পাপ ও পুণ্যস্নান

রা শে দ র হ মা ন
কবুল করছি, অকপটে; মনে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব না-রেখে; তনুশ্রীকে আমি ফাঁদে ফেলেছিলাম। জীবনানন্দ দাশের 888sport app download apkর মতো নিটোল, মেদহীন শরীর তনুশ্রীর। অভিমানী চোখ – ওর চোখের দিকে তাকালে আপনি দেখবেন, একজোড়া রাজহাঁস সাঁতার কাটছে ওর চোখের ভেতর – সেই তনুশ্রীকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে অরুণ – এটা আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমার বিশ্বাস, আমার জায়গায় আপনারা কেউ থাকলেও তা পারতেন না। কিন্তু এখন, তনুশ্রীর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে, আমার কেবলই মনে হচ্ছে – অরুণকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য তনুশ্রীকে আমি ফাঁদে ফেলেছিলাম, এ-কথা একশভাগ ঠিক; কিন্তু তনুশ্রীকে আমি সত্যিকারের ভালোবাসতাম। ওর সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেব, তা বলব বলব করে বলা হয়নি; হয়তো কাল বা পরশু সন্ধ্যায় কুমার নদের ধারে বসে, ওর কণ্ঠে আমার 888sport app download apk আবৃত্তি শুনতে শুনতে কিংবা ওর স্তনের উত্তাপে আমার হাত পুড়তে পুড়তে বলে ফেলতাম – তনু, চলো, আমরা দুজনে কুমারের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু তার আগেই…!
খামারবাড়ি-চত্বরে ঘাসের ওপরে শুয়ে আছে তনুশ্রী। কিছুক্ষণ আগে পুলিশ এসে লাশ নামিয়েছে। সংস্থার পরিচালক রণন এখনো এসে পৌঁছোয়নি। ও এলেই পুলিশ লাশ নিয়ে যাবে। রণন আসুক; পুলিশ লাশ নিয়ে যাক; আমি তনুশ্রীর লাশের সঙ্গে যাব না…।
আমরা, আমি আর তনু – মাঝেমধ্যেই সন্ধ্যারাতে কুমারের ধারে ঘাসের শয্যায় শুয়ে থাকতাম। তনুশ্রী আমার 888sport app download apk আবৃত্তি করত –
সকালবেলা যে হাত ভিক্ষা দিয়েছে
সূর্যাস্তের পর সেই হয় চোর;
যারা অন্ধকারে রাজার বাগান থেকে
ফুল চুরি করে
তারা জানে তার হাত কতোটা লম্বা…।

এখন, তনুশ্রী যদি 888sport app download apk শোনাতো –

দূরে দাঁড়িয়ে যে-নামেই ডাক পাখি –
জোনাকির যৌন-আলো ছাড়া আর কোনো
আয়োজন নেই আমাদের…!

টিপিএল (টার্নিং পয়েন্ট অব লাইফ) একটি প্রতিষ্ঠিত এনজিও – বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট। 888sport appয় হেড অফিস। টিপিএলের নির্বাহী পরিচালক কবি সমর দত্ত আমার বন্ধু। সেই সুবাদে বোয়ালমারী শাখার পরিচালক রণন মুখার্জির সঙ্গেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। অরুণ এখানকার ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর। তনুশ্রী ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট। আমি টিপিএলে চাকরি করি না। কোথাও চাকরি করতে আমার ভালো লাগে না। শাহবাগে সারাদিন আড্ডা দিতে, কবিবন্ধুদের সঙ্গে
চা-সিগারেট আর গাঁজার স্টিক পোড়াতেই ভালো লাগে। তার পরও নিউমার্কেটের বড় ব্যবসায়ী আনোয়ার চৌধুরীর টোপ গিলেছিলাম একবার। কাজ তেমন কিছুই না। মাঝেমধ্যে আনোয়ার চৌধুরীর বিদেশি ব্যবসায়িক পার্টনার 888sport appsে আসে। তাদের বিমানবন্দরে রিসিভ করতে হয়। তারা কোথাও বেড়াতে গেলে সঙ্গ দিতে হয়। যেদিন কেউ আসে সেদিন কাজ থাকে – বাকি দিনগুলো সকালে অফিসে হাজিরা দিয়ে যত খুশি আড্ডা মারো শাহবাগে। ভালোই চলছিল। বসে বসে মোটা বেতন। কিন্তু কদিন পরই টের পেলাম – শালারা সবাই সোনা পাচারকারী; আনোয়ার চৌধুরী ওদের 888sport appsি ক্রেতা। ওয়াক থু! চোরাকারবারির চাকরি করছি? একদিন আনোয়ার চৌধুরীর মুখের ওপর বলে এলাম – সোনাচোরার টাকা আর টয়লেট পেপারের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। টয়লেট পেপার পকেটে রেখে 888sport app download apk লেখা যায় না। গুডবাই। অন্য লোক দেখুন। দেশে মলখেকো প্রচুর লোক আছে। অথচ দেখুন, লোকটি লাতিন-888sport live footballের ভক্ত! নিউমার্কেটের ফুটপাতে, পুরনো বইয়ের দোকানে একটা বই খুঁজতে খুঁজতে লোকটির সঙ্গে আমার পরিচয়…।
আমি চিনুয়ার দেবতার ধনুর্বাণ খুঁজছিলাম। অনেকগুলো দোকানে খোঁজ নিলাম। কারো কাছে নেই। রাগে শরীর জ্বলছে। সব শালার দোকান সমরেশ-সুনীল, হুমায়ূন-মিলনের সস্তা বইয়ে ঠাসা…।
– ভাই, কী বই খুঁজছেন, পেলেন?
