তরুণ মজুমদার : অগ্নিজয়ী পুরুষ

প্রারম্ভবচন

গত ৪ঠা জুলাই ২০২২ সোমবার বাংলা live chat 888sportের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং খ্যাতিমান পরিচালক তরুণ মজুমদার প্রয়াত হলেন। ৯২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুকে আমরা নিশ্চয়ই অকাল প্রয়াণ বলবো না। পরিপূর্ণ বয়সই বলবো বরং। বিস্ময়কর ব্যাপার, ২০১৮-তে যখন তাঁর বয়স ৮০, তখনো ছবি করেছেন তিনি। ফ্রান্সে যেমন জাঁ লুক গদার। ওই ২০১৮-তেই, গদার ছবি করেছেন  ঞযব ওসধমব নড়ড়শ। গদার ও তরুণ সমবয়সী, উভয়ের জন্ম একই বছরে। প্রতিতুলনা হয় না দুজনের মধ্যে, কেবল তথ্যের খাতিরে জানানো গেল। আর কোনো বাঙালি বা ভারতীয় পরিচালক ৮৮ বছর বয়সে live chat 888sport নির্মাণ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তাঁর মতো আয়ুই বা পেয়েছিলেন কজন, এক মৃণাল সেন (১৪.৫.১৯২৩ – ৩০.১২.২০১৮) ছাড়া। মৃণালের শেষ ছবি আমার ভুবন মুক্তি পায় ২০০২-তে, পরিচালকের ৭৯ বছর বয়সে।

তরুণ মজুমদারের জন্ম ৮ই জানুয়ারি ১৯৩১। আর মৃত্যু ৪-৭-২০২২-এ। সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যা ছিল তাঁর। পরে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। বেশ কিছুদিন সরকারি এস.এস.কে.এম. হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে ছিলেন। রক্তে বেড়ে গিয়েছিল ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা। রক্তচাপ নেমে যায় সাংঘাতিকভাবে। পাঁচ জন চিকিৎসক নিয়ে মেডিক্যাল টিম গঠিত হয় তাঁর জন্য। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সৌমিত্র ঘোষ ও চেস্ট মেডিসিনের সোমনাথ কুণ্ডুর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

বিগত শতকের ছয়ের দশকে live chat 888sport পরিচালকরূপে তাঁর আবির্ভাব। প্রথমে ‘যাত্রিক’ নামে তিন জনের একটি দলে মিলে শুরু করেন live chat 888sport পরিচালনা। তাঁর অন্য দুজন সহপরিচালক ছিলেন শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়।১ অতঃপর তরুণ মজুমদারের live chat 888sportযাত্রা, ১৯৫৯ থেকে। প্রথম ছবি উত্তম-সুচিত্রাকে নিয়ে চাওয়া পাওয়া। এটি তিন পরিচালকের যৌথ নির্মাণ, তিনি, দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং শচীন মুখোপাধ্যায়। এঁদের ছবি ‘যাত্রিক’-পরিচালিত ছবি হিসেবে আখ্যায়িত হতো। ‘যাত্রিক’-এর দ্বিতীয় ছবি কাঁচের স্বর্গ। যে ছবিতে দিলীপ মুখোপাধ্যায়কে পরিচালক ছাড়াও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। যাত্রিক-পরিচালিত তৃতীয় ও শেষ ছবি পলাতক।২ ছবিটি তিন পরিচালকের সমবেত নির্মাণ হলেও এ-ছবির পরিচালক হিসেবে তরুণ মজুমদারের নামই প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। ১৯৬৫-তে তাঁর ছবি আলোর পিপাসা দিয়েই পরিচালক হিসেবে তাঁর একক যাত্রারম্ভ।

অতএব তরুণ মজুমদারের প্রকৃত যাত্রা শুরু ছয়ের দশক থেকে। বাংলা live chat 888sportজগৎ তখন একদিকে সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালশাসিত। পাশাপাশি ছবি করে চলেছেন তপন সিংহ, রাজেন তরফদার, হরিসাধন দাশগুপ্ত, অগ্রগামী-অগ্রদূত; করছিলেন অজয় কর, নীরেন লাহিড়ী, অসিত সেন, সুধীর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।৩ একের পর এক live chat 888sport নির্মিত হচ্ছিল, আনছিল বিদেশি 888sport app download bd। বাংলা সিনেমায় উজ্জ্বল তখন উত্তমকুমার, বসন্ত চৌধুরী, অনিল চট্টোপাধ্যায়, কালী ব্যানার্জী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা-সাবিত্রী-মাধবী-অরুন্ধতী-কাবেরী-সুপ্রিয়া। ছবিতে সংগীত রচনা, পরিচালনা এবং কণ্ঠদানে হেমন্ত-শ্যামল-সতীনাথ-সুধীন দাশগুপ্ত, নচিকেতা ঘোষ-গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার-পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়-সন্ধ্যা-লতা-গীতা দত্ত। তরুণ এলেন এ-সময়।

ছয়ের দশক : live chat 888sport বিশ্ব : তরুণ মজুমদার

তরুণ মজুমদার যখন পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, সে-সময় বাংলা আর বম্বের (অধুনা মুম্বাই) ছবি বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উত্তুঙ্গ ধাপে। ফলে তাঁকে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য তীব্র লড়াই করতে হয়েছিল, বলাই বাহুল্য। কলকাতার কথাই যদি ধরি, একদিকে স্টার সিস্টেম, অন্যদিকে ছবির মূলধারা এবং সমান্তরাল, প্যারালাল ধারা (শব্দটি নিয়ে বিতর্ক আছে)৪, এই সমস্ত নিয়ে সাফল্য ও জনপ্রিয়তার শিখরে। পশ্চিমবঙ্গে নদীপ্রবাহের মতো ব্যাপ্ত সিনেমা হলগুলি আজকের মতো মৃত, মৃতকল্প ছিল না, এবং নতুন নতুন প্রেক্ষাগৃহের জন্ম হচ্ছিল live chat 888sportের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে। প্রতিবছর বাংলা ছবির 888sport free bet পঞ্চাশ, ষাট, এমনকি তারও বেশি। ১৯৬৫ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ছবি অবাধে দেখানো হতো পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে। ১৯৬০-৬২-তেই যেসব বিখ্যাত বাংলা ছবি নির্মিত হয়েছে, তার দিকে বিহঙ্গাবলোকনে তাকালেই বোঝা যাবে, কোন তুমুল live chat 888sport এই বৈভবের জলধিতে অন্তরনেস্থ তরুণ মজুমদারের মতো তরুণ এক উচ্চাকাক্সক্ষী ছবি করিয়ে।

দেবী (সত্যজিৎ রায়), কোমল গান্ধার (ঋত্বিক ঘোটক), তিনকন্যা (সত্যজিৎ), ঝিন্দের বন্দী (তপন সিংহ), পুনশ্চ (মৃণাল সেন), সপ্তপদী (অজয় কর), বিপাশা (অগ্রদূত), হাঁসুলি বাঁকের উপকথা (তপন সিংহ), কাঞ্চনজঙ্ঘা (সত্যজিৎ রায়), অতল জলের আহ্বান (অজয় কর), অভিযান (সত্যজিৎ), দাদাঠাকুর (সুধীর মুখোপাধ্যায়) এরকম সব সুখ্যাত পরিচালকের সফল ছবি তৈরির মধ্যে দাঁড়িয়ে নিজের পথ করে নেওয়ার সংকল্পটাই তো সাধুবাদযোগ্য।

তার ওপর আছে বম্বে, আছে হলিউড, যেখানকার ছবির নির্দিষ্ট দর্শক তৈরি হয়ে গিয়েছিল কলকাতায় তো বটেই, এমন কি রাজ্যের নানা জেলায়, শহরে, গ্রামে। ১৯৬০-৬৭ পর্বে সেখানে নির্মিত হয়েছে যেসব ছবি, তার সামান্য কয়েকটি তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে, দর্শকনন্দিত হওয়ার জন্য তরুণ মজুমদারের কতখানি কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ অপেক্ষিত ছিল, মুঘলে আজম, চৌধভী কা চাঁদ, জংলি, গঙ্গা যমুনা, বন্দিনী,, গাইড, তিসার মঞ্জিল, জুয়েল থিফ, এরকম আরো। দিলীপ কুমার-দেব আনন্দ-গুরু দত্ত-শাম্মী কাপুর-মধুবালা-বৈজয়ন্তীমালা-ওয়াহিদা রহমান-নূতন, এঁদের অপ্রতিহত পরাক্রম অভিনয় জগৎজুড়ে। তরুণ মুজমদারকে ভাবতে হয়েছিল, রঙ্গমঞ্চে (live chat 888sport-অঙ্গনে বলা ভালো) ব্যবহারের মতো তাঁর যোগ্য তূণীর কী হতে পারে, বা কিভাবে এমন ছবির দর্শককে তিনি তাঁর তৈরি ছবিতে দর্শক হিসেবে পাবেন। কঠিন চ্যালেঞ্জ নিঃসন্দেহে এবং এ-চ্যালেঞ্জের আরো একটি ধাপ হলিউড তথা বিদেশি ছবির জনপ্রিয়তার মুখে দাঁড়ানো। স্বাধীনতার পরপরই সত্যজিৎ-ঋত্বিক-চিদানন্দদের প্রয়াসে যে ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি’ গড়ে ওঠে, তার ফলে দর্শকের মধ্যে বিদেশি ছবি দেখার প্রবণতা গড়ে উঠতে থাকে। ফিল্ম ফেস্টিভাল এই প্রবণতাকে আরো গতিজাড্য দেয়। শহরে ও মফস্বলে জন্ম নেয় ফিল্ম ক্লাব। প্রাক্-’৪৭-এও বিদেশি ছবি দেখানো হতো, কিন্তু হলিউডের বাইরেও যে বিদেশি ছবির বিশাল জগৎ আছে, আর আইজেনস্টাইন-দভকঙ্কো-কুরোসাওয়া-ফেলিনি-ব্রুকো-গঙ্গারামের অত্যাশ্চর্য ছবি আছে, সে-সম্পর্কে যথাযথ অবহিতির পেছনে কলকাতার ফিল্ম আন্দোলন। তাই বিদেশি ছবির দর্শক জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলছিল। শুভ লক্ষণ নিঃসন্দেহে। পাশাপাশি বাঙালি ছবি-করিয়েদের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জও বটে, কেননা দর্শকরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন স্টানলি কুবরিকের Spartacus (১৯৬০) আর The Birds (১৯৬৮)-তে, হিচককের Psycho (১৯৬৩) আর Lawrence of Arabia (১৯৬০)-তে, হচ্ছে বিলি ওয়াইল্ডার, ফেলিনি, আন্তোনিভানি, অবসন ওয়েলস, গদার আর কুরোসাওয়ায়। ডেভিড লীনের ছবি খধৎিবহপব ড়ভ অৎধনরধ ১৯৬২-তে মুক্তি পেয়ে বিশ্বজয় করার বছরেই তরুণ মজুমদার-দিলীপ মখোপাধ্যায়-শচীন মুখোপাধ্যায় বানালেন কাঁচের স্বর্গ, এবং দর্শকনন্দিতও হলো সে-ছবি। কোন মোজেজায়?

