জুলফিকার মতিনের 888sport app download apk

গত বছর ফেব্রুয়ারি বইমেলায় জুলফিকার মতিনের কাব্যসংগ্রহ (২০২২) বেরিয়েছে। হাতে পেলাম কিছুদিন আগে। খুশি হয়েছি। সেইসঙ্গে একটু উদ্বিগ্ন। মতিন কি 888sport app download apk লেখায় ইতি টানছেন? অথবা এমন কি যে তিনি মনে করছেন, নতুন কথা আর তাঁর কিছু বলার নেই? র্যাঁবো, সমর সেন, এঁরাও প্রতিভার অবিমোচ্য দাগ পড়া মাত্রই বিদায় নেন। জীবন থেকে নয়, 888sport app download apk থেকে। আমাদের আক্ষেপ আছে। এই

তৃপ্তি ও কাল তাঁদের কীর্তিতে এতটুকু আঁচড় কাটতে পারেনি। এখনো না। অবশ্য বিপরীত উদাহরণও আছে। সঞ্চয়িতা প্রথম প্রকাশের পর রবীন্দ্রনাথ আরো ক-বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁর সৃষ্টিশীলতা নতুন বাঁক নিয়েছে। প্রশ্নের আকুলতা বেড়েছে। প্রাণের প্রকাশ অনিঃশেষ থেকে গেছে। মতিনের বেলাতেও আমাদের এমনটিই প্রত্যাশা।

তবে নিজেকে নিয়ে তিনি কোনো মোহ রচনা করতে চাননি। এখানে ভূমিকায় তাঁর অকষ্ট স্বীকারেক্তি, ‘… সত্যি বলতে কি, আমি কবি হতে পারিনি। সে জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণাদি উপস্থাপিত করাও নিষ্প্রয়োজন।’ তবে তিনি 888sport app download apk রচনায় ইতি টানেননি। আমাদের আশ^স্ত করে এখনো লিখে চলেছেন। তারপরেও এই কাব্যসংগ্রহ নিয়ে তিনি নির্বিকার। আগ্রহটা তাঁর নয়, অন্যদের। তিনি শুধু যোগ করছেন, ‘এটাকে প্রয়াস বলা যাবে না অপ্রয়াস বলা ঠিক হবে, তা নির্ধারণ করার ভার, অন্ততঃ আমার ওপর নয়।’

তারপরে 888sport app download apk পড়ায় লক্ষ্যটা কী ও কোথায় হওয়া উচিত তার ইঙ্গিতও তাঁর ভাবনায় যেমন, তা জানান :  ‘Ñ 888sport app download apk কখনই কোন আক্ষরিক অর্থে বোঝার ব্যাপার নয়। তা উপলব্ধির। আর এই উপলব্ধির জগৎটা হল নান্দনিক। সৌন্দর্য উৎসারিত। … ভিন্নতা থাকতে পারে 888sport app download apkর বিষয় বিচারে। … কিন্তু সৃষ্টিটা তো সামগ্রিক।’ আরো বলছেন, ‘ – এই সামগ্রিকতাই বলি, আর অখণ্ডতাই বলি, তার যোগাযোগ তো সৃজনশীলতার সাথে। … আবেগ আর অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটে তাতে। সেজন্য প্রয়োজন অভিনিবিষ্টতা।’ এরপরেই নিজের যোগ্যতাকে খারিজ করে দিয়ে বলছেন, ‘তা যে আমার নেই, তা বলাই বাহুল্য।’

আসল আবেগের শুদ্ধতাকে ব্যক্তিগত ‘আমি’ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বাস্তবের প্রেক্ষাপটে অবিচল নিরাসক্তিতে চেতনা-নির্দেশিত রূপকাঠামোয় স্থান ও কালের সীমায় বেঁধে, ওই সীমা থেকে তার বেরিয়ে আসার আকুতি, তা প্রকাশের তীব্রতা ও স্বকীয়তাতে, বোধ হয়, ফুটে উঠতে থাকে, ফুটে ওঠে 888sport app download apk বলতে আমরা যা বুঝি বা বুঝতে চাই, তা। জুলফিকার মতিনের কাব্য-প্রয়াসে আমরা এরই সৎ ও বহুমাত্রিক প্রয়াস দেখি। তার বিস্ময়কর সার্থকতা কোথাও-কোথাও আমাদের বাকরুদ্ধ করে। কবি হিসেবে নিজেকে তাঁর খারিজ করার ঘোষণা তাই অনুমোদনযোগ্য মনে হয় না। যদিও অনুমান, বহু পাঠক তাঁর নাগাল পায় না।

