প্রিয় কাইয়ুমভাই, কাইয়ুম স্যার

 

কাইয়ুম চৌধুরীকে কাইয়ুমভাই যেমন ডাকতাম, কাইয়ুম স্যারও ডেকেছি। এ দুই সম্বোধনের মধ্যে কখন যে কোনটা ডাকতাম, কেন ডাকতাম, কেন দুধরনের সম্বোধন – এখন আর ভেবে পাচ্ছি না। কাইয়ুমভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম সংযোগ ১৯৯৭ সালে। তখন বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে আমার প্রথম 888sport app download apkর বই বেরোচ্ছে। কাচের চুড়ি বালির পাহাড়। প্রকল্পের পক্ষ থেকে আমাদের বইয়ের প্রচ্ছদ888sport live chatীর ব্যাপারে কয়েকটি বিকল্প দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষা দিয়ে আমরা চারজন যোগ দিয়েছিলাম তরুণ লেখক প্রকল্পে। তার মধ্যে তিনজনেরই প্রচ্ছদ888sport live chatী হিসেবে পছন্দ ছিলেন অন্য 888sport live chatী, বয়সে যারা তরুণ। আমার পছন্দ ছিল কাইয়ুম চৌধুরী। প্রথম বইটির সঙ্গে কাইয়ুম চৌধুরীর মতো একজন 888sport live chatীর নাম যুক্ত হওয়াকে আমি সৌভাগ্যের বিষয় বলে ভেবেছি।

প্রকল্প শেষ করে ১৯৯৭-৯৮-তে আমি কাজ করি চট্টগ্রামে, দৈনিক পূর্বকোণে। তখন কোনো এক সময় কাইয়ুম চৌধুরী ও 888sport live chatী রফিকুন নবী চট্টগ্রাম যান। উঠেছেন বইঘরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শফির বাসায়। (অল্প কিছুদিন আগে তিনিও আমাদের ছেড়ে গেছেন)। পূর্বকোণের বার্তা-সম্পাদক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বললেন, শফি সাহেবের বাসায় গিয়ে এই দুই 888sport live chatীর সাক্ষাৎকার নিয়ে এসো। সেই সূত্রে প্রথম মুখোমুখি কথা হলো কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে। পরে হারিয়ে গেছি হাজার কাজে, সেই সাক্ষাৎকারের কোনো গতি হয়নি।

প্রথম আলোর শুরু থেকে এর ‘888sport live football সাময়িকী’তে নিয়মিত লিখতাম। দেখতাম কাইয়ুম চৌধুরীর অসাধারণ ইলাস্ট্রেশনগুলো। তখন 888sport live football বিভাগের সম্পাদক ছিলেন ব্রাত্য রাইসু। তিনি বছর দেড়েকের জন্য অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছেন। এ-সুবাদে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে আমি প্রথম আলোয় 888sport live football-সম্পাদক হিসেবে যোগ দিই। যাওয়ার আগে রাইসু 888sport live football বিভাগের কাজগুলো আমাকে বুঝিয়ে দেন। রাইসু তখন নানাজনের কাছ থেকে উচ্চাঙ্গসংগীতের সিডি সংগ্রহ করে একটা বড় সংগ্রহ গড়ে তুলছিলেন। কাইয়ুমভাইয়ের গানের বড় সংগ্রহ ছিল। রাইসু আমাকে নিয়ে গেলেন কাইয়ুম চৌধুরীর গাজী ভবনের স্টুডিওতে। সেখানেই কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিচয় হলো, হলো প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ও। রাইসু জানিয়ে দিলেন, কীভাবে কাইয়ুমভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতে হবে। এরপর কাইয়ুম স্যারের সঙ্গে কাজ বা মেলামেশা সবই মূলত প্রথম আলো, তারপর প্রথমা প্রকাশনের সুবাদে।

