পারভেজ হুদভয়

প্রগতিশীল, উদারপন্থি ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার অধিকারী পাকিস্তানি পদার্থবিদ পারভেজ আমিরালি হুদভয়কে প্রখ্যাত 888sport apk সাময়িকী দি নিউ সায়েন্টিস্ট আখ্যায়িত করেছে The Voice of Reason in Pakistan – এই নামে। তিনি তাঁর নিজ দেশ পাকিস্তানের পশ্চাৎপদ সমাজে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় উগ্রবাদ, 888sport apkের ইসলামীকরণ, পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইন, সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ, 888sport promo codeদের পরাধীনতা,  পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ, কাশ্মির ও আফগানিস্তানে ধর্মীয় জিহাদ ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। বিভিন্ন ফোরামে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের হীন চোখে দেখা ও বৈষম্যপূর্ণ আচরণ এবং উনিশশো একাত্তর সালে নির্বিচার গণহত্যারও নিন্দা জানিয়েছেন।

উনিশশো পঞ্চাশ সালে করাচিতে জন্ম নেওয়া হুদভয় করাচি গ্রামার স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তাঁর গ্র্যাজুয়েশনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে চলে যান এবং এম.আই.টি থেকে বৈদ্যুতিক প্রকৌশল ও গণিতে ডাবল বি.এসসি ডিগ্রি নেন। পরে তিনি সলিড স্টেট ফিজিক্সে এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ১৯৭৩ সালে ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার জুনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পদার্থবিদ্যায় পি.এইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নকালেই তিনি একবাল আহমেদ, নোয়াম চমস্কি ও 888sport app প্রগতিশীল অধ্যাপকের প্রভাবে রাজনীতি-সচেতন হয়ে ওঠেন এবং বামপন্থি চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন।

সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে তিনি রাওয়ালপিন্ডির একটি প্রগতিশীল ট্রেড ইউনিয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন, যা একটি মার্কসবাদী দলের সহযোগী অংশ ছিল। জেনারেল জিয়াউল হকের সামরিক আইন জারির ফলে তাঁদের দলের ও 888sport app প্রগতিশীল দলের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায় – তবে তাঁরা তা গোপনে চালিয়ে যেতে থাকেন। নানা প্রতিকূলতার মুখেও তিনি প্রায় পাঁচ দশক – ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইসলামাবাদের কায়েদে আজম বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা চালিয়ে গেছেন এবং জনস্বার্থে নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। তিনি এ সময়কালে বহু ছাত্রছাত্রীকে প্রগতিশীল বামপন্থি চিন্তায়ও উদ্বুদ্ধ করেছেন।

পারভেজ হুদভয় ১৯৯১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় 888sport apk ও শিক্ষার ওপর পাকিস্তান টেলিভিশনে উর্দুভাষায় তিনটি প্রধান ডকুমেন্টারি সিরিজের হোস্ট ও লেখক। তিনি ২০০৩ সালে 888sport apk জনপ্রিয়করণে ইউনেস্কোর কলিঙ্গ 888sport app download bdে ভূষিত হন। তিনি ১৯৮৪ সালে আবদুস সালাম 888sport app download bd, ১৯৯৮ সালে ফুলব্রাইট 888sport app download bd লাভ করেন। তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ছিলেন এবং আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি থেকে বিদেশি নীতি-সম্পর্কিত শীর্ষ ১০০ গ্লোবাল থিঙ্কারের তালিকায় ৮৫ নম্বরে তালিকাভুক্ত হন।

নিচের সাক্ষাৎকারটি পারভেজ হুদভয় একজন কানাডিয়ান সাংবাদিককে প্রদান করেন, যা থেকে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই আমরা জানতে পারব।

পারভেজ হুদভয়ের সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আমি যখন আপনার লেখা Islam and Science বইটি পড়লাম, তখন আমি আপনার জ্ঞানের গভীরতা এবং মনের বিশ্লেষণীক্ষমতা দেখে খুবই চমৎকৃত হই। এরপর আমি যখনই শুনতে পেলাম যে আপনি কানাডা আসছেন, তখন থেকেই আমি অপেক্ষা করছি আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি সাক্ষাৎকার নিতে। আমি দেখতে পাই যে, আপনার রয়েছে জীবনের প্রতি একটি আশাবাদী মনোভাব, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি মানবতাবাদী দর্শন। আমি খুবই জানতে আগ্রহী, আপনি এমন একটি মনোভাব কীভাবে পেয়েছেন? এজন্য প্রথমেই জানতে চাচ্ছি যে, আপনার পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ কেমন ছিল, যার মধ্যে আপনি বেড়ে উঠেছেন?

পারভেজ : আমার জন্ম একটি ঈসমাইলি পরিবারে। আমার নানা ছিলেন হায়দরাবাদের কাছে একটি এলাকার, যাকে এখন ডাকা হয় সুলতানাবাদ বলে। আমাদের ধর্মগুরু আগা খানের প্রতি তিনি ছিলেন একান্তই নিবেদিতপ্রাণ। তিনি তাঁর গ্রামে প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন। সেসব জমিজমা আগা খানকে দান করে তিনি শুধু এগুলোর তত্ত্বাবধানকারী হয়ে যান। আমার দাদাও খুব ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি তাঁর নিজের টাকা দিয়ে করাচিতে আমাদের প্রথম জামাতখানা তৈরি করেন। এর ফলে সুলতান মোহাম্মদ শাহ১ তাঁকে মুখী (প্রধান) উপাধি দেন। আমার পদবির ‘হুদভয়’ কথাটি আসে হুদের ভাই থেকে, যে হুদ কোরানে উল্লিখিত স্বল্পখ্যাত একজন নবী। সুতরাং আমি এমন একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছি ও বেড়ে উঠেছি, যেখানে ঈসমাইলি ধর্মীয় মতবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুব গভীর।

অবশ্য আমার বাবা এই পরিচয়টি নিয়ে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। তিনি নিজেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ঈসমাইলীয়দের এই প্রথাটি খুবই শোষণকারী একটি পদ্ধতি। তাঁর এই বিদ্রোহী বা প্রতিবাদী মনোভাব আমার ও আমার ভাইদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল। আর এর ফলেই আমরা আমাদের চাচাতো ভাইদের চেয়ে কম ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে বড় হয়েছি। আমার বারো বছর বয়সে আমি প্রথমবার আমার মধ্যে একটি বিদ্রোহী সত্তাকে অনুভব করতে সমর্থ হলাম। আমার বড় বোন নামাজ পড়া ও রোজা রাখার এই প্রথা নিয়ে খুবই বিরক্ত ছিল, যেটি পরে তার থেকে আমার মধ্যেও সংক্রমিত হয়। আমি একসময়ে ঈসমাইলি ধর্মীয় প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি। আমার মনে পড়ে যে, ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি ঘোষণা করি – আগা খান একজন শোষণকারী প্রতারক, যা শুনে আমার মা-বাবা রাগে অন্ধ হয়ে যান। একদিন তাঁরা যখন বাড়ির বাইরে ছিলেন, তখন আমি আগা খানের সব ছবি ঘর থেকে নিয়ে বাইরে ফেলে দিই এবং ভেঙে ফেলি। এ ঘটনার পর ভয়ে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। অবশ্য আমার মা-বাবা আমার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ভয় পেয়ে আমাকে ক্ষমা করে দেন এবং আমি পরদিন বাড়ি ফিরে আসি।

আমার মায়ের তেমন কোনো বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাস ছিল না, তবে একজন ধর্মবিশ্বাসী হিসেবেই তিনি নিয়মিত আমাদের জামাতখানায় যেতেন। এগুলো আমাকে কিছুটা প্রভাবিত করলেও আমি বেশি প্রভাবিত করেছি আমাদের বোনদের আমার বিদ্রোহী মনোভাব দিয়ে।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, তখন সেখানে পরিস্থিতি কেমন দেখলেন?

