জসীমউদ্দীনের 888sport live footballকর্ম নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাঁর আবির্ভাবের সময়টা আলোচনায় আসে সবার আগে। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে বাংলা কাব্যের ভুবনে জসীমউদ্দীনের আবির্ভাব। যখন রবীন্দ্র-বৃক্ষের ছায়া বিশ্বময়, নজরুলের জনপ্রিয়তা সবাইকে ছাড়িয়ে আকাশ-চূড়ায় সমাসীন। এরই মধ্যে শুরু হলো রবীন্দ্রনাথের সর্বগ্রাসী প্রভাবের বিরুদ্ধে একঝাঁক কবির বিদ্রোহ। এ-আন্দোলন বিশেষভাবে দানা বেঁধে উঠেছিল মোহিতলাল মজুমদার, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী প্রমুখ শক্তিশালী কবির লেখনীর মাধ্যমে। তবে এঁদের এ-আন্দোলন আস্ফালনমাত্র ছিল না, তা ছিল উপযুক্ত শক্তির দ্বারাই সমর্থিত। ঠিক এমন সময়ে আবির্ভূত হলেন জসীমউদ্দীন, সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে। তাঁর পথ গ্রামের মেঠোপথ, ঢোলকলমি মাড়ানো পথ। তিনি এলেন দূরাগত রাখালের বংশীধ্বনির ন্যায়। অথচ সে-সময়টা এই বংশীধ্বনির জন্য প্রস্ত্তত ছিল না। ড. সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় সে-সময়টাকে ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে : ‘আধুনিক কবিরা প্রায়শঃ পলস্নীকেন্দ্রীক জীবনের আকর্ষণকে উপলক্ষ্য করে নাগরিক জীবনের অস্থিরতা, ক্লান্তি, অবসাদ, যন্ত্রণা-বেদনাকেই মুখ্যতঃ সত্য বলে বরণ করে নিয়েছিলেন। কলকাতা শহরকেই বিশেষ করে কাব্যের বিষয় করে তুলেছিলেন আধুনিক কবিরা।’১ এর অনেক আগেই বুদ্ধদেব বসু কথাটি বলেছেন এইভাবে : ‘আমাদের জীবনের কেন্দ্র এখন সরে এসেছে শহরে, শহর এখন জীবনকে রূপায়িত করে, ধ্বংস করে, পরিপূর্ণ করে। শহরের মধ্যে, শহরে প্রাণের মধ্যে আমরা বাঁচি।’২ একই লেখায় তিনি আরো বলেছেন : ‘জীবন ফেনিল হয়ে উঠেছে শহরে – স্বার্থের আঘাতে, বিলাসিতার লাস্যে, দারিদ্রে্যর ভয়াবহতায়, উপচে পড়ছে কূল ছাপিয়ে – মর্মান্তিক সংগ্রামে, অর্থগৃধণুতার পিশাচবৃত্তিতে, সভ্য মানুষের জটিল প্রণয়ে, রসবোদ্ধার সৌন্দর্য উপাসনায়, ভাঁড়ামিতে, বোকামীতে, হাস্যস্রোতে, নিষ্ঠুরতায় বিচিত্র বহুমুখী জীবন; প্রাণের অফুরন্ত, অপর্যাপ্ত লীলা।’ আসলে এতদিন যেখানে পলস্নীই ছিল জীবনের কেন্দ্র, সেখানে স্থান দখল করল শহর। কাব্যের মাঝেও বেজে উঠল পলস্নীর বিদায়ের সুর। কিছুটা ধাক্কা খেল বাংলার সরলমনা কাব্যপ্রেমীজনরা। এই পরিবর্তনকে তাদের কাছে মনে হলো একটি প্রহেলিকা। একথা সত্যি, পরিবর্তনের ধ্বজাধারীদের পলস্নীর প্রতি একটা মমত্ববোধ যে ছিল না, তা নয়। তবে তাঁদের কাব্যে পলস্নী খুব একটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেনি। তাঁরা যেন পলস্নীকে দেখেছেন শহরের বাতায়নে উঁকি দিয়ে। এদিক থেকে জসীমউদ্দীন সম্পূর্ণ আলাদা। আর এই সময় এমন আলাদা হয়ে নিজেকে জানান দেওয়াটা কম সাহসের কাজ নয়। তাঁর আয়োজন সম্পূর্ণরূপে মেকি-প্রসাধনশূন্য। তিনি তাঁর কাব্য-প্রসাধন করেছেন গ্রামবাংলার ধুলোবালি, পথ-প্রান্তর, নদী-নালা, মানব-মানবী, গাছপালা, খানাখন্দক প্রভৃতি। 