বাংলার মানুষ 888sport live chatকলার চর্চা করছে সুপ্রাচীনকাল থেকেই, তার প্রমাণ পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে আবিষ্কৃত কৃষ্ণ-লোহিত সাংস্কৃতিক স্তরে (তাম্রপ্রস্তর) প্রাপ্ত চিত্র – নকশা-অঙ্কিত মৃৎপাত্রের টুকরা। একটি টুকরায় কালো মাটির পাত্রে ধূসর সাদা রেখায় 888sport live chatী জাল আর একসারি মাছ এঁকেছিলেন। আর অন্য একটি মৃৎপাত্রে ময়ূরীর ঠোঁটে রয়েছে সাপের চিত্র। দুটি চিত্রেই প্রাগৈতিহাসিক বাঙালির সাবলীল রেখায় অঙ্কিত চিত্র-দক্ষতা প্রশংসনীয়। কালো পটভূমিতে বেছে নেওয়া ধূসর রঙের ব্যবহার তাঁর ছবি আঁকার অভিজ্ঞতার পরিচায়ক। পরবর্তীকালে প্রাচীন বাংলায় চিত্রকলার চর্চা যে ছিল, তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে দিব্যাবদন-এ বর্ণিত একটি ঘটনায়। যেখানে পুণ্ড্রনগরে নিগ্রন্থ জৈন সন্ন্যাসীরা ‘পদাবনত বুদ্ধের’ চিত্র অঙ্কন করায় সম্রাট অশোক ভুলক্রমে জৈনদের পরিবর্তে আঠারো হাজার নিগ্রন্থ আজীবিককে হত্যা করেছিলেন। মহাস্থানগড়, তমলুক, বানগড়, পোখরানা আর চন্দ্রকেতুগড়ে প্রাপ্ত সুড়ঙ্গ চিত্রফলক বাঙালির 888sport live chatকলা চর্চার ধারাবাহিকতার প্রমাণ। ভাস্কর্যকলার চর্চা ছাড়াও বিদেশি 888sport live footballসূত্রেও বাংলার চিত্রাঙ্কনের কথা জানা যায়। পঞ্চম শতকে বাংলা 888sport slot game করেছিলেন ফাসিয়েন (ফাহিয়েন)। তিনি তাম্রলিপ্তি বন্দরনগরে দু-বছর অবস্থান করে বৌদ্ধধর্মীয় জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় পুঁথি অনুলিখন করেছিলেন। এ অনুলিখনের সময় তিনি বিভিন্ন মূর্তির রেখাচিত্রও অনুলিপিকৃত করেছিলেন।
পাল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ধর্মপাল (আনুমানিক ৭৮৯-৮২১ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন দক্ষিণ বিহারের ওদন্তপুরী ও বিক্রমশীলা আর উত্তরবঙ্গের সোমপুর বিহারের প্রতিষ্ঠাতা। দেবপাল (আনুমানিক ৮২১-৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ), প্রথম মহীপাল (আনুমানিক ৯৯৭-১০৪৫ খ্রিষ্টাব্দ) প্রমুখ পাল রাজা ছিলেন নালন্দা মহাবিহারের পৃষ্ঠপোষক। নালন্দায় আবিষ্কৃত অসংখ্য প্রস্তর ও ধাতুমূর্তি দেবপালের সমকালীন বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গে আদি-দেব ও চন্দ্র এবং হরিকেলের দেব রাজারাও ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। পাল ও চন্দ্র রাজারা শাসক হিসেবে সকলেই ছিলেন পরধর্মসহিষ্ণু – এমনকি তাঁদের কয়েকজন শিব, বিষ্ণুসহ বিভিন্ন ব্রাহ্মণ্য মন্দির ও ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়কে ব্যাপক ভূমিদান করেছেন। ফলে, তাঁদের আমলের অসংখ্য বৌদ্ধ ভাস্কর্য যেমন তেমনি প্রচুরসংখ্যক ব্রাহ্মণ্য দেবদেবীর মূর্তিও আবিষ্কৃত হয়েছে।
বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে পাল, খড়গ, আদি-দেব, হরিকেল দেব ও চন্দ্র রাজত্বকাল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যা আগেই বলেছি। এ-সময়ে পূর্ব ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে তন্ত্রযানে প্রবেশ করে। তবে, প্রথমদিকে তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মে তিনটি মতের প্রভাব লক্ষ করা যায় – কালচক্রযান, বজ্রযান, সহজযান। পাল, আদি-দেব, হরিকেল