রজতজয়ন্তী। এই শব্দবন্ধের মধ্যে প্রাথমিকভাবেই যে-বৈশিষ্ট্য প্রধান হয়ে ওঠে তা হলো গৌরব। পঁচিশ বছরের পরিক্রমা। এক শতাব্দীর এক-চতুর্থাংশ। টোকাইকে নিয়ে রফিকুন নবীর 888sport live chatানুশীলন এবং আমাদের আটপৌরে সহবাস। ১৯৭৮ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার পাতায় যখন টোকাইয়ের আবির্ভাব আমরা দেখলাম এবং মুচকি হাসির লঘুত্বে তাকে প্রশ্রয় দিতে লাগলাম, তখন থেকে বলতে গেলে তার অন্নপ্রাশন পর্যন্ত সে এক আদুল গায়ের আদুরে খোকা, শৈশব আর কৈশোরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। ওই পর্যন্ত যে-বয়স বাড়ে, তার চেয়ে বেশি বয়োপরিণতি তার আর হয়নি। টোকাইয়ের জন্য তা একেবারেই নি®প্রয়োজন। যে-অদৃশ্য তৃতীয় নয়ন নিয়ে সে জন্মেছে তার ওপর কোনো রঙিন চশমার আবরণ না পড়লেই হলো। বুঝতে পারি তার সমবয়সীরা 888sport appsে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়, টোফেল আর জিআরই পরীক্ষার স্কোর বাড়ানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ করে, পুলিশি প্রযত্নে সেলিম-দেলোয়ার হয়ে ঝরে পড়ে অথবা কালা-ধলা নানা নাম ধারণ করে সমাজটাকে ত্রস্ত করে বেড়ায়। তাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে টোকাইয়ের অক্ষয় বয়োসংস্থিতি যেন এক ব্যঞ্জনাময় চ্যালেঞ্জ। তোমরা যতই শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত বাজার বাড়াও, আমি তার সিংহদুয়ারে আছি, তোমরা যতই পাড়ায় পাড়ায় গ্যালারি বাড়াও, বিয়েন্নালের পতাকা ওড়াও আমি ঠিকই আছি নিউজপ্রিন্টের ক্যানভাসে, কার্টুনের বৃত্তে মৌলবাদী দন্ত-শ্মশ্রƒর যতই বিপুল বিকার দেখা দিক, আমার স্রষ্টা রফিকুন নবীর আদর-যত্নে আমি আছি, অবিকল, সচল এবং ক্ষয়হীন।
সৃজনপ্রক্রিয়া ও 888sport live chatচর্চার পর্যবেক্ষণে এই স্থিতি স্বাভাবিকভাবেই কয়েকটা জরুরি অথচ অনুচ্চারিত প্রশ্নের জন্ম দেয়। 888sport live chatী তাঁর কর্মে কালপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে কতটা এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর রূপান্বেষা তাঁকে কতটা উত্তরণ বা পরিণতির পথে হাঁটতে প্ররোচিত করে, সেইসব শনাক্ত করেই আমরা তার মূল্যামূল্য বিবেচনা করি। যদি রক্ষণশীল পরীক্ষকের মোটা কাচের লেন্স দিয়ে দেখি, তাহলে তো মানতেই হবে, এই টোকাই- সিরিজের রেখাভুবন এবং বাণীচয়নের তেমন কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিধিব্যাপ্তি ঘটেনি, সম্ভার 888sport free betয় বেড়েছে, তাতে নবতর সংকেতের সংযোজন হয়নি। এই স্রষ্টা যদি স্টেডিয়ামের দর্শকের মতো শুধু মাঠের খেলাটুকুই দেখেন, একবার পশ্চিম গ্যালারি থেকে, আর একবার পুব থেকে অথবা অন্য দিক বা কোণগুলো থেকে, তাতে আর বৈচিত্র্যের কতটুকু উত্তাপ তৈরি হয়? যাঁরা রনবীর টোকাই নিয়ে 888sport live chatকলার এই তত্ত্বরীতির কেতাবি অভিযোগ তুলবেন, তাঁদের জন্য আমার উত্তর – এই প্রতিতুলনা। যেখান থেকেই দেখি না, খেলাটা