আসলে দর্শকদের সহিষ্ণুতা, বা বলা যাক ইলাসটিসিটির মাহাত্ম্যকে কিন্তু এক্ষেত্রে স্বীকার করতেই হবে। রুচিসম্মত ছবির দর্শক চ্যাপলিন দেখতেন যেমন, ঠিক তেমনি অজয় কর-অগ্রগামী-অগ্রদূত-নীরেন লাহিড়ীর ছবির আনুকূল্যেও পরাক্সমুখ হননি। তাছাড়া মফস্বলের এক বিশাল দর্শক তো কেবল বাংলা ছবিই দেখতেন। হিন্দি বা ইংরেজি ছবি দেখতে অস্বস্তি হতো তাদের ভাষার কারণে। আর যেহেতু তখনকার ছবি বৃহদাংশে ছিল বিখ্যাত 888sport live footballিকদের কাহিনিনির্ভর, তাই দর্শকরাও তাঁদের 888sport live football পাঠের পরিপূরকতা খুঁজতেন এসব ছবি দেখার মাধ্যমে। তরুণ মজুমদার বঙ্কিমচন্দ্র৫, বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, শরদিন্দু, বিমল কর প্রমুখ বাংলার প্রতিনিধিস্থানীয় লেখকদের কাহিনিভিত্তিক ছবি তৈরি করেছেন। এসব ছবির গ্রহণযোগ্যতা ছিল অবধারিত আর ন্যায্য। হলিউড, বলিউড আর টালিউড৬ এই তিন ধারার ছবিই দর্শক সমান্তরালভাবে বা পরিপূরকভাবে দেখতেন। অতএব ছবির জগতে এসে তরুণ মজুমদার এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন – এ-কথাও পাশাপাশি সত্য।

প্রস্তুতিপর্ব

তরুণ মজুমদার জন্মসূত্রে পূর্ববঙ্গীয়। অধুনা 888sport appsের বগুড়া জেলায় তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বগুড়ার ঐতিহ্যিক কৌলীন্য সুবিদিত, প্রাক-আড়াই হাজার বছর প্রাচীন বাংলার সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এই স্থানকে কেন্দ্র করে, মহাস্থানগড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার যার বার্তা দেয় আমাদের। প্রথম বাংলা লিপিও আবিষ্কৃত হয়েছে এ-স্থানটি থেকে। করতোয়া নদী-অধ্যুষিত অঞ্চলটিকে মর্যাদা দিতে ২০১৬-তে এই স্থানটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানীরূপে ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর জন্মের বছর অর্থাৎ ১৯৩১-এই বগুড়ার মহাস্থানগড়ের খননকার্য সেখানে ব্রাহ্মী লিপির সন্ধান দেয়, – দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষজনকে খাদ্য ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করার ও অশোকানুশাসন! আশ্চর্য সমাপতন বইকি!

পড়তেন বগুড়ার করোনেশন হাইস্কুলে, আর সেখান থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করে৭ কলকাতায় আসেন স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়তে। রসায়নে অনার্স করেন। উল্লেখ্য, তাঁর চেয়ে আট বছরের বড় মৃণাল সেনও নিজ জন্মভূমি ফরিদপুর থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে পড়তে আসেন স্কটিশ চার্চ কলেজে। মৃণাল অনার্স ও মাস্টার্স করেছিলেন পদার্থবিদ্যায়।

কিশোর বয়স থেকেই সিনেমা দেখার আগ্রহ ছিল তাঁর। বগুড়ার দুটি চিত্রগৃহ ‘উত্তরা’ ও ‘মেরিনা’ তাঁর আগ্রহকে চরিতার্থ করত। স্বভাবতই চারের দশকেই কানন দেবী-দেবিকারানী-প্রমথেশ বড়ুয়া-নীতিশ মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা। তাঁর এক্ষেত্রে সেটি তাৎপর্যপূর্ণ, ছবি দেখতে দেখতে সমান্তরাল কাহিনি ভাবতেন তিনি। সত্যজিতেও এ জিনিস ছিল। অন্যদিকে সুচিত্রা সেন, যিনি পাবনায় তাঁর বিদ্যালয় জীবন থেকেই live chat 888sportের প্রবল অনুরক্ত, নায়ক-নায়িকার রোমান্সপর্বে ভীষণ প্যাশনেট হয়ে পড়তেন বলে জানিয়েছেন সুচিত্রাকে নিয়ে লেখা একটি বইতে তাঁর বাল্যবান্ধবী ফুলরানী কাঞ্চিলাল।  Morning shows the day.

তরুণ মজুমদারের পরিবারে বাবা-কাকারা স্বদেশি করতেন, জেল খেটেছেন। কলেজে পড়তে পড়তে যখন সিনেমার প্রতি প্রাথমিক প্রণয় জন্মালো, এলেন বড় মামার সান্নিধ্যে, যিনি Eilmland নামে সম্ভ্রান্ত একটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। অতঃপর তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় দেবকীকুমার বসুর (১৮৯৮-১৯৭১)। শব্দ ও সংগীতের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদান ছিল যাঁর, পরিচালক-অভিনেতা-প্রযোজনায় এক কিংবদন্তিপ্রতিম নাম দেবকীকুমার, যাঁর নির্মিত সীতা live chat 888sport ‘ভেনিস’ আন্তর্জাতিক live chat 888sport উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং সম্মাননা ডিপ্লোমা লাভ করে, আর সাগরসঙ্গমে নবম বার্লিন live chat 888sport উৎসবে মনোনীত হয়েছিল গোল্ডেন বিয়ার বিভাগে। তরুণ-দেবকী সান্নিধ্য প্রথমজনের কাছে পরম দৈব আশীর্বাদের মতো। তরুণ মজুমদারকে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে, আত্মপ্রত্যয়ী করতে, আত্মদীপ্ত হতে যা বাতিঘরের যথার্থ ভূমিকা পালন করেছিল।

সে-সময় দেবকীকুমার পথিক ছবি তৈরি করেছিলেন, শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রকে নিয়ে। এটি ছিল মূলত একটি নাটক, তুলসী লাহিড়ীর লেখা। প্রসঙ্গত, নাটকটি ‘বহুরূপী’ গোষ্ঠী অভিনয়ও করে, শম্ভু-তৃপ্তির অভিনয়সমৃদ্ধ হয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়ও হয় সে-নাটক, যেমন হয় তুলসী লাহিড়ীর ছেঁড়া তার, ওই একই নাট্যগোষ্ঠীতে অভিনীত হয়ে।

দেবকীকুমার, সেইসঙ্গে কানন দেবী, তরুণ মজুমদারের জীবনে মোড় ঘোরানোর কাণ্ডারী বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। কানন দেবী  তো অভিনয়, গান আর চিত্র প্রযোজনায় নিজেই ছিলেন একটি মহামহিম প্রতিষ্ঠান। কানন দেবীর মাধ্যমে এবং তাঁর সহযোগিতায় তরুণ মজুমদার ধীর পদক্ষেপ ফেলেন সিনেমাজগতে। কানন দেবীর অপার স্নেহশীলতায় তরুণ মজুমদার নামক নবীন তরুটির বেড়ে ওঠা।

