পাঠপরিক্রমণ থেকে লেখালেখির মিলিত ঐকতান

হেমন্তবালা দেবীকে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘আমার জীবনটা তিন ভাগে বিভক্ত – কাজে, বাজে কাজে এবং অকাজে।’ বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘কাজের দিকে আছে ইস্কুলমাস্টারি, লেখা, বিশ্বভারতী ইত্যাদি, এইটে হলো কর্তব্য বিভাগ। তার পরে আছে অনাবশ্যক বিভাগ। এইখানে যতকিছু নেশার সরঞ্জাম। কাব্য, গান এবং ছবি।’ (১৪ জুন, ১৯৩১) অনেকটা একই সূত্র ধরে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে আরেকটি চিঠিতে লিখেছিলেন – ‘বেশিদিন বেঁচে থাকলে জীবনের এক এক মহলের বাতি নেবে, দরজা বন্ধ করে আসে। এখন লেখা এবং গান দুটোই ক্লান্ত হয়ে এসেছে। বাকি আছে আঁকা। তাঁর কোনো স্থায়ী মূল্য আছে বলে মনেই করিনে – বকশিশ পাবার আশা রাখিনে মনে। খেলাচ্ছলে বেলা কাটাবার সঙ্গিনী ঐ চিত্রকলা।’ (২৬ জুলাই, ১৯৩৫)। পরের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, ওই চিত্রকলাও তাঁর জীবনে শুধু বেলা কাটাবার সঙ্গিনী হয়ে আর থাকেনি, বরং সেটি হয়ে উঠেছিল তাঁর জীবনের এক ‘স্বরচিত দ্বিতীয় ধারা’।

আমৃত্যু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঠিকই, পেয়েছিলেন তারকাখ্যাতি; কিন্তু তাঁর লেখালেখির বাগান কখনো শুকিয়ে যায়নি। 888sport app download apk তো নিয়মিতই লিখেছেন; রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে শিশিরকুমার ভাদুড়ী, সত্যজিৎ থেকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে 888sport live লিখেছেন; লিখেছেন 888sport sign up bonusকথা; পত্রিকা-সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন অর্থাৎ তাঁর জীবনের একটা বড়ো সময় তিনি এই রচনাকর্মের নির্মাণের পেছনে সময় দিয়েছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হয়ে উঠেছিল? শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘ছবিতে যাঁরা অভিনয় করে, দূরত্বের মায়া মাখানো থাকলে তাঁদের আকর্ষণ আরো বেড়ে যায়। … এই পরিমণ্ডলের মধ্যে থেকেও যদি কেউ ভাবেন যে মায়াটা তিনি ভেঙে দেবেন, কাজটা তাহলে তাঁর পক্ষে তত সহজ হয় না।’ কেন সহজ হয় না? – সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শঙ্খ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘যে-চল্লিশ বছর ধরে সৌমিত্র অভিনয় করেছেন সেই সময়টায় সংস্কৃতির গোটা জগতেই ছড়িয়ে পড়েছে এই মায়া বাড়িয়ে তোলার কৃত্রিম এবং চিৎকৃত আয়োজন। মিডিয়া বিস্ফোরণের এই যুগ। মিডিয়া-নির্ভর এই যুগ। নিজের কাছে বড় রকমের একটা পরীক্ষায় তাই দাঁড়াতে হয় আজ যে-কোনো 888sport live chatীকে।’ পরীক্ষাটা আদতে কীসের পরীক্ষা? শঙ্খ ঘোষ তাঁর মতো করে উত্তর দিয়েছেন, ‘সেই পরীক্ষা হলো : বৃত্তের মধ্যে থেকেও কীভাবে বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারি সহজে, বাঁধা না পড়ে। সেই পরীক্ষা হল : নিজের শর্তেই কীভাবে চলতে পারি নিজে।’ এরপর শঙ্খ ঘোষ সিদ্ধান্ত টানছেন এইটে বলে যে : ‘সেই শক্ত কাজটা সৌমিত্র করতে চেয়েছিলেন মনে হয়। পরিমণ্ডলের চাপে নয়, মনে হয় নিজের শর্তে তিনি চলতে পেরেছেন তাঁর 888sport live chatজগতে।’ আমরা কীভাবে তাঁর সেই চলতে পারাটা বুঝে নিতে পারি? ওই যে সৌমিত্র তাঁর খ্যাতির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেছিলেন –    ‘সংসারে আর পাঁচটা কাজে যাঁরা অগ্রণী, কবি, 888sport live chatী, বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক তাঁদের সকলকে ঘিরেই যদি এমন পাগলামির ঢল নামত তাহলেও আমরা নিজেদের এতটা বিচ্ছিন্ন বোধ করতাম না। তাঁদের সকলের প্রাপ্য একা চুরি করার অপরাধবোধে পীড়িত হতাম না। কিন্তু তাও তো ঘটতে দেখি না। তাই এই হুজুগ সাগর মন্থন করে ওই যে খ্যাতির অমৃত (?) তা মুখের কাছে অবধি তুলেও আস্বাদ করতে রুচি হয় না।’ 

আবার এটা থেকে খুব সহজেই এই সিদ্ধান্ত টানা উচিত হবে না যে, খ্যাতি জিনিসটা তিনি উপভোগ করেননি; অবশ্যই করেছেন। কিন্তু সেইসঙ্গে এইটেও বুঝতেন যে ওটা কোনো ‘উজ্জ্বল’ বস্তু নয়। বরং রবীন্দ্রনাথ যে বলেছিলেন, ‘ওতে অন্তরাত্মার কিছুমাত্র ক্ষুধানিবৃত্তি হয় না, কেবল তৃষ্ণা বেড়ে ওঠে।’ এই সত্যিটা সৌমিত্র নিজের উপলব্ধি দিয়ে, অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন। সে-কারণে খ্যাতির মাদকতায় অবসাদ বোধ করতেন, শান্তি পাননি বরং শ্রান্ত হতেন। রবীন্দ্রনাথ খুব নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন, ‘খ্যাতির মধ্যে … একটা মাদকতা আছে … সর্ববিধ মাদকতার মতো খ্যাতির মাদকতায়ও ভারী একটা অবসাদ এবং শ্রান্তি আছে।’ কথাটা মর্মে-মর্মে টের পেতেন সৌমিত্র। আর সে-কারণেই এর হাত থেকে উদ্ধারের পথটা তিনি নিজের মতো করে খুঁজে ফিরেছেন। খোলাখুলি এইটে স্বীকার করে নিতে দ্বিধা হয়নি তাঁর – ‘খ্যাতির কড়া আলোয় আমার মতো মানুষের জীবনে অনেকটা সময় কেটেছে ও কাটছে, অতএব সেই আলোয় অবলোকিত আমার ওপরও যে আত্মজীবন প্রদর্শনের চাপ থাকবে এ তো অবধারিত।’ কিন্তু সেই অবধারিত ব্যাপারটাকে একটা সাম্যাবস্থায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন, কেননা নিজের সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল – ‘আমি আজো শিক্ষার্থী।’ 888sport live chatের যেসব শাখায় তিনি বিচরণ করেছিলেন, তার প্রতিটি শাখায় তিনি নিজেকে ওই শিক্ষার্থীই মনে করতেন, তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।

