আবু সাঈদ তুলু
সম্প্রতি 888sport appsের 888sport live chatকলা একাডেমী রেপার্টরির আওতায় প্রযোজিত হয়েছে মুনীর চৌধুরীর কালজয়ী নাটক রক্তাক্ত প্রান্তর। এ-নাটক 888sport appsের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে দীর্ঘদিন ধরে পাঠ্য। বহুল পরিচিত প্রসেনিয়াম ধারায় রচিত নাটকটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাঙ্গিকে উপস্থাপন করেছে 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমী। এ-যাত্রাপালার নির্দেশনা দিয়েছেন সুলতান সেলিম। ইতিপূর্বে 888sport live chatকলা একাডেমীর প্রযোজনা একশ বস্তা চাল, টার্গেট প্লাটুন, রুদ্র রবি ও জালিয়ানওয়ালাবাগ আলোচিত প্রযোজনা। এর মধ্যে একশ বস্তা চাল দেশি-বিদেশি পর্যায়ে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। মুনীর চৌধুরী-রচিত রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকটি ‘দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সাথে মেলবন্ধন’ শীর্ষক প্রজেক্টে রেপার্টরি ধারায় প্রযোজিত। উদ্বোধন উপলক্ষে এ-যাত্রাপালা গত ২৭-২৮ জুন, ২০১৩ তারিখে দুদিনব্যাপী 888sport live chatকলার সেগুনবাগিচার এক্সপেরিমেন্টাল মঞ্চে প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে মূল নাটক, নাটকের প্রেক্ষাপট, উপস্থাপন-কৌশল, প্রসেনিয়াম-যাত্রাঙ্গিকের তুলনামূলক আলোচনায় বাংলার নিজস্ব নাট্যবৈশিষ্ট্য, উপস্থাপন মনস্তত্ত্ব ও 888sport live chatবৈচিত্র্যের স্বরূপ আলোচনাই লেখাটির মূল অভীষ্ট।
মুনীর চৌধুরী রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের বিষয়বস্ত্ত কায়কোবাদের মহাকাব্য মহাশ্মশান থেকে গ্রহণ করেছেন। কায়কোবাদ (প্রকৃত নাম মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী) ১৭৬১ সালে সংঘটিত পানিপথের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৯০৪ সালে এ অসামান্য মহাকাব্য রচনা করেন। মহাশ্মশান কাব্যটি তিন খন্ডের। প্রথম খন্ডে রয়েছে ১৯টি সর্গ, দ্বিতীয় খন্ডে ২৪টি সর্গ এবং তৃতীয় খন্ডে সাতটি সর্গ। বৃহদায়তন এ-কাব্যে ১৭৬১ সালে ভারতের পানিপথে সংঘটিত যুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম উভয়পক্ষের শক্তিক্ষয়কেই মানবিক বিচারের দন্ডে তুলে ধরা হয়েছে। কায়কোবাদ এ-যুদ্ধকে উভয়পক্ষের শক্তিক্ষয়কে প্রধান মনে করেছেন বলেই সম্ভবত নামকরণ করেছেন মহাশ্মশান (বাংলাপিডিয়া, মহাশ্মশান অন্তর্ভুক্তি)।
সমূহশক্তির বিনষ্টির ফলেই বেনিয়া শক্তি দীর্ঘস্থায়ী ও সুদৃঢ় আসন গেড়ে বসতে পেরেছিল। প্রসঙ্গত, সত্তরের দশকে মুনীর চৌধুরীর রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকটি বাংলা একাডেমী 888sport app download bd পায়। ধীরে ধীরে অনেকটা অজ্ঞাত কারণেই উৎসমূল মহাশ্মশান মহাকাব্য অনেকটা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মতো ধূলিধূসরিত ও নামসর্বস্ব হয়ে উঠতে থাকে। কায়কোবাদের অন্য রচনাগুলোর মধ্যে – কুসুম কানন (১৮৭৩), অশ্রুমালা (১৮৮৫), শিবমন্দির (১৯২২), অমিয়ধারা (১৯২৩), শ্মশান ভষ্ম (১৯২৪), মহরম শরীফ (১৯৩২) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কবির মৃত্যুর পর প্রেমের ফুল (১৯৭০), প্রেমের বাণী (১৯৭০), প্রেম পারিজাত (১৯৭০), মন্দাকিনী ধারা (১৯৭১) প্রভৃতি প্রকাশ পায়।
নাট্যকার মুনীর চৌধুরী প্রথম প্রদর্শনীর স্যুভেনিরে উল্লেখ করেছেন – ‘কাহিনীর সারাংশ আমি কায়কোবাদের মহাশ্মশান কাব্য থেকে সংগ্রহ করি। মহাশ্মশান কাব্য বিপুলায়তন মহাকাব্য। তাতে অনেক ঘটনা, অনেক চরিত্র। আমি তা থেকে কয়েকটি মাত্র বেছে নিয়েছি। তবে নাটকে স্বভাব ও অন্তরের আচরণ ও উক্তির বিশিষ্ট রূপায়ণে আমি অন্যের নিকট ঋণী নই। আমার নাটকের চরিত্র চিত্রণ, ঘটনা-সংস্থাপন ও সংলাপ নির্মাণের কৌশল আমার নিজস্ব। যে জীবনোপলব্ধিকে যে প্রক্রিয়ায় ‘রক্তাক্ত প্রান্তরে’ উজ্জ্বলতা দান করা হয়েছে তার রূপ ও প্রকৃতি সর্বাংশে আধুনিক।’ (নাট্যকারের কথা)
রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের কাহিনিবিন্যাস এরকম – পানিপথের প্রান্তর। এপাশে বাগপথে মুসলিম শিবির, অন্যপাশে মারাঠাদের কুঞ্জুরপুর দুর্গ। দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হবে যে-কোনো সময়। দুপক্ষেরই চলেছে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি-পরিকল্পনা। মুসলমানদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কাবুলের অধিপতি আহমেদ শাহ আবদালি, রোহিলার নবাব নজীবুদ্দৌলা, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মেহেদী বেগ-কন্যা জোহরা বেগম। অন্যদিকে মারাঠাদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বালাজি রাও পেশোয়া, ত্রিশূল বাহিনীর রঘুনাথ রাও, সদাশিব রাও এবং ইব্রাহিম কার্দি। মুসলিম পক্ষের জোহরা বেগমের স্বামী হিন্দুদের পক্ষের সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দি। জোহরা বেগম বারবার ছদ্মবেশ ধারণ করে মারাঠা শিবিরে প্রবেশ করে স্বামী ইব্রাহিম কার্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু ইব্রাহিম কার্দি নিজ সিদ্ধান্তে অনড়। আদর্শগত কারণেই জোহরা বেগমকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও ফিরে আসতে নারাজ। কারণ ইব্রাহিম কার্দির যখন কোনো কর্মসংস্থান ছিল না তখন হিন্দু মারাঠাই তাকে চাকরি দিয়েছে এবং পদোন্নতিতে সেনাপতি বানিয়েছে। অতএব, মারাঠাদের বিপদের দিনে তাদের ফেলে সে চলে আসবে না। অন্যদিকে জোহরা বেগমও তার জায়গায় অনড়। হিন্দু-মুসলিম দুপক্ষই পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার আক্রোশে ক্রমশ ফেটে পড়ে। হঠাৎ করে অতর্কিত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। অত্যন্ত ভয়ংকর ও বিধ্বংসী পরিণাম ঘটে। দুপক্ষে হতাহত ও মৃত্যু ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রতিহিংসা ও ক্ষমতা দখলের সমস্ত নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে যায়। যুদ্ধে মুসলমানগণ জয়লাভ করে। মারাঠা বাহিনীর সেনাপতি ইব্রাহিম কার্দি ধৃত হয়। জোহরা বেগম ওই যুদ্ধের সর্বাধিপতি আহমেদ শাহ আবদালির কাছে স্বামী ইব্রাহিম কার্দির মুক্তি দাবি করে। সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তির ফরমান নিয়ে জোহরা বেগম কারাগারে ইব্রাহিম কার্দিকে মুক্ত করতে গিয়ে দেখে ইব্রাহিম কার্দি মারা গেছে। ইব্রাহিম কার্দি ক্ষুদ্র মুক্তিকে অস্বীকার করে বৃহৎ মুক্তিকে গ্রহণ করেছে।
রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকটির কাহিনিবিন্যাসে একদিকে যেমন যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির মধ্যে দিয়ে যুদ্ধবিরোধী চেতনার বিকাশমুখী প্রবাহ প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি প্রধান 888sport promo code চরিত্র জোহরা বেগমের জীবনে নেমে এসেছে নিয়তিনির্ভর পরিহাসে বিয়োগান্ত পরিণতি। আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে ইব্রাহিম কার্দি মারাঠাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। বিষয়বস্ত্ত, ঘটনা ইতিহাসনির্ভর। কল্পনার প্রাধান্যে প্রত্যুজ্জ্বল। মানবীয় আবেগ প্রস্ফুটিত। সম্ভবত সেজন্যেই নাট্যকার মুনীর চৌধুরী নিজেকে ইতিহাসের দাস না বলে নাটকের বশ বলে উল্লেখ করেছেন।
নাট্যকার মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘যুদ্ধাবসানে পানিপথের প্রান্তরে অবশিষ্ট যে কয়টি মানব-মানবীর হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করি তাদের সকলে অবান্তর রণক্ষেত্রের চেয়ে ভয়াবহরূপে বিধ্বস্ত ও ক্ষতবিক্ষত। প্রান্তরের চেয়ে এই রক্তাক্ত অন্তরই বর্তমান নাটক রচনায় আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।’ (নাট্যকারের কথা)
মুনীর চৌধুরী ১৯৫৯ সালে নাটকটি রচনা করেন। মুনীর চৌধুরীর এ-ধরনের বিষয়কে বেছে নেওয়ার পেছনে সম্ভবত সমকাল প্রভাবিত করেছে। পাকিস্তান শাসনের সময় বিষয়বস্ত্ত ইসলাম ধর্মীয় না হলে সাধারণত গ্রহণযোগ্যতা কম পেত। জ্ঞানতত্ত্ব ও উপস্থাপনা সমস্তটাই ঔপনিবেশিক। এ-সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কৌশলটি বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সাম্প্রতিককালের নাট্যচর্চায়ও সেরূপ দেখা যায়। সাধারণত ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে পৃষ্ঠিত নাট্যগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টিমূলক ও ইউরোপিয়ান জ্ঞানতত্ত্বনির্ভর নানা কৌশল বিদ্যমান থাকে। লোকমুখে যতটুকু জানা যায়, ব্রিটিশ কাউন্সিল আবার পৃষ্ঠিত এ-প্রযোজনাগুলোকে তারুণ্য বা আধুনিক বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
১৯৬২ সালে মুনীর চৌধুরী নাট্যটি রচনার জন্য বাংলা একাডেমী 888sport app download bd লাভ করেন। মুনীর চৌধুরীর নির্দেশনায় ১৯৬২ সালের এপ্রিলে 888sport appর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে রক্তাক্ত প্রান্তর প্রথম মঞ্চস্থ হয়। প্রথম প্রদর্শনীতে জোহরা বেগম চরিত্রে অভিনয় করেন ফেরদৌস আরা বেগম (বর্তমানে ফেরদৌসী মজুমদার, নাট্যকারের বোন), জরিনা বেগম – লিলি চৌধুরী (নাট্যকারের স্ত্রী), হিরণবালা – নূরুন্নাহার বেগম, ইব্রাহিম কার্দি – রামেন্দু মজুমদার, নবাব নজীবদ্দৌলা – নূর মোহাম্মদ মিয়া, নবাব সুজাউদ্দৌলা – কাওসর, আহমেদ শাহ্ আবদালি – মুনীর চৌধুরী (নাট্যকার), আতা খাঁ – রফিকুল ইসলাম, দিলীপ – আসকার ইবনে শাইখ, রহিম শেখ – এনায়েত পীর ও বশির খাঁ – দ্বীন মোহাম্মদ।
