দুটি অ-সাধারণ বই

Schotts Original Miscellaû:

Ben Schott,

Bloomsbury,

London, 2002

The Superior PersonÕs Book of Words :

Peter Bowler

Bloomsbury,

London, 2002.

শিরোনামটি দেখে অনেকেই ভ্রƒকুটি করবেন। আমার যুক্তিটা শুনুন তাহলে। স্কুল-কলেজের অবশ্য-পাঠ্য বইগুলোকে আমরা ‘পাঠ্যবই’ বলে থাকি। কিন্তু এই শ্রেণির বাইরে যে শয়ে-শয়ে হাজারে-হাজারে বই প্রকাশিত হচ্ছে, যেমন, নভেল-নাটক-888sport live-888sport app download apk-জীবনী-ধর্মগ্রন্থ, সেগুলোকে এক কথায় ‘888sport app বই বা সাধারণ বই’ ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নেই। অবশ্য এইসব 888sport app/সাধারণ বইয়ের মধ্যেও কিছু কিছু বই সময়ে সময়ে ‘নিষিদ্ধ বই’ হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। যেমন এক সময়ের লেডি চ্যাটারলিজ লাভার, ইদানীংকালের আহ্মাদিয়াদের প্রকাশিত ধর্মগ্রন্থ, রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস কিংবা তসলিমার ক। ছেলেবেলায় আমাদের গুরুজনেরা আবার কিছু কিছু নভেল-নাটককে আমাদের জন্য ‘অপাঠ্য বই’ বলে ঘোষণা দিতেন। যদিও কথাটা আমি বুঝতাম না। এখনো বুঝি না।  বই কী করে অপাঠ্য হয়? অপাঠ্য অর্থ যদি যা পাঠ করা যায় না বা যা পাঠ করা উচিত নয়,  তাই হয়, তাহলে এখানেও মুশকিল। না-পড়ার জন্য কি কোনো বই লেখা হয়? দুনিয়ার  সব বই-ই তো কেউ-না- কেউ পড়বে বলেই লেখা হয়ে থাকে। যা আপনি পড়েন না, তা আমি পড়ি। বা আমি যে-বই পড়ি, তা আপনি খুলেও দেখেন না। কাজেই ‘পাঠ্যবই’ এবং ‘অপাঠ্যবই’ এ-কথাগুলো আমার কাছে খুব যুক্তিগ্রাহ্য বলে মনে হয় না। যা-ই হোক, আমি যে বইদুটোর কথা লিখতে যাচ্ছি সেগুলো উপরের কোনো ভাগেই পড়ে না। এ-দুটো বইয়ের একটিকেও ‘সাধারণ বই’, ‘পাঠ্যবই’, ‘অপাঠ্য বই’ বা ‘নিষিদ্ধ বই’ এখন পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। কাজেই এ-ধরনের শিরোনাম। পাঠকই বুঝে নেবেন এ-নামকরণ আমার ঠিক কি বেঠিক হয়েছে।

আপনি কি জানেন, গজঝ এজঊঘ কে বা কাকে বলা হয়? এটা হলো সকল জীবিত বস্তুর লক্ষণগুলোর সারসংক্ষেপ (acroûm) : Movement, Respiration, Sensitivity, Growth, Reproduction, Excretion, Nutrition! পি জি ওডহাউস-পাঠকরা অনেকেই হয়ত জানেন যে তাঁর সেই বিখ্যাত চরিত্র ‘উক্রিজ’, যার পুরো নাম Stanly Featherstonehaugh Ukridge -এর মধ্য-নামটির উচ্চারণ হচ্ছে Fanshaw| কিন্তু আপনার কী জানা আছে, যে-নামগুলো লেখা হয় Auchinlech, Cholomondley Marjoribanks কিংবা Wymondham, তার সঠিক উচ্চারণ Af-lech, Chumley, Marchbanks, Wind-am? জনগণের সরকার যে ‘ডেমোক্রেসি’ তা আমরা

জানি। ‘অটোক্রেসি’ কী, তা-ও আমাদের বিলক্ষণ জানা আছে। কোনো পশ্চিমা সমালোচক

তাকে ‘Kleptocracy’ আখ্যা দিয়েছিলেন, এটাও হয়ত আমাদের কারো কারো জানা। কিন্তু আপনার কি জানা আছে ‘Gerontocracy, Hagiarchy বা ‘Kakistocracy কোন ধরনের সরকার (প্রথমটি ‘rule by elderly, দ্বিতীয়টি ‘rule by saints এবং তৃতীয়টি rule by the worst possible)|