পাঁচ বছর শিক্ষানবীশ ছিলেন তিনি, কানন দেবীর ‘শ্রীমতি পিকচার্স’-এ। দেখেছেন একেকটি live chat 888sport কীভাবে ভ্রƒণাবস্থা থেকে বেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়, অভিনয়, গান রেকর্ডিং, আবহসংগীত (এই আবহসংগীত জিনিসটি বাংলার live chat 888sportে নিয়ে আসার ভগীরথ সেই দেবকীকুমার বসু), সম্পাদনাসহ live chat 888sportের ভেতরকার যাবতীয় জিনিস। জেনেছিলেন live chat 888sportের বহুতর পরিভাষা, সাউন্ড, অ্যাকশন, সাইলেনস, কাট! প্যাকআপ। তখন তিনি ছবি তৈরি করার প্রাথমিক পর্যায়ে। তাঁকে পরিচালক হতে উসকে দিচ্ছেন উত্তমকুমার স্বয়ং, যখন তিনি ‘শ্রীমতি পিকচার্স’-এর ছবি রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত করছেন। সে-ডাকে, আহ্বানে সাড়া দিতে খুব বেশি দেরি হয়নি তরুণের। উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেনকে নিয়েই সিনেমায় প্রথম পদযাত্রা তাঁর, অন্য দুই পরিচালক সহযোগে, যে-ছবির নাম চাওয়া পাওয়া। বাংলা live chat 888sportের ইতিহাসে সোনার তরীর যুগ সেটা। সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের আবির্ভাবে বাংলা ছবি তখন বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠছে, আর তার পাশাপাশি তপন সিংহ-রঞ্জন তরফদার-হরিসাধন দাশগুপ্তরাও (হরিসাধন রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্তর পরবর্তী পর্ব অর্থাৎ শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত 888sport alternative linkের চতুর্থ পর্ব করবেন অচিরেই, নাম হবে বনলতা। প্রযোজক সেই ‘শ্রীমতি পিকচার্স’, অর্থাৎ কানন দেবী, নায়ক-নায়িকা সেই উত্তম-সুচিত্রা) সমানে সক্রিয়।

শ্রীমতি পিকচার্স আর তাঁর প্রথম ছবি করার পর্বের মধ্যবর্তী সময়ে মুক্তি পেয়েছিল পথের পাঁচালী। তরুণ মজুমদারের live chat 888sport চেতনায় বলাধান করেছিল সে-ছবি – কলকাতা বেতারকে দেওয়া তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে, তাঁর নানা লেখায় এ-তথ্যের স্বীকৃতি আছে। ছবিটি তাঁকে এতোটাই বিমোহিত ও বিহ্বল করে যে, তিনি ও তাঁর তরুণ বন্ধুরা হাতে পোস্টার নিয়ে শহর পরিক্রমা করেন, যে-পোস্টারে সিনেমাপ্রেমিকদের প্রতি আহ্বান ছিল, যেন তারা ব্যতিক্রমী ও অসাধারণ ছবিটি দেখে আসার ক্ষেত্রে কার্পণ্য না করেন। live chat 888sportের ইতিহাসে, পথের পাঁচালীর ইতিহাসে ও সর্বোপরি তরুণ মজুমদারের জীবনেতিহাসে যা এক অনন্য নজির হয়ে আছে। যেমন অনন্য নজির পথের পাঁচালী মুক্তি পেলে সজনীকান্ত দাস এগারো জন বন্ধু মিলে সিনেমা হলে যান ছবিটি দেখতে, মোট বারোটি টিকিট কেটে। একটি টিকিট কাহিনিকার বিভূতিভূষণের জন্য। বলা বাহুল্য প্রয়াত তখন বিভূতিভূষণ। টিকিটের চেয়ারটি ফাঁকা ছিল। সজনীকান্তই ছিলেন পথের পাঁচালী 888sport alternative linkের প্রথম প্রকাশক।

জয়যাত্রায় যাও গো, ওঠো জয়রথে তব

যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তরুণ মজুমদার এক কৃতী ও সার্থক পরিচালক; বাংলা ছায়াছবির ইতিহাস নানা কারণেই যাকে 888sport app download for android করবে। একের পর এক তিনি পরিচ্ছন্ন রুচিরই, দর্শকনন্দিত, সহজবোধ্য আর মেধানির্বিশেষে সকলের মনোগ্রাহী ছবি উপহার দিয়ে গেছেন, এবং যাঁর প্রায় সব ছবিই ব্যবসায়িকভাবে সফল।

বাংলা live chat 888sportে তাঁর অবদান কী? কেন তাঁকে উত্তর প্রজন্ম মনে রাখবে? বাংলা live chat 888sportের ইতিহাসে তাঁর আসন কোথায়? আমরা একে একে তা বিশ্লেষণ করে দেখব। তরুণ মজুমদার প্রায়শ কাহিনি নির্বাচন করেন বিখ্যাত লেখকদের রচনা থেকে। বাঙালি দর্শক 888sport live football-অনুরক্ত, অন্তত টেলিভিশন আর মোবাইল যুগে পদার্পণের আগে পর্যন্ত। নির্বাক যুগে বিখ্যাত গল্প-888sport alternative linkের live chat 888sportায়নের সুবিধে ছিল, সেসব ছবির কাহিনি বহু পঠিত-বহু চর্চিত, তাই সংলাপবর্জিত হলেও কাহিনি অনুসরণে বেগ পেতে হতো না দর্শককে। স্ববাক যুগে এসে ধ্রুপদী গ্রন্থের কাহিনির সঙ্গে আরো যখন সংলাপ যুক্ত হলো, যুক্ত হলো সংগীত, তখন তার গ্রহণযোগ্যতা বহুমাত্রিক হয়ে উঠল। তরুণ মজুমদার তাঁর পরিচালক জীবনে যেসব লেখকের কাহিনি নির্বাচন করেছেন, সেসব কাহিনির চরিত্রসমূহ বাঙালির মনে গভীরভাবে প্রোথিত হওয়ার অনুকূল। তাছাড়া আরো একটা বৈশিষ্ট্য তাঁর কাহিনি নির্বাচনে লক্ষ করা যায়। তিনি আগাগোড়া এবং পরিকল্পিতভাবে গ্রামভিত্তিক কাহিনিকে তাঁর চিত্র নির্মাণে প্রশ্রয় দেন। এর দ্বৈত মনস্তত্ত্ব রয়েছে বলে বিশ্বাস আমাদের। এক, গ্রামের বিপুল জনগোষ্ঠীকে দর্শক হিসেবে পাওয়া এবং দুই, শহরের মানুষেরও কিন্তু গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে আগ্রহ ও কৌতূহল রয়েছে এবং সেইসঙ্গে আছে নস্টালজিয়া। কেননা শহরের মানুষের কারো কারো, নতুবা তার পূর্ব পুরুষের শেকড় গ্রামে। তাছাড়া গণদেবতা বা সংসার সীমান্তে, পলাতক অথবা অমরগীতি, নিমন্ত্রণ কিংবা বালিকা বধূর কাহিনি দর্শকের কাছে গ্রামীণ-অগ্রামীণ হিসেবে বিবেচ্য হয় না, বিবেচ্য হয় মানবিকতায়, চরিত্রসমূহের দ্বন্দ্ব নির্মাণে, মূল্যবোধে, বাঙালি মানসের যথার্থ বোধির অঙ্কুরে। তরুণ মজুমদার বাঙালি দর্শকের এই মানসতাটি যথার্থ করতে পেরেছিলেন বলেই তাঁর ছবি বাঙালি মনমানসিকতার আখ্যান হয়ে উঠতে পেরেছে, পেরেছে সদর্থেই জনপ্রিয় হতে। তাই জলসাঘর, দেবী, মেঘে 888sport app তারার দর্শক তরুণ মজুমদার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি।

তরুণ মজুমদারের সিদ্ধি লাভের অপর এবং অত্যন্ত জোরালো কারণ হলো তাঁর ছবিতে গানের ব্যবহার। ভারতীয় তথা বাংলা ছবির অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুযোগমতো এবং সুযোগ না থাকলেও বহু সময় গানের ব্যবহার। প্রাচীনকালের যাত্রা এবং পরবর্তীকালে উনিশ শতকের বাংলা নাটক থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে এ-জিনিস আগত। এজন্য কোনো কোনো ছবিতে আট-দশখানা গান থাকলেও ছবিগুলি পাশ্চাত্য ছবির অনুকরণে ‘মিউজিক্যাল’ শিরোপা পায় না। গান এবং চড়া সুরে অভিনয়, যাত্রাপালা এবং গোড়াকার নাটক থেকে (সম্ভবত রবীন্দ্রনাথই বাংলা নাটককে যাত্রাধর্মী সংলাপ-উচ্চারণ থেকে মুক্তি দেন) পুরনো দিনের সিনেমা, অন্তত প্রাক-সত্যজিৎ পর্ব পর্যন্ত, গানকে অত্যাগসহন করে নিয়েছিল এবং তা বাড়াবাড়ি রকমে। পরে ঋত্বিক/ সত্যজিৎরাও গান আনলেন তাঁদের ছবিতে, তবে তা একান্তভাবেই ছবির মর্মে ঢুকে, আতিশয্যবিহীন ও যথাযথ। এখানে কৌতূহলের বিষয়, মৃণাল সেনের ছবিতে গান, কোনো কষ্টার্জিত অনুসন্ধানে প্রাপ্তব্য নয়। কেবল একটি ছবিতে ছাড়া।৯

তরুণ মজুমদার তাঁর একাধিক ছবিতে বেশ কিছু রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করেছেন। বাংলা ছায়াছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার প্রমথেশ বড়ুয়ার মুক্তি থেকে শুরু হয়ে সাবলীলভাবেই বহমান। সত্যজিৎ কাঞ্চনজঙ্ঘায়, এ পরবাসে রবে কে, কিংবা ঋত্বিক ‘ মেঘে 888sport app তারায়, যে রাতে মোর দুয়ারগুলি, সুবর্ণরেখায়, ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়’ আর যুক্তি তক্কো আর গপ্পোতে ‘কেন চেয়ে আছে গো মা’ গানগুলির অসামান্য প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

