সেদিন একটি ছয় বছরের বালক আমাকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা, বনমানুষদের গায়ের রং কীরকম ছিল?’ চটজলদি উত্তর দিতে গিয়ে আমি বাঁদর, হনুমান, শিম্পাঞ্জি এবং গরিলাদের পাশাপাশি ওরাং ওটাংদের চেহারাও মনে করার চেষ্টা করলাম। এদের শরীরের চামড়া দেখা যায় না। পুরোটাই লোমে 888sport app। কারো লোম কালচে, কারো ব্রাউন। এদের যদি বনমানুষ বলা না যায় তাহলে এরাই বনমানুষের জনক। এদের এবং মানুষের মধ্যে যদি বনমানুষ থেকে থাকত তাহলে সেই প্রাণী নিশ্চয়ই লোমশ হতো। 888sport apkীরা যে-ছবি এঁকেছেন তাতে প্রায়-মানুষের আকৃতি-পাওয়া বনমানুষকে সর্বাঙ্গে লোম নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। অতএব আমি বালককে সস্নেহে জানালাম, ‘হয় কালচে, নয় ব্রাউন’।

বালক হাসল, ‘তুমি জানো না। তাহলে মানুষের চামড়ার রং সাদা, কালো, হলুদ হলো কী করে? আমার ক্লাশের আন্টি বলেছেন, বাবা-মায়ের গায়ের রংই ছেলেমেয়ে পায়। সাহেবদের সাদা রং, তাই তাদের ছেলেদের সাদা রং। বনমানুষের রংও নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা ছিল।’

আজকাল আর অবাক হই না। ছয় বছর বয়সে ওইসব চিন্তা আমাদের মাথায় আসত না। কিন্তু এবার বালকের কথায় আমার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন ঢুকে গেল।

আমার এক বন্ধু প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। তাঁকে ফোন করলাম। তিনি হেসে বললেন, ‘সেসব সময়ে থাকলেও মানুষের ইমিডিয়েট আগের বনমানুষ এখন লুপ্ত। সব মানুষ হয়ে গিয়েছে। তোমাকে ওই ওরাং ওটাং বা শিম্পাঞ্জিকেই মানুষের বাবা বলে ভাবতে হবে।’

জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ওদের চামড়ার রং কীরকম?’

‘চামড়ার রং?’ বন্ধুটি অবাক।

‘হ্যাঁ। লোমে 888sport app থাকে বলে আমরা তো চামড়া দেখার চান্স পাই না।’

‘লোমে 888sport app থাকে যখন, তখন কালো হবে বলে মনে হয় না। এই ধরে নাও, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। অবশ্য যেসব প্রাণীর শরীর লোমে 888sport app তাদের ত্বক তো একই রঙের হওয়া উচিত। আমার বাড়িতে কুকুর আর বেড়াল আছে। ওদের লোম আঁচড়াবার সময় তো পার্থক্য দেখিনি।’ বন্ধু জানালেন।

‘কিন্তু ধরো, যে-বনমানুষটি ইংলন্ডে ছিল, মানে এখনকার ইংলন্ডের যে-ভৌগোলিক অবস্থান, সেইখানে সে-সময়ে ছিল, তার ত্বকের রং কি সাদা ছিল? নইলে ইংরেজদের চামড়া সাদা হলো কী করে?’ জিজ্ঞাসা করলাম।

‘এটা আমার গবেষণার বিষয় ছিল না, কেউ করেছে কিনা জানি না। তবে আমার মনে হয়, লোম খসে যাওয়ার পর প্রাকৃতিক পরিবেশের হেরফেরে মানুষের গায়ের চামড়ার রং বদল হয়েছে। অত্যন্ত শীতপ্রধান জায়গায় ভারি কিছু দিয়ে চামড়া ঢেকে রাখতে বাধ্য হতো বলে তা ক্রমশ সাদা বা হলদেটে হয়ে গেছে। বিষুবরেখা যেসব অঞ্চলের ওপর দিয়ে গেছে সেখানে এত গরম যে খোলা চামড়া কালো হয়ে গিয়েছে। আমরা দুটোর মাঝামাঝি পড়ি বলে শ্যামলা হয়ে আছি।’ বন্ধু বললেন।

বন্ধুর কথা মানলে বনমানুষের ত্বক নয়, মানুষ যেখানে বাস করত তার চারপাশের প্রকৃতির প্রভাবেই সে প্রভাবিত হয়েছে। মোটামুটি এইরকম ভাবনাটা ভাবার পর মন হালকা হলো। বালকটিকে এসব ব্যাপার অল্পকথায় গুছিয়ে বলতে টেলিফোন করলাম। সে আগেভাগেই প্রশ্ন ছুড়ল, আচ্ছা, পৃথিবীতে বনমানুষ থেকে মানুষ কি একসঙ্গে সবদেশে হয়েছিল, না কোথাও আগে কোথাও পরে?’

