বাংলার চিত্রকলার রোমান্টিকতা

বাংলার চিত্রকলার রোমান্টিক ঐতিহ্যের মধ্যে একটা বিভাজন আছে। এই বিভাজনের একদিকে আছে অবনীন্দ্রনাথ থেকে যামিনী রায় থেকে নন্দলাল পর্যন্ত ঈশ্বরময় নিসর্গের অভিজ্ঞতা এবং অন্যদিকে আছে জয়নুল আবেদিন থেকে কামরুল হাসান থেকে সুলতান থেকে কাইয়ুম চৌধুরী পর্যন্ত ঈশ্বরহীন নিসর্গের অভিজ্ঞতা। প্রথম ক্ষেত্রের লাবণ্যময়তা দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রূপান্তরিত হয়েছে সবল শক্তিময় এক ভিশনের মধ্যে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রের 888sport live chatীরা নিসর্গের মধ্যে খোঁজ করেছেন সাধারণ মানুষের সত্তা। এই সত্তা জীবনযাপনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মধ্যে মগ্ন এবং রোমান্টিক ঐতিহ্য থেকে উৎসারিত। 888sport live chatের কল্পনাকুশল ভুবনের তাগিদেই তাঁরা বুঝেছেন যে, নান্দনিকতা হচ্ছে সকল অবিশ্বাস স্থগিত করার এক জায়গা। জয়নুল আবেদিনদের কাছে আধুনিকতার অর্থ হচ্ছে রোমান্টিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য সম্বন্ধে অলজ্জ পক্ষপাত। এই আধ্যাত্মিকতা ঈশ্বরতার সন্ধান নয়, বরং সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা আবিষ্কার। এই আবিষ্কার-প্রবণতার দরুন তাঁরা রোমান্টিকতা ও আধুনিকতা, জাতীয় ঐতিহ্য ও  আন্তর্জাতিকতা, লোকবাদ ও আঁভাগার্দের মধ্যে কোনো সংঘাত চিহ্নিত করেননি। তাঁদের কাজে তাঁরা প্রমাণ করেছেন যে, একটা রোমান্টিক ঐতিহ্য বাংলায় ধারাবাহিক, এই ধারাবাহিকতা আধুনিক-আন্দোলনের সময়েও বিদ্যমান এবং আধুনিক-আন্দোলন এই ধারাবাহিকতা বহিষ্কার করতে পারেনি। একটা রোমান্টিক অনুভূতিময়তা বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আধুনিক, সমালোচনামনস্ক মনোভঙ্গির বিপরীতে। বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এই রোমান্টিক অনুভূতিময়তার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলার সংস্কৃতির মেজাজের সঙ্গে এই রোমান্টিক অনুভূতিময়তা সহজেই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।

অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, যামিনী রায়ের নিসর্গচিত্রে স্বাভাবিকতার সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে ধর্মজবোধ ও আধ্যাত্মিকতা, তাঁরা এই বিশ্বাসে নির্ভরশীল ছিলেন যে, ঈশ্বর তাঁর সকল সৃষ্টির মধ্যেই বিদ্যমান। বাংলার এই পর্যায়ের চিত্রকলা বোঝা দরকার স্টাইলের বিবর্তনের দিক থেকে নয়, বরং অনুভূতিময়তার দিক থেকে। পশ্চিম ভূখণ্ডে, প্রধানত ফ্রান্সে, অনুভূতিময়তার বিযুক্ততা অবনীন্দ্রনাথ থেকে যামিনী রায় পর্যন্ত 888sport live chatীদের (রবীন্দ্রনাথ ব্যতিক্রম) বিক্ষুদ্ধ করেছে। প্রাচীন স্বাভাবিক ধর্মতত্ত্ব ভেঙে গেছে; অভিজ্ঞতাশ্রয়ী পর্যবেক্ষণ এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাস দুদিকে বিভক্ত হয়েছে। এই বিক্ষুব্ধ সময়ের মধ্যে অবনীন্দ্রনাথরা, নন্দলাল রায়রা, যামিনী রায়রা সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন, সবসময়ে জয়ী হয়েছেন তা-ও নয়, পুরানো বিশ্বাস ধ্যান-ধারণা ধরে রাখতে। দ্বিতীয় পর্যায়ের রোমান্টিক 888sport live chatীরা, জয়নুল আবেদিনরা, ঈশ্বরহীন নিসর্গের মধ্যে মহান এক নাটক মেলে ধরেছেন। অবনীন্দ্রনাথদের কাছে বঙ্গীয় গ্রামাঞ্চল হচ্ছে মানুষের জন্য ঈশ্বর-রচিত স্বর্গের বাগান, নিসর্গ হচ্ছে পুরাণাচ্ছন্ন পবিত্রভূমি। এই ভূমিই তাঁরা আবিষ্কার করতে চেয়েছেন, সেজন্য তাঁদের নিসর্গ-বিষয়ক কাজে একটা মোক্ষের সাক্ষ্য থেকেই গেছে।