এখানে বলে নেওয়াটা ভালো যে, অভিনয়টা ছিল সৌমিত্রের একেবারে রক্তের গভীরে, পারিবারিক সূত্রেই পাওয়া। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাবা আর ঠাকুরদা দুজনেরই ছিল মঞ্চে অভিনয় করার দুর্নিবার আগ্রহ। আমাদেরও নাটক করতে উৎসাহিত করা হত।’ (আমার কথা)। এই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল পারিবারিকভাবে গ্রন্থপাঠের অদম্য এক নেশা। বাংলা 888sport live football-

সংস্কৃতি ও থিয়েটারের বিস্ময়ব্যক্তিত্ব শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘তাঁর [সৌমিত্র] লেখালিখির রত্নভাণ্ডারে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি যখন গভীর অনুধাবনে, চিন্তায়, যত্নে এক একটি লেখায় এক একটি বিষয় বিশ্লেষণ করেছেন, বা নিজের অন্তরঙ্গ ভাবপ্রবাহেই নিশ্চিন্তে ভর করেছেন, তাঁর ভাষাপ্রয়োগে তাঁর কবিসত্তা ও চিত্রীসত্তা যুগপৎ মূর্ত হয়েছে।’ কথাটা সত্যি, যদিও সৌমিত্রের তরফ থেকে এরকমও একটি বয়ান রয়েছে, যাকে উপেক্ষা করা মুশকিল – ‘আমি স্কলার বা পণ্ডিত নই, তাত্ত্বিকও নই। তাই সুশৃঙ্খল বিদ্যাভ্যাসের যে সুফল তা আমার আয়ত্তগত নয়। সেই ফলের অন্তর্গত জ্ঞানতরুর বীজও তাই অপরাপর মানুষের চিত্তক্ষেত্রে বপন করা আমার সাধ্যের অতীত। বইয়ের রাজ্যে আমার যেটুকু ভ্রাম্যমাণতা তাকে লক্ষ্যহীন পথিকের রসতৃষ্ণা ছাড়া আর কিছু বলা শক্ত।’ এই যে বইয়ের রাজ্যে 888sport slot game সে-কথা আমাদের জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘পিসির বাড়িতে বিশাল লাইব্রেরি, মাসিদের বাড়িতে বইয়ের সমারোহ তাঁকে অল্প বয়স থেকেই বই ও লেখার জগৎকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল।’ কী কী বই ছিল সেসব? ছিল – রাজকাহিনী, নালক, বুড়ো আংলা, টুনটুনির বই, আবোল তাবোলের জগৎ, যা কি না তাঁর আত্মগত অভিজ্ঞতার জগৎকে সমৃদ্ধ করেছিল। সৌমিত্রের কাছ থেকেই আমরা জানতে পারছি, প্রমথ চৌধুরীকে নাকি শিশিরকুমার ভাদুড়ী বলেছিলেন, ‘কিছু মানুষ আছেন যাঁরা 888sport live football লেখেন। আর কিছু লোক আছেন, যাঁরা 888sport live football বলেন। আমি দ্বিতীয় গোত্রে পড়ি। 888sport live football বলাটা আমার কাজ, লেখাটা নয়। যতদিন বাঁচব, সেই কাজটাই করে যাব।’ যদিও প্রথম কাজটাই সৌমিত্র করেছেন কিন্তু এর মধ্যে জ্ঞানের বিস্তার যেমন আছে, তেমনি আছে ব্যক্তিত্বের মহত্ত্ব। যাকে বলতে পারি শৈল্পিক পৌরুষ। রবীন্দ্রনাথের মতে, ‘পৌরুষের মধ্যে শক্তির আড়ম্বর নেই, শক্তির মর্যাদা আছে; সাহস আছে, বাহাদুরি নেই।’ সৌমিত্রের এই শক্তি আর সামর্থ্যরে নেপথ্যে রয়েছে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর শিক্ষা ও সাহচর্য। হেমেন্দ্রকুমার রায়ের মতে, ‘বাংলা রঙ্গালয়ে … শিশিরকুমারের … অপূর্ব দান হচ্ছে, তাঁর শিক্ষকতা। এই শিক্ষকতার শক্তি … অসাধারণ।’ সেই শিশিরকুমারের শিক্ষার সেই অসাধারণত্বটা সৌমিত্রকে দেখে আমরা বুঝতে পারি। বলা যায়, এই শিক্ষাটাই তাঁকে পড়াশোনার জগৎ থেকে, অভিনয়ের রুপালি মায়াকে পাশ কাটিয়ে লেখালেখির জগতে নিয়ে এসেছিল। বইয়ের পড়াটা তো তাঁর সঙ্গে ছিলই, সেইসঙ্গে ছিল জীবনের প্রতি 888sport apk download apk latest versionবোধ। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কী রকম একটা মনে হয়, আমাদের জীবন থেকে সেই 888sport apk download apk latest version, সেই বিস্ময় এবং সেই মুগ্ধতা ক্রমশ ক্ষয়ে আসছে। আমরা কি অন্যের কথা মন দিয়ে শুনি? শোনার চেষ্টা করি?’ এই ক্ষয়গুলো অবলোকন করেই তিনি নিজেকে গড়ে নেবার অন্তর্গত তাগিদ অনুভব করেছিলেন। কী কী পড়েছিলেন তিনি এই প্রশ্ন যেমন মনের মধ্যে জেগে ওঠে, তেমনি কেমন করেই-বা পড়ছিলেন –    সেই প্রশ্নটা অপ্রকাশিত থাকে না।

সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, ‘নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় আমাদের কলেজে পড়াতেন। ছেলেবেলা থেকেই আমি পড়তে ভালোবাসতাম। কিন্তু 888sport live footballের সূক্ষ্মতর বিষয়গুলির মর্ম কীভাবে উপলব্ধি করতে হয় তা আমরা তাঁর কাছ থেকেই শিখলাম। বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ঘোরার একটা নেশা হয়েছিল। আমরা পালা করে করে জাতীয় গ্রন্থাগার, ব্রাহ্ম সমাজ লাইব্রেরি আর রামমোহন লাইব্রেরিতে যেতাম। এর ফলে জ্ঞানার্জনের একটা বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল।’(আমার কথা)। অর্থাৎ শুধু শিশিরকুমার নয়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাও তিনি 888sport app download for androidে রেখেছিলেন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরেক কৃতী ছাত্র 888sport live footballিক-অধ্যাপক শঙ্খ ঘোষ  তাঁদের ওই শিক্ষকের সফলতার কারণ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘শিক্ষকের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বড়োরা অনেক সময় ভুলে যান যে চার দেয়ালের মধ্যে রুদ্ধ মুখগুলিই ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ সত্তা নয়। ভুলে যান তাদের একটা সজীব পরিচয় আছে।’ কিন্তু এসবের বিপরীতে ‘নারায়ণবাবু ভেঙে দিতে পেরেছিলেন সম্পর্কের এই বানানো খোলস। তাঁর ছাত্রদের তিনি স্পর্শ করতে পেরেছিলেন ব্যক্তিগতভাবে, সুখ-দুঃখময় মানুষ হিসেবে, তাদের বয়সের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। ক্লাসের বাইরে ছেলেমেয়েদের রাজনৈতিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক সংকটের অন্তরঙ্গ হতে জানতেন বলেই খুব সহজ ছিল তাঁর উপর নির্ভর করা, তাঁর সাহায্য নেওয়া, তাঁকে আত্মীয় বলে বোধ করা।’ আর এরপরই শঙ্খ ঘোষ সিদ্ধান্ত টেনেছেন এইটে বলে যে, ‘একজন শিক্ষক যোগ্য হয়ে ওঠেন এইভাবেই, তাঁর ছাত্রের ভিতরে এই ব্যক্তিকে জাগিয়ে তোলার মধ্যেই। তখন তিনি শিক্ষকমাত্র থাকেন না, হয়ে ওঠেন 888sport live chatী।’ 

বলা যায়, শিক্ষকদের প্রভাবেই তিনি অভিনয়জগতের ব্যস্ততার মধ্যেও লেখালেখিতে জড়িয়ে থেকেছেন। সৌমিত্র বলেছেন, ‘আমার ব্যস্ত কর্মজীবনেও আমি  লেখালিখি ছেড়ে দিইনি। ১৯৬১ সাল থেকে আমি এক্ষণ-এ লিখে চলেছি। স্কুল ও কলেজজীবনের মাঝামাঝি সময় থেকে আমি 888sport app download apk লিখতে শুরু করি। আমার বেশ কয়েকটি 888sport app download apkর বই থাকলেও আমার মনে হয়, 888sport app download apkর জন্য পুরো সময় দিতে পারলে আমি আরো ভালো লিখতে পারতাম। একজন অভিনেতার ভাষা প্রয়োগের ওপর নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। সেদিক থেকে বিচার করলে 888sport app download apk আমার অভিনেতা সত্তাকে সমৃদ্ধ করেছে।’ (আমার কথা : ১৯৯১)। 888sport live chatের বিভিন্ন মাধ্যমের এই পারস্পরিক সংযুক্তির গুরুত্বকে তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আরো খানিকটা অবসর পেলে 888sport live footballের জগতে পরি888sport slot gameটা যে সুখকর হতো সেটিও নানাভাবে আমাদের জানিয়ে দিতে ভোলেননি। তিনি খানিকটা অভিমান নিয়েই বলেছিলেন, ‘কোনো ভাষার বিরুদ্ধে আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু বোম্বে থেকে যে-ধরনের সব ফিল্ম বেরিয়ে আসে সেগুলি আমি বরদাস্ত করতে পারি না। … বোম্বের ছবিতে অভিনয় করার অনেক প্রস্তাব আমার কাছে আসত। সেই আমলের বাংলা ছবির উৎকর্ষের কারণে আমি ওইসব ভয়ংকর ছবিতে অভিনয় করার কথা ভাবতেই পারিনি। টাকা ছাড়া ওইসব ছবির আর কিছু দেওয়ার ছিল না। যৌবনের নির্বুদ্ধিতার বশে ভাবতাম, অর্থই অনর্থের মূল। এখন যখন জীবিকার তাগিদে একই ধরনের নিকৃষ্ট বাংলা ছবিতে অভিনয় করি, তখন মাঝে মাঝে অতীতের এই সিদ্ধান্তের জন্য আক্ষেপ করি। বোম্বে গেলে নিশ্চিতভাবে আরও আরামে জীবন কাটাতে পারতাম।’ (আমার কথা : ১৯৯১) আক্ষেপের মধ্যেও নিজেকে নিয়ে খানিকটা প্রসন্নতার, আত্মতৃপ্তির প্রকাশ দেখতে পাই। এটিই সৌমিত্রের অর্জন।

৪.১

যে-জীবন তিনি যাপনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই তিনি পড়াশোনার তাগিদটুকু নানাভাবে অনুভব করেছিলেন। পড়েছিলেন কমলকুমার মজুমদার। তাঁর বন্ধুদের অনেকেই কমলকুমারের রচনার ভক্ত ছিলেন। তিনিও অকপটে স্বীকার করেছিলেন –    ‘কমলবাবুর থিয়েটার করা, চিত্ররচনা – এসব যা যা করতেন তার তো ভক্ত ছিলাম আমরা। কিন্তু তাঁর প্রতিভার  যে-স্রোতটি সারাজীবন আমাকে চমৎকৃত করে রেখে দেবে তা তাঁর কথা888sport live football। বাংলা গদ্যকে   যে  এমন করে ভাবা যায়, লেখা যায়, নির্মাণ করা যায় তা তো কোনোদিন ভাবতেই পারিনি। তাঁর আগে কিংবা তাঁর পরে বাংলা গদ্যকে এমন অপূর্ব নির্মাণে আর কেউ ব্যবহার করেনি। তাঁকে অনুসরণও কেউ করেনি বলেই তো জানি। কিন্তু যারা শব্দের কারিগর তারা কমলকুমারের ভাষা ব্যবহার থেকে অনুপ্রাণিত হয় – চিরকালই হবে বলে আমার বিশ্বাস। বিশেষত কবিকুল।’ (‘কমলকুমার’)। প্রাবন্ধিক হিরণ¥য় গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কমলকুমারের 888sport live football, 888sport live chat সমসাময়িকের চোখে যে বিস্ময় এনেছিল, চাক্ষুষ করিয়েছিল সৃষ্টির যে নতুন রূপ তার উজ্জ্বলতা থেকে সরে আসতে পারেননি প্রায় কেউই। ফলে মুগ্ধতা কখনও কখনও আতিশয্যও হয়ে উঠেছে।’ কিন্তু অবাক হই এটা দেখে যে, সৌমিত্র সেই আতিশয্যের মাত্রাটা কখনো অতিক্রম করেননি। শুধুই কমলকুমারের বেলাতেই কথাটি যে খাটে তা নয়, তাঁর লেখার অন্যতম গুণ যদি বলি তা হচ্ছে এই সংযমের বোধ। এই শিক্ষাটা কমলকুমার মজুমদারের কাছ থেকেই তিনি পেয়েছিলেন, যদি বলি, খুব একটা অতিকথা হয় না। 

