তথ্যপ্রযুক্তি

ছয়-সাত বছর আগের কথা। আমি যুক্তরাষ্ট্রের বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে একটি সার্কিট ডিজাইন করছি। সেখানে একটি আই.সি ব্যবহার করব, তাই আই.সি.টির কোন পিন কোন কাজ করে জানা দরকার হয়ে পড়ল। আই.সি-র সেই তথ্যগুলো যে মোটা বইটিতে আছে সেটি আমার ঘরে শেলফের উপরের র‌্যাকে। আমি দাঁড়িয়ে বইটি শেলফ থেকে নামিয়ে সেটি খুলে আই.সি.টির তথ্যগুলো পেয়ে যেতে পারি, কিন্তু আমি সেটি না করে অনেকটা অন্যমনস্কভাবে আমার সামনে রাখা কম্পিউটারে কিছু অক্ষর টাইপ করলাম। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আই.সি.টির পিনআউট সংক্রান্ত তথ্য সরাসরি ডাউনলোড করে নিলাম। সার্কিট ডিজাইনে সেই তথ্যগুলো ব্যবহার করার সময় আমি হঠাৎ একটু চমকে উঠে নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কী করেছি? যে-তথ্যটি আমার নাগালের ভেতরে, উঠে দাঁড়ালেই নেওয়া যায়, সেই তথ্যটি সেখান থেকে না নিয়ে আমি নিয়েছি হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো এক সার্ভার থেকে?’ হাতের কাছে রাখা একটি বই থেকে তথ্য নেওয়া আর কয়েক হাজার মাইল দূরের কোনো এক কোম্পানির সার্ভারের তথ্যভাণ্ডার থেকে তথ্য নেওয়া এখন একই ব্যাপার?

বলা যেতে পারে, এই ছোট ঘটনাটির পর আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করেছিলাম যে আমরা, পৃথিবীর মানুষেরা, সভ্যতার একটি নূতন ধাপে এসে দাঁড়িয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তি নামে যে-কথাটি শুনতে শুনতে আমাদের সবার কানের পোকা নড়ে যাবার অবস্থা – সত্যিই সেটি এসেছে এবং বলা যেতে পারে বিষয়টি পৃথিবীর সকল মানুষকে কোনো না কোনোভাবে স্পর্শ করেছে।

তথ্যপ্রযুক্তি নামে পৃথিবীব্যাপী একটি নূতন ধরনের ‘বিপ্লবে’র পেছনে রয়েছে একটি যন্ত্র এবং এই যন্ত্রটির নাম কম্পিউটার। শুধু কম্পিউটারের কারণে এই বিপ্লবটি হয়নি, এর সাথে আরো যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়েছে। তবে কম্পিউটার বিষয়টি না থাকলে এটি ঘটত না। কম্পিউটার নামটি একসময় সম্ভবত যথাযথ ছিল কারণ এটি প্রথমে দাঁড় করানো হয়েছিল হিসাব (ঈড়সঢ়ঁঃব) করার জন্য – এখন নামটি আর যথাযথ নয়। কম্পিউটারের খুঁটিনাটির ভেতরে না গিয়ে বলা যায়, এটি হচ্ছে একটি সহায়ক যন্ত্র (ঃড়ড়ষ) বা টুল। স্ক্রু ড্রাইভার একটি টুল যেটি দিয়ে কোনো জায়গায় স্ক্রু লাগানো যায় বা স্ক্রু তুলে ফেলা যায়। স্ক্রু ড্রাইভার ছাড়া স্ক্রু লাগানো বা তোলা খুব কঠিন – ঠিক উল্টোভাবে বলা যায় স্ক্রু তোলা বা লাগানো ছাড়া স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে অন্য কোনো কাজ করা যায় না। এটি হচ্ছে টুলের বৈশিষ্ট্য – বিশেষ একটি কাজ করার জন্য সেটা তৈরি হয় এবং সেই কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ সেটি করতে পারে না। সেই হিসেবে ঝাঁটা একটি টুল, চামচ একটি টুল – ঝাঁটার কাজ চামুচ দিয়ে করা যাবে না, সে-রকম চামচের কাজও ঝাঁটা দিয়ে করা যাবে না।

কম্পিউটার হচ্ছে একমাত্র টুল যেটি একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি হয়নি। এটি দিয়ে কী কাজ করা যেতে পারে সেটি নির্ভর করে একজনের সৃজনশীলতার ওপরে। বলা হয়ে থাকে, মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে ছোট যন্ত্রটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করেছে সেটি হচ্ছে ভয়েজার-১-২ মহাকাশযান। পৃথিবী থেকে ১৯৭৭ সালে শুরু করে সেটি একটি একটি গ্রহের পাশ দিয়ে গিয়েছে এবং সেই গ্রহটির পাশ দিয়ে যাবার সময় তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। ভয়েজার ১-২-এর পুরো নিয়ন্ত্রণে ছিল একটি কম্পিউটার, ১৯৭৭-এর প্রযুক্তিতে সে-সময় যে কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছিল সেটি বর্তমান কম্পিউটারের তুলনায় একটি হাস্যকর খেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সেই হাস্যকর খেলনাজাতীয় কম্পিউটারটি ভয়েজার ১-২-কে নিখুঁতভাবে গ্রহমণ্ডলীর ভেতর দিয়ে নিয়ে সৌরজগতের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এই উদাহরণটি হচ্ছে কম্পিউটারের ব্যবহারের একটি সুন্দর উদাহরণ।

