শেষবার মস্কোর সাক্ষাৎ আমি পেয়েছিলাম আজ থেকে চলিস্নশ বছর আগে। সেবার হঠাৎ করেই আমার মস্কো ছেড়ে যাওয়া। সাত বছর সেই শহরে বসবাসের পাততাড়ি গুটিয়ে আমার সেই চলে যাওয়া ছিল সাময়িক। তবে সেই সাময়িক যাত্রাই শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে শহর ত্যাগ হয়ে ওঠে এবং এরপর চার দশকে সেই পথে আমার আর পা বাড়ানো হয়নি। ১৯৮০ সালের মে মাসে আমি যখন মস্কো ছেড়ে চলে এসেছিলাম, সেই শহর তখন ছিল হারিয়ে যাওয়া দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী। এরপর দীর্ঘ প্রায় চার দশক সেই দেশটিতে আমি আর যাইনি, যদিও 888sport sign up bonusর পাতায় অমস্নvন থেকে গেছে আমার সাত বছরের মস্কোজীবনের নানা খুঁটিনাটি দিক। সেই 888sport sign up bonusর খানিকটা আমি মনের গভীর অতল থেকে তুলে আনার চেষ্টা করেছি 888sport sign up bonusচারণমূলক বই আমার প্রবাস জীবন : সোভিয়েত পর্বে।গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেঙ্গল আমার সেই বইটি প্রকাশ করেছে।
মস্কোর সেই 888sport sign up bonusকথা লেখা শেষ করার আগে আমি সেই শহরে এ-কারণে যেতে চাইনি যে, আমার আশঙ্কা ছিল মধুর যেসব 888sport sign up bonus মস্কোকে ঘিরে রয়েছে, তা হয়তো পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে কিছুটা হলেও রং হারিয়ে ফেলতে পারে। ফলে আমার যৌবনের ফেলে আসা শহরে আবারো যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও মনের গভীরে সযত্নে ধরে রেখেছি সেই বাসনা। বই প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর আসলেই যেন ভারমুক্ত মনে হয়েছে নিজেকে এবং তখন থেকেই ভেবেছি এবার মস্কো ঘুরে এলে মন্দ হয় না। বিশেষ করে এ-কারণে যে, আমাদের চার দশকের বিবাহিত জীবনের সূত্রপাত হয়েছিল সেই মস্কোতে এবং একমাত্র কন্যা এখন নিজের জীবন শুরু করতে যাওয়ায় আমরা হয়ে উঠেছি ভারমুক্ত ও সেইসঙ্গে কিছুটা হলেও 888sport sign up bonusকাতর। ফলে স্ত্রী ইউমিকোর পক্ষ থেকেও পরোক্ষ তাগিদ ছিল দীর্ঘ বিরতির পর আমাদের যৌবনের সেই 888sport sign up bonusর শহরকে একবার দেখে আসার। সে-অনুযায়ী পরিকল্পনা করে গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আমরা যাত্রা করেছিলাম মস্কোর উদ্দেশে। মনে আশঙ্কা থেকে গিয়েছিল, 888sport sign up bonusর সেই মস্কোর দেখা দীর্ঘ বিরতি আর নানারকম রদবদলের পর সেখানে গিয়ে হয়তো পাব না।
জাপান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নয় ঘণ্টার পথ পার হয়ে দমোদিয়েদোভো বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর হঠাৎ করেই 888sport sign up bonusর দরজা খুলে যায় এবং শুরুতেই আমার মনে পড়ে যায় একই সেই বিমানবন্দর থেকে ঠিক চার দশক আগে আমি প্রথমবারের মতো যাত্রা করেছিলাম জাপানের উদ্দেশে। তবে শুধু এটুকুই। দমোদিয়েদোভোতে এদিকে-সেদিকে চোখ বুলিয়ে আগের সেই বিমানবন্দরকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে গেলেও সেটার দেখা আমি একেবারেই পাইনি। বিমানবন্দরটি তখন ছিল কেবলই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত। ফলে শেরিমেতিয়েভো বিমানবন্দরের মতো সেখানে ছিল না ইমিগ্রেশন বা কাস্টমসের কাউন্টার। আর এখন সেটি আন্তর্জাতিক আকার নিলেও নতুন সেই দমোদিয়েদোভোর ইমিগ্রেশনে দেখা