স্থান-কালে অসংগতিও হয়তো তাঁকে দূরে ঠেলে। এবং সেইসঙ্গে তাঁর বহুমুখী দায়বদ্ধতা।

তবে কোনো অজুহাত তিনি খাড়া করেননি। অনাসক্ত  সততায় 888sport app download apk সমগ্র নিয়ে হাজির হয়েছেন। তা কালানুক্রমিক। আমরা তাঁর সৃষ্টিকলায় এই মাধ্যমে তাঁকে একত্রে দেখি। উপলব্ধির জগৎ প্রসারিত হলো কি না তা যাচাই করার পুরো সুযোগ মেলে। সবসময়ে তিনি আত্মপ্রচারবিমুখ। এখানেও তেমন। জীবনের ঘড়া যখন প্রায় পূর্ণ, তখন রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমার কীর্তিরে আমি করি না বিশ^াস’ (নভেম্বর, ১৯৪০)।  কিন্তু শেষ বিচারে কীর্তিই সাক্ষী থাকে। কালের সীমায় যে আবেগ তা খসে পড়ে। নিরালম্ব কীর্তিকে খোলা চোখে দেখি। সেইরকম মতিনের এ যাবৎ সব 888sport app download apkকেও। তবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে। অবশ্য প্রেক্ষাপটেও নজর দিই। এটাও বলে রাখি, মতিন যা-ই ভাবুন, কবি হিসেবে কখনোই তিনি অপাঙ্ক্তেয় হননি। তাঁকে ঘিরে ঢাকের বাদ্য হয়তো জোরেশোরে বাজেনি। কিন্তু তার নিষ্ঠা অবিচল থেকেছে। কোনো পাতা ফাঁদে পা বাড়াননি। তারপরেও 888sport app download apk পূর্ণতা পেল কি না, এ প্রশ্ন থাকে। কোনো সর্ববাদীসম্মত উত্তর সংজ্ঞার্থে মেলে না। উপলব্ধি প্রত্যেকের নিজের নিজের। এবং একমত হওয়া মানেও একই অনুভবের প্রকাশ না। আমি শুধু আমার কথাটুকু বলতে পারি। বোঝা-না-বোঝার ব্যাপারটা প্রত্যেকের আলাদা-আলাদা।

দুই

জুলফিকার মতিনের পিতৃদেব চৌধুরী ওসমান ছিলেন তাঁর সময়ে সওগাত পত্রিকার বিশিষ্ট কবি। তাঁর উত্তরাধিকার বর্তেছে তাঁর ছেলেদের ভেতর। মতিন সবার বড়। শুধু কবি  নন, সেইসঙ্গে কথা888sport live footballিক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। কর্মজীবন সবটাই কেটেছে একই বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় রাজশাহীতে। মফস্বল শহর। 888sport appর বৃত্ত থেকে অনেকটা বাইরে। শুরুতে পাদপ্রদীপের আলো তাই সরাসরি তাঁর ওপর পড়েনি। এখানে  অপ্রাসঙ্গিক, তবু বলি, বিশিষ্ট কথা888sport live chatী ইকতিয়ার চৌধুরী ও ইমতিয়ার শামীম তাঁর সহোদর। আরো একটু যোগ করি, আজ আমাদের শীর্ষস্থানীয় দুই 888sport live football ব্যক্তিত্ব সেলিনা হোসেন ও মহাদেব সাহা ছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ে তাঁর সহপাঠী। পরে সেলিনা হোসেন কর্মজীবনে আলো ছড়ান বাংলা একাডেমিতে; মহাদেব সংবাদপত্রে স্তম্ভরচনায়। দুজনই 888sport appয়। আমাদের প্রকাশনা জগতের তা কেন্দ্রভূমি। মতিনের কাজ কিন্তু শুধু অধ্যাপনাতেই সীমিত থাকেনি। বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডকে স্বচ্ছ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক করার ক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। প্রয়োজনে উচ্চতর প্রশাসনিক স্তরে নির্বাচিত হয়েও। কথাটা বলা এ কারণে যে, 888sport live football সাধনায় বরাবর সক্রিয় থাকলেও 888sport app মানবিক দায় তিনি এড়িয়ে যাননি। একাত্তরে ছিলেন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর মৌল আদর্শ থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি। এখনও না। তাকে হৃদয়ে ধারণ করে তার নিত্যদিন পথচলা। চেতনায় অনির্বাণ। 888sport app download apkতেও।

