ইতিহাসের উপকরণ
তপন বাগচী
মীর মশাররফ হোসেন :
অপ্রকাশিত ডায়েরি
সংকলন, সম্পাদনা ও ভূমিকা
আবুল আহসান চৌধুরী
পাঠক সমাবেশ
888sport app, ২০১৫
৫৫৯ টাকা
মনন888sport live footballের ধারায় আবুল আহসান চৌধুরীর বিচিত্রমুখী অবদান এখন দেশে-বিদেশে সমান স্বীকৃত। কৈশোরে 888sport app download apkচর্চার মাধ্যমে সৃজন888sport live footballে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও ক্রমে তিনি সরে এসেছেন গবেষণা ও 888sport live রচনার বিসত্মীর্ণ ক্ষেত্রে। এ-কথা ঠিক যে, 888sport app download apkচর্চায় স্থিত থাকলে সত্তরের দশকের 888sport app download apk তালিকায় তিনি সামনের কাতারেই থাকতেন; কিন্তু তিনি নিজের খেয়ালেই চলে গেলেন বাঙালির চিন্তার জগৎকে সমৃদ্ধ করতে। আমাদের 888sport live football-ইতিহাস-লোকসংস্কৃতির জগতে তিনি নতুন উপকরণ উদ্ধার, সংযোজন এবং বিশ্লেষণ করে জাতিগত যে-উপকার সাধন করলেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি শুরুতেই নিজের পথটি চিনতে পেরেছিলেন।
888sport app download apkর মতো সৃজনশীল জগতে থেকেও আবদুল কাদির, সৈয়দ আলী আহসান, হাসান হাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জিয়া হায়দার, জিলস্নুর রহমান সিদ্দিকী, আবদুল মান্নান সৈয়দ, মাহবুব সাদিক, হুমায়ুন আজাদ যেমন মননশীল 888sport live footballকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তেমনি একই ধারাবাহিকতার সন্তান আবুল আহসান চৌধুরী। তিনি কেবল 888sport live রচনা করেই ক্ষান্ত থাকেননি, নিত্যনতুন তথ্য, দলিল, অপ্রকাশিত রচনা, চিঠিপত্র, ডায়েরি উদ্ধার করে বাংলা 888sport live footballের অমূল্য ভাণ্ডারকে ক্রমশ পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। শ্রমসাধ্য এবং অবিচল নিষ্ঠার এই গবেষণার সাম্প্রতিক সংযোজন মীর মশাররফ হোসেন : অপ্রকাশিত ডায়েরি।
ডায়েরি-মাত্রই গুরুত্বপূর্ণ। তা যদি হয় শতাধিক বর্ষের আগের কোনো রচনা, তবে তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। আর তা যদি হয় মীর মশাররফ হোসেনের মতো কালজয়ী 888sport live footballিকের ডায়েরি, তবে তা যে কতটা জরুরি বিষয়, তা প্রকাশের জন্য বিশেষণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাঙালি মুসলমানের মধ্যে অগ্রগণ্য লেখকই কেবল নন, উনিশ শতকে আবির্ভূত লেখকদের মধ্যে বহুমাত্রিক সব্যসাচী লেখক ছিলেন মীর মশাররফ হোসেন। এই মানুষটির রচনা পরিমাণে এবং গুণে সময়ের বিচারে যথেষ্ট এগিয়ে। তাঁর সময়ে 888sport app download apk-গল্প লেখা কিংবা চিন্তাশীল 888sport live প্রচার করার মানুষ হয়তো আরো অনেকেই ছিলেন, কিন্তু নিজের জীবনের দৈনন্দিন কথকতা ও সাধারণ ঘটনাকে তারিখ-সমেত লিখে রাখার মতো চিন্তা এবং তার বাস্তবায়নের সাহসী মানুষ খুব কমই। সাহসের কথা বলছি এই কারণে যে, দৈনন্দিন ঘটনায় জীবনের দুঃখ-বেদনার কাহিনি থাকে, মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ থাকে, সমাজগ্রাহ্য আচারের বাইরের বিষয় থাকে, তা হুবহু প্রকাশে বুকের পাটা লাগে। মীর মশাররফ হোসেনের বুকের প্রশস্ত পাটার পরিচয় পাওয়া যাবে এই ডায়েরিতে। সেটি তুলে এনে মশাররফের শুধু নয়, বাঙালি মুসলমানের আরেকটি পরিচয় সামনে আনলেন সম্পাদক। এমন একটি মহার্ঘ উদ্ধার করাটাই বড় কৃতিত্বের ব্যাপার। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবুল আহসান চৌধুরী-সম্পাদনার মুন্শিয়ানা। পুরো ডায়েরিটা উদ্ধারের কৃতিত্ব সম্পাদকের নয়, গৌরবের সঙ্গে তিনি তা ‘নিবেদনে’ জানিয়েছেন, ‘মশাররফের এইসব মূল্যবান
অপ্রকাশিত-অগ্রথিত রচনা ও ডায়েরির কিছু অংশ লোকচক্ষুর অন্তরাল থেকে উদ্ধারের কৃতিত্ব অধ্যাপক আলী আহমদ, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং কিছু পরিমাণে বর্তমান ডায়েরি-সংকলকের’। আজকাল অন্তরের কৃতজ্ঞতা তো দূরের কথা, এটুকু সৌজন্য-উক্তিও অনেক গবেষককে পরিহার করতে দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান সংকলক তাঁদের থেকে বরাবরই আলাদা। এই ধরনের দুরূহ কাজ যে একদিনে বা একার পক্ষে সম্ভবপর নয়, তা পাঠকমাত্রই বোঝেন। কিন্তু তার পেছনের মানুষদের নামও হয়তো কেউ জানেন না। সংকলক-সম্পাদকের উচিত কৃতজ্ঞচিত্তে তা স্বীকার করা। প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে আমরা আবুল আহসান চৌধুরীকে এই ঔদার্য প্রকাশ করতে দেখি। তাতে তাঁর হৃদয়ের বিশালতা যেমন প্রকাশিত হয়, তেমনি পাঠকের মনের বিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়।
