সমীর আহমেদ
তৃতীয় তীরে ধস
হুমায়ূন মালিক
জোনাকী প্রকাশনী
888sport app, ২০১২
২০০ টাকা
গল্পকার হিসেবে হুমায়ূন মালিককে আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ছোটগল্পের অন্তর্কাঠামো এবং 888sport live chatসৌন্দর্য নিয়ে তিনি নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, এখনো করছেন। নানা বিষয় ও ভাবনার সূক্ষ্ম রসায়নে তাঁর গল্প যে রসবোধের জন্ম দেয়, তা সত্যি অভিনব। অভিব্যক্তিবাদী চেতনা, স্বদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য অন্বেষণ, নিসর্গপ্রীতি, শান্তি ও গণতন্ত্রের নামে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর আধিপত্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বা আগ্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনের মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর মূল্যবান সম্পদ লুণ্ঠন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অস্তিত্ব সংকট, দেশি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, মৌলবাদ বা সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মনোভাব ইত্যাদি তাঁর ছোটগল্পের উপাখ্যান। কয়েকটি পৃষ্ঠার মধ্যেই মালিক দৈশিক-বৈশ্বিক বাস্তবতা এমন নিপুণভাবে তুলে ধরেন যে, একটি দীর্ঘ 888sport alternative linkপাঠের স্বাদ পাওয়া যায়। 888sport apk, দর্শন বা যুক্তির পরম্পরায় কল্পলোকের যে-জগৎ তিনি নির্মাণ করেন, তা যেমন সহজ ও বোধগম্য হয়ে ওঠে আমাদের কাছে, তেমনি অধিবাস্তবতার জটিল বাতাবরণে কখনো-কখনো তা হয়ে ওঠে রূপকাশ্রয়ী, প্রতীকী ও সংকেতধর্মী। এ-বছর 888sport cricket BPL rateে বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর তৃতীয় তীরে ধস গল্পগ্রন্থ সম্পর্কে অন্তত এ-কথা অনায়াসেই বলা যায়। মোট ১১টি গল্প রয়েছে এ-গ্রন্থে। প্রথম গল্প ‘এমন যে ভাঙন’। এ-গল্পে আমরা মুক্তিযোদ্ধা বকুলের দুঃসহ দাম্পত্যজীবন ভাঙনের মর্মযাতনা অনুভব করতে পারি। ব্যক্তির মনোদৈহিক সংকট এ-গল্পের প্রধান বিষয় এবং তা অন্বেষণ করতে গিয়ে উঠে এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, দৈশিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি। একাত্তরে বকুল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে 888sport appsে আসে। কিন্তু প্রথম অপারেশনে নির্দেশনা ভুল করে পাকদের হাতে ধরা পড়ে। তথ্য আদায়ের জন্য তাকে নেওয়া হয় টর্চার সেলে। সেখানে পাকদের দোসর রাজাকাররা তার ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। কোনো তথ্য আদায় করতে না-পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা তার জনন অঙ্গে ইলেকট্রিক শক দিয়ে তাকে নপুংসক করে দেয়। পাক সেনা-অফিসারের সহায়তায় সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দেশ স্বাধীন হয়। সুস্থ হয়ে সে জীবিকার্জনে নিয়োজিত হয়। চন্দনাকে বিয়ে করে সংসার পাতে। কিন্তু চন্দনার শারীরিক চাহিদা সে পূরণ করতে বারবারই ব্যর্থ হয়। দুজনের সন্তানলাভের তীব্র আকাক্সক্ষা থাকলেও তা সম্ভব হয় না। শেষপর্যন্ত যখন প্রমাণিত হয়, সন্তানধারণে চন্দনা শারীরিকভাবে সমর্থ, কিন্তু বকুলেরই জনন-ক্ষমতা নেই, তখন চন্দনা সংসারত্যাগ করে। গল্পের শুরুতেই আমরা স্ত্রী-পরিত্যক্ত নিঃসঙ্গ বকুলের চরিত্র নিয়ে তার প্রতিবেশীদের মধ্যে রটনা দেখতে পাই যে, সে বেশ্যাপাড়ায় যাতায়াত করে। তারপরই তার নিঃসঙ্গতা, নপুংসক হওয়ার মর্মান্তিক চিত্র ধীরে-ধীরে উন্মোচিত হতে দেখি গল্পে। সে জন্ম-প্রজনন-প্রতিবন্ধী নয়। একাত্তরে