দেব ও চন্দ্র রাজারা ছিলেন কালচক্রযান, বজ্রযান, সহজযানী বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক। এসব তন্ত্র-মন্ত্র সাধনার প্রয়োজনেই দিনে দিনে বৌদ্ধ দেবদেবীর ধ্যান ও প্রতিমার 888sport free bet বাড়তে থাকে। তাদের মধ্যে আবার আধিক্য ঘটে নানা বর্ণ ও বর্ণনার অবলোকিতেশ্বর, তারা ও 888sport app দেব-দেবীর মূর্তির। বৌদ্ধ রাজবংশের শাসনকালে, বিশেষ করে নবম থেকে দ্বাদশ শতকে, কী মূর্তিতে কী চিত্রে এইসব তন্ত্রযানী, বজ্রযানী ও কালচক্রযানী দেবদেবীর মূর্তিই প্রাধান্য লাভ করেছিল।
১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের ইতিহাসবিদ লামা তারনাথ রচিত ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস নামের বইয়ে বৌদ্ধ যুগে 888sport live chatচর্চার উল্লেখ রয়েছে। এই গ্রন্থেই প্রসঙ্গক্রমে তারনাথ মূর্তিকলা সম্পর্কিত অধ্যায়ে ধর্মপাল ও দেবপালের রাজত্বকালে ধীমান ও তাঁর পুত্র বিটপাল নামে দুই বরেন্দ্রী 888sport live chatীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। পিতা-পুত্র প্রস্তর ও ধাতব মূর্তি নির্মাণ ও চিত্রকর্মে ছিলেন বিশেষভাবে দক্ষ। দুজনেরই ধাতব মূর্তির 888sport live chatশৈলী পূর্বদেশীয় রীতি নামে খ্যাতি লাভ করে। কিন্তু চিত্রকলার ক্ষেত্রে পিতা ও পুত্র স্বতন্ত্র ধারার জন্ম দেন। চিত্রকলার ক্ষেত্রে ধীমানের রীতি পূর্বদেশীয় আর বিটপালের রীতি মধ্যদেশীয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বৌদ্ধ পরম্পরায় এই মধ্যদেশ হলো মগধ বা দক্ষিণ বিহার, যেখানে পুত্রের চিত্ররীতি বিশেষ ব্যাপ্তি লাভ করেছিল বলে তারনাথ উল্লেখ করেছেন। তারনাথ এই প্রসঙ্গে আরো বলেছেন যে, মধ্যযুগের নেপালি ভাস্কর্য ও চিত্রকলা গড়ে উঠেছিল পূর্বদেশীয় রীতিরই অনুসরণে।
বৌদ্ধ আমলের পুঁথিগুলি লেখা ও আঁকা হতো তালপাতায়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আশুতোষ সংগ্রহশালার ১১০৫ খ্রিষ্টাব্দে নেপালে কাগজে লিখিত ও চিত্রিত ‘পদ্মরক্ষা’ পুঁথিটি। তালপাতা সাধারণত ভঙ্গুর। সম্ভবত সে-সময়ে তালপাতা বিশেষ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী করার ব্যবস্থা করা হতো। বাংলায় দুই ধরনের তালপাতা পাওয়া যায় – ‘খড়তাড়’ ও ‘শ্রীতাড়’। তবে ‘শ্রীতাড়’ই পুঁথি রচনার জন্য উপযুক্ত। এই পাতা দৈর্ঘ্যে সাধারণত ৯০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে প্রায় ৭১ সেন্টিমিটার। পাতলা ও নমনীয় হওয়ায় কম ভঙ্গুর এই পাতা সংগ্রহ করে গোছা বেঁধে জলে ডুবিয়ে রাখা হতো মাসখানেক। পরবর্তীকালে জল ঝরিয়ে শুকিয়ে পাতা শঙ্খ দিয়ে ঘষে মসৃণ করে পাতাগুলি সাজিয়ে সমান করে কেটে পুঁথি বাঁধার উপযোগী ছিদ্র করে লেখা ও চিত্রাঙ্কন করা হতো। লিপিকর পুঁথি লিখত দৈর্ঘ্যের সমান্তরালে। যেসব পুঁথি চিত্রিত করা হতো সেগুলিতে লিপিকর স্থান খালি রেখে দিত। চিত্রকর লেখার কাজ শেষ হলে সে-শূন্যস্থান চিত্র দিয়ে পূর্ণ করত।
