বঙ্গবন্ধু : ইতিহাসের মহানায়ক

আমি মনে করি, আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে গৌরবের দিন। আমি কোনোদিন আশা করিনি যে, ইতিহাসের এই মহানুভব ব্যক্তির 888sport sign up bonusচারণ করার সুযোগ আমার হবে এক মহতী অনুষ্ঠানে। সেজন্য আপনাদেরকে আমি অশেষ ধন্যবাদ জানাই। ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয়ের বাইরে তাঁর কোনো সান্নিধ্য বা নৈকট্য লাভ করার সুযোগ আমার হয়নি। কেননা আমি একজন সাধারণ মানুষ ছিলাম, আজো আছি। তবে তাঁর সম্বন্ধে এখানে আমি দু-চার কথা বলব, বলব জাতীয় ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর স্থান সম্পর্কে। তাঁর জীবন-দর্শনের কথা বলা, এত গূঢ়তত্ত্ব বোঝার মতো ক্ষমতা আমার হয়তো সীমিত। তাই তাঁকে ব্যাপক দৃষ্টিতে আমি দেখবার চেষ্টা করব। এজন্য আপনাদের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আজকাল দেখা যায় অনেক মৃত রাজনৈতিক নেতাকে সম্মান দেখানো হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে অনেককে জাতীয় নেতা ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় গোরস্তানের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় 888sport sign up bonusসৌধ তৈরি করা হচ্ছে। এই ফর্দে ক্রমাগত নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। একটি ব্যাপারে হয়তো অনেকে বেদনা অনুভব করেন, অনেকে ক্ষুব্ধ হন যে, এত বড় ফিরিস্তির মধ্যে, জাতীয় নেতার এত বড় লিস্টির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর কোনো স্থান নেই, বঙ্গবন্ধুর 888sport sign up bonusসৌধ তৈরি হয় না। ব্যক্তিগতভাবে আমি কিন্তু এজন্য ক্ষুব্ধ নই। আমি আনন্দিত এজন্য যে, যে-মহানায়কের 888sport sign up bonusতর্পণ করতে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি, তিনি কোনো জাতীয় নেতা ছিলেন না। তিনি ইতিহাসের এক মহানায়ক। কোনো জাতীয় নেতার সঙ্গে তাঁর তুলনা হয় না। গুটিকয়েক পয়গম্বরের নাম ইতিহাস 888sport app download for androidে রেখেছে। অনেক জাতীয় নেতার জন্ম হয়েছে, অনেক জন্ম হবে। জাতি যতদিন থাকবে নেতাও ততদিন আসবে, কিন্তু এই মহাপুরুষের জন্ম আর দ্বিতীয়বার হবে না। সেজন্য আমার মনে কোনো বেদনা নেই, কোনো ক্ষোভ আমাকে আচ্ছন্ন করেনি জাতীয় নেতার ফিরিস্তিতে বঙ্গবন্ধুর নাম না দেখে। 888sport sign up bonusসৌধ? কোথায় কার সৌধ হবে। এ মহাপুরুষের 888sport sign up bonusসৌধ, ইতিহাসের এই মহানায়কের 888sport sign up bonusসৌধ, আবহমানকালের প্রবহমান ধারায় যে-ইতিহাস তৈরি হয়েছে, যে-ইতিহাস এদেশের মানুষ তৈরি করেছে, বাংলার মানুষের প্রতি অঙ্গনে তাঁর 888sport sign up bonusসৌধ রয়েছে, বাঙালির প্রতি হৃদয়ে তাঁর 888sport sign up bonusসৌধ রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে এবং এ নিয়ে অনেক বাকবিতণ্ডা হয়েছে। এ-বিষয়ে আমি কোনো কিছু বলতে চাই না। শুধু একটি কথা বলব। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুঘণ্টা বেজেছিল ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে যেদিন রাত ৯টার সময় নরাধম সেনাপতি ইয়াহিয়া খান রেডিও মারফত ঘোষণা করেছিল, ‘মুজিব ইজ এ ট্রেইটর টু দ্য নেশন। দিস টাইম হি উইল নট গো আনপানিশড।’ ইয়াহিয়া সাহেব, তুমি কোথায় আছ জানি না। তবে সেনাপতি হিসেবে তুমি যে-হুকুম দিয়েছিল, সে-হুকুম তামিল হয়েছে।

