দেশাত্মবোধের বিশ্বগত রূপ 888sport live chatী জয়নুল আবেদিন

মৃণাল ঘোষ

অবিভক্ত ভারতে ১৯৪০-এর দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত 888sport live chatীদের মধ্যে জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-৭৬) ছিলেন এক অবি888sport app download for androidীয় ব্যক্তিত্ব। চল্লিশের প্রতিনিধি-স্থানীয় 888sport live chatীদের প্রায় সকলেই ১৯৪৩-এর মন্বন্তর দ্বারা আলোড়িত হয়েছিলেন। সেই করুণ বাস্তবতা অনেককেই 888sport live chatসৃজনে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই প্রতিবাদী প্রকল্পে জয়নুল আবেদিন এক স্বতন্ত্র পরিসর তৈরি করে আজো সকলের মনে মন্বন্তরের প্রধান এক 888sport live chatী হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। আজ পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতে অনেকের কাছেই এটা তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়। এর বাইরে 888sport live chatী ও সংগঠক হিসেবে তাঁর বিপুল কর্মকান্ড সম্পর্কে অনেকেই হয়তো সেভাবে অবহিত নন। কেননা দেশভাগের পর এদেশ ছেড়ে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা আজকের 888sport appsে চলে যান। তারপর সারা জীবন সেখানেই কাজ করেন। 888sport appsের এক প্রাতঃ888sport app download for androidীয় 888sport live chatী তিনি। সেখানে তিনি ‘888sport live chatাচার্য’ বলে পরিচিত। তাঁর সারা জীবনের ধ্যান ছিল আধুনিকতার এক ঐতিহ্যদীপ্ত দেশীয় আত্মপরিচয় গড়ে তোলা। সেটা তিনি অত্যন্ত সফলভাবে করেছেন। 888sport appsের 888sport live chatকে সমগ্র বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল করে তুলেছেন।

শুধু দুর্ভিক্ষের চিত্রকর হিসেবেই তাঁর যে-অবদান, তার গুরুত্বও অপরিসীম। এই চিত্রমালার ভেতর দিয়েই পরিস্ফুট হয়েছে তাঁর মানবতাবাদী প্রতিবাদী 888sport live chatীচেতনা। সেটাই তাঁর সারা জীবনের কাজের ভিত্তিস্বরূপ। যেভাবে তিনি দেখেছিলেন দুর্ভিক্ষের সেই             বাস্তবতা, যেভাবে তা  তাঁর ভেতর প্রতিক্রিয়া জাগিয়েছিল, তার কিছু আভাস পেতে তাঁরই কথা উদ্ধৃত করা যায়। কেরামত মওলার এক 888sport sign up bonusচারণায় উল্লিখিত হয়েছে সেই কথা।

মানুষ আর কুকুর একলগে যখন ডাস্টবিনের খাওন লইয়া কাড়াকাড়ি কইরা খায় তখন বুকটা ফাইটা যায়। এই কথা দুনিয়ার মাইনষেরে আমি কইছি – ছবিতে ধইরা দেখাইছি, মানুষ কত নিষ্ঠুর অইতে পারে। মানুষ তার ভাইয়েরে কেমনে কুত্তার পাশে নামাইতে পারে।

(মতলুব আলী-সম্পাদিত জয়নুল 888sport sign up bonus, মানব প্রকাশন, 888sport app, ১৯৯৪, পৃ ৮৬)

এই গভীর দুঃখবোধ থেকেই রূপায়িত হয়েছিল তাঁর মন্বন্তরচিত্রমালা।

১৯৪৩ সালে জয়নুল থাকতেন কলকাতায় পার্কসার্কাস এলাকার ১৪নং সার্কাস রোতে একটি ছোট ঘর ভাড়া করে। দেশ থেকে ছোট ভাই জেয়াদুর রহিমকে এনে রেখেছেন তাঁর কাছে। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুল থেকে 888sport live chatকলার শিক্ষা শেষ করেছেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে। তাঁর জীবনে আর একটি অভূতপূর্ব ঘটনা যে, আর্ট স্কুলে শেষ পরীক্ষা পাশ করার আগেই ১৯৩৭ সালে তিনি সেখানে অস্থায়ী শিক্ষক নিযুক্ত হন, এই অস্থায়ী পদ স্থায়ী হয়েছিল দুবছর পর ১৯৩৯ সালে। আর্ট স্কুলের অন্যতম এক শিক্ষক আবদুল মঈনের মৃত্যু হয় ওই বছর ১৬ মার্চ। সেই শূন্যস্থানে নিযুক্ত হন জয়নুল। ১৯৩৯-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, সে-বছরই ব্রিটিশ সরকারের তিন বছর মেয়াদের স্কলারশিপ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যাওয়া হলো না বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায়। ফলে ১৯৪৩ সালে সার্কাস রো-র বাড়িতে থাকেন। আর্ট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। যাতায়াতের পথে কলকাতার রাস্তায় দেখেন গ্রাম থেকে আসা দুর্ভিক্ষপীড়িত  নর-888sport promo code-শিশুর খাদ্যের জন্য হাহাকার। কুকুরের সঙ্গে একসঙ্গে ডাস্টবিন থেকে অন্যের ফেলে দেওয়া খাবার কুড়িয়ে খাওয়ার দৃশ্য। বাড়ির দরজায় দরজায় ফ্যানের জন্য ভিক্ষা। তাও না পেয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। বাড়ি ফিরে এসে সেই ছবিই আঁকেন সাধারণ সস্তার কাগজে কালি-তুলির মোটা রেখায়। চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার প্রত্যক্ষ দলিল হয়ে ওঠে এই চিত্ররাজি।

স্বাভাবিকতা ভেঙে অভিব্যক্তিবাদী তীক্ষ্ণতা ও তীব্রতায় আঁকা এই ছবিগুলি প্রথম থেকেই মানুষের মনে প্রবল অভিঘাত সৃষ্টি করে। ছবিগুলি ছাপা হতে থাকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা জনযুদ্ধ ও পিপলস ওয়ারে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যানেও ছাপা হতে থাকে এ-ছবি। ১৯৪৩ সালেই কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে কলেজ স্ট্রিট মার্কেটে অনুষ্ঠিত হয় দুর্ভিক্ষের ছবি নিয়ে এক প্রদর্শনী। তাতে তাঁর ছবিগুলি বহু মানুষকে আকৃষ্ট করে। ১৯৪৪ সালে ডার্কেনিং ডেজ অব বেঙ্গল নামে ইলা সেনের একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাতে ছিল তাঁর ১২টি দুর্ভিক্ষ-চিত্রের প্রতিলিপি। ১৯৪৫ সালের ৩ থেকে ৮ মার্চ কলকাতার মোহাম্মদ আলি পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও 888sport live chatী সংঘের তৃতীয় সম্মেলন। সেখানে আয়োজিত হয়েছিল ‘আমাদের দেশ’ শীর্ষক 888sport live chat-প্রদর্শনী। তাতেও দেখানো হয় তাঁর দুর্ভিক্ষের ছবি। এভাবে জয়নুলের পরিচিতি ও খ্যাতি প্রসারিত হতে থাকে। মানবতাবাদী প্রতিবাদী চিত্রচেতনার ও চিত্র-আঙ্গিকের এমন একটি মডেল তিনি তৈরি করেন, যা ১৯৪০-এর দশকের নন্দন-ভাবনার অন্যতম একটি প্রতীক বা ‘আর্কেটাইপ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।

