সুরঞ্জন মিদ্দে
খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী : মিশনারি জীবন
ফাদার দ্যতিয়েনের জন্ম ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর। পুরো নাম ফাদার পল দ্যতিয়েন (এস. জে.)। তাঁরা ছিলেন পাঁচ ভাই। ছিল না বোন। চার ভাই সন্ন্যাসী বলে ‘কুমত্মীর দ্রৌপদীকে বাড়ি আনবার সুযোগ হয়নি’ (‘বিশ্রী নিয়ম’, ডায়েরির ছেঁড়া পাতা)। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে পল ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি গম্ভীর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে লিখেছেন : ‘সব আছে, বোন নেই।’
বাবা ছিলেন ফরেস্ট ইন্সপেক্টর। ঋজু প্রকৃতির মানুষ তিনি। আমাদের বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো। বাবার প্রবল ব্যক্তিত্ব প্রভাবিত করেছিল ফাদারের শৈশবকে। আর মা ছিলেন এক ধর্মপ্রাণ 888sport promo code। নরম ছিল তাঁর মন। মা একা থাকলেই খ্রিষ্টের কাছে প্রার্থনা করতেন। খ্রিষ্টের ভালোবাসা মায়ের জীবনে সত্যি প্রতিফলিত হয়েছে। বেলজিয়াম আর জার্মানির যুদ্ধের সময়ে – শত্রম্ন জার্মানদের সৈনিকদের শীতে কাঁপতে দেখলে, মা তাদের জন্য কফি না দিয়ে পারতেন না। তাঁর সেই দয়াময়ী মা ফাদারকে বলেছিলেন – ‘আমি মানুষকে ভালোবাসি, তুইও বাসিস।’ প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা পরিবারের সবার প্রার্থনার রেওয়াজ ছিল। এমনকি খাওয়ার পরে ও আগে ছোট প্রার্থনা করা শিখেছিলেন মায়ের কাছে। প্রতি রোববার বন্ধুদের সঙ্গে চার্চে যেতেন ফাদার। সেখানেই গড়ে ওঠে সামাজিক জীবন। তাঁর মা জানতেন তিনি যাজক হবেন। খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী হয়ে চলে যাবেন অনেক দূরে। শুনে তাঁর মা দুঃখ পেয়েছিলেন। তবু মনে-মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তাঁর পাঁচ পুত্রই খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী; রোমান ক্যাথলিক মিশনারি হয়ে আত্মত্যাগ করবেন। মায়ের দৈনন্দিনের প্রার্থনা সার্থক হয়েছিল।
ফাদার দ্যতিয়েন এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন – ‘আমার অস্তিত্বে একটা মুহূর্তও নেই যখন নিজেকে ঈশ্বরের কাছে কিংবা অন্যের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ নিবেদন করতে চাইনি।’
বেলজিয়াম তাঁর জন্মভূমি। ফরাসি তাঁর মাতৃভাষা। জন্মেছিলেন বেলজিয়ামের ছোট্ট শহর রশফরে। সবুজ অরণ্যের মাঝে ছোট-ছোট পাহাড়ের মধ্যে মিশে আছে তাঁর জন্মশহর রশফর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফাদারের মাতৃভূমি বেলজিয়াম থেকে কাচ, স্টিল ও বিলিতি মাটি ভারতবর্ষে খুব আমদানি হতো। ভারতের সঙ্গে বেলজিয়ামের সংযোগ ছিল সংরাগের মতো। শৈশবেই শুনেছিলেন ভারতবর্ষের কথা। বারবার শুনেছিলেন। তাই তিনি মনে-মনে ভালোবেসেছিলেন ভারতবর্ষকে। আফ্রিকা, না ভারতবর্ষ – এই দুই অঞ্চলের কোথায় যেতে চান তিনি! এক কথায় তিনি, সেই ২৫ বছরের যুবক পল দ্যতিয়েন, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন – ভারতবর্ষেই তিনি আসতে চান।
চিরসবুজে মোড়া, ছোট পাহাড়ে ঘেরা রশফর শহরে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলেন অতীব নিষ্ঠার সঙ্গে। তারপর উচ্চশিক্ষা। রশফর শহর থেকে সামান্য দূরে দিনাঁ শহরে বেলভু স্কুলে শেখেন লাতিন ও গ্রিক ভাষা। ভাবা যায় – বাইবেলকে ভালো করে জানতে চাই লাতিন ও গ্রিক ভাষার মতো ক্ল্যাসিক ভাষার জ্ঞান। দিনাঁ শহরের বেলভু স্কুলটি ছিল এক মনোরম নদীর ধারে। নদীর নাম ম্যঁজ নদী। সবুজ প্রকৃতি তির মাঝে, ঢেউ-খেলানো পাহাড়ের পাদদেশে এক শান্ত, মিষ্টি ম্যঁজ নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখতে-দেখতে উচ্চশিক্ষা শেষ করলেন পল। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তথাকথিত উচ্চশিক্ষা শেষ করে শুরু করলেন ধর্মজীবন। ১৮ বছরের যুবক সিদ্ধান্ত নিলেন – যিশু সংঘে (সোসাইটি অব জিসাস) যোগ দিলেন। ১৯৪২-৪৪ পর্যন্ত খ্রিষ্টীয় ধর্মজীবন অতিবাহিত করার পর সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন।
এবার অন্য অনুশীলন। ভারতযাত্রার প্রস্ত্ততি। ১৯৪৪-৪৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শিখলেন সংস্কৃত ভাষা। পাঠ করলেন সংস্কৃত 888sport live footballভাণ্ডার। শুধু সংস্কৃত ভাষা-888sport live football নয়, বাংলা ভাষার সঙ্গে পরিচিত হতে চাইলেন। পেলেন জে. ডি. অ্যান্ডারসনের বাংলা ভাষার ম্যানুয়েল। রোমান হরফে লেখা বাংলা ভাষার প্রাইমারে পড়লেন বাংলা 888sport live footballের উদ্ধৃতি – মেঘনাদবধ কাব্য থেকে শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রসংগীত। বিদ্যাসাগরের তৎসম বাংলা গদ্যের পাশাপাশি তাঁকে বিস্মিত করল রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের ব্যবহৃত ইংরেজি শব্দ। ভারতবর্ষে আসার আগেই বাংলা ভাষা ও 888sport live football সম্পর্কে এই অপার আগ্রহ সত্যিই বিস্ময় জাগায়। তাঁর শিক্ষক, ভারতবিদ ফাদার পিয়ের জোহানসের কথা এ-প্রসঙ্গে চির888sport app download for androidীয়। ফাদার জোহানস তাঁর একনিষ্ঠ ছাত্র পল দ্যতিয়েনকে ভারতবর্ষে আসার জন্য উপযুক্ত দীক্ষায় স্নাত করে দিলেন। সংস্কৃত 888sport live footballের শকুন্তলা, মেঘদূত, রত্নাবলী, উত্তররামচরিতের সঙ্গে-সঙ্গে শরৎচন্দ্রের মেজদিদি, রবীন্দ্রনাথের নৌকাডুবি পড়লেন।
888sport app download for androidীয় ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। লন্ডনের টিলবেরি পোর্ট থেকে মুম্বাই পর্যন্ত জাহাজে ১৬ দিন। তারপর আরো দুদিন ট্রেনে। কলকাতায় এলেন দ্যতিয়েন। এবার ফাদার দ্যতিয়েন বাংলা ভাষা শিখলেন ফাদার আন্দ্রে দ্যোঁতেনের (১৮৮৮-১৯৭০) কাছে। ফাদার আন্দ্রে দ্যোঁতেন (১৮৮৮-১৯৭০) তখন শ্রীরামপুরের ভারপ্রাপ্ত যাজক। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ফাদার দ্যতিয়েন বাংলা ভাষা শিখতে মিশনারি উইলিয়াম কেরির শ্রীরামপুর তীর্থে এলেন। বাংলা ভাষাকে মনের মতো করে শিখতে শিক্ষক ইন্দুভূষণ মুখোপাধ্যায়কে পেলেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এলেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। এবার পেলেন বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু ফাদার দ্যতিয়েনের পেট ভরছে, মন ভরছে না! ফাদার দ্যতিয়েন গ্রামে যেতে চান; একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে। ক্যানিং থেকে দুটো নদী পার হয়ে ফাদার দ্যতিয়েন এলেন বাসমত্মী ব-দ্বীপে।
এক বছর শ্রীরামপুরে বাংলা শেখার পর চলে গেলেন বাসমত্মী ব-দ্বীপে। এবার তিনি ছাত্র নন, বাসমত্মী সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের শিক্ষক। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষক ফাদার দ্যতিয়েন। বাসমত্মীর বাংলা মাধ্যমের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে ২১ জন ছাত্র। সাতজন হিন্দু, সাতজন মুসলিম ও সাতজন খ্রিষ্টান ছাত্রকে পড়ালেন ফাদার দ্যতিয়েন। বাসমত্মীতে এক বছর থাকার পর ফিরলেন কলকাতায়। এবার কলকাতা থেকে কার্শিয়াঙ মিশনে। ১৯৫৩-৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কার্শিয়াঙ মিশনে যাজকীয় শিক্ষায় মনোনিবেশ করে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ নভেম্বর যাজকপদে অভিষিক্ত হন। ১৯৫৭-৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিলেন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সময় তিনি বাংলা ভাষা ও 888sport live footballে এমএ পাশ করেন বিশ্বভারতী থেকে। শেষ হয় শিক্ষা, শুরু হয় কর্মজীবন। ১৯৬০-৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সম্পাদনা করেন খ্রিষ্টীয় পত্রিকা আমাদের জীবন। পত্রিকা-সম্পাদনার পাশাপাশি সৃষ্টি করেন সৃজনশীল বাংলা 888sport live football।