মুনীর চৌধুরী আমৃত্যু ছিলেন বাগ্মী শিক্ষক, নাট্যকার, 888sport live football-সমালোচক এবং সংস্কৃতি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। পাকিস্তান সরকারের জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধের বিপরীতে মুনীর চৌধুরীই ছিলেন প্রথম দৃঢ়কণ্ঠ। তিনিই প্রথম বাংলা টাইপরাইটার তৈরি করেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকারের দেওয়া উপাধিও বর্জন করেন। মুনীর চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য 888sport app মৌলিক রচনা – মানুষ, নষ্ট ছেলে, কবর, দন্ডকারণ্য, দন্ড, দন্ডধর, চিঠি ইত্যাদি। 888sport app download apk latest versionগুলো হচ্ছে – মুখরা রমণী বশীকরণ, রূপার কৌটো, কেউ কিছু বলতে পারে না, ওথেলো (অসমাপ্ত) ইত্যাদি।
ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে পানিপথের যুদ্ধ অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। বিশেষত তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ। ধর্মগত দ্বন্দ্ব, প্রতিহিংসা, সংঘাত দৃশ্যগত মূল হলেও নেপথ্যে উপনিবেশ শাসনের ভিত্তিসৃষ্টিই প্রধান রূপে দেখা যায়। ধর্মগত ও ক্ষমতায় এ নৃশংস বিধ্বংসী ঘটনা ভারতের ইতিহাসে বিরল। ইউরোপিয়ানরা পলাশী যুদ্ধের নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এদেশীয় নবাবদের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করতে সমর্থ হয় এবং নিজেদের একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে নিয়ে শাসন-শোষণ, ব্যবসা-বাণিজ্য-আধিপত্যের পথ সুগম করে। পলাশী যুদ্ধের পরপরই ইউরোপিয়ানরা এদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেননি। অনেক তীক্ষ্ণ ও কুচক্রী দীর্ঘমেয়াদি জাল বিস্তার করেছে, যা এদেশের শাসকবর্গ কোনোভাবেই টের পাননি বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। ১৭৫৭ সালের মাত্র কয়েক বছর পর ১৭৬১ সালে অনুষ্ঠিত হয় পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ। এমন ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ভারতবর্ষে ইতোপূর্বে দেখা যায়নি। আপাত এ-যুদ্ধে মুসলমানগণ জয় এবং হিন্দু মারাঠা বাহিনী পরাজিত হলেও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল হিসেবে ভারতে মুসলিম-হিন্দু ক্ষমতা দুই-ই চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যায়, যা এর কয়েক বছর পর ১৭৬৪ সালে অনুষ্ঠিত বক্সারের যুদ্ধের মধ্য দিয়েই ভারতবাসী উপলব্ধি করতে পারে। বক্সারের যুদ্ধে ইউরোপিয়ানদের বিজয় ও কর্মচিত্র প্রমাণ করে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধটি ছিল ভারতীয় মুসলিম-হিন্দুদের সমস্ত শক্তির ক্ষয়। এরপর আর ইউরোপিয়ানদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ভারতবাসী মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
বর্তমান ভারতের হরিয়ানা প্রদেশের অন্তর্গত প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্র পানিপথ। ১৭৬১ সালে এ-পানিপথ প্রান্তরে সংঘটিত যুদ্ধই ইতিহাসে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ নামে অভিহিত। মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে গণনা করে এ-স্থানে সংঘটিত তৃতীয়তম যুদ্ধ বিধায় এ-যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ নামে অভিহিত। এই ‘তৃতীয়’ শব্দটি ব্যবহার করার মধ্যেও একটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কৌশল রয়েছে। যা হোক, পানিপথের এ-যুদ্ধের ইতিহাস সাধারণত ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। প্রায় বেশির ভাগ ইতিহাসকার এ-যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, বীভৎসতা ও ফলাফল আলোচনায় ব্যাপৃত হন না; কিন্তু বর্তমান সময়েও পানিপথের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, হানাহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বহির্শক্তি বা বেনিয়াশক্তির দীর্ঘমেয়াদি ও ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা অনুধাবন প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকের 888sport appsেও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও প্রতিহিংসার ধ্বংসযজ্ঞে সুযোগটা কে গ্রহণ করছে সেদিকেও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে সংঘটিত এ-যুদ্ধে