জয়নুল আবেদিনদের মহানতার ভিত্তি বাস্তবতা। তাঁরা স্বাভাবিক ফর্মের প্রতিভাস কেবল পর্যবেক্ষণ করেননি, তাঁরা স্বাভাবিক ফর্মের মধ্যে মানুষের জীবনযাত্রার পরিসর খুঁজে বের করেছেন। এখানে প্রতিভাসের মধ্যে প্রকৃতি শেষ হয়ে যায়নি, প্রকৃতির প্রতিভাসের মধ্য দিয়ে তাঁরা জীবনযাত্রার বাস্তবতায় পৌঁছেছেন। অবনীন্দ্রনাথদের স্বর্গ হিসেবে প্রকৃতির ধারণার বদলে প্রকৃতির স্বাভাবিক ইমেজ জয়নুলরা নিয়ে এসেছেন। প্রকৃতি কিংবা নিসর্গ মোক্ষ নয়, স্বর্গের বাগান নয় : প্রকৃতি-নিসর্গের ব্যর্থতার বিপরীতে দেখা দিয়েছে প্রকৃতি-নিসর্গের স্বাভাবিকতা। অবনীন্দ্রনাথদের কাজ এবং রবীন্দ্রনাথের কাজ, অবনীন্দ্রনাথদের কাজ এবং জয়নুলদের কাজের মধ্যে নান্দনিক এবং আধ্যাত্মিক ভিন্নতা আছে। অবনীন্দ্রনাথদের কাজে একদিকে আছে ধর্মবোধ, অন্যদিকে আছে স্বদেশীয়ানা। ধর্মবোধ ও স্বদেশীয়ানা মিলে তাঁদের মধ্যে উদ্ভূত আদর্শবাদ। এই আদর্শবাদ দিয়ে তাঁরা ভারত888sport live chatের (এবং বঙ্গীয় 888sport live chatের) ভিন্নতা প্রমাণ করেছেন এবং দেশপ্রেম জাগ্রত করেছেন। এই ভিন্নতা এবং দেশপ্রেম দিয়ে তাঁরা পাশ্চাত্য 888sport live chatের (প্রধানত ব্রিটিশ 888sport live chatের) বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁদের কাছে নিসর্গ হচ্ছে ধর্মবোধ, দেশমাতৃকা, পৌরাণিকতার আখ্যান। নিসর্গ হচ্ছে ঈশ্বর, মরমী শূন্যতার মধ্যে অন্তরিত হওয়ার সড়ক। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাজ ব্যতিক্রম। তাঁর 888sport live footballে ও 888sport live footballভাবনায় নিসর্গের প্রধান ভিত্তি : ঈশ্বরময়তা। কিন্তু তাঁর 888sport live chatে, নিসর্গচিন্তায় অবনীন্দ্রনাথদের প্যানথিইজমের বিপরীতে উন্মীলিত নিহিলিজম। এই নিহিলিস্টিক-পরিসর থেকে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন 888sport live chatের শুভবোধ নিয়ে। তাঁর শেষদিকের কিছু 888sport app download apkয় (রূপ-নারায়ণের কূলে কিংবা প্রথম দিনের সূর্য কিংবা দুঃখের আঁধার রাত্রি) এই জিজ্ঞাসা থেকে থেকে দেখা দিয়েছে। তাঁর 888sport live chatে নিসর্গ এক ধূসর শূন্যতা, এক সম্ভাবনাহীন স্পেস, এক অতল গহ্বর। যেন এক নিখিল নাস্তি সবকিছু ঘিরে ধরেছে।

জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরীর নিসর্গবোধ একদিকে অবনীন্দ্রনাথদের, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের নিসর্গবোধের বিপরীত। জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরীর নিসর্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ঝড়ঝঞ্ঝা, দুঃখকষ্ট, আনন্দ-উচ্ছলতা, শান্তি ও ক্রোধ উপস্থিত। তাঁদের নিসর্গে উন্মীলিত অন্তরানুভূতি ও কল্পনাকুশলতা, তাঁরা এই অন্তরানুভূতি ও কল্পনা-কুশলতা নিয়ে যুক্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায়। তাঁরা নিসর্গের পরিসরে, তাঁদের অজান্তেই, অভিজ্ঞতাশ্রয়ী সমালোচনামনস্কতায় লিপ্ত হয়েছেন। এই অভিজ্ঞতাশ্রয়ী সমালোচনামনস্কতা, মানুষ-সম্বন্ধে মানুষের দায়িত্ববোধে ভরপুর, একইসঙ্গে নিজেদের ও পৃথিবী সম্বন্ধে তাঁদের বক্তব্য : তাঁদের নিসর্গ, চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, মানুষেরই ছাপ। তাঁদের কাজে গাছপালা, পশুপাখি, মাছ এবং নৌকো এবং মানুষ, শিক্ষাসূত্রে অর্জিত ফোকাসড পারসপেকটিভের কনভেনসন জাত নয়, বরং মাল্টিপল ইমাজারির মাধ্যমে সৃষ্ট, এই মাল্টিপল ইমাজারির দরুন তাঁদের কাজে অন্তর্ভুক্ত বহু অভিজ্ঞতা, যে-সব প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা থেকে উদ্ভূত। (জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের চিত্রের কঙ্কালরা নতুন ক্রাইস্ট : মানুষ যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, এই দুঃখবোধ, এই বিষণ্নতাবোধ, এই ক্রোধের বোধ ততদিন থাকবে। ক্রাইস্ট যেমন ইমেজে পরিণত হয়েছেন, তেমনি দুর্ভিক্ষের কঙ্কালরা দুঃখের ইমেজে পরিণত হয়েছে। পৃথিবী থেকে একদিন হয়ত, দুর্ভিক্ষ দূর হবে, কিন্তু দুঃখ তো দূর হবে না।) তাঁরা বঙ্গীয় চিত্রকলার নিসর্গের ঐতিহ্যের মধ্যে কাজ করেছেন, কিন্তু ঐতিহ্যকে বদলে দিয়েছেন অভিজ্ঞতাশ্রয়ী বোধ দিয়ে; তাঁরা পেইন্টিংয়ের সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতার মধ্যে কাজ করেছেন, কিন্তু সেখানে এনেছেন অভিজ্ঞতার তরতাজা ভাব, বহুবিচিত্র আবিষ্কার ও উদ্ভাবন।

দেশে-বিদেশে 888sport live chatীদের কাজ দেখে দেখে দুটি সত্যে উপনীত হয়েছি। প্রথমটি হচ্ছে, মানুষী শরীরের আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রকৃতি-নিসর্গের আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা। রাষ্ট্র, সরকার, মতাদর্শের বদল হলেই মানুষী শরীর ও প্রকৃতি-নিসর্গ আমূল বদলে যায় না। মানুষী শরীর ও প্রকৃতি-নিসর্গের এই আপেক্ষিক স্থিতিশীলতার কাছেই 888sport live chatের আবেদন : এক্ষেত্রেই ক্রিয়াশীল নান্দনিকতা। হার্বাট মারকুস এই ইতিহাস-অতিক্রমী, সর্বজনীন সত্যকেই বলেছেন নান্দনিকতার বোধ। এই নান্দনিকতার বোধ অধিকতর সক্রিয় বাস্তবতার ক্ষেত্রে এবং নান্দনিকতার অভিজ্ঞতা অধিকতর হ্রাস পায় যদি এই অভিজ্ঞতা বাস্তবতার আইডিয়া থেকে বিচ্যুত হয়। যেখানে বাস্তবতার উপস্থিতি বোঝা যায় এবং যেখানে বাস্তবতার অনুপস্থিতি অনুভব করা যায় সেখানেই 888sport live chatকর্মের মহত্ব। জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরী এখানেই কাজ করেছেন। একহাতে রুখেছেন শূন্যতা, অন্যহাতে প্রতিরোধ করেছেন মরমীয়াবাদ। এই প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে যাতে সমগ্র জীবন বাস্তব হয়ে ওঠে।

