দেয়াল ভাঙার আকাঙ্ক্ষা

মুহিত হাসান

পার হতে সংশয়

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

শুদ্ধস্বর

888sport app, ২০১৩

৪৫০ টাকা

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নবতম গদ্যগ্রন্থ পার হতে সংশয়ে সংকলিত নানা আকৃতির 888sport liveগুলোর বিষয়বস্ত্ত একটি আরেকটি থেকে আলাদা, এমনটা প্রথম দেখায় পাঠকের মনে হতে পারে। কিন্তু একটু খেয়াল করে বইয়ের অবয়বের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, এ-গ্রন্থের সবগুলো লেখাই একটি সুনির্দিষ্ট ভাবগত আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে নিবিড় সংযোগসূত্র স্থাপন করেছে। মূলত প্রতিটি লেখাতেই সমাজ-সংসার-রাষ্ট্রের জাড্য ও স্থবিরতার দেয়াল ভাঙার আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। পাশাপাশি ওই দেয়াল ভাঙতে বা পার হতে গেলে যেসব সংশয় ও প্রতিবন্ধতা আমাদের মনে স্বভাবতই জেঁকে বসে, তার কথাও তিনি তুলে ধরতে দ্বিধা করেননি। অবশ্য মনে রাখা দরকার, লেখকের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু নিছক প্রতিবন্ধকতাগুলোর চিত্র তুলে ধরা নয়, আদতে তাঁর উদ্দেশ্য ওইসব অসুবিধাকে চিনে নিয়ে কীভাবে তার মোকাবিলা করা যাবে বা স্থবিরতার দেয়াল ভেঙে সমাজের মধ্যে সুস্থ প্রবহমানতাকে উৎসাহিত করা যাবে  সে-প্রক্রিয়ার তল্লাশ করা।  এবং শুধু দু-একটি ক্ষেত্রে নয়, তাঁর দেয়াল ভাঙার আকাঙ্ক্ষা প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা এলাকায় বিস্তৃত। 888sport promo codeমুক্তির প্রসঙ্গ যেমন বইটিতে উঠে আসে, তেমনি আসে বাংলা মানভাষার বিকৃতি নিয়ে কথাও। রাষ্ট্রীয় বেতারকে ঘিরে একটু ভিন্ন মেজাজের চালচিত্র অথবা হালের পরিবর্তনের হাওয়ার খবরও সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কলমের আওতার বাইরে থাকে না। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম, সুভাষচন্দ্র বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, ফয়েজ আহমদ অথবা হুমায়ূন আহমেদের কথাও বলেন এ-বইয়ে। তাঁর মতে, এঁদের সবার সাধনার ক্ষেত্র ভিন্ন ভিন্ন হলেও প্রত্যেকের মধ্যেই ছিল স্থবির অবস্থাটা পার হয়ে নতুন কিছু করবার আকাঙ্ক্ষা-ইচ্ছা। এই কৌতূহলোদ্দীপক মিলের কারণেই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁদের নিয়ে সবিস্তার আলোচনায় ব্রতী হয়েছেন।

বইয়ের নাম888sport live পার হতে সংশয়ে মূলত আলোচিত হয়েছে 888sport appsের 888sport promo code-নিগ্রহের চালচিত্র। লেখকের মতে, নিছক সাময়িক ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও সমালোচনা দ্বারা এ দুর্দশাময় অবস্থা পাল্টাবে না, বদল করতে হবে প্রচলিত ব্যবস্থাটাকেই খোলনলচেসহ। তা না হলে 888sport promo codeমুক্তি বা মানবতার মুক্তি সহসাই ঘটবে  না, উল্টো আড়ালে-আবডালে প্রশস্ত হবে নিষ্ঠুরতার পথ – মুক্ত হবে মানুষ নয়, অপরাধপ্রবণতা। আর সেজন্য চাই দশে মিলে কাজ করার হিম্মত, কারণ ‘দশজন মিলে তবেই না সম্ভব হবে বৈষম্যের বিষবৃক্ষটিকে উৎপাটিত করা’।