মুসলমানদের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন আহমদ শাহ দুররানি, ওয়াজির ওয়ালি খান, শাহ প্রসাদ খান, জাহান খান, সুজাউদ্দৌলা, নজীবুদ্দৌলা, হাফিজ রহমত খান, দুনদি খান, বঙ্গজ খান, জয়েন খান প্রমুখ। মারাঠা হিন্দুদের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন – সদাশিব রাও, বিশ্বাস রাও, মালহারাও হালকার, মাহাতজি সিন্ধি, ইব্রাহিম খান, জানকজি সিন্ধি, বিবরাও পানসি, বৈয়তি, পুরন্ধারি, বিন্সুকার সিধোজি প্রমুখ। মুসলিমদের পক্ষে ৪২ হাজার অশবারোহী, ৩৮ হাজার পদাতিক বাহিনিসহ লক্ষাধিক সৈন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মারাঠাদের পক্ষে ৪০ হাজার অশ্বারোহী, ১৫ হাজার পদাতিক বাহিনিসহ ৭০ হাজারের বেশি সৈন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। (উইকিপিডিয়া)। এ-যুদ্ধে আনুমানিক মুসলমানদের পক্ষের ২০-৪০ হাজারের বেশি এবং মারাঠাদের পক্ষেও ৩০-৪০ হাজারের বেশি যুদ্ধক্ষেত্রেই নিহত হয়। বাকি অনেকেই যুদ্ধোত্তর বিকলাঙ্গ ও মৃত্যুবরণ করে। এ-ভয়াবহ যুদ্ধে আপাতত মুসলমানদের জয়লাভ হলেও দুপক্ষ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নাটকে আবদালি চরিত্র যুদ্ধের ভয়াবহতায় বলে, ‘যা দেখেছি তা অবর্ণনীয়। লাশের ওপর লাশ, তার ওপর লাশ! কেউ উপুড় হয়ে, কেউ চিৎ হয়ে, কেউ দলা পাকিয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেছে, আঁকড়ে ধরেছে, জাপটে ধরেছে। নানাজনের কাটা কাটা শরীরের নানা অংশ তালগোল পাকিয়ে এক জায়গায় পড়ে আছে। রক্তে রক্ত মিশেছে। কার সাধ্য এই রক্ত-মাংস-অস্থি হাতড়ে শত্রু-মিত্র বেছে বেছে আলাদা করে।’ (রক্তাক্ত প্রান্তর, তৃতীয় অঙ্ক, প্রথম দৃশ্য)
এ-যুদ্ধের কারণ নির্ধারণে অনেকেই ধর্মীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকে বড় করে দেখতে চান। কিন্তু সাধারণ প্রশ্ন জাগে, তখন তো মুঘল সাম্রাজ্যে নবাবদের শাসন বা ইসলামি শাসনই বিদ্যমান ছিল। আহমেদ শাহ আবদালি ও বালাজি রাও পেশায়ার মধ্যে শুধু কী আফগান বা মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা বা প্রতিহিংসাই প্রধান ছিল? এ-বিষয়ে যথার্থ, নিরপেক্ষ ও সত্য-উন্মোচনী তথ্য উদ্ঘাটন জরুরি। কিন্তু পানিপথের এ-যুদ্ধের তিন বছর পর ১৭৬৪ সালে সংঘটিত বক্সারের যুদ্ধ, প্রেক্ষাপট ও ফলাফল বিশ্লেষণ করলেই পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ভিন্ন ব্যঞ্জনায় ও বিষয়াদিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
নাটক সম্পর্কে নাট্যকার মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘এই যুদ্ধের ইতিহাস যেমন শোকাবহ তেমনি ভয়াবহ – হিন্দু ও মুসলিম পরস্পরকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার সংকল্প নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। যুদ্ধের স্থহূল পরিণাম মারাঠাদের পরাজয় ও পতন, মুসলিম শক্তির জয় ও প্রতিষ্ঠা লাভ। জয়-পরাজয়ের এই বাহ্য ফলাফলের অপর পিঠে রয়েছে উভয় পক্ষের অপরিমেয় ক্ষয়ক্ষতির রক্তাক্ত স্বাক্ষর। যতো হিন্দু আর যতো মুসলমান এই যুদ্ধে প্রাণ দেয় পাক ভারতের ইতিহাসে তেমন আর কোনোদিন হয়নি। মারাঠারা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলো বটে কিন্তু মুসলিম শক্তিরও কম ক্ষতিগ্রস্ত হলো না। অল্পকাল মধ্যেই বিপর্যস্ত ও হতবিহবল মুসলিম শাসকবর্গকে পদানত করে বৃটিশ রাজশক্তি ভারতে তার শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে উদ্যোগী হয়।’ (নাট্যকারের কথা)
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির আবশ্যিক সহপাঠ ‘নাটক’ হিসেবে নির্বাচিত ও অনুমোদিত যার পত্র নং ১৯৩১ (৪) শি: স: তাং ০৩/১১/৯৮ ইং পুনঃঅনুমোদন পত্র নং-২১/০২/১০৯৩ তারিখ ২২/০৭/০২ ইং সম্পাদনায় নানা তথ্যগত বিভ্রান্তিসহ ইতিহাস সম্পর্কেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। নানা বিভ্রান্তির মধ্যে দু-একটি নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। কলেজ সংস্করণের ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘সাধারণভাবে একটি নাটক যে নাটক, তা চেনার লক্ষণ তার সংলাপ। আগাগোড়া সংলাপ। নাটক অবশ্যই সংলাপনির্ভর।’ তাহলে প্রশ্ন সংলাপ ছাড়া কী নাটক হয় না? স্বাধীনতার ৪২ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এমন বিভ্রান্তিকর ধারণা বিদ্যমান থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। সম্পাদিত কলেজ সংস্করণের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য দেখে বিস্মিত হতে হয়, ‘বাংলা নাটক গ্রাম্য যাত্রা থেকে আসেনি – এসেছে পাশ্চাত্য নাটকের প্রত্যক্ষ সাক্ষাতে। নাটকের সঙ্গে মঞ্চের সম্পর্ক। ১৭৫৩ সালে কলকাতায় এদেশে প্রথম রঙ্গালয়। বাংলা রঙ্গমঞ্চের প্রতিষ্ঠা ১৭৯৫ সালে, হেরেসিম লেবেডেফ এর প্রতিষ্ঠাতা। ‘Love is the best doctor’ এবং ‘Disguise’-এর বাংলা 888sport app download apk latest version দিয়ে, তাঁর প্রচেষ্টায় বাংলা নাটকের যাত্রা শুরু।’ 