সুবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়
পূর্বকথা : সেকালের জনস্বাস্থ্য সমস্যা
উনিশ শতকের শেষভাগ। ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলার জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল শোচনীয়।
ব্রিটিশ আসার আগে পরিস্থিতি ছিল ভিন্নরূপ। কোনো ভারী 888sport live chat গড়ে ওঠার ব্যাপার না থাকায় সমাজে হঠাৎ করে কোনো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিত না। স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল জনগণের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই সমস্যা সহজেই আয়ুর্বেদ, সিদ্ধা, ইউনানি, টোটকা চিকিৎসা প্রভৃতি ভারতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্বারা সমাধান করা যেত। যদিও কখনো কখনো মহামারি বা বিভিন্ন আঞ্চলিক রোগে অনেক লোক মারা যেত। কিন্তু এমন ঘটনা খুব কমই ঘটত, ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর জনগণের পূর্ণ আস্থা ছিল।
উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলায় শুরু হয় ব্যাপক 888sport live chatায়ন। 888sport live chatাঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করে জনবসতি বাড়তে থাকে। বহু রেললাইন, সড়ক, জলাধার ও বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ফলে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ঘটে ভীষণ অবনতি। ইতিমধ্যে সরকার কেবল মিলিটারিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে কলেরার প্রকোপ কমাতে সমর্থ হলেও গ্রামাঞ্চলে ম্যালেরিয়া, কলেরা ও কালাজ্বরের প্রকোপ কমাতে সমর্থ হয়নি।
জলবায়ু ও পরিবেশগত কারণে বাংলা হয়ে ওঠে কলেরা, ম্যালেরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, বসন্ত, প্লেগ প্রভৃতির মড়ক সৃষ্টিকারী রোগের লীলাক্ষেত্র।
১৩৬৬ বঙ্গাব্দের প্রথম 888sport free bet আয়ুর্888sport apk পত্রিকা জানায়, ১৮৭১-৮১ সালের মধ্যে বাংলায় লাখ লাখ লোক প্রাণত্যাগ করে। এর মধ্যে মেদিনীপুর এবং বর্ধমানে মৃতের 888sport free bet ছিল যথাক্রমে পঁচাশি হাজার এবং দেড় লাখ।
১৮১৭-৩১ খ্রিষ্টাব্দে কলেরা মহামারিতে বহু ইউরোপীয় এবং ভারতীয় প্রজা (১/১০ ভাগ গোরা সৈন্য এবং ১৮ মিলিয়ন ভারতীয়) মারা যায়। ১৮৯০-১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ম্যালেরিয়া মহামারি বিশ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটায়।
খ. চিকিৎসা-সংকট এবং জাতীয় জাগরণ
এই দুঃসহ জনস্বাস্থ্য পরিবেশের পাশাপাশি ছিল চিকিৎসকের নিতান্তই অপ্রতুলতা। ১৮৭০ সালে প্রকাশিত ক্যাম্পবেল ব্রাউনের রিপোর্ট থেকে জানা যায় – তখন প্রতি দুহাজার জন পিছু একজনও মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডাক্তার ছিল না।
অতএব উনিশ শতকের শেষভাগে বাংলার গ্রামীণ মানুষকে দেশীয় অশিক্ষিত হাতুড়ে চিকিৎসকের ওপরই নির্ভর করতে হতো।
১২৮৪ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ 888sport free bet সাধারণীতে প্রকাশিত একটি পত্রে বলা হয়,
আনাড়ি চিকিৎসকের দ্বারা চিকিৎসা করান আর ইচ্ছাপূর্বক মৃত্যু ঘটান এ দুই-ই সমান। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের লোকে এটা বোঝে না। আবার অনেকে বুঝিয়াও কেহ অসংগতি প্রযুক্ত, কেহ বা আবশ্যকমত সুচিকিৎসক না পাওয়ায় অগত্যা সাক্ষাৎ কৃতান্তস্বরূপ সেই পাপাত্মাদিগের হস্তে জীবন সর্বস্ব প্রাণাধিক পুত্রকন্যাগণকে সমর্পণ করিতে বাধ্য হয়। যিনিই দুইটা রঙের বড়ি পাকাইয়া চাদরের খুটে বাঁধিয়া বাহির হইলেন, তিনিই কবিরাজ। যিনিই একখানা সাইন বোর্ড ঝুলাইয়া দুটো শিশি বোতল সাজাইয়া, জমকাইয়া বসিলেন, তিনিই ডাক্তার। পূবের্ব যেমন কেহ লেখাপড়া না শিখিলে এবং জীবিকা নির্বাহের অন্য উপায় না থাকিলে, পাঠশালায় গুরুমহাশয় হইত, আজকাল যিনি ইংরেজির দু’পাতা উল্টাইয়া, স্কুল ছাড়িয়া, কাজকর্ম্মের সুবিধা করিয়া উঠিতে না পারিলেন, তিনিই ডাক্তার হইলেন। কবিরাজদিগের মধ্যে অনেকের বিদ্যাও আবার এদের অপেক্ষাও কিছু অধিক, মা সরস্বতীর সহিত তাঁহাদিগের চিরবিবাদ, কখন দেখা-সাক্ষাৎও নাই। তাঁহাদের কাহার পিতা পিতামহ, কাহার মাতা মাতামহ, কাহার শ্বশুর সম্বন্ধী, কাহার কোন কুলের কে চিকিৎসক ছিলেন, তাঁহারা সেই স্বত্বে স্বত্ববান হইয়া, সেই দোহাই দিয়া কবিরাজ হইয়া বসিয়াছেন। এইরূপ সব ডাক্তার কবিরাজ, বিশেষতঃ ডাক্তার আজকাল গ্রামে গ্রামে, পল্লীতে পল্লীতে মূর্তিমান হইয়া বিরাজ করিতেছে।
বাংলাজুড়ে তখন চলছে নবজাগরণ বা রেনেসাঁসের প্রভাব। ইংরেজি ভাষা, 888sport live football ও সংস্কৃতির প্রভাবে অষ্টাদশ শতাব্দীর তমসা কাটিয়ে, কুসংস্কারের মোহনিদ্রা ভেঙে জেগে উঠছে জাতি।
রেনেসাঁসের একটা বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে, সর্ববিষয়ে কৌতূহল বা অনুসন্ধিৎসা। আর একটা মানবজীবনকে সর্বপ্রকারে ভরিয়ে নেওয়া ও বিকশিত করা।
আমাদের রেনেসাঁস ইউরোপের রেনেসাঁসের মতোই মধ্যযুগের অন্ধকার থেকে্ আধুনিক যুগের আলোকে উত্তরণ, ইউরোপের চার শতাব্দীর বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত অনুবর্তন। আমাদের প্রেরণার উৎস প্রতীচ্যের জ্ঞান-888sport apk।
১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে সংবাদ ভাস্কর জানায়, মেডিকেল কলেজ চালু হওয়ার পর প্রথম দিকে বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলো বিনা দ্বিধায় তাদের ছেলেদের এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের জন্য পাঠাতে চাননি, তবে শিগগিরই পশ্চিমি চিকিৎসা 888sport apkের চমৎকারিত্ব এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের যত্নের দিকটি বিবেচনা করে তাঁদের মতের পরিবর্তন ঘটে। এগিয়ে এলেন কলকাতার বিত্তশালী সম্প্রদায়। মেডিকেল কলেজের পরীক্ষায় সফল ছাত্রদের পুরস্কৃত করে এবং যোগ্য ছাত্রদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়ে তাঁরা জাতীয় কর্তব্য পালন করলেন। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর একাই প্রতি বছর তিনজন ছাত্রের বিলেতে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত ব্যয়ভার বহন করতেন।
মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের জন্য রানি স্বর্ণময়ী দেবী কলকাতায় একটি আবাসিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্দেশ্যে এক লাখ টাকা দান করেছিলেন।