সংকলক জানিয়েছেন, মশাররফের লেখা নানান বিষয়ের কয়েকটি খসড়া-খাতা থেকে এই ডায়েরির অংশ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোকে কালক্রমে সাজিয়ে এই ডায়েরির আকার নির্মাণ করা হয়েছে। সংকলকের ভাষায়, ‘বানানের অজস্র অপ্রত্যাশিত অশুদ্ধি অবিকল রাখা হয়েছে। দুষ্পাঠ্য বা ছিন্ন অংশ বর্জিত হয়েছে যার নির্দেশ মিলবে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে – আবার দুর্বোধ্য বা অস্পষ্ট অংশের শব্দ-শব্দাবলি বা বাক্যাংশের সম্ভাব্য পাঠও পাওয়া যাবে ওই তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যেই।’ অর্থাৎ মশাররফের নিজস্ব বানান-বাক্য যথাযথ রেখে তার অবস্থানকে তুলে ধরা হয়েছে। এতে মশাররফ-মানস বিচারও সহজতর হবে। সম্পাদক সেই কাজটিই করেছেন। এই গ্রন্থের একটি দীর্ঘ ভূমিকা রয়েছে। তাতে মশাররফের ব্যক্তিপরিচয়, 888sport live footballিক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এর ফলে মীর মশাররফের চিন্তাধারা বুঝতে সহজ হতে পারে। ডায়েরিতে বিধৃত মশাররফের জীবনের নানান অনুষঙ্গ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই অংশে।
এই ডায়েরির মূল্যায়ন করতে গিয়ে আবুল আহসান চৌধুরী যথাযথ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। ডায়েরি-পাঠের প্রতিক্রিয়া থেকে এর কিছু বৈশিষ্ট্য তিনি হাজির করেছেন।
মীর মশাররফের ডায়েরি আগাগোড়া নিছকই দিনযাপনের আটপৌরে সাধারণ বিবরণ নয়।
ডায়েরি লেখাকে তিনি প্রায় নিত্যকর্মের অন্তর্গত বিবেচনা করতেন।
মশাররফের ডায়েরির কোনো-কোনো অংশের সঙ্গে কুলসুমের ডায়েরি মিলিয়ে পড়লে বেশ বোঝা যায়, জীবনের শেষ পর্বে তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কে চিড় ধরেছিল।
প্রথম স্ত্রী আজীজন্ নেসার কথা হীনভাবে চিত্রিত হয়েছে মশাররফের আত্মজীবনী ও কুলসুমের 888sport sign up bonusচর্চায়। ডায়েরিতেও ওই একই সুরে গেয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি কুলসুমের সঙ্গে মশাররফের সম্পর্ক ছিল মেঘ ও রোদ্দুরের মতো – আকর্ষণ-বিকর্ষণ, অনুরাগ-বিরাগ,
আসক্তি-বিরক্তির টানাপড়েনে দুজনের জীবন অতিবাহিত হয়েছে।
মীরের ডায়েরিতে তাঁর নিজের অভাব-অনটনে যত কাহিল ও বিপর্যয় হয়েছেন, তত তাঁর সৃষ্টিকর্তার প্রতি আত্মসমর্পণের মনোভাব তীব্র হয়েছে।
অর্থকষ্ট মশাররফের জীবনকে কতখানি পর্যুদস্ত ও কাতর করেছিল তার অকপট বর্ণনা মেলে তাঁর ডায়েরিতে।
মশাররফের পরিবারে প্রায় বারোমাসই অসুখ-বিসুখ লেগে থাকত। নানা সমস্যা-সংকটের মধ্যেও 888sport live footballচর্চায় একেবারে ছেদ পড়েনি। এত বিপদ-আপদেও অন্তরের তাগিদে ডায়েরি লেখা ছাড়েননি। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে হতদরিদ্র দুস্থ মানুষের প্রতি মশাররফ নিজের অভাব-অনটন সত্ত্বেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘকাল ধরে অভাব-অনটন থাকলেও, জীবিকার কোনো উপায় করতে না পারলেও মশাররফের সন্তান-উৎপাদনের আগ্রহ কখনো হ্রাস পায়নি।
ডায়েরিতে খুবই ব্যক্তিগত ও গোপন কথাও লিখে গেছেন মশাররফ। বানান সম্পর্কে মশাররফ যথেষ্ট সতর্ক, সচেতন ও শিক্ষিত ছিলেন না। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে বাক্য-গঠনের ত্রম্নটির কথাও উল্লেখ না করে পারা যায় না। এরকম মন্তব্য থেকে গবেষকের পর্যবেক্ষণ-সূক্ষ্মতা অনুমান করা যায়। ডায়েরি থেকে মশাররফের অন্য এক জীবনগাথা আবিষ্কৃত হয়েছে। আবুল আহসান চৌধুরীর মতো যোগ্য মানুষের হাতে পড়েছে বলেই তা সম্ভবপর হয়েছে। কারণ তিনিই মীর মশাররফের প্রথম সফল জীবনীকার। মীর মশাররফ হোসেন : 888sport live footballকর্ম ও সমাজচিন্তা শিরোনামে গবেষণা করে তিনি মীরের জীবন এবং কর্মের অনেক নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন। মশাররফের মুসলমানের বাঙ্গালা শিক্ষা এবং সঙ্গীত লহরী গ্রন্থদুটি তিনি উদ্ধার করে প্রকাশ করেছেন। এই ডায়েরিও তাঁর সেই ধারাবাহিক মশাররফচর্চার ফসল।
888sport appsে যাঁরা মশাররফচর্চা করছেন, তাঁদের মধ্যে আবুল আহসান চৌধুরী ছাড়াও মুনীর চৌধুরী, কাজী আবদুল মান্নান, আবদুল লতিফ চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, আশ্রাফ সিদ্দিকী, শামসুজ্জামান খান, মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম, সিরাজউদ্দীন আহমেদ, শান্তনু কায়সার, সেলিম জাহাঙ্গীর, পৃথ্বীলা নাজনীন, খালেদ হোসাইন, সৌমিত্র শেখর, দেবযানী দে-র নাম উল্লেখযোগ্য। এঁদের মধ্যে অনেকেই পিএইচ. ডি করেছেন মশাররফের 888sport live football নিয়ে; কিন্তু অভিসন্দর্ভের বাইরে আর মশাররফচর্চায় নিবেদিত থাকেননি। একেবারেই উপাধিলাভের উপায় হিসেবে এই গবেষণা তাই নতুন মাত্রা যোগ করে না। কিন্তু এ-কথা এখন স্বীকৃত যে, আবুল আহসান চৌধুরীই মশাররফচর্চায় সবচেয়ে বেশি শ্রম ও সময় দিয়েছেন। পিএইচডি গবেষণার আগেই তিনি মশাররফচর্চায় নিবেদিত। সেই নিবেদন এখনো অমস্নান। তাই তাঁর হাতেই বেশি সোনা ফলেছে। মশাররফ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন তিনি, গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার কৃতিত্বও তাঁর। মশাররফ-সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দুষ্প্রাপ্য দলিল উদ্ধারের
কৃতিত্বও তাঁর। তাই তাঁর হাতে এই ডায়েরি সংকলনের দায়িত্ব পালন মশাররফ-অনুরাগী পাঠক-গবেষকদের জন্য সুসংবাদ বইকি!