পারভেজ : আমি যখন পাকিস্তানে আমার স্কুল শেষ করলাম, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজে আবেদন করা শুরু করলাম। একটি পূর্ণকালীন বৃত্তি না পেলে আমার যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করতে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই তখন ছিল না। আমি ভাগ্যবান যে, এম.আই.টি আমাকে তেমনই একটি বৃত্তি প্রদান করে, তবে আমাকে আমার ট্যুইশান ফি’র ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ৩ হাজার ২০০ ডলার প্রদান করতে হবে।

আমি জানতাম যে, এর সবটুকু টাকাই আমার নিজেকেই উপার্জন করতে হবে। তাই বোস্টনে পৌঁছার পর প্রথমদিন থেকেই আমি চাকরি খোঁজা শুরু করি। আমার প্রথম চাকরিটি আমি পাই ক্যাফেটেরিয়ায়, যেখানে আমার কাজ ছিল টয়লেট পরিষ্কার করা। চিকিৎসাবিষয়ক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অংশ নিই। শিগগিরই সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা করে কাজ করতে আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠি। এতো কষ্টের পরও আমি খুব খুশি ছিলাম যে, আমি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এম.আই.টি’র ক্লাসগুলো আমি খুব উপভোগ করতাম। নতুন একজন শিক্ষার্থীর জন্য এগুলো ছিল খুবই চিত্তাকর্ষক, তাই আমি আমার সাধ্যের বাইরেও কোর্স নেওয়া শুরু করি।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনি যখন এম.আই.টি-তে আসেন, তখন আপনার বয়স কত?

পারভেজ : আমার বয়স তখন ১৭ বছর। আমার কাছে তখন মনে হতো যে, আমি কোনো বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটছি এবং তার সৌন্দর্য উপভোগ করছি। এতো বেশি ক্লাস আমি কোর্সের জন্যে নিই যে, আমার ঘুমানোর জন্যও পর্যাপ্ত সময় মিলতো না। এর ফলে প্রথম বছরের শেষে আমার দেখা দেয় নার্ভাস ব্রেকডাউন। আমার পরিবারও এ-সময়ে একটি গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায়, তাই সে-সময়ে তাদের আমার টাকা দিয়ে সাহায্য করতে হতো। কিন্তু আমি তখন এতোটাই হতোদ্যম হয়ে পড়ি যে, আমি আর আমেরিকায় থাকতে চাই না – আমি আমেরিকাকে চূড়ান্তভাবে ঘৃণা করতে থাকি।  আমার কোর্স নিয়ে অবশ্য আমি খুব খুশি ছিলাম, কিন্তু মার্কিন সমাজের প্রতি আমি চূড়ান্তভাবে বিতৃষ্ণ হয়ে পড়ি। সেখানে তখন আমার কোনো বন্ধুও ছিল না, যার সঙ্গে আমি আমার সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারতাম। তখন আমি নিজেকে মনে করতাম যে বিশাল মার্কিন সমাজের যন্ত্রে আমি একটি ক্ষুদ্র স্ক্রু মাত্র। এভাবেই ধীরে ধীরে আমি হয়ে পড়ি যান্ত্রিক, নিরাসক্ত, বিবিক্ত একজন মানুষ।

আমার জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনেই আমি তখন একটি সেমিস্টার ব্রেক দিয়ে পাকিস্তানে ফিরে যাই। সেখানে ফিরে আমি আমার স্কুলেই জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে পুরো একটি সেমিস্টার কাটাই, যে-স্কুলটির সঙ্গে আমার রয়েছে আত্মার একটি বন্ধন। এখন পিছন ফিরে তাকালে মনে হয় যে এটি ছিল একটি ভালো অভিজ্ঞতা এবং মাত্র একটি সেমিস্টার পরই আমি আবার নিজেকে আমেরিকা ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত বলে দেখতে পেলাম।

আমেরিকা ফিরে আমি আবার সবকিছুই ঠিক আগের মতো শুরু করলাম – প্রচুর পরিমাণে কোর্স এবং সেইসঙ্গে ৩০ ঘণ্টা কাজ। তবে এ-সময়ে আমি আর কোনোরকম মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হইনি। এ-সময়ে আমি যেন পকেট ভর্তি করে মণি-মানিক্য পূর্ণ করছি – চার বছর পর আমার ঝুলিতে দুটি স্নাতক ডিগ্রি, যার একটি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যটি গণিতে। সেইসঙ্গে পদার্থবিদ্যায় একটি মাস্টার্স ডিগ্রি। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় নিয়েই আমি এগুলো সম্পন্ন করেছি। আমি যদিও আমার ওপর শারীরিক অত্যাচার করেছি, তবে আমার এ-কঠোর পরিশ্রমের সুফলও আমি তখন পেতে থাকি।

এ-সময়েই আমার মধ্যে ঘটে একটি রাজনৈতিক রূপান্তর। এ-রূপান্তরটি অবশ্য এসেছে তখনকার সমকালীন
পরিবেশ-প্রতিবেশ থেকেই। সে-সময়ে সারা বিশ্বেই ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী নাগরিক আন্দোলন চরমে পৌঁছেছিল। আবার একই সময়ে ১৯৭১ সালে আমার দেশ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তার পূর্বাংশের বাঙালিদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল। এর বদলে অচিরেই একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে 888sport appsের আবির্ভাব ঘটে। আমার মনে আছে যে, তখনকার টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলোতে আমি নিয়মিত দেখতে পেতাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চালানো পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ। নিউইয়র্ক টাইমসে সে-সময়ে ছবি দেখতে পাই একজন পাকিস্তানি সেনার কর্তিত মুণ্ড, যা আমাকে পরবর্তী কয়েকদিন ধরে মানসিক কষ্ট দিয়েছে।

এ-সময়কালটিতে আমার সঙ্গে এমন কিছু লোকের পরিচয় হয়, যা আমার জীবনের প্রবাহ সম্পূর্ণ উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। এই লোকগুলোর মধ্যে একজন ছিলেন একবাল আহমেদ২। আমি যখন ১৯৭১ সালে তাঁকে প্রথমবার দেখি, তখন তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন। এই প্রথমবার আমি তাঁর কোনো বক্তব্য শুনি, কিন্তু প্রথমবারেই আমি যেন তড়িতাহত হই। ভিয়েতনামে আমেরিকান কার্পেট বম্বিং-এর ফলে সৃষ্ট ভিয়েতনামীদের দুর্দশা তিনি এমনভাবে বর্ণনা করছিলেন যে, তা আমার হৃদয়ের গভীরে গিয়ে আঘাত হানে। অন্য আর একজন ব্যক্তিত্বও আমাকে আকৃষ্ট করেছিল, তিনি হচ্ছেন নোয়াম চমস্কি। আমি শুধু দূর থেকেই তাঁর পূজা করতাম, কখনো তাঁর কাছে যাইনি। এ-রকমই কিছু লোক আমার অন্তরকে পরিবর্তন করে দেয় এবং আমি মার্কিন সমাজ থেকে বিযুক্ত হয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবতে থাকি।