আমার মনে হয় ইয়াহিয়ার মতো সেনাপতির জন্ম খুব কম হয়েছে। সাড়ে চার বছর পরেই তার হুকুম তামিল হয়েছিল। বিচার হয়েছিল তাঁর পাকিস্তানের সামরিক আদালতে। মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখা হয়েছিল। যখন ইয়াহিয়া সাহেব গদিচ্যুত হন, ভুট্টো সাহেবকে বলেন, আমি সই দিচ্ছি, আপনি কার্যকর করুন। ভুট্টো সাহেব রাজি হননি। রাজি হননি আন্তর্জাতিক চাপে। রাজি হননি মার্কিন সরকারের চাপে। রাজি হননি তাদের দোসরদের জান বাঁচাবার জন্য। রাজি হননি এক লক্ষ পাকিস্তানি সৈন্যকে রক্ষা করবার জন্য। তাই সেদিন তাঁর প্রাণরক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড স্থগিত ছিল। পরে কার্যকর হবে, যেদিন তাদের মতলব হাসিল হয়ে যাবে সেদিন কার্যকর হবে। তা-ই হয়েছিল। ইয়াহিয়ার সেই কথা কার্যে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তানের সামরিক আদালতে তাঁকে যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল তা কার্যকর করা হয়েছিল ৪ বছর পরে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর জন্য মর্মাহত হলেও আশ্চর্যান্বিত হইনি। কেননা যে-সংকল্পের পথে তিনি পা বাড়িয়েছিলেন, আসন্ন মৃত্যু ছাড়া তাঁর আর কোনো পথ ছিল না। একটা জাতিকে নবজাগৃতি দিতে হলে অনেক সময় সেনাপতিকে রক্ত দিয়ে সেই জাগৃতি দিতে হয়। তিনি বহুবার বলেছেন, আমার নিজের রক্ত দিয়ে আমি শোধ করে যাব এদেশের মানুষের প্রতি আমার ঋণ। ঋণ শোধ তিনি দিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুতে আশ্চর্য হওয়ার খুব বেশি কিছু নেই, তবে বড় বেশি করে শোধ দিয়েছেন। এই জন্য যে, আততায়ীর হাতে মহাপুরুষের মৃত্যু ইতিহাসে নতুন নয়। মৃত্যু হয়েছে সক্রেটিসের বিষপান করে। মৃত্যু হয়েছে অনেক মনীষীর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রাষ্ট্রপ্রধানদের নিহত হওয়া নতুন কথা নয়। যেমন বলেছি অনেক মহাপুরুষের এরকম মৃত্যু হয়েছে। মনসুর হেল্লাজের মতো লোককে কতল করা হয়েছে, সেই খণ্ডিত মাথা তখনো বলছে ‘আনাল হক’। – আমিই সত্য। এসব মহাপুরুষের পর্যায়ে আসেন বঙ্গবন্ধু, মৃত্যুর সামনেও তিনি মাথা নোয়াননি। তাই তাঁর মৃত্যুতে দুঃখ নেই, কেননা তিনি তো ইতিহাসের মহাসমুদ্রে হারিয়েছেন। তাঁকে খুঁজে পাব সমুদ্রের প্রতি ঢেউয়ের মধ্যে যুগ যুগ ধরে।

