আনন্দময়ী মজুমদার
একশ বছরেরও আগে লেখা বই – পল গগ্যাঁর তাহিতি জার্নাল। যে-তাহিতিবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর 888sport live chatী-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল বলা যায়। সেই বইটি – অর্থাৎ নোয়া নোয়া – 888sport live chat-নিরক্ষর 888sport live footballপ্রেমী পাঠকের কাছেও অনবদ্য পাঠ-অভিজ্ঞতা। তাহিতির ভাষায় এই শব্দগুচ্ছের অর্থ ‘সুরভি সুরভি’। আমার সামনে খোলা কাঠখোদাইয়ে সচিত্র সেই বইয়ের ও.এফ. থিসের করা 888sport app download apk latest version, যা ১৯১৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। 888sport live chatী পল গগ্যাঁর জীবনবৃত্তান্ত বিশদভাবে না জেনেও পড়া যায় এই জার্নাল, মুগ্ধ আর আবিষ্টও হওয়া যায়। অতীত-ভবিষ্যৎ জানার দরকার নেই। ইতিহাসের খতিয়ান নিয়ে পুঁথি-হাতে বসে কী হবে? যিনি কিছু জানেন না, তাঁকে সরল চোখে বইটি পড়তে হবে। এর পাতায় পাতায় 888sport live chatী সৃষ্টি করেছেন অপার সৌন্দর্য। এক অচেনা মনোমুগ্ধকর বিবৃতি। হয়তো কোনো গহন অভিপ্রায় তাঁর কলমকে চালনা করে। পাঠক সেই অভিপ্রায়ের দুরন্ত অমোঘ স্রোতে ভেসে যান।
888sport live chatী বা 888sport live chat-সমালোচক নই – তবু পাঠক তো বটে। জানতাম পাশ্চাত্যের আধুনিক চিত্রকলাকে পল গগ্যাঁ, ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ আর পল সেজান এনে দাঁড় করিয়েছেন ইমপ্রেশনিজমের পরের অধ্যায়ে – পোস্ট-ইমপ্রেশনিজমে। ছবিতে রংকে গগ্যাঁ অন্তর্নিহিত বার্তা আর মুডের বাহন হিসেবে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় ব্যবহার করেছেন। ভ্যান গঘের মতো তাঁর কাজও যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি সমকালে। দুজনের জীবনেই দেখি জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা না-পাওয়া ও অনটনের নিদারুণ কষ্ট, অসুস্থতা এবং অকালমৃত্যু। যদিও জীবনাচরণের দিক থেকে, নিজস্ব অনুসন্ধান ও কাজের দিক থেকে এঁদের ভিন্নতাও প্রবল। ধীরে ধীরে এই দুই 888sport live chatীর কাজ ছাপিয়ে উঠেছে অন্য অনেকের সৃষ্টিকেই।
মৃত্যু-পরবর্তীকালে গগ্যাঁর বিপুল উত্থানের পেছনে তাঁর তাহিতি-পর্ব নিয়ে লেখা জার্নালের ভূমিকা কী? যারা জানে, তারা জানে। কিন্তু আমার মতো এক সাধারণ পাঠককেও এই জার্নাল টানে এর সরল স্বচ্ছ ভাষায়, নান্দনিক খোঁজে, আত্মিক অভিজ্ঞতায়, মোহময় দর্শনে, সাবলীল স্বকীয়তায়। প্রতি মুহূর্তের আঁজলা-ভরা নিমগ্ন, নিবিষ্ট, প্রফুলস্ন উপাসনা বলে মনে হয় একে।
পড়ে যে-কোনো পাঠকের মনে হতে পারে – তাহিতিকে তাঁর জানতে হবে গভীরভাবে, জানতে হবে গগ্যাঁর 888sport live chatীসত্তার কোন গহনে এর প্রগাঢ় প্রভাব; আর তারই সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে হবে 888sport live chatীর সৃজনপ্রাচুর্যময় এই বছরগুলোকে।
প্রতিটি পাতায় উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা বই এটি। লেখা, নাকি ছবি? অত্যন্ত বাঙ্ময়। পবিত্র বোধে উজ্জ্বল। নেই কোনো পাপ, গস্নানিবোধ, কোনো অতীত-ভবিষ্যৎ। শুধু যেন এক অমোঘ আত্মোন্মোচন আছে এখানে – যা অভিজ্ঞতায় ভরা মধুর মতো। প্রকৃতির আর হৃদয়ের উষ্ণতায় পেকে টুসটুস করছে পড়ার অপেক্ষায়।
দুই
মানচিত্রে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ঝিনুকের মতো ছড়িয়ে থাকা তাহিতি পলিনেশীয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। পাহাড় উঠেছে সমুদ্রের ধার দিয়ে। তখনো যাতায়াতের অসুবিধা আর খরচের সমস্যার কারণে বিদেশি পর্যটকের ভিড়ভাট্টা ছিল না। সমুদ্রের রং ঘন নীল, উজ্জ্বল রোদের প্রাচুর্য বছরজুড়ে। এমন চমৎকার ভূ-প্রকৃতি আর আবহাওয়া আকর্ষণ করেছে ইউরোপীয় নাবিক ও অভিযাত্রীদের গত আড়াইশো বছর ধরে। মাত্র দুশো বছর আগে এই দ্বীপগুলো মানচিত্রের আওতায় আসে। আর পলিনেশিয়া নামটি নাকি আরোপিত, দিয়েছিল ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা।
১৮৯১ সালের কথা। গগ্যাঁর জার্নাল যেখান থেকে শুরু, সেই পাপিতে তখন এক ফরাসি উপনিবেশ। গগ্যাঁ নিজের জন্য পছন্দসই এক কুঁড়েঘর বেছে নিয়েছিলেন এখানে। অদূরে প্রটেস্টান্ট গির্জার ঘণ্টাধ্বনি। মিশনারিরা এসে গেছে একশ বছর আগেই। 888sport live chatীর তাহিতি-পর্বের প্রথম ছবি তাই পলিনেশীয় সংস্কৃতির নয়। খ্রিষ্টান-প্রভাবিত তাহিতির 888sport promo codeদের মেরি মাতা ও শিশু যিশুর উপাসনাই সেই ছবির প্রতিপাদ্য (‘ইয়া ওরানা মারিয়া’, ১৮৯১)। যদিও পাপিতের এক স্থানীয় অবয়বে হাজির হচ্ছেন মেরি মাতা। তাঁর ঘাড়ে তাঁর শিশুসমত্মান যেন যিশু। পরে জানতে পারি, গগ্যাঁর প্রাথমিক শিক্ষা হয়েছিল এক ক্যাথলিক ইস্কুলে। তাই ধর্মবিশ্বাসকে তিনি যদিও কখনো তেমন আমলে নিয়েছেন বলে মনে হয় না, তবু ধর্মীয় পাঠ থেকে পাওয়া পৌরাণিক কাহিনি আর রূপকল্পকে অসাধারণ সূক্ষ্মতার সঙ্গে, অমোঘ প্রতীকী ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন তাঁর ছবিতে।
১৮৯১ ও পরের দুই বছর ধরে একটানা আঁকছেন তাহিতির চালচিত্র। এ-সময়ের ছবি মোট ছেষট্টিটি। চোখ-ধাঁধানো গাঢ়, নিরেট, জৈব রং আদিবাসীদের আদিম সরলতাকে চিহ্নিত করতে চায়। রঙের অপূর্ব ব্যবহার 888sport live chatীর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একাত্ম হয়। স্থির চালচিত্র নড়ে ওঠে, চলমান হয় শরীরগুলো, ফুটে ওঠে প্রাণ। জৈব আকার আর নিরেট রঙের ব্যবহার নতুন মাত্রা আনে। ইমপ্রেশনিজম থেকে বিবর্তিত হয়েছে তাঁর ছবি অনেক আগেই। তাঁর ছবি তাই শুধু পর্যবেক্ষণের চিত্রভাষ্য নয়, উপলব্ধিরও – অতীত, ইতিহাস আর স্বপ্নও যেন এখানে মূর্ত হয়ে ওঠে।