আমার এই বিচ্ছিন্নতাবোধ এমনকি কট্টর মার্কসবাদী গোষ্ঠীর থেকেও আমাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তাদের সঙ্গে আমি রাজনৈতিকভাবে একাত্মতা বোধ করলেও সেটা সামাজিকভাবে নয়। এম.আই.টি’তে তাদের সঙ্গে মিলে আমি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ ও ভাঙচুর কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। একবার এরকম একটি কর্মসূচিতে পুলিশ আমাদের ঘিরে ফেলে এবং আমাদের প্রভোস্ট তখন আমাকে হুমকি দেন যে, আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমি এতে কিছুটা ভীত হলেও তখন আমার আর কিছু করার ছিল না। তখন আমার পিছনে ছিল একটি বড় জমায়েত, যারা হঠাৎ করেই আমাকে সামনের দিকে ঠেলতে থাকে। এ-সময় হঠাৎ শুনি যে একজন পুলিশ অফিসার পিস্তল দিয়ে গুলি চালাচ্ছেন। সবাই ভীত হয়ে চারদিকে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং ছুট লাগায় এবং এভাবেই আমি বিপদ থেকে বেঁচে যাই।

আমার এই রাজনৈতিক রূপান্তরের মাঝেও পদার্থবিদ্যার প্রতি আমার ভালোবাসা অব্যাহত ছিল। পাকিস্তানে থাকতে আমার স্বপ্ন ছিল একজন প্রকৌশলী হওয়া – আমি তখন রেডিও ট্রান্সমিটার, অপটিক্যাল যোগাযোগ যন্ত্রপাতি ইত্যাদি দিয়ে নানা কিছু বানাতাম এবং নানারকম স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু আমি যখন এম.আই.টি’তে এলাম, তখন প্রকৌশল বিষয়ে আমি আমার সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি – এর বদলে আগ্রহী হয়ে উঠি নানা বিমূর্ত বিষয়, যেমন স্থান ও কালের প্রকৃতি ইত্যাদি নিয়ে। ফিলিপ মরিসনের৩ মতো ব্যক্তিত্ব আমার এ-আগ্রহের পেছনের কারণ। সে-সময় আমি ভাবতে শুরু করি যে, পৃথিবীতে পদার্থবিদ্যার চেয়ে আকর্ষণীয় আর কিছু হতে পারে না। এভাবেই আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করতে থাকি, কঠোর পরিশ্রমের কাজ করতে করতে আমার পরিবারকে সাহায্য করতে দেশেও কিছু টাকা-পয়সা পাঠাতে থাকি।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনি যখন পড়াশোনা ও কাজ নিয়ে ব্যস্ত, তখন কি কোনো সামাজিক মেলামেশা বা ডেটিং করার সুযোগ পেতেন?

পারভেজ : না, পড়াশোনা ও কাজের বাইরে আমার আর কোনো জীবন ছিল না। আমি প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা করে পড়াশোনা ও কাজ করতাম, আর তা সপ্তাহে সাতদিনই। এর অন্যথা হওয়ার কোনো উপায় ছিল না, কারণ আমি যথাসম্ভব দ্রুত পড়াশোনা শেষ করে পাকিস্তানে ফিরে যেতে চাচ্ছিলাম। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমি যাতে সেখানে গিয়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারি। ততদিনে আমি সব প্রথাগত, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্রব ত্যাগ করেছি। এদের নিয়ে আমার আর কিছুই করার ছিল না। পাকিস্তান ছাত্র সংসদের আমি ছিলাম সভাপতি, কিন্তু তার বেশিরভাগ নেতার সঙ্গে আমার ছিল মতপার্থক্য – বিশেষ করে 888sport appsের অভ্যুদয়কে কেন্দ্র করে। এটি শেষ পর্যন্ত চরম তিক্ততায় পৌঁছায়। যখনই এ নিয়ে আমরা কথা বলতাম, তা প্রায় হাতাহাতিতে রূপ নিত। আমি মনে করতাম যে, পাকিস্তান বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে, যদিও অন্য বন্ধুরা তা মনে করতো না। এ সমস্ত কারণে আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে দ্রুত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে চাইতাম।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : এটি দেখা যাচ্ছে যে, সে-সময়ে আপনি একটি উগ্রবাদী সময় পার করে এসেছেন।

পারভেজ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমার ঘৃণা ছিল তীব্র আবেগ থেকে জাত। এখন যখন এত বছর পর আমি পিছন ফিরে তাকাই, আমি তখন এটাকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারি না। আমি তখন মনে করতাম যে, সমস্ত মার্কিন সমাজ চাইছে ভিয়েতনামকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দিতে। নিক্সন যখন হ্যানয়ে বোমা বর্ষণ শুরু করেছেন, তখনকার কথা আমার খুব মনে পড়ে – আমি তখন আমার বোনের সঙ্গে একটি গাড়িতে বসে রেডিওতে খবর শুনছিলাম। যখন আমি এরকম নির্বিচারে বোমা ফেলার খবর পেলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই যে, সেদেশে আর আমার থাকা চলবে না – মার্কিন মুলুক থেকে আমি, যেভাবেই হোক, দ্রুত বের হয়ে আসতে চাই।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : পাকিস্তানের সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আপনি কি পরিবর্তন আনতে চাইছিলেন – সে-সম্পর্কে আপনার কি কিছু মনে পড়ে?

পারভেজ : রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে আমি ছিলাম মার্কসিস্ট। আমি তখন বিশ্বাস করতাম যে, আমাদের সামনে এগোনোর একটাই মাত্র পথ রয়েছে – আর তা হলো সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ। আমি ১৯৭৩ সালে যখন দুটো বি.এসসি এবং একটি এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করি, তখন পাকিস্তানি দূতাবাসের বুলেটিনে একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। এটি তখনকার ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এখন যেটিকে কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়) জন্য। আমি তাতে আবেদন করি এবং একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য বোস্টন থেকে ট্রেনে ওয়াশিংটনে যাই। আমি রাতটা একটি উন্মুক্ত পার্কে কাটিয়ে সকালবেলা দূতাবাসে গিয়ে হাজির হই। তারা আমাকে মাত্র একটি প্রশ্নই করে – তুমি কত বেতন চাও? আমি উত্তর দিই যে, যুক্তিসংগত যে-কোনো একটা 888sport free bet। তখন তারা বলে যে, তোমার নিয়োগ হয়ে গেল, আর তখন আমিও ট্রেনে করে বোস্টন ফিরে গেলাম।

বোস্টনে ফিরে যাওয়ার দু’মাস পর দূতাবাস থেকে আমি একটা চিঠি পেলাম, যাতে বলা হলো যে, ইসলামাবাদে আমাকে মাসিক ৭০০ রুপি বেতনে পদার্থ888sport apk বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে-সময়ে বেতনের টাকার পরিমাণ নিয়ে আমি কিছুই কেয়ার করিনি। আমি সে-নিয়োগপত্রটি একটি বইয়ের ভেতর রাখলাম এবং এর কিছুদিন পর যখন কিছু পুরনো 888sport free bet login বিক্রি করে ফেললাম, তখন সেইসঙ্গে চিঠিটিও হারিয়ে গেল। কিছুদিন পর আমি পাকিস্তানে ফিরে গেলাম এবং জীবনে প্রথমবারের মতো ইসলামাবাদে গেলাম। সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ888sport apk বিভাগে গিয়ে বিভাগীয় প্রধান, অর্থাৎ চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করলাম। চেয়ারম্যান আমাকে প্রশ্ন করলেন – তুমি কে? আমি তাঁকে বললাম যে, আমি এ-বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্তি পেয়েছি। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন – তোমার নিয়োগপত্রটি কোথায়? আমি তাঁকে বললাম যে, তা হারিয়ে ফেলেছি। এটি শুনে তিনি বললেন, দুঃখিত, সেক্ষেত্রে আমি তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কানিজ ইউসুফের কক্ষে গেলাম এবং তাঁকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম। তিনি সব শুনে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। বললেন – তোমাকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাগতম। আমি শুনেছি তুমি একজন বামপন্থি। এখানে জামায়াতকে নিয়ে আমাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, আমি আশা করি তুমি
এ-বিষয়ে আমাদের কিছুটা সাহায্য করতে পারবে।

কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে তিনি আবার আমাকে বললেন – আমি এ-বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এম.আই.টি’র মতো করে গড়ে তুলতে চাই। এটি শুনে আমি ভাবলাম, আমার সামনে কী একটি মহান চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি আমাকে আবার বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে ফেরত পাঠালেন এবং বলতে বললেন যে, তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। চেয়ারম্যান তবু আমাকে গ্রহণ করতে চাইলেন না, তিনি বললেন – তুমি উপাচার্যের একজন এজেন্ট। আমি তখন মহাসমস্যায় পড়ে গেলাম। তখন আমার পকেটে মাত্র দেড়শো রুপি রয়েছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আমি কী করব। আমি যখন একটি নির্জন জায়গায় বসে ভাবছি, এ-সময়ে একজন আমার কাছে এসে বললেন – আপনাকে দেখে বেশ ইন্টারেস্টিং মানুষ বলে মনে হচ্ছে। আমি যখন আমার সমস্যা তাঁকে খুলে বললাম, তখন তিনি বললেন, তিনি নিজেও একজন বামপন্থি। তখন তিনি আমাকে নিয়ে তাঁর আরো বেশ কয়েকজন বামপন্থি বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তাঁরা সবাই আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের মাঝখানে পড়ে গেলেন?

পারভেজ : হ্যাঁ, ঠিক তাই। তবে পরে আমি বুঝতে পারলাম যে, যৌক্তিক দিক থেকে বিভাগীয় চেয়ারম্যান সাহেব ঠিকই বলেছেন। আসলে তখন সহকারী অধ্যাপক হওয়ার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা আমার ছিল না। যেহেতু আমার তখনো কোনো পিএইচ.ডি ডিগ্রি ছিল না, তাই বিভাগীয় চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে বড়জোর একজন লেকচারার হিসেবে নিয়োগ দিতে রাজি হয়েছিলেন। আর আমি তাতেই রাজি হয়ে গেলাম। কারণ আমি একটা দ্রুত সমাধান চাইছিলাম। সে-সময়ে আমি এমনকি সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের মধ্যে পার্থক্য কী, তা-ও জানতাম না। আমাকে পরে একটি কমিটির সামনে উপস্থিত হতে হলো, যাঁরা আমাকে কিছু টেকনিক্যাল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। এভাবেই আমার প্রভাষক পদে নিয়োগ চূড়ান্ত হলো। সে-কমিটি আমাকে নিযুক্তি দিয়ে উপাচার্যের কাছে একটি চিঠি দিলো এবং তাতে আমার বেতন ৮০০ রুপি বলে সাব্যস্ত করলো। উপাচার্য আবার চিঠিটি এই বলে ফেরত পাঠালেন যে, সহকারী অধ্যাপকের বেতনই তো ৭০০ রুপি! যখন এ-সমস্ত টানাপোড়েন চলছিল, তখন উপাচার্য নিশ্চিত হলেন যে, আমি আসলেই একজন অদ্ভুত মানুষ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে একটি চিঠি লিখলেন, যাতে বললেন – হুদভয় একজন বামপন্থি; আর সে এখন সি.আই-এর পে-রোলে রয়েছে। সে একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি। তাকে যেন কোনো বাড়ি ভাড়া দেওয়া না হয়, যাতে সে অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

যা হোক, এ-সমস্ত বাধা অতিক্রম করেই আমি কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কর্মজীবন শুরু করি, আর এখন পর্যন্ত এই একই জায়গায় ২৭ বছর যাবত টিকে আছি। অবশ্যই আমি এখন একজন অধ্যাপক। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবারই উন্নতি হতে থাকে। তবে আমার নিযুক্তির পর পরবর্তী দু-বছর আমি ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি এবং গ্রামে গিয়ে চেয়ারম্যান মাওয়ের বাণী প্রচার করতে শুরু করি। এ-দুটো বছর আমার জন্য যদিও অনেক কষ্টের ছিল, তবে আমি এ-সময়ে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : এখন আপনার পারিবারিক জীবনের দিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া যাক। কখন এবং কীভাবে আপনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন?

পারভেজ : আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমি প্রথম পরিচিত হই আমার গ্রামে যাওয়াকে উপলক্ষ করে। আমরা দু-মাইল দূরে একটি গ্রামে যেতাম এবং এই যাত্রাপথটি ছিল খুবই বন্ধুর ও কষ্টসাধ্য। সেখানে যাওয়ার জন্য কোনো রাস্তা ছিল না, তাই যথেষ্ট শারীরিক শক্তিসম্পন্ন মানুষের জন্যও এ-যাত্রাপথটি ছিল কষ্টকর। এ-সময়ই সেখানে দেখা দিলো মহামারি। আমাদের দলে একজন চিকিৎসক ছিলেন, যিনি বললেন যে, এ-সময়ে গ্রামের লোকদের টিকা দেওয়া জরুরি, যাতে তারা মৃত্যুমুখে পতিত না হয়। সেখানকার পুরুষদের যদিও আমরাই টিকা দিতে সমর্থ ছিলাম, কিন্তু মহিলাদের টিকা দিতে হলে অবশ্যই একজন মহিলা প্রয়োজন। তখন আমরা আলোচনা করে আমাদের এক বন্ধুর বোনকে এই দায়িত্ব দিলাম। তিনি তা করতে সম্মতও হলেন। এভাবেই আমরা একসঙ্গে টিকা দিতে গ্রামে যেতাম এবং এভাবেই আমাদের মাঝে পরিচয় গাঢ় হতে থাকে। এরপর একসময়ে আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। তবে এ-দুটো বছর ছিল সত্যিই কষ্টের।

এ-সময়ে আমি ইসলামাবাদের কাছে একটি স্কুলে কিছুদিন ছাত্রদের পাঠদান করি এবং সে-সময়ে দেখতে পাই যে, গ্রামের স্কুলের শিক্ষকরা কী পরিমাণ নির্দয়। বলতে গেলে তারা অনেকেই ধর্ষকামী বেজন্মা টাইপের। নিরীহ ছাত্রদের ওপর তারা তাদের গায়ের জোর প্রয়োগ করতো। আমিও এ-সময়ে বুঝতে পারি যে, মানুষের প্রথাগত চিন্তাধারাকে বদলানোর চেষ্টা করাটা কতটা কঠিন। এ-সময়েই আমার উপলব্ধি হয় যে, আমার নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতাতেও ঘাটতি রয়ে গেছে এবং আমার একটি পিএইচ.ডি ডিগ্রি থাকা জরুরি। তাই আমি আবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তিন বছর সময় নিয়ে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করলাম এবং আবার পাকিস্তানে ফিরে এলাম।