তখন প্রথম আলোর ‘888sport live football সাময়িকী’তে কাইয়ুমভাই শুধু ইলাস্ট্রেশনই করতেন না, প্রধান রচনাগুলোর শিরোনামও ছাপা হতো তাঁর হাতের লেখায়। এ-কারণে একটু আগেভাগেই লেখা নির্বাচন করতে হতো। শুক্রবারে পাতা বেরোয়। রবি বা সোমবারের দিকে গল্প, 888sport app download apk ও 888sport app রচনার শিরোনাম কাগজে প্রিন্ট দিয়ে কাইয়ুম চৌধুরীর কাছে পাঠাতে হতো। অফিস থেকে আনোয়ার হোসেন মৃধা বা ফরিদ উদ্দিনের কাছে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিতাম। বুধবার গিয়ে ওঁরা ওই প্যাকেটটি আবার নিয়ে আসতেন। কাজটা ছিল কঠিন। কারণ সংবাদপত্রে মুদ্রিত না হওয়া পর্যন্ত বলা যায় না, ওই লেখাটি ছাপা হবে। শেষ মুহূর্তে কোনো লেখা বদলাতে হলে পড়ে যেতাম বিপদে। তখন শিরোনাম লেখার জন্য শরণাপন্ন হতাম আনিসুল হক বা আমাদের প্রধান 888sport live chatী অশোক কর্মকারের। তাঁদের তখন কাইয়ুমভাই অসম্ভব স্নেহ করতেন। যখন এ দুজনের হাতের লেখায় শিরোনাম থাকত, তখন পাতাগুলোকে কেমন অন্যরকম দেখাত।

আমার মনে পড়ে না, কাইয়ুমভাইয়ের দেরির কারণে আমি কখনো বিপদে পড়েছি। বছরের পর বছর একই নিয়মে তিনি প্রথম আলোর জন্য কাজ করে গেছেন। শুধু ‘888sport live football সাময়িকী’র জন্য নয়, 888sport app বিভাগেও তাঁর কাজ থাকত। বিশেষ 888sport free betগুলো, দু-একটি বাদে, কাইয়ুম চৌধুরীর প্রচ্ছদ ও অলংকরণে সজ্জিত থাকত। একটা আনুমানিক হিসাবে বলা যায়, প্রথম আলোতে শুধু গল্পের জন্য কাইয়ুম চৌধুরী প্রায় পাঁশো ইলাস্ট্রেশন করেছেন। কখনো হয়তো একদিন দেরি হয়েছে। তার বেশি নয়। পেশাগত কাজে এত বড় একজন 888sport live chatীর এই সময় ও কান্ডজ্ঞান আমি আর কারো মধ্যে দেখিনি। শুরুর দিকে গল্পের আকৃতি ছোট হলে ধানাইপানাই করে ফোনে বলতাম, কাইয়ুমভাই, এ-888sport free betর জন্য কিন্তু দুটো গল্প পাঠিয়েছি। কষ্ট করে একটু করে দিতে হবে। কাইয়ুমভাই বলতেন, ঠিক আছে। কখনো প্রথমে বলতেন, উঁ, একটু ঝামেলা হয়ে গেল। দেখি কী করা যায়। কিন্তু বুধবার যখন আমাদের লোক গিয়ে প্যাকেটটি নিয়ে আসতেন, দেখতাম, যা যা চেয়েছি, সবই আছে।

এখন প্রথম আলোর ‘888sport live football সাময়িকী’র পাতাগুলো যদি আবার ঘেঁটে দেখা হয়, 888sport app download apk ও গল্পের বিষয়ের সঙ্গে ইলাস্ট্রেশনগুলো মিলিয়ে দেখা হয়, দেখা যাবে, প্রতিটি কাজ তিনি করেছেন মূল লেখাটি পড়ে। বছরের পর বছর ওই বয়সে কীভাবে তা সম্ভব হলো, এ এক বিস্ময়!