888sport appsের গ্রামীণ জনপদকে, প্রতিবেশকে তিনি দেখেছেন প্রেমিকের মতো মুখোমুখি বসে, আর অন্তরের সকল অনুভূতি উজাড় করে দিয়ে। ভাবে, ভাষায়, ভঙ্গিতে জসীমউদ্দীনের 888sport app download apk যেন 888sport appsের চিরচেনা সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। আর এখানেই জসীমউদ্দীনের সার্থকতা। কারণ পলস্নীর নির্মল সৌন্দর্যের বিছন কবি বেশ যোগ্যতার সাথেই ছিটিয়ে দিতে পেরেছেন নাগরিকতার এই প্রবল আধুনিক 888sport live footballের মাঠে। শোভিত করেছেন আমাদের কাব্যের উঠান, বারান্দা আর গোলাঘর। খ্যাতনামা এক জসীমউদ্দীন গবেষক এই সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন : ‘আধুনিক কাব্যে উপেক্ষেত পলস্নীকে নতুন কাব্যিক মহিমা দান করে, পলস্নীর মৃতপ্রায় অথচ আশ্চর্য রূপে জীবন-ঘনিষ্ঠ 888sport live footballিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত ও সমৃদ্ধ করে, তিনি বাঙলা কাব্যের প্রাচীন ও নবীন ধারার মধ্যে একটা ক্ষীণ অথচ স্পষ্ট যোগসূত্র স্থাপন করে বাঙলা কাব্যের আত্মিক অপমৃত্যু রোধ করেছেন।’৩ আসলে তিনি আত্মিক অপমৃত্যুই রোধ করেননি, তিনি বাংলা কাব্যে, বাঙালি-মানসে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটালেন। তিনি নতুন করে চেনালেন 888sport appsকে, তাঁর কবিকৃতি দিয়ে।
জসীমউদ্দীনের কবিজীবনের পথপরিক্রমা যে সহজতর ছিল না তা সহজেই অনুমান করা যায়। তবে এই ঘাত-প্রতিঘাতে তিনি কখনোই দমে যাননি। তিনি সকল বাধা উপেক্ষা করে চালিয়েছেন তাঁর জয়রথ। এই সাফল্যগাথাতে যাঁরা সহায়তা করেছেন তাঁদের মধ্যে সবার আগে আসে অবসরপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যতীন্দ্রমোহনের কথা। কারণ তিনিই প্রথম পরামর্শ দেন ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সঙ্গে দেখা করার জন্যে। তবে দেখা করার ক্ষেত্রে জসীমউদ্দীনকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। পথে পথে ঘুরতে হয়েছে অর্ধাহার-অনাহারে। ঘুমিয়েছেন ফুটপাতে। অবশ্য পরবর্তীকালে দেখা করতে সাহায্য করেন ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ। দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে জসীমউদ্দীনের ভাগ্যের বাঁকবদল হতে থাকে। তিনি নিয়োগ পান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ্রাম্যগাঁথা সংগ্রাহক’ হিসেবে। বেতন মাসে ৭০ টাকা। তবে কবিভাগ্য তখনো খোলেনি। কারণ তিনি মনে মনে চেয়েছিলেন এক আর পেলেন অন্য এক। অবশ্য পলস্নীগাথা সংগ্রাহক হিসেবে নিযুক্তি পাওয়ার কারণে তিনি আরো বেশি করে পলস্নীপ্রেমিক হয়ে উঠেছিলেন। তবে দীনেশচন্দ্র সেনের কাছ থেকে 888sport app download apk বিষয়ে কোনো উৎসাহ তিনি পেলেন না। একদিন কবি দীনেশচন্দ্র সেনকে তাঁর 888sport app download apkর খাতা দেখতে দিলে তিনি না পড়েই তা ফেরত দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন : ‘তোমার নিকট আমি 888sport app download apk রচনা চাই না। 888sport app download apk রচনা করার বহুলোক বাঙলাদেশে আছে। কিন্তু গ্রামের অশিক্ষিত চাষী কবিদের গ্রাম্য গানগুলি সংগ্রহ করবার লোক মোটেই নেই। আর কিছুদিন গেলেতো এসব লোকগীতি চির বি888sport sign up bonusর অন্তরালে চলে যাবে। সেই কাজ আমি তোমাকে দিয়ে করাতে চাই। তোমার কোন 888sport app download apk আমি পড়ব না।’