এবার এই কাব্যসংগ্রহ (২০২২) নিয়ে কিছু বলতে পারি কি না দেখি। ‘ভূমিকা’র (পৃষ্ঠা ১৩-১৪) পর তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ স্বৈরিণী স্বদেশ তুই (পৃষ্ঠা : ১৫-৪৬; ১৯৭২)। এর ধারাবাহিক কোন লক্ষ্যে হে নিষাদ (পৃষ্ঠা : ৪৭-৯৩; ১৯৮৯), তাই তো সংবাদ নেই (পৃষ্ঠা : ৯৫-১৩৩; ১৯৯৯), নীলিমাকে চাঁদ দেব বলে (পৃষ্ঠা : ১৩৫-১৭২; ২০০০), বৈশাখে ঝড় জল রোদের 888sport app download apk (পৃষ্ঠা : ১৭৩-১৮৯; ২০০১), ঘামের ওজন কত ভারী (পৃষ্ঠা : ১৯১-২৬৫; ২০০১), দুঃখ ভোলার দীর্ঘশ^াস (পৃষ্ঠা : ২৬৭-৩০২; ২০০৫), এই সংবাদ এই 888sport cricket BPL rateে (পৃষ্ঠা : ৩০৩-৩২৪; ২০০৭), কার চরণ চিহ্ন ধরে (পৃষ্ঠা : ৩২৫-৩৬৬; ২০১১), জলের সংসার (পৃষ্ঠা : ৩৬৭-৩৯০; ২০১৫) এবং মর্মলোকে লেখা ছিল (পৃষ্ঠা ৩৯১-৪৬৩; ২০১৮)।

অবশ্য বই প্রকাশের কালানুক্রমিকতার সঙ্গে রচনার কালানুক্রমিকতা সব জায়গায় মেলে না। যেমন জলের সংসারের 888sport app download apkগুলি প্রকাশনার ‘প্রায় তিন যুগ আগের রচনা’। তবে কোনো একটি বইয়ের 888sport app download apkর সংকলনসূচি যথাসম্ভব সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে সাজানো। পড়ায় কোনো হোঁচট খেতে হয় না। মতিনের নান্দনিক ভাবনায় এমন একটা সামগ্রিক ভারসাম্য বরাবর ক্রিয়াশীল যে, কালের অগ্রগতির সঙ্গে তা সহজেই খাপ খাইয়ে নেয়। তারপরও কোথাও কোথাও নির্মাণকলায় তাল কাটছে মনে হতে পারে। এমনটি হয়তো সাময়িক অমনোযোগিতার ফল। অথবা এমনও হতে পারে, ভাব ও ভাষার কবি যে ঐকান্তিকতা ফুটিয়ে তোলার সাধনা করেন, পাঠকের পূর্বাভ্যাসে তা প্রতিহত হয়। একজন সৎ কবি তাকে উপেক্ষা করতে পারেন।

প্রথম বই স্বৈরিণী স্বদেশ তুই নিয়ে আমার মনে কিছু আক্ষেপ ও প্রভূত বিস্ময় জমা আছে। দেখাই যাচ্ছে, ১৯৭২ সালের শেষাশেষি এর প্রথম প্রকাশনা। দেশের ভেতরে থেকে মুক্তিসংগ্রামে সক্রিয় অংশ নেওয়ার তরতাজা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসে আবার তিনি বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দিয়েছেন। যে কেউ অনুমান করতে পারেন, তখন এখানে বদ্ধভূমি ও বধ্যভূমি ছিল সমার্থক। সেখানে তার গোপন প্রত্যাখ্যানের মিলিত কাণ্ডে একান্তিক অভিযান। জীবন বাজি রেখে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার পেছনে ছোটা। মুক্ত স্বদেশে প্রেক্ষাপট দ্রুত বদলায়। একদিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ সারা দেশ, অন্যদিকে তারই ভেতরে সুবিধার তেজারতি। সবেতেই ধরা পড়ে অতীতের কণ্ডুয়ন। মতিনের মননশীলতা ও অনুভব্যতা, দুটোর তারেই ঘা লাগে সপ্তকে। তারই এক পরিণাম এই সৃষ্টি, স্বৈরিণী স্বদেশ তুই। অনুমান, ‘বীরভোগ্যা বসুন্ধরা’ ও ‘বীরভোগ্যা 888sport promo code’ – এই দুই নির্বিবেক আপ্তবাক্যের মন্থনে যে হলাহলের উজার, তাকেই কণ্ঠে ধারণ করে নিরুদ্ধ অভিমানে মতিন তার কাব্যরূপ নির্মাণে অগ্রসর হয়েছেন। শুরুতেই এর পরিচয় মেলে উৎসর্গপত্রে :