888sport live chatকলার ইতিহাসে ‘প্রিমিটিভিজম’ বলতে যা বোঝায়, তার আধুনিক রূপকারদের একজন গগ্যাঁ। তাঁর অনেক কটি ছবির প্রতিপাদ্যই তাহিতির 888sport promo code। তাদের মগ্নতা। তাদের দোহারা স্বাস্থ্য, শান্ত অবয়ব। উদোম শরীর। নির্ভয় জীবন। অনেক কটি ছবি দিনের বেলার উষ্ণ হলুদে ওম দেয়। সঙ্গে মধুর মতো গাঢ় সোনালি চামড়ার রমণীরা। পরিচ্ছদের নকশা আর রং মিশে যায় নিসর্গের সঙ্গে। ছবির নামকরণ কিছুক্ষেত্রে একটি সরল প্রশ্ন – ‘তুমি কি ঈর্ষান্বিত?’, ‘খবর কী?’, ‘কখন বিয়ে হবে?’।
আরো কিছু ছবিতে তাহিতির স্বরূপকে তুলে ধরার চেষ্টা, যেমন ‘ময়ূরের নিসর্গ’, ‘প্রাচীন কাল’ – যে-ছবিগুলোকে দেখলে মনে হতে পারে, এ কি বাস্তব, না কল্পনা? সমসাময়িককালের বাস্তব না হলেও এ-যেন কোনো প্রত্যক্ষ অতীতের 888sport sign up bonus।
১৮৯২ সালের কিছু ছবিতে সমকালীন বাস্তবের ছাপ পাওয়া যায়, পাওয়া যায় এই দূরদেশের আত্মাকে : ‘তাহিতির গাঁ’, ‘গান মহল’, ‘মৃতের আত্মা তাকিয়ে থাকে’, ‘আম হাতে 888sport promo code’।
বিষয়বস্তু তাহিতির সোনা সোনা বালুরাশি, নীল-সবুজ পাহাড়ঘেরা অঢেল ভূ-প্রকৃতি, মধুবমত্মী 888sport promo code, মানুষের সরল বিশ্বাস, লোকাচার, ঐতিহ্যবাহী জীবনাচরণ, নিঝুম রোদেলা এক শান্তিময়তা। তাঁর প্রতিপাদ্য প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া মানুষ, মানুষের আবেগ, অভ্যেস, স্বপ্ন, বিশ্বাস। ‘অর্থহীন ডিটেল’ তিনি বাদ দিচ্ছেন। লাল-নীল-সোনালি-বেগুনি রঙের উজ্জ্বলতা উপচে পড়ছে তাঁর ক্যানভাসে নির্ভয়ে, নির্দ্বিধায়।
জার্নালে পাই, তিনিও যেন দীক্ষিত মানুষ হয়ে গেছেন তাহিতিতে এসে। লেখেন, ‘সভ্যতা আমার থেকে একটু একটু করে খসে পড়ছে। আমি সরলভাবে চিমত্মা করতে, নিজের প্রতিবেশীকে খুব কম ঘেন্না করতে, বলা যায় ভালোবাসতে শুরু করছি।
জন্তুর, মানুষের যত রকম আনন্দ আছে – মুক্ত জীবনের, সব আমার। আমার ভিতরে যা কপট, গতানুগতিক, প্রথাগত, সেসব আমি পেরিয়ে এসেছি। আমি সত্যের গহনে, প্রকৃতির মর্মমূলে প্রবেশ করছি।’
প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিশছেন, একাত্ম হচ্ছেন, ভাষা আর সংস্কৃতির বোধে হয়ে যাচ্ছেন অনেকটা পলিনেশীয় আদিবাসীদের মতো। শারীরিকভাবে সুঠাম, নীরোগ, আশা আর আনন্দময় – এক পূর্ণ মানব। এখানে তিনি এক সুদেহী শ্রমশীল পুরুষ, জঙ্গলের গহনে হেঁটে চলে যাচ্ছেন ভাস্কর্য বানানোর জন্য বৃক্ষ-আহরণে, একটি রোজউড বৃক্ষ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ঘরে। যতবার ছেনি-বাটালি নিয়ে ভাস্কর্য গড়ার কাজে হাত দিয়েছেন, ততবার উথলে উঠছে বৃক্ষের নিহিত সৌরভ, তাঁর প্রাণ ভরে উঠেছে এক অভূতপূর্ব বিজয়ের আনন্দে – ‘নোয়া নোয়া’!
তিনি সাঁতার কেটে যাচ্ছেন নদীর জলে গুহা-আবিষ্কারে। আধঘণ্টা সাঁতারে হানা দিচ্ছে গহিন জলের রহস্যময় প্রাণী – সাপ নাকি? সাপ নয় – ইল মাছ! সেখানে আদিবাসীরাও প্রাচীন সংস্কারের বশে তাঁর সঙ্গী হতে অনিচ্ছুক। এই একাকী অ্যাডভেঞ্চার তাঁর জার্নালকে রোমহর্ষক করে তোলে বইকি জায়গায় জায়গায়!
তীব্র একাকিত্বের ভার সহ্য করতে না পেরে কিছুদিনের ভেতরে খুঁজে নিচ্ছেন তেরো বছরের এক সঙ্গিনীকে, বিয়ে করছেন তাকে একবেলার দেখায়, তার পিতামাতার অনুমতি আর আগ্রহে; মেয়েটি তাঁকে ভালোবাসে কদিনেই, তিনি তাকে। এমনই জানাচ্ছে জার্নাল। জানিয়ে রাখছেন পাছে কেউ একে বাল্যবিবাহ মনে করে কটাক্ষ করে – তাহিতিতে তেরো বছর বয়সেই মেয়েদের বিবাহযোগ্যা অর্থাৎ ইউরোপের আঠারো বা বিশ বছরের সমান পরিণত মনে করা হয়।
তাহিতির মেয়েদের সম্পর্কে এর আগে তাঁর মত পাই, ‘তারা আদপে আমাকে সংকুচিত করে, তাদের সুনিশ্চিত চাউনিতে, তাদের আত্মমর্যাদায়, তাদের পা ফেলার অটুট গরিমায়।’
অন্যত্র লেখেন,
এরা তখনই কেবল আমাদের মেনে নেয় যখন তারা আমাদের কাছে নিজেদের নিবেদন করতে আসে; অথচ ওরা শুধুমাত্র নিজের কাছেই নিবেদিত। ওদের মধ্যে এমন শক্তি আছে যাকে অতিমানবিক বলে – অথবা হয়তো স্বর্গীয়ভাবে জৈব বলে ধারণা হয়।
তেরো বছর বয়সের যে-মেয়েটি তাঁর প্রেমিকা ও স্ত্রী, তার নাম তেহুরা – অথবা তাহামানা। জানান – কীভাবে তিনি তাঁর কাছে তাহিতির সংস্কৃতি আর প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস জানতে পারছেন। জীবনসমে মিশে যাচ্ছে – চাওয়ার আর কিছু বাকি থাকছে না। অন্তত এ-বয়ানে।
একরাতে তাঁকে ফেলে রেখে কোথাও যেতে হয়েছিল বলে, এবং ফিরে এসে মেয়েটিকে ভয়ার্ত অবস্থায় পাওয়ার মধ্যে আশ্চর্য কোনো সৌন্দর্য খুঁজে পেয়ে এঁকেছিলেন একটি ছবি – ‘মৃতের আত্মা তাকিয়ে আছে’ (১৮৯২)। এ-ছবিটি এখন বিপুলখ্যাত। তেহুরাকে নিয়ে তাঁর একাধিক উলেস্নখযোগ্য কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু জার্নালে তাঁর ছবির বা ভাস্কর্যের কথা কম।
তাঁর ছবি আঁকার পেশা নিয়ে আধুনিক চিত্রকলার সঙ্গে পূর্বপরিচয়হীন তাহিতির এক আদিবাসীর সরল উচ্চারণ, ‘তুমি একটা কাজের কাজ করছ।’
বইটি শেষ হয় গগ্যাঁর তাহিতি ছেড়ে ‘জরুরি পারিবারিক কারণে’ ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। তেহুরা তাঁর এই যাওয়া মেনে নিলেও বিষণ্ণতা নিয়ে পাথরের ওপর বসে থাকে মাটিতে পা দুটি গেঁথে। জার্নাল এমনটাই ইঙ্গিত করে।
পরে জানতে পারি এর মধ্যে তাঁদের এক সমত্মান হয়েছিল, যে-কথা এই জার্নালে উলেস্নখ করা হয়নি। এমনকি তেহুরা আর তাঁর সমত্মানের কী হলো সে-ব্যাপারে কোনো ইশারা এই বইটিতে বা তাঁর পরবর্তী কোনো লেখায় পাওয়া যায় না। তেহুরা তাঁর জীবনে আর ফিরে আসেনি।
তিন
নোয়া নোয়া পড়ে মনে হতে পারে, যে-জীবন এত প্রাকৃতিক, বিশুদ্ধ, সরল, মানবিক, ‘আদিম’ সভ্যতার সঙ্গে ওতপ্রোত, সামঞ্জস্যময়, পৃথিবীর সঙ্গে বিশ্বাসে নিটোল – এ কি ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের ছোঁয়া-লাগা মাটিতে বাস্তব, না কল্পনা? ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ট্যু গুড টু বি ট্রু’। রবীন্দ্রনাথের 888sport app download apkয় রামায়ণের রচয়িতা বাল্মীকিকে নারদ যেমন বলেছেন, ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি, ঘটে যা তা সব সত্য নহে’ – এ কি তাই?