ক্রমে পশ্চিমি চিকিৎসা888sport apk শিক্ষার জন্য ভীষণ আগ্রহের সৃষ্টি হয়।
কলকাতায় তখন একটিমাত্র মেডিকেল কলেজ এবং কয়েকটি মেডিকেল স্কুল। এদের পক্ষে তখনকার বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার মিলিত রাজ্যের আশি মিলিয়ন জনগণের চাহিদা পূরণ ছিল নিতান্তই অসম্ভব। চিকিৎসা888sport apk শিক্ষার এই আগ্রহ এতটাই ছিল যে, বহু যুবক মেডিকেল স্কুল ও কলেজে ভর্তি হতে না পেরে বিভিন্ন অবৈধ প্রতিষ্ঠান থেকে জাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে অবৈধভাবে চিকিৎসাব্যবসা শুরু করে দেয়।
গ. ভারতীয় ও বিদেশি চিকিৎসকদের মধ্যে বৈষম্য
নেটিভ ডাক্তারদের প্রতি সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার বর্ণবিদ্বেষমূলক অবিচার ও নির্যাতন চালাতে অভ্যস্ত ছিল। কলকাতা, বম্বে ও মাদ্রাজের মেডিকেল কলেজগুলো থেকে বেশ কিছু ভারতীয় চিকিৎসক পাশ করে বেরোতেন। যদিও এঁরা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানে ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিসের ইউরোপীয় চিকিৎসকদের সমান ছিলেন, কিন্তু এঁদের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন পদে নিযুক্ত করা হতো। চাকরিতে উন্নতির সম্ভাবনা ছিল খুবই কম, মাসিক বেতনক্রম ছিল ১০০ থেকে ২০০ টাকা। একই জায়গায় একজন ইউরোপীয় আইএমএস ডাক্তার শুরুতেই মাসিক বেতন পেতেন ৪০০ টাকা। ইউরোপীয় এবং ইউরেশিয়ান অ্যাপোথেকারীরা, যারা একটিমাত্র মেডিকেল পরীক্ষায় পাশ করত – তারাও নেটিভ ডাক্তারদের থেকে বেশি বেতন পেত।
১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও পাঞ্জাবের ভারতীয় সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনরা তাঁদের অভিযোগ জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদনপত্র পেশ করেন। কিন্তু সরকার এই আবেদনপত্র বাতিল করে।
১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে পাটনার টেমপল স্কুল অব মেডিসিনের প্রিন্সিপাল ডা. সিম্পসন প্রায় একই রকমের একটি আবেদন সরকারের কাছে পাঠান।
উত্তর বাংলার সার্জন জেনারেল মন্তব্য করেন :
১. অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনরা যে কাজ করেন তার তুলনায় বেশি বেতন পান।
২. তাঁদের শিক্ষার খরচ প্রধানত সরকার বহন করে।
৩. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যক্তিগত চিকিৎসাব্যবসার মাধ্যমে প্রচুর রোজগার করেন।
কিন্তু ক্রমশ নেটিভ ডাক্তারদের মনে অতৃপ্তি বাড়তে থাকে এবং এর ফলে শুরু হয় উনিশ শতকের মেডিকেল রিফর্ম আন্দোলন।
১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬ কলকাতার সিটি কলেজে জনসভা হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। ডা. ভুবনমোহন সরকার সভাপতিত্ব করেন। এর পরবর্তী সভা হয় ৩০ মার্চ ১৮৯৬ কলকাতায় ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান হলে। এই সভায় রাজা পিয়ারীমোহন মুখার্জি, রাজা বিনয়কৃষ্ণ, মাননীয় শ্রীসুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, মাননীয় শ্রী এএম বাসু, মি. ডবলু, সি. ব্যানার্জি, মি. মনোমোহন ঘোষ, মি. লালমোহন ঘোষ, রেভারেন্ড কালীচরণ ব্যানার্জি উপস্থিত ছিলেন।
এই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. কে.এন. বাহাদুরজি এবং ড. এ.আর. পান্ডুরং সরকারের কাছে নিম্নলিখিত দাবি সনদ পেশ করেন :
১. সিভিল এবং মিলিটারি মেডিকেল সার্ভিস পৃথক করা হোক। একটি নূতন ভারতীয় মিলিটারি মেডিকেল সার্ভিস তৈরি করা হোক।
২. সিভিল মেডিকেল সার্ভিসের পুনর্গঠন। এই সার্ভিসে ভারত ও ইউরোপের চিকিৎসকদের মধ্য থেকে নির্বাচন করতে হবে। প্রতিভা ও কর্মদক্ষতা দেখে অধিক 888sport free betয় ভারতীয় চিকিৎসকদের সিভিল মেডিকেল সার্ভিসে নিয়োগ করতে হবে।
এই দাবি ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এবং 888sport app ফোরাম থেকেও করা হয়। কিন্তু সরকার মানতে রাজি হয়নি। অবশেষে দুটি মাত্র পরিবর্তন সরকার মেনে নেয়।
ক. কিছু সংখ্যক নির্বাচিত সিভিল অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের জন্য সিনিয়র গ্রেড (মাসিক বেতন ৩০০ টাকা) চালু হলো।
খ. প্রতি প্রদেশে অল্পকিছু নির্বাচিত সিভিল স্টেশনে ভারতীয় চিকিৎসকদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ করা চালু হলো।
ডাক্তার রাধাগোবিন্দ কর : এক মহাজীবনের কাহিনি
১৮৫২ সালের ২৩ আগস্ট রাধাগোবিন্দ কর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থান সাঁতরাগাছি। পিতা প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদ ডাক্তার দুর্গাদাস কর। প্রপিতামহ রামমোহন কর প্রতিপত্তিশালী এবং অবস্থাপন্ন লোক ছিলেন। তিনি নীলকুঠির মালিক ছিলেন। পিতামহ ভৈরবচন্দ্র কর কলকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত উকিল এবং মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস-চেয়ারম্যান গোপাললাল মিত্রের বড়ো ভগিনীকে বিবাহ করেন। তাঁদের একমাত্র পুত্র ডাক্তার দুর্গাদাস কর, – রাধাগোবিন্দ করের পিতা।
দুর্গাদাস করের বয়স যখন দুই কী তিন বছর তখন তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে। এই অবস্থায় তিনি কলকাতায় মামার বাড়িতে আশ্রয় নেন। ছাত্রজীবনে তিনি প্রথমে ডাফ স্কুলে এবং পরে মেডিকেল কলেজে শিক্ষালাভ করেন। ১৮৫৩ সালে ডাক্তারি পাশ করে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন। প্রথমে বরিশাল, তারপর 888sport appর মিটফোর্ড হাসপাতালের পর ১৮৬২ সালে কলকাতার মেডিকেল কলেজের বাংলা বিভাগে ভেষজতত্ত্বের শিক্ষক নিযুক্ত হন। এখানে তিনি নয় বছর শিক্ষকতার কাজ করেন। ১৮৬৮ সালে তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ভৈষজ্য-রত্নাবলী প্রকাশ করেন। এই বইটির জন্য বাংলার চিকিৎসা888sport apkের জগতে ডাক্তার দুর্গাদাস করের নাম চির888sport app download for androidীয় হয়ে থাকবে।
রাধাগোবিন্দ ডাক্তার দুর্গাদাস করের প্রথম পুত্র। তাঁর তিন ভ্রাতা ও পাঁচ ভগিনী ছিল। ভ্রাতাদের নাম রাধামাধব, রাধারমণ ও রাধাকিশোর। মাতা কলকাতার হোগলকুড়িয়া নিবাসী দুর্গাদাস ঘোষের কন্যা।
তিনি হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করার পর চিকিৎসা888sport apk শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
