সুমন সাজ্জাদ
পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে/ স্যাটেলাইট আর ক্যাবলের হাতে/ ড্রইংরুমে রাখা বোকা বাকসোতে বন্দি/ ভেবে দেখেছো কি তারারও যতো আলোকবর্ষ দূরে, তারও দূরে/ তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে …’ – ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ব্যান্ডের জনপ্রিয় একটি গান – ‘নৈঃসঙ্গ্য’ আর ‘বিচ্ছিন্নতা’র এক চিৎকৃত সংগীত; যতোবার আমি মানুষ আর মানুষের একাকিত্ব নিয়ে ভাবি, ততোবার এই গানটিই মনের ভেতর গুনগুন করে বেজে ওঠে। দেখতে পাই, টিভির রিমোট হাতে দুজন মানুষ, পর্দায় বদলে যাচ্ছে
সাদা-কালো-রঙিনে মেশানো ছবি; হাতে যেন উঠে এসেছে পুরো পৃথিবী, অথচ যোজন যোজন দূরে চলে যাচ্ছে ‘গ্লোবাল ভিলেজে’র একসঙ্গে বসে থাকা দুজন মানুষ। তাহলে কেন এই বিচ্ছিন্নতা? কেন এই নৈঃসঙ্গ্য? জীবনানন্দ দাশই-বা কেন বলে গেছেন, ‘সকল লোকের মাঝে ব’সে/ আমার নিজের মুদ্রাদোষে/ আমি একা হতেছি আলাদা?’ কেবলই কি আপন মুদ্রাদোষে মানুষ ছেড়ে যায় মানুষের হাত, হৃদয়? একাকিত্বে বেছে নেয় নিজস্ব দ্বীপ, আত্মহননের পথ? এই প্রশ্নগুলোর জবাব আধুনিক মানুষকে খুঁজে নিতে হয়েছে; কেউ খুঁজেছেন সৃষ্টিশীলতার পথ ধরে, কেউ খুঁজেছেন তত্ত্বের পথে। আর তাই মাতা-পিতা-ভ্রাতা-ভগ্নি-দয়িতাকে ছেড়ে বোদলেয়ারের পক্ষে বলা সম্ভবপর হয়েছিল, ‘আমি ভালোবাসি মেঘ … চলিষ্ণু মেঘ … ঐ উঁচুতে … ঐ উঁচুতে …/ আমি ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল!’ প্রতিদিনের জীবন ডিঙিয়ে ভালোবাসা নিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন মেঘদলে। আত্মগত উপলব্ধির এই বিন্যাস 888sport app download apkয় চললেও তাত্ত্বিক তাতে সন্তুষ্ট নন; সিঁদকাঠি হাতে তিনি ঢুকতে চান উপলব্ধির মর্মগহনে। এ-কারণে নৈঃসঙ্গ্যচেতনা ও বিচ্ছিন্নতাকে বুঝে নেওয়ার তৎপরতা দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিকদের মধ্যে প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে 888sport appsে এ-বিষয়ক তাত্ত্বিক, এমনকি পরিচিতিমূলক লেখাপত্র অপ্রতুল, বলা চলে অনুপস্থিত। এক্ষেত্রে বিশ্বজিৎ ঘোষের নৈঃসঙ্গ্যচেতনা বইটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বইটি তাঁর বুদ্ধদেব বসুর 888sport alternative linkে নৈঃসঙ্গ্যচেতনার রূপায়ণ-শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের পুনর্লিখন ও সম্পাদনার নতুন শস্য। সম্ভবত 888sport appsে নৈঃসঙ্গ্যচেতনাবিষয়ক প্রথম বিদ্যায়তনিক কাজ তাঁরই হাতে সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্বজিৎ ঘোষ নৈঃসঙ্গ্যচেতনার বহুমাত্রিক রূপ খুঁজে দেখার প্রয়াস পেয়েছেন। দুধরনের ভূমিকা নিয়েছেন তিনি; একদিকে তিনি নৈঃসঙ্গ্যচেতনার সমাজতাত্ত্বিক ভাষ্যকার, অন্যদিকে নৈঃসঙ্গ্যচেতনাবিষয়ক 888sport live footballের ভাষ্যকার। এই যুগ্ম ভূমিকার ফলে নৈঃসঙ্গ্যচেতনাকে দুই পাটাতন থেকে দেখার ও বোঝার সুযোগ পাওয়া গেছে। তিনি পা রেখেছেন আরো একটি পাটাতনে, সেটি দর্শনশাস্ত্র; দার্শনিকরা মানুষের নৈঃসঙ্গ্যচেতনা ও বিচ্ছিন্নতাবোধকে কীভাবে দেখেছেন তার হদিসও তিনি নিয়েছেন। বিশ্বজিৎ বইটিতে বেশকিছু জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন : এক. নৈঃসঙ্গ্যচেতনার উদ্ভবের ধরনটি কেমন? দুই.