কীভাবে জানবেন? সেইসব প্রয়োজনীয় এবং এছাড়াও অনেক অপ্রয়োজনীয় অজস্র তথ্য আছে Ben Schott -এর Schott’ s riginal Miscella নামের দেড়শ পাতার এই বইটিতে। বইটিকে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘trivia’, তার একটি আকর-গ্রন্থ বলা যেতে পারে। কতরকমের পরস্পরবিরোধী প্রবাদ আছে জানতে চাইলে এ-বইটি দেখুন। প্রেমিকেরা যখন বলেন ‘Absence makes the heart grwo fonder’, তখনই আবার কেউ বলে থাকেন ‘Out of sight, out of mind’। এ-রকমের পরস্পরবিরোধী প্রবাদবাক্যের গোটা বারো উদাহরণ পাওয়া যাবে এই বইতে। প্রেমিক-প্রেমিকার অস্ফুট গুঞ্জনের যে-শব্দ, তার মাত্রা কত, তা জানেন কি? ৩০ ডেসিবেল (soft whisper), বলছে এই বই। জেম্স বন্ডের কল্যাণে আমি-আপনি সবাই মোটামুটি জানি কে গও ৫ আর কে গও ৬? কিন্তু জানেন কি গও ২ হলো responsible for Russia and Scandinavia এবং গও ১৪ হলো German experts? মনে আছে কি, কোনান ডয়েলের কোনো কোনো শার্লক হোম্স গল্পে ‘Baker Street Irregulars হোম্সকে খবর সংগ্রহ করে সাহায্য করেছিল? কারা এই ‘বেকার স্ট্রিট ইরেগুলারস’? এরা হলো লন্ডনের ডজনখানেক টোকাই, যাদের নেতার নাম ডরমমরহং। হোম্স এদের প্রত্যেককে রোজ এক শিলিং করে দিতেন। যেখানে পুলিশ বা হোম্স নিজে গেলে সবাই চিনে ফেলবে, সেখানে এই বাহিনীকে দিয়ে তথ্য বা ক্লু খোঁজ করাতেন হোম্স। যে মূল্যবান তথ্য যোগাড় করে দিত, সে পেত এক গিনি। আপনি যদি ‘মার্টিনি’ বা ‘ব্লাডিমেরি’র রেসিপি চান, যদি জানতে চান, লন্ডনের কোন ক্লাবে আপনি আজো আপনার স্ত্রী বা বান্ধবী নিয়ে যেতে পারবেন না, অথবা কোন ক্লাবে আপনি সদস্য হলেও আপনার স্ত্রী বা বান্ধবী বড়জোর অ্যাসোসিয়েট সদস্য হতে পারবেন, কিংবা যদি আমেরিকান বা ব্রিটিশ বান্ধবীকে শাড়ি পরতে শেখাতে চান, তাহলে এই বইটি উপহার দিন (এর পৃষ্ঠা ৮৭-তে শেষোক্ত বিষয়ে সচিত্র 888sport world cup rate রয়েছে)। কে লিখেছিল এই লাইনটি -ÕSums are not set as a test on Erasmus’, আর এই লাইনটির বৈশিষ্ট্যই বা কী? উত্তর: ডব্লিউ এইচ অডেন এবং এটি একটি ‘প্যালিনড্রোম’ অর্থাৎ দুদিক দিয়ে পড়লেই একই বাক্য পাওয়া যায়। টেড হিউজেসের মৃত্যুর পর বর্তমানে কে হয়েছেন ব্রিটেনের পোয়েট লরেট বা কোন তিনজন কবি পোয়েট লরেট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন? (এখন পোয়েট লরেট অ্যানড্রু মোশন এবং প্রত্যাখ্যানকারী তিন কবি টমাস গ্রে, ওয়ালটার স্কট ও স্যামুয়েল রজার্স।) এসব হরেকরকম বিচিত্র তথ্য এবং সেই সাথে বাড়তি নানা ধরনের সরস টীকাটিপ্পনি পড়তে হলে – অবশ্য পড়তে যে হবেই তা বলব না – আপনাকে এ-বইয়ের পাতা ওলটাতেই হবে। সুকুমার রায়ের ‘কি মুশকিল’ 888sport app download apkটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। সেই যেখানে বই চোখের সামনে ধরে পথে হাঁটতে হাঁটতে একজন জানতে চাইছিল, ‘সব লিখেছে এই কেতাবে দুনিয়ার সব খবর যত/ সরকারি সব অফিসখানার কোন্ সাহেবের বেতন কত/ কেমন করে চাটনি বানায়, কেমন করে পোলাও করে/ হরেকরকম মুষ্টিযোগের বিধান লিখছে ফলাও করে শুধু লেখেনি, ‘কেবল দেখ পাচ্ছিনাকো লেখা কোথায়/ পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া কেমন করে ঠেকাব তায়’। মনে হয়, ভালো করে খুঁজলে এই বইটিতে পাঠক এ-প্রশ্নটিরও উত্তর পেয়ে যেতে পারেন।