কিন্তু পাকিস্তানে ফিরে এসে আমি দেখতে পাই যে, পাকিস্তানে একটি বিশাল রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। আমি দেশে ফেরার কয়েক মাসের মধ্যেই জুলফিকার আলি ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়া হলো এবং জেনারেল জিয়া তাঁর স্বরূপে প্রকাশ পেলেন। আমাদের দেশের ইতিহাসে এটি ছিল একটি দুর্ভাগ্যের অধ্যায়। অনেক লোকই অবর্ণনীয় দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করতে লাগলেন, বিশেষ করে যারা জিয়ার সামরিক শাসনের বিরোধিতা করছিলেন। আমি যদিও এদিক দিয়ে কিছুটা ভাগ্যবান, তবে আমার অনেক বন্ধুই ঠিক ততোটা ভাগ্যবান ছিলেন না। আমরা আমোর-ই-পাকিস্তান নামে একটি সাময়িক পত্রিকা বের করতাম, যা সামরিক শাসনের বিরোধিতা করে সংগ্রাম করে যেত। আমরা দেয়ালে দেয়ালে সামরিক শাসনবিরোধী স্লোগান লিখে যেতাম। এই উদ্দেশ্যে আমি এমনকি একটি চমৎকার যন্ত্রও আবিষ্কার করেছিলাম, যা দিয়ে পনেরো মিনিটের কাজ মাত্র দু-মিনিটে সারা যেত। এটি ছিল একটি ডিটারজেন্ট বোতলের ভেতর কালি পুরে তার মুখে একটি ব্রাশ লাগিয়ে বানানো এবং এটি সত্যি খুব সুন্দরভাবে কাজ করতো।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাকিস্তান সফর করতে আসার প্রাক্কালে আমরা আমেরিকা ও জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে স্লোগান লিখে সারা শহর ভরে দিয়েছিলাম। আর্মি, পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা সবাই এতে অবাক হয়ে গিয়েছিল। উপর্যুপরি আমরা তা করতে থাকলে তারা রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদে রাত জেগে পাহারা দেওয়া শুরু করলো। এ-সময়টিকে আমি আবার আমার পোস্ট-ডক্টরালের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আবেদন করি। আমার বন্ধুরা গ্রেফতার হওয়ার মাসখানেক আগেই আমি আমেরিকা চলে যাই। জিয়াউল হক সে-সময়ে খুব ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন – কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি এই ক্যান্সারকে উপড়ে ফেলতে চাই। আমার বন্ধুরা অনেকেই সে-সময়ে জেলে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের
দু-একজন মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হয়ে পড়ে, যা থেকে তারা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেনি। তাদের মধ্য থেকেই একজন নির্যাতনের ফলে আমার নাম প্রকাশ করে দেয় এবং পুলিশ এসে আমার বাসায় হানা দেয়। তবে সৌভাগ্যবশত এর আগেই আমার শ্যালক সব সন্দেহজনক কাগজপত্র বাসা থেকে সরিয়ে ফেলে এবং তারা তেমন কিছুই পায়নি। অবশ্য তারা আমাকে ঠিকই অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করে।

আমার পোস্ট-ডক্টরালের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক বছর কাটিয়ে আমি আবার পাকিস্তানে ফিরে আসি। তখন আমি আতঙ্কিত হয়ে দেখতে পাই যে, সারাদেশে শুধু ইসলামি শাসন চালু হয়েছে, তা নয় – এমনকি জ্ঞান-888sport apkেরও ইসলামীকরণ ঘটেছে। আর সে-সময়টিতেই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার চেয়ে জ্ঞানের এই ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে লেখালেখি করাই বরং পাকিস্তানের জন্য বেশি প্রয়োজনীয়।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনার এই রাজনৈতিক দিকটি কি কোনোভাবে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলেছে?

পারভেজ : আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আমার স্ত্রী একবাল আহমেদের ভাগ্নি। আমরা দুজনেই তাঁকে খুব ভালোবাসতাম এবং তাঁর মৃত্যুতে আমরা খুবই শোকাহত হই। কাজেই আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ ছিল একটাই। আমাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠার সময় আমরা তাদেরও সেভাবেই মানুষ করতে চেষ্টা করেছি। আমরা চাইতাম যে তারা যেন চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে এবং নিজেদের জীবনের পথ নিজেরাই খুঁজে নেয়। আমি খুশি যে তারা তা করছে এবং একটি সঠিক জীবন-দর্শন নিয়েই তাদের ভবিষ্যৎ পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : তাদের বয়স কত?

পারভেজ : বড়জনের বয়স ২০ এবং ছোটজনের ১৫। আর আশ্চর্যের বিষয় এই যে, তাদের দুজনেরই জন্মদিন একই তারিখে।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনার রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের চিন্তাভাবনা কীরকম ছিল?

পারভেজ : অবশ্যই তারা সবসময়ই ভীত ও উদ্বিগ্ন থাকত। তারা এটাকে খুবই বিপজ্জনক বলে মনে করতো। তবে মানুষকে কিছু পেতে হলে তো তার জীবনে কিছু ঝুঁকি নিতেই হয়।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : কিন্তু এখন তো আপনাকে মনে হয় অনেক শান্ত, সংহত এবং দয়াপরায়ণ। আগে আপনাকে যতটা রাগী বলে মনে হতো, এখন সেরকমটা আর মনে হয় না। কীভাবে আপনার মধ্যে এই পরিবর্তনটা এলো?

পারভেজ : বলতে পারেন যে আমার নিজের প্রয়োজনেই আমাকে পরিবর্তিত হতে হয়েছে। আমার নিজের কাছেই নিজেকে মনে হয় মানিয়ে চলার পক্ষে আমি একজন কষ্টকর ব্যক্তি। অবশ্য আমার ধারণা, আমার স্ত্রী বলবেন যে শুধু কষ্টকরই নয়, আমি তার জন্য একজন অসম্ভব ব্যক্তি। আমার অভিজ্ঞতা আমাকে বলে যে, আপনি যখন রাগান্বিত হবেন, তখন তা প্রকাশ না করাই ভালো। আপনি খুব অধের্য হলেও আপনাকে ধৈর্য দেখাতে হবে। অনেক সময়ই আমি খুব হতাশ হই যে, আমাদের যতটুকু কাজ করা উচিত ছিল, তা আমরা করে উঠতে পারিনি। বিগত ৩০ বছরে পাকিস্তানে যা ঘটেছে, আপনি তার দিকে তাকালে দেখতে পাবেন যে এটা ক্রমাগত নিচে, নিচে, নিচের দিকেই নামছে। অনেকেই মনে করেন যে, এটা অবশ্যই অন্যরকম হওয়া উচিত ছিল, যা আমি নিজেও মনে করি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এর বিকল্প কী রয়েছে? আপনি তো আর হাল ছেড়ে দিতে পারেন না। অবস্থাটা এতই খারাপ হয়ে গেছে যে, এখন আর কিছু করার নেই।

ব্যক্তিগতভাবে আমি হয়তো ভালো আছি এবং এরকম আরো অনেকেই ভালো আছেন। সারাদেশের দিকে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন যে, রাস্তায় গাড়ি আরো অনেক বেড়েছে, দোকানগুলোতে টিভি, ফ্রিজ ও 888sport app বিলাসদ্রব্য উপচে পড়ছে। খাদ্য, ওষুধ ও 888sport app নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যও আগের চেয়ে বেশি এবং মানুষের আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ-সমস্ত বিষয় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু আগের চেয়ে অন্যদিকে নানা কারণে হতাশাও বেড়েছে। সভ্য মানুষের 888sport free bet দিন দিন কমে আসছে এবং সমাজের নানা দল ও উপদলে বিভেদ ও সংঘাত আমাদেরকে আমাদের পাশবিক প্রবৃত্তির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
এ-সমস্ত যোগ-বিয়োগ করে আমি যদি একটি ব্যালেন্স শিট তৈরি করি, তাহলে দেখতে পাব যে, আমরা শুধু অধঃপতিতই হচ্ছি। এটা স্বীকার করে নিলেও এ-মুহূর্তে কী করা যাবে? আপনি কি হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবেন? আপনি কি এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম ত্যাগ করবেন? সেটা যদি আপনি না করেন, একমাত্র তাহলেই আপনি আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে পারেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনার বই, আপনার নিবন্ধ ও বক্তৃতাসমূহ আপনাকে একজন মুসলিম 888sport apkী ও স্কলার হিসেবে তুলে ধরেছে। আপনি কেন আপনার মুসলিম পরিচয়টি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছেন না?