আজকাল অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই, হত্যাকারীর বিচার চাই। সাধারণ হত্যার বিচার সাধারণ আইনে, সাধারণ আদালতে হয়। মহাপুরুষের হত্যা যা রাজনৈতিক কারণে হয়, তার বিচার হয় ইতিহাসের দরবারে। তবে দুঃখ এক জায়গায় আছে, এই হত্যার সঙ্গে 888sport app হত্যার তফাতও আছে – তার জবাবও দিতে হবে। ইয়াহিয়ার হুকুমবহির্ভূত, সামরিক আদালতের রায়বহির্ভূত যে-মৃত্যু আট বছরের শিশুর, যে-মৃত্যু হয়েছে নবপরিণীতা বধূর। সেই মৃত্যুর জন্য দুঃখ বেশি হতো না যদি দেখতাম গোটা জাতির মধ্যে সেদিন হোক, দুদিন পরে হোক, কোনো প্রতিক্রিয়া হয়েছে, কোনো প্রতিবাদ হয়েছে। তাই বলি, যতদিন এই জাতি বেঁচে থাকবে ততদিন এই জাতিকে পরমাত্মার মতো যে-জিজ্ঞাসা পেছনে তাড়া করবে, বিবেককে দংশন করবে, তা হলো, কেন প্রতিবাদ হলো না? প্রতিক্রিয়া কেন হলো না? ব্যক্তিগতভাবে কাউকে এর জবাব দিতে হবে না, ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য কারো বিচার হবে না। বিচারের কাঠগড়ায়, আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে সমগ্র জাতিকে, এদেশের মানুষকে। ইতিহাসকে জবাব দিতে হবে। সভ্যতাকে জবাব দিতে হবে, কৃষ্টিকে জবাব দিতে হবে, ধর্মকে জবাব দিতে হবে, ঈমানকে জবাব দিতে হবে, এই বলে যে, আট বছরের শিশুকে হত্যা করা জায়েজ কি না? নবপরিণীতা বধূকে হত্যা করা জায়েজ কি না? এ-জবাব কারো কোনো ব্যক্তিগত জবাব নয়। সমগ্র জাতিকে নেমিসিস হিসেবে এর জবাব দিতে হবে।

এই হত্যার প্রতিবাদে অনেকে সোচ্চার হন। আবার অনেকে রক্তের পুকুরে গোসল করে যার দাফন হয়েছে পাঁচ বছর পরেও তাঁকে কটূক্তি করতে কোনো বাধা দেখেন না। কেউ বলেন তিনি স্বাধীনতা চাননি, কেউ বলেন তিনি 888sport apps চাননি, কেউ বলেন তিনি ভাষা-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, কেউ বলেন তিনি পতাকা ওড়াননি, কেউ বলেন তিনি পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এর জবাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এর জবাব একটি। ২৬ মার্চ রাতে রেডিও মারফত ইয়াহিয়া সাহেব যে-ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই ভাষণে শুধু একটি নামই ছিল, সেই নাম শেখ মুজিব। কত লোক স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, কত লোক পতাকা উড়িয়েছেন, কত লোক প্রাণ দিয়েছেন, কত লোক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। নাম কারো আসেনি ইতিহাসের পাতায়। নরাধম ইয়াহিয়ার খাতায় একটি নামই ছিল, মুজিব ইজ এ ট্রেইটর টু দ্য নেশন, দিস টাইম হি উইল নট গো আনপানিশড। জিজ্ঞাসা করুন তাদেরকে যে-মানুষ কিছুই করল না, স্বাধীনতা ঘোষণা করল না, 888sport apps চাইল না, পতাকা উড়াল না তাঁর ওপর তোমাদের কেন এত রাগ? আমরা এত কিছুই করলাম, আমাদের নাম তো তোমাদের খাতায় উঠল না? পাঁচ বছর পরে তাঁর দেহ মাটিতে মিশে গেছে, আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি না, মৃত্যুর পরে কী আছে জানি না, যেমন জানি না জন্মের আগে কী ছিল। বিন্দু থেকে বিন্দুর যে-অস্তিত্বের মধ্যে মানুষের জীবন, এই অস্তিত্বের মধ্যে শেখ মুজিব একটি স্ফুলিঙ্গের মতো জন্মেছিলেন, সেই স্ফুলিঙ্গ নিভে গেছে। কিন্তু বাতি নিভে যাওয়ার পরেও প্রদীপকে, চেরাগকে ভেঙে দেয় এত নির্মম মানুষ তো দেখিনি। তিনি মৃত গত পাঁচ বছর ধরে। কিন্তু আজো কোনো সুযোগ হলেই তাঁর সম্পর্কে, একজন মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে, কটূক্তি করতে অনেকের কোনো ভদ্রতার আচরণে বাধে না।

