কেরানির ভেতরে বাংলাকে দেখা
মনি হায়দার
কেরানিও দৌড়ে ছিল
সৈয়দ শামসুল হক
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ
888sport app, ২০১৩
৩২০ টাকা
মানুষ যখন জন্ম নেয় তখন বোঝার উপায় থাকে না, সদ্য ভূমিষ্ঠ মানুষটি কতদূর যাবে।
জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে যেতে মানুষটি রেখে যায় ‘দাগ’। কর্মের দাগ। লোভের দাগ। প্রেরণার দাগ। করুণার দাগ। সুখের দাগ। সর্বনাশের দাগ। এসব দাগের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে ক্রমশ স্পষ্ট হয় – মানুষটির যাত্রা, পথরেখা ও কর্ম। কর্মের খতিয়ান। বাংলা কথা888sport live footballের প্রথিতযশা 888sport live chatী সৈয়দ শামসুল হক জন্মেছেন ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বরে, রংপুরের কুড়িগ্রামে। হেঁটেছেন দীর্ঘ পথ। দেখেছেন অনেক। অর্জন করেছেন বিপুল অভিজ্ঞতা। চলার শুরু থেকে পর্বতারোহী শেরপার গতিতে চলেছেন প্রগতির পথে। লিখেছেন গল্প, 888sport app download apk, 888sport alternative link, নাটক, কাব্যনাটক, মঞ্চনাটক, 888sport live football সমীক্ষা, 888sport sign up bonusচারণসহ বিবিধ প্রসঙ্গ। এক জীবনে এত লেখা একজন লেখকের জন্য অনন্য সাধনার নিট ফল।
তিনি পেয়েছিলেন অনন্য শৈশব। তার পিতা দিয়েছিলেন প্রভূত স্বাধীনতা। এগারো-বারো বছর বয়সে সেই কুড়িগ্রাম থেকে 888sport appয় এসে নিজের ঠিকানা নিজেই নির্মাণ করেছেন। আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে নিজস্ব ঠিকানা নিজেই আবিষ্কার করা, তৈরি করা – বিপ্লবের সমান। একজন স্বনিষ্ঠ লেখকের বড় আশ্রয় তাঁর শৈশব, তাঁর জন্মগ্রাম, তাঁর অাঁতুড়ঘর। সৈয়দ শামসুল হক 888sport apps তো ভালো ঘুরেছেনই, ঘুরেছেন পৃথিবীর বহু দেশ, দেখছেন কত আশ্চর্য সৌধমালা, বিস্ময়ে হয়েছেন অভিভূত। এত বিস্ময়ের পরও তিনি বহন করেছেন জলেশ্বরীকে। এই ‘জলেশ্বরী’ কে বা কী? এই জলেশ্বরী তাঁর ছায়া। তাঁর চেতন-অবচেতনের কায়া। ছায়া যেমন নিজের শরীর থেকে মোছা যায় না, একজন লেখকও মুছতে পারেন না তাঁর ফেলে আসা শৈশবের হালখাতা। জলেশ্বরী সৈয়দ শামসুল হকের জীবনাখ্যানের অাঁতুড়ঘর, নির্মাণের ষোলকলা আর 888sport live chatের জাদুঘর। তাঁর অধিকাংশ লেখায় – হোক গল্প, 888sport alternative link কিংবা 888sport app download apk – জলেশ্বরীর জল-হাওয়া আর গ্রামীণ তালতরঙ্গে সবুজ ঘাসপাতার ঘ্রাণ মিশেই থাকে। কেরানিও দৌড়ে ছিল তাঁর সাম্প্রতিকতম 888sport alternative linkের পরিপ্রেক্ষিতেও জলেশ্বরীর শরীর জড়িয়ে আছে। 888sport alternative linkের নায়ককে সমগ্র 888sport alternative linkে কেরানি হিসেবেই পাই। নাম তার জজমিয়া। কিন্তু এ-888sport alternative linkে মাত্র দু-একবার জজমিয়া নামটি এসেছে। বারবার এসেছে কেরানি। জজমিয়া নামটা আসেনি। আসুক বা না আসুক, কিছু যায় আসে না। কেরানি তো আমরা এ-বাংলার প্রত্যেকে। কেরানি কেউ অফিসে, কেউ নিজের ভিটায়। আর আমরা সবাই দৌড়াই। কৃষক, শ্রমিক, মজুর, ছাত্র, গৃহবধূ, স্বামী-উপস্বামী, রাস্তার মেয়েছেলে, ছালবাকল তোলা রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী – সান্ত্রী-সেপাই সবাই দৌড়ের ওপর আছি। সেই দৌড়ে শামিল হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘কেরানিও’। না, হয়তো উপায় নেই। বাঁচতে হবে না? এখন দেখা যাক জলেশ্বরীর ‘কেরানি’ কতদূর যায়, কিংবা যেতে পারে? কেরানির বিচিত্র জীবন। জীবনপথের মোড়ে মোড়ে তার জন্য অপেক্ষা করে বাঘের মতো নিঃশব্দ কাজ। জলেশ্বরীতে আছে তার দুই বোন, মা, বাবা, ভাই। মা আবার শয্যাশায়ী। বধির, উন্মাদ। ভাই গাঁজায় আসক্ত। ছোট বোন বেচাল। ফষ্টিনষ্টি তার খুব পছন্দ। বড়বুবু স্কুলে মাস্টারি করে সংসার চালায়। এই দুঃসহ পরিবারের মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এক কুয়াশাকাতর ভোরে সে হাজির 888sport app শহরে। না, শুরুতেই কথা888sport apkী সৈয়দ হক কেরানিকে খোদ 888sport app শহরে আনেন না। সে টঙ্গীর একটি ভাতের হোটেলে ম্যানেজারের কাজ পায়। ভালোই ছিল চাকরি। কিন্তু কাজের বেটির সঙ্গে হোটেল-মালিকের শরীরবিদ্যার গোপন চর্চা এক ফাঁকে দেখে ফেললে হোটেল-মালিক কেরানিকে লাথি মেরে ফেলে দেয় রাস্তায়। কেরানি পতিত হয় অকূল দরিয়ায়। কেরানির আর যাই থাক, তার চেহারা পুরাণের শাহজাদার মতো। দেখার মতো চেহারা নিয়ে বিষণ্ণ-বিপন্ন কেরানি টঙ্গী থেকে 888sport app শহরে এসে একেবারে সদরঘাটে। সেখানে চলছিল একটি সিনেমার শুটিং। কেরানি অনেক লোকের মতো ভিড় করে দেখতে থাকে শুটিং। কিন্তু একটি দৃশ্যের জন্য দরকার কেরানির মতো একটা মানুষ। এমনি সময় তাকে পেয়ে পরিচালক টেনে নিয়ে যান লঞ্চে। কারণ, ‘সাগর নীল’ লঞ্চে শুটিং হচ্ছিল। শুটিং থেকে কোনোভাবে পালিয়ে সে লঞ্চের সুকানির ঘরে গেলে পেয়ে যায় সাগর নীলে কেরানির চাকরি। শুরু হয় কেরানির নতুন জীবন। 888sport appর সদরঘাট থেকে লঞ্চ যায় বরিশালে। রংপুরের, জলেশ্বরীর মানুষ আমাদের কেরানির ভালো লেগে যায় নদীর ওপর ভাসমান এই নতুন জীবনযাপন। কারণ সৈয়দ হক তাঁর সুবেদী গদ্যে কেরানির ভাসমান জীবনের ভালোলাগা তুলে ধরেন এভাবে –
‘রাতের নদী কেটে লঞ্চ চলেছে বরিশালের পথে। নদীর পানিতে পূর্ণিমা চাঁদের ঝিলিমিলি। গম্ভীর গুঞ্জনের মতো ইঞ্জিনের শব্দ। নদীর বাঁকে বাঁকে লাল বিকন বাতি। অাঁধারের বুক চিরে লঞ্চের সার্চলাইটের আলো, একবার ডানে, একবার বাঁয়ে, তারপর দপ করে নিভে যায়। আলোটা নিভে যেতেই বুকের ভেতরে ভয় লাফিয়ে ওঠা। কিন্তু না, অাঁধারেও ঠিক সঠিক পথেই লঞ্চ এগিয়ে চলেছে। কেরানির মনে নির্ভাবনা জাগে। তার জীবনটাও লঞ্চের মতোই অন্ধকারে ঠিক এগিয়ে যাবে।’ আমরা কেরানিকে লঞ্চে রেখে, যাই তার রুহিতনের কাছে। এতক্ষণে সৈয়দ হক কেরানির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন একজন নায়িকাকে। নায়িকা ছাড়া আড়াইশো পৃষ্ঠার 888sport alternative link এগোয় কী করে? এখন প্রশ্ন – রুহিতন কে? রুহিতন পুরান 888sport appর বুলবুল মিয়ার বাঁশমতিকন্যা। তাসের মতো কেবল কাটে আর কাটে। এই রুহিতনদের বাসায় থাকার জায়গা হয়েছে কেরানির। লঞ্চ যেদিন 888sport appয় থাকে, সেদিন কেরানি থাকে এখানে। রুহিতন থাকে কোথায়? ঘরেই থাকে। কিন্তু রুহিতনের মন? তার শরীর, শরীরের ভেতরে জাগতিক মন থাকে কোথায়? এ-প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই, সৈয়দ শামসুল হকের নিপুণ বর্ণনায় – ‘ঝাঁপটা খুলে দিতেই রুহিতন শরীরের 888sport promo codeঘ্রাণ নিয়ে আলগোছে ঘরে ঢোকে। ঢুকেই সে ঝাঁপটা বন্ধ করে ঝাঁপের ওপর পিঠ রেখে দাঁড়ায়। বাইরে আস্তাবলের মুখে বাতি জ্বলে সারারাত। ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে সারারাত আলো এসে অন্ধকার পাতলা করে রাখে। সেই আলোয় রুহিতনের মুখখানা চেনার বাইরে হয়ে যায়। মনে হয়, সিনেমার পর্দা থেকে ওই বুঝি একটা মুখ তার ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে।’ এভাবে এক 888sport promo code নিজেকে, এক মেয়ে নিজেকে নৈবেদ্য দিতে এসেছে কেরানির কাছে। না এসেই বা কী করে? কেরানির চেহারা সুন্দর, নায়কের মতো। ‘সাগর নীল’ লঞ্চে করে কেরানির চাকরি। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিন্তু ঘটনা অন্য জায়গায় ঘোঁট পাকিয়ে সৈয়দ হক পাঠকদের ছেড়ে দিয়েছেন খোলা মাঠে। পাঠক এখন, পাঠ করে জানুক – কেরানির দৌড় কতদূর! কিন্তু কেরানি যে খেলা দেখাচ্ছে তাতে ভিরমি লেগে যেতে পারে। কারণ, এরই মধ্যে কেরানি জলেশ্বরীতে গিয়েছিল এবং বিয়ে করেছে। শুধু এটুকুই নয়, পাঠকের জন্য চমক আরো আছে। সৈয়দ হকের কেরানি বিয়ে করে বাসরঘরে প্রবেশ করলেও বউয়ের সঙ্গে সহবাস বা সঙ্গম করতে পারেনি। কেন পারেনি? নিজের অসমর্থ পৌরুষের জন্য? না, পারেনি স্ত্রীর নামের জন্য। কেরানির স্ত্রীর নাম মদিনা। আমরা আবার কেরানিও দৌড়ে ছিল 888sport alternative linkের পৃষ্ঠা থেকে একটু পাঠ নিই। এই পাঠে মদিনার সঙ্গে আমাদের কেরানির মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কের একটু ভূগোল আমরা বুঝতে পারব। ‘বিছানার একপাশে গুটি মেরে পড়ে ছিল মদিনা। লাল বেনারসি। শাড়ির পরতে পরতে নতুন কাপড়ের ঝাঁঝালো ঘ্রাণ। বাইরে সুমসুম করে বয়ে চলেছে রাত। সেই শব্দের ভেতরে আকাঙ্ক্ষার গান। শরীরের জন্যে শরীরের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু প্রথম রাতে সে অকস্মাৎ গিয়েছিল গুটিয়ে। বউয়ের নাম মদিনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পবিত্র পুণ্য শহরের সঙ্গে নামের মিল দেখে কেরানির শরীরে নেমে এসেছিল বরফের ছুরির মতো শীতলতা। তাই মদিনাকে স্পর্শ করা তার হয়নি। তারপর, পরদিন নান্নুর মুখে মনির মৃধার কাহিনি শুনে মদিনার সতীত্ব সম্পর্কে সন্দেহের কাঁটা উঠেছিল ফুটে। হয়তো সে কুমারী-বধূ পায়নি। মদিনাকে নিশ্চয় মনির নষ্ট করেছিল। আহ, নষ্ট কাকে বলে! 888sport promo code নষ্ট হয় কীসে? 888sport promo codeর পবিত্রতা কি কেবল তার শরীরেই? তার হৃদয়ের কী ভূমিকাই নাই?’ এই বিয়েতে সৈয়দ শামসুল হকের কোনো দোষ নেই, 888sport alternative linkের আখ্যান তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর দোষ নেই 888sport alternative linkের ক্যারেক্টার কেরানিরও। কারণ তাকে বাড়ি থেকে টেলিগ্রাম করে নেওয়া হয়েছিল, পিতা অসুস্থ বলে। কিন্তু বাড়ি গিয়ে জানতে পারে, আসলে তার বিয়ের আয়োজন চলছে; কিন্তু বিয়ের পরে যখন কেরানির মনে জাগল মদিনা নামের কুহক, আর বন্ধু নান্নুর কাছে শোনে সদ্য বিয়ের করা বউ অন্যের ধর্ষণের শিকার, সবকিছু পেছনে ফেলে ছুটে আসে 888sport appয়। 888sport appয় না এসে কী করতে পারত কেরানি? কিন্তু 888sport appয় আসার পর কী ঘটল কেরানির জীবনে? মদিনাকে বিয়ের পনেরো দিনের মাথায় আলফাতুন, বুলবুল মিয়া আর রুহিতনের মায়ের নিপুণ চালে ধরা খেয়ে যায় কেরানি। বসে যায় বা বসে যেতে বাধ্য হয় রুহিতনের সঙ্গে বিয়ের আসরে। বিয়ের পর বাসরে। বাসরে কেরানি নির্মোক পরা মানুষ। ভেতরে আগুন নেই; কিন্তু রুহিতন নিজেই আগুন। জ্বালিয়ে রাখে কেরানিকে। নিজেও জ্বলে। বয়ে চলে সময়।