পাজামা-পাঞ্জাবি পরা মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক আমার পাশে দাঁড়ালেন। তার চোখেমুখেও বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ। হয়তো আমার মতোই কোনো বই খুঁজছিলেন, পাননি। বিকেল না-হয়ে দুপুর হলে – লোকটির ক্রোধ টের পাওয়া যেত। বিকেল বলে বাঁচা…।
– চিনুয়ার বই, দেবতার ধনুর্বাণ। কারো কাছে নাই…।
– আমি খুঁজছিলাম মার্কেজের ওয়ান হানড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড। পেলাম না…।
– তাই…?
– হ্যাঁ। সব দোকানে খালি সস্তা বই। দেবতার ধনুর্বাণ আমার সংগ্রহে আছে। পুরনো দোকানের বই না। নতুন বই। আপনি চাইলে পড়তে দিতে পারি, ধার হিসেবে, অবশ্যই ফেরত দিতে হবে…।
– হ্যাঁ। নিশ্চয়ই ফেরত দেব। বই চুরি করা পাপ না-হলেও আমি কারো বই চুরি করি না। যার বই চুরি যায় কষ্টটা তো সেই বোঝে…।
আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে সেই পরিচয়। তারপর ঘনিষ্ঠতা। তারপর তার অফিসে চাকরি। কিন্তু কদিন পরই দেখলাম – মানুষ একই সঙ্গে মার্কেজ-চিনুয়াও পড়ে, আবার চোরাই ব্যবসাও করে। পাপ-পুণ্য একসঙ্গে…!
আর চাকরি খুঁজিনি। সমর আমাকে একপ্রকার জোর করে বোয়ালমারী পাঠিয়েছে। অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে কাজ করে টিপিএল। আমাকে মাঠের কাজ দেখতে হবে। ভালো লাগলে থাকব, ভালো না-লাগলে 888sport app ফিরে যাব – কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সমর দুটো প্রলোভন দেখিয়েছে – নিয়মিত কেরুর বোতল, আর কুমার নদের ধার ধরে বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে 888sport app download apk খোঁজা। আমি মূলত 888sport app download apkর খোঁজেই বোয়ালমারী এসেছি। অনেকদিন ধরে করোটিতে কোনো 888sport app download apkর জন্ম হচ্ছে না। বেঁচে আছি, অথচ 888sport app download apk লিখতে পারছি না – এ-ধরনের বেঁচে থাকার কোনো অর্থ নেই। মায়াকোভস্কি প্রায়ই রাতে ডাকেন – চলে আয়, কমল তুই চলে আয়…।
আমি অর্ঘ্য কমল। টিপিএলে আমার কোনো পদ-পদবি নেই। তারপরও, এখানে আমি সবার বস। সবাই জানে, টিপিএলের নির্বাহী পরিচালক সমর দত্ত আমার বন্ধু। আমি তাঁর হয়েই এখানে এসেছি। মাঠের কাজ দেখাশোনা করছি। আমার মন জুগিয়ে চলার একটা ভান সবাই করে। তবে কেউ আমাকে স্যার সম্বোধন করে না, দাদা বলে। স্যার বলতে আমিই বারণ করেছি। স্যার হতে ভালো লাগে না আমার। লেখাপড়া শেষ করার আগেই গ্রামের হাইস্কুলে ঢুকেছিলাম। স্কুলের হেডস্যার, বাংলায় ভালো করতাম – আর তখনই, সেই কিশোর বয়সে 888sport app download apk লিখতাম বলে আমাকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনিই আমাকে স্কুলে নিয়েছিলেন। অনার্সের রেজাল্ট বেরোলেই আমার চাকরি স্থায়ী হবে। কিন্তু তিন মাস পর আমি আর স্কুলে যাইনি। ছাত্রছাত্রীদের ‘স্যার স্যার’ শুনতে আমার ভালো লাগত না…।
আমি কেন ‘স্যার’ হতে চাইনি, কিংবা ‘স্যার’ শব্দটি শুনলে কেন আমার শরীরে আগুন ধরে – এই গল্পে সেই ব্যাখ্যা দেওয়া অবান্তর। তারপরও এ-ব্যাপারে সামান্য দু-চারটি কথা না-বললে এ-গল্পটি অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই বলছি দু-চার কথা…।
আমার বাবা অবিনাশ দাস স্কুলশিক্ষক ছিলেন – প্রাইমারি স্কুলের প-িত স্যার। সরকারি স্কুল। বেতন মাসিক আড়াই হাজার টাকা। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য প্রায় পুরোটাই মুখস্থ ছিল বাবার। অলংকারশাস্ত্রেও অগাধ জ্ঞান ছিল। তাতে কী? প্রাইমারি স্কুলে ‘প-িত স্যারে’র পদ নেই। তাই বাবার প-িত হিসেবে বাড়তি কোনো বেতন ছিল না। মাইকেল মধুসূদন, বিহারীলাল চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – আরো অনেক কবির 888sport app download apk বাবার মুখস্থ ছিল বলে স্কুলের হেডস্যার বাবাকে ‘প-িতমশাই’ বলে ডাকতেন। এজন্যই গ্রামে ‘প-িত স্যার’ হিসেবে বাবার আলাদা একটা সুনাম ছিল। বাবাও, স্কুলে ইন্সপেক্টর এলে, গর্বভরে তাদের মাইকেলের 888sport app download apk শোনাতেন –
দানব-নন্দিনী আমি, রক্ষঃকুলবধূ;
রাবণ শ্বশুর মম, মেঘনাদ স্বামী –
আমি কি ডরাই, সখি ভিখারী রাঘবে?