কেন এই বইটি আপনি পড়বেন বা লেখক কেন এই বইটি লিখলেন (বা সম্পাদনা করলেন)? স্কট এ-প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি। তবে বইটির ডাস্ট জ্যাকেটে উদ্ধৃত ডক্টর জনসনের এই লাইন কটি বোধহয় সে-প্রশ্নের জবাব দিয়েছে : ‘There is nothing, Sir, too little for so little a creature as man. It is by studying little things that we attain the great art of having as little misery and as much happiness as possible.’ লন্ডনের দি ইক্নমিস্ট সাপ্তাহিক কেন ২০০২ সালের উল্লেখযোগ্য বিশ-পঁচিশটি বইয়ের তালিকায় এ-বইটির নাম তুলেছিল এবং ২০০৩ সালেও অন্য আরেকটি বইয়ের কথা লিখতে গিয়ে এই বইটিকে সে-বছরের বড়দিনের একটি ‘publishing phenomenon’ বলেছিল, তা বুঝতে হলে বইটি আপনাকে একবার নাড়াচাড়া করে দেখতেই হবে।

আড্ডায় বা কফি হাউজের টেবিলে বসে আপনি কী বলবেন এবং কী ধরনের শব্দ প্রয়োগ করবেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কথার ফাঁকে ফাঁকে আপনি যদি এমন দু-একটি শব্দ খুব ক্যাজুয়ালি জুড়ে দিতে পারেন যা শ্রোতাদের কেউ কখনো জানা তো দূরের কথা, শোনেনই নি, তাহলে আপনার প্রতি শ্রোতাদের ভক্তি বেড়ে যাবেই। ধরুন, কথা হচ্ছে কারো লেখাপড়া সম্বন্ধে। আপনি বলে ফেললেন, ‘ও তো ফুংষবীরপ, ওর আর লেখাপড়া কী হবে?’ সবাই চুপ করে গেল। কেউ কেউ খুব সমঝদারের ভান করে আপনার কথার সায় দিয়ে বলল, ‘তা তো বটেই।’ আসলে ডিসলেক্সিয়া হচ্ছে এক ধরনের রোগ যা হলে মানুষের অক্ষর চিনতে, পড়তে এবং লিখতে অসুবিধে হয়। তবে এ-ধরনের চালিয়াতির আবার বিপদও আছে। একবার যদি জানাজানি হয়ে যায় যে আপনি খামোকা বিদ্যে জাহির করার জন্য অকারণে দুর্বোধ্য সব শব্দ ব্যবহার করে থাকেন তাহলে হয়ত আপনাকে তারা ‘ষবীরঢ়যধহরপ’ পদবি দিয়ে বসবে। লেক্সিফ্যানিক মানে হচ্ছে, ‘Given to the use of pretentious terminology. এ-ধরনের বেশ কিছু শব্দের (মোট পাঁচশ) একটি তালিকা পাওয়া যাচ্ছে Peter Bowler -এর লেখা The Superior Person’ s Book of Words বইতে। সম্পাদক বইটির ‘মুখবন্ধে’ই লিখেছেন, ‘Words are not only tools; they are also weapons. The first object of this book is to provide the ordinary man … with nwe and better verbal weapons…’ পিটার বাউলার আরো বলছেন, যেসব লোক কথায় কথায় অম্লানবদনে ‘egregious’, ‘pejorative’ কিংবা ‘pusillanimous’ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে তারা আমাদের কাছে অন্য সকলের চাইতে খানিকটা ‘আনফেয়ার অ্যাডভান্টেজ’ পেয়ে থাকে। ডিবেটে কিংবা তর্কবিতর্কে আমরা তাদের কথা সহজেই মেনে নিই। তার কারণ কিন্তু এ নয় যে তাদের যুক্তি বেশি জোরালো। কারণটি হচ্ছে, তাদের এইসব শব্দপ্রয়োগ আমাদের তাৎক্ষণিকভাবে বোকা বানিয়ে দেয়। কাজেই কথা আর না বাড়িয়ে আমরা তাদের যুক্তিই মেনে নিই। সম্ভবত এ-কথা মনে রেখেই বইটির লেখক (সম্পাদক) যাকে আমি ‘মুখবন্ধ’ বলেছি, এক্ষেত্রে যেটা হতে পারত ‘foreword’ – সেখানে ব্যবহার করেছেন ‘Prolegomena’ শব্দটি, এবং বইটির প্রথম  পাতায় অস্কার ওয়াইল্ডের এই মোক্ষম বক্তব্যটি জুড়ে দিয়েছেন, ‘Be warned in time, James, and remain, as I do, incomprehensible: to be great is to be misunderstood.’।