রাজাকাররাই তার ওপর নির্যাতন চালিয়ে তাকে নপুংসক করে দিয়েছে। গল্পটি আমাদের মনে এক গভীর রেখাপাত করে। কারণ জনন-প্রতিবন্ধী মুক্তিযোদ্ধা বকুল যেন একাত্তরের সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতিনিধিত্ব করছে। যে আশা ও স্বপ্ন নিয়ে তারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিল, স্বাধীনতালাভের পর তা যেন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে থাকে। নৈতিক অবক্ষয়, ক্রমাগত দুর্নীতির বিস্তৃতি, আত্মকেন্দ্রিকতা, নবরূপে আবির্ভূত শোষকরূপী ভোল পালটানো রাজাকারদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধাদের সোনা ফলানোর মাঠ একেবারে অনুর্বর করে দেয়। বকুলের মতো প্রকৃত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা কার্যত হয়ে পড়ে নিষ্ফলা, জনন-প্রতিবন্ধী। গল্পটিতে বকুলের এই জনন-প্রতিবন্ধিতার পাশাপাশি মালিক আমাদের দেশের প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি, সমাজনীতি, আন্তর্জাতিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসী কার্যক্রমও প্রয়োজনমাফিক তুলে ধরেছেন। জনগণের বিনিয়োগক্ষেত্র শেয়ারবাজারের ধসও বাদ পড়েনি। এসব অনেকটা আরোপিত মনে হতে পারে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীকী জনন-প্রতিবন্ধীরূপে বিবেচনা করলে, এসব ঠিকই মনে হওয়ার কথা পাঠকের; ভাঙনের করুণ পরিণতিকে আরো বেদনাঘন-রসে সিক্ত করার জন্যই যেন এসব অণুচিত্র সমান্তরালভাবে তুলে ধরেছেন গল্পকার।
‘শাপমোচন, পাপমোচনে’ মালিক লেডি কিলার বেলুর জটিল মনোজগৎ উন্মোচন করেছেন। বেলুর মধ্যে 888sport promo code-খুনের নেশা জাগিয়ে দেয় তারই আপন মামা কুর্বান শিকদার, যে কিনা একদিন নিজের স্ত্রীকে ধর্ষণের পর চুলের মুুঠি ধরে পানিতে চুবিয়ে মেরেছিল। সেই রোমহর্ষক দৃশ্য দূরে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে অবলোকন করেছিল বেলু। তারপরই তার মধ্যে একশ একটা 888sport promo code-খুনের তীব্র বাসনা জাগ্রত হয়। তবে তারও আগে পিতৃহীন বেলুর অবচেতনে ঢুকে পড়ে নৃশংসতার শিকার মৃত মায়ের মুখ। গ্রামের বিত্তশালী খাঁ-বাড়িতে কাম করে একদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় সে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যায়। কিশোর বেলুর মনে সেই 888sport sign up bonus গেঁথে থাকে। অবহেলা, অনাদরে, অনাহারে বেড়ে উঠতে থাকা বেলু শৈশবেই জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে। গ্রাম্য-বিচার-সালিশে সাজাও পায়। কিন্তু তারপরও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে না। ক্রমশ ঢুকে পড়ে অপরাধ জগতে। মামা কুর্বান শিকদার তার মধ্যে জিঘাংসার প্রবল বাসনা জাগিয়ে তোলে। এতিম সাজুকে ধর্ষণের পর গলাটিপে খুন করতে গিয়ে ধরা পড়ে সে গ্রাম্য-সালিশে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। তারপর গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে তাদের অবস্থান টুঙ্গী। সাজু চাকরি করে। আর বেলু গায় হাওয়া লাগিয়ে ঘোরে। সাজুর বান্ধবীদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে, কৌশলে তাদের একের পর এক গ্রামে নিয়ে হত্যার উৎসবে মেতে ওঠে। স্ত্রী সাজুকেও সে মেরে ফেলার মনস্থ করে। কিন্তু ছেলে ও প্রতিবন্ধী মেয়ের দিকে তাকিয়ে পারে না। তবে সাজুকে সে খুনের ১০১ নম্বর সিরিয়ালে রাখে। আর সেই খুনটি করার পরই সে পাপমোচনের জন্য আধ্যাত্মিক সাধনায় লিপ্ত হবে। ‘শেষে জ্বিলানের মোরাকাবায় ফানাফিল্লা।’ এ-গল্পে হুমায়ূন মালিক শুধু একজন নিষ্ঠুর খুনির চরিত্রই আমাদের সামনে তুলে ধরেননি, পাশাপাশি তার অন্তর্গত ক্ষত, যাতনা এবং জিঘাংসী হয়ে ওঠার ব্যক্তিগত ও সামাজিক অভিঘাতের সূক্ষ্ম বয়ন এমনভাবে ঘটিয়েছেন, যা ধর্ষকামী, খুনি বেলুর মন্ময়জগৎ ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে। যে-জটিলতা পাঠককে নাড়া দেয় ভয়, ঘৃণা, করুণা ও বেদনার সংমিশ্রণে।