৪ শুধু এখানেই নয়, কবি হিসেবে জসীমউদ্দীন যেন ক্রমশ একা হতে থাকলেন। তাঁর 888sport app download apk কোথাও ছাপা হয় না। কারণ একটাই, তিনি 888sport appsের সাধারণ মানুষের কথা, পলস্নীর কথা, মুসলমান চাষার কথা লিখেছেন তাঁর 888sport app download apkয়। অথচ যখন সমধারার অর্থাৎ রবীন্দ্র-রচনার পদ্ধতিতে 888sport app download apk লিখেছিলেন, তখন বেশকিছু 888sport app download apk ছাপা হয়েছে। কবি তাঁর 888sport sign up bonusকথায় বলেছেন : ‘তখন আমি খাতা ভর্তি অসংখ্য 888sport app download apk লিখিয়াছি। আমার 888sport app download apk ‘প্রবাসী’তে পর্যন্ত ছাপা হইয়াছে। কিন্তু 888sport appsের চাষী জীবন ও পলস্নী প্রকৃতি লইয়া যখন নিজস্ব স্টাইলে 888sport app download apk লিখিতে আরম্ভ করিলাম, কোন পত্রিকাই আর আমার 888sport app download apk ছাপে না।’ এর খানিক পরে কলেস্নাল পত্রিকায় অনেকটা অনাদরেই পেছনের পাতায় ছোট অক্ষরে ছাপা হলো ‘কবর’ 888sport app download apkটি (জসিমউদ্দীন 888sport app download apkটি পাঠানোর প্রায় ছয় মাস পরে ছাপা হয়)। এই পত্রিকাটি কবি অনেকটা ভয়ে ভয়ে দীনেশচন্দ্রের কাছে পাঠান। এর চার-পাঁচদিন পর দীনেশচন্দ্র তাঁর চিঠির একটা লম্বা জবাব দিলেন। যেখানে তিনি বললেন : ‘দূরাগত রাখালের বংশীধ্বনির মতো তোমার 888sport app download apk আমার অন্তরকে স্পর্শ করেছে। তোমার 888sport app download apk পড়ে আমি অনেক চোখের জল ফেলেছি।’ এরপর দীনেশচন্দ্র জসীমউদ্দীনকে নিয়ে একটি 888sport live লিখলেন। আর এই 888sport liveটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই কবির কাছে অনেক পত্রিকা লেখা আহবান করতে লাগলো। লেখা প্রকাশিত হওয়ার দ্বার কিছুটা খুলে গেল বটে কিন্তু জসীমউদ্দীন তখনো থেকে গেলেন কতকটা অচ্ছুত। আর তা না হলে নক্সী-কাঁথার মাঠের (১৯২৯) মতো কাহিনিকাব্য মোহাম্মদী ও প্রবাসী পত্রিকা ফেরত পাঠাবে কেন? যদিও মোহাম্মদী পত্রিকার নৃপেন কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় নিজেই পত্র লিখে চেয়ে পাঠিয়েছিলেন একটি গাথা-888sport app download apk। পরে গ্রন্থটি দীনেশবাবুর সহযোগিতায় এক বড় প্রেস থেকে ছাপা হলো। তবে ছাপা হলেও বইটি বিক্রি হলো না। কোম্পানির লোক উলটো কবিকে পুশিং সেলের মাধ্যমে বিক্রি করতে বললেন। বিপদে পড়লেন কবি। সব শুনে এখানেও সামনে এসে দাঁড়ালেন দীনেশচন্দ্র সেন। বিচিত্রা পত্রিকায় বড় করে এক সমালোচনা লিখে দিলেন তিনি। আর এরপরেই হুড়হুড় করে বিক্রি হতে লাগল বইটি। শুরু হলো জসীমউদ্দীনের নতুন যাত্রা। প্রায় তিন বছর পর সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) প্রকাশিত হলো। এ-বইটির প্রচারেও দীনেশচন্দ্র সেনের অবদান উলেস্নখ্য। এর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন : ‘এই পুস্তকে গ্রাম্য কাহিনীর বর্ণনা করিতে লেখক অনেক ভূত প্রেতের নাম উলেস্নখ করিয়া নূতন প্রকাশ ভঙ্গিতে যে বীররসের সমাবেশ করিয়াছেন, তাহা বাংলা-888sport live footballে অভিনব।… আমি হিন্দু। আমার কাছে বেদ পবিত্র, ভাগবত পবিত্র। কিন্তু ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ পুস্তকখানি তাহার চাইতেও পবিত্র, কারণ ইহাতে আমার 888sport appsের মাটির মানুষগুলির কাহিনী আছে।’ এমন কথা শুনলে কার-না শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। সত্যিই তিনি 888sport appsকে চিনিয়েছেন, 888sport appsের মানুষকে চিনিয়েছেন, বাংলার প্রকৃতি, বাংলার জল সেখানে মিলেমিশে একাকার। অথচ জসীমউদ্দীনকে আমরাই অতটা করে বুকে তুলে নিতে পারিনি, যতটা তুলে নিয়েছি তিরিশের আন্দোলনকারীদের। যদিও জসীমউদ্দীনই আমাদের জাতীয় জীবনের কবি, আমাদের সত্তার কবি, আমাদের চেনাবার কবি।