বন্ধুকে বিরক্ত না করে এই বিষয়ে পড়াশুনা আরম্ভ করলাম। দেখলাম, অনেক সরল প্রশ্নের উত্তর পণ্ডিতরা দিতে চান না অথবা প্রশ্নটার কথা তাঁদের মাথাতেই আসে না।

তখন পৃথিবীতে জল এসে গেছে। সেই সঙ্গে শ্যাওলা, অ্যামিবা। তারপরে উদ্ভিদ, গুল্ম। গুল্ম থেকে লতানো গাছ, ছোট গাছ, শেষ পর্যন্ত বৃক্ষ। ওদিকে অ্যামিবা থেকে মাছ, ব্যাং, ক্রমশ জলচর প্রাণী, উভচর প্রাণী, শেষে স্থলচর প্রাণী। পৃথিবীর কোথাও জমেছে বরফের ¯তূপ, কোথাও বালি, সেখানে জল নেই বলে প্রাণের জন্ম হয়েছে অনেক দেরিতে। কোথাও জল পর্যাপ্ত, আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ বলে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে দ্রুত।

এই দ্রুততা অবশ্য কয়েক শ বা হাজার হাজার বছর ধরে চলেছে। দেখা যাচ্ছে, আফ্রিকা-এশিয়ায় যেসব বিশালাকৃতি প্রাণী বিচরণ করত তারা তিব্বতে বা ইংলন্ডে ছিল না। অর্থাৎ অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশেই বিভিন্ন ধরনের প্রাণী জন্মাতে পছন্দ করত।

তা এইসময়ে বনমানুষ থেকে মানুষের জন্ম হলো কোন মহাদেশে? প্রথম কোন মাটিতে মানবসন্তান পা রাখল? দিনসাতেকের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় নিশ্চয়ই দুদ্দাড় করে মানুষেরা জন্মে যায়নি। ওই প্রকৃতির কথা মনে রাখলে মানুষের জন্মানোর পক্ষে সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ ছিল এশিয়ার এই ভূখণ্ডে যেখানে তেমন শীত নেই, প্রচুর জল এবং লতাপাতা, ফল নিয়ে অরণ্য ছিল। এর পরে আফ্রিকায় এবং দক্ষিণ আমেরিকায়। হলফ করে বলা যায়, রাশিয়া, ইউরোপের দেশগুলো, তিব্বতের মানুষ জন্মেছে অনেক পরে। যেহেতু বনমানুষ থেকে মানুষ তাই যে-দেশেই জন্মাক তাদের শরীরের গঠন এবং আকৃতিতে মিল থাকতে বাধ্য।

ভাবলে অবাক লাগে, চারপাশে ভয়ংকর প্রাণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, বনমানুষ-মা যে-শিশুর জন্ম দিল তার দিকে তাকিয়ে নিশ্চয়ই বিব্রত হয়েছিল। এ কে এলো তার শরীর থেকে, যার সঙ্গে তার অনেক পার্থক্য। লোমহীন একটি শিশুকে যে সে তৎক্ষণাৎ ত্যাগ করেনি, এটা সমস্ত মানবজাতির ভাগ্য। মায়ের নিজের সন্তানের প্রতি যে স্নেহ বা মমতা আপনাআপনি তৈরি হয় তা নিশ্চয়ই ওই বনমানুষীর মনে তৈরি হয়েছিল, সেই সঙ্গে তার দলের সবাই সেই স্নেহকে তরলীকৃত করতে নিশ্চয়ই উদ্যোগী হয়েছিল। অতএব ধরে নিতে পারি, ঈষৎ অবহেলায় মানবশিশু বড় হয়েছিল। জঙ্গলের নিয়ম-অনুযায়ী 888sport app বনমানুষ-শিশুরা তাকে খেলার সঙ্গী করেনি। সে দোসর পেয়েছিল যখন আর একটি বনমানুষী মানবশিশুকে জন্ম দিল। সেই প্রথম শিশুর লিঙ্গ কী ছিল? 888sport promo code? আমার কেবলই মনে হয় প্রথম মানবশিশু কখনো পুরুষ হতে পারে না। যতই বাইবেল বলুক, ঈশ্বর প্রথমে আদমকে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু প্রথম মানবশিশু যে অনাদর, অবহেলা, প্রতিকূলতার মধ্যে বড় হয়েছিল তা সহ্য করা শুধু 888sport promo codeর পক্ষেই সম্ভব। সেই সহ্যশীলতা তারা হাজার হাজার বছর ধরে দেখিয়ে চলেছে। এর সপক্ষে অবশ্য অনেক যুক্তি আছে। এদেশে এককালে 888sport promo codeশাসিত পরিবার ছিল। প্রাণীদের মধ্যেও রানীপ্রাণীর ইচ্ছে-অনুযায়ী দল চালিত হতো। সে বড় সুখের সময় ছিল।

