স্বকৃত নোমান
বাংলা ভাষার কত যে রূপ! বাঙালি মাত্রই বাংলা ভাষায় কথা বলে। কিন্তু সব বাঙালির বাংলা ভাষার রূপ কি এক? না, মোটেই এক নয়। পশ্চিমবঙ্গীয় বাংলা ভাষার রূপ আর 888sport appইয়া বাংলা ভাষার রূপের ফারাক আছে। 888sport appsের রাজশাহীর বাঙালিরা যে-ভাষায় কথা বলে চট্টগ্রামের বাঙালিরা সে-ভাষায় বলে না। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর দুজন মানুষকে যদি তাদের নিজ-নিজ অঞ্চলের ভাষায় কথা বলার জন্য মুখোমুখি বসিয়ে দেওয়া হয়, কারো কথা কেউ বুঝবে না। সেখানে যদি 888sport appইয়া কুট্টিভাষী কেউ থাকেন, দুজনের কথোপকথন শুনে বিরক্তির সীমা থাকবে না তার। একইভাবে সিলেটের বাংলা ভাষার সঙ্গে বরিশালের, যশোরের সঙ্গে খুলনার, নোয়াখালীর সঙ্গে কুমিলস্নার বা রংপুরের সঙ্গে ময়মনসিংহের বাংলা ভাষার মিল নেই। বিশাল বাংলার একেক অঞ্চলের মানুষ বাংলা ভাষার একেক রূপে কথা বলে। কিন্তু যখন লেখে তখন বিন্দুমাত্র অমিল থাকে না। বাংলা ভাষার রূপ তখন অখ-। অ-কে ঠিক ঠিক অ লেখে, ক-কে ক। অর্থাৎ কথ্যরূপের বহু রূপ থাকলেও লেখ্যরূপের রূপ কিন্তু একটাই।
আসলেই কি তাই? লেখ্যরূপের রূপ কি একটাই? না, বাংলা ভাষার লেখ্যরূপের আরো একটি রূপ আছে। ‘আছে’ না বলে ‘ছিল’ বলাটাই বোধকরি যৌক্তিক। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে একটা সময় বাংলা ভাষার লেখ্যরূপের আলাদা একটা রূপ ছিল। ভাষা এক, কিন্তু বর্ণমালা আলাদা। সিলেট অঞ্চলের মানুষ যে-ভাষায় কথা বলে ঠিক সে-ভাষাকে আলাদা বর্ণমালায় লেখা হতো একটা সময়ে। সেই লিপিকেই বলা হয় নাগরীলিপি।
কিন্তু বাংলা ভাষার তো স্বতন্ত্র একটি লিপি রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন উদ্ভব হয়েছিল নাগরীলিপির? এ ব্যাপারে গবেষকরা নানা মত দিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ গবেষকের অভিমত, হজরত শাহজালাল ও ৩৬০ অলির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রসার লাভ করে এবং তাঁদের অনুসারীদের দ্বারা নাগরীলিপি সৃজিত হয়। কিন্তু কেন তাঁরা বাংলালিপিকে বাদ দিয়ে আলাদা একটা লিপি সৃজন করেছিলেন? এ ব্যাপারে একেক গবেষকের একেক মত। বাংলাভাষী, বাংলা 888sport live footballের নগণ্য একজন কর্মী হিসেবে, নাগরীলিপি সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি এবং বাঙালি মুসলমানের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে আমার যৎসামান্য যে-জ্ঞান রয়েছে তার আলোকে আমি আন্দাজ করতে পারি, মূলত ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকেই তাঁরা বাংলালিপির বদলে নাগরীলিপির প্রবর্তন করেছিলেন। বাংলালিপি ব্যবহারের প্রতি তাঁদের অনীহা জাগার নেপথ্য কারণ হয়তো এই যে, হিন্দুধর্ম মতে ব্রাহ্মলিপি হচ্ছে স্রষ্টা ব্রহ্মার পক্ষ থেকে দেওয়া একটা লিপি। বাংলালিপি ভারত উপমহাদেশের ব্রাহ্মী বর্ণমালা থেকে উদ্ভূত। মুসলমানদের স্রষ্টা তো ব্রহ্মা নয়, খোদা বা আলস্নাহ। সুতরাং কেন তাঁরা