আধুনিকতা-পূর্ব ও আধুনিক মানুষের নৈঃসঙ্গ্যচেতনার কার্যকারণ ও মর্মগত পার্থক্য কী? তিন. সমাজ-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতাসমূহ নৈঃসঙ্গ্য ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টিতে কী ধরনের ভূমিকা রাখে? চার. নৈঃসঙ্গ্যবোধে রকমফের কেন ও কেমন? পাঁচ. নৈঃসঙ্গ্যচেতনা থেকে মুক্তির উপায় কী? আদৌ মুক্তি সম্ভব কি না? এই প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়া যায় বিশ্বজিৎ ঘোষের বিশ্লেষণে।
বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মানুষের অগ্রযাত্রার অনুগামী হয়েছে একাকিত্ব বা বিচ্ছিন্নতাবোধ। গোষ্ঠীবৃত্তে সঙ্ঘবদ্ধ হবার পর মানুষ যতই সমাজের সঙ্গে মেলবন্ধনের চেষ্টা করেছে, ততোই সে ব্যক্তিগত সম্পত্তিবৃদ্ধির আত্মস্বার্থজনিত কারণে ভিতরে ভিতরে বিচ্ছিন্নতার বেদনায় হয়েছে পীড়িত। বিচ্ছিন্নতার সংক্রাম ও সভ্যতার ইতিহাস সমান্তরাল গতিতেই হয়েছে বিকশিত।’ (পৃ ১৪)। এই বয়ানে বিশ্বজিৎ নিঃসন্দেহে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ-কারণে তিনি রেনেসাঁস-উত্তর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী ও পুঁজিবাদী সমাজকে সমালোচনা করেছেন। মার্কসের আলোকে দেখেছেন, মৌলকাঠামো ও উপরিকাঠামোর দ্বন্দ্ব আধুনিক মানুষের মনে ও যাপনে বিচ্ছিন্নতাবোধের জন্ম দিয়েছে। তাহলে আধুনিকতা-পূর্ব বা সামন্তসমাজ, দাস-সমাজে বিচ্ছিন্নতাবোধের ব্যাপারটি কেমন ছিল?
বিশ্বজিৎ লিখেছেন, ‘প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় বিচ্ছিন্নতার কারণ ব্যক্তি-মনের
অতি-সংবেদনশীলতা, অধ্যাত্মবিশ্বাসজনিত এক ধরনের ঔদাসীন্য এবং বহুমাত্রিক বেদনাজাত শূন্যতাবোধ।’ (পৃ ১৪)।
অতি-সংবেদনশীলতার বিষয়টি ব্যাখ্যা-সাপেক্ষ ব্যাপার; কিন্তু সন্দেহ নেই যে, ধর্ম ও অধ্যাত্মবিশ্বাসের প্রণোদনা মানুষের ভেতর একইসঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবোধ ও ঐক্যবোধের জন্ম দিয়েছে। বাংলা অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি ভাবা যাক, সামন্তপর্বের বাঙাল সমাজে গোষ্ঠীচেতনা গড়ে উঠেছিল প্রধানত ধর্মীয় পরিচয় ও সাংস্কৃতিক চর্চার নিরিখে; কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের মর্মেই আছে পরমাত্মা থেকে জীবাত্মার বিচ্ছিন্নতার বোধ। এও এক ধরনের নৈঃসঙ্গ্যের জন্ম দেয়, যা প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিয়েছে ব্যক্তিকে পরমাত্মার সঙ্গে ঐক্যে পৌঁছতে হবে। বিশ্বজিৎ তাই প্রশ্ন রাখেন, ঈশ্বরের সঙ্গে তীব্র মিলনাকাক্সক্ষার গভীরেই নিহিত নয় কি ঈশ্বরের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার বোধ? অন্যদিকে
সমাজ-কাঠামোতে বিদ্যমান জাত-পাত, বর্ণব্যবস্থা, প্রজা-প্রভুর দ্বন্দ্ব যোগ করেছে বিচ্ছিন্নতার বোধের আরেক মাত্রা। সেদিক থেকে বিশ্বজিতের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে যৌক্তিক। এ-বিষয়ে তিনি আরো কিছু দরকারি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাঙালির 888sport live chat888sport live football আলোচনা প্রসঙ্গে।