আমরা জানতে পারি, মশাররফ প্রতিদিন ডায়েরি লেখার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘অদ্য একটী বিষয় স্থির সিদ্ধান্ত করিয়া প্রতিজ্ঞা আবদ্ধ হইতেছি। অদ্য হইতে দৈনিক বিবরণ নিয়মমত লিখিব। সঙ্গে জীবনবৃত্তান্ত লিখিব। যেদিন সুবিধা হয় – সেইদিন জীবনবৃত্তান্ত লিখিব। কিন্তু দৈনিক বিবরণ অদ্য হইতে প্রতিদিন না লিখিয়া নিদ্রা যাইব না। মানুষে স্থির প্রতিজ্ঞা করিয়া কার্য্য করিতে পারিবে না একি কথা- কিছুই বুঝি না। কেবল আলস্যহেতুই দৈনিক বিবরণ লেখা হয় না।’ (কার্তিক, ১২৯৮)। তবে আমরা দেখতে পাই যে, এই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা সম্ভবপর হয়নি। যেটুকু আমরা পেয়েছি তা-ই আজ ঐতিহাসিক গুরুত্ব পাচ্ছে।
ক্ষয়িষ্ণু জমিদার-পরিবারের সন্তান, বাঙালি মুসলমান সমাজের একজন শ্রেষ্ঠ 888sport live footballিক কত যে দুঃখকষ্টে জীবন কাটিয়েছেন তার বিবরণ রয়েছে এই ডায়েরিতে – ‘নিজের ভরণপোষণ জীবিকা নিবর্বাহে নানা বিঘ্ন। আমার অনটন – সচ্ছলতা আদৌ নাই। ভয়ানক কষ্ট। তত্রাচ ঈশ্বর ভিন্ন উপায় নাই। সেই পদই আশ্রয়। তাহার পর সন্তানের নানারূপ পীড়া – কুকী আজ মাসাবধি পীড়িতা – জ্বররোগে – মন ভগ্ন – অর্থেও অনটন – কিরূপে সংসার চলিবে – যে চাকুরী – তাহার বেতন পাইবার আসা নাই। তাহার পর ২০ই তারিখে সত্যবানের দুই পা গরম জলে পুড়িল – অদ্য রণজীতের পা বোতলের উপর পড়িয়া ভয়ানক কাটিয়ো গেল – নিত্য ২ নূতন বিপদ উপস্থিৎ হইতেছে – আরও যে কি হইবে ঈশ্বর জানেন। চারদিকে গোলযোগ। অর্থের অনটন – তাহার পর গোলযোগ।’ (২০ আশ্বিন, ১২৯৯)। এই যে অনটনের বিবরণ, তা দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরকম আরো বিবরণ পাওয়া যায় ডায়েরির বিভিন্ন অংশে।
সংকলক জানিয়েছেন যে, এতবড় 888sport live footballিকের ডায়েরিতে 888sport live footballের কোনো খবর নাই। আমরাও তাই প্রত্যক্ষ করি। তবে তাঁর বই লেখা, ছাপা এবং বিক্রির হিসাব আছে। তাকে 888sport live footballের খবর হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। বই বিক্রির অর্থে সংসারের খরচ চালোনোর দুঃসহ বিবরণ দেখে আমরা বেদনায় দীর্ণ হই। মশাররফ লিখছেন, ‘অদ্য হাতে একটা পয়সা নাই। মাত্র দুআটী আদল্ পয়সা। আর একটী পয়সা খুঁজিয়া পাইলাম না। অন্য কোন স্থান হইতে টাকা পয়সা আসল না – একখানি পুস্তক বিক্রী হইল না। কোনো স্থান হইতে মনিঅর্ডারের টাকা আসিতেছে না অদ্য ৫/৬ দিন। ঈশ্বর কি করিবেন বুঝিতে পারি না। কতই কষ্ট দেখিতেছি। এদিকে লোন আপিসের সুদ ৪ (চার) টাকা – ১০ ই আষাঢ় দিতে হইবে। […] বড়ই লজ্জীত হইতে হইতেছে। মুখ দেখাইতে পারিতেছি না। ঈশ্বর সহায়। ছোট ২ ছেলেরা আম কাঁটাল জন্য ভারি কান্দাকাটি করিতেছে – হায় ঈশ্বর – গত বঃসর কত আম কাঁটাল করিদ হইয়াছে। আজ এই দসা।’ (৫ আষাঢ়, ১৩০০, রবিবার, ১৮ জুন) আরেকদিন লিখেছেন, ‘আমার অবস্থা – সাংসারিক অবস্থা দিনদিন মন্দ হইতেছে – পেট চালাইবার উপায় আর নাই। বিসাদসিধু পুস্তক থাকিলে আহারের জন্য ভাবিতাম না। পুস্তক তিন মাস সেষ হাইয়া জাওয়ায় – অর্থাৎ সাবেক ছাপান পুস্তক সমুদায় বিক্রয় হইয়া জাওয়ার পর বড়ই কষ্ট হইয়াছে। অলঙ্কারআদী যাহা ছিল সমুদায় গিয়াছে – আজ ছয়টী বৎসর বিনা উপার্জ্জনে ঘরের টাকা ভাঙ্গিয়া খাইতেছি – খাওয়া ভিন্ন আর কোন কার্য্য নাই। টাকা অভাবে পুস্তক ছাপাইতে পারীতেছি না। আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব দ্বারা অনেক চেষ্টা করিলাম – কেহই সাহাজ্য করিলেন না। আপন ভ্রাতা – তিনিও সময়ে মুখ ফিরাইয়াছেন – পরের কি কথা – বহু কষ্টে করিতেছি। … ছোট ২ ছেলেমেয়ে তাহারা যখন খাইবার জন্য কান্দিতে ২ মুখ কালী করিয়া ফেলে, নিতান্তই কষ্ট বোধ হয়। আজ আর কিছুই হইল না। একটী টাকা ছিল – তাহাই বন্দক রাখিয়া চাউল ১& টাকার আনা হইয়াছিল। আর বাজারসওদার পয়সা একটীয় নাই।… (কার্তিক, ১৩০৪)। এই যে অর্থনৈতিক দৈন্যের খবর আমরা পাচ্ছি, তার ভেতর দিয়ে 888sport live footballচর্চা চালিয়ে যাওয়া কতটা যে দুরূহ ব্যাপার, তা ভেবে আমরা বিস্মিত হই।’
একদিনের দিনপঞ্জি বেশ চমৎকার। আলমারির মধ্যে থাকা পুস্তকের একটি তালিকা তিনি দিয়েছেন। তাতে স্বরচিত পুস্তক ছাড়াও কোরআন শরিফ, সুরা ইউসুফ, রামায়ণ, মহাভারত, যিশুচরিত, শাহনামা, ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়, এসলামতত্ত্ব, অন্নদামঙ্গল, তত্ত্বকোষ, জ্যোতিষ রত্নাকর, ব্রহ্মসংগীত, মোহমুদ্গর, কাঙ্গালের ব্রহ্মা-বেদ, হজরত মুহম্মদের জীবনকথা, মেঘনাদবধকাব্য, বঙ্গভাষার ইতিহাস, মুর্শিদাবাদ কাহিনি, ঈশ্বরচন্দ্রের গ্রন্থাবলী, গিরিশ গ্রন্থাবলী, দাশরথী রায়ের গ্রন্থাবলী, হরিনাথের গ্রন্থাবলী, রেয়াউসসালাতিন, বাঙ্গালিচরিত, হুতোম পেঁচার নকশা প্রভৃতি ১৬২ শিরোনামের পুস্তকের নাম পাওয়া যায়। (১৮ ফাল্গুন, ১৩০৪ মঙ্গলবার)। এ থেকে মশাররফের পাঠের আগ্রহের দিক শনাক্ত করা যায়।