888sport app download for androidীয় ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৬৩, আর পরে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ১০০ কিস্তিতে প্রকাশিত হলো – ডায়েরির ছেঁড়া পাতা। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো ডায়েরির ছেঁড়া পাতা। এরপর 888sport app download for androidীয় ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ। প্রকাশিত হলো রোজনামচা আর 888sport live football 888sport app download bd। ১৯৭১-৭২ খ্রিষ্টাব্দের সেরা গ্রন্থ নির্বাচিত হলো ডায়েরির ছেঁড়া পাতা। 888sport app download bd দিলো দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। বিদেশি লেখক ফাদার দ্যতিয়েন, বাংলা 888sport live football 888sport app download bd পেলেন। 888sport app download bdের নাম ‘নরসিংহ দাস 888sport app download bd’ (১৯৭৩)। আর স্বদেশে পেলেন ‘ক্রিস্তফ পস্ন্যাত্যাঁ 888sport app download bd’ (১৯৭৬)।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের দুঃসংবাদ। হঠাৎ নিঃশব্দে ফাদার চলে গেলেন – ফিরে গেলেন বেলজিয়ামে। এ-এক আশ্চর্য খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসীর আত্মত্যাগের মহাজীবন। ১৯৭৮ থেকে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৮ বছর বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেলেন না। বাংলা লিখলেন না। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে দেশ পত্রিকার সম্পাদক হর্ষ দত্তের আমন্ত্রণে আবার লিখলেন – ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। ধারাবাহিক প্রকাশিত হলো – আটপৌরে দিনপঞ্জি।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে পেলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র 888sport app download bd। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর তাঁর ৯০তম জন্মদিন পালন করল – ‘সম্প্রীতি আকাদেমি’, কেওড়াপুকুর, মিলনবীথিতে (বি-৯৬, সুকান্তপলস্নী, কেওড়াপুকুর, হরিদেবপুর, কল-৮২)। তিনি হঠাৎ সশরীরে হাজির হলেন – দেবদূতের মতো। ৯০ বছরের যুবক পবিত্র হাসিতে ভরিয়ে দিলেন মিলনবীথির মহামিলন সভা। ৯৩ বছর বয়সে তিনি তাঁর নিজের দেশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। শরীর তাঁর ভালো নয়, ই-মেইলের উত্তর দিতে পারেন না। তবু তিনি বাঙালির প্রিয় মানুষ। যিনি যৌবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিনগুলো সঁপে দিলেন বাংলা ভাষা ও বাংলা 888sport live football সৃষ্টির জন্য। তিনি আজ তাঁর স্বদেশে সেই চর্চায় মগ্ন না হয়ে, মানবসেবায় রত। খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসীর মহান আত্মত্যাগ – কালজয়ী হয়ে ইতিহাসে সোনার অক্ষরে, বাংলা অক্ষরে লিখে রাখতে পারব তো!
খ্রিষ্ট-মিশনারি : 888sport app download for androidীয় সময়-সন
* ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর জন্ম, বেলজিয়ামের ‘রশফরে’।
* ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় এলেন।
* ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শ্রীরামপুর তীর্থে বাংলা ভাষা শিক্ষার জন্য গেলেন।
* ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে বাসমত্মী ব-দ্বীপের সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষক হলেন।
* ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী থেকে বাংলায় এমএ পাশ করেন।
* ১৯৫৯ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ডায়েরির ছেঁড়া পাতা প্রকাশিত হয়।
* ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় রোজনামচা ও নরসিংহ দাস 888sport app download bd পান।
* ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হঠাৎ নিঃশব্দে বেলজিয়ামে ফিরে যান।
* ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে আবার ২৮ বছর পর বাংলা লিখলেন।
* ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র 888sport app download bd পেলেন।
* ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ৯০তম জন্মদিন পালন করলেন
‘মিলনবীথি’তে।
* ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে আবার ফিরে গেলেন স্বদেশ বেলজিয়ামে।
সম্পাদক-সম্পাদনা
888sport app download for androidীয় ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ। মাত্র ১১ বছরের কম সময়ের মধ্যে দায়িত্ব পেলেন পত্রিকা সম্পাদকের। তার আগেই, এক বছর আগে দেশ পত্রিকায় ডায়েরির ছেঁড়া পাতা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে – ধারাবাহিকভাবে।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে মানে তিনি সদ্য যাজক পদে অভিষিক্ত। হাজারীবাগের সন্ন্যাসজীবনের শেষ প্রস্ত্ততির শিক্ষা শেষ করেছেন। শুরু করেছেন নতুন যাজকীয় জীবন শুধু নয়, পত্রিকারও সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। পত্রিকার নাম আমাদের জীবন। কলকাতা যিশু সংঘের মুখপত্র আমাদের জীবন (১৯৩৬) পত্রিকা শুরু করেছিলেন ফাদার আন্দ্রে দ্যোঁতেন (১৮৮৮-১৯৭০)। ফাদার দ্যোঁতেনের প্রতিষ্ঠিত আমাদের জীবন (১৯৩৬) পত্রিকা, ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ফাদার দ্যতিয়েন সম্পাদকের দায়িত্ব নিলেন।
একটানা প্রায় ১৬ বছর। ১৯৬০ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময় ধরে আমাদের জীবন সম্পাদনা করে জনপ্রিয় করে তুললেন, বাঙালি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান-সমাজে। ফাদার দ্যতিয়েনের মুন্শি অমলকান্তি ভট্টাচার্য (১৯৪৩-১৯৮৮) আমাদের জীবন পত্রিকার সহযোগী সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন। 888sport live footballপ্রেমী অমলকান্তিকে ফাদারের কাছে পাঠিয়েছিলেন কবি বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪)। যতদিন ফাদার দ্যতিয়েন আমাদের জীবন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ১৯৬০ থেকে ১৯৭৭; ততদিন অমলকান্তিও সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। অমলকান্তির অকালপ্রয়াণে ফাদার তাঁর মুন্শিহারা হয়ে শোক পেয়েছিলেন। মাত্র ৪৫ বছরের তরতাজা তরুণ 888sport live footballপ্রেমী অমলকান্তি ভট্টাচার্য (১৯৪৩-৮৮) উত্তর-প্রজন্মের এক সম্ভাবনাময় 888sport live footballস্রষ্টাকে হারাতে হয়েছে। এখনো ফাদার দ্যতিয়েন অমলকান্তির জন্য আক্ষেপ করেন। এখনো অমলকান্তির বোন আর ভাগ্নির জন্য স্নেহরস উজাড় করে দেন। তাঁকে আটপৌরে দিনপঞ্জি উৎসর্গ করেন।
আমাদের জীবনে প্রকাশিত ফাদারের লেখা পড়ে বুদ্ধদেব বসু বেজায় খুশি হয়েছিলেন। আমাদের জীবন পত্রিকার প্রথম 888sport free bet পড়েই বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন – এই স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখা যাবে না। সম্পাদক ফাদার এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন – আমাদের জীবন পত্রিকায় প্রথম 888sport free betর স্ট্যান্ডার্ড সত্যিই ধরে রাখা যায়নি। পত্রিকাটিকেও বাঁচিয়ে রাখা যায়নি।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাদারের লালপেড়ে গল্পাবলি নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশক সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের গোথাল্স লাইব্রেরি। লালপেড়ে গল্পাবলিতে প্রকাশিত হয়েছে ৬৮টি রচনা। যা আমাদের জীবন পত্রিকা থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে। আমাদের জীবন পত্রিকায় ফাদার দ্যতিয়েন একাধিক ছদ্মনামে গদ্যরচনাগুলো লিখেছেন। সেই ছদ্মনামগুলো হলো – যতীন পাল, উৎপল দত্তরায়, প্রভাতী দে, ফাদার দে ও পল দ্যতিয়েন।
নানা স্বাদের, বহুমুখী রচনাগুলো টক-ঝাল-মিষ্টির সংমিশ্রণ। বিভিন্ন বয়সের জন্য রয়েছে ভিন্ন স্বাদের রচনা। শ্রেণিবিশেষে পাঠকদের বয়সের সঙ্গে সংগতি রেখে, বাস্তবতার আলোকে ভাষা এবং ভঙ্গির পরিবর্তনে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন তিনি। যেমন কিশোর-কিশোরীদের জন্য সহজপাঠ্য মহাজীবনের জীবনীমালা। যুবক-যুবতীদের জন্য যৌবনের বাধামুক্ত হওয়ার পরামর্শমালা বা উজ্জীবনমালা। আবার বয়স্ক খ্রিষ্টান পাঠকদের জন্য লিখিত হয়েছিল ধ্যানমূলক উপদেশমালা। এখানে নির্বাচিত ৬৮টি রচনায় সময়োপযোগী ও হৃদয়গ্রাহী আবেদন আছে। পা–ত্যবর্জিত, নিরলংকৃত রচনায় সাধারণ চরিত্রগুলোতে ফুটে উঠেছে গভীর জীবনবোধ।
আমাদের জীবন পত্রিকাকে তিনি শুধু ‘জীবন’ নামে সম্পাদনা করেছেন। বাংলা ভাষায়, বাংলা গদ্য 888sport live footballে ভক্তিরসের আস্বাদনে এই রচনাগুলো এক ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। সর্বোপরি বিষয় খ্রিষ্ট হলেও 888sport live footballরসের মাধ্যমে ভক্তির সৌরভ ছড়িয়ে দিয়ে আধ্যাত্মিকতার আস্বাদ দিতে পেরেছে। সবচেয়ে বড় কথা, ফাদার দ্যতিয়েন একই সঙ্গে আমাদের জীবনে লিখেছেন – খ্রিষ্টীয় তত্ত্বের রসভাষ্য। সঙ্গে-সঙ্গে দেশ পত্রিকায় লিখছেন উচ্চমানের রম্য888sport live football।
কেরী সাহেবের ইতিহাসমালা
গবেষক ফাদার দ্যতিয়েনই প্রথম দেখালেন – ইতিহাসমালা (১৮১২) কেরীর লেখা নয়, কেরী-সংকলিত। প্রথম প্রকাশের ১৬০ বছর পর গবেষক দ্যতিয়েন ইতিহাসমালা পুনঃপ্রকাশ করলেন ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে। প্রখ্যাত গবেষক সুকুমার সেন ইতিহাসমালার ইংরেজি 888sport app download apk latest version করলেন ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে। সুকুমার সেনের ইংরেজি গ্রন্থটি উৎসর্গ করলেন ফাদার দ্যতিয়েনকে। সেই উৎসর্গ পৃষ্ঠায় সেনমশাই লিখলেন –
To Father Detienne, who resurrected Carey’s work from the oblivion of more than a hundred and sixty years.