888sport app বইয়ের পাতা উলটে জানতে পারা যায়, গগ্যাঁ ১৮৯১ থেকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত তাহিতিতে ছিলেন; ১৮৯৩ সালেই ইউরোপে ফিরেছিলেন, সেখানে তাহিতির কাজের প্রদর্শনী করেছিলেন। আর তাহিতির জার্নালটি সে-সময়ে লেখা হয়। তাই মনে করা যায়, এই জার্নাল নিশ্চয়ই খুব সুচিন্তিতভাবে তৈরি করে দিয়েছিল তাঁর নতুন প্রদর্শনীর জন্য জরুরি প্রেক্ষাপট।
পরে ১৮৯৫ থেকে ১৯০৩ সালে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তাহিতিতে এবং অদূরের মার্কেসাস দ্বীপে। সেই কথা জার্নালে লেখা নেই। তবে ফিরে আসার কারণ স্পষ্ট। ইউরোপ বা ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ অধ্যুষিত বিশ্ব থেকে বিদায় নিয়ে, একটি নাতিশীতোষ্ণ, রোদেলা, প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ, পাহাড়-সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় সরল জনবসতির মধ্যে থাকা আর নির্ঝঞ্ঝাটে কাজ করা।
অনুসন্ধান করে তাঁর জীবনী থেকে যা জানা যায় তা মোটামুটি এরকম – ইউরোপে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন যখন শেষ হয়ে যায়, অর্থনৈতিক ও শৈল্পিক জীবনও যখন বিপর্যস্ত – তখন নতুন এক সৃজনের আশায় বিশুদ্ধ সরল ও সহজ এক জীবনবোধ, 888sport live chatভাষা, দৃষ্টিকোণ আর আঙ্গিকের সন্ধানে তিনি তেতালিস্নশ বছর বয়সে পাঁচ সমত্মান ও স্ত্রীকে পেছনে রেখে চলে গিয়েছিলেন পলিনেশীয় দ্বীপ তাহিতিতে। খুঁজেছিলেন নতুন এক অধ্যায় 888sport live chatের ইতিহাসের।
আমরা জেনেছি, এ-পথপরিক্রমা না করলে 888sport live chatের প্রতি সুবিচার তিনি করতে পারতেন না। এটা যেন এক অমোঘ জীবন ছিল তাঁর। আসতেই হতো তাঁকে।
ব্যক্তিগত জীবনে তাঁকে তেমন নিষ্কাম, নির্মোহ, সুঠাম, প্রসন্ন মানুষ মনে হয় না। বরং উলটোটাই। সমস্ত জীবনের নিরিখে তাঁকে মনে হয় একজন বোহেমিয়ান, অস্থির, অসুস্থ প্রতিষ্ঠা-সন্ধানী, আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। হয়তো 888sport live chatের খাতিরেই।
সূক্ষ্ম বিচারে হয়তো দেখা যাবে এক ট্র্যাজিক গল্পের বেপরোয়া, ব্রাত্য নায়ক ছিলেন তিনি। যার জন্য শেষ পর্যন্ত মর্মের কাঁপন থাকে আমাদের। তাঁর 888sport live chatের প্রতি আমৃত্যু প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধতা আমাদের মধ্যে সমীহ সঞ্চার করে প্রবলভাবে।
তাঁর প্রতিষ্ঠা চাওয়ার মধ্যে কি তথাকথিত সভ্যতার কাছে আদ্যোপান্ত বেমানান, এক উদ্দীপ্ত ও উদ্ধত, মরিয়া মানুষের পৃথিবীতে নিজের মতো এক বিশুদ্ধ স্থান খুঁজে নেওয়ার তাড়না ছিল? জীবনের অর্থ খুঁজতে চাওয়ার অভিপ্রায় ছিল? ছিল এক আত্মসচেতন 888sport live chatীর উদগ্র সৃষ্টির উন্মোচন-খোঁজা দুর্বিনীত স্পর্ধা?
যে-কথা অন্য বই পড়ে জানা যায়, আর যে-কথা জরুরি, এবং আগেই উলেস্নখ করা হয়েছে – তা এই যে, তিনি ছেড়ে-আসা স্ত্রী তেহুরার কাছে ফেরেননি। বিয়ে করেছেন আরেকজন কিশোরীকে। কিন্তু ফিরে তিনি এসেছিলেন তাহিতিতে দ্বিতীয়বার। তাঁর মৃত্যু হয় অন্তিম নিবাস, আরেক পলিনেশীয় দ্বীপ মার্কেসাসে। কিন্তু সে-কথা পরে।
চার
তাহিতি কেন বেছে নিলেন? ১৮৯০ সালে প্যারিস থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে গিয়ে এক বিশুদ্ধ নাতিশীতোষ্ণ মাটিমাখা জীবনের সন্ধান করতে করতে হাতে পেয়েছিলেন ১৮৭২ সালে লেখা পিয়ের লোতির আত্মকথা দ্য ম্যারেজ অব লোতি। আরো ভালো করে জানতে পারলেন সেখানকার নিসর্গের উদারতা আর মানব-মানবীর গভীর সরলতা ও সৌন্দর্যের কথা। একজন ইউরোপীয় রোমান্টিক 888sport live chatী 888sport promo codeদের মধ্যে যা খোঁজেন তারই বর্ণনা ছিল লোতির বইটিতে – মেয়েদের গভীর কালো চোখ, উজ্জ্বল তামাটে বর্ণ, নিখুঁত সৌষ্ঠব, চন্দন-সুবাসিত দীর্ঘ খোলা কুচকুচে কেশদাম। তাহিতি যেন এক স্বর্গীয় স্বর্ণখনি – শুধু আবিষ্কারের অপেক্ষায়। নতুন জীবন আর 888sport live chatের-চমক-আনা নতুন অধ্যায়ের জন্য এমন এক নতুন অভিজ্ঞতা তাঁকে পেতে হবে, এমনটাই কি গগ্যাঁর মনে হয়েছিল?