এই প্রসঙ্গে 888sport app download for android করি, অরুণকুমার সরকারকে এক চিঠিতে কমলকুমার লিখেছিলেন, ‘এখানে আমার একটি গল্প তোমার বিরক্তি উৎপাদনের জন্য পাঠাইলাম তবে মানিয়া লইও যে আমি ইহা ছাড়া আর কি লিখিতে পারিতাম! ইদানীং, আমার বিশ্বাস, অনেক মহৎ 888sport live footballকার আছেন, যাহারা নিয়মিত বাঙলা ভাষার মান মনোরম করিতে অজস্র আত্মত্যাগ করিতেছেন, তাহাদের সহিত একাসন আমি কখনই পাইতে পারি না; আমি অত্যন্ত গ্রাম্য গোছের।’ তিনি সেই চিঠিতে আরো লিখেছিলেন, ‘আধুনিকতা মানবিকতা, শোষণ … ব্যর্থতা, বিচ্ছিন্নতা, শূন্যতা, এসব আমার লেখার বিষয় নহে; সম্পূর্ণ ভালবাসাই আমার ধর্ম, তাই ঠাকুরের কৃপায় লিখিয়া থাকি।’ (চিঠির তারিখ : ১৮/১১/১৯৬৯)। আমাদের জীবন থেকে ক্ষয়ে যাওয়া যে-888sport apk download apk latest version, বিস্ময় এবং মুগ্ধতার কথা বলতেন সৌমিত্র, সেসবই যেন খুঁজে পেয়েছিলেন কমলকুমার মজুমদারের লেখায়।

৪.২

মার্কসীয় 888sport live footballতাত্ত্বিক এবং মননশীল প্রাবন্ধিক নীরেন্দ্রনাথ রায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে খুবই তীর্যক ধারণা পোষণ করতেন। শেষ প্রশ্ন 888sport alternative link সম্পর্কে তিনি এতোদূর পর্যন্ত  বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক দুরবস্থা শরৎচন্দ্রের ভাবপ্রবণ অন্তরকে পীড়িত করিয়াছে – ‘শেষ প্রশ্ন’ এই পীড়নের তীব্র অভিঘাত; 888sport live chatসৃষ্টির প্রেরণায় ইহা রচিত নহে।’ তাঁর মতে, শরৎচন্দ্র ‘888sport live chatস্রষ্টা’ না হয় ‘সংস্কারক’ হয়ে উঠেছিলেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও আমরা দেখি, তিনি বলেছেন, ‘প্রথম জীবনে শরৎচন্দ্র কোনোভাবেই আমার প্রিয় লেখক ছিলেন না। তার চেয়ে বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ এবং পরবর্তীকালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা পড়তে ভালোবাসতাম; তারাশঙ্কর, এমনকি বিভূতিভূষণ ও পরে সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখাও ভালো লাগত।’  কিন্তু তাঁর এই চিন্তায় যে পরিবর্তন এসেছিল, তার কথা তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন। দেবদাস 888sport alternative linkটি সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘পয়সা রোজগারের জন্য লেখা সেই আমলের অনেক বই বি888sport sign up bonusর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অথচ এই 888sport alternative linkটি যে পঞ্চাশ বছর ধরে এত জনপ্রিয় হয়ে আছে এটাই আমার কাছে এখন বিস্ময়কর মনে হয়।’ আর এই ঘটনা তাঁকে খানিকটা হলেও নাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেছেন, ‘অতএব বইটি আমি আর একবার পড়লাম। দেবদাসের আত্মবিনষ্টির একটা যুক্তিও খুঁজে পেলাম এবং সেটা আমার কাছে খুবই অকাট্য মনে হলো। আগে আমি ভাবতাম, প্রেমিককে বিয়ে করতে পারেনি, নিছক এই কারণে আত্মবিনষ্টির পথে যাওয়াটা এক ধরনের নিতান্তই বালকসুলভ, বলতে গেলে শিশুসুলভ প্রতিক্রিয়া।’ তার পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, ‘কিন্তু দেবদাস তো ছিল ১৮ বছরের একটি ছেলে। আর সেকালে বাবার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করা ছাড়া তার কোনো গত্যন্তর ছিল না। যে-সমাজব্যবস্থার দরুন সে তার ভালোবাসার মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারল না সেই সমাজব্যবস্থাকে সে ভাঙতে পারেনি। অন্য কোনোভাবে প্রতিবাদ করার উপায়ও তার ছিল না। তাই সে নিজেকেই শেষ করে ফেলল।’ তাঁর সেই বিশ্লেষণ থেকে সৌমিত্র এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছলেন যে, ‘আজকের দিনে এটাকে আপাতদৃষ্টিতে অসঙ্গত মনে হতে পারে, কিন্তু সেকালে যখন বিয়ে-থা’র ব্যাপারে বাবার কথাই সর্বদা শেষ কথা ছিল তখন এটা অসঙ্গত ছিল না। 888sport alternative linkটি ফের যখন পড়লাম এই সত্য তখন আমি উপলব্ধি করলাম। আর তার ফলেই চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে পারলাম। চরিত্রের সঙ্গে এই একাত্মতা ছাড়া কোনো ভূমিকায় অভিনয় করাই সম্ভব নয়।’ (আমার কথা)। তাঁর 888sport live footballসত্তার সঙ্গে অভিনয়সত্তার নিবিড় সংযোগের ব্যাপারটি সৌমিত্র কখনোই অস্বীকার করেননি।

৫.১

শুধুই কথা888sport live football নয়; 888sport app download apkর প্রতি সৌমিত্রের আগ্রহের কথা কম-বেশি অনেকেরই জানা আছে। তিনি নিজেও দীর্ঘ সময় ধরে 888sport app download apk রচনায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।  শক্তি চট্টোপাধ্যায় তো  বলেইছিলেন, ‘আমরা যেন ভুলে না যাই, পুলু [সৌমিত্র] একজন প্রকৃত কবি।’ 888sport app download apkর প্রতি তাঁর আগ্রহের কথা বলতে গিয়ে সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, ‘আমি তখন সিনেমা নিয়ে ভয়ংকর ব্যস্ত। 888sport app download apkর চর্চার দিকটা অত সময় দিয়ে করতে পারতাম না। পারতাম না বলে আমার মনে একটা ক্ষোভ ছিল, আছে এবং থাকবে। সব কাজই একটা সময়ে হোলটাইম-এর কাজ, সর্বসময়ের কাজ। তার মানে এ নয় যে আমি যত 888sport app download apk লিখেছি, সব, মানে কী বলব, হেলায় লিখেছি। মোটেই না। এর পেছনে, অনেক 888sport app download apkর পেছনে আমার রাতের পর রাত জাগা গিয়েছে।’ 

