পঞ্চাশ বছর আগে যখন 888sport apps নামের দেশটির আবির্ভাব ঘটল, বিশ্ব-মানচিত্রে একটা জায়গা করে নিল, একে নিয়ে আমাদের যতটা প্রত্যাশা ছিল, আশাবাদ ছিল, বিশ্বের তা প্রায় ছিলই না। বিশ্ব বলতে আমি মোটা দাগে একটা বিভাজনের কথা বলব, এবং সযত্নে উপনিবেশী চিন্তার প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় বিশ্বের প্রকোষ্ঠকরণ থেকে একে সরিয়ে রাখব। এ-বিভাজনের একদিকে ছিল (এবং এখনো আছে) পুঁজিবাদ (এবং তার সহযাত্রী পুরনো-নতুন সাম্রাজ্যবাদী/ উপনিবেশী মতবাদ) প্রভাবিত পশ্চিমের দেশগুলির সংঘ, এবং অন্যদিকে একদা উপনিবেশী শাসনে পিষ্ট কিন্তু স্বাধীনতাপ্রাপ্ত, এবং বৈশ্বিক বাস্তবতার চাপে পর্যুদস্ত দেশগুলি। 888sport apps নিয়ে পশ্চিমা রাষ্ট্রসংঘের প্রচুর সন্দেহ ছিল – এসব দেশের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিল এ-দেশ টিকবে কি না, টিকলেও নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে। এই সংঘের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, যিনি সারাবিশ্বে যুদ্ধ ও সংঘর্ষ বাঁধাতে এবং পশ্চিমা সামরিক-888sport live chat-বাণিজ্যিক চক্রের স্বার্থ রক্ষায় ছিলেন বিশেষ পটু অথচ শান্তিতে নোবেল 888sport app download bdে ভূষিত, এরকম সন্দেহে ইন্ধন জোগালেন এই বলে যে, 888sport apps একটা তলাবিহীন ঝুড়ি। এসব দেশ মুক্ত অর্থনীতির নানা শতর্, উৎপাদন-বণ্টনের অমোঘ নিয়মগুলি মাথায় রেখে 888sport appsকে দেখেছে, এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত, যোগাযোগ ও 888sport app অবকাঠামোসহ নানান ক্ষেত্রে বিপর্যস্ত, একটি দেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাগুলি বাজার-অংকের হিসাবে মিলছে না ভেবে মাথা দুলিয়ে তাঁর কথায় সম্মতি জানিয়েছে। আর যেসব দেশ মানুষের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের পাঠগুলি, উপনিবেশমুক্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলি এবং খেটে খাওয়া মানুষের প্রত্যয়কে তাদের জীবনকাঠামোর ভেতরেই ধরে রেখেছে, তারা বুঝতে পেরেছে, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, 888sport appsের মানুষ তাদের এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামটা চালিয়ে যাবে। এই সংগ্রামে আমাদের হাতে সাফল্য ধরা দেবে কি না, দিলে কতদিনে, কতটা সুনিশ্চিতভাবে – সে বিষয়ে তারা মন্তব্য করেনি। সেই সময়ের সমাজতান্ত্রিক যুগোশ্লাভিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি জসিপ ব্রজ টিটো ১৯৭৪ সালের জানুয়ারির শেষে 888sport apps সফরে এসে জাতীয় সংসদে একটি ভাষণ দেন। ভাষণের এক জায়গায় তিনি যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠে 888sport apps যে ঘুরে দাঁড়াবে সেই প্রত্যয় প্রকাশ করেন। পরে নিজ দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি আরো পরিষ্কারভাবে জানান, 888sport appsের মানুষ পরিবর্তন আনবে, কারণ এজন্য তাদের সামর্থ্য, উদ্যম ও পরিশ্রমের ক্ষমতা আছে, তাদের একজন যোগ্য নেতাও আছেন।
যে-নেতার কথা টিটো 888sport apk download apk latest versionভরে বললেন, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ততদিনে তিনি দেশকে অনেকদূর নিয়ে গেছেন। ভেঙেপড়া অনেক স্থাপনা, বড় বড় সেতু মেরামত করা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় গতি পেয়েছে, অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে, এবং মানুষের তৈরি এক দুর্ভিক্ষ সত্ত্বেও কৃষিতে প্রাণ এসেছে। পরি888sport free betন জানায়, যে-হিসাবটি পশ্চিমা দেশগুলির কাছে উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি, অর্থাৎ মোট জাতীয় উৎপাদনের (বা জিডিপির) গড় হিসাবটি, তা ১৯৭১ সালে যেখানে ছিল ৫.৪৮% এবং ১৯৭২ সালে ১৩.৯৭% তা ১৯৭৩ সালে হলো ৩.৩৩% এবং ১৯৭৪ সালে ৯.৫৯%। এর পরের বছর এটি প্রধানত দুর্ভিক্ষাবস্থা ও বিশ্বের বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে আবার অনেক কমে গেলেও ১৯৭৬ সালে (যা এক বছর আগের, অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের, অর্থনীতি, উৎপাদন ও গতিশীলতার একটা চিত্র) বেড়ে ৫.৬৬%-এ দাঁড়ায়। (এই উপাত্তগুলি পাওয়া যাবে ইন্টারনেটে www.macrotrends.net>BGD-তে)। তবে একটি দেশের উন্নয়ন অর্থনীতির নানা সূচকের বাইরেও অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, যেগুলিকে সামাজিক উন্নয়ন সূচক বলে অভিহিত করা হয়। সেই সূচকে স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যেই 888sport appsের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত ছিল। তবে এই ইঙ্গিত সবচেয়ে বেশি ছিল একাত্তরে দেয়ালে পিঠ লেগে যাওয়া মানুষের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে, কিছু একটা করার জন্য তরুণদের অস্থিরতায় এবং মুক্তিযুদ্ধ থেকে প্রেরণা নিয়ে বাইরের কাজের জগতে 888sport promo codeদের পা রাখার আকাঙ্ক্ষায়।
এই ঘুরে দাঁড়ানোতে সকলেই অবশ্য শামিল হয়নি, যাদের মধ্যে একেবারে সামনে ছিল এদেশের কিছু মানুষ, যারা মনেপ্রাণে পাকিস্তানি মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল, যারা একাত্তরে স্বজাতি হত্যায় এবং নানান অত্যাচারে – এমনকি 888sport promo codeদের সম্ভ্রম হারানোর অসংখ্য ঘটনায় – পাকিস্তানিদের অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল। এরা নিজেদের গণ্য করত পরাজিতদের দলে, এদের জিঘাংসা একটা বদলা নেওয়ার চেষ্টায় তাদের লিপ্ত করল। ১৯৭৫ সালের আগস্টের ১৫ তারিখ তারা বদলা নেওয়ার সুযোগ পেল। তারা যাদের সেবক ছিল, সেই পাকিস্তানিদের মতো তাদেরও সাহস ছিল না বঙ্গবন্ধুর সামনে দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিবাদ জানায়, কোনো কথা বলে। পাকিস্তানিদের মতো তারাও জিঘাংসা মেটানোর জন্য রাতের আঁধারকে বেছে নিল, এবং তারাও ট্যাংক-কামান আর গোলা বন্দুকসহ বিশাল 888sport free betয় একটি অরক্ষিত এবং ঘুমন্ত বাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা অস্ত্র সমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। এতো অস্ত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হানা দেওয়া কি সেই অপমানের একটা বদলা নেওয়া?