মানুষ তো জন্মালো। অনেকেই জন্মেই মরল। কেউ কেউ কিছু পরে। আবার কেউ কেউ বেঁচে থাকল। বেঁচে থাকার কৌশলটা শিখে ফেলল। তখন তার লড়াই হিংস্র পশু, বিরূপ প্রকৃতির সঙ্গে শুধু নয়, মানুষদের বিরুদ্ধেও। তাকে বাঁচতে হয় একা। দলবদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার সুবিধের কথা তার অজানা। মানুষের প্রথম প্রয়োজন হলো খাবার। পেটে কিছু না গেলে সে রুগ্ণ হয়ে যাবে, লড়তে পারবে না। ওই খাবারের সন্ধানে গাছের ফল পেড়ে আনতে গিয়ে তাকে লড়াই করতে হয় অন্য মানুষের সঙ্গে। তারও ক্ষিধের প্রয়োজন মেটাতে চাই ফলের অধিকার। মানুষ স্বভাবতই প্রথমদিকে    ফলাহারী ছিল। কারণ ফল ছিল সহজলভ্য, মাছ-মাংস খেতে গেলে শিকার করতে হতো। সে-ব্যাপারে সে অভিজ্ঞ হয়েছে অনেক পরে। কল্পনা করতে পারি, সারাদিনের জন্যে ফলে পেট ভরিয়ে সে উঠে বসে থাকত কোনো বড় গাছের মগডালে, যাতে বন্যপ্রাণীরা তার নাগাল না পায়। বিকেল ফুরিয়ে গেলেই তার আতঙ্ক বাড়ত। অন্ধকারে সে অসহায় ছিল। দিন ফুটলেই তার একমাত্র চিন্তা কী করে পেট ভরাবে এবং এই করতে করতে সে একদিন একটি মানুষীকে দেখতে পেল, যে তারই মতন একা একা লড়ে বাঁচছে। মানুষীর শরীর দেখে সে হঠাৎই আবিষ্কার করল পেটের ক্ষিধে ছাড়াও শরীরে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। সেই অনুভূতিটা প্রবল হলে সে বুঝতে পারল একমাত্র ওই মানুষীর কাছে গেলেই তৃপ্তি পাওয়া যাবে। তার নিজের শারীরিক গঠনের সঙ্গে মানুষীর অনেক পার্থক্য সে লক্ষ করল। কিন্তু তার ভয় হলো, কাছে গেলে মানুষী তাকে শত্রু ভেবে আক্রমণ করতে পারে। এবং তখনই সে দেখল আর একটি মানুষ মানুষীকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছে। ভয়ে মানুষী পালাবার চেষ্টা করছে। তার মনে হলো, মানুষীকে বাঁচানো দরকার। ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। সেই লড়াইয়ে সে মরে যেতে পারে। যদি বেঁচে থাকে এবং জয়ী হয় তাহলে দেখতে পেয়েছে মানুষী মাথা নিচু করেছে। জীবনে প্রথমবার যৌন আনন্দ উপভোগ করে সে। মানুষী উপভোগ করেছে কিনা বোঝা যায় না। দ্রুত স্থান ত্যাগ করে মানুষী।

তখন থেকে মানুষের দুটো চাহিদা তৈরি হলো। প্রথমটা পেট ভরানো, দ্বিতীয়টি শারীরিক আনন্দ পাওয়া। কিন্তু এ-দুটোই সহজলভ্য ছিল না। অরণ্যের পাতা ঝরে যেত একসময়ে। ফল থাকত না গাছে। অভুক্ত থাকতে হতো তখন। পাতা খেয়ে ভালো লাগত না। এরকম একসময়ে মানুষ পতঙ্গ ধরে খেতে শুরু করল। উঁইয়ের ঢিবি খুঁড়ে উঁই খেতো। জলে নেমে গেঁড়ি গুগলিকে খাদ্যবস্তু করল। তারপর একদিন হঠাৎই খরগোশ ধরে ফেলল। কাঁচা মাংস খেয়ে পেট ভরে গেল তার। কিন্তু এই শিকার করতে গিয়ে সে অন্য বন্যপ্রাণীর শিকার হয়ে যাচ্ছিল প্রায়ই।

