দৃশ্যকলার বিশ্বায়ন বৈশ্বিকতা ও স্থানিকতা

আবুল মনসুর
বিশ্বায়ন বলতে যদি ‘দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে’ বুঝি তবে  সে-বিশ্বায়ন তো মানবজাতির সূচনালগ্ন থেকে  চলেছে। গোষ্ঠীবদ্ধ আদিম মানব স্থান থেকে স্থানান্তরে যাতায়াত করেছে, উন্নততর গোষ্ঠীর উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতাকে আত্তীকৃত করেছে। বিশাল সভ্যতাগুলি জ্ঞানার্জন ও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দুর্গম স্থল ও জলপথ অতিক্রম করে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ধর্ম, দর্শন, গণিতশাস্ত্রের সূচনায় গ্রিক-রোমান ও ভারতীয় সভ্যতার অবদান অসামান্য। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দার্শনিক-বৈজ্ঞানিক-গণিতবিদ আল বেরুনি বলেছেন, তিনি গণিত শিখেছেন হিন্দু পণ্ডিতের পায়ের কাছে বসে। একইভাবে মধ্যযুগে মুসলিম বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক-চিকিৎসক-গণিতবিদরা বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারে রেখেছেন বিপুল অবদান। আধুনিককালে 888sport apk ও প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে মূলত পাশ্চাত্যের অবদানে। স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি একদিকে যেমন গ্রিক ভাস্কর্যরীতি ভারতের গান্ধার888sport live chatে প্রভাব ফেলেছে কিংবা পারসিক চিত্রধারা এ-অঞ্চলের চিত্রকলাকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি বাংলার বৌদ্ধবিহারের স্থাপত্যশৈলী উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ছাড়াও পূর্বে সুমাত্রা, জাভা হয়ে কম্বোডিয়া পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। এমনকি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর অশোকস্তম্ভে পার্সেপোলিটান 888sport live chatের প্রভাব চোখে পড়ে।
তবে বিশ্বায়নের এ-প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক বিকাশ ক্রমশ রূপান্তরিত হয় শক্তিমান-দুর্বলের এক অসম ও নেতিবাচক কার্যক্রমে। পশ্চিমে অষ্টাদশ শতকে বিকশিত 888sport live chatবিপ্লব নিয়ে এসেছিল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বা পুুঁজির বিকাশ যা কালক্রমে গড়ে তোলে ঔপনিবেশিক শোষণের নির্মম প্রক্রিয়া। শত শত বছরের সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচার, শোষণ ও লুণ্ঠন উপনিবেশগুলির উৎপাদন ও স্বাবলম্বী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উপনিবেশগুলি মোটামুটি স্বাধীনতা অর্জন করলেও তারা হয়ে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু ও নির্ভরশীল। অন্যদিকে একই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পশ্চিমাবিশ্বে সঞ্চারিত করে জ্ঞান ও অন্বেষার এক ধারাবাহিক চর্চা। এর ফলে ঔপনিবেশিকতা যে শুধু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করেছিল তা-ই নয়, উপনিবেশিত জাতিগোষ্ঠীকে মানসিকভাবেও হীনমন্য ও নির্ভরশীল করে তুলেছিল। এ হীনমন্যতার বোধ এমনভাবে মানসজগৎকে আচ্ছন্ন করে ফেলে যে, ঔপনিবেশিকতার নিগঢ়মুক্ত দেশগুলিতে স্বাধীনতা ও স্বশাসনও সে-মানসপ্রক্রিয়া থেকে মুক্তি দিতে পারে না, যাকে ‘উত্তর-ঔপনিবেশিক মানস’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে। 