শুধু তারা থাকবে না যারা

জীবনকে উপহাস করে

বুকের পবিত্র রক্তে

স্বৈরিণী স্বদেশ তোর

কলুষিত অঙ্গ ধুয়ে দিল।

এর চেয়ে পরিশুদ্ধ, এর চেয়ে অসহায় অভিমানাচ্ছন্ন বাণী আমি খুব কম পড়েছি।

স্বৈরিণী স্বদেশ তুই কাব্যনাটক। উনিশ শতকের বাংলায় এর প্রচলন ছিল বেশি। যাত্রাপালা ছিল তো মূলত তাই। রবীন্দ্রনাথের বিদায় অভিশাপ বা কর্ণকুন্তী সংবাদেও তার রেশ। তবে বরাবর সমুদয়ের কণ্ঠস্বর কোথাও পড়িনি। আসলে মঞ্চাভিনয়ের মাত্রাটি এই সব সৃষ্টিকলায় এক স্বাভাবিক কল্পনা মাধ্যমের কাজ করেছে। কিন্তু মতিনের এই কীর্তি শুধুই পড়ার ও শোনার। শ্রোতা হতে পারে সমবেত জনতা এবং পাঠক কণ্ঠে হতে পারে আপন সত্তার স্বতঃস্ফূর্ত বিস্তারে, – উচ্চারণ সমষ্টির অন্তর্গত চৈতন্যের স্বর। আক্ষেপ জাগে, যদি এমন কীর্তির যথার্থ মূল্যায়ন না হয়।

একটু নমুনা তুলে ধরি :

নান্দীপাঠ ॥ রঙ্গিনী নটীর মতো বিশাল স্বদেশ,

             রক্তবীজ সারা দেহে, শুয়ে থাকে, রূপ

             উপমায় নৃত্যবতী, অধার গমকে

             প্রলোভন মেলে দেয় কামনার। কাঁপে

             সূর্য – কাঁদে চাঁদ। সারা রাত নদীদের গান

             888sport sign up bonus ভাঙে। নিরবধি বুঝি তার নাম –

             ভালবাসা – লুকিয়ে বুকের মাঝে নিরন্তর।

             অসহ পুলকে, বুঝি উদোম শরীর মেলে

             কারে রোজ ডেকে আনে ঘরে। বর্ষীয়সী

             তবু সেই লোভনীয় 888sport promo code অবিরাম

             ঋতুমতী …        …         …

             …           …             …

             মৃত্যুহীন যেন এক সমৃদ্ধির ভ্রƒণ

             ক্রমাগত রোদ্দুরের মাতাল পাখায়

             আপন বলয় জুড়ে নির্মিমেষ কাঁপে।

             সে সংবাদ দেশে দেশে আগুনের ন্যায়

             পরিব্যাপ্ত হলে আসে বীর পুরুষেরা।

             শস্ত্র হাতে বীরভোগ্যা স্বদেশের স্তন

                         ছিঁড়ে দুধ খায় – মন্থনে মধু। সন্তানের

             ভালবাসা রঙ্গিনীর বুকের তলায়

             অণুক্ষণ স্থির থাকে তীব্র অভিমানে।

এই গভীর গম্ভীর ধ্বনিময়তায় মহাকাব্যিক অবগাহনে তাৎক্ষণিকের আড়াল ঘোচে। আমরা নির্মম নিরাভরণ চলমান বাস্তবের অন্তর্দেশে দৃষ্টি ফেলি। বাস্তবের বিরতিহীন কর্ষণা কোথাও কখনো উৎফুল্ল করে না। ইতিহাসের প্রেতনৃত্যে কোনো বিরাম ঘটে না। আমরা উঠে দাঁড়াতে চাইলেও ক্রমাগত ছোট হতে থাকি। এই কাব্য নির্লজ্জ প্রসাধনীর আড়ালে ঐশ^র্যশালিনী স্বদেশের দুর্নিবার আকর্ষণীর অলজ্জ পরিণামের বিরতিহীন ছবি আঁকে। লজ্জা ঘৃণা ভয় অতিক্রম করে নিরাসক্ত নির্মমতায়।