দ্বিতীয়টাও সহজ ছিল না। মানুষের কোনো আলাদা পরিচয় ছিল না। যে-মানুষীর সঙ্গে সে আনন্দিত হয়েছে দ্বিতীয়বারের জন্যে তাকে খুঁজে বের করতে অনেক সময়েই পারা সম্ভব হতো না। পারলেও সেই মানুষী যে তাকে চিনবে তার কোনো স্থিরতা ছিল না। অতএব নতুন মানুষী তাকে গ্রহণ না করে লড়াই করতেই পারে। কিন্তু পেটের ক্ষিধের মতো এই ক্ষিধের জন্যে তাকে প্রাণ দিতে হতো অনেক সময়ে।

এরপর মানুষ ঈর্ষা করতে শিখল। সেই সঙ্গে ভয়। কোনো স্বাস্থ্যবান মানুষকে দেখলে সে ভয়ে লুকিয়ে পড়ত। সেই সঙ্গে নিজের স্বাস্থ্য ওরকম নয় বলে ওই মানুষটির প্রতি ঈর্ষান্বিত হতো। সেই ঈর্ষা আরও বেড়ে যেত যখন সে আবিষ্কার করেছিল দুটি মানুষ-মানুষী একত্রিত হয়েছে। ওই ঈর্ষা প্রবল হলে সে আক্রমণ করত তাদের। এবং অবাক হয়ে দেখত লড়াইয়ে মানুষটিকে সাহায্য করছে মানুষী।

একদিকে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার তাগিদ, অন্যদিকে ইচ্ছেমতো শারীরিক আনন্দ উপভোগের ইচ্ছেতেই মানুষ দল বাঁধলো। অরণ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট দল। তখন শুরু হলো অধিকার বজায় রাখার জন্যে এক দলের সঙ্গে আরেক দলের মারামারি। তাদের চিৎকারে যে-ধ্বনি তা অর্থবহ হয়ে উঠল সঙ্গীদের কাছে নিয়মিত শোনার কারণে। সেই ধ্বনির মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যে সংযোগ রাখত তারা, যদিও তার প্রকাশ ছিল খুবই সীমিত। দল বাড়লো মানুষী সন্তানপ্রসব করার পর। মানুষ অবাক হয়ে সদ্যোজাত শিশুকে দেখল। যেহেতু শিশুটি অসহায়, শক্তিহীন তাই তাকে শত্রু হিসেবে ভাবতে পারছিল না সে। উল্টো তার প্রতি মানুষীর আকর্ষণ দেখে সে স্থির করল ওটাকে বাঁচাতে হবে। এবং এভাবেই শিশুর জন্যে স্নেহের জন্ম হলো।

ক্ষুধা, কাম, ঈর্ষা, ক্রোধ এবং স্নেহ বিভিন্ন সময়ে তাকে টালমাটাল করেছে। ঝড়বৃষ্টি, বন্যপশুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যে আর গাছের ডাল নিরাপদ আশ্রয় নয় বুঝতে পেরে তারা একদিন গুহার ভেতরে ঢুকে গেল। শরীরে বৃষ্টির জল লাগছে না অথচ বাইরে বৃষ্টি পড়ছে, ঝড়ের আক্রমণ সহ্য করতে হচ্ছে না, কারণ গুহার ভেতরটা ঝড়ের আওতার বাইরে, বন্যপ্রাণী চট করে গুহার ভেতর ঢুকতে পারছে না কারণ গুহামুখ বড় পাথরের আড়ালে অনেকটা চলে গিয়েছে।

কিন্তু মানুষের আচরণে তখনো বনমানুষ বা ওরাং ওটাংদের প্রভাব বিস্তর। একই দলের 888sport promo code-পুরুষদের মধ্যে যে-সবচেয়ে বলবান সে-ই নেতা হয়ে যায়। কিন্তু মানুষীদের কাছ থেকে শরীরের আনন্দ নিতে দলের সব পুরুষই সক্রিয়। সেখানে কোনো ব্যক্তিগত 888sport promo code নেই, নিজস্ব শিশুর কথা তাদের মাথায় আসেনি।