লেখালেখির সুবাদে বা দীর্ঘদিন ‘888sport live football সাময়িকী’তে কাজ করার কারণেও অনেক লেখক-888sport live chatীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। তাঁদের মধ্যে হয়তো বড়-ছোট আছেন। বেশিরভাগে মিল এক জায়গায়। আপনি সারা বছর হয়তো লেখা চেয়ে পাবেন না। কিন্তু কেউ যদি একটা লেখা দেন তো পরের সপ্তাহেই ছাপা চাই। কেউ কেউ অমুককে কেন আমার ওপরে দিলা, ও কোনো লেখক নাকি, তমুকে কী জানে – এরকম নানা উষ্মা প্রকাশ করেন ও মন্তব্য ঝাড়েন। কাইয়ুমভাই হঠাৎ কখনো একটি 888sport app download apk দিতেন। 888sport app download apkর ব্যাপারে একটু শিশুর মতো ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি ছাপানোর জন্য কখনো যন্ত্রণা দিতেন না। অন্তত আমাকে দেননি। কথা বলতে গেলেই কী সুন্দর হাসি, কী সস্নেহ সম্বোধন আর ব্যবহার। এসব এখন কোথায় পাব? এরকম একজন কাজপাগল মানুষ, এরকম একজন ভালোবাসার মানুষ কোথায় পাব?

২০১১ সালে আমি প্রথম আলোর 888sport live football বিভাগ ছেড়ে প্রকাশনা সংস্থা প্রথমার সঙ্গে যুক্ত হই। এখানে কাইয়ুমভাইয়ের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজের সুযোগ পাওয়া গেল। দু-একটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রতিটি বইয়ের অঙ্গসজ্জায় কাইয়ুমভাইয়ের হাত ছিল। কোন বই কোন সাইজে হলে ভালো হবে, তা নিয়েও ভাবতেন তিনি। অন্য 888sport live chatীর সঙ্গেও আমরা কাজ করি। কিন্তু কাইয়ুম চৌধুরীর যে অভিজ্ঞতা ও সৌন্দর্যবোধ, তা ছিল দুর্লভ। বইয়ের প্রচ্ছদে প্রতিফলিত হতো 888sport live chatী হিসেবে তাঁর সৌন্দর্যবোধ আর বইয়ের বিষয়। এত কাজের মধ্যেও ছিল তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ‘888sport live football সাময়িকী’তে গল্পে ইলাস্ট্রেশনের সময় দেখেছি, কিছুদিন মোটা লাইনে কাজ করলেন, হঠাৎ দেখা গেল তিনি সূক্ষ্ম লাইনে চলে এসেছেন। কোনো এক সময় শুরু করলেন জলরং। কিছুদিন জলরং চলল। প্রচ্ছদেও একই ব্যাপার। কখনো প্রচ্ছদপটের তল ভরাট করে বিষয়কে তুলে ধরেছেন। হঠাৎ দেখা গেল প্রচ্ছদপটের তলে ডটের ব্যবহার। তার মধ্যে অসামান্য ভারসাম্য। এ মুহূর্তে দেখছি পরপর কয়েকটি প্রচ্ছদে তিনি এই ডটের ব্যবহার করে গেছেন। যেমন ফারুক চৌধুরীর জীবনের বালুকাবেলায়, এবিএম মূসার আমার বেলা যে যায়, হরিশংকর জলদাসের আমি মৃণালিনী নই। কারো ছবি দিতে হলে কখনো ফটোগ্রাফ ব্যবহার করেছেন, কখনো নিজে এঁকে দিয়েছেন। কখনো শুধু অক্ষর সাজিয়ে তৈরি করেছেন অনুপম প্রচ্ছদপট।

কোনো একটা প্রচ্ছদ আমার পছন্দ না হলে কী আসে যায়। তার পরও যখন বলেছি, কাইয়ুমভাই, প্রচ্ছদের এ-ব্যাপারটি যদি একটু অন্যরকম করা যায়। বেশিরভাগ সময় বলেছেন, দেখি। পরে ঠিকই নতুন একটা প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন। কখনো বলেছেন, ঠিকই বলেছ। দেখছি। আবার কখনো অনড় থেকেছেন আগের কাজে। বলেছেন, এটা এরকমই থাক। ছাপা হোক, দেখবে ভালো লাগবে। আজ আমাকে বারবার বলতে হবে, এরকম একজন মানুষ আমরা কোথায় পাব?

দেশের নানা ক্ষেত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে আড্ডা হতো, আলোচনা হতো। রাজনীতি, 888sport live chat-888sport live football, আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি নিয়ে কথা হতো। তখন মৃদু ক্ষোভের প্রকাশ দেখেছি। প্রথম আলোর ভালো-মন্দ নিয়েও কথা বলতেন আমার সঙ্গে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি নিয়ে কখনো কটু কথা বলেননি। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের যেটি প্রধান ভূষণ। গলা চড়িয়ে কথা বলতে শুনিনি কখনো। শিশুর মতো আচরণ করেছেন কখনো, কখনো অভিমানও করতে দেখেছি। রক্তমাংসের একজন মানুষের যা থাকে।

নভেম্বর মাসের, অর্থাৎ যে মাসের ৩০ তারিখ আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি পাড়ি দিয়ে চলে গেলেন অপরিসীম পথ, সে-মাসের দুটি ঘটনা বলব।

১৪ নভেম্বর ২০১৪ হোটেল সোনারগাঁওয়ে ছিল প্রথম আলোর বার্ষিকী অনুষ্ঠান। এ-ধরনের অনুষ্ঠানে কাইয়ুমভাইয়ের উপস্থিতি খুবই প্রত্যাশিত। অনুষ্ঠানের দিন সকালে একটা বইয়ের প্রচ্ছদের কাজে ফোন করেছি। নানা কথার পর বললাম, সন্ধ্যায় তো দেখা হবে। তিনি বললেন, শোনো, আমার সঙ্গে কিন্তু মামুন থাকবে। মামুনভাই কাইয়ুমভাইয়ের শ্যালক। আমরা সবাই জানি, সাধারণত কাইয়ুমভাই একা কোথাও যান না। মামুনভাই সঙ্গে থাকেন। আমি বললাম, সে তো আমি জানি। তিনি বললেন, আরো একজন থাকবে। কে? বললেন, অতনু। অতনু মামুনভাইয়ের ছেলে। বয়স ছয় বছর। কিছুদিন আগে আমরা প্রথমা থেকে কাইয়ুমভাইয়ের একটা ছড়ার বই করেছি। ছড়াগুলোর ছবি এঁকেছে এই অতনু। বইটির প্রচ্ছদে ছাপা – ‘তনুর সঙ্গে রং রেখাতে। অাঁকা : অতনু, লেখা : কাইয়ুম চৌধুরী।’ কাইয়ুমভাই বললেন, অতনুও থাকবে। আমার তো সেটাও জানা। আমি নই, প্রথম আলোয় কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছি, জানি এই দুজন তাঁর নিত্যসঙ্গী। কাইয়ুম চৌধুরীর নিমন্ত্রণ মানে, এঁদেরও নিমন্ত্রণ। কিন্তু কাইয়ুমভাইকে কেউ না-ও তো চিনতে পারে। আমাকে বললেন, সামনের দিকে থেকো। প্রথম আলোর প্রধান 888sport live chatী অশোক কর্মকার কাইয়ুমভাইয়ের খুবই স্নেহভাজন। তাঁকেও তিনি বলেছেন একই কথা। সামনে থেকো। জানি, অভ্যর্থনা জানাতে যাঁরাই থাকুন, তাঁরা কাইয়ুম চৌধুরীকে চিনবেনই এবং সাদরে গ্রহণও করবেন। অনুষ্ঠানটি প্রথম আলোর না হয়ে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের হলেও, তাঁরা যদি কাইয়ুম চৌধুরীকে নিমন্ত্রণ করেন, তাঁরাও কাইয়ুমভাই ও তাঁর সঙ্গীকে গ্রহণ করবেন সাদরে। কিন্তু তিনি নিশ্চিত হতে পারেন না, পারেন না – কারণ, নিজেকে খুব বড় কিছু ভেবে বসে থাকেননি তিনি।

আর সংশয় তো থাকেই। অভিজ্ঞতা তো একটা অনুষ্ঠান বা একটা প্রতিষ্ঠান থেকে হয় না। কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর ৮৩ বছরের জীবনে কত রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তা কি আমি জানি?

২৪ নভেম্বর ২০১৪ বিকেলে ছিল প্রথমা প্রকাশনের শাহবাগ বইমেলার উদ্বোধন। সেদিন মেলার উদ্বোধন এবং এবিএম মূসার আমার বেলা যে যায় বইয়ের প্রকাশনা-উৎসব ছিল একই সঙ্গে। কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রায় পক্ষকালের এই বইমেলা ছিল মূসাভাইয়ের 888sport sign up bonusর প্রতি নিবেদিত। মূসাভাইয়ের সঙ্গে কাইয়ুম চৌধুরীর অনেক পুরনো সখ্য। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও কাইয়ুমভাই এ অনুষ্ঠানের অতিথি।

২৪ নভেম্বর সকালে ফোন করলাম কাইয়ুমভাইকে। বললাম, স্যার, অনুষ্ঠান কিন্তু আজ বিকেলে, ৪টায়। মনে আছে, বললেন তিনি। নানা কথার পর বললাম, আমরা চাই, অনুষ্ঠানটি যেন দীর্ঘ না হয়। বলবেন শুধু আপনি, ঝুমা আপা (মূসাভাইয়ের মেয়ে) ও আনিসুজ্জামান স্যার। মতিভাই, মানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলতে পারেন, না-ও বলতে পারেন। কাইয়ুমভাই বললেন, বেশি কথা বলা যাবে না। লোকে মাঝখানে তালি দিতে শুরু করে। মনে পড়ল, কিছুদিন আগে কি বছরখানেক হবে, শাহবাগেই এক অনুষ্ঠানে কাইয়ুম চৌধুরী বক্তব্য রাখছিলেন। কিছু পরপর দেখি দর্শক-শ্রোতাদের অনেকে তালি ফোটাতে শুরু করেছে। বক্তব্য শেষ করার প্রত্যক্ষ নির্দেশ এটা, চরম অসৌজন্য বর্বর একটা আচরণ। 888sport app শহরে থাকা, কাজকর্ম করে খাওয়া মানে তো প্রতিদিন নানা নিপীড়ন-নির্যাতন-অপমানের মধ্যে থাকা। এজন্য আমরা সব সময় অসহিষ্ণু হয়ে থাকি। কিছু পছন্দ না হলে অশোভনভাবে জানিয়ে দিতেও আর বাধে না। সেই সভার সেই দৃশ্য আমার মনে গেঁথে আছে। আমরা বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা যখন সংক্ষিপ্ত করার কথা বলছি, আমি স্বীকার করব, শাহবাগের ওই অনুষ্ঠানের ঘটনা আমার মনে ছিল। কিন্তু ভাষা বা ইঙ্গিত – কোনোভাবেই তা আমি প্রকাশ করিনি। না করলে কী হবে, মনে ছিল কাইয়ুমভাইয়েরও। অন্যরা ভুললেও কাইয়ুমভাই কীভাবে ভুলবেন? যাকে দংশন করা হয়নি, কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে?

