ঠাকুরবাড়ির সকলেই কমবেশি প্রতিভাধর। বিশেষত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রেরা। কন্যাদের মধ্যে স্বর্ণকুমারী দেবী। তবে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ কন্যা সৌদামিনী যেমন ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল সামলেছেন, তেমনি অল্পবিস্তর লেখালেখিও করেছেন। তাঁর রচনা 888sport free betর বিচারে অল্প; কিন্তু 888sport live footballগুণে তা পূর্ণ। আমাদের এই নিবন্ধটি মূলত সৌদামিনী দেবীর লেখা পিতৃ888sport sign up bonusকে আশ্রয় করে নির্মিত। এই রচনাটি খুবই সংক্ষিপ্ত; কিন্তু ইতিহাসের তথ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই রচনার বক্তব্যকেই আমরা নিজেদের মতো করে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ কন্যা সৌদামিনী দেবী (১৮৪৭-১৯২০) তাঁর পিতার কথা লিখেছেন এই পিতৃ888sport sign up bonusতে। এই রচনাটি প্রবাসী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ফাল্গুন ১৩১৮, চৈত্র ১৩১৮ ও জ্যৈষ্ঠ ১৩১৯-এ প্রকাশিত হয়। সুখপাঠ্য এ-রচনা যেমন ইতিহাসের তথ্যে পূর্ণ, তেমনি 888sport live footballগুণান্বিত। সৌদামিনী দেবী যদি আরো বেশি করে 888sport live footballচর্চার অবকাশ পেতেন তাহলে বাংলা 888sport live footballের ঝুলি আরো পূর্ণ হতো তা বলাই যায়। তিনি গল্পের মতো করে এই 888sport sign up bonusচারণ করেছেন। এই রচনা পড়ে দেবেন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন দিক পাঠক জানতে পারেন। রচনাটি পাঠ করলে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হয়, যেন সে-কালকে ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সামনে থেকে দেখা যাচ্ছে।
মহর্ষি জীবনের অনেকখানি সময় কাটিয়েছেন ঠাকুরবাড়ির বাইরে। তিনি একবার (১৮৫৭ সাল) সংকল্প করলেন দূরে কোথাও নির্জনে গিয়ে ঈশ্বর-সাধনা করবেন। তাই তিনি সিমলায় চলে গেলেন। সে-সময় সৌদামিনীর ছয় বছরের ভাই পুণ্যেন্দ্র পুকুরে ডুবে মারা যায়। এ-সংবাদ দেবেন্দ্রনাথ পাননি; কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ তাকে ওই প্রবাসেই স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন। মহর্ষির ছোট ভাই নগেন্দ্রনাথ ঠাকুরও (১৮২৯-১৯৫৮) ওই কাছাকাছি সময়ে মারা যান। তাঁকেও মহর্ষি স্পর্শ দেখতে পেয়েছিলেন। তখন তিনি সিমলাতেই। সৌদামিনী দেবী লিখেছেন –
পিতার কাছে শুনিয়াছি, পুণ্যেন্দ্র মারা যাইবার সংবাদ তিনি পান নাই কিন্তু একদিন সেই প্রবাসে তিনি স্পষ্টই দেখিতে পাইলেন পুণ্যেন্দ্র কোনো কথা না কহিয়া তাঁহার কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। তাহা রাত্রির স্বপ্ন নহে; দিনের বেলা জাগ্রৎ অবস্থায় তিনি তাহাকে দেখিয়াছিলেন। তিনি সেই সিমলায় থাকিতেই ছোট কাকার মৃত্যু হইয়াছিল – তখনো তিনি তাঁহাকে দেখিতে পাইয়াছিলেন, সে কথা তাঁহার মুখে শুনিয়াছি।১
এ-ঘটনাকে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে ধরা সম্ভব নয়। আবার অবিশ্বাস্য বলে উড়িয়ে দেওয়াও মুশকিল। দেবেন্দ্রনাথের মতো সদাচারী মানুষ এ-কথা যখন বলেন তা ভাবায় বইকি। তবে অনেক পণ্ডিত-গবেষক একে ‘ঐধষষঁপরহধঃরড়হ’ বা অলীক কল্পনা মনে করে থাকেন। তবে বিনোদিনী দাসী (নটী বিনোদিনী) তাঁর আমার কথা গ্রন্থেও এমনই এক অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন –
উক্ত রবিবারে সবেমাত্র আমার ঘরে সন্ধ্যার আলো দিয়া গিয়াছে। … আমি নিদ্রিত ছিলাম না। … আমার বেশ মনে আছে যে যখন তিনি ঘরের মধ্যে আসেন তখন আমার দৃষ্টি বরাবর তাঁর দিকেই ছিল। তিনি খাটের নিকট দাঁড়াইবামাত্র আমি চমকিত ও বিস্মিত হইয়া তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া বলিলাম, ‘একি! তুমি আবার কেন আসিয়াছ?’ তিনি যেন কাতর নয়নে আমার দিকে চাহিয়া বলিলেন, ‘আমি যাইতেছি তাই তোমাকে বলিতে আসিয়াছি।’ … বলিলাম, ‘সে কি! তুমি কোথায় যাইতেছ? আর এত দুর্বল হইয়াছ কেন?’ তিনি যেন আরও বিষণ্ন ও স্থির হইয়া বলিলেন, ‘ভয় পাইও না আমি তোমায় কিছু বলিব না; আমি বলিয়াছিলাম যে আমি যাইবার সময় তোমায় বলিয়া যাইব, তাই বলিতে আসিয়াছি, আমি যাইতেছি!’ এই কথা বলিয়া তিনি ধীরে ধীরে প্রস্তর মূর্ত্তির ন্যায় সেই দরজা দিয়াই চলিয়া যাইলেন। ভয়ে ও বিস্ময়ে আমি চমকিত হইয়া তৎক্ষণাৎ বিছানা হইতে উঠিয়া বাহিরে আসিলাম, কিন্তু আর কাহাকেও দেখিতে পাইলাম না। তখন উপর হইতে উচ্চৈঃস্বরে আমার মাতাঠাকুরাণীকে ডাকিয়া বলিলাম, ‘মা উপরে কে আসিয়াছিল?’ মা বলিলেন, ‘কে উপরে যাইবে? আমি তো এই সিঁড়ির নীচেই বসিয়া রহিয়াছি।’ … ‘কে আসিবে? তুই স্বপ্ন দেখলি নাকি? … তাহার পর দিবস সন্ধ্যায় … এক ব্যক্তি একখানা ঠিকাগাড়ীর ভিতর হইতে বলিয়া উঠিলেন, ওগো গিন্নি! শুনিয়াছ, গত কল্য সন্ধ্যার সময় বাবুর মৃত্যু হইয়াছে। সেই লোকটা মৃত ব্যক্তির একজন কর্ম্মচারী!’২
দেবেন্দ্রনাথের কথা বলতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে এ-কথা মনে পড়ল। এ-ঘটনার কোনো 888sport apkসম্মত ব্যাখ্যা হয়তো নেই। তবু তাঁরা এমন দেখেছেন। বলেওছেন সে-কথা।
পিতৃ888sport sign up bonus আসলেও কিছু ঘটনার বর্ণনা। তা সবসময় যে একটি ঘটনা থেকে অন্য ঘটনায় পৌঁছেছে সংযোগ সূত্র রক্ষা করে তেমনটি নয়। বারে-বারে তা প্রসঙ্গান্তরে গেছে কোনো ভনিতা ছাড়াই। তবে এমন নিখুঁত ও মিঠে লেখনীশৈলীর কারণে তা কখনো খাপছাড়া তো লাগেইনি, বরং উৎকৃষ্ট রচনা হয়ে উঠেছে। সেইভাবেই আমরা জানতে পারি যে, মহর্ষি রবীন্দ্রনাথের জন্মের পর থেকে ঠাকুরবাড়িতে জাতকর্ম থেকে শুরু করে সকল অনুষ্ঠানই অপৌত্তলিক প্রণালিতে করার নিয়ম চালু করেন। তা করতে গিয়ে কখনো কখনো পুরোহিতদের সঙ্গে খুব তর্ক-বিতর্ক করতে হয়েছিল তাঁকে।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সর্ব্বদাই বিদেশে কাটাইতেন’। পুজোর সময় তিনি কখনোই বাড়ি আসতেন না। তাঁর স্ত্রী সারদাসুন্দরী দেবী যখন মৃত্যুসজ্জায় এবং মৃত্যুর ঠিক আগের দিন তিনি হিমালয় থেকে বাড়ি ফেরেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর শেষ বিদায়ের সময় তিনি নিজ হাতে ফুল-চন্দন-অভ্র দিয়ে শয্যা সাজিয়ে দিয়ে বলেছিলেন –
‘ছয় বৎসরের সময় এনেছিলেম, আজ বিদায় দিলেম।’৩
দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন ঘোরতর পুতুল-পুজোর বিরোধী। একবার তিনি সিমলা থেকে ফেরার পর দেখেন বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো হচ্ছে। সেদিন অবশ্য বিসর্জনের দিন। তবু তিনি বাড়িতে না ঢুকে ব্রাহ্মসমাজে গিয়ে বসে রইলেন। যতক্ষণ না প্রতিমা বিসর্জিত হলো ততোক্ষণ তিনি বাড়ি ঢোকেননি। সৌদামিনী দেবী জানান –
একবার পিতা যখন সিমলা পাহাড় হইতে হঠাৎ বাড়ি ফিরিলেন, তখন বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পূজা। সেদিন বিসর্জ্জন। তিনি বাড়িতে প্রবেশ না করিয়া ব্রাহ্মসমাজে গিয়া বসিয়া রহিলেন – বাড়ির সকলেই ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন; কোনো প্রকারে ঠাকুর বিসর্জ্জন দেওয়া হইলে তিনি ঘরে আসিলেন। তাহার পর হইতে আমাদের বাড়িতে প্রতিমা পূজা উঠিয়া যাইতে লাগিল।’৪
মহর্ষি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন খুবই শৃঙ্খলাপরায়ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ। ১৮৪৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বর দ্বারকানাথ ঠাকুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ব্যাংক ফেল করে; কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ যাঁর যা প্রাপ্য ছিল তা পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। কখনো ন্যায় পথ থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। এমনকি দুর্দিনে যাঁরা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন, তাঁরা দৈন্যদশায় পড়ে যখনই তাঁর শরণাপন্ন হয়েছেন, তখনই তিনি তাঁদের চিরজীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
সৌদামিনী দেবী আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান যে, স্বয়ং দেবেন্দ্রনাথ নিজে তাঁর কন্যাদের পড়াশোনা তদারকি করতেন। শিক্ষাদানে নিযুক্ত শিক্ষয়িত্রীদের পদ্ধতি যথার্থ না হলে তিনি তা বন্ধ করে দিতেন। স্ত্রীশিক্ষার জন্য সে-সময়ে তাঁর ভূমিকা পথ প্রদর্শকের। সৌদামিনী দেবী বলেন –
কলিকাতায় মেয়েদের জন্য যখন বেথুন স্কুল প্রথম স্থাপিত হয় (১৮৪৯-এ বেথুন হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়) তখন ছাত্রী পাওয়া কঠিন হইল। তখন পিতৃদেব আমাকে এবং আমার খুড়তত ভগিনীকে সেখানে পাঠাইয়া দেন।৫
মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি 888sport live chat শেখানোর প্রতিও তাঁর আগ্রহ ছিল খুব। সৌদামিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ছোট বোনদের চুল বাঁধার। বিশেষত কোথাও যখন নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য যেতে হতো। তবে তিনি নিজে আগে দেখে নিতেন। যদি পছন্দ না হতো তবে পুনরায় খুলে ভালো করে বাঁধার পরামর্শ দিতেন।
দেবেন্দ্রনাথ অগোছালো, শ্রীহীন কিছু পছন্দ করতেন না। ভালো গান না হলে তিনি শুনতেন না। হেমেন্দ্রনাথের কন্যা প্রতিভা দেবীর পিয়ানো বাজানো এবং রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে খুব ভালোবাসতেন। বলতেন –
রবি আমাদের বাঙ্গালা দেশের বুলবুল।৬