সৈয়দ শামসুল হক 888sport alternative linkের তেরো পর্বে দেখান কেরানির মনের ভাবান্তর। মানুষ তো! একটি মেয়েকে জেনে হোক না জেনে হোক বিয়ে তো করে রেখে এসেছে জলেশ্বরীতে। মদিনার সঙ্গে শারীরিক শীৎকার, কিংবা শরীরে শরীর রেখে হয়নি খাতা বুনন। কিন্তু আসার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই আধো আলোর মদিনাকে মনে পড়ে মাঝে মাঝে। হয়তো সে যাবতীয় বাসনা নিয়ে অপেক্ষায় আছে, কামনার জলে স্নান করে। সেই দ্বিমাত্রিক চেতনার কাছে সৈয়দ হক নিয়ে যান পাঠকদের তেরো পর্বের শুরুতে –
‘রুহিতন নাকি মদিনা, সেই বউ আর এই বউ, কে তার কাছে বেশি সত্য, কেরানি এ নিয়ে খুব যে ভাবে তা নয়। প্রশ্নটা হঠাৎ একেকবার মনের মধ্যে নদীর শুশুকের মতো ভুস করে উঠেই তলিয়ে যায়। তবে, এরকম ঝুলে থাকাটাও কাজের কথা নয়। দেশের বাড়িতে এক বউ, শহরে আরেক বউ, মীমাংসা করে ফেলতেই হয়। কেরানি ভাবে।’ কেরানির ভাবনার পরপরই সৈয়দ হক নিয়ে আসেন কেরানির জীবনে ভিন্ন এক আখ্যান। হঠাৎ এই আখ্যানে এতদিনের পরিচিত, মোটামুটি স্থিত কেরানির জীবনে নেমে আসে নিকষ অন্ধকার। সদরঘাটের এক পাগলির পেটে বাচ্চা আসে, সেই পাগলি কেরানিকে বাচ্চার বাবা দাবি করে। মুহূর্ত মাত্র – কেরানিও দৌড়ে ছিল 888sport alternative linkের ভূগোল একেবারে পালটে যায়। সাগর নীল লঞ্চের বড় কেরানি 888sport alternative linkের কেরানিকে দাঁড় করায় পাগলি আর জনতার মুখোমুখি। আর কী বিস্ময়, পাগলি কেরানিকে দেখে খুব নরম গলায় বলে, আইছো! দ্যাহো পোলাডা সোন্দর হইচে না! পাগলির এই সংলাপ কেরানিকে দাঁড় করিয়ে দেয় বধ্যভূমিতে। মানুষ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়, পাগলির সন্তানের পিতা কেরানি। চলে আসে লঞ্চের মালিক, আহমাদউল্লাহ। তার দুই লাথিতে কেরানি লঞ্চ থেকে প্রপাত ধরণিতল। পাগলি আর কেরানির অবস্থান একই সমতলে। খবর চলে যায় রুহিতনের বাবা-মায়ের কাছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত – জোর করে কেরানির কাছ থেকে তালাক লিখে নেয়। কেরানি এখন সত্যিকার অর্থে সর্বহারা। সৈয়দ শামসুল হক জানেন, কীভাবে আখ্যানের পর আখ্যান ছড়িয়ে দিয়ে পাঠককে আক্রান্ত করা যায়। পাঠক আক্রান্ত হলেই বন্দি হয় 888sport alternative linkের পৃষ্ঠায়। শেষ পৃষ্ঠা না পড়া পর্যন্ত মুক্তি নেই পাঠকের। কেরানিও দৌড়ে ছিল 888sport alternative linkের জটিল আবর্তে একের পর এক নতিজা নির্মাণ করে সৈয়দ হক পাঠককে ফেলে দেন ধন্ধে। 888sport alternative linkে ধন্ধের এই ভিন্ন ভিন্ন উপাখ্যান নির্মাণ একজন পরাক্রান্ত লেখকেরই প্রবল শক্তির প্রকাশ। আমরা জানি, সৈয়দ হক সেই শক্তির নিষ্ঠাবান প্রতিভূ। তার হাতে অক্ষর, বাক্য, আখ্যান, ঘটনা – খোলায় ভাজা মুড়ির মতো ফোটে। আমরা আর একবার প্রমাণ পাই – কেরানিও দৌড়ে ছিল 888sport alternative linkে। 888sport alternative linkের এখানে এসে সৈয়দ কোথায় নিয়ে যাবেন কেরানিকে? পাঠক গভীর আগ্রহে পৃষ্ঠার ভেতরে আঠার মতো ঢুকে পড়তে বাধ্য হন। আমরাও যাই কেরানির সঙ্গে। কেরানির দুর্দশার মানচিত্র অাঁকেন এভাবে – ‘দিনের পর দিন কাটে কেরানির। প্রথমত তার মনের মধ্যে মদিনার কথা, রুহিতনের কথা ঝাঁপাঝাঁপি করে। তারপর নদী যেমন মরে যায়, খাল যেমন শুকিয়ে যায়, এই দুই 888sport promo codeও তার মন থেকে মুছে যায়। হয়তো অন্যকিছু নয়, অনাহারের চাপেই সে অতীত ভুলে যায়। অনাহার! অনাহার! দিনের পর দিন অনাহারে কাটে আমাদের কেরানির। অধিক অনাহারেরও এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে – মানুষকে মাতাল করে। মানুষ মদে মাতাল হয়, ক্ষুধার ঘোর কিন্তু তার চেয়ে কম মাদকের নয়। মাথা ঘুরতে থাকে। পালটাতে থাকে। চোখ ঝাপসা দেখতে থাকে। কথা খেই হারাতে থাকে। মাতাল মাটিতে পড়ে যায়। অনাহারী মানুষও ধপ করে পড়ে যায়।’ জীবনের জঙ্গনামা থেকে আহরিত সৈয়দ হকের তীব্র অভিজ্ঞতায় ক্ষুধার বর্ণনা আমাদের অনাহারী মানুষদের জন্য শোকে স্তব্ধ করে। হায় ক্ষুধা! সেই আক্রান্ত আমাদের সর্বহারা, বিভ্রান্ত, ক্ষুধার্ত কেরানি বসে থাকে পুরনো 888sport appর একটি হোটেলে। হোটেলটি তার পরিচিত। কিন্তু হোটেলের মালিক উপস্থিত নেই। কেউ কেরানির দিকে ফিরেও তাকায় না। এই বিপন্ন মুহূর্তে কেরানির জীবনে আসে পুরনো 888sport appর ত্রাস – খাম্মা সামাদ। খাম্মা সামাদ হোটেলে কেরানিকে খাইয়ে-দাইয়ে নিয়ে আসে নিজের আস্তানায়। অলৌকিকভাবে পালটে যায় সর্বহারা কেরানির জীবন। এমন ঘটনা আমরা শুনেছি – আরব্যরজনী উপাখ্যানে। সকালে বাদশা বিকেলে পথের ফকির। কেরানি ফকির থেকে এখন আবার বাদশা। পেছনে খাম্বা সামাদ। খাম্বা সামাদ তার একটা পরিকল্পনাকে সামনে রেখে তৈরি করছে কেরানিকে। কেরানির যাবতীয় চাহিদা পূরণ করছে সামাদ। খাম্মা সামাদ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিল। রাজনৈতিক চক্রে পড়ে এখন খাম্মা সামাদ। কেন সামাদের সঙ্গে খাম্বা যুক্ত? কারণ, কাউরে শায়েস্তা করলে সামাদ সেই লোকটিকে খাম্বার সঙ্গে বেঁধে নিত। সেই থেকে সামাদের আগে খাম্বা। খাম্বা সামাদ। কেরানি বাড়িতে এখন টাকা পাঠায়। বেশিই পাঠায়। কেরানির সঙ্গে খাম্বার সম্পর্ক ভাইয়ের। কেরানি খাম্বা ভাইকে সংক্ষিপ্ত করে নেয় – খাম্বাই। কেরানি খাম্মার সঙ্গে মদ্যপানের সময় জানতে পারে তার পিতা মারা গেছে। খাম্বা সামাদ গাড়িসহ জলেশ্বরীর হস্তিবাড়িতে পাঠিয়ে দেয় কেরানিকে। মৃত্যু-পরবর্তী সব কাজ শেষ করে কেরানি ধুমধামের সঙ্গে। কিন্তু তার বুবু এক জ্যোস্নারাতে জিজ্ঞেস করে, এত খরচ করিস, টাকা-পয়সা কই পাস? কোনো অন্যায় কাজে নেই তো? তখন কেরানির মনে পড়ে, খাম্বা সামাদের সঙ্গে মদ্যপানে আড্ডায় খাম্বাইর কথা – ‘বলেছিল, … আরে মিয়া, দৌড়ের মুখে এত কথা ভাবলে চলে না। ভালোমন্দ নিয়া তারা ভাবে যারা দৌড়ে নাই, দৌড়ের রাস্তার কিনারে বইসা যারা গীত গায় তারাই চিন্তা করে কোনটা ন্যায় করলাম আর কোনটা অন্যায় হইলো।’ সৈয়দ হক এক কেরানির ভেতর দিয়ে কোটি কোটি কেরানির দৌড়ের উপাখ্যান দেখাচ্ছেন, কেরানিও দৌড়ে ছিল 888sport alternative linkে। গ্রামে যাওয়ার পর কেরানির কতকিছু মনে পড়ে, মদিনাকে মনে পড়ে, ফেলে আসা শৈশবকে মনে পড়ে, বন্ধুদের মনে পড়ে। এই মনে পড়ার নামতা নিয়ে কেরানিকে সৈয়দ হক 888sport appয় ফিরিয়ে আনেন। কেরানির 888sport appয় ফিরে আসার মধ্যে তার জীবনের অন্তিম সময়ের হিসাবও খুব কাছে এসে পড়ে। সেটা আমরা বুঝব 888sport alternative linkের শেষে। এখন দেখা যাক, কেরানিকে নিয়ে সৈয়দ হকের কলম আর খাম্মা সামাদের পরিকল্পনা কতদূর গড়ায়? অনেক দিনের অপেক্ষার পর খাম্বা সামাদ মঙ্গলবার এসেছে। মঙ্গলবার তার জীবনে অনেক ঘটনার জন্ম। আবার সেই মঙ্গলবার! উপায় নেই, যেহেতু মননের কারিগর সৈয়দ শামসুল হক তার করোটিতে এভাবেই এঁকেছেন ছক, আমাদের কেরানিকে নিয়ে। সুতরাং যেতেই হচ্ছে কেরানির সঙ্গে, খাম্বার সঙ্গে।
বলেছিল, কোনো এক মঙ্গলবারে খাম্বা সামাদ কেরানিকে নিয়ে যাবে মঞ্জিলে। যার জন্য এত খরচা দিয়ে তাকে তৈরি করেছে, গাড়িতে চেপে যাচ্ছে কেরানি, সঙ্গে খাম্বাই। এই যে যাওয়া – আর ফেরন নাই। খাম্বা সামাদ কেরানিকে এক 888sport app শহর থেকে দূরে, অনেক দূরের এক আশ্চর্য বাড়িতে ছেড়ে আসে। বিরাট বাগানবাড়ি। এতদিন কানে শোনা বেহেস্ত দেখতে পায় কেরানি। বিরাট এলাকার ভেতর আলিশান বাড়ি। আলিশান বাড়ির ভেতরে আরো আলিশান রুমে ছেড়ে দিয়ে কেটে পড়ে খাম্বা সাদাম। রেখে যায় এক লেডির কাছে। যিনি শিকারি। যিনি বাইরে রাজনীতি করেন। কিন্তু এই বাগানবাড়িতে, যখন কারো সঙ্গে মিলিত হন, লেডি সেখানে রাজনীতি পছন্দ করেন না। অনন্যসুন্দরী, ধারালো, আধুনিক, ঝকঝকে লেডির মুখোমুখি হয়ে কেরানি বিহবল। লেডির সঙ্গে বিস্তর কথাবার্তা চলছে। লেডির মেনু অনুসরণ করে নানা খাবার আসে সামনে।
নানা খাবার আসতে থাকে টেবিলে আর বর্ণনা দেয় লেডি – ‘…আসবে লেগ অব ল্যাম্ব, মিন্ট সস, বোট অব গ্যাভি, বাস্কেট অব মেডিটেরিনিয়ান টমাটো অলিভ ব্রেড। মিন্ট সস বুঝতে পারলে না? আমাদের পুদিনার চাটনি গো! ল্যাম্বের সঙ্গে ভালো যায়। তারপর ডেজার্ট দেবে টিরামিসু। ইতালিয়ানরা খুব পছন্দ করে। তিন রকমের চিজ দিয়ে মিষ্টি করে বানায়। এক্সেলেন্ট। আহ্। আর এসবের সঙ্গে আমরা খাবো বুজোলে রেড ওয়াইন। লালং আঙুর দিয়ে ওয়াইন হয়। বুজোলেটা আঙুরের একটা বিশেষ জাত। অ্যান্ড টু রাউন্ডআপ আওয়ার ডিনার – কনিয়াক মাখটেল। দারুণ একটা ব্র্যান্ডি। আই লাভ ইট।’
খাবার শেষে বসে লেডির সঙ্গে চলে মদ্যপান। মদ্যপান শেষে কেরানি নিজেকে হারিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। নরম বিছানায় শুয়ে পড়ার পর কেরানি পায় নরম, আরো নরম আলুথালু একটি শরীরের স্পর্শ। স্বপ্ন? চমকে তাকায় কেরানি। আমরা 888sport alternative linkের একেবারে শেষের দিকে। এইক্ষণে কয়েকটি লাইন অধ্যয়ন করা যাক –
‘পাশেই সে আবিষ্কার করে এ-888sport promo codeকে। কে? 888sport promo codeটি তাকে বেষ্টন করে আছে সমস্ত শরীর দিয়ে।
কে? 888sport promo codeটি তখন কেরানির আর্ত ঠোঁটের ওপর ঠোঁট রেখে হিসহিস করে ওঠে, চুপ চুপ।