ইংরেজি ইতিহাসমালার ভূমিকায় শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন মনে করিয়ে দেন – গ্রন্থটির যথার্থ মূল্যায়ন কেউ করেননি। ফাদার দ্যতিয়েনই প্রথম গবেষক, যিনি হারিয়ে-যাওয়া গ্রন্থটিকে আবিষ্কার করে সঠিক পর্যালোচনা করেছেন।
ইতিহাসমালা – আসলে আধুনিক ভারতবর্ষের লোক888sport live footballের প্রথম গল্প-সংকলনকে ফাদার দরদ দিয়ে সামনে এনেছেন। ইতিহাসমালার মাত্র চারটি কপি খুঁজে পেয়েছেন। বঙ্গীয় 888sport live football পরিষদের লাইব্রেরিতে তিনটি আর জাতীয় গ্রন্থাগারে মাত্র একটি কপি আছে। এমনকি শ্রীরামপুরের মিশন লাইব্রেরিতে কোনো কপি নেই।
গবেষক ফাদার ইতিহাসমালার পরিপূর্ণ পর্যালোচনা করে আমাদের চমকে দিয়েছেন। গ্রন্থের বিবরণ, মুদ্রণের মুশকিল আসান, ভাষাতাত্ত্বিক মূল্যায়ন, গল্পগুলোর উৎস, গল্পগুলোর চরিত্র, নীতি ও তাৎপর্য, বাক্যবিন্যাসসহ লিখনশৈলীর গভীর আলোচনা করেছেন। খুব স্পষ্ট করে মতামত দিয়েছেন – ‘ইতিহাসমালার উদ্দেশ্য ভাষাশিক্ষণ, 888sport live footballসৃষ্টি নয়।’ তবু তিনি গভীর নিষ্ঠায় 888sport live footballপ্রয়াসের লক্ষণ অনুসন্ধান করেছেন। সর্বোপরি ফাদার ইতিহাসমালার আসল ‘লেখকটি কে’ – এই দুঃসাহসী প্রশ্ন তুলেছেন। এই সাহসী প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন। এমন সমস্ত যুক্তির সাহায্যে এই উত্তর দিয়েছেন – গবেষক-পাঠকেরা তৃপ্তও হয়েছেন। অন্তত আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব তৃপ্ত হয়েছি। সেই বৈজ্ঞানিক যুক্তির মধ্যে নতুন প্রশ্নও উঁকি মারছে। শুধু নতুন প্রশ্ন নয়, নতুন গবেষণার দরজা খুলে যাচ্ছে –
রচনাকালে কেরী এমন একজনের সাহায্য পেয়েছেন যিনি – কেরীর এবং সম্ভবত নিজের অজান্তে – সত্যিকার 888sport live footballিক ছিলেন। আমার অনুমিতি এই যে ইতিহাসমালার উৎকর্ষের জন্য দায়ী সেই অচেনা বাঙালি সন্তান;
কে এই অচেনা বাঙালি লেখক? গবেষণামূলক সম্পাদনার ভূমিকায় নীরস শব্দ-আলোচনা নয়, সরস কৌতূহল জাগিয়ে ‘কেরী সাহেবের মুন্শি’ কথা উসকে দিয়েছেন। কেন আর রামরাম বসু (১৭৫৭-১৮১৩) লিখলেন না! ঔপন্যাসিক প্রমথনাথ বিশীর (১৯০১-১৯৮৫) নাম না করেও ইঙ্গিত দিয়ে রসসিক্ত করেছেন। বিনম্র ফাদার ‘ওই বঙ্গজ লেখকটিকে’ ‘বিদেশির শত শত নমস্কার’ জানিয়েছেন।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, ফাদার দ্যতিয়েন ইতিহাসমালাকে বড় বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলেন। ডায়েরির ছেঁড়া পাতা রচনায় কেরীর ইতিহাসমালা নিয়ে কমপক্ষে ২০টি রচনা লিখেছেন, যা ইতিহাসমালার ইতিহাস ও 888sport live footballকে গভীরভাবে ভাবায়! ‘আশ্চর্য কেরী সাহেব’ রচনায় ফাদার উল্লেখ করেছেন – (‘কেরীর সেই সংকলনে ভাঁড়ে ও বেশ্যার কাহিনির অন্তর্ভুক্তি। শেষোক্ত গল্পদ্বয় (বন্ধুর সেই চূড়ান্ত প্রবঞ্চনা এবং খুব বিশেষভাবে পরমেশ্বরকে নিয়ে সেই ফাজলামি) একজন গোঁড়া মিশনারি যে, নায়কদের আচরণ কোনো মতেই নিন্দা না করে প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি, তা বোধহয় আশ্চর্যতম।
কেন ইতিহাসমালা প্রচারিত হয়নি? কেন শ্রীরামপুর মেমোয়ার্সে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তকের তালিকায় ও লং সাহেবের ক্যাটালগে বইটির উল্লেখ নেই? ১৬০ বছর পরে একজন বিদেশি গবেষকের এই পরিশ্রমসাধ্য সম্পাদনা দেখে আমাদের তাঁর প্রতি মাথা নত হয়ে আসে।
888sport app download apk latest versionক দ্যতিয়েন : ছোট রাজকুমার ও খ্রিষ্টানুকরণ
বিশ্বখ্যাত দুটি গ্রন্থের 888sport app download apk latest versionের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একটি ফরাসি গ্রন্থ, অন্যটি ল্যাটিন ভাষার গ্রন্থ হলেও তিনি ইংরেজি থেকে বাংলায় 888sport app download apk latest version করেছেন। প্রথমে ফরাসি গ্রন্থটির কথা বলা যেতে পারে – প্রকাশ সালের সময়ের প্রেক্ষিতে। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হলেও ২০১০-এ লালমাটি সংস্করণটি বর্তমানে পাওয়া যায়।
বইটির ফরাসি নাম – ল্য পাতি প্র্যাস। লেখক আঁতোয়ান দ্য স্যাঁতেকসুপেরি। বইটি বিশ্ববিখ্যাত রূপকথার বই, যা শিশুদের জন্য রচিত হলেও বয়স্করা পড়ে আনন্দ পান। ফাদার বাংলায় 888sport app download apk latest versionে বইটির নামকরণ করেছেন – ছোট রাজকুমার। ফরাসি লেখক আঁতোয়ান তাঁর ছোট রাজকুমার গ্রন্থের উৎসপত্রটিতে এক অসামান্য চমক দিয়েছেন – উৎসর্গপত্রটি ছিল নিম্নরূপ, বন্ধুকে তিনি উৎসর্গ করেছেন –
উনি সব বোঝেন,
ছোটদের জন্য লেখা
বই পর্যন্ত।
আসলে বইটি বন্ধুকে সামনে রেখে, সবাইকে জানিয়ে দিলেন, ছোটদের জন্য লেখা বই সবাই বোঝেন না। বইটির কাহিনি একটাই, ছোট রাজকুমার বড়দের এই না-বোঝা বুঝতে পেরে একেবারে চরম হতাশ হয়েছে। তাই সে উড়োজাহাজ চড়া শিখে নতুন এক পৃথিবীকে পেয়ে গেল। সেই পৃথিবীতে ফুল, তারা, মরুভূমি, সাপ, ভেড়া প্রভৃতি – সবাই সেখানে অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ। ছোট রাজকুমার ভালো করে উপলব্ধি করল – পৃথিবীর সব বড় একই রকম। তারা ছোটদের বোঝেন না, বুঝতে চান না, এমনকি ছোটদের লেখাও বোঝেন না। সে এক নতুন পৃথিবীর গল্প।
আমাদের চেনা রূপকথার কাহিনি থেকে একেবারে আলাদা। লেখক নতুনভাবে ভেবেছেন – শিশু888sport live football হয়েও বড়দের উপভোগ্য পাঠ্য। 888sport app download apk latest versionক ফাদার দ্যতিয়েনের বাংলা 888sport app download apk latest version পড়ে অভিভূত হয়ে যাবেন। অনবদ্য 888sport app download apk latest versionের সফল কারিগর 888sport app download apk latest versionক দ্যতিয়েন। তিনি ফরাসি ভাষা এবং বাংলা শিখেছেন মাতৃভাষার মতো করে। তাঁর 888sport live footballবোধ গভীর শুধু নয়, রসবোধেও রম্যতার মুকুট অর্জন করেছেন। তিনি বিশ্ব শিশু888sport live football মন্থন করে ফরাসি ও বাঙালির ভাষাবোধকে রপ্ত করেছেন। এখানে পা–ত্যের প্রকাশ নেই, আছে শুধু শিশুর মতো সরল হৃদয়, যা একমাত্র ফাদার দ্যতিয়েনই করতে পারেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি ছোট রাজকুমার। আর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে টমাস-কেম্পিসের ইমিটেশন্ অফ ক্রাইস্ট থেকে খ্রিষ্টানুকরণ বাংলায় 888sport app download apk latest version করলেন। বিশ্বধর্ম 888sport live footballের একনিষ্ঠ পাঠক ফাদার দ্যতিয়েন বাঙালির আধ্যাত্মিক উজ্জীবনের জন্য বাংলা 888sport app download apk latest versionে ব্রতী হয়েছিলেন। বিশেষ করে সন্ন্যাসী-সাধক টমাস কেম্পিসের (১৩৯৮-১৪৭১) ৫০০তম মৃত্যুবর্ষে ফাদারের 888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য।