নিজেই এক আকর্ষণীয় চলমান প্রক্রিয়া, পর্যায়ভেদে খেলার উত্তেজনার তারতম্য ঘটে, কিন্তু খেলাটা তার চরিত্রের স্বাতন্ত্র্যকে বিজ্ঞাপিত করে যায়। এইসব ভাবনার কথা মনে হলো, চেনা টোকাইকে পুনরায় বর্ণিল অভিজ্ঞতায় আবিষ্কারের মাধ্যমে। ধানমণ্ডির গ্যালারি চিত্রকে আয়োজিত হয়েছে রফিকুন নবীর টোকাই নিয়ে ড্রইং এবং চিত্রসম্ভারের প্রদর্শনী। গত ২৮ মে ২০০৪ থেকে শুরু হয়েছে। লম্বা ফ্রেমে টোকাই-কথা ও চিত্র এবং আলাদা করে সৃজিত অনেকগুলো দৃষ্টিনন্দন এবং চিন্তনপ্রবণ জলরং। টোকাইয়ের ২৫ বছরপূর্তি-উদ্যাপন-উপলক্ষে রফিকুন নবী আবার নতুন করে টোকাইভুবনে প্রবেশ করলেন তাঁর নিজস্ব 888sport live chatসত্তা নিয়ে। গ্যালারি চিত্রকের এই আয়োজন টোকাই এবং টোকাইয়ের স্রষ্টা উভয়ের প্রতি পুনরায় বিশ্লেষণী দৃষ্টিতে তাকাতে আমাদের প্রণোদিত করে। উল্লেখ করা যেতে পারে, টোকাইয়ের ২৫ বছরপূর্তি-উদযাপন-উপলক্ষে গ্যালারি চিত্রকের উদ্যোগে টোকাই শিরোনামে একটি সুদৃশ্য অ্যালবাম-গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এতে স্থান পেয়েছে কয়েকজন বিদগ্ধ কলা-সমালোচকের রচনা এবং বহুসংখ্যক জলরং ও ড্রইংয়ের প্রতিচিত্র।
এই সমাজসত্যটাকে উচ্চারণের পুনরাবৃত্তি থেকে মুক্ত করা যাবে না যে, রফিকুন নবী যে-বিষয়টিকে তাঁর 888sport live chat888sport world cup rateের কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করেছেন, সেখানে কোনো বিবর্তন বা কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি, তাই টোকাই তার শয্যা হিসেবে কখনো ফুটপাথ, কখনো রেলস্টেশন বা কখনো পার্কের বেঞ্চি বেছে নিতে পারে, কিন্তু এই শহরটা বা সমাজটার সমকাল উত্তরকালে পর্যবসিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তার কোনো স্বাস্থ্যগত বা পরিবেশগত রূপান্তর ঘটে না। পঁচিশ বছর ধরে এই অনন্য না-শিশু না-কিশোর আমাদের দৃষ্টি ও অনুধাবনে এই কৌতুকপ্রজ মিউজিয়ম পিস। টোকাই শুধু ভিজ্যুয়াল আর্টের প্রতিনিধিত্ব করে না, অন্য এক সমালোচকের কথাকে 888sport app download for android করে নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, রনবীর টোকাই এক lexicographic contribution, সমাজ-888sport apkের গবেষণাপত্রে এক অনিঃশেষ case study, আমাদের রম্য888sport live footballের এক illustra-tive কাহিনী। এভাবেই টোকাই পঁচিশ বছরের কালসীমায় আমাদের সমাজের এক ক্ষুদে নাসিরউদ্দিন হোজ্জা বা মিনি-বীরবল কিংবা শহুরে গোপাল ভাঁড় হয়ে উঠেছে। সমাজতত্ত্বের সব অধ্যায়েই তো বৈষম্যই হলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, টোকাই এই আড়াই দশক পেরিয়ে আমাদের সমাজের সেই কেন্দ্রের নিরবচ্ছিন্ন প্রতিনিধি। এভাবেই টোকাই নিজেকে সমকালের মিথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। টোকাই বললে বুঝতে পারি, খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী; সমাজের সার্বিক দৃষ্টিতে এক ব্রাত্যজন, উন্নয়নের রাজনীতির