পশিব লঙ্কায় আজি নিজ ভুজ-বলে
দেখিব কেমনে মোরে নিবারে নৃমণি…?

আহারে, সেই কিশোর বয়সে, আমি মনে করতাম – মহাবীর মেঘনাদের মতোই, মেঘনাদ যে বীর ছিলেন বাবার কাছেই শুনেছি – বীর ছিলেন আমার বাবা। হ্যাঁ, বীর তিনি ছিলেন – তা স্কুল পর্যন্তই। বাড়িতে অন্য মানুষ, যেন একটা মেনিবিড়াল – মিউমিউ শব্দটাও তার গলা দিয়ে বেরোতে চাইত না। মার ভয়ে সবসময় জড়োসড়ো থাকতেন। মা যে প্রচ- রাগী ছিল – তা না। তবে বাবার সঙ্গে তার রাগারাগি করার যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণ ছিল। আমরা চার ভাইবোন। দুই ভাই, দুই বোন। দিদিরাই বড়। বাবা তার মাস্টারির আয় দিয়ে আমাদের ঠিকমতো খেতে-পরতে দিতে পারতেন না। কোনো দুর্গাপূজায় আমরা চার ভাইবোন একসঙ্গে নতুন জামা-কাপড় পাইনি। মায়ের তো কিছু পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এদিকে বড়দি বিয়ের যুগ্যি হয়ে উঠেছে – সেদিকে খেয়াল নেই বাবার। মা বলত, সকাল-বিকেলে ছাত্র পড়াও, না-হয়
দোকান-টোকান কিছু একটা করো – অনেকেই তো মাস্টারি করেও কতকিছু করছে – মায়ের কোনো কথা কানেই তোলেন না বাবা। তার সাফ কথা – টাকার বিনিময়ে বাড়িতে ছাত্র পড়ালে কিংবা শিক্ষক হয়ে দোকান ফেঁদে বসলে শিক্ষকের মর্যাদা থাকে না। শিক্ষকের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয় – এ-ধরনের কোনো কাজ, না-খেয়ে মরলেও তার দ্বারা হবে না। এসব নিয়ে মা প্রায়ই বাবাকে তুলোধুনা করে। বাবা তার স্বভাবসুলভ চুপচাপ। কিন্তু একদিন কী হলো বাবার – তিনি মুখ খুললেন…।
– চুপ করো তুলসী। তোমার এক কথা প্রত্যেকদিন শুনতে ভালো লাগে না। তুমি একটা অসহ্য মেয়েমানুষ…।
– অসহ্য! আমি তোমার কাছে অসহ্য…?
কথা এটুকুই। সেই রাতেই মা বাড়ির পেছনের শেওড়া গাছে ঝুলে আত্মহত্যা করে…।
আমি টিপিএলের বাগানবাড়িতে থাকি। বেশ বড়সড় বাগানবাড়ি। গাছগাছালি, পাখপাখালিতে ভরা বাগানবাড়িটি দেখেই মনে হয়েছে, এখানে হয়তো থাকতে পারব কিছুদিন। আরো অনেকেই বাগানবাড়িতে থাকে। তনুশ্রীও থাকে। ডাইনিংয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা। এরই মধ্যে অফিসের কেউ কেউ জেনে গেছে – আমি 888sport app download apk লিখি। এক রাতে খেতে বসেছি, আরো অনেকেই খাচ্ছে; তনুশ্রী এসে ঘোষণা করল – কমলদা, সবাইকে আপনার একটা 888sport app download apk শোনাই…।
মেয়েটিকে এর আগে ভালো করে লক্ষ করিনি। ওর কথা শুনে, ওর দিকে তাকালাম। ঠিক যেন জীবনানন্দের কোনো 888sport app download apk…।
– আমার 888sport app download apk পড়বে মানে…!
– হ্যাঁ, আপনার 888sport app download apk। পাখি ও মানুষ…।
– কোথায় পেলে…?
– একটা লিটলম্যাগে পড়েছি। মুখস্থ আছে –
পাখি বহু চেষ্টার পরও স্বপ্নে পাখা
মেলতে পারে না
কারণ পাখিরা উড়তে জানে
মানুষ স্বপ্নে উড়তে পারে
কারণ মানুষের ডানা নেই…।

তনুশ্রীর কণ্ঠে আমার 888sport app download apk শুনে মনে হলো, মেয়েটিকে পাঠ করতে হবে। ওকে পাঠ করলে আমার করোটিতে নতুন নতুন 888sport app download apk জন্ম নেবে…।
সকাল নটার মধ্যেই আমি অফিসে বসি। আজ নটার আগেই এসেছি। অফিসে বসে, চা খেতে খেতে তনুশ্রীকে পাঠ করছি। মেয়েটির সঙ্গে অফিসিয়াল কথাবার্তার বাইরে তেমন কথা হয়নি এখনো। এরই মধ্যে আমার 888sport app download apk পড়ে শোনাল। ধান্ধাটা কী? নির্বাহী পরিচালক আমার বন্ধু। এটা শাখা-অফিস। এখানকার সবাই আমাকে খুশি রাখতে চায়। চাওয়াটাই হয়তো স্বাভাবিক। তনুশ্রীও আমাকে খুশি রাখার জন্যই হয়তো আমার 888sport app download apk পড়ে শুনিয়েছে। কিন্তু মোটরসাইকেলে অরুণের পেছনে বসে যেভাবে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে…!