মশাররফের সন্তানদের আসল নাম এবং ডাকনাম জেনেও বিস্মিত হতে হয়। তাঁর সন্তানদের মধ্যে বড় কন্যা রওসন আরার ডাকনাম ‘সতী’। এছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছে সত্যবান, কুকী, সুনীতি, সুমতী, রণজিৎ, সুধন্যা, ধর্মরাজ, রাহিলা ও যুবরাজ। একবিংশ শতাব্দীতে বসেও কি ‘অতিপ্রগতিশীল’ ব্যক্তিও এরকম বাংলা নামে সন্তানের নাম রাখতে খুব বেশি সাহসী হয়! কিন্তু দুই শতক আগে জন্ম নিয়েও মশাররফ সেটি পেরেছেন। তাঁর এই সাহস এসেছে মাতৃভাষাপ্রীতি থেকে। আর ধার্মিক হলেও ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন বলেই এই ধরনের নামকে তিনি ‘হিন্দুনাম’ মনে না করে ‘বাংলানাম’ মনে করতে পেরেছিলেন। সময়ের চেয়ে তিনি যে কতখানি অগ্রণী ছিলেন, তিনি যে কতখানি বাঙালি ছিলেন, এই নামকরণই তার প্রমাণ বহন করে।
ডায়েরিতে কী কী থাকবে আর কী কী থাকবে না, তার তো কোনো ব্যাকরণ নেই। ডায়েরি-লেখকের মনের কথাই সেখানে প্রকাশিত হয়। ইচ্ছামতো লেখার স্বাধীনতা সেখানে থাকে। পাঠক কিংবা সমালোচকের মুখাপেক্ষী হওয়ার দরকার নেই ভেবে তিনি যা খুশি লিখতে পারেন। যেহেতু মীর মশাররফ আমাদের অগ্রগণ্য লেখক, তাই তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি। তাঁর ডায়েরির প্রতি আমাদের আকর্ষণ সেই কারণেই। তিনি কী কী দৈনন্দিন কাজ করবেন, ঈশ্বরের নাম নিয়ে তা প্রতিজ্ঞা করতেন। বিষাদসিন্ধু সম্পর্কে কী করবেন তা লিখেছেন –
‘দুই সেট পুস্তক ভাল করিয়া বাঁধাই করিয়া রাখিতে হইবে – সময়ে বড়লাট ছোটলাটকে উপহার দিতে হইবে –
বিষাদসিন্ধু আর ২০০ সত পুস্তক বিক্রী হইলেই কালীনারায়ণবাবুর সহিৎ হিসাব করিতে হইবে -’
তিনি যে কতটা পরিকল্পনা করে কাজ করতেন এই নোট তারই নজির। বাড়ির বিষয় নিয়েও তাঁর এমন কার্যতালিকার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। –
‘নড়াইলের খাজানা বাঁকী আছে তাহা পরিসোধ করিবার উপায় বাহির করিতে হইবে।
তারিণী রায়ের সম্বন্ধে খাজানার জন্য বন্দবস্ত করিতে হইবে।
এমামপুরের প্রজা আইনদ্দীন নামে বাঁকী খাজানার নালিস করিতে হইবে। নোটিস হইবে। স্রীনাথের পক্ষে হরিপদ সইস – ইহাদের নামে নালিস করিতে হইবে।…’
মশাররফের এই ডায়েরি তো স্থানীয় ইতিহাসের উপকরণ হিসেবে গুরুত্ব পেতে পারে। তিনি এমন কিছু একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এই ডায়েরিতে লিখেছেন, যা তথাকথিত ‘ভদ্রলোকেরা’ এড়িয়ে যান। মানুষ জেনে গেলেও তা স্বীকার করেন না। সংকলকের ভাষায় –
পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন লাহিনীপাড়ার বাড়িতেই এক রক্ষিতাকে এনে তুলেছিলেন। 888sport promo codeর প্রতি মশাররফেরও মোহ জন্মেছিল লায়েক হওয়ার আগেই – জ্ঞাতিভ্রাতা পদমদীর নবাব মীর মোহাম্মদ আলীর সঙ্গ-সান্নিধ্যে এসে। গণিকাসঙ্গলাভে তাঁর আগ্রহ কখনো নিঃশেষিত হয়নি – তা মহানগরী কলকাতাতেই হোক কিংবা কাছের কোনো মফস্বল-শহর কুষ্টিয়াতেই হোক। এর ওপরে ‘দাসী-বান্দী’ তো ছিলই। এ-নিয়ে স্ত্রী কুলসুমের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। অবশ্য কোনো কোনো সময় কুলসুম অকারণেও সন্দেহ করতেন। ডায়েরিতে খুবই ব্যক্তিগত ও গোপন কথাও লিখে গেছেন মশাররফ। যেমন – তাঁর বিরুদ্ধে পরিচারিকার স্তনমর্দনের অভিযোগ, কুলসুমের ঋতুস্রাব, দিনের বেলায় আকস্মিক বীর্যস্খলন। এক জায়গায় অশিষ্ট ‘মাগী’ শব্দ উচ্চারণ করেছেন বেতমিজ গৃহপরিচারিকা সম্পর্কে। এই অকপট বর্ণনা ও স্বীকারোক্তি মশাররফের সত্যকথনের সাহসের পরিচয় দেয়। (পৃ ২২)।
ডায়েরি কেবল ব্যক্তির মনোজগতের খবর দেয় না, স্বকাল-স্বসমাজের বিশ্বস্ত দলিল বটে! মশাররফের ডায়েরি তাই আমাদের কাছে কেবল ব্যক্তি মশাররফ সম্পর্কে জানান দেয় না, তাঁর সময়টাকে চিনতে সাহায্য করে। বাংলা888sport live footballের ইতিহাসের নতুন সংযোজন হিসেবে এই গ্রন্থ মূল্য পাবে। আর এভাবেই আবুল আহসান চৌধুরী বৃহৎ বাংলা 888sport live footballের সেবা করে যাচ্ছেন। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার চেয়ে এই ধরনের তথ্যদলিল সংগ্রহ করাও যে গবেষকের একটি বড় কৃতিত্ব, তিনি তা প্রমাণ করলেন। এর আগেও তিনি অনেক দুষ্প্রাপ্য দলিল উদ্ধার করেছেন। 888sport live chatী কে. মল্লিকের আত্মকথা, শচীন দেববর্মনের আত্মকথা, আবদুল ওদুদের পত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপ্রকাশিত পত্র, তিরিশের কবিদের অপ্রকাশিত পত্র, কাঙাল হরিনাথের ডায়েরি, আবদুল করিম 888sport live footballবিশারদের দুষ্প্রাপ্য 888sport live – এরকম অজস্র উপকরণ আবিষ্কার করে তিনি বাংলা 888sport live footballের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন কোনো রূপ প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ছাড়াই। তাঁর ব্যক্তিউদ্যোগে পরিচালিত এই ধরনের গবেষনার মাধ্যমে আবুল আহসান চৌধুরী নিজেই আজ এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন।
গ্রন্থের পরিশিষ্ট অংশ খুবই মূল্যবান, প্রথমেই রয়েছে ডায়েরিতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের পরিচয়। আজীজন্ নেসা, আবদুল করিম গজনবী, আবদুল হামিদ খান ইউসুফজয়ী, আবদুল হালিম গজনবী, ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, করিমন্ নেসা খানম, কৃষ্ণকুমার মিত্র, দেবনাথ বিশ্বাস, নওশের আলী খান ইউসুফজয়ী, নজমন্ নেসা, বিবি কুলসুম, মীর মহতোসাম হোসেন, মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, মীর মোয়াজ্জেম আলী, মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ, রাইচরণ দাস, রাহাতন্ নেসা, রেয়াজাঅল-দীন আহমদ মাশহাদী, সৈয়দ অলিওল্লা, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ও সৈয়দ শামসোল হোদা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে এখানে। সংকলক যে কেবল প্রাপ্ত ডায়েরি ছেপে দেননি, তা নিয়ে আরো ভাবনাচিন্তা করেছেন, এখানে তাঁর গবেষকসত্তার পরিচয়। শেষের দুই ফর্মা জুড়ে রয়েছে ডায়েরি প্রতিলিপি। মশাররফের হস্তাক্ষরের প্রতিলিপি পাঠ ও দর্শন পাঠকের মনে নতুন এক শিহরণ জাগায়। এই গ্রন্থ পাঠের পাশাপাশি তাই সংগ্রহের গুরুত্বকে ধারণ করে আছে। ভালো কাগজ, সুন্দর ছাপা আর শক্ত বাঁধাইয়ের কারণে দাম একটু বেশি মনে হলেও এই ধরনের দলিল সংগ্রহের আনন্দের কাছে এই দাম পুষিয়ে যায়।