888sport appsের মানুষ উপনিবেশমুক্তির জন্য যে-সংগ্রাম করেছে, যা এখনো চলছে – যেহেতু উপনিবেশের নানা নতুন ধরন ও বিন্যাসের আবির্ভাব ঘটেছে এবং নতুন নতুন প্রভাবক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে – তার প্রেক্ষাপট নির্মাণের জন্য ওপরের ভূমিকাটি কিছু সূত্রের সন্ধান দেবে। সেগুলির সঙ্গে আরো পেছনের ইতিহাস থেকে পাওয়া কিছু চিন্তা, অনুধাবন এবং ভাবনাচিহ্ন যোগ করে ‘উপনিবেশ’-এর যে-বর্ণনাটি আমি তৈরি করব তা কেন এবং কীভাবে 888sport appsের, এই সময়ের, জন্য প্রাসঙ্গিক, তারও একটা ব্যাখ্যা দেব। উল্লেখযোগ্য যে, বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ৭ মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার শেষে 888sport appsের মুক্তির সংগ্রাম যে শুরু হলো, স্বাধীনতার সংগ্রামের সঙ্গে, তারও একটা ঘোষণা দিলেন। মুক্তি বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন তা তিনি স্পষ্ট করেননি – সেই সময় বা প্রয়োজন তাঁর ছিল না, কেননা ওই সময়টাতে এদেশের মানুষ তাদের জীবনের, বাস্তবের এবং রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এটিকে তাদের রুদ্ধগতি করে রাখার লক্ষ্যে সক্রিয় অনেক শৃঙ্খল থেকে মুক্তি হিসেবে দেখেছে। আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ‘আলোয় আলোয়’ চিদমুক্তির কথা বলেছেন, তাও এ-সঙ্গে যুক্ত হতে পারে; ঔপনিবেশিকতা সাংস্কৃতিক রুদ্ধতার যে কাঠামো চাপিয়ে দেয়, তাও বিবেচনায় আসে। তবে উপনিবেশমুক্তি সহজ কথা নয়। রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক উপনিবেশ অদৃশ্য হলেও মনের ভেতর উপনিবেশ যে জায়গা করে নেয়, যেসব চিন্তা, চর্চা, সক্রিয়তা – এক কথায় – একটি সংস্কৃতি তৈরি করে দেয়, তা থেকে মুক্তি সহজ ব্যাপার নয়। এর জাল এমনই বিস্তৃত যে, অনেকে অজান্তেই তাতে জড়িয়ে পড়েন। এদের 888sport free betধিক্য এই সময়ের একটা বিপর্যয় বলেই বিবেচনা করা যায়।
তবে, এই বিপর্যয়ও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। সেজন্য প্রস্তুতিটা যত দ্রুত সেরে ফেলা যায়, কাজ যত দ্রুত শুরু করা যায়, ততই মঙ্গল।
দুই
উপনিবেশ কথাটা পশ্চিমের, চর্চাটাও প্রধানত পশ্চিমের, তবে প্রাচ্যেও কোনো কোনো শক্তি যে উপনিবেশ স্থাপন করেনি, তা নয়, তার কিছু নমুনা দেখা যায় এখনো। তিব্বত হচ্ছে চীনাদের উপনিবেশ, জাপান চেষ্টা করেছে চীন-কোরিয়ায় উপনিবেশ গড়তে। কিন্তু পশ্চিমের কৌশল আর কূটবুদ্ধি এবং অস্ত্রশক্তির তুলনায় প্রাচ্য ছিল অনেক পিছিয়ে। এখন যে নতুন নানা ধরনের উপনিবেশচর্চা চলছে, যাদের নব্য-উপনিবেশবাদ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মাঠটা অবশ্য বেশ সমান হয়েছে। প্রাচ্যও এগিয়েছে, তবে সে প্রসঙ্গ পরে।
ইউরোপে রেনেসাঁসের সময় থেকে, সেই পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে, ব্যক্তির সঙ্গে বিশ্বের সংযোগ বাড়তে শুরু করেছে। ঈশ্বরকেন্দ্রিক থেকে পৃথিবী হয়েছে মানুষকেন্দ্রিক; 888sport apk ও প্রযুক্তি এবং বৃহত্তর অর্থে জ্ঞানসাধনার বিস্তার ও গভীরতা বেড়েছে। ফলে যন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছে এবং যত যন্ত্রের (মুদ্রণযন্ত্র, যেমন) ব্যবহার বেড়েছে, জীবনযাত্রা পাল্টেছে। পণ্য এবং সেবার উৎপাদন স্থানীয় থেকে বৃহত্তর (দেশ, অঞ্চল) প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। কাঁচামালের বাধাহীন জোগানের প্রয়োজনীয়তাও জরুরি হয়েছে। এদিকে জাহাজ888sport live chatে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে সমুদ্রযাত্রা নিরাপদ ও দ্রুত হয়েছে।
পশ্চিম থেকে পুবে পর্যটকরা এসেছেন বহু আগে। তাদের 888sport slot game ও সমুদ্রপথের বর্ণনা, তাঁদের আঁকা মানচিত্র, চিঠিপত্র প্রকাশিত হয়েছে। প্রাচ্য সম্পর্কে সৃষ্টি হয়েছে প্রচুর কৌতূহল এবং উৎসাহ। একসময় সেই কৌতূহলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাঁচামাল ও সম্পদ-সন্ধানের তাড়া। সোনার খোঁজে পর্তুগিজ ও স্প্যানিশরা পশ্চিমে গেছে, ‘নতুন বিশ্ব’ ‘আবিষ্কার’ করেছে, এবং সোনা ও নানা সম্পদের পাকাপাকি মালিক বনে যাওয়ার জন্য উপনিবেশ গড়েছে। উপনিবেশী ইতিহাস বলে, ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা মহাদেশ ‘আবিষ্কার’ করেছেন। উত্তর-আধুনিক (এবং এক অর্থে উত্তর-উপনিবেশী) মার্কিন লেখক কার্ট ভনেগাট এর বিপরীতে তাঁর 888sport alternative link ব্রেকফাস্ট অফ চ্যাম্পিয়নস-এর একটি পৃষ্ঠায় বড় করে ১৪৯২ এঁকে (যে সালটিতে ওই ‘আবিষ্কার’-এর ঘটনা ঘটল) তার নিচে লিখেছেন :
শিক্ষকরা শিশুদের বলতেন যে, তাদের মহাদেশটি এই বছর মানুষ আবিষ্কার করে। প্রকৃতপক্ষে ১৪৯২ সালে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই মহাদেশে পরিপূর্ণ এবং কল্পনাঋদ্ধ জীবনযাপন করছিল। এটি ছিল বরং জলদস্যুরা ওই মানুষগুলিকে প্রতারণা করে, লুণ্ঠন করে খুন করা শুরু করার বছর (১০)।
ইউরোপে আধুনিক যুগ এক বিশাল বিবর্তনের যুগ। সভ্যতাকে খোল-নলচে পাল্টে ফেলার যুগ, যা আলোকপ্রাপ্তির দর্শন ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জ্ঞানের ও 888sport apk সাধনায়, উদ্ভাবন ও সৃজনে, সৃষ্টিশীল চেতনা ও এর বিস্তারে অভাবনীয় সব অর্জন করায়ত্ত করে শুধু যে বর্তমানকে সমৃদ্ধ করল, তাই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এক সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে দিলো। কিন্তু আধুনিক যুগ যে দুই শক্তিতে ভর করে তার বিস্তার ঘটালো – পুঁজিবাদ আর ঔপনিবেশিকতা – তাও তো চিরস্থায়ী হলো। সেটি কতটা ক্ষতি করল জগতের, মানুষের, প্রকৃতির সে-হিসাব এখনো চলছে, যদিও পশ্চিম এই অস্বস্তিটি গালিচার নিচে পাঠিয়ে শুধু লাভের হিসাবটাই কষছে।