888sport appsের নাট্যাঙ্গনে গত আশির দশকেই আশুতোষ ভট্টাচার্যকৃত বাংলা নাটকের শুরু সংক্রান্ত এ-ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। লেবেডেফের 888sport app download apk latest versionের মূল ছিল ভাষা-শিক্ষা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেলিম আল দীন, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জামিল আহমেদ বাংলা নাটকের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেছেন। শুধু ছাপার অক্ষরে লিখিত বাক্য দেখে মহাভারত না ভাবাই শ্রেয়।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘ভেবে দেখুন, যে রজনীতে কলকাতা নগরে নাগরিক সমাজের আনুকূল্য পেয়ে গেরাসিম লেবেদেফের পরিচালনায় দ্য ডিসগাইস এবং লাভ ইজ দ্য বেস্ট ডক্টর মঞ্চায়ন হচ্ছে হাতেগোনা দর্শকের সম্মুখে, ঠিক তখন, সেই সন্ধ্যায় বাংলার অপরিজ্ঞাত হাজার হাজার গ্রামের উঠানে, মাঠে, নদীতীরে, মন্দির প্রাঙ্গণে লাখো মানুষের সামনে পরিবেশিত হচ্ছে বেহুলা-লখিন্দরের পালা, কারবালার কেচ্ছা, সয়ফুল-মুলুকের সাত দরিয়ার কেচ্ছা, দেওয়ানা মদিনা, কাজলরেখাসহ শত শত পালা, হাস্তর।’ (২০১৩ সালের জানুয়ারিতে 888sport live chatকলা একাডেমীতে প্রদত্ত গ্রাম থিয়েটার-আয়োজিত বক্তৃতার অংশ)।
সেলিম আল দীন গবেষণায় তুলে ধরেন, ‘বাঙলা নাটকের প্রাচীন ও মধ্যযুগে ‘নাটক’ কথাটি প্রায় দুর্লভ। ‘বুদ্ধনাটক’কে নাটক বলা হলেও তা নৃত্যগীতেরই আঙ্গিক। আমাদের নাটক পাশ্চাত্যের মতো ‘ন্যারেটিভ’ ও ‘রিচুয়্যাল’ থেকে পৃথকীকৃত সুনির্দিষ্ট চরিত্রাভিনয় রীতির সীমায় আবদ্ধ নয়। তা গান, পাঁচালি, লীলা, গীত, গীতনাট, পালা, পাট, যাত্রা, গম্ভীরা, আলকাপ, ঘাটু, হাস্তর, মঙ্গলনাট, গাজীর গান ইত্যাদি বিষয় ও রীতিকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে।’ (সেলিম আল দীন, মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য, বাংলা একাডেমী, ১৯৯৬, পৃ ৪)
বাংলা নাটকের ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরনো। ভরতমুণির নাট্যশাস্ত্রে এ-অঞ্চলের রীতিকে ‘ওড্রমাগধী’ রীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের প্রথম নিদর্শন হিসেবে সর্বস্বীকৃত বৌদ্ধ সহজিয়া সাধন সংগীত ‘চর্যাপদ’ পূর্ব ও সমকালেই বাঙালি জীবনে নাট্য-অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। ‘চর্যাপদে’র মধ্যে বাংলা নাটকের উপাদান লক্ষণীয়। চর্যাপদে ১৭-সংখ্যক চর্যায় উল্লেখ আছে, ‘নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী/ বুদ্ধনাটক বিসমা হোই।’ অর্থাৎ বজ্রধর নৃত্যপর এবং দেবী সংগীত পরিবেশন করছেন, বুদ্ধনাটকের পরিবেশনা এজন্য কষ্টসাধ্য। তখন নাট্যচিন্তা ছিল আমাদের ভিন্নরূপ-পরিবেশনকেন্দ্রিক। ‘থিয়েটার’ শব্দটি ঔপনিবেশিক শাসন থেকেই আমাদের শব্দভান্ডারে যোগ হয়েছে মাত্র। সেলিম আল দীন বলেন, ‘বাঙলা নাটক সম্পর্কে একটি সাধারণ বিশ্বাস এই যে, ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনামলে, অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্ত্যে এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে উক্ত 888sport live chatমাধ্যমের উদ্ভব ও বিস্তার। …কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এ ধারণা ভ্রান্ত। …নাটকের মতো একটি জননন্দিত 888sport live chatমাধ্যম শুদ্ধ উনিশ শতকের আকস্মিক উদ্ভাবনা নয়। নানা রূপে ও রীতিতে, আমাদের এই জনপদে সহস্র বছর ধরে এর ধারা বহমান ছিল।’ (প্রাগুক্ত, ভূমিকা অংশ)
বাংলার যাত্রা-আঙ্গিকের সঙ্গে উপনিবেশ থিয়েটারতত্ত্বের কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। সম্ভবত, সে পরিপ্রেক্ষিতেই উপনিবেশ শাসন-সময়ে যাত্রাকে যতটুকু সুযোগ প্রদান করতো 888sport app 888sport live chatমাধ্যমকে করা হতো না। ডিএল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ বাংলার নিজস্ব নাট্যাঙ্গিক হিসেবে যাত্রাকেই প্রধান মনে করতেন। পাকিস্তান শাসনপর্বে পরিবেশনা 888sport live chatক্ষেত্রে অবহেলার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল যাত্রা। স্বাধীনতা-উত্তর 888sport appsে যাত্রা-আঙ্গিকটি অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট। এ-যাত্রা-আঙ্গিকদের উপনিবেশতত্ত্বসহ নানা বিদেশি