা ওপরে চলে যাবার উপক্রম করছিল; পা বাড়াতেই কী যেন একটা জিনিশ টপ করে টস করে উৎপলার পায়ের ওপর পড়ে ভেঙে ঝোল ছড়িয়ে দিল, শিস্নপার বাঁচিয়ে, উৎপলার পায়ের মাংসে চামড়ায়। দুহাত পেছিয়ে গিয়ে আলসের দিকে তাকাতেই পাখিটাকে চোখে পড়ল; মাল্যবানের জুড়ির মতই বোকা-বোকা বেকুব পাখিটার দিকে কেমন যেন লেগে থাকতে চায় চোখ; কেমন অদ্ভুত জায়গায় ডিম পেড়েছে, ডিমটাকে ফেলে দিয়েছে হয়ত নিজের অজান্তেই বেশি নড়াচড়া, ঘোরাফেরা, ডানা ঝাপটাতে গিয়ে, পা নাড়া দিয়ে; কী যে হয়ে গেছে, ডিম যে পড়ে গেছে, ভেঙে গেছে, সে-দিকে খেয়াল নেই পাখিটার, হারানো নষ্ট ডিম সম্বন্ধে কোনো চেতনা নেই; কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে আলসের ওপর, গলা ফুলিয়ে বক-ব্রুকম-ব্রকুম-ব্রুক ইর্-ররম্-রিরম্-ররম্-রুক করছে পাখিটা। উৎপলা জোরে-জোরে হাততালি দিতেই আরো একটা পাখি বেরিয়ে এল বিমের আড়াল থেকে; উড়ে চলে গেল পাখি দুটো।’               (মাল্যবান)

মাল্যবান 888sport alternative linkে পাই শীত। শহুরে শীত। এ কারণে হয়তো জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার মতো শীত এখানে ধূসর কুয়াশায় মনোরম নয়। বরং নাগরিক জীবনের সমস্ত ব্যর্থতা, ক্ষয়, গ্লানি নিয়ে শীত উপস্থিত। ‘শাল গায়ে দেবার মত শীত দুপুরবেলা কলকাতায় কোথাও পড়ে নি।’ মাল্যবান-উৎপলা-মনু চিড়িয়াখানায় যায়, ‘শীতের বিকেলে ঘুরে’ বেড়ায় তারা চিড়িয়াখানার মাঠের ঘাসের ভেতর।
শীত-প্রকৃতি মাল্যবানের বাড়ির পরিবেশেও বিস্ত‍ৃত :

‘আকাশে অনেক তারা, বাইরে অনেক শীত, ঘরের ভেতর প্রচুর নিঃশব্দতা, সময়ের কালো শেরওয়ানির গন্ধের মত অন্ধকার; বাইরে শিশির পড়ার শব্দ, না কি সময় বয়ে যাচ্ছে; কোথাও বালুঘড়ি নেই, সেই বালুঘড়ির ঝিরি-ঝিরি শিরি-শিরি ঝিরি-ঝিরি শব্দ : উৎপলার ঠা-া সমুদ্রশঙ্খের মত কান থেকে ঠিকরে – মাল্যবানের  অন্তরাত্মায়।’        (মাল্যবান)

অথবা সত্যেনের স্ত্রী রমার মৃত্যু হলে তাকে দাহ করে এসে মাল্যবান স্বপ্নে দেখে সে নিজেই মরে গেছে। তার এই মনোবাস্তবতা জীবনানন্দ তুলে ধরেছেন শীতের অন্ধকার প্রকৃতির চলমান চিত্রকল্পে :

‘শীতের গভীর রাতে অন্ধকারকে মিশ-কালো করে দিয়ে বেশি অন্ধকারের প্রবাহের ভেতর – ভাবতে-ভাবতে-ভাবতে গিয়ে কেমন যেন ন্যাতা জোবড়ার মত হয়ে পড়ল সে।’

(মাল্যবান)

প্রকৃতির অনুষঙ্গ কখনো প্রতীক ও রূপকে চরিত্রের মনোজগৎকে প্রকটিত করে তুলেছে। যেমন ভাড়াটে সেজগিন্নির ছোট্ট মেয়ে আঁতুড়েই মারা গেলে উৎপলার মানসিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে রৌদ্রের প্রতীক :

‘উৎপলা দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে হাত-পা নিঝুম করে ছাদের এ-পারে ও-পারে পরপারে শূন্যতার বড় একটা রৌদ্রচাঙাড়ের দিকে তাকিয়ে রইল।’

(মাল্যবান)

 

চার

মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত জীবনানন্দ দাশের কথা888sport live footballের বিপুল সম্ভার আমাদের চেতনায় নতুন এক বারতা দেয়। তা হলো, তিনি প্রকৃত অর্থে কবি। কবির চেতনা, ব্যক্তিজীবনের নানা অপ্রাপ্তি ও সংকটের ভেতর দিয়ে তিনি তাঁর 888sport alternative linkের কাহিনির জগৎ নির্মাণ করেছেন। কাজেই সেখানে বাস্তবের প্রকৃতি-পরিবেশের চেয়ে প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ রূপায়িত হয়েছে প্রতীকী অর্থে, কখনো চিত্রকল্পের আদলে। তথাপি তাঁর কথা888sport live footballে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব ও অব্যবহিত পরের কলকাতা শহরের যে পরিবেশ ও প্রকৃতির ছবি উঠে এসেছে তার ঐতিহাসিক বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না।

 

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

১।  অশ্রম্নকুমার সিকদার, আধুনিকতা ও বাংলা 888sport alternative link, অরুণা          প্রকাশনী, কলকাতা, মার্চ ২০০৩।

২।  জীবনানন্দ সমগ্র, দ্বিতীয় খ-, ষষ্ঠ খ-, (২০০১- ১৯৯০), দেবেশ রায় (সম্পাদক), প্রতীক্ষণ, কলকাতা।

৩। বিনয় ঘোষ, (১৯৯৯), মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ, ওরিয়েন্ট লংম্যান, কলকাতা।

৪।           সালাউদ্দীন আইয়ুব, (২০১৪), আধুনিকতা ও উত্তরাধুনিকতা, মাওলা ব্রাদার্স, 888sport app।