উপনিবেশ শুরু হয়েছিল বণিকদের দিয়ে, মাঝপথে ধর্মপ্রচারকারীরা জুটলেন – একই সঙ্গে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের পুণ্য সঞ্চয় এবং এক বিশাল সমর্থক বাহিনী তৈরির উদ্দেশ্যে, যারা হবে উপনিবেশী শক্তির স্থানীয় প্রতিনিধি অথবা স্বার্থ রক্ষাকারী। হিসাবটা সব সময় না মিললেও উদ্দেশ্যটা প্রকাশ্যই ছিল। এবং শিগগির এলেন কামান-বন্দুক হাতে সেনাদল এবং প্রশাসকরা। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় – ‘বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল পোহালে শর্বরী/ রাজদণ্ডরূপে।’ (‘পূরবী’)
বণিক থেকে রাজা হয়ে বসতে উপনিবেশীরা কোনো কোনো দেশে কিছুটা সময় নিয়েছে (ভারত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন থেকে রানি ভিক্টোরিয়ার শাসনের নিচে যেতে সময় নিয়েছে একশ বছর, যদিও ১৮১৩ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাক্ট, যা চার্টার অ্যাক্ট, ১৮১৩ হিসেবেও পরিচিত ছিল, ব্রিটিশ ভারতের ওপর রাজার কর্তৃত্ব মেনে নেয়)। কিন্তু বণিকরা শুরু থেকেই তো রাজার মতোই আচরণ করেছে। কোম্পানি-শাসনের সময়েই উপনিবেশী সব ক্রিয়া ও চর্চার প্রচলন হয়েছে, দৃঢ়মূলও হয়েছে। ১৮৫৭ সালের ‘সিপাহী বিদ্রোহ’র কথাই ধরা যাক। এটি যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম ব্যাপক ও সংঘবদ্ধ প্রকাশ, সে-সত্যটি ব্রিটিশ ইতিহাসবিদরা তো এই ‘বিদ্রোহ’ বর্ণনায় চাপা দিলেনই, ভারতীয় ইতিহাসবিদরাও নির্বিকারভাবে তা মেনে নিলেন। সৈনিকরা বিদ্রোহ করলে তাদের সংক্ষিপ্ত বিচারে দণ্ড দিয়ে, ফাঁসি দিয়ে মারা যায়। তাতে নীতির ঘরে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে না, কিন্তু স্বাধীনতাযোদ্ধাদের তা করলে নিজ দেশেই হয়তো জবাবদিহির সমস্যায় পড়তে হয়। সেজন্য কী সহজে, কী নির্মমতায় সেই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটানো হলো।
উপনিবেশী মডেলের ইতিহাসচর্চা থেকে এখনো বেরুনো সম্ভব হয়নি। তবে ১৯৮০-র দশক থেকে শুরু হওয়া নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চা জাতীয়বাদী ইতিহাসতত্ত্বকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে, এর সীমাবদ্ধতাগুলি তুলে ধরে উত্তর-উপনিবেশী এক বিকল্প ইতিহাসচিন্তার সূচনা করায় ইতিহাস লেখার ধারণায় একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। এর প্রভাব ব্যাপক না হলেও এর গুণগত অবদানটি অনস্বীকার্য।
উপনিবেশী শাসন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কিছু আবশ্যকতা, কিছু নীতি ও কৌশল, কিছু দ্বৈততা এর কাঠামোকে চিহ্নিত করে, যা উপনিবেশের কেন্দ্র এবং মূল চরিত্ররা আলাদা হলেও আদর্শ ও প্রয়োগগত দিক থেকে ছিল অভিন্ন। উপনিবেশ শুরু হয় ছলচাতুরী দিয়ে, শক্তিপ্রয়োগ, নির্মমতা ও হত্যাযজ্ঞ দিয়ে। তারপর জমি দখলের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় স্থানীয় সব প্রতিষ্ঠান ও চর্চা, বিশেষ করে যেগুলোর সঙ্গে ক্ষমতা, সক্ষমতা, ন্যায়নীতি, সামাজিক গতিশীলতা, সংস্কৃতি ও আত্মবিকাশের সম্পর্ক থাকে – যেমন শিক্ষা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন – সেসবের কাঠামো ও চরিত্র বদলে উপনিবেশী মডেলে নতুন করে গড়ে তোলা। প্রশাসন বা বিচারব্যবস্থায় অধিকার প্রতিষ্ঠায় সময় লাগে না, যেহেতু ক্ষমতাদখল মানে এ দুই ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও, সময় লাগে শিক্ষাকে উপনিবেশী আদর্শ-উদ্দেশ্য এবং আচারে অভিষিক্ত করতে। পশ্চিমা উপনিবেশী শক্তিগুলির ভেতর জাতিগত এবং চিন্তাগত ভিন্নতা থাকলেও এসব উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তারা ছিল মোটামুটি অভিন্নদর্শী।
শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির একটা যোগসূত্র আছে। মুদ্রিত সংস্কৃতি 888sport live football, শিক্ষা ও লিখিত নানা প্রথা ও চর্চার ওপর নির্ভরশীল। আবার শিক্ষার একটা নিজস্ব সংস্কৃতি আছে যা মনের সকল কোণে, প্রবৃত্তিশাসিত অঞ্চলে, বাস্তবের অভিঘাতে নানা ক্ষত নিয়ে গড়ে ওঠা চিন্তার আকীর্ণ ভুবনে আলো ফেলে এবং চিদমুক্তির পথগুলি দেখায়। উপনিবেশী শিক্ষা এ দুই অঞ্চলে তার আধিপত্য কায়েম করে। ১৮৩০-এর দশকে ইংল্যান্ডে রাজনীতিবিদ, লেখক ও ঐতিহাসিক টমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে ভারতে এলেন এর শিক্ষা সংস্কারের জন্য। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির প্রচলন। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভারত প্রশ্নে একটা বিভাজন ছিল। একদিকে ছিলেন, যাঁদের বলা হতো, প্রাচ্যবাদী। তাঁরা ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতির ওপর হস্তক্ষেপে আগ্রহী ছিলেন যা, বলা যায় এই সংস্কৃতিকে তাঁরা মূল্য দিতেন। খ্রিষ্টধর্ম প্রচারকারীদের ব্যাপারেও তাঁদের আপত্তি ছিল। এজন্য সংস্কৃত ও আরবি/ ফার্সি শিক্ষাকে তাঁরা আগের মতোই চলতে দিয়েছেন, কোর্ট-কাছারির এবং প্রশাসনের ভাষা হিসেবে ফার্সিকেও বদলাতে চাননি। আরেকদিকে ছিলেন ‘অ্যাংলিসিস্ট’ বা ইংরেজ/ পাশ্চাত্যবাদীরা, যাঁরা মনে করতেন, ভারতীয় শিক্ষা, জীবনযাত্রা, সামাজিক পদ্ধতি ইত্যাদির ‘আধুনিকায়ন’ সম্ভব শুধুমাত্র পশ্চিমা শিক্ষা, জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে। ম্যাকলে ছিলেন অ্যাংলিসিস্টদের একজন। তিনি ভারতে সেই সময়ের বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিংকের সমর্থনে একটি নতুন শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করলেন, যা ১৮৩৫ সালের ‘ইংলিশ এডুকেশন অ্যাক্ট’ হিসেবে ইন্ডিয়া কাউন্সিলে গৃহীত হয়, এবং বেন্টিংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়। এই আইন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত তাঁর বিখ্যাত ‘মিনিট অন (ইন্ডিয়ান) এডুকেশন’ বক্তৃতায়/ নিবন্ধে। সেখানে তিনি বেশ আত্মতুষ্টি এবং প্রত্যয় থেকে জানাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে এমন এক শ্রেণির ভারতীয় তৈরি করা, যাদের গায়ের রং ও রক্ত হবে শুধু ভারতীয়, কিন্তু তারা আচার-আচরণে, রুচিতে, বুদ্ধিগত গঠনে হবে ইংরেজ। এই দো-আঁশলা বা হাইব্রিড ভারতীয়রা অকাতরে এবং প্রশ্নহীনভাবে ইংরেজের সেবা করে গেছে। বলাবাহুল্য আরবি/ ফার্সি ও সংস্কৃত শিক্ষার গুরুত্ব কমল, ইংরেজি শিক্ষার প্রসার বাড়ল।