888sport app download apkয় আত্মকথন
হাসান ফেরদৌস
অনিবার্য পিপাসার কাছে
তমিজ উদ্দীন লোদী
অ্যাডর্ন পাবলিকেশন
888sport app, ২০১৬
১৪০ টাকা
ভালো কোনো 888sport app download apkয় তিনি কী আশা করেন, সে-কথার জবাবে বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন, 888sport app download apkয় থাকতে হবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা, সান্দ্রতা, সেই আর্দ্র ও ঈষৎ অন্ধকার বাতাস, যা প্রাণের জীবাণুর পক্ষে অনুকূল। এখানে সান্দ্রতা কথাটা আমার কাছে আগ্রহোদ্দীপক মনে হয়েছে। সান্দ্রতা আক্ষরিক অর্থে নিবিড়, তরল অথচ ঘন এমন কিছু। 888sport app download apkয় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা অর্জিত হয় চিত্রকল্পে – যে-চিত্রকল্প 888sport sign up bonusকে উসকে দেয়, দেহ ও মনকে নিকটতর করে। কিন্তু সান্দ্রতার কাজ ভিন্ন, 888sport app download apkকে সে ঐন্দ্রজালিক বিস্ময়ের প্রতিবিম্ব হিসেবে স্থাপন করে। এই ঐন্দ্রজালিকতার কথা মনে করেই কার্ল স্যান্ডবার্গ 888sport app download apkকে এক প্রতিধ্বনির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যে-প্রতিধ্বনি ছায়াকে নৃত্যে আহবান করে।
তমিজ উদ্দীন লোদীর কাব্যগ্রন্থ অনিবার্য পিপাসার কাছে পড়তে গিয়ে আমি এই সান্দ্রতার খোঁজ করেছি। লোদী আশির দশক থেকে 888sport app download apk লিখছেন, গত এক দশক আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, যদিও তাঁর আসল বশ্যতা ফেলে আসা স্বদেশের প্রতি। ‘888sport app download apk হারিয়ে যায়, শুধু থাকে বিস্ময়’, এই রকম একটি সান্দ্র বাক্যে তিনি আমাদের ধরিয়ে দেন, 888sport app download apkর আসল কাজ মানবমনে বিস্ময়বোধকে জাগিয়ে রাখা। এই বিস্ময়বোধই আসলে 888sport app download apk, কারণ যা শ্রম্নতিগ্রাহ্য ও দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়, এমন প্রিয় 888sport sign up bonusকে ধরে রাখে সে। 888sport app download apk – তা এপিক অথবা লিরিকধর্মী, যাই হোক, তার কেন্দ্রে থাকে কাছের ও দূরের 888sport sign up bonus। এই দুয়ের তফাৎ এই যে, এপিক 888sport app download apkয় ফুটে ওঠে কোনো দেশ বা গোত্রের সম্মিলিত 888sport sign up bonus; কিন্তু লিরিক 888sport app download apkর 888sport sign up bonus ব্যক্তিনির্ভর। কবি নিজেকে আধার হিসেবে ব্যবহার করে একটি ব্যক্তিগত মানচিত্র নির্মাণ করেন, যা মুখ্যত তাঁর যাপিত জীবনের প্রতীকী বিবরণ। পাঠককে তিনি সে-মানচিত্রে নজর দিতে আমন্ত্রণ জানান সম্ভবত এই বোধ থেকে যে, যতই নির্জন ও নিভৃত হোক এই 888sport sign up bonusমন্থন, কবি আশা করেন, কেউ না কেউ তাতে নিজের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন দেখতে সমর্থ হবে। যত নিবিড় এই অভিজ্ঞতার প্রকাশ, তত সে সান্দ্র। ইন্দ্রজালের বিস্ময় মোড়ক সত্ত্বেও পাঠক তাতে নিজের অভিজ্ঞতার প্রতিধ্বনি পান, দেখেন নৃত্যরত সে-প্রতিধ্বনির ছায়াকে।
মোট চৌষট্টি পাতার এই গ্রন্থটিতে রয়েছে ৫৫টি 888sport app download apk। 888sport sign up bonusতাড়ানিয়া এই 888sport app download apkসমূহ মূলত তিনটি বিষয় ঘিরে আবর্তিত হয় : স্বপ্ন, বেদনা ও আক্ষেপ। এক অর্থে তারা একই বিষয়ের তিনটি দিক – সকল স্বপ্ন নির্মাণের পেছনেই তো রয়েছে বেদনা ও আক্ষেপ। কিন্তু মানবিক অভিজ্ঞতার স্বরসংগতি খোঁজা অর্থহীন। ফলে এই তিনটি বিষয় ভিন্ন-ভিন্নভাবে উদ্ধারে আমাদের আশ্রয় করতে হয় প্রতীকময়তার বিনির্মাণে, যার ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয় লেখকের – এবং পাঠক হিসেবে আমাদের – অন্তর্গত মানবিকতা।
প্রথম 888sport app download apk, ‘মানুষের মুখে’র কথাই ধরা যাক। 888sport app download apkটির উদ্বোধন এভাবে :
আমাকে মানুষের মুখ আঁকতে বলা হয়েছিল।
কিন্তু আমি আঁকতে গিয়ে টের পাই পৃৃথিবীর অন্যতম কঠিন একটি কাজে
আমার অজান্তেত্মই আমি হাত দিয়ে ফেলেছি।
কারণ, ‘মুখ আঁকতে গিয়ে দেখি মুখের আড়ালে আরো আরো মুখ আছে’, এই অভিজ্ঞতা থেকে কবির উপসংহার, ‘মানুষের মুখ আঁকতে গিয়ে অবশেষে/ আমি প্রতিবিম্ব^ ছাড়া আর কিছুই আঁকতে পারিনি।’
একই সঙ্গে বেদনা ও আক্ষেপের উচ্চারণ, কিন্তু তার পেছনে কাজ করে মানবিক মূল্যবোধের প্রতি আস্থা, তাকে উদ্ধারের অপেক্ষা। অন্যথায় কবি মানুষের মুখ আঁকার এ-দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবেন কেন? অনাবৃত বেদনার প্রকাশ সত্ত্বেও তাঁর এ-অপেক্ষা, তাকে আমরা স্বপ্ন বলে চিহ্নিত করতে পারি। আর স্বপ্ন, সে তো সর্বদাই ইতিবাচক। এই উদ্বোধনী 888sport app download apk থেকেই আমরা তমিজ উদ্দীন লোদীর 888sport app download apkর ইতিবাচক ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হই।