যদিও ইমপ্রেশনিজম দিয়ে তাঁর 888sport live chatের জগতে বিচরণ শুরু তবু সেই ইমপ্রেশনিজম থেকে তিনি সরে যেতে চেয়েছেন ও নিজস্ব স্বকীয় এক 888sport live chat-আঙ্গিক তৈরি করার কাজে আমৃত্যু কাটিয়ে গেছেন। আজকের 888sport live chatভাষায় যাকে ‘প্রিমিটিভিজম’ বলে তারই অমোঘ টানে তিনি তাহিতিতে হাজির হন – এমনটা মনে হতে পারে ।
কিন্তু অকৃত্রিমতা, আদিমতাকে তিনি কি খুঁজে পেয়েছিলেন? তাহিতিতে তাঁর প্রথম জীবন পাপিতে শহরে কাটে। একশ বছরের ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ বলতে গেলে মুছেই দিয়েছে বিশুদ্ধ ঐতিহ্যকে। মিশনারিরা সাম্রাজ্যবাদের গোড়াপত্তন করেছে। পালটে গেছে স্বকীয় ঐতিহ্য, ধর্মবিশ্বাস, আচার-আচরণ, জীবনপ্রণালি। বাস্তবধর্মী কিছু ছবি এঁকেছেন এই শহরে, আবার কিছু কল্পনাশ্রয়ী ছবিও।
তাহিতির মাটির ঐতিহ্যের আরো কাছাকাছি আসার প্রেরণায় রাজধানী পাপিতে থেকে গগ্যাঁ গেছেন পাপেরি আর তারপর মাতায়েয়া। এখান থেকে শুরু জার্নালের আশ্চর্য-ঐশ্বর্য-খুঁজে-পাওয়া খুশির বয়ান।
পাঁচ
১৮৪৮ সালে গগ্যাঁর জন্ম ফরাসি বিপস্নবের দ্বিতীয় ধাপে। তাঁর পেরুভীয় মায়ের জন্ম স্বাভাবিক সুস্থ পরিবারে হয়নি। একটি সংক্ষুব্ধ পারিবারিক আবহে বড় হয়েছিলেন তিনি। মা-বাবার সহায়হীন অসহায় কচি বয়সে পলের মায়ের বিয়ে হয়েছিল তাঁর সাংবাদিক বাবার সঙ্গে। পরিণয়ের শান্তিসুখ স্বল্পমেয়াদি হয়। পলের বয়স যখন মাত্র দুই, তখন পলের মায়ের আত্মীয়স্বজনকে দেখতে যাওয়ার পথে পেরুগামী এক জাহাজে তাঁর বাবা মারা যান। পলের চেতনা উন্মীল হওয়ার সময়টুকু কাটে পেরুতে। এই ঘটনাটি ফেলে দেওয়ার মতো নয় – এমন মনে করেন অনেক গবেষক। কেউ কেউ মনে করেন, রঙের ও বস্তুর বৈভব আর উজ্জ্বলতা তাঁর বাবার ইউরোপীয় উত্তরাধিকারকে হয়তো এজন্যই গ্রহণের মতো ঢেকে রেখেছিল। আর এজন্যই আমরা তাঁর মধ্যে পরবর্তী জীবনে বারবার অন্য একধরনের আবহাওয়ার ও চালচিত্রের রোদেলা বৈভবের দিকে – ইউরোপ-বহির্ভূত ভিন সভ্যতা আর কৃষ্টির দিকে – ফিরে যাওয়ার প্রবণতা দেখি। ইউরোপ থেকে বারবার তাঁকে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে – রঙিন, রোদেলা, সমুদ্রবেষ্টিত নিসর্গের খোঁজে।
পলের জীবনে তাঁর মা ছিলেন একমাত্র সহায়। ফ্রান্সে এসে দর্জিগিরি করে তিনি পলের লেখাপড়ার খরচ আর সংসার চালিয়েছেন। ফলে পেরুর সাময়িক চেতনা-ঝলসানো সময়টুকুর 888sport sign up bonus তাঁদের দারিদ্র্য-চিহ্নিত জীবনে উষ্ণতার হাতছানি দিয়ে থাকবে।
অল্প বয়সে নৌবাহিনীতে কাজ নিয়েছিলেন পল – উদ্দেশ্য দেশ-বিদেশ সফর, ভেতরে ভেতরে তাঁর চিরাচরিত অস্থির খোঁজ কাজ করে যায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঘর-খোঁজা এই স্বপ্নবিলাসী মানুষ শুধু ভিনপ্রান্তর ছুঁয়ে ছুঁয়ে এসে তৃপ্তি পাননি। ১৮৭১ সালে মায়ের মৃত্যুর পরে তেইশ বছর বয়সে হঠাৎ নৌবাহিনীর কাজ ছেড়ে প্যারিসে স্টক মার্কেটে কাজ করতে আসেন।
ক্যারিয়ারের প্রথম দশক আর্থিকভাবে সফল হয়। ১৮৭৩ সালে বিয়ে করেন ড্যানিশ এক মহিলাকে। অনেকে মনে করেন, তাঁর এই বাছাইয়ের মধ্যে তাঁর হারানো মায়ের শক্ত-সমর্থ অবয়ব আর অসিত্মত্বের খোঁজ কাজ করেছিল। পল এবং তাঁর ড্যানিশ স্ত্রী মেতের পাঁচ সমত্মান হয়েছিল।
১৮৮০-এর দশকে স্টক মার্কেটে ভাটা পড়ে। গগ্যাঁ তরুণ বয়স থেকেই পেইন্টিং সংগ্রহ করতেন, শৌখিন আঁকিয়ে হিসেবে ছবি আঁকার চর্চাও করতেন। স্ত্রী মেতের তাঁর এই দিকটি জানা ছিল না। মেতে তাঁকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবেই দেখতে চেয়েছেন। স্বভাবের দিক থেকে মেতে ছিলেন খরুচে আর আমুদে মানুষ। আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য যে তাঁকে আকর্ষণ করবে, এ আর এমন অবাক কী? তাই গগ্যাঁর জীবনের ব্যবসাবৃত্তি সফল না হওয়া এবং তা সত্ত্বেও তাঁর 888sport live chatের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়টি মেতে মোটেই ভালো চোখে দেখতে পারেননি। এছাড়া সমত্মানদের কথাও তো তাঁকে ভাবতে হয়েছে।
ইমপ্রেশনিস্ট ছবি তখনো প্রাতিষ্ঠানিক 888sport live chatজগতে ওঁচা। কিন্তু সেই ইমপ্রেশনিজমই গগ্যাঁকে আকর্ষণ করেছে। ১৮৭৬ সালে করে বসেন নব্য 888sport live chatীর পক্ষে উচ্চাকাঙক্ষী এক কাজ – নিজের একটি ছবি প্যারিসের আর্ট সালোঁতে পাঠান। তাঁর 888sport live chatপ্রতিভা স্বীকৃত হয়, কারণ ছবিটি প্রদর্শনীতে স্থান পায়। আনকোরা 888sport live chatীদের সাহায্য করার ব্যাপারে দরদি অগ্রজপ্রতিম 888sport live chatী কামিয়ে পিসারো তাঁকে উৎসাহিত করেন। কিন্তু পলের ব্যবসাবৃত্তির কারণে অভিজাত 888sport live chatজগৎ তাঁকে বহিরাগত হিসেবে দূরে ঠেলে দেয়।
গগ্যাঁর 888sport live chatীসত্তার সঙ্গে তাঁর জীবিকার মেলবন্ধন হয় না। 888sport live chatজগতে কল্কে না পাওয়ার কারণে তিনি চেষ্টা করেন তুলনামূলকভাবে ধনী শহর রুয়োঁতে গিয়ে 888sport live chatচর্চার। সেখানেও সুবিধা করতে পারেন না। পাঁচটি সমত্মান ও স্ত্রীর আর্থিক দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয়ে পাড়ি দেন স্ত্রীর দেশ কোপেনহেগেন। সেখানে তাঁকে সকলের কাছে পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে না-পারার খোঁটা সইতে হতো। সাংসারিক ব্যাপারে তিনি হয়তো ক্রমশ অনীহায় ভুগতে থাকেন। ড্যানিশ সমাজে আকছার দেখতে পাওয়া 888sport live chatের কদরহীনতা তাঁকে বিমুখ করে তোলে। এই বেদনা ও ক্ষোভ প্রতীক হিসেবে প্রকাশ পায় তাঁর স্টিল লাইফের ছবিতে। কিছুদিন পরে তাঁর স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবার তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