আমার 888sport liveের শিরোনামের সাথে জসীমউদ্দীনের চড়াই-উতরাই টপকানোর কথা হয়তো কিছুটা বেমানান ঠেকছে, কিন্তু আমি মনে করি এর সাথেও বাঙালি মানসচেতনার একটা যোগসূত্র আছে। নিজেকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে বাঙালি চিরদিনই যোদ্ধা জাতি। তাই জসীমউদ্দীনের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার যুদ্ধ আর বাঙালির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সংগ্রাম হয়তো একই চেতনাগত ব্যাপার।
শুধু দীনেশচন্দ্র সেনই নন, আরো অনেকেই জসীমউদ্দীনের উত্তরণে সহায়তা করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষ করে দুজন ব্যক্তি চির888sport app download for androidীয় হয়ে আছেন। তাঁরা হলেন – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জসীমউদ্দীনকে বিভিন্নভাবে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছিলেন। শান্তিনিকেতনে থাকার একটা বন্দোবস্ত করে দিলেন। সমালোচনা লিখলেন। মোহনলালকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, ‘জসীমউদ্দীনের 888sport app download apkর ভাব, ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে। অতি সহজে যাদের লেখবার শক্তি নেই, এমনতর খাঁটি জিনিস তারা লিখতে পারে না।’ আবার সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩) সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ এক আলোচনায় বলেছেন, ‘তোমার সোজন বাদিয়ার ঘাট অতীব প্রশংসার যোগ্য। এ বই বাংলার পাঠক-সমাজে আদৃত হবে সে বিষয়ে আমার লেশমাত্র সন্দেহ নাই।’৫ আবার অন্যদিকে জসীমউদ্দীনের নাট্য888sport live footballে অবতরণ বলতে গেলে রবীন্দ্রনাথের একান্ত চেষ্টারই ফল। জসীমউদ্দীনের আমাদের জসীমউদ্দীন হয়ে ওঠার পেছনে কাজী নজরুলের অবদান কোনো অংশেই কম নয়। কবি তাঁর আত্মজীবনীতে তা 888sport app download for android করেছেন এইভাবে – ‘কবিকে আমি আমার 888sport app download apkর খাতাখানি পড়িতে দিলাম। কবি দুই একটি 888sport app download apk পড়িয়াই খুব উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন। আমার 888sport app download apkর খাতা মাথায় লইয়া নাচিতে আরম্ভ করিলেন।… কবি বলিলেন – আপনার 888sport app download apkর খাতা রেখে যান। আমি দুপুরের মধ্যে সমস্ত 888sport app download apk পড়ে শেষ করছি।’৭ আরো অনেকভাবে তিনি সাহায্য করেছেন। এছাড়াও এ. কে ফজলুল হক, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মোজাম্মেল হকসহ অনেক গুণীজনের উৎসাহ ও সহযোগিতা তিনি পেয়েছিলেন। সে-কথা ভাবলে আমাদের বর্তমান অগ্রজদের জন্য করুণা হয়। অনুজদের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব বর্তমানে কিছু কি আছে?
