প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্প  জীবনবোধ ও 888sport live chat-অভিযাত্রা

প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-৮৮) বাংলা কথা888sport live football জগতের এক উজ্জ্বল পুরুষ। ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে বিশ শতকের ত্রিশের দশকে বুদ্ধদেব বসু, অচিমত্ম্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯০৩-৭৬) ও প্রেমেন্দ্র মিত্র – কলেস্নালীয় ধারাকে প্রবাহিত করেছেন। সাধারণ জনজীবনের দারিদ্র্যক্লিষ্টতাকে প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর ছোটগল্পে শৈল্পিক সার্থকতায় তুলে এনেছেন। প্রেমেন্দ্র মিত্রের নির্বাচিত গল্প (দে’জ পাবলিশার্স, ১৪২০) অবলম্বনে তাঁর দশটি গল্পের জীবনবোধ ও 888sport live chat-অভিযাত্রাকে এ-888sport liveে উপস্থাপন করা হলো। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘শুধু কেরানী’ গল্পটির ঘটনাবস্ত্তর সারার্থমর্মসার : গল্পটিতে কোনো অতিকথন নেই। নববিবাহিত কেরানি তার বধূকে যেভাবে ভালোবাসায় আগলে রাখে; এবং বউটিও একইভাবে – সে-প্রসঙ্গই গল্পটিতে বিবৃত। ফুলের মালা এনে দিয়েছে স্বামী তার স্ত্রীকে। ট্রামে না এসে, ট্রামের ভাড়া বাঁচিয়ে সেই টাকা দিয়ে ফুলের মালা কিনে আনতে হয়েছে কেরানিকে। এ-নিয়ে স্ত্রী বলে, কেন সে কষ্ট করে হেঁটে এলো; এ-ফুলের মালা না আনলেও তো হতো। স্বামীর কষ্ট হয়েছে বলে স্ত্রীর এ-অভিমান। স্ত্রীর জ্বর হলে স্বামী তাকে রাঁধতে দিতে চায় না। কারণ গরমে-ঘামে স্ত্রীর জ্বর আরো বেড়ে যাবে। পরস্পরের প্রতি প্রচণ্ড রকম ভালোবাসা তাদের। সুখানুভূতি তাদের প্রবল। অর্থাভাব ও দারিদ্র্যক্লিষ্টতায় তারা জর্জরিত হলেও তাদের হৃদয়ানুভূতি পরস্পরের জন্য উত্তুঙ্গ ও উদ্গ্রীব। কেরানি প্রায়ই হেঁটে আসে অফিস থেকে; ট্রাম ভাড়া বাঁচিয়ে তা দিয়ে ‘সূতিকা’ রোগগ্রসত্মা স্ত্রীর চিকিৎসা-খরচ জোগানোর জন্য। তবু স্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায় না। দুজনের কেউ-ই ভগবানের প্রতি অভিযোগ করে না। স্ত্রীর বেঁচে থাকার ইচ্ছা এবং স্বামীর স্ত্রীকে বাঁচিয়ে রাখার আকাঙক্ষা – উভয়ের হৃদয়গত ক্রন্দন যেন সমস্ত পাঠকের ক্রন্দন হয়ে ওঠে গল্পটিতে।

‘শুধু কেরানী’ গল্পটির রচনাশৈলীর প্রথমেই পাখিদের খড়কুটা, ছেঁড়া পালক, শুকনো ডাল দিয়ে সেগুলোর নীড় বাঁধার কথা উলিস্নখিত আছে। গল্পটির শেষ বাক্য স্মর্তব্য : ‘তখন কাল-বৈশাখীর সমীকরণ আকাশে নীড়ভাঙার মহোৎসব লেগেছে।’ স্বামী কেরানি ও কেরানি-পত্নী স্ত্রীর সুখের দাম্পত্যজীবনের সমাপনীভাষ্য এই নীড়ভাঙা শব্দের মধ্যে উপস্থাপিত আছে। সুখের অনুভূতি ও ভালোবাসার অমেয় স্বাদ এই দম্পতির অন্তরে ছিল। কিন্তু অর্থাভাবে স্ত্রীর ভালো চিকিৎসা করাতে না পারায় স্বামী-কেরানির অন্তরের যে-রক্তক্ষরণ স্ত্রীর করুণ হাসির মধ্যে যে প্রতিভাত তা নিম্নোক্ত ভাষ্যে স্পষ্ট : ‘একটা হাসি আছে – কান্নার চেয়ে নিদারুণ, কান্নার চেয়ে যেন বেশি হৃৎপি- নেংড়ানো।’ অনুভূতিময় দাম্পত্য যে দারিদ্র্যক্লিষ্টতায় কীভাবে আপামর পাঠকের কান্নায় রূপায়িত হয়, সে প্রমাণ এখানে পাওয়া যায় : ‘শুধু সেদিন জ্ঞান হারাবার আগে মেয়েটি একটিবারের জন্যে এতদিনকার মিথ্যাকরণ ছলনা ভেঙে দিয়ে কেঁদে ফেলে বললে – ‘আমি মরতে চাইনি – ভগবানের কাছে রাতদিন কেঁদে জীবন ভিক্ষা চেয়েছি, কিন্তু -’ (ওই,
পৃ ৮)। দারিদ্র্যাঘাতে জীবনের এ-অপমৃত্যুর যে-আর্তনাদ তা প্রেমেন্দ্র মিত্রের উপযুক্ত ভাষাশৈলীর মধ্যে 888sport live chatিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

‘পুন্নাম’ – গল্পটির ঘটনা-বস্ত্তসার হলো নিম্নবিত্ত ললিত ও ছবির পাঁচ বছরের পুত্রসন্তানের ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠা। খোকা ঘুমায় না। তার ঘুম আসে না। সর্বক্ষণ জেগে থাকে। মা-বাবাকে ঘুমাতে দেয় না। কাঁদে। মা ছবি বিরক্ত হয়ে তাকে চাপড় মারে। জাহাজের চাকুরে ললিতও চাকরি থেকে এসে ছেলের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ঘুমাতে পারে না। তাকে নিয়ে রাতে বাইরে ঘুরিয়ে আনতে চায়। ছবি স্বামীকে বলে ঘুমাতে। ডাক্তার বলেছে, হাওয়া পরিবর্তন করলে খোকা সেরে উঠবে। গরিব পিতার চেঞ্জে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। স্ত্রীর হাতের চুড়িই একমাত্র সম্পদ তাদের। ললিত বাধ্য হয়ে জাহাজের গাঁটরি বিক্রি করে অর্থ জোগাড় করে ছেলেকে চেঞ্জে নিয়ে গেছে। চেঞ্জে নিয়ে গিয়ে টুনু নামক এক শিশুর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। সে খোকার সঙ্গে খেলতে আসে। টুনু লিখতে পারে; কিন্তু খোকা ‘অ’ লিখতে পারছে না – এতে ললিত টুনুর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়। তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় ললিতের অনুদারতা প্রকাশ পায়। অন্যদিকে খোকা টুনুকে দুটো সন্দেশ নয়, একটিও দিতে রাজি হয় না। এই ঈর্ষা ও অনুদারতার জন্যে ললিত খোকার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়; ছবিকে সে উষ্মা প্রকাশ করে। ললিতের অর্থাভাব ও নিম্নবিত্ততার মধ্যেই যে আসলে তার ছেলে খোকার অনুদারতা ও হিংসার বীজ লুকায়িত – সেটিই লেখক প্রকারান্তরে গল্পটিতে তুলে এনেছেন।

‘পুন্নাম’ গল্পের ‘অসুখ আর কিছুতেই সারে না’ ভাষ্য দিয়ে শুরু গল্পটি চেঞ্জে যাওয়া পাশের বাড়ির ছোট্ট টুনুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ায় এর মধ্যে নাটকীয়তা ও জীবনরহস্যের ছায়াপাত প্রত্যক্ষযোগ্য হয়েছে। খোকার অসুস্থতা যে কত প্রকট ছিল তা গল্পকার 888sport live chatিত বিষণ্ণ ভাষ্যে উপস্থাপন করেছেন : ‘শিশুর চোখ সে নয় – জীবনের সমস্ত বিরস বিস্বাদ পাত্রে চুমুক দিয়ে তিক্তমুখে কোনো বৃদ্ধ যেন সে-চোখকে আশ্রয় করেছে।’ (ওই, পৃ ৯) অতিকথনবর্জিত এ-গল্পটির মধ্যে জীবনের দারিদ্র্যক্লিষ্ট বাস্তবতা ও প্রতিরোধের মূর্ছেপড়া বিষণ্ণ-মৌনতা ভাষারূপ লাভ করেছে।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সাগর সংগম’ গল্পের মর্মকথা হলো : একজন ধর্মপ্রাণ বিধবা 888sport promo code প্রথমে বেশ্যার কিশোরী মেয়ে বাতাসিকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছিল; সাগরসঙ্গমে যাওয়ার পথে নৌকায় তাদের পরিচয় ও তীর্থে তাদের সময়যাপনের পরে সেই বেশ্যাকন্যা বাতাসিকেই নিজ কন্যা হিসেবে পরিচয়দানের মধ্যে প্রকাশ পায় তার মাতৃত্ব ও ঔদার্য। বালবিধবা দাক্ষায়ণী বালিকা বয়সে বিধবা হলেও তার ‘অননুকরণীয় নিষ্ঠা ও ধর্মাচরণের জন্য’ লোকজন তাকে 888sport apk download apk latest version করতো। লক্ষ্মণ তীর্থযাত্রার ব্যবস্থা করেছিল। লোকের ভিড় ছিল নৌকায়। এতেই দাক্ষায়ণীর লক্ষ্মণের প্রতি প্রচণ্ড রাগ ছিল; সে পা-টি পর্যন্ত প্রশস্ত করে বসতে পারে না। অন্যদিকে, বেশ্যাদের নৌকায় তোলায় সে আরো বিরক্ত হলো। তার শুচিতা ও পবিত্রতা যেন নষ্ট হচ্ছে সেজন্যে। তবে বেশ্যারাও যে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে পাপবিমুক্ত হয়ে পবিত্র হওয়ার জন্যে সাগরসঙ্গমে যাচ্ছে – তাদেরও যে পুণ্যবতী হওয়ার আকাঙক্ষা আছে – সেই বিষয়টি প্রেমেন্দ্র মিত্র শৈল্পিক বর্ণনা ও মানবিক ঔদার্য দিয়ে গল্পটিতে রূপায়িত করেছেন। বাতাসি নৌকায় ডাকসাইটে দাক্ষায়ণীকে ‘ধুমসী মাগী’ বলায় দাক্ষায়ণী বাতাসির প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিল। অতঃপর পরপর দুবার নৌকাডুবির ফলে অন্য সকলের সলিলসমাধির পর দাক্ষায়ণী ও বাতাসির মধ্যে যে মা-মেয়ের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটে – তাতে জীবনের ঔদার্যের মাত্রারই প্রবৃদ্ধি ঘটে। যে দাক্ষায়ণী বেশ্যাদের প্রচণ্ড ঘৃণা করতো; সেই সূত্রে বেশ্যাকন্যা বাতাসিকেও; সেই দাক্ষায়ণীর অন্তর ক্রমশ সংস্কারবিমুক্ত হয়, হতে পারে সে বেশ্যাকন্যা নয়; বেশ্যার পালিতা-কন্যা; কোনো সদ্বংশজাত। অথবা হলেও
বেশ্যা-কন্যা বাতাসির তো এই পঙ্কে জন্মগ্রহণের কোনো হাত ছিল না – এসব ভাবনার পরিপ্রেক্ষিত থেকে উদারমনে মাতৃত্ব-মায়ায় বাতাসিকে অন্তর থেকে গ্রহণ করার মধ্যে দাক্ষায়ণীর চিন্তার পুনর্জন্ম ঘটিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র পরম মানবিক ঔদার্যের পরিচয় প্রদান করেছেন।

‘সাগর সংগম’ গল্পে বাতাসির মৃত্যু-উত্তর পরিচয় প্রদানপর্বে 888sport live chatসুষমার মানবিক নির্যাস যে কত দ্বিধাসংশয়মুক্ত, উচ্চ চিন্তাজাত ও সংস্কারমুক্ত, তা গল্পটির নিম্নোক্ত ভাষ্যে উপস্থাপিত – ‘দাক্ষায়ণী খানিক চুপ করিয়া থাকেন, তারপর সুপবিত্র মুখুজ্যে পরিবারের বড় বউ, জীবনের সমস্ত সংস্কার ও শিক্ষা ভুলিয়া যাহা করিয়া বসেন তাহাতে তাঁহার শ্বশুরকুলের চতুর্দশ পুরুষ সুদূর স্বর্গের সুখাবাসে শিহরিয়া উঠেন কি না জানি না, কিন্তু সবার অলক্ষক্ষ্য জীবন দেবতার মুখ বুঝি প্রসন্নই হইয়া ওঠে।’ (ওই, পৃ ৩৬) ব্রাহ্মণ-বধূ দাক্ষায়ণীর মধ্যে যে বেশ্যা ও বেশ্যাকন্যার প্রতি উদারতা জাগলো; যে তাদেরও পুণ্যাত্মা হওয়ার আকাঙক্ষা থাকতে পারে এবং বাতাসিকে নিজ-কন্যা হিসেবে পরিচয়দানের স্পর্ধা – এতে মানবিক-উদারতা একটি সচেতন সুস্থিতি লাভ করে।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘মৃত্তিকা’ গল্পে মালিকশ্রেণির সাধারণ মানুষের প্রতি দুঃশাসনের চিত্র ভাষারূপ পেয়েছে। মৃত্তিকানির্মিত দ্বিতল ভাঙাচোরা অস্বাস্থ্যকর বাড়িতে সাবানের ও ছোটখাটো জিনিসের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নেশাগ্রস্ত ও পতিতা 888sport promo codeর বসবাসের বৃত্তান্ত এতে বিধৃত আছে। শশী ও বিজয়ের কাহিনি মূলত রামচন্দ্র ও শ্রীপতির জীবনের দুঃখজনক অধ্যায়েরই রূপায়ণ। ‘জীবন যখন শুকায়ে যায় – করুণাধারায় এসো’ – এই রবীন্দ্রভাষ্যের মতোই জীবন ও জীবনের ইতিবাচকতার আকাঙক্ষা এতে প্রতিভাসিত হয়েছে।

অন্যদিকে ‘মহানগর’ গল্প আসলে কলকাতা মহানগরসমেত পৃথিবীর যে কোনো শহরকেই প্রতীকায়িত করে। কলুষ-কালিমা ও রিরংসাকাতরতায় যে-মহানগর আশিস্নষ্ট – রতনের বোন চপলা সেই মহানগরেরই কলুষ-কালিমার শিকার এক 888sport promo code। চপলার বিয়ে হয়েছিল। কোনো সূত্রে তাকে মহানগর থেকে রিরংসাচাপল্যে প্ররোচিত করে অথবা জোর করে কলঙ্কায়িত করা হয়। চপলার বাবাসহ পরিবারের কেউ চপলার কথা আর বলে না, মনে করে না, তাকে বাড়ি আনতে চায় না।

রতন বয়সে ছোট। বেশ্যাবৃত্তির ব্যাপারে সে জানে না। শহরের অবৈধ রিরংসার বিষয়ে সে অনভিজ্ঞ। তার বাবার সঙ্গে মহানগরে যেতে সে বায়না ধরে। বাবার সঙ্গে সে শহরে যায়। তার দিদি যে উল্টোডিঙি শহরে থাকে – তা রতন জানে। সে কৌশলে তার বাবার থেকে ছিটকে পড়ে অনেক দূরের পথ – উল্টোডিঙি খুঁজে বের করে। ভাগ্যক্রমে সে তার দিদিকে অন্য এক বেশ্যা-সাথির মাধ্যমে পেয়ে যায়। কিন্তু রতন জানে না এই সাথি কে। রতন জানে না কেন তার দিদি চপলা তাকে বলে যে, কেন রতন চপলার এই ঘরে থাকতে পারবে না। রতন জানে না কেন চপলার পক্ষে আর বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব নয়। চপলা যেহেতু নিষিদ্ধপলিস্নতে থাকে – ঘৃণিত জীবন যাপন করে – সেজন্য তার পক্ষে তার নিজ ও শ্বশুর বাড়িতে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে রতন যে বলেছে, সে বড় হয়ে তার দিদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, কারো কথা সে শুনবে না – এই ভাষ্যের মাধ্যমে একটি সচেতন বুদ্ধিদীপ্ত বিবেকের আমরা সন্ধান পাই। রতনরা তাদের দিদিদের আসলেই অন্ধকার থেকে ফিরিয়ে নেবে। এমন মানুষও সমাজে আছে : যারা পতিতাদের সুস্থ জীবনে পুনর্বাসনের জন্যে অর্থ ও জ্ঞানকে খাটায়। রতন তাদেরই বালক-প্রতিনিধি।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ভাষাশৈলীর মানবিক উচ্চতা নিম্নোক্ত বাক্যে প্রতিভাত : ‘চপলা তখনো দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। রতন তার কাছে এসে হঠাৎ বলে – ‘বড়ো হয়ে আমি তোমায় নিয়ে যাব দিদি। কারুর কথা শুনব না।’ (ওই, পৃ ৫৯)

প্রেমেন্দ্র যখন লিখেন ‘মহানগরের ওপর সন্ধ্যা নামে বি888sport sign up bonusর গাঢ়।’ (ওই, পৃ ৫৯) – তখন জীবনের নেতিবাচক কালিমার কারণে জীবন যে বিপদগ্রস্ততা ও বিষণ্ণতায় পর্যুদস্ত ও বি888sport sign up bonusপ্রবণ হয় – তারই রেখাভাষ্য প্রতীকায়িত হয় গল্পে।

‘সংসার সীমান্তে’ গল্পের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর ঘরসংসার করার যে পারিবারিক বৃত্ত – সেটি থেকে বেরিয়ে এসে জীবনের অবৈধ রিরংসা ও অর্থপ্রাপ্তির মাধ্যমে জীবনকে কোনোরকমে যাপনের বার্তা বিঘোষিত হয়েছে। একটি টাকার জন্যে রজনী প্রথম রাতে অঘোর দাসকে ঘরে আশ্রয় দিয়েছে। দিনে আবার অঘোর দাস এলে টাকা নিয়ে অঘোর পালিয়েছিল বলে সেই প্রতিশোধ গ্রহণার্থে রজনী অঘোরকে চোর হিসেবে সাব্যস্ত করায় লোকজন তাকে মেরে প্রায় আধমরা করে ফেলেছিল। পুলিশের হাঙ্গামা থেকে বাঁচার জন্য এবং বাড়িওয়ালিরও যাতে হাঙ্গামা না হয় সেজন্যে আহত অঘোর দাসকে রজনী বেশ কিছুদিন ধরে শুশ্রূষা করেছে। পাঁচ টাকার বিনিময়ে। অঘোর দাস চুরি করে রজনীকে টাকা এনে দিয়েছে। রজনী তাকে বলেছে যেন সে আর চুরি না করে। অঘোর রজনীকে নিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে কলকাতা থেকে দূরে কোথাও ঘরসংসার করতে চেয়েছে। রজনীর বাড়িওয়ালির টাকা, ঋণ ও কিস্তির টাকাও অঘোর দাস চুরি করে মিটিয়ে দিয়ে রজনীকে নিয়ে ঘর বাঁধতে চেয়েছে। সে চেষ্টা করেই চুরিতে ধরা পড়ে অঘোরকে জেলে বন্দি হয়ে জেলজীবন যাপন করতে হয়েছে। এভাবে অঘোর-রজনীর সংসার সীমান্ত হয়ে পড়েছে বিপদসংকুল। গল্পকারের নন্দনশৈলীতে সেই বেদনারই ছায়াপাত : ‘অঘোর দাস এখনো জেলে পচিতেছে। নিরবচ্ছিন্ন বর্ষার রাতে এখনো নিশ্চয় কলকাতার একটি কর্দমাক্ত নোংরা ও কুৎসিত পথের ধারে কেরোসিনের ডিবিয়ার মস্নান আলো দেখা যায়। ডিবিয়ার ধূমবহুল শিখাকে শীর্ণ হাতে সযত্নে বৃষ্টির ঝাপটা হইতে আড়াল করিয়া গভীর রাত্রি পর্যন্ত এখনো নিশ্চয় বিগত যৌবনা রূপহীনা রজনী একরাত্রের অতিথির জন্য হতাশ নয়নে পথের দিকে চাহিয়া প্রতিক্ষা করে।’ (ওই, পৃ ৭২)

‘শৃঙ্খল’ গল্পের ভূপতি ও বিনতির যে দাম্পত্য-জীবন তা শৃঙ্খলাপূর্ণ ও বিনত নয়; বরং শৃঙ্খলিত ও উদ্ধত। ভূপতির মা তার একটি মাত্র সন্তান ভূপতিকে নিয়ে বিশ বছর আগে বিধবা হয়েছে। চৌদ্দো-পনেরো বছরের এক ভীরু লাজুক নিরীহ মেয়ে হলো বিনতি। একা বড় হওয়ায় – একমাত্র মা ভূপতির সঙ্গী হওয়ায় সামাজিক নির্দিষ্টতায় সে বড় হতে পারেনি। আচরণে ও অনুভবে সে চোস্ত হতে পারেনি। খাপছাড়া স্বভাব। অনেকটাই অনুভূতিহীন। কোমলতাহীন। রূঢ়, অনাকর্ষণীয় ও রুক্ষ। জীবন দিয়ে জীবনকে, অনুভূতি দিয়ে অনুভূতিকে গাঁথার মানসিক সামর্থ্য ভূপতির ছিল না। সেজন্যেই বিনতিকে সে অন্তরের অনুভব দিয়ে আনন্দিত করতে পারেনি। ভূপতির মাকে সে খরচের টাকা দিতে দেরি করেছে; মা তার কাছে টাকা চেয়েছে; ভূপতি বলেছে তার পুত্রবধূর কাছ থেকে নিতে। এতে মা কষ্ট পেয়েছে। পুত্রবধূকে মা শাসন করতে পারছে না বলে মাকে ভূপতি অভিযুক্ত করেছে। এতেও ভূপতির মা কষ্ট পেয়েছে। কষ্ট নিয়েই মা মারা গেছে। বিনতি মৃত সন্তান প্রসবের পর ডাক্তার বিনতিকে আরো কয়েকদিন হাসপাতালে রাখতে ভূপতিকে পরামর্শ দিয়েছে। ভূপতি তা মানেনি। তাতে বিনতি মারাও যেতে পারতো বলে ডাক্তার আশংকা করেছিল। ভূপতির অনুভূতির মধ্যেই এই ধরনের গূঢ় নিষ্ঠুরতা কাজ করতো। বিনতিকে বায়োস্কাপ দেখাতে নিয়ে গিয়ে তাকে না নিয়েই সে হঠাৎ করে শো শেষ হওয়ার আগেই বাড়িতে আসার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। বিনতি এই প্রত্যাখ্যানের কষ্ট পেয়ে হয়তো আর ভূপতির বাড়িতেই যাবে না – এই ধরনের দূরত্ব ও সম্পর্কচ্ছেদের জন্যেই ভূপতি তা করেছে। এই ধরনের গোপন নিষ্ঠুর-কদর্যতা ভূপতির স্বভাবের মধ্যে ছিল। সেজন্যেই প্রেমেন্দ্রের : ‘888sport live chatভাষ্য অবি888sport app download for androidীয়’ : ‘888sport app কথা হয়তো তাহারা আবার কহিবে, সংসারের প্রয়োজনে, পরস্পরকে আহত করিবার অদম্য প্রেরণায়, কিন্তু তবু অন্তরের এ-নিঃশব্দতায় ভার ঘুচিবার নয়। জীবনের একটিমাত্র বিলাস চরিতার্থ করিবার জন্য এ-নিঃশব্দতার নির্বাসন তাহাদের নিঃসঙ্গ আত্মা স্বেচ্ছায়ই বরণ করিয়া লইয়াছে।’

(ওই, পৃ ৮৩)

প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ একটি অনন্যসাধারণ ছোটগল্প। বাংলা ছোটগল্পের জগতে ভাষাশৈলী, বর্ণনাবিন্যাস ও চরিত্রসৃজনে এই গল্পটি শ্রেষ্ঠ দশটির মধ্যে একটি বলে আমি মনে করি। ভাষার কারুকাজের যে টানটান উত্তেজনা, লোকালয় পেরিয়ে নিসর্গের রহস্যরাজ্যে পাড়ি জমানোর যে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযাত্রা, প্রাচীন ভগ্নস্থাপত্যকীর্তি ও প্রকৃতির বৈভবের যে বৈচিত্র্য, যামিনীর রূপের যে শ্যামলিমা ও কারুণ্য এবং করুণ চাহনির যে শান্ত-সৌম্য উত্তীর্ণতা, নিরঞ্জনের জন্য প্রতীক্ষমানতার যে অমত্মঃগূঢ়তা, যামিনীর মায়ের কোটরাগত চোখের মধ্যে স্বপ্ন-দূঃস্বপ্নের যে ছায়াপাত, নিরঞ্জনকে পাওয়ার পর মেয়ে যামিনীর তার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে শুনে যামিনীমাতার যে প্রশান্তির প্রদীপ্তি, নিরঞ্জনের বদলে নায়ক হিসেবে যে নিজেকে সেই জায়গায় উপস্থাপন করছে, তেলেনাপোতায় আবার বড়শি দিয়ে মৎস্য শিকারে যাওয়া, নিসর্গ দর্শন এবং যামিনীর করুণ-সৌম্য দৃষ্টির সঙ্গে সন্নিপাতের যে আকাঙক্ষা প্রেমেন্দ্র মিত্র পাঠকের অন্তরে স্থাপন করেছেন – তা তাঁকে বাংলা ছোটগল্পের এক অসাধারণ 888sport live chatী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। তেলেনাপোতা আসলে পাঠকের বা মানুষের স্বপ্নপ্রতিম একটি জায়গা, আকাঙক্ষার একটি আকর, প্রেমের একটি পাদপীঠ, প্রত্যাশার একটি আলো, স্বপ্নের একটি স্বপ্নবীজ; নন্দনতত্ত্বের একটি অনিবার্য পরিণতি এবং মানুষের ইতিবাচক ও আশাবাদী জীবনদর্শনের একটি প্রার্থিত গন্তব্য। যামিনীর রূপের প্রচ্ছায়ার বর্ণনা একটি প্রদীপ্ত নান্দনিকতা প্রেমেন্দ্র মিত্রের। সে যুগপৎ আনন্দ-বিষণ্ণ বর্ণন স্মর্তব্য : ‘মেয়েটি কোন্ বয়সের আপনি বুঝতে পারবেন না। তার মুখের শান্ত করুণ গাম্ভীর্য দেখে মনে হবে জীবনের সুদীর্ঘ নির্মম পথ সে পার হয়ে এসেছে, তার ক্ষীণ দীর্ঘ অপুষ্ট শরীর দেখলে মনে হবে কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে উত্তীর্ণ হওয়া তার যেন  স্থগিত হয়ে আছে।’ (পৃ ৮৭) স্মর্তব্য, এখানে নিরঞ্জনকে গল্পের নায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হলেও গল্পটিকে প্রতীকী ও আধ্যাত্মিক অর্থে নিলে নিরঞ্জন অর্থ হতে পারে প্রভুপ্রেমিকের প্রভু বা নিরঞ্জনের জন্যে প্রতীক্ষা। তেলেনাপোতা তাই অধ্যাত্মকর্মীর আধ্যাত্মিকতার আলোকপ্রতিভূ স্বয়ং স্রষ্টা। পক্ষান্তরে ‘বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদে’ গল্পে জীবনের বিকার ও বিকৃতির ইতিবৃত্ত বিবৃত হয়েছে। দু-মাস ঘর ভাড়া দিতে না পারা এবং বাড়িওয়ালিকে খোরপোশ দিতে না পারা এক পতিতা বেগুনের শিকার ধরার প্রচেষ্টা গল্পে বর্ণিত হয়েছে। বিকৃত চেহারার একজনকে পছন্দ না হওয়ায় তাকে তার কাজের শিকার হিসেবে গ্রহণ না করে বেগুন চলে গেছে। জুয়াড়িকেও বেগুন জড়িয়ে ধরেছিল ভিড়ের মধ্যে। এক শিখ এসে বেগুনকে ভিড় ঠেলে বাইরে সরিয়ে দেয়। রূপো নাম্নী অন্য এক রূপোপজীবীর বৃদ্ধ শিকারকে বেগুন শেষ পর্যন্ত ধরল। কিন্তু দারোয়ান বৃদ্ধকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় সেই খদ্দেরকেও বেগুন পেল না। অর্থাভাবে জীবন চলে না বেগুনের। ফেরার পথে আবার বেঞ্চে শুয়ে থাকা সেই বিকৃত-চেহারার লোকটির সঙ্গেই বেগুন আলাপ জমিয়ে খদ্দের হিসেবে তাকে গ্রহণের চেষ্টা চালায়। কিন্তু তার কাছে এক কপর্দক পয়সাও ছিল না। তাই তো বেগুনের চিৎকার : ‘বিনি-পয়সায়
ইয়ার্কি দিতে এসেছ হারামজাদা চোর।’ (পৃ ১০১)। বাড়িভাড়া দিতে না পারাসহ নিজের ক্ষুণ্ণিবৃত্তি নিবারণের জন্যে বিগত-যৌবনা এই বেগুন তার কামসঙ্গী জোগানোর কত প্রচেষ্টা চালাল; কিন্তু পেল না – এই বৃত্তান্ত গল্পটাতে বিধৃত আছে। তাই বাধ্য হয়ে জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে বিগতযৌবনা হয়ে যাওয়ার কারণে খদ্দের না পাওয়াতে অর্থাভাবে জীবন আর যাপন করা যাচ্ছে না বেগুনের। ক্ষুধার ফাঁদে এভাবে বেগুন জড়িয়ে পড়েছে। বেগুনের কাজ যেহেতু বিকৃত; এজন্য গল্পকার গল্পের নাম দিয়েছেন ‘বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদে’। বেগুনদেরও আর্থিক সংস্থান থাকলে তারা হয়তো ঘৃণ্য এ বেশ্যাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকত না। কামপ্রবৃত্তির জন্যে মানুষের যে গোপন আকাঙক্ষা থাকে, ঘাটের মড়া এক বৃদ্ধের কামতৃষ্ণার-ব্যাপারে লেখক-ভাষ্য স্মর্তব্য : ‘ঐ ধ্বংসাবশেষের মাঝে মৃত্যুর ভ্রূকুটির তলেও কদর্য কামনার বীভৎস উৎসবের লীলা আজও থামেনি। বেগুনের নিঃসাড় মনেও ঘৃণা ও বেদনা জাগছিল।’ (পৃ ৯৯) বেগুনও বৃদ্ধের এই কামলিপ্সাকে ঘৃণা করেছে। এতে স্পষ্ট হয়, ঘৃণ্য এই পাপকর্মে বেগুন আসলে জড়াতে চায়নি। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে সে তাতে জড়িয়েছে। নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য কণ্ঠস্বর ও শরীরী ভঙ্গির অভিনয় খুব প্রয়োজন পড়ে রূপোপজীবীদের। শৈল্পিকভাবে তা উপস্থাপন করেছেন লেখক : বিষয়টি বেগুনের কণ্ঠস্বর ও রূপ-যৌবন সম্পর্কে : ‘লোকটা চমকে উঠল। সত্যি সে কণ্ঠস্বর চমকাবার মতো। এই কণ্ঠস্বরটিতেও এখনো কৈশোরের অপরূপ কোমলতা ও যৌবনের অসীম মাধুর্য ও স্নিগ্ধ মাদকতা অটুট হয়ে ছিল। আর সে স্বরে ছিল – নিখিলের সুষমাময় 888sport promo codeত্বের প্রচ্ছন্ন বিস্ময়ের আভাস!’

(ওই, পৃ ৯৫)

প্রেমেন্দ্র মিত্র ত্রিশের দশকের লেখক। ব্রিটিশদের ভারতবর্ষ শাসনের সময়ে আর্থনীতিকভাবে ভারতকে পর্যুদস্ত করা হচ্ছিল। ভারতীয় টাকায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চলতো। ‘পোনাঘাট পেরিয়ে’ গল্পে বলাই আক্রোশবশে একজনের গোলা পুড়িয়ে দেয়, নিজে নেশাসক্ত হয়ে অথর্ব জীবন যাপন করে। স্ত্রী চপলা সেজন্যে খুবই অসুখী। সাধারণ গরিব ভারতবাসী আর্থিক অনটনে জীবনকে কোনোরকমে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ ভারতবর্ষের টাকা দিয়ে ব্রিটেনের প্রাসাদ গড়া হচ্ছে; তাদের রাজ্য চালানো হচ্ছে।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের গল্পের জীবনবোধে যেমন বৈচিত্র্য ও গভীরতা আছে; তেমনি 888sport live chat-অভিযাত্রায়ও তাঁর চৈতন্য খুবই প্রাগ্রসর ও নান্দনিক।