সেদিনের অনুষ্ঠানে আর লম্বা বক্তব্যের তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এবিএম মূসাকে নিয়ে তিনি যে সংক্ষিপ্ত 888sport sign up bonusচারণা করলেন, তার মধ্যে ছিল উচ্চস্বরের রসবোধ। যে-ধরনের রসবোধ থাকলে নিজেকে পরিহাস করেও আসর মাতানো যায়।

২৪ নভেম্বরই কি কাইয়ুমভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা? তাই হবে। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর কাইয়ুমভাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা মনে আছে। অফিসে আমার টেবিলের সামনে বসে সেদিন আমাকে একটা ড্রয়িং করে দিয়েছিলেন তিনি। নিচে নিজের হাতে লিখে দিয়েছেন আমার নাম। স্বাক্ষর করেছেন, তারিখ দিয়েছেন। এজন্যই তারিখ উল্লেখ করতে পারলাম। আমার ফোনসেটের ক্যামেরা দিয়ে তাঁর চারটে ছবি তুলেছি সেদিন। দুটো অশোক কর্মকারের সঙ্গে। আমি সাধারণত ছবি তুলি না। ফোনে ক্যামেরা আছে এ-কথাই আমার মনে থাকে না। ৩০ নভেম্বরের পর মাঝেমধ্যে ছবি চারটে দেখি। দুটোতে একা, প্রাণ খুলে হাসছেন, দুটোতে অশোক কর্মকারের সঙ্গে। এর একটাতে হাতে ফোনসেট নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন খুবই বিষণ্ণ চোখে। কেন কে জানে!

কতদিন আগের কথা। মনে আছে, 888sport live chatী জগন্ময় মিত্র মারা যাওয়ার পর কাইয়ুমভাই বলেছিলেন, জগন্ময় মিত্রকে নিয়ে সাময়িকীতে লিখব। লিখলেনও। সঙ্গে এঁকে দিলেন একটা প্রতিকৃতি। সহজ। সুন্দর। আমি যখনই কারো প্রতিকৃতি অাঁকতে অনুরোধ করেছি, কখনো না করেননি। মনে পড়ছে, আমার অনুরোধে এঁকেছেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জয়নুল আবেদিন, শামসুর রাহমানসহ অনেকের প্রতিকৃতি। প্রথমা থেকে বেরোবে ‘কীর্তিমান বাঙালি’ সিরিজ। তিনি বললেন, প্রচ্ছদের জন্য আমি প্রত্যেকের প্রতিকৃতি অাঁকব। ভেতরে একটা ফটোগ্রাফ যাবে। এঁকেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতি। বছরতিনেক আগে আবুল আহসান চৌধুরীর সুফিয়া কামাল : অন্তরঙ্গ আত্মভাষ্য বইয়ের জন্য সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন। বলতে পারতেন, ওটা দিয়ে দাও। বলেননি। কখনো হঠাৎ এমন হতো, একটা কভার খুব জরুরি দরকার, কিন্তু কাইয়ুম স্যার করে উঠতে পারছেন না। জানি, এটা সব 888sport live chatী, সব লেখকের হয়। এ-সময় তাদের শুশ্রূষা দিতে হয়, পরিচর্যা করতে হয়। দেখা যাবে একদিন পাঁচটি প্রচ্ছদপট একসঙ্গে করে দিয়েছেন।

আমাদের প্রথমার কারওয়ানবাজার অফিসে ঢুকতেই প্রথমা বইয়ের দুনিয়ার একটা বিক্রয়কেন্দ্র আছে। মাঝেমধ্যে সেখানে দাঁড়িয়ে বই দেখতেন কাইয়ুমভাই। প্রথমার কোনো বই চাইলে নির্দ্বিধায় দিয়ে দিতাম। বাসায় পাঠিয়ে দিতাম ফোনে চাইলে। প্রথমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা তাঁর বন্ধুবান্ধব-স্বজনরা জানত। সে-সূত্রে কোনো কোনো বই চাইত কাইয়ুমভাইয়ের কাছে। তখন তিনি কিনে নিতেন। কোনো কোনো বইয়ের পাঁচ-ছয় কপিও কিনেছেন। মজা করে বলতেন, তোমাদের বই তো সব আমিই কিনি।