পলস্নীকবির মুকুট জসীমউদ্দীনের মাথায় কে পরালেন তা আমার জানা নেই, তবে তাঁকে একটু আলগা করে বলতে ইচ্ছা করে, তিনি আপাদমস্তক 888sport appsের কবি। পলস্নীকবিকে আমরা যে-অর্থে পলস্নীকবি পূর্বাপর বলে আসছি, জসীমউদ্দীন সে-অর্থে পলস্নীকবি নন। কারণ তিনি গেঁয়ো, গ্রামীণ বা লোককবির যে-রচ888sport promo codeতি বা 888sport live chatমাত্রার রুচিবোধ, তা থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছেন। জসীমউদ্দীন আধুনিক রুচিবোধের কবি, আধুনিক যুগের কবি। সমালোচকের ভাষায় – জসীমউদ্দীন যে সমস্ত উপমা ব্যবহার করেছেন, সেগুলোর উপাদান গ্রাম থেকে সংগৃহীত কিন্তু উপমার ব্যাখ্যাসূত্র প্রধানত নাগরিক। সেদিক থেকে জসীমউদ্দীন আধুনিক কবি, মোটেও পলস্নীকবি নন। আবু সয়ীদ আইয়ুব আধুনিক শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘এক হিসাবে যাঁরাই আধুনিক কালে কবিরূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রতিভা ও সাধনার যুগ্ম অধিকারে, তাঁরাই আধুনিক কবি – যুগলক্ষণ অধিকৃত না হলেও।’ এক্ষেত্রে আর বলার দ্বিধা থাকার কথা নয় যে, জসীমউদ্দীন আধুনিক কবি। এছাড়া তাঁর 888sport app download apkর উপাদান লোকজ হলেও বুনন-চিন্তা সম্পূর্ণ আধুনিক এবং অনেকাংশে নাগরিকও। কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেওয়া যেতে পারে –
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু
গা-খানি তার শাঙন মাসের যেমন তমাল তরু।
(নক্সী-কাঁথার মাঠ)
কাল সে আসিবে, মুখখানি তার নতুন চরের মত
চখা আর চখী নরম ডানায় মুছায়ে দিয়াছে কত।
(‘কাল সে আসিবে’)
ওগো কল্যাণী! কহ কহ তুমি কেবা দরবেশ
তোমার লাগিয়া মন-মোমবাতি পুড়ায়ে করিল শেষ!