‘দখলদারির নতুন মন্ত্র’ এবং ‘বিসম পরাগায়ণ’ গল্পদ্বয়ে মালিক শাসক ও শোষক শ্রেণির আগ্রাসী বা আধিপত্যবাদী কলাকৌশল ও ধ্বংসাত্মক কর্মযজ্ঞ তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে তিনি রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন। যতোই তিনি রূপকের আশ্রয় নিন না কেন, ‘দখলদারির নতুন মন্ত্র’ পাঠ করে পাঠকের জানার বাকি থাকে না যে, মার্টিন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতিরূপ। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে শান্তি ও গণতন্ত্রের ধুয়া তুলে তৃতীয় বিশ্বের বা রাইজিং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে যেসব দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক ও খনিজসম্পদ রয়েছে, সেসব সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য, সেসব দেশে তৈরি করছে বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসাচ্ছে, তাদেরই অনুগামী বাহিনী আর যেসব দেশ তাদের কথা শুনছে না, সেসব দেশে হিংস্র পশুরূপী নিজস্ব সৈন্যবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে জ্বালাও, পোড়াও, গুম, খুন, ধর্ষণ চালিয়ে, দেশটিকে ছারখার করে বশে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখছে। বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক আগ্রাসনের নয়াকৌশলগুলো অনুধাবন করতে পারি। গল্পে শ্যামদ্বীপটি আমাদের 888sport appsেরই প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে। ‘বিসম পরাগায়ণে’ শাসকশ্রেণির যে আধিপত্যবাদী মানসিকতা, তা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই দেখতে পাওয়া যায়। এ হচ্ছে 888sport free betলঘু বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে নিধন বা বিলুপ্ত করার এক অমানবিক, নিষ্ঠুর কৌশল। এ-কার্যে শতভাগ সাফল্যের জন্য আধিপত্যবাদীরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর তাদের অনুগামী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে হত্যা, গুম, খুন ও ধর্ষণ চালায়। ধর্ষণ চালায় এ জন্য যে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোনো 888sport promo code যাতে তাদের নিজস্ব ঘরানার বা সংস্কৃতির কোনো ভ্রুণধারণ করতে না পারে। আধিপত্যবাদীদের ভ্রুণধারণ করলেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
‘পিশাচের জন্মান্তর’ গল্পে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা বা মাধুরীরা কেউই স্বাধীন নয়, কার্যত বন্দি, একাত্তরের পাকদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের হাতেই। একটি কোম্পানিতে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করে মাধুরী। পাকদের দোসর, বর্তমানে, কোম্পানিতে প্রবল ক্ষমতাধর পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কাসেমের কুপ্রস্তাবে রাজি না-হওয়ায় মাধুরীর বিপত্তির কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। ন্যায্য অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে হাই অথরিটির কাছে অভিযোগ করেও সে এর কোনো প্রতিকার পায় না। বরং তারাও তাকে লালসার শিকারে পরিণত করার দুর্ভেদ্য ফাঁদ পাতে। শেষপর্যন্ত মাধুরীর পরিণতি বিনাশ। সেই বিনাশ প্রতিশোধপরায়ণ হিংস্র আবুল কাসেমের হাতেই। মৃত্যুপূর্বে মাধুরীর মনে হয়, আবুল কাসেম যেন তারই ফেলে দেওয়া একাত্তরের জারজ ভ্রুণ থেকে জন্ম নেওয়া এক পিশাচের প্রেতাত্মা।