888sport live chat-সংস্কৃতির চর্চাতেও আমরা সম্ভবত উত্তর-ঔপনিবেশিক  সে-মানসবন্ধনকে এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের য়ুরোপীয় রেনেসাঁস থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পাশ্চাত্য 888sport live chatের বিকাশ মোটামুটি একরৈখিকভাবে ঘটেছে বলা যেতে পারে। এই সময় থেকে চিত্রকলা ও ভাস্কর্যে পশ্চিমা 888sport live chatের প্রধান অভীষ্ট লক্ষ্য ছিল দৃশ্যমান বাস্তবতার অনুরূপ প্রতিলিপি নির্মাণের দক্ষতাকে অর্জন। বিশেষ করে চিত্রকলার দ্বিমাত্রিক ভূমিতে ত্রিমাত্রিক বস্তুবিশ্বের এমন বিশ্বাসযোগ্য বিভ্রম সৃষ্টি করা যা দর্শকের দৃষ্টিতে একটি ¯পর্শযোগ্য (Tactile) অনুভূতির জন্ম দেয়। পরিপ্রেক্ষিত, অস্থিসংস্থানবিদ্যা ও আলোছায়ার 888sport apkভিত্তিক প্রয়োগের মাধ্যমে চিত্রে ও ভাস্কর্যে বাস্তবের হুবহু প্রতিরূপ নির্মাণের এই য়ুরোপীয় ধারণা উপনিবেশবাহিত হয়ে অষ্টাদশ শতাব্দী নাগাদ প্রায় সমগ্র বিশ্বের শিক্ষিত মানুষের কাছে চারু888sport live chatের অবিসংবাদী পরমরূপ হিসেবে আসন পেয়ে যায়। যদিও প্রাচ্যের পারস্য, ভারত, চীন ও জাপানে অধিকতর সংবেদী ও বাস্তবতা-অতিক্রমী সৃজনশীল 888sport live chatরূপের অস্তিত্ব আগে থেকেই বিরাজমান ছিল, ঔপনিবেশিক হীনমন্যতার প্রভাবে তারাও নিজেদের 888sport live chatকে অপরিপক্ব ও য়ুরোপীয় উদাহরণকে শ্রেয়তর জ্ঞান করতে শিখল। পাশ্চাত্যবিশ্বে তখনো পর্যন্ত বিশ্ব888sport live chatের পরম্পরাগত ঐতিহ্য বলতে গ্রেকো-রোমান আদর্শের আলোকে রেনেসাঁস-নির্ধারিত বাস্তবানুগতার ধারাবাহিকতাকেই বোঝানো হতো। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এসে কেবল প্রাচ্যদেশীয় ও 888sport app অ-য়ুরোপীয় 888sport live chatকে পশ্চিমা 888sport live chatের সমগোত্রীয় বলে স্বীকার করা হয়। তবে সেসবই ছিল শুধুমাত্র ভদ্রলোকীয় 888sport live chatের স্বীকৃতি, – আদিম, উপজাতীয় ও লোকজ সমাজের অন্ত্যজ মানুষের সৃষ্টিকর্মকে মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম 888sport live chatের সঙ্গে একাসনে ঠাঁই পেতে পেতে ঊনবিংশ শতাব্দী শেষ হয়ে আসে।
অ-য়ুরোপীয় নানাবিধ 888sport live chatের প্রতি তাত্ত্বিক ও 888sport live chat-ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অবশ্য আধুনিক 888sport live chatের দিক-পরিবর্তনে তেমন ভূমিকা রাখেনি। তাত্ত্বিক ও 888sport live chatবোদ্ধাদের অনুধাবনের অনেক আগেই কিছু পরিবর্তন-প্রত্যাশী 888sport live chatীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছিল বিশেষ করে জাপানি কাঠখোদাই ছাপচিত্র এবং আফ্রিকীয় নিগ্রো ভাস্কর্য ও মুখোশের প্রতি। এ ছাড়াও তাঁরা ভারতীয় মিনিয়েচার, চৈনিক চিত্র ও ভাস্কর্য এবং পলিনেশীয় আদিম 888sport live chatের খোঁজ রাখতেন। জাপানি ছাপচিত্রে য়ুরোপীয় 888sport live chatীরা লক্ষ করলেন দ্বিমাত্রিক চিত্রতলকে অক্ষুণœ রেখে এবং চিত্রকে বাস্তবের সদৃশ না করেও 888sport live chatগুণস¤পন্ন করার কৌশল, পরিমিতিবোধ ও আলংকারিকতার সংমিশ্রণে পরিসরের