(‘রূপবতী’)
লাল মোরগের পাখার মত ওড়ে তাহার শাড়ী
ভোরের হাওয়া যায় যেন গো প্রভাতী মেঘ নাড়ী।
(নক্সী-কাঁথার মাঠ)
ওপরের উদ্ধৃতিগুলো পাঠ করলে যে-কোনো কাব্যরসিকজন মুগ্ধতায় বিভোর হবেন, এতে সন্দেহ কি? শুধু তাই নয়, ছন্দ প্রকরণে, উপমা উৎপ্রেক্ষায়, বক্রোক্তিতে জসীমউদ্দীন অনন্য। এবং তা অবশ্যই 888sport appsের মানচিত্রের মধ্যে থেকে। আর এটাও ঠিক, শব্দগুলো আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট নয়। কেউ বলতে পারেন, জসীমউদ্দীনের 888sport app download apkয় আরবি-ফারসি শব্দের প্রাচুর্য আছে, যা বাঙালি মানসগত নয়। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলে না যে, মাত্র কদিন আগেও (১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দ) আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল ফারসি। শুধু তাই নয়, এখনো যদি আমাদের প্রচলিত ভাষা থেকে ফারসি শব্দগুলো বাদ দেওয়া হয়, তবে বাংলাভাষার গতিপ্রকৃতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা বলা মুশকিল। সংগত কারণে কবির 888sport app download apkতেও যা এসেছে। যেমন –
দর্গা তলা দুগ্ধে ভাসে, সিন্নী আসে ভারে;
নৈলা গানের ঝংকারে গাঁও কান্ছে বারে বারে।
(নক্সী-কাঁথার মাঠ)
জসীমউদ্দীন আসলে 888sport appsের মানুষের মন ও মননের কথা পড়তে পেরেছিলেন। আর পড়তে পেরেছিলেন বলেই তিনি জানতেন কার কথা লিখলে সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যাবে। উপভোগ করা যাবে মানুষের হৃদয়ের উষ্ণতা। নজরুল বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বাংলার তরুণদের রক্তে এনে দিয়েছিলেন স্ফুটন আর জসীমউদ্দীন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তরুণদের মনে এনে দিয়েছিলেন শান্তির কোমল ছায়া, যার উপকরণ ছিল 888sport appsের পলস্নী-প্রকৃতি। বিশেষ করে বাঙালি মুসলমান পলস্নীজনের চিরায়ত সংসারের নানা কথা গ্রথিত হয়েছে তাঁর নানা কাব্যে, যা দেখে রবীন্দ্রনাথ নিজেও পুলকিত হয়েছিলেন। রাখালী ও নক্সী-কাঁথার মাঠ রবীন্দ্রনাথকে দিলে তিনি খুশি হয়ে বলেছিলেন – ‘আমার মনে হয় তুমি 888sport appsের চাষী মুসলমানদের বিষয়ে লিখেছ। তোমার বই আমি পড়ব।’৭ আমার মনে হয় 888sport appsের অথবা বাংলাভাষার কোনো কবি বাংলার কৃষাণ-কৃষাণীর এতটা কাছাকাছি হতে পারেননি। অনুধাবন করতে পারেননি চাষার হৃদয়ের সকল আর্তি। অথচ তাদের বেঁচে থাকার নিয়ামক জুগিয়েছেন সেই চাষাই। জসীমউদ্দীন তা বুঝতে চেষ্টা করেছেন। বলেছেন –
খেলা মোদের গান গাওয়া ভাই, খেলা-লাঙল-চষা
সারাটা দিন খেলতে জানি, জানিই নেক বসা।
(‘রাখাল ছেলে’, রাখালী)
হেথায় নাহিক সমাজ-শাসন, নাহি প্রজা আর সাজা
মোর ক্ষেত ভরি ফসলেরা নাচে, আমি তাহাদের রাজা।
(‘ধানখেত’)
ডোলের বেছন ডোলে চাষির, বয় না গরু হালে,
লাঙল জোয়াল ধুলায় লুটায় মরচা ধরে ফালে।
(নক্সী-কাঁথার মাঠ)
একই কাব্যের আর এক জায়গায় বলেছেন –
মাঠের রাখাল, বেদনা তাহার আমরা কি অত বুঝি?
মিছে মোদের সুখ-দুঃখ দিয়ে তার সুখ-দুঃখ খুঁজি।
… … …
পলস্নীর কোলে নিবর্বাসিত এ ভাইবোনগুলো হায়,
যাহাদের কথা আধ বোঝা যায়, আধ নাহি বোঝা যায়।
ওপরের চরণগুলো পাঠ করলে বোঝা যায় কতটা জীবনবাদী আর সচেতন 888sport live chatীর মন নিয়ে কবি তা রচনা করেছেন। আর বোঝা যায় কবি নিতান্তই আবেগতাড়িত মানুষ নন, তিনি সজাগ ও সংবেদনশীল আধুনিক জীবন888sport live chatী। আসলে জসীমউদ্দীন বাংলা 888sport app download apkর ইতিহাসে ছিলেন একটা বিস্ময়। তিনি যে কবি সমাজে বেড়ে উঠেছেন, যাঁদের কাব্যচিন্তায় নাগরিকতা অনিবার্য বিষয় ছিল, তাঁদের বিপরীতে থেকেই তিনি হয়ে উঠলেন বিশ্বজয়ী জসীমউদ্দীন। সমালোচনা 888sport live footballে আমাদের অহংকার আবদুল মান্নান সৈয়দ বিষয়টি বলেছেন এইভাবে – ‘সমসাময়িক তিরিশের কবিসংঘের ভিতরে নাগরিকতা এতো বেশি দীপ্যমান যে তাঁরা আন্তর্জাতিকতায় উন্নীত, কেবল লেখেন তাঁরা বাংলা নামক এক প্রাদেশিক ভাষায়। আশ্চর্যঃ জসীমউদ্দীন তাঁদের সঙ্গেই বড়ো হয়ে উঠেছেন,… তবু তিনি কত আলাদা।’৮ আসলে তিনি আলাদা হতে চেয়েছেন দেশপ্রেমের তাগিদে, পলস্নীর সোঁদামাটির গন্ধে আর কৃষাণ-কৃষাণীর ভালোবাসার সিক্ততায়। তিনি 888sport appsের হৃদয়কে আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন বলেই খুব সাবলীলভাবে লিখে ফেললেন ‘কবর’-এর মতো 888sport app download apk। বলতে পারলেন –
এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম-গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এর মধ্যেই প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে প্রেমিক সাজাহানকে হার মানানো দাদুর মূর্তিটি। স্ত্রীর জন্য ত্রিশ বছর ধরে চোখের জল ফেলা একমাত্র বাঙালি কোনো বৃদ্ধের পক্ষেই সম্ভব। তাছাড়া হারানো সাথিটিকে সে তো নিয়ে এসেছিল পুতুলখেলার বয়স পার না হতেই। আর এটা একমাত্র 888sport appsের কোনো এক মুসলমান চাষির পরিবারেই সম্ভব। হৃদয়ের কত কাছে থেকে উপলব্ধি করলে এমন ধরনের একটা কল্পচিত্র আঁকা যায়, তা অনুমানের অতীত। (আর সে-কারণেই হয়তো জসীমউদ্দীন আইএ ক্লাসের ছাত্র থাকাবস্থাতেই এই 888sport app download apkটি ম্যাট্রিক ক্লাসে পাঠ্য হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমনতর ঘটনা হয়তো আর দ্বিতীয়টি নেই।) আবার ‘নিমন্ত্রণ’ 888sport app download apkয় বললেন, ‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়’। এমন সহজ আর নিষ্পাপ বলা বোধহয় জসীমউদ্দীনেরই সাধ্য। তিনি যেন সদ্যভূমিষ্ঠ কোনো শিশুকে দেখছেন আর লেখনীতে তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন। কিন্তু তাঁর 888sport live chatসত্তা কোনোভাবেই বিচ্যুত হয়নি। তাই তো তাঁকে গ্রামীণ উপমায় আর আধুনিক দ্যোতনায় দুলীকে গহনা পরাতে দেখি এভাবে –
মাঠের যতনা ফুল লয়ে দুলী পরিল সারাটি গায়,
খোঁপায় জড়ালো কলমীর লতা, গাঁদা ফুল হাতে পায়।
(সোজন বাদিয়ার ঘাট)
এমনটাই উপকরণ ছড়িয়ে আছে তাঁর সমস্ত রচনার শরীরজুড়ে। তিনি আপাদমস্তক বাঙালি ও 888sport appsের কবি।
সবচেয়ে বড় কথা জসীমউদ্দীন তাঁর বাঙালিসত্তা দিয়ে 888sport appsকে তার গ্রামীণ ঐতিহ্যে উপস্থাপন করেছেন বিশ্বমাঝে। যা অনেকটা সহজ করেছেন Mrs E. M. Milford। তিনি নক্সী-কাঁথার মাঠ ইংরেজিতে 888sport app download apk latest version করেন, The Field of the Embroidered Quilt নামে। বাংলা 888sport app download apkয় এর আগে 888sport appsকে এমনভাবে উপস্থাপন হতে কেউ দ্যাখেনি। দ্যাখেনি প্রেম আর মৃত্যুর এমন যুগপৎ দাঁড়ানো। হয়ে ওঠেন তিনি মানুষের হৃদয়ের কবি। জনপ্রিয়তায় সেই সময় নজরুলের পরেই জসীমউদ্দীনের স্থান। অথচ দুজন দুই ধারার। কোনো এক সমালোচক বলেছিলেন, ‘নজরুল ইসলামের পর জসীমউদ্দীনের আবির্ভাব যেন গায়কের পর চিত্র888sport live chatীর অভ্যুদয়।’৯ সত্যিই তিনি চিত্র888sport live chatী বটে। তিনি নিখুঁত তুলিতে এঁকেছেন বলতে গেলে 888sport appsের মানচিত্র গাথাচিত্রের ইমেজে। তাঁর জনপ্রিয়তা কিছুদিন আগেও গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে ছিল ঈর্ষণীয় মাত্রায়। বিশেষ করে নাটকের জন্যে। মানুষ অধীর হয়ে থাকত কখন রেডিওতে প্রচার হবে তাঁর মধুমালতী কিংবা বেদের মেয়ে নাটক। ওইদিনটা গ্রামবাংলার মানুষের কাছে একটা উৎসবের মতো মনে হতো। নাটক প্রচারের কথা সবার মুখে মুখে রাষ্ট্র হয়ে যেত। উঠানে রেডিও রেখে পাটি পেড়ে শুনত সবাই।
জসীমউদ্দীনকে যদি বলি 888sport appsের জাতীয় চেতনা, জাতীয় ভাব-ভাষা কিংবা জাতীয় চিত্র-বিতানের কবি, তবে বোধহয় অত্যুক্তি হবে না। কেননা তাঁর 888sport app download apkয় যেমন আছে প্রেম, মৃত্যু, তেমনি আছে চর দখলের লড়াই, আবার আছে অধিকার আদায়েরও লড়াই। যেমন আছে বদনা বিয়ে, তেমনি আছে দুখাই ঘটক। জসীমউদ্দীনের পাত্র-পাত্রী আমাদের খুব চেনা আর আপন। তিনি আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যের রূপ-রস নিংড়ে নিয়ে নির্মাণ করেছেন তাঁর কাব্যসৌধ। সেদিক থেকে তিনি আমাদের মানস-কবিও বটে।
তথ্যসূত্র
১. জসীমউদ্দীন, ড. সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়, নসাস; পঞ্চম মুদ্রণ ২০০২, পৃ ১০।
২. হঠাৎ-আলোর ঝলকানি, বুদ্ধদেব বসু।
৩. জসীমউদ্দীন, ড. সুনীল কুমার মুখোপাধ্যায়।
৪. 888sport app download for androidের 888sport app download for androidী বাহি, জসীমউদ্দীন।
৫. ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, জসীমউদ্দীন।
৬. যাদের দেখেছি, জসীমউদ্দীন।
৭. ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, জসীমউদ্দীন।
৮. ‘জসীমউদ্দীনের 888sport app download apk’, করতলে মহাদেশ, আবদুল মান্নান সৈয়দ।
৯. আধুনিক 888sport app download apkর ভূমিকা, সঞ্জয় ভট্টাচার্য।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.