পশ্চিমা শিক্ষা ও ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তা কখনো অস্বীকার করার নয়। শিক্ষার ও সংস্কৃতির অঞ্চলটিও বেড়া বেঁধে আলাদা করে দেওয়ার বিষয় নয়। এক ভাষা আরেক ভাষার সঙ্গে, এক সংস্কৃতি আরেক সংস্কৃতির সঙ্গে নিরন্তর কথোপকথনে লিপ্ত থাকবে। এক সংস্কৃতি আরেক সংস্কৃতির ভালোটুকু গ্রহণ করবে। সমৃদ্ধ হবে এবং একই সঙ্গে স্থানীয় ও বৈশ্বিক হবে। পশ্চিমে জ্ঞান-888sport apkের যে সাধনা হয়েছে, তা জানাটা অবশ্যই জরুরি ছিল; কিন্তু ম্যাকলের ‘মিনিট’-এ এটি পরিষ্কার, এই জানাটা বাধ্যতামূলক, একপাক্ষিক এবং উপনিবেশী শাসকদের শর্তযুক্ত। ভারতীয়রা পশ্চিম ও ইংল্যান্ডকে জানবে পশ্চিমের শর্তে, নিজেদের শর্তে বা প্রয়োজনে নয়, এবং ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে। ফলে কথোপকথনের বিষয়টি নেই, গ্রহণটাও একতরফা। এর ফলে যেসব দ্বৈততা উপনিবেশ জরুরি করে তোলে, ব্যাপক আকারে প্রয়োগ করে, সেগুলির উপস্থিতি প্রবল হলো।
কেন্দ্র-প্রান্ত, উচ্চবর্গ-নিম্নবর্গ, বৃহৎ সত্তা-ভিন্ন অস্তিত্ব, সাদা-কালো, পুব-পশ্চিম ধীরে ধীরে একটা অবধারিত কাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেল। এই বিভাজনের কয়েকটি সব দেশেরই ক্ষমতাকাঠামোকে চিহ্নিত করে। উপনিবেশপূর্ব ভারতে শ্রেণির বিভাজন ছিল, বিত্তের এবং এলিট-নিচুবর্গের বিভাজন ছিল। পুরুষতান্ত্রিকতা ভারতসহ সব দেশেই 888sport promo codeদের অধীন করেছে, তাদের পরিচয় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে; কিন্তু উপনিবেশী রাষ্ট্র এই বিভাজনগুলি বৃহত্তর এক পরিমণ্ডলে স্থাপন করে এবং অনেক বেশি আগ্রাসী হয়, পুব-পশ্চিম, কেন্দ্র-প্রান্ত ও সাদা-কালোর মতো বিভাজনের ক্ষেত্রে পশ্চিমের চিন্তাগুলি যেরকম ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়, তা স্থানীয় যে কোনো তুলনীয় চর্চা থেকে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী। এসবের অভিঘাতও হয় প্রবল।
এডওয়ার্ড সাঈদ তাঁর ওরিয়েন্টালিজম গ্রন্থে দেখিয়েছেন পুব-পশ্চিম, সাদা-কালো ইত্যাদি বিভাজনে সাজানো প্রাচ্যবাদী চিন্তাগুলি কীভাবে উপনিবেশ স্থাপন ও উপনিবেশী শাসনের একটা ক্ষেত্র তৈরি করে এবং এগুলিকে বৈধতা দেয়। তিনি লিখেছেন, প্রাচ্য হচ্ছে ইউরোপের বস্তুবাদী সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং প্রাচ্যবাদকে একটি বিশেষ বয়ান বা ডিসকোর্স হিসেবে না দেখলে বোঝা যাবে না, এই প্রকাণ্ড সুবিন্যস্ত বিষয়চিন্তার সাহায্যে ‘রাজনৈতিকভাবে, সমাজতাত্ত্বিকভাবে, সামরিকভাবে, আদর্শগতভাবে, বৈজ্ঞানিকভাবে, এবং কল্পনাগতভাবে, জ্ঞানালোক প্রাপ্তির পরবর্তী যুগে প্রাচ্যকে বাগে রেখেছে – এমনকি তৈরিও করেছে (২৩)।’ সাঈদ বলেন, একসময় ইউরোপের অভিজ্ঞতা এবং কল্পনার রঙ্গে মেশানো যে প্রাচ্য ছিল, যাকে ‘এক্সোটিক’ বা বিচিত্র ও অদ্ভুত বলা যায়, যার সঙ্গে এই বস্তুবাদী প্রাচ্য নির্মাণটি মিশে গেল, তা ছিল ইউরোপের এক উদ্ভাবন। এই উদ্ভাবিত প্রাচ্য একসময় প্রতীচ্যের বিপরীত হিসেবে দেখা দিলো। যদি প্রতীচ্য হয় সভ্য, যুক্তিবাদী, সুশৃঙ্খল, প্রাচ্য হয়ে দাঁড়ালো অসভ্য, যুক্তিহীন, বুনো। নেতির সব বিশেষণ যুক্ত হলো প্রাচ্যের ভাগে, আর প্রতীচ্য হয়ে দাঁড়ালো এক আকর্ষণীয় সত্যরূপ। এই যুক্তিটা উপনিবেশীদের দরকার ছিল তাদের লজ্জাজনকভাবে স্বার্থান্বেষী, আগ্রাসী এবং অমানবিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। ইংরেজ ঔপন্যাসিক রুডইয়ার্ড কিপলিং তো দাবিই করে বসলেন, পুবকে সভ্য করাটা সাদা মানুষের কাঁধে চেপে বসা এক দায়িত্ব। অথচ এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসের উৎসব এবং লুটপাট চলল বিশ্বব্যাপী, তার প্রভাব তো বিশ্ব এখনও অনুভব করছে। অবাক কাণ্ড, জ্ঞানালোক প্রাপ্তির যুগের আদর্শচিন্তা ও যুক্তিনিষ্ঠার সত্যযুগেও পশ্চিমে উপনিবেশবাদকে শুধু মেনে নেয়া হলো না, এর দ্বিত্বতা, দ্বিমুখী আচরণ এবং মিথ্যাচারকে কেউ তেমন প্রশ্নবিদ্ধ করল না, একে প্রত্যাখ্যান বা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা তো দূরের কথা। উনিশ শতকের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও লেখক বেঞ্জামিন ডিজরায়েলি তো ঘোষণাই দিয়ে ফেললেন, পুব হচ্ছে একটি ‘ক্যারিয়ার’ – অর্থাৎ কর্মক্ষেত্র, যেমন ব্যাংকিং খাতটি একটি ক্যারিয়ার।
ব্রিটিশ ভারতের বৃহস্পতি যখন তুঙ্গে, উপনিবেশী শাসন চলছে দুর্নিবার, বাধাহীনভাবে, তখনই শুরু হলো এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। একদিকে উপনিবেশী যত কৌশল – ভাষা ও সংস্কৃতি দখল করা, জাতিসত্তাকে অস্বীকার বা প্রশ্নবিদ্ধ করা, সকল স্থানীয় চর্চার পরিসর সংকুচিত করা, ইত্যাদি – কার্যকর হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিরোধ ভূমি পাচ্ছে। উপনিবেশবিরোধী যোদ্ধা, চিন্তাবিদ ও লেখক ফ্রান্জ ফ্যানন তাঁর রেচেড অফ দি আর্থ বইতে লিখেছেন, যেখানে উপনিবেশী নিষ্পেষণ, সেখানেই প্রতিরোধ। অর্থাৎ নিষ্পেষণ মুদ্রার উল্টোপিঠে আছে প্রতিরোধ। আলজেরিয়া ছিল ফরাসিদের উপনিবেশ, এবং তা ছিল শুধু ফরাসি সামরিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল। তিনি লিখলেন, প্রতিরোধের ভাষাও হতে হবে সহিংস, যেহেতু উপনিবেশী শাসকেরা সহিংসতার ভাষাটাই শুধু চেনে। এজন্য মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ এবং অহিংস আন্দোলনে ব্রিটিশরা বিচলিত হয়ে পড়েছিল। গান্ধী সহিংস, সশস্ত্র আন্দোলন করলে তারা বুঝত, প্রত্যুত্তর দিতে পারত। ভারতে ব্রিটিশদের জন্য তো বিপুল এক লাভজনক উপনিবেশী প্রকল্প বন্ধ করে চলে যাওয়ার কথা ছিল না, এমনকি প্রথম মহাযুদ্ধের পরও। কে চায় সোনার ডিম পাড়া হাঁস হাতছাড়া করতে। শেষ পর্যন্ত করতে যে হলো, তাতে, অন্য অনেক কারণের মধ্যে, গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের অভিঘাতটা একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিল।
