দেশভাগ মান্টোকে চিনিয়েছে, এখনো অনেক বাকি

হলে ছবি দেখতে গেলে কিছু নিয়মকানুন ব্যক্তিগত দৃঢ়তায় মেনে চলি। ছবির একটা ফ্রেমও মিস করতে চাই না, তাই হাতে সময় নিয়ে হলে পৌঁছনো, সময় থাকতে ঢুকে পড়া, নির্দিষ্ট আসনে বসে নিজেকে একটু মানসিকভাবে গুছিয়ে নেওয়া, মোবাইল ফোনটিকে নীরব করা, ছবিতে প্রযুক্ত শব্দ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ কানে নিতে চাই না বলে সঙ্গের ব্যাগটির মধ্যে পলিথিন-পস্নাস্টিকজাতীয় পদার্থ থাকলে তারা যেন আমার কদাচিৎ নড়াচড়ায় মুখর না হয়ে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা – প্রস্ত্ততি সুদীর্ঘ। সিনেমা হল একটি বিনোদনস্থল, বিশেষত আজকের যুগে তার নিজের চরিত্র ও দর্শকচরিত্র, দুই-ই পালটেছে। এমনিতেই বাঙালি নীরবতাপ্রিয় জাতি নয়, কারণে-অকারণে শব্দবাজি করা ও ফাটানো, উভয় ক্রিয়াই তার বিশেষ পছন্দের। ইদানীং কলকাতা শহরে বিনোদন-উন্মুখ বহুভাষিক ও বহুসাংস্কৃতিক মানুষের বিস্ফোরণে হলে ছবি দেখা একটি দুরূহ কর্ম। এখানে ছবি চলাকালে সহ-দর্শক ফোনে বা সঙ্গের মানুষটির সঙ্গে কথা বলেন, অন্ধকার অপ্রিয় বলে স্মার্টফোনের তীব্র আলো জ্বালিয়ে রাখেন, অজ্ঞাত কারণে সে-সময়েই ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ই-মেইল ঘাঁটাঘাঁটি করেন। এই অকর্ম-কুকর্মগুলো ছবি চলাকালেই ঘটবে, তাই মনকে ‘মন তুই এসব ক্ষমা করে পর্দাতেই মন দে’ বোঝাতেই নিজের একটু সময় হাতে নিয়ে হলে ঢুকে পড়ার অসমর্থ চেষ্টা।

live chat 888sportেরও কি কোনো ঈশ্বর আছেন? যদি ধরে নিই আছেন, অলক্ষে তিনিও মাঝেসাঝে মুচকি হাসেন এবং মজা করে হলে আসার পথে আমার মতো দর্শককেও দেরি করিয়ে দেন। রোববারের ছুটির কলকাতায় তাই নন্দিতা দাসের বহুপ্রতীক্ষিত ছবি মান্টো (২০১৮) দেখতে অবিশ্বাস্যভাবে আমারও দেরি হলো খানিক। ঢুকেই দেখি পর্দায় জাতীয় সংগীত হচ্ছে, শেষের দিকের দু-লাইন। স্থাণু হলাম এবং ‘জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে’ গাইতে গাইতেই মনে হলো, যাঁকে নিয়ে আজকের এই ছবি, সাদাত হাসান মান্টো নামের সেই বিধ্বংসী মানুষটি নিজে কি এই জাতীয় সংগীত চলার সময় উঠে দাঁড়াতেন? দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় জানিয়ে দিয়েছেন যে, জাতীয় সংগীতের সময় উঠে দাঁড়ানো মানেই বিরাট সম্মান জানানো, বসে থাকলে সে জঘন্য দেশদ্রোহী, মোটেই তা নয়। এ-ও জানিয়েছেন, নাগরিক যদি রাষ্ট্রযন্ত্রের কঠোর-কঠিন সমালোচনা করেন, সে-কাজও দেশদ্রোহ নয়। কিন্তু নিজের আসনটিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় থিতু হতে হতে আমি পড়ার চেষ্টা করছিলাম মান্টো নামক নাগরিকটির নয়, 888sport live chatীটির মন। যে-মন, মান্টো ছবির পোস্টারের মতোই, দেশভাগ নামক ঘটনাটির
তীব্র-তীক্ষন আঁচড়ে দীর্ণ, বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। প্রিয় বোম্বে (মুম্বাই) শহর ছেড়ে যাঁকে নির্বাসনে থাকতে হয়েছিল লাহোরে, সেই মান্টো কি ‘জনগণমনঅধিনায়ক’ গাইতেন? গাইতে পারতেন?