এর আগে এবং পরে জয়নুল নানা আঙ্গিকে ও নানা বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। প্রবল দেশাত্মবোধ ও জাতীয়তাবোধ তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তিনি অবশ্য 888sport live chatের সেই সময়কার জাতীয়তাবাদী ধারাকে পরিহার করেছেন প্রথম থেকেই। কেননা দেশকালের যে-বাস্তবতাকে তিনি প্রকাশিত করতে চান, সেটা সম্ভব ছিল না তথাকথিত ভারতীয় রীতির সুষমাময় ছন্দের বিন্যাসে। পাশ্চাত্য স্বাভাবিকতাবাদী রীতিকে তিনি আত্মস্থ করেছেন। তারপর তাকে ভেঙেছেন অভিব্যক্তিবাদী রীতির অন্তর্মুখিনতায়। কিন্তু অভিব্যক্তিবাদী একটি ধারায় সন্নিবিষ্ট থাকে আত্মমগ্নতার যে রহস্যময় মরমি আবহ, যার দৃষ্টান্ত দেখি আমরা এডওয়ার্ড মুঙ্ক, এমিল নোলডে বা রবীন্দ্রনাথের কিছু ছবিতে, সেদিকেও তিনি যাননি। কেননা তাঁর কাছে তখন এবং চিরদিনই মানবিক অবক্ষয়জনিত দৃশ্য-বাস্তবতা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ছিল। তাকে প্রকাশ করার চিত্রভাষা তিনি খুঁজেছেন। মন্বন্তর চিত্রমালায় তারই সহজ ও সাবলীল প্রকাশ ঘটেছে। এই আঙ্গিকের মধ্য দিয়েই তিনি গড়ে তুলেছেন তাঁর নিজস্ব জাতীয়তাবোধের বিশেষ এক ধরন। পাশ্চাত্যবিশ্বকে আত্মস্থ করেই তিনি গড়ে তুলেছেন প্রাচ্যজাতীয়তার স্বতন্ত্র এক ভাষা। তাঁর রচিত এই চিত্রভাষাই চল্লিশের দশকের মানবিক যন্ত্রণাবোধের এক বিশিষ্ট ভাষ্য হয়ে উঠল, চলিলশের প্রকাশকে যা নানাভাবে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করেছে। এই মানবতাবাদী চিত্রভাষা গড়ে তোলাই জয়নুল আবেদিনের প্রধানতম এক অবদান, যা তিনি করেছেন 888sport live chatীজীবনের প্রথম পর্যায়ে।

তেতাল্লিশের মন্বন্তর চল্লিশের 888sport live chatকলায় গভীর অভিঘাত এনেছে। এ-কথা সকলেরই জানা। সে-সময়ের সচেতন ও মানবতাবাদী সব 888sport live chatীই এঁকেছেন দুর্ভিক্ষের মানবিক বিপর্যয়ের ছবি। এমনকি নন্দলাল বসুও এঁকেছেন তাঁর নিজস্ব জাতীয়তাবাদী পুরাণকল্পের ঢঙে। ‘অন্নপূর্ণা যার ঘরে, সে কাঁদে অন্নের তরে, এ বড় মায়ার পরমাদ’ – এই শিরোনামে শিব ও অন্নপূর্ণার ছবি। অতুল বসুর মতো স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকের 888sport live chatীও এঁকেছেন। ‘ক্যালকাটা গ্রুপে’র অন্তর্গত 888sport live chatীরা এঁকেছেন – পরিতোষ সেন, নীরদ মজুমদার, গোপাল ঘোষ, গোবর্ধন আশ প্রমুখ। এর বাইরে মন্বন্তরের বাস্তবতা জীবনব্যাপী প্রভাব ফেলেছিল কয়েকজন 888sport live chatীর ওপর। তাঁরা হলেন – চিত্তপ্রসাদ, সোমনাথ হোর ও কিছুটা অল্পপরিচিত মণি রায় বলে একজন 888sport live chatী। তাঁরা বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন।

জয়নুল তখন কলকাতার মানুষ। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও তাঁর প্রত্যক্ষ কোনো সংযোগ নেই। যদিও মার্কসবাদী আদর্শের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কাজে। তখনকার চট্টগ্রামের দুই 888sport live chatী চিত্তপ্রসাদ আর সোমনাথ হোর সমান্তরালভাবে এই দুর্ভিক্ষের বাস্তবতা থেকেই অর্জন করেছেন তাঁদের জীবনব্যাপী প্রকাশের ভিত্তি। চল্লিশের এই দায়বোধের 888sport live chatের প্রধান পথিকৃৎ জয়নুল আবেদিন।

কাজেই পশ্চিমবঙ্গ  বা 888sport apps – এরকম বিভাজনের মধ্য দিয়ে জয়নুলের মূল্যায়ন করা সমীচীন নয়। চল্লিশ-পরবর্তী ভারতীয় আধুনিকতার অন্যতম পুরোধা 888sport live chatী যেমন জয়নুল, তেমনি ১৯৪৭-পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তান বা 888sport appsের 888sport live chat ও ভারতীয় আধুনিকতারই প্রসারণ। যদিও কালক্রমে তা স্বতন্ত্র পথ নিয়েছে। সেই স্বতন্ত্র পথ নির্ধারণেও জয়নুলের রয়েছে পথিকৃতের ভূমিকা। পাশ্চাত্য আধুনিকতাকে আত্মস্থ করেই তিনি দুই বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত এক জাতীয়তাবাদী পথ অন্বেষণ করেছেন। এই অন্বেষণের ভেতর দিয়ে জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতাকে সমীকৃত করেছেন। এটাই তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান।

 