চিত্রাঙ্কনের স্থানটি কখনো একটি রং দিয়ে ভরাট করে, কখনোবা সরাসরি কোরাপাতার ওপরেই তুলির আঁচড়ে প্রাথমিক রেখাকর্ম করে নিয়ে বিষয় অনুযায়ী নানা বর্ণে চিত্রফলকটি রাঙানো হতো। রূপের গড়নের প্রয়োজনে রঙের গাঢ়তার তারতম্যে আর উজ্জ্বল বর্ণের ছোঁয়ায় সম্পূর্ণ করা হতো রঙের কাজ। তারপর প্রথমে ভেতরকার রঙে মাঝারি তুলিতে এবং শেষে কালো বা লালে সরু তুলিতে গড়নের বহিঃরেখা টানা হতো। ছবিতে ব্যবহৃত রঙের মধ্যে থাকে হরিতালের হলুদ, খড়িমাটির সাদা, উদ্ভিদজাত গাঢ় নীল, প্রদীপের শিষের কালি, সিঁদুর লাল আর নীল ও হলুদের মিশ্রণে তৈরি সবুজের ব্যবহার। সব রংকেই সাদা মিশিয়ে ইচ্ছেমতো হালকা করে নেওয়া যেত। তবে সাধনসূত্রের ধ্যান অনুসারে দেব-দেবীর গাত্রবর্ণ নির্দিষ্ট হওয়ায় রং ব্যবহারে 888sport live chatীর নিজের স্বাধীনতা ছিল সীমিত। দেব-দেবীর ধ্যান অনুসরণে চিত্রে প্রাধান্য পেয়েছে গৌর বা হলুদ, নীল ও সবুজ রং। কখনো দেব-দেবীর পশ্চাৎপটেও ঘটেছে লাল ও হলুদের বিশেষ ব্যবহার।
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ বিহারে পালযুগের যে বিপুলসংখ্যক প্রস্তর ও ধাতব মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে ভাস্কর্য888sport live chatের ইতিহাসে সেগুলি পূর্বদেশীয় 888sport live chatবৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক। তবে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাজুড়ে ও ত্রিপুরার কিয়দংশে যে সকল প্রস্তর ও ধাতব ভাস্কর্য আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলি আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং পাল 888sport live chatশৈলী থেকে পৃথক। পালযুগ ও তার পরবর্তীকালে নেপালের ভাস্কর্য ও চিত্রকলা বঙ্গের 888sport live chatরীতি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত, তাই অনুকরণ বলাই যুক্তিসংগত। এই দুই ক্ষেত্রে তারনাথের মতো আবিষ্কৃত বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমায় প্রতিফলিত। কিন্তু চিত্রকলার ক্ষেত্রে পিতা ধীমান পূর্বদেশীয় আর পুত্র বিটপাল মধ্যদেশীয় বা মাগধী রীতির প্রবর্তন করেছেন বলে তারনাথ মন্তব্য করেছেন।
পাল আমলে চিত্রকলা চর্চার প্রমাণ চিত্রাঙ্কিত পুঁথির আবিষ্কার। বিগত দুশো বছরে নেপাল ও তিব্বতের বিভিন্ন গ্রন্থাগারে বাংলা ও বিহারের বিপুলসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মবিষয়ক পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। শিক্ষাদীক্ষা, পুণ্যার্জন বা বৌদ্ধ বিহারের গ্রন্থাগারে সংরক্ষণের জন্য এসব ধর্মীয় পুঁথির অনুলিপি তৈরি করা হতো। এগুলি মূলত অষ্টসাহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতা গ্রন্থের অনুলিপি। বেশিরভাগ পুঁথিতে চিত্রালংকরণ না থাকলেও কিছুসংখ্যক পুঁথিতে চিত্রালংকার লক্ষ করা যায়। পাল রাজা রামপাল, চতুর্থ গোপাল ও মদনপালের রাজত্বকালে কিছুসংখ্যক পাণ্ডুলিপি অনুলিখিত ও চিত্রিত হয়েছিল। দশম শতক থেকে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত এবং তার পরেও এই পুঁথিচিত্রের ধারা অব্যাহত ছিল। পুঁথিসমূহে উল্লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায়, খ্রিষ্টীয় শতকের শেষের দিকে এবং দ্বাদশ শতকে এ পাণ্ডুলিপিসমূহ বিহারে লিখিত হওয়ার পর বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে, যেমন নালন্দা ও বিক্রমশীলায়, দান করা হয়েছিল। তবে বাংলায় কমসংখ্যক পুঁথির অনুলিপি তৈরি করা হয়েছিল বলে মনে হয়। বিহার ও বাংলায় প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিতে অঙ্কিত দেব-দেবীর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিহারের পাণ্ডুলিপিগুলিতে প্রধানত গৌতম বুদ্ধের জীবনের আটটি ঘটনা চিত্রায়িত করে পাণ্ডুলিপির শুরু ও শেষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ঘটনাগুলি হলো : ১. লুম্বিনীতে বুদ্ধের জন্ম, ২. বুদ্ধগয়ায় বোধিলাভ, ৩. সারনাথের মৃগবনে ধর্মচক্র প্রবর্তন, ৪. কুশীনগরে মহাপরিনির্বাণ, ৫. শ্রাবস্তীতে অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শন, ৬. সঙ্কাশ্যে স্বর্গাবতরণ, ৭. রাজগৃহে মত্তহস্তী নালগিরি বশীকরণ, ৮. বৈশালীর আম্রকুঞ্জে বানর কর্তৃক দানকৃত মধু গ্রহণ। অন্যদিকে বাংলার ক্ষেত্রে পুঁথির মাঝে মাঝে চিত্র অংকন করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে অনুলিপিকৃত গ্রন্থের বিষয়ের চিত্রায়ন করা হয়েছে, যেমন করণ্ডব্যূহসূত্র। অন্যদিকে বিহারের পাণ্ডুলিপির ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর সঙ্গে চিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। করণ্ডব্যূহসূত্র ও পঞ্চবিংশতিসাহস্রিকা-প্রজ্ঞাপারমিতার উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, অনেক সময় পাণ্ডুলিপির ভেতরেও চিত্র অঙ্কন করা হতো।
মূলত বৌদ্ধভিক্ষুরা ধর্মীয় কাজে অর্থাৎ দেব-দেবীর আরাধনার জন্য বিভিন্ন বিহার-মন্দির 888sport slot gameের সময় এ সমস্ত চিত্রালংকৃত পাণ্ডুলিপি সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং নির্দিষ্ট কোনো বিহারে অলংকৃত এসব পুঁথি উৎসর্গ করতেন। এগুলি বিহারের গ্রন্থাগারের বাইরে যেমন নেওয়া যেত না, তেমনি সবাই ব্যবহারও করতে পারত না। কতকগুলি দুর্লভ চিত্রাঙ্কিত পুঁথি পর্যালোচনা করে এ-কথা বলা যায় যে, চিত্র888sport live chatের একটি ধারা ছিল বাংলার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের, আরেকটি ছিল ভারতের বিহার রাজ্যের বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারকেন্দ্রিক। অধিকাংশ অলংকৃত পুঁথিচিত্রই এ দুই ঘরানার, তবে দু-চারটি অন্য অঞ্চলেরও হতে পারে।
একাদশ ও দ্বাদশ শতকের প্রথমভাগে হরিবর্মার রাজত্বকালে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলে দুটি পরিচিত পাণ্ডুলিপিতে চিত্র অঙ্কিত হয়েছিল। এগুলির মধ্যে অষ্টম রাজ্যাঙ্কে উৎসর্গ করা একটির কিছু অংশ ব্যক্তিগত সংগ্রহে এবং বাকি অংশ বরোদা রাজ্য জাদুঘর ও চিত্রশালায় সংরক্ষিত আছে এবং দ্বিতীয়টি তাঁর ঊনবিংশ রাজ্যাঙ্কে অনুলিখিত এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত। বরোদার পাণ্ডুলিপিটি পঞ্চবিংশতিসাহস্রিকা-প্রজ্ঞাপারমিতার পাণ্ডুলিপি আর রাজশাহীরটি অষ্টসাহস্রিকা-প্রজ্ঞাপারমিতার পুঁথি।
পুঁথি দুটিতে ৬ সেমি গুণন ৫.৫ সেমি আয়তনের চিত্র পাতার মাঝখানে অঙ্কিত হয়েছে। রাজশাহীর পাণ্ডুলিপিটি প্রথমে, মাঝে এবং শেষে মোট ছয়টি চিত্রশোভিত। পাণ্ডুলিপির পাতার একদিকে পূর্ব, মধ্য এবং পশ্চিমের তিনজন তথাগত বুদ্ধ এবং অপর পৃষ্ঠায় তিনজনের বোধিসত্ত্ব বা দেবী-প্রতিমার চিত্র রয়েছে। বরোদার পাণ্ডুলিপিতে স্পষ্ট প্রতিমালক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না, তবে বিহারের পাণ্ডুলিপিতে বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব, পূজার চিত্র সুস্পষ্ট। মাঝের মার্জিনে পুথি বাঁধার ছিদ্রকে কেন্দ্র করে জ্যামিতিক মোটিফ পরিলক্ষিত হয়। পাণ্ডুলিপির বাইরের মার্জিনে স্তূপের প্রতিকৃতি অঙ্কিত আছে। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে রক্ষিত করণ্ডব্যূহসূত্র পুঁথিতে ভেতরের মার্জিনে একই ধরনের মোটিফ দেখা যায়, তবে তাতে ত্রিপত্রাকৃতি কুলুঙ্গির ভেতরে নানা দেব-দেবীর চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। হরিবর্মার রাজত্বকালে লিখিত পুঁথি দুটির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে লন্ডন জাদুঘরে রক্ষিত পাণ্ডুলিপি (আনুমানিক ১১০০-১১২৫ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি), মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট বৈশিষ্ট্যসমূহের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়, ফলে মনে করার যথেষ্ট কারণ থাকে যে এটি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার কোনো চিত্রকর্মশালায় লিখিত ও চিত্রাঙ্কিত হয়েছিল। লন্ডন জাদুঘরের পাণ্ডুলিপির ৬৩ পাতার ৫৩টিই চিত্রাঙ্কিত। পাণ্ডুলিপিটিতে প্রতি পাতার কেন্দ্রস্থলে একটি করে প্রতিমা এবং পাতার দু-প্রান্ত বরাবর স্তূপের উঁচু ভিতের ওপর ত্রিপত্রাকৃতি কুলুঙ্গির ভেতর দেবতার প্রতিকৃতি সংবলিত মার্জিন অঙ্কিত আছে। বাংলার পাণ্ডুলিপির ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্কনের সময় 888sport live chatী চিত্রের জন্য নির্ধারিত স্থানটি পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন, অন্যদিকে বিহার অর্থাৎ মগধের পুঁথিগুলির ক্ষেত্রে 888sport live chatী অনেক সময় জ্যামিতিক ও ফুলের নকশা অঙ্কন করেছেন।
আলোচিত পাণ্ডুলিপি তিনটি একই রীতিতে অঙ্কিত। সমতল পটভূমির ওপর উজ্জ্বল গাঢ় নীল অথবা লাল রং ব্যবহার করে প্রতিমা অঙ্কন করা হয়েছে। তবে সাদা রঙের ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হয়। অংকিত প্রতিমার চোখ ও মুখ বেশ বড় এবং তাদের একটি মন্দির কিংবা অন্য স্থাপত্যকাঠামোর ওপর দণ্ডায়মান অথবা উপবিষ্ট অবস্থায় উপস্থাপন করা হয়। মন্দির আকৃতির চালচিত্রের উভয় পাশে দুটি বৃক্ষশোভিত। এ রীতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো, সমান পটভূমিতে অঙ্কিত রেখায় চিত্রায়ন। এছাড়াও দেব-দেবীকে ভক্তি প্রদর্শনের দৃশ্যও এ-চিত্রসমূহে পরিলক্ষিত হয় যা অন্য কোনো 888sport live chatরীতিতে দেখা যায় না। বিহারে পাণ্ডুলিপি চিত্রে দেব-দেবীকে সাধারণত উপবিষ্ট অবস্থায় দেখা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার পাণ্ডুলিপির চিত্রশৈলীর সঙ্গে দ্বাদশ শতকের মিয়ানমারের পাগানের ফ্রেস্কো চিত্রের শৈলীর মিল খুঁজে পাওয়া যায়, যা এ-অঞ্চলের সঙ্গে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণ।