আমরা কি জানি না, মাতাল শরীরে বল যখন ফেরে তখন দ্বিগুণ হয়েই ফেরে? 888sport promo codeটিকে প্রবল হাতে শরীর থেকে সরিয়ে কেরানি উঠে বসে। ঘরের ভেতরে মৃদু নীল আলো। সেই আলোয় সে দেখে ওঠে – লেডি! তার জগৎ ভেঙে পড়ে। সে চিৎকার করে ওঠে, আপনি!… লেডি মেঝে থেকে উঠে দাঁড়ান। ভাঙা পুতুলের মতো নয়, প্রতিমার মতো সতেজ সটান তিনি উঠে দাঁড়ান।’ আমরা এখন কেরানিও দৌড়ে ছিল সৈয়দ শামসুল হকের 888sport alternative linkের একেবারে শেষ পর্বে – চবিবশতম পর্বে। এ-পর্বের শুরুতে সৈয়দ হক কেরানির অন্তিম অবস্থার বর্ণনা করেন নিপুণ সৌন্দর্যে – ‘সদরঘাটের ঠিক সেই জায়গাটিতে, সেই বুড়িগঙ্গার কিনারে, বর্জ্য যাবতীয় ডাবের খোসা বোতল পলিথিনের ব্যাগে আবিল কাদার ভেতরে, একদিন যেখানে পাগলিকে এনে ফেলা হয়েছিলো তার সদ্যোজাত শিশুটি সমেত, যেখানে পরেপরেই নীল সাগর লঞ্চের মালিক আহমদউল্লার লাথিতে পড়ে গিয়েছিল আমাদের কেরানি, সেখানে আজ উপুড় হয়ে পড়ে থাকা একটি লাশ আমরা দেখতে পাই।’ বুঝতেই পারা যায় উপুড় হয়ে থাকা লাশটা কার হতে পারে? এখানে বোধহয় পাঠকের সন্দেহ জাগছে? এটা কেরানির লাশ নয়। মানুষের মন, বিভ্রান্তির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে সবসময়। কিন্তু আমাদের কথাকার, কথার জাদুকর, কথা888sport live footballের কিংবদন্তি সৈয়দ শামসুল হক কেরানির সালতামামি করেছেন নিজের মতো করেই। তাই আরো একটু পরে, প্রায় শেষের পৃষ্ঠায় খাম্বা সামাদ আর তার ড্রাইভারের কথোপকথনে জেনে যাই – ‘খাম্বা সামাদ নাসিরকে বলে, মানুষটারে খরচ করতে হইলো। ইচ্ছা ছিলো হালার পুতেরে খাম্বার লগে বাইন্ধা পিটাই। কম ট্যাকা ঢালছি নি তার পিছনে। ম্যাডামেরও মনে বহুৎ ধরছিলো। আমার কামটা হয়া আসছিলো। কয়েক কোটি! এলা বুইঝা দ্যাখ। শ্রীপুর থিকা রাইতেই ফোন। উঠায়া আনলাম। মাথার পিছনে পিস্তলের একখান গুল্লি। শ্যাষ! … বুঝোছ তো, তারও একটা সুনাম আছে না? পোলা খাওনের খায়েশ তার দুনিয়া জানলে, বদনাম না?’ কেরানি দৌড়ে ছিল। প্রবলভাবে ছিল। নিজে না পারলেও অন্যর হাত ধরেও দৌড়ে ছিল। কিন্তু শত শত, লাখ লাখ, কোটি কোটি কেরানির মতো সৈয়দ শামসুল হকের কেরানিও বেঘোরে প্রাণ হারিয়ে জানান দেয়, কেরানিদের মুক্তি নেই। তীব্র রাজনীতি সচেতন সৈয়দ শামসুল হক কেরানিও দৌড়ে ছিল 888sport alternative linkের ভেতর দিয়ে গ্রামবাংলার সাধারণ আটপৌরে জীবনের আখ্যান যেমন বলেছেন, তেমনি বলেছেন শহরের জৌলুসের ভেতর পাশবিক জীবনের মর্মান্তিক গল্প। r
বিষণ্ণ শক্তির আধার
ইমতিয়ার শামীম
কথা ইশারা
মামুন হুসাইন
বেঙ্গল পাবলিকেশন্স
888sport app, ২০১৪
৩৮০ টাকা
স্পর্শের জালে বিভোর হয়ে মুখবই দেখতে দেখতে বই হারিয়ে যাওয়ার উল্লাস তুলতে তুলতে সবাই যখন নিজেরাই লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য গহিন এক উপনিবেশে, মামুন হুসাইন তখন নিজেকে ফিরে দেখছেন কথা ইশারায়; নিজেকে, – কিংবা অতীতজাড়িত বিপন্ন ভবিষ্যতের দিকে ইঁদুরদৌড়ে ছুটে চলা আমাদেরও। কথা ইশারা তাঁর নিজের কথায়, ‘তাদেরই টিপসই এবং জলছাপ’ ‘বিবিধ উদ্বিগ্নতা এড়ানোর জন্যে যেসব মানুষের সঙ্গে দল বেঁধে’ একদিন হেঁটেছেন তিনি। অসমাপ্ত অবয়ব নিয়ে তারা দেখা দেয় আমাদের কাছে, কিন্তু তাদের সামগ্রিকতা ধরা পড়ে আমাদের কান্নার শক্তির মুঠোতে, স্বপ্নভঙ্গের বেদনাতে, যে-পথের শেষ জানা নেই অথচ যে-পথে যেতেই হয় সে-পথের প্রতিটি পদক্ষেপে। অনেক আগে ঈশ্বরের কাছে কাঁদবার শক্তি না হারাতে প্রার্থনারত এক ঋজুমানবও ডাক দিয়েছিলেন কথা ইশারায়। ‘পুরাতন হয় নতুন পুনরায়’ – তাই আমরা আবারো কথা ইশারার হাতছানি পাই। পাই ‘নিজস্বতা’ প্রমাণ করার যে উন্মাদনা চলছে অথবা চলছে ‘নিজেকে প্রতিস্থাপন করার যে ইঁদুর-দৌড়’ তার ভয়ংকর কথাচিত্র। এর ফাঁকফোকর গলেই আবার উঁকি দেয় মামুন হুসাইনের মামুন হুসাইন হয়ে ওঠার আয়োজন, যা তাঁর অন্য কোনো গ্রন্থের পাঠ থেকে পাওয়া কখনো সম্ভব নয়।
নিজের কথাই লিখেছেন বটে মামুন, খুঁজেছেন তাঁর বিবিধ পদচিহ্ন; নিজের নিরীহ সাদামাটা জন্মবৃত্তান্তের খানিকটা ডিমেন্টিক হতে থাকা মায়ের দাদির কাছে শুনতে শুনতে তিনি মুখোমুখি হয়েছেন পাখিহীনতার কষ্টে আচ্ছন্ন শিশুপুত্রের। তবু ব্যক্তিগত গদ্য হয়েও তা ব্যক্তিগত নয়। শেষ পর্যন্ত কথা ইশারা সমকালের যৌথ কোরাস, উত্তর-অন্বেষা। যে-শনাক্তকরণ চিহ্ন তিনি তুলে ধরেন, শুরুর যে-পাঁচালি বয়ন করেন, কিংবা সমসময়ের মানুষের সঙ্গে চলতে চলতে নিরুপায় বাজার-সদাইয়ে শামিল হন, সেসবের সবকিছুতেই ঘটতে থাকে সামাজিক 888sport free betলঘুত্বের ব্যক্তিক উদ্ভাস। একটু একটু করে সময়কে চিনতে থাকি আমরা, চিনতে থাকি মামুনকেও, যিনি শেষ পর্যন্ত ভাবতে শুরু করেন, ‘এখন মনে হয়, লেখায় আধুনিকতার চেয়ে ট্র্যাডিশন আবিষ্কার করাই বড় সমস্যা!’ মামুনের লিখনশৈলীর আধুনিকতায় যাঁরা পথ হারিয়ে ফেলেন, গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেতে থাকেন, সংগুপ্ত ঈর্ষাও বয়ে বেড়ান, তাঁরা এবার নতুন করে ভাবতে পারেন, ট্র্যাডিশনের অন্বেষণ কত গভীর হলে আধুনিকতারও বাক বদলায়। দুর্বলচিত্তের মানুষ হিসেবে নিজেকে গ্রন্থিত করতে থাকলেও একটি প্রস্ত্ততিপর্বের আখ্যানও পেতে থাকি আমরা। সেই প্রস্ত্ততিপর্বে থাকে আলাদা হওয়ার নয়, বরং মেলানোর প্রস্ত্ততি, ‘সহস্র বন্ধন মাঝে মুক্তির স্বাদ’ নেওয়ার প্রস্ত্ততি। খাতায় তিনি লিখে রাখেন মনীষীবন্ধুদের সব সেরা বাক্য, উলটেপালটে দেখেন, মনে করেন, হয়তো ভুল হয়ে যায় আবার কোনো কোনো কথা বোধের এত গভীর তলদেশে পৌঁছে যে নিজেরই কথা হয়ে যায়। ‘নিজস্বতা’র আত্মম্ভরিতা হারাতে থাকেন তিনি, বোধকরি সেজন্যেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর নিজস্বতা। লিখেছেন তিনি, ‘প্রাচীন গ্রিসের মনীষীরা পারতেন – অর্যাটরি, জিমন্যাস্টিকস, অ্যাস্ট্রোলজি, দর্শন, 888sport live football, সংগীত, যুদ্ধবিদ্যা – সবকিছু মিলিয়ে ওঁরা ভাবতেন এগোনোর কথা। আমরা পারি না। সুপার স্পেশালিটির যুগে আমরা সবাই কুঠুরিবদ্ধ এক একজন অর্ধমানুষ। আমি নিজে যেভাবে বুঝেছি, তাতে মনে হয় এখনো দার্শনিক, ফিজিসিস্ট, মিউজিশিয়ান, পেইন্টার, বায়োলজিক্যাল সায়েন্টিস্ট, এগ্রোনমিস্ট, শুধুমাত্র তাঁর জগৎকে নিয়েই চমৎকার এক সৃজনশীল জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু লিটারেচারের মানুষ কেবল গদ্য-পদ্যের দীঘল সব অ্যান্থোলজি উল্টে চলেছেন, তা মানতে মন সায় দেয় না। ফলে আমার আর ‘লিটারেচার’ করা হয় না। নানান করণ-কৌশলে আমার যৎসামান্য বাক্য রচনাকে ভুল বিবেচনা করে সতীর্থরা বয়কট করেন। লিটারেচারের বড় বিষয় যেহেতু মানুষ এবং এই মানুষ এত বিচিত্র পেশা, এত অদ্ভুত আচরণ আর ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে বেড়ে ওঠে যে, এর সামান্যতম স্বাদ নিতেই প্রস্ত্ততি হয়ে যায় অনন্তকালের। ফলে মনের অজান্তে টপকে-টপকে ভাবনার নানান গলিঘোঁজের সংবাদ খানিকটা আক্রান্ত করেই বসে। যেজন্য বুদ্ধির ধার অনেকখানি বেড়েছে, এরকম একটি ভান করা আচরণ থেকে আর রেহাই হয় না। বন্ধুরা এই বদলে যাওয়া চোখ-মুখকে কাকের ময়ূরপুচ্ছ জ্ঞান করলে আমার এবার সংকোচ বাড়ে।’ (পৃ ৩৫-৩৬) আমরা দেখি, একটি মেটাফোরের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য মেটাফোর, সমান্তরালে এগিয়ে চলছে সেসব, আবার লুপ্ত হচেছ মেটাফোরেরই ঘরজমিনে। জীবনকে চিনতে তিনি এগোচ্ছেন গ্রন্থের দিকে, গ্রন্থকে সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন জীবন নামক গ্রন্থের কাছে, আবার হারমান হেসের মাঝির কাছে কনভিন্সড হয়ে হেঁটে চলেছেন নদীর দিকে। কিন্তু নদীর ওপারে মিছমিথুইর গাঁয়ের ‘গল্প’কে খুঁজে পাওয়া যায় না, শ্মশানের চরে পুলিশের প্রহরায় গুপ্ত-লাশ পুড়তে থাকে, আগুনের ছাই এসে ঢেকে দেয় মুখ, বুকপকেট এমনকি বইয়ের শেলফ। বাঁচার রকমফের দেখতে থাকেন তিনি, দেখেন গ্রন্থকীট না হয়েও অচিন মানুষেরা আনন্দবেদনায় আচ্ছন্ন হচ্ছে, দ্রোহে-বিদ্রোহে, হাসিকান্নায়, মায়ামমতায় জীবনকে জাপটে ধরে পত্তন ঘটাচ্ছে বাঁচার, আনন্দের ও স্বস্তির উপনিবেশের। গদ্য-পদ্য লেখে না তারা, আপাত দলছুট তারা, কিন্তু সৃজনশীলতার মহাযজ্ঞের অংশীদার তারা সবাই, যূথবদ্ধ হয়ে তারা লিখে চলেছে মহাকালের মহামায়াময় জীবনগাথা। উপসংহারে পৌঁছান তিনি, ‘…লেখকের খাতা থেকে এবেলা নাম খারিজ হয়ে গেলে আমার আর বেদনা হয় না। এখন তাই চিরকালের বকলম পাঠকের খাতায়, দর্শকের খাতায় একটি টিপসই অাঁকার প্রস্ত্ততি সারছি। আর ভাবছি, আমাদের কী এক ঘোরের কাল ছিল, যখন বন্ধুদের ভালোবাসায় আমরা মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে গেছি।’ (পৃ ৩৭)
অনুমান করি, বিস্মিত হওয়ার, সংশয়ী হওয়ার এবং উত্তর খুঁজে ফেরার বেলায় চিরতরুণ মামুন। মৃত্যুচিন্তা, একাকিত্ব, সৌন্দর্যবোধ কিংবা চোখের জল অনন্ত বিস্ময়সমেত বারবার সংশয়ী করে তাঁকে। ইলিয়াসকে নিয়ে কয়েকটি লেখা এবং বক্তব্য আছে তাঁর বইয়ে। কিংবা ধরা যাক, কায়েস আহমেদের কথা – তাঁর মৃত্যু888sport live chatের অনুসন্ধানও করেছেন তিনি একাধিকবার। বাবার মৃত্যু তো আছেই – আরো মৃত্যু স্পর্শ করেছে তাঁকে, স্পর্শ করেছে পুকুরের পানিতে পড়ে মরে যাওয়া প্রথম কন্যার কথা ভেবে চোখ মুছে বিদ্যাসাগরের ‘প্রভাবতী-সম্ভাষণ’ নিয়ে কথা বলা বিদগ্ধ মানুষের মৃত্যু, এ-দেশে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠা অপার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী এক বেহালাবাদকের মৃত্যু। সব মৃত্যুরই আছে নিজস্ব এক স্বর। কিন্তু বাবার মৃত্যু নিয়ে ইলিয়াসের অনুভূতি – যে-অনুভূতি হয়তো সার্ত্র ছাড়া আর সকলের জন্যেই আদিখ্যেতা – তাঁ তাকে বিশেষভাবে একাত্ম করেছে ইলিয়াসের সঙ্গে। ইলিয়াসের ক্ষেত্রে দেখেছেন, তিনি হয়তো বা বিপন্ন বিস্ময়ের সঙ্গেই, মরবিডিটির গোপন প্রলোভন যে মানুষটি এড়াতে পারেননি, সেই মানুষটিরই লেখা, উচ্চারণ, রাজনৈতিক ভাষ্য, বিবৃতি, আলোচনা সব মিলিয়ে কালপ্রবাহে যে-ভাবমূর্তি তৈরি করছে তার সঙ্গে ‘তিন দশক আগে দেয়া তাঁর তথ্য স্বগত মৃত্যুর মতো কেবল স্ববিরোধিতাই তৈরি করে। মামুন দেখেছেন, ইলিয়াস অবশেষে চেষ্টা করেছেন এই স্বগত মৃত্যুকে এড়িয়ে যাওয়ার, তাই সামনে নিয়ে এসেছেন তাঁর কালের সমস্ত জরুরি প্রশ্নকে। মানুষ এবং সমস্ত কালের মানুষই হয়ে উঠেছে ইলিয়াসের একমাত্র মনোযোগের বিষয়। আবার কায়েস আহমেদের স্বেচ্ছামৃত্যুর সুবাদে ভেবেছেন তিনি, হয়তো এই মৃত্যুর সুবাদেই তারা একদিন পৌঁছবেন সুমহান এক আনন্দ-বেদনার জগতে, ভাববেন একদিন, ‘স্বেচ্ছামৃত্যু কোনো পাপ নয়, ক্ষয় নয়, এই মৃত্যু মহাভারতের ভীস্মের মতোই শোভন ও সুন্দর।’ (পৃ ১৭৩) সৌন্দর্যের তত্ত্বতালাশ করতে করতে মামুন দেখা পান ইউল ডুরান্টের এবং মানুষকেই তিনি সবচেয়ে সৌন্দর্যময় বিবেচনা করেছিলেন জেনে সামান্য ভরসা খুঁজে পান নিজের বিদ্যাবুদ্ধির ওপরে; আবিষ্কার করেন আশ্চর্য-সুন্দর এক বেহালাবাদক মানুষকে, তিনি তার স্টেডিভেরিয়াস-বেহালা বাজানো হাতটি রাখেন চুপচুপ ফরমালিনে মায়ের কর্কট আক্রান্ত বুক আবদ্ধ করে রাখা মামুনের মাথার ওপর, চোখে জল জমে তার, অনুভব করেন, ‘…এই শহরের তাবৎ বুদ্ধিবাদী-সংগীততৃষ্ণার্তদের কাছে অ্যাপিল করার পরেও একটি রেকর্ড করা যায় না রঘুকাকার।’ (পৃ ১৯) তবু তিনি সৌন্দর্যবিষয়ক অসামান্য সব পাঠ দিয়ে যান, ‘কাকা, সুন্দর কিছু দেখলেই আমার চোখ ভিজে যায়।’ ‘সৌন্দর্য কি তবে কান্নার দ্যোতক?’ – ভাবতে শেখেন মামুন। বেহালাবাদক তাঁর কাছে নিয়ে আসেন সংবাদপত্র থেকে কেটে পকেটে রাখা বুকে-পিঠে স্লোগান লেখা নূর হোসেনের ছবি, ঘুম আসছে না তার, কান্না – কেবলই কান্না ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে, বলছেন তিনি, ‘মৃত্যুর কী অপূর্ব সৌন্দর্য দেখুন কাকা…।’ (পৃ ৮০) সৌন্দর্যের তত্ত্বতালাশ করতে করতে মধ্যবিত্তের চিত্তের কাছে পৌঁছে গেছেন মামুন, আতমপীড়নের স্বর চারপাশে : ‘লোকটি যেদিন শ্মশানে পুড়ে ছাই হলেন, সেদিন কীসব প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, নদীর স্রোত দেখতে দেখতে তার সবটুকু মনে নেই। যথারীতি শ্মশানের ছাই মেখে, ছাই মুছে আবার ঘরে ফিরে আসি। সিরামিক্স বিভাগের এক বন্ধু দুটি ছাপচিত্র দান করেছে, ঘরে টাঙিয়ে দিই। স্ত্রী হাউস-প্লান্ট করছে। আর্ট কালচারের অধ্যাপকদের মতো অনেক বই জোগাড় হয়েছে সৌন্দর্য বিষয়ে। গান হয়েছে। ফাঁকে ফাঁকে যামিনী, বার্গম্যান, তারকোভস্কি, ঋত্বিক…। জামাকাপড়ে আর্বান ডিজাইন হাউসের ফোক-মোটিভ, কোলাপুরি, কোকাকোলা, ভায়াগ্রা, শপিংমল, বার্গার, ম্যাগডোনাল্ড ইত্যাদি নিয়ে আমি যখন ঝকঝকে জীবনের স্বপ্ন গড়ছি, তখন আমাদের হাউজিং এস্টেটে রাতে একদল স্মার্ট হুলিগান এলো বেড়াতে। সারারাত হল্লা শুনলাম। আমাকে ডাকল। আমি যাইনি। ফোন করল কেউ সাহায্য চেয়ে, আমি যাইনি। ফোন করল কেউ সাহায্য চেয়ে, আমি ফোন রিসিভ করলাম না, পুলিশ স্টেশনে জানাতে বলল। রাজি হইনি। পাহারাদার রক্তাক্ত হয়ে পড়ে থাকল। আমি অ্যাম্বুলেন্স ডাকি না। নয়েজ টর্চার এড়াতে ঘরে তীব্র সরোদ চড়াই। হাউজিং এস্টেটের অন্যসব অধ্যাপক, 888sport live chatী, চিকিৎসক, দার্শনিকের ঘর থেকে ভেসে আসা মধ্যরাতের বিবিধ মেধাবী সংগীত একসময় হুলিগানদের স্বর এবং উচ্চারণ নিঃশেষ করে দেয়। আমাদের সৌন্দর্য-পুস্তক, আমাদের রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্কর, জীবনানন্দ, বিভূতি, কাফকা, ক্যামু, মার্কসসহ আমাদের তাবৎ সারিবদ্ধ ডিসিপ্লিনড গ্রন্থগুলি জানালা দিয়ে দরজা ভাঙার শব্দ শুনতে শুনতে, চোখ মুদে গ্যাং রেপের দৃশ্য ভুলবার জন্য মেডিটেশন করে। পাশের অ্যাপার্টমেন্টের অবিবাহিত সোশ্যাল সাইনটিস্ট দাঁত চেপে গালি দেয়… ডিমিনিউশন অফ রেসপনসিবিলিটি! কথাটি আমি ইচ্ছে করে ভুলে যাই। যে জন্য সকল মূর্খতা নিয়ে সৌন্দর্যদায়ক এক রকিং চেয়ারে, ফিনেগান ওয়েক্স বুঝবার জন্য পুরো জীবন আমি হত্যা করি। এই আত্মাহুতির খবর ছড়িয়ে গেলে আমার খ্যাতি হয় খানিকটা। এবার বসন্তে একটি ফুল ফোটে আমার কবরে। দ্বিজেন শর্মার মতো কেউ খুঁজে পেতে আবিষ্কার করেন ফুলটির নাম নার্সিসাস। কবরজুড়ে ফুলেরা এখন খেলা করে আর সৌন্দর্য ছড়ায়।’ (পৃ ৮১)
সুন্দর কিছু দেখলেই কান্নাকাতর রঘুদাই কি মামুনকে তাড়িত করেছে ‘আর চোখে জল’ খুঁজতে? কত বিবিধ প্রকরণ ক্রন্দনের, আমাদের তা জানা ছিল না। আশ্চর্যভূমির এলিস নিজের কান্না পার হচ্ছিল সাঁতার দিয়ে – মনে করিয়ে দেন তিনি। আর তাঁর দুর্বলচিত্ত আনমনা হয়ে পড়ে নিমাই হালদারের কথা ভেবে। অনুভব করেন, কান্না তাঁকে হয়তো প্রথম ছুঁয়েছিল বাবার কবরস্থানে। উঁচু করে শিশু মামুনকে ধরা হয়েছিল বাবার মুখ দেখানোর জন্যে। তিনি কেবল আন্দাজ করতে পারেন সামান্য ভেজা তুলো জায়গা করে নিয়েছে বাবার নাসারন্ধ্রে। এইভাবে বহুদিন কান্না তাঁর করতলগত হয়, মায়ের অনুপস্থিতি দেখলে কাঁদেন তিনি, কাঁদেন ড্রয়িং টিচারের মুখে অবজ্ঞার হাসি দেখে, বন্ধুকে সজাগ করতে গিয়ে শিক্ষকের তীব্র আঘাতে কান্না ভুলে যান তিনি, কান্না ভুলে যান তার ‘তরুণতম বন্ধু রতন শিক্ষকমন্ডলীর সামনে পুণ্যলোভী ছাত্র সংগঠনের জিহাদি তরবারিতে চূর্ণ হয়ে গেলে’, পেজমার্কার বসিয়ে তিনি মনীষীবন্ধুদের ক্রন্দনচিন্তাকে দ্রষ্টব্য করে রাখেন, সম্পর্ক খোঁজেন কান্নার সঙ্গে মানুষের পরিত্রাণ পর্বের কিংবা আত্মপরিশুদ্ধির। বইয়ের মৃত্যু-আশঙ্কায় চাপা উল্লাস কিংবা গোপনক্রন্দন ছড়িয়ে পড়ার এই যুগে কান্না ভুলে অকস্মাৎ মামুন ধাবিত হন নিঃসঙ্গ গ্রন্থের দিকে, স্বার্থপরের মতো আরো অন্তত পঞ্চাশ বছর বইয়ের আয়ুষ্কাল প্রার্থনা করতে থাকেন। আত্মপ্রসাদ অনুভব করেন ভার্জিনিয়া উলফকে এই কথা লিখতে দেখে : ‘সবাইকে শেষ বিচারের কালে যখন পুরস্কৃত করা হচ্ছে, তখন ঈশ্বর পড়ুয়াদের দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখো পিতর, এদের আর আমার কী 888sport app download bd বরাদ্দ করব, আমাদের 888sport app download bd দেবার কিছু নেই। এরা তো আসলে পড়তেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করত…।’ (পৃ ১০৭)
অতীতে প্রত্যাবর্তন নয়, আপাতনির্লিপ্ত এক ঘোরে কালের উজ্জ্বলতা আর নিষ্প্রভতায় পরি888sport slot game করতে করতে মামুন আমাদের যেন দেখান বর্তমানের এই উপনিবেশ, যা নিদারুণ নিরুপায়তার। আমাদের সাহস নেই সেই ঔপনিবেশিক জাল ছিন্ন করার – আরো সত্যি করে বলতে গেলে, আমরা মনেই করি না আবদ্ধ হয়ে আছি নতুন এক উপনিবেশে। সেই উপনিবেশ কেমন, তার কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা তিনি নিজেও পান পেশাগত জীবন থেকে, পাদ্রীশিবপুরে কিংবা পাবনায় গিয়ে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ধর্মের বৈকল্য আর নগরের বিকৃত পরিবর্ধন খুবলে খাচ্ছে মানুষকে, মানুষের মননকে, জীবনযাপনকে। সরকারি চাকরির সুবাদে তিনি যখন পাদ্রীশিবপুরে গিয়ে পৌঁছেন, রিটা গোমেজ জানতে চান তার কাছ থেকে, আদৌ থাকতে চান, নাকি শিগগিরই পালিয়ে যাবেন তিনি। মামুন ছিলেন, তা এক ব্যতিক্রমই বটে। ধর্মপ্রাণরা রুষ্ট হয়েছে, ‘মুসলিম ক্যান খ্রিষ্টানবাড়ির রান্না খাবে?’ রোষ এড়াতে রান্নার জন্যে খুঁজে বের করেছেন বিধবা নূরজাহানকে। উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হয়েছে, ধর্মপ্রাণরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে খ্রিষ্টানদের ওপর ‘বুশের অনুগামী’ বলে। নিরীহ স্বরে মামুন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, খ্রিষ্ট পরিবারের সন্তান তারিক আজিজ, লড়ছেন বুশের বিরুদ্ধে। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন হচ্ছে, বিশপ তার সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছেন আগন্তুক চিকিৎসককে, নির্বাচনের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে তা নিয়ে। বহিরাগত ছাপ এঁটে যাচ্ছে গায়ের ওপর, মামুন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সেখান থেকে। দূর্বাঘাসের মতো একপ্রস্থ দাড়ি এবং মাথায় তেলে ডোবানো টুপি পরে কেউ এসে স্ত্রীর শারীরিক দুর্বলতার জন্যে স্যালাইন চাইছে, সরকারি স্যালাইন কেবল ডায়রিয়া-কলেরা মোকাবিলার জন্যে, তাই না দেওয়াতে বাতাসে সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ‘খ্রিষ্টভক্তদের প্রতি মনোযোগ বেশি’ এই চিকিৎসকের। কী মনোবৈকল্য আমরা ছড়িয়ে রেখেছি আমাদেরই আবাসে, মামুন তা প্রতিদিন উপলব্ধি করেছেন পাদ্রীশিবপুরের জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে। রিটা গোমেজের নিরীহ জিজ্ঞাসা এমন এক জিজ্ঞাসা উত্তর দিয়েও যার নিষ্পত্তি করা যায় না। কিংবা যে-জিজ্ঞাসা জেগে ওঠে উত্তর জানা আছে বলেই। মামুনকে সে-জিজ্ঞাসার নিষ্পত্তি করতে হয়েছে প্রতিদিন থাকার মধ্যে দিয়ে। কিন্তু অর্জনও তো আছে, আছে প্রাপ্তি। কীর্তনখোলা পেরিয়ে শ্রীমন্তের পাড়ে পৌঁছলে বহুকাল পরে মনে পড়ে ‘সিদ্ধার্থে’র কথা, হেমন্তের অবি888sport app download for androidীয় সব গান আর নদীর ওপর সিনেমাটোগ্রাফি চোখে জল এনে দেয়। যেন কমলকুমার প্রত্যাবর্তন করেন, ‘অতি গভীর মনের কথা কহিতে, চোখ নিজেই অক্ষরে পরিণত হয়।’ অস্তিত্বের সংকট দেখছেন খ্রিষ্টান মেয়ের চোখে, নামাজ পড়বে না ‘মিশা’য় আসবে বুঝতে পারছে না সে। নিজেকে পাপী ভাবছে সে। সকালে ঘুম ভাঙতেই কানে ভেসে আসছে, সমস্বর সংগীত, ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে…।’ সারা শরীরে-মগজে তার শিহরণ ছড়িয়ে পড়ে, ঘরে জানালা নেই, দক্ষিণের দরজা খুলে দেখেন ‘কপিক্ষেতের ঘাস-মাটিতে শত-শত মানুষ সাধু যোসেফের মঠের সামনে ধ্যানমগ্ন। দীর্ঘ ক্যাসাক, ক্রুশ গলায় ফাদার সার্মন দিচ্ছেন,… রবীন্দ্রনাথ, বোধ করি এমনটিই চাইতেন।’ সারা পল্লিতে নবান্নের আয়োজন। কোথাও প্রাচীন ঘণ্টার শব্দ। হঠাৎ করেই খুঁজে পেয়েছেন বাঙালি মুসলিম পরিবারের ঐতিহাসিক ফাঁক, ‘সকল সম্প্রদায়ে সংগীত যখন ধর্মচর্চার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে গেছে, তখন এখানে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সযত্নে।’ এ-ও ভেবেছেন, ‘সমগ্র ভারতীয় মার্গ-সংগীতে মুসলিমদের প্রবল দাপট সত্ত্বেও তা বাঙালি মুসলমান সমাজে বড় কোনো প্রভাব তখনই ফেলতে পারেনি।’ (পৃ ১২২) প্রশ্ন জেগেছে, ‘888sport free betলঘু হিন্দু এবং বৌদ্ধও বটে, কিন্তু সমাজের তথাকথিত মাথাভারী লোকসকল, যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-চিকিৎসক-বুদ্ধিজীবী তথা প্রতিনিধিত্বশীল মানুষ এই দুটি সম্প্রদায় থেকে যে হারে বিদ্যমান, সেই তুলনায় শতবর্ষের ধর্মপল্লি ইউরোপীয় সাহেবদের সাহচর্য পাওয়া সত্ত্বেও এখনো শূন্যের কোঠায় কেন…।’ (পৃ ১২৪) ‘ফাদার সিয়ের্গি’কে নিয়ে ফাদারের সঙ্গে কোনোদিন কথা বলা হয়নি, এই অতৃপ্তি জমছে। আবার হেমায়েতপুর এসে ইনসেনিটি নিয়ে নিৎসের অনুভূতি লিখে রেখেছেন যে-পৃষ্ঠাটিতে, তার শেষে মোটা নিবের কলমে লিখে রাখছেন আত্মহননকারী ঠিকানাহীন সিজোফ্রেনিক ব্যক্তির পুরো নাম ও মৃত্যু তারিখ। কেউ আর আসেনি তার খোঁজখবর নিতে, অবস্থার উন্নতি ঘটার পরে সমাজকল্যাণের কর্মচারীরা যাকে ঠিকানা ধরে পৌঁছাতে গিয়ে জানতে পারে, ঠিকানাই বানোয়াট। বেদনাতপ্ত অভিজ্ঞতা, কিন্তু তাকে খুঁজতে প্রাণিত করছেন সেইন-ইনসেইনের বিভেদ।