দুই

জয়নুল আবেদিনের জন্ম ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জে। তাঁর পিতা শেখ তমিজউদ্দিন আহমদ। মা জয়নবুন্নেসা। তাঁর বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। বদলির সূত্রে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জেলায় তাঁকে ঘুরতে হয়েছে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল ময়মনসিংহ শহর-সংলগ্ন কাঁচিঝুলি গ্রামে। কিন্তু ১৯২৫ পর্যন্ত ছেলেবেলাটা কেটেছে কিশোরগঞ্জ, কেন্দুয়া, মিঠামইন, শেরপুর ইত্যাদি অঞ্চলে। শৈশব থেকে বাংলার প্রকৃতি তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তাঁর মনকে সংবেদনশীল করেছে। প্রকৃতিমুগ্ধতাই তাঁর মনে সৃজনের বীজ বপন করেছে। 888sport live chatচর্চার কোনো পারিবারিক উত্তরাধিকার তাঁর ছিল না। শৈশব থেকে প্রকৃতিই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে ছবির দিকে। এক 888sport sign up bonusচারণায় বলেছেন :

যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি ছবি আঁকা শিখলাম কি করে? বা কার কাছ থেকে? তবে উত্তর দিতে পারব না। বলব, আমার দেশের প্রকৃতি আর পরিবেশ আমাকে ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এদেশের আকাশ, বাতাস, নদী, মাঠ, বন, এখানকার মানুষের চলাফেরা, ওঠা-বসা, হাসি-কান্না আমাকে ছবি আঁকতে বলেছে।

(মতলুব আলী-সম্পাদিত জয়নুল 888sport sign up bonus, পৃ ১৩৭)

‘আমি যখন ছোট ছিলাম’ শীর্ষক দুপাতার একটি ছোট 888sport sign up bonusচারণায় এসব কথা তিনি বলেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর সেই যে নিবিড় একাত্মতার অনুভব, তার আরো কিছুটা শুনে নিতে পারি আমরা, যা থেকে তাঁর মনটিকে বোঝা যায়, যে-মন তাঁকে 888sport live chatী করেছে। লিখছেন তিনি :

ব্রহ্মপুত্রের ধারে ছেলেবেলায় খেলে বেড়াতাম। শীতের নদী কুলু কুলু করে বয়ে যেত। জেলেরা মাছ ধরত, মেয়েরা কাপড় কাচতো, কলসী ভরে পানি নিয়ে যেতো বাড়ি, যাত্রী এপার-ওপার করতো খেয়া নৌকার মাঝি। আমি তন্ময় হয়ে দেখতাম মানুষের এই  আসা-যাওয়া।… সন্ধ্যাবেলা পাখিরা ঝাঁক বেঁধে অলস ক্লান্ত পাখায় ভর করে বাড়ি ফিরত। ঝপ ঝপ করে নাও বেয়ে গান গেয়ে যেত মাঝি, মেয়েরা কলসী ভরে বাড়ি ফিরত। রাখাল ছেলে গরুর পাল নিয়ে যেত বাড়ির পথে, দূরের মসজিদ থেকে শোনা যেত আজানের ডাক। আমি তন্ময় হয়ে নদীর ঘাটে বসে আকাশের এই রঙ ফেরা দেখতাম। ছেলেবেলায় আমার দেখা এই যে আমার দেশের রূপ এ ছবি আমার মনের পর্দায় আঁকা ছিল। তারপর যখন এঁকেছি, তখন  মনের পর্দার সেই ছবি, রঙ তুলির আঁচড়ে বেঁধে রাখতে চেয়েছি। কতোখানি পেরেছি জানি না। (ওই, পৃ ১৩৭-১৩৮)

এই প্রকৃতিমগ্নতা থেকেই তাঁর মধ্যে জেগেছিল শুধু প্রকৃতি নয়, মানুষের প্রতিও ভালোবাসা। এই ভালোবাসাই জাগিয়েছিল প্রতিবাদী-চেতনা। লাঞ্ছিত মানবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদী-চেতনারই ফসল তাঁর দুর্ভিক্ষের চিত্রাবলি।

১৯২২ সাল থেকে তাঁর স্কুলের পড়াশোনা শুরু হয়। প্রথমে ভর্তি হন শেরপুর রামবঙ্গিনী এম-ই স্কুলে। সেখানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। তারপর ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তখন থেকেই তাঁর ছবি আঁকার আগ্রহ দেখা যায়। এরপর ১৯৩০ সালে ভর্তি হন ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুলে নবম শ্রেণিতে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন সেখানে। ওই বছরই বোম্বে ক্রনিকল পত্রিকা গল্ফ খেলা বিষয়ে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা আহবান করে। সে-প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হন। ছবি আঁকার প্রতি এই আকর্ষণ তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর তখন স্বপ্ন কলকাতায় গিয়ে আর্ট স্কুলে ভর্তি হবেন। এর মধ্যে ১৯৩০ সালে একবার বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে কলকাতায় গিয়ে আর্ট স্কুল দেখেও আসেন। তাঁর বাবার সমর্থন ছিল না ছবি আঁকার অনিশ্চিত জীবিকার প্রতি। প্রধান শিক্ষক তাঁর প্রবণতা বুঝে তাঁর বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করেছিলেন। ১৯৩২ সালের জুলাই মাসে তিনি ভর্তি হন কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে। মায়ের সমর্থন ও সহানুভূতি পেয়েছিলেন। গয়না বিক্রি করে ভর্তি হওয়ার প্রাথমিক খরচ জুগিয়েছিলেন তাঁর মা।

আর্থিক অসচ্ছলতা তাঁর কলকাতায় থেকে আর্ট স্কুলে পড়াকে খুব কঠিন করেছিল। ময়মনসিংহ জেলা বোর্ড থেকে বৃত্তি পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। সেই বৃত্তি দেওয়া হতো আর্ট স্কুলের সুপারিশের ভিত্তিতে। আর্ট স্কুল থেকে সেই সুপারিশপত্র দেওয়া হতো প্রথমবর্ষের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে। এক বছর অপেক্ষা করার সময় ছিল না তাঁর। মুকুল দে তখন আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষ। আবেদন করলেন তাঁর কাছে। তাঁর ভর্তি পরীক্ষার ফল খুব ভালো ছিল। সেই বিবেচনায় মুকুল দে নিয়ম ভেঙে বিশেষ অনুমোদন দিয়েছিলেন। তার ফলে ময়মনসিংহ জেলা বোর্ড থেকে মিলেছিল মাসিক ১৫ টাকার বৃত্তি। তাতেই কলকাতার জীবন চালাতে হতো। কিছু কিছু কমার্শিয়াল কাজও করেছেন পাশাপাশি। তা থেকে দেশের বাড়িতেও পাঠাতে হতো কিছু অর্থসাহায্য। সেই সময় তিনি থাকতেন ৩১ ওয়েলেসলি স্ট্রিটের একটি মেসে। ওখানে তাঁকে থাকতে হতো সিঁড়ির নিচে একটা ফাঁকা জায়গায়। ১৯৩২ থেকে ৩৮ পর্যন্ত ছাত্রজীবনের অর্ধেকের বেশি সময় এখানেই কাটে। শেষ দিকে বন্ডেল রোডে একটি বাড়ি ভাড়া করে চলে যান। ১৯৩৮-এ আর্ট কলেজ থেকে পাশ করেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে। পাশ করার পর তিনি বন্ডেল রোডের বাসা ছেড়ে চলে যান ১৪ নম্বর সার্কাস রো-র বাড়িতে। আগে জেনেছি, সেখানেই আঁকা হয়েছিল মন্বন্তরের চিত্র।

আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মন্বন্তরের ছবির পর্যায়ের আগে পর্যন্ত তাঁর ছবির ধরন কেমন ছিল, সেটা একটু ভেবে নেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। গোড়া থেকেই জয়নুলের প্রবণতা ছিল ইউরোপীয় স্বাভাবিকতাবাদী ও প্রথম পর্যায়ের আধুনিকতাবাদী চিত্রকলার প্রতি। তিনি সব সময়ই প্রত্যক্ষ বাস্তবকে ধরতে চাইতেন তাঁর ছবিতে। আবার শৈশব থেকে দেখা বাংলার নিসর্গের সজলতা সেই বাস্তবের ভেতর কিছু মায়ার আবরণও আনতে চাইত। তাই বাস্তবতাকে ব্যক্তি888sport live chatীর মননে দ্রবীভূত করার যে-প্রবণতা ছিল প্রতিচ্ছায়াবাদী বা ইমপ্রেশনিস্ট 888sport live chat-আন্দোলনে, সেটা তাঁকে প্রাথমিকভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তখনকার নব্য-ভারতীয় ঘরানার যে স্বদেশচেতনা-আশ্রিত রূপরীতি, তার প্রতি তিনি কখনোই বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করেননি। আবার ব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক অনুপুঙ্খ-স্বাভাবিকতাকেও তাঁর মননের পক্ষে উপযোগী মনে করেননি। এটা চল্লিশের 888sport live chatীদের একটা বৈশিষ্ট্য – তাঁরা ইউরোপীয় আধুনিকতাকে বুঝতে চাইছিলেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতাকে সেই আঙ্গিকে পরিস্ফুট করতে চাইছিলেন। এর সঙ্গে ছিল দেশীয় আত্মপরিচয় গড়ে তোলার দিকেও ঝোঁক। সেজন্যে দেশীয় লৌকিককে আত্তীকৃত করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। মকবুল ফিদা হুসেন, পরিতোষ সেন, সুনীলমাধব সেন প্রমুখ চল্লিশের 888sport live chatীর ছবিতে এই বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাই। জয়নুলও লৌকিকের দিকে এসেছেন একটু পরে, ১৯৫০-এর দশকে। ১৯৩০ ও ৪০-এর দশকে স্বাভাবিকতা ও প্রতিচ্ছায়াবাদী আঙ্গিককে মিলিয়ে নিয়ে দেশীয় বাস্তবতাকে রূপ দেওয়ার দিকেই ছিল তাঁর ঝোঁক।

ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর প্রকরণ-জ্ঞান যে খুব নিপুণ ছিল, তা বোঝা যায় সেই সময়ের ছবি দেখলে। দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায় ১৯৩৪ সালে তেলরঙে আঁকা একটি ছবির। শিরোনাম ‘ফসল মাড়াই’। একেবারে গ্রামের কৃষক পরিবারের কর্মী মানুষের ধান মাড়াইয়ের দৃশ্য। স্বাভাবিকতার আঙ্গিকে আঁকা। স্বাভাবিকতাবাদী পরিপ্রেক্ষিত বা পার্সপেকটিভের ব্যবহার রয়েছে সুনিপুণ। মানুষ বা 888sport app অবয়ব ত্রিমাত্রিকভাবে উপস্থাপিত। কৃষকের কুটির, ধানের গোলা পেছনে। দূরে গাছ, সাদা শরতের মেঘে ভরা আকাশ দেখা যায়। সম্মুখপটে পুরুষ ও 888sport promo codeরা ধান মাড়াই করছে। একটি মোরগ ফসলের দানা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। সায়াহ্নের আলো এসে পড়েছে সমগ্র পরিমন্ডলে। তাতে কৃষকের দৈনন্দিন অনির্বচনীয় হয়ে উঠেছে। এ-ছবি ততটা প্রতিচ্ছায়াবাদীও নয়। নিওরিয়ালিস্ট আঙ্গিকে 888sport live chatী ধরতে চেয়েছেন গ্রামবাংলার একটি দৃশ্যকে। স্বকীয়তা বিশেষ নেই। তবে ২০ বছর বয়সের পক্ষে বেশ দক্ষ কাজ। এই দক্ষতা ক্রমান্বয়ে পরিশীলিত হয়েছে।

১৯৩৪-এরই ‘বনানী দুমকা’ শীর্ষক একটি জলরঙের ছবিতে দেখা যায় – কেমন করে তিনি প্রতিচ্ছায়াবাদকে আত্মস্থ করছেন। আর্ট স্কুল ও আর্ট স্কুল-পরবর্তী সময়ে জলরং মাধ্যমটিতে তিনি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন এবং প্রতিচ্ছায়াবাদী আঙ্গিকেও। ১৯৩৮ সালে ‘অন অ্যান্ড ওভার দ্য ব্রহ্মপুত্র’ শিরোনামে একটি চিত্রমালা করেন জলরঙে। এরই একটি ছবি তাঁকে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের বার্ষিক প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক এনে দেয়। এই ছবিগুলির বিষয় ছিল জেলেদের মাছ ধরা, জাল শুকানো, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ, হাসপাতাল ও খেয়া পারাবার, নদীপারের কাশবন, জলে প্রতিফলিত নদীতীরবর্তী গাছ ইত্যাদি। বাংলার প্রাণের ভেতর প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছেন তিনি এ-সময়ে। ১৯৪৩-এর একটি তেলরঙেও ক্যানভাসে তিনি এঁকেছেন একটি চায়ের দোকানের অভ্যন্তরের ছবি। সম্মুখপটে টেবিলের ওপর হাতে ভর দিয়ে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। অভিব্যক্তিতে স্তব্ধতা রয়েছে। আঙ্গিকে রয়েছে উত্তর-প্রতিচ্ছায়াবাদী সেজানীয় আয়তনময় ঘনত্ব। সমস্যাসংকুল নাগরিক                  বাস্তবতার ভেতরে প্রবেশ করছেন তিনি। এরই চূড়ান্ত পরিণতি তাঁর মন্বন্তর চিত্রমালা। সরাসরি বাস্তবতাকে বিশ্লেষণ করলেন 888sport live chatী। চলে এলেন রেখাভিত্তিক অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিকে। জীবনের জন্য তাঁর ভালোবাসা দীপ্ত প্রতিবাদী রূপ পরিগ্রহ করল।

 