মেলেনি সোভিয়েত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর যুবকদের ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি কিংবা সতর্কদৃষ্টির। এর বদলে যে-তরুণী আমার পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখছিল, তার মুখে ছিল হাসি এবং জানতে চেয়েছিল কেন আমি মস্কো সফরে এসেছি। পাশের কাউন্টারে স্ত্রীর পাসপোর্ট শনাক্তের কাজ ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে এবং সেখানে বসা ইমিগ্রেশনের তরুণ এর মধ্যে জেনে গিয়েছিল যে চার দশক পর আমরা এসেছি আমাদের 888sport sign up bonusর শহর ঘুরে দেখতে। আমার পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা তরুণীকে সেই বার্তা সে পৌঁছে দেয় এবং তরুণী তখন রুশ ভাষায় আমাকে স্বাগত জানিয়ে বলে দেয় যে, আগের সেই মস্কোকে আমি খুঁজে পাব কিনা সেটা সে নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
ইমিগ্রেশন আর কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাইরে বের হয়ে এসে আমি খোঁজ করছিলাম আমার নাম লেখা পস্ন¨vকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যাক্সিচালকের, যে আমাদের নিয়ে যাবে নগরকেন্দ্রের স্যাভয় হোটেলে। এমনটাই আমাকে টোকিওতে জানিয়ে দিয়েছিল আমাদের 888sport slot gameের ব্যবস্থা করে দেওয়া কোম্পানি। না, কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না! কিছুটা হলেও আশঙ্কা আমি এ-কারণে বোধ করতে শুরু করি যে, পরিবর্তিত মস্কো সম্পর্কে যেসব সংবাদ গত কয়েক বছরে পাঠ করার সুযোগ আমার হয়েছে, তাতে করে বিমানবন্দর থেকে অপরিচিত ভাড়ার ট্যাক্সি নিয়ে শহরের পথে যাত্রা করায় খুব একটা ভরসা আমি পাচ্ছিলাম না। দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা সেরকম এক সময়ে বিশালদেহী এক রুশ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে আমার নাম উচ্চারণ করে ভাঙা ইংরেজিতে জানতে চেয়েছিল আমি সেই ব্যক্তি কিনা। রুশ ভাষায় তাঁর প্রশ্নের উত্তর আমি দেওয়ায় সে কিছুটা অবাক হয়ে গেলেও একটু পরেই তাঁর মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে এবং রুশ ভাষায় আমাকে জানায় যে, ইংরেজি ভাষাটা সেভাবে রপ্ত করতে পারেনি বলে তাঁর মনে হচ্ছে আমি যেন পরিত্রাতার ভূমিকায় তাঁর সামনে উপস্থিত হয়েছি। এরপর থেকে চলতে থাকে রুশ ভাষায় তাঁর দিয়ে যাওয়া অনর্গল বর্ণনা এবং আমি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে উঠতে সমর্থ হই, জাতিসত্তার পরিচয়ের দিক থেকে রুশদের যে-আন্তরিকতা, সেটার কোনো পরিবর্তন চার দশকে হয়নি। নিজের ভাষা জানা থাকা বিদেশিদের এরা এখনো খুব সহজে আপন করে নিতে পারে। ট্যাক্সিচালকও 888sport slot gameের কারণ জেনে যাওয়ার পর আন্তরিকভাবে আমাদের দুজনকে তাঁর শহরে স্বাগত জানিয়েছিল এবং এক সপ্তাহের অবস্থানে কোথায় কোথায় আমাদের যাওয়া দরকার, সেই উপদেশ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।
ট্যাক্সি যখন আমাদের হোটেলে পৌঁছে দেয়, ততক্ষণে সন্ধ্যা
হয়ে আসছিল। চেক-ইন পর্ব সেরে নিয়ে রুমে এসে আমাদের মস্কোজীবনের প্রবীণ সজ্জন, প্রয়াত দ্বিজেন শর্মার মস্কো প্রবাসী পুত্র টুটুকে ফোন করে আমি বলে দিয়েছিলাম, ও যেন কিছুটা দেরিতে আমাদের নিতে আসে। টোকিও ছাড়ার আগেই টুটুর সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং সে আমাদের বলেছিল যে, আশপাশের কোথাও সে আমাদের রাতের খাবারের জন্য নিয়ে যাবে। যাত্রাপথের ক্লাস্তি দূর করে নিতে ইতোমধ্যে স্নান সেরে আমরা তৈরি হয়ে যাই। মস্কোর সময় রাত প্রায় আটটার দিকে টুটুল চলে আসে এবং আমরা ক্রেমলিনের দিকে হেঁটে যাত্রা শুরু করি। আমার মনের পর্দায় তখন খুলে যেতে থাকে অতীতের অনেক 888sport sign up bonus, যার সবটাই এর আশপাশের জায়গাগুলোকে ঘিরে। অবাক হয়ে আরো লক্ষ করি যে, অনেক ক্ষেত্রেই জায়গার পুরনো নাম হারিয়ে গিয়ে কোথাও আবার ফিরে এসেছে বিপস্নব-পূর্ব যুগের প্রচলিত নাম, কোথাও বা করা হয়েছে একেবারে নতুন নামকরণ। আমাদের হোটেলের লাগোয়া পাতাল রেলস্টেশনের নাম এখন হচ্ছে লুবিয়ানকা, আমাদের সময়ে যেটা ছিল দজেরজিনস্কায়া। ফেলিক্স দজেরজিনস্কি ছিলেন বিপস্নব-পরবর্তী রাশিয়ায় চেকা নামে পরিচিত পরবর্তীকালের কেজিবির প্রধান এবং কেজিবির প্রধান কার্যালয়টি ছিল মূল রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল এক ভবনে। ভবনটি এখনো আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে এবং কেজিবির উত্তরসূরি এফএসবির সদর দপ্তর এখন সেখানে। অর্থাৎ, নামধাম পালটে গেলেও আগের সেই একই কাজ একই ভবনে এখনো চলে আসছে। লুবিয়ানকা নামটির বেলাতেও একই বিশেস্নষণ প্রযোজ্য। অতীতে কেজিবি নামের প্রকাশ্য উচ্চারণ রুশরা এড়িয়ে যেতেন বলে সেটাকে তারা লুবিয়ানকা নামে আখ্যায়িত করতেন। আর এখন পাতাল রেল স্টেশনটি পেয়েছে সেই নাম।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-সাংবাদিকতা বিভাগে আমি লেখাপড়া করেছি, সেই অনুষদটি নগরকেন্দ্রেই অবস্থিত। ফলে সেখানে আমার ছিল নিত্য আসা-যাওয়া। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম হাঁটার অনেক ছোটখাটো পথ নগরকেন্দ্রে তৈরি হয়ে গেছে এবং সেইসব পথের দুদিকে আছে নানারকম দোকানপাট ও রেসেত্মারাঁ, যার সবই ব্যক্তিমালিকানাধীন। রাতেও কমতি নেই ক্রেতা আর সাধারণ মানুষের ভিড়ের। তেমনি একটি হাঁটার পথ দিয়ে হেঁটে গিয়ে অল্প সময়ে আমরা চলে আসি রেড স্কয়ারে ক্রেমলিনের সামনে। রাতের আলোতে রেড স্কয়ারের পাথর-বিছানো পথে হেঁটে যাচ্ছে অনেক লোকজন, যাদের 888sport free betগরিষ্ঠ বিদেশি পর্যটক। ক্রেমলিন রয়ে গেছে আগের সেই একই ক্রেমলিন, যদিও মূল অট্টালিকার মাথায় শোভা পাচ্ছে কাস্তে-হাতুড়ি আঁকা লাল পতাকা নয়, বরং নবীন রাশিয়ার তিন রঙের ঝা-া। রঙিন সাজে সজ্জিত সেন্ট বাসিল গির্জার ওপর এসে পড়া উজ্জ্বল আলো গির্জাকে করে তুলছে অনেক বেশি বর্ণাঢ্য। সে-তুলনায় ক্রেমলিনের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা লেনিনের সমাধি যেন হয়ে পড়েছে পাড়ার দরিদ্র প্রতিবেশীর বসতভিটা। শুধু তাই নয়, রেড স্কয়ারের চারদিক জুড়েই যেন প্রচারিত হচ্ছিল ধর্মের জয়জয়কার। ইতিহাস জাদুঘরের ঠিক পাশে নতুন করে তৈরি করে নেওয়া হয়েছে কাজান গির্জা এবং আশপাশের ভবনের যেসব দেয়ালে অতীতে শোভা পেতে দেখেছি কাস্তে-হাতুড়ি, দেয়ালের সেসব অংশ এখন চলে গেছে সনাতন রুশ খ্রিষ্টধর্মের সন্তদের দখলে। আলোকিত ক্রেমলিন এবং আলোর বন্যায় ভেসে থাকা রেড স্কয়ারকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত দেখালেও কোথায় যেন রয়ে গেছে মস্ত ফাঁক। এক ইতিহাসকে ধরে রেখে অন্য ইতিহাসকে অস্বীকার করে যাওয়ার প্রচেষ্টাই হয়তো সেই ফাঁকটুকু আমার মতো একসময়ে সেই শহরে বসবাস করা মানুষের চোখে সহজেই অনেক বেশি দৃষ্টিযোগ্য করে দেয়।
টুটু আমাদের সেখান থেকে নিয়ে গিয়েছিল পুরনো নাম মানেঝনায়ায় ফিরে যাওয়া আমাদের কালের প্রস্পেক্ট মার্কসা জুড়ে তৈরি হওয়া নতুন এক উদ্যান ও এর নিচের শপিং আর্কেডে, যেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বেশ কিছু রেসেত্মারাঁ। প্রস্পেক্ট মার্কসাও ফিরে গেছে এর আগের নাম মাখাভায়া উলিৎসায়। সেই সড়কের ৯ নম্বর ভবনটি হচ্ছে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের আদি ভবন, এখন যেখানে সাংবাদিকতা অনুষদ। মানেঝনায়া চত্বরের নিচের আর্কেডে এক জর্জীয় রেসেত্মারাঁয় রাতের আহার আমরা সেরে নিই। মানেঝনায়ার রাস্তা পার হলেই ৯ নম্বর মাখাভায়া, অর্থাৎ আমাদের ফ্যাকাল্টি ভবন। মন আমাকে অজান্তেই সেদিকে টানছিল। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় পুরনো সেই 888sport sign up bonusঘেরা ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার বাসনা মনে ধরে রেখেই হোটেলে ফিরে আসতে হয়েছে আমাকে।
স্যাভয় হোটেলের পরিচিতি নিয়ে শুরুতে আমি কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলাম। কেননা সেই নামে কোনো হোটেল আমাদের সময়ের মস্কোতে ছিল না। নগরকেন্দ্রের একেবারে মাঝখানটায় এর অবস্থান হওয়ায় রেড স্কয়ার, ক্রেমলিন ও বলশয় থিয়েটারের মতো জায়গাগুলো হেঁটে দেখে নেওয়া যাবে, সেই সুবিধা বিবেচনা করে হোটেলটি আমরা বেছে নিই। এর অবস্থান হচ্ছে দেৎস্কি মিরের ঠিক উলটোদিকে এবং বলশয় ও মালি থিয়েটার থেকে কয়েক কদম দূরে। ইন্টারনেট ঘেঁটে পরে আমি জেনে নিতে পেরেছিলাম যে, আমাদের সময়ে হোটেলের নাম ছিল ‘গাস্তিনিৎসা বের্লিন’। তবে স্যাভয় নামেই এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯১৩ সালে এবং রুশ বিপস্নবের পর এক দশকের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকার শেষে আবারো নতুন নামে সেই হোটেল চালু হয়। এখন সেটা ফিরে গেছে এর আদি নামে এবং চাকচিক্যের কোনো কমতি একেবারেই নেই।
পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখে নিই আমি আমার সেই পুরনো শহর। তবে আগের সেই মস্কোর সঙ্গে কোনো মিল একেবারেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। জানালা দিয়ে চোখে পড়ছিল উলটোদিকে মুমু নামে এক রেসেত্মারাঁ এবং মনে পড়ে গিয়েছিল আগের দিন বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার পথে ট্যাক্সিচালকের উপদেশ। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, পণ্যমূল্যের দিক থেকে আমাদের দেখা চার দশক আগের মস্কোর সঙ্গে এখনকার মস্কোর যে কোনো মিল একেবারেই নেই সেটা যেন আমরা ভুলে না যাই। সেইসঙ্গে আরো বলেছিলেন, তুলনামূলক কম খরচে ভালো খাবার আমরা পেতে চাইলে আমরা যেন মুমুতে যাই, যেটা হচ্ছে রুশ খাবারের চেইন রেসেত্মারাঁ। ফলে হোটেলের ঠিক উলটোদিকে মুমুর অবস্থান চোখে পড়ায় আশ্বস্ত আমি হতে পেরেছিলাম এবং সেখানেই প্রাতরাশ সেরে নিয়ে এরপর আমরা পায়ে হেঁটে যাত্রা করি আমার ফ্যাকাল্টির উদ্দেশে। তবে তার আগে ট্যাক্সিচালকের দেওয়া উপদেশমতো দেৎস্কি মিরের ছাদে উঠে গিয়ে ওপর থেকে দেখে নিই মস্কোর দৃশ্য। চোখে পড়ার মতো যে-রদবদল শুরুতেই সামনে ভেসে ওঠে তা হলো, চারদিক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রুশ সনাতন খ্রিষ্টধর্মের গির্জার সোনালি গম্বুজ।
ক্রেমলিনের উত্তরদিকের প্রাচীরের ঠিক উলটোদিকে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা অনুষদের প্রাচীন ভবনটি আজো দাঁড়িয়ে। একসময় সেটাই ছিল মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবন। ফলে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নের রুশ সমাজের নেতৃস্থানীয় অনেক ব্যক্তিত্বই অতীতে সেখানে ক্লাস করেছেন। হালকা হলুদ রঙের সেই ভবনের সামনে এসে দাঁড়াতেই আমার মনের পর্দায় একে একে ভেসে আসতে শুরু করে পুরনো দিনের অনেক 888sport sign up bonus। ভবনের সামনে আগের মতো এখনো আছে মিখাইল লমনোসোভের দ-ায়মান মূর্তি। এর চারপাশের ছোট উদ্যানটিতে ছড়ানো-ছিটানো কয়েকটি বেঞ্চে আমাদের সময়ের মতোই বসে আছে ছাত্রছাত্রীরা। কেউ বা পড়ছে বই, অন্য কয়েকজন নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় ব্যস্ত, কেউ আবার ধূমপানে নিমগ্ন। আমি তখন ডুবে গেছি অতীতের 888sport sign up bonusচারণায় এবং মনে মনে খুঁজে বেড়াচ্ছি আমার সেই সময়ের বন্ধুদের। ওরাই যেন একসময় আমাকে অজ্ঞাতে তাড়িয়ে নিয়ে যায় ভবনের দরজার সামনে। তবে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই বাস্তব আমাকে আঘাত করে নিয়ে আসে চলিস্নশ বছর পরের এই সময়ে। দরজার ঠিক সামনে বসানো মেটাল ডিটেক্টরের অন্যপাশ থেকে ভেসে আসা ভারী কণ্ঠস্বর আমাদের কাছে জানতে চায় কোথায় আমরা যাচ্ছি। পুরনো দিনের 888sport sign up bonusঘেরা ভবনটি দেখতে এসেছি বলায় আবারো সেই ভারী কণ্ঠে যে-উত্তর পাওয়া যায় তা হলো, অনুমতিপত্র আছে কিনা। নেই জানালে সেই দ্বাররক্ষী স্রেফ জানিয়ে দেয় যে, আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার নয়। ইনিয়ে-বিনিয়ে আমি এবং আমার স্ত্রী তখন বোঝাতে চেষ্টা করি যে, চার দশক আগে সেখানে লেখাপড়া শেষ করে সুদূর জাপান থেকে আমরা এসেছি পুরনো দিনের 888sport sign up bonusঘেরা ভবনটি একবার কেবল ঘুরে দেখব বলে। তবে তারপরও একই উত্তর ভেসে আসে। ফলে অনেকটা হতোদ্যম হয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই আমার প্রায় সমবয়সী এক পুরুষ আমাদের থামতে বলে দ্বাররক্ষীকে কিছু একটা বলায় ভেতরে প্রবেশের অনুমতি আমাদের মিলে যায়। সেই ব্যক্তি আমাদের বলেছিলেন যে, ভবনের তত্ত্বাবধায়কের কাজ তিনি করছেন এবং এতটা দূর থেকে এসে আমাদের ফিরে যেতে হচ্ছে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল সেটা ঠিক হচ্ছে না। ফলে দ্বাররক্ষীকে বলে আমাদের ভেতরে যাওয়ার ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর সেই বদান্যে গভীর কৃতজ্ঞতা সেদিন আমি বোধ করেছিলাম। ভদ্রলোকের নাম সম্ভবত ছিল সের্গেই ইভানোভ বা সেরকম কিছু একটা।
আমাদের সেই পরিত্রাতা সের্গেই ইভানোভ এরপর প্রায় পঁয়তালিস্নশ মিনিট ধরে ভবনের বিভিন্ন তলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বেশ কয়েকটি বিভাগ ও শ্রেণিকক্ষে আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সাংবাদিকতা অনুষদের বর্তমান পরিচিতি আমাদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। আমি জানতে চেয়েছিলাম আমাদের অতীতের সেই শিক্ষকদের মধ্যে কেউ এখনো সেখানে কর্মরত আছেন কিনা। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, পুরনোদের মধ্যে একমাত্র সেই সময়ের ডিন ইয়াসিন জাসুর্স্কি এখনো সাংবাদিকতা ফ্যাকাল্টির সম্মানিত সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত এবং সপ্তাহে দুদিন তিনি নিয়মিতভাবে অফিসে আসেন। তিনি ছাড়া অন্য আর কেউ এখন আর সক্রিয় নেই এবং অনেকেই প্রয়াত। জাসুর্স্কি যে এখন পর্যন্ত এই বৃদ্ধ বয়সে সক্রিয় রয়েছেন তা শুনে আমি স্বস্তি বোধ করেছিলাম। তবে যেদিন আমরা সেখানে গিয়েছিলাম, সেদিন তার অফিসে আসার কথা বিকেলের দিকে। ফলে আমি আমাদের প্রতি বদান্যতা দেখানো সেই প্রবীণ সের্গেই ইভানোভকে বলেছিলাম যে, বিকেলে আমার অন্য একটি কর্মসূচি থাকলেও আমি চেষ্টা করব এক ফাঁকে আবারো ফ্যাকাল্টিতে এসে ইয়াসিন জাসুর্স্কির সঙ্গে দেখা করে যাওয়ার। তবে সেই সুযোগ পরে অবশ্য আমার হয়নি এবং এজন্য খুব বেশি আশাহত যে আমি হয়েছি তা অবশ্য বলা যায় না।
গত শতকের সত্তরের দশকের শেষ দিকটায় আমি যখন পিএইচ.ডির জন্য অধ্যয়নরত, ইয়াসিন জাসুর্স্কি তখন আমাদের পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমের ওপর একটি ক্লাস নিতেন। বিজ্ঞাপন যে পশ্চিমের সংবাদমাধ্যমকে কীভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তার অনেক বস্ত্তনিষ্ঠ এবং বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনা আমরা নিয়মিতভাবে তাঁর কাছ থেকে শুনেছি। বিস্ময়করভাবে চার দশক পর এখন তিনি একই ফ্যাকাল্টির সম্মানিত সভাপতির পদে আসীন থাকা অবস্থায় ফ্যাকাল্টিতে নতুন যে-কয়েকটি বিভাগ চালু হয়েছে, তার একটি হলো বিজ্ঞাপন ও জনসংযোগ বিভাগ। সের্গেই ইভানোভ এক ফাঁকে নতুন সেই বিভাগেও আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন। বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞাপনদাতাদের মহিমা কীর্তনের প্রচার ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ছাত্রদের শিক্ষিত ও জ্ঞাত করে তোলা হচ্ছে নতুন সেই বিভাগের দায়িত্ব। ফলে নতুন রাশিয়ার পরিবর্তন যে অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী, তা অনুধাবন করে নিতে কষ্ট হয়নি।
আমি তাঁর কাছে আরো জানতে চেয়েছিলাম, আমাদের সময়ের মতো কেবল বিনা পয়সায় পড়ার সুযোগই নয়, সেইসঙ্গে নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে স্কলারশিপ পাওয়ার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো চালু আছে কিনা। তিনি আমাকে বলেছিলেন, কেবল প্রতিভাবান রুশ ছাত্রদের বেলায় সেই ব্যবস্থা এখনো কার্যকর আছে, তবে বিদেশিদের নিজ খরচে লেখাপড়া করতে হয়। কেবল টিউশন ফি বাবদ যে-পরিমাণ অর্থ এদের পরিশোধ করতে হয় তার পরিমাণ একেবারে কম নয়। এরপরও সাংবাদিকতা অনুষদে বিদেশি ছাত্রের 888sport free bet আগের তুলনায় বেশি বলেই জানান সের্গেই ইভানোভ। কারা এই বিদেশি, আমার সেই সংগত প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, 888sport free betগরিষ্ঠ বিদেশি ছাত্র আজকাল আসছে চীন থেকে। সন্দেহ নেই ভর্তির মাপকাঠি এখন বিত্তের ওপর অনেক বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। রাশিয়ার পুঁজিবাদে ফিরে যাওয়া তো আর এমনি এমনি হয়নি!