কাব্যগ্রন্থের 888sport app download apkসমূহে আমরা তিনটি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পরিচিত হই : কবির ব্যক্তিগত কণ্ঠস্বর, 888sport live chatের আড়াল নির্মাণে কুশলতা ও কাব্যকণ্ঠের লাবণ্য। বিষয়টি ভেঙে দেখা যাক।
‘এলোমেলো’ ও মৃত্যু এক হলুদ-লালচে পাতা’ এই নামের দুটি 888sport app download apkয় লোদী মৃত্যু-বিষয়ে ভিন্ন-ভিন্ন অথচ অন্তর্গতভাবে অভিন্ন – দুটি soliloquy নির্মাণ করেছেন। প্রথম 888sport app download apkয় ঋতু পরিবর্তনের প্রতীকে মৃত্যুকে অবলোকন করেন তিনি; দ্বিতীয় 888sport app download apkয় দিন ও রাত্রির প্রহরাগমনে খুঁজে পান মৃত্যুর অমোঘ পদধ্বনি। ‘কাঁদে এক নদী’ 888sport app download apkয় দেশত্যাগের সিদ্ধান্তে কবির মনে অজানা-অচেনা এক বাউল জেগে ওঠে। কিন্তু সেই দেশত্যাগ যখন বাস্তব হয়ে ওঠে ‘নিউইয়র্কে গ্রীষ্মকাল’ 888sport app download apkয়, কবি তখন কঠোর অথচ কোমল প্রকৃতির ভেতর নতুনকে আবিষ্কার করেন; বিশুষ্ক শাখা থেকে খুঁজে পান নতুন কুঁড়ি। অন্য কথায় একদিকে আক্ষেপ, অন্যদিকে অপেক্ষা। ‘রয়েছি সুদূর পথে’ 888sport app download apkয় এই প্রতীক্ষা পরিণত হয় সাগ্রহ আলিঙ্গনে, কারণ ‘জমে যাওয়া শরীরের ত্বকে’ও তিনি পান ‘শীতল হাত-জলকণার
আনন্দ-আলোক।’
আশ্চর্য সব দৃশ্যচিত্র নির্মাণের ক্ষমতা রয়েছে লোদীর। পরিযায়ী পাখির ডানায় তিনি দেখেন ‘রোদের গন্ধ’, তার চঞ্চুতে পান ‘প্রকৃতির মত অনুপ্রাস’। অবিরল তুষারপাতের পর তিনি দেখতে পান ‘দুগ্ধ সরোবরে’ লাফানো ‘জ্যোৎস্নার চিতা’। বেদনার ভাষ্য নির্মাণ করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন ‘কফের মত বসে থাকা কান্না’।
লোদীর 888sport app download apkর অন্য আরেকটি বৈশিষ্ট্য তাঁর রাজনৈতিক স্টেটমেন্ট। অতি নিমণকণ্ঠে, যেন নিজেকে বলছেন, এমন স্বগত উচ্চারণে তিনি প্রবল কশাঘাতসম্পন্ন সাক্ষ্যভাষ্য দিয়ে যান তাঁর চারধারে ঘটে যাওয়া নষ্ট জীবনের। ‘অস্থির মানুষেরা গিলে ফেলতে চাচ্ছে সব’, এমন সিদ্ধান্তে আসতে তাঁর কোনো দ্বিধা হয় না, কারণ তিনি দেখেছেন ‘হাড়বজ্জাত মানুষেরা চিনে গেছে মই’। তিনি অপরিচিত নন পরিবর্তন ও বিপস্নবের সম্ভাবনার সঙ্গে, কিন্তু ‘স্পন্দমান অপচয়গুলো ভেসে যায় ছেঁড়া খড়ের মত’, এও তো তাঁর অভিজ্ঞতার অন্তর্গত। যারা স্বপ্ন দেখাতে উৎসাহ দিয়েছিল, এখনো তারাই ‘সত্য বলা মহাপাপ’, এই ব্রতে মুখে কুলুপ সেঁটে আছে।
কিন্তু অমানিশাই শেষ কথা নয়। মানুষের ইতিবাচক ভবিষ্যতে, তার বিজয়ে ও প্রেমে এক গভীর ও সংশয়হীন আস্থা থেকে কখনোই বিচ্যুত হন না কবি। তিনি জানেন, ‘মানুষ চাইলেই খুব উচ্চতায় যেতে পারে/ অথচ সজ্ঞানে সে খাটো হয়ে থাকে।’ ‘অনন্তের মাঝখানে যারা দ্বিধাহীন দাঁড়াতেই পারে’, কবি তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘ছায়াচ্ছন্ন আধারেও’ তোমরা তৈরি করে নিতে পারো ‘প্রকৃতির দৃশ্যপট’। তিনি এই বিশ্বাসে অবিচল থাকেন যে, ‘মানুষেরা যায় তবু মানুষ ফুরায় না’। সেজন্য একমাত্র মানুষই পারবে ‘কাঁটাতার ছিঁড়ে খুঁড়ে’ জ্যোৎস্নার ভেতরে চাঁদ নিয়ে আসতে।
কাব্যভাষায় সান্দ্রতা – তার নিবিড়, তরল অথচ ঘন অনুভূতি – তমিজ উদ্দীন লোদী কতটা অর্জন করতে পেরেছেন, তা বিচারের নিক্তি আমার কাছে নেই, তবে এটুকু বলব ‘অনিবার্য
পিপাসার কাছে’ পাঠের পর 888sport app download apkর সম্ভাবনা নিয়ে আমার আস্থা আরো দৃঢ় হয়েছে।
ইতিহাসের রঙ্গলোকে
মুহিত হাসান
যে কোনো যুগের কিংবা ভূখ–র ইতিহাসের প্রচলিত ধারাবাহিক লিখিত বিবরণের বাইরেও অনেক বিখ- উপাদানকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘ইতিহাসের চূর্ণ’), যা সাধারণত আমাদের নজরে পড়ে না। বড়-বড় ঘটনার নিচে চাপা পড়া এসব খ–ত ও পার্শ্বকাহিনি ইতিহাসের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চায় কমই ধরা পড়ে বেশিরভাগ সময়। কিন্তু এরকম অনেক ঘটনা বা কাহিনি থেকে অতীতের সমাজ ও সংস্কৃতির এক ভিন্নরকম চালচিত্র উদ্ধার করা সম্ভবও বইকি। সেরকম এক প্রচেষ্টারই অনুপম নিদর্শন মাহবুব আলমের 888sport liveগ্রন্থ দেখা না-দেখায় মেশা : ইতিহাসের বিচিত্র কাহিনি। লেখক বইটির মুখবন্ধে জানিয়েছেন, প্রচলিত ইতিহাসের মূলধারা বাইরে থাকা টুকরো মণি-মাণিক্যের সন্ধানই এখানে লভ্য। এসব ঘটনা সময়ের ভাঙাগড়ার কুটিল গতির কারণে সেভাবে দৃশ্যমান না হলেও তা নীরবেই ইতিহাসের গতিবিধিতে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস-সংশিস্নষ্ট সেরকম কিছু ঘটনারই আদ্যোপান্ত তিনি এখানে সরস ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছেন।