ছবিতে তরুণ মজুমদার যেসব রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার করেছেন, তার প্রয়োগ-দক্ষতা ও যাথার্থ্য 888sport live chatরুচিকর। তাঁর ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন আমৃত্যু হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। অধিকাংশ গানই তাঁর কণ্ঠে গীত হওয়ায় সে-গানের মাধুর্য এবং গভীরতা অমিত হৃদয়ে সংবেদী হয়ে উঠেছে।

উদাহরণত আমাদের মনে পড়বে দাদার কীর্তি ছবিতে ‘চরণ ধরিতে দিও গো আমারে’ গানটির ব্যবহার। নিতান্ত সরলসিধে এক তরুণ পরিচিতদের হেনস্থার শিকার হওয়ার পর্বে এই গানটি গেয়েই জিতে নেয় নায়িকা সরস্বতীরূপী মহুয়ার মন। ‘তোমারি করিয়া নিয়ো গো আমারে বরণের মালা পরায়ে’ অংশে নায়িকা কেমন তাঁর কাঠিন্য থেকে বেরিয়ে এসে পেলব, প্রেমাতুর, নাজুক আর সংবেদনশীল হয়ে উঠছে তাতেই উপলব্ধ হয় পরিচালকের সংগীতটির নির্বাচন আর তাকে চরিত্রের সঙ্গে চরিত্রকে গেঁথে দেওয়ার মুন্শিয়ানা। গানটি ছবির সঙ্গে অন্তর্লগ্ন হয়ে আছে।

তেমনি আলো ছবিতে ‘শ্রাবণের ধারার মত’ গানটির প্রয়োগ। এর কাহিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রসঙ্গত বিভূতিভূষণ নিজেও তাঁর গল্পে-888sport alternative linkে বহু রবীন্দ্রসংগীতের প্রাসঙ্গিক ব্যবহার করে গেছেন। সে যাই হোক, আলোতে এমন একটি নাট্যমুহূর্তে রবীন্দ্রনাথের এই গানটি পরিবেশিত হচ্ছে, যখন শহর থেকে আসা সদ্যবিবাহিত এক 888sport promo code গ্রামে শ্বশুরবাড়ি এসেছে। অজ্ঞানধূসর সে-গ্রামে মানুষজন ‘আবাদ করে, বিবাদ করে, সুবাদ করে’ বটে, তবে গৃহবধূরা রবীন্দ্রনাথ থেকে, তাঁর গান থেকে দ্বীপান্তরপ্রতিম দূরত্বে, যাদের দিনযাত্রা শুরু অহেতুক পরশ্রীকাতরতা আর দিন শেষ ঝগড়া আর পরস্পর-বিদ্বেষে। গানটি সেইসব মূঢ় মøান মূকমুখে যে কী জাদুমন্ত্র ছড়িয়ে দিলো, ক্যামেরা প্যান করে মুহূর্তে এ-গানটিকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করে পরিচালক গ্রাম-888sport promo codeদের তমিস্রা থেকে মুহূর্তে আলোয় ফেরাকে চিত্রায়িত করলেন। তাঁর ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার একটি স্বতন্ত্র 888sport liveের বিষয় হতে পারে।

না, কেবল রবীন্দ্রসংগীত নয়। তাঁর সব ছবির পরতে পরতে মিশে আছে একদিকে ধ্রুপদী সংগীতের ব্যবহার, অন্যদিকে লোকায়ত কত গানেরই না প্রয়োগ। যেহেতু তাঁর ছবি মাত্রেই গ্রামীণ পটভূমির, তাই পল্লীসংগীতের অনন্ত বৈচিত্র্য তিনি নিয়ে এসেছেন তাঁর ছবির পর ছবিতে। পলাতক ছবিতে একদিকে যেমন পাই কবির লড়াই, অন্যদিকে ‘জীবনপুরের পথিক রে’ – এই টাইটেল সংয়ে মেলে গ্রাম ও শহর ছাড়িয়ে সুদূরের আহ্বান। বাংলা ও হিন্দি কথাকে তিনি সুনিপুণ বুনে দেন হোলির একটি গান ব্যবহার করে, দাদার কীর্তি ছবিতে। আবার সংসার সীমান্তে ছবি যেহেতু চৌর্যবৃত্তিকার আর রূপোপজীবিনীদের নিয়ে, সেখানে তিনি নিয়ে আসেন আশা ও নিরাশার দ্বৈত সংরাগে রচিত ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত, প্রবল দীর্ঘশ্বাসে উচ্চারিত হতে পারে তাই এ-হেন মুখরা, ‘এই পূজাটা আমায় দিলে সখী সুন্দর সুন্দর পাত পাবি।’ আর রামনিধি গুপ্ত, নিধুবাবু নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন যিনি, তাঁকে নিয়ে করা ছবিতে তিনি নিয়ে আসেন বাংলা টপ্পার বৈচিত্র্য আর বৈভবকে। তরুণ মজুমদারের ছবিতে সংগীতের ব্যবহার নিয়ে গবেষণাগ্রন্থ হতে পারে অনায়াসে। তাঁর ছবিতে লোকসংগীতের ব্যবহার ঋত্বিক ঘটকের লোকসংগীত ব্যবহারের সঙ্গে প্রতিতুলনার যোগ্য নিঃসন্দেহে এবং পরিমাণে তা আরো বেশি, কেননা ঋত্বিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি ছবি নির্মাণ করেছেন তিনি।

এ-প্রসঙ্গে তাঁর ছবি আলোর পিপাসাকে স্বতন্ত্রভাবে দেখতে হবে। সত্যজিৎ রায় তাঁর একাধিক ছবিতে উত্তর ভারতীয় নাচ, বিশেষত কত্থকের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, তৎসহ ঠুমরি ও উত্তর ভারতের নানা বৈঠকি গান, জলসাঘর, জয় বাবা ফেলুনাথ, সোনার কেল্লা, শতরঞ্জ কি খিলাড়িতে। তরুণ মজুমদারের ছবিতে বাঈজি নাচ ও ঠুমরি পরিবেশনের অবকাশ নিতান্ত কম থাকলেও আলোর পিপাসা ছবিতে যথাযথ কাজে লাগিয়েছেন নাচ আর গানের প্রয়োগে।

গান তরুণ মজুমদারের ছবির প্রাণ। তাঁর ছবিতে বারবার রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহৃত হয়েছে বললে দায়সারা কথা বলা হয়ে যায়। ছবিতে নেপথ্য কণ্ঠ888sport live chatীদের নির্বাচনটিকে তলিয়ে দেখলে আমরা বুঝবো, তাঁর live chat 888sportে প্রচলিত রবীন্দ্রসংগীত 888sport live chatীরা যেমন ছিলেন, ঠিক তেমনি এমন 888sport live chatীদের দিয়েও যিনি রবীন্দ্রসংগীত গাইয়েছেন, তাঁরা রবীন্দ্রসংগীত জগতের বাইরের। হেমন্ত মুখোপাধ্যয়, কণিকা বন্দ্যোপধ্যায় (নিমন্ত্রণ ছবিতে সামান্য পরিবেশনা কণিকার ‘দূরে কোথায়, দূরে দূরে’), দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী হোমচৌধুরীর পাশাপাশি তাই দেখি লতা মঙ্গেশকরকে রেখেছেন হেমন্তের সঙ্গে কুহেলি ছবিতে ‘তুমি রবে নীরবে’ গানে, ‘তোমার কাছে এ বর মাগি’ গানে ছবির নাম ভালোবাসা ভালোবাসা। এমনকি 888sport app download apk কৃষ্ণমূর্তি পর্যন্ত গেয়েছেন রবীন্দ্রসংগীত তাঁর ছবিতে, লতার সঙ্গে ভালোবাসা ভালোবাসা ছবিতে – ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে।’ শিবাজীর সঙ্গে সুজাতা চক্রবর্তী ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’ (তবে দ্বৈতসংগীতরূপে গানটির ব্যবহারে আমাদের আপত্তি আছে), ‘আকাশে আকাশে আছিল ছড়ানো তোমার হাসির তুলনা’ অথবা ‘বাঁধিনু যে রাখী পরানে তোমার সে রাখী খুলো না খুলো না’ কি দ্বৈতসংগীতে অর্থহীন হয়ে পড়ে না? তাছাড়া ১৯২৭-এ রচিত এ-গান যখন শাপমোচন নৃত্যনাট্যে ব্যবহৃত হলো, তখন তো গানটি পুরুষের একককণ্ঠে-ই ছিল। উদাহরণ আরো বাড়ানো যায়। ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের বহুল ব্যবহার এবং বিচিত্র 888sport live chatীদের নিয়ে, বার্তা কী এর? প্রথমত তাঁর রবীন্দ্রসংগীতপ্রীতি আর দ্বিতীয়ত তাঁর ছবিতে রবিগান মূর্ত করে তুলবে নান্দনিক মুহূর্তগুলিকে।

রবীন্দ্রনাথেই সীমাবদ্ধ নেই তাঁর কারুবাসনা, তা ছড়িয়ে পড়েছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (‘মলয় আসিয়া কয়ে গেল কানে’, ছবি বালিকাবধূ)  আর অতুলপ্রসাদী গানের ব্যবহারেও (ক্রন্দসী অভিমানিনী)। আর অমরগীতি তো নিধুবাবুর গানে ভরা। এ-কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে, তরুণ মজুমদারের ছবিতে গান নিশ্চিত স্তম্ভের মতো ধরে রেখেছে ছবির কাঠামোকে।