শুধুই 888sport app download apk রচনা নয়; 888sport app download apk-পাঠের প্রতি, তাঁর চারপাশের 888sport app download apkর গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে সৌমিত্রের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া (আশি বছরের জন্মদিনে) এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন,  “সিগনেট’ প্রেস শব্দটার যে জাদু ছিল, তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তাদের একটা নিয়মিত প্রকাশনা, মনে আছে ‘টুকরো কথা’ – সেইগুলো কী করে পাব তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম আমরা। এটা ভীষণ সত্যি যে সিগনেট প্রেস পাবলিকশেন-এর জগতে একেবারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। এবং তার প্রভাব আজও সমস্ত জায়গায় রয়েছে।’’

টুকরো কথার ইতিহাস আজকের দিনের 888sport app download apk পাঠকদের অনেকেই হয়তো জানেন না। টুকরো কথার ‘বিভাব’ সংকলনের সম্পাদক কবি সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত বলেছিলেন, “টুকরো কথা’ বাংলা ভাষা প্রকাশনার ক্ষেত্রে এক অত্যাশ্চর্য সংঘটন। ভারতবর্ষে তো নয়ই, পৃথিবীর ইতিহাসে দু-একটি বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া ঠিক এই ধরনের পাঠক-প্রকাশক সেতুবন্ধ এর আগে কখনো হয়নি, সম্ভবত পরেও না।” তিনি আরো জানিয়েছিলেন, ‘দিলীপকুমার গুপ্ত শুধু সিগনেট প্রেসের নয় 888sport app প্রকাশনা থেকে সেই মাসের উল্লেখযোগ্য বইগুলির বিজ্ঞপ্তিও নিজ খরচে ছাপতেন। শুধু ছাপতেন বললে কিছুই বলা হয় না। সিগনেট প্রেসের যে দুটি পুস্তকবিপণি ছিল, সেখান থেকে বিক্রির ব্যবস্থাও করতেন।’ সমরেন্দ্র সেনগুপ্তের মতে, “টুকরো কথা’ পাঠকচেতনা ও তাদের রুচি উদ্দীপনের যে মানসযাত্রা শুরু করে, সমসময়ে তা ছিল অকল্পনীয়। একমাত্র ডি. কে-এর মতো মহান উন্মাদের পক্ষেই এই অপরূপ রূপারোপ সম্ভব হয়েছিল, এর জন্যে তিনি প্রতিটি বাঙালি পাঠকের কাছেই চির888sport app download for androidীয় হয়ে থাকবেন।’ টুকরো কথার ইতিহাস যতোটা জানা যায়, তাতে করে  প্রথম পর্ব থেকে ৪৩তম পর্ব পর্যন্ত টুকরো কথাকার ছিলেন নরেশ গুহ। ৪৪তম পর্বটি লিখেছিলেন নৃপেন্দ্র সান্যাল।

তখনকার সিগনেটের প্রকাশনা সম্পর্কে সৌমিত্র বলেছেন, ‘তখন জীবনানন্দ বেরোচ্ছে একটার পর একটা। অমিয় চক্রবর্তী, নরেশ গুহ।’ আমরা জানি যে, সিগনেট থেকে জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন বেরোয় শ্রাবণ ১৩৫৯ (১৯৫২) সনে, 888sport app download apkর কথা ফাল্গুন ১৩৬২ (১৯৫৬) সনে, রূপসী বাংলা (জুলাই) ১৯৫৭ সালে এবং মহাপৃথিবী বৈশাখ ১৩৭৬ (১৯৬৯) সনে।

বনলতা সেন সম্পর্কে টুকরো কথায় লেখা হচ্ছে – “রবীন্দ্রোত্তর যুগে শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ। তাঁর 888sport app download apkকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘চিত্ররূপময়’। ‘তাঁর কাব্য বর্ণনাবহুল, তাঁর বর্ণনা চিত্রবহুল এবং তাঁর চিত্র বর্ণবহুল – এটুকু বললেই জীবনানন্দর 888sport app download apkর জাত চিনিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে।’ – বলেছেন 888sport app download apk সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু। আধুনিক বিখ্যাতদের মধ্যে ‘নির্জনতম’ কবি জীবনানন্দ দাশ। তাঁর বনলতা সেন প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বারোটি 888sport app download apk নিয়ে। সুরসঙ্গতি রক্ষা করে আরো আঠারোটি 888sport app download apk সংযোজিত হয়েছে এই সিগনেট সংস্করণে।”

অন্যদিকে আবার দুরন্ত দুপুর সম্পর্কে লেখা হয়েছিল – ‘হাল আমলের বাংলা 888sport app download apk বড় বেশি দুশ্চিন্তিত, মানে তথ্য আর তত্ত্বকথায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। এদিক থেকে নরেশ গুহর 888sport app download apk একেবারে অন্যরকম। কোলাহল নেই, হইচই নেই, শান্ত। যেখানে যতটুকু খুশি যতটুকু সুর সব শিশুর বিস্ময়ে অতি যত্নে কুড়িয়ে নেন। আনন্দের সঙ্গে যেমন তাঁর অন্তরঙ্গতা, তেমনি বেদনার সঙ্গেও। বস্তুত, বেদনাকে তিনি আনন্দের ভেতর দিয়েই অনুভব করেছেন।’ – এই দুটি ছোট্ট মণিমুক্তময় রেখা থেকে টুকরো কথার বৈশিষ্ট্য নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সিগনেট থেকে নরেশ গুহর দুরন্ত দুপুর প্রকাশিত হয় ফাল্গুন ১৩৫৮ (১৯৫২) সনে। অমিয় চক্রবর্তীর দূরযানী প্রকাশিত হয় বৈশাখ ১৩৫১ (১৯৪৪) সনে, পারাপার কাব্য প্রকাশিত হয় শ্রাবণ ১৩৬০ (১৯৫৩) সনে। সেই সময়কার পাঠকদের মধ্যে এইসব বই তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল। 

এদের মধ্যে সৌমিত্রও ব্যতিক্রম ছিলেন না। যদিও তিনি বলেছিলেন, ‘আবার সত্যি কথা বলতে কী, আমার যারা একদম সমসাময়িক, তাদের মধ্যে সুনীল, তারাপদ, নবনীতা এবং শক্তি। ভয়ংকরভাবে শক্তি। এরা ছিল। তাদের 888sport app download apkর আমি মুগ্ধ পাঠক ছিলাম। ওরা সত্যি সত্যি একটা বিস্ফোরণের মতো বাংলা 888sport app download apkর জগতে এসে পৌঁছেছিল।’ তাঁর এই বক্তব্যের মধ্যেও বেশ খানিকটা সত্যি লুকিয়ে আছে।