তিন

১৯৪৩-এর মন্বন্তরের পর ১৯৪৭-এর স্বাধীনতালাভ পর্যন্ত ভারতবর্ষের সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নানা সংঘাত ও টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কলকাতা তথা সারা বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে কমিউনিস্ট পার্টি ও ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও 888sport live chatীসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জয়নুল আবেদিন সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না। কিন্তু এই প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ সংযোগ ছিল। গোপাল হালদার, কবি গোলাম কুদ্দুস, শম্ভু মিত্র, বিজন ভট্টাচার্য, মণিকুন্ডলা সেন, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ কবি, 888sport live chatী, 888sport live footballিকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। তাঁরা তাঁর ১৪ নম্বর সার্কাস রো-র বাসায় নিয়মিত আসতেন। ১৯৪৪-এর অক্টোবরে বিজন ভট্টাচার্যের দুর্ভিক্ষভিত্তিক নাটক নবান্ন প্রথম মঞ্চস্থ হয়। সেই অভিনয়ে জয়নুল উপস্থিত ছিলেন। ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে কলকাতার মহম্মদ আলি পার্কে ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও 888sport live chatী সংঘের তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে একটি চিত্র-প্রদর্শনীও আয়োজিত হয়। জয়নুলের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা ছিল সেই প্রদর্শনীতে। স্বাধীনতা-আন্দোলন যত এগোতে থাকে, ততই নানারকম সামাজিক সংহতির পাশাপাশি হিন্দু ও মুসলমান এই দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদও ঘনীভূত হতে থাকে। এই বিভেদ চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৪৬-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়। এর প্রভাব পড়ে 888sport live chatের ক্ষেত্রেও। ১৯৪৬-এর শেষ দিকে মুসলমান 888sport live chatীদের ছবি নিয়ে আলাদা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে। জয়নুল ছিলেন এই প্রদর্শনীর প্রধান 888sport live chatী। বিচ্ছিন্নভাবে এ-প্রদর্শনীটি না হওয়াই হয়তো 888sport live chatের সংহতির পক্ষে ভালো ছিল।

এরকম একটি অশান্ত পরিমন্ডলের মধ্যেই ১৯৪৬-এর ৮ অক্টোবর জয়নুল আবেদিন বিয়ে করেন 888sport appর তৈয়বউদ্দিন আহমদের তৃতীয়া কন্যা জাহানারা আহমদকে (জন্ম ১৯৩১)। জাহানারার বয়স তখন ১৫ বছর। জয়নুলের প্রায় ৩২। জয়নুল তখন ১৯৪০-এর দশকের প্রধান এক ভারতীয় 888sport live chatী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। দেশে ও বিদেশে যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনী হচ্ছে, তাতে তিনি অংশগ্রহণ করছেন। যেমন – ১৯৪৬-এর নভেম্বর-ডিসেম্বরে ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্যারিসে যে আন্তর্জাতিক আধুনিক চিত্র-প্রদর্শনী হয়, তাতে ভারতীয় 888sport live chatীদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। ১৯৪৭-এর মার্চে দিল্লির আইফ্যাকসে আন্তঃএশীয় 888sport live chat-প্রদর্শনী হয়। সেখানে তাঁর ‘শালবৃক্ষরাজির মধ্য দিয়ে’ শিরোনামের একটি ছবি জলরঙে দ্বিতীয় 888sport app download bd অর্জন করে। সে-বছরই লন্ডনের বার্লিংটন হাউসে অনুষ্ঠিত হয় আধুনিক ভারতীয় 888sport live chatীদের প্রদর্শনী। তাতেও জয়নুল অংশগ্রহণ করেন। তখনকার সাম্প্রদায়িক বিভেদের পরিমন্ডলের পরিপ্রেক্ষিতে এ-কথা বলা যায় যে, 888sport live chatকলা ছিল এরকম সংকীর্ণ বিভেদের ঊর্ধ্বে। এই সংহতির একটা পরিসর জয়নুলের ছবির মধ্য দিয়েও পরিস্ফুট হয়েছে।

এরকম সংঘাত ও সংহতির টানাপড়েনের পরিমন্ডলের মধ্যে ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন এবং বিভাজিতও হলো। ঘটনাটি জয়নুলের জীবনে এবং ভারতীয় 888sport live chatের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। জয়নুল তখন কলকাতাতে বসেই ছবি আঁকছেন, চাকরিও করছেন গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে। দেশভাগের ফলে তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হলো – ওপার বাংলায় বা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়ার। তাঁর পক্ষে অবশ্য এই সিদ্ধান্তই স্বাভাবিক। কেননা ওখানেই তাঁর জন্ম এবং ওদেশের সঙ্গেই তাঁর নাড়ির যোগ। ১৯৪৭-এর আগস্টেই তিনি এখানকার চাকরি ছেড়ে 888sport appয় যান। এবং ওখানকার নরমাল ট্রেনিং স্কুলে ড্রয়িং টিচারের চাকরিতে যোগ দেন। তিনি একাই নন, সেই সময় কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে যেসব মুসলমান শিক্ষক ছিলেন, তাঁরাও পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হাবিবুর রহমান, শফিফুল আমীন, আনোয়ারুল হক, সফিউদ্দীন আহমেদ, সৈয়দ আলী আহসান প্রমুখ।

888sport appয় আসার পর জয়নুলের প্রধান কৃতিত্ব ওখানে একটি 888sport live chatশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। ১৯৪৮-এর নভেম্বরে গড়ে ওঠে গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট। তিনি তাঁর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। কিন্তু তখন তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি। সেখানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও বেতার বিভাগের প্রচার শাখার ডিজাইনার নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৪৮-এর আগস্ট থেকে              ১৯৪৯-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেন। ২৮ মার্চ 888sport appয় ফিরে তিনি আর্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম আত্মপরিচয় সন্ধানের একটি প্রক্রিয়াও চলছিল। তার সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত রেখেছেন জয়নুল। ১৯৪৮-এর ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের প্রথম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল ভিন্ন ধরনের এক প্রদর্শনী। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম কৃতিতেবর বিষয়টি পর্যালোচনা করতে একটি পোস্টার প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করা হয়। সেসব পোস্টারের বিষয় ছিল ভারতবর্ষে মুসলিম আধিপত্য বিস্তারের শুরু থেকে অর্থাৎ সুলতান মাহমুদের দিল্লি বিজয় থেকে মহম্মদ আলি জিন্নার পাকিস্তান গড়ে জেলা পর্যন্ত মুসলিম কৃতিত্বের দিকচিহ্নগুলি। এসব পোস্টারের ড্রয়িংগুলি করেন জয়নুল আবেদিন। এই মুসলিম আত্মপরিচয় থেকে বাঙালি আত্মপরিচয়ের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে সামরিক আত্মপরিচয় সঞ্চালনই পূর্ব পাকিস্তান তথা 888sport appsের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের প্রধান এক প্রকল্প, এই প্রকল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন জয়নুল। বাংলার 888sport live chatকলায় এটাই তাঁর প্রধান এক অবদান।