অবনীন্দ্রনাথরা নির্বাচিত সুন্দর খুঁজেছেন। বিপরীতে, জয়নুলদের কাছে সবকিছুই সুন্দর, জীবনযাত্রার সবকিছুই 888sport live chatসম্মত। নির্বাচিত সুন্দরের কাছে একটি পতনের জায়গা আছে। এই পতনের ভয়, সুন্দর থেকে স্খলনের ভয় অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, যামিনী রায়ে স্পষ্ট (এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ব্যতিক্রম)। পতনের ভয় কাজ করেছে বলে তাঁদের ক্ষেত্রে একধরনের পাপবোধ খুব সম্ভব কাজ করেছে। এই পাপবোধ ও পতনের ভয় জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান ও কাইয়ুম চৌধুরীর মধ্যে নেই। তাঁদের ক্ষেত্রে উন্মোচিত প্রাত্যহিকতা ও জীবনযাত্রার নান্দনিকতা। স্বর্গে প্রত্যাবর্তন নয়, যা কি-না প্রকাশিত বাগানের ইমাজারির মধ্যে, বরং একটি রূপান্তরিত ভিশনের প্রক্রিয়া, প্রাত্যহিক বাস্তবতার : এই বোধটি জয়নুলদের কাজে বর্তমান। কিংবা এভাবেও ভাবা যায় : পতন ও স্খলন স্বাভাবিক, জীবনেরই অংশ। য়888sport app download apkয় (রূপ-নারায়ণের কূলে কিংবা প্রথম দিনের সূর্য কিংবা দুঃখের আঁধার রাত্রি) এই জিজ্ঞাসা থেকে থেকে দেখা দিয়েছে। তাঁর 888sport live chatে নিসর্গ এক ধূসর শূন্যতা, এক সম্ভাবনাহীন স্পেস, এক অতল গহ্বর। যেন এক নিখিল নাস্তি সবকিছু ঘিরে ধরেছে।

জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরীর নিসর্গবোধ একদিকে অবনীন্দ্রনাথদের, অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের নিসর্গবোধের বিপরীত। জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরীর নিসর্গে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ঝড়ঝঞ্ঝা, দুঃখকষ্ট, আনন্দ-উচ্ছলতা, শান্তি ও ক্রোধ উপস্থিত। তাঁদের নিসর্গে উন্মীলিত অন্তরানুভূতি ও কল্পনাকুশলতা, তাঁরা এই অন্তরানুভূতি ও কল্পনা-কুশলতা নিয়ে যুক্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায়। তাঁরা নিসর্গের পরিসরে, তাঁদের অজান্তেই, অভিজ্ঞতাশ্রয়ী সমালোচনামনস্কতায় লিপ্ত হয়েছেন। এই অভিজ্ঞতাশ্রয়ী সমালোচনামনস্কতা, মানুষ-সম্বন্ধে মানুষের দায়িত্ববোধে ভরপুর, একইসঙ্গে নিজেদের ও পৃথিবী সম্বন্ধে তাঁদের বক্তব্য : তাঁদের নিসর্গ, চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, মানুষেরই ছাপ। তাঁদের কাজে গাছপালা, পশুপাখি, মাছ এবং নৌকো এবং মানুষ, শিক্ষাসূত্রে অর্জিত ফোকাসড পারসপেকটিভের কনভেনসন জাত নয়, বরং মাল্টিপল ইমাজারির মাধ্যমে সৃষ্ট, এই মাল্টিপল ইমাজারির দরুন তাঁদের কাজে অন্তর্ভুক্ত বহু অভিজ্ঞতা, যে-সব প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা থেকে উদ্ভূত। (জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষের চিত্রের কঙ্কালরা নতুন ক্রাইস্ট : মানুষ যতদিন পৃথিবীতে থাকবে, এই দুঃখবোধ, এই বিষণ্নতাবোধ, এই ক্রোধের বোধ ততদিন থাকবে। ক্রাইস্ট যেমন ইমেজে পরিণত হয়েছেন, তেমনি দুর্ভিক্ষের কঙ্কালরা দুঃখের ইমেজে পরিণত হয়েছে। পৃথিবী থেকে একদিন হয়ত, দুর্ভিক্ষ দূর হবে, কিন্তু দুঃখ তো দূর হবে না।) তাঁরা বঙ্গীয় চিত্রকলার নিসর্গের ঐতিহ্যের মধ্যে কাজ করেছেন, কিন্তু ঐতিহ্যকে বদলে দিয়েছেন অভিজ্ঞতাশ্রয়ী বোধ দিয়ে; তাঁরা পেইন্টিংয়ের সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতার মধ্যে কাজ করেছেন, কিন্তু সেখানে এনেছেন অভিজ্ঞতার তরতাজা ভাব, বহুবিচিত্র আবিষ্কার ও উদ্ভাবন।