বিষয়টি নিয়ে আরো খানিকটা বিশদ হওয়ার অবকাশ রয়েছে। গানের যে বৈচিত্র্যপূর্ণ স্রোত বয়ে গেছে একের পর এক তাঁর ছবিতে, গীতিকার-সুরকার-888sport live chatী ও অভিনেতা-অভিনেত্রীর সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলা live chat 888sportে তা তুলনারহিত। আর কোনো বাংলা ছবির পরিচালক গানের এই বৈভব নিয়ে আসেননি তাঁদের ছবিতে, অবধারিতভাবে তা বলা যায়। তাই পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা ভুলতে পারি না পলাতক ছবির টাইটেল সং ‘জীবনপুরের পথিক রে ভাই’, ভুলতে পারি না সে-ছবিতেই রুমা গুহ ঠাকুরতার কণ্ঠে ‘মন যে আমার কেমন কেমন করে’ বা ‘চিনিতে পারিনি বঁধু তোমারি এ আঙিনা’ – এখনো 888sport sign up bonusধার্য হয়ে আছে আমাদের। উত্তমকুমার তাঁর যে একটিমাত্র ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, সেই চাওয়া পাওয়া ছবিতে হেমন্তের ব্যতিক্রমী সুরে গাওয়া ‘যদি ভাবো এতো খেলা নয়’ও কি বি888sport sign up bonusযোগ্য? তেমনি তরুণ মজুমদারের ছবি একের পর এক এই অনুপম সংগীতগুলি উপহার দিয়েছে, যা অদ্যাপি মনে অনুরণন তোলে, সুধাময় করে তোলে আমাদের চিত্তকে। ‘টাপুরটুপুর বৃষ্টি পড়ে’ বা ‘খোঁপার ঐ গোলাপ দিয়ে’, অথবা ‘ফুলেশ্বরী, ফুলেশ্বরী, ফুলের মত নাম’, কিংবা ‘কে জেগে আছে’ তেমনি সব 888sport sign up bonusজাগানিয়া গান, বারবার শুনেও যা পুরনো হলো না!

তবে সবচেয়ে বড় চমৎকৃতি, বিস্ময়, গভীরতাসঞ্চারী, বিহ্বলতা সৃষ্টি করা আলোর পিপাসা ছবিতে রোশন বাঈজির নাচ, সঙ্গে ঠুম্রি (আহা! কথার কী জাদু : ‘খির আঙ্গ ম বর্ষাই, পিয়া নাহি আয়ি’), আর তাকে ছাপিয়ে হেমন্তের কণ্ঠে কালিদাসের মেঘাদূত সুরসংযোগে পরিবেশনা, ‘ক্বচিৎ কান্তী বিরহগুরু না’, অনবদ্য। বাংলা ছবিতে কালিদাসকে সরাসরি এনেছিলেন ঋত্বিক তাঁর কোমল গান্ধার-এ, শকুন্তলা নাটকের একটি টুকরো ব্যবহার করে। আর আনলেন তরুণ মজুমদার। এর পরে এনেছিলেন মকবুল ফিদা হুসেন তাঁর গজগামিনী live chat 888sportে। তাঁদের ছবিতে কালিদাসের এই সম্ভ্রান্ত উপস্থিতি নিঃসন্দেহে ছবির নান্দনিকতাকে আকাশচুম্বী করে তুলেছে।

তরুণ মজুমদারের সাফল্যের অন্য যে কারণ, তা হলো তাঁর 888sport live chatী নির্বাচন এবং তাঁদের দিয়ে অভিনয় করিয়ে নেওয়া।১০ তিনি যখন পলাতক করেন, উত্তমকুমার নিজে প্রধান চরিত্রটি করতে প্রলুব্ধ হলেও ছবিতে অনুপকুমারকে মুখ্য চরিত্রে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি অনড় ছিলেন। মূলত কমেডিয়ান অনুপ কুমারকে এ-ছবিতে নির্বাচন যে ভুল হয়নি, ছবিটির ব্যবসায়িক সাফল্যই তার বড়ো প্রমাণ।১১ এ-ছবির হিন্দি ভার্সনে কিন্তু তিনি অনুপকুমারের বদলে বিশ্বজিৎকে উপযুক্ত মনে করেছিলেন। রাংগীয়-এ নায়িকা কিন্তু ছিলেন সেই পলাতক-র সন্ধ্যা রায়। তেমনি বালিকা বধূ বাংলায় করলেন, পার্থ-মৌসুমীকে নিয়ে, কিন্তু হিন্দিতে আনলেন শচীন ও রজনীকে। প্রসঙ্গত তিনি বাংলা ও হিন্দি ছাড়াও একটি ওড়িয়া ছবিরও নির্মাতা – আকুয়া কথা।

ছবির প্রয়োজনে তিনি বহু নতুন মুখ এনেছেন – মহুয়া মুখোপাধ্যায়, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায়, নয়না দাস, তাপস পাল, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়।১২ প্রবীণ অভিনেতা পাহাড়ী সান্ন্যাল, রেণুকা রায়, উৎপল দত্ত, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্ধ্যারানী। পাশাপাশি তাঁর ছবিতে প্রয়োজনে উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, বসন্ত চৌধুরী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মাধুরী মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়, অর্জুন চক্রবর্তীদের মতো বাংলা সিনেমায় স্টার ভ্যালু যাঁদের রয়েছে তাঁদেরও নিয়েছেন। গীতা দে থেকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, আসবানি (হিন্দি ছবির) থেকে সন্তু মুখোপাধ্যায়, প্রেমা নারায়ণ থেকে কোয়েল মল্লিকদের তাই নির্বিকল্প উপস্থিতি তাঁর ছবিতে। তালিকায় বাদ সম্ভবত সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, এরকম অত্যন্ত জনপ্রিয় কতিপয়। আর ছবি বিশ্বাস তাঁর ছবিতে নেই একটি-ই কারণে, তরুণ মজুমদারের live chat 888sportে আসার প্রথম পর্বেই ১৯৬২-তে গাড়ি দুর্ঘটনায় ছবি বিশ্বাসের মৃত্যু। তবে তাঁর একটি ছবিতে ছবি বিশ্বাসের রয়েছে সসম্মান উপস্থিতি ১৯৫৯-এ নির্মিত সে-ছবিটি হলো চাওয়া পাওয়া।

মহৎ 888sport live football থেকে কাহিনি চয়ন (তিনি মূলত 888sport alternative linkের চিত্ররূপ গণদেবতা ছাড়া, দেননি। যে তিরিশটি ছবি করেছেন, তা মূলত ছোটগল্পনির্ভর। আশ্চর্য, ছবিতে যিনি রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহারে অকুণ্ঠ, তিনি কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাহিনি নিয়ে কোনো ছবি করেননি। নিজে না করলেও রমাপদ চৌধুরীর গুরুভার 888sport alternative link বনপলাশীর পদাবলীর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন তিনি, উত্তমকুমার ছিলেন যে-ছবির পরিচালক), ছবিতে গানের সুপ্রযুক্ত ব্যবহার, দৃষ্টিনন্দন বহির্দৃশ্য গ্রহণ, কুশলী অভিনেতা-অভিনেত্রীর সমন্বয়, এসব আয়ুধই তরুণ মজুমদারের সাফল্যের চাবিকাঠি। এই করেই তাঁর একাধিক ছবি গোল্ডেন জুবিলি (৫০ সপ্তাহ) পার করে – ভালোবাসা ভালোবাসা, পরশমণি, আগমন, আপন আমার আপন, আয় করেছে ভালো।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁর ২৫টি ছবির সংগীত পরিচালক। সম্ভবত বিরল বিশ্বরেকর্ড। হেমন্ত ছাড়াও তিনি আর ডি বর্মণ, ভি বালসারা, বাপ্পি লাহিড়ীকেও সংগীত পরিচালকরূপে নেন। মঙ্গেশ দেশাই, যিনি পরবর্তীকালে ভারত তো বটেই, সারা এশিয়াখ্যাত সাউন্ড রেকর্ডিস্ট, ছিলেন পলাতক-এ। সত্যজিৎ রায়ের ইউনিটের বংশীচন্দ্র গুপ্ত (888sport live chat-নির্দেশক), সৌমেন রায় (ক্যামেরাম্যান) ও দুলাল দত্ত (সম্পাদক) তরুণ মজুমদারের ছবিতেও কাজ করেছেন। তাঁর ছবির সাফল্য এসব নেপথ্য বিধানের ফলেই সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, 888sport live footballনির্ভর ছবি নয় বলে তাঁর বেশ কয়েকটি ছবি বক্স অফিসে কিন্তু সাফল্য পায়নি। অন্যদিকে ১৯৬৮-এ নির্মিত গণদেবতা জাতীয় 888sport app download bdে ভূষিত হয়। জাতীয় 888sport app download bd পায় ১৯৬৩ সালে নির্মিত কাঁচের স্বর্গ, ১৯৭২-এর নিমন্ত্রণ। তাছাড়া বিএফজেএ-র মতো সম্ভ্রান্ত 888sport app download bdে ভূষিত হয় তাঁর একাধিক ছবি – নিমন্ত্রণ ১৯৭২ ও সংসার সীমান্তে ১৯৭৬; ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পায় – বালিকা বধূ ১৯৬৭, নিমন্ত্রণ ১৯৭২, সংসার  সীমান্তে ১৯৭৬ ও গণদেবতা ১৯৮০। ২০১৭ এবং ২০২১-এ দুবার পেয়েছেন জীবনকৃতি সম্মাননা।

১৯৭৪-এ সেরা চিত্রনাট্যের 888sport app download bd পান বনপলাশীর পদাবলীর জন্য। ১৯৯০-তে পান পদ্মশ্রী সম্মান।