পর্দায় পরিচালক যখন মান্টো আর তাঁর বন্ধুবৃত্তের পরিবেশটিকে চোখের সামনে তুলে ধরেন, আমরা বুঝে যাই স্বাধীনতা-পূর্ব
বোম্বেতে ‘প্রোগ্রেসিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র লেখক-888sport live chatীদলটির মানস-পরিসরের জলহাওয়া। এখানে আড্ডায় কথা হয় ইসমত চুঘতাইয়ের ‘লিহাফ’ গল্প নিয়ে (যদিও এর প্রকাশকাল বেশ কবছর আগে, ১৯৪২-এ), আমরা জানতে পারি, ইসমত আর মান্টো দুজনই তাঁদের গল্পে অশস্নীলতার দোষে দুষ্ট ও অতঃপর কলঙ্কমুক্ত, দুই-ই হয়েছেন। আবার বোম্বে টকিজের মুসলমান-অধ্যুষিত আবহেও মান্টো পরিচিত ও বিখ্যাত, তাঁর বন্ধুদের মধ্যে যেমন আছেন সুপারস্টার অশোককুমার, তেমনি উদীয়মান গায়ক-নায়ক শ্যামসুন্দর চাড্ডাও। এঁরা নামেই হিন্দু বা মুসলমান, কর্মে ও মননে পুরোদস্ত্তর 888sport live chatী। গেলাসের পর গেলাস উড়িয়েও এঁদের মদিরায় মন নেই, মনেই মদিরা আছে। কিন্তু আপাত-উচ্ছল এই আকাশেই ক্রমে ঘনিয়ে আসে ১৯৪৭। বোম্বে শহরের হিন্দুপাড়ায় মুসলমান মহল্লায় ঝিকিয়ে ওঠে দাঙ্গা। বন্ধুত্বেও ছায়া ফেলে অবিশ্বাসের মেঘ। দাঙ্গা দেখাতে গেলেই বহুব্যবহারে জীর্ণ কিছু রূপক ও রূপকল্পের কাছে ফিরে ফিরে যান ভারতীয়, বিশেষত হিন্দি ছবির পরিচালকরা। নির্দেশক নন্দিতা সে-পথে হাঁটেননি, কারণ দাঙ্গা ও দেশভাগ তাঁর পস্নটের অপরিহার্য এক সংঘটন হলেও তাঁর পস্নটের এক, অদ্বিতীয় ও অনতিক্রম্য কেন্দ্রবিন্দুটির নাম মান্টো।

এ-কারণেই ছবিটি দেখে ওঠা ইস্তক যে-ভাবনাটা মনে জট পাকাচ্ছে তা হলো : মান্টো কি একটা দেশভাগবিষয়ক ছবি? একটা ‘পার্টিশন ফিল্ম’? ছবির কাহিনিসূত্র অনুসরণ করলে তা-ই মনে হতে পারে (১৯৪৬ থেকে শুরু করে পরের কয়েক বছর উঠে এসেছে পস্নটে, মান্টো মারা যান ১৯৫৫ সালে)। ভারত-পাকিস্তান খণ্ডীকরণ ও মান্টোর মতো এক লেখক-888sport live chatীর জীবনে তার প্রভাব নন্দিতার ছবির বহুলাংশ জুড়ে, কিন্তু তলিয়ে ভাবলে এবং ‘প্রাইমারি ম্যাটেরিয়াল’ ধরে নিয়ে ছবিতেই বারবার ফিরে গেলে বোঝা যায়, পরিচালক আসলে মান্টো মানুষটাকে ধরতে চাইছেন। ছবির মান্টো যেমন বলে, ‘আমার গল্পগুলো একটা আয়নার মতো, যেখানে পাঠক চারপাশের এই সমাজটাকেই দেখতে পাবেন।’ ঠিক তেমনি মান্টো নিজেও আসলে একটা আয়না, যার সামনে দাঁড়িয়ে এই ছবির দর্শক দেশভাগ নামক ঘটনাটির পূর্বাপর দেখতে পাবেন। অর্থাৎ ‘দেশভাগ’ দেখানোর জন্য ‘মান্টো’ নয়, ‘মান্টো’কে বোঝানোর জন্য ‘দেশভাগে’র অবতারণা। ছবিটা দেখতে দেখতেই তা বোঝা যায়। পরিচালক নন্দিতার কাছে মান্টোকে বোঝানোর জন্য দেশভাগ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ‘ঠান্ডা গোশ্ত’ গল্পের জন্য মান্টোর কাঠগড়ায় ওঠা ও সম্পূর্ণ বিচারপর্বটি। এ-কারণেই ১৯৪৬-৪৭-এর হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার খুঁটিনাটিওয়ালা ধারাবিবরণী পরিচালক এই ছবিতে রাখেননি, তার দরকার নেই বলেই। জুতার দোকানে জুতা কিনতে গিয়ে মান্টো যে-হিংসার সম্মুখীন হন বা গাড়িতে অশোককুমারের সঙ্গে মুসলমান মহল্লা দিয়ে যাওয়ার সময় মান্টোকে যে ভয়-আশঙ্কা-আতঙ্ক তাড়া করে – এই একটি-দুটি দৃশ্যই সমসময়ের ভয়াবহতা তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট।

