বাংলার মাটির কোলে বেড়ে উঠেছেন গণেশ হালুই। ভারতবর্ষ আলাদা হলো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে, সে-সময়ই ময়মনসিংহের জামালপুরের পৈতৃক নিবাস ছেড়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান তিনি। কৈশোরে পা দিয়েছেন মাত্র। তাঁর বয়স বাড়ে সংগ্রাম আর উত্তাল সময়ের মাঝে। মস্তিষ্কে দানা বাঁধে সংগ্রাম। শপথ নিলেন, সময়ের কথা বলবেন ক্যানভাসে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন ছবির সঙ্গে। কখনো রং নিয়ে ভাঙাগড়া আবার কখনো ফর্মের নিরীক্ষায় মগ্ন হন। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অঙ্কন শিক্ষক গফুর মিয়া তাঁকে ছবি আঁকার প্রেরণা দেন। 888sport appর আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নানা টানাপড়েন তাঁকে আর সে-পথে যেতে দেয়নি। শেষ অবধি কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটস থেকে অ্যাপ্লাইড আর্টে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। অ্যাপ্লাইড আর্টের ছাত্র থাকা অবস্থায় শ্রেণি কার্যক্রমে মাধ্যম হিসেবে জলরংকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো। তিনি জলরঙে সে-সময়ই নিজের কাজে হাত পাকিয়ে নেন। জলরঙে সিদ্ধহস্ত হলেও তেলরং, গোয়াশ, প্রিন্ট মাধ্যমে তিনি অনেক কাজ করেছেন। গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে কলকাতা থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পরই জলরং মাধ্যমে তিনি কলকাতা আর্টিস্টি হাউসে প্রথম একক প্রদর্শনী করেন। 888sport live chatের দর্শকরা তখনই গণেশ হালুইয়ের কাজ নিয়ে মেতে ওঠেন। গত ২৮ আগস্ট বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের আয়োজনে শুরু হওয়া একক প্রদর্শনীতে মোট ৬৫টি জলরং ছাড়াও গোয়াশ মাধ্যমের কাজ রয়েছে।
গণেশ হালুই জলরঙের প্রথাগত পদ্ধতিতে তাঁর ক্যানভাস গড়েননি। তিনি সাদা কাগজের বুনট অংশে (হ্যান্ডমেড পেপার) জলরঙে ধোয়া পদ্ধতির মাঝে স্থূল ও সূক্ষ্ম রেখা এবং আকৃতি প্রয়োগ করেন। ছবির জমিনের বড় একটি অংশ রেখা বা আকৃতিশূন্য রেখে দিয়ে চিত্রতল সাজান। এতে চিত্রকলার স্থানিক বিন্যাস সুষম হয়ে ওঠে। তাঁর ছবির রঙে একরকম স্থিরতার খোঁজ দেয়। উজ্জ্বল রঙের পরিমিত ব্যবহার আর শান্ত রঙের বহুল ব্যবহার ছবির জমিনে স্থিতি তৈরি করে। নিসর্গ গণেশ হালুইয়ের পাঠশালা। প্রথম দিকের কাজে (১৯৫৬) দেখা যায়, হুবহু নিসর্গের রং ছবিতে হাজির। পরবর্তীকালে রং ধীরে ধীরে কমে আসে। নির্দিষ্ট কিছু রঙের প্রতি ঝোঁক স্পষ্ট হয়ে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে করা কাজগুলো নিয়ে এ-প্রদর্শনীর আয়োজন। এ-প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘বাস্তবের ছন্দ’। ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত করা এ-কাজে প্রকৃতির বাস্তব আকৃতিকেই ছবির মূল বিষয় করেছেন। ছবির বাস্তব রং এখানে অনুপস্থিত। আকৃতির ক্ষেত্রে নিজস্ব ঢং প্রাধান্য পেয়েছে। ইউরোপীয় 888sport live chatী মন্দ্রিয়ান, মিরোর জ্যামিতিক আকৃতির অঙ্ক যেন একেবারে মিলে যায় প্রাচ্যের 888sport live chatী গণেশ হালুইর কাজে। সরলীকরণের দেখা পাওয়া যায়; স্পেস, রং আর রেখার দ্রুতলয় কাজে এনে দিয়েছে ছন্দ। বিমূর্ত কিন্তু চেনা সহজ। চারপাশে নিসর্গের ছুটে চলা রেখা আর আকৃতির ঐক্য তাঁর ছবিতে হাজির হয়েছে।