‘মানভাষা নিয়ে আরো কথা’ 888sport liveে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই ভাষার অনর্থক বিকৃতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।  ‘আমেরিকার ভাষা যেমন ইংল্যান্ডের থেকে আলাদা, তেমনি পূর্ববঙ্গের ভাষা পশ্চিমবঙ্গের থেকে স্বতন্ত্র হবে’ এমন উদ্দেশ্যপূর্ণ আলাপ যে কার্যত সারহীন, সেটিই প্রমাণ করেছেন তিনি। তাঁর মতে, ওই যুক্তি কখনোই যথার্থ নয়। কারণ পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে তো আর আটলান্টিক সাগরের বিরাট দূরত্ব নেই। দেশটি ছিল অখন্ডই, কৃত্রিম উপায়ে কিছু রাজনৈতিক সুবিধাবাদীর অসৎ তৎপরতায় তাকে ভাগ করা হয়েছিল এবং দেশভাগও মানভাষাকে ভেঙে দিতে পারেনি। ‘গঙ্গাপারের নয়, আমরা পদ্মাতীরের ভাষা তৈরি করবো’ – এমন বক্তব্যকেও লেখক বাস্তবসম্মত মনে করেন না – যেহেতু ‘পদ্মা ও গঙ্গা যেমন অভিন্ন, বাংলা ভাষাও তেমনি।’ তাই তিনি হাল আমলে মানভাষার সঙ্গে লাগামহীন আঞ্চলিকতা ও ইংরেজি ভাষার মিশেলকে সমর্থন করতে পারেন না সংগত কারণেই। মানভাষা নিয়ে যথেচ্ছাচার করাকে যারা তথাকথিত ‘বৈপ্লবিক কাজ’(!) বলে মনে করে তাদের তিনি 888sport app download for android করিয়ে দেন যে, মানভাষা স্বাধীন 888sport appsের একটা বড় অর্জন ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরিচয় – আর এজন্যই যারা মানভাষার ওপর আক্রমণ করে, তারা বীর নয়, কাপুরুষেরও অধম। পরিশেষে লেখক তাই জোর দেন ভাষার মান রক্ষার করার ওপরেই, কেননা, ‘ভাষার মান রক্ষা না করলে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক নিম্নগামিতাকে প্রতিহত করতে পারবো না। রুখে দাঁড়াবার এবং সামনে এগোবার জন্য অনেক রকমের পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটা পদক্ষেপ হলো ভাষার মান বাঁচানো। দেশপ্রেমিক মানুষের পক্ষেই সেটা সম্ভব এবং করা আবশ্যকও।’

‘বেতারকে নিয়ে 888sport sign up bonusকথন’ শীর্ষক সুদীর্ঘ রচনায় উঠে এসেছে বেতারের এক অজানা জগতের অন্তরঙ্গ কথকতা। বেতার 888sport sign up bonus নামের একটি বই, যেখানে বেতারের বেশ কয়েকজন কর্মীর 888sport sign up bonusকথা সংকলিত হয়েছে, সেটিকে ঘিরে আলোচনা ওই 888sport liveের অনেকখানি জায়গা জুড়ে থাকলেও শেষমেশ কিন্তু কোনো গ্রন্থালোচনায় লেখাটি রূপান্তরিত হয়নি। বরং বেতারে সাবেক কর্মীদের 888sport sign up bonusচারণ বিশ্লেষণ করে প্রাবন্ধিক দেখিয়েছেন যে, একদা রাষ্ট্রীয় বেতারের কর্মীরা আপন ইচছাতেই বিধিনিষেধের দেয়াল ভাঙার জন্যে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু শেষমেশ নিয়ন্ত্রণ-নীতির কাছে তাদের হার মানতে হয়। ফলে প্রশাসনের তোষণ করতেই এখন ব্যস্ত থাকতে হয় বেতারের মতো আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু রাষ্ট্রের মূল মালিক যারা, সেই আমজনতার জন্য কোনো কল্যাণকর কাজ তার আর করা হয়ে ওঠে না – উল্টো সে-অধীনতার দেয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়ে, যান্ত্রিকতা তাকে গ্রাস করে ফেলে।