ব্রিটিশরা চলে গেল, কিন্তু দুই স্বাধীন হওয়া দেশের, এবং তাদের প্রধান দুই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ চিরস্থায়ী করে গেল। কাশ্মির ঠিক কার সঙ্গে থাকবে, তার মীমাংসা হলো না। দুটি দেশ ঠিক করে নিল, যুদ্ধ বাধিয়ে কাশ্মিরের মীমাংসা করা যাবে। এজন্য প্রয়োজন শক্তিশালী সেনাবাহিনী। যুদ্ধবিমান। হেলিকপ্টার, ট্যাংক। যে-টাকা খরচ হওয়ার কথা ছিল শিক্ষায়, স্বাস্থ্য খাতে, তা দিয়ে কেনা হলো এসব সরঞ্জাম। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অফিসার পদে যোগ দিত এলিট শ্রেণীর সন্তানেরা, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদেও। ভারতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় যায়নি, গণতন্ত্রকে চলতে দিয়েছে তার পথে, পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় গেছে, এলিট শ্রেণির যা ঐতিহ্যগত অধিকার এবং আমলাতন্ত্রের ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে তারা দেশ পরিচালনা করেছে।
ভারতে এবং পাকিস্তানে স্বাধীনতার পর উপনিবেশী কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি সামরিক ও ক্ষমতাশীল আমলাতন্ত্রের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা শ্রেণির অবস্থানটি শুরু থেকে অক্ষুণ্ন থাকার কারণে। পাকিস্তানে গণতন্ত্র টেকেনি, ভারতে টিকেছে। কিন্তু যে-দুই দেশ শুরু থেকেই তাদের সুরক্ষার প্রথম শর্ত হিসেবে দেখেছে সামরিক সক্ষমতাকে, সেখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় বামপন্থী কোনো দল থাকলেও উপনিবেশী কাঠামোতে তেমন কোনো পরিবর্তন হতো, এটি ভাবা কঠিন।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুই অংশ চব্বিশ বছর যে একসঙ্গে ছিল, তা-ই এক অবাক করার মতো বিষয়। এক ধর্ম ছাড়া দুই প্রদেশের 888sport free betগুরু মানুষজনের মধ্যে আর কোনো মিলই ছিল না। এখানে পশ্চিম পাকিস্তানের জায়গায় আফগানিস্তান অথবা ইরাক হলেও সম্ভবত একই কথা হতো। কিছুদিন এক থাকার মূলে কাজ করেছে প্রধানত বাঙালিদের ভাগ্যোন্নয়নের প্রত্যাশা। ইতিহাস বলে, পূর্ব বাংলার মানুষ কখনো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল না। তাদের প্রধান কাজ ছিল কৃষি, তবে জমির ওপর কৃষকের মালিকানা ছিল সীমিত এবং 888sport app সংযুক্তির (যেমন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি) ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে ছিল না। জমিদার ও 888sport app মধ্যস্বত্বভোগী কৃষিপণ্যের মূল্যের সিংহভাগের মালিক ছিল। এজন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অভাব ছিল চিরস্থায়ী, জীবনযাত্রার মান ছিল তলানিতে। মুসলমান কৃষকরা ছিল সত্যিকার অর্থে নিম্নবর্গীয়।
যখন 888sport live chatবাণিজ্যের প্রসার ঘটল, তাতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। ফলে ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গের মানুষ কৃষিতে যতটা জড়িত ছিল, 888sport live chat-বাণিজ্যে তার ধারেকাছেও ছিল না। তাদের আশা ছিল বিরাট পরিবর্তনের এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজের। তারা ভেবেছিল, তাদের প্রধান রফতানি, পাট এবং পাটভিত্তিক কলকারখানায় তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা হবে; কিন্তু পাকিস্তানের শুরুর দিন থেকেই এসব ক্ষেত্রে হতাশা দেখা দিলো। পাটকলগুলির মাত্র দু-একটি ছাড়া সবগুলির মালিকানায় এলো পাকিস্তানি 888sport live chat সম্প্রদায়। আদমজী বা বাওয়ানী পরিবারগুলি হলো এক্ষেত্রে বড় খেলোয়াড়। পরিশ্রম করতে থাকল বাংলার কৃষক ও শ্রমিক, লাভের নব্বই শতাংশ চলে গেল পাকিস্তানি মালিকদের হাতে। বিদেশে পাট বিক্রির টাকায় পশ্চিম পাকিস্তানে উন্নয়ন হলো, সেনাবাহিনীর তরক্কি বাড়ল, কিন্তু মারা পড়ল বাংলার কৃষক ও শ্রমিক।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তার উপনিবেশী শাসন শুরু করল ইংরেজ ও 888sport app উপনিবেশী শক্তির দেখানো পথে; এবং মোটা দাগে, পাঁচ থেকে ছয়টি পদ্ধতি তারা গ্রহণ করল।
ক. উপনিবেশী বৃহৎ সত্তা (self) ভিন্ন অস্তিত্ব (other) বিভাজন মাথায় রেখে তারা নিজেদের বৃহৎ সত্তা হিসেবে ঘোষণা দিলো এবং বাঙালিদের ভিন্ন সত্তার বা অস্তিত্বের বর্গে ফেলে দিলো। তারা যে শৌর্যে-বীর্যে, দেহগঠনে, গায়ের রঙে, জাতি ও বংশ পরিচয়ে বাঙালিদের থেকে উন্নত (এবং কুলীন) সেটি তারা প্রশ্নাতীত বলে প্রচারে নামল। বাঙালিদের তারা উপস্থাপিত করল এর সব বিপরীত সারণিতে, অর্থাৎ বাঙালি, এক কথায়, সভ্যতাহীন। সাঈদ যে বলেছেন, প্রাচ্যবাদ পশ্চিমকে উৎকৃষ্ট এবং পুবকে নিকৃষ্ট করে উপনিবেশায়নকে বৈধতা দিয়েছিল, পাকিস্তানিরাও সেই অপযুক্তির আশ্রয় নিল। পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ও তার সহায়তা ছাড়া বাঙালিরা সভ্য হতে পারবে না, এরকম একটি চিন্তায় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ থেকে নিয়ে অশিক্ষিত রাজনীতিবিদ ও অর্ধশিক্ষিত সৈনিকও বিশ্বাস করতে শুরু করল।