পতন থেকে উত্থান
এই সময় বিবিধ পারিবারিক সমস্যা এবং যৌবনসুলভ উচ্ছলতায় তিনি সাময়িকভাবে বিপথগামী হন। এক বছর ডাক্তারি পড়াশোনা করে তিনি মেডিকেল কলেজ পরিত্যাগ করেন।
এই সময় করেকজন শিক্ষিত যুবকের উৎসাহে কলকাতায় অবৈতনিক সাধারণ নাট্য সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত হয়। রাধাগোবিন্দ এবং তাঁর মধ্যম ভ্রাতা রাধামাধব এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে রাজেন্দ্র পালের বাড়িতে এই নাট্য সম্প্রদায় দীনবন্ধু মিত্রের লীলাবতী নাটকটি অভিনয় করে। রাধাগোবিন্দ এই নাটকে সারদাসুন্দরীর ভূমিকায় সুচারুরূপে অভিনয় করেন।
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ডাক্তার কর পুলিশের হাতে বিনা দোষে নিগৃহীত হন।
শ্যামাপূজা উপলক্ষে রাধাগোবিন্দের ভ্রাতারা এবং অন্য প্রতিবেশীগণ বড়ো রাস্তার ধারে একটি পাঁচিলের ওপর তুবড়ি রেখে পোড়াচ্ছিল। বিটের কনস্টেবল তা জোর করে ফেলে দেয়। এই ঘটনায় ডাক্তার করের ভ্রাতাদের ও অন্য প্রতিবেশিদের সঙ্গে কনস্টেবলের বচসা হয় এবং কনস্টেবল প্রহৃত হয়। ডাক্তার কর এই ঘটনা সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না। কিছুক্ষণ পরে যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন তখন পুলিশ বাড়ি ঘিরে ফেলে। দোষীরা সকলেই পালিয়ে গিয়েছিল। সেই কনস্টেবল ডাক্তার করকে একজন দাঙ্গাবাজ বলে শনাক্ত করে। নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণের জন্য তাঁর সকল চেষ্টা বিফল হলো। তিনি পনেরো দিনের জন্য বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হলেন।
এই সময় তিনি আরেকটি ভয়ঙ্কর আঘাতের সম্মুখীন হন। তাঁর প্রথমা পত্নীর মৃত্যু হয়। তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। এই দুটি ভয়ঙ্কর ভাগ্যবিপর্যয় ডাক্তার করের মনে আমূল এক পরিবর্তন আনে। নিজেকে কোনোরূপ জনসেবামূলক কাজে নিয়োজিত করার একটা প্রবল ইচ্ছা তাঁর মনে জাগ্রত হয়। তাঁর পরবর্তী জীবনে যে জ্বলন্ত দেশপ্রেম এবং অসাধারণ আত্মত্যাগ আমরা দেখতে পাই তার সূচনা সম্ভবত এখানেই।
কর্মের ভুবনে
১৮৮০-৮১ খ্রিষ্টাব্দে রাধাগোবিন্দ কর পুনরায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। তিন বছরের শিক্ষাক্রম শেষ করে তিনি ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে যান। তাঁর সঙ্গে যান কাশ্মিরের বিখ্যাত ডাক্তার আশুতোষ মিত্র। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলআরসিপি ডিপ্লোমা গ্রহণ করে এক বছর বাদে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে শ্যামবাজারে নিজ বাড়িতে ডাক্তার কর চিকিৎসাব্যবসা শুরু করেন। অল্পদিনেই পল্লিসমাজে তিনি চিকিৎসক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তিনি ছিলেন একাধারে ফিজিশিয়ান ও সার্জন। তাঁর নিজের বাড়িতেই শল্যচিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। অনেক দরিদ্র রোগীর কঠিন শল্যচিকিৎসা তিনি নিজের বাড়িতেই করতেন। এছাড়া বিষচিকিৎসায় তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন। কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষপান করলে ডাক্তার করকেই লোকে ডাকত। এই চিকিৎসায় তাঁর যথেষ্ট হাতযশ ছিল।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় প্রথমবার প্লেগ রোগ দেখা দিলো। সরকার নির্দেশ দিলো, প্লেগ রোগীকে হাসপাতালে বাধ্যতামূলকভাবে ভর্তি করতে হবে। এই নির্দেশে শহরের উত্তরাঞ্চলের অধিবাসীদের মনে একটা ভীষণ আতঙ্ক সৃষ্টি হলো। শহর ছেড়ে দলে দলে লোকে পল্লিগ্রামে বাস করতে লাগল। এই সময় স্যার জন উডবার্ন বাংলার ছোট লাট ছিলেন। তিনি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেন – রোগীকে বাধ্যতামূলকভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। গৃহস্থবাড়ির একপ্রান্তে একটি সুপরিষ্কৃত ঘরে বা বাড়ির ছাদে অল্প খরচায় একটি ঘর নির্মাণ করে সেখানে প্লেগ রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থা করা যায়।
এই সময় ডাক্তার কর পল্লিবাসীদের মঙ্গলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম এবং যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। পল্লির প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতে কোথায় রোগীর জন্য ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে তা আগে থেকে নির্ণয় করার ভার সরকার ডাক্তার করের ওপর দিয়েছিল। ডাক্তার কর দিনের পর দিন ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তুচ্ছ করে, এমনকি নিজ চিকিৎসাব্যবসা অবহেলা করে এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন। এই একটি কাজের মধ্য থেকেই ডাক্তার করের সমাজ-সচেতনতা, আত্মত্যাগ ও দয়ালু হৃদয়ের পরিচয় পাওয়া যায়।
স্বাদেশিকতা ও দেশপ্রেম
ড. প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাঁর জাতীয় প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল কেমিক্যালে প্রস্ত্তত ওষুধ বাজারে চালু করার ব্যাপারে এক বিশেষ বাধার সম্মুখীন হন। তিনি জানান, স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ীরা কেমিস্ট্রি (রসায়ন) বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন। তাঁরা শুধুই লাভ-লোকসানের হিসাব বুঝতেন। বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রস্ত্তত ওষুধ দেখে তাঁরা প্রশংসা করলেও মাথা নেড়ে জানাতেন, ‘নামী কোম্পানির বিলাতি ওষুধের বাজারে চাহিদা আছে। আমাদের খদ্দেররা দেশি ওষুধ ব্যবহার করতে চাইবেন না।’
এ সত্ত্বেও অনেক চেষ্টার পর বেঙ্গল কেমিক্যালের দেশি ওষুধ স্থানীয় ওষুধের দোকানের শেলফের পেছনের দিকে ঠাঁই পেল। বিক্রির অবস্থা সহজেই বোধগম্য।
এ অবস্থায় এগিয়ে এলেন ডাক্তার অমূল্যচরণ বসু এবং ডাক্তার রাধাগোবিন্দ কর। তাঁদের দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে এলেন ডাক্তার নীলরতন সরকার, ডা. সুরেশ সর্বাধিকারী প্রমুখ খ্যাতনামা চিকিৎসক। তাঁদের সবার একান্ত চেষ্টায় ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে বিক্রি বাড়ল বেঙ্গল কেমিক্যালের এইটকেনস টনিক সিরাপ, সিরাপ অব হাইপোফসফাইট প্রভৃতির। এছাড়া তাঁরা ছিলেন দেশীয় ওষুধের ওপর যথেষ্ট আস্থাশীল। তাই কুর্চি, বসাক এবং কালমেঘের সিরাপ ও জোয়ানের আরক বাজারে চলতে থাকে।
চিকিৎসাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান : নির্মাণের কারিগর
১৮ অক্টোবর ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা রেনেসাঁসের ইতিহাসে এক 888sport app download for androidীয় দিন। এই দিন কলকাতা শহরের নয়জন খ্যাতনামা চিকিৎসক ১৬১ ওল্ড বৈঠকখানা বাজার রোড ঠিকানায় মিলিত হলেন। এই সভার উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন অবস্থা পর্যালোচনা করে বিদেশি সরকারের শিক্ষা সংকোচন নীতি, জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ এবং আর্ত দেশবাসীর সামগ্রিক উপকারের জন্য একটি জাতীয় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা। এই প্রসঙ্গে জানাই স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামা (উডস ডেসপ্যাচ) অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রচেষ্টায় সরকারের শিক্ষা দফতরের পূর্ণ সহযোগিতা পাবার কথা।
এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. এমএন ব্যানার্জি। ডা. রাধাগোবিন্দ করের একান্ত আগ্রহে এই সভা আহূত হয়। সভায় উপস্থিত থাকেন – ১। ডা. অক্ষয়কুমার দত্ত, ২। ডা. বিপিনবিহারী মৈত্র, ৩। ডা. বিনোদবিহারী মিটার, ৪। ডা. কুমুদনাথ ভট্টাচার্য্য, ৫। ডা. বিবি ব্যানার্জি, ৬। ডা. জগদীশচন্দ্র লাহিড়ী, ৭। ডা. এম.এল. দে, ৮। ডা. আর.জি. কর, ৯। ডা. এম.এন. ব্যানার্জি।
এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় স্বার্থে একটি বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। এই উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত অস্থায়ী কমিটি গঠিত হয়।
ডা. এম.এন. ব্যানার্জি – চেয়ারম্যান
ডা. কে.এন. ভট্টাচার্য – সেক্রেটারি
ডা. আর.জি. কর (অডিটর), ডা. এ.কে. দত্ত (অডিটর)
ডা. জে.সি. লাহিড়ী – কোষাধ্যক্ষ
ডা. বি.বি. মৈত্র, ডা. বিনোদবিহারী মিটার, ডা. এম.এল. দে, ডা. ব্রজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, ডা. আর.কে. সেন, ডা. পি.সি. মজুমদার, ডা. এস.সি. বোস, ডা. এস.বি. দে (সদস্য)।
নভেম্বর ১৮৮৬, স্কুল শুরু হয়। এখানে আয়ুর্বেদ এবং 888sport app বিভাগ ছিল। এর নাম হয় ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে আগস্ট মাসে স্কুলের অ্যালোপাথি বিভাগ আলাদা করে নেওয়া হয়। এর নামকরণ হয় ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুল।
স্কুল শুরু হয় ১৬১ ওল্ড বৈঠকখানা বাজার রোড ঠিকানায়। এরপর ঠিকানা বদল হয়ে প্রথমে হলো ১৫৫ ও পরে ১১৭ বৌবাজার স্ট্রিটে। ১৮৮৯ সালে স্কুল পরিচালনার জন্য একটি সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন করা হয় (১৮৮২ সালের অ্যাক্ট VI অনুযায়ী) প্রথম কার্যকরী সমিতি ছিল এইরকম :
প্রেসিডেন্ট – ডা. লালমাধব মুখার্জি
সেক্রেটারি – ডা. আর.জি. কর
সদস্যগণ – ১। মি. আর.ডি. মেহতা, ২। বাবু ভূপেন্দ্রনাথ বসু, ৩। ডা. প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ৪। ডা. আর সেন, ৫। বাবু হরিপদ ঘোষাল, ৬। বাবু সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ।
ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুলে ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলের পাঠক্রম অনুযায়ী শিক্ষাদান করা হতো। শিক্ষাদানের মাধ্যম ছিল বাংলা। এর সঙ্গে একটি বহির্বিভাগীয় হাসপাতাল ছিল। ১৮৮৯ সালে এই হাসপাতালে প্রায় চার হাজার রোগীর চিকিৎসা করা হয়। স্কুলটির নিজস্ব ভালো হাসপাতাল না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়ো হাসপাতাল, চাঁদনী হাসপাতাল এবং সুকিয়া স্ট্রিট ডিসপেন্সারিতে ছাত্রদের ক্লিনিক্যাল ক্লাসের ব্যবস্থা করেন।
প্রথম দিকে শব-ব্যবচ্ছেদের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ১৮৮৯-৯০ সালে সরকারের অনুমতি নিয়ে শব-ব্যবচ্ছেদ শুরু হয়। প্রথমে শিক্ষাবর্ষ ছিল তিন বছর, পরে ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষাবর্ষ চার বছর করা হয়। খ্যাতনামা চিকিৎসকগণ এই স্কুলে বিনা বেতনে শিক্ষাদান করতেন। শিক্ষকদের তালিকা ছিল নিম্নরূপ –
মেডিসিন : ডা. জগবন্ধু বসু, এম.ডি, ডা. এ.এন. ব্যানার্জি, এমআরসিএস, ডা. আর.জি. কর, এলআরসিপি
সার্জারি : ডা. প্রাণধন বসু, এমবি, ডা. জে.এন. মিত্র, এমআরসিপি
চক্ষু বিভাগ : ডা. লালমাধব মুখার্জি, এলএমএস
স্বাস্থ্য : ডা. সুন্দরীমোহন দাস, এমবি
মেডিকেল জুরিসপ্রুডেন্স : ডা. যোগেন্দ্রনাথ দত্ত, ডা. এস মুখার্জি, এমডিসিপিএসডি
থেরাপিউটিকস : ডা. নীরদবিহারী বসু, এমবি
ফার্মাকোলজি : ডা. বি. বসু
অ্যানাটমি : ডা. অমূল্যচরণ বাসু, এমবি, ডা. শরৎচন্দ্র বসু, এমএএমবি
ফিজিওলজি : ডা. এস.এন. দে, এমবিসিএস, বিএসসি, ডা. নীলরতন সরকার, এমএ, এমবি
ডেমনস্ট্রেশন : ডা. মহেন্দ্রনাথ সেন, এমবি, ডা. শরৎচন্দ্র বসু, এমএ, এমবি, ডা. আশুতোষ নাথ
ক্লিনিক্যাল মেডিসিন : ডা. কে.সি. দত্ত, এমবি, ডা. এন.আর. সরকার, এমএএমবি, ডা. এস.বি. মুখার্জি, এমবি, ডা. এস.সি. সর্বাধিকারী, বিএ, এমবি
শব-ব্যবচ্ছেদ : ডা. আর.জি. কর, ডা. অমূল্যচরণ বসু, ডা. শরৎচন্দ্র বসু
শুরুতে মাত্র আটজন ছাত্র ছিল। ক্রমশ ছাত্র888sport free bet বাড়ে।
সাল ছাত্র888sport free bet
১৮৯০-৯১ ১১৮
১৮৯১-৯২ ১৭০
১৮৯৪-৯৫ ৩৭০
১৮৯৫-৯৭ ৩৯৭
১৮৯৯-১৯০০ ২৬০
মাতৃভাষায় মেডিকেল স্কুলগুলোর পঠনপাঠন এবং সংলগ্ন হাসপাতালগুলোর কার্যাবলি সম্পর্কে অনুসন্ধান করার জন্য ১৮৯৩ সালে সরকার যে কমিটি গঠন করে, সেই কমিটিও এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে উচ্চ অভিমত ব্যক্ত করে।
ওই কমিটির রিপোর্টে বলা হয় – এই স্কুলটির শিক্ষক 888sport free bet বেশ ভালো। তাঁদের মধ্যে বিশজন ব্যক্তিগত পেশায় নিযুক্ত। শুধুমাত্র যাতায়াতের ভাড়া নিয়ে তাঁরা বিনা মাহিনায় এই স্কুলে পাঠদান করেন। ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজন বিনা মাহিনায় পড়ে। স্কুলের শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষ থেকে বহু পদক ও পারিতোষিক দেওয়া হয়।
১৮৯৭ সালে স্কুল ২৯৮ আপার সার্কুলার রোডে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে একটি ছোট হাসপাতাল চালু করা হয়।
শয্যা888sport free bet ছিল চোদ্দো। পরবর্তী বছরে স্কুল কর্তৃপক্ষ বেলগাছিয়ায় পঁচিশ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রায় বারো বিঘা জমি ক্রয় করে।