কথা ইশারা এক বিষণ্ণ শক্তি হয়ে আমাদের ইন্ধন জোগায় প্রসন্ন হতে, সামনের দিকে এগোতে। মামুন হুসাইনের এ-গ্রন্থ আমাদের তাড়িত করে অতীতকে নতুন করে দেখতে, নতুন উপনিবেশের মুখোমুখি হতে, জিজ্ঞাসু হতে। যে-মুখ আমরা লুকিয়ে রেখেছি আমাদের থেকে, সে-মুখের উদ্ভাসে যেন হঠাৎ করেই শিমুল তুলোর বাউরি ওড়ে। উড়তে উড়তে রোদ পিঠে করে, পাঁচ আঙুলে চোখ বাঁচিয়ে আরো হাঁটতে ডাক দেয় আমাদের। r
এক মুক্তিকামী মানবীর গল্প
পূরবী বসু
ডহর
হাসান আল আবদুল্লাহ্
হাতেখড়ি
888sport app, ২০১৪
২৫০ টাকা
হাসান আল আবদুল্লাহ্ মূলত কবি। নববইয়ের দশকের যে-কয়েকজন নবীন কবি তাঁদের শুদ্ধ ছন্দবোধ এবং চিত্রকল্পের বৈচিত্র্য ও অভিনবত্ব দিয়ে পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে হাসান আল আবদুল্লাহ্ নিঃসন্দেহে অন্যতম। 888sport app download apk রচনা করা ছাড়াও ছন্দের ওপর বিস্তৃতভাবে লেখা তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ 888sport app download apkর ছন্দ ক্লাসরুমে পঠিত হয় বলেই প্রশংসার দাবি রাখে না, কবি-যশপ্রার্থী তরুণ কাব্যামোদীদের ছন্দবোধ নির্মাণেও এ-বইটি প্রভূত সাহায্য করে বলে একাধিক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি। তাঁর আরো দুটি উল্লেখযোগ্য 888sport app download apkর বই হচ্ছে স্বতন্ত্র সনেট, নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ। তাঁর সাম্প্রতিকতম গ্রন্থ হলো মাওলা ব্রাদার্স থেকে সদ্য প্রকাশিত হাসান আল আবদুল্লাহ্-সম্পাদিত বিশ শতকের বাংলা 888sport app download apk।
ডহর হাসান আল আবদুল্লাহ্র দ্বিতীয় 888sport alternative link এটি। নববইয়ের দশকে প্রকাশিত তাঁর প্রথম 888sport alternative link আহত মুকুল তেমন প্রচার পায়নি বলে অধিকাংশ পাঠকের দৃষ্টির বাইরে থেকে গেছে তা।
ডহর হাসানের দীর্ঘ প্রবাস-জীবনের পরিশ্রমের ফসল। ঝরঝরে সাবলীল ভাষায় রচিত ও সুখপাঠ্য এ-888sport alternative link রাহেলা বিবির ব্যক্তিগত জীবনের উপাখ্যান শুধু নয়, বরং প্রবাস-জীবনে রাহেলার বিচিত্র অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত এ-888sport alternative link বর্তমানে নিউইয়র্ক শহরে বসবাসকারী বাঙালিদের জীবন-যাপনের আংশিক বাস্তবচিত্রও বটে। 888sport app download apkর মতো গদ্য888sport live footballেও হাসান আল আবদুল্লাহ্ যথেষ্ট সাবলীল ও স্বতঃস্ফূর্ত। তাঁর 888sport alternative link পাঠককে পাঠ করে শেষ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
888sport appsের এক 888sport promo code রাহেলা বিবি, যিনি জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে তিক্ত হয়েই শরীর-মনের অবসাদ লাঘব করার প্রত্যাশায়, নিজের মতো করে স্বাধীনভাবে জীবন কাটানোর স্বপ্নে সুদূর আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। রাহেলা বিবি এসেছিলেন পড়াশোনা করতে। অথবা যে-ভিসা নিয়ে দেশ ছেড়ে আমেরিকা আসার সুযোগ হয়েছিল তাঁর, সেটি ছিল ছাত্র-ভিসা। তাঁর সেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, জীবনধারণের জন্য রেস্টুরেন্টে কি কাপড়ের দোকানে খন্ডকালীন কাজ করা এবং প্রবাসী বাঙালি-জীবনের নানা সমস্যা-সংগ্রামে নিয়ত ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার বিস্তারিত বর্ণনা আমরা পেয়েছি 888sport alternative linkের পাতায় পাতায়। উন্নততর জীবনধারণের আশায় প্রবাসে পাড়ি দেওয়া এ-যুগের আর দশটি সাবালিকা 888sport promo codeর মতোই বিদেশে এসে বিভিন্ন ধরনের পেশায় চাকরি করতে হয়েছে রাহেলাকে। বৈচিত্র্যময় জীবনধারণে অভ্যস্ত, বহু ভূমিকা পালন করা এক বর্ণিল অথচ সংগ্রামময় জীবনের অধিকারী 888sport promo code রাহেলা, যিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি পিএইচ-ডির জন্য দিনে ক্লাস করেন আর জীবনধারণের জন্য রাতে এক রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে দিতে প্রবাসে একলা 888sport promo code রাহেলা যখন নতুন সমাজের রীতিনীতি, চলাচলে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তখন হঠাৎ করেই একদিন আবার নিজের শেকড় থেকে তীব্র ও জোরালো এক টান তিনি অনুভব করেন তাঁর নাড়িতে। দিশেহারা হয়ে পড়েন রাহেলা। স্বামী, সংসার, সন্তান সব পেছনে ফেলে, রক্ষণশীল সমাজ ছেড়ে এসে রাহেলা নতুন দেশে নতুনভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন; কিন্তু অকস্মাৎ কন্যার ভয়ংকর অসুখের সংবাদ তাঁর সব স্বপ্ন আর সংকল্প ওলট-পালট করে দেয়। চিন্তায়, চেতনায়, কর্মে অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী, আধুনিকমনস্ক ও স্বাধীনচেতা রাহেলা আবিষ্কার করেন, ফেলে আসা দেশে গভীর ও দীর্ঘ খাদ থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর নতুন ঠিকানায় মুক্তির সন্ধান পেয়েছেন বলে এতদিন তিনি যা ভেবেছিলেন সেটায় বাস্তবতা ছিল না, সেটা ছিল স্বপ্নের মতো – কল্পনায় ভেসে বেড়ানোর মতো একটা ঘোর। কন্যার ক্যান্সার তার পদজোড়া আবার মাটিতে নামিয়ে আনে। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন রাহেলা।
ডহর পড়তে পড়তে রাহেলার অতীত সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারি না আমরা। একটি মাত্র অধ্যায়ে অতিসংক্ষিপ্ত আকারে শুধু এটুকু প্রকাশিত হয় যে, পছন্দ করে বিয়ে করা স্বামী রাকিব ও কন্যা পুতুলকে দেশে রেখে সম্পূর্ণ নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টাতেই একা আমেরিকা চলে এসেছিলেন রাহেলা। এরপরও আমরা জানি না, আসলে রাহেলা বিবি নামের এই 888sport promo code কে? 888sport appsে কোথায় তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠেছেনই বা কোথায়? পড়াশোনা কী করেছেন, তাঁর পারিবারিক পরিচয় কী? তাঁর মা-বাবা কে, তাঁরা কি বেঁচে আছেন? ভাইবোন? সংসারে বিমুখ হয়েছিলেন কি শুধু আশেপাশে গৃহস্থালির লোকজনের জীবনের ক্লেদ, আবর্জনা দেখে? নাকি তাঁর নিজের সংসারেও জমানো ছিল কিছু অন্ধকার? কিন্তু সে-ধরনের কোনো আভাস মেলে না, এমনকি যখন দেশ ছেড়ে চলে আসছেন, তখনো নয়। তবে নিজ সমাজে 888sport promo codeর অবস্থান দেখে তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছিলেন সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে কে জানে, আপন সংসারেও হয়তো ছিল কিছু অপূর্ণতা। তার পরও বিদেশে এসে এই দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সঙ্গে, স্বামীর সঙ্গে, এমনকি কন্যার সঙ্গেও একটিবার যোগাযোগ করেননি রাহেলা। তাঁর এই নিরাসক্ত, নৈর্ব্যক্তিক ব্যবহারের কোনো ব্যাখ্যা, কোনো উত্তর বা কারণ আমরা খুঁজে পাই না। আমরা বুঝে উঠতে পারি না, রাহেলা কি তাহলে এতদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন? যদি তাই হয়, জীবন থেকে পালাতে সত্যি যদি তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে থাকেন, কার কাছ থেকে পালাচ্ছিলেন তিনি? বিদেশে আসার পর রাহেলা বিবি তাঁর স্বামীর অর্ধশতাধিক চিঠির কোনো উত্তর দেননি। চিঠিগুলো খুলে পর্যন্ত দেখেননি। কিন্তু কেন, কোন বিতৃষ্ণায়, তা স্পষ্ট হয় না। দেশে থাকতে তাঁর পারিপার্শ্বিকতায় ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা তাকে মাঝে মাঝেই তাড়া করে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে প্রায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল রাহেলার, যার ছিটেফোঁটা হয়তো নিজ জীবনেও উপস্থিত ছিল। আমরা সঠিক জানি না। প্রবাসে তাঁর জীবনযাপন, চিন্তা, কর্ম দেখে মনে হয় তাঁর কোনো অতীত নেই, উৎস নেই, কোনো বন্ধন নেই, পিছুটান নেই কোথাও। কিন্তু 888sport alternative linkের একেবারে শেষে এসে যেন অকস্মাৎ রাহেলা নিজের প্রকৃত সত্তার মুখোমুখি হন, যে-সত্তাকে পেছনে ফেলে অতীতকে বেমালুম ভুলে থাকতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি এতদিন।
তবে রাহেলা বিবি নিঃসন্দেহে 888sport apps থেকে সাম্প্রতিককালে আসা 888sport promo codeদের তুলনায় দৃষ্টিভঙ্গিতে, চিন্তাভাবনায়, চলাফেরায়, ব্যক্তিস্বাধীনতা বোধে, আত্মসুখের সচেতনতায়, বলতে গেলে সামগ্রিক জীবনচর্চায় যথেষ্ট ভিন্ন প্রকৃতির। স্বাধীনভাবে চলাচলে অভ্যস্ত, জৈবসুখের প্রতি কেবল আগ্রহী বা কৌতূহলী নন, রীতিমতো ও নিয়মিত তা উপভোগ করার জন্য তীব্র বাসনায় কাতর। প্রায় সদাপ্রস্ত্তত থাকেন রাহেলা বিবি পুরুষসঙ্গের জন্যে। তাই দেশ থেকে আমেরিকার মাটিতে পা দেওয়ার স্বল্প সময়ের মধ্যেই পশ্চিমা সভ্যতায় 888sport promo code-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সংস্কৃতিতে অত্যন্ত সহজে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন রাহেলা বিবি। সেজন্যে মাঝে মাঝে নিজ শহরেই মোটেল ভাড়া করে নতুন আমেরিকান বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে শারীরিক সুখ ভোগ করা বা রাত্রিযাপনে কোনো প্রকার গ্লানি বা অপরাধবোধ দেখা যায় না রাহেলার মধ্যে, যদিও সেই বয়ফ্রেন্ড বা প্রেমিকের সঙ্গে মানসিক দিক দিয়ে প্রবলভাবে জড়িত নন রাহেলা। ভাবাবেগেও আপ্লুত নন। 888sport promo codeস্বাধীনতার অন্যতম উপাদান নিজ শরীরের ওপর 888sport promo codeর কর্তৃত্ব স্থাপন, সেটা মেনে নিয়েও বলতেই হয়, 888sport promo codeস্বাধীনতার আরো মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো 888sport promo codeর নিজস্ব চিন্তা-চেতনাসহ স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকা। এ ছাড়া 888sport promo codeর অবমূল্যায়ন করে যারা, তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা বা পরিহার করে চলাও 888sport promo code-স্বাধিকারেরই অন্তর্গত। কিন্তু রাহেলা বিবি শরীর শরীর খেলায় মেতে উঠতে দ্বিধা করেন না তাঁদের সঙ্গেও, যাদের মানুষ হিসেবে মোটেও 888sport apk download apk latest version করেন না রাহেলা, যাদের চোখে 888sport promo code কেবল ভোগের সামগ্রী। বরং রাহেলা লক্ষ করে হতাশ হন, এদেশে যৌথভাবে কিছু করতে গেলে, যেমন একসঙ্গে কিছু কিনে খেলে বা বেড়াতে গেলে, সংশ্লিষ্ট খরচের অঙ্কটা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার যে-রেওয়াজ রয়েছে, এই হোটেল-মোটেল ভাড়া করে যৌনাকাঙ্ক্ষা মেটানোর বেলাতেও সে-নিয়ম প্রযোজ্য। রাহেলা তাই মনের ভেতর বিদেশি বয়ফ্রেন্ডের জন্য একরাশ ক্ষোভ নিয়েও মোটেলের খরচের অর্ধেক পরিশোধ করতে দ্বিধা করেন না এবং পুনরায় আসেন সেই মোটেলে যৌনতৃপ্তির প্রত্যাশায়।