তবে কেন জিঘাংসা? একজন মৃত ব্যক্তির সঙ্গে এত কিসের জিঘাংসা? তখন মনে হয়েছে – না, এ-ও তো হয়েছে অতীতে। কারবালার ময়দানে আওলাদে নবী আ’লে রাসুলকে তো এভাবে হত্যা করা হয়েছে। ইমাম হোসেনের ওপর সীমার যেদিন ছুরি চালাতে যায় সেদিন খুঁজে ছিল একই স্থান। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর নাতিকে বড় আদর করতেন। ইমাম হোসেনের গলায় তিনি চুমু খেতেন। সীমার সেই গলগন্ডে সেই স্থান খুঁজে বের করবার চেষ্টা করেছিল, যেখানে রাসুলুল্লাহর ওষ্ঠের দাগ ছিল। সেই স্থানে ছুরি চলবে। কেন? কেন এত বিষ? কেন এত জ্বালা? যে-মহাপুরুষের ধর্মীয় বিপ্লব অতলান্ত থেকে প্রশান্ত পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়েছিল, তাঁর আওলাদকে তো শান্তিতে মরতে দেওয়া যায় না। জিঘাংসা নিতে হবে। কে জিঘাংসা নিয়েছিল? যারা রাসুলুল্লাহর (সা.) জীবনে তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি, তারা মুসলমান হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। তাই রাসুলুল্লাহর ওষ্ঠ যেখানে পড়েছিল, সেই জায়গায় ছুরি চালানো হয়েছিল। ছুরি তো যেকোনো জায়গাতে দিলেই মৃত্যু হয়। কিন্তু না, রাসুলুল্লাহর ওষ্ঠ যেখানে পড়েছিল সেই স্থানেই ছুরি চালাতে হবে। একে বলে জিঘাংসা। জিঘাংসা কেন?

কৃতজ্ঞতাভারে জর্জরিত জীবনে জিঘাংসা বেড়ে যায় প্রবলভাবে। হজরত ওমরের মৃত্যু হয়েছে জায়নামাজের ওপর, হজরত আলীর মৃত্যু হয়েছে মসজিদ থেকে আসার পথে, হজরত ওসমানের মৃত্যু হয়েছে ঘরে। আ’লে রাসুল আওলাদে নবীকে কেন হত্যা করা হয়েছিল? যারা সারাজীবন রাসুলুল্লাহর (সা.) বিরোধিতা করেছিল, পারেনি, তাঁর মৃত্যুর পরে মুসলমান হয়ে তাঁর বংশধরদের ওপর শোধ নিয়েছিল। একে বলে জিঘাংসা। অতএব 888sport appsে যে জিঘাংসা হয়েছে – এই জিঘাংসা নতুন নয়। এই জিঘাংসা পৃথিবীর ইতিহাসে হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসেও হয়েছে। এই জিঘাংসার কারণ কৃতজ্ঞতাভারে সমগ্র জাতি জর্জরিত। হজরত ইমাম হোসেন আশুরার দিনে যেদিন শাহাদাতবরণ করেন সেদিন এক উৎসবের দিন ছিল ২০০ বছর ধরে উমাইয়া খলিফার রাজত্বে। উমাইয়া খলিফার যুগে আশুরার দিনে উৎসব করা হতো এই বলে যে, আওলাদে নবী আ’লে রাসুলের বংশকে খতম করে দেওয়া হয়েছিল। ২০০ বছর পর হঠাৎ মুসলমান কাঁদতে আরম্ভ করেছিল। মর্শিয়া গাইতে আরম্ভ করেছিল। সেই কান্নার ধ্বনি, সেই মর্শিয়া আজো থামেনি। কোনোদিন থামবে না।