পিটার বাউলারের বইটি হচ্ছে যারা ‘শব্দ নিয়ে খেলা’ (কবি শঙ্খ ঘোষের এই নামের বইটি অবশ্য মূলত বাংলা বানানের নিয়মের বই) করতে ভালোবাসেন এবং নানারকম নতুন শব্দের সন্ধানে আছেন তাঁদের জন্য একটি  নতুন আকর্ষণ। এতে আছে, ‘From AEAEAE (Magic)     to ZZAAJOANW (a Maori drum), a dictionary for every lover of good words, neglected words  anddownright mad words.’ [শব্দগুলো অনেকটা রবীন্দ্রনাথের বাচস্পতির (বাচস্পতি, গল্পসল্প) ‘দি হাব্বারফ্লুয়াস ইনফ্যাচুফুয়েশন অব আকবর’-এর মতো শোনাচ্ছে, তাই না?] যাই হোক, সংকলক শুরুতেই বলেছেন যে এই বইয়ের পাঁচশ শব্দ চয়ন করেছেন তিনি অনেক জায়গা থেকে এবং এগুলোর যথার্থতা একেবারে, তাঁর ভাষায়, ‘impeccable’। অতঃপর এই শব্দটিরই বিবর্তনের ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, শব্দটির মানে হচ্ছে ‘Faultless; not able to be faulted’, তবে একসময়ে তা মানুষের চরিত্রগত বা নৈতিক ত্রুটির ইঙ্গিত করলেও কালের বিবর্তনে এখন কেবলমাত্র মানুষের ‘রুচি’ বা ‘সৌন্দর্যবোধ’ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। যেমন বলা হয়, ‘Faultless; not able to be faulted’ কিংবা ‘a person of impeccable taste’. এই নিখুঁত রুচির মানুষটি আমাদের চিনিয়েও দিয়েছেন লেখক, ‘As, for instance, the person who gave you this book for your birthday!’ সংকলকের এই বইতে ‘modesty’ শব্দটির কোনো প্রতিশব্দ দেখেছি বলে মনে পড়ছে না!

এ-ধরনের কঠিন এবং অপ্রচলিত শব্দের অভিধান আর নেই কী? নিশ্চয়ই আছে। তবে এই বইতে শব্দগুলোর বিবর্তনই শুধু নেই, রয়েছে কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে (real life situation) এই শব্দগুলো ব্যবহার করে আপনি যে একজন ‘সুপিরিয়র পারসন’ তা প্রমাণ করবেন। অনেক নমুনা-বাক্য দেওয়া আছে যেগুলো দেখাচ্ছে, ‘hwo they can be used to confuse, deter, embarass, humiliate, pyyule, deceive, disconcert, alarm, insult, intrigue or even compliment – and all with relative impunity.’ ধরুন অফিসের অসুস্থতাজনিত ছুটির দরখাস্তে ‘কী অসুখ’ এই প্রশ্নের কলামে আপনি লিখে দিলেন ‘aprosexia’। আপনার ছুটি না হয়ে পারে? এই শব্দটিতে ‘সেক্স’ কথাটি দেখেই অন্য কিছু ভেবে বসবেন না। অসুখটি কোনো এসটিডি (সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ) নয়, অ্যাপ্রোসেক্সিয়া শব্দটির অর্থ কোনো কিছুতে মনোযোগ না দিতে পারা। ভুল করে ছোটভাইয়ের ঘরের দরজা খুলে উঁকি মেরেই দেখলেন সে তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আড্ডায় মশগুল। সিগারেটের ধোঁয়া, স্টিরিও-র উচ্চগ্রাম, কফি আর ঘামের গন্ধ সব মিলিয়ে একটা অসহ্য অবস্থা। আপনি রাগতে পারেন না। মুচকি হেসে তাকে ‘তুই একটা noisome oligophreniac’ বলে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে সরে পড়লেন। ছেলেবেলায় স্কুলের মাস্টারমশায় শিখিয়েছিলেন ‘etc’ না লিখে লিখবি ‘and the like’। পিটার বাউলার বলছেন, ‘সুপিরিয়র পারসন’ কখনো ‘etc’ বলে না, সে বলে, ‘et hot genus omne’।