পারভেজ : আচ্ছা, বুঝেছি। আসলে এটি খুবই বিরক্তিকর একটি প্রশ্ন। আমার মনে হয় যে, আপনি যদি গণমানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চান, তাহলে কখনো তাদেরকে বলতে পারবেন না যে, আমি নিজে তোমাদের কেউ নই। আমি মুসলিম হিসেবে জন্ম নিয়েছি – এটা একটা বাস্তবতা। জীবনের একটা সময়ে আমি খুবই ধর্মপরায়ণ একজন মুসলিম ছিলাম। আমাদের পরিবারের সবাই একটা গোঁড়া মুসলিম ধর্মীয় পরিবেশেই বেড়ে উঠেছি। আমরা কখনো আমাদের নিজেদের শিকড় থেকে নিজেদের কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারবো না।

একবাল আহমেদ সম্পর্কে আমি আপনাকে একটা গল্প বলি। তিনি যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তাঁর খুব প্রিয়ভাজন একজন, রাজা কাসিমের স্ত্রী, ঘরের বাইরে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোরান শরিফ থেকে পাঠ করে যাচ্ছিলেন। আমি যখন তা একবাল আহমেদকে জানালাম, তখন তিনি তাঁকে ঘরে ডেকে নিলেন এবং শয্যাপাশে বসতে বললেন। তিনি তখন একবাল আহমেদের শয্যাপাশে বসেই কোরান তেলাওয়াত করতে লাগলেন। বেশ কিছু সময় পর আমি অধৈর্য হয়ে একবাল সাহেবকে বললাম যে, আমি কি তাঁকে কোরান তেলাওয়াত বন্ধ করতে বলব? তিনি আঙুল নেড়ে আমাকে নিষেধ করলেন। পরে তিনি যখন নিজেই কোরান পড়া বন্ধ করে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন, তখন আমি একবাল সাহেবকে বললাম – আপনি তো এতো বেশি মুসলমান নন, আপনি কেন এতোক্ষণ এ-জিনিসটি সহ্য করলেন? কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন – অবশ্যই আমি মুসলমান। আমি তা না মেনে বললাম – আপনি তো আল্লাহ, ফেরেশতা, কোরান বা হাশরের দিনে বিশ্বাস করেন না। তিনি আবার উত্তর দিলেন – না, আমি তা বিশ্বাস করি। তিনি বলতে লাগলেন – আমি একজন মুসলমান হিসেবেই জন্ম নিয়েছি এবং আমি সে-হিসেবেই থাকবো। তিনি যদিও কখনো নামাজ পড়েননি, কখনো আল্লাহর কাছে মাফ চাননি; কিন্তু এটা তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, তাঁর শিকড় এমন একটি জায়গায় প্রোথিত, যা থেকে নিজেকে আলাদা ভাবার কোনো উপায় নেই। আমার কাছে মনে হয় যে, আমরা সবাই এই একই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আক্রান্ত। আমরা ধর্মে বিশ্বাস করতে না পারি, কিন্তু আমাদের জন্মের শিকড় আমাদেরকে এর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। এ-সমস্ত মেনে নিয়েই আমরা সেক্যুলার মুসলিম বলে দাবি করি।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আচ্ছা, এখন খলদুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক। ঠিক কখন আপনার দৃষ্টি রাজনীতি থেকে শিক্ষার দিকে সরে  এলো?

পারভেজ : এটা পরিস্থিতির কারণেই। আপনি যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবেন, তখন বিভিন্ন পটভূমি থেকে উঠে আসা ছাত্রদের মুখোমুখি হবেন। তখন দেখতে পাবেন যে তাদের শিক্ষার মান এবং সামাজিক অবস্থানের ক্ষেত্রেও পার্থক্য কতটা প্রকট। তখন আপনাকে অবশ্যই তাদের যথাযথ শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আমি যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে না থেকে কোনো গ্রামে থাকতাম, তাহলে আমি হয়তো আবদুস সাত্তার ঈদি৪ সাহেবের সঙ্গে যোগ দিতাম এবং সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করার কাজে হাত লাগাতাম। কিন্তু আমি এখন জানি যে, আমাকে শিক্ষাদানের মাধ্যমেই সমাজ বদলের কাজে হাত লাগাতে হবে। আর এটা করতে হবে সমাজের সব স্তরেই। আমি অবশ্যই প্রাথমিক শিক্ষার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বেশি করে করতে পারব। কিন্তু আপনাকে তো সেরকম স্তরগুলোতেও পরিবর্তন আনতে হবে, যার জন্য ওই স্তরগুলোতেও লোক দরকার। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এটা অবশ্য বেশি জরুরি, কারণ তারাই সমাজের নানা স্তরে নেতৃত্ব দেয়। তাই আপনি যদি উচ্চ শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করতে পারেন, তবে সারা দেশেই অধিকসংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত করতে পারবেন। তাই আমি মনে করি যে, খলদুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একবাল আহমেদ একটি সঠিক চিন্তাই করেছিলেন।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনি কি মনে করেন যে আপনার উদ্যম, উচ্চাশা ও স্বপ্ন নিয়ে আপনি সঠিক জায়গায় কাজ করতে পারছেন?

পারভেজ : আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমি যেন এ-বিষয়ে সর্বদাই সচেষ্ট থাকি। আমি সবসময়ই স্বীকার করি যে, আমি এর সবকিছুই পেয়েছি একবাল আহমেদের কাছ থেকে।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আমি দেখতে পাই যে, আপনি যখন একবাল আহমেদের কথা বলেন, তখন আপনার আবেগ-অনুভূতি আপনার পিতার জন্য যা, তাকেও ছাড়িয়ে যায়।

পারভেজ : এটা বলা অবশ্য আমার জন্যে খুবই কষ্টকর। তিনি আমার হাতেই মাথা রেখে তাঁর দেহত্যাগ করেছেন। আমি তখন এতোটাই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম যে তেমনটা আর কখনো হইনি। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। আমি এ নিয়ে আর কোনো কথা বলতে পারব না (তাঁর চোখে অশ্রু দেখা দিলো, তাই আমি সাক্ষাৎকার গ্রহণ কিছুক্ষণের জন্য স্থগিত রাখি। পরে তিনি স্বাভাবিক হলে আবার তা শুরু করি)।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আমার খুব অবাক লাগে যে, আপনি থাকার জন্য পাকিস্তানকেই বেছে নিলেন। আপনি তো যুক্তরাষ্ট্রেও থাকতে পারতেন?

পারভেজ : না, আমি তা পারি না। আমার এ-বিষয়ে আর কোনো চয়েস ছিল না।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : কিন্তু আপনি তো সেখান থেকে ফিরে না আসতে পারতেন?