ব্রহ্মার দেওয়া লিপিতে লিখবেন? তাই তাঁরা অনুভব করলেন নতুন লিপি প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা। এরই ধারাবাহিকতায় যে লিপি তাঁরা প্রবর্তন করলেন তা-ই নাগরীলিপি বলে স্বীকৃত হয়। আবারো বলে নিচ্ছি, এটা আমার আন্দাজ। কে জানে, আন্দাজটা হয়তো ভুল। এমনও হতে পারে, বাংলালিপির যুক্তবর্ণের জটিলতা থেকে বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে বা ভাষাকে সহজ করতে যুক্তবর্ণহীন নাগরীলিপির সৃজন হয়।
যে কারণেই এ-লিপির উদ্ভব হোক না কেন, পরবর্তীকালে এ-লিপিতে রচিত হয়েছে শত-শত গ্রন্থ, দলিল-দসত্মাবেজ এবং পরিচালিত হয়েছে সে-কালের দৈনন্দিন কার্যক্রম। নানা বিষয়ে রচিত নাগরীলিপির পুথি-কাব্যগুলো। মানবিক প্রেমোপাখ্যান, মুসলমানদের নবীর জীবনী, ইসলাম ধর্মের বাণী, সিলেট অঞ্চলের নানা রূপকথা, ইসলামের নানা ইতিহাস ও মিথ, সামাজিক নানা সংস্কার, সুফিবাদ, ফকিরি গান, বীরগাথা এবং মরমিবাদ এসব পুথি-কাব্যে বিষয় হিসেবে এসেছে। 888sport live footballমান বিবেচনায় বেশিরভাগ পুঁথি অত উঁচু নয়। তবে কোনো কোনো পুথি আবার মানের দিক থেকে অত নিচুও নয়। মধ্যযুগে রচিত বাংলা ভাষার পুথি-কাব্যগুলো পড়ে আমরা যে-888sport live footballরস আস্বাদন করতে পারি, নাগরীলিপিতে রচিত কোনো কোনো পুথি পাঠে সমান রস আস্বাদন করা যায়। কম হোক বেশি হোক, এগুলোর যে একটা 888sport live footballমূল্য রয়েছে সে-বিষয়ে আমার মধ্যে কোনো সংশয় নেই।
মুন্সী আবদুল করিমের সোনাভানের পুথি মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি। মুগ্ধতা ভাষা বা রচনাশৈলীর জন্য নয়, কাহিনির জন্য। লেখকের কল্পনাশক্তির প্রশংসা করতে হয়। আরবের হজরত আলীর পুত্র হানিফার সঙ্গে 888sport appsের টঙ্গী শহরের সোনাভানের যুদ্ধ নিয়ে রচিত এই পুথি। মুন্সী সাহেব টঙ্গীকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় ‘টুংগি’ লিখেছেন। সোনাভানকে চিত্রিত করেছেন এক বীর888sport promo code হিসেবে। এই 888sport promo code ছিলেন টঙ্গী শহরের সম্রাজ্ঞী। শিব ও জয়কালীর পূজারি ছিলেন। দম্ভের সঙ্গে প্রচার করতেন, এরাই তাঁর শক্তির উৎস। তাই তাঁর বীরত্বের সমকক্ষ কেউ নেই। একদিন আলীপুত্র হানিফার বীরত্বের কাহিনি সোনাভানকে শোনায় তাঁর উজির। দাম্ভিক সোনাভান ফুৎকারে উড়িয়ে দিলো হানিফার বীরত্বের কথা। এই ঔদ্ধত্যে তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন সৃষ্টিকর্তা। শায়েসত্মা করে তাঁকে বিয়ের জন্য স্বপ্নাদিষ্ট হলেন হানিফা। মা হনুফার অনুমতি নিয়ে সোনাভানের সন্ধানে রওনা হলেন তিনি। মদিনায় গিয়ে নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং সেখানে কাটালেন কয়েকদিন। এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন সোনাভানকে। স্বপ্নকাহিনি তাঁর মনকে রোমাঞ্চিত করল এবং সোনাভানের শূন্যতায় বুকটা হাহাকার করে উঠল। ভোরে টঙ্গীর উদ্দেশে রওনা দিলেন তিনি। কিন্তু টঙ্গী যাওয়ার কোনো