বাঙালি মধ্যবিত্তের কথাকার : গোপাল হালদার

প্রলয় চক্রবর্তী

উনিশ শতকের শেষার্ধে রামকৃষ্ণ আন্দোলন ও বিবেকানন্দ-নির্দেশিত হিন্দু ধর্মের নবনির্মাণ ঔপনিবেশিক প্রভুত্বের বিকল্পে আগ্রাসী ও পেশিনির্ভর নতুন চেতনা বাঙালির স্বাভিমানকে উস্কে দেয়। বিশ শতকের কুড়ি-তিরিশের দশকে বাঙালি মধ্যবিত্তের চৈতন্যে অপর এক ভাবধারা আলোড়ন ফেলে। এই ভাবধারা ধর্মীয় চৈতন্যে হাজির থাকলেও চিন্তায় ও কর্মপদ্ধতিতে, সর্বোপরি বস্ত্তগত কর্মপদ্ধতিতে কার্যকর ছিল না। বিবেকানন্দের স্বীকৃতি যেমন পাশ্চাত্যের অনুমোদনে, ঠিক তেমনই পাশ্চাত্য-বাহিত এই নতুন ভাবধারা যা ‘বৈজ্ঞানিক সমাজবাদ’ নামে পরিচিত, কার্ল মার্কসের লেখায় ও রুশ বিপ্লবের সাফল্যের মাধ্যমে বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আকৃষ্ট করে। বাঙালির সার্বিক গড়নের ধারাবাহিকতা অনেকটাই তাই এই দ্বৈত দর্শনের আলোকে পরিপুষ্ট। বাঙালি মধ্যবিত্তের কথকতায় এ দুই ভাবধারার এক পরিশ্রুত আবাহন-বিসর্জন আছে। এ দুয়ের মাঝখানে আছেন রবীন্দ্রনাথ, যাঁর আবাহন থাকলেও বিসর্জন নেই। চরম দক্ষিণপন্থী থেকে চরম বামপন্থী (মূর্তি ভাঙার কারিগররাসহ) – সবারই মানস-চৈতন্যে কোনো না কোনোভাবে তিনি আছেন।

এমন এক ঐতিহ্যের সার্থক প্রতিনিধি গোপাল হালদার। ‘বহুজন হিতায় চ’ – ছিল তাঁর জীবনের গতিমুখ। তিনি বিবেকানন্দে ঋদ্ধ, রবীন্দ্রনাথে স্থির আর মার্কসবাদে অবিচল এক মহানুভব আদর্শবাদী চিন্তাবিদ। বিংশ শতাব্দীর অনেকটা সময় জুড়ে যাঁরা 888sport live footballের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন অথচ সেইসঙ্গে সক্রিয় রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক মতাদর্শের আড়াআড়ি সত্ত্বেও যাঁরা সমাজে সর্বজনশ্রদ্ধেয় থেকে গেছেন, তাঁদের একজন গোপাল হালদার। তাঁর রচিত 888sport live football কেবল ‘ডকুমেন্টেশন’ বা সময়ের দলিল কিনা, বিতর্ক থাকতে পারে; কিন্তু সময়কে দার্শনিক ও অর্থনৈতিক তত্ত্বের কচকচির বাইরে এনে সজীব, প্রাণবন্ত, সাধারণের বোধগম্য করতে পেরেছিলেন।

বিস্ময়কর বৈচিত্র্যে সমাচ্ছন্ন গোপাল হালদারের জীবনবৃত্তান্ত। তাঁর জন্ম 888sport app-বিক্রমপুরের বিদগাঁও গ্রামে ১৯০২ সালে। শৈশব কেটেছে অনুরূপ গহন মফস্বল নোয়াখালি শহরে। তারপর ছাত্রাবস্থায় কলকাতায় এবং এই মহানগরকে কেন্দ্র করেই তাঁর চলমান জীবন। কলকাতার মানুষ হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন। তাঁর শৈশব-কৈশোর-তারুণ্য জুড়ে জ্যাঠতুতো দাদা রঙ্গিন হালদারের মনন ও ব্যক্তিত্বের প্রগাঢ় প্রভাব পড়েছিল। ‘যে যুগে জন্মেছি তা স্বদেশীর যুগ’ থেকে সৃজন সন্ধানে জীবন পরিক্রমা ছিল তাঁর 888sport live football-সৃষ্টির প্রেরণা।