নিঃসঙ্গ ও হতাশ অবস্থায় কপর্দকশূন্য গগ্যাঁ ফ্রান্সে ফিরে আসেন। ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন জায়গায়। মাটির কাজ শেখেন। পাথরের কাজ শিখেছিলেন আগেই। মেতের একটি অপরূপ ভাস্কর্য বানিয়েছিলেন দু-তিনদিনের শিক্ষানবিশিতে। তাঁর এই দ্রম্নততার সঙ্গে এগোনো যে-কাউকে অবাক করে।
তাঁর হাত কখনো নিশ্চল থাকে না। কখনো কাঠ, কখনো মাটি, কখনো পাথর, কখনো ক্যানভাসে সৃষ্টির দৈবশক্তি যেন তাঁকে ভর করে থাকে। যতই অনটন, অসুস্থতা আর নিদারুণ জৈবক্ষুধা তাঁর জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করুক না কেন।
গগ্যাঁ নিজেকে 888sport live chatজগতে একজন ব্রাত্য অগ্রনায়ক মনে করেছেন। ইমপ্রেশনিজমের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেই ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সেজান ও অন্য কয়েকজন 888sport live chatী এর বিবর্তিত আরেকটি ডিসিপিস্নন্ড ফর্ম খুঁজছিলেন।
গগ্যাঁ কাউকে অনুসরণ করতে চাননি, বরং নিজের গহন উপলব্ধি দ্বারা চালিত হতে চেয়েছেন। এই ছাঁচ-ভাঙার উদ্ধত বিদ্রোহ তাঁর স্বভাবকে, জীবনকে এবং 888sport live chatসৃষ্টিকেও পরিচালিত করেছে। না হলে তিনি অনায়াসে সেই সমাজে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে এক সুখী ঘরোয়া জীবনযাপন করতে পারতেন হয়তো। কিন্তু ‘তোমার কাছে শান্তি চাব না’ – এই যেন তাঁর জীবনের মন্ত্র ছিল। তাঁর জীবনী নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা বলেন, তাঁর সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বৈশিষ্ট্য ছিল সম্ভবত সাহস।
১৮৮০-এর দশকে গগ্যাঁ তাঁর কাজকে সম্পূর্ণভাবে ইমপ্রেশনিজম থেকে মুক্ত করে নেন। এ পর্যায়ে শুরু হয় সিন্থেটিক সিম্বলিজমের চর্চা। পোস্ট-ইমপ্রেশনিজমের আগের স্তর এটি। এই সময়ে তাঁর আঁকা ‘সূচিকর্মরত 888sport promo code’ (১৮৮০) ছবিটি 888sport live chat-সমালোচক জে কে উইসমানের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে।
প্যারিস থেকে পালিয়ে কিছুদিন তিনি ফ্রান্সের দক্ষিণে ভ্যান গঘের সঙ্গে কাজ করেছেন। গঘ তাঁর অনুরাগী ছিলেন। অনটনের কারণে ছোট্ট এতটুকু জায়গায় থাকতে হতো এই দুই মহৎ উঠতি 888sport live chatীকে। দুর্ভাগ্যবশত তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায় কিছুদিন পরে। ভ্যান গঘ তাঁদের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন আর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। গগ্যাঁ সঙ্গে সঙ্গে প্যারিসে ফেরেন। দুই 888sport live chatীর মধ্যে সেই চিড় আর জোড়া লাগে না।
ইউরোপীয় সভ্যতা থেকে দূরে, বিশুদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রাণবন্ত উজ্জ্বল রঙের খোঁজে তিনি পানামা যান – তারপর যান মারতিনিকে। সেই যাত্রার খরচ মিটিয়েছেন মজদুরি করে। এখানে 888sport promo codeদের যে গ্রাম্য সরল রূপ তিনি এঁকেছেন তার মধ্যে উচ্চকিত কোনো আদর্শ নেই। তবে এখানেও বেশিদিন কাজ করতে পারলেন না। ম্যালেরিয়া আর আমাশয়ে মুমূর্ষু হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেন শেষমেশ। তার আগে অবশ্য স্ত্রী মেতেকে চিঠিতে অনুনয় করেছেন তাঁর সঙ্গে এসে থাকার জন্য। শারীরিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় ১৮৮৮ সালে প্যারিসে ফিরে আসতে হলো তাঁকে।
১৮৯০-এর দশক তাঁর জীবনের মোড় পালটে দেয়। ১৮৯১ সালে সিদ্ধান্ত নেন তাহিতি যাওয়ার। পিয়ের লোতির সেই অনবদ্য ছবিসমৃদ্ধ আত্মকথা তাঁকে মূলত উদ্বুদ্ধ করে।
১৮৯৩ সালে তাহিতি থেকে ফেরেন ঠিকই, এবং এর মধ্যে তাঁর আঁকা ছবিগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনী হয় প্যারিসে – গগ্যাঁ যথাসম্ভব খরচ করেন এই প্রদর্শনীর পেছনে। মহাসমারোহ হয়। দেখানো হয় চলিস্নশটির বেশি ছবি। সবকটিই তাহিতিতে আঁকা। তাহিতি-পর্বের তিন বছরে তিনি এঁকেছিলেন ছেষট্টিটি ছবি, এছাড়াও করেছিলেন বেশ কিছু অসামান্য কাঠের কাজ।
প্রদর্শনীর প্রেক্ষাপট তৈরি করে তাহিতির এই জার্নাল অবধারিতভাবেই। কিন্তু সে-প্রদর্শনী ছাপ ফেলে না অভিজাত 888sport live chatজগতে। ভেবেছিলেন তাক লাগিয়ে দেবেন। পেলেন শীতল সংবর্ধনা। ‘সভ্য’ সমাজ ‘অসভ্য’ অপরিচিত এই জগৎকে যেন মেকি কল্পনা হিসেবে বাতিল করে দিলো, আমলেই নিল না। এর মধ্যে টাকাকড়িও শেষ। গগ্যাঁ এবারেও ব্রাত্য থেকে যান 888sport live chatজগতে এবং সংসার-জীবন থেকে দায়িত্বহীনতার দায়ে নিষ্ক্রান্ত।
বিপর্যস্ত হন গগ্যাঁ। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে আদিম মাটিমাখা সরল জীবনদর্শন তিনি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তাঁর কাজে, তাকে তিনি ধারণও করতে থাকেন জীবনে। প্যারিসে কাজের জায়গায় এক ধরনের ‘আধুনিক’ প্রিমিটিভিজমের চর্চা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। তাহিতির ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তাঁকে প্রায়শ দেখা যেত। মনে মনে তিনি নিজের এক ‘সভ্যতা-বিবর্জিত’ আত্মছবি নিজের কাছেই তৈরি করে নিয়েছিলেন যেন।