অর্থপূর্ণ ব্যবহারের দক্ষতা। আফ্রিকার ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন আদিম জাতিগোষ্ঠীর ভাস্কর্য ও মুখোশে ত্রিমাত্রিকতার জ্যামিতিক ব্যবহারে পৌরুষ ও দার্ঢ্যরে প্রখর প্রকাশ এবং প্রচলিত সৌন্দর্যবোধের বিপরীতে রূপান্তরণ ও অতিশায়নের প্রয়োগে অতিলৌকিক অভিব্যক্তি ও নিহিত প্রাণশক্তির সম্মোহক রূপায়ণ তাঁদের বিস্মিত ও আকৃষ্ট করে। এই প্রথম তাঁরা 888sport live chatের এমন নিদর্শনের মুখোমুখি হলেন, যা দৃশ্যমান বাস্তবতার মুখাপেক্ষী না হয়েও 888sport live chatগুণসম্পন্ন ও স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত এবং নব্য-আধুনিক 888sport live chatের জন্য বাস্তবতার ঘেরাটোপের বাইরে তাঁরা যে অনুসন্ধানগুলি চালাচ্ছিলেন তার অনেক সমাধানই যেন দেখতে পেলেন এসব 888sport live chatে। ঊনবিংশ শতকের শেষ কয়েক দশকে ক্রিয়াশীল ইমপ্রেশনিজম অবশ্যই এই নবচেতনার প্রথম ফসল এবং এর অনুবর্তী পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট 888sport live chatীরা পশ্চিমা আধুনিক 888sport live chatের দিগদর্শনকারী অগ্রপথিক। জাপানি ছাপচিত্রকলা বহু ইমপ্রেশনিস্ট 888sport live chatীকে প্রভাবিত করেছিল। তবে রেনেসাঁস-প্রসূত বাস্তবানুগতা থেকে বিচ্যুতি ও অচ্ছুত আদিম 888sport live chat থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণের প্রথম সাহসী পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট 888sport live chatীরাই – সেজান, ভ্যান গঘ, পল গগ্যাঁ। এঁদের কাজের মাধ্যমেই পশ্চিমা পর¤পরাগত 888sport live chatের একদেশদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে পরিবর্তনের হাওয়াটি সূচিত হয়, যা বিংশ শতাব্দীতে এসে সমস্ত আধুনিক 888sport live chatেই এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত করে। এটি অবশ্যই দৃশ্যকলার বিশ্বায়নের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন এবং বিশ্ব888sport live chatে পটপরিবর্তনের কার্যকারণ। কিন্তু এ-পরিবর্তনে প্রাচ্যদেশীয় এবং বিভিন্ন আদিম ও উপজাতীয় 888sport live chatের ঋণ পাশ্চাত্যবিশ্ব তেমন জোরালোভাবে কখনোই স্বীকার করেনি।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধেই দু-দুটো মহাযুদ্ধের বিভীষিকা অতিক্রম করে মানুষ তার ঊনবিংশ শতকীয় সকল মূল্যবোধই প্রায় বিসর্জন দিয়েছে। তার আস্থা গেছে টুটে শাস্ত্রে ও শ্রেয়বোধের অবশ্যম্ভাবিতায়, মানুষ হয়ে পড়েছে নিরালম্ব, আশ্রয়হীন ও একাকী।  নৈঃসঙ্গ্য, আত্মমুখিনতা ও ব্যক্তিক অহংবোধ হয়ে ওঠে তার অবলম্বন। এই নির্জন-রক্তাক্ত-ক্ষুব্ধ-বিমর্ষ সমকালের আর্তি ও বন্ধনমুক্তির আকাক্সক্ষা দৃশ্যকলায় প্রতিভাত হতে শুরু করে বিংশ শতকের একেবারে সূচনাকাল থেকে। এই রূপান্তরিত 888sport live chatকলার প্রণোদনা গ্রহণের অন্যতম উৎস ছিল প্রাচ্য888sport live chatের বিবিধ নিদর্শন, আর তার চেয়েও বেশি আফ্রিকীয় ও পলিনেশীয় 888sport live chatের সরাসরি প্রভাব। কিউবিজম বস্তুর পূর্ণাঙ্গ সত্যরূপ দৃশ্যমান করতে চাইল একই তলে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অবয়বকে প্রক্ষেপণের দ্বারা, এক্সপ্রেশনিজম রূপের চেয়ে