এই জমিতে সত্তর হাজার টাকা ব্যয়ে একটি একতলা বাড়ি তৈরি করা হয়। এই সত্তর হাজার টাকার মধ্যে আঠারো হাজার টাকা পাওয়া যায় প্রিন্স অ্যালবার্ট ভিক্টরের কলকাতা 888sport slot game উপলক্ষে সংগৃহীত তহবিল থেকে। ডা. লালমাধব মুখার্জি, স্যার যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, মি. আর. ডি. মেহতা প্রমুখের চেষ্টায় এই টাকা পাওয়া যায়।
ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ স্যার জন উডবার্ন এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনিই এই হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। হাসপাতালের নাম দেওয়া হয় অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতাল। শয্যা888sport free bet ছিল ছত্রিশ। ১৯০৩ সালের আগস্ট মাসে ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুল বেলগাছিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তী বছর বাবু মানিকলাল শীলের দানে বারো হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় পান্নালাল শীল আউটডোর ডিস্পেনসারি।
ক্রমশ রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতালের দ্বিতীয়তলা তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। ডা. এম.এন. ব্যানার্জির অনুরোধে এগিয়ে এলেন পোস্তার রানি কস্তরীমঞ্জরী দাসী (কুমার রাধাপ্রসাদ রায়ের বিধবা স্ত্রী)। মোট খরচ (প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা) তিনি দান করলেন। এই টাকায় অ্যালবার্ট ভিক্টর হাসপাতালের দ্বিতল সম্পূর্ণ হলো। শয্যা888sport free bet এবার দাঁড়াল একশ। ১৯০৯ সালের নভেম্বর মাসে স্যার এডওয়ার্ড বেকার নূতন ওয়ার্ডের উদ্বোধন করেন। ইতিমধ্যে ১৯০৪ সালে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটল।
কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল ছিল অপর একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৮৯৫ সালের ১০ জুলাই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ জন মার্টিন কোটসের মৃত্যু হয়। তাঁর 888sport sign up bonus রক্ষার্থে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে কোটস মেমোরিয়াল ফান্ড খোলা হয়। ওই ফান্ড থেকে পাওয়া অর্থে কোটসের 888sport sign up bonusতে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এইভাবে সৃষ্টি হয় কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল। ১৮৯৫ সালের প্রতিষ্ঠাবর্ষ থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে কলেজ-মানের শিক্ষা দেওয়া হতো। ঠিকানা ছিল ২৯৪ আপার সার্কুলার রোড। ১৯০৪ সালে এই কলেজে মাত্র বারোজন ছাত্র ছিল।
১৯০৪ সালে এই প্রতিষ্ঠান ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুলের সঙ্গে সংযুক্ত হলো। সম্মিলিত প্রতিষ্ঠানটির নাম হলো দি ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুল অ্যান্ড দি কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অফ বেঙ্গল। এই সম্মিলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে দুটি শাখা ছিল। স্কুল বিভাগে মাতৃভাষায় চার বছরের শিক্ষাক্রম চালু ছিল। কলেজ বিভাগে চালু ছিল ইংরেজিতে পাঁচ বছরের শিক্ষাক্রম। এরপর ঘটনাক্রমে এলো নাটকীয় পটপরিবর্তন। ১৯১১ সালে মেডিকেল রেজিস্ট্রেশন বিল চালু হতে চলেছে। এই অবস্থায় সরকার সকল বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন জানাল সকলে মিলিত হয়ে একটি উচ্চমানের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গড়ার। সরকারের মূল উদ্দেশ্য ছিল, এই সম্মিলিত প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক অনুদান দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলার মেডিকেল কাউন্সিলের অনুমোদন পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করা। এই ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহী ছিলেন স্যার পার্ডে লিউকিস এবং সার্জন জেনারেল হ্যারিস। দুবছর ধরে এই প্রচেষ্টা চলল। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্নরকম স্বার্থের সংঘাত এবং তাদের প্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত আপোসহীন মনোভাবের জন্য এ প্রচেষ্টা সফল হলো না।
এবার ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুল অ্যান্ড দি কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস অব বেঙ্গল সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখল বেলগাছিয়ার এই প্রতিষ্ঠানটিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত মেডিকেল কলেজরূপে গড়ে তোলার জন্য সরকারি অনুদানের। এ ব্যাপারে ১৯১২-১৩ সালে ডা. এম.এন. ব্যানার্জি, ডা. নীলরতন সরকার, ডা. সুরেশ সর্বাধিকারী, ভূপেন্দ্রনাথ বসু এবং অন্যরা বেশ কয়েকবার লর্ড কারমাইকেল (গভর্নর অব বেঙ্গল) এবং স্যার উইলিয়াম ডিউকের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করেন।
অবশেষে ১৯১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সেক্রেটারি অব স্টেট একটি কর্ম পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা সরকারি মেডিকেল স্কুল অনুমোদিত বেসরকারি (স্বাধীনভাবে চিকিৎসকদের দ্বারা পরিচালিত) মেডিকেল স্কুল ও কলেজ স্থাপন করার ব্যাপারে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে। সরকার শর্তসাপেক্ষে এককালীন মুখ্য অনুদান হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা এবং নিয়মিতভাবে পঞ্চাশ হাজার টাকার বার্ষিক অনুদান দিতে প্রতিশ্রুত হয়। এই অনুদানের শর্ত ছিল নিম্নরূপ :
১. নির্মীয়মাণ বাড়িগুলোর নকশা সার্জন জেনারেলের দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে।
২. সকল প্রকার নির্মাণকার্য সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের তত্ত্বাবধানে হবে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত 888sport app শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারের পক্ষে একটি ডিড সম্পাদন করতে হবে।
৪. কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর ভার থাকে –
ক. জনগণের কাছ থেকে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা সংগ্রহ করা।