খ্রিষ্টসাধক টমাস কেম্পিস (১৩৯৮-১৪৭১) মাত্র তেরো বছর বয়সে সংসারের সমস্ত সংযোগ ছিন্ন করে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। ইমিটেশন্ অফ ক্রাইস্টের প্রধান প্রতিপাদ্য হচ্ছে – শরীর ও মনের উৎকর্ষসাধন। শুধু কঠোর আত্মত্যাগ নয়; নিজের জীবিকার অর্থ নিজেকেই উপার্জন করতে হবে। মানবপ্রেমিক যিশুখ্রিষ্টের জীবন ও বাণী অনুসরণই ছিল টমাসের একমাত্র লক্ষ্য। টমাস তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছিলেন। সারা পৃথিবীতে ইমিটেশন্ অফ ক্রাইস্ট গ্রন্থটির খ্যাতির প্রধান কারণ হচ্ছে – তাঁর ঈশ্বর-আরাধনা ও সেই সঙ্গে 888sport live footballসাধনা। পৃথিবীর ধর্ম888sport live footballে বাইবেলের পরেই ইমিটেশন্ অফ ক্রাইস্টের স্থান।
স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) এই পুস্তকের প্রথম বাংলা 888sport app download apk latest versionক। শুধু তিনি বাংলা ভাষায় 888sport app download apk latest version শুরু করেননি; ভারতে এবং ভারতের বাইরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে, সর্বত্র এই গ্রন্থের গুরুত্ব প্রচার করেছেন। স্বামীজি তাঁর স্বরচিত 888sport app download apk latest versionের সূচনায় লিখেছেন –
‘খ্রিষ্টের অনুসরণ’ নামক এই পুস্তক সমগ্র খ্রিষ্ট-জগতের অতি আদরের ধন। এই মহাপুস্তক কোনো রোম্যান ক্যাথলিক সন্ন্যাসীর লিখিত। লিখিত বলিলে ভুল হয়; ইহার প্রত্যেক অক্ষর উক্ত ঈশাপ্রেমে সর্বত্যাগী মহাত্মার হৃদয়ের শোণিতবিন্দুতে মুদ্রিত।… তিনি এ পুস্তকে আপনার নাম দেন নাই।
খ্রিষ্টানুকরণ গ্রন্থকে বলা হয় ‘বাইবেলের মঙ্গল সমাচারের মর্মসার’। টমাস কেম্পিসের মনস্তাত্ত্বিক সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এক সর্বজনীন মানবিক আবেদন এনেছে, যা ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সাধারণ পাঠকের হৃদয়কে উজ্জীবিত করে তোলে।
বাংলা ভাষায় স্বামী বিবেকানন্দের পরে 888sport app download apk latest version করেছেন – সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় (খ্রিষ্টের অনুসরণ), লক্ষ্মীপ্রসাদ চৌধুরী (খ্রিষ্টের অনুকরণ) এবং স্বামী সচ্চিদানন্দ (ঈশানুকরণ)। ইমিটেশন্ অফ ক্রাইস্ট গ্রন্থের বাংলা 888sport app download apk latest versionের ধারায় সর্বশেষ 888sport app download apk latest versionক হচ্ছেন খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী ফাদার দ্যতিয়েন। গ্রন্থটি শুধু ইংরেজিতে নয়, পৃথিবীর সমস্ত প্রধান ভাষায় অনূদিত হয়ে জগৎ জয় করেছে। খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী দ্যতিয়েন চারটি খ–, একত্র করে সংকলিত করেছেন। বাংলায় তাঁর নামকরণ খ্রিষ্টানুকরণ (১৯৭১)।
দ্যতিয়েনের খ্রিষ্টানুকরণ বাংলা গদ্যের প্রাঞ্জল 888sport app download apk latest version। ফাদার দ্যতিয়েন খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী, দ্বিতীয়ত তাঁর ইংরেজি ও বাংলা ভাষার দখল প্রশ্নাতীত। যার ফলস্বরূপ – এই 888sport app download apk latest version সহজবোধ্য বাংলা গদ্যের এক মনোরম সৌরভ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর খ–র বিভাগগুলোর নামকরণ দেখে নেওয়া যেতে পারে – প্রথম খ- : আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনা, দ্বিতীয় খ- : আন্তর্জীবনের আহবান, তৃতীয় খ- : আন্তর সান্তবনা ও চতুর্থ খ- : খ্রিষ্টপ্রসাদ । –
নিজেকে এবং সর্বস্ব ত্যাগ ক’রে সবার নিচে যে আসন নেয়, তার মতো ধনবান, তার মতো শক্তিশালী, তার মতো মুক্ত কেউই নয়।
খ্রিষ্টতত্ত্বকে সহজ বাংলা গদ্যে রসভাষ্যে উন্নীত করা – একমাত্র খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী দ্যতিয়েনই করতে পারেন। অন্তরভূমি থেকে তিনি বাংলা ভাষাকে সিদ্ধ-সাধনায় অর্জন করার ফল খ্রিষ্টানুকরণ। বাংলা ভাষার গভীরে চলে যেতে পেরেছেন, খ্রিষ্টতত্ত্বের প্রেমের বাণীকে বাঙালিকে এক নতুন উপহারে সজ্জিত করেছেন। আধ্যাত্মিক গ্রন্থের 888sport app download apk latest versionের স্বাধীনসত্তার শক্তি অর্জন করেছেন ফাদার দ্যতিয়েন। বাংলা ভাষায় খ্রিষ্টানুকরণ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বাংলা গদ্য পরম্পরা : পরিশ্রমী অনুসন্ধান
বইটির নাম গদ্য পরম্পরা (১৯৭৭)। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করা হয়েছে। সৎ সংকলক খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী স্বীকার করেছেন – গদ্য পরম্পরা গ্রন্থনা ব্যক্তিগত প্রয়োজনবোধে। গদ্য গ্রন্থটি পড়ার পর সন্ন্যাসীর সততাকে ছাপিয়ে পড়ে পাঠকের অনুসন্ধিৎসু মন। ভাবা যায় ৪৮৫ (চারশো পঁচাশি) জন বিশিষ্ট প্রয়াত বাঙালি গদ্যলেখকের নির্বাচিত সংকলন! কত দিন! কত শ্রম! কতকালের মননশীল পরিশ্রমে এই ব্যাপ্তির সীমা টানা যায়। বাংলা ভাষার গদ্য 888sport live footballের আদি যুগ থেকে বিশ শতকের সাতের দশক পর্যন্ত বিশিষ্ট গদ্য888sport live chatীদের প্রতিনিধিত্বমূলক শ্রেষ্ঠ গদ্যের পরম্পরার সম্পাদক ফাদার দ্যতিয়েন।