খ. 888sport appsে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পূর্ববাংলার ভূগোল থেকে নিয়ে প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা থেকে নিয়ে বিচারব্যবস্থা সর্বত্র নিরঙ্কুশ করার জন্য তারা সক্রিয় হলো। ব্রিটিশ মডেলে তারা কেন্দ্রগুলিতে গভর্নর বা ছোটলাট নিয়োগ দিলো এবং তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ক্ষমতায়ন করল। এ-কারণে গণতন্ত্র অপেক্ষা কেন্দ্রীয় শাসন গুরুত্ব পেল (সামরিক হলে তা হয় উৎকৃষ্ট, যেহেতু তাতে কোনো কিছুর জন্য জবাবদিহির ও কৈফিয়ত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই)। এজন্য সাত-আট বছর পাকিস্তানে দুর্বল গণতন্ত্র থাকলেও পদে পদে তার চর্চায় বাধা দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৮ সালে গণতন্ত্রের ইতি টেনে সামরিক শাসন বেছে নেওয়া হলো। পশ্চিম পাকিস্তানে গণতন্ত্রের পক্ষে তেমন সংগ্রাম হয়নি, কারণ এর ক্ষমতা সবসময়ই ভূস্বামী ও ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করেছে, স্থানীয় কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তাতে গড়ে ওঠেনি। 888sport appsে গণতন্ত্রের প্রতি তৃণমূল থেকে নিয়ে যে দৃঢ় সমর্থন ছিল, তা পশ্চিম পাকিস্তানের কোথাও ছিল না। এজন্য সামরিক শাসনের নিষ্ঠুরতার বলি হতে হয়েছিল 888sport appsের মানুষকেই।
গ. প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক শোষণ ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত করা। এই শোষণের ফলে 888sport appsের সম্পদ ও সক্ষমতা কমতে থাকল। অর্থনীতির পরি888sport free betনের দিকে দৃষ্টি দিলেই দেখা যাবে, 888sport appsের বার্ষিক গড় উৎপাদন এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, যা একসময় পাকিস্তানের চাইতে বেশি ছিল, ১৯৬০-এর দশকে অনেক কমে এলো। তাছাড়া একটা শুভঙ্করের ফাঁকি এই ছিল যে, 888sport appsের উৎপাদন ও উপার্জনকে 888sport appsের দেখানো হলেও এর এক বড় অংশের মালিক ছিল 888sport apps থেকে ব্যবসা ও 888sport live chatপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা পাকিস্তানিরা। তাদের অর্জন দ্রুতই চলে যেত পাকিস্তানে।
ঘ. ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিসত্তা, ব্যক্তিচেতনা – এই সকল ক্ষেত্রে আগ্রাসী এবং অধিকারকামী মনোবৃত্তি প্রদর্শন করা। জিন্নাহ যখন 888sport appয় উর্দুর পক্ষে আপসহীন ঘোষণা দিলেন, এই বিষয়টি তখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, কালক্রমে বাঙালি পরিচয় ভুলে যেতে হবে। পাকিস্তানি পরিচয়ে বাঙালির পরিচিতি একীভূত করতে শুরু থেকে পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্র ছিল সক্রিয়। শিক্ষাকে তারা পাকিস্তানিকরণ – অর্থাৎ বাজারমুখী, শ্রেণিশাসিত, সীমিত সুযোগের (অর্থাৎ বিত্তশালীদের পক্ষে) করার চেষ্টা করেছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের মতোই ধর্মকেও তারা তাদের শাসনের কাজে লাগিয়েছে। 888sport appsের মানুষ ধর্মপ্রাণ, তাদের ধর্মানুভূতি ছিল প্রকৃত, তাতে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না, অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছিল না; কিন্তু পাকিস্তানিরা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে, সাম্প্রদায়িকতাও বিভাজনের উপায় হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। এ-কাজে তারা জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু দলকে সমর্থক হিসেবে পেয়েছে, যারা একাত্তরে স্বজাতির বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছে।
ঙ. এবং উপনিবেশবিরোধী যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, সেগুলি নির্বিচার নির্মমতায় দমন করেছে, যেমন ব্রিটিশরা করেছে (১৮৫৭, জালিয়ানওয়ালাবাগ ১৯১৯ এবং আরো অসংখ্য ক্ষেত্রে)। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে তারা যে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে, তা ছিল একটি গণহত্যার নীলনকশা, যার বাস্তবায়ন চলে সারা একাত্তর ধরে, এবং যার শেষ একটি বীভৎস হত্যাযজ্ঞ দিয়ে, ১৯৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর, রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে।
তবে উপনিবেশবাদ একটি দু-ধারি তলোয়ারের মতো অথবা বুমেরাংয়ের মতো, অথবা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবের মতো। ফ্যানন যে বলেছিলেন, উপনিবেশী শাসন উপনিবেশবাদীদেরও সমানভাবে কলুষিত করে, তার প্রমাণ পাকিস্তান। দেশটি এখনো চলছে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে, সেখানে ধর্মীয় হানাহানি তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বালুচ এবং অন্য 888sport free betলঘুদের জীবন সেখানে বিপন্ন। অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের প্রায় সব সূচকে দেশটি এখন 888sport apps থেকে পিছিয়ে।
দ্বিতীয় একটি আয়রনি হলো, পাকিস্তান বাঙালিদের কাছে রাজা-রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও, তাদের ভাগ্য নির্ভরশীল ছিল বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মর্জির ওপর। দীর্ঘদিন তারা মার্কিনিদের অনুগত ছিল, কারণ সামরিক যত সরঞ্জাম তারা কিনত, তার প্রায় সবই আসত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাষ্ট্রগুলির কাছ থেকে। এজন্য একাত্তরে যুদ্ধ বাধিয়ে পাকিস্তান তাকিয়ে ছিল এসব দেশের দিকে পাকিস্তানি সমর্থনের বস্তুগত বাস্তবায়নের জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সপ্তম নৌবহর ভারত মহাসাগরে পাঠালেও তা নিষ্ক্রিয় থাকল। এই বিষয়টি পাকিস্তানিদের হিসাবে ছিল না। থাকলে তারা হয়তো যুদ্ধ লাগালেও একসময় একটা সম্মানজনক প্রস্থান খুঁজে নিত। শেষ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর সামনে তাদের অস্ত্র ও আত্মসমর্পণ করতে হলো।
তিন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাতচল্লিশের দেশবিভাগের পর থেকেই ধীরে ধীরে এই উপলব্ধিতে পৌঁছাচ্ছিলেন যে, যে আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তান রাষ্ট্রে যোগ দিয়েছিল, তার ভূমিগুলি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে অথবা দুর্বল হচ্ছে। যেদিন 888sport appয় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়া হলো, সেদিন তাৎক্ষণিকভাবেই তার এক কঠিন উত্তর ছাত্ররা জিন্নাহর কথা থামার আগেই জানিয়ে দিলো। এতে উপনিবেশী শাসকরা ক্ষিপ্ত হলো, দমন-পীড়নের ছক তৈরি হলো। বঙ্গবন্ধু উপনিবেশের ছলাকলাকে ধরতে পারতেন, যেহেতু তিনি মাঠে থেকে গণমানুষের চোখ দিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতেন। বাংলাভাষাকে গুরুত্বহীন করা, উর্দুকে দেশের প্রধান ভাষা করার উপনিবেশী কৌশলের বিরুদ্ধে বাঙালির ভাষা-আন্দোলন ছিল প্রকৃতপক্ষে উপনিবেশবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনের সূচনা।