সংগীতযন্ত্র ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইদানীং ক্লারিওনেট ছাড়া যেন যাত্রার বৈশিষ্ট্যই স্পষ্ট হয় না। কলকাতায় ঐতিহ্যবাহী অথবা ফোক পরিবেশনা হিসেবে ‘যাত্রা’-আঙ্গিকটিকেই দেখা হয়ে থাকে। একটু সচেতনভাবে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলার ‘যাত্রা’-আঙ্গিকটির প্রচলনের মধ্যে একটি নব্য উপনিবেশ পরম্পরা নির্ভরশীল। বাংলার হাইব্রিড আঙ্গিক এ-‘যাত্রা’। ‘পালা’ ‘জারি’ প্রভৃতি আঙ্গিকের মধ্যে অনেকটা বিশুদ্ধ বাংলা নাট্য-বৈশিষ্ট্যই প্রত্যক্ষ করা যায়। ঐতিহ্য-উৎসারী বিষয়ের বিশ্বচিন্তনজাত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তাক্ত প্রান্তর প্রযোজনা প্রসঙ্গে 888sport live chatকলা একাডেমীর বর্তমান মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘888sport appsে যেসব যাত্রাপালা অভিনীত হয় তার বেশিরভাগই ওপার বাংলার। যাত্রাপালারূপে মঞ্চস্থ হওয়ায় একদিকে যেমন যাত্রার ক্ষেত্রে এক নব অধ্যায়ের সূচনা হলো, অন্যদিকে আমাদের দেশীয় নাট্যকারদের মধ্যে যাত্রাপালা রচনার উৎসাহ সৃষ্টি করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের এই অসামান্য 888sport live chatমাধ্যম যুগ যুগ ধরে গণমানুষের সন্নিকটবর্তী সৃজন আনন্দের আঙ্গিকরূপে কার্যকর ছিল। কিন্তু সময়ের আবর্তে এসে একে সংকটে পড়তে হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন গোষ্ঠীর কলুষতায় যাত্রা হয়ে পড়ে অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট। এমতাবস্থায় এর হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। তবে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকার। এ-888sport live chatকে রক্ষায় সরকার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। যাত্রার নিবন্ধন এখন 888sport live chatকলা একাডেমীর দায়িত্বে। নিবন্ধনের লক্ষ্যে 888sport live chatকলা কিছুদিন পরপর যাত্রা-উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবে পরিবেশিত যাত্রাগুলো একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দেখেন। অতঃপর সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দলগুলোকে নিবন্ধন করা হয়। আমরা বিশ্বাস করি, বাঙালি ঐতিহ্যের এই 888sport live chatাঙ্গিক কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হবে। তবে সেজন্য প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, স্থানীয় সরকার ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দের সমর্থন আর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সকল কর্তৃপক্ষ, বিশেষত জেলা ও উপজেলা 888sport live chatকলা একাডেমীর কমিটির সহায়তা। আশা করি যাত্রা আবার পেশাদারি অবয়ব ফিরে পাবে। সেই সাথে যাত্রার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সৃজনধারা নব-আনন্দে উদ্বেলিত হবে।’ (প্রকাশিত স্যুভেনির)
প্রসেনিয়াম ধারায় লিখিত রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকটি 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমী কর্তৃক বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাট্যাঙ্গিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘যাত্রা’ আঙ্গিকে উপস্থাপিত। যাত্রার প্রচলিত সাধারণ নিয়মের মতোই শুরুতে উদ্বোধনী সংগীত বা বাদন অনুষ্ঠিত হয়। তারপর পালার বন্দনার মতোই দেশাত্মবোধক গান দিয়ে শুরুর বন্দনা হয়। যাত্রা শুরুর দেশাত্মবোধক গান সাধারণত সংগীত888sport live chatীগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পরিবেশন করেন। কিন্তু এ-যাত্রাপালায় একটু বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের সাথে সাথে কিছু নৃত্যের মুদ্রা ও হালকা চলন ব্যবহৃত হয়েছে।
উপস্থাপনাটিতে পান্ডুলিপির কিছু দৃশ্য ও উক্তি-প্রত্যুক্তিতে পরিবর্তন, সংশ্লেষ, পরিবর্ধন ঘটেছে। দ্বিতীয় অঙ্কে নজীবুদ্দৌলা ও জরিনা বেগমের দৃশ্যটি উপস্থাপিত হয়নি। এ-দৃশ্য বাদ দেওয়া ঘটনা বিন্যাসের ভিন্নতর গতির দিকে ধাবিত করে। পরের দৃশ্য উপস্থাপনের সময় জোহরা ও নজীবের কথোকথনের মধ্য দিয়ে নজীবের প্রতি জোহরার প্রীতিসুলভ আবেগ প্রকাশ পেয়েছে, যা নাটকের পরিণতিতে বা ইব্রাহিম কার্দির মৃত্যুর পর জোহরার ভিন্ন ভাবনা ভাবার একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এ-যাত্রাপালায় বিবেক চরিত্রটির নতুন সংযোগ ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি দৃশ্যে কিছু কিছু নতুন সংলাপের সংযোজন ঘটেছে। বিশেষত আহমেদ শাহ আবদালির সংলাপে মূল পান্ডুলিপি ছাড়াও প্রক্ষিপ্ত অসংখ্য সংলাপ রয়েছে।