এবার বইটিতে অন্তর্ভুক্ত বারোটি 888sport liveের দিকে নজর দেওয়া যাক। প্রথম 888sport live ‘শায়েস্তা খান ও বিদেশি জহুরি’ বাংলার একসময়ের মোগল সুবেদার শায়েস্তা খানের জীবনের এক কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনার দিকে আলোকপাত করেছে। ব্যক্তিজীবনে মিতব্যয়ী হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন তিনি, আবার মাত্র একটি শখের জন্যে প্রচুর অর্থব্যয়েও কার্পণ্য করতেন না। এই শখের সূত্র ধরেই ফরাসি পর্যটক ও রত্নব্যবসায়ী তাভারনিয়ারের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। যখন তিনি গুজরাটের সুবেদার ছিলেন, তখনই তাভারনিয়ারের কাছ থেকে তিনি রত্নপাথর কেনা শুরু করেন। পরস্পরের মধ্যকার এ-যোগাযোগ এক যুগেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল। অন্যসব কর্মের মতো রত্নক্রয়ের ব্যাপারেও শায়েস্তা খানের আচরণ ছিল সমঝদারসুলভ, যাচাই-বাছাই করেই তিনি রত্ন কিনতেন – ‘[শায়েস্তা খান] কেনাকাটার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক এবং আর্থিক লেনদেনের ঘোরপ্যাঁচ ভালোই বুঝতেন’ বলে নিজের 888sport slot gameকাহিনিতে মন্তব্য করে গেছেন তাভারনিয়ার। তবে অতিথি জহুরির খেদমতের বেলায় সুবেদার উদাসীন ছিলেন না মোটেও। প্রতিদিন নিজের রসুইখানা থেকে চার থালা পোলাও ও মাংসের উৎকৃষ্ট পদ তিনি তাভারনিয়ারের রসনাতৃপ্তির জন্য পাঠাতেন।
মোগল ইতিহাসের আরেকটি চমৎকার খণ্ডচিত্র লভ্য ‘গুরু-শিষ্য সম্বাদ’ শীর্ষক রচনাটিতে। শিরোনামে উল্লিখিত শিষ্য হলেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব, আর গুরু তাঁর কৈশোরের শিক্ষক মোল্লা সালিহ। দিল্লির সম্রাট হওয়ার পর গুরুর প্রতি শিষ্য এক উত্তপ্ত অথচ যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য ছুড়ে দিয়েছিলেন, তারই সারাংশ এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। দিল্লির সিংহাসনকে ঘিরে গৃহযুদ্ধ যখন সমাপ্ত, তখন মোল্লা সালিহ জানতে পারলেন, তাঁর প্রাক্তন শিষ্য আওরঙ্গজেবই হয়েছেন দিল্লির বাদশাহ। মোল্লাজি অতঃপর দিল্লির পথে যাত্রা শুরু করেন এই আশায় যে, ছাত্রের কাছ থেকে শাহি দরবারে তিনি উপযুক্ত সম্মাননাই লাভ করবেন। দিল্লিতে আসার প্রায় তিন মাস পর তিনি একান্তে বাদশার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেলেন। গুরু-শিষ্যের আলাপ শুরু হলো। কিন্তু আওরঙ্গজেব হয়ে উঠলেন সমালোচনামুখর। তাঁর শৈশবের শিক্ষক তাঁকে ইতিহাস-শিক্ষা দিতে গিয়ে কী কী ভুল তথ্য দিয়েছিলেন ও বিভ্রান্তিকর দীক্ষা দিয়েছিলেন সেসবের বিস্তারিত ফিরিস্তি তিনি দিলেন। এভাবে তাঁর গুরুর শিক্ষাদানের পদ্ধতির ত্রম্নটিগুলো একের পর এক চিহ্নিত করে চললেন মোগল সম্রাট। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনে মোল্লা সালিহ কোনো বক্তব্য রাখেননি বলে জানা যায় ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়েরের বই থেকে।
সেকালে বাঙালির ফারসি ও ইংরেজি ভাষা শেখা এবং ইংরেজ সাহেবদের বাংলা শেখা নিয়ে তথ্যপূর্ণ তিনটি 888sport live বইটির বড় সম্পদরূপে বিবেচিত হবে বলে মনে করি। ‘সেকালের বাঙালি পড়ুয়ার ফারসি শেখা’তে সুলতানি আমল থেকে উনিশ শতকের শেষার্ধ অবধি বাঙালিদের মধ্যে ফারসি শেখার যে চল ছিল, তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা রয়েছে। নিছক রাজভাষা বা অফিস-আদালতের ভাষা বলেই ওই কালখ– ফারসি শেখার প্রবণতার পালে হাওয়া লেগেছিল – এমনটা লেখক মনে করেন না। তাঁর মতে, ফারসি ভাষার কাব্য888sport live footballও সে-সময় রুচিশীল বাঙালিদের আকৃষ্ট করেছিল। এ-অঞ্চলে ইউরোপীয় 888sport live footballের জোয়ার আসার আগে তা-ই শিক্ষিতজনদের মনকে সমৃদ্ধ ও আপস্নুত করেছিল। উদাহরণস্বরূপ তিনি রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফারসি-প্রীতির দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। ‘সেকালের বাঙালির বাবু-ইংলিশ’ 888sport liveটি ইংরেজ-অধিকৃত তৎকালীন বঙ্গদেশে স্বার্থ-উদ্ধারহেতু বাঙালির ইংরেজি শেখার তৎপরতার যুগপৎ কৌতূহলোদ্দীপক ও কৌতুকপূর্ণ বর্ণনায় সমৃদ্ধ। বাঙালি ইংরেজি শিখেছিল জীবিকার প্রয়োজনে, নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে ও ভারতের অন্যসব প্রদেশের অধিবাসীদের ঢের আগেই। ইংরেজ কোম্পানি বাহাদুর তাদের খরচে ইংরেজি শেখায়নি, তাদের নিজস্ব গরজও আদৌ এতে ছিল না। হেয়ার সাহেবের মতো দরদি শিক্ষক কেউ-কেউ ছিলেন বটে, অবশ্য তা ব্যতিক্রমই কেবল। আর ইংরেজি শিখতে গিয়ে বাঙালি হাস্যরসাত্মক মুহূর্তও কম তৈরি করেনি। সেকালের বাঙালি কেরানিদের ভুলভাল ইংরেজি বলার ও লেখার বহু অট্টহাস্যকর উদাহরণ লেখক উপস্থাপন করেছেন। ভিনভাষায় ব্যুৎপত্তিলাভ দোষের নয়, কিন্তু স্রেফ আনুগত্য ও ভালো চাকরি লাভের আশায় ইংরেজি শিখতে গিয়ে নিপুণ ভাষাবিশারদ কেউ হননি, বরং তৈরি হয়েছিল ‘বাবু-ইংলিশ নামের’ এক জগাখিচুড়ি বুলি। তা বাঙালির ভাষাবোধে কোনো পালক যোগ করেনি, উলটো সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ প্রশাসনের চাকাই সচল রেখেছে। অপরদিকে শাসনকার্যে স্বাচ্ছন্দ্য আনার লক্ষ্যে অধীনস্থ বাঙালি জনতার ভাষা শিখতে গিয়ে উনিশ শতকের বাংলায় আসা ইংরেজদের নানাবিধ কসরতের নমুনা ও তাদের বাংলা শেখার প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি বিবরণ রয়েছে ‘সেকালের সাহেবের বাংলা শেখা’ রচনায়। সে-সময় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিষবৃক্ষ 888sport alternative linkের প্রথম ইংরেজি 888sport app download apk latest version করেছিলেন এক ইংরেজ ভদ্রমহিলা, মিরিয়াম নাইট। কিন্তু আন্তরিকতা নিয়ে বাংলা শিখলেও তিনি কিছু হাস্যকর ভুল তাঁর 888sport app download apk latest versionে এড়িয়ে যেতে পারেননি। যেমন, ‘গোপালউড়ের যাত্রা’ কথাটির আসল মানে না বুঝতে পেরে তিনি এর 888sport app download apk latest version দাঁড় করিয়েছিলেন দ্য জার্নি অব ফ্লাইং গোপাল!