বাইরে মোটরসাইকেলের শব্দ। অরুণ এলো বুঝি? ও ফরিদপুর থাকে। শহরে ওদের পৈতৃকবাড়ি। জেলখানা রোডে, প্রচুর নারকেলগাছঘেরা ওদের তিনতলা বাড়িটি দেখতে খুবই চমৎকার। বাড়ির ছাদে উঠলে মধুমতীর ঢেউ দেখা যায়। আমি গিয়েছিলাম একদিন…।
– কমলদা, কেমন আছেন…?
– ভালো। তুমি কেমন আছো…?
– আছি ভালোই। কিন্তু দেশের যা অবস্থা…!
– এই সকালবেলা আর দেশের অবস্থা তুলো না। দেশ যেখানে আছে, থাক। যেভাবে চলছে, চলুক। তোমার আজ বাইরে কোথাও ট্যুর আছে নাকি…?
– আছে…।
– কোথায়…?
– ময়নাপুর…।
– একাই যাবে? নাকি…।
– তনুশ্রীও যাবে…।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তনুশ্রী অরুণের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে বাঁ-হাতে জড়িয়ে ধরবে ওর কোমর, ডান হাত আলতো করে রাখবে অরুণের পিঠে; মোটরসাইকেলের ব্রেক কষলে তনুশ্রী চেপে ধরবে অরুণকে, তখন তনুশ্রীর উষ্ণ স্তনের ছোঁয়া পাবে অরুণ – এই দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আমার শরীরে আগুন ধরতে শুরু করে। কেন যে মেয়েটি আমার 888sport app download apk পড়ল…?
অরুণ বিবাহিত, জানি। ওর বউ অনিমাও সুন্দরী। দেখেছি তো একদিন। কিন্তু তনুশ্রী…? বিবাহিতা হলে সিঁথিতে সিঁদুর থাকত। তনুশ্রীর সিঁথিতে সিঁদুর নেই…।
– নেসার…?
– জি দাদা…।
নেসার বোয়ালমারী অফিসের কেয়ারটেকার। সমরের খুবই বিশ্বস্ত লোক। সমর বোয়ালমারী এলে, দু-চারদিন থাকলে – নেসার সমরের ডিউটি করে। এখন আমার ডিউটি করছে…।
– তনুশ্রী এখানে কতদিন ধরে আছে…?
– বছরদুয়েক তো হবেই…।
– সরাসরি ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি পেয়েছে, নাকি কারো সুপারিশে…?
– অরুণ স্যারের সুপারিশে…।
অরুণের সুপারিশে চাকরি পেয়েছে তনুশ্রী – তাহলে ভেতরে ভেতরে কিছু একটা থাকলে থাকতেও পারে। সমর নিশ্চয়ই এতকিছুর খোঁজ নিয়ে নিয়োগ দেয়নি। রণন সহজ-সরল মানুষ – সে হয়তো দেখেও কিছু দেখে না। আমি ঢিল ছুড়ে দেখতে চাই – লেগেও যেতে পারে…।
দুদিন কিছুই বললাম না। কাজে ডুবে থাকলাম। নেসারকেও আর কিছু বলিনি। বললে হয়তো ওর কাছ থেকে আরো কিছু খবর জানা যেত। ও দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছে। এখানকার নাড়ি-নক্ষত্র সব ওর জানা। কিন্তু ইচ্ছা করেই তনুশ্রীবিষয়ক আলোচনায় ওকে আর জড়ালাম না। কে জানে কার মনে কী আছে! হিতে বিপরীত হতে পারে। যা করার আমি একাই করব। তৃতীয় দিন বিকেলে তনুশ্রীকে আমার রুমে ডেকে পাঠালাম…।
– কমলদা আমাকে ডেকেছেন…?
– হ্যাঁ, বসো…।
আমার টেবিলের সামনে খালি চেয়ারে বসল তনুশ্রী। আমি কাউকে ডেকে না-পাঠালে বিনা অনুমতিতে কারো আমার রুমে ঢোকার সুযোগ নেই। সুতরাং কেউ এখন আমার রুমে ঢুকবে না। আমি তনুশ্রীকে যা খুশি তাই বলতে পারি। আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। ও কল্পনাও করতে পারছে না – আমি কী কথা বলতে ওকে ডেকে এনেছি…।
খোঁপায় জারুলফুল পরেছে তনুশ্রী। ভয়ংকর সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে…।
– তুমি 888sport app download apk লেখ নাকি, তনুশ্রী…?
– না। লিখতে চাই। কিন্তু 888sport app download apk আসে না…।
– সেদিন হঠাৎ আমার 888sport app download apk পড়ে শোনালে…।
– 888sport app download apk পড়তে আমার ভালো লাগে। সুযোগ পেলেই পড়ি। সমর স্যার এবং আপনার অনেক 888sport app download apk আমার মুখস্থ…।
– খোঁপায় জারুলফুল পরেছ। তুমি দেখতেও কিন্তু জারুলফুলের মতোই সুন্দর…।
– তাই নাকি! বলেন কী…!
– হ্যাঁ। সত্যি কথাই বলছি। এবার বলো তো তনুশ্রী – অরুণের সঙ্গে তোমার কতদিনের অনৈতিক সম্পর্ক…?
বাড়ির উঠোনে বজ্রপাত হলে মানুষ যেরকম কেঁপে ওঠে, দুহাতে কান চেপে ধরে – তনুশ্রী তেমনি কেঁপে ওঠে, দুহাতে কান চেপে ধরে প্রায় চিৎকার করে বলল – ‘এসব কী বলছেন দাদা…?’