স্বাধীনভাবে চলাফেরায় ও শারীরিক খেলায় মেতে ওঠা রাহেলার এমন হয় যে, তাঁর এক বয়ফ্রেন্ড যখন অন্য এক গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়, রাহেলা মানসিকভাবে তেমন আহত না হলেও দুই সপ্তাহ পুরুষ-সংসর্গবিহীন কাটাতে তাঁর খুব কষ্ট হয়। যে-রেস্টুরেন্টে কাজ করেন রাহেলা, সেটির পাকিস্তানি ম্যানেজারের (ঘরে যার লিভ-ইন গার্লফ্রেন্ড রয়েছে) গা-ঘেঁষে বসে, একটু হাত ধরে ফ্লার্ট করে নিজের চাকরিটা বজায় রাখতে সমর্থ হলেও রাহেলার শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য, বলা বাহুল্য, এটুকু স্পর্শই যথেষ্ট নয়। প্রকৃত অর্থে পুরুষের সঙ্গে শারীরিকভাবে মিলিত হতে না পেরে অবদমিত বাসনার শিকার রাহেলা একই রেস্টুরেন্টে কর্মরত এক সুদর্শন স্প্যানিশ যুবকের দিকে হাত বাড়াতে প্ররোচিত হন। মালিক ও ম্যানেজারের অল্পসময়ের জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে অনুপস্থিতি রাহেলাকে সেই স্প্যানিশ যুবক জিকোর খুব কাছে এনে দেয়।
এরপরের অনিবার্য পরিণতি স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে যায়। ফলাফল জানাজানি হলে অবধারিতভবে দুজনেরই চাকরিচ্যুতি ঘটে। কিন্তু এই জিকোকেই মাত্র কিছুদিন পরে রাস্তায় দেখে চিনতেও পারেন না রাহেলা। পরে জিকো নিজের পরিচয় দিলে তার সঙ্গে মাঝে মাঝে শারীরিকভাবে মিলিত হতে মোটেও কুণ্ঠাবোধ করেন না রাহেলা, যদিও জিকোর রূঢ় আচরণ ও অশোভন-অভদ্র কথাবার্তা প্রায়ই আহত করে রাহেলা বিবিকে।
আমেরিকায় পিএইচ-ডি করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত কঠিন ও অতিপরিশ্রমসাপেক্ষ, অধ্যবসায়ের ব্যাপার। শুধু ক্লাস করা নয়, ডিসার্টেশন লেখার জন্য প্রচুর পড়াশোনা করা, হাইপোথিসিস দাঁড় করানো, এই বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যা এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তার বিস্তারিত ইতিহাস রচনা, এবং সবশেষে নিজে যা আবিষ্কার বা উন্মোচন করলেন, সে-সম্পর্কে মন্তব্য এবং বিস্তারিত লেখন ও পুনর্লেখনের প্রয়োজন হয়। ডিসার্টেশনের আগে আছে বিশদ কোয়ালিফাইং পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ভালো না করলে পিএইচ-ডির সব কোর্স-ওয়ার্ক হয়ে গেলেও তাকে পিএইচ-ডি প্রোগ্রাম থেকে সরিয়ে একটি মাস্টার্স ডিগ্রি করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে ইচ্ছা থাকলেই এবং পিএইচ-ডির জন্যে ভর্তি হলেই সকলে পিএইচ-ডি করতে পারে না। ডিসার্টেশন ছাড়াও আমেরিকায় পিএইচ-ডি করতে হলে সব কোর্স-ওয়ার্ক শেষে সকল বিষয়ের ওপর বিভীষিকাময় কমপ্রিহেন্সিভ পরীক্ষা দিয়ে তাতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে হয়। কিন্তু ডহরের রাহেলাকে দেখলে, তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন দেখলে মনে হয় না বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সর্বোচ্চ পড়াশোনাকে একজন নিবেদিত ডক্টোরাল প্রার্থীর মতো সিরিয়াসভাবে গ্রহণ করেছেন তিনি। তাঁর বৃত্তি পাওয়া, হারানো এবং একই সেমিস্টারে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি বৃত্তি জোগাড় করে নেওয়া কিছুটা অভিনব। এত দ্রুত সব ঘটে যাওয়া সাধারণত সম্ভব হয় না অন্যদের বেলায়, বিশেষ করে বিদেশি ছাত্রদের বেলায়। যে-কোনো উৎস থেকেই অর্থ আসুক, তা সাধারণত কিছুকাল আগেই নির্দিষ্টভাবে স্থির হয়ে যায় কোথায়, কতখানি, কেমন করে, কিসের ভিত্তিতে বণ্টিত হবে। সেই হিসাবে রাহেলার অভিজ্ঞতা আমাদের এটুকু বুঝতে দেয় যে, তিনি বেশ সৌভাগ্যবতী। আরো একটি ব্যাপারে রাহেলা অন্য দশটি পিএইচ-ডি ছাত্রীর চেয়ে আলাদা। এদেশে ডর্মে একরুমে চার-পাঁচজন থাকে মূলত আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পড়ার সময়। গ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রীরা বেশিরভাগই বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকেন, অল্পসংখ্যক যারা ডর্মে থাকেন তারাও সাধারণত সিঙ্গল রুমে থাকেন। গ্র্যাজুয়েট ডরমিটরি (যদি থেকে থাকে) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডর্ম থেকে আলাদা হয়ে থাকে। আমরা ধরে নিচ্ছি এ-888sport alternative linkের নায়িকা রাহেলা বিবি অর্থের টানাটানিতেই ডর্মে আরো চার রুমমেটের সঙ্গে থাকেন, যেটা সচরাচর এদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদের মধ্যে দেখা যায় না।
ডহর কি 888sport promo codeবাদী 888sport alternative link? এক অর্থে বলা যায়, হ্যাঁ এটি একটি 888sport promo codeবাদী ও 888sport promo codeবান্ধব 888sport alternative link। 888sport alternative linkের প্রধান 888sport promo codeচরিত্র, নামে পুরাতনী গন্ধ যতটাই থাকুক, জীবনযাপনে, চিন্তাচেতনায় বেশ আধুনিকমনস্ক বটে। বিশেষ করে নিজের শরীরের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ এবং নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌন চেতনায় স্বাধীনভাবে সাড়া দেওয়া বাঙালি 888sport promo codeর জন্য সাহসী পদক্ষেপ সন্দেহ কী? ডহর গ্রন্থে হাসান আল আবদুল্লাহ্ আরেকটা জিনিস করেছেন, সুযোগ পেলেই তিনি ইতিহাস থেকে অথবা চলমান জীবনের প্রাত্যহিক ঘটনা থেকে কিছু সত্য ঘটনা বা বিশেষ বিশেষ খ্যাতিমান ব্যক্তির কর্মতৎপরতার কথা তুলে এনে তার এ-888sport alternative linkে যোগ করেছেন। যেমন, রাহেলার দেশে ফেলে আসা 888sport sign up bonus রোমন্থনকালে সমাজে 888sport promo codeদের দুরবস্থার কথা স্পষ্ট হয়ে চোখে ভাসে আমাদের। রাহেলা বোঝেন পরিবারে, বিশেষত দাম্পত্যে, পদে পদে 888sport promo codeর নিপীড়িত হওয়ার ব্যাপারটা শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, শহুরে-গ্রাম্য সব শ্রেণির, সব প্রকার 888sport promo codeর মধ্যেই বিদ্যমান। কোনো পার্থক্য নেই। গৃহে নির্যাতিত 888sport promo codeটির সাহায্যে এগিয়ে আসার কেউ নেই – না বাড়িতে, না আশেপাশে। নির্যাতিতা, বিশেষ করে বিবাহিতা, ছোট ছোট সন্তানের জননী 888sport promo codeরা সমাজে বড়ই অসহায় ও একা। রাহেলা এ-ধরনের চিন্তায় যখন মশগুল, হাসান আল আবদুল্লাহ্ সে-সুযোগে সুচারুরূপে এবং অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবে 888sport promo codeশিক্ষা ও 888sport promo code-আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পটভূমি তুলে ধরেন। পশ্চিমে এবং পূর্বে (বিশেষ করে মুসলমান 888sport promo codeদের শিক্ষাক্ষেত্রে), 888sport promo code স্বাধিকারের প্রবক্তা ও পথিকৃৎ সেই যুগস্রষ্টা দুই 888sport promo code, যথাক্রমে মেরি ওলস্টোঙ্ক্রাফট ও বেগম রোকেয়ার প্রসঙ্গ এনে সংক্ষেপে এই দুই মহীয়সীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
একইরকমভাবে 888sport alternative linkের মূল চরিত্র ছাড়াও পার্শ্বচরিত্রদের জীবনযাপন ও অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমেরিকায় বর্ণবাদের ইতিহাস সম্পর্কে ইঙ্গিত দেন হাসান আল আবদুল্লাহ্। বর্ণ সমস্যার কথা বলতে গিয়ে শুধু মার্টিন লুথার কিং নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যান্ডেলা, আমেরিকার ম্যালকম এক্স ও রোজা পার্কের সেই বাসে সিট না ছাড়ার দৃঢ়তার প্রসঙ্গও তুলে আনেন। একইরকমভাবে উঠে আসে 888sport apk-প্রযুক্তি-পরিবেশ-গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের মতো বিশ্বব্যাপী নানা গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা ও সমস্যার কথা। নিউইয়র্কের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কথা বলতে গিয়ে এক ফাঁকে লন্ডন থেকে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর আগমন ও বঙ্গবন্ধুর প্রশস্তিসহ তাঁর বক্তৃতার সারসংক্ষেপ প্রায় সবটাই বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে বর্ণনা করে যান হাসান এ-গ্রন্থে। এতে প্রবাসী বাঙালির প্যাশন, বিনোদন, রাজনীতিসচেতনতা, পার্টি-পলিটক্স সম্পর্কে একটি বাস্তবচিত্র আমাদের চোখে ভাসে। একইরকমভাবে একই জায়গায় বহু বাঙালির বাস হলে যা হয়, তা-ই ঘটে চলেছে এখন নিউইয়র্ক-নিউজার্সির মতো জায়গায়। এক বাঙালির সঙ্গে আরেকজনের কোন্দল, সেই কোন্দলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার দৃষ্টান্তও একেবারে কম নয় ইদানীং। এসব ঘটনা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের আলোকে রচিত হওয়ায় তা অত্যন্ত জীবন্ত হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয় – মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। হাসান আল আবদুল্লাহ্ নিজেও দুই যুগের বেশি আমেরিকা-প্রবাসী হওয়ায় এবং নিউইয়র্ক শহরে বাস করায় এখানকার সদ্য গড়ে ওঠা নতুন বাঙালি সমাজকে ভালো করেই জানা আছে তাঁর। বিভিন্ন সভা-সমিতির প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রথমে গলায় গলায় পিরিতি, তারপর ঝগড়াঝাটি, মারামারি, অর্থ বা ইমিগ্রেশন নিয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, হিংসা, দ্বেষ, হাতাহাতির বিবরণ, এমনকি পুলিশ-কোর্ট-কাছারি করার মতো বিভিন্ন ঘটনা অত্যন্ত বাস্তবতার সঙ্গে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন তিনি।