সচেতন সম্পাদক-সংকলক বৃহত্তর বঙ্গদেশের সীমানা ক্রমশ বৃদ্ধির পরিসীমাকে ধরেছেন। দেশি-বিদেশি শব্দের সংমিশ্রণকে আস্বাদ করেছেন। তাঁর নিজের সৃজনশীল বাংলা গদ্যের অভিনব সৃষ্টি ডায়েরির ছেঁড়া পাতা (১৯৭১) গ্রন্থাগারে প্রকাশিত হয়েছে। একজন মহৎমনের, মহৎ888sport live chatী নিজেই জেনে নিতে চান বাংলা গদ্যের ঐতিহ্য এবং পরম্পরায় সমকালীন বাংলা গদ্যের জীবনরেখা। বিনয়ী সংকলক দ্যতিয়েন সুধী পাঠকের কাছে নিবেদন করেছেন – ‘আরো ভালোর সন্ধানদানে তাঁরা যেন সংকলয়িতার এই যথাসাধ্য-ভালো খসড়াটিকে পরিশোধনে, পরিবর্জনে, পরিবর্ধনে, পরিমার্জিত করেন।’
গদ্য পরম্পরার (১৯৭৭) নির্বাচিত এক পৃষ্ঠার উদ্ধৃতিগুলোর রসবিচার না করলেও, শুধুই সংকলন রস হয়ে উঠেছে কী! প্রথম নমুনা নিয়েছেন আমেত্মানিও দো রোজারিও – শেষ করেছেন আনোয়ার পাশাকে দিয়ে। প্রতিটি নির্বাচন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিবিড় পাঠে ধরা পড়বে সংকলকের এক সরস দূরদর্শিতা। বাংলা 888sport live footballের বহু বৈচিত্র্য, ধর্ম ও রূপ ধরা পড়েছে। এমন এক গদ্যলেখককে সামনে এনেছেন – যাঁরা তথাকথিত 888sport live footballের ইতিহাসে স্থান পাননি। তাঁরা এখানে স্থান পেয়েছেন শুধু ‘মায়াবশত’ বলে মনে করি না। সম্পাদক-সংকলক একজন রম্যরচনাকার, তীব্র রসবোধ তাঁর কলমের ডগায়। ৪৮৫ জন লেখকের মধ্যে ৩৭ জন লেখিকাকে সামনে এনেছেন।
চমকের পর চমক। আরো অনেক চমক, আমাদের চমকে দেয়। – ভ্রাতৃদ্বয়, ভ্রাতৃত্রয়, ভগ্নিযুগল, পিতা-পুত্র, পিতা-কন্যা, ভ্রাতা-ভগিনী, পতি ও পত্নীদের গদ্য পরম্পরা আমাদের বাংলা গদ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। শুধু ঠাকুরবাড়ির ২৮ জন গদ্যলেখক আছেন। ঠাকুরবাড়ির চার পুরুষ লেখক, তাও এখানে নির্বাচিত হয়েছেন। বৈচিত্র্য এখানে শেষ নয় – ইসমাইল হোসেন শিরাজীর একটিমাত্র বাক্যের উদ্ধৃতিতেই এক পৃষ্ঠা। ‘অসিতকুমার হালদারের রূপকথার সাবলীল ভাষাস্রোতে’ একটিও যুক্তাক্ষর নেই।
সংকলক-সম্পাদক দ্যতিয়েনের এই শ্রেণিবিভাজন দেখে সহজেই অনুমান করা যায় – পরিশ্রম আর গভীর অনুসন্ধান ছাড়া এ-কাজ সম্ভব নয়। 888sport slot gameকাহিনি, নাটক, রম্যরচনা, পত্রিকার সম্পাদকীয়, আত্মচরিত, 888sport sign up bonusকথা ও 888sport app download apk latest versionকর্ম থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছে। যার ফলে বাংলা গদ্যের বিষয়বৈচিত্র্য এক অভিনব আস্বাদ এনে দিয়েছে। শুধু সাধু নয়, চলিত গদ্যের নিদর্শন, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের আগেই শখানেক হয়ে গিয়েছিল। গদ্য পরম্পরা 888sport live footballের ইতিহাসের এক অপরিহার্য উপাদান হিসেবে স্বীকার্য হতে বাধ্য। তথাকথিত 888sport live footballের ইতিহাস থেকে ভিন্নপথে পরিশ্রমের যাত্রায় গদ্য পরম্পরা 888sport live football-ইতিহাসের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। একজন বিদেশি ২৭ বছর কঠোর অনুশীলনে, বাংলা গদ্য-888sport live footballের গবেষণাকে এক নবতর মাত্রা দিয়েছেন, যা বর্তমানের গবেষকদের ভাবাবে বইকি?
ভাষা নদীর মতো বহমান। অনেকগুলো বাঁক নিয়ে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে যায়। একজন বিদেশি সম্পাদক তাঁর প্রাণের ভাষাসজ্জাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন – মনে হয় তাঁর গদ্য অস্তিত্বের প্রাণভোমরা ধরতে চান। তিনিও একজন গদ্যলেখক শুধু নন, মৌলিক ধারার অগ্রদূতও। তিনি বুঝে নিতে চান, আসলে যে-ভাষায় তিনি সৃষ্টি করছেন – তার অগ্রগতি কোন বহমানতায় সমীক্ষা করা হবে! এখানে স্বদেশি হোক আর বিদেশি হোক – পরিশ্রমশীল মননের মান্যতা আলাদা। এখানে সম্পাদক-সংকলক বিদেশি বলেই 888sport apk download apk latest version আরো বেড়ে গেল।
বিদেশি দ্যতিয়েন : বাংলা গদ্যের নয়া রূপকার
ছিন্নপত্র নয়, সাহেবের লেখা ডায়েরির ছেঁড়া পাতা দেশে ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে – পাঠকেরা ছদ্মনাম ভেবেছিল। ছদ্মনামে কোনো বাঙালি লেখক ‘বাংলা ছোটাচ্ছেন’। অনেকেই বললেন, প্রথমেই ডায়েরির ছেঁড়া পাতা পড়ি। ট্রামে-বাসেও পাঠকেরা আলোচনা করত অসাধারণ বিদেশি সাহেবের লেখা! এও কি সম্ভব! শুধু একনিষ্ঠতা নয়, গভীর প্যাশন্ ছাড়া সম্ভব নয়। কঠোর অনুশীলনের সঙ্গে 888sport live football-প্রতিভার যুগল মিলন ঘটেছে, সাহেবের মধ্যে। তাও মাত্র নয় বছরের মধ্যে (১৯৪৯-৫৯) বাংলা ভাষার নয়, বাংলা 888sport live footballের নয়া রূপকার।
বাংলায় লেখক হবেন, ভাবেননি তিনি। খুব ভালো বাংলা ভাষাটা শিখতে চেয়েছিলেন। আসলে বাংলা ভাষার ধ্বনিমাধুর্য, সংগীত – ‘musicalité de la prose’ – তাঁকে আকৃষ্ট করেছে। বাংলা গদ্যের সুরের মূর্ছনা তাঁর কানে বেজে জেগে উঠেছিল – সেই মধুর মনোরম বাংলা সংগীত। সাহেব মানে ইংরেজ সাহেব নয়, বেলজিয়ামের ফরাসি সাহেব। বাংলা ভাষার অন্দরমহল ও অন্তর সাম্রাজ্যে তিনি সাঁতার দিয়েছিলেন। তিনি যেন বাংলা গদ্য নিয়ে বেহালা বাজিয়েছেন। এ যেন সুরের মূর্ছনা। বাংলা গদ্যছন্দের মনোরম সংগীত।
ফাদার দ্যতিয়েন দুবছর (১৯৫৭-৫৯) শান্তিনিকেতনে ছিলেন। আড্ডা দিতেন। ক্ষিতীশ রায়, অশোকবিজয় রাহা, শান্তিদেব ঘোষ, রামকিঙ্কর বেইজ, প্রভাত মুখোপাধ্যায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, সৈয়দ মুজতবা আলী আর ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর সঙ্গে। আরো ছিলেন অবাঙালি বান্ধবীরাও – ওমর খৈয়ামের 888sport app download apk latest versionক কান্তিচন্দ্র ঘোষের স্ত্রী ত্রতা ঘোষ ও অন্নদাশঙ্করের মার্কিন স্ত্রী লীলা রায়। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বসে ‘জীবনদেবতার’ ডাক পেয়েছিলেন। লিখে ফেলেছিলেন ‘লেখকের লেখনী’ – লেখক মানে ঈশ্বর, আর লেখনী ছিলেন স্বয়ং ফাদার পল দ্যতিয়েন। শান্তিনিকেতনে থাকতেই ডায়েরির ছেঁড়া পাতা অর্পণ করেছিলেন দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাগরময় ঘোষকে। প্রখ্যাত সাগরময় ঘোষ তখনই তাঁকে বলেছিলেন – ‘You have opened a new vista in Bengali literature.’