নিসর্গকে ব্যবচ্ছেদ করেন না 888sport live chatী। দুচোখে অবলোকন করেন নিসর্গের অন্তর্গত সৌন্দর্য। নিসর্গই তো মানুষের প্রথম পাঠশালা। রং আর রেখার সুষমায় মানুষ মুগ্ধ হয় নিসর্গ দেখে। জ্যামিতির আশ্রয়ে নিসর্গ শুদ্ধ হয়। ১৯টি একক প্রদর্শনীর কাজ থেকে দর্শক দেখতে পেয়েছেন 888sport live chatীর চোখে দেখা নিসর্গের অভিধান। বিস্তৃত নিসর্গের বর্ণনা ছবির ক্যানভাসে দেখা না পেয়ে শুধু মৌলিক কাঠামো দেখা যায় সাম্প্রতিক কাজে। ফলে দর্শক, বোদ্ধাদের বুঝে নেওয়ার জন্যে খানিক ভাবতে হয় না। কাগজের ওপর গোয়াশ রঙে অাঁকা, ‘শিরোনামহীন-৬৭’ ছবিতে বান্ট সিয়েনার ছবির জমিনের ওপর দ্রুতলয়ে কৌণিক ভঙ্গিতে ছুটে চলেছে। কালো রঙের স্থূল রেখা। তার ভেতরে সবুজ ও নীলের বিস্তারে ছবিকে আলাদা করে চেনা যায়। ‘শিরোনামহীন-৬৪’ ছবিটি অন্য কাজগুলোর চেয়ে আলাদা। কাগজের ওপর জলরঙে অাঁকা ছবিটি উজ্জ্বল হলুদ ও সবুজ রঙে করা। সাদা বুনটের জমিনের বেশ কিছু অংশ খালি রেখে এ রঙের বিন্যাসকে ভোরের প্রকৃতি বলা যায়। এমনি অনেক স্নিগ্ধ রূপের মাঝে কোনো কোনো কাজে বুনট, রং আর জ্যামিতির মিশেলে ছবির কথা অস্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় দর্শকের কাছে। প্রকৃতিতে এমন স্নিগ্ধ মায়া হয়তো লুকিয়ে আছে যা 888sport live chatী দেখেন, অন্য দর্শক দেখতে পান না। কিছু কাজে একেবারে কালো আর সাদা রঙের সম্মিলন স্পষ্ট। জ্যামিতিক আকৃতিতে গড়া ছবির মূল শরীরে এসে যুক্ত হয় প্রাকৃতিক ফর্ম।
পঞ্চাশের দশকে অজন্তার প্রতিলিপি রচনার কাজ করতে গিয়ে তিনি বৌদ্ধ দর্শনের স্থিতি ও আলো তাঁর মাঝে গেঁথে নেন। নিরন্তর প্রকৃতিপাঠের সাধনা তখন থেকেই 888sport live chatীর মাঝে প্রোথিত। সংগীতের মূর্ছনা যেমন তাঁর কাজে ছন্দ এনে দেয়, তেমনি সবুজ আর শ্যামল প্রকৃতির রূপের মোহ ছবিতে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। ২০০৪ সালে অাঁকা কিছু কাজে জলরঙের প্রলেপে চিত্রতল ভরে ওঠে। খুব মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ করলে বোঝা যায়, সূক্ষ্ম আড়াআড়ি রেখা ছবির জমিন ভেদ করে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ‘শিরোনামহীন-১’ ছবিতে এর প্রকাশ স্পষ্ট। ‘শিরোনামহীন-২৭’ কাজটিতেও পুরো চিত্রতলে রঙের প্রলেপ, তার উপরিভাগে কৌণিক রেখার উপস্থিতি। সাদা আকৃতির গাছের ফর্ম ছবির মাঝখানে স্পষ্ট। গণেশ হালুইয়ের কাজের ধরনকে আমরা দুটি ভাগে দেখি। একটি রং ও আকার-আকৃতির সরলীকরণ, অন্যটি চিত্রতলের পুরোভাগে রং ও আকৃতির বিচরণ। এতে করে এ-উপমহাদেশের নিসর্গবাদী 888sport live chatীদের মাঝে তাঁকে আলাদা করে চেনা যায়। প্রকৃতির রং-রেখা আর ছন্দের সরল উপস্থাপনে গড়া 888sport live chatকর্মগুলো আমাদের ভাবনার দুয়ারে প্রকৃতিকে নতুন করে কড়া নাড়ায়। গণেশ হালুই এখানেই সার্থক এক প্রকৃতিপ্রেমী। গত ২৮ আগস্ট বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসে শুরু হওয়া এ-প্রদর্শনী শেষ হয় ৮ সেপ্টেম্বর।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.