‘দুর্গম পথের দুঃসাহসী যাত্রী’ 888sport liveে কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী সত্তার এক ব্যতিক্রমী পাঠলভ্য। লেখকের ধারণা, নজরুলই ‘আমাদের প্রথম বিপ্লবী কবি’। তিনি এও 888sport app download for android করিয়ে দেন যে, নজরুলের সেই বিপ্লব কোনো ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নয়, পৃথিবীটাকে সুন্দর করার জন্যই। কিন্তু সেই বিপ্লবের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে-পথে তিনি এগোচ্ছিলেন, তা মোটেও স্বচ্ছন্দ ছিল না, ছিল অতিদুর্গম – ‘সেই পথে চলতে গিয়ে তিনি রীতিমতো রক্তাক্ত হয়েছেন’। তবু তিনি দুর্গম জেনেও ওই পথেই চলেছেন, কারণ অন্যপথে চলাটা ছিল তাঁর জন্য অসম্ভব। প্রাবন্ধিক অতঃপর আমাদের দেখান, নজরুলের ‘বৈপ্লবিক আকাঙ্ক্ষাটা তো কেবল 888sport live footballিক ছিল না। সেইসঙ্গে সেটি ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক। সমাজে তিনি শ্রেণিশোষণের অবসান ঘটিয়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।’ আর এজন্য কবিকে কম ভোগান্তিও পোহাতে হয়নি – ‘সামাজিক নিগ্রহ এবং রাষ্ট্রীয় নিষ্পেষণ উভয়েরই তিনি মুখোমুখি হয়েছেন।’ অনেক আলোচকই নজরুলের 888sport live football নিয়ে লিখবার সময় তাঁর ব্যঙ্গাত্মক রচনা বা 888sport app download apkগুলোর প্রসঙ্গটি অনেক সময় এড়িয়ে যান, এ-কারণে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সেদিকেও আলোকপাত করেন সুচারুরূপে। ঠিক কোথায় নজরুলের বিদ্রূপ-ব্যঙ্গের অনন্যতা, কীভাবে তা ভেঙে ফেলে রাষ্ট্রের আড়ম্বরপূর্ণ অথচ ফাঁপা দেয়াল – সেসবও তিনি বিশ্লেষণ করে জানান আমাদের। উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরেন নজরুলের অনেক স্বল্পপঠিত ব্যঙ্গ-888sport app download apkর অংশবিশেষ – পাঠকের সামনে কবির আরেক পরিচয় উন্মোচিত হয়।

আলোচ্য গ্রন্থের সবচেয়ে দীর্ঘ লেখাটির শিরোনাম ‘সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদের সীমা’। প্রায় আশি পৃষ্ঠার         এ-888sport liveে সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনীতির ইতিবৃত্ত ও দেশনায়ক হিসেবে তাঁর স্বাতন্ত্র্যমন্ডিত কর্মকান্ডের কথা উঠে এসেছে  বিস্তারিত ব্যাখ্যাসমেত – সম্ভবত এমনটি আগে কোনো রচনায় হয়নি। লেখক মনে করেন, সামগ্রিক ও ধারাবাহিক সংগ্রামের যে-চিন্তা সুভাষচন্দ্র করেছিলেন, সেটাই তাঁকে তাঁর সমসাময়িক অন্যসব রাজনীতিবিদ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। অন্যরা যখন নিছকই আলাপ-আলোচনা আবেদন-নিবেদনের মাধ্যমে দেশকে উপনিবেশের কবল থেকে মুক্ত করা যাবে এমন চিন্তা করছেন, তখন তিনি ভেবেছেন সশস্ত্র সংগ্রামের কথা। বাঙালির বেশ কয়েকটি সুপরিচিত ক্রটি থেকেও তিনি নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন, যে-কারণে ক্ষুদ্রতার সীমা পার হয়ে গিয়ে তিনি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন প্রাণবন্ত ও রীতিমতো দুঃসাহসিক।