আত্ম888sport sign up bonus রূপনারায়ণের কূলে বইটিতে গোপাল হালদার লিখেছেন, ‘আমি জন্মেছি বিক্রমপুরে। আবাল্য কাটিয়েছি নোয়াখালী শহরে।’ তবে ইউরোপীয়দের মতো তাঁরও ছিল দুটি বাড়ি – এক তাঁর দেশঘর, আর একটি কলকাতা। আপাদমস্তক নাগরিক গোপাল হালদারের সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তনে মিলেমিশে গেছে এই দুয়ের আধার। পিতা সীতাকান্ত হালদার ছিলেন নোয়াখালির লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী। মা-বাবা, জ্যাঠা-জেঠিমারা তো ছিলেনই, ছিলেন দাদা-ভাই-বোনরা। একান্নবর্তী পরিবারে লালিত গোপাল হালদারের কমিউন জীবনযাপনের ভাবনার সূতিকাগার ছিল হয়তোবা তাঁর পরিবার। দাদা রঙ্গিন হালদারের প্রশ্রয়ে বাবার বইয়ের আলমারি খুলে মাইকেল, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এ-সময়েই শিক্ষকমহলে শোনা নানা মন্তব্য, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠিক বোঝা যায় না, তিনি স্বদেশির বিরোধী (প্রসঙ্গত 888sport app download for android করা যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথের ঘরে-বাইরে 888sport alternative linkের কথা), কিছুটা হিন্দু সমাজেরও – গোপাল হালদারকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। এ-কারণেই রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁর জানার, বোঝার তৃষ্ণা ছিল আমৃত্যু। ১৯১৮ সালে নোয়াখালি স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চলে আসেন কলকাতায়। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চেস কলেজে (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ)। এখান থেকেই ইংরেজি 888sport live footballে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। বাবার ইচ্ছেকে মান্যতা দিতে আইন পরীক্ষাতেও পাশ করেন।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পৌঁছে, চেতনার আলোকে তিনি এ-সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তাক্ত বিপ্লবী কর্মকান্ডে দেশের মুক্তি সম্ভব নয়। মানুষের সঙ্গে থেকে, তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রকৃত সংযোগ স্থাপনই পারে দেশের মুক্তির পথ দেখাতে। দেশের মুক্তিসংগ্রামে কংগ্রেসের এবং গান্ধীজির ভূমিকাকে যথেষ্ট 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে মেনে নিয়েও তাঁর দ্বিধা ছিল বয়কট আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে। সবুজপত্র সাময়িকীতে, ‘বাঙ্গালী যুবক ও নন-কো-অপারেশন’ নামে ছদ্মনামে লেখা সম্ভবত তাঁর প্রথম মুদ্রিত রচনায় তিনি এ সম্পর্কে সংশয় লুকিয়ে রাখেননি। তিনি ছিলেন স্বদেশহিত ব্রতের সৈনিক। সব সংশয়, প্রশ্নকে মুলতবি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন নোয়াখালিতে কংগ্রেসের কর্মকান্ডে। কংগ্রেসের অফিস চালানোর দায়িত্বের পাশাপাশি সভা-সমিতি-বৈঠক আলোচনার মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষকে সচেতন করার, সংগঠিত করার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। গান্ধী আন্দোলনের সদর্থক দিকটি তাঁকে আকৃষ্ট করে। এখানেই দেশের বাণী নামক কাগজকে হাতিয়ার করে তিনি ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-অত্যাচার ও মুসলমানদের পৃথক জাতিসত্তার দাবির যে রাজনীতি তার বিরুদ্ধে 888sport live-নিবন্ধ লিখতে থাকেন। ভারতীয় জনগণের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত করতে তথাকথিত হিন্দু মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক শ্রেণির যে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে – একথা তিনি বলতে থাকেন কাগজের মাধ্যমে। এই পর্যায়েই রাজদ্রোহিতার অভিযোগ আসে – তিনি বলশেভিক মতবাদ প্রচার করছেন।