বাংলার সংস্কৃতিজগতে মেলামেশা করতেন দিকপালদের সঙ্গে, যেমন – যামিনী রায়, অরুণ মিত্র, মৈত্রেয়ী দেবী, সুকুমার সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার তাঁর লেখার মুগ্ধ ভক্ত ছিলেন। দিয়েছিলেন দীর্ঘ এক উৎসাহপত্র –
It is remarkable how you have made a complicated language like Bengali so much your very own…
‘বঙ্গসরস্বতী সেবক এই নতুন আগন্তুকটি কে?’ তাঁর একমাত্র পরিচয়, তিনি নিজেই দিয়েছেন – ‘তিনি একজন খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী – চলিত গৌড়ীয় ভাষায় যাকে বলে ক্যাথলিক মিশনারি।’ কেউ বলল পরশুরাম, কেউ বলল মুজতবা – অবশ্য ‘অবিশ্বাস্য’ মুজতবা নয়, চাচা কাহিনির আলী সাহেব। উইলিয়াম কেরি, হান্না মুলেন্স্ ও অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির পরই তাঁর স্থান। আসলে তাঁর বাংলা গদ্যের স্টাইল দুআনা ফরাসি হতে পারে, দুআনা বাংলাও কিন্তু বাদবাকি পঁচাত্তর নয়া পয়সা মানে বারো আনা তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রতিভার প্রসাদগুণ।
ডায়েরির ছেঁড়া পাতা গ্রন্থের প্রথম লেখাটির নাম ‘দীপুর কান্না’। এই প্রথম লেখাটি পড়ে, আমার ছোটবেলার সঙ্গে একেবারে মিলে যায়। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। ভিক্তর হুগোর লা মিজেরাব্ল পড়ে সেই ছোটবেলায় আমার চোখে জল এসেছিল। বিকেলের খেলা বাদ দিয়ে, সেদিন বইটি পড়তে-পড়তে আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। ‘দীপুর কান্না’য় আছে – ‘888sport appsে লা মিজেরাব্ল পড়েনি আর তা পড়ে কাঁদেনি এমন ছাত্র বিরল।’ ছোট্ট একটা রচনা। মাত্র ১০৫টি শব্দের মধ্যে বাঙালি কিশোরজীবনের এমনই মিল – সত্যিই এ-এক বিস্ময়কর রচনা। এক আশ্চর্য মনস্তত্ত্ব জ্ঞান। চরম অভিজ্ঞতা আর গভীর জীবনবোধ না থাকলে এরকম লেখা যায় না। আমি মুক্তকণ্ঠে প্রকাশ্যে স্বীকার করছি – আধুনিক 888sport live footballের আমার প্রিয় লেখক বিদেশি সাহেব : ফাদার দ্যতিয়েন। হে 888sport live footballিক, 888sport apk download apk latest version-মিশ্রিত সেলাম জানাই। মিলনবীথির এই বার্তা পৌঁছে যাক বেলজিয়াম-ব্রাসেলসে। ‘বিশ্রী নিয়ম’ রচনায় – চলন্ত ট্রামের ঝুলন্ত প্রতিবেশীর সঙ্গে আন্তরিক অন্তরঙ্গ হয়ে, নিজের জীবনবৃত্তান্ত বলার ভঙ্গি যেন এক ছোটগল্পের কাহিনির নয়া দিগন্ত খুলে গেছে। শেষ হয়ে হয় নাকো শেষ। শেষ থেকে যেন আবার শুরু হচ্ছে। পকেটমারের বৃত্তান্ত বলতে গিয়ে খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসীর আধ্যাত্মিক জীবনের আত্মত্যাগের আখ্যানটাও বলে দেওয়ার কৌশল যেন রম্যতা এনে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, উত্তমপুরুষে লেখা, নিজেকে নিয়ে এক আশ্চর্যসুন্দর হাস্যরস এবং করুণরস (পকেটকাটা, মানিব্যাগ নেই) একই সঙ্গে চিত্রিত করেছেন।
এরকম উদাহরণ আরো অনেক আছে। বাঙালি-জীবনের খুঁটিনাটি, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়কে যেভাবে অঙ্কন করেছেন, অবাক হয়ে যেতে হয়। শুধু বাঙালি শিশু-কিশোর নয়, বাঙালি 888sport promo codeর মর্মকথা – সাহেব মনের মাধুরী মিশিয়ে তুলে এনেছেন। সেইসঙ্গে বাংলা শব্দের খেলা – তৎসম থেকে চলিত বাংলার সংমিশ্রণে বাংলা বাক্যের প্রাণশক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। সচেতনভাবে ইংরেজি শব্দের ব্যবহারকে কমিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়েছেন। শুধু বাংলা শব্দের জ্ঞান নয়, বিশ্ব888sport live footballের পাঠকে রচনার সঙ্গে মিশিয়ে নতুন শৈলীতে আধুনিক থেকে ক্রমশ আধুনিকতর করে তোলার অদম্য প্রয়াস রয়েছে।
‘বাংলা ও বাঙালি’ রচনা পড়ে বোঝা যায় – শুধু বাংলা শব্দজ্ঞান নয়, বাংলা সংগীত থেকে বাংলা সংস্কৃতিকে কত কাছে থেকে দেখেছেন। বাংলা 888sport live footballের শুধু ইতিহাস নয়, বাঙালির ইতিহাস তথা ভারতীয় ইতিহাসচর্চা তাঁর নখদর্পণে। বাংলা ভাষার সুরেলা ছন্দ, শ্রবণমুখর বিপর্যয়, আছে মেজাজি আস্বাদ মাধুর্য আর স্বরবর্ণের সরসতাকে প্রয়োগ করেছেন। বাঙালির দোষ-গুণকে যেভাবে এঁকেছেন – কখনো আবার ফরাসিদের সঙ্গে তুলনামূলক আলোকদ– স্নাত করেছেন। যার ফলে পাঠ উপভোগ্যতা অনেকগুণ বেড়ে গেছে। বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরস পরিবেশন করে বাংলা গদ্যের শক্তিকে বিশ্বের সামনে এনেছেন। তাই 888sport live footballে বিদেশিদের লেখাপড়ার চর্চা নতুন সহস্রাব্দের এক নয়া-উপহার। স্বদেশির অন্তর্চোখে বিদেশিদের পর্যালোচনা আধুনিক 888sport live footballের এক নয়া-উপাদান। স্বদেশি ভোজনরসিকের জিহবায় আসে অভিনব আস্বাদ। বঙ্গ সংস্কৃতি এক মিশ্র সংস্কৃতির বাঙালি, তাই সহজেই অতিথিকে আপন করে নিয়েছে। ফাদার এখানে অতিথি নন, বাঙালির ঘরের লোক। তিনি বেলজিয়ামে ফিরে গেলেও তাঁর বাংলা গদ্য আমাদের ঘরে রয়ে গেল।
‘জাতে ভেতো, নামে ট্যাঁশ’ রচনাটি নিয়ে সম্ভবত জোরালো বিতর্ক হয়েছিল – তালতলায়। কিন্তু আজ 888sport live footballের গবেষকরা ‘অনুমিতি’ করতে পারেন – লোকজ্ঞান আর নৃতত্ত্বের মনন না থাকলে কি লেখা যায় – এই রসবোধের উচ্চাঙ্গের সৃজনশীল গদ্য!
না, ভদ্রলোকটি সাহেবও নন, আধা ইংরেজও নন। ওঁর স্ত্রী শাড়ি পরেন, বালা পরেন; পরেন পায়ে আলতা, মাথায় সিঁদুর। নিজেও উনি পান খেয়ে পিক ফেলেন, ইলিশ-ভাত খেয়ে ঢেঁকুর তোলেন, নাক ঝেড়ে ধুতিতেই হাত মোছেন।… আর তবুও ভদ্রলোকের নাম অ্যান্টনি গোমেশ।
কলকাতা বা বাংলার বিচিত্র জনজীবন নয়, বিদ্যাচর্চা নিয়ে গদ্যশৈলী সৃষ্টি করা, অথবা হাস্যরসের গভীরে পা–ত্যকে প্রবেশ করানোর শক্তি, দ্যতিয়েন নিপুণভাবে নির্মাণ করেছেন।
বাংলা বর্ণমালা থেকে ব্যাকরণ, নীরস বিষয় থেকে কাব্যিক ব্যঞ্জনায় সরসতার সারস্বত চিত্র মুগ্ধ করে। যা পড়ি তার চেয়ে বেশি জানতে পারি। বের্নারদ্যাৎ বলতেন – ‘বৃষ্টি পড়লে আমি ভাবি, এক সুন্দরী কাঁদছে!’ ‘উপহার বিনিময়’ রচনায় যেন একই সঙ্গে ফুল আর ফলের সমাহার-
তাহলে আপনার পাইপটি আমাকে দিন আর আপনার হুঁকোটি আপনি নিয়ে যান।
উচ্চস্তরের জ্ঞানের সঙ্গে গল্পের মেজাজ – একই সঙ্গে রসের মেলবন্ধনে নতুন গদ্যশৈলী সৃষ্টি হয়েছে। সাহেব দীর্ঘ ভূ-পর্যটনে সবচেয়ে মূল্যবান কোনো জ্ঞান আহরণ করে এনেছেন। সাহেব উত্তর দেন : ‘সত্যকে খুঁজতে হয় সরল হৃদয় দিয়ে; প্রকৃতিতেই সত্যের অধিষ্ঠান; সত্যকে প্রকাশ করতে হয় সজ্জনের কাছে।’ সেইসঙ্গে সাহেব জুড়ে দিতে ভোলেন না –
তেমন বউ পেলে তবেই সুখ!