রোডম্যাপ নেই তাঁর হাতে। আলস্নাহর সাহায্য চাইলেন তিনি। তখন এক ব্যক্তি তাঁর সহায়তায় এগিয়ে এলো। তাঁর সহায়তায় টঙ্গী শহরে পৌঁছে গেলেন হানিফা। শহরে পরিচয় হল এক বুড়ির সঙ্গে। বুড়ির মাধ্যমে সোনাভানের কাছে বিয়ের প্রসত্মাব পাঠালেন। সোনাভান ঘৃণাভরে প্রসত্মাব প্রত্যাখ্যান তো করলেনই, উপরন্তু বুড়িকে নির্মমভাবে মেরে তাড়িয়ে দিলেন। বুড়ির মুখে ঘটনা শুনে হানিফা তো দারুণ ক্ষুব্ধ। উপযুক্ত জবাব দিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন যুদ্ধে। সোনাভান তখন কী করেন? হানিফাকে উড়িয়ে মদিনায় নিয়ে ফেললেন। অপমান হজম করে হানিফা আবার শুরু করলেন যুদ্ধ। কিন্তু এবারো হার হলো তাঁর। সোনাভান তাঁকে শিব ও জয়কালীর পদতলে নরবলি দিতে নিয়ে গেলেন। কিন্তু হজরত আলীর ভয়ে নরবলি গ্রহণ করতে সম্মত হলো না দেবতারা। হানিফাকে ময়দানে নিয়ে ছুরি চালিয়ে হত্যার উদ্যোগ বিফল হল সোনাভানের। অসহায় হানিফা ময়দানে পড়ে রইলেন। বিবি ফাতেমা স্বপ্নে দেখলেন হানিফার এই বিপদের ঘটনা। জানালেন হজরত আলীকে। হজরত আলী সদলবলে উদ্ধার করলেন হানিফাকে। কিছুকাল পর হানিফা আবার হাজির হলেন সোনাভানের শহরে। এবারো বিড়ম্বনার অন্ত রইল না তাঁর। বাগে পেয়ে সোনাভান তাঁকে হত্যার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু হানিফা রক্ষা পেলেন খোয়াজ খিজিরের বদান্যতায়। আবার শুরু করলেন যুদ্ধ। এবার হানিফার পক্ষে নামেন তাঁর তিন স্ত্রী। ফলে হেরে গেলেন সোনাভান। হানিফার সঙ্গে বিয়েতে রাজি না হয়ে আর উপায় থাকল না। সোনাভানকে বিয়ে করে হানিফা নিয়ে গেলেন মদিনায়।
সোনাভানের পুঁথির সংক্ষিপ্ত কাহিনিটি উলেস্নখ করলাম মুন্সী আবদুল করিমের কল্পনাশক্তি বোঝাতে। কোথায় সৌদি আরবের মদিনা শহর, আর কোথায় 888sport appsের টঙ্গী শহর। পুথির এক চরিত্র ইসলাম ধর্মের অনুসারী, আরেক চরিত্র হিন্দু ধর্মের। পুথিকার দুই চরিত্রের মধ্যে লাগিয়ে দিলেন যুদ্ধ। শিব ও জয়কালীর পূজারির কাছে বারবার হারিয়ে দিলেন হজরত আলীর পুত্রকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লেখক মুসলমান। ইসলামের প্রতি তিনি অনুরক্ত। তাই শেষ পর্যন্ত জয়ের মালাটা পরিয়ে দিলেন হানিফার গলাতেই। যদি সোনাভানের গলায় পরিয়ে দিতে পারতেন, পুথিটা পৌঁছে যেত অন্য এক মাত্রায়। তবু যে আখ্যান তিনি সৃষ্টি করলেন তা কোনো অংশে আমার কাছে তুচ্ছ মনে হয়নি। মধ্যযুগের কবি শেখ ফয়জুলস্নাহ, দৌলত উজির বাহরাম খান, হেয়াত মামুদ, ফকির গরীবুলস্নাহ বা কাজী আমিনুল হকসহ আর আর পুঁথিকার যে কল্পনাশক্তিতে নানা পুথি রচনা করেছিলেন, ঠিক সমান কল্পনাশক্তি ছিল মুন্সি আবদুল করিমেরও। বলে রাখা ভালো, সোনাভানের পুথি মুন্সী আবদুল করিমের মৌলিক রচনা, নাকি ফকির মোহাম্মদ ও ফকির গরীবুলস্নাহ কর্তৃক প্রমিত বাংলা বর্ণমালায় রচিত সোনাভানের পুথির নাগরীরূপ, তা নির্ণয় করা কঠিন।