যাত্রার শুরুতেই রহিম ও বশির খাঁ প্রবেশ করে। রহিম ও বশিরের অভিনয় অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল। কিন্তু তাদের মঞ্চে চলাফেরা-বাচনরীতি যাত্রার মতো বেশি উচ্চকিত ছিল না। তবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের মুভমেন্টের গতির প্রতি মনোযোগ দরকার। আতা খাঁর প্রবেশটি অত্যন্ত নাটকীয়। অত্যন্ত প্রাণবন্ত অভিনয়। আতা খাঁ যখন বশিরকে অাঁকড়ে ধরে ছেড়ে দিচ্ছে না বলে ভান করার অংশটি অত্যন্ত মেকি মনে হয়েছে। দশোহারার উৎসবে পূজার ফুলের ডালি ও হিরণবালার নৃত্যটি চমৎকার। তবে নির্দেশকের প্রযোজনাটির সম্পূর্ণ আউটকাম ও চূড়ান্ত অভীষ্টে কোনটা কতটুকু প্রযোজন সে-বিষয়ে মনোযোগ প্রয়োজন। ইব্রাহিম কার্দি যখন জোহরা বেগমের অবগুণ্ঠনমুক্ত ছবিদ্বয় দেখে তখন সাধারণ মঞ্চ উপস্থাপনের মতো নৈর্ব্যক্তিক ছবির ফ্রেম বা কিছুটা সাজেশন থাকলে অভিনয় অংশটুকু আরো উপভোগ্য ও দর্শকনন্দিত হয়ে উঠত। যেহেতু যাত্রাপালা তাই যাত্রায় পারিভাষিক বিষয়াদিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত। প্রতিটি চরিত্রের পোশাক-পরিকল্পনাটি অত্যন্ত বাহুল্যবর্জিত, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও নান্দনিক। তবে কার্দির পোশাকের রঙের ব্যবহারটি 888sport app চরিত্রের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের চেয়ে ম্লানভূমে নিয়ে যায়। কার্দি চরিত্রের অভিনয় অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও চমৎকার। অভিনেতার কল্পনার স্ফুরণ অকল্পনীয়। তবে, কার্দি চরিত্রের দেহাভিনয়ে আরো স্থিরতা প্রয়োজন। হাতের পাঁচটি আঙুলের প্রতিচ্ছবি হিসেবে নাটকে বর্ণিত পাঞ্জা ব্যবহৃত হয়েছে। এ-বিষয়ে নির্দেশকের আরো শৈল্পিক বিষয়ের ভাবনা প্রযোজনাকে আরো সমৃদ্ধ করতো। জোহরা বেগম চরিত্রের অভিনয় অত্যন্ত প্রাণবন্ত, বিশ্বাসযোগ্য ও নান্দনিক। জোহরা বেগমের পোশাক পরিকল্পনাটিও চরিত্র, বিষয় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী অনন্য। দশোহারার উৎসবের সময় ইব্রাহিম কার্দি ও জোহরা বেগমের দ্বন্দ্বটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। অত্যন্ত চমৎকার অভিনয় জোহরা বেগম ও ইব্রাহিম কার্দির। কার্দিকে ফিরিয়ে নিতে এসে ব্যর্থ জোহরা বেগমের অনুভূতির প্রকাশও নান্দনিক। আদর্শগত বিবেকতাড়িত কার্দির উপলব্ধিতে বিবেকের গান উপস্থাপিত হয়।
যাত্রাপালা রক্তাক্ত প্রান্তর উপস্থাপনায় নতুন নতুন সংলাপ সংযোজন করা হয়েছে। তবে, নির্দেশকের সচেতন থাকা উচিত – পালাটি যেন মূল অভিষ্টানুগামী হয়। হিরণবালা ও দিলীপের অভিনয় অত্যন্ত চমৎকার। অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ দিলীপের মদ্যপতা। নাটকটির মধ্যে এ-দৃশ্যই হাস্যরসপূর্ণ। হিরণবালা দিলীপকে ঘৃণা করলেও অভিনয় ও আচরণের মধ্যে একধরনের স্নেহ বা প্রীতি-বাৎসল্য লক্ষ করা গেছে। অভিনয়ে আরো ক্রূরতা দরকার ছিল। হিরণের ঘরের তলোয়ারটির হস্তবন্ধনী মেয়েদের রঙিন কাপড়ে মোড়ানো। ছোট্ট একটি সাইনের মধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তলোয়ারটির ব্যবহারকারী কোনো 888sport promo code। 888sport live chat-নির্দেশকের কুশলতা অত্যন্ত চমৎকার ও নান্দনিক।
এক্সপেরিমেন্টাল নাট্যমঞ্চের মাঝখানে চারদিকে থামের সাজেশন দিয়ে পাটাতন করে যাত্রামঞ্চ বানানো হয়েছে। চারদিকে দর্শক পরিবেশিত মধ্য যাত্রামঞ্চে উপস্থাপিত হয় যাত্রাপালাটি। দিলীপ চলে যাওয়ার পর হিরণবালা কান্না এবং বিরহী সংগীত পরিবেশন করে। কিন্তু কান্নার দৃশ্য ও বিরহ সংগীত মূল জোহরার বেদনাকেই ম্লান বা ছোট করে তোলে। তাছাড়া হিরণবালা তলোয়ারটি বেশ কয়েকবার এমনভাবে ধরে রেখেছে যে, মনে হয়েছে তলোয়ারটি ধারালো নয়। এ বিষয়ে শৈল্পিক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। অমর ও হিরণবালার অতিপ্রেম দেখাতে গিয়ে মূল বিষয়ই যেন ক্ষুণ্ণ না হয় সে-বিষয়ে নির্দেশকের সচেতন থাকা উচিত। দাবা খেলার সাজেশন অত্যন্ত চমৎকার। জোহরা বেগমের যোদ্ধা পোশাকটিও অত্যন্ত নান্দনিক। আহমেদ শাহ আবদালির অভিনয় অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও নান্দনিক। স্যুভেনিরে জরিনা বেগম চরিত্রে অভিনয়ের নাম থাকলেও জরিনা বেগম ও নজীবুদ্দৌলার দৃশ্যটি উপস্থাপিত হয়নি। এর একটি ভালো দিকও লক্ষ করা গেছে – যুদ্ধে যদি কার্দি মারা যায় তবে জোহরা বেগম নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এর উন্মুক্ত পথ নির্দেশ করে। নজীব দীর্ঘদিন ধরে গোপনে গোপনে জোহরা বেগমকে পর্যবেক্ষণ করেছে। জোহরা ও নজীবের কথোপকথনের মধ্যে নজীবের প্রতি জোহরা বেগমের