সমস্যাটা কিন্তু বলাতেই। কীভাবে বলবেন? কীভাবে উচ্চারণ করবেন ‘slubberdegullion’ (সপ্তদশ শতাব্দীর কটূক্তি, যার মানে ‘অপদার্থ’, ‘হতচ্ছাড়া’)-এর মতো শব্দ? তার কোনো নির্দেশ নেই এই অভিধানে। দু-একটি শব্দ ছাড়া কোনো শব্দেরই উচ্চারণের বিষয়ে কিছু বলার নেই। পরশুরামের ‘দক্ষিণ রায়’ (দক্ষিণ রায়, কজ্জলী) গল্পের ‘বকুলাল’কে বাঘ বানিয়ে দিয়ে চলে যাবার সময়ে বকুলাল যখন কেঁদে ব্যাঘ্রদেবতাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘বাবা, এ কী করলে? আমি ভাত খাব কী করে? শোব কোথায়? সিল্কের চোগা-চাপকান পরব কী করে?’ তখন ব্যাঘ্রদেব যেমন তাকে ‘যাও ভাগো, শত্রু পাকড়কে পাকড়কে খাও’ বলে চলে গিয়েছিল, তেমনি লেখকও এই কঠিন কঠিন শব্দ দেখিয়ে বললেন, এগুলো ব্যবহার করেই ‘সুপিরিয়র পারসন’ হতে পারা যাবে। কিন্তু কীভাবে এই শব্দগুলো উচ্চারণ করা হবে তার জবাবে প্রায় ব্র্যাঘ্রদেবতার মতোই বললেন, ‘The reader who genuinely wishes to equip himself with the vocabulary of a Superior Person should be prepared to submit to the intellectual discipline of finding out the pronunciations for himself.’

এই বইতে পাওয়া শব্দগুলো ব্যবহার করুন আর না-ই করুন, একজন সুপিরিয়র পারসন হবার বাসনা আপনার থাকুক বা না-ই থাকুক, বইটি নেড়েচেড়ে এবং বইটিতে এইসব কঠিন শব্দের বিবর্তনের সরস বর্ণনা পেয়ে আপনার ভালো লাগবেই। শব্দের মানের কী রকম বিবর্তন ঘটতে পারে এবং একজন দক্ষ খেলোয়াড়ের হাতে শব্দের খেলা যে কত জমতে পারে, তা জেনে কার না আনন্দ হয়? বোধহয়, শব্দের এই অসামান্য খেলোয়াড়দের মধ্যেই একদা এক শিক্ষক তাঁর ক্লাসে এক ছাত্র ‘marriage’ কী ধরনের ‘word’, মানে কোন পদ, (parts of speech) জানতে চাওয়ায় বিষণ্ন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘Marriage, my dear  student, is not a word … it is a sentence’।

যে-বইদুটির কথা লেখা হলো, সেগুলো কোনোমতেই একবারে পড়ে ফেলার মতো বই নয়। হাতের কাছে রেখে দিয়ে চাট্নির মতো একটু একটু করে উপভোগ করার মতো বই। বলা যেতে পারে, ‘Impossible to read at one sitting, but utterly unputdownable.’ জ্ঞানতাপস অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক একবার এই আলোচককে এ-ধরনের কিছু বই সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে-কথাই বলেছিলেন। বলেছিলেন, কিছু বই আছে যেগুলো তিনি একবারে পড়ে ফেলেন না এবং একবার পড়েন না। হাতের কাছে রেখে দেন এবং মাঝে মাঝে একটু একটু করে পড়েন এবং তার মধ্য দিয়ে জীবনের ‘স্মল প্লেজারগুলোকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন।