সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) পঞ্চাশ বছরের আয়ুষ্কালের মধ্যে তাঁর রচনায় বিস্ময়কর বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছিলেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর জন্মের ১৫০ বছর ও প্রয়াণের ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেকে ও নিজেদের জিজ্ঞাসা করতেই পারি যে, আমরা এখন কেন দ্বিজেন্দ্রলালের লেখা পড়ব? তিনি ভালো ছাত্র হিসেবে বিলাত গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পাশ্চাত্য নাট্য888sport live football ও অভিনয়888sport live chatের সঙ্গে পরিচিত হন। সেখানে তিনি দেশপ্রেমের আবেগসমৃদ্ধ ইংরেজি 888sport app download apk লেখেন ও গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। দেশে ফিরে চাকরির পাশাপাশি 888sport live footballক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। প্রথমে প্রহসন লিখতে শুরু করেন। তারপরে নাট্যকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি তাঁর গীতিকাব্যসংগ্রহ ও হাসির গান ও 888sport app download apkর সংকলনেও তাঁর স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।১ এই তথ্যগুলি থেকেই বোঝা যায় : দ্বিজেন্দ্রলালকে ২০১৩-তে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে পড়া যায়। বর্তমান আলোচনায় আমরা তাঁর সাজাহান নাটকটিকে বর্তমান সময়ে পড়ার চেষ্টা করব।
দ্বিজেন্দ্রলালের ইতিহাস-আশ্রিত নাটকগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম রচিত তারাবাই (১৯০৩) নাটকের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন : ‘এই নাটকের উপাদান টড্ প্রণীত রাজস্থান হইতে গৃহীত।… আমি যদিও নাটকের মূল বৃত্তান্ত ‘রাজস্থান’ হইতে লইয়াছি, তথাপি অপ্রধান ঘটনা সম্বন্ধে স্থানে স্থানে ইতিহাসের সহিত এই নাটকের অনৈক্য লক্ষিত হইবে। এ অনৈক্য আমি মারাত্মক বিবেচনা করি না। কারণ নাটক ইতিহাস নহে। কোনো কোনো সমালোচক এইরূপ অনৈক্য লইয়া অনেক কালি ও কাগজ খরচ করেন, দেখিয়া এ কথাটি বলা দরকার হইল।’ সাজাহান (১৯০৯) নাটকেও দ্বিজেন্দ্রলাল নিজস্ব কল্পনাশক্তির বিস্তার ঘটিয়েছেন। তা নাহলে সাজাহান নাটকে ট্র্যাজেডির যে-ব্যাপকতা ও বিস্তার ঘটেছে তা হতে পারত না।
দ্বিজেন্দ্রলাল ঐতিহাসিক বাস্তবকে 888sport live chatের বাস্তবে রূপান্তরিত করার সময়ে তাঁর কল্পনাশক্তির সাহায্যে ইতিহাসকে অতিক্রম করে যেতে শেক্সপিয়রের ও শিলারের টেকনিককে অনুসরণ করেছিলেন। একজন ব্যক্তিমানুষ একসঙ্গে সামাজিক মানুষ ও একলা মানুষ। মানুষকে বাদ দিয়ে যেমন ইতিহাস নেই, তেমনভাবেই মানুষ যখন একা তখনো ইতিহাস নেই। কিন্তু সেই একলা মানুষটির সন্ধান পাওয়া যাবে 888sport live footballে। সাজাহান ও ঔরংজেবরা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটকে একই সঙ্গে সামাজিক-ঐতিহাসিক চরিত্র, আবার একলা মানুষও বটে। এই একলা মানুষটিকে দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর নাটকে সংলাপ আবেগ অলংকার দিয়ে ধরতে পারেন, কিন্তু ঐতিহাসিক তা পারেন না। তা থেকে অবশ্য এমন কথা বলা যায় না যে, ঐতিহাসিকের ইতিহাস-রচনার ক্ষেত্রে কল্পনাশক্তির কোনো ভূমিকা নেই। ঐতিহাসিকরা তথ্য আবিষ্কার করেন, নির্বাচন করেন ও তথ্য উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে জীবনকে ব্যাখ্যা করেন। এই ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তথ্য ও কল্পনা উভয়েরই গুরুত্ব রয়েছে। সেই কারণে ঐতিহাসিক একই সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ও 888sport live footballিক। কিন্তু ঐতিহাসিকের কল্পনা ও 888sport live footballিকের কল্পনা আবার ভিন্নধর্মী।
ঐতিহাসিক শেষ পর্যন্ত দ্রষ্টা, কিন্তু 888sport live footballিক স্রষ্টা। দ্বিজেন্দ্রলাল সাজাহান বা ঔরংজেবের চৈতন্যের গভীরে ঢুকে তাদের অন্তদ্বর্নদ্বকে যেভাবে উন্মোচন করতে পারেন ঐতিহাসিকের পক্ষে তা সম্ভব নয়। টড্-যদুনাথ সরকার মানুষের মনের গভীরে ঢুকতে পারেন না, কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল তা স্বচ্ছন্ধে করতে পারেন। সাজাহানের চার পুত্র একই সমাজে, একই শ্রেণিতে, একই পরিবারে বড় হয়ে উঠলেও তাঁদের ব্যক্তিত্বের গড়ন ভিন্ন-ভিন্ন কেন, তার বিশ্লেষণ ইতিহাসে পাওয়া যায় না। তার মর্মোদ্ঘাটন 888sport live footballিকই করতে পারেন।২
কলিংউডের মতে, ঐতিহাসিক যখন পুরনো যুগের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন তখন তাঁকে পুরনো মন নিয়ে পুরনো সমস্যা নিয়ে ভাবতে হবে। না-হলে সমস্যাটার চেহারা তাঁর আলোচনায় ধরা পড়বে না। মানুষের চেতনাকে নির্ধারণ করে তার সামাজিক সত্তা। অতীতের সমাজ অতীতের মনকে গড়ে তুলেছিল। আবার বর্তমানের সমাজ বর্তমানের মনকে গড়ে তুলেছে। তাহলে বর্তমানে মনকে অতীতের মনে সাময়িকভাবে হলেও রূপান্তরিত করা সম্ভব কীভাবে? ঐতিহাসিককে যেহেতু একই সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ও 888sport live footballিক হতে হয় – সেকারণেই তিনি কীভাবে বর্তমানের মনকে অতীতের মনে রূপান্তরিত করবেন? করলেও কতদূর পর্যন্ত করবেন? বর্তমানের মন কতটা চিরন্তন, আর কতটা পরিবর্তনশীল? কিন্তু সেখানে 888sport live footballিকের সুবিধা অনেক বেশি। দ্বিজেন্দ্রলাল যেভাবে নাটকের চরিত্রগুলির মনের গভীরে প্রবেশ করতে পেরেছেন ঐতিহাসিকদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সেই যুগে পারিবারিক কাঠামো-বন্ধন, আবেগ-উচ্ছ্বাস, জীবনবোধ-মৃত্যুভয়, মেজাজ কাঠামো-ধর্মবোধ ইত্যাদি সব মিলিয়ে মনের যে কাঠামো সাজাহান নাটকে উন্মোচিত হয়েছে তা ইতিহাসে পাওয়া সম্ভব নয়। সময়-চেতনা ও পরিবর্তনের ব্যাখ্যা ইতিহাসের অনুসন্ধেয় বিষয় অবশ্যই। কিন্তু সাজাহান নাটকে মানবচরিত্রগুলির যে এক অনন্ত বিস্তারের ইশারা দ্বিজেন্দ্রলাল নিয়ে আসেন তা ইতিহাসে অসম্ভব। নাটকটির চরিত্রগুলির অমন দীর্ঘ, অলংকারে ঝংকারে ঝংকৃত ডায়ালগ হুবহু বলে যাওয়া আজকের সময়ে কতটা সম্ভব, বা বললেও তা কতটা গৃহীত হবে, সেই প্রায়োগিক আলোচনা আমাদের বিষয় নয়। আমরা নাট্য888sport live football হিসেবে সাজাহান পড়লে বারবার অনুভব করি : নাটকটি ইতিহাস-আশ্রিত হয়েও কেমনভাবে ইতিহাস যা বলতে পারে না, তা স্বচ্ছন্দে বলে দেয়। নাটকটি জীবনের একটি সময় ও পরিসরকে জীবনের ভেতর থেকে আমাদের দেখায়। নাটকটিতে নাট্যকার সময় ও পরিসরকে নিজের মতো করে ব্যবহার করেছেন, নির্মাণ করেছেন, সৃষ্টি করেছেন। আর তা সাফল্যের সঙ্গে করতে পেরেছেন বলেই ইতিহাসের বড় সময়ের ওপর দাঁড়িয়ে চরিত্রগুলির ছোট সময় ও ব্যক্তিগত সময়কে অন্বিত করতে পেরেছেন।৩
ইতিহাসের বড় সময়ের সঙ্গে সাজাহানের মিল লক্ষ করার মতো। নাটকটির আরম্ভ ১৬৫৮-র নভেম্বরে। অল্পদিন আগে সাজাহান অসুস্থতার কারণে দিল্লি থেকে আগ্রা এসেছেন। নভেম্বরের মধ্যপর্বে সুস্থ হয়েছেন কিছুটা। সুজা বঙ্গদেশে বিদ্রোহ করেছে বটে, কিন্তু এখনও সম্রাট নাম নেয়নি। কিন্তু মোরাদ গুর্জরে সম্রাট নাম নিয়ে বসেছে, আর দাক্ষিণাত্য থেকে ঔরংজেব তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে।৪ সুজার বিরুদ্ধে জয়সিংহ ও সোলেমানের বিতর্ক এবং ঔরংজেব-মোরাদের বিরুদ্ধে যশোবন্ত সিংহ ও কাশিম খাঁর যুদ্ধ এবং তার ফলাফল পুরোপুরি ইতিহাসকে অনুসরণ করেছে। দারা, সুজা ও মোরাদের পরিণতিও ইতিহাসসম্মত। সাজাহান ঔরংজেবকে ক্ষমা করছেন – এ ঘটনা ইতিহাসবিরুদ্ধ নয়। ইতিহাসের বড় সময়ের ওপর দাঁড়িয়ে দিলদার, মহামায়া ও পিয়ারার মতো কল্পিত চরিত্রের মাধ্যমে দ্বিজেন্দ্রলাল ছোট সময় ও ব্যক্তিগত সময়কে সৃষ্টি করেছেন।
সাজাহান একদিকে সম্রাট, অন্যদিকে পিতা। তাই বারবার তার আচরণে এক প্রবল অন্তর্দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। কখনো বলেন, ‘তারা জানুক যে সাজাহান শুধু পিতা নয় সাজাহান সম্রাট।’ আবার বলেন : ‘কাজ নেই দারা। তারা রাজধানীতে আসুক; আমি তাদের বুঝিয়ে বলবো।’৫ আবার ঔরংজেব চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব তাকে ভিলেন করে তোলেনি। চতুর্থ অঙ্কের ষষ্ঠ দৃশ্যে কাজীর বিচারের পত্রখানি হাতে নিয়ে ঔরংজেব স্বগতোক্তি করছেন : ‘এই দারার মৃত্যুদন্ড। – এ কাজীর বিচার। আমার অপরাধ কি? – আমি কিন্তু – না, কেন – এ বিচার! বিচারকে কলুষিত কর কেন। এ বিচার।’৬ অর্থাৎ কাজির বিচারকে সামনে রেখে ঔরংজেব দারার মৃত্যুদন্ডকে যথার্থ বলে মনকে মানাতে চাইছেন। তারপরে দিলদার বলছে : ‘জাঁহাপনা, সে কাজীরা যখন দারার মৃত্যুদন্ড উচ্চারণ কর্চ্ছিল, তখন তারা ঈশ্বরের মুখের দিকে চেয়ে ছিল না। তখন তারা জাঁহাপনার সহাস্য মুখখানি কল্পনা কর্চ্ছিল, আর তার সঙ্গে মনে মনে, তাদের গৃহিণীদের নতুন অলঙ্কারের ফর্দ্দ কর্চ্ছিল।’ তখন ঔরংজেব বললেন : ‘…দিলদার তুমি সত্য কথা বলেছো। তুমি আজ দারাকে বাঁচালে!’ (দিলদারের প্রস্থানের পর আবার ঔরংজেবের স্বগতোক্তি) দারা বাঁচুন, আমায় যদি তার জন্য সিংহাসন দিতে হয় দেব! অতখানি পাপ – যাক্ এ মৃত্যুদন্ড ছিঁড়ে ফেলি…। (তারপর শায়েস্তা খাঁ ও জিহন খাঁর প্রবেশ করলে ঔরংজেব বলেন) : বিচারে ভাই দারার প্রাণদন্ড হয়েছে।… কিন্তু তাঁকে মার্জ্জনা করেছি।’৭ ‘শায়েস্তা খাঁ : ‘একটা মহাবিপদকে ঘাড়ে করে সমস্ত জীবন রাজ্য শাসন কর্ত্তে হবে! জানেন সমস্ত প্রজা, সৈন্য দারার দিকে?’ ঔরংজীব : ‘… না হয় সিংহাসন দেব।’ জিহান : ‘দারা কাফের! কাফেরকে ক্ষমা করবেন আপনি খোদাবন্দ।’ ঔরংজীব : ‘সত্য কথা জিহন খাঁ!… হ্যাঁ দারার মৃত্যুই তার যোগ্য দন্ড।’ ঔরংজীব দন্ডাজ্ঞাতে সই করলেন। জিহান চলে যাবার পর ঔরংজীব আবার জিহানের দিকে গেলেন; আবার ফিরলেন, তারপরে অনেক ভাবলেন; বললেন : ‘না কাজ নেই! – জিহান আলি! জিহান আলি! না চলে গেছে।’ শায়েস্তা খাঁর প্রতিক্রিয়া : ‘ঔরংজীব! তবে তোমারও বিবেক আছে?’৮ ঔরংজীবের অন্তর্দ্বন্দ্ব হিউম্যান এসেন্স ও হিউম্যান একজিসটেন্সের দ্বন্দ্বকে উন্মোচন করে। ঔরংজীব একমাত্রিক ভিলেন থাকে না এই নাটকে। ক্ষমতার নিজস্ব নিয়মেই, ধর্মের আড়ালে হলেও, ঔরংজীবকে দারাকে মৃত্যুদন্ড দিতেই হয়। শায়েস্তা খাঁ বলে : ‘তবে এত শ্রম করে তা (সিংহাসন) অধিকার করার প্রয়োজন কি ছিল? পিতাকে সিংহাসনচ্যুত, ভ্রাতাকে বন্দী – বড় বেশী দূর এগিয়েছেন জাঁহাপনা।’৯ সুতরাং ঔরংজীবের পক্ষে আর পেছনে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। কাফেরকে ক্ষমা না করার পেছনে ধর্মবিশ্বাস, নৈতিকতা ও সত্যের একটি ভূমিকা থেকে যায়। ঔরংজীবের অন্তর্দ্বন্দ্বের পেছনে যে দুধরনের নৈতিকতা ও সত্যের ভূমিকা রয়েছে তা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ফসল। আবার এই সত্য ও নৈতিকতার সঙ্গে ক্ষমতার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে।
মিশেল ফুকোর ভাষায়, ‘…truth isn’t outside power, or lacking power… Truth is a thing of this world : it is produced only by virtue of multiple forms of constraint. And it includes regular effects of power. Each society has its regime of truth, its ‘general politics’ of truth : that is, the types of discourse which it accepts and makes function as true; the mechanism and instances which enable one to distinguish true and false statements, the means by which each is sanctioned; the techniques and procedures accorded value in the acquisition of truth, the status of who are charged with saying what counts are true.১০ ক্ষমতাসীন শাসকশ্রেণি সত্যকে সন্দর্ভের মাধ্যমে চ্যানালাইজ করে, প্রবাহিত করে। সেই সন্দর্ভ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠলেই শাসকশ্রেণির মতাদর্শগত আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
ভাষাই ক্ষমতার সঙ্গে সত্য ও জ্ঞানকে অবিচ্ছিন্ন করে রাখে, রেজিম অফ ট্রুথ নির্মাণ করে। সাজাহানের প্রথম অঙ্কের তৃতীয় দৃশ্যে সুজা ও পিয়ারার দ্বিরালাপ মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করলে, ঠাট্টা-মজার মধ্যেও, ভাষা-ক্ষমতা-সত্যের সম্পর্ককে নাট্যকার কীভাবে বুঝতে চেয়েছেন তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
পিয়ারার বক্তব্য পরপর সাজিয়ে দেওয়া হলো : (১) ‘তুমি আবার বলবে কি! তুমি তো কেবল যুদ্ধ কবের্ব’, (২) ‘আমরা যেমন গুছিয়ে বলতে পারি, তোমরা তা পারো? তোমরা কিন্তু বলতে গেলেই এমন বিষয়গুলো জড়িয়ে ফেল আর এমন ব্যাকরণ ভুল কর যে -’, (৩) ‘আর অভিধানের অর্দ্ধেক শব্দই তোমরা জানো না। কথা বলেছ, কি ভুল করে বসে আছ। বোবা শব্দ অন্ধ ব্যাকরণ মিশিয়ে, এমন এক খোঁড়া ভাষা প্রয়োগ কর, যে তার অন্তত কুঁজো হয়ে চলতে হবেই।’ (৪) ‘আমাদের ভাষা বুঝবার ক্ষমতাটুকুও তোমাদের নাই? হা ঈশ্বর! এমন একটা বুদ্ধিমান স্ত্রীজাতিকে এমন নিবের্বাধ পুরুষজাতির হাতে সঁপে দিয়েছো…।’