নিজের নামে ছবি করেছেন ২৯টি, আর যাত্রিক-এর ব্যানারে চারটি। তাছাড়া অভিমন্যু ছদ্মনামে ছবি করেছিলেন একটি।

ছবি পরিচালনা ছাড়াও লেখালেখি করতেন তিনি।১৩ live chat 888sport জগতের বহু মানুষ আর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বই আছে তাঁর – নকশিকাঁথা। লিখেছেন সুবৃহৎ দুই খণ্ডে প্রায় নয়শো পৃষ্ঠায় তাঁর 888sport sign up bonusকথা সিনেমাপাড়া দিয়ে। লিখেছেন কিছু গল্প, মৌলিক চিত্রনাট্য – ভালোবাসা ভালোবাসা। ছবি আঁকার হাত ছিল। কলকাতা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত ছোটদের পত্রিকা আনন্দমেলা-তে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়-রচিত সদাশিবকে নিয়ে কার্টুন ছবি আঁকতেন। ছড়ার হাত ছিল চমৎকার।

নিজের ছবি আর সে-ছবির দর্শন নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা ছিল তাঁর। ছবি নিয়ে তাঁর ধ্যানধারণা, মতাদর্শের কথা তিনি ব্যক্ত করে গেছেন এইভাবে, তাঁর নকশিকাঁথা গ্রন্থে, ‘আমার মডেলটা কী? … একই সঙ্গে যতটা সম্ভব জনপ্রিয় আর যতটা সম্ভব ভালো কাজ করা।’ তাঁর মডেল বরাবর বজায় ছিল, মানতেই হবে।

ছন্দপতন

ব্যক্তিগত জীবনে সন্ধ্যা রায় ছিলেন তাঁর স্ত্রী। প্রথমে তাঁর ছবির  নায়িকা। অতঃপর প্রণয়, বিয়ে, ১৯৬৭-তে। সন্ধ্যা রায় বাংলা live chat 888sportে নিঃসন্দেহে বড়মাপের এক 888sport live chatী১৪, যাঁর সুবিখ্যাত ছবিগুলি হলো, তরুণ মজুমদারের ছবির বাইরে, গঙ্গা (নায়ক নিরঞ্জন দে), মায়ামৃগ (বিশ্বজিৎ), ভ্রান্তিবিলাস (উত্তম কুমার), মণিহার  (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ) এবং অতি অবশ্যই সত্যজিৎ রায়-পরিচালিত অশনিসংকেত (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)।

তরুণ মজুমদারের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই এবং পরে তো অবশ্যই তাঁর ছবিতে অবধারিতভাবে সন্ধ্যা রায়ের উপস্থিতি থাকত। বাংলা live chat 888sportে মৃণাল সেন এবং তপন সিংহও তাঁদের ছবিতে স্ত্রীদের অভিনয় প্রতিভাকে কাজে লাগিয়েছেন বলেই আমরা গীতা সেন ও অরুন্ধতী দেবীর অভিনয় দেখার সুযোগ পেয়েছি।১৫ ব্যতিক্রম সত্যজিৎ রায়। তাঁর সঙ্গে বিজয়া রায়ের বিয়ে হওয়ার আগেই দুটি বাংলা আর দুটি হিন্দি সিনেমায় নায়িকা হিসেবে সুনামের সঙ্গে অভিনয় করলেও সত্যজিৎ তাঁকে তাঁর ছবিতে অভিনয় করাননি।

যাই হোক, এহেন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঠিক কোন মুদ্রাদোষে জানা নেই, আমাদের ‘সন্ধ্যানীড়’ থেকে বেরিয়ে এসে পৃথক জীবনযাপন করতে লাগলেন। জনশ্রুতি, হয়তো তার মূলে সত্য-ও রয়েছে, মহাশ্বেতা রায় নামে ওড়িয়া অভিনেত্রীর জন্যই নাকি এই ছন্দপতন। মহাশ্বেতা তাঁর পরপর বেশ কিছু ছবির নায়িকা হন, একটি ছবিতে তাঁকে আমরা পাই দ্বৈতচরিত্রে (ছবি নির্মাণের গোড়ার দিকে, যখন তিনি যাত্রিক-এর ব্যানারে 888sport sign up bonusটুকু থাক করেন, দ্বৈতচরিত্রে ছিলেন সুচিত্রা সেন), এবং তাঁকে নিয়ে তিনি একটি ওড়িয়া ছবিও করেন। আমরা জানি না তরুণ-মহাশ্বেতা সম্পর্কের সঠিক বিবর্তন ও পরিণতি, তবে তরুণ-সন্ধ্যার সম্পর্ক আর জোড়া লাগেনি। আমাদের মর্মাহত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সত্যজিৎ-মাধবী সম্পর্ক নিয়েও বেদনার্ত হওয়ার বর্ণনা আছে সত্যজিৎজায়া বিজয়া রায়ের আমাদের কথা 888sport sign up bonusকথায়, তবে অচিরেই সত্যজিৎ মাধবীর সঙ্গে সে-সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন। আমরা তপন সিংহ-মঞ্জু দে-র প্রাক্-বিবাহিত গান্ধর্ব সমাচার জানি, যা তাঁদের পরিণয়ে পরিণতি লাভ করেনি, ফলে তপন-অরুন্ধতী দম্পতি হলেন, আর এক মঞ্জু হয়ে গেলেন আরেক মীনাকুমারী বা চিরকুমারী। আমরা প্রসঙ্গটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাই না – ‘কে আর হৃদয় খুঁড়ে …’! আমরা কেবল সন্ধ্যা রায়ের তরুণ-সম্পর্কে মরণোত্তর সংবেদী উচ্চারণ 888sport app download for android করি, ‘একজন সৎ ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন তরুণ মজুমদার।’ বাক্যে ‘ছিলেন’ শব্দটি আপনাদের বড্ড বেশি সায়কবিদ্ধ করে, যে ভালো মানুষটি যথার্থ আধুনিক মনের মানুষও আবার, যিনি এমন একটি আদর্শিক কাজ করে গেছেন, যাতে মুহূর্তে তাঁকে সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল থেকে অধিক 888sport apk download apk latest version ও সম্মান জানাতে হয় – মরণোত্তর চক্ষুদান, দেহদান। যথার্থ আধুনিক ও প্রণম্য তো তিনি এখানেই। সর্বান্তঃকরণে সাম্যবাদে বিশ্বাসী, নিজের কৃতি সম্পর্কে উচ্ছ্বাসহীন, পারতপক্ষে সাক্ষাৎকার না দিতে চাওয়া তরুণ মজুমদার এই বার্তাটিই রেখে গেলেন আমাদের জন্য, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘মৃত্যুর পরেও যেন হেঁটে যেতে পারি।’ সন্ধ্যা রায়ও কি সব ক্ষয়ক্ষতি শেষে তরুণের মৃত্যুতে বারেক মনে মনে বলে ওঠেননি, বঙ্কিমচন্দ্র-অবলম্বনে তরুণের মেগা-সিরিয়াল দুর্গেশনন্দিনীর তিলোত্তমার মতো, ‘ঐ বন্দী-ই আমার প্রাণেশ্বর?’

সত্যজিৎ-তরুণ সমাচার

সমসাময়িকদের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের কী সম্পর্ক, বিশেষ করে 888sport live football-live chat 888sport ব্যক্তিত্বের সঙ্গে, তা আমাদের কৌতূহলের অন্যতম একটি বিষয়। সে-কারণেই ঋত্বিক-সত্যজিৎ সম্পর্ক জানতে আমরা উৎসুক হই। কিংবা 888sport appsের নন্দিত

কথা888sport live footballিক সেলিনা হোসেনের হাঙর নদী গ্রেনেড live chat 888sportায়িত করতে চেয়েও সত্যজিৎ শেষ পর্যন্ত তা না করতে পারায় আমাদের আফসোস হয়। আমরা জানি, আলমগীর কবীরের live chat 888sport নিয়ে সত্যজিৎ অবহিত ছিলেন; জানি নিবেদিতা রায় নামে এক তরুণীকে তিনি শতাধিক চিঠি দিয়েছিলেন, এবং প্রকাশিত হয়েছে তা।

বয়সে প্রায় সত্যজিতের চেয়ে একদশকের ছোট ছিলেন তরুণ মজুমদার। নাইট শোতে বন্ধুরা মিলে পথের পাঁচালী দেখা ও তার-ই অভিভবে রাত জেগে খবরের কাগজের ওপর আলতার রং দিয়ে লেখা, ‘পথের পাঁচালী দেখুন, পথের পাঁচালী দেখা আমাদের কর্তব্য’ লিখে পরদিন বন্ধুদের নিয়ে মৌন মিছিল বের করা ছিল সত্যজিৎ সম্পর্কে তাঁর মুগ্ধতা, বা তারও চেয়ে অধিক, বিস্ময় বোধের প্রমাণ। ঘটনার বহু পরে একবার ব্যাঙ্গালোরে (অধুনা বেঙ্গালুরু) এক live chat 888sportোৎসবে সত্যজিৎকে নিয়ে যে সেশন হয়, সেখানে তরুণবাবু গল্পটি করেন। সেখানে john Warrington Avi Dereck Malcom উপস্থিত ছিলেন। দুজনেই তরুণ মজুমদারকে বলেছিলেন, তাঁরা পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে একটা ছবির রসঢ়ধপঃ সম্পর্কে নানা কথা জানেন। কিন্তু এরকম কদাপি শোনেননি তাঁরা।