বঙ্কিমচন্দ্র আনন্দমঠে ‘মা যা হইয়াছেন’ বলে দেশমাতৃকার করালমূর্তি দেখান। পাশাপাশি ‘মা যা ছিলেন’ ও ‘মা যা হইবেন’, তাদের কল্প-বাস্তবে মোড়া ষড়ৈশ^র্যশালিনী চৈতন্যরণও। মতিনও ‘নকশিকাথা’র ইশারায়’ কিংবদন্তির ‘আয়েশিরাত’ আর ‘গামছাপাতা দই-লাউকুমড়া’, ‘আমসত্ত্ব’, ‘চিড়া-মুড়কি’, এদের 888sport sign up bonus জাগান। কিন্তু নিমেষেই চলে আসেন ইতিহাসের দ্বান্দ্বিকতায়। ধারাবাহিক জবরদখলের একঘেয়ে কথাই যার মৌলিক উপাদান।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এক কালজয়ী গান ‘ধন-ধান্য-পুষ্পভরা।’ তাতে গৌরবার্থে বলা – ‘সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।’ কিন্তু ‘সকল দেশের রাণী’ – কথাটা দ্ব্যর্থক। ব্রিটিশ শাসকদের কাছে উপনিবেশ ভারতবর্ষ তখন তাদের সাম্রাজ্যের সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন। ‘সকল দেশের রাণী’ বলায় সব রানির ভেতর পাটরানিও বোঝায়। অথবা আরো কদর্য অর্থে সব দেশেরই অঙ্কশায়িনী রানি। কোনোটিই গৌরবের নয়। মতিনের স্বৈরিণী স্বদেশ-এ এই মাত্রারই প্রতিফলন। অপ্রীতিকর হলেও বাস্তব। তার সম্পদ লুণ্ঠনের পালা অনিঃশেষ।

তবে কাব্যসংগ্রহে চোখ বুলোতে গিয়ে মনে হলো, কবি বোধহয় প্রথম সংস্করণের কিছু ঘষামাজা করেছেন। ওই বাহাত্তর সালে স্বপ্ন বোনার পর্বেই তিনি এক অনিবার্য বিভীষিকার সম্ভাবনা আঁচ করেছিলেন। অল্প পরেই তা বাস্তবে মুখ ব্যাদান করে স্বদেশকে গিলে ফেলে। মতিনের ভবিষ্যদ্বাণী এখানে চোখে পড়লো না। আমি কি ভুল দেখেছি? উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছি? আমার বয়সে তা খুবই সম্ভব।

তবে প্রকাশের পর পর স্বৈরিণী স্বদেশে তুই যে অবহেলিত থেকে যায় বলে আমার অনুমান, তা সত্য হলে এর পেছনে মতিনের অবিমৃষ্যকারিতাও কিছুটা দায়ী হতে পারে। বাহাত্তরের ওই অস্থির সময়ে গ্রন্থ-প্রকাশের সব কাজ তিনি রাজশাহীতেই সারলেন। এতে এই শহরের অবকাঠামো যে কতটা দুর্বল – এখনো – তা জানা ছিল অনেকের। ঠিক দু-বছর আগে গোলাম মুরশিদ তাঁর সম্পাদনায় বিদ্যাসাগর প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে তা ছাপিয়ে বের করার কাজ সম্পূর্ণ করতে বগুড়া ছুটেছিলেন। মতিনের প্রথম বই আলোর মুখ দেখল। অবশ্যই আনন্দের। কিন্তু এত মুদ্রণ প্রমাদ, এত কাঁচা কাজ,  শব্দ-যতি এলোমেলো, কোথাও-বা উধাও, বইটি সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারলো না। অরণ্যে রোদনই বুঝি সার হলো। কাব্যসংগ্রহে তেমনটি হয়নি। চোখে পড়ার মতো বানান ভুল কিছু কিন্তু থেকে গেছে। কথাগুলি বললাম, কারণ, বইটিকে আমি বাংলা 888sport app download apkয় সমকালের সেরা সংকলনের একটি বলে মনে করি। পথের ধুলায় এ হারিয়ে যাবে তা কাম্য হতে পারে না।