১৮৯৩ সালে মূলত নানা বাস্তব সমস্যার ঘাত-প্রতিঘাত, দীর্ঘস্থায়ী অনটন, পারিবারিক দায়িত্বপালনের অপারগতার অনুযোগ আর ক্ষোভে বিপর্যস্ত অবস্থায় তাঁর ড্যানিশ স্ত্রী মেতের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেন তিনি।
সে-বছর এক ইন্দোনেশিয়ান-শ্রীলংকান মহিলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তাঁকে আরো বিরাগভাজন করে তোলে সমাজে। আনা নামের এই মেয়েটিকে কেন্দ্রে রেখে কিছু কাজ আছে তাঁর – আড়ালে থেকে যায় এই সময়ে তাঁর জীবনে আসা অন্য মেয়েদের কথা, যাঁদের কথা তিনি প্রকাশ করেননি। একদিকে শৈল্পিক জীবনে প্রতিষ্ঠার অভাব, অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনে নিশ্চিন্তির অভাব তাঁকে আবার ইউরোপের সভ্যতার প্রতি বিতৃষ্ণ করে তোলে।
প্রতিকূল সামাজিক আবহাওয়া সহ্য করতে না পেরে ১৮৯৫ সালে শেষবারের মতো ফিরে যান তাহিতি। কিন্তু মাতায়েয়া নয়, যান পাপিতে – ফরাসি
সভ্যতা-অধ্যুষিত কেন্দ্রে যা তাঁর কাছে তিন বছর আগে সহনীয় মনে হয়নি। সেখানে ঘোড়া-চড়া দূরত্বে পুনাওয়েয়ায় ঘর তোলেন। খবর পেয়ে ছুটে আসে তাঁর প্রথম তাহিতীয় স্ত্রী তেহুরা। তেহুরা ততদিনে বিয়ে করেছে এক স্থানীয় যুবককে। কিন্তু গগ্যাঁর শরীরে বীভৎস ঘা অর্থাৎ সিফিলিসের আলামত দেখে সম্ভবত সে এবার আর ফিরে আসতে চায় না।
গগ্যাঁ আবার বিয়ে করেন। এবার এক পনেরো বছরের কিশোরীকে। তখনকার সমাজ ও সময়ের জন্য মেয়েদের এমন অল্প বয়সে বিয়ে করার দৃষ্টান্ত নিতান্ত নৈমিত্তিক আর স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। এবার ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ও তাহিতির ঐতিহ্যের পক্ষে এক রাজনৈতিক লড়াইয়ে নামেন তিনি। শিশুদের ফরাসি মিশনারি ইস্কুল থেকে বিরত করার চেষ্টা করেন। সফল হন না।
একটা হাড়ের ক্ষত তাঁকে বিব্রত করছিল। তাঁর ইন্দোনেশীয় রক্ষিতা আনাকে নিয়ে কিছু দুর্বৃত্তের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে ও হাতাহাতি করে তাঁর পায়ের হাড় ভেঙে গিয়েছিল আগেই, সারেনি পুরোপুরি। এও সত্য যে, যে-সভ্যতার প্রতি তাঁর বিতৃষ্ণা ছিল, চিকিৎসা ও 888sport app প্রয়োজনে সে-সভ্যতার আশ্রয় আর সাহায্য নিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি, আর কোনো উপায় ছিল না তাঁর।
কেউ কেউ মনে করেছেন, এই শেষ বছরগুলোতে তাঁর বিশুদ্ধ সংস্কৃতি আর অলৌকিক এক আদিম সভ্যতার অসিত্মত্বের প্রতি মোহ নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জানতে পারা যায়, এ পর্যায়ে তাঁর পায়ের হাড়ের জখম নিয়ে তিনি দারুণ সংকটে ছিলেন। পাপিতে ছাড়া ভালো হাসপাতাল এ-দ্বীপে আর কোথাও ছিল না।
আগেই দেখা গেছে সিফিলিস রোগের আলামত। মরফিন ছাড়া সেই যন্ত্রণা প্রশমনের আর কোনো উপায় নেই। সেই মরফিন যখন জুড়িয়ে দিচ্ছে তাঁর জ্বালা, তখন ছবি আঁকছেন দেদার। এ পর্যায়ের অনেক ছবি খুব সমাহিত মেজাজের। আদপে মানুষটি যা খুঁজেছেন তা-ই রেখে গেছেন তাঁর ছবিতে। এ পর্যায়ের ছবিগুলোও অসাধারণ। ছবির মডেল হিসেবে কাজ করেছে ছয় বছর তাঁকে সঙ্গ দেওয়া তাঁর দ্বিতীয় তাহিতীয় স্ত্রী পাউরা। ‘কোথা থেকে এলাম, আমরা কে, কোথায় চলেছি?’ (১৮৯৭) শিরোনামের ছবিটি 888sport live chatজগৎকে আশ্চর্য নাড়া দেয় তখনই। বুদ্ধের বাণীর সঙ্গে আশ্চর্য সাযুজ্যময় এই মাস্টারপিস ছবিটি এঁকেছিলেন জন্ম-মায়া-মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখেই।
গগ্যাঁ মরতেই এসেছিলেন তাহিতি, অনটন-অসুস্থতা তাঁর পিছু ছাড়েনি। হাসপাতালে না থাকা অবস্থায় কেবল তিনি কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর স্ত্রী পাউরা এক কন্যাসমত্মান জন্ম দেয় – শিশুটি মারা যায়। এই মৃত্যু যে আসন্ন, সে-কথা গগ্যাঁ শিশুটির জন্মের আগেই যেন দৈবভাবে আঁচ করতে পেরেছিলেন – তাঁর ছবিতে এর পূর্বাভাস পাওয়া যায়।
নবজাতক কন্যার মৃত্যুশোকের গভীর বেদনাকে অমরতা দিয়েছেন তাঁর ছবিতে। এবং তাঁর সদ্যোজাত শিশুকন্যার মৃত্যুর পরে সিফিলিসে গুরুতর অসুস্থ ও আর্ত অবস্থায় একপর্যায়ে ১৮৯৮ সালে তাড়িত হয়েছেন আত্মহননে। মরেননি তিনি। মৃত্যুও যে তাঁকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক – এই বোধ এক ধরনের পুনরুজ্জীবনের কাজ করে যায় এর পরে।
১৯০০ সাল থেকে এক 888sport live chat-পত্রিকার সম্পাদক হন নিজেই। তাঁর সাংবাদিক বাবা – যাঁকে তিনি শিশুকালে দেখেননি, তাঁর পথ আশ্চর্যভাবে চিনে তিনি এবার পাপিতে শহরে সাংবাদিকতা শুরু করেন। নিজের হাতে লেখা ও ছবি-আঁকা পত্রিকা। পত্রিকার নাম দ্য স্মাইল। গগ্যাঁর প্রতিবাদী সত্তা ও শেস্নষাত্মক রসবোধের পরিচয় ছড়িয়ে আছে এর পাতায় পাতায়।
১৯০১ সালে সম্ভবত আর্থিক সংকট আর সৃজনের তাড়নায় নিজের সহায়সম্বল বিক্রি করে আরেক পলিনেশীয় দ্বীপ মার্কেসাসে পাড়ি জমান এবং সেখানে একটি দোতলা কুটির বানিয়ে থাকা শুরু করেন। এসেছিলেন 888sport live chatের আর শান্তির খোঁজেও। এই তল্লাটের 888sport live chatকলা তাঁর মনে ধরেছিল।
ভালো হাসপাতাল ছিল না। জানতেন সিফিলিসে তিনি মরতে যাচ্ছেন। তবু জীবনের শেষ সময়েও 888sport live chatচর্চা থেকে তিনি সরে আসেননি। সংসার, সমাজ আর 888sport live chatজগৎ থেকে বিবর্জিত অবস্থায় এবং সিফিলিসের ঘা সারাশরীরে ছড়িয়ে পড়ার দিনগুলোতেও তিনি অসাধারণ সব ছবি আঁকেন – যদিও মানুষ হিসেবে তাঁর মানসিক ভারসাম্য হয়তো ধসে গিয়ে থাকবে। এমনই এক পরিস্থিতিতে ছয় বছরের দুঃখদিনের সাথি পাউরা আর থাকতে না পেরে তাঁকে ছেড়ে চলে যায়।