বলভেশিক মতবাদের প্রতি তাঁর নিগূঢ় আস্থা ও কর্মোদ্যোগ আরো পরের ঘটনা। কিন্তু মানুষের কাছে যাওয়া ও তাদের কাছ থেকে শেখার শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ তিনি নোয়াখালিতেই রপ্ত করেন। ১৯২৬-এ তিনি নোয়াখালি থেকে কলকাতায় চলে আসেন। রাজনীতির পাশাপাশি 888sport live chat-888sport live football-সংস্কৃতির উপরি আধারকেও তিনি সম্যক উপলব্ধি করতে চেয়েছিলেন। গ্রাম-সমাজকে চেনা, তার গড়নকে ভাষাতত্ত্বের আলোকে বুঝে নেওয়ার প্রচেষ্টাতেই তিনি শুরু করেন ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণাকর্ম। প্রকাশিত হয়, A Brief Phonetic Sketch of the Noakhali Dialect of South Eastern Bengal, ‘Gopichand Legend’, A Skeleton Grammar of the Noakhali Dialect of Bengal. ইত্যাদি। তিনি তাঁর ‘দেশঘরে’র কথা কখনো ভোলেননি।

১৯৩২ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত গোপাল হালদারের বন্দিদশা পর্ব। কিছুদিন প্রেসিডেন্সি জেলে, উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বক্সা ক্যাম্পে এবং গৃহে অন্তরীণ অবস্থায়। এই পর্বেই চলেছে ভাষাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা। পাশাপাশি লিখেছেন, একদার মতো রাজনৈতিক 888sport alternative link, লিখেছেন ভূমিকা, নবগঙ্গা, জোয়ারের বেলা, ভাঙন, স্রোতের দীপ, উজান গঙ্গা। বন্দিজীবন যে এমন সৃষ্টিশীল হতে পারে, বাঙালি জীবনে এর এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন গোপাল হালদার।

কী না ছিলেন গোপাল হালদার! 888sport live footballিক, সাংবাদিক, পত্রিকা-সম্পাদক, ভাষা888sport apkের গবেষক, আবার তিনিই ছিলেন কৃষক সভার নেতা, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। আপাতদৃষ্টিতে এই পরিচয়গুলো আলাদা হলেও বস্ত্তত সবকটিই ছিল নিবিড়ভাবে যুক্ত মানবিক সম্পর্কের সঙ্গে। শিক্ষিত সমাজে অচল, শিক্ষার অভিমানহীন খেটে খাওয়া মানুষের যে-সমাজ, সেই সমাজের মানুষের মুখের ভাষা নিয়ে তিনি কাজ করেছিলেন। কেতাবি পান্ডিত্য নয়। তিনি বুঝেছিলেন জীবন থেকেই পাঠ নিতে হয়। তিনি যে রাজনীতির পাঠ নিয়েছিলেন সমসময়ে তা ছিল মূলত মধ্যবিত্ত  শ্রেণি-নিয়ন্ত্রিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিনির্ভর। হয়তো সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি কৃষক সভার সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। গ্রাম-সমাজের চৈতন্যের ভাগিদার গোপাল হালদার সে-কারণেই হয়তো একটু বলশেভিক!

বুদ্ধিপ্রধান ঔপন্যাসিক বলেই হয়তো বাঙালি পাঠকের কাছে তিনি একজন বিস্মৃতপ্রায় কথা888sport live footballিক। মননধর্মী কথা888sport live footballের যে-ধারাটি গত শতকে কয়েকজন কথা888sport live footballিক তৈরি করেছিলেন, বাংলার পাঠক সমাজ তাকে প্রায় বর্জন করেছে – একথা বলাই যায়। সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাতের স্বরূপ তিনি ব্যক্তির আধারে প্রতিবিম্বিত করতে চেয়েছেন। ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে উৎপাদন ব্যবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তার বিবরণ ও বিশ্লেষণের দিকেই তিনি অনেক বেশি দৃষ্টি দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একটি সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই ব্যক্তি মানুষের জন্ম ও বিকাশ। তাঁর এই রীতি-প্রকরণ কতটা গ্রহণীয় তা বিচারসাপেক্ষ হলেও এটাই তাঁর 888sport live football রচনার স্টাইল, নিজস্বতা।