আসলে ফাদার দ্যতিয়েন রসবোধের মোড়কে পাঠককে পড়িয়ে নিতে চান। দিতে চান আধ্যাত্মিক পরিষেবা। কারণ তিনি শুধু 888sport live footballিক নন, তিনি তো খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী। বিদেশি দ্যতিয়েনের রচনায় একই সঙ্গে বহুমুখী স্তরের বিস্তার আছে। তাঁর পাঠক এখনো গড়ে ওঠেনি বলেই মনে হয়। হয়তো সমালোচকেরা বলবেন – ফাদার তো সবার জন্য লেখেন না। তাঁর তাই শিক্ষিত নয়, উচ্চশিক্ষিত পাঠক। ডায়েরির ছেঁড়া পাতার ‘ভাইভা ভোসি’ রচনায় কাহিনির মধ্যে আরেক কাহিনির প্রয়োগ। একই সঙ্গে দুটো আখ্যানকে একই সময়ে সঠিক সৃষ্টির সম্ভারে দৃষ্টিনন্দন ও মনোরঞ্জন করাতে পারেন। ‘গবেষকদের উদ্দেশে’ রচনায় – ‘কেরী সাহেবের বাংলা ব্যাকরণের প্রথম সংস্করণ বোধহয় – এদেশে অন্তত বিলুপ্ত, কেরী সাহেবের কথোপকথনের প্রথম সংস্করণ, মনে হয় 888sport appsে কোথাও মেলে না, প–চেরিতে আছে।’ গবেষকদের বইয়ের খোঁজ বাতলে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে, রসবোধ সৃষ্টি করছেন। কেরী দিয়ে শুরু করে জ্যুলিয্যাঁ ভিয়ো, মোপাসাঁ ও রলাঁতে গিয়ে শেষ করছেন। বঙ্গ গবেষণায় শুরু হয়ে ফরাসি 888sport live footballচর্চার দিগন্তকে প্রসারিত করে দিয়েছেন।
‘888sport apps’ নামক রচনায় মিশরের সঙ্গে বাংলারাজ্যের তুলনামূলক পর্যালোচনায় বাংলাকে সেরার স্থানে বসিয়েছেন। আবার রসসিক্ত বিশ্লেষণে একই সঙ্গে বাংলার 888sport promo codeকে সৌন্দর্যলক্ষ্মীর আসনে নামিয়েছেন। ভালো-মন্দে ভরা বঙ্গজীবনের এই দুই মেরুকে এক অসাধারণ জীবন্ত মাত্রা দিয়েছেন-
প্রয়োজনীয় সব বস্ত্তর প্রতুলের জন্য – এবং ওদের 888sport promo code সমাজের সৌন্দর্য ও খোস মেজাজের দরুন – পর্তুগীজ, ইংরেজ ও ডাচদের মধ্যে এক প্রচলিত প্রবাদ আছে : বাংলারাজ্যে প্রবেশদ্বার আছে অসংখ্য, নেই কোনও নির্গমনের পথ।
এই চমৎকারিত্ব তো 888sport alternative linkের আমেজ ও মেজাজের এক অপূর্ব সম্মিলন। বিষয়বৈচিত্র্য আর বিশ্ববিদ্যাচর্চার এক মহাসম্মেলন ঘটেছে – ডায়েরির ছেঁড়া পাতায়। নামকরণের মধ্যেও এক বিদ্যাযুক্ত রসসিক্ত এক ভারতীয় সমাজচিত্র; সতীদাহ প্রথার এক নতুন তথ্যে বিধবাদের করুণ চিত্র সামনে আসছে। সেই সঙ্গে বিদেশি বণিকদের উদ্ধারপর্ব। ইতিহাসের মধ্যে আরেক ইতিহাসের সংযোজন। আধুনিক ইতিহাসের নতুন বয়ান সৃষ্টি হচ্ছে। আর এখানেই শেষ নয়, বাংলা 888sport live footballের নতুন উপাদান যুক্ত হচ্ছে – যার নাম খ্রিষ্ট-প্রসঙ্গ আর বাইবেলের নানান চরিত্রের রামধনুর্চ্ছটা। যা বাংলা 888sport live footballকে অভিনব পথে, বাঙালি পাঠককে নয়া পথের তীর্থযাত্রী করে তুলছে। 888sport live footballিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন – দেশে ফাদার দ্যতিয়েনের লেখা প্রথম পড়তেন। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য একটি বিদেশি ভাষায় রঙ্গরসিকতা করা খুবই দুর্লভ ঘটনা। ফাদার দ্যতিয়েনের বাংলা ভাষা-888sport live footballচর্চা দেখে আজ মাতৃভাষার সংজ্ঞার অতীত ভুলে নয়া সংজ্ঞার কথা ভাবতে হবে। কেতকী ডাইসনের মাতৃভাষার নাম বাংলা হলেও ইংরেজিও তাঁর কাছে মাতৃভাষার মতো। দ্যতিয়েনের মাতৃভাষা বাংলা বললে, সবাই একমত হবেনই।
বাংলা গদ্যের প্রথম ট্রিলজি
রোজনামচা একটি ফারসি শব্দ। যার অর্থ ‘দিনলিপি’। ডায়েরিও বলা যেতে পারে। রোজনামচা প্রথম প্রকাশিত হয় অমৃত পত্রিকায় ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশ ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। ফাদার দ্যতিয়েনের ডায়েরির ছেঁড়া পাতাকেও যেন ছাপিয়ে যায় রোজনামচা (১৯৭৩)। রোজনামচায় ফাদার আরবি-ফারসি শব্দ নিয়ে সৃষ্টির আনন্দে মগ্ন হয়েছেন। রোজনামচা নামকরণেই সেই নব-সৃষ্টির ছোঁয়া আছে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত নতুন রাষ্ট্র 888sport apps সফরের অভিজ্ঞতা রোজনামচায় প্রতিফলিত হয়েছে। আসলে বঙ্গপ্রেমিক ফাদার দ্যতিয়েন পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি এসেছিলেন ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে। সদ্য ভারত স্বাধীনতা পেয়েছে। ভাগ হয়েছে ভারতবর্ষ। পূর্ববঙ্গের জনসংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য – ডায়েরির ছেঁড়া পাতার দ্বিতীয় পর্বের নাম রোজনামচা বলা যেতে পারে। পূর্ববঙ্গ তথা ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের স্বাধীন 888sport apps রাষ্ট্রের জনসংস্কৃতিতে মুসলিম বাঙালির জীবনকে প্রতিফলিত করেছেন – রোজনামচায়।
‘বিবিরা ভোট দেবে না!’, ‘নজরানা চাই… গান করুন’, ‘জাকির মিঞার আস্তানায়’, ‘খুদা হাফিজ!’, ‘সুনীতির মহল্লায়’, ‘888sport appর কড়চা’, ‘কমল ও কামাল’, ‘ইউসুফ ও জোলেখা’, ‘মমতাজের প্রস্থান’, ‘বেহেস্তি 888sport live footballের কথা’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘শামিম আরা’ প্রভৃতি রচনায় আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার এক অভিনব মাত্রা এনেছে। যেমন ‘888sport appর কড়চা’ রচনায় অভিনব প্রতিফলন ঘটেছে –
ভারতে আছে লরি-888sport live football, 888sport appsে আছে রিকশা-কলা888sport live chat।… 888sport appর সাইকেল-রিকশার 888sport free bet আল্লাই জানেন।… ঐশনামভক্ত ভিখারিরা উঠেছে জিকির থামিয়ে। ওদের কিছু দেব ভেবে ট্যাঁকে হাত গুঁজেই বুঝলাম, আমিও ওদের মতন ফকির হয়েছি। সহৃদয় উপদেষ্টা অভয়মুদ্রা এঁকে নির্লিপ্ত সুরে বললেন, ‘কোনও বস্ত্ত অপহৃত হলে ‘আল হাক্কু’ নামটা উচ্চারণ করবেন, দু’শোটিবার, আকাশের দিকে তাকিয়ে…
স্বাধীন 888sport apps রাষ্ট্রের জনসংস্কৃতির অপরূপ বর্ণনার সঙ্গে রসবোধের মিশেল – এক ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। সেই সঙ্গে আছে ভারতের সঙ্গে 888sport appsের তুলনামূলক চমৎকার পর্যালোচনা। যেমন ‘888sport appর কড়চা’র প্রথম লাইনটাই উচ্চাঙ্গের 888sport live footballের বাস্তব ও কঠোর বাস্তব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। 888sport appয় যাঁরা গেছেন তাঁরাই এই রসচিত্রের সরসতা উপলব্ধি করতে পারবেন। ‘সুনীতি মহল্লায়’ নামক অসাধারণ শব্দচিত্রের রচনা আমাদের মুগ্ধ করে –
জাকির মিঞার মতে, হিন্দুস্থান, কবরস্থান প্রভৃতি শব্দগুলো ভুল : লিখতে হয় হিন্দুস্তান (হিন্দু যেহেতু ফার্সি) আর কবরস্তান। কবরস্তান কথাটাও অবশ্য সংকর শব্দ : তার প্রথমার্ধ আরবি, দ্বিতীয়ার্ধ ফার্সি।
ওপার 888sport appsের বাংলা শব্দ বুঝতে গেলে, শুধু আরবি নয়, ফারসি সম্বন্ধপদও শেখা প্রয়োজন। আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহারের যেন রসলীলা। এখানে ‘সুনীতির মহল্লায়’ নামকরণের মধ্যে তির্যক হাস্যরসের মধ্যেও নির্মল পা–ত্য রয়েছে। ‘নীতি’ বলতে জাকির মিঞা শুধু বোঝেন সুনীতি, অর্থাৎ ভাষাচার্য সুনীতিকুমারকে।
ফাদার দ্যতিয়েন শুধু একজন সু888sport live footballিক নন, তিনি ভাষাবিদ – বহু ভাষাচর্চা তাঁর মজ্জায় – রক্তের মধ্যে। সুনীতিকুমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব তাঁর অটুট ছিল। 888sport appsের মুসলিম ভুবনে মাত্র এক বছর থেকে দ্যতিয়েন কীভাবে সেই ভিন্ন ভুবনের সংস্কৃতি তুলে আনলেন! সেটা ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। ডায়েরির ছেঁড়া পাতার দ্বিতীয় পর্ব রোজনামচা (১৯৭৩) আমাদের, পাঠকদের, সেইভাবে চর্চিত ও পঠিত নয় বলেই ভাষাভুবনের রসকলার আমেজ নিতে পারিনি। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ফাদার দ্যতিয়েনকে আমন্ত্রণ করে 888sport apps কিছুটা ঋণমুক্ত হলেও, 888sport appsের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তাঁর রোজনামচা কজন পড়েছেন? 888sport appsের পাঠকদের দিকে আঙুল তোলার আগে, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষার অধ্যাপকরা কজন জানেন রোজনামচা নামটা? আসলে প–ত রসবেত্তা দ্যতিয়েনের রচনার পাঠক এখনো তৈরি হয়েছে কি?