পারভেজ : হ্যাঁ, সেটা ঠিক। কিন্তু এখন আর কোনো পথ নেই। আমি আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে চাই না আর সেখানে পদার্থবিদ্যা নিয়ে কোনো কাজও করতে চাই না। পদার্থবিদ্যা এমন একটি বিষয় যে তা নিয়ে কাজ করতে চাইলে আমাকে পৃথিবীতে আরো কয়েকবার জন্ম নিতে হবে। আধুনিককালে এ বিষয়ে এতো কিছু ঘটেছে যে, সেটা বিস্ময়কর। আমি তো শুধু তার বাইরের খোসাটাই স্পর্শ করতে পেরেছি। অবশ্য এ নিয়ে এখনো আমার প্রচুর ক্ষুধা রয়েছে, কিন্তু এ-বিষয়ে আরো বিস্ময়কর কিছু করতে হলে আমাকে আবার ২৫ বছর বয়সী হতে হবে।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : অধ্যাপক আবদুস সালাম৫ সম্পর্কে আপনার কী ধারণা? আমি তাঁর কথা যখনই শুনি, তখনই তার মধ্যে একটি বিয়োগান্তক কাহিনি দেখতে পাই। আমি শুনেছি যে তাঁর সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছে। তাঁর সমস্যা ও সংগ্রাম নিয়ে আপনার কী ধারণা?

পারভেজ : আমার সঙ্গে তাঁর শুধু সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি তাঁকে জানতাম এবং আপনি ঠিকই বলেছেন, তিনি একটি বিয়োগান্তক চরিত্র। তাঁর প্রথম কমিটমেন্ট ছিল তাঁর নিজের সম্প্রদায়, অর্থাৎ আহমদিয়াদের জন্য। দ্বিতীয়টি ছিল তাঁর দেশ পাকিস্তানের জন্য – অবশ্য এ দুটোই পদার্থবিদ্যাকে সঙ্গে নিয়ে আর এ-তিনটি জিনিস একসঙ্গে খুব ভালোভাবে খাপ খায়নি। এটি শুরু থেকেই বোঝা গিয়েছিল যে, তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষ। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন খুবই উদারনৈতিক চিন্তাধারার একজন মানুষ। আমি শুনেছি যে, তিনি তখন সুন্দরী 888sport promo codeসঙ্গ ও সুধারসেরও অনুরক্ত ছিলেন। তিনি পরে এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হলেন যে, সারা পাশ্চাত্য জগৎই তাঁকে সম্মান করতে শুরু করল। তিনি ১৯৭৯ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল 888sport app download bd পাওয়ার আগেও বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীরা তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৪ সালে ভুট্টো আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করার পরই তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং তাদের জন্য কিছু করতে উদ্যোগী হন। এর পরিণতিতে তিনি একসময়ে হয়ে দাঁড়ান গোঁড়া আহমদিয়া।

আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এর দশ বছর পর, ১৯৮৪ সালে। তবে সেটা পদার্থ888sport apk নিয়ে নয়। আমি যখন ১৯৮৪ সালে ইতালির ত্রিয়েস্তে তাঁর গবেষণাগার ভিজিট করতে যাই, তখন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অবশ্য এর কারণ অন্য – তিনি ইতোমধ্যে আমার বই Islam and Science পাঠ করেছেন। আর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটার পর আমাদের দুজনের সম্পর্ক পরবর্তী দশ বছর ধরেই বজায় থাকে। আমরা দুজনে একত্রে একটা নিবন্ধও লিখি, যা একটি বইয়ের ভূমিকা হিসেবে স্থান পেয়েছে। তিনি অবশ্যই একটি বিয়োগান্তক চরিত্র, কারণ তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে বেশি করে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তিনি তাঁর জন্মভূমি পাকিস্তানকে খুবই ভালোবাসতেন; কিন্তু শুধুমাত্র আহমদিয়া বলে পাকিস্তান তাঁকে তাঁর যোগ্য প্রতিদান দিতে পারেনি। অবশ্য তিনি ছিলেন একটি জটিল চরিত্র, এটা আমাকে বলতেই হবে। তাঁর এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে যে বিষয়টি থেকে, তা হচ্ছে পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা প্রজেক্টের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন। মুলতানে ভুট্টোর সঙ্গে ১৯৭২ সালে সেই বহুল আলোচিত সভায়, যেখানে সব গুরুত্বপূর্ণ পদার্থ888sport apkীকে ডাকা হয়েছিল, সেখানে তিনি ছিলেন তাঁদের নেতৃস্থানীয় একজন। এই পদার্থ888sport apkীদের বলা হয়েছিল বোমা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনরীয় সবকিছু করতে। অবশ্য পরে ১৯৭৪ সালে আবদুস সালামকে এই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর প্রকল্পটিও আর বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি।

সত্যি কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে, তিনি খুব একটা নিরপেক্ষ ব্যক্তি ছিলেন না। কারণ তিনি সর্বদাই আহমদিয়াদের অযাচিত সুযোগ-সুবিধা দিতে চাইতেন, আর তিনি তা করতেন তাঁর অবস্থানের সুযোগ নিয়েই। তিনি এটাও বিশ্বাস করতেন যে, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান রুখে দাঁড়াক। হিন্দুদের সম্পর্কে তাঁর কিছুটা বিদ্বেষও ছিল। তবে অন্য অনেক দিক থেকে তিনি খুব উদার মনের মানুষ ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকবারই ভারত সফর করেছেন এবং সেখান থেকে সম্মাননাও প্রাপ্ত হয়েছেন। অবশ্য শেষদিকে এসে তাঁর ভারতবিদ্বেষী মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছিল। তাঁর নিজ দেশ পাকিস্তান তাঁকে বঞ্চনা করেছে। শেষবার যখন তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, তখন তিনি এগুলো নিয়ে এতোটাই অসন্তুষ্ট ছিলেন যে, তিনি কাঁদছিলেন। তিনি তখন একটি হুইল চেয়ারে বসা ছিলেন, আর আমি তাঁর এই অসহায় অবস্থা দেখে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম।

তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন পাকিস্তান সরকারের একজন কর্মকর্তাও তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেননি। পত্রিকাগুলোতে তাঁর মৃত্যুসংবাদ বেরিয়েছিল ছোট্ট ফুটনোটে। এসব ঘটেছিল সেই মানুষটিকে নিয়ে, যিনি পাকিস্তানের জন্য সর্বদাই আবেগাক্রান্ত ছিলেন এবং সে-দেশটির পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করেছিলেন। আমি আরো একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই, যা থেকে বোঝা যাবে যে তাঁকে কীভাবে পাকিস্তানে ট্রিট করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর আগেই আমি পিটিভিতে গিয়ে এর ডিরেক্টর রানা শেখের সঙ্গে দেখা করি এবং আবদুস সালামের জীবন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করার ইচ্ছা প্রকাশ করি। তিনি এতে রাজি হন। তিনি ছিলেন যথেষ্ট উদারচেতা মানুষ। আমরা তখন একটি দল গঠন করে সালাম সাহেবের জন্মস্থান পাঞ্জাবের ঝং শহরে যাই এবং সেখান থেকে তাঁর প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য আহরণ করি। বিবিসি ও 888sport app বেশকিছু টেলিভিশনে দেওয়া তাঁর বক্তব্যগুলো থেকেও আমরা অনেকগুলো ক্লিপ সংগ্রহ করি – যার মধ্যে একটি ছিল ১৯৮৮ সালে আমার নেওয়া তাঁর একটি সাক্ষাৎকারও।