দুর্গন্ধ তাঁর কাছে ছিল অসহ্য। তাই সবসময় তাঁর কাছে সুগন্ধি থাকতো। তিনি হাফিজের 888sport app download apkর বিশেষ ভক্ত ছিলেন। তাঁর অনেক 888sport app download apkর তিনি বাংলা 888sport app download apk latest versionও করেছিলেন। সেগুলো তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের রান্না শেখানোর ব্যাপারেও ছিল তাঁর যথেষ্ট আগ্রহ। নিয়ম করে দিয়েছিলেন প্রত্যেককে প্রতিদিন একটা করে তরকারি রান্না করতে হবে। তার জন্য রোজ এক টাকা করে বরাদ্দ করতেন প্রত্যেককে মহর্ষি। সেই টাকায় মাছ-তরকারি কিনে প্রত্যেককে রাঁধতে হতো।
ঠাকুরবাড়িতে ছিল একটি উপাসনার ঘর। দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে তা প্রতিদিন পরিষ্কার করা হতো। সেই উপাসনা ঘরে তিনি পুত্র-কন্যাদের নিয়ে উপাসনা করতেন। ব্রাহ্মধর্ম পড়াতেন। কোনো কোনো দিন তিনি জ্যোতির্বিদ্যাও আলোচনা করতেন। তাঁর শিক্ষাপ্রণালিতে বলপ্রয়োগের কোনো স্থান ছিল না। মেয়েদের গাড়ি চড়াকে সেকালে খারাপ চোখে দেখা হতো, কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ কখনোই তাতে বাধা দেননি। বাল্যবিবাহ তিনি সমর্থন করেননি। তার প্রতিবাদ তিনি হাতে-কলমে করেন। নিজের কন্যা শরৎকুমারী (সেজ) ও স্বর্ণকুমারী (ন’) অধিক বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত ছিল। তাতে দেবেন্দ্রনাথের আপত্তি ছিল না। বরং সম্মতিই ছিল। ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ একসঙ্গে আহার করার প্রথা তাঁরই সম্মতিতে ঠাকুরবাড়িতে শুরু হয়। তবে অসবর্ণ বিবাহ সম্বন্ধে শেষ পর্যন্ত তাঁর আপত্তি ছিল।
একদিকে প্রাচীন প্রথার সংস্কার, অন্যদিকে তার রক্ষণ – এই দুই-ই তাঁর চরিত্রের দৃঢ় দিক ছিল, সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে দেবেন্দ্রনাথ তৎকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সমস্ত দিকে তাঁর দৃষ্টি ছিল সজাগ। মিষ্টস্বভাবের মানুষ ছিলেন মহর্ষি। তাঁর বাড়ির ভৃত্যদেরও কোনো অসুবিধা তাঁর ভালো লাগতো না। সৌদামিনী লিখছেন –
সর্ব্বপ্রকার সাংসারিক সুখ-দুঃখ ও বিরোধ বিপ্লবের মধ্যে অবিচলিত থাকিয়া নীরবে নিয়ত সকলের কল্যাণ বিধান করিয়াছেন।৭
নিজের বাড়িতে তিনি শৃঙ্খলা আনতে পেরেছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ জাঁকজমক খুব একটা পছন্দ করতেন না। ঐশ্বর্যভোগ তাঁর মনের সঙ্গে মিলত না, অকৃত্রিম সৌন্দর্যভোগে তাঁর আনন্দ ছিল বেশি। দুর্দিনে তাঁকে কিছু সংস্কারধর্মী সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল ব্যয় কমানোর জন্য। তাঁর মধ্যে ভোজসভা ছিল একটি। তা বন্ধ করে দেন। নিজের জীবনাচরণেও তিনি সময়ানুগ পরিবর্তন আনেন। ইউনিয়ন ব্যাংক ফেল করলে পর ভোজসভা যেমন বন্ধ করে দেন, তেমনি নিজের ক্ষেত্রেও ব্যয়সংকোচ করেন। এ-প্রসঙ্গে সৌদামিনী লিখেছেন –
রাজনারায়ণ বাবু প্রায় তাঁহার সঙ্গে খাইতেন। সেদিন তিনি আসিয়া দেখিলেন টেবিলে ডাল রুটি ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি বলিলেন, এই খাইয়া আপনার চলিবে কি করিয়া? পিতা কহিলেন, ঈশ্বর যখন যে অবস্থার মধ্যে ফেলেন তখন সেই অবস্থার মত চলিতে পারিলে তবেই সব ঠিক চলে। এখন হইতে পিতা সংসারের সকল প্রকার খরচ সম্বন্ধেই অত্যন্ত টানাটানি করিয়া চলিতে লাগিলেন – পুরাতন চাল বজায় রাখিয়া লোকসমাজে অভিমান বাঁচাইবার জন্য কিছুমাত্র চেষ্টা করিলেন না – এবং পিতামহ তাঁহার উইলে দরিদ্র অন্ধদের সাহায্যের জন্য যে লক্ষ টাকা দান করিয়াছিলেন তাহা সম্পূর্ণ শোধ করিয়া দিয়া তবে তিনি নিশ্চিন্ত হইয়াছিলেন।৮