অশোককুমার-সম্পর্কিত ঘটনাটি মান্টোর নিজের লেখা থেকে তুলে ধরার লোভ সংবরণ করতে পারছি না। বাংলা 888sport app download apk latest versionে এমনটা দাঁড়াবে : ‘তখন দাঙ্গা চরমে উঠেছে। টকিজ থেকে ফেরার পথে একদিন অশোকের ওখানে কিছুক্ষণ থামলাম। সন্ধেয় ও আমাকে গাড়ি করে পৌঁছে দিতে চাইল। শর্টকাট হবে ভেবে ও একটা অস্থির মুসলমানপাড়ার মধ্য দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসছিল। সামনে পড়ল একটা বিয়ের শোভাযাত্রা। ব্যান্ডের বাজনা শুনতে পেয়ে তো আমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়। অশোকের হাত খামচে ধরে আমি চেঁচালাম, ‘দাদামণি, এ কোথায় এলে?’

অশোক আমার উৎকণ্ঠা বুঝতে পেরে হেসে বলল, ‘ভেবো না’।

ভাবব না? গাড়ি যাচ্ছে একটা অস্থির লাগামছাড়া মুসলমানপাড়া দিয়ে, যেখানে কোনো হিন্দু পা রাখার সাহস পর্যন্ত করবে না। তার ওপর অশোককুমারকে সবাই চেনে, সবাই জানে যে ও হিন্দু, এক বিখ্যাত হিন্দু যাকে হত্যা করাটা বলার মতো একটা কৃতিত্ব হবে। আমি আরবি কোনো প্রার্থনা জানি না; এই সময়ের জন্য উপযুক্ত, কোরানের তেমন একটা সুরাও জানা নেই আমার। আমি নিজেই নিজেকে গাল দিচ্ছিলাম, যা মনে আসছিল ভুলভাল প্রার্থনা করছিলাম, হৃৎপিণ্ডটা যেন লাফাচ্ছিল। ‘হা আল্লা, আমাকে বিপদে ফেলো না। দেখো কোনো মুসলমান যেন অশোককে খুন না করে, নইলে বাকি জীবনটা আমাকে লজ্জায় অপরাধবোধে মাথা নুইয়ে থাকতে হবে।’ …

গাড়ি যখন বিয়ের শোভাযাত্রার কাছে এলো, লোকজন চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘অশোককুমার, অশোককুমার!’ আমি তো জমে গেলাম। অশোকের হাত কিন্তু স্টিয়ারিং হুইলে, ও শান্ত। আমি হাড় হিম করে দেওয়া ভয়টাকে ঝেড়ে ফেলে জনতার ভিড়কে শান্ত করার উপক্রম করছিলাম, বলতে যাচ্ছিলাম যে আমি একজন মুসলমান, আর ‘ও’ আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে, ঠিক তখনি দুজন অল্পবয়সী ছেলে সামনে এগিয়ে এসে শান্ত গলায় বলল, ‘অশোকভাই, এর মধ্য দিয়ে তো যেতে পারবেন না। এই যে, পাশের এই রাস্তাটা দিয়ে চলে যান।’

‘অশোকভাই? অশোক ওদের ভাই হলে, আমি কে? …’