কম্পিউটার ব্যবহার করে পৃথিবীতে আজকাল বড় বড় অপরাধ করা শুরু হয়েছে। ইলেকট্রনিক তথ্যবিনিময় শুরু হবার সাথে সাথে নিরাপত্তার জন্য বিশেষ 888sport free bet নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রচলন চলে এসেছে। 888sport free betটি যত বড় তার নিরাপত্তা তত বেশি, তবে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করার জন্য বিশাল 888sport free bet এক ধরনের যন্ত্রণার মতো, তাই সেই (ঢ়রহ) নম্বরগুলো খুব বড় নয়। সাধারণভাবে সেটি অনুমান করা সহজ নয়, তাই অপরাধীরা কম্পিউটারকে বসিয়ে দেয় সেই নম্বরগুলোকে খুঁজে বের করতে। একজন মানুষের পক্ষে যেটি অসম্ভব, একটি কম্পিউটারের জন্য সেটি ছেলেখেলা – তাই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের গোপন নম্বর বের করে কোটি কোটি ডলার চুরি করা হচ্ছে! এটি হচ্ছে কম্পিউটার ব্যবহার করে অপকর্ম করার একটি উদাহরণ! কম্পিউটার ব্যবহারের প্রকৃত উদাহরণ হচ্ছে এই দুটি উদাহরণের ভেতরে, বাইরে আরো অসংখ্য উদাহরণ। কম্পিউটার ব্যবহার করে জ্যোতিষিচর্চা করা হয়, ধর্ম-কর্ম করা হয়, সন্ত্রাসীরা যোগাযোগ রাখার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করে, জ্ঞান888sport apk পড়াশোনায় কম্পিউটার ব্যবহার হয়, 888sport live chatী-গায়কেরা কম্পিউটার ব্যবহার করেন। এর শেষ কোথায় হচ্ছে সেটি অনুমান করা কঠিন, অনুমান করা যায় মানুষের সৃজনশীলতাই শুধুমাত্র এর শেষ খুঁজে বের করতে পারবে। তাই একটি সহায়ক যন্ত্র বা টুল হয়েও কম্পিউটার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-পর্যায়ে বিভাগ খোলা হয়, অসংখ্য ছাত্রছাত্রী সেটি নিয়ে পড়াশোনা করে। 888sport apkী আর গবেষকরা তার উন্নতির জন্য শ্রম দেন, ব্যবসায়ীরা সেটি ব্যবহার করে ব্যাবসা করেন এবং সারা পৃথিবীর মানুষ সভ্যতাকে একটি নূতন পর্যায়ে হাজির হতে দেখেন।

কোনোরকম খুঁটিনাটিতে না গিয়ে আমরা যদি কম্পিউটারকে ব্যাখ্যা করতে চাই তাহলে বলা যায় এর দুটি অংশ : একটি হচ্ছে প্রসেসর অন্যটি মেমোরি। প্রসেসরে হিসাব-নিকাশ করা হয়, মেমোরিতে তথ্যগুলোকে সাময়িকভাবে রাখা যায়। প্রথম কম্পিউটার তৈরি হবার পর যত দিন যাচ্ছে ততই একদিকে প্রসেসরের উন্নতি হচ্ছে অন্যদিকে একটি প্রসেসরের সাথে অনেক বেশি মেমোরি যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার কারণে সুফলটা সরাসরি ভোগ করছে কম্পিউটার প্রযুক্তি এবং মোটামুটিভাবে বলা যায় প্রতি কয়েক বছরেই কম্পিউটারের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির অন্য কোনো ক্ষেত্রে এটি দেখা গিয়েছে বলে কেউ দাবি করতে পারবে না।