তিনি মোট বারোটি 888sport alternative link লিখেছেন। বিষয়বস্ত্তর দিক থেকে বিবেচনা করলে একে পর্বে পর্বে বিভক্ত তিনটি পৃথক 888sport alternative link বলা যেতে পারে। যেমন – ভূমিকা, নবগঙ্গা, জোয়ারের বেলা, ভাঙন, স্রোতের দ্বীপ, উজান-গঙ্গা – এগুলোকে একত্রে বলা যায় ভদ্রাসন পর্বের 888sport alternative link। একদা, অন্যদিন, আর একদিন – এই তিনটির একত্রিত নাম – ত্রিদিবা। পঞ্চাশের পথ, ঊনপঞ্চাশী এবং তেরশ পঞ্চাশ – এগুলোকে বলা যেতে পারে মন্বন্তরের 888sport alternative link।

তাঁর ভদ্রাসন পর্বের 888sport alternative linkগুলোতে ধরা আছে বাঙালি মধ্যবিত্তের জাগরণ, বিকাশ ও পরিণতির কথা। 888sport alternative linkগুলোতে ধরা আছে ১৬০৯ থেকে ১৯৩০-৩১ পর্যন্ত, প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের বাঙালি জীবনের নানা রঙ্গী-বিরঙ্গী ছবি। পাঠান শাসন থেকে মুঘল যুগ, ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার নানা পরিবর্তন, ইংরেজদের আগমন ও সাম্রাজ্য নির্মাণ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রকৌশল, ভূমি আহরিত সম্পদের কল্যাণে পরাশ্রয়ী বাঙালি মধ্যবিত্তের উত্থান, যারা রক্তে-বর্ণে ভারতীয়, বিজাতীয় এক পশ্চিমি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। কায়িক শ্রমের পরিবর্তে এক পরজীবী শ্রেণি – আদালতের উকিল, হাকিম, স্কুলমাস্টার, পত্রিকা-সম্পাদক, সমাজ-সংস্কারকও! আত্মপ্রতিষ্ঠার এই ছকে কেরানি বাঙালির জীবনে এলো রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আন্দোলন, চরমপন্থী বিপ্লববাদ, এলো মার্কসবাদ। জমিদার চৌধুরী পরিবারকে কেন্দ্রে রেখে লেখক বাঙালি জীবনের মহাকাব্য রচনা করেছেন।

১৯৩৩-এ কারাবন্দি অবস্থাতেই তিনি লেখেন রাজনৈতিক 888sport alternative link একদা। স্বদেশিকতার আবহে বড় হওয়া গোপাল হালদার বুঝতে পেরেছিলেন স্বাধীনতা শুধু একার জন্য নয়, অন্যদের স্বাধীনতা, মুক্তির প্রশ্নও তার সঙ্গে জোড়বাঁধা। কংগ্রেসি আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা, গান্ধী-পরিচালিত আন্দোলনের রক্ষণশীলতার বিকল্পে মানুষের খাওয়া-পরার সমস্যা, সার্বিক বন্ধন থেকে জনতার মুক্তি – এই ছিল 888sport alternative link ত্রয়ীর নায়ক অমিতের আকাঙ্ক্ষা। একদা থেকে আর একদিন ছিল মধ্যবিত্ত বাঙালির রাজনৈতিক বোধের এক মহাপরিক্রমা, ‘বড় আমি’কে খুঁজতে ‘ছোট আমি’র এক মহানিষ্ক্রমণ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫) এবং বঙ্গাব্দ তেরোশো পঞ্চাশের মন্বন্তরকে কেন্দ্র করে তাঁর ত্রিপার্বিক 888sport alternative link পঞ্চাশের পথ, ঊনপঞ্চাশী ও তেরশ পঞ্চাশ। আসন্ন মন্বন্তরের আভাস, মন্বন্তরের আবির্ভাব এবং মন্বন্তরের প্রভাব প্রতিক্রিয়া – ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে 888sport alternative link ত্রয়ীতে। প্রধান চরিত্র বিনয়ের দৃষ্টিতে বিবৃত হয়েছে মুসলিম লিগ, কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট দলের চিন্তাধারা ও কার্যকলাপ। চল্লিশের দশকের গোড়ায