অচেনা মুসলমান দাঙ্গাবাজের কাছে যে-আচরণ প্রত্যাশিত ছিল কিন্তু এলো না, ছবিতে তা-ই আসে চেনা এবং 888sport live chatীবন্ধু শ্যামসুন্দর চাড্ডার কাছ থেকে, ধর্মে যে হিন্দু। নন্দিতা এই আঘাতটা দেখানোর জন্য খুব নরম একটা দৃশ্য তৈরি করেন। তারও আগে পরিপ্রেক্ষিতটা তৈরি করে নেন শ্যামের আত্মীয়দের দেখিয়ে, যারা মুসলমানের হিংসার প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছে। লোকাল ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে মান্টো আর শ্যামের কথা, বন্ধুকে মান্টোর সরাসরি প্রশ্ন ও তার জবাবে শ্যামের স্বীকারোক্তি যে প্রতিশোধের প্রয়োজনে সে তার মুসলমান বন্ধু মান্টোকেও ছেড়ে কথা বলবে না – মান্টোকে ভারত নামের স্বাধীন দেশে অস্তিত্ব-সংকটের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ছবিতে তারপরই রাতে মান্টোর ব্যাগ গোছানো, আর
ভিড়-গিজগিজ বোম্বে রেলস্টেশনে শ্যামের বিদায় জানাতে আসা হয়তো অপ্রত্যাশিত ত্বরায় ঘটে যায়, কিন্তু আমার ধারণা – পরিচালক চাইছিলেন মান্টোর 888sport live chatীমনের ভেতরকার তোলপাড়টাকে ‘আন্ডারলাইন’ করে দর্শককে বোঝাতে। মান্টো দেশ ছাড়ে যত না স্বাধীন হিন্দুস্তানের মুসলমান-বিদ্বেষে, তারও বেশি – চেনা মানুষের, কাছের মানুষের, 888sport live chatী মানুষের অচেনা, দূরের অ888sport live chatীসুলভ অনুদার হয়ে যাওয়ার অভিমানে। আর ঠিক এ-কারণেই বা এই জায়গা থেকেই – মান্টো দেশভাগের ছবির সীমানা পেরিয়ে হয়ে ওঠে এক লেখকের, এক 888sport live chatীর আশা ও আশাভঙ্গের কাহিনি।

এখনকার সিনেমা হলে বিরতিতে এবং ছবি চলাকালে মানুষের অপরিহার্য কাজ হলো খাওয়া।  খেয়াল করে দেখবেন সিনেমা হলে বিক্রি হয় মূলত সে-ধরনের খাদ্যবস্ত্তগুলো, যা খাওয়ার সময় খুব শব্দ হয়। যেমন পপকর্ন, চিপস। বেচারা সাদাত হাসান মান্টো, বিরতির পর যখন পর্দায় তাঁর পাকিস্তানবাসের প্রবল অভাবপীড়িত দারিদ্র্যলাঞ্ছিত দিনগুলো শুরু হয়, তখন আমার সামনে-পেছনে-চারপাশে অসংখ্য শহরবাসী খচমচ খচমচ শব্দে ও বিষণ্ণ সংবেদী হৃদয়ে খেয়ে চলেছেন। কিন্তু মানুষটা মান্টো বলেই আমার রাগ হয় না, বিবমিষা জাগে না, কারণ আমার মনে পড়ে যায় ‘গল্পলেখক ও অশস্নীলতা’ 888sport liveে লেখা তাঁর সেই কথাগুলো : ‘বিশ্বের সব দুর্গতি ও দুর্ভোগের মূল কারণ ক্ষুধা। ক্ষুধা মানুষকে ভিক্ষা করতে বাধ্য করে, অপরাধের দিকে ধাবিত করে। ক্ষুধা চরমপন্থী হওয়ার শিক্ষা দেয়। ক্ষুধা 888sport promo codeকে সতীত্ব বিক্রি করতে বাধ্য করে। ক্ষুধার জ্বালা ভীষণ জ্বালা। এর আঘাত অত্যন্ত মারাত্মক। ক্ষুধা মানুষকে পাগল করে তোলে, কিন্তু পাগলামো ক্ষুধার সৃষ্টি করে না। …’ দেশভাগ-পরবর্তী নতুন দেশ পাকিস্তানে মান্টোর নিজেকে প্রবাসী মনে হওয়া, বোম্বের বন্ধু-বলভরসা-অর্থ-খ্যাতি-মদ সব ছেড়ে লাহোরের 888sport live footballজগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা নয়, প্রকাশিত করার চেষ্টাকে নন্দিতা ভালোবাসায় দেখিয়েছেন। পাকিস্তানও নতুন দেশ, তার অর্থনীতিরও হাঁড়ির হাল। এখানেও মানুষের মধ্যে হতাশা আর বিশ্বাসভঙ্গের বেদনা। খবর কাগজ আর পত্রপত্রিকাগুলো লেখক মান্টোকে চিনতে পারে না। মান্টো ডুবে যান মদে, নিজের লেখার মজুরি নিয়ে ঝগড়া করেন সম্পাদকের সঙ্গে, শান্তি পান না। স্ত্রী সাফিয়া মান্টোর পাশে আজীবন স্থির এক আলোকবর্তিকা। মান্টোকে তাঁর মতো কেউ বোঝে না; কিন্তু ঘরে দু-দুটি শিশুকন্যা, তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে পারে না যে তাঁর অসম্ভব প্রতিভাবান ও আপসহীন স্বামী, তাঁকে নিয়ে তিনি কী করবেন! খাওয়ার টেবিলের দৃশ্যে মান্টো বলে, চিন্তা করো না, আমি অন্তত সেটুকু লেখালেখি করতে পারব, যাতে তোমাদের খাবার জোটে। সাফিয়ার প্রত্যুত্তর মনকে কাঁদায় : তোমার এই লেখালেখির জন্যই আমরা না খেয়ে মরব (মান্টোর স্ত্রী সাফিয়ার চরিত্রে এই ছবিতে অভিনেত্রী রসিকা দুগালের জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়)।