কিন্তু হা-হুতাশ, আর্তি প্রকাশ বা অরণ্যে রোদন গগ্যাঁর স্বভাবে ছিল না। বরং আরো ঝাঁঝালো, কষায় রসিকতা পেয়ে বসল তাঁকে। যৌনতা নিয়ে খ্রিষ্টধর্মের বিশুদ্ধতাবোধকে চূড়ান্ত মুখ ব্যাদান করে চরম উপহাস করে গেছেন তাঁর অন্তিম জীবনের কাজে – শেষ নিশ্বাস অবধি। যতই ব্যভিচারী হোক না তাঁর যৌনজীবন এই সময়, সিফিলিসে কাতর মানুষটিকে যেন সুস্থ এক মানুষ হিসেবে আর চেনা যায় না, তবু 888sport live chatের কাছে তাঁর সমর্পণ সবসময় আশ্চর্য রকমের সত্য ছিল।
তীব্র কষায় সাংবাদিকতার ফেরে একটি বাদানুবাদে জড়িয়ে জেলে কাটান কিছুদিন। টাকার অভাবে তাহিতি গিয়ে আপিল করতে পারেননি। অবশেষে ১৯০৩ সালের ৮ মে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে সিফিলিটিক হার্ট-অ্যাটাকে মৃত্যু এসে যেন বাঁচিয়ে দেয় ভয়ানক অসুস্থ এ-888sport live chatীকে।
আশ্চর্য এই যে, তাঁর শেষ যে-ছবিটি পাওয়া যায় – তাঁর মৃত্যুর পরে মার্কেসাস দ্বীপে তাঁর কুটিরে – সেটি ফেলে আসা শহর ব্রিতানির একটি জনমানবহীন শীতকালীন তুষারপাতের দৃশ্য। সেখানে তাহিতি ও মার্কেসাস নিয়ে আঁকা তাঁর 888sport app বিখ্যাত ছবির বিপরীতে জীবনের উত্তাপ আর রঙের উজ্জ্বলতা গরহাজির। মানবশূন্য এক দেশ নীল হয়ে আছে হিমজাড়ে – একটি জমে-যাওয়া বসতির নিথর নীরব নির্জন দৃশ্য।
কিন্তু এসবের মধ্যে অমরত্ব পেয়ে যায় তাঁর কাজ। যার আভাস পাওয়া যায় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, মৃত্যুর কিছুদিন আগে, তাঁর কাজ সম্পর্কে কিছু বিক্রিবাট্টার নিশ্চিত খবর ফ্রান্সে তাঁর করণিকের কাছ থেকে মেলার মধ্য দিয়ে।
নোয়া নোয়ার ইংরেজি 888sport app download apk latest version প্রকাশিত হয় গগ্যাঁর মৃত্যুর ষোলো বছর পরে – ১৯১৯ সালে। এ-বইয়ের খুব সংক্ষিপ্ত একটি মুখবন্ধ লেখেন বিখ্যাত ইংরেজ কথা888sport live footballিক সমারসেট মম। গগ্যাঁর জীবনকাহিনির অনুপ্রেরণায় গড়া চরিত্র এক চিত্র888sport live chatীকে কেন্দ্রে রেখে লেখা তাঁর বিখ্যাত 888sport alternative link দ্য মুন অ্যান্ড সিক্সপেন্সও সে-বছরেই প্রকাশ পায়। মম গগ্যাঁর মৃত্যুর পরপরই তাঁর ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠলেও 888sport alternative linkের রসদের খোঁজে তাহিতিতে গিয়েছিলেন এর এক দশক পরে। খুঁজে পেয়েছিলেন পাপিতে শহরে গগ্যাঁর গৃহ। নোয়া নোয়ার ভূমিকায় সে-কথা লিখে মম জানান, গগ্যাঁর নির্মিত কাঠের দরজায় ইভের বিখ্যাত ভাস্কর্যটি তিনি অল্প দামে সংগ্রহ করে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন।
ছয়
নোয়া নোয়ায় খুঁজে-পাওয়া স্বর্গরাজ্য আমাদের উষ্ণতা দেয়। কিন্তু আদপে গগ্যাঁর বয়ানের সব কথাই পুরোপুরি সত্য কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়।
নোয়া নোয়ার পান্ডুলিপি তিনি তাহিতি থেকে ফিরে আগস্ট ১৮৯৩-এ সে-বছরের নভেম্বরের প্রদর্শনীর আগে তৈরি করেছেন লেখক শার্ল মরিসকে সঙ্গে নিয়ে। সুতরাং এ-বইয়ের একাধিক খসড়া ছিল। প্রথমটা তাঁর নিজস্ব কাঁচা খসড়া, ছিল আরো একাধিক খসড়াও। সচিত্র সংস্করণের কাঠখোদাইয়ের জন্য জায়গা রেখে একটি পান্ডুলিপি তিনি তাহিতি নিয়ে যান ১৮৯৫ সালে – যেটি মরিসের হাতে পৌঁছয় না। এবং ১৮৯৫ সালে মরিসের এককভাবে সম্পাদিত ও পরিমার্জিত আরো কিছু খসড়া, যা গগ্যাঁর হাতে পৌঁছয়নি, যার একটি এখন লুভ্র্ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মরিসকে সঙ্গে নিয়ে লেখার উদ্দেশ্য ছিল দুটি। এক, তিনি নিজেকে লেখক মনে করতেন না, তাই লেখা পরিমার্জনার জন্য একজন লেখক দরকার ছিল তাঁর। দুই, নিজেকে লেখার ব্যাপারে ‘আদিম’ ও ‘অপরিশীলিত’ হিসেবে ধরে নিলে মরিসের লেখার পাশাপাশি তাঁর লেখার যে-কন্ট্রাস্ট তৈরি হয়, তা-ই তাঁর ১৮৯৩ সালের প্যারিস-প্রদর্শনীতে ছবিগুলো বোঝার জন্য জরুরি মনে করেছিলেন।
কিন্তু আমরা যখন নোয়া নোয়া পড়ি তখন নিশ্চয়ই একে গগ্যাঁর একক বয়ান হিসেবেই পড়ি – সময়ের সঙ্গে পালটে যাওয়া এবং দুজনের ভিন্ন পরিমার্জনায় অমসৃণ ও ‘অমীমাংসিত’ এক পান্ডুলিপি হিসেবে নয়। আদপে মরিস তাঁর সম্পাদনায় গগ্যাঁর স্বভাবসিদ্ধ যৌনতাবোধের সূক্ষ্ম আর স্পষ্ট জায়গাগুলোকে অনেক সময় ঘষেমেজে মাত্রাতিরিক্তভাবে পালিশ করে দিয়েছেন।
গগ্যাঁর ব্যাপারে এমন সমালোচনা আছে যে, তিনি নিজেকে একদর্শী সমাজসিদ্ধ যৌনতার ছবিতে আবদ্ধ রেখেছেন। অনেকে মনে করেন, ব্যক্তি গগ্যাঁর যৌনতাবোধের জটিলতার সবটুকু তিনি তাঁর ছবিতে হাজির করতে পারেননি। যদিও তিনি রূঢ়ভাবেই তৎকালীন প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের বিপরীতে 888sport promo codeদেহকে একই সঙ্গে যৌনতা, সৌন্দর্য আর ঐশ্বর্যের আকর হিসেবে দারুণ সহৃদয়তার সঙ্গে তাঁর ছবিতে তুলে ধরতে কখনো পিছপা হননি।
আবার একই সঙ্গে মনে রাখার বিষয় এই যে, ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বরাবরই ‘আদিম’ সংস্কৃতির ওপর যৌনতার ব্যভিচার, স্বেচ্ছাচারিতা বা অতিযৌনতার আরোপিত লেবাস ছিল, যা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত নয়। নানাজনের নানা লেখায় ও 888sport live chatসৃষ্টিতে এর প্রতিফলন আমরা দেখি। গগ্যাঁর ছবি ও ভাস্কর্যগুলোও হয়তো তা থেকে মুক্ত নয়।