১১ ক্ষমতা নিজেই স্বায়ত্তশাসিত। যার ফলে যে সন্দর্ভ নির্মিত হয় তার সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের বড়রকম দূরত্ব নির্মিত হয়ে ওঠে। যে শুধু যুদ্ধ বোঝে, তার ভাষা আর পিয়ারার ভাষা আলাদা হতে বাধ্য। পিয়ারার মনে হয়, ‘সুজার ভাষা খোঁড়া ভাষা’। জীবনপ্রবাহের বহুমাত্রিকতার প্রতিনিধিত্ব সেই ভাষার পক্ষে সম্ভব নয়। শাসকশ্রেণি নিজস্ব সন্দর্ভের মাধ্যমে ‘রেজিম অফ ট্রুথ’ নির্মাণ করতে চাইলেও সে-সত্য শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয় না, তা ভেঙে যায় নতুন শাসকশ্রেণিকে নতুন ‘রেজিম অব ট্রুথ’ নির্মাণ করতে। ক্ষমতা, সত্য ও জ্ঞানের সম্পর্ক ও সমগ্রতার অবয়ব বদলে যায়। আন্তোনিও গ্রামসির ভাষায় : ‘One could sketch a picture of the ‘normative grammar’ that operates spontaneously in every given society, in that this society tends to become unified both territorially and culturally, in other words it has a governing clan whose function is recognized and followed. The number of ‘immanent of spontaneous grammars’ is incalculable and theoretically, one can say that each person has a grammar of his own. Alongside this actual ‘fragmentation’, however, one should also point out the movements of unification, with varying degrees of amplitude both in terms of territory and ‘linguistic volume’.১২
আন্তোনিও গ্রামসি সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হবার আগে তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের ছাত্র ছিলেন। ভাষার খন্ডায়ন ও ঐক্যের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ককে তিনি যেভাবে দেখেছেন, তার সঙ্গে ভাষা, সত্য ও ক্ষমতার বিষয়টিকে সমন্বিত করে সুজা ও পিয়ারার দ্বিরালাপকে অনুধাবন করি – তাহলে জন্মের ১৫০ বছর পরেও দ্বিজেন্দ্রলালকে কেন পড়ব তার উত্তর বোধহয় কিছুটা হলেও খুঁজে পেতে পারি। ইতিহাসের বড় সময়, ছোট সময় ও ব্যক্তিগত সময়কে নিজের মতো করে অন্বিত করতে পেরেছিলেন বলেই দ্বিজেন্দ্রলাল ২০১৩-তেও নতুন করে ভাবার মতো উপাদান আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পারেন।
তথ্যনির্দেশ
১। বন্দ্যোপাধ্যায়; অসিতকুমার, বাংলা 888sport live footballের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত, কলিকাতা : মডার্ন বুক এজেন্সি, ১৯৯৩, পৃ ৫৩৮।
২। দাশগুপ্ত; অশীন, 888sport liveসমগ্র, কলিকাতা : আনন্দ ২০০৮, পৃ ৩৭-৪৪।
৩। তদেব পৃ ৫১।
৪। দ্বিজেন্দ্র রচনাবলী, প্রথম খন্ড, কলিকাতা : 888sport live football সংসদ, ১৯৯৮, পৃ ২৩৫।
৫। তদেব, পৃ ২৩৬।
৬। তদেব, পৃ ২৭৯।
৭। তদেব, পৃ ২৭৯।
৮। তদেব, পৃ ২৮০।
৯। তদেব, পৃ ২৮০।
১০। The Foucault Reader, Ed by Paul Rainbow, New York : Pantheon Books, 1984, pp 72-73
১১। দ্বিজেন্দ্র রচনাবলী, তদেব, পৃ ২৩৯।
১২। An Antonio Gramci Reader, Ed. by David Forgacs, New York : Shockar Books, 1988, p 354. r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.