লেখালেখির জন্য এই যে পরিবারের না-খেয়ে-মরার আশঙ্কা, তা ক্রমে সত্য হয় ছবির শীর্ষবিন্দু – ‘ঠান্ডা গোশ্ত’ গল্পের জন্য মান্টোর বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায়। ছবির শুরু থেকেই মান্টোর বিখ্যাত গল্পগুলোকে আয়াসহীন দক্ষতায় ছবির কাঠামোতে বুনে দেন পরিচালক নন্দিতা। এই প্রকরণ নতুন নয়, এর ব্যবহার আমরা ইউরোপীয় ছবিতে হরবখত দেখেছি। ‘খোল দো’, ‘কালি সালোয়ার’, ‘টোবা টেক সিং’, ‘ঠান্ডা গোশ্ত’ – মান্টোর 888sport app download for androidীয় গল্প ও তার চরিত্ররা সেই প্রকরণ মেনেই লেখকের চোখের সামনে, তার ক্লিন্ন জীবনে এসে দাঁড়াতে থাকে। লেখালেখির জন্য পাঁচবার মান্টোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তার মধ্যে ‘ঠান্ডা গোশ্ত’ গল্পের আদালতে কাঠগড়ায় ওঠা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে চর্চিত। নন্দিতা এই পর্বটিকে যত্নে, অনেকটা সময় নিয়ে, দেখান – কারণ লেখক মান্টোর ‘কলমের মন’ বোঝার জন্য তা জরুরি। মনে রাখতে হবে, ১৯৪৯ সালের মার্চে আরিফ আবদুল মতিন-সম্পাদিত জাবিদ পত্রিকায় ‘ঠান্ডা গোশ্ত’ প্রকাশিত হওয়ার আগে তিন- তিনটি পত্রিকা গল্পটি প্রত্যাখ্যান করেছিল। প্রকাশের মাসখানেক পর থেকে গ-গোল, পুলিশ এসে পত্রিকার কপি বাজেয়াপ্ত করে, সার্কুলেশনের খাতাপত্র দেখে এজেন্টদের ঠিকানা টুকে নিয়ে যায়, পত্রিকা সরবরাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অবস্থা বেগতিক বুঝে প্রেস উপদেষ্টা বোর্ডে ‘ঠান্ডা গোশ্ত’ পেশ করা হয়। উপদেষ্টা বোর্ডের সভাপতি, পাকিস্তান টাইমসের সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বলেন, গল্পটি মোটেই অশস্নীল নয়। তাতে আদালতে যাওয়া আটকায়নি, ছবিতে আমরা মান্টোর গল্পের পক্ষে এই ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে আবারো সাক্ষ্য দিতে দেখি, তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘আমার মতে এই গল্প অশস্নীল নয়। একটি গল্পে কয়েকটি শব্দকে অশস্নীল অথবা অশস্নীল নয় বলে রায় দেওয়া অযৌক্তিক। গল্প পর্যালোচনা করার সময় আংশিক নয় বরং গোটা গল্পটিকে পরখ করে দেখতে হবে। আমার মতে, লেখক এই গল্পে অশস্নীল কিছুই লেখেননি, কিন্তু সেইসঙ্গে 888sport live footballের বৈশিষ্ট্যগুলিও পূরণ করেননি। কারণ এই গল্পে জীবনের মৌলিক সমস্যাবলির সমেত্মাষজনক সমাধান নেই’ (ফয়েজের বিবৃতির অংশ মান্টোর 888sport live ‘ঠান্ডা গোশ্তের মামলা’ থেকে 888sport app download apk latest version)। সময় গড়ায়, ক্রমে মান্টোসহ এই মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকে জরিমানা করা হয়; তারও পরে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। মান্টো আদালতে জেতেন বটে, কিন্তু একশরীর অসুস্থতা ও এক মনভরা বিষাদের মূল্যে।