খ. বিশ্ববিদ্যালয় এবং পৌরসভার কাছ থেকে নিয়মিতভাবে বার্ষিক চল্লিশ হাজার টাকার অনুদান সংগ্রহ করা।
কলেজ কর্তৃপক্ষ এই শর্ত মেনে নেন। এরপর শুরু হয় অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা। লোকহিতৈষী বদান্য ব্যক্তিরা এগিয়ে এলেন। স্যার রাসবিহারী ঘোষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করলেন। সমপরিমাণ অনুদান পাওয়া গেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রক্ষিত প্রয়াত স্যার তারকনাথ পালিত ফান্ড থেকে। মি. পি.এন. টেগোর দিলেন পঁচিশ হাজার টাকা, বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ বাহাদুর দিলেন দশ হাজার টাকা, কুমার বিষ্ণুপ্রসাদ রায় দিলেন ছয় হাজার টাকা। স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জি, মি. ভূপেন্দ্রনাথ বসু এবং স্যার এস.পি. সিনহা প্রত্যেকে দিলেন পাঁচ হাজার টাকা। মি. ভূপেন্দ্রনাথ বসু সরকারের চাহিদা অনুযায়ী কয়েক লাখ টাকার আর্থিক দায়ভারের জামিনদার হলেন।
এইভাবে জনগণের বদান্যতায় সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী মুখ্য অর্থনৈতিক দায়ভারের সংস্থান হলো। মি. ভূপেন্দ্রনাথ বসুর অনুরোধে বাংলার মাননীয় গভর্নর লর্ড কারমাইকেল কলকাতা করপোরেশনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্যের ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। অবশেষে করপোরেশনের মাননীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় কলকাতা করপোরেশন বছরে ত্রিশ হাজার টাকা অনুদান দিতে রাজি হলো।
কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক দশ হাজার টাকা অনুদান দিতে অসমর্থ হলো। স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারকে জানাল যে, তারা এই টাকা তাদের প্রাপ্য ফি থেকে সংগ্রহ করবে। অবশেষে সরকার এই শর্ত মকুব করল। ১৯১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রিলিমিনারি সায়েন্টিফিক এমবি পরীক্ষা পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া গেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে।
৫ জুলাই ১৯১৬ বাংলার মাননীয় গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ভারতের প্রথম সরকার-অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন করেন। কলেজটির নাম দেওয়া হলো বেলগাছিয়া মেডিকেল কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট এমবি এবং ফাইনাল এমবি মানের অনুমোদন পেল যথাক্রমে ১৯১৭ এবং ১৯১৯ সালে।
এভাবেই ভারতের চিকিৎসা888sport apkের ইতিহাসে সম্পূর্ণভাবে দেশীয় চিকিৎসকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবির্ভাব ঘটল। ১৯১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মেডিকেল এডুকেশন সোসাইটি অফ বেঙ্গলের (কলেজের পরিচালন সংস্থা) বার্ষিক সাধারণ সভায় ডা. নীলরতন সরকারের প্রস্তাব অনুসারে কলেজের নামকরণ হয় কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ। ২ মার্চ ১৯৪৮ মেডিকেল সোসাইটি অফ বেঙ্গলের বিশেষ সাধারণ সভায় আবার কলেজ ও হাসপাতালের নাম পরিবর্তিত হয়। এবার নামকরণ হয় আর.জি. কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
জাতীয় চিকিৎসা888sport apk মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
এই জাতীয় চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের সৃষ্টি ডাক্তার রাধাগোবিন্দ করের এক অনন্য কীর্তি। ১৬ ডিসেম্বর ১৮৮৮ সালে ডাক্তার আর.জি. কর এই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারির পদ গ্রহণ করেন। এরপর একটানা ত্রিশ বছর এই স্কুলের এবং পরবর্তীকালে কলেজের সেক্রেটারি পদে তিনিই কাজ করেন মৃত্যুদিন পর্যন্ত (১৯১৮)।
দেশের স্বার্থে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু এই কাজে একদিনের জন্যও তিনি আত্মপ্রচারের চেষ্টা করেননি। তিনি ছিলেন নীরব কর্মী। সকলের পশ্চাতে থেকে তিনি নিজ কর্তব্য পালন করতেন।
প্রথমে এই কাজে তিনি দেশের লোকের কাছ থেকে বিশেষ উৎসাহ পাননি। প্রায় সকলেই তাঁকে এই কাজে অগ্রসর হতে নিষেধ করেছিল। এমনকী স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁকে বলেছিলেন – সাধারণ স্কুল আর মেডিকেল স্কুল স্থাপন করার মধ্যে অনেক প্রভেদ। কয়েকটি বেঞ্চ ও চেয়ার নিয়ে একটি সাধারণ স্কুল স্থাপন করা যায়। কিন্তু মেডিকেল স্কুল স্থাপন করতে হলে বিস্তর অর্থ, সরঞ্জাম এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক যোগাড় না হলে মেডিকেল স্কুল একটি ভুয়া জিনিস হবে মাত্র। তার দ্বারা দেশের কাজ হবে না। কিন্তু ডা. কর নিরুৎসাহ হননি। ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং একান্ত নিষ্ঠায় তিনি তাঁর প্রয়াস চালু রেখেছেন। এবং অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছেন। পেয়েছেন সর্বসাধারণের কাছ থেকে উৎসাহ, সহানুভূতি এবং অর্থানুকূল্য। ডা. রাধাগোবিন্দ করের এই প্রয়াসে এগিয়ে এসেছেন ডা. লালমাধব মুখোপাধ্যায়, ডা. অমূল্যচরণ বসু, ডা. সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারী, স্যার ডা. নীলরতন সরকার, ডা. প্রাণধন বসু, ডা. এম.এন. ব্যানার্জি, ডা. সুরথচন্দ্র বসু, ডা. ভোলানাথ বসু, ডা. সুন্দরীমোহন দাস, ডা. মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায়, ডা. কুমুদনাথ গাঙ্গুলী, ডা. এম.এল. দে প্রমুখ খ্যাতনামা চিকিৎসক। এঁরা নানাভাবে ডা. করকে সাহায্য করেন এবং তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষকতা করেন।
মাননীয় ভূপেন্দ্রনাথ বসু মহাশয় ছিলেন ডা. করের আত্মীয় এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু। তিনি প্রথম থেকেই ডা. করের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অনুরোধে বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল করপোরেশনের কাছ থেকে এবং সরকারি ভান্ডার থেকে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সাহায্যের ব্যবস্থা করেন।
এছাড়া কলেজের সরকারি অনুমোদনের সময় ভূপেন্দ্রনাথ কয়েক লাখ টাকার আর্থিক দায়ভারের জামিনদার হন। বাংলার মাননীয় গভর্নর লর্ড কারমাইকেল, ডিরেক্টর জেনারেল অফ ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস স্যার পার্ডে লিউকিস, ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ সিভিল হসপিটাল, বেঙ্গল কর্নেল এডওয়ার্ডস এবং এডুকেশন মেম্বার, ভাইসরয়ের কাউন্সিল স্যার শঙ্করণ নায়ার এই প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতির ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেন। সমগ্র জাতি এঁদের কাছে ঋণী।