সিরাজউদ্দৌলাকে ইতিহাসে আজ একজন নেতৃস্থানীয় পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যু যেদিন হয়েছিল, লাশকে আনন্দভরে সমস্ত মুর্শিদাবাদ ঘোরানো হয়েছিল বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। সেদিনকার সিরাজ আজকের সিরাজ ছিলেন না। আজকে যাকে আমরা মীরজাফর বলে চিন্তা করি, সেদিন সিরাজকে সেভাবে চিন্তা করা হতো এবং আজকে আমরা সিরাজ বলে যাকে চিন্তা করি, মীরজাফরকে সেদিন সেভাবে চিন্তা করা হতো। ১৭৫৭ সালে সিরাজের ভাবমূর্তিতে ছিলেন মীরজাফর আর মীরজাফরের ভাবমূর্তিতে ছিলেন সিরাজ। দেড়শো বছর পর বাঙালি হঠাৎ বুঝতে পারল চোখের পানির ভেতর দিয়ে যে মীরজাফর মীরজাফর, সিরাজ সিরাজ। শচীন সেনগুপ্তের লেখা সিরাজউদ্দৌলা নাটক দেখেছিলাম কলকাতায় ছোটবেলায়। নির্মলেন্দু লাহিড়ী সিরাজউদ্দৌলার ভূমিকায় অভিনয় করতেন। আলেয়াকে বলতেন – আলেয়া, বাঙালি হাসতে জানে না, বাঙালি কাঁদতে জানে। সিরাজের জন্য বাঙালি কেঁদেছিল। আজো কাঁদছে। বহুদিন কাঁদবে। তাই আজ হয়তো বঙ্গবন্ধুকে অনেকে ছোট করছেন। অনেকে তাঁকে নানাভাবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু সমগ্র জাতিকে একদিন কাঁদতে হবে। অঝোরে কাঁদতে হবে। সেই কান্না কোনো ব্যক্তিবিশেষের কান্না নয়, সমগ্র জাতির কান্না নেমেসিসের মধ্য দিয়ে। মহাত্মা গান্ধী যেদিন আততায়ীর হাতে নিহত হন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেছিলেন, উইল ইন্ডিয়া ইউপ, আনটিল দাই হার্ট ব্রেকস। বঙ্গবন্ধুর জন্য আজ আর আমরা কিছু করতে পারি না, তিনি সমস্ত ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে। শুধু পারি বছরে বছরে কাঁদতে, কান্নার অধিকার দিতে হবে সমগ্র জাতিকে। কাঁদব, অঝোরে কাঁদব। যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন কেঁদেই ধন্য হবো।

888sport appsের রাজনীতিতে তাঁকে যারা দোষারোপ করেন, তাদের সম্বন্ধে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলতে চাই না। কেননা আমি কোনো দলবিশেষের বা ব্যক্তিবিশেষের সপক্ষে বা বিপক্ষে বলতে চাই না। আমি বাংলার ইতিহাসের আবহমানকালের প্রবহমান ধারাকে প্রণতি জানাতে চাই। তাঁর জীবন আলোচনা করতে গেলে আজকাল একটা বিষয় দেখি, যা আমাকে কিছুটা ব্যথিত করে তোলে। তাঁর সমগ্র রাজনৈতিক জীবনকে মূল্যায়ন করা হয় মাত্র শেষ ছয় মাসের কর্মসূচিকে বা কর্মপ্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে। আমার মতে এটা এক ভ্রান্ত পদক্ষেপ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তা-ই মনে করি।

৩০ বছর ধরে এক কালজয়ী পুরুষ ইতিহাসের ধাপে ধাপে এগিয়ে গেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদের দ্বন্দ্ব এবং সংঘর্ষের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছেন। শেষ পর্যায়ে, জীবনের শেষ ছয় মাসে এসে তিনি জাতিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি, কর্মপ্রক্রিয়া দিয়েছিলেন, যা বিতর্কিত ছিল এবং বিতর্কিত থাকবে। কিন্তু তাঁর মূল্যায়ন এই দিয়ে হবে না। তাঁর মূল্যায়ন করতে হবে তাঁর ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবন দিয়ে। ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে, তৎকালীন পাকিস্তানের ২৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে, ১২ বছর তাঁর জেলখানায় কেটেছে। ১৮ বার তিনি কারারুদ্ধ হয়েছেন। ২৪টা মামলায় তাঁকে দাঁড়াতে হয়েছে। দুবার তাঁকে মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই সমস্ত ঘটনা তাঁর জীবনের শেষ ছয় মাসের আগের। এই রাজনীতির ভেতর তিনি ইতিহাসের একজন সূত্রধর হিসেবে কাজ করেছেন এবং সেই বিকাশই তাঁকে ইতিহাসের উচ্চতম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। অনেক মনে করেন যে, স্বাধীনতার যুদ্ধ হচ্ছে, কেউ হুইসেল বাজিয়ে দিলো, আর হাজার হাজার লোক ময়দানে নেমে গেল, নয় মাসে মাতৃগর্ভ থেকে সন্তানের জন্ম হলো, দেশ স্বাধীন হলো।