এছাড়া এই গ্রন্থের ভেতর আরো যে কজন বিশিষ্ট মানুষের কথা উঠে এসেছে, তাঁদের মূল্যায়নেও লেখকের স্বচ্ছ ও নিপুণ          অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়।  সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র 888sport live footballের পূর্ববঙ্গের চিত্র কেমনভাবে উঠে এসেছে, তার আলোচনা পাঠককে ভাবাবে। ওয়ালীউল্লাহ্র 888sport live footballকর্মকে নতুন করে পাঠ করতেও উৎসাহিত করবে। অন্যদিকে, প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের একাকিত্বের যে-বর্ণনা দিয়েছেন লেখক, তা পাঠক-হৃদয়কে আর্দ্র করবে, আর তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্তের বিবরণ অন্তরকে করবে শাণিত। নিছক মুগ্ধতার মোড়ক ছাড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদের 888sport live chatসত্তার যে-মূল্যায়ন প্রাবন্ধিক করেছেন, সেটারও গুরুত্ব কম নয়। দেয়াল ভাঙার আকাঙ্ক্ষা যে হুমায়ূন আহমেদের মধ্যেও বিরাজমান ছিল, এমন অভিনব মন্তব্যও লেখকের গভীর ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টির পরিচয়বাহী।

সমাজকে পাল্টাতে হলে ব্যক্তিমানুষের বদল চাই আগে  –  এই কথাটিই পার হতে সংশয় বইয়ের প্রায় সবগুলো লেখাতেই এক সাধারণ সুর হয়ে বাজে। তবে সঙ্গে সঙ্গে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এটাও মনে করিয়ে দেন যে, ব্যক্তির মুক্তি ঘটাতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন সমষ্টিগত ব্যবস্থার পরিবর্তন। তাই দরকার পড়ে আগে সমাজটাকে বদল করার। তাহলেই মানুষের প্রকৃত মুক্তি আমাদের বিধ্বস্ত স্বদেশে সম্ভব হয়ে উঠবে। তিনি এই বইতে যেসব বিশিষ্ট মানুষের কথা বলেছেন, তাঁরাও ওই সমষ্টিগত ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। হয়তো কারো সেই কাজের বহিঃপ্রকাশ ছিল কিঞ্চিৎ উচ্চকিত, কারো বা কিছুটা নিচুস্বরের  – আড়ালে থাকা কণ্ঠের মতো। অবশ্য এই পার্থক্যটুকুর কারণে কাউকে লেখক খাটো করে দেখেন না এই গ্রন্থে। বরং সবার অবদান ও সংগ্রামকেই তিনি সমান গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করেন।  তাই শেষ অবধি পার হতে সংশয় হয়ে ওঠে এই বাংলার মানুষের অনিরুদ্ধ অগ্রযাত্রার ইচ্ছা ও সম্ভাবনার এক বিশ্বস্ত খতিয়ান, যা প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের জন্যে অবশ্যপাঠ্য এক গ্রন্থরূপে বিবেচিত হবে, এতে কোনো সন্দেহ অন্তত নেই।

যারা শোষণের  ও নিয়ন্ত্রণের দেয়াল ভাঙার আকাঙ্ক্ষা অন্তরে ধারণ করেন – ভাবেন সাময়িক নয়, প্রকৃত স্থায়ী এবং কল্যাণকামী পরিবর্তনের কথা – তারা এই বই থেকে অনেক ভাবনার খোরাক পাবেন।