মাতৃভাষায় চিকিৎসা888sport apk চর্চা
মাতৃভাষায় চিকিৎসা888sport apk চর্চা ছিল ডা. রাধাগোবিন্দ করের একান্ত স্বপ্ন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা মেডিকেল স্কুলে বাংলা ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হতো। অবশ্য কলেজে সরকারি নির্দেশে ইংরেজিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হয়।
ডা. কর তাঁর মেডিকেল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অবসর সময়ে একের পর এক বাংলা ভাষায় চিকিৎসা888sport apkের বিভিন্ন বিষয়ে পুস্তক প্রণয়ন করেছেন। তাঁর লেখা একটি বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন – ‘বাল্যকাল হইতে আমার বিশ্বাস বদ্ধমূল হইয়াছে যে, দেশে শিক্ষা বিস্তার করিতে হইলে মাতৃভাষার আশ্রয় লওয়া ভিন্ন উপায় নাই। এই বিশ্বাসে নির্ভর করিয়া আমার স্বল্প বিদ্যা ও ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যতদূর সাধ্য তাহার সমাধানে ত্রুটি করি নাই।’
ভিষগবন্ধু, প্রকাশকাল ১৮৭১ সাল। মুখবন্ধে বলা হয় – ‘যাঁহারা চিকিৎসা বিদ্যালয় হইতে সুশিক্ষিত ও কৃতকার্য হইয়া চিকিৎসা কার্যে প্রবৃত্ত হয়েন তাঁহারা যতই বুদ্ধিমান ও বিদ্বান হউন না কেন, তাঁহাদিগের মধ্যে অনেকেই বহুদর্শিতার অভাবে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করিতে সহজে সক্ষম হয়েন না। রোগীর কাতরতা ও নানাবিধ চিহ্ন দেখিলে এত ঔষধ এককালে মনে উদিত হয় যে তাহাদের মধ্যে কোন ঔষধটি প্রকৃত বিষয়ে উপযুক্ত হইবে, তাহা নির্বাচন করা বহুদর্শিতা ভিন্ন অন্য উপায়ে কঠিন হইয়া উঠে। এজন্যই শতমারী ভবেৎ বৈদ্যঃ সহস্রমারী চিকিৎসকঃ এই প্রবাদটি দেশীয় চিকিৎসকদের মধ্যে প্রচলিত আছে। অভিনব চিকিৎসকদের এই কষ্ট নিবারণের উদ্দেশ্যে ভিষগবন্ধু নামক এই গ্রন্থ লিখিত হইয়াছে।’
এই গ্রন্থে প্রেসক্রিপসন লিখবার ধারা, প্রয়োগ হিসেবে ওষুধের গুণের বৃদ্ধি বা হ্রাস, প্রসিদ্ধ চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপসন প্রভৃতি চিকিৎসকদের নানা জ্ঞাতব্য প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। মূল্য ছিল এক টাকা।
সংক্ষিপ্ত শারীরতত্ত্ব – বাংলায় অ্যানাটমি সম্বন্ধে এই গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে। বাংলার মেডিকেল স্কুলগুলোর ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তক, চিত্রগুলো অতি উৎকৃষ্ট এবং বিষয়জ্ঞাপক। পৃষ্ঠা 888sport free bet ৮৬৪। মূল্য বারো টাকা। বইটি ইংরেজি গ্রেস অ্যানাটমির মতোই বাংলা ভাষার ছাত্রদের কাছে মূল্যবান।
বইটির মুখবন্ধে ডা. কর বলেন : ‘বঙ্গভাষায় শারীরতত্ত্ব সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত গ্রন্থের অসদভাব আছে। সেই অভাব মোচনার্থে এই সংক্ষিপ্ত শারীরতত্ত্ব প্রকাশিত হইল। পুস্তকের গুণ দোষ সবিজ্ঞ পাঠকবর্গ বিচার করবেন। এইস্থলে এইমাত্র বলা যাইতে পারে যে, আমি গ্রন্থখানি সাধারণের উপযোগী, ফলোপধারক 888sport apk ও শাস্ত্রানুমত করিবার নিমিত্ত চেষ্টা ও যত্নের ত্রুটি করি নাই। পাশ্চাত্য চিকিৎসাশাস্ত্রের সারগর্ভ, অখন্ডনীয় তত্ত্ব সমুদয় ভারতবর্ষের জনসমাজে প্রচারিত হওয়া একান্ত বাঞ্ছনীয়। এই গ্রন্থ প্রণয়নে পূর্বোক্ত উদ্দেশ্যের প্রতি বিশেষরূপে লক্ষ্য রাখা হইয়াছে। বহুল প্রচার ও নিঃস্ব ছাত্রগণের পক্ষে সুলভ হইবে বলিয়া ইহার মূল্য স্বল্প করা হইল।’
রোগী পরিচর্য্যা – ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর রোগী পরিচর্য্যা বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি কলিকাতা মেডিকেল স্কুলের ছাত্রদের জন্য লেখা হয়। পরে বেসরকারি ধাইদের (ধাত্রী) জন্য তিনি এই বইটি প্রকাশ করেন। শুশ্রূষা ছাড়াও বিভিন্ন রোগীর পথ্যাদি প্রস্ত্ততি করবার সঠিক বিবরণ এই গ্রন্থে লেখা হয়। মূল্যমান এক টাকা।
ভিষক সুহৃদ্ – ডা. করের এই গ্রন্থটিতে যাবতীয় রোগের উৎপত্তি, নিদান ও চিকিৎসা বর্ণিত হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় অস্লারের প্রিন্সিপল্স্ অ্যন্ড প্র্যাকটিস্ অব মেডিসিনের ন্যায় এটি বাংলা ভাষায় একটি অমূল্য গ্রন্থ। বইটি ১২২৮ পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ এবং অনেক চিত্র আছে। মূল্যমান বারো টাকা।
প্লেগ – উনিশ শতকের শেষভাগে কলকাতায় প্লেগ রোগের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে রাধাগোবিন্দ করের লেখা প্লেগ বইটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার মুখবন্ধে ডা. কর জানান – ‘এই পুস্তিকা রচনাকালে আমার লক্ষ্য ছিল মাতৃভাষায় শিক্ষিত চিকিৎসক সম্প্রদায় এবং বৃহত্তর জনসমাজের কাছে এই রোগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ইহার কারণ, বৈশিষ্ট্য এবং যুক্তিসম্মত চিকিৎসার কথা পেশ করা, যা আমি সম্ভাব্য সকল প্রকার উৎস থেকে সংগ্রহ করেছি।’
স্ত্রীরোগের চিত্রাবলী ও সংক্ষিপ্ত তত্ত্ব – এটি ১৯০৮ সালে প্রকাশিত। গ্রন্থটি প্রসিদ্ধ জার্মান চিকিৎসক ডা. সেফারের অ্যাটলাস অ্যান্ড এপিটোম অব গাইনিকোলজি নামক বইটির বাংলা 888sport app download apk latest version। এই সচিত্র গ্রন্থে সকল প্রকার স্ত্রীরোগের বিবরণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বর্ণিত হয়েছে। বইখানি ৩৮৭ পৃষ্ঠার এবং মূল্য পাঁচ টাকা।
সংক্ষিপ্ত শিশু ও বাল চিকিৎসা – ১৯০৯ সালে বইটি প্রকাশিত। শিশু চিকিৎসার এই বইটির পৃষ্ঠা 888sport free bet ৫২১। বইটি সচিত্র, মূল্য ২।। টাকা।
সংক্ষিপ্ত ভৈষজ্যতত্ত্ব – এটি মেটিরিয়া মেডিকা এবং ওষুধ প্রয়োগ বিষয়ের পুস্তক। প্রকাশকাল ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ। বইটিতে সংশোধিত ব্রিটিশ ফার্মাকোপিয়ায় বর্ণিত ওষুধ প্রস্ত্তত সম্বন্ধীয় যাবতীয় নতুন বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে। বইটির পৃষ্ঠা 888sport free bet ৭১৬। এতে গাছগাছড়ার বহু চিত্র দেওয়া আছে, দাম ছিল পাঁচ টাকা।