দীন ভবানন্দের মুজমা রাগ হরিবংশও অসাধারণ একটি পুথি। সৈয়দ মুর্তজা আলী তাঁর 888sport live বিচিত্রা গ্রন্থে হরিবংশ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘ভবানন্দের হরিবংশ একখানা উঁচুদরের কাব্য।’ তাঁর মন্তব্যটি উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। এখন না হলেও যে-কালে হরিবংশ রচিত হয়েছিল সে-কালে কাব্যটি উঁচুদরেরই ছিল বইকি। এটির বিষয় মূলত রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা। নাগরী গবেষক ড. এসএম গোলাম কাদির লিখেছেন, ‘ভবানন্দের মূলকাব্য হরিবংশ মূলত পদাবলি অংশ সঙ্কলন করে সিলেটি নাগরীতে ‘মুজমা রাগ হরিবংশ’ নামে প্রকাশিত হয়। এখানে পদবিন্যাসে সে কাহিনির সঠিক অনুসরণ নেই, তবে মোটামুটি একটি ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রয়াস আছে। রাধাবিরহের পদগুলোই বেশি। মাঝে মাঝে মিলন, অভিসার বা অভিমানের পদও ঠাঁই পেয়েছে।’ পুথিটির ‘উৎস-সংস্করণে’র ভূমিকায় মোহাম্মদ আবদুল মান্নান ও মোস্তফা সেলিম লিখেছেন, রাধা-কৃষ্ণের বিরহ-মিলনের ছায়ালোকে, দুঃখ-সুখের সংঘাতে, আবেগ উৎকণ্ঠা আর হৃদয়াকুতির মিশ্রণে হরিবংশের পদগুলো বিন্যস্ত। রাধাভাবের পদ888sport free betই বেশি, কৃষ্ণকথার পদ অল্প; যেগুলো আছে প্রায় সর্বত্রই ঘনীভূত আবেগের চেয়ে কামাসক্ত চিত্তের প্রকাশই প্রবল।
দীন ভবানন্দের এই গ্রন্থের মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানরা এই লিপির উদ্ভাবক হলেও এর ব্যবহার শুধু মুসলমানদের মধ্যে বা ইসলামি বিষয়াবলিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। রাধা-কৃষ্ণ তো আর মুসলমানদের কোনো বিষয় নয়। তা ছাড়া দীন ভবানন্দ ছিলেন ব্রাহ্মণ। কারো-কারো মতে, পরবর্তীকালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর নামের ধরনে এই মতকে সমর্থন করা যাচ্ছে না। তিনি যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে থাকবেন, তাহলে নামও পরিবর্তন করেছিলেন নিশ্চয়ই। সেই নামটি কী? ভবিষ্যতের গবেষকরা এ-বিষয়ে নিশ্চয়ই আরো গবেষণা করবেন।
নাগরীলিপির লিপি যা-ই হোক, ভাষা যে বাংলা, এ-ব্যাপারে ভাষাবিদরা একমত। ভাষা যদি এক হয়, নাগরীলিপিতে লেখা কোনো 888sport app download apkকে কি আমরা বাংলা ভাষার 888sport app download apk বলব না? না বলার তো কোনো কারণ দেখি না। কারণ যদি না থাকে, যে অর্থে আমরা মধ্যযুগীয় বাংলা 888sport live footballে মুসলিম ঐতিহ্যভিত্তিক যুদ্ধবিষয়ক কাব্য জঙ্গনামাকে বাংলা 888sport live footballকর্ম হিসেবে বিবেচনা করি, নাগরীলিপিতে রচিত জঙ্গনামাকে কি বাংলা 888sport live footballকর্ম হিসেবে বিবেচনা করব না? না করার তো কোনো কারণ নেই। কারণ যদি না থাকে, বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসে বাংলালিপিতে রচিত জঙ্গনামার কথা উলেস্নখ থাকলে নাগরীলিপিতে রচিত জঙ্গনামার কথা উলেস্নখ থাকবে না কেন? বাংলা 888sport live footballের যে ইতিহাস তাতে বড়ু চ-ীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য থেকে শুরু করে মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, নাথ888sport live football, পদাবলি ও জীবনী888sport live football, প্রণয়কাহিনি ও যুদ্ধকাহিনি বা 888sport app কাব্যের কথা উলেস্নখ আছে। উলেস্নখ আছে বড়ু চণ্ডীদাস থেকে শুরু করে কৃত্তিবাস, কবীন্দ্র পরমেশ্বর দাস, শ্রীকর নন্দী, দ্বিজ রঘুনাথ, মালাধর বসু, দ্বিজ গোবিন্দ, বিজয় গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, দ্বিজ বংশীদাস, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, বিদ্যাপতি, ফয়জুলস্নাহ, সৈয়দ সুলতান, বৃন্দাবন দাস, কৃষ্ণদাস কবিরাজ, দৌলত উজির বাহরাম খান, শাবিরিদ খান, শাহ মুহম্মদ সগীর প্রমুখ কবির নাম। অথচ উলেস্নখ নেই নাগরীলিপিতে রচিত নানা পুথি বা পুথিকারদের নাম।
888sport appর আজিজ সুপার মার্কেটের উৎস প্রকাশন থেকে প্রকাশিত নাগরী গ্রন্থসম্ভারের গ্রন্থগুলো হচ্ছে যথাক্রমে : ওয়াহেদ আলীর জঙ্গনামা, দীন ভবানন্দের মুজমা রাগ হরিবংশ, শাহ আবদুল ওয়াহাব চৌধুরীর হাশর তরান, হাজী ইয়াছিনের মায়ারশি দুছরা, ছৈয়দুর রহমানের দেশ চরিত, মহম্মদ জওয়াদের বাহরাম জহুরা, মৌলবী আকবর আলীর আহকামে চরকা, মুন্সী ইরফান আলীর ছয়ফুল বেদাত, মুন্সী আবদুল করিমের সোনাভানের পুথি, মুন্সী জফর আলীর ওছিওতুন্নবী, মুন্সী ওয়াজিদ উলস্নাহর হুসিয়ার গাফেলিন, সৈয়দ শাহনূরের সাত কন্যার বাখান, আবদুল করিমের ছদছি মছলা, মুন্সী সাদেক আলীর হাশর মিছিল, মবিন উদ্দীন মুন্সীর দইখুরার রাগ, মুন্সী আবদুল করিমের হরিণনামা, মুহম্মদ খলিলের চন্দ্রমুখী, ফকির আমানের ভেদ চরিত, মুন্সী আছদ আলীর সহর চরিত, মুন্সী সাদেক আলীর কেতাব হালতুন্নবী, মুন্সী আবদুল করিমের কড়িনামা, মুন্সী সাদেক আলীর মহববতনামা, শিতালং শাহের মশকিল তরান, শাহ আরমান আলীর নূর পরিচয়, শাহ আবদুল ওয়াহাব চৌধুরীর ভেদ কায়া।
কাব্য বা পুথি যা-ই বলি না কেন, এগুলোর একটির নামও বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসের কোথাও উলেস্নখ নেই। উলেস্নখ নেই পুথিকারদের নামও। তার মানে ইতিহাসবিদরা যে-টর্চটা জ্বালিয়ে বাংলা 888sport live footballের নিদর্শন খুঁজে বেড়িয়েছেন সেই টর্চের আলো নাগরীলিপিতে রচিত জঙ্গনামার ওপর পড়েনি। শুধু জঙ্গনামা নয়, এই লিপিতে রচিত শতাধিক পুথির ওপরও পড়েনি। হয়তো পড়েছে। তারা জেনেছেন এই লিপিতে রচিত 888sport live footballকর্মের কথা। জেনেও ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত করলেন না কেন? আমার অনুমান, এর পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে : এক. নাগরীলিপিতে রচিত এসব পুথি আদৌ বাংলা ভাষার কি না সে-বিষয়ে সংশয়, দুই. উপেক্ষা। সংশয় বা উপেক্ষা যা-ই থাকুক, এই লিপিতে রচিত 888sport live footballকর্মের কথা বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসে যে উলেস্নখ হয়নি এটা সত্যি। এই সত্যের জায়গায় দাঁড়িয়ে এই লেখার শিরোনাম দিয়েছি : বাংলা 888sport live footballের অনালোকিত অধ্যায়।