দেশে-বিদেশে 888sport live chatীদের কাজ দেখে দেখে দুটি সত্যে উপনীত হয়েছি। প্রথমটি হচ্ছে, মানুষী শরীরের আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রকৃতি-নিসর্গের আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা। রাষ্ট্র, সরকার, মতাদর্শের বদল হলেই মানুষী শরীর ও প্রকৃতি-নিসর্গ আমূল বদলে যায় না। মানুষী শরীর ও প্রকৃতি-নিসর্গের এই আপেক্ষিক স্থিতিশীলতার কাছেই 888sport live chatের আবেদন : এক্ষেত্রেই ক্রিয়াশীল নান্দনিকতা। হার্বাট মারকুস এই ইতিহাস-অতিক্রমী, সর্বজনীন সত্যকেই বলেছেন নান্দনিকতার বোধ। এই নান্দনিকতার বোধ অধিকতর সক্রিয় বাস্তবতার ক্ষেত্রে এবং নান্দনিকতার অভিজ্ঞতা অধিকতর হ্রাস পায় যদি এই অভিজ্ঞতা বাস্তবতার আইডিয়া থেকে বিচ্যুত হয়। যেখানে বাস্তবতার উপস্থিতি বোঝা যায় এবং যেখানে বাস্তবতার অনুপস্থিতি অনুভব করা যায় সেখানেই 888sport live chatকর্মের মহত্ব। জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান, কাইয়ুম চৌধুরী এখানেই কাজ করেছেন। একহাতে রুখেছেন শূন্যতা, অন্যহাতে প্রতিরোধ করেছেন মরমীয়াবাদ। এই প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে যাতে সমগ্র জীবন বাস্তব হয়ে ওঠে।

অবনীন্দ্রনাথরা নির্বাচিত সুন্দর খুঁজেছেন। বিপরীতে, জয়নুলদের কাছে সবকিছুই সুন্দর, জীবনযাত্রার সবকিছুই 888sport live chatসম্মত। নির্বাচিত সুন্দরের কাছে একটি পতনের জায়গা আছে। এই পতনের ভয়, সুন্দর থেকে স্খলনের ভয় অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, যামিনী রায়ে স্পষ্ট (এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ব্যতিক্রম)। পতনের ভয় কাজ করেছে বলে তাঁদের ক্ষেত্রে একধরনের পাপবোধ খুব সম্ভব কাজ করেছে। এই পাপবোধ ও পতনের ভয় জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, সুলতান ও কাইয়ুম চৌধুরীর মধ্যে নেই। তাঁদের ক্ষেত্রে উন্মোচিত প্রাত্যহিকতা ও জীবনযাত্রার নান্দনিকতা। স্বর্গে প্রত্যাবর্তন নয়, যা কি-না প্রকাশিত বাগানের ইমাজারির মধ্যে, বরং একটি রূপান্তরিত ভিশনের প্রক্রিয়া, প্রাত্যহিক বাস্তবতার : এই বোধটি জয়নুলদের কাজে বর্তমান। কিংবা এভাবেও ভাবা যায় : পতন ও স্খলন স্বাভাবিক, জীবনেরই অংশ।