তরুণ তখনো চোখে দেখেননি সত্যজিৎকে, শুধু বাঁশি শুনেছেন। ওঁদের মধ্যে দেখা হলো তরুণের চাওয়া পাওয়া করার সূত্রে। ছবির মহরতের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে যান তিনি সত্যজিতের তখনকার লেক টেম্পল রোডের বাসায়। এরপর নানান সূত্রে নানান জায়গায় দেখা হয়েছে দুজনের। পথের পাঁচালী ছবি দেখার পর তরুণের যে উন্মাদনা, তার আগেই কিন্তু দুলাল দত্তের সৌজন্যে তিনি ছবিটির রাশপ্রিন্ট দেখেন টেকনিশিয়ানে, যদিও সেভাবে ছবিটি দেখে (তা-ও অসম্পূর্ণ ছবিটি তখনো) ছবির মাহাত্ম্য ধরতে পারেননি তিনি। তখনো ছবিটির সম্পাদনার কাজটুকু হয়নি।

ফুলেশ্বরী ছবি করছেন তরুণ, ১৯৭১ সেটা। ছবির টাইটেল দৃশ্যে রয়েছে তরুণের লেখা মজার গান ‘ফেলিনি গদার ত্রুফো সত্যজিৎ রায়/ ইহাদের সকলেরে রাখিগো মাথায়।’ এজন্য গদার ত্রুফো, সত্যজিৎ ও ফেলিনির ছবির দরকার। কিন্তু ফেলিনির ছবি মিলছে না। অগত্যা তিনি শরণাপন্ন হলেন সত্যজিতের। সত্যজিৎ তাঁকে এক সপ্তাহ পরে আসতে বলে Sight and Sound, Film and Filmic তন্নতন্ন করে ঘেঁটে বের করে দিলেন ফেলিনির সেই কাক্সিক্ষত মুখাবয়ব। ‘যতদিন গেছে এই মানুষটির পরিচয় পেতে পেতে আমার শুধু মুগ্ধতাই বেড়েছে।’ তরুণ উবাচ, সিনেমাপাড়া দিয়ে বইতে।

সত্যজিতের গুগাবাবা আর তরুণের শ্রীমান পৃথ্বীরাজ – দুটোই পঞ্চাশ সপ্তাহের ওপর চলেছিল। আবার ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি তাঁদের ছবি, এমনটাও হয়েছে। ছবির ব্যর্থতার কারণ নিয়ে সত্যজিৎকে একবার প্রশ্ন করেছিলেন তরুণ। উত্তরে সত্যজিৎ বলেন, ‘দ্যাখো, আমার যে ছবিগুলো চলেনি, পরে ভেবে দেখেছি সেগুলোর মধ্যে অনেক গলদ আছে।’

কা বার্তা

বকরূপী ধর্ম, মহাভারতে পাই, যুধিষ্টিরকে এই প্রশ্নটি করেছিলেন : বার্তা কী? আমরাও তরুণ-তর্পণ সেরে জানতে চাই, এ-মানুষটি কী বার্তা রেখে গেলেন আমাদের কাছে?

উত্তরে চার্লস ডিকেন্সের বিখ্যাত 888sport alternative link A Tale of Two Cities উদ্ধৃত করি গোড়ায়, It was the best of times, it was the worst of times.’ বেস্ট টাইম তরুণ মজুমদারের বাংলা live chat 888sportে পরিচালক হিসেবে আবির্ভাবের ক্ষণটি, কেননা পরিচালকে-অভিনেতায় সুবর্ণ যুগ সেটা। আর এ-সময়ের নেতিবাচকতা কী? একাধিক। ১৬৫টি বাংলা-হিন্দি-উর্দু ও তামিল ছবি উপহার দিয়েছে যে নিউ থিয়েটার্স, হাতির লোগো আর ‘জীবিতাম্ জ্যোতিরেম তু ছায়াম’ মন্ত্র নিয়ে১৬, পঁচিশ বছর ধরে পেশোয়ার থেকে মানপুর পর্যন্ত ছিল যাঁদের ছবির সম্প্রসার, দেশ-বিদেশের দুর্লভ গাছ এনে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছিল যার দামি প্রাঙ্গণ, বীরেন্দ্রনাথ সরকারের সে-প্রতিষ্ঠান তখন মতুকাম। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এখানে নটীর পূজা-র শুটিং করতে এসে এখানকার ছায়াঘেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে বলেছিলেন, ‘এ যেন আমার দ্বিতীয় শান্তিনিকেতন।’ অস্তাচলগামী নিউ থিয়েটার্সের পৃষ্ঠপোষকতা তাই পাননি তরুণ।

কেবল তো নিউ থিয়েটার্সই নয়, এম পি প্রোডাকশন নেই, ইস্টার্ন টকিজ বন্ধ, অরোরা’১৭ ছোট করে এনেছে নিজেকে। বগুড়ার জীবনে নাট্যচর্চা দেখেছেন। কলকাতার বাইরে একমাত্র সেখানেই ছিল রিভলভিং স্টেজ। চার্লি চ্যাপলিন দেখেছেন সুদূর বগুড়ার হলে, তাঁর কৈশোরে। বগুড়ায় কাঁকন ভুঁইয়ার অভিনয় শিরোধার্য করে তাঁর কলকাতায় আসা। বগুড়া শহরের ছোট্ট গণ্ডি থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতায় প্রথম পদার্পণ তাঁর পিতার হাত ধরে পাঁচ বছর বয়সে।১৯ পরে যখন পাকাপাকিভাবে বাস করতে এলেন, তখন তিনি ও তাঁর পরিবার উদ্বাস্তুর লেবাসে আবৃত। নিমাই ঘোষ২০ আর ঋত্বিক উদ্বাস্তুদের নিয়ে ছবি করলেও তরুণ মজুমদারের live chat 888sportচিন্তা অন্য খাত দিয়ে বয়েছে, দেখেছি আমরা।২১ নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি করে গেছেন সে-কাজ, আর পৌঁছেছিলেনও তাঁর কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে।

তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে গিয়ে তাঁর ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা – দেবশ্রী, অয়ন, ঋতুপর্ণা, কোয়েল, প্রসেনজিৎ, কৌশিক প্রমুখ যা বলেছেন তার সারাৎসার দাঁড়ায়, তিনি ছিলেন অসম্ভব সময়ানুবর্তী গম্ভীর অথচ পরিহাসপ্রিয়, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিভাবক। নিঃসন্তান তরুণের

পিতৃশ্রাদ্ধ করেছেন দেবশ্রী রায়, মৌসুমী তাঁর শিক্ষাগুরুকে হারানোর বেদনা ব্যক্ত করেছেন, অয়ন তো নিজ পিতা বলেই মানতেন তাঁকে, উত্তম-দৌহিত্র গৌরব 888sport apk download apk latest versionয় ব্যক্ত করেছেন তরুণের প্রতি তাঁর ঋণ। তাঁর হাতে গড়া মহুয়া ও তাপসের মৃত্যু দেখে যেতে হয়েছে তাঁকে, পুরনো কুশীলবদের মধ্যে তো অনেকের-ই।

ছবির সুবাদে দেশ-বিদেশে ঘুরেছেন, কখনো কোনো প্রযোজকের অঙ্গুলিহেলনে চলেননি, মূলত নিজের ছবির চিত্রনাট্য নিজে লিখলেও প্রয়োজনে অন্য যোগ্য ব্যক্তিকে দিয়েও লেখাতেন, যেমন সংসার সীমান্তে ছবির চিত্রনাট্যকার ছিলেন রাজেন তরফদার।

ইনজেকশনে ভয় ছিল তাঁর।

মৃত্যুর পর নিজ শরীর থেকে চোখ খুলে নেওয়া হবে, গোটা শরীরটা ছিন্নভিন্ন হবে শল্যবিদ্যাশিক্ষণের কাজে, এ-কালের দধীচি তরুণ মজুমদার জানতেন। এই মানবতা আর আধুনিক চেতনা-ই তরুণ মজুমদারের প্রকৃত ও আখেরি বার্তা।

পরিশিষ্টবচন

888sport live chatীরা কখনো অবসরে যান না। তাই তো রোগশয্যায় শুয়ে মৃত্যুর কদিন আগেও রবীন্দ্রনাথ লিখতে (আসলে ডিকটেশন দিয়েছিলেন। লেখার অবস্থা তাঁর তখন ছিল না) পারেন, ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি’। বেগম রোকেয়া মৃত্যুর আগের রাতেও লেখায় মগ্ন ছিলেন। একেই ইংরেজিতে বলে ‘To die in harness’। সত্যজিৎ রায়ের তৈরি ছিল চিত্রনাট্য, ‘উত্তরণ’। করে যেতে পারেননি বলে ছবিটি সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায় করেন।

তরুণ মজুমদারও ভেবেছিলেন শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি নিয়ে সিনেমা বানাবেন ‘জনপদবধূ’। প্রধান চরিত্রে প্রসেনজিৎ আর ঋতুপর্ণাকে নির্বাচনও করে রেখেছিলেন। কিন্তু নীল মৃত্যু উজাগর থেকে যে বাতিল করে দেবে তাঁর ইচ্ছে, তা কে-ই বা জানতো।