হৃদয়াবেগের প্রাবল্যকে ধারণ করতে চাইলো বাস্তব অবয়বের বিকৃতি ও বর্ণের বাহুল্য ব্যবহারের মাধ্যমে আর ফভিজম বস্তুর গাত্রবর্ণের রূপায়ণে যথা ইচ্ছা পরিবর্তন সাধন করে গড়ে তুলতে চাইলো বস্তুগত সাদৃশ্যের বাইরে চিত্রের স্বাধীন রূপবন্ধ। ডাডা আন্দোলনের বিদ্রোহী নেতিবাচক কর্মকাণ্ড আবার স্যুররিয়ালিজমের মতো একটি তত্ত্বনির্ভর ধারাকে পুষ্টি জোগালো যেটি দৃশ্যমান বাস্তবতার বিপরীতে মানুষের মনোজগতের আলো-আঁধারির ভাষ্য রচনা করতে চাইলো। এখানেও মোটামুটি উহ্য রইল অ-য়ুরোপীয় অঞ্চলে চর্চিত 888sport live chatের অবদান।
বিংশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে য়ুরোপে সূচিত বিমূর্ত বা নির্বস্তুক 888sport live chatধারার তাত্ত্বিক ভিত্তিটি আজ পর্যন্ত দৃশ্যকলার একটি শক্তিশালী দর্শন হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। বিমূর্ততার যাত্রারম্ভে একে ব্যক্তির সার্বভৌমত্ব অর্জনের পথে এক বিশাল অগ্রগতি এবং 888sport live chatের ক্রমিক অগ্রগমনের সূচক হিসেবে অভিনন্দিত করেছিলেন উৎফুল্ল 888sport live chatবেত্তারা। ঊনবিংশ শতকের ‘আধুনিকতা’র ধারণার সঙ্গেও এটি বেশ খাপ খেয়ে গিয়েছিল, এর মধ্যে এক ধরনের মানবজাতির গণতান্ত্রিক সমতা, 888sport live chatের সার্বভৌমত্ব, উপাদান ও মাধ্যমের বিশুদ্ধতা, সর্বজনীনতা, আন্তর্জাতিকতা, সঙ্গতিপূর্ণ ঐক্য ও পরিপূর্ণতার বোধ ইত্যাকার আধুনিক মানসের যাবতীয় রসদ উপস্থিত ছিল। এটি উস্কে দেয় সামাজিক মানুষের দায়বদ্ধতার সংবেদকে এড়িয়ে ব্যক্তিমানুষের একক বোধের প্রতিরূপ নির্মাণের প্রতি আসক্তি।
যেহেতু সমাজ-সম্পর্কের দায় এ-888sport live chat অস্বীকার করে। তাই এর ঝোঁকটা গিয়ে পড়ে ব্যক্তির অহং (Ego)-এর ওপর, এমনকি এই অহংবোধই হয়ে ওঠে এর বিষয়, যেমনটি বলেছেন বিমূর্ততার এক প্রধান 888sport live chatী বার্নেট নিউম্যান : The ego, as terrible and enduring as it is, is the subject of my painting| এই আমিত্বের অহংচেতনার শিকড় প্রোথিত আছে পশ্চিমে উদ্ভূত আধুনিকত্বের বোধের গভীরে, যে-আধুনিকতা মনে করেছিল ব্যক্তিমানুষের পক্ষে প্রাকৃতিক ও পারিপার্শ্বিক সকল অনুষঙ্গ অতিক্রম করে নিজের অনন্যতাকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। দেশ, কাল ও পরিপার্শ্বের গণ্ডি পশ্চিমা সংস্কৃতিতে নির্বস্তুক 888sport live chatের এককালীন চমকপ্রদ বিকাশের মূল চাবিকাঠি। তবে সাম্প্রতিক নৃতাত্ত্বিক ও ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণা এ-ধারণার অসারতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত করেছে।                 এ-সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষা-গবেষকের অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণে এটি আজ প্রতিষ্ঠিত যে, ব্যক্তিমানুষ কখনোই সম্পূর্ণরূপে তার জাতি-সংস্কৃতিগত ভাষা-পরিমণ্ডল থেকে মুক্ত হতে পারে না, তার আচরণ ওই পরিমণ্ডলের ঐতিহ্যিক ও দৃশ্যত ব্যক্তিক মাত্রার বাইরে যেতে পারে না। এটি  জাতি-সংস্কৃতির 888sport app প্রকাশ-মাধ্যম বা সংকেত (Sign System) সম্পর্কেও সমানভাবে প্রযোজ্য। ফলে এটি এখন প্রমাণিত যে, কোনো সংবেদনশীল 888sport live chatীর পক্ষেই