আমি তখন দারুণ একটা মিথ্যা কথা বললাম। ‘শোন তনুশ্রী, কোনো 888sport promo codeর ঘ্রাণ আমার নাকে এলেই আমি বলে দিতে পারি – সেই 888sport promo code কার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। বলতে পার – এটা আমার ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা। তা ছাড়া, তুমি জানো কিনা জানি না; আমি মদ্যপায়ী আর আমার মদের টাকার জোগান দেয় কে জানো? টাকা জোগায় অরুণ। কেন শুনতে চাও? যেন আমি তার পথের কাঁটা না হই…।’
পাঠক, আপনারাই বলুন, তনুশ্রী তখন কী আর বলতে পারে? সে মুখ বুজে কাঁদতে লাগল…।
পরদিন দুপুর পর্যন্ত রাজাফৈর ছিলাম। দুটো স্কুল পরিদর্শন করেছি। যা-তা অবস্থা! শিক্ষার্থীও নেই, শিক্ষকও নেই। নামেই স্কুল। দাতা সংস্থার লোকজন এই পরিস্থিতি দেখলে – বিলক্ষণ, অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। সমর যে কাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছে! মেজাজ খারাপ করে ফিরছি। ওয়াপদার মোড়ে অরুণের সঙ্গে দেখা। ওই বেটাও ফিল্ড থেকে ফিরছে। আজ একা। তনুশ্রী সঙ্গে নেই। ওকে দেখে মেজাজ আরো খিঁচড়ে গেল। তনুশ্রী ওর মোটরসাইকেলের পেছনে বসে কীভাবে যে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে! স্বেচ্ছায় কোমর জড়িয়ে ধরে, নাকি বাধ্য হয়ে…?
– কী ব্যাপার অরুণ, আজ একা যে? তোমার অ্যাসিস্ট্যান্ট কই…?
– তনু অসুস্থ। আজ ও আসেনি…।
তনু! ব্যাটা তনুশ্রীকে ‘তনু’ ডাকে? ইচ্ছে করছিল ওর গালে কষে একটা চড় লাগাই। তা করলাম না। ক্রোধ সংবরণ করলাম। তনুশ্রী ওর মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে, ও তনুশ্রীকে ‘তনু’ ডাকে – এতে তনুশ্রীর সায়ও তো থাকতে পারে। আমি কেন উতলা হবো…?
– হঠাৎ অসুস্থ? কী হয়েছে…?
– ঠিক কী হয়েছে জানি না। জিজ্ঞেস করেছিলাম – কী হয়েছে? বলল, তেমন কিছু না…।
তনুশ্রীকে ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলাম – সফল হয়েছি। এবার দেখি, অরুণকে ফাঁদে ফেলা যায় কিনা। আমার মন বলছে – পারব…।
– কিন্তু কাজটা কি ঠিক হচ্ছে, অরুণ…?
– কী, দাদা…?
– এই যে, তনুশ্রীকে তুমি ব্যবহার করছ…।
– কী যে বলেন দাদা! ও তো একটা বেশ্যা-মেয়ে। আপনি হয়তো জানেন না, অফিসের সবাই জানে। টাকা পেলে কারো সঙ্গে শুতে ওর আপত্তি নেই, সে আমি বা আপনি যেই হই না কেন…।
– ভালোই বলেছ। কিন্তু তোমার বউ যদি এসব জানে…?
অরুণের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। ও শক্ত করে চেপে ধরল আমার হাত…।
সন্ধ্যার কাছাকাছি, তৈরি হচ্ছি ফরিদপুর যাব; কবিবন্ধু আসিফ রানা ফোন করেছিল – ভালো মাল জোগাড় করেছে; দরজায় তনুশ্রী…।
– দাদা, আসব…?
– এসেই যখন পড়েছ, আসো…।
– আমাকে একটু সময় দেবেন, দাদা…?
– সময়! কতক্ষণ…?
– সন্ধ্যার পুরোটাই…।
– কেন বলো তো…?