পাকিস্তান সৃষ্টির পরবর্তী বছরগুলিতে ধর্মীয় মৌলবাদী আধিপত্যের প্রভাবে সেখানে 888sport live chatচর্চার পরিমন্ডলটি ছিল খুবই সংকীর্ণ। এই বিরুদ্ধতার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। তিনি চেষ্টা করেছেন সংস্কৃতি-চর্চার অন্য ক্ষেত্রগুলিকে 888sport live chatচর্চার সঙ্গে যুক্ত করতে। কবি-888sport live footballিকদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে নানা প্রকল্প সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। 888sport live chatকলা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে চেষ্টা করেছেন। আর্ট ইনস্টিটিউট ক্রমে বড় হয়ে উঠতে থাকে। বড় পরিসরের প্রয়োজন হয়। ১৯৫২ সালে 888sport appর সেগুনবাগিচায় নতুন বাড়ি তৈরি হয়। সেখানে ইনস্টিটিউট সম্প্রসারিত হয়। ১৯৫৬-তে চারুকলা ইনস্টিটিউট আবার স্থানান্তরিত হয় 888sport appর শাহবাগে তার নিজস্ব ভবনে। 888sport live chat বিস্তারের অন্যতম প্রয়াস হিসেবে ১৯৫০-এ তিনি গড়ে তোলেন ‘888sport app আর্ট গ্রুপ’, ১৯৫১ ও ৫২-তে সেই গ্রুপের দুটি প্রদর্শনী হয় 888sport appয়। তাতে সাধারণ মানুষের অনেকটাই সাড়া মেলে।

১৯৫১ সালের ৩ আগস্ট জয়নুল কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডে যান। লন্ডনের ‘স্লেড স্কুল অব আর্টে’ উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। সেখানে তিনি মূলত ছাপচিত্র শেখেন জন বাকল্যান্ড রাইটের অধীনে। এই সময় তিনি ইউরোপে বিস্তৃত 888sport slot game করেন। ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি ও তুরস্কের বিভিন্ন মিউজিয়াম ঘুরে দেখেন। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে 888sport live chatকলা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। লন্ডনে তাঁর দুটি প্রদর্শনীও অনুষ্ঠিত হয়। এ-প্রদর্শনী উপলক্ষে পাশ্চাত্যের 888sport live chatতাত্ত্বিকরা তাঁর ছবি নিয়ে লেখেন। এরিক নিউটন, ড. রেইজার, ড. রেগিনাল্ড লে মে, জন অকল্যান্ড রাইট, মরিস কলিন্স প্রমুখের লেখা নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে ভেনিসে ইউনেস্কোর উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক 888sport live chatসম্মেলন আয়োজিত হয়। সেখানে তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫২-র আগস্টে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

দেশে ফিরে আসার পর তাঁর 888sport live chat-ভাবনায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়। নিবিষ্ট ও বিস্তৃতভাবে পাশ্চাত্য888sport live chat দেখার পর তার কি মনে হয়েছিল ওই পথে গিয়ে প্রাচ্য888sport live chatের কোনো মুক্তি নেই? আত্মপরিচয় অর্জনের জন্য দেশীয় চৈতন্যকে তুলে ধরা একান্ত জরুরি। চল্লিশের 888sport live chatীদের এটাও একটা বৈশিষ্ট্য যে, তাঁরা পাশ্চাত্য আধুনিকতাকে আত্তীকৃত করতে করতেই অনুভব করেছেন দেশীয় লৌকিকের গভীরে প্রবেশ করাও তাঁদের অনিবার্য দায়। ভারতবর্ষে মকবুল ফিদা হুসেন যেমন সেটা উপলব্ধি করেছেন, তেমনি করেছেন পরিতোষ সেন, সুনীলমাধব সেন, রথীন মিত্র, বা প্রাণকৃষ্ণ পালের মতো চল্লিশের 888sport live chatীরা। জয়নুলও দেশে ফিরে লোক888sport live chatের উজ্জীবনের দিকে মন দেন। শুধু নিজের চর্চায় নয়, সাংগঠনিক দিক বা সাধারণ মানুষের কাছে লোক888sport live chatকে তুলে ধরার ক্ষেত্রেও। ১৯৫৫-র আগস্টে 888sport appর সেগুনবাগিচায় আর্ট ইনস্টিটিউট ভবনে প্রথম লোক888sport live chat-প্রদর্শনী আয়োজিত হয় তাঁরই উদ্যোগে। ১৯৫৮-তে শাহবাগের আর্ট ইনস্টিটিউটেও আয়োজিত হয় লোক888sport live chat-প্রদর্শনী।

তাঁর এই পর্যায়ের কিছু ছবি দেখলে বোঝা যাবে এই পরিবর্তনের ধরন। প্রথমে দেখা যাক ১৯৪৮-এর দুটি তেলরঙের ছবি। একটি ঘরের ভেতর মাটিতে হাঁড়িতে ফুল নিয়ে করা স্টিললাইফ, আরেকটি ‘চেয়ারে পাঠরতা মেয়ে’ শীর্ষক গৃহাভ্যন্তরেরই একটি আলেখ্য। স্বাভাবিকতার সঙ্গে পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট রীতি মিলে গড়ে উঠেছে এই ছবি দুটি। এখানে তাঁর নিজস্বতা বিশেষ কিছু নেই। এবারে ১৯৫১-র কয়েকটি ছবির দিকে তাকানো যেতে পারে। যেমন সাঁওতাল জীবন নিয়ে করা তিনটি ছবি। তিনটিই জলরঙের। ‘সাঁওতাল দম্পতি’, ‘দুজন সাঁওতাল রমণী’ ও ‘সাঁওতাল পরিবার’। তিনটিই রেখার প্রাধান্যে গড়া খানিকটা সরলীকৃত স্বাভাবিকতার রূপায়ণ। লৌকিকের দিকে যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ বলা যায় একে। ১৯৫৩-র কয়েকটি ছবির দিকে তাকালে দেখি, এই সরলীকরণ আরো সম্পূর্ণতার দিকে গেছে। লৌকিকের আদল আসছে তাতে। উদ্ধৃত হচ্ছে নতুন এক বিশ্বদৃষ্টি। ‘আয়না নিয়ে বধূ’ ছবিটি তেলরঙের রচনা। কিছুটা স্বাভাবিকতার অনুষঙ্গ এখানেও আছে। ‘দুই মহিলা’, ‘পাইন্যার মা’, ‘গ্রাম্য মহিলা’ বা ‘মুখ চতুষ্টয়’ – এই চারটি ছবির প্রথম দুটি গুয়াশ, তৃতীয়টি জলরং, চতুর্থটি তেলরঙের রচনা।