একদিন প্রথমার বইয়ের দুনিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে দেখেন সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনাবলী। আমাকে বললেন, এখানে সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনাবলী দেখলাম। সব খন্ড আছে? এই কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন সোহরাব সরদার। ইন্টারকমে জানতে চাইলাম। সোহরাব বলল, প্রথম খন্ডটি নেই। প্রথম খন্ডটি জোগাড় করতে পারো কি-না দেখো তো। ওটার কভার করেছি আমি। তা ছাড়া আবার মুজতবা আলী পড়তে চাই, বললেন কাইয়ুম স্যার। তারপর মুজতবা আলীকে নিয়ে আড্ডা। জানতে চাইলাম, প্রকাশক আপনাকে কপি দেয়নি! তিনি হাসলেন। বুঝলাম, প্রশ্নটা বাহুল্য হয়ে গেছে। সেদিনই আরেকটি বই সংগ্রহ করে দিতে বললেন, জসীম উদ্দীনের ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে। আমি বাংলাবাজার থেকে মুজতবা আলীর রচনাবলীর প্রথম কপি সংগ্রহ করে সেট পূর্ণ করলাম। জসীম উদ্দীনের বইটাও আনা গেল। ফোনে কথা হলো এ নিয়ে। আমাদের একজন কর্মী যাবেন তাঁর বাসায়। জসীম উদ্দীনের বইটি পাঠালাম তাঁর হাতে। বইয়ের গায়ের দাম ছিল সম্ভবত ১০০ টাকা। আমি সংগ্রহ করেছি ৬০ টাকায়। তিনি ১০০ টাকাই পাঠিয়ে দিলেন। ৪০ টাকা তো আর ফেরত দেওয়া হলো না। হবেও না কোনোদিন। মুজতবা আলীর রচনাবলীর সেট আমাদের প্রথমার বইয়ের আলমারিতেই রয়ে গেছে।

888sport apps আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন-আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব শুরু হলো ২৭ নভেম্বর। প্রতিদিনই যাব শুনতে – কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু একদিন যাওয়ার পর খবর পেলাম আমার বাবা অসুস্থ। খুবই অসুস্থ। তখন খুব মন খারাপ থাকত। যাব যাব করেও দেখলাম আর উৎসাহ পাই না। একদিনই গিয়েছিলাম শুধু।

৩০ নভেম্বর শাহবাগে দাঁড়িয়ে আছি, ফোন পেলাম প্রথমার জহির উদ্দিন বাবরের। তিনি তখন স্টেডিয়ামে প্রথমার স্টলে ছিলেন। বললেন, বক্তৃতা দিতে গিয়ে মঞ্চে কাইয়ুম স্যার পড়ে গেছেন। আকাশ থেকে পড়লাম। ফোন দিলাম অশোকদাকে। দৌড়ে গেলেন তিনি। জহির জানালেন, সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাঁর পালস ঠিক আছে। তখন শঙ্কামুক্ত হয়ে আড্ডায় মেতে উঠেছি। এক মুহূর্তের জন্য ভাবিনি, সেই রাতে বাসায় ফেরার আগে আমি স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে অপেক্ষা করব। সেখানে অনেক পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা হবে কিন্তু কথা হবে না। সেখানে অশোকদা আমাকে দেখেই আর নিজেকে সংবরণ করতে পারবেন না। পারব না আমিও। এখনো পারছি না। এখনো। তারপর কাইয়ুমভাইয়ের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে এলেন তাঁর নিত্যসঙ্গী মামুনভাই। এসেই বললেন, আপনার ওখানে আর যাওয়া হবে না। কার সঙ্গে যাব!