বারবার শোনা, হয়তো সবার জানা, তবু এর চেয়ে সারবার্তা আর কিছু জানা নেই, – তাই শরণ নিই তাঁরই, জীবনানন্দের বলা, ‘সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি।’ তারপরেই তিনি বিশদ হন, ‘ – কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে …।’  ‘হৃদয়ে কল্পনা’ ও ‘কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা’, এরা তাহলে কবি হওয়ার প্রাথমিক উপাদান। প্রত্যক্ষের কারণভূমিকে তারা উপেক্ষা করে না, কিন্তু অতিক্রম করে। শুধুই অতিক্রম করার জন্য নয়, তাতে উপলব্ধির নতুন জগৎ নির্মাণের লক্ষ্যে। একজনের কবি প্রতিভা তাঁকে অনন্যতা দেয়। দৈনন্দিন সংবাদ তা নয়। শুধু ছন্দ আর মিলের সামঞ্জস্যও নয়। এমন কি তাদের প্রচলিত ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে বস্তুজগতের সম্পর্ক-সম্বন্ধের অভ্যস্ত ধারণাকে নানা দিক থেকে উল্টেপাল্টে। সারকথা লক্ষ্যভূমির পূর্ণতায় ঐক্যসাধন। এই লক্ষ্যভূমি যদি হয় চৈতন্যলব্ধ বিশৃঙ্খলার প্রতিরূপ, তবে তার স্বরূপের সাধনা 888sport app download apkতেও ব্রত্যমূল্য আরোপ করে। প্রত্যক্ষের বাজারদর যাই হোক না কেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, এবং তা  যথার্থ, জুলফিকার মতিন, নিজে যা-ই বলুন না কেন, অবশ্যই কবি, এবং বিরলপ্রজ সত্য প্রতিভা। তাঁর 888sport app download apkজগৎ স্বনির্মিত। যদিও তার মাল-মশলা সবই প্রত্যক্ষে প্রবহমান – অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সবটায়। তাতে যুক্তিসিদ্ধি তাঁর মননসঞ্জাত, যদিও পাঠকচিত্তে অনুরণন তোলে নিশ্চিত। অবশ্য পাঠকের অভিনিবেশ ও সংবেদনশীলতাও প্রত্যাশিত।

যদিও আমার বিবেচনায় স্বৈরিণী স্বদেশ তুই তাঁর প্রথম ও সর্বোত্তম কীর্তি, সেইসঙ্গে ব্যতিক্রমধর্মী, – তরুণ মেধার এমন সংহত বিস্ফোরণ বিস্ময় জাগায়, তবু 888sport app কাব্যগ্রন্থ উপেক্ষার নয়, বরং প্রত্যক্ষের বিরূপ বাস্তবের প্রতিকূলতায় শিরদাঁড়া খাড়া করে থাকে। আপস করে না। সৃষ্টিকলায় কোনো স্ববিরোধ মাথা তোলে না। তবে স্বৈরিণী স্বদেশ তুইয়ের স্বর ফিরে ফিরে ভেসে আসে। তা অপকারী হয় না। খেয়াল করি, তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ, কোন লক্ষ্যে হে নিষাদ, প্রকাশিত হয় প্রথমটির সতেরো বছর পর (১৯৮৯)। সংকলিত 888sport app download apkগুলি কিন্তু ১৯৭২-১৯৭৫ – এই পর্বে লেখা। প্রথম 888sport app download apkতেই ধরা পড়ে সদ্য মুক্তিস্নাতা স্বদেশে অরাজকতার সংশয়; পড়ি :

          দুঃস্বপ্নের দায় নেই – দীর্ঘ ন’মাসের

          অগ্নিগর্ভ 888sport apps নিমুক্ত ভার …

তবু,     888sport app download apkর উপমায় হতমানা জননী এখন :

          (বর্ষীয়সী মহিলার লজ্জা নেই না কি!)

             – (‘জননী’)

শ্রেণিসংগ্রামের চেতনায় তিনিও তখন ঋদ্ধ। দ্বান্দ্বিক বাস্তবে তাই নির্দ্বিধায় লেখেন –

… নিহত 888sport sign up bonusর ধূপে শবদেহগুলি

দারুণ আগুন জ¦ালে শতধা শোণিতে

কি এমন উত্তরাধিকার?