নানা কথার ফাঁকে আমাদের সঙ্গ দেওয়া সের্গেই ইভানোভ একসময় আমাদের নিয়ে উপস্থিত হন একটি বন্ধ দরজার সামনে। দরজাটির দিকে নির্দেশ করে তিনি জানালেন যে, এর উলটোদিকে আছে একটি গির্জা, কয়েক বছর আগে যেটা নতুন করে তৈরি করে নেওয়া হয়েছে। বিপস্নব-পরবর্তী রাশিয়ায় ধর্মের ওপর নেমে আসা বলশেভিক নিপীড়নের মুখে মস্কো শহরের যে কয়েকশো গির্জা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল, সেই তালিকায় দরজার অন্য পাশের গির্জাটিও ছিল। সের্গেই ইভানোভের ভাষ্য অনুযায়ী, সেই গির্জাটি অতীতে ছিল জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করার বিশেষ এক উপাসনালয়। নতুন করে তৈরি হওয়ার পর বছরের বিশেষ এক দিনে ডিনের নেতৃত্বে ছাত্র-শিক্ষকদের একটি দল বন্ধ দরজার সামনে সমবেত হওয়ার পর দরজাটি খুলে দেওয়া হয় এবং সকলে মিলে গির্জায় সমবেত হয়ে জ্ঞানার্জনের পথে দেখা সব বাধা-বিপত্তি দূর করে নিতে ঐশ্বরিক আশীর্বাদ কামনা করে প্রার্থনা করেন। এসব ব্যাখ্যা আর বিশেস্নষণ শোনার পর সেখানে আরো বেশি সময় কাটানো আমার কাছে অনেকটাই অর্থহীন মনে হচ্ছিল এবং তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা ফিরে গিয়েছিলাম হোটেলের পথে।
সেদিন বিকেলে টুটু আবারো এসে গাড়িতে করে আমাদের নিয়ে গিয়েছিল মস্কোর দক্ষিণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনে। মস্কো নদীর বাঁকের মুখে পাহাড়ের ওপর বিশাল সেই ভবনটি স্তালিনের সময়ে নির্মিত হয়েছে এবং মস্কোর যে সাতটি একাধিক সুচালো চূড়াযুক্ত ভবনকে স্তালিনের পছন্দের স্থাপত্যশৈলী হিসেবে গণ্য করা হয়, এটি হচ্ছে তারই একটি। আমাদের সময়ে সেই পাহাড় লেনিনস্কিয়ে গোরি বা লেনিন পাহাড় নামে পরিচিত ছিল। এখন সেটা ফিরে গেছে বারাবিওভি গোরি বা চড়ুই পাখির পাহাড় হিসেবে পরিচিত এর আগের নামে। এই বারাবিওভি গোরি থেকে ১৮১২ সালে নেপোলিয়ন অবলোকন করেছিলেন আগুনে পুড়তে থাকা মস্কো নগরী। এছাড়াও ইতিহাসের আরো অনেক 888sport sign up bonus এর সঙ্গে জড়িত। ফলে সেই পুরনো নামে জায়গাটির ফিরে যাওয়া আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হয়নি।
মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই মূল ভবনে আমি থেকেছি প্রায় ছয় বছর। আমাদের হোস্টেল সেখানেই ছিল এবং মনে হয় এখনো আছে। ইউমিকোর সঙ্গে আমার পরিচয়ও সেই ভবনকে ঘিরে। ফলে আমাদের জীবনের অনেক মধুর 888sport sign up bonusর সঙ্গে সেটা জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের কাছে যেতেই আমার চোখে ব্যতিক্রমী যে-দিকটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকশো গাড়ি। চার দশক আগে আমাদের সেই সময়ে দুয়েকটি গাড়ি কালেভদ্রে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। ফলে টুটুর কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম সেইসব গাড়ির মালিক কারা। টুটু বলেছিল সেগুলো হচ্ছে ছাত্রদের গাড়ি এবং ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই আজকাল নিজের গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। সেইসব গাড়ির মধ্যে নামিদামি গাড়ির 888sport free betও একেবারে কম ছিল না। ফলে অবাক হয়ে ভাবছিলাম, ঠিক কোন পথে চলেছে নতুন এই রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজের গাড়ি নিয়ে ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া লক্ষ করা গেলেও ইউরোপের কোথাও কিন্তু তা খুব একটা দেখা যায় না। উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা সেইসব দেশে থাকায় গাড়ি নিয়ে ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার দরকার সেখানে তেমন একটা নেই। মস্কোর গণপরিবহন ব্যবস্থাও ইউরোপের 888sport app দেশের মতোই উন্নত। তারপরও ছাত্রদের এই গাড়ি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যাওয়ার প্রবণতার মধ্যে রুশদের মধ্যে প্রচলিত নিজের বিত্তবান অবস্থা অন্যদের সামনে তুলে ধরার স্বভাবজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অবশ্যই বড় ভূমিকা পালন করে থাকবে বলে আমার মনে হয়েছে।