৫.২

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের একজন মুগ্ধ পাঠক। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের সময়কার সবচেয়ে বড়ো কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। আমার একজন সহৃদয় বন্ধুও শক্তি। শক্তির মদ্যপানের গল্প অনেকেই ঘটা করে বলেন। এইসব কথাবার্তা আমি অগ্রাহ্য করি। একজন কবি বা লেখককে তাঁর ফুড হ্যাবিট বা ড্রিঙ্ক হ্যাবিট দিয়ে বিচার করা যায় না। তাঁর কাজ দিয়েই বিচার করতে হয়।’ (‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়’)। শক্তির কাব্যসামর্থ্য সম্বন্ধে বলতে গিয়ে সৌমিত্র ব্যাখ্যা দিয়েছেন –    ‘তাঁর 888sport app download apkর রেঞ্জটাই বিস্ময়কর। … বড়ো কবির সমস্ত লক্ষণ তাঁর 888sport app download apkর মধ্যে ছিল। একদিকে সমসাময়িকের মুখের ভাষাকে শক্তি ব্যবহার করেছে তাঁর 888sport app download apkয়, পাশাপাশি বাংলা 888sport app download apkর ঐতিহ্যকে আত্মস্থ করে নিজের ভাষায় রূপান্তরিত করেছে।’ নিজের এই বক্তব্যের যাথার্থ্য নিরূপণ করতে গিয়ে সৌমিত্র বলেছেন, ‘এমন উদাহরণ দু-একজনই আছেন বাংলা 888sport app download apkয়। যেমন – রবীন্দ্রনাথ। তাঁর আগে পর্যন্ত যা যা লেখা হয়েছে, সব রবীন্দ্রনাথের লেখায় পাওয়া যায়। তেমনি শক্তির আগে পর্যন্ত বাংলা 888sport app download apkয় উল্লেখযোগ্য যা যা এসেছে, মধুসূদন থেকে রবীন্দ্রনাথ থেকে জীবনানন্দ – সব উঠে এসেছে শক্তির 888sport app download apkয়, অমোঘভাবে। অনিবার্যভাবে।’ শক্তির কাব্যসম্পদ সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি ছিল অনেকটা এ-ধরনের – ‘শক্তির 888sport app download apk অনুভূতি আর শব্দের এক গভীর ম্যাজিক। … বহুদিন হলো শক্তিও নেই। নেই, কিন্তু তাঁর 888sport app download apkর শক্তি অনিঃশেষ। শক্তির 888sport app download apk পুরোনো হয় না।’ (‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়’)। প্রাবন্ধিক অশ্রুকুমার সিকদারের মতে, শক্তি ছিলেন ঠিক সেই জাতেরই একজন কবি যিনি ‘অসংখ্য শব্দের প্রাণ আমি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছি’ বলে দাবি করতে পারেন। তাঁর মতে, ‘প্রত্ন-আধুনিকদের অনেক উত্তরাধিকার শক্তির ওপরে বর্তালেও, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এই স্বাধীনতা-পরবর্তীকালের নব্য-আধুনিক কবি অনেক দিক থেকে স্বতন্ত্র। যে-আধুনিকতায় জগৎ ও জীবন বিষয়ে আনন্দ, আগ্রহ, 888sport apk download apk latest version, বিস্ময়, এমনকি কৌতূহল পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে তার জায়গা জুড়েছে বোরডম, বিরক্তি, বিতৃষ্ণা, তা শক্তির 888sport app download apkয় নেই। … ফর্মে, শব্দ-নির্বাচনে, নিজবাসভূমে সনাতন শিকড়ে ফিরে যেতে কোনো সংকোচ নেই, প্রকৃতি আকুলতায় দ্বিধা নেই, এমনকি-ঈশ্বরমনস্কতায় তাঁর 888sport app download apkয় নিষিদ্ধ নয়। … তাঁর 888sport app download apkর ভাষা চিরন্তন বাংলা 888sport app download apkর ভাষা।’ এইখানেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যপ্রতিভার স্বাতন্ত্র্য, তার এক উজ্জ্বল প্রকাশ, যা এখনো পাঠকদের আবিষ্ট করে রাখতে সমর্থ।

সমকালীন 888sport live footballের পাশাপাশি সুদূর অতীতের দিকেও দৃষ্টিপাত করতে ভোলেননি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। নিবিড়ভাবে পাঠ করেছিলেন রামায়ণ-মহাভারত। তিনি এ-সম্পর্কে জানিয়েছেন – ‘কালোত্তীর্ণ যে কাহিনি দুটি আবহমানের ভারতবর্ষকে সমৃদ্ধ করে আসছে সে দুটি আমার ছেলেবেলায় উপেন্দ্রকিশোরের ছোটদের রামায়ণ মহাভারতের মধ্যে দিয়ে আমার কাছে পৌঁছেছিল। তারপর বড়ো হয়ে রাজশেখর বসু ও কালীপ্রসন্ন সিংহের 888sport app download apk latest version পড়েছি। বেশিরভাগ দেশবাসীর মতো রামায়ণ মহাভারত আমারও মনোজীবনের সঙ্গে তীব্রভাবে জড়িয়ে আছে।’ (‘গ্রন্থি’)। 

রামায়ণের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন মানুষের জীবনের এমন-এক সার্থকতা যা কি না তাকে মহৎ কাজে নিবেদিত হবার সামর্থ্য সম্বন্ধে সচেতনা করে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় – ‘সীতাকে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করাই পৃথিবীতে সকল মহৎ সাধনার রূপক। সেই সীতাই ধর্ম; সেই সীতা জ্ঞান, স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি; সেই সীতা সুন্দরী; সেই সীতা সর্বমানবের কল্যাণী।’ শুধু মহৎ জীবনেরই নয়, তিনি রামায়ণের মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন মহৎ 888sport live footballের ‘সত্য-প্রকাশ’। যে-মহৎ 888sport live football কি না মানুষের ‘ভোগকে লোভ থেকে উদ্ধার করে।’  (পৌষ : ১৩৩৮)। অন্যদিকে সৌমিত্রের মতে, ‘শৌর্যবীর্যের উজ্জ্বলতায়, মানবচরিত্রের বিচিত্র অভিজ্ঞানে, কাব্যের প্রগাঢ়তায়, দর্শনের দীপ্তিতে এই এপিক দুটি শত শত বৎসর কোটি কোটি মানুষকে যে আনন্দ, যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, আমিও তার অংশীদার। লুপ্ত সামাজিক ইতিহাসের দলিল ও প্রাক্তন মূল্যবোধের দর্পণ হিসেবেও এই মহাকাব্যগুলি চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে।’