এসব ছবিতে লৌকিক সারল্যকে জ্যামিতিকতায় অভিষিক্ত করে যে-রূপ তিনি গড়ে তুলেছেন, তা যামিনী রায়ের ঘরানায়              অন্তর্ভুক্ত হলেও তাঁর নিজস্ব বিশ্বদৃষ্টির প্রকাশে উজ্জ্বল। পূর্ব পাকিস্তানের 888sport live chatকলায় জয়নুল  এক নতুন উজ্জীবন আনলেন। ভারত বা পূর্ব পাকিস্তান – এই ওপরের স্তরের রাজনৈতিক বিভাজন সত্ত্বেও 888sport live chatের ক্ষেত্রে স্বভাবতই সেরকম কোনো বিভাজন নেই। এক সামগ্রিক জাতিচৈতন্য উদ্বোধিত হলো এই আঙ্গিকের মধ্য দিয়ে। ভারতেও সেই সময় অনেক 888sport live chatী এই ধরনের কাজ করছেন।

 

চার

চিত্র-আঙ্গিকের বিবর্তনের দিক থেকে ১৯৫০-এর দশককে বলা যায় জয়নুলের জীবনে লৌকিকের উজ্জীবনের সময়। এতদিন পর্যন্ত অর্জিত পাশ্চাত্যের আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকের ভিত্তির ওপর লৌকিকের সারল্য মিশে তাঁর পরবর্তী জীবনের চিত্রকলার কাঠামোটি গড়ে উঠেছে। সবটাই নির্ধারিত হয়েছে সাধারণ জীবনপ্রকাশের সঙ্গে সংযোগের ভিত্তিতে।

১৯৫৬ সালের অক্টোবরে চারুকলা ইনস্টিটিউট শাহবাগে তার নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হওয়ার আগেই ২৫ আগস্ট রকফেলার ফাউন্ডেশনের আনুকূল্যে এক বছরের জন্য তিনি বিদেশ 888sport slot gameে যান। এবার তিনি জাপান গিয়ে শুরু করেন। তারপর যান যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালি, সুইজারল্যান্ড ও স্পেন। এবারেও সানফ্রান্সিসকো, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক ও জার্মানিতে তাঁর চিত্র-প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৭-র আগস্টে দেশে ফিরে আসেন। ফিরে এসে আবার চারুকলা ইনস্টিটিউটের কাজে মন দেন। এখানে শুরুতে শেখানো হতো শুধু চিত্র, ছাপচিত্র ও বাণিজ্যিক কলা। ক্রমে ক্রমে এখানকার শিক্ষণীয় বিষয়ের গন্ডি বাড়িয়ে তোলেন। গড়ে ওঠে প্রাচ্য888sport live chat, মৃৎ888sport live chat, ভাস্কর্য ও কারু888sport live chat প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ। এই প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুধু কিছু 888sport live chatী তৈরি করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি চাইছিলেন সমগ্র দেশের মানুষের 888sport live chatরুচিকে উন্নত করে তুলতে। লোক888sport live chat-সম্পর্কিত গবেষণা এরই একটি অঙ্গ। এবারেও বিদেশ থেকে ফিরে এসে তিনি উপলব্ধি করেন যে, দেশীয় 888sport live chatের নিজস্ব চরিত্র না থাকলে বিশ্বের প্রেক্ষাপটে তা গুরুত্ব পায় না। 888sport appsের 888sport live chatের এই স্বাতন্ত্র্যের দিকটি নিয়ে আবেদিন অনেক ভেবেছেন এবং নিজের ছবিতেও তিনি তা করে দেখাতে চেষ্টা করেছেন।

১৯৫৯ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে দুটি সম্মানজনক উপাধি পান ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ এবং ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’। শেষোক্তটি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি। ১৯৬১ সালে তিনি সোভিয়েত সরকারের কাছ থেকে সেই দেশ 888sport slot gameের আমন্ত্রণ পান। এর আগে দুবার বিদেশযাত্রায় সোভিয়েত তাঁর যাওয়া হয়নি। এবারে দেড় মাসের সফরে ওই দেশের জীবন ও 888sport live chat পর্যবেক্ষণ করেন। মস্কোতে তাঁর ছবির একটি প্রদর্শনীও হয়। ১৯৬৪ সালে  পাকিস্তানের পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে 888sport live chatকলা বিভাগ খোলার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাত মাস সেখানে থেকে ওই কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে ১৯৬৫-র ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৯৬৭ সালের ৪ নভেম্বর আবেদিন 888sport appর ফাইন আর্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন। বিদায়কালে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা তাঁকে ‘888sport live chatাচার্য’ সম্মানে ভূষিত করে। এরপর থেকে তিনি এই উপাধিতেই পরিচিত হয়ে এসেছেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকারের টেলিভিশন, ফিল্ম ও পাবলিকেশন বিভাগের সাম্মানিক 888sport live chat-উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। এই সময় তিনি বেশির ভাগ করাচিতেই থাকতেন। ১৯৭০ সালের শেষ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সময়। পাকিস্তানের দুর্নীতিমূলক ও নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে আন্দোলন জেগে ওঠে এই সময়ে। বাঙালি জাতি স্বাধিকার অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ এবং জীবনপণ সংগ্রামে ব্রতী হয়। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হয়। এর পরিণতিতে গড়ে ওঠে স্বাধীন 888sport apps, ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারিতে জয়নুল পাকিস্তান সরকারের দেওয়া ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৭০-এর ১২ ফেব্রুয়ারি 888sport appয় ‘নবান্ন’ শীর্ষক এক বড় প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল। এ-প্রদর্শনীর জন্য তিনি ৬৫ ফুট দীর্ঘ ও ৬ ফুট প্রস্থের বিশাল এক স্ক্রলচিত্র অঙ্কন করেন। এর ভেতর দিয়ে পূর্ববঙ্গের জনজীবনের সমস্ত দিক তিনি তুলে ধরেন। বাংলার প্রকৃতি, বাঙালির লোকাচার, নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁদের বেঁচে থাকা – সমস্তই তিনি তুলে ধরেন এই ছবিতে। তাঁর দেশাত্মবোধ ও আঙ্গিক-ভাবনার মহাকাব্যিক প্রকাশ ঘটে এখানে। লৌকিকের সঙ্গে পাশ্চাত্য-আধুনিকতাবাদী রীতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা তাঁর যে নিজস্ব আঙ্গিকপদ্ধতি – এর শ্রেষ্ঠ প্রকাশ দেখা যায় এখানে। ওই বছরই তিনি এঁকেছিলেন আরেকটি স্ক্রলচিত্র। ১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর পূর্ববঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে বিপুল সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়। বহু ঘরবাড়ি, গৃহপালিত পশু ধ্বংস হয়। ধ্বংসের এই তান্ডব দেখে জয়নুল এঁকেছিলেন আর একটি বড় ছবি। তার নাম ‘মনপুরা ’৭০’। ৩০ ফুট দীর্ঘ এই ছবিতে 888sport live chatী বর্ণনা করেন এই ধ্বংসলীলার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা। উঠে আসে প্রকৃতির প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত বাঙালির জীবনের আলেখ্য। ‘নবান্ন’ ও ‘মনপুরা’ – ওই দুটি ছবিতে ধরা আছে 888sport live chatীর পরিণত পর্বের মননের রূপরেখা। কীভাবে তিনি দেখেছেন তাঁর দেশকে, কী ভেবেছেন দেশের জীবনধারা, মনন ও 888sport live chatিত প্রকাশ নিয়ে – তারই দলিল এই দুটি চিত্র। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজের অন্যতম। 888sport live chatীজীবনের শুরুতে মন্বন্তর চিত্রের মধ্য দিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের যে-ধারাবিবরণী তিনি তুলে ধরেছিলেন, সেই বিপর্যয়েরই আরেক দিক ধরা পড়েছে ‘মনপুরা’ চিত্রমালায়। আর ‘নবান্ন’তে দুঃখের মধ্যেও তিনি তুলে এনেছেন মুক্তির দিশা।