– আপনাকে সব খুলে বলব…।
আমরা কুমারের তীর ধরে হাঁটছি। চুপচাপ। তনুশ্রীর শরীরের ঘ্রাণ আমার নাকে এসে বোয়াল মাছের মতো ঘাই মারছে। গতকাল তনুশ্রীকে বলেছিলাম, জানতাম মিথ্যা কথা বলছি – কোনো 888sport promo codeর ঘ্রাণ শুঁকে আমি বলে দিতে পারি, কার সঙ্গে ওই 888sport promo codeর অনৈতিক সম্পর্ক আছে; তনুশ্রীর পাশাপাশি হাঁটছি, ওর শরীরের ঘ্রাণ পাচ্ছি; সত্যি সত্যি বোঝার চেষ্টা করছি – ওর শরীরের ঘ্রাণ কেমন, অন্য 888sport promo codeর চেয়ে আলাদা কিনা; যা থেকে কিছু একটা অনুমান করা যায় – কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না…।
হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় ঘাসের ওপর বসলাম আমরা। ঘন দূর্বাঘাস। গোধূলির আলো পড়ে ঘাসের ডগা চিকচিক করছে। চোখ মুছল তনুশ্রী। কাঁদছিল এতক্ষণ। এখন হয়তো কথা বলবে। পাঠক, তনুশ্রীর কথা, তনুশ্রীর মুখেই শুনুন। আমিও আপনাদের মতোই একজন শ্রোতা…।
আমি তনুশ্রী – অন্তত আপনাদের কাছে তনুশ্রী হিসেবেই পরিচিত; কিন্তু আমি তনুশ্রী নই, আমি তানিয়া আক্তার। দাদা কি চমকে উঠলেন? চমকানোর কিছু নেই। যা সত্যি তাই বলছি। আমাদের বাড়ি মাদারীপুর। বাবা নেই। বাড়িতে মা, ছোট আরো দুটি বোন এবং আমার আড়াই বছরের একটি পুত্রসন্তানও আছে। মা আমার সন্তানটিকে লালন-পালন করে। আমি যে এখানে তনুশ্রী সেজেছি, চাকরির পাশাপাশি – আপনাদের মতো কেউ ডাকলে তার বিছানায়ও যাই; সম্ভবত আমাদের পরিবার বা গ্রামের কেউ তা জানে না। আর জানলেও আমার কিচ্ছু করার নেই। চরিত্র খোয়াতে বাধ্য হয়েছি, অফিসের বড় কর্তারাই আমাকে এ-পথে নামিয়েছে; আর এখন তো টাকার জন্যই অরুণ স্যার, কিংবা রবিন স্যারের বিছানায় যাই। আপনি ডাকলে আপনার বিছানায়ও যাব। আমার মা আলসারের রোগী, তার ওষুধ-পথ্য; বোন দুটি স্কুলে পড়ে, তাদের লেখাপড়ার খরচ; আমার সন্তানের খরচ – যা বেতন পাই তা দিয়ে কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারি না। তা ছাড়া আমি মনে করি, তথাকথিত ভদ্রলোকদের লালসার শিকার যখন হয়েছি, তখন বেঁচে থাকার তাগিদে শরীর খাটিয়ে দুটো বাড়তি পয়সা রোজগার করলে তাতে দোষের কিছু নেই…।
বাবা রাজমিস্ত্রির জোগালি ছিলেন। সামান্য আয়; তারপরও বাবা আমাদের তিন বোনকেই স্কুলে ভর্তি করে দেন। আমি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিলাম। স্কুলে বেতন-টেতন কিছুই লাগত না। উলটো হেডস্যার আমার বই-খাতা কিনে দিতেন। এসএসসিতে স্টার মার্কস পেয়ে মাদারীপুর কলেজে ভর্তি হই। তখন কিছু টাকা-পয়সা খরচ হতো। বাবাই চালাতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। একদিন ছাদ ঢালাইয়ের সময় ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। বাবা নিচে ছিলেন। ইট-সুরকি পড়ে তার মাথার ওপর। মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই বাবার মৃত্যু হয়…।
বাবার মৃত্যুর পর আমার লেখাপড়া যখন বন্ধ হওয়ার পথে, তখন সেকেন্ড ইয়ারের শাহেদভাই এগিয়ে আসে। শাহেদভাইয়ের সঙ্গে আমার তেমন কথাবার্তা ছিল না। দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র – বড়ভাই হিসেবে চিনতাম। বান্ধবীরা কেউ কেউ বলত – শাহেদভাই ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে। ওর বাবা মাদারীপুরের বড় ব্যবসায়ী।
বরিশাল-888sport app রুটে ওদের বিলাসবহুল লঞ্চ চলে। এটুকুই জানতাম। স্বপ্না, লাবণী – আমার বান্ধবীদের কারো কারো কৌতূহল ছিল শাহেদভাইয়ের সম্পর্কে। কিন্তু আমার কোনো কৌতূহল ছিল না। আমি আমার নিজের সম্পর্কে সচেতন ছিলাম, আমি সবসময় মনে রাখতাম – আমি কোন পরিবার থেকে এসেছি…।
শাহেদভাই কীভাবে আমার দুর্গতির কথা জেনেছে, জানি না; সে আমার লেখাপড়ার খরচ চালানোর প্রস্তাব দিলো। আমাদের বাড়িতে এসে। আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বললাম – লেখাপড়া আর করব না। শাহেদভাই নাছোড়বান্দা। বলল – ঠিক আছে, আমার সহযোগিতা না নিলে, ঋণ দিচ্ছি – খাতায় লিখে রাখবে। লেখাপড়া শেষে, চাকরি পাওয়ার পর সুদে-আসলে পুরোটাই শোধ করে দেবে…।
তখন আর শাহেদভাইকে ফেরানোর মতো শক্তি ছিল না আমার। আমি তো জানি, শাহেদভাই কেন আমাকে সহযোগিতা করতে চাইছে, কেন আমাদের বাড়িতে এসেছে; আমিও যে তখন ভেতরে ভেতরে মোমের মতো গলে পড়ছিলাম…।
আমার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলেই আমরা বিয়ে করি। বলা বাহুল্য, শাহেদের ইচ্ছের কাছে নতিস্বীকার করি আমি। তা না-করে উপায়ও ছিল না। শাহেদ আমাকে এতটা ভালোবাসত যে, ওর জন্য বড় কষ্ট হতো আমার…।
বিয়ের চার মাস পর, তখন আমার গর্ভে শাহেদের সন্তান; একদিন খবর পেলাম – শাহেদ ওর বেডরুমের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে উদ্বন্ধনে আত্মহত্যা করেছে। আমাদের বিয়ের খবর ওর পরিবার জেনে গিয়েছিল কিনা, জেনে থাকলে আমাকে তালাক দেওয়ার জন্য ওর ওপর অসহ্য চাপ প্রয়োগ করেছিল কিনা; কিংবা বরফের মতো ভারী অন্য কোনো কষ্ট ছিল ওর বুকের ভেতর, যা ও সহ্য করতে পারেনি – দাদা, এই আপনার গা ছুঁয়ে বলছি, সত্যি – কিছুই জানা নেই আমার…।
সরি, দাদা! আমি এক ভ্রষ্টা 888sport promo code – আপনাকে ছুঁয়ে দিলাম! যাওয়ার পথে না-হয় নদে নেমে স্নান করে যাবেন। আমার কথা শেষ হয়ে এসেছে। আরেকটু ধৈর্য ধরুন, প্লি­জ…।
কমলদা, আপনি তো কবি-মানুষ – ‘মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া’র উপমাটা কোথায় ব্যবহৃত হয়, তা আপনার ভালোই জানা। শাহেদের মৃত্যুর পর বাস্তব অর্থেই যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমি ভেঙে-পড়া আকাশ-খ-ের আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে লাগলাম। শাহেদের মা-বাবা আমাকে মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের গ্রামের মানুষও জানে না আমার বিয়ের খবর। কদিন পরই, আমার শরীরের চাঁদ স্পষ্ট হলেই তারা নষ্টা মেয়ের অপবাদ দিয়ে আমার বিচার বসাবে; শরীরের অর্ধাংশ মাটিতে পুঁতে দোররা কিংবা মাথায় পাথর ছুড়ে মারার ফতোয়া দেবে…।
বলতে পারেন কমলদা, তখন আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম? কীভাবে সবকিছু সামাল দিয়েছি…?