মানুষীর ক্রমবিকাশের চেহারাটা একটু আলাদা। তাদের প্রথম চাহিদা ছিল খাবার। তারপর আত্মরক্ষা। একটি বিশেষ বয়সের পর শরীর পরিবর্তিত হওয়ামাত্র তাকে মানুষের কামের শিকার হতে হয়েছে। তারপর শিকার হতে হতে অভিজ্ঞ হয়ে যাওয়ার পর তার শরীর কামার্ত হলে সে মানুষকে শিকার করতে চেয়েছে। তারপর যখন তার শরীর থেকে সন্তান পৃথিবীতে এলো তখনই সে প্রথম নিঃস্বার্থ বন্ধুর সন্ধান পেল, যে তাকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকতে চায়। তার শরীরে নতুন মাত্রা দিয়েছে ওই শিশু। তার বুকে অমৃতের ভাণ্ডার খুঁজে নিয়েছে শিশু, যা তার জানা ছিল না। ফলে স্নেহার্ত হয়ে পড়ল সে এবং তার ফলে সে চেয়েছে নিরাপত্তা। শিশুকে নিয়ে যে-পুরুষের আড়ালে সে নিরাপদে থাকতে পারবে তারই সন্ধান করেছে। এবং এই কারণেই দলবদ্ধ জীবন তার কাম্য ছিল। গুহার অন্ধকারে মানুষের আনা ফল খাওয়ার পর দলের কাউকে শরীর দিতে তার দ্বিধা ছিল না কারণ সে জানত এর ফলে তার শিশু নিরাপদে থাকবে।

প্রশ্ন উঠবে, মানুষের মন কবে এলো? প্রথম মনের অস্তিত্ব কে টের পেয়েছিল? মানুষ না মানুষী? গুহায় ঢোকার পর কত হাজার বছর লেগেছে মন আবিষ্কার করতে? এই তথ্য ঐতিহাসিকরাও দিতে পারেন না।

তবে মানুষ যেদিন প্রথম মনের অস্তিত্ব টের পেল সেদিন থেকে তার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংগ্রাম শুরু হলো। সেটা নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। যে-লড়াই বন্যপ্রাণীর সঙ্গে লড়াইয়ের থেকেও অনেক বেশি শক্ত। যে-মন বুদ্ধির জন্ম দিল, যে-মন চতুর হতে শেখাল, সে-মন মাঝে মাঝে উদাসও হয়ে যেতে লাগল।

কেউ কেউ বলেন, সভ্যতার পথে পা বাড়িয়ে মানুষের মন ভালোবাসা আবিষ্কার করল। আর তার ফলে তাদের জীবন জটিলতর হয়ে গেল। দল গেল ভেঙে। মানুষ তার ভালোবাসার মানুষীকে একা পেতে চাইল। ক্ষুধা, কাম, ঈর্ষা, ক্রোধ, স্নেহ নিয়ে যে-মানুষ জটিল ছিল না ভালোবাসা তাকে গোলকধাঁধায় ফেলে দিল। অথচ সেই আদিম যুগের অভ্যেস সে ত্যাগ করতে পারল না।

সেই বালককে আবার টেলিফোন করলাম। ব্যাপারটা ওর মতো করে বুঝিয়ে বলার জন্যেই এই টেলিফোন। আমার গলা পেয়ে সে চেঁচিয়ে উঠল, ‘কাকু, তোমাকেই খুঁজছিলাম।’

‘কেন?’

‘আচ্ছা বলতে পার মানুষ প্রথম গান গেয়েছিল কবে?’

‘গান?’ আমি হকচকিয়ে গেলাম।

‘হ্যাঁ।’

‘আমি জানি না।’

‘আমি বলে দিচ্ছি। এস্কিমোরা। যেদিন ওরা প্রথম আগুন জ্বেলেছিল।’

সঙ্গে সঙ্গে আমি দৃশ্যটা দেখতে পেলাম। আদিগন্ত বরফের মধ্যে একটা কাঠ জ্বলছে আর একজন এস্কিমো চিৎকার করছে, ‘এসো তোমরা সবাই এসে উত্তাপ নাও।’ সেটা শুনে সবাই ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসছে। উত্তাপ কী বুঝতে পেরে চেঁচিয়ে উঠল সবাই, যা গান হয়ে ছড়িয়ে পড়ল গোটা দুনিয়ায়।