888sport apps স্বাধীন হওয়ার পর নতুন উদ্যমে তিনি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় তুলে ধরার কাজে ব্রতী হন। ১৯৭২ সালের শুরুতে নতুন সংবিধান রচনার কাজ যখন আরম্ভ হয়, তখন অলংকরণের দায়িত্ব পড়ে তাঁর ওপর। লৌকিক 888sport live chatের আঙ্গিক দিয়েই তিনি সেই অলংকরণের কাজ সমাধা করেন। নকশিকাঁথা ব্যবহার করেন সেই গ্রন্থের পুস্তানি তৈরিতে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আংশিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয় তাঁর মুখ। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। মুক্তিযুদ্ধে শিশু-কিশোররা যে-ছবি এঁকেছিল, তা নিয়ে যান সঙ্গে করে। লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউটে প্রদর্শনী করেন। ১৯৭৩-এর নভেম্বর-ডিসেম্বরে 888sport appsের 888sport live chatীদের একটি প্রদর্শনী নিয়ে ভারতে আসেন। কলকাতা-মুম্বাই ও দিল্লিতে প্রদর্শনী হয়। এই দলের নেতৃত্ব দেন তিনি।

জীবনের অন্তিম পর্বে তাঁর ছবির ধরন কেমন ছিল – তা বুঝতে কয়েকটি ছবির উল্লেখ করা যেতে পারে। 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তিনি অনেক ছবি এঁকেছিলেন। তার একটির শিরোনাম ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’। কলমের রেখা ও কালি-তুলির ছোপে আঁকা এ-ছবিটিতে অস্ত্রহাতে সংগ্রামী কিছু মানুষকে ছুটে যেতে দেখা যাচ্ছে। অবয়ব গঠনে বলিষ্ঠ স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিককে প্রতিচ্ছায়াবাদী রীতিতে রূপান্তরিত করে প্রকাশে এনেছেন অসামান্য জঙ্গমতা ও বলিষ্ঠতা। রেখাতেই যে তাঁর ছবির শক্তি, বোঝা যায় এ-ছবি দেখলে। আগের বছর ১৯৭০-এর ২৭ মে আঁকেন ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ শরণার্থী’ নামের একটি ছবি। সবটাই রেখার বিন্যাসে বিন্যস্ত। শিশুকোলে 888sport promo codeর বিষণ্ণতাকে তুলে ধরেছেন ছিন্ন-ছিন্ন রেখার সমাবেশে। এই জঙ্গমতা, এই অতিবাদী চেতনাকে জয়নুল ধরেন রেখার ভাষায় প্রতিচ্ছায়াবাদী রীতিকে আত্মমগ্নতায় অভিষিক্ত করে। ১৯৭৪-এর একটি জলরং – ‘জেলে নৌকা’ প্রকৃতির সুষমাকে ধরার দৃষ্টান্ত। ছবিটি এঁকেছিলেন ২৮ জুলাই মস্কোতে বসে। 888sport sign up bonus থেকে আঁকা এক নদীর নিসর্গ। প্রেক্ষাপটে বিপুল আকাশ আর নদী দিগন্তে মিশেছে। সম্মুখপটে অববাহিকায় জলে ভাসছে সারিবদ্ধ জেলে নৌকা। প্রতিচ্ছায়াবাদী রীতির এক সুষমাময় দৃষ্টান্ত এই ছবি। অনেক আগে ১৯৬৩ সালে আঁকা ‘নদী’ শিরোনামে এরকম আরেকটি ছবি যদি দেখি – তাহলে বোঝা যায় – রূপায়ণের ধরন খুব একটা পালটায়নি। এই যেমন তাঁর প্রকাশের এক ধরন, তেমনি আর এক ধরনের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যায় ১৯৭৬-এ আঁকা তেলরঙের ছবি ‘স্ট্রাগল’। একটি গরুর গাড়ির চাকা কাদায় বসে গেছে। গাড়ির চালক বিপুল শক্তিতে ঠেলে চাকা ঘুরিয়ে গাড়িটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। সামনে বলদ দুটিও যেন তাঁর সেই প্রয়াসে সহযোগিতা করছে। 888sport appsের সাধারণ মানুষের যে-সংগ্রাম প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে, সামাজিক-রাজনৈতিক নানা শোষণের বিরুদ্ধে –  তারই প্রতীক যেন এই ছবি। মানুষের বেঁচে থাকার এ-সংগ্রামই জয়নুলের চিত্রীয় অভিযাত্রার প্রধান অন্বিষ্ট ও লক্ষ্য।

১৯৭৫-এর সেপ্টেম্বরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনেক চিকিৎসাতেও কোনো ফল হয় না। ১৯৭৬-এর ২৮ মে ৬২ বছর বয়সে তাঁর জীবন সমাপ্ত হয়। শেষ ছবিটি এঁকেছিলেন ১৯৭৪-এর ৭ মে, তুলির রেখায় আঁকা পাশাপাশি দুটি মুখ। নবীন, দীপ্ত, যৌবনের প্রতিশ্রুতিতে ভরা। সমস্ত সংগ্রামের মধ্যে এই আশার আলোকশিখাই জয়নুল আবেদিনের চিত্রচেতনার কেন্দ্রীয় সত্য। দেশাত্মবোধ তাঁর 888sport live chatীসত্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই দেশাত্মবোধের বিশ্বগত রূপ খুঁজেছেন তিনি সারা জীবন।