সবচেয়ে প্রাণবন্ত প্যারোডি; তার বয়সী শিশুদের প্রতি সমাজের অবহেলার নির্বিবাদী প্রতীক এবং দারিদ্র্যবিমোচন গবেষণা ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট। এইসব ভাবনা তার সংবর্ধনার লঘুত্ব থেকে সমাজের শক্তিবিন্যাসের নানা রৈখিক পাঠের প্রতি আমাদের প্ররোচিত করে। টোকাইয়ের সমাজনীতিঋদ্ধ মিথ অমাাদের আনন্দ দেয়, আবার ক্লান্ত করে; এই কলিকালে সে এক অমৃতের সন্তান, বুঝিয়ে দিয়ে যায় আমাদের অক্ষমার্হ অপারগতার কথা, আমাদের ঐতিহাসিক ব্যর্থতার কথা। ও তো রনবীর সেই মিথ, যে-অদৃশ্য অথচ ভাবনায় চিন্তনে সদাঅস্তিমান, ও আমাদের ছাড়ে না, ওর নিজের জন্য হাসি আর মায়া আদায় করে নেয়, সমাজের অমানবিক সমৃদ্ধির জন্য দাহ সৃষ্টি করে।
রফিকুন নবী ওকে ছাড়েননি, অথবা উলটোটা ও-ই নবীকে নিস্তার দেয়নি। কেন, কীভাবে কোন গ্রহনক্ষত্রের অবস্থানে ওর জন্মলাভ, উধাও হওয়া এবং পুনর্বাসন তার একটা চমৎকার ইতিকথা পাওয়া যায় 888sport live chatীর নিজস্ব ভাষ্যে। 888sport live chatী যদি ওই ভাষ্য সরবরাহ না-ও করতেন, তাহলেও কাহিনীবিন্যাসে আমাদের খুব বেশি শ্রমস্বীকার করতে হতো না। 888sport live chatীর এক বন্ধু এবং অফিসিয়াল ভাষায় বলতে গেলে টোকাইয়ের লিগাল গার্জিয়ান শাহাদত চৌধুরী বলেছেন, এই শিশু হলো একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ কোনো হতদরিদ্র মাতাপিতার এক অনাথ। তাঁর কথার সূত্র ধরে বলতে পারি, সে কোনো এতিমখানায় আশ্রয় খোঁজেনি, এতিমখানার ব্যবসাদারদের থাবা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছে, এভাবেই সে হয়ে উঠেছে এক বাঁধনহারা প্রতিবাদ। সে কায়েমি স্বার্থবাদীদের ব্যঙ্গ করে, কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারে না, অবশ্য ধরে তার অনেক কালোত্তীর্ণ সহোদরকে, পারলে ধরবে একদিন তার তাত্ত্বিক ও নান্দনিক জনক রনবীকে। আমরা টোকাইকে প্রশ্রয় দিই কারণ সে রনবীর কৃতিবিশিষ্ট ড্রইং/ কার্টুনের (?) subject| IB subject -এর যে সহজ-সরল objective তার প্রতি আমরা সামগ্রিকভাবে মনোযোগী নই। আমরা এবং ওরা বললে সমাজ888sport apkের ভাষায় যে other-ness -এর সংজ্ঞার্থ আমাদের কাছে মূর্ত হয়ে ওঠে টোকাই তো তার প্রতিরূপ। স্বার্থবুদ্ধির ঘৃণ্য চালাচালি আর বিভ্রান্তির পাঁকে পা ডোবাতে ডোবাতে, রক্তক্ষরণ-মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া একটা দেশকে যেমনভাবে একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার যাবতীয় কর্মকাণ্ডে আমরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশীদার, তারই সমাজচিত্রে টোকাই অমরত্ব অর্জন করেছে। টোকাই সমাজ888sport apkের বিচারে 888sport appsের অবলা Subaltern -এর কার্টুন অথবা দক্ষ প্রতিনিধি। ও থাকে আমাদের জীবনে বন্যার মতো, খরার মতো, পুলিশি তল্লাশির মতো, লঞ্চডুবির মতো। কার্টুনে (না ড্রইংয়ে?) ও আমাদের আদরের; কারওয়ান বাজারের মিন্তির ভূমিকায় অথবা গ্যারেজ কিংবা ঝুপড়ি চায়ের স্টলে ও আর টোকাই নয়, ট্র্যাফিক সিগনালের ভিড়েও নয়, ওর তখন পারিচায়িক রূপান্তর ঘটে – মিন্তি বা পিচ্ছি বা অধুনা স্বল্পব্যবহৃত ছ্যামড়া।