আটপৌরে দিনপঞ্জি (২০১৩)। পাঠক খেয়াল করুন – ফাদার দ্যতিয়েনের প্রথম 888sport live footballগ্রন্থ – ডায়েরির ছেঁড়া পাতা (১৯৭১), আর রোজনামচা (১৯৭৩)। এই তিনটি গ্রন্থের মধ্যে তৃতীয় গ্রন্থটি আটপৌরে দিনপঞ্জি (২০১৩) প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ৩০ বছর পর। কেন? ফাদার ১৯৭৮ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রায় ২৮ বছর স্বদেশ বেলজিয়ামে ফিরে বাংলা 888sport live footballচর্চা তো দূরের কথা, বাংলা বলার পর্যন্ত সুযোগ পাননি বা নেননি। আটপৌরে দিনপঞ্জি (২০১৩) দীর্ঘ ব্যবধানে লিখলেও এই তিনটি গ্রন্থকে ত্রয়ী বা ট্রিলজি বলা যায়। বাংলা গদ্য-888sport live footballের প্রথম ট্রিলজি গ্রন্থের নাম যথাক্রমে –
১. ডায়েরির ছেঁড়া পাতা (১৯৭১)
২. রোজনামচা (১৯৭৩) ও
৩. আটপৌরে দিনপঞ্জি (২০১৩)।
আমি সেই সৌভাগ্যবান, বাংলা গদ্য 888sport live footballের নয়া দিশার কথা লিখতে পারছি। ফাদার দ্যতিয়েন নিজেই বলেছেন – ‘ডায়েরি বলুন, রোজনামচা বলুন, দিনপঞ্জি বলুন, আমার এই যাবতীয় রম্যকাহিনি কল্পনামিশ্রিত আত্মকথা, উত্তম-পুরুষে রচিত।’ কেন রম্যকাহিনি? কারণ এখানে ছোটগল্পের মতো ঘটনা আছে, চরিত্র আছে। কেন আত্মকথা? কারণ এখানে লেখক উত্তম-পুরুষে লিখেছেন নিজের কিঞ্চিত কথা। হ্যাঁ নিশ্চয়ই এই ট্রিলজিতে তাঁর জীবনী পাওয়া যাবে না। কেন? এ তো 888sport live football। যার মধ্যে কিছু কল্পনা থাকবে। ‘আলংকারিক প্রয়োজনে’ লিখিত হয়েছে বাংলা গদ্যের নতুন ভুবন। আমার মতে, এই গদ্য ট্রিলজি শুধু রম্যকাহিনি নয়, এর নাম ‘গবেষণামূলক আত্ম-রম্য কাহিনি’। দ্যতিয়েন খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী হিসেবে নিজেকে উত্তম-পুরুষে প্রকাশ করেছেন – নিজের আত্মত্যাগী জীবনচর্যা, যা বাংলা 888sport live footballে কেন, বিশ্ব888sport live footballে নয়া দিগন্তের নতুন ফসল। তাঁর ‘গবেষণামূলক আত্ম-রম্য কাহিনি’র পাঠক হতে গেলে, রস গ্রহণ করতে হলে, অনেকটা পড়ে আসতে হবে। অনেকটা দুর্বোধ্য আধুনিক 888sport app download apk পাঠের মতো।
মাফ করবেন পাঠক। আমিও এখনো তাঁর সব শব্দ আর বাক্যের ব্যবহার, সবটা বুঝে উঠতে পারিনি। তাই আমি বারবার এই গদ্য ট্রিলজি পাঠ করার অভ্যাস করছি।
দ্যতিয়েন-888sport live footballে মৌলিকতা
১. আবু সয়ীদ আয়ুবের মতে, বাংলায় অবাঙালিদের মধ্যে ফাদার দ্যতিয়েনই সেরা লেখক। কারণ তাঁর রচনার শৈলী ও বিষয়ে অভিনবত্ব আছে।
২. ফাদার দ্যতিয়েন বহুভাষাবিদ হয়েও তাঁর রচনায় স্বল্প শব্দের ব্যবহারে সংক্ষিপে বাক্য গঠন করেছেন। ইংরেজি শব্দ পরিহার করে নতুন বাংলা শব্দ সৃষ্টি করেছেন।
৩. তাঁর বাংলা গদ্য স্পষ্ট-সহজ-সরল-হৃদয়গ্রাহী। কাচস্বচ্ছ বাংলা গদ্য চিত্র ও চিত্তের মনোহারী সংলাপও।
৪. তাঁর রচনায় বাংলা ভাষার ধ্বনিমাধুর্যে ভরপুর। তাঁর বাংলা গদ্যছন্দে সুরের মূর্ছনা আছে। বিশেষণ ব্যবহারে নিপুণ দক্ষতা ও যতিচিহ্নের প্রয়োগ সূক্ষ্মতা মুগ্ধ করে।
৫. 888sport app download apk latest version গদ্যে এনেছেন কাব্যিক ব্যঞ্জনা। সৃজনশীল গদ্যে আরবি-ফারসি শব্দের খেলা আছে। তৎসম-তদ্ভব-দেশি ও চলিত শব্দের সংমিশ্রণে সাবলীল গদ্যভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।
৬. অনুসন্ধিৎসু গবেষণা, যুক্তিবাদী মননে, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে তুলনামূলক পর্যালোচনা করেছেন।
৭. শুধু কিশোর-কিশোরী নয়, বাঙালি 888sport promo codeর অন্দরমহলে ও বাঙালি বধূর অন্তর সাম্রাজ্যের চিত্র এঁকেছেন।
৮. তাঁর রচনায় আখ্যানধর্মিতা একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য; যেখানে ছোটগল্পের মেজাজ আছে। চরিত্রে এসেছে কঠোর-কোমলতার স্নিগ্ধ পরশ।
৯। তাঁর রচনাশৈলীতে – দুআনা ফরাসি, দুআনা বাংলা আর বারো আনা নিজস্বতার রামধনুর বর্ণচ্ছটা, যা হয়ে উঠেছে বাংলা 888sport live footballের নতুন ডিসকোর্স।
১০. ফাদার দ্যতিয়েন সৃষ্টি করেছেন – বাংলা গদ্যের নন-ফিকশন প্রথম ট্রিলজি।
১. ডায়েরির ছেঁড়া পাতা (১৯৭১), ২. রোজনামচা (১৯৭৩) ও ৩. আটপৌরে দিনপঞ্জি (২০১৩)।
– কেন আপনি ভারতবর্ষে এলেন?
* আমার কাছে মাত্র দুটি স্থানের ইচ্ছা প্রকাশের সুযোগ ছিল; আফ্রিকা আর কলকাতা!
ভারতবর্ষে নয়, আমি বঙ্গদেশে এসেছি।
– সেই প্রিয় বঙ্গদেশে ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ২৮ বছর বাস করে – ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ফিরে গেলেন, আরো এক নতুন দেশে। স্থায়ী নয়, নয় কোনো এক স্থানে। অন্য কোনোখানে, অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। খ্রিষ্ট-সন্ন্যাসী মিশনারি যে এক চলমান অভিযাত্রী।
আপাতত আজ ২০১৬-এর ১৪ এপ্রিলে (১ বৈশাখ, ১৪২৩) বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। কাল কোথায় যাবেন, তিনি নিজেই জানেন না। জানতেও চান না তিনি। যেখানে যাবেন, সেখানেই নিজেকে নিঃস্ব করে দিয়ে যাবেন ‘ভালোবাসা’।
সহায়ক গ্রন্থ
* বাঙ্গালা 888sport live footballে ইউরোপীয় লেখক, সবিতা চট্টোপাধ্যায়, নয়া প্রকাশ, কলকাতা, ১৯৭২, পুনর্মুদ্রণ ১৯৯৮।
* আমাদের জীবন পত্রিকা (১ম বর্ষ থেকে ২৫ বর্ষ) ১৯৩৩-৬০, প্রভু যিশুর গির্জা, কলকাতা।
* ডায়েরির ছেঁড়া পাতা, ফাদার দ্যতিয়েন, গ্রন্থালয় প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা (সম্পাদনা : নিরঞ্জন চক্রবর্তী), সাল নেই।
* রোজনামচা, ফাদার দ্যতিয়েন, গ্রন্থালয় প্রা. লি., কলকাতা (সম্পাদনা : নিরঞ্জন চক্রবর্তী), প্রথম প্রকাশ ১৯৯১।
* গদ্য পরম্পরা, ফাদার দ্যতিয়েন, গাঙচিল, প্রথম প্রকাশ : অনন্য প্রকাশ, ১৯৭৭, গাঙচিল সংস্করণ, ২০১০।
* গদ্য সংগ্রহ, ফাদার দ্যতিয়েন, আনন্দ, প্রথম সংস্করণ, ২০১২, (ভূমিকা : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)।
* ইতিহাসমালা (উইলিয়াম কেরী-সংকলিত), ফাদার দ্যতিয়েন-সম্পাদিত, গাঙচিল, প্রথম প্রকাশ, উইলিয়াম কেরী ১৮১২, দ্বিতীয় প্রকাশ ফাদার দ্যতিয়েন ১৯৭২, গাঙচিল সংস্করণ জুন, ২০১১।
* আটপৌরে দিনপঞ্জি, ফাদার দ্যতিয়েন, আনন্দ, প্রথম সংস্করণ নভেম্বর, ২০১৩।
* লালপেড়ে গল্পাবলি, ফাদার দ্যতিয়েন, গোথেলস্ লাইব্রেরি, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা, ২০১৫।
* খ্রিষ্টানুকরণ, টমাস কেম্পিস, ফাদার দ্যতিয়েন-অনূদিত, দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোং, ১৯৭১।
* আয়না ভাঙতে ভাঙতে, চিন্ময় গুহর সঙ্গে কথোপকথন, ফাদার দ্যতিয়েন, পৃ ২৮, গাঙচিল, জানুয়ারি, ২০১১।
* বঙ্গস্বর পত্রিকা (ক্রোড়পত্র ১, ফাদার দ্যতিয়েন), সম্পাদক চন্দন ঘোষ, ষষ্ঠ বর্ষ, দ্বিতীয় 888sport free bet, শারদোৎসব, ২০১৬।
* বাইবেল ও বাংলা 888sport live football, সুরঞ্জন মিদ্দে, রূপসী বাংলা, কলকাতা ২০১২।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.