তা ঠিক নয়। যে-সংগ্রামের ধারা চলেছিল সিপাহি বিদ্রোহের পর থেকে, ওহাবি আন্দোলনে, ফরায়জী আন্দোলনে, ফকির-সন্ন্যাসীর আন্দোলনে, যে-সংগ্রামের ধারা চলেছিল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে – এই উপমহাদেশের এই অঞ্চলের রাজনীতির প্রতিটি স্তরে, সেই ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে সবার ওপরে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই ইতিহাস শুরু হয়েছিল এই অঞ্চলের 888sport free betগুরু সম্প্রদায়ের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি নিয়ে। নবাব সলিমুল্লাহ 888sport free betগুরু সম্প্রদায়কে নিয়ে বঙ্গভঙ্গের ভিত্তিতে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করেছিলেন। পরবর্তীকালে 888sport free betগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে ভিত্তি করে স্বতন্ত্র আভাসভূমির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, যার প্রস্তাবক ছিলেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। ব্রিটিশ রাজত্বের অবসানের প্রাক্কালে আরেকবার প্রয়াস নিয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অখণ্ড 888sport appsকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। পরবর্তীকালে অখণ্ড পাকিস্তানে পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের সমতার দাবি রেখে এদেশের মানুষ আবার নতুন করে আত্মপরিচয়ের ও আত্মোপলব্ধির দিকে ফিরে গিয়েছিল। সেদিন আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৫৬ সালের কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানীর বহুখ্যাত ‘আচ্ছালামো আলাইকুম’ পরবর্তীকালে ১৯৬৬ সালে নতুন করে যৌবনের দীপ্ত উদ্গারে উদ্দীপ্ত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ছয়-দফা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। ছয়-দফা আন্দোলনই স্বাধিকার আন্দোলনের জন্ম দেয় এবং স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সেদিনকার মেজর জিয়ার মারফত বঙ্গবন্ধুর নামে সমগ্র জনগণের পক্ষে 888sport appsের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘোষণার পেছনে ছিল এক বিরাট জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস। সেই সংগ্রামের ইতিহাস পাতায় পাতায় উলটে গিয়ে শেষ পর্যায়ে এসেছেন এক মহানায়ক, যাঁর তুলনা এদেশের মাটিতে আর কোনোদিন হবে না।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ যেদিন জাতীয় পরিষদকে স্থগিত রাখার ঘোষণা করলেন ইয়াহিয়া সাহেব, সেই দিন সারাদেশ গর্জে উঠেছিল এই বলে – কুর্মিটোলা দখল কর, 888sport apps স্বাধীন কর। সেদিন 888sport appsের স্বাধীনতার ঘোষণা মানুষের মুখে মুখে হয়েছিল, গোটা দেশের মানুষ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল, যা সম্ভব হয়নি ১৯৪৮ সালে, ১৯৫২ সালে, ১৯৫৪ সালে, ১৯৬২ সালে, ১৯৬৬ সালে, ১৯৬৯ সালে, তা সম্ভব হয়েছিল ১৯৭১ সালে। কেন? কারণ শুধু যুদ্ধ দিয়ে স্বাধীনতা হয় না। যুদ্ধ এমনিই করা যায় না। যুদ্ধের জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রয়োজন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। যে প্রক্রিয়া ঘটেছে বিভিন্ন সাধারণ নির্বাচনের ভেতর দিয়ে। যে যত বলুন স্বাধীনতাযুদ্ধ সম্পর্কে, এটা সম্ভব হয়েছিল বিভিন্ন নির্বাচনের ফলশ্রুতিতে। ১৯৩৬ সালের নির্বাচন, ১৯৪৬ সালের নির্বাচন, ’৫৪ সালের নির্বাচন, ’৬৪ সালের নির্বাচন এবং ’৭০ সালের নির্বাচন এই উপমহাদেশের এক অভাবনীয় ঘটনা, যার নজির এই উপমহাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের ইতিহাসে নেই। ’৭০ সালে অনেকেই নির্বাচন বর্জন করার কথা বলতেন এবং আরো বলতেন যে, নির্বাচন দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু দেখা গেল, সেই নির্বাচনই সেদিন পাথেয় দিয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের। নির্বাচন না হলে জনপ্রতিনিধিদের আইনানুগ সরকারের ভিত্তি রচিত হতো না। যেদিন সমগ্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পরিষদকে বেআইনিভাবে হটিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আইনানুগ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য, সেদিন তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল আর সে দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যই হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলেন এদেশের মুক্তিবাহিনী, এদেশের সাধারণ মানুষ। শুরু হয়েছিল ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসের এই প্রথম বাঙালি অস্ত্র ধারণ করেছিল বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে।

অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। তবে মাসুলও তিনি যা দিয়েছেন তা ইতিহাসে আর কেউ দেয়নি। চিন্তা করুন, শুধু চিন্তা করুন, ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু এদেশে না এলে এদেশ কোন দেশ হতো?

আমার এখনো মনে হয়, বোধহয় তিনি না ফিরলেই ভালো হতো। বোধহয় পাকিস্তানের জেলখানায় তাঁর মৃত্যুই শ্রেয় ছিল। ইতিহাসের গতি হয়তো সঠিক পথে যেত। অনেক মহাপুরুষের আবির্ভাব অনেক সময়ে একটা জাতির পক্ষে এক নিদারুণ অভিশাপ হয়ে ওঠে। কত মানুষকে তিনি ক্ষমা করেছিলেন। কত মানুষের প্রাণ তিনি বাঁচিয়েছেন। আজকাল যারা তাঁর সম্পর্কে অনেক কথা বলেন তিনি দেশে সময়মতো না এলে একটি প্রাণও তাদের থাকত না, কত মানুষের প্রাণ যেত। তিনি না এলে অনেক কিছু হতো, অনেক কিছু হতো না। আজকাল পৃথিবীতে শত্রু হিসেবে হোক বা মিত্র হিসেবে হোক – বিদেশি সৈন্যের ঢুকতে দেরি না হলেও বেরোতে বড় দেরি হয়। 888sport apps আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র দেশ, যেখানে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী এই দেশে এসে তিন মাসপূর্তি না হতেই সামগ্রিকভাবে অপসারিত হয়েছে। এই অপসারণ সম্ভব হয়েছে সেই মহাপুরুষের ব্যক্তিত্বের জন্য। ইতিহাসকে মিথ্যা প্রমাণ করে যে-মানুষের জন্য এই অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে, সেই মানুষকে এতটুকু সম্মান দিতেই হবে। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। আগ্নেয়গিরির লাভার মতো তিনি ছুটে গেছেন লাহোরে। সে-সময়ে কোনো দ্বিতীয় পুরুষের এটা করার ক্ষমতা ছিল না। রাজনৈতিকভাবে এটা তাঁর জন্য সঠিক ছিল কি না তা আমি বলতে চাই না, সেটা ভবিষ্যৎ বিচার করবে। তবে সেদিন তিনি সোজা লাহোরে গিয়েছিলেন বিশ্ব ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করতে। অনেকে আজ অনেক কথা বলেন, হৃৎকম্প উঠে যেত তাদের সেদিন। তিনি যে অসাধ্য সাধন করেছেন, হাজার হাজার মানুষের তিনি প্রাণ বাঁচিয়েছেন, যার ফলে আজ তারা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে, রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে।

আমার মনে আছে, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন আসেন পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়ে আমি তখন বিদেশের এক হোটেলের টেলিভিশনের পর্দায় সেই দৃশ্য দেখছি। একটি ঘটনা, একটি চিত্র আমার চোখের সামনে আজো ভাসছে – যা আমি কোনোদিন ভুলব না। তিনি তখন 888sport appsের ঘোষিত রাষ্ট্রপতি হলেও সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি নন। তিনি যখন লন্ডন পৌঁছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ তখন লন্ডনের বাইরে। খবর পেলেন শেখ মুজিব এসেছেন। দৌড়ে ছুটে এলেন সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে দিয়ে। শেখ মুজিব তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে। গাড়ি যখন থামল দেখা গেল ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের দুয়ার খোলা হলো। একটা লোক বেরিয়ে এসে গাড়ির দরজা খুললেন। দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলেন যতক্ষণ শেখ মুজিব গাড়ি থেকে বেরিয়ে না এলেন। এ ব্যক্তি আর কেউ নন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ। যে-সাম্রাজ্যের কোনোদিন সূর্য অস্ত যেত না, সেই সাম্রাজ্যের মধ্যমণি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আমাদের পর্ণকুটির থেকে আগত একজন সাধারণ কর্মী, যিনি দলপতি হতে রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতি হতে রাষ্ট্রপিতা হয়েছিলেন, তাঁকে অভ্যর্থনার জন্য দুয়ারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ-দৃশ্য জীবনে কোনোদিন ভুলব না।