পরদিন সকালে আবারো আমরা গিয়েছিলাম আমাদের সেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। তবে ভেতরে প্রবেশ সম্ভব হয়নি আবারো সেই আগে থেকে সংগ্রহ করা অনুমতিপত্রের অভাবে। ফলে বাইরে থেকেই দেখে নিতে হয়েছে আমাদের একসময়ের থাকার ঘরগুলো। তবে আগের দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে এসব বিধিনিষেধ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে সেখানে গিয়েছিলাম বলে খুব বেশি আশাহত আমাদের হতে হয়নি।
মস্কোতে আমাদের এক সপ্তাহের সেই 888sport slot game পর্যটকের চোখে দেখা 888sport slot game কোনো অবস্থাতেই ছিল না। আমরা গিয়েছিলাম 888sport sign up bonusচারণের তাগিদ নিয়ে। ফলে তুলনামূলক আলোকে মস্কোকে দেখার সুযোগ আমাদের সামনে ছিল অনেক বেশি এবং সেই সুযোগকে আমরা যতটা সম্ভব কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
বাইরে থেকে দেখা মস্কো এখন অবশ্যই আমাদের চার দশক আগে দেখা মস্কোর চাইতে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও চাকচিক্যময়। তবে বৈভবের আড়ালে যেমন ঢেকে রাখা হয় দীনতার দিকগুলো, মস্কোতেও তা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়নি। মস্কোর নাগরিকদের চালচলন আর পোশাক-আশাকে অনেক বেশি আধুনিকতার ছাপ লক্ষণীয় হলেও সেটাকে আবার অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বলেও সহসা মনে হয়েছে। এছাড়া পয়সার জন্য হাত বাড়ানো মানুষের দেখাও মস্কোর নগরকেন্দ্রেই হঠাৎ হঠাৎ মিলে গেছে।
কাছের অতীতকে ভুলে গিয়ে দূরের অতীতকে কাছে টেনে নেওয়ার প্রবণতা একালের রুশদের আচরণে সহজেই চোখে পড়ার মতো। তবে কাছের সেই অতীতের প্রতি কেন এই অনীহা তার কারণ কিন্তু স্পষ্ট নয়। কেননা কাছের অতীতের গৌরবের দিকগুলো মস্কোবাসী ঠিকই মনে রাখছে এবং তা নিয়ে এরা গর্বও করছে। ফেলিক্স দজেরজিনস্কি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেনিন অপসারিত হলেও রেড স্কয়ারের ঠিক বাইরে অশ্বারোহী জুকোভ এখনো হাত মেলে দাঁড়িয়ে এবং পাদদেশে রেখে যাওয়া পুষ্পস্তবকও দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। অন্যদিকে বলশয় থিয়েটারের ঠিক উলটোদিকে কার্ল মার্কসের প্রস্তরমূর্তি অনেকটাই অবহেলিত। চত্বরটির নাম এখনো বিপস্নব চত্বর থেকে গেলেও কোন বিপস্নবের কথা সেই জায়গা কিংবা মার্কস বলছেন, তা নিয়ে একালের মস্কোবাসীর মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। ফলে কোথায় চলেছে সেই দেশ, তা নিয়ে সহজেই গোলকধাঁধায় পড়তে হয়।
অন্যদিকে আবার সনাতন রুশ খ্রিষ্টধর্মকে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আতিশয্য ও পিটার দি গ্রেটকে নিয়ে টানাটানি দূর অতীতের গৌরবময় অধ্যায়ের দিকে রুশদের ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকেই যেন তুলে ধরছে। লেনিনগ্রাদের প্রতিষ্ঠাতার নামে ফিরে গেলেও মস্কোতেও পিটার-বন্দনা দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। পার্ক কুলতুরি পাতাল রেলস্টেশন থেকে ফ্রুঞ্জেন্সকায়া নাবেরেসঝনায়াকে পেছনে ফেলে সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে গেলে দূরে সহজেই চোখে পড়ে সেকালের এক জাহাজের মাস্ত্তল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা জার পিটারের বিশাল মূর্তি। মস্কোর এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের ছাপ এভাবে সহজে প্রতিফলিত হতে দেখে একালের মস্কোকে আমার কাছে মনে হয়েছে অনেকটা যেন দস্তয়েভস্কির সেই কারামাজোভ পরিবারের ছোট ভাই আলিওশা কারামাজোভ, ঈশ্বরকে কাছে পাওয়ার বাসনা থেকে ঈশ্বরের যত কাছে তার যাওয়া, ততই যেন ঈশ্বরের তাকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া। ফলে সময়ই হয়তো একসময় বলে দেবে কোথায় হবে আলিওশা কারামাজোভের একালের দেশটির পরবর্তী গন্তব্য।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.