কর সংহিতা (এ হ্যান্ডবুক ফর দি ইউজ অব ইয়ং মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স) – প্রকাশকাল ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ। নতুন চিকিৎসকদের জন্য লিখিত পুস্তক এটি। রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্বন্ধীয় গ্রন্থ। খুব ছোট অক্ষরে ছাপা বই, পৃষ্ঠা888sport free bet ৪৪৯। মূল্য তিন টাকা।
কবিরাজ ডাক্তার সংবাদ – ১৮৯২ সালে প্রকাশিত। এটি একটি অভিনব চিকিৎসাগ্রন্থ। কবিরাজ কালীপ্রসন্ন সেন এবং ডা. রাধাগোবিন্দ কর যৌথভাবে গ্রন্থটি রচনা করেন। এই পুস্তকে কবিরাজ ও ডাক্তারের কথোপকথনের মাধ্যমে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চিকিৎসা888sport apkকে পাশাপাশি রেখে আলোচনা করা হয়েছে।
সম্পাদিত গ্রন্থ
ডাক্তার রাধাগোবিন্দ কর তাঁর পিতা দুর্গাদাস কর-রচিত ভৈষজ্য রত্নাবলী নামক সুবৃহৎ মেটিরিয়া মেডিকার সাতাশটি সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন। ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ছাত্র ও চিকিৎসকদের কাছে বইটি ছিল সমান আকর্ষণীয়। শুধু এই বইটি পড়ে পল্লিগ্রামের অনেক ছোটোখাট ডাক্তার প্রচুর অর্থোপার্জন করেছেন এবং সুযশের অধিকারী হয়েছেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের সকল প্রকার ক্রমোন্নতি ডা. কর এই গ্রন্থের পরের পর সংস্করণে লিপিবদ্ধ করেছেন। ফলে প্রচুর গাছগাছড়ার চিত্রসহ গ্রন্থটির আকার বেশ বড়ো হয়। পৃষ্ঠা888sport free bet দাঁড়ায় ১২১২। মূল্য ছিল বারো টাকা।
ডাক্তার রাধাগোবিন্দ করের কর্মজীবনে জাতীয় নবজাগরণের দ্যুতিতে আলোকিত দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ, সমাজসেবা ও শিক্ষা সংস্কারের এক অপূর্ব সমন্বয় পাওয়া যায়।
তিনি ছিলেন উত্তর কলকাতার অর্থবান বনেদি ঘরের সন্তান। ছিলেন সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু। নট-নাট্যকার রসরাজ অমৃতলাল বসু ছিলেন তাঁর বিশিষ্ট সুহৃদ। ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর তিনি নিজ এলাকায় একাধারে ফিজিশিয়ান এবং সার্জন হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। অর্থ এবং যশ তাঁর করায়ত্ত হয়। কিন্তু খ্যাতি ও আরামের সহজ জীবন তাঁকে আকর্ষণ করেনি। দেশ ও জাতির জন্য কিছু করবার এক উদগ্র প্রেরণা তাঁকে ব্যাকুল করেছে।
জাতীয় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ডাক্তার কর তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৮৮৮ থেকে একটানা ত্রিশ বছর ডা. কর এই প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারির গুরুদায়িত্ব পালন করেন – মৃত্যু দিন পর্যন্ত। ১৯ ডিসেম্বর ১৯১৮, ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির সময়, মৃত্যু ডাক্তার রাধাগোবিন্দ করের কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়।
নিজের স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভ্রূণ (স্কুল) অবস্থা থেকে সাবালকত্ব অর্জন (কলেজ) পর্যন্ত তিনি আপন স্কন্ধে বহন করেন। এই ব্যাপারে তিনি যোগ্য সহযোগিতা পান তাঁর দ্বিতীয় সহধর্মিণীর কাছ থেকে। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালের রোগীদের খাবার ডাক্তার করের পত্নী রান্না করে পাঠিয়ে দিতেন।
ডাক্তার করের উইল অনুযায়ী তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাঁর পঁচাত্তর হাজার টাকা মূল্যের সকল সম্পত্তি কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ লাভ করে।
এর পাশাপাশি তাঁর চিকিৎসা পুস্তকগুলো বাংলা ভাষার ভান্ডারে অমূল্য সম্পদ। মাতৃভাষায় চিকিৎসা888sport apk শিক্ষার প্রসারে তাঁর প্রয়াস চির888sport app download for androidীয়।
এই অবক্ষয়ের যুগে এই মহান ব্যক্তির কর্মময় জীবন আমাদের সতত অনুপ্রাণিত করে।
তথ্যসূত্র
১. পাবলিক হেলথ পলিসি অ্যান্ড দি ইন্ডিয়ান পাবলিক : বেঙ্গল (১৮৫০-১৯২০), সন্দীপ সিনহা, কলকাতা ১৯৯৮।
২. উনিশ শতকের বাংলায় 888sport apk সাধনা, বিনয়ভূষণ রায়, কলকাতা, ১৯৮৭।
৩. উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় 888sport apkচর্চা, বিনয়ভূষণ রায়, কলকাতা ২০০২।
৪. উনিশ শতকে দেশীয় ভাষায় চিকিৎসা888sport apkচর্চা, বিনয়ভূষণ রায়, কলকাতা, ১৯৯৫।
৫. উনিশ শতকে বাংলার চিকিৎসাব্যবস্থা, দেশীয় ভেষজ ও সরকার, বিনয়ভূষণ রায়, কলকাতা, ১৯৯৮।
৬. উনিশ শতকের বাংলায় সনাতনী চিকিৎসাব্যবস্থার স্বরূপ, সুব্রত পাহাড়ি, কলকাতা, ১৯৯৭।
৭. সায়েন্স অ্যান্ড দি রাজ (১৮৫৭-১৯০৫), দীপক কুমার, ১৯৯৫।
৮. বাংলার রেনেসাঁস, অন্নদাশঙ্কর রায়, কলকাতা, ১৯৯৯।
৯. ইম্পিরিয়ালিজ্ম্ অ্যান্ড মেডিসিন ইন বেঙ্গল এ সোশিও হিস্টোরিক্যাল পার্সপেক্টিভ, পুনমবালা, নূতন দিল্লি, ১৯৯১।
১০. দি অমৃতবাজার পত্রিকা, বৃহস্পতিবার, জুলাই ৬, ১৯১৬, পৃ ৭।
১১. মাসিক বসুমতী, ১৩৩৫, চৈত্র। সপ্তম বর্ষ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃ. ৯৭৩-৯৮৩।
১২. সাপ্লিমেন্ট টু দি ইন্ডিয়ান ল্যান্সেট, ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৮৯৬, মেডিকেল রিফর্ম ইন ইন্ডিয়া।
১৩. দি ইন্ডিয়ান ল্যান্সেট, কলকাতা, এপ্রিল ১৬, ১৮৯৬ (পৃ ৩৯০-৩৯১)।
১৪. দি কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ – রিপোর্ট অ্যান্ড প্রোসিডিংস্ অব দি সিলভার জুবিলি সেলিব্রেশন ১৯৪১।
১৫. কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ – ইনসেপশান অ্যান্ড গ্রোথ (সিলভার জুবিলি সেলিব্রেশন)।
১৬. দি কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ, সপ্তম রি-ইউনিয়ন, ওয়েলকাম অ্যাড্রেস। প্রবোধচন্দ্র রায় এমবি, চেয়ারম্যান, রিসেপশন কমিটি।
১৭. ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি কমিশন, ১৯১৭-১৯, রিপোর্ট, ভলিউম ৩ পার্ট-১, (অ্যানাসিলিস অব প্রেজেন্ট কন্ডিশন) চ্যাপ্টারস XXI-XXIX পৃ ৭১-৭৩।
১৮. ৩৯তম সেশন, ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশন, কলকাতা ১৯৫২, সম্পাদনা-এস.এন. সেন, পৃ ১০১-১০২।
১৯. ডেস্ক্রিপ্টিভ্ গাইড বুক – ক্যালকাটা অ্যান্ড ইট্স্ এন্ভায়রন্স্ ১৫তম সেশন অব দি ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস, কলকাতা, ১৯২৮।
২০. লাইফ অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স অব অ্যান ইন্ডিয়ান কেমিস্ট, পি.সি. রায় ভলিউম ১, কলকাতা, ১৯৩২।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.