তাঁরা কেন এই সম্মান দিয়েছিলেন? দিয়েছিলেন ইতিহাসের এক কাণ্ডারিকে, সম্মান করব শেখ মুজিবকে, সম্মান করব বঙ্গবন্ধুকে, সম্মান করব রাষ্ট্রপতিকে, আমাদের নিজেদের স্বার্থে, সমগ্র জাতির স্বার্থে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক দায়িত্ব আনতে হবে এদেশের সার্বভৌমত্বের স্থায়িত্বের জন্য, কোনো দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নয়।

আজ বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দিতে গিয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে, যে জাতীয় রাজনৈতিক ঐতিহ্যের তিনি অধিকারী ছিলেন, সেই ঐতিহ্য ইতিহাসের ফাঁকে ফাঁকে মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে এসেছে। আমি আগেই বলেছি, সলিমুল্লাহ হতে শেখ মুজিব পর্যন্ত একটি বিরাট ইতিহাস আছে এই দেশে। ধর্মকেন্দ্রিক সম্প্রদায়ভিত্তিক জাতীয়তা থেকে অসাম্প্রদায়িক অবিভাজ্য সার্বিক ভাষাকেন্দ্রিক ভূখণ্ডভিত্তিক জাতীয়তা – এই যে ইতিহাসের ক্রমোন্নতি, এই দুই চেতনার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সূত্রধর। জীবন শুরু করেছিলেন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক জাতীয় চেতনা থেকে, শেষ করেছিলেন অসাম্প্রদায়িক অবিভাজ্য সার্বিক ভাষাকেন্দ্রিক ভূখণ্ডভিত্তিক জাতীয়তায়। এই জাতীয়তাবাদের পূর্ণ রূপায়ণ তিনি ঘটিয়েছিলেন ইতিহাসের সূত্রধর হিসেবে। রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছেন তিনি, ষড়যন্ত্র করেননি। স্তরে স্তরে মানুষের সঙ্গে থেকে এগিয়ে গেছেন। ক্ষমতায় গিয়ে নেতা হননি, নেতা হয়ে ক্ষমতায় গিয়েছেন। তাই তাঁকে যদি আমরা সম্মান দিতে চাই, মানুষের হৃদয়ে জাগরিত রাখতে চাই, তবে তিনি যে-ঐতিহ্যের অধিকারী ছিলেন সে-ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে হবে। সে-ঐতিহ্য অসাম্প্রদায়িক অবিভাজ্য সার্বিক ভাষাকেন্দ্রিক ভূখণ্ডভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। তারই প্রক্রিয়ায় কায়মনোবাক্যে নিয়োজিত হতে হবে সমগ্র দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে।

আমি কাউকে ছোট করছি না, প্রত্যেকের প্রতি তাদের প্রাপ্য 888sport apk download apk latest version আমার আছে। তবুও আমার ব্যক্তিগত ধারণা ও ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়, এদেশের ইতিহাসের কষ্টিপাথরে এ-যুগের শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। যতদিন 888sport apps থাকবে, যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, যতদিন বাংলা থাকবে, যতদিন বাঙালি থাকবে, গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, ধলেশ্বরী, করতোয়া, কীর্তনখোলা নদীর দুই তীরের মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে, যতদিন এদেশের মানুষের হৃদয়ের উত্তাপ থাকবে, ততদিন অন্তরের মণিকোঠায় একটি নাম চিরজাগরূক থাকবে – শেখ মুজিবুর রহমান।***

লেখক : সাবেক বিচারপতি

[সূত্র : শেখ মুজিব : একটি লাল গোলাপ, ১৯৭৯, পৃ ৬১০-৬১৭]