এসব ক্লিপ এডিট করার আগে বিশেষ একটি কারণে আমাকে এক সপ্তাহের জন্য ইসলামাবাদের বাইরে যেতে হয় এবং আমি এ সমস্ত ফুটেজ পিটিভির একজন প্রোডিউসারের জিম্মায় রেখে যাই। সে ব্যক্তিটি এতে খুব স্বস্তিবোধ করছিল না দেখে আমি তাঁকে আশ্বস্ত করে বললাম যে, আপনি শুধু এক সপ্তাহের জন্য এটি আপনার কাছে রেখে দেন, অন্য কিছু করতে হবে না। আমি ফিরে এসে নিজেই এর বাকি কাজটুকু শেষ করব। কিন্তু আমি ফিরে এসে দেখলাম যে, প্রোডিউসার সাহেব ডকুমেন্টারিটি সম্পন্ন করে ফেলেছেন, যা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ এক ডকুমেন্টারিতে। আমার মূল প্ল্যান থেকে তা সম্পূর্ণ উল্টো। আমি তখন রানা শেখের কাছে গিয়ে তাঁকে সবকিছু জানালাম এবং যথেষ্ট রেগেও গেলাম। তিনি যখন প্রোডিউসারকে ডেকে এটি রি-এডিট করতে বললেন, তখন প্রোডিউসার সাহেব জানালেন যে, বাকি অংশগুলো তিনি মুছে ফেলেছেন। আমি খুব ভালো করেই জানি যে, সে ব্যক্তি এটি ইচ্ছা করেই করেছে, যাতে আবদুস সালামকে নিয়ে কোনোভাবেই একটি ভালো ডকুমেন্টরি টেলিভিশনে প্রদর্শিত না হয়। আর এটাই হচ্ছে আমাদের আজকের সমাজের রূঢ় বাস্তবতা।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : একটি মাত্র শেষ প্রশ্ন আপনার কাছে – মানুষ আপনাকে দেখে একজন কৃতী 888sport apkী ও সফল মানুষ হিসেবে। আপনি নিজেও কি অন্তর থেকে তেমনটাই মনে করেন?

পারভেজ : আমার অপূর্ণ উচ্চাশা এতো বেশি যে আমি সবসময়ই নিজেকে হতাশাবাদী একজন বলে ভাবি। আমি যদি পদার্থবিদ্যার উচ্চতর বিষয়গুলো – যেমন সুপারস্ট্রিং, ইত্যাদি বিষয় বুঝতে পারতাম, তাহলে কী খুশিই না হতাম। আমার যদি কখনো আর একটা জীবন লাভ ঘটে, তাহলে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির চরম পরাকাষ্ঠা এ-বিষয়টি নিয়ে আমি সময় কাটাবো। আরো অনেক ছোট ছোট বিষয় রয়েছে, যা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। আমি গর্ববোধ করি যে, আমার কর্মস্থান, কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা সংসদ সদস্য ও অধ্যাপকদের হাতে দিয়ে দেওয়াকে রোধ করতে পেরেছি। আমি এ-সংগ্রামেও দু-বছর ধরে জড়িত ছিলাম আর এটি শেষ হলে ক্লান্তিতে আমি ভেঙে পড়েছি। কোনো কোনো সময়ে মানুষ এর জন্য আমাকে পাথর ছুড়েছে, ঘরের দরজা-জানালা ভেঙেছে, আমাকে হুমকি দিয়েছে এবং নানাভাবে হয়রানি করেছে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো একটি সেমিস্টার বন্ধ থাকে। আমাদের তখন কোর্টে যেতে হয়। অবশ্য শেষ পর্যন্ত আমরা কোর্ট থেকেই আমাদের স্বপক্ষে আদেশ লাভ করি। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা অন্যের হাতে হস্তান্তরিত হওয়া থেকে বেঁচে যায়। আমি আমার জীবনে একমাত্র এই একটি কাজ নিয়েই গর্ববোধ করতে পারি।

সাক্ষাৎকার গ্রহীতা : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আপনার চিন্তাধারার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।

পারভেজ : আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।

টিকা

১.         সুলতান মোহাম্মদ শাহ – সিন্ধু প্রদেশের ঈসমাইলি ধর্মীয় নেতা বা ইমাম, যিনি বিশ শতকের প্রথমদিকে সিন্ধু ও গুজরাটে বসবাসকারী ঈসমাইলি সম্প্রদায়ের নানা সংস্কারমূলক কাজকর্মে ভূমিকা রাখেন। খজ্কি লিপিতে লিপিবদ্ধ ভারতীয় ঈসমাইলিদের ইতিহাস (জিনান) পুনরুদ্ধার করতে আগা খান তাঁকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এ-কাজটি তিনি ভ্লাদিমির ইভানভ নামে একজন রুশ প্রাচ্যবিদকে নিয়ে করেন এবং তা ১৯৩৩ সালে A Guide to Ismaili Literature নামে প্রকাশ করেন।

২.         একবাল আহমদ – বর্ণাঢ্য চরিত্রের অধিকারী রাষ্ট্র888sport apkী ও বামপন্থি শিক্ষাবিদ। জন্ম ১৯৩৩ সালে বিহারের গয়া জেলায় এবং দেশভাগের পর অনাথ অবস্থায় পাকিস্তানে মোহাজির হন। কিছুদিন সেনাবাহিনীতে কাজ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ^বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীকালে ম্যাসাচুসেটস, মিশিগান ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বামপন্থি অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়ে ফ্রাঞ্জ ফ্যাননের সান্নিধ্যে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে নোয়াম চমস্কি, এডওয়ার্ড সাঈদ, হাওয়ার্ড জিন প্র্রমুখ চিন্তাবিদের সঙ্গে। পারভেজ হুদভয়সহ অনেক মার্কিন-প্রবাসী ছাত্র একবাল আহমদের যুদ্ধবিরোধী জ্বালাময়ী বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হন। পাকিস্তানে ফিরে তিনি নব্বইয়ের দশকে বেসরকারি উদ্যোগে খলদুনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন, কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। তিনি ১৯৯৯ সালে ইসলামাবাদে পরলোকগমন করেন।

৩.         ফিলিপ মরিসন – এম.আই.টি’র স্বনামখ্যাত পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে পারমাণবিক বোমা বানানোর প্রজেক্ট ম্যানহাটনেও কাজ করেছেন। পরবর্তী জীবনে কোয়ান্টাম ও পরমাণু পদার্থবিদ্যা, উচ্চশক্তি জ্যোতির্বিদ্যা ও বহির্জাগতিক প্রাণ অনুসন্ধান (SETI) প্রজেক্টেও কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে তিনি প্রয়াত হন।

৪.         আবদুস সাত্তার ঈদি – পাকিস্তানি মানবতাবাদী ও সমাজসেবক, যিনি ঈদি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর কর্মকাণ্ড গৃহহীনের আশ্রয়ণ, অসহায় প্রাণীদের সুরক্ষা, পুনর্বাসন কর্মকাণ্ড, অনাথাশ্রম ইত্যাদিতেও বিস্তৃত ছিল। লেনিন শান্তি 888sport app download bd, ম্যাগসেসাই 888sport app download bdসহ অসংখ্য 888sport app download bdে তিনি ভূষিত হয়েছেন।

৫.         আবদুস সালাম – নোবেল 888sport app download bdজয়ী পাকিস্তানি গণিতজ্ঞ ও পদার্থবিদ, যিনি ছিলেন আহমদিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত। শুধু এ-কারণেই তিনি পাকিস্তান সরকারের বঞ্চনার শিকার হয়েছেন।