মহাভারত সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের উপলিব্ধর ধরনটা এরকম – ‘মনে পড়ে ভারতবর্ষে বেদব্যাসের যুগ, মহাভারতের কাল। … এর মধ্যে একটি প্রবল চেষ্টা, অক্লান্ত সাধনা, একটি সমগ্র দৃষ্টি ছিল। এই উদ্যোগের মহিমাকে শক্তিমতী প্রতিভা আপন লক্ষীভূত করেছিল, তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় মহাভারত নামটিতেই। মহাভারতের সমুজ্জ্বল রূপ যাঁর ধ্যানে দেখেছিলেন ‘মহাভারত’ নামকরণ তাঁদেরই কৃত। সেই রূপটি একই কালে ভৌমণ্ডলিক রূপ এবং মানস রূপ। ভারতবর্ষের মনকে দেখেছিলেন তাঁরা মনে।’ (ডিসেম্বর : ১৯৩২)। পাশাপাশি সৌমিত্রের ভাবনার গড়নটা যদি দেখি, তাঁর মতে, ‘রামায়ণ-মহাভারতের চরিত্রগুলি যদিও সাধারণ মানুষের থেকে বড়ো মাপে আঁকা, তবু জীবনে বারবার আশপাশে সাধারণ মানুষের মধ্যেই রামের অন্তর্দ¦ন্দ্ব, যুধিষ্ঠিরের ন্যায়নিষ্ঠা, অর্জুনের প্রতিভা, কর্ণের বিশিষ্ট মহত্ত্ব চোখে পড়েছে। মানবীর মধ্যেই দেখতে পেয়েছি সীতার বেদনা, গান্ধারীর নিরপেক্ষ মানবিকতা, পাঞ্চালীর তেজরাশির অভ্রান্ত উদ্ভাস। প্রথা বা আচারের সংস্কারে শিলীভূত হিন্দু দেবতা হিসাবে আমি কোনোদিনই এদের ভাবিনি।’ পরিশেষে তিনি বলেছেন, ‘মানুষের বীর্যবত্তা, মানুষের দুর্বলতা, মানুষের প্রবৃত্তি, মানুষের ক্ষমা দয়া প্রীতির মহত্ত্ব নিয়েই মহাকাব্যের এইসব চরিত্র আমার মনকে সমৃদ্ধ করেছে।’ (গ্রন্থি : ১৯৯০)

888sport live chat-888sport live football-অভিনয় – এসবের সঙ্গে রাজনৈতিক চেতনার সংযোগকে সৌমিত্র কখনোই অস্বীকার করেননি। রাজনীতি-সচেতনতা ছাড়া 888sport live chat888sport live footballের বোধটুকুও পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না সেই উপলব্ধিটা তাঁর ছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, মনন চিন্তনের আবহাওয়ায় গড়ে উঠেছিল যে কলকাতা সেই ‘কলকাতার কলেজে পড়তে এসে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম এবং কিছুটা রাজনীতির সঙ্গেও। … প্রথম তারুণ্যের সংবেদনশীল দিনগুলোতে দেশবাসীর দারিদ্র্য, শোষণ-পীড়ন যখন মনকে নিয়তই ক্ষুব্ধ করে তুলত সেই সময় ছাত্র আন্দোলনের স্রোতোবাহিত হয়ে মার্কস এংগেল্স্-এর কিছু কিছু লেখা আমার কাছে এসে পৌঁছেছিল। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল ‘Communist Manifesto’ যার প্রথম লাইনটিই মানবেতিহাস সম্পর্কে যুগান্তকারী চিন্তার সূচনা করেছিল, ‘The history of all hitherto existing society is the history of class struggles।’ ‘ইতিহাসকে এর আগে কেউই কখনো এমন করে দেখেনি। যুগ যুগ ধরে সমস্ত সমাজই যে শ্রেণিবিভক্ত এবং শ্রেণিদ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই যে-ইতিহাস এগিয়ে এসেছে এমন সত্যের উদ্ঘাটন আগে কখনো হয়নি।’ সৌমিত্রের এই রাজনীতি-সচেতনতা, তাঁর ইতিহাস-বোধ, শ্রেণি-সংগ্রাম বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য আমাদের সচকিত করে তোলে। আমরা জানি, কমিউনিস্ট ইশতেহার মার্কস-এঙ্গেলসের যৌথ প্রয়াসে রচিত হলেও এখানে মার্কসের ভূমিকা ছিল অনেকখানি। এই ইশতেহারের ১৮৮৩ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকায় স্বয়ং এঙ্গেলস বলেছিলেন – ‘(জমিতে আদিম যৌথ মালিকানার অবসানের পর থেকে) সমগ্র ইতিহাস হয়ে এসেছে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস, সামাজিক বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে শোষিত আর শোষক, অধীন আর অধিপতি শ্রেণির মধ্যে সংগ্রামের ইতিহাস; কিন্তু এই সংগ্রাম আজ এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যেখানে শোষিত এবং নিপীড়িত শ্রেণি (প্রলেতারিয়েত) নিজেকে তার শোষক এবং নিপীড়ক শ্রেণির (বুর্জোয়া শ্রেণির) কবল থেকে উদ্ধার করতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে গোটা সমাজকে শোষণ, নিপীড়ন আর শ্রেণিসংগ্রাম থেকে চিরদিনের মতো মুক্তি দিয়ে ছাড়া সেটা আর করতে পারে না – এই মূলচিন্তাটি পুরোপুরি এবং একমাত্র মার্কসেরই।’ শুধু এইটুকুই নয়, মার্কসের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণেও এঙ্গেলস দ্বিধাহীনভাবে বলেছিলেন, ‘Marx was before all else a revolutionist. His real mission in life was to contribute, in one way or another, to the overthrow of capitalist society and of the state institutions which it had brought into being, to contribute to the liberation of the modern proletariat।’ আর এসবের মূল্যও তাঁকে নানাভাবে দিতে হয়েছে – এঙ্গেলসের ভাষায় – ‘মার্কস ছিলেন তাঁর কালের সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষের পাত্র, সবচেয়ে জঘন্য কুৎসা রটনার উপলক্ষ। একচ্ছত্রী রাজতন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রী উভয় ধরনের গভর্নমেন্টই তাঁকে তাদের ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করেছে।’ (১৭ই মার্চ, ১৮৮৩)