আধুনিক পর্বে এসে নৈঃসঙ্গ্য আর বিচ্ছিন্নতার বোধ সত্যিকার অর্থেই বহুমাত্রিক কার্যকারণ দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে।
বিচ্ছিন্নতার ধরনও হয়ে ওঠে বহুমাত্রিক; বিশ্বজিতের ছকে বিচ্ছিন্নতার ধরনগুলো : প্রকৃতি-বিচ্ছিন্নতা, পরিবার-বিচ্ছিন্নতা, প্রেম-বিচ্ছিন্নতা, সমাজ-বিচ্ছিন্নতা, ঈশ্বর-বিচ্ছিন্নতা, মূল্যবোধ-বিচ্ছিন্নতা, সত্তা-বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি। রেনেসাঁস ও আলোকপর্বের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে
যে-যুক্তি ও গণতান্ত্রিকবোধের জন্ম ঘটেছিল এবং যাকে আমরা আধুনিকতার অন্তঃসার হিসেবে গ্রহণ করি, সেই আধুনিকতা
প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর এই পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যবস্থা মানুষের বিচ্ছিন্নতাকে নানাভাবে উসকে দিয়েছে, বিচূর্ণ করেছে সাবেক মূল্যবোধ; এমনকি আধুনিকতার মূল্যবোধ হিসেব গড়ে ওঠা ‘মানবতাবাদ’ নামক ধারণাটিও মার খেয়েছে দুটো বিশ্বযুদ্ধের রক্তক্ষরণের ভেতর দিয়ে। মার্কসের বরাতে বিশ্বজিৎ দেখিয়েছেন, ‘শ্রমের ফসল থেকে বিচ্ছিন্নতাই ক্রমে মানুষকে অপর মানুষ থেকে এবং তার আপন সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।’ (পৃ ২১) শুধু মার্কস নন, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, ডুর্খেইম, এরিক ফ্রম, জ্যঁ পল সার্ত্রে, হাইডেগার, হুর্সেল, সিম্যান প্রমুখ মনস্তাত্ত্বিক সমাজতাত্ত্বিক-দার্শনিকের অভিমত গ্রহণ করেছেন তিনি। সামগ্রিক তত্ত্বকাঠামোকে বিশ্বজিৎ ভাগ করেছেন চারটি প্রধান ধারায় : ক. ধর্মতাত্ত্বিক মানদ-ে বিচ্ছিন্নতার মূল্যায়ন, খ. আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমির আলোকে বিচ্ছিন্নতার তত্ত্বনির্মাণ, গ. অস্তিত্ববাদী-মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বিচ্ছিন্নতার ব্যাখ্যা এবং ঘ. আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মিথস্ক্রিয়ায় বিচ্ছিন্নতার সূত্র নির্মাণ। চতুর্থ ধারাটির সমসাময়িক ভাষ্যেই প্রকৃতপক্ষে আধুনিক মানুষের বিচ্ছিন্নতাকে মূল্যায়ন করা সম্ভব বলে বিশ্বজিৎ মনে করেন।
অবশ্য নিজস্ব বিশ্লেষণে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন তিনি। এই বক্তব্যের সমর্থনে আমি উদাহরণ টানব বইটির দুটো অংশকে : ‘নৈঃসঙ্গ্যচেতনার সমাজ-পটভূমি : পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য’ এবং ‘888sport live chat-888sport live footballে নৈঃসঙ্গ্যচেতনার প্রতিফলন’; এ-দুটো অংশে বিশ্বজিতের সমাজতাত্ত্বিক ভূমিকা নজরে পড়ে; নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘888sport live footballের সমাজতত্ত্ব’কে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন তিনি। 888sport appsে 888sport live football-সমালোচনা ও বিশ্লেষণের প্রথাগত ধারাটি মূলত আধুনিকতাবাদী; শুদ্ধ নন্দনতত্ত্ব ও ভাষাকৌশলের আলোকে 888sport live football বোঝার চেষ্টা করা হয়ে থাকে এ-ধারায়, সমাজ-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পটভূমিকে উপেক্ষা করার প্রবণতাও তাই উহ্য থাকে না। বিশ্বজিতের লেখায় আধুনিকতাবাদী সেই ঝোঁক নেই; কেননা তিনি জানেন, নৈঃসঙ্গ্যচেতনা তো বটেই, 888sport live football কখনো সমাজ ও সংস্কৃতি-নিরপেক্ষ ব্যাপার নয়। আর তাই 888sport live chat-888sport live footballে নৈঃসঙ্গ্যচেতনার প্রতিফলন খোঁজার শুরুতেই তিনি জানিয়ে দেন কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ :
ক. বুর্জোয়া সমাজের অভ্যন্তর জটিলতা ও অন্তর্সঙ্কট বৃদ্ধির সমান্তরাল গতিতে 888sport live chat-888sport live footballে ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে বিচ্ছিন্নতার সঙ্কট। উৎপাদন-সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করেছে সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির অনন্বয় এবং একই সূত্রে 888sport live chatী-888sport live footballিকও আক্রান্ত হয়েছেন নৈঃসঙ্গ্যতার সংক্রামে, যা প্রতিফলিত হয়েছে আধুনিক পাশ্চাত্য 888sport live chat888sport live footballে। (পৃ ৬৯-৭০)।
খ. রেনেসাঁস-সৃষ্ট বন্ধনমুক্ত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের মধ্যেই নিহিত ছিল আধুনিক মানুষের বিচ্ছিন্নতার ভ্রƒণ-উৎস। (পৃ ৭০)
পর্যবেক্ষণের এই মর্মশাঁস ধরেই নৈঃসঙ্গ্যচেতনা ও 888sport live footballের আন্তঃসম্পর্ক বুঝতে চেয়েছেন বিশ্বজিৎ। বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির 888sport live football থেকে দৃষ্টান্ত টেনে দেখিয়েছেন বিচ্ছিন্নতা, নৈঃসঙ্গ্য ও 888sport live football কীভাবে পরস্পরের কর স্পর্শ করে চলেছে। তবে তাঁর প্রধান মনোযোগ বিশ শতকের 888sport live footballে; দুই শতকের 888sport live footballের পার্থক্য টানতে গিয়ে বলেছেন, ‘উনিশ শতকের 888sport live footballে স্থান পেয়েছে ব্যক্তির অসহায়তা ও অক্ষমতা। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর 888sport live footballের মৌল প্রবণতাই হচ্ছে পুঁজিবাদী
উৎপাদন-সম্পর্কজাত মানুষের সার্বিক অনন্বয়, অসঙ্গতি ও বিযুক্তি।’ (পৃ ৭০)।
প্রশ্ন জাগে, ঔপনিবেশিক ইউরোপে 888sport live chat-888sport live footballের চেহারা যদি অনন্বয়, অসংগতি ও বিযুক্তিতে ভরে ওঠে, তাহলে উপনিবেশিত বঙ্গদেশে রূপটি কেমন হয়েছে? দুই ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় নৈঃসঙ্গ্যচেতনা ও 888sport live footballের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠল? এসব জিজ্ঞাসার জবাব মেলে বিশ্বজিতের লেখায়; তিনি দেখিয়েছেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের উপনিবেশে উপজাত হিসেবে এসেছে ভূমিব্যবস্থার নতুন বিন্যাস, বাণিজ্য-পুঁজি, সাংস্কৃতিক আধিপত্য, বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত; আর সমাজ-রূপান্তরের সামগ্রিক ফল গিয়ে প্রভাব ফেলেছে 888sport live chatী-888sport live footballিকদের চৈতন্যে। ইউরোপের আধুনিক 888sport live footballে বিচ্ছিন্নতা সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে পুঁজিবাদী সমাজ-সংগঠনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে।