সহানুভূতিশীলতার চিত্রও ধরা পড়ে। জোহরা বেগমের সঙ্গে ইব্রাহিম কার্দির শেষ দেখার দৃশ্যটিও অত্যন্ত চমৎকার। এখানেও বিবেকের গান। অসামান্য অভিনয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে অন্তর্গত দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে। যাত্রার মিউজিক টিমটিও আবেগীয় সংগীত অনুরণনে পটু। যাত্রার মিউজিক অত্যন্ত ভালো। অর্কেস্ট্রা ও গ্রিনরুমে চিৎকার করে যুদ্ধদৃশ্যটি বোঝানো হয়েছে। যুদ্ধ শেষে জোহরা বেগম ফরমান নিয়ে কার্দিকে উদ্ধারের জন্য কারাগারে যায় – এ-দৃশ্য অত্যন্ত নান্দনিক ও আবেগীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত মঞ্চ ও গ্রিনরুমকে কারাগার ও অন্দরমহল পরম্পরায় বিপরীতধর্মী দৃশ্যরূপ বোঝানো অত্যন্ত চমৎকার। কার্দির মৃত্যুতে জোহরার বেদনাঘন উপলব্ধির প্রকাশ দর্শকহৃদয় স্পর্শযোগ্য।
নির্দেশক সুলতান সেলিম বলেন, ‘আমাদের শতবছরের ঐতিহ্য যাত্রা888sport live chat যখন অশ্লীলতার কবলে পড়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল ঠিক তখনই 888sport live chatকলা একাডেমী তথা সরকার যাত্রা888sport live chatের নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে এই মৃতপ্রায় 888sport live chatটিকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়। যার ধারাবাহিকতায় শুধু বিদেশি পালাগুলোর ওপর নির্ভরশীল না হয়ে দেশীয় পালা প্রসারের কাজ শুরু করে। সে-আলোকে বরেণ্য নাট্যকার শহীদ মুনীর চৌধুরীর কালজয়ী নাটক রক্তাক্ত প্রান্তরকে যাত্রারূপে মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 888sport live chatকলার সঙ্গে আমি কাজ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। নাটকটিকে যাত্রাপালায় রূপান্তর করতে গিয়ে কিছু দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। যেমন – যাত্রাপালার রীতি অনুযায়ী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রবেশ-প্রস্থানের সুবিধার্থে কিছু নতুন সংলাপ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া সহ-নায়িকার কণ্ঠে একটি গান, পূজার নৃত্য এবং বিবেকের তিনটি গান সংযোজন করা হয়েছে। কালজয়ী নাটকের সঙ্গে এ-বিষয়গুলোকে সংযোজন করতে গিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে যেন মূল নাটকটির মান ক্ষুণ্ণ না হয়। কতটা সার্থক হতে পেরেছি তা বিবেচনার ভার দর্শক মহলের কাছে ছেড়ে দিলাম। স্বল্প সময়ে নতুন-পুরনো 888sport live chatী সমন্বয়ে প্রযোজনাটি সার্থক করা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না।’ (উদ্বোধন উপলক্ষে প্রকাশিত নাটকের 888sport app download for androidিকা)।
রক্তাক্ত প্রান্তর যাত্রা-আঙ্গিকে উপস্থাপনের জন্য 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমী নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। অত্যন্ত নান্দনিক প্রযোজনা এটি। প্রত্যেক অভিনয়888sport live chatীই প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন। যাত্রাপালার পেশাদার অভিনেতাদের মতোই শক্তিশালী অভিনয় তাদের এবং অত্যন্ত প্রাণবন্ত ভাবপ্রকাশন। যাত্রাপালাটির অভিনয়, নান্দনিকতা ও দর্শক বিনোদিত হাওয়ার মাত্রা দেখে মনে হয়েছে, মুনীর চৌধুরীর রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকটি উপস্থাপনার সবচেয়ে যোগ্য মাধ্যমই ‘যাত্রা’।
বিষয়বস্ত্ত, ভাব ও ভাষাতে ‘যাত্রা’ই যথোপযোগ্য। নান্দনিক এ-যাত্রাপালা প্রযোজনার জন্য এর সকল কলা-কুশলীসহ 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমী কৃতিত্বের দাবিদার।
রক্তাক্ত প্রান্তরের কুশীলবরা হচ্ছেন – আহমেদ শাহ আবদালি-মিলন কান্তি দে, জোহরা বেগম-শর্মীমালা, ইব্রাহিম কার্দি-জাফরুল স্বপন, নবাব নজীবুদ্দৌলা-শিশির রহমান, নবাব সুজাউদ্দৌলা-গাজী বেলায়েত, হিরণবালা-বনশ্রী অধিকারী, আতা খাঁ-সুনীল কুমার দে, বশির খাঁ-মো. আবুল কালাম আজাদ এবং রহিম শেখ-এবিএম কুদরত কমল। নেপথ্যে – যন্ত্র888sport live chatী-মাস্টার গুরুদাস সরকার, আবদুল খালেক মিয়া, রঞ্জন চন্দ্র দাস, মো. তজু মিয়া, গৌতম কর্মকার, গৌরব কুমার সরকার, সংগীত888sport live chatী – গোপাল চন্দ্র মল্লিক, কেয়া, মুক্তি, বর্ষা, সীমা, বিশ্বাস, হাসি, নৃত্য888sport live chatী – মুক্তি রানী, মঞ্চ পরিকল্পনা – আলি আহমেদ মুকুল, আলোক পরিকল্পনা – মো. জসিম উদ্দিন, পোশাক পরিকল্পনা – ড. আইরিন পারভীন লোপা, সংগীত পরিকল্পনা – পরিমল মজুমদার, শিশির রহমান, প্রপস – ফজলে রাবিব সুকর্নো, প্রযোজনা অধিকর্তা – সারা আরা মাহমুদ।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.