রাহেলা ছাড়া 888sport alternative linkের আরো দুটি চরিত্র যারা সবচেয়ে জীবন্ত, মানবিক, সুস্থ ও হৃদয়বান বলে চিত্রিত হয়েছে এই গ্রন্থে, তারা হলো রাহেলা বিবির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতিমাখা আকর্ষণবোধ করা সহকর্মী যুবক শরীফ ও তার রুমমেট আতিক। গলাকাটা পাসপোর্ট নিয়ে একবার আমেরিকায় এসে খামখেয়ালি করে কিছুটা অবহেলার সঙ্গেই একদিন আবার দেশে ফিরে আসে শরীফ। যদিও ভালো করেই সে জানত, আবার আমেরিকায় ফিরে আসার সুযোগ নাও মিলতে পারে বাকি জীবনে। অর্থাৎ আমেরিকায় ফিরে আসার নিশ্চয়তা না থাকা সত্ত্বেও শরীফ স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যায়, যা সিংহভাগ বাঙালি করে না কোনোমতেই। এক বছর পরে আবার ডিভি ভিসা নিয়ে স্থায়ী ও বৈধভাবে ফের আমেরিকা ফিরে আসে শরীফ। আসার সময় কাকতালীয়ভাবে একটি বিস্ফোরক সংবাদ বয়ে আনে, তা হলো রাহেলা বিবি বিবাহিত। তার স্বামী রাকিব হাসান এখনো বেঁচে আছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এখনো সরকারি অফিসে কর্মরত, যে সুবাদে শরীফের সঙ্গে দেখা হয় তার। 888sport appয় থাকেন রাকিব হাসান কন্যা পুতুলকে নিয়ে। নিউইয়র্কে বসবাসরত রাকিবের স্ত্রী (রাহেলা) রাকিব বা কন্যা পুতুল কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। রাকিব বা পুতুল জানে না, রাহেলা কোথায় আছেন, তার ফোন নম্বর কী। রাকিবের দেওয়া তার স্ত্রীর ছবি দেখেই শরীফ প্রথম জানতে পারে রাহেলাই রাকিব হাসানের স্ত্রী। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার, রাহেলা বিবি যিনি এই গ্রন্থের সূত্রধর, প্রধান চরিত্র, যাঁকে ঘিরে ডহর রচিত, ভুলেও কখনো সারা গ্রন্থে তাঁর ফেলে আসা স্বামী এমনকি কন্যার জন্য কোনো পিছুটান, অনুরাগ বা বিদ্বেষ একবারও প্রকাশ করেননি। চিন্তায়, কর্মে, স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নে কখনো আসেনি তাঁর আগের সংসারের কথা, ফেলে আসা দুটি মানুষের কথা। স্বামীর সঙ্গে যদি সম্পর্কে জটিলতা বা বিদ্বেষ থেকেও থাকে এবং অবস্থার দুর্বিপাকে সন্তানকে ফেলে রেখে যদি সাগর পাড়িও দিতে হয় রাহেলাকে, নিজ সন্তানকে সম্পূর্ণ অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করা খুব কম মায়ের পক্ষেই সম্ভব হয়। সে হিসেবে রাহেলা হয়তো চারিত্রিকভাবেই বন্ধনমুক্ত স্বাধীন জীবনযাপনে উৎসাহী এক বিরল 888sport promo code। তবে নিজের পরিবারের কথা 888sport app download for android না করলেও অতীতের অন্য কত গৌণ চরিত্রের কথা বারবার উঠে এসেছে রাহেলার 888sport sign up bonusপটে যারা তাঁর পূর্বপরিচিত ছিল, প্রতিবেশী ছিল। এসব ভাবতে গেলে রাহেলা বিবির গোটা চরিত্রটাকেই একটি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব চরিত্র বলে মনে হয়। এছাড়া লেখক বরাবর তাঁকে প্রথম নামে (রাহেলা) না চিহ্নিত করে তাঁর পুরো নাম ‘রাহেলা বিবি’ ব্যবহার করেছেন। ‘রাহেলা বিবি’ নামটি আজকের দিনে যথেষ্ট পুরনো ধাঁচের নাম বলে বিবেচিত। শুধু এজন্যে নয়, 888sport alternative linkের নায়িকাকে সবসময় পূর্ণ নামে চিহ্নিত করার রীতিও ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে যথেষ্ট অভিনব ও শ্রুতিকটু বলে মনে হয়। হাসান আল আবদুল্লাহ্ ছাড়া অন্য আর সব লেখকই সম্ভবত কেবল রাহেলা বলেই উল্লেখ করতেন 888sport alternative linkের নায়িকাকে। তবে রাহেলার পরিবর্তে রাহেলা বিবি এই ডাক বা শব্দ ব্যবহারের মধ্যে বিশেষ কোনো দ্যোতনা বা ব্যঞ্জনা রয়ে গেছে কিনা, যেটা ধরতে পারা যায়নি, বলা শক্ত। শুধু তাই নয়, আগাগোড়া লেখক রাহেলা বিবির ক্রিয়াপদে সম্মানার্থে ‘আপনি’ ব্যবহার করে গেছেন, যেমন রাহেলা বিবি গেলেন, খেলেন, বললেন, ইত্যাদি। লেখকের সম্মানার্থে এই গ্রন্থের আলোচনাকালে সেই রীতিই অনুসরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে রাহেলা সম্পর্কিত ক্রিয়াপদে। তবে 888sport alternative linkে প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ চরিত্র ছাড়া সাধারণত কোনো নায়ক-নায়িকা বা অন্য কোনো অল্পবয়সী 888sport promo code-পুরুষের চরিত্র বা কাজকর্ম বর্ণনাকালে ক্রিয়াপদে সম্মানার্থে আপনি ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না। এটার কোনো ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি পুরো গ্রন্থে। এ ছাড়া রাহেলা বিবি যতই স্বাধীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হোন না কেন, শারীরিক সম্পর্ক রচনায় তাঁর খুব বাছবিচার আছে বলে মনে হয় না। শারীরিক চাহিদা মেটাতে যে-মানুষকে অপছন্দ বা ঘৃণা করেন, তাঁর কাছেও শরীর পেতে দিতে দ্বিধা করেন না রাহেলা বিবি। উদাহরণস্বরূপ জনাথন ও জিকোর প্রতি তাঁর মনোভাব এবং তাদের সঙ্গে বিদ্যমান তাঁর দৈহিক সম্পর্ক। এমন ভোগবাদী, বাস্তব চরিত্রের যে-888sport promo code, যাকে দৈনন্দিন কোনো বিষয়ে আবেগী বা কল্পনাপ্রবণ মনে হয় না, বরং মনে হয় ঘোর বস্ত্তবাদী, তিনি যখন নাজিম হিকমতের 888sport app download apk পড়েন বা মেঘের সঙ্গে একান্তে একা একা কথা বলেন, তাঁকে রাহেলার মূল চরিত্রের সঙ্গে বেমানান ও খাপছাড়া মনে হয়।
কিন্তু মেয়ের ক্যান্সার হওয়ার সংবাদ পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে বদলে যান রাহেলা। রাকিবের পরামর্শে ও নিজের অন্তরের তাগিদে কন্যার আমেরিকায় চিকিৎসা করার উদ্দেশ্যে শরীফের মহানুভব প্রস্তাব গ্রহণ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না রাহেলা। শরীফের কাগুজে স্ত্রী হিসেবে ভিসা পেতে ও রাকিবের সঙ্গে ডিভোর্স নিতেও সময় নেন না। শরীফের বদান্যতায় কন্যাকে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে আসেন নিউইয়র্কে। অসুস্থ কন্যার জন্য তখন রাহেলার বুক উথলে উঠেছে। অথচ অবাক লাগে, যে-মেয়ের ক্যান্সার হয়েছে বলে রাহেলার বুকে প্রবল মাতৃস্নেহ উৎসারিত হয়ে ওঠে, সেই মেয়ের কোনো 888sport sign up bonus, তার জন্যে কোনো পিছুটান, আকুতি আমরা আগে কখনো কোথাও লক্ষ করিনি। তার নামটা পর্যন্ত উচ্চারিত হয়নি মায়ের মুখে বা চিন্তায়। কখনো না। মেয়েটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত বাঁচেনি। তবে পুতুলের চিকিৎসার সময়ে পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা ও নির্ভরতার ফলে একটা সম্পর্কের সূচনা হয় রাহেলা ও শরীফের মধ্যে, যা পুতুলের মৃত্যুর পর সুখের অন্বেষণে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়ানো রাহেলার জীবনকে একটি নির্ভরযোগ্য ও স্থির জায়গায় নোঙর গাঁথতে সাহায্য করলেও করতে পারে।
‘ডহর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ গর্ত, খাদ বা নিচু জায়গা। ডহর বলতে লেখক এই গ্রন্থে ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন বোঝা না গেলেও হতে পারে এতে রাহেলা বিবির জীবনের কথাই প্রকারান্তরে বলা হয়েছে। দেশ ছেড়ে, পরিচিত পরিবেশ ফেলে নতুন দেশে এসে, নতুন পরিচয়ে আবার নতুন করে জীবন গড়তে চেয়েছিলেন রাহেলা বিবি। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত তাঁর কন্যার চিকিৎসা ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রাহেলা বোঝেন, চেষ্টা করলেই গুহা থেকে বের হয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে বাইরে চলাচল করা যায় না। এক গর্ত থেকে বেরোলেও আরেক গর্তে গিয়ে পড়া সম্ভব। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটাই ঘটে। আবার বড় পরিসরে শুধু রাহেলার ব্যক্তিজীবনের কথা না বুঝিয়ে লেখক ডহর বলতে বৃহত্তর অর্থে প্রবাসে বাঙালির বা অন্য বিদেশিদের জীবনধারণ ও বেঁচে থাকার কথাও বুঝিয়ে থাকতে পারেন। স্বদেশ থেকে উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় একবার গভীর গর্ত থেকে উঠে এসে নতুন করে প্রবাসে আবার আরেক ধরনের গর্তে বা খাদে পড়ে মানুষ। তখন এই বিশাল খাদে হাবুডুবু খেতে খেতে ভালো লাগুক, মন্দ লাগুক এর থেকে পরিত্রাণ আর পায় না অধিকাংশ মানুষই। ডহরের শিকার হয়ে পড়ে তারা।
হাসান আল আবদুল্ললাহ্র 888sport alternative link ডহর একটি সুলিখিত, সুপাঠ্য 888sport promo codeবান্ধব 888sport alternative link। বাংলা 888sport live footballে 888sport promo codeর যৌনতা ও যৌনাচার নিয়ে এতখানি খোলামেলা অকপট বর্ণনা ও নিজের শরীরের ওপর 888sport promo codeর নিজের কর্তৃত্বের ভারগ্রহণের এমন জয়গান বড় বেশি দেখা যায় না। r
কালোত্তীর্ণ দুটি কাব্যগ্রন্থ
বাঁধন সেনগুপ্ত
কাব্য আমপারা
কাজী নজরুল ইসলাম
সম্পাদনা : আবদুল রাউফ
প্রথম চারুপাঠ
কলকাতা, ২০১৪
১০০ টাকা
মরু-ভাস্কর
কাজী নজরুল ইসলাম
সম্পাদনা : মিজানুর রহমান গাজী
প্রথম চারুপাঠ
কলকাতা, ২০১৪
১০০ টাকা
কাজী নজরুল ইসলাম-রচিত গুরুত্বপূর্ণ অথচ তুলনায় কম প্রচারিত দুটি গ্রন্থের নাম – কাব্য আমপারা ও মরুভাস্কর। কোরান শরিফ নামক ধর্মীয় মহাগ্রন্থের বাংলার প্রথম 888sport app download apk latest version নজরুলের অসামান্য এক প্রচেষ্টা হিসেবে আজো চিহ্নিত হয়ে আছে।