আমি বলছি না নাগরীলিপি বাংলা ভাষার কোনো গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। সত্যি-সত্যি যদি ধর্মীয় সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা ও বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা থেকেই নাগরীলিপি সৃজন হয়ে থাকে, তাহলে গৌরবের কিছু আছে বলে মনে করি না। সংকীর্ণতা ও হীনম্মন্যতা থেকে উদ্ভূত কোনো কিছু গৌরবের হতে পারে না। আর যদি এই লিপি প্রচলনের নেপথ্যে কোনো সংকীর্ণতা, হীনম্মন্যতা বা অবজ্ঞা না থাকে, যদি সৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য গৌরবের।
যে-কারণেই হোক এই লিপির উদ্ভব হয়েছিল। প্রায় ছয়শো বছর ধরে সিলেট অঞ্চলে এ-লিপি প্রচলিত ছিল। শত-শত পুথি রচিত হয়েছিল। একটা সময় এ লিপিচর্চায় ভাটা পড়ে যায়। পড়াটাই স্বাভাবিক। মহীরুহের নিচে ছোট গাছ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। বাংলালিপি তো বিশাল এক মহীরুহ। এর তলায় নাগরীলিপি দাঁড়াবে কীভাবে? স্বাভাবিক কারণেই তা আজ বিলুপ্ত। ভালো-মন্দ যা-ই হোক, এটি এখন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। ঐতিহ্যসম্পদ। গবেষকরা সততই ঐতিহ্যের অনুসন্ধান করেন। সেই অনুসন্ধানের কাজটা করেছেন গবেষক মো. আবদুল মান্নান ও মোস্তফা সেলিম। নাগরীলিপিতে রচিত পঁচিশটি গ্রন্থ তারা উদ্ধার করেছেন। নতুন করে আবার প্রকাশ করেছেন মোস্তফা সেলিমের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উৎস প্রকাশন থেকে। আমি এটিকে একটি মহৎ কাজ হিসেবে বিবেচনা করতে চাই। কাজটা করার কথা ছিল রাষ্ট্রের। আমাদের একটি ভাষা ইনস্টিটিউট আছে। পৃথিবীর নানা ভাষা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। কিন্তু বাড়ির কাছে আরশিনগরের খোঁজ তারা রাখলেন না। একবারও প্রয়োজনবোধ করলেন না নাগরীলিপির গ্রন্থগুলো পুনঃউদ্ধারের। মোস্তফা সেলিম কাজটি করেছেন। এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
এ-কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মোস্তফা সেলিম লাখ-লাখ টাকা ব্যয় করে যে পঁচিশটি পুথি প্রকাশ করেছেন তা কেনার মতো পাঠকের 888sport free bet খুবই কম। তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই জমানায় জনপ্রিয় গল্প-888sport alternative linkের পাঠকও যেখানে দিন-দিন কমছে সেখানে শত-শত বছর আগের পুথি টাকা দিয়ে কিনে কে পড়বে? পঁচিশ খ- পুথির গায়ের দাম দশ হাজার টাকা। কমিশন বাদ দিয়ে পাঁচ-ছয় হাজার টাকায় হয়তো কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই টাকাতেই-বা কজনে কিনবে? সেজন্য আমার প্রসত্মাব, এসব পুথিকে বাংলার ঐতিহ্যসম্পদ হিসেবে বিবেচনায় এনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হোক। দেশের প্রতিটি সরকারি গ্রন্থাগারে এক সেট করে পুথি রাখা যেতে পারে। তাতে পাঠকরা জানতে পারবে বাংলা ভাষার হারানো এই ঐতিহ্যের কথা। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.