নিজেকে এই পরিমণ্ডলের ঊর্ধ্বে সার্বভৌম সত্তায় স্থাপন করা সম্ভব নয়, বরং কোনো না কোনোভাবে তিনি ওই পরিমণ্ডলেরই জাতক। বড়জোর তিনি এই বন্ধন ও স্বকীয়তার মধ্যে টানাপড়েনের দ্বারা অস্বস্তিরই রূপকার হতে পারেন। ব্যক্তিমানুষের একক অনন্যতার এই অধ্যাস দ্বারা আমাদের দৃশ্যকলার জগৎও ব্যাপকভাবে আলোড়িত হয়েছে এবং এ-ধারণার দৃশ্যরূপ – বিমূর্ততার বিবিধ বিন্যাস এখনো আমাদের চিত্রকলাজগতে একটি বহুচর্চিত শৈলী হিসেবে বিরাজমান রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের পরবর্তীকালেও, এই একবিংশ শতাব্দীতেও, প্রবাহিত হয়ে চলেছে নিরাবলম্ব মানুষের একই অসহায় বিপন্নতা। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বে বিভক্ত পরস্পর যুদ্ধংদেহী বিশ্বচিত্র, দ্বিতীয় বিশ্বের পতনে পৃথিবীময় পুঁজিবাদী একক শক্তির চাপানো যুদ্ধ-আগ্রাসন-দখল, হত্যা-নির্যাতন আর লুণ্ঠনের নব্য-ঔপনিবেশিক প্রক্রিয়ার বাধাহীন বিস্তৃতি মানুষকে করে তুলেছে আরো নিরাবলম্ব, আরো সহায়হীন। ঊনবিংশ শতকের ‘আন্তর্জাতিকতা’ আজ ‘বিশ্বায়ন’ নামে নতুন মোড়কে উপস্থাপিত হচ্ছে। 888sport apk ও প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য অগ্রগতি বিশ্বজগৎকে এমনভাবে হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছে যে, বিশ্বায়নের আকর্ষণ, প্রভাব বা অবশ্যম্ভাবিকতাকে আজ আর অস্বীকার করারও উপায় নেই।
সম্প্রতি বিগত শতকটিতে 888sport live chatকলার বিশ্ববীক্ষা যে স¤পূর্ণ হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। এখনো পশ্চিমা মূল্যায়নে য়্যুরো-মার্কিন-কেন্দ্রিকতা একটি বড় জায়গাজুড়ে রয়েছে, প্রশিক্ষিত মূলধারার পাশাপাশি ব্রাত্যজনের 888sport live chat-সৃজন সমান মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়নি। তবে একটি কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা হলো শতাব্দীচক্রের আরেকটি পটপরিবর্তনের কালপর্বে শোনা যাচ্ছে পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি মৌলিক পরিবর্তনের ধ্বনি। উত্তর-আধুনিক নানা কলাতত্ত্ব প্রচলিত ধারণা ও মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ঊনবিংশ শতকীয় আধুনিকতা যে একরৈখিক নৈতিকতা, সত্যবোধ, যুক্তিবাদ, আধ্যাত্মিকতা, ঐতিহাসিকতা, বিশ্লেষণবাদিতা, মানবসমাজের একত্ববোধ ও মহৎ কীর্তিগাথার ঐতিহ্যবোধ নির্মাণ করেছে এই মতাদর্শ তার যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দিহান। এই সর্বজনীন মূল্যবোধের বিপরীতে ডি-কনস্ট্রাকশন, পোস্ট-মডার্নিজম ইত্যাকার নানামুখী চিন্তাস্ফুলিঙ্গ বিশ্বকে দেখতে চায় একটি অনিশ্চিত, ঘটনাচক্রজাত, অস্থিতিশীল, অনির্ধারণযোগ্য বিভিন্নমুখী ধারণার সমাহার হিসেবে। এখানে মানব-সংস্কৃতি একটি অসংঘবদ্ধ বৈচিত্র্যময় কার্যকলাপ, যা শুধু কালিক ও স্থানিক পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণযোগ্য, এর কোনো ঐতিহাসিক বিচার বা মহিমা নেই। কোনো 888sport live chatেরই চিরায়ত গরিমা বলে কিছু নেই, তা সব সময়ই আপেক্ষিক। এই বিকেন্দ্রীকরণের বোধ 888sport live chatের অভিজাত ও ব্রাত্যের বিভাজনকেও অস্বীকার করতে চায়।  বস্তুতপক্ষে বিংশ শতাব্দীর শেষপাদ থেকে আধুনিক 888sport live chatকলা যে অবয়ব ধারণ করেছে, তার চেহারায় বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক-বহুত্বের যে-ছায়াপাত ঘটেছে তা ঊনবিংশ শতকীয় য়ুরোপীয় একক-শ্রেষ্ঠত্ববাদী পর¤পরা-নির্ভর 888sport live chatরীতির ধারাবাহিকতায় ছেদ ঘটিয়েছে – এটিই চিত্রে-ভাস্কর্যে তথা সংস্কৃতিচেতনায় বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অর্জন।