অন্যদিকে বঙ্গ-ভারতীয় প্রেক্ষাপটে বিচ্ছিন্নতার সংকট ঔপনিবেশিক শাসনে সৃষ্ট ঘটনা, আর আধুনিক 888sport live footballে তার প্রতিফলন মধ্যবিত্তের বিপন্নতাজাত ব্যাপার। এই মধ্যবিত্ত সম্পর্কেই বিশ্বজিৎ লিখেছেন, ‘জনজীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন শিকড়ছিন্ন সত্তাচ্যুত এই মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী দল ছিল ‘আইভরি টাওয়ারের’ বাসিন্দা; স্বদেশ-সংলগ্নতার পরিবর্তে মনোলোকে ইয়োরোপের আকাশে বিচরণ করতেই তারা ছিল উন্মুখ।’ (পৃ ৫৭)।
মূলত উনিশ শতকে বাঙালি মধ্যবিত্তের মনোজগৎ নির্মিত হয়েছে পাশ্চাত্য আদর্শের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠাভিজ্ঞতার আলোকে। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিই উনিশ ও বিশ শতকে আধুনিক বাংলা 888sport live footballের উৎপাদক ও ভোক্তা; আর এদের লেখাতেই বিচিত্র বিন্যাসে উঠে এসেছে নৈঃসঙ্গ্যের উচ্চারণ। বিশ্বজিৎ ঘোষ 888sport live football ও সমাজের গভীর তল পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সামগ্রিক সিদ্ধান্তে পৌঁছবার ক্ষেত্রে বাংলা অঞ্চলের ঔপনিবেশিক ইতিহাসকে গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে এই ইতিহাসের বিশ্লেষণ ছাড়া বাংলার আধুনিক 888sport live football পাঠ ও বিশ্লেষণ হয়ে ওঠে অসম্পূর্ণ। বিশ্বজিতের ছিল সম্পূর্ণতার দায়; তিনি তাই উচিত কাজটিই করেছেন। তাই বলে পাঠককে ফেলে দেননি টীকাভাষ্যের কণ্টকিত পরিসরে। বইয়ের পরতে পরতে পাঠককে টেনে নিয়ে যাওয়ার উপাদান তিনি রেখে দিয়েছেন। এ-কারণে উনিশ ও বিশ শতকের বাংলা 888sport live football থেকে প্রচুর উদাহরণ উপস্থাপন করেছেন – ঈশ্বর গুপ্ত থেকে আবুল হাসান পর্যন্ত যার ব্যাপ্তি। অপর ভাষার 888sport live football থেকে আছে শেক্সপিয়র, শেলি, বোদলেয়ার, এলিয়েট, দস্তয়েভস্কি, কামু, কাফকা, হেমিংওয়ে প্রমুখ কবি-লেখকের 888sport live footballিক নজির। প্রাসঙ্গিকভাবেই আছে ধর্মগ্রন্থ, পুরাণ ও ধ্রুপদী 888sport live footballের প্রসঙ্গ।
বিশ্বজিতের বইটিই এমন : তৃপ্তিদায়কভাবে সমাজ, দর্শন ও 888sport live footballের আলো-আভায় ভাবতে ভাবতে, মুগ্ধ হতে হতে এক বৈঠকে দেখে নেওয়া সম্ভব নৈঃসঙ্গ্যচেতনার সদর-অন্দর। আমাদের দেশে এ-ধরনের বই লেখার প্রচলন নেই; অথচ ইউরো-আমেরিকান বইয়ের ঐতিহ্যে নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক সহজপাঠ্য ও উপভোগ্য বই হরহামেশাই চোখে পড়ে, যেগুলোতে ‘বিন্দুতে সিন্ধু’র দেখা মেলে। 888sport appsের বুদ্ধিজীবী ও তাত্ত্বিক মহলে ‘ক্রিটিক্যাল ইন্ট্রোডাকটরি’ জাতীয় বইয়ের চর্চা নেই বললেই চলে। বিশ্বজিতের নৈঃসঙ্গ্যচেতনা বইটি এমনই একটি তাৎপর্যবাহী বই, যা নৈঃসঙ্গ্যচেতনাকে হাত ধরে বুঝিয়ে দেয়, এমনকি দেয় বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তির নিশানাও। কোনো বিষয়কে যাঁরা সাদা চোখে সরল রূপে দেখতে চান তাঁরা যেমন তৃপ্তি পাবেন, তেমনি তৃপ্তি পাবেন সেসব পাঠক যাঁরা গবেষণা-জিজ্ঞাসা ও গবেষণা-ফলকে অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে চান। এমনকি পাঠকও হতে পারেন সেই নিঃসঙ্গতম মানুষটি, যিনি বিচ্ছিন্নতাকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন, কিন্তু জানেন না তার তত্ত্বতালাশ।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.