আমার মা অশিক্ষিত কিন্তু বিশাল মন তার। প্রচ- সাহসী। মা আমাকে অভয় দিয়ে বলত – তুই চিন্তা করিস না তানিয়া। যত বিপদই আসুক না কেন – তোকে আমি আগলে রাখব। মায়ের কথায় আমি ভরসা পেতাম। বেঁচে থাকার শক্তি পেতাম…।
গ্রামের মানুষের কুৎসা রটনা, বিচার-সালিশ; দোররা কিংবা পাথর ছুড়ে হত্যার হুমকি – এসব অতিক্রম করে আমার কোলে আসে শুভ্র, আমার সন্তান। মায়ের সাহসিকতার কারণেই তখন সবকিছু সামাল দিতে পেরেছি। মা সবাইকে জোরের সঙ্গে একটা কথাই বলত – যারা আমার মেয়ের বিয়ের খবর বিশ্বাস করেন না, তাদের কেউ মাদারীপুর শহরে যান, জাহাজের মালিক শহীদুল্লাহ সাহেবরে জিজ্ঞাসা করেন; তার ছেলে শাহেদ, যে-নাকি আত্মহত্যা করেছে, সে কোথায় বিয়ে করেছিল…?
শুনেছি, গাঁয়ের অতি-উৎসাহী দুচারজন মোল্ল­া-মৌলবি আমার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। শহীদুল্লাহ সাহেব, মানে আমার শ্বশুর; তাদের কাছে স্বীকার করেছেন – হ্যাঁ, তার ছেলে শাহেদ স্বরূপপুরের হামেদ আলীর মেয়েকে বিয়ে করেছিল, তবে তারা এ-বিয়ে মেনে নেননি। আর ছেলেই যেহেতু এখন নেই, নাতিকেও মেনে নেবেন না…।
বুঝলেন দাদা, খবরটি শোনার পর লাখ-কোটি শুকরিয়া জানাই আল্লাহপাকের দরবারে। আমার শ্বশুর তার ছেলের বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন, এটিই যথেষ্ট। গাঁয়ের কেউ আর বিচার বসাতে পারবে না আমার। তারা আমাদের বিয়ে মেনে নেননি তাতে কী? শ্বশুর-শাশুড়ি বিয়ে মেনে না নিলেই বিয়ে বাতিল বা অবৈধ হয়ে যায় না। আর তারা আমার ছেলেকে নাতি হিসেবে মেনে না নিলেও কোনো ক্ষতি নেই, আমার ছেলেকে আমিই মানুষ করতে পারব…।
তখন আমার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে পাশ করেছি। কিন্তু আমার মনটা খুবই খারাপ – আমি আর পড়তে পারব না। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে তখন আমার একটা কাজ পাওয়া খুবই জরুরি। আমার ছেলেটাকে তো বাঁচাতে হবে। সরকারি চাকরির সুযোগ কবে পাব – সেই অপেক্ষার সময় নেই। মাদারীপুরের এনজিওগুলোতে ছোটাছুটি শুরু করলাম…।
আমার সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য জানি না – সাতদিনের মাথায়ই একটা বড় এনজিওতে চাকরি হয়ে গেল। নির্বাহী পরিচালকের পিএস। বেতন-ভাতার অঙ্কটাও খারাপ না। দাদা শুনতে চান, শুরুতে না-বুঝলেও পরে বুঝতে পেরেছি – কেন আমার চাকরিটা হয়ে গেল! চাকরিটা হলো – আমার বয়স কম, শরীরের কোথাও একচিলতে মেদ নেই; আমার চোখের দিকে তাকালে কেউ চোখ ফেরাতে পারে না – সংস্থার মধ্যবয়সী নির্বাহী পরিচালকও পারেননি। আমার শরীর দেখে মুগ্ধ হয়েই চাকরিটা দিয়েছেন…।
আপনাকে একটা কথা বলি কমলদা, ভেবেছিলাম কথাটা আপনাকে বলব না; এখন মনে হচ্ছে বলেই ফেলি। কবিরা সুন্দরী মেয়েমানুষ দেখলেই তার প্রেমে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বউদির প্রেমে পড়েছিলেন, শোনা কথা – ভাতিজির প্রেমেও পড়েছিলেন। নজরুল যে কত 888sport promo codeর প্রেমে পড়েছেন – তার ইয়ত্তা নেই। আপনিও আমার প্রেমে পড়েছেন; তাই তো আমি অরুণ স্যারের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে তার কোমর জড়িয়ে ধরি – এটা আপনি সহ্য করতে পারেন না। আপনি কি আমার শরীর দেখে মুগ্ধ হননি? আমাকে সেদিন বললেন, কোনো 888sport promo codeর শরীরের ঘ্রাণ শুঁকে আপনি বলে দিতে পারেন – কার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক আছে ওই 888sport promo codeর। এখন, আমিও, আপনার শরীরের ঘ্রাণ শুঁকে বলে দিতে পারি – আপনি মনে মনে হিসাব কষতেন, আমি বিবাহিতা নাকি অবিবাহিতা? বিবাহিতা হলে সিঁথির সিঁদুর কই…?