বাড়িতে সময়ানুবর্তিতার প্রচলন ঘটানোর জন্য ঘণ্টা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ঠাকুরবাড়ির সংস্কৃতিচর্চায়ও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাড়িতে মঞ্চ বেঁধে অভিনয় করার অনুমতি তিনি নির্দ্বিধায় দেন। এছাড়া তাঁর স্বভাবের আর একটি দিক ছিল; তিনি ছিলেন ক্ষমাশীল। অনেক আত্মীয়-পরিজন তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কতবার কত অপরাধ করেছে, সেসব তিনি গম্ভীরভাবে সহ্য করেছেন। কোনো প্রতিহিংসা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল। তিনি ছিলেন তেজস্বী পুরুষ, তাঁর সহিষ্ণুতা অক্ষমের দুর্বল সহিষ্ণুতা ছিল না, এ-কথা সৌদামিনীই আমাদের জানান। সৌদামিনীর কথাতেই বোঝা যায়, মহর্ষি শান্ত, নীরব থেকে সকলের মঙ্গল করতেন। তবে তিনি প্রবল ঈশ্বরানুরাগী ছিলেন। কখনো কখনো অলৌকিক ব্যাখ্যাও দিয়ে ফেলেছেন ঈশ্বর সম্পর্কে।
888sport promo codeর সামান্যতম অসম্মানও তিনি সহ্য করতে পারতেন না। এ-প্রসঙ্গে সৌদামিনী দেবী জানান –
স্ত্রীলোগদিগকে তিনি বিশেষভাবে সম্মান করিতেন। যে কোন মহিলা তাঁহার সঙ্গে দেখা করিতে আসিতেন সকলকেই মাতৃ সম্বোধন করিয়া অত্যন্ত যত্ন আদর করিতেন। তাঁহারা যে যেমন কথা শুনিতে আসিতেন সকলকে তাহা বুঝাইয়া বলিয়া সকলের হৃদয় পূর্ণ করিয়া দিয়া তাহাদিহকে বিদায় করিতেন। একবার আমি কোনো আত্মীয়ের সহিত দেখা করিতে গিয়াছিলাম। ফিরিয়া আসিলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, যখন তুমি সেখানে গেলে তিনি কি করিতেছিলেন? আমি বলিলাম, না। তিনি শুইয়া ছিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাকে দেখিয়া তিনি উঠিয়া বসিলেন না? আমি বলিলাম, না। তাহাতে তিনি বিষণ্ন হইলেন। সেই আত্মীয়টি স্ত্রীলোকের মর্যাদা রক্ষা করেন নাই বলিয়াই পিতার মনে ক্ষোভ জন্মিল।৯
সর্বোপরি এমন সত্যপরায়ণ, ধার্মিক, ঋষির কথা এতো সুন্দরভাবে সৌদামিনী দেবী তাঁর রচনায় তুলে ধরেছেন যে, তা শুধু 888sport sign up bonusকথা হয়ে থাকেনি, হয়ে উঠেছে জীবন্ত ও চিরকালীন। সবচেয়ে বড় কথা, একাধারে লেখিকা সৌদামিনীকে যেমন পাওয়া গেলে এ-লেখায়, তেমনি ঠাকুরবাড়িরও চলচ্ছবি হয়ে উঠল এ-বর্ণনা। সৌদামিনী প্রকৃতই সৌদামিনীর ভাস্বরতায় এ-লেখাকে মনোজ্ঞ করে তুলেছেন এবং পাঠকদের অপরিচিত দেবেন্দ্রনাথ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিয়েছেন।
তথ্যসূত্র
১। পিতৃ888sport sign up bonus ও 888sport app রচনা, সৌদামিনী দেবী, ভূমিকা ও
টীকা সুতপা ভট্টাচার্য, প্রথম দে’জ সংস্করণ, সেপ্টেম্বর ২০১১,
পৃ ১৩।
২। আমার কথা ও 888sport app রচনা, বিনোদিনী দাসী, সম্পাদনা-
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, নির্মাল্য আচার্য, পরিবর্ধিত সংস্করণ ১৩৯৪।
৩। পিতৃ888sport sign up bonus ও 888sport app রচনা, সৌদামিনী দেবী, ভূমিকা ও
টীকা সুতপা ভট্টাচার্য, প্রথম দে’জ সংস্করণ, সেপ্টেম্বর ২০১১,
পৃ ১৪।
৪। তদেব, পৃ ১৫।
৫। তদেব, পৃ ১৭।
৬। তদেব, পৃ ১৭।
৭। তদেব, পৃ ২৩।
৮। তদেব, পৃ ২৯।
৯। তদেব, পৃ ৩৩।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.