ভাষার সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। বাঙালি সংস্কৃতিকে অক্ষুণ্ন রাখতে, এর ভেতরের শক্তিটা মানুষের, বিশেষ করে যুবসমাজের ভেতরে সঞ্চারিত করার সংগ্রামটি অতঃপর জোরদার হলো। বঙ্গবন্ধু রাজনীতিকেও আমাদের সংস্কৃতির শক্তি দিয়ে জাগাতে বদ্ধপরিকর হলেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারিতে আওয়ামী লীগের যে সম্মেলন হয়, তাতে দিনের মঞ্চ অধিকার করে রাখত রাজনীতি, বিকেল-সন্ধ্যায় সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি-আয়োজনে দুই বাংলার লেখক-888sport live footballিক-888sport live chatীদের অংশগ্রহণ ছিল। বঙ্গবন্ধু জানতেন, সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ এবং বৃহত্তর উপনিবেশবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে তৃণমূল থেকে। সেজন্য কাগমারি সম্মেলনে রাজনীতিতে তৃণমূলের শক্তির জোগান দেওয়ার যেমন আয়োজন ছিল, তেমনি ছিল আমাদের লোকসংস্কৃতির ওপর জোর দিয়ে পরিচালিত সাংস্কৃতিক কর্মসূচিকে সকল শ্রেণির জন্য উন্মুক্ত করা। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির ভেতরের সংস্কৃতিকেও উচ্চমূল্য দিতেন, যেজন্য তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। প্রকৃত গণতন্ত্রে রাজনীতির সংস্কৃতি সবচেয়ে পরিশীলিত রূপ নিয়ে থাকে, সামরিক শাসন সেই রাজনীতি থেকে আলোকবর্ষ দূরে থাকে। সামরিক শাসনের সময় রাজনীতির নামে সকল গণবিরোধী, সংস্কৃতিবিরোধী সংগঠিত হতে থাকে। নব্য উপনিবেশী পাকিস্তানের সামরিক শাসন তাই বাঙালিরা মেনে নেয়নি, অথচ পশ্চিম পাকিস্তানে এর বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি।
উপনিবেশী রাষ্ট্রে ধর্মকে ব্যবহার করা হয় শাসকগোষ্ঠীর জাগতিক প্রয়োজনে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এর বিপরীতে বাঙালির সংগ্রাম ছিল ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখা, ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রকে না মেলানো, এবং প্রতিটি ধর্মের অনুসারীদের নিজস্ব ধর্ম পালন বাধাহীন করা। একাত্তরে যে অসাম্প্রদায়িক 888sport apps যুদ্ধ করেছে, অসাম্প্রদায়িক আদর্শ থেকে এক অটুট ঐক্য যেভাবে তৈরি করেছে, তাতে আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম, ভবিষ্যতের 888sport apps এই আদর্শ অনুযায়ীই চলবে। 888sport apps রাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বলে যে নীতি সংযোজিত হয়েছে, তা উপনিবেশী ভেদবুদ্ধি ও ধর্মের রাজনৈতিক এবং জাগতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি নীতি ও আদর্শগত অবস্থান।
উপনিবেশী শাসনের যে-লক্ষ্যটি প্রথমদিন থেকেই সুস্পষ্ট হয়, তা হচ্ছে, উপনিবেশের সম্পদ কুক্ষিগত করা, শোষণ ও আত্মসাতের মধ্য দিয়ে উপনিবেশ স্থাপনে যত আর্থিক, বস্তুগত ও 888sport app বিনিয়োগ করা হয়েছে তার বহুগুণ বেশি তুলে নেওয়া, প্রতিবছর তা চালু রাখা, এবং অর্থনৈতিক সকল কর্মকাণ্ডে উপনিবেশী অবস্থানের সুযোগ গ্রহণ করা। পাকিস্তান রাষ্ট্রটিও তাই করেছে। ফলে, একথা জোর দিয়েই বলা যায়, ১৯৪৭ সালের শেষদিক থেকেই 888sport appsকে শোষণের একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বাঙালির উপনিবেশমুক্তির আন্দোলন যত তীব্র হয়েছে, অর্থনৈতিক শোষণ বিষয়টি তত গুরুত্ব পেয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে উপনিবেশমুক্তির সংগ্রামটি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সন্নিবেশিত করার জন্য ১৯৬০-এর দশকের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় হতে শুরু করেন। তিনি তাঁর সহকর্মী, অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদ এবং নীতি নির্ধারণের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ ব্যাপারটি নিয়ে অনেক আলোচনা করেন। এ-বিষয়ে তিনি তাড়াহুড়া করেননি। বলা যায়, তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও নিজস্ব পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে যখন এর একটি ধারণা স্পষ্ট করতে শুরু করেন, তখনি ওইসব বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেছেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালের জুন মাসে তিনি তাঁর ছয় দফা সনদ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে এই সনদ নিয়ে তিনি জনগণের কাছে যেতে থাকলেন, সারাদেশে জনসভা করলেন, মানুষের মতামত শুনলেন এবং বুঝতে পারলেন, এর প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন ছয় দফাকে পূর্ব বাংলার স্বাতন্ত্র্য ও সকল বিষয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি মেনিফেস্টোতে পরিণত করেছে। পাকিস্তানিদের কাছে এরকম সুস্পষ্ট একগুচ্ছ দাবি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ছিল। উপনিবেশী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা এটিকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ হিসেবেই আখ্যায়িত করল। এরপর যত ছয় দফার দাবি তীব্র হলো, সেই রাষ্ট্রবিরোধিতার একটি অভিযোগ তৈরির সুযোগ পাকিস্তানিরা খুঁজতে থাকল। একসময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আড়ালে তারা তা বাস্তবায়ন করল।
কিন্তু তাদের আঁটুনি যতই বজ্র হচ্ছিল, তা ছেঁড়ার সংকল্প ততই শক্তি অর্জন করছিল। ঊনসত্তরের গণআন্দোলন তাদের পরিকল্পনার ছক উল্টে দিলো। শেখ মুজিবুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু’ অভিধায় ভূষিত হলেন এবং উপনিবেশমুক্তির সংগ্রাম একটা সফল পরিসমাপ্তির দিকে গেল।