টোকাইয়ের স্রষ্টার এই সমাজসম্পৃক্তি অথবা দায়বদ্ধতার কথা অতিক্রম করে আমরা এখন তাঁর সৃজনধারার দিকে তাকাতে পারি। তা না হলে সে হবে অবিচারের তুল্য। প্রধানত একটা আপত্তি আমি তুলতে চাই। আর তা হলো এইসব সমাজবৈজ্ঞানিক প্রশ্ন এনে আমরা রফিকুন নবীর চিত্রকলাকে যে-ভিন্নধর্মী বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ করি, তা সংগত নয়। অথবা শুধু কার্টুন বলে টোকাই-চিত্রধারাকে আমরা কি খণ্ডিত করে রাখি না? বুঝলাম, টোকাই-অঙ্কনের মধ্যে রসিকতার অংশটা প্রাধান্য পায়, তাঁর ব্যঙ্গাত্মক নির্দেশনাও আপাতদৃষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু রনবী প্রকৃতপক্ষে কার্টুনের সেই ইতালীয় আদিকথার প্রতি অনেক 888sport live chatসম্মতভাবে বিশ্বস্ত। হয়ত প্রমাণ সাইজের কাগজে আঁকা হয়নি, স্টাইলাস দিয়ে তা ক্যানভাসে বা প্যানেলে ফোটানো হয়নি, কিন্তু তিনি যা করেছেন, তার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এবং হয়ত-বা ফরমায়েশী চরিত্র সত্ত্বেও এগুলো উঁচুমানের ড্রইং। চরিত্রের অদ্বিতীয়ত্ব তাতে কোনো নেতির সৃষ্টি করে না। তাঁর রেখাসমূহ এত জীবন্ত, তার টানে এমন মুনশিয়ানা এবং স্পেস থেকে এমন পরিপ্রেক্ষিতের দ্যোতনা তৈরি হয় যে, শুধু কার্টুনের অভিধায় তা ব্যাখ্যা করতে গেলে ভুল হবে।
টোকাই-অঙ্কনরচনার পঁচিশ বছরের শেষে তার সমীক্ষার গুরুত্ব হয়ত 888sport live chatীও অনুভব করেছেন। টোকাই হারায় না সমাজ থেকে, কিন্তু রনবীর সৃজিত চিত্রমালা হারিয়ে গেছে সঞ্চয় থেকে। আর টোকাই যে আধুনিক মিথ হয়ে আমাদের শৈল্পিক বিবেচনার কেন্দ্রে চলে এল, তার নবায়নে রনবী তাঁর নিজের পছন্দের ও দক্ষতার জায়গা থেকে তাকে আবার আঁকলেন। কথার চাতুরীতে যার ব্যক্তিসত্তার বিকাশ, তার স্বাতন্ত্র্য এবং একাকীত্বকে শুধু রেখার মধ্যে সংস্থাপিত করার আয়োজনে তা যে নিতান্তই কার্টুন হয়ে যায়, যেন নিম্নবর্গের কোনো বিষয়, আর একটু উত্তীর্ণ পর্যায়ে তা ড্রইং আর কার্টুনের যুগলবন্দি, আর তা থেকে নান্দনিক মুক্তির চাবি তো রফিকুন নবীর কাছেই আছে। যে-জলরঙে তিনি সদা প্রাণিত, স্বতঃস্ফূর্ত এবং বর্ণনিপুণ, তার মাধ্যমেই টোকাই-চরিত্রকে তিনি ‘আশরাফ’ করে তুললেন, বনেদি চিত্রকলার সীমানার মধ্যে নিয়ে এলেন। একটা সুনির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি অনুগত থেকেও 888sport live chatী যে অসামান্য কিছু জলরং এঁকেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এবার স্পেসটাকে তিনি রং দিয়ে ভরিয়েছেন, সবুজে-ধূসরে; টোকাইয়ের ভুবন অন্য আলোয়, বহুবর্ণে ফুটে উঠল। চিত্রকরের হাতের ছোঁয়া আর প্রাণের টান রফিকুন নবীর ভাবনা ও 888sport live chatচর্চার প্রতি আবার আমাদের গভীর আগ্রহ ও সমীহ আদায় করে নিল।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.