প্রথমোক্ত কাব্যানুবাদ কাব্য আমপারা। ১৯৩২ সালের আগস্টে গ্রন্থাকারে এটি প্রথম প্রকাশ করেছিলেন কলকাতার করিম বক্স ব্রাদার্স প্রেস ( (৯ এন্টনী বাগান লেন) থেকে মৌলানা আবদুর রহমান খান। অগ্রহায়ণ ১৩৪০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত গ্রন্থটির দাম তখন ছিল দুই টাকা। পৃষ্ঠা888sport free bet ছিল মোট ১০৮ (৪ + ৮০ + ২৪)। উৎসর্গপত্রে লেখা ছিল, বাংলার নায়েবে নবী মৌলবী সাহেবানদের দস্ত মোবারকে। মুসলিম বিদগ্ধ সমাজের প্রতিনিধিস্থানীয় বহু পন্ডিত ও বিদ্বজনের সাহায্যে ও পরামর্শ নিয়েই আমপারা শরীফের মতো দুরূহ কাব্যের 888sport app download apk latest versionকর্মে সেই সময় নজরুল হাত দিয়েছিলেন। ‘মক্তব মাদ্রাসা স্কুল পাঠশালার ছেলেমেয়েদের এবং স্বল্প শিক্ষিত সাধারণের বোধগম্য ভাষাতেই’ কাব্য আমপারার স্বাদ পরিবেশন করাই কবির লক্ষ্য ছিল। কোরানবিষয়ক একাধিক লেখকের গ্রন্থ ও ব্যাখ্যাকে সামনে রেখে পরিশ্রমসাধ্য ওই কর্মে সেই তিরিশের দশকে কবির ব্যস্ততা যখন তুঙ্গে তখনই নজরুল এ-কাজে হাত দেন। কবিকে নানাভাবে সে-সময় সাহায্য করেছিলেন মৌলানা মোহাম্মদ মোমতাজউদ্দীন ফখরোল মোহাদ্দেসীন সাহেব, মৌলানা সৈয়দ আবদুর রশীদ (পাব্নবী), ইসকান্দার গজনভী বিএ, মৌলভী কেএম হেলাল ও 888sport live footballিক আবদুল মজিদ 888sport live footballরত্ন, বিএ প্রমুখ শুভার্থী ও অনুরাগী।
লক্ষণীয়, কেবল একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থের 888sport app download apk latest versionক হিসেবে সেই দায়িত্বভার পালন করতে কবি প্রয়াসী হননি। আরবি-ফারসি ভাষা তাঁর আয়ত্তাধীন থাকার ফলেই এমনতরো দুঃসাহসী কর্মটি সম্পাদনার দায়িত্ব কবি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বলা যেতে পারে, সেদিনের পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে সেটি ছিল এক মহৎ প্রচেষ্টা বা প্রয়াস।
অবশ্য এ-গ্রন্থের 888sport app download apk latest versionে সাফল্যের ব্যাপারে আপন সংশয়ের কথা কবি গোড়াতেই কবুল করেছিলেন। কেননা, পবিত্র কোরান 888sport app download apk latest versionকালে আমপারা কাব্যগ্রন্থের অনূদিত আটত্রিশটি সুরার প্রারম্ভে পৃথক শব্দের ব্যবহার থাকায় তার সামান্যতম হেরফের করার অধিকার তাঁর ছিল না। এই কারণেই সম্ভবত তিনি নামাজ, হযরত, রোজা ইত্যাদি বানান লিখতে দ্বিধা করেননি। বস্ত্তত কবির স্বোপার্জিত কাব্যনৈপুণ্যের ব্যবহার বা সুযোগ কাব্য আমপারায় অনুপস্থিত থাকায় কবির 888sport app কাব্যগ্রন্থের তুলনায় এই 888sport app download apk latest version হয়তো তেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। এ সত্য নজরুলেরও অজানা ছিল না। তবু তিনি একটি ঐতিহাসিক প্রয়াসের সঙ্গে সচেতনভাবে নিজেকে যুক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাই এটিও তাঁর অন্তহীন জিজ্ঞাসারই প্রতিফলন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। পবিত্র কোরান থেকে আহরিত এই 888sport app download apk latest versionকর্মটি ধর্মপ্রাণ কবির মেধাবী হৃদয়ের সংস্কারবাদী মননসমৃদ্ধ অপূর্ব এক সৃষ্টিও বটে। সম্পাদনকর্মে অভিজ্ঞ আবদুর রাউফ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মের জন্যে অবশ্যই ধন্যবাদের যোগ্য। পাশাপাশি মানবাত্মার পূজারি বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদের (দ.) জীবনাদর্শকে কেন্দ্র করে রচিত নজরুলের আরেকটি কাব্যগ্রন্থের নাম – মরু-ভাস্কর। ১৯৫০ সালে নিরানববই পৃষ্ঠার আঠারোটি 888sport app download apkসমৃদ্ধ এই কাব্যগ্রন্থটির নাকি প্রথম প্রকাশক ছিলেন 888sport appর তদানীন্তন প্রেসিডেন্সিয়াল বুক ডিপো। যদিও ১৯২৮ সালের জুলাই মাসে ৯ এন্টনী বাগান লেন, কল-৯ থেকে জোহরা খানম মরু-ভাস্কর নামে বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদের (দ.) জীবনী নিয়ে নজরুলের একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। পরে কলকাতার স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স, কলেজ স্ট্রিট মার্কেট সেই কাব্যগ্রন্থটির পরিবেশক হন। এতে আঠারোটি 888sport app download apk ছিল। (পৃষ্ঠা888sport free bet ছিল ৫৮), দাম রাখা হয়েছিল এক টাকা ছয় আনা। প্রচ্ছদ 888sport live chatী ছিলেন খালেদ চৌধুরী। এ-গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছিলেন পরবর্তী সময়ে ১৯৫৭ সালের ২৩ মার্চ স্বয়ং কবিপত্নী প্রমীলা নজরুল ইসলাম। ভূমিকায় কবিপত্নী লিখেছিলেন –
…এই গ্রন্থখানির মুদ্রণ-স্বত্ব প্রথমে শ্রী মনোরঞ্জন চক্রবর্তী কিনে নেন। সুদীর্ঘকাল ধরে তার কাছে গ্রন্থখানি অপ্রকাশিত অবস্থায়ই পড়ে আছে। কিন্তু কবির সেই দরদী বন্ধু গ্রন্থখানির সর্বস্বত্ব আবার আমাদের ফিরিয়ে দেন।
প্রমীলা নজরুল ইসলাম
২৩.৫.১৯৫৭
অবশ্য 888sport app থেকে ১৯৫০ সালে প্রকাশিত মরু-ভাস্কর কাব্যগ্রন্থে প্রকাশকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু 888sport app থেকে প্রকাশিত এ-গ্রন্থে প্রকাশকের তথাকথিত প্রথম সংস্করণে ‘আরজ’-এ লেখা হয়েছিল – ‘এই গ্রন্থের পান্ডুলিপি যাঁহার সৌজন্যে আমার হস্তগত হইয়াছিল… তিনি সুগায়ক আববাসউদ্দীন আহম্মদ।’ তবে কি প্রমীলার অজ্ঞাতসারে কলকাতায় ছাপা ১৯২৮ সালের মরু-ভাস্কর এবং ১৯৫০ সালের 888sport app থেকে প্রকাশিত মরু-ভাস্কর এভাবেই ছাপা হয়েছিল। প্রমীলা দেবীর ভূমিকা অনুযায়ী মরু-ভাস্করের স্বত্বাধিকারী ছিলেন মনোরঞ্জন চক্রবর্তী। তাঁর কাছেই কবির পান্ডুলিপি ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত অপ্রকাশিত অবস্থায় গচ্ছিত থাকার পরে তিনি তার মুদ্রণস্বত্ব কবি-পত্নীকে ফিরিয়ে দেন। সেক্ষেত্রে সুগায়ক আববাসউদ্দীন গ্রন্থের পান্ডুলিপি ‘সৌজন্যবশত’ কীভাবে 888sport appয় ১৯৫০ সালে প্রকাশের জন্য হস্তান্তরিত করতে সমর্থ হন? আববাসউদ্দীন সাহেবের পান্ডুলিপি কীভাবে মনোরঞ্জন কবিপত্নীকে ফিরিয়ে দিতে সমর্থ হন সে-ও এক রহস্য! তথ্যানুযায়ী, এ-গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ কলকাতার নবজাতক প্রকাশন থেকে ১৯৬২ সালে বেরোয়। এখান থেকেই মরু-ভাস্করের তৃতীয় সংস্করণ বেরোয় ১৯৯৭ সালে। প্রকাশক : মজহারুল ইসলাম।
১৯৩১ সালের জুন মাসে নজরুল বিশ্রামের জন্যে দার্জিলিং গিয়েছিলেন। কবির সঙ্গী ছিলেন অখিল নিয়োগী (স্বপনবুড়ো), নাট্যকার মন্মথ রায়, অবণী রায় ও প্রকাশক মনোরঞ্জন চক্রবর্তী। কবির সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছিলেন সেকালের বর্ষবাণী পত্রিকার সম্পাদিকা বিদুষিনী জাহান আরা চৌধুরী। রবীন্দ্রনাথও তখন দার্জিলিংয়ে অবকাশ যাপন করছিলেন। ওই সময়ে স্টার থিয়েটারের মালিক প্রবোধ গুহ নাটকের দল নিয়ে সেখানে হাজির। সঙ্গে তাঁদের বিশিষ্ট গায়িকা ও অভিনেত্রী মঞ্জুসুন্দরী শ্রীমতী নীহারবালা। নজরুলকে কাছে পেয়ে তাঁরা সকলেই মেতে উঠলেন। অথচ জাহান আরা কবিকে এনেছিলেন বিশ্রামের ফাঁকে তাঁকে দিয়ে হজরত মোহাম্মদ (দ.)-এর জীবনী লেখার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে। প্রকাশক মনোরঞ্জন চক্রবর্তীও জাহান আরার নির্দেশে সেজন্যেই কবির সঙ্গী হয়ে আগেই হাজির হয়েছিলেন। তিনি মরু-ভাস্কর গ্রন্থের গ্রন্থস্বত্বটি আগেই কিনে ফেলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎকার ও 888sport app ব্যস্ততার কারণে কোনো রকমে হজরত মোহাম্মদ (দ.)-এর জীবনী অসমাপ্ত অবস্থায় সঙ্গে নিয়ে কবিকে সেবার কলকাতায় ফিরে আসতে হয়। ফিরে এসে প্রকাশকের তাগাদায় নজরুল তাড়াহুড়ো করে তা শেষ করে প্রকাশকের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন।
অবশ্য গ্রন্থকারে প্রকাশের আগেই তা থেকে একটি 888sport app download apk সওগাত পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। অনতিবিলম্বে গ্রন্থের পান্ডুলিপির বেশকিছু অংশও প্রকাশিত হয়েছিল জয়তী পত্রিকায়।
মরু-ভাস্কর কাব্যগ্রন্থটি 888sport app download apk latest versionের কাজ সমাপ্ত হতে বিলম্ব হলেও এর পেছনে কবির মনের একটি সুপ্ত কামনা রূপায়ণের ভাবনা সর্বদা কবিকে তাড়িত করেছিল। তা হলো, আরবি-ফারসি, সমুদ্র মন্থন করে মুসলিম বাঙালির জন্যে মূল্যবান অজস্র রত্নরাজি উদ্ধার করা। প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস বা বিদ্বেষ ভাবনার সংস্কার করাই ছিল এই 888sport app download apk latest versionের লক্ষ্য। তাঁর ভাষায়, ‘ইসলাম ধর্মের মূলমন্ত্র-পুঁজি ধনরত্ন, মণিমানিক্য সবকিছুই কোরান মজিদের মণিমঞ্জুষায় ভরা, তাও আবার আরবি ভাষায় চাবি দেওয়া। আমরা – বাঙালি মুসলমানেরা – তা নিয়ে অন্ধ ভক্তিভরে কেবল নাড়াচাড়া করি। ঐ মঞ্জুষায় যে কোন মণিরত্নে ভরা, তার শুধু আবাসটুকু জানি। আজ যদি আমার চেয়ে যোগ্যতর ব্যক্তিগণ এই কোরআন মজিদ, হাদিস, ফেকা প্রভৃতির বাংলাভাষায় 888sport app download apk latest version করেন সে হলে বাঙালি মুসলমানের তথা বিশ্ব-মুসলিম সমাজের অশেষ কল্যাণ সাধন করবেন (আরজ)।’ বস্ত্তত কবির প্রার্থিত হিন্দু-মুসলমানের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসের রূপায়ণই এই প্রয়াসের লক্ষ্য।
আলোচ্য সংস্করণটি কবির রচনার প্রায় তিরাশি বছর পরে প্রকাশিত হলো। ইতোমধ্যে মরু-ভাস্কর একাধিক সংস্করণে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত। বিলম্বে হলেও তা 888sport app ও কলকাতা থেকে গ্রন্থে ছাড়াও নজরুলের রচনাবলিতে গত অর্ধশতকের অধিক কাল ধরে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে। সম্প্রতি কবিতীর্থ চুরুলিয়া (বর্ধমান) নজরুল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবির ভ্রাতৃষ্পুত্র কাজী মজাহার হোসেন মূল্যবান এই গ্রন্থটির সাম্প্রতিক প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন বলে গ্রন্থে (সম্পাদক মিজানুর রহমান গাজী) উল্লেখ করা হয়েছে। সুশোভন এই সংস্করণটি ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলিম সমাজ তথা কাব্যানুরাগী পাঠকদের কাছে ও জাতীয় মহান কাব্যগ্রন্থের স্বাদ নতুন করে সুযোগ এনে দেবে সন্দেহ নেই।
অবশ্য দীর্ঘকাল ধরে প্রকাশিত ষোলোটি 888sport app download apk পুনঃপ্রকাশ প্রকল্পে সম্পাদকের কর্তব্য প্রায় গৌণ হতে বাধ্য। কেননা, কবিকৃত ‘আরজ’ অংশেই এর উদ্দেশ্য ও ব্যাখ্যা যথাযথ বর্ণিত। তবু বলব, পুনঃপ্রকাশ করা কোনো মহৎ প্রয়াসই কালোত্তীর্ণ সৌকুমার্যের প্রসাদ গুণের কারণেই চিরকাল অভিনন্দনযোগ্য। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.