চার
একাত্তরের পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল, এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং এর সকল অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলব, যাতে কোনো উপনিবেশী ছায়াপাত থাকবে না। অর্থাৎ সকল ক্ষেত্রে নায্যতা প্রতিষ্ঠা পাবে, প্রত্যেক নাগরিকের প্রতিটি অধিকার সুরক্ষিত থাকবে, গ্রামের মানুষের কাছে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল সুযোগ পৌঁছাবে, অর্থনীতি উন্নয়ন ঘটাবে কিন্তু বৈষম্য থাকবে না, শ্রমিক-কৃষক-পুঁজিপতি এই মাটিতে তৈরি হবে না, যে-পুঁজি উৎপাদিত হবে তাতে সব মানুষের দাবি থাকবে, অর্থাৎ তা শেষ পর্যন্ত সকলের মঙ্গলের জন্য ব্যয় হবে এবং ধর্ম থাকবে তার আদর্শরূপে ও চর্চায়, তাকে বৈষয়িক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। এরকম আরো অনেক স্বপ্ন-কল্পনা-আদর্শচিন্তা ছিল সকলের; কিন্তু দেখা গেল, যত দিন গেল সেসব অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা দূরে সরে গেল। পুঁজির হাতবদল হলো, প্রতিষ্ঠানগুলির মৌলিক চরিত্র অক্ষুণ্ন থাকল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে গরিব মানুষের অধিকার নিশ্চিত হলো না।
নয় মাসের বিধ্বংসী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হওয়া একটি দেশ খুব দ্রুত উঠে দাঁড়াতে পারে না, একাত্তরের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রথম দিন থেকেই কোমর বেঁধে দাঁড়াতে পারে না। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন। সেই সময় দিতে মানুষ প্রস্তুত ছিল। বঙ্গবন্ধু সচেষ্ট ছিলেন সেই লক্ষ্যে কাজে নামার। অনেক উদ্যোগ তিনি নিয়েও ছিলেন। ১৯৭২-এর সংবিধান, ’৭৪-এর শিক্ষানীতি এবং অনেক শক্তি-পরাশক্তির বাধা সত্ত্বেও 888sport appsের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি ও সমর্থন আদায় ছিল তার কয়েকটি। কিন্তু যে-সময়টি মানুষ তাঁকে দিয়েছিল সব গুছিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করার, সেই সময়টি পরাজিত শত্রুরা ব্যবহার করেছে সংগঠিত হওয়ার জন্য। হাতবদল হয়ে পুঁজি যাদের হাতে এলো, তারাও তাদের মালিকানা রক্ষার কৌশল স্থির করতে বসল। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিয়ে পরিকল্পনা বলা যায় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে আসার দিনই শুরু হয়েছিল। এদিনের পর যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলো, তা ছিল উপনিবেশী মডেলে ফিরে যাওয়ার জন্য আদর্শ।
ফ্যানন আমাদের জানিয়েছেন, উপনিবেশী শাসকের সঙ্গে শাসিতদের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের পরিসমাপ্তিতে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এলেও দ্রুতই সেসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে, যার প্রধান প্রকাশটি হয় নতুন গড়ে ওঠা এলিট শ্রেণির সঙ্গে উপনিবেশমুক্ত দেশটির বাকি সকলের। স্থানীয় এলিটরা উপনিবেশী ক্ষমতার রেখে যাওয়া শূন্য আসনে বসে পড়লে উৎপাদন কাঠামোর যারা সবচেয়ে সক্রিয় এবং বৃহৎ অংশীদার, অর্থাৎ কৃষক ও শ্রমিক, তাদের ওপর নিষ্পেষণ এবং দুর্নীতি ব্যাপক হতে থাকে। 888sport appsেও তাই হয়েছে। এলিট শ্রেণির পুঁজিপতি ও ধনপতিদের সঙ্গে যোগ দেয় উপনিবেশী শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। উনিশশো সত্তরের শেষভাগ ও পুরো আশির দশকজুড়ে উত্থান হলো এই শোষক শ্রেণির এবং তাদের সমর্থন দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও নানান ক্ষমতাকেন্দ্র।
১৯৯০-তে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পরও কোনো বড় পরিবর্তন এলো না। বরং দুর্নীতির জাল আরো বিস্তৃত হলো। এখন তো লুণ্ঠনের অনেক নতুন অঞ্চল তৈরি হয়েছে – নতুন কিছু ব্যাংক, যেগুলি শুরু থেকেই সন্দেহজনক বলে মিডিয়াতে বর্ণিত হয়েছে, এবং কিছু ই-কমার্স চক্র এসবের উদাহরণ।
পাঁচ
তারপরও 888sport appsের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেশটা স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা দেশটা নিয়ে গর্ব করি, এর পরিশ্রমী মানুষকে নিয়ে গর্ব করি। আমরা জানি, একাত্তরের স্বপ্নে ফিরে যাওয়া আমাদের হয়তো আর সম্ভব হবে না; কিন্তু উপনিবেশমুক্তির ভাবনাটা তো নতুন করে বিন্যস্ত করা যায়। এর জন্য মনের উপনিবেশমুক্তিটা জরুরি। মনকে এখন নানান রূপান্তরে অগ্রসরমান নতুন উপনিবেশবাদ দখল করে নিচ্ছে। তা থেকে মুক্তি প্রয়োজন।
এই মুক্তি দিতে পারে শিক্ষা ও সংস্কৃতি। পুরনো বলে অবহেলিত কিছু মূল্যবোধ। বিবেকের জাগরণ। আত্মশক্তি।
শিক্ষায় মৌলিক পরিবর্তন সম্ভব। সংস্কৃতির শক্তি অন্বেষণ এবং সমাজের ভেতর তার সংস্থাপন সম্ভব। মূল্যবোধের চর্চা, বিবেকের জেগে ওঠাও সম্ভব। এগুলি অলীক স্বপ্ন নয়। তাহলে 888sport live football হতো না, মানুষ কঠিন বর্তমানেও আগামীদিনের দিকে তাকিয়ে থাকত না।
মধ্যষাটে আমরা কেউ ভাবিনি, আশা করা তো দূরের কথা, যে, আর পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে 888sport apps এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এখনো আমরা হয়তো ভাবতে পারি না, মনের ও সব প্রতিষ্ঠানের উপনিবেশমুক্তি কখনো সম্ভব। কিন্তু ইতিহাস তো বলে পাঁচ-ছয় বছর না হোক, পাঁচ দশকে তা সম্ভব।
তথ্যসূত্র
১. কার্ট ভনেগাট, ১৯৭৩। ব্রেকফাস্ট অফ চ্যাম্পিয়নস অর গুডবাই ব্লু মানডে। নিউইয়র্ক, ডেল পাবলিশিং কোম্পানি।
২. এডওয়ার্ড সাঈদ, ১৯৭৮। ওরিয়েন্টালিজম। লন্ডন, রাউটলেজ অ্যান্ড কেগান পল লি.।
৩. ফ্রানৎজ ফ্যানন, ১৯৬৩। দি রেচেড অফ দি আর্থ। নিউইয়র্ক, গ্রোভ প্রেস ।
৪. ফ্রানৎজ ফ্যানন, ১৯৬৮। ব্ল্যাক স্কিন, হোয়াইট মাস্কস। হার্মন্ডসওয়ার্থ, পেঙ্গুইন।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.