এই বিষয়টি মানুষকে হঠাৎ একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। মানুষের মস্তিষ্ক এবং কম্পিউটারের কর্মপদ্ধতি এক নয়। কম্পিউটার কাজ করে ডিজিটাল সিগনাল দিয়ে এবং এখানে প্রসেসর আর মেমোরি দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। মানুষের মস্তিষ্কের সংযোগকে বলা হয় নিউরাল সংযোগ, এটি ডিজিটাল নয় এবং সেখানে প্রসেসর আর মেমোরি একই জায়গায়। তারপরেও 888sport apkীরা হিসাব করে মানবমস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করেন এবং আমাদের পরিচিত কম্পিউটারকে মানুষের মস্তিষ্কের সমান ক্ষমতায় পৌঁছুতে কতদিন লাগতে পারে সেটি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করেন। কম্পিউটারের ক্ষমতা যে-হারে বাড়ছে সেটি দেখে অনুমান করা হয় আমরা আমাদের জীবদ্দশাতেই সে-ধরনের একটি কম্পিউটার দেখতে পাবো। তারপরের প্রশ্নটি গুরুতর, সত্যি সত্যি যদি সে-রকম কিছু তৈরি হয়ে যায় তাহলে কি সেখানে মানুষের ভাবনা-চিন্তা বা অস্তিত্বের একটি বীজ বপন করা যাবে? 888sport apkীরা সে-ব্যাপারে এখনো দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ বলেন, যাবে, কেউ কেউ বলেন, যাবে না! আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ বংশধর হয়ত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে।

তবে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের ভূমিকা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। কম্পিউটার বলতেই আমাদের চোখের সামনে যে মনিটর, কী-বোর্ড বা সিপিইউ’র ছবি ভেসে ওঠে, সেটি তার একমাত্র রূপ নয়। ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে গাড়ি, জাহাজ বা প্লেন – প্রযুক্তির এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে এটি জায়গা করে নেয়নি। যে-বিষয়টি একসময় প্রায় অসম্ভব একটি বিষয় ছিল, এখন সেটি সহজ একটি ব্যাপার। পৃথিবীর সকল কম্পিউটারকে যুক্ত করে কম্পিউটারের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এই নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করে অনেক কিছু করা সম্ভব – তার সব আমরা এখনো দেখিনি। যেটি দেখে সবাই অভ্যস্ত আমরা সেটিকে ইন্টারনেট বলি। আমার ব্যক্তিগত ধারণা নূতন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে বলতে হলে ইন্টারনেট হবে তার একটি। ইন্টারনেট তার প্রাথমিক নূতনত্বের উত্তেজনার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, আগামী দশকের ভেতর তার নূতনত্বটুকু ফুরিয়ে যাবার পর আমরা যে তার স্থায়ী ভূমিকাটি দেখতে পাবো সে-বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মানবসভ্যতায় সেটি কী অবদান রাখবে সেটি দেখার জন্য পৃথিবীর মানুষ কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছে।

বড় বড় মনীষীরা পৃথিবীর সকল মানুষের সমান অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। আমার ধারণা, তারা যদি এখন পৃথিবীতে ফিরে আসতেন তাহলে ইন্টারনেট দেখে খানিকটা সান্ত্বনা পেতেন। অনেক বড় বড় রাজনৈতিক নেতা, অনেক রাষ্ট্রনায়ক, অনেক দার্শনিক যেটি করতে পারেননি, পৃথিবীর 888sport apkী এবং প্রযুক্তিবিদরা সেটি করে ফেলেছেন। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী মানুষের কাছে এখন যে-তথ্যভাণ্ডার, পৃথিবীর সবচেয়ে সাধারণ মানুষের কাছেও এখন সেই তথ্যভাণ্ডার। খুব সাধারণ একজন মানুষও এখন তার প্রতিবাদ, তার ক্ষোভ বা আনন্দকে মুহূর্তের মাঝে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে দিতে পারে। পৃথিবীর মানুষের এত ক্ষমতার কথা কি আগে কেউ কখনো চিন্তা করেছিল?

নূতন কিছু নিয়ে উচ্ছ্বাস স্বাভাবিক বিষয়। তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েও সেটি হয়েছে। ভোগবাদী মানুষ এর সাথে জড়িত, তাই তারা অর্থবিত্তকে নিয়ে প্রয়োজন থেকে বেশি মাথা ঘামিয়েছে। যে-888sport apkী আর প্রযুক্তিবিদরা এটিকে গড়ে তুলেছেন তাদেরকে যথাযথ সম্মান না দিয়ে যারা এটিকে নিয়ে ব্যাবসা করেছে – সে-রকম মানুষকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করেছে। কিন্তু এই সকল উচ্ছ্বাস একসময় কমে আসবে। চোখ ধাঁধানো অর্থবিত্তের কুয়াশা কেটে যাবার পর আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সত্যিকার রূপটি দেখতে পাবো – সেটি দেখার জন্যই পৃথিবীর অনেক মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে আছে।

সেটি কী কেউ জানে না – আমার ধারণা সেই ভূমিকাটি হবে পৃথিবীর জ্ঞানভাণ্ডারে তার অবদানটুকু – পৃথিবীর ইতিহাসে সেটি আগে কখনো ঘটেনি। অজানাকে জানার জন্য মানুষের হাতে এখন যে বিশাল অস্ত্র আছে তার কথা কি আগে কেউ কখনো কল্পনা করতে পেরেছিল? সেই অস্ত্র ব্যবহার করে আমরা না জানি কোন রহস্যের দ্বার খুলে দেবো সেটি কে বলতে পারে?