পাণ্ডুলিপিগুলিতে সেগুলি কোন বৌদ্ধ বিহারে লিখিত ও অঙ্কিত সে-বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই। তাই পাণ্ডুলিপিতে বিধৃত ঐতিহাসিক তথ্য ও চিত্ররীতির বৈশিষ্ট্যাবলি পর্যালোচনা করে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা কিংবা বিহারে লিখন ও অঙ্কনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। যেমন রামপালের সময়ে পাণ্ডুয়া অঞ্চলের সোম নামে ব্যক্তির উৎসর্গীকৃত পাণ্ডুলিপিটিকে সোমপুরের 888sport live chatকর্মশালায় লিখিত ও চিত্রিত পাণ্ডুলিপি বলে মনে করা হয়। লস অ্যাঞ্জেলসে একজোড়া কাঠের ফলকচিত্রের 888sport live chatশৈলী বাংলার চিত্র888sport live chatীদের 888sport live chatকর্ম বলেই মনে হয়। কাঠের ফল চিত্রটির স্থাপত্য অবকাঠামোর পেছনে গাছ ও ফুলের অলংকরণ রয়েছে। এসব চিত্রবৈশিষ্ট্য অবশ্য বিহারে দেখা যায় না। তবে একাদশ শতকের শেষ ও দ্বাদশ শতকের উত্তরবঙ্গের ভাস্কর্যের অনেক বৈশিষ্ট্যই বিহারের ভাস্কর্যে পরিলক্ষিত হয়।
একাদশ শতকের শেষ ও দ্বাদশ শতকের প্রথমদিকে বিহারে অনুলিখিত ও চিত্রায়িত পুঁথির 888sport live chatবৈশিষ্ট্য ও প্রতিমালক্ষণের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের পুঁথির 888sport live chatরীতির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলির সঙ্গে নেপালের পুঁথিচিত্রেরও মিল রয়েছে। অনেক চিত্রিত পাণ্ডুলিপি বিক্রমশীল মহাবিহার বা বিহারের মুঙ্গের জেলার কোনো বৌদ্ধ বিহারে রচনা করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গ ও মগধে আবিষ্কৃত ভাস্কর্যের সঙ্গে গঙ্গা অববাহিকার অনেক প্রস্তর ভাস্কর্যের 888sport live chatশৈলীর মিল রয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার পুঁথিচিত্রের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, মন্দিরের অভ্যন্তরে দণ্ডায়মান অথবা উপবিষ্ট দেব-দেবীর প্রতিকৃতি। বাংলার চিত্র888sport live chatের এ-বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে দ্বাদশ শতকের প্রথম দিকে পূর্ব বিহার, উত্তরবঙ্গ এবং নেপালে তৈরি কাঠের ফলকচিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
বাংলার চিত্রকলায় প্রতিমার অঙ্কনেই 888sport live chatী গুরুত্ব প্রদান করেন, ফলে অন্য কিছু ছাপিয়ে দেব-দেবী হয়ে ওঠেন ফোকাসের কেন্দ্রবিন্দু। রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার বর্মাদের পুঁথিচিত্রেও বিষয়টি ধরা পড়ে। কোনো কোনো পাতায় লিখনের উল্টো করে অঙ্কিত হয়েছে প্রতিমাচিত্র, যাতে পাণ্ডুলিপিটি বন্ধ করলে প্রতিটি পুরুষমূর্তির বিপরীতে একটি 888sport promo codeমূর্তিকে মনে হবে আলিঙ্গনাবদ্ধ। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পাণ্ডুলিপির প্রতিটি পাতায় এমনটি ঘটেছে। ওপরের আলোচনা থেকে বলা যেতে পারে, উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় স্বতন্ত্র দুটি ঘরানার চিত্রশৈলীর বিকাশ ঘটেছিল। তবে উত্তরবঙ্গ ও মগধের পুঁথিচিত্রের মধ্যে মিল রয়েছে। অবশ্য এর রাজনৈতিক কারণও রয়েছে, কারণ দুটি অঞ্চলই দীর্ঘ সময় ধরে পাল রাজাদের শাসনাধীনে ছিল; ফলে তাঁদের আনুকূল্যে একই রীতি ও ঘরানার 888sport live chatকলার চর্চা বিকাশ লাভ করে। এই অনুমানের বাস্তবতার প্রমাণ আমরা প্রস্তর ভাস্কর্যের মধ্যেও প্রতিফলিত হতে দেখি। যদিও ব্যতিক্রম যে নেই, সেটি হলফ করে বলা যাবে না। ফলে বলা যায়, লামা তারনাথের বক্তব্য সঠিক যেখানে তিনি বলেছেন চিত্র888sport live chatের ক্ষেত্রে ধীমান পূর্বদেশীয় আর তাঁর পুত্র বিটপাল মধ্যদেশীয় বা মাগধী রীতির প্রচলন করেছিলেন।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.