এটি খুব স্বাভাবিক যে, আমাদের নবীন 888sport live chatব্রতীরা পশ্চিমের এই নব নব ধারণা ও উদ্ভাবন দ্বারা উদ্বেলিত, অনুপ্রাণিত, এমনকি প্রভাবিত হবেন। এটি দোষের নয়, তবে আমাদের চাই প্রেক্ষাপট বিষয়ে প্রখর সচেতনতা, বিষয়ের সঙ্গে বিষয়ীর সম্পর্কের প্রাসঙ্গিকতা আর একটি সর্বজনীন 888sport live chatবোধ, যা স্থানিক শেকড়-সংলগ্নতার পাশাপাশি বৈশ্বিক বিস্তারের বৈশিষ্ট্যকেও আত্মস্থ করবে। এর মানে এ নয় যে, বিশ্বের সাম্প্রতিক প্রবণতাসমূহ থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে থাকবো। এটি এখন আর সম্ভবও নয়। এর যে ইতিবাচক কোনো ভূমিকা নেই তাও নয়। চিত্র ও ভাস্কর্যের কিছু প্রথাসিদ্ধ পথ থেকে বেরিয়ে এসে উত্তর-আধুনিক 888sport live chatচেতনা তাকে দিয়েছে অন্তহীন সম্ভাবনার প্রশস্ত রাজপথ। মাধ্যম ও প্রকরণের বন্ধন-মুক্তি এনেছে বিপুল বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবনী প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ। উত্তর-আধুনিক নন্দনতত্ত্ব 888sport live chatের স্থানিক ও কালিক বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রতি পুনরায় গুরুত্ব আরোপ করছে। আমাদের সাম্প্রতিক কিছু 888sport live chatীর কাজে কৌতূহলোদ্দীপকভাবে এ-ভাবনার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। এসবই বিশ্বব্যাপী 888sport live chatের পালাবদলের ইতিবাচক প্রবণতা, যার উপযোগিতা আমাদের জন্যও প্রাসঙ্গিক।
888sport live chatসৃষ্টি আসলে একধরনের আত্ম-আবিষ্কারও বটে। সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টা যেমন প্রকাশ করেন নিজের ভাব-আকুতি, তেমনি তাতে ধারণ করেন একটি সময়ের সংস্কৃতির প্রাণস্পন্দন। কালিক বিশ্বচেতনা যেমন তাঁকে প্রাণিত করে সমকালের যুগ-সত্য আবিষ্কারে, তেমনই স্থানিক সচেতনতা তাঁকে যুক্ত করে তাঁর নিজ অস্তিত্বের বাস্তবতার সঙ্গে। এটিকে একটি বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কালিক চেতনা প্রবহমান হয় আনুভূমিকভাবে, দেশ বা স্থানের গণ্ডি  অতিক্রম করে তা একটি বৃক্ষের শাখার মতো বিস্তারিত হয় চতুর্দিকে, আত্মস্থ করে সমকালের বৈশ্বিক ভাবনার সকল ফসল। আর স্থানিক চেতনা হলো বৃক্ষের কাণ্ডের মতো উল্লম্ব, তার শিকড় প্রোথিত থাকে নিজ মৃত্তিকায়, কিন্তু যার বিকাশ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী, অর্থাৎ অগ্রসরমান, যা নিজেকে নিজে বারবার অতিক্রম করার প্রয়াসী। একজন যথার্থ ও সত্যনিষ্ঠ 888sport live chatস্রষ্টা এই কালিক বিশ্বজনীনতা এবং স্থানিক অগ্রসরমানতার সমন্বয়েই সম্ভবত অর্জন করতে সমর্থ হবেন বর্তমানের যথার্থ 888sport live chatরূপের ভাষা। হয়তো একবিংশ শতাব্দী প্রত্যক্ষ করবে সেই সমীকরণের রূপায়ণ।