যাওয়ার আগে রাঙিয়েও যে দিয়ে গেলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আজীবনের বামপন্থী তরুণ মজুমদার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে সত্যজিৎ রায়ের জন্মোৎসব পালনের অনুষ্ঠানে কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে আঙুর গোপালকৃষ্ণণ, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে আর মঞ্চে উপবিষ্ট শ্রোতাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘পর্দায় কখনো মিছে কথা বলতে নেই। … কেননা লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া হয়।’ আর সত্যজিৎ রায়ের ওপর করা অনীক দত্তের ছবিটি দেখার দায়বদ্ধতা এড়াতে পারেননি এক-ই নৌকোর যাত্রী বলে। এবং তাঁকে অকুণ্ঠচিত্তে বলেছিলেন, ‘আপনি কী করেছেন তা আপনি নিজেই জানেন না।’

তরুণ বাবু আপনি কি জানতেন, আপনি কী করেছেন? মৌচাক ছবিটি নিজে না করে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে সুযোগ করে দিয়েছিলেন প্রযোজককে বলে আর তাইতে ঐ ছবির টাকায়, অরবিন্দ লিখেছেন, টালিগঞ্জে একটি বাড়ি করি।

১. শচীন মুখোপাধ্যায় এককভাবে বেশ কিছু ছবি পরিচালনা করেন যেমন যদি জানতেম, কাল তুমি আলেয়া, নগর দপর্ণে ইত্যাদি তাঁর অধিকাংশ ছবির নায়ক ছিলেন উত্তমকুমার।

দিলীপ মুখোপাধ্যায় প্রথমে ‘যাত্রিক’ দলের একজন ছিলেন। পরে পরিচালনা ছেড়ে অভিনয়ে আসেন। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন উত্তরফাল্গুনী ছবিতে।

২. মতান্তরে চাওয়া পাওয়া, 888sport sign up bonusটুকু থাক, কাঁচের স্বর্গ আর পলাতক এই চারটি ছবি হয়েছিল যাত্রিকের ব্যানারে। আলোর পিপাসা থেকে তরুণ মজুমদার একক পরিচালকরূপে যাত্রা শুরু করেন।

৩. নিমাই ঘোষ, বারীন সাহা এবং চিদানন্দ দাশগুপ্তের নামও একসঙ্গে করতে হবে।

৪. মূলধারা ও প্যারালাল ধারা বিচারের মাপকাঠি কী? শাপমোচন আর সপ্তপদী, কিংবা শ্যামলী ও সাত পাকে বাঁধা যদি মূলধারার ছবি হয়, আর অযান্ত্রিক, রাতভোর বা দেবী প্যারালাল, তাহলে অজয় কর মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে ছবি পাঠিয়ে সুচিত্রা সেনকে সেরা অভিনেতীর শিরোপা পাওয়ান কী করে, যে ফেস্টিভালের বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন প্যারালাল সিনেমারই সত্যজিৎ রায়? উপরন্তু, সত্যজিৎ রায়ের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তাঁর ছবি প্রাথমিকভাবে যাঁদের তিনি দেখাতেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতমই তো ছিলেন, হ্যাঁ, হারানো সুর, পরিণীতা, দত্তা-র নির্মাতা সেই অজয় কর। সত্যজিৎ রায় চিত্রনাট্য লেখেন বাক্সবদল-এর, যে-ছবির পরিচালক মূলধারার, হঠাৎ দেখা ছবিটিও যাঁর, নিত্যানন্দ দত্ত।

কেবল কি তাই, অজয় করের ছবি কাঁচ কাটা হীরে-র চিত্রনাট্যকার কে? মৃণাল সেন। আবার পদ্ম গোলাপ, একবিন্দু সুখ, গড় নাসিমপুর তো মূলধারারই ছবি। পরিচালক অজিত লাহিড়ী। সেই পরিচালকেরই জোড়াদীঘির চৌধুরী পরিবার ছবির চিত্রনাট্য মৃণাল সেন-কৃত।

৫. বঙ্কিমচন্দ্রের দুর্গেশনন্দিনী কাহিনিচিত্র করতে পারেননি তিনি। পরে টিভির জন্য করেন ধারাবাহিক।

৬. হলিউডের অনুকরণে ‘টলিউড’ নামটি দেন আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার ও সাউন্ড রেকর্ডিস্ট উইলফোর্ড ই ডেমিং। নিউ থিয়েটার্সের কর্ণধার বীরেন্দ্রনাথ সরকার। বলা বাহুল্য নামটি হলিউডের সঙ্গে মিল রেখে করা।

৭. সেকালে খুব বিখ্যাত ছিল স্কুলটি, আর কয়েকবার সে-স্কুল থেকে ম্যাট্রিকে স্ট্যান্ডও করেছে। স্কুলের একটি অদ্ভুত প্রথা ছিল যে, ছাত্ররা পায়ে জুতো দিতে পারবে না, চিত্র-সমালোচক নির্মল ধরকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তরুণ।

৮. ‘পাঁচ বছর ওই Unit-এ Umpaid apprentice ছিলাম’, পূর্বাক্ত সাক্ষাৎকারটিতে তরুণ।

৯. অশ্রু নদীর সুদূর পারে।’ তবে নীল আকাশের নিচে ছবিতে হেমন্তকণ্ঠে ‘নীল আকাশের নিচে ঐ পৃথিবী’ আর ‘ও নদীরে’ তো অবি888sport app download for androidীয়।

১০. তাঁর ছবিতে দেখি পিতা-পুত্র নায়ক হয়েছেন। রাহগীর (পলাতক-এর হিন্দি)-এ বিশ্বজিৎ আর আপন আমার আপন-এ প্রসেনজিৎ, যিনি সাত বছর বয়সে ওই রাহগীর ছবিতেই বিশ্বজিতের ছোট বয়সের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। আবার মৌসুমী ও তাঁর মেয়ে মেঘা দুজনকেই দেখি তরুণের একটি ছবিতে অভিনয় করতে।

১১. অনুপকুমার আলোর পিপাসা ছবিতেও ব্যতিক্রমী চরিত্র, খলনায়ক। অনুপকুমার তরুণের অন্তত বারোটি ছবিতে আছেন। সত্যজিতের সৌমিত্র, ঋত্বিকের সতীন্দ্র ভট্টাচার্য-বিজন ভট্টাচার্যের মতোই তরুণের অনুপকুমার।

১২. নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রকৃত নাম পালটেও নতুন নামকরণ করেছেন, পরবর্তীকালে যে-নামে বিখ্যাত তাঁরা।

১৩. সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক আর তপন সিংহের মতোই তরুণ মজুমদারকেও live chat 888sport পরিচালক ও লেখক দুই রূপেই পাই।

১৪. সন্ধ্যা রায়ের অন্য পরিচয় তিনি ভারতীয় লোকসভার একজন সংসদ সদস্য ছিলেন।

১৫. এই সূত্রে হিমাংশু রায়-দেবিকা রানী ও উত্তমকুমার-সুপ্রিয়া দেবীর নামও করা যায়। অভিনেতা উত্তম কুমার নন, পরিচালক উত্তম কুমারের ছবিতেও কাজ করেছেন সুপ্রিয়া।

১৬. এটি নিউ থিয়েটার্সের পরিচয়সূত্র মন্ত্র-ই বলা যাক। আচার্য সুনীতিকুমার এটি লিখে দেন, যেমন ক্ষিতিমোহন সেন রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের এরকম আবাহনমন্ত্র লিখে দিয়েছিলেন – ‘যত্র বিশ্বম্ ভবত্যেক নীড়ম্।’

১৭. নকশিকাঁথা, তরুণ মজুমদার।

১৮. ‘গোটা শহরটাই যেন একটি পরিবার, সকলে সকলকে চিনতাম।’ নির্মল ধরকে দেওয়া সাক্ষাৎকার। পুনর্মুদ্রণ কৃত্তিবাস, ১৬.৭.২০০২।

১৯. বগুড়া থেকে ট্রেনে সান্তাহার, নাটোর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রানাঘাট হয়ে শেয়ালদা আসার চমৎকার এক বর্ণনা পাই তরুণের লেখায়। কলকাতায় এসে উঠেছিলেন বউবাজারের গোপী ঘোষ লেনে, বগুড়া মেসে। এসব বড় মায়িক ছবি সাতচল্লিশপূর্ব বাংলার, অবিভক্ত বাংলার, চিরায়ত বাংলার।

২০. একটিমাত্র বাংলা ছবি করেছিলেন নিমাই ঘোষ, দেশভাগ নিয়ে ছিন্নমূল। দেশে ছবিটি সাড়া না জাগালেও সোভিয়েত ইউনিয়নে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। ১৯৫০-এ মুক্তি পায় ছবিটি, আর সেসময় ছবিতে আসেন রুশ চিত্র-পরিচালক পুদভকিন। ছবিটি দেখে তিনি এতোটাই মুগ্ধ হন যে, ভারত সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ছবিটি রুশ দেশের ১৮১টি সিনেমা হলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। বাংলা live chat 888sportের ইতিহাসে এটি একটি অনন্য নজির। অথচ এই নিমাই ঘোষ পরে বাংলা ছবি করার প্রযোজক না পেয়ে চেন্নাই গিয়ে বেশ কিছু তামিল ছবি করেন। নিমাই ঘোষের খেদোক্তি, ‘‘ছিন্নমূল’ই আমাকে ছিন্নমূল করেছে।’ ছিন্নমূল (১৯৫০) এবং নাগরিক (১৯৫২) প্রাক্-পথের পাঁচালী পর্বের দুটি নিউ ওয়েভ সিনেমা নিঃসন্দেহে।

২১. ‘গোড়া থেকেই আমি একজন জনপ্রিয় পরিচালক হতে চেয়েছিলাম’, লিখেছেন তিনি তাঁর নকশিকাঁথার ‘কেমন ছবি করতে চাই’ নিবন্ধে।