সংহত দ্রোহে উচ্চারিত হয় –

বন্ধ কর জনসভা

নীলিমাকে চাঁদ দেব বলে

হত্যার অধিকার দেবে কি দেবে না, বল সুস্পষ্ট ভাষে।

                    – (‘হত্যার অধিকার’)

লক্ষণীয় ‘আবেগ কম্পিত স্বরে’ হলেও ভাষা নৈরাজ্যিক নয়। 888sport app download apkর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়নি এতটুকু। নীলিমাকে চাঁদ দেব বলে – এ অঙ্গীকার কবির 888sport app download apkর কাছে। দাবিও 888sport app download apkরই কাছে। 888sport app download apkর সুষমা তিনি দেখতে চান বাস্তবের জীবনচর্চাতে। তা অবশ্য অধরাই থেকে যায়। যত তা দূরে সরে, তত তিনি ‘এক পা দু পা চার …’ করে 888sport app download apkতেই আশ্রয় খুঁজতে থাকেন। তাতে বস্তুজগতের সব সম্পর্ক-সম্বন্ধ, সব ভাঙাচোরা, – এরা সবাই প্রতীক হাতে থাকে। প্রতীক হয়ে যায়। 888sport app download apkই শেষ বিচারে অধীশ^রী। বাস্তবে প্রাণের যাত্রায় রূপ-রস-লাবণ্য এবং হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণা, এসবই শব্দের সীমানায় বেঁধে তার পায়ে অঞ্জলি। রূপের বিষয়-আশয় অবলম্বন মাত্র। আবেগের ছলাকলাও। ভাষা যদি প্রগল্ভ হয়, তবে তা 888sport app download apkয় নিবেদন পূর্ণ করার প্রয়োজনেই। মতিন তাঁর আত্মচেতনা ও সমষ্টিচেতনা সবটাই ঢেলে দেন প্রাণের উৎসবে 888sport app download apkকে সাজিয়ে তোলার আশায়। অধিষ্ঠান চৈতন্যলোকে। যদিও তা ইহজাগতিক।

তাঁর কোনো 888sport app download apkই অনুল্লেখ্য নয়। প্রতিটিতে আছে ধ্যানমগ্ন তপস্বীর ছাপা। 888sport app download apkর জন্য তপস্যা। ২০০৫-এ দুঃখ ভোলার দীর্ঘশ^াস ছেপে বেরোয়। তাতে ফ্যান্টাসি সিরিজে আছে সাতটি 888sport app download apk, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১-এর ভেতরে লেখা, আর চতুর্দশপদী ছয়টি লেখা ২০০৫-এ। নিচুগলায় কথোপকথন। সবগুলিতেই মৃদু সুবাস। সর্বাঙ্গসুন্দর। আমরা গভীর তন্মতায় আচ্ছন্ন হই। এ সবে 888sport app download apkই আরাধ্যা। যদিও সাজ আটপৌরে। নিরাসক্ত পাঠ চেতনার ঊর্ধ্বলোকে আমাদের তুলে নিয়ে যায়।

কৃতজ্ঞ বোধ করি। কোথাও শৈথিল্য নেই। কাণ্ডজ্ঞানহীন অশালীন হস্তাবলেপ নেই। যদিও শব্দ-চয়নে ছুঁতমার্গী সংকীর্ণতাও নেই। চৈতন্যলোকে আলো জ¦লে। মতিনের সব 888sport app download apkই জীবন ঘষে পাওয়া। কিন্তু কোথাও স্থূল নয়। মেধার কর্ষণায় তারা আমাদের শিরদাঁড়া সোজা করে এগোতে শেখায়। তাদের কোনোটিকেই আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। জনসমুদ্রে জোয়ারের ঢেউ তোলা যদিও তাঁর কাক্সিক্ষত অভিলাষ।

এই সংকলনে শেষ বই মর্মলোকে লেখা ছিল (২০১৮)। রচনাকাল ১৯৯০ থেকে ২০১১। সমাপ্তি টানা ২০১১ সালে লেখা ‘দর্পণে ছায়া মানবীর’ 888sport app download apk এই চিত্রকল্পনায় শেষের উপলব্ধি। রেশ যদিও থেকে যায় :