‘হয়ত তখন তৃতীয় তীরের সাধন সম্ভব ছিল’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা বাদলকে আমরা একাত্তরে পরাজিত, কিন্তু স্বাধীনতার পরে নবরূপে পুনরুত্থিত শক্তির হাতে খেলুড়ে বা অসহায় অবস্থায় বন্দি দেখতে পাই। একাত্তরের পরাজিত শক্তি নাদির মাওলা ভোল পালটে এখন সরকারি দলের এমপি। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা বাদলের হাতে নিহত পিতা বদলা নিতে সে মরিয়া। বাদলের কন্যাকে কিডন্যাপ করিয়ে তার কাছে থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। শেষে তাকে গভীর রাতে নৌকায় তুলে নিয়ে হত্যার চূড়ান্ত প্রস্তুতি। কিন্তু হত্যা করে না। বিড়ালরূপী স্বাধীনতাবিরোধীচক্রের হাতে সে অসহায় ইঁদুরের মতো খেলুড়ে হয়ে পড়ে থাকে নৌকার পাটাতনে। ইচ্ছে করলে সে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনো এক পাড়ে উঠে আত্মরক্ষা করতে পারে, কিন্তু তারপর? দু-পাড়েই যে তাদের রাজত্ব! নদী এখানে দেশ বা 888sport appsের রাজনীতির মাঠের প্রতীক। দু-তীর মানে দুটি প্রধান দল। যেখানে স্বাধীনতাবিরোধীরা এখন ভোল পালটে সক্রিয়। তাদের শায়েস্তা করার জন্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থানের প্রয়োজন এবং সেই অমিত সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ এখন তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। এই ইঙ্গিতই হুমায়ূন মালিক তুলে ধরেছেন তাঁর এ-গল্পটিতে।
মুক্তিযোদ্ধা সাইদুজ্জামান বাদলের মতো প্রায় একই পরিণতি অবধারিত, খেলুড়ে মৃত্যু আমরা প্রত্যক্ষ করি দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা জগৎজিতের জীবনে; ‘কেন রক্তপাতহীন এই হত্যাযজ্ঞ’ গল্পে। পাকসেনাদের ত্রাস এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির নায়ক কমান্ডার জগৎজিত একদিন ধরা পড়ে যান মেজর তৈমুর মাস্তে খানের হাতে। জানের দুশমন, দেশদ্রোহী চরম শত্র“কে হাতের মুঠোয় পেয়েও মেজর তার কেশাগ্র স্পর্শ করেন না। তার অধীনস্থ সৈন্যসহ রাজাকার, আলবদরদেরও জগৎজিতের গায়ে একটি টোকা পর্যন্ত দিতে দেন না। তাকে না খাওয়ায়ে তিলে-তিলে মেরে ফেলার ইচ্ছা পোষণ করে মেজর। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু নামক নির্মম পরিণতিই জগৎজিতের জন্য অপেক্ষায় থাকে। বাদল এবং জগৎজিতের মধ্যে সময়ের বিন্দুর দূরত্ব পঁচিশ-ত্রিশ বছর হলেও তাদের মৃত্যু বা খেলুড়ে পরিণতি একটা সরলরেখায় মিলিত হয়ে মাঝখানের দূরত্ব একেবারে মুছে ফেলেছে। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।
‘888sport live chatীর শিকার’ গল্পটি তার কলেজজীবনে লেখা। গল্পে জাহিদকে আমরা যে-বাসায় ভাড়া থাকতে দেখি, সেই বাসার মালিকের টিনেজ মেয়ে ফারজানাকে প্রেমের অভিনয় করে পটিয়ে ফেলেন। তারপর যখন জানতে পারেন, মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা, তখন সেখান থেকে দ্রুত কেটে পড়ার ধান্দা করেন। তিনি একজন আর্টিস্ট। 888sport live chatের নামে তিনি একের পর এক এমন অপকর্ম করে যেতে থাকেন। 888sport live chatী রূপী একশ্রেণীর ভণ্ড, প্রতারকের মুখোশ মালিক এই গল্পে উন্মোচন করেছেন।