সৌমিত্র বলেছিলেন, ‘শুধু এই বিশ্বাসই নয়, অন্যায় অবিচার শোষণপীড়নে ক্লিষ্ট জরাগ্রস্ত সমাজের পরিবর্তন কামনাও মার্কসীয় বিশ্বাস আমার মধ্যে তীব্র করে তুলেছে।’ তিনি এ-ও মনে করতেন, ‘জগৎ পরিবর্তনশীল। মার্কস এংগেল্স্কে বোঝার দৃষ্টিতেও পরিবর্তন আসবে। মার্কসীয় সিদ্ধান্তগুলি, দার্শনিক প্রতিবেদ্যসমূহ পরিবর্তিত বাস্তবতার নিরিখে বিচার করবে নতুন সময়ে মানুষ। কিন্তু এই সত্যানুসন্ধানী চিন্তানায়করা শৃঙ্খলমুক্তির সংগ্রামে শোষিত সর্বহারার হাতে বিশ্বাসের যে হাতিয়ার তুলে দিয়েছিলেন তার মহত্ত্ব কোনোদিন ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে হয় না।’ এ-প্রসঙ্গে রিচার্ড উলফের কথা আমাদের মনে পড়ে। মার্কিন মার্কসবাদী অর্থনীতিবিদ রিচার্ড উলফ (Richard D. Wolff)-এর মতে, ‘আমাদের ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে এখন বড় রকমের প্রশ্ন উঠেছে। তার অন্তর্নিহিত সঙ্কটের লক্ষণ এখন সুস্পষ্ট … কিন্তু অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে কখনও কোনও সমস্যার সমাধান করা যায়নি। আজো যাবে না। যাঁরা সত্যিই সমস্যার স্বরূপ বোঝে তার কার্যকর মোকাবিলায় আগ্রহী, আজ না হোক কাল তাঁদের কার্ল মার্কসের এবং মার্কসীয় চিন্তাধারার সমৃদ্ধ ভাণ্ডারের দ্বারস্থ হতে হবে, যেমন অতীতে হয়েছে।’ এখানেই কাল মার্কসের কাছে আমাদের ঋণ, যা কি না লেনিন-মাওয়ের সীমানা ছাড়িয়ে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃত। 

এইভাবেই যেন সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে সৌমিত্রের পড়াশোনার বিশাল জগৎ। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘কখনো মানুষের অবস্থান সম্পর্কে ইতিহাসের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে বইয়ের সাহায্যে – আবার এ জগৎ কী, এ জীবন লইয়া কী করিব এমত জিজ্ঞাসার উত্তরও কখনো কখনো ঝলসে উঠেছে বইয়ের পাতার আড়াল থেকে। আমি নামক দ্বীপের থেকে বইয়ের সাঁকো পেরিয়ে মন পা বাড়িয়েছে বড়ো পৃথিবীর মূল ভূখণ্ডে।’ আরো খানিকটা সবিস্তারে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অনুরাগের বাসন্তী বেলায় বই ছিল রসবৈচিত্র্যদায়িনী প্রিয় সখীর ভূমিকা নিয়ে। দুঃসহ শোকের সময়ে, নিজস্ব দুঃখের নিদারুণ একাকিত্বে বই এসেছে সান্ত্বনা হয়ে। নিঃসঙ্গতার অসহ প্রহর বন্ধুর সাহচর্য দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে বই। আবার সংগ্রামের হাতিয়ার, কাজের যন্ত্র হয়ে বিশ্বস্ত রয়ে গেছে বই। মানুষের সঙ্গে, জীবনের সঙ্গে গ্রন্থই বেঁধেছে এক অচ্ছেদ্য গ্রন্থিতে।’  এই হচ্ছে তাঁর পাঠপ্রীতির অন্যতম এক প্রধান কারণ। 

এখন প্রশ্ন উঠবে তাহলে লেখালেখির শুরুটা কেন আর কীভাবে? বিনয়ী সৌমিত্র উত্তর দিয়েছেন, ‘লেখাই যাদের কাজ, পুরোদস্তুর লেখক যারা আমি নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে পড়ি না। আমার বেশিটা সময় যে কাজে ব্যয় হয়েছে তা অভিনয় করা। সেই কাজটা যে পরিবেশে অধিকাংশ সময়ে করতে হয় সেখানে লেখার মতো মানসিক অবস্থা তৈরি হওয়াই মুশকিল। তবু যখন মাঝে মধ্যে লিখে এসেছি তখন কেন লিখি এ প্রশ্নের উত্তর দেবার একটা দায় তো থেকেই যায়।’ আর সেই থেকেই ‘যাদের মধ্যে বেঁচেছি তাদের কাছেই প্রকাশ করতে চাই। তার মধ্যে দিয়ে আমি প্রকাশিত হতে চাই। এটাই আমার গড়বার বাসনা।’ শুধুই কি এইটুকুতেই ঘটনার পরিসমাপ্তি? না, সৌমিত্র আরো জানিয়েছেন, ‘এর সঙ্গে এক ঋণবোধ আমাকে নিরন্তর অসন্তুষ্ট বিচলিত রাখে। আমি লিখি কারণ আমি ঋণী। মানুষ আমাকে যতকিছু দিয়েছে, জন্মমৃত্যুর অন্ধকার বন্ধনীর মধ্যে এই পরমাশ্চর্য মানবজীবন তো মানুষই দিয়েছে। তার আনন্দ-বেদনার যাবতীয় আস্বাদ তো মানুষের কাছ থেকেই পাওয়া।’ তিনি মনে করতেন, ‘এর সবই তো মানব-জন্মের ঋণ। সেই ঋণ শোধ হতে চায় লিখে। মনে হতে থাকে জীবন থেকে মানুষের কাছে যা পেয়েছি তার কণামাত্র অন্তত ফিরিয়ে দিই লিখে। আমার অভিজ্ঞতার শরিক করে নিই আরো অনেক অনেক মানুষকে। তাই বোধহয় লিখি। তাই বোধ হয় অভিনয়ও করি।’ (ঋণশোধের জন্য : ২০০০)। এইভাবেই লেখা থেকে পাঠের জগতে আবার পাঠের জগৎ থেকে লেখার জগতে গিয়ে নিজের রচনাকর্মের নির্মাণ আর সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন সৌমিত্র। এসবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন জনপ্রিয়তার চাকচিক্যময় সূত্রবিচ্ছিন্ন খোলসের ভেতর থেকে অগ্রগামী মানুষের কাতারে, তাদের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে চলতে। তিনি জানতেন এই চলাটাই জীবন, জীবনের গান মূর্ত হয়ে ওঠে সম্মিলিত চলার পদছন্দে।

সুইস লেখক-নাট্যকার ফ্রিডরিশ ডোরেনমাট (Friedrich Durrenmatt) বলেছিলেন, ÔWriting for me today is an engagement and experiment with different materials. I grapple with theatre, radio, novels and television, and from my grandfather I know that writing can be a form of fight|Õ লেখালেখির সেই বিরামহীন যুদ্ধ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিত্বের সৃজনশীল সত্তার মধ্যেও নানান সুরের এক মিলিত ঐকতানের সৃষ্টি করেছিল। সে-কারণেই এই মানুষটির বিদায় নেওয়াটা আমাদের মনে এক অনিবার্য আঘাতের বোধ প্রবলভাবে আহত করে –

অনেক দূরে এলাম নাকি নদী

আমার নদী আমার 888sport sign up bonus

কোন ভোরে সেই পাহাড়তলীর নীচে

হাওয়ায় টলত বনমোরগের ডাক

ভোলোনি সম্প্রতি? অনেক দূর তো এলে আমার 888sport sign up bonus। (নস্টালজিয়া/ ‘জলপ্রপাতের ধারে দাঁড়াবো বলে’)