তবে সমালোচনার বিষয় যদি 888sport promo codeদেহকে যৌনতার আধার হিসেবে দেখা হয়, তবে তা গগ্যাঁর ক্ষেত্রে তাহিতি জীবনেই শুরু হয়েছিল – এমন নয়। 888sport promo code ও যৌনতাবোধের বিষয়গুলো তাঁর ছবিতে একমাত্রিকও নয় – নানা সময়ে নানাভাবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কামনা এবং কল্পনামিশ্রিত প্রেমের, বেদনার টানাপড়েনের ছাপ এতে পড়ে থাকবে।
তবে তাহিতির ছবিতেই তিনি মূলত 888sport promo codeকে মহাবিশ্বের প্রজ্ঞা, প্রেম, সৌন্দর্য, বেদনা, আরাধনার একটি অপরূপ মাধ্যম হিসেবে হয়তো দেখতে চেয়েছেন। নোয়া নোয়া পড়লেও এ-প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
অনেক 888sport promo codeবাদী ও ঔপনিবেশিকতা বিষয়ক গবেষক গগ্যাঁর ছবির তীব্র সমালোচনা করেছেন। খোদ ইউরোপে প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে। বিষয়গুলো সরল নয়, এবং নিশ্চয়ই 888sport live chat এবং ইতিহাসবোধের এক খোলা ও পূর্ণ দৃষ্টির দাবি রাখে।
দ্য ম্যারেজ অব লোতি (১৮৮০) – আদিম সভ্যতা নিয়ে লোতির এই রোমান্টিক লেখার মধ্যে যে হাতছানি ছিল, তা-ই গগ্যাঁকে একসময় টেনে থাকবে। লোতির লেখায় তাঁর ইউরোপীয় লেবাস ছিল, আর সেই সূত্রে ভিন্নতার ছাপ। লোতি নিজেকে উপনিবেশের মানুষদের থেকে আলাদা করে ভেবেছেন। গগ্যাঁ কিন্তু নিজের মধ্যকার এই ভিন্নতাবোধকে ছাপিয়ে যেতে চেয়েছেন তাহিতি সমাজে এসে। কিন্তু আদপে, কখনো তিনি সভ্যতার উজানে দাঁড়-বাওয়া একরোখা ব্রাত্য নাবিক, কখনো সভ্যতার জোয়ারে ভেসে যাওয়া বা এমনকি গা-ভাসানো মানুষ। এই দ্বৈত সত্তা আর প্রবণতা দিয়েই তাঁকে বুঝতে হবে। তাঁর স্ত্রী তাহামানা সম্পর্কে তিনি জার্নালে বলেন,
তেহুরা কখনো প্রজ্ঞা আর স্নেহে উথলে-ওঠা, কখনো দুষ্টুমি আর রসিকতায় মেতে ওঠা এক মানবী। যেন দুজন ভিন মানুষ, অথবা আরো অজস্র মানুষ যেন তার ভিতরে বাস করে। তারা একে অপরের পাশাপাশি, ঘেঁষাঘেঁষি হয়ে আছে, একে অপরকে ডেকে আনে তারা; অসম্ভব দ্রম্নত জায়গা পাল্টাপাল্টি করে নেয়। তেহুরা পরিবর্তনশীল নয়; সে একের ভিতর দুই, তিন, চার, অসংখ্য – সে এক প্রাচীন জাতির সমত্মান।
কাজেই গগ্যাঁর অসিত্মত্বের দ্বৈধতা বা ডুয়ালিটি একটি নড়বড়ে অসিত্মত্বের ইঙ্গিত কিনা, নাকি তাঁর স্বরূপের একটি দিক, তাও ভেবে দেখার বিষয়।
আবার অন্যদিকে ঔপনিবেশিক শোষণের ইতিহাসে তাঁকে গড়পড়তা একজন শোষক হিসেবে দেখা যায় না। কারণ সেই জীবনকে দুই হাতে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য তাঁর চেষ্টা সফল না হলেও তাঁর আন্তরিকতা আমাদের দৃষ্টি এড়ায় না। যে-আলোকিত যুগ তাহিতি থেকে কেড়ে নিয়ে থাকবে ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তি, সেই আলোকিত যুগই যেন নির্মাণ করেন তিনি 888sport live chatীর দিব্যদৃষ্টি দিয়ে। মিশিয়ে দেন সেইসঙ্গে তাহিতি, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং 888sport app নানা ধর্মের লৌকিক গাথার আঙ্গিক।
১৮৯৩ সালে যখন তিনি তাহিতি ছাড়েন প্রথমবারের মতো, তখন লিখেছিলেন, ‘কিছু জরুরি পারিবারিক কারণে’ তাঁকে চলে যেতে হচ্ছে। যা বলেননি তা হলো – অনেক দিন ধরে তিনি মারাত্মক অসুস্থ। বারবার ফ্রান্সের সরকারকে বলে শেষ পর্যন্ত প্যারিসে ফেরার টিকিট পেয়েছেন।
এছাড়া নোয়া নোয়ার বেশকিছু অংশ জুড়ে আছে তাহিতির লৌকিক ধর্মবিশ্বাসের এক অনবদ্য পৌরাণিক কল্প-ইতিহাস – সমৃদ্ধ সেসব গল্প এবং দারুণ সুলিখিত! গগ্যাঁ উলেস্নখ করেছেন, তাঁর তাহিতির স্ত্রী তাহামানা এসব গল্প তাঁর কাছে হাজির করেছে। কিন্তু সে-নিয়ে গবেষকদের তর্ক আছে। তেরো বছর বয়সী এক মেয়ের পক্ষে ঔপনিবেশিক শাসনে দ্রবীভূত এক সংস্কৃতির এমন গাঢ়তা, মননশীল পাঠ কি ধরে রাখা সম্ভব? হয়তো তা গগ্যাঁরই আংশিক সৃষ্টি? গল্পের ভেতরে গল্প, স্তরে স্তরে ছড়ানো লৌকিক দেবদেবীর কাহিনিগুলো মনে করিয়ে দেয় আদিম এক কৃষ্টিকেই। তাহিতির মাওরি জাতির দেবতা-উপদেবতাদের ভাস্কর্য ছড়ানো রয়েছে সারা দ্বীপে। এখান থেকেও কি তিনি পেয়ে যান কল্পনার রসদ? আদপে একজন 888sport promo codeর আত্মার ভেতরে তিনি তুলে ধরেন তাহিতির মহাবিশ্ব আর 888sport apk-ধারণা, ধর্মবিশ্বাস – যেন ইচ্ছা করেই।
এমন অনেক সত্য-অসত্য-অর্ধসত্য মিলেমিশে কল্পনার একটি অপরূপ জগৎ জায়গা করে নেয় তাঁর এই পর্বের ছবিতে, এবং সেইসঙ্গে এই ছবিগুলোকে চিনিয়ে দিতে চাওয়া নোয়া নোয়াতে।
তাই হয়তো বলতে হবে, নোয়া নোয়া ঠিক জার্নাল নয় – এটি সম্ভবত বাস্তব আর কল্পনার পরিণয়ের রূপরেখা, যা একমাত্র তিনিই সৃষ্টি করতে পারতেন। তাঁর ভাস্কর্যের মতোই পালিশ-করা জিয়ন্ত এক 888sport live chat যেন।
তাই সবকিছু জানার পরও 888sport live football হিসেবে এর এক আলাদা তাৎপর্য থাকে পাঠকের কাছে। যে-নান্দনিক স্বর্গরাজ্য তিনি রচনা করতে চেয়েছেন তাঁর 888sport live chatে – নিজস্বতায় উজ্জ্বল, ঔপনিবেশিক সভ্যতা-বর্জিত, অকৃত্রিম – আঁকতে চেয়েছেন ‘আদিম’ মানুষের বেলাভূমির যে রোদেলা চিত্র – তা হয়তো হুবহু বাস্তব নয়, বরং অবাস্তব বলা চলে। কিন্তু তা তো আমাদের কেজো কল্পনাহীন চোখে। শৈল্পিক সত্যের জগতে হয়তো তা-ই সত্য। কারণ বাস্তব রূপের আড়ালে চেতনার অরূপ প্রিজম অপরূপভাবেই কাজ করে যায়। আর অদেখা কিন্তু গভীর সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে অমোঘভাবে প্রকাশ করে। যাঁরা তা পারেন তাঁরাই তো 888sport live chatী। r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.