ভেড়েনি জাহাজ বন্দরে এসে,

                  … দূর সাগরেতে ভাসে,

ক্ষীণ মাস্তুল আশা ধরে রাখে কবেকার স্বপ্নের,

প্রতীক্ষা বাড়ে  –  প্রণয়ভুবন শুধু কাঁপে থরথর

আরশিতে ছায়া ভেঙে ভেঙে যায় দাঁড়ালে সেখানে এসে।

‘একটি 888sport app download apk’ ওই বছরেই কিছু আগে লেখা। তার শুরুটা এরকম :

একটি 888sport app download apk লেখা হয়েছিল রাতে …

মাতামাতি ঝড় আকাশে বাতাসে প্রলয় পতাকা তোলে,

প্রেত-কন্যারা নগ্ন বসনা উদ্দাম সঙ্গীতে

চরাচর জুড়ে নিয়ে আসে শুধু ধ্বংসের পরোয়ানা। …

এটুকু অন্তত বোঝা যায়, 888sport app download apk স্বয়ং প্রাণেশ্বরী। মতিনের মননপ্রভ উচ্চারণে তা অমরার পথে ধায়। এই কবির স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি প্রতিভা নিশ্চিতভাবে এক আলাদা ভুবন রচনা করে। তাতে তাঁর স্বাক্ষর অবিমোচ্য। আমরা তার বন্দনা গাই। যদিও কোথাও কোথাও নির্মাণকলায় বিষ্ণু দে বা সুধীন দত্তের উত্তরাধিকারের ইঙ্গিত যে মেলে না, তা নয়।

আমরা জানি, জুলফিকার মতিনের প্রতিভা বহুমুখী। 888sport alternative link, ছোটগল্প ও মননশীল 888sport liveের জগতেও তাঁর সাবলীল বিচরণ। কিছু গল্প আছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে। তারপরেও তিনি মূলত কবি। 888sport app download apkই তাঁর কপালে অসামান্যের তিলক আঁকে। এটা খেয়াল না করা আমাদেরই অক্ষমতা।

শেষ করি আমাদের দুই অমর শহিদের উদ্দেশে নিবেদিত দুটো 888sport app download apkর ক’টি চরণের উদ্ধৃতি দিয়ে :

১. মাতাল করা মত্ত নেশায়

                                                আত্মপ্রাণ বিসর্জনে

    পারঙ্গমার মন্ত্র তুমি শিখিয়ে দিলে

    তাই তো পারি

    ভাঙতে দেয়াল কারাগারের

                                                গভীর রাতে

    …          …         …

    অনেক কিছুই পারি আবার

                                অনেক কিছুই পারি না তো

    যেমন ধর তোমার 888sport sign up bonus অনুভবের মোহন কলস

    সচল মনের জলপ্রপাত ধরে রাখে সমস্ত দিন

    কখনো তা ভাঙতে পারি

                            ভাঙতে পারি

                                      তুমিই বল?

(‘তোমার 888sport sign up bonus’, কোন লক্ষ্যে হে নিষাদ, ১৯৮৯)

* শহীদ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাকে নিবেদিত।

২. আপনি তো জানতেনই পতাকা ওড়ানো ভাল নয়

    ভাল নয় উন্মুক্ত বক্ষের প্রতিকৃতি অন্যকে দেখানও

    ইচ্ছার বারুদ ধরে দুই করতলে

    ভাল নয় ছুঁড়ে দেয়া জনসমাবেশে।

    …              …               …

    ডাক দিলে যেতে হবে এমন চুক্তি কিছু নয়

                                      অন্তর্গত দংশনে

    ঘর ছেড়ে বাড়ী ছেড়ে বান্ধবীর বাহু ছেড়ে

                                  আপনি ডাকলেই চলে আসব,

                                             আমি আসবই।’

(‘আপনি ডাকলেই’, কোন লক্ষ্যে হে নিষাদ, ১৯৮৯)

* শহিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ হবিবর রহমানের 888sport sign up bonusর প্রতি নিবেদিত।

এই সব 888sport app download apk পড়ে এবং শুনে আমরা পবিত্র হই। ২০১১-এর পর জুলফিকার মতিন আরো 888sport app download apk লিখেছেন। আশা করি, হাল ছাড়বেন না। তাঁর কীর্তির দায়বদ্ধ সংহতি ও বৈচিত্র্য আমাদের আগ্রহ জাগিয়ে রাখে।