‘এক অগ্রগামিনীর প্রেমকথা’ গল্পে আইন ও নীতি দ্বারা শৃঙ্খলিত একটি সমাজ-রাষ্ট্রে অবাধ যৌন-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, অঘটনঘটনপটিয়সী এক 888sport promo codeর প্রেমের ফাঁদে ফেলে পুরুষ শিকারের বিকৃত মানসিকতা তুলে ধরেছেন মালিক। সালসাবিলের স্বামী বিদেশে পিএইচ.ডি করতে যায়। এই সুযোগে সে বিবাহিত অবিদের সঙ্গে যৌন-সম্পর্ক গড়ে তোলে। তার প্রেমে অবিদের যখন হাবুডুবু খাওয়ার অবস্থা, স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করার চিন্তাভাবনা করছে, তখন সে 888sport promo code একেবারে বেঁকে বসে। কারণ তার স্বামী তখন পিএইচ.ডি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে এসেছে। অবিদের সঙ্গে তার এতদিনের প্রেম, দৈহিক সম্পর্ক, এসব যেন তার কাছে কোনো ব্যাপার বলেই মনে হয় না। তা দেখে শুধু গল্পের অবিদ নয়, আমরাও বিস্মিত হই।
‘ব্রহ্মপুত্রের তৃতীয় তীর’ গল্পটি বেশ বড়সড়ো। নানা চরিত্র ও ঘটনার সংমিশ্রণ ঘটেছে এতে। গল্পটির প্রধান চরিত্র বাঘা। সে গ্রামের প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক রুস্তমৌদ্দলা পর্ধানীর পঞ্চম স্ত্রী মেহেরর সন্তান। মেহেরের সঙ্গে প্রেম ছিল আফাজ গায়েনের। ঘটনাচক্রে তার বিয়ে হয়ে যায় পর্ধানীর সঙ্গে। তার গর্ভে সন্তান না এলে পর্ধানী তাকে রাখবে না, সংসারে তার দাপটও থাকবে না – এই ভয়ে মেহের গায়েনের সঙ্গে মিলিত হয়ে গর্ভবতী – জন্ম হয় বাঘার। একদিন ঘটনাক্রমে সব জানতে পারে বাঘা। শেষে জারজ সন্তান হওয়ার আত্মগ্লানির ভার সইতে না পেরে, প্রতিপক্ষদের হটিয়ে চর দখল না করে, নিজেই নিজের বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে। গ্রামীণ সমাজ ও জনজীবনের জটিল মনস্তত্ত্ব তুলে ধরেছেন মালিক এই গল্পে।
‘কেন শেষে কুকুরই প্রিয়তর’ গল্পে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া জন নামক একজন ছেলেকে 888sport promo codeতে রূপান্তরিত হতে দেখি। জন থেকে তার নাম হয় জেনি। পারিবারিক-সামাজিক জটিলতার কারণে সে আর পড়াশোনা করতে পারে না। তার বাবা-মা তাকে নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে। এসময় তাকে এ-বিপদ থেকে উদ্ধার করে তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিপন। সে তাকে বিয়ে করে পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়। কিন্তু কিছুদিন পর রিপনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যায় না। সে জড়িয়ে পড়ে কোরীয় মালকিনের অবৈধ-প্রণয়ে। এ নিয়ে দুজনের প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হয়। একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে রিপন গর্ভবতী জেনির তলপেটে জোরে লাথি মারে। অ্যাবরশন হয়ে যায় জেনির। তখন বাসার পাশে সন্তানহারা কুকুরীর যন্ত্রণা সে আপন অন্তরে উপলব্ধি করতে পারে। মাতৃত্বের প্রশ্নে মানুষ ও কুকুর এখানে ভেদাভেদহীন। এছাড়াও রিপন-জেনির নানারকম মানসিক জটিলতা বা সংকট এ-গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন হুমায়ূন মালিক।
হুমায়ুন মালিকের গল্প পাঠকের মনে ভাবনার বুদ্বুদ বিন্দু তৈরি করে। তার সামনে প্রতিভাত হয়ে ওঠে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের ক্ষত, সর্বোপরি বিশ্বপরিস্থিতি, যা ব্যক্তির অস্তিত্বকে ক্রমশ সংকটাপন্ন করে তোলে। ব্যক্তির মনোদৈহিক জটিলতার অন্তর্গূঢ় রহস্য উন্মোচিত তাঁর গল্পে। ফলে কিছু মানুষের দানবীয় রূপ প্রত্যক্ষ করে আমরা যেমন আতঙ্কগ্রস্ত, বিস্মিত এবং হতাশাবাদী হই, তেমনি কারো-কারো বেদনাপীড়িত, দয়াশীল, উদার মানবিক বোধটি আমাদের ভেতরের সত্তাকে নাড়া দেয়, আশান্বিত করে তোলে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.