সে যাক। নির্বাহী-স্যারের ঘন ঘন 888sport app ট্যুর পড়ে। আমাকে সঙ্গে নেন। দামি-দামি গিফট পাই। হোটেলে দুজন দু-কামরায় থাকি কিন্তু রাত ১২টা পর্যন্ত আমার রুমে বসেই গল্প করেন স্যার। গল্প আর কী – শুধুই আমার রূপের প্রশংসা! আমার চুল কেমন, ভ্রু কেমন, চোখ কেমন, ঠোঁট কেমন! তারপর কী হয় – সে তো আর কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝানোর কিছু নেই। শুরুতে নিজেকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিলাম। চার মাসের মাথায়ই টের পাই – আমি অন্তঃসত্ত্বা। নির্বাহী স্যার তখন অন্য মানুষ। তখন আর 888sport appয় তার ট্যুর পড়ে না। একদিন একটা খাম আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন – ২৫ হাজার টাকা, আর ডিসচার্জ লেটার…।
আমি শহরের একটা ক্লিনিকে ভর্তি হই। শরীর থেকে পাপ খসিয়ে ফেলি; কিন্তু পাপ খসাতে গিয়ে তখন আমি মৃত্যুর মুখোমুখি। অনেকদিন থাকতে হয় ক্লিনিকে। তখনই ক্লিনিকের এক ডাক্তারের বন্ধু অরুণ বাবুর সঙ্গে পরিচয় ঘটে আমার। তিনি তখন মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভের চাকরি করতেন। আমাকে বিনামূল্যে ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করেন, আমার শরীরের খোঁজখবর নেন প্রতিদিন। হাতে থাকে কমলা কিংবা আঙুরের প্যাকেট। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা ছিল না আমার। সতেরোদিন পর ক্লিনিক থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি চলে যাই। মাকে কিছুই বলি না। কী বলব বলুন? বলার তো কিছু ছিল না। মা কিছু টের পেয়ে থাকলে পেতে পারে, কিন্তু মা কিছুই বলে না। আমি আমার ছেলেটাকে বুকে চেপে ধরে গোপনে শুধু কেঁদে যাই…।
মাসতিনেক পর অরুণ চক্রবর্তী টিপিএলে আমার চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। তখন তিনি টিপিএলের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর। সেই থেকে আমি তনুশ্রী; সেই থেকে এখানে আছি। আরো কিছু শুনতে চান, কমলদা…?
অর্ঘ্য কমলের তখন আর কিছু শোনার সাহস নেই। যথেষ্ট হয়েছে…।
আমরা যেখানে কুমার নদের তীরে ঘাসের ওপর বসে আছি, সেখানে অন্ধকার নেমে এসেছে। আমি তনুশ্রীর হাত দুটো চেপে ধরলাম – ‘আর কিছুই শুনতে হবে না তনু, তুমি একটা 888sport app download apk আবৃত্তি করো…।’
তনুশ্রীর হাত আমার মুঠোবন্দি। ও 888sport app download apk আবৃত্তি শুরু করল। আমার 888sport app download apkই –
সকালের সূর্য ওঠার আগেই যদি
খাঁচার পাখি উড়ে যায় –
ঐশ্বর্য নদীর জল জীবনের সমান বয়সী।
নিঃসঙ্গ চাঁদ অসম ভালোবাসার
বেদনায় জেগে থাকে…।

আমি অন্ধকারেও দেখছি, তনুশ্রীর চোখে জল। আমি ওর চোখ থেকে জল শুষে নিলাম। আমার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়েই হু-হু করে কেঁদে উঠল তনুশ্রী – ‘এ কী করছেন কমলদা? আমি একটা পাপিষ্ঠ 888sport promo code…।’
– কী বলছ তনুশ্রী! তোমার পাপ হবে কেন? তুমি সবার পাপ নিজের ভেতর ধারণ করে বরং পুণ্যবতী হয়েছ…।
– না, না দাদা। ধর্মশাস্ত্র তা বলে না…।
– শাস্ত্র বলে, গঙ্গার জলে স্নান করলে মানুষের পাপমুক্তি ঘটে। গঙ্গার পুত্র কুমার। কুমারের জলে স্নান করলে আমাদেরও পাপমোচন ঘটবে। চলো, আমরা কুমারের জলে নামি…।
তখন ঘাসের অন্ধকারে আমাদের পাপ-পুণ্য বিচারের অতীত…।