নন্দিতার ছবিতে সাদাত হাসান মান্টো তাঁর সমস্ত মানুষি দোষগুণ নিয়ে মলিন ও উজ্জ্বল। 888sport live chatীর ব্যক্তিগত জীবনে কিছু প্রমাণ করার নেই, তাঁর দর্শনটুকু বুঝলে তাঁর সৃষ্টিকেও সম্পূর্ণভাবে ধরা যায়। রাষ্ট্র, ধর্ম, সংস্কারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো 888sport live chatীর 888sport live chatকর্মের খ-রূপ বিচারে অভ্যস্ত, কারণ তা সহজ, তাতে মাথা খাটাতে হয় না এবং নৈতিকতার খাঁড়ায় 888sport live chatী ও 888sport live chat উভয়কেই বধ করা সহজ হয়। 888sport live chatীকে তাই যুগে যুগে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, নিজের সৃষ্টির রক্ষা ও প্রতিরক্ষা করতে হয় – প্রয়োজনে নিজের জীবনের মূল্যে। সেখানে তাঁর কোনো সঙ্গী নেই, তিনি নিঃসঙ্গ, একক, একাকী মানুষ এক। তিনি নিজে নগ্ন, তাই সমাজকেও তিনি বাহারি পোশাক পরান না, পরাতে চান না। বরং চারপাশের প্রতিবেশের কপট ছদ্মবেশ কুটিকুটি করে ছেঁড়ায় তাঁর 888sport live chatের সুখ, তাঁর সত্যের সাধনা। মান্টো কিন্তু স্পষ্ট, অকপট : ‘কেউ যদি কোনও মদের দোকানে বোতল আনতে যায় তার অর্থ এই নয় যে সে ওমর খৈয়াম বনে গেছে অথবা হাফিজের দেওয়ানগুলি তার মুখস্থ হয়ে গেছে। মদ ব্যবসায়ী শরাব বিক্রি করে; ওমর খৈয়ামের চতুষ্পদী বা হাফিজ-সিরাজির গজল বিক্রি করে না।’ বেশ্যাকে বেশ্যা, দুর্নীতিগ্রস্তকে দুর্নীতিগ্রস্ত, অন্ধকারকে অন্ধকার হিসেবে দেখান বলেই মান্টো নিজেকে স্বয়ং ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করে ছবিতে এক জায়গায় বলেন, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে তাঁর প্রতিযোগিতার কথা, কে ভালো গল্প লিখতে পারেন, তিনি না ঈশ্বর, তা জানতে তিনি খুবই আগ্রহী।

মান্টো চরিত্রে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর নাম এই প্রথম লিখলাম। ছবি মুক্তির আগে-পরে নওয়াজউদ্দিনের অনেক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত বা সম্প্রচারিত হয়েছে ভারতের গণমাধ্যমে। প্রশংসিত হয়েছে নওয়াজউদ্দিনসহ এই ছবির অধিকাংশ অভিনেতা-অভিনেত্রীরই ছবিতে অভিনয়ের জন্য কোনো পারিশ্রমিক না নেওয়ার ব্যাপারটি (নওয়াজউদ্দিন প্রতীকী এক টাকা নিয়েছেন, এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে)। এক সাক্ষাৎকারে নওয়াজউদ্দিন বলেছেন, এর পরও যদি এই ছবি আবার তৈরি হয়, বারবার তৈরি হয়, তিনি প্রত্যেকবার অভিনয় করবেন এবং কোনো পারিশ্রমিক না নিয়েই। এ সবকিছুই সাদাত হাসান মান্টো নামের মানুষটিকে ধরার, বোঝার চেষ্টায়। সাদাত হাসান মান্টোকে বলা হয় মুন্সী প্রেমচন্দের পর উর্দু কথা888sport live footballে, বিশেষত ছোটগল্পে সবচেয়ে শক্তিশালী লেখক। এক দেশভাগের ঘটনায় তাঁকে কিছুটা মাত্র বোঝা গেছে, এখনো অনেক বাকি, বললে অত্যুক্তি হবে কি?