উপনিবেশ আমলের ভারতের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে রচিত একাধিক অমস্নমধুর স্বাদের 888sport live বইটিতে মিলবে। লর্ড ডালহৌসির কূট-তৎপরতার কারণে ভারতবর্ষের অমূল্য হীরা কোহিনূর কেমন করে ইংল্যান্ডে পাচার হয়ে গেল – লেখক ‘কোহিনূর কীভাবে বিলাতে পাচার হলো’ 888sport liveে দক্ষ গল্পবলিয়ের মতো সেই কাহিনির ঘটনাপ্রবাহের পূর্বাপর বয়ান করেছেন। একটি রহস্যমাখা ঘটনা হলো সিপাহি বিপস্নবের পর বিদ্রোহী নানা সাহেবের উধাও হয়ে যাওয়া। ‘নানা সাহেবের অন্তর্ধান রহস্য’ লেখায় নানা সাহেবের এই অদৃশ্য হওয়ার কাহিনি ও তাঁর শেষ পরিণতি কী হয়েছিল সে-বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এ-কথা ভেবে অবাকই লাগে যে, নানা সাহেব নেপালে মারা গিয়েছেন এই তথ্য ইংরেজ প্রশাসনের অনেকেই যুক্তিসংগত কারণে বিশ্বাস করতেন, কিন্তু তাও গোয়েন্দাগিরির নাম করে বিনা পরিশ্রমে পয়সা বাগানো যাবে ভেবে চতুর-অসাধু কর্মকর্তারা নানা সাহেবের অনুসন্ধানকল্পে বিভিন্ন প্রকল্প বহু সময় ধরে চালু রেখেছিলেন। ‘লাট সাহেবের সেই রুমাল’ তুলে ধরে বাংলার রেশম888sport live chatের এক অজানা অধ্যায়ের কথা – লর্ড কারমাইকেল গত শতকের প্রথমার্ধে বাংলা প্রদেশের গর্ভনর হয়ে কলকাতায় আসার পর খুঁজছিলেন এক বিশেষ ধরনের রেশমি রুমাল, যা তিনি বিলাতে থাকার সময় এডিনবরা শহরের এক দোকান থেকে কিনতেন। কিন্তু গোটা ভারতের কোথাও তেমন রুমালের খোঁজ পাওয়া গেল না। অবশেষে একদিন খবর মিলল, আদতে বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলাতেই ওই রুমাল তৈরি হয়ে থাকে ও পরে তা বিলাত এবং ইউরোপের নানা দেশে রফতানি হয়ে যায়। লর্ড কারমাইকেল এমন তথ্য পেয়ে ওই রুমালের কারিগরকে দেখতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি নিজেই মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে রুমালের নির্মাতা আবদুলের সঙ্গে দেখা করেন ও তাঁকে একজোড়া সোনার মোহর উপহার দেন।
888sport app শহরকে ঘিরে দুই মহারথীর সফর ও বসবাসের আখ্যান পাই দুটি দীর্ঘকায় লেখায়। একালের পাঠক ওই 888sport liveদ্বয় থেকে দুই খ্যাতনামা ব্যক্তির জীবনের নানা চালচিত্র ও দুই ভিন্ন আমলের 888sport appর অচেনা রূপ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন। ১৯২৫-এর এপ্রিলে ও ১৯৩৬-এর জুলাইয়ে কথা888sport live chatী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এসেছিলেন 888sport app শহরে – সেই দুই সফরের সবিস্তার ইতিবৃত্ত উপস্থাপিত হয়েছে ‘888sport appয় শরৎচন্দ্র’ শীর্ষক 888sport liveে। প্রথম দফায় শরৎচন্দ্র মূলত এসেছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলায় এক 888sport live football সম্মেলনে যোগ দিতে, সেখান থেকে তিনি 888sport app শহরে এসে কয়েকদিন কাটিয়ে যান। আর দ্বিতীয় দফায় তিনি এসেছিলেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণ করতে। তখন তাঁকে ডিলিট দেওয়া নিয়ে শহরের শিক্ষিত সমাজের মধ্যে মতভেদ ঘটেছিল। রক্ষণশীল সমাজপতিরা উদার শরৎচন্দ্রকে ডিলিট দেওয়াটা খুব সুনজরে দেখেননি। তবে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্ররা তাঁর পক্ষে থাকায় ডিগ্রি প্রদানে বিশেষ অসুবিধা হয়নি শেষমেশ। আর সুবিখ্যাত দ্য বেঙ্গল অ্যাটলাসের নির্মাতা সার্ভেয়ার জেমস রেনেলের 888sport appর জীবন নিয়ে আলোচনা রয়েছে ‘জেমস রেনেলের 888sport appর দিনগুলি’তে। বাংলামুলুকের নানা অঞ্চল ঘুরলেও রেনেল তখনকার তথা আঠারো শতকের 888sport app শহরকে রীতিমতো ভালোবেসে ফেলেছিলেন। সেখানে তাঁর একটি বন্ধুমহলও গড়ে উঠেছিল। 888sport appয় তাঁর একটি কন্যাসন্তানও জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু মাত্র এক বছর পরই সেমৃত্যুবরণ করে। এর কয়েক বছর পর রেনেলও 888sport appর পাট চুকিয়ে বিলেতে ফিরে যান।
‘বিদ্যাসাগরের লুপ্তপ্রায় গ্রন্থাগার’ লেখাটি একটু ভিন্ন ধাঁচের। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শুধু নিজের স্বল্প পুঁজি ও বাঁধাধরা আয় সম্বল করে কীভাবে একটি বিরাট গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছিলেন এবং পরে তা কী করে নানা পথ ঘুরে আদালতের আদেশে নিলামে উঠল – সেই কাহিনি এখানে লেখক শুনিয়েছেন। বিদ্যাসাগর নিজের জন্মভিটার ওপর টান কমে যাবে দেখে কলকাতা শহরে বাড়ি তৈরি করতে চাননি, কিন্তু ভাড়া বাড়িতে বই রাখার অসুবিধা হয় দেখে বাদুড়বাগানে অবশেষে বাড়ি করেছিলেন কেবলমাত্র সংগ্রহের বইগুলি যত্নে রাখবার জন্যেই। অজস্র দুষ্প্রাপ্য পুঁথি ও গ্রন্থ তিনি সংগ্রহ করেছিলেন। কারো-কারো মতে, তাঁর সংগ্রহে থাকা মোট পুস্তকের 888sport free bet ছিল ১৬ হাজার। কিন্তু বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীদের দেনার দায়ের কারণে হাইকোর্ট বিদ্যাসাগরের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রির অধিকার দেন সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষকে, ফলে গ্রন্থাগারটি নিলামে উঠে গিয়েছিল। অবশ্য পরে শেষরক্ষা হয়, লালগোলার মহারাজা যে-ঋণের কারণে গ্রন্থাগারটি নিলামে প্রায় বিক্রি হয়েই যাচ্ছিল, তা কড়ায়-গণ্ডায় শোধ করে দেন।
‘আগলে বসে রইব কত আর’ 888sport liveটিতে মিলবে তিনটি যুগান্তকারী প্রত্নতাত্ত্বিক খননের নেপথ্য কাহিনি। উনিশ শতকে রাজশাহী জেলার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মেটকাফের বাংলার সেন বংশের তথ্যসংবলিত শিলালিপির সন্ধানলাভ, ভারতের বিশাল পথ পাড়ি দিয়ে মার্ক অরেলস্টাইনের হাজার বুদ্ধের গুহা আবিষ্কার ও কঠোর পরিশ্রমের পর সম্রাট অশোক-নির্মিত স্তম্ভলিপির পাঠোদ্ধার কীভাবে করলেন জেমস প্রিনসেপ – ইতিহাসের স্বল্পজ্ঞাত অধ্যায় উন্মোচনের প্রয়াস নিয়ে রচিত এই আখ্যানত্রয় পাঠকদের মুগ্ধ করবেই।
ইদানীং ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে নীরস বিষয় হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু ইতিহাসও যে লেখার গুণে দারুণ প্রাঞ্জল ও সজীব হয়ে উঠতে পারে, তার উপযুক্ত প্রমাণ দেখা না-দেখায় মেশা বইটি। মাহবুব আলমের গদ্য অত্যন্ত সুমিষ্ট ও রসবোধের গুণে উজ্জ্বল। তিনি অল্প শব্দে বেশি কথা বলতে জানেন, তাই তাঁর লেখাকে কখনো ভারাক্রান্ত, জটিল অথবা জবুথবু বলে মনে হয় না। ইতিহাস যে কাঠখোট্টা কি অগম্য-অবোধ্য কোনো বিষয় নয়, তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন লেখক। ইতিহাসের মধ্যে কতখানি গল্প রয়েছে বা গল্পের মধ্যে কতখানি ইতিহাসের চূর্ণকণা ছড়িয়ে রয়েছে সেই বিতণ্ডায় তিনি যেতে চাননি। তবে এ-নিশ্চয়তা দেওয়া যায় যে, বইটিতে কোনোরকমের মনগড়া তথ্য নেই, লেখক একাধিক মান্যসূত্র ঘেঁটেই প্রতিটি 888sport live রচনা করেছেন ও নির্দিষ্ট বিষয়ে নিজের নির্মাহ পর্যবেক্ষণ হাজির করেছেন। নিমগ্ন সমঝদার পাঠকেরা যেমন এ-বই থেকে ইতিহাসের অনেক অজানা উপাদান খুঁজে পাবেন, তেমনি গল্পপ্রেমীরাও পাবেন কিছু সত্যিকার রোমাঞ্চকর কাহিনির সন্ধান। তাই ইতিহাসের এই রঙ্গলোকে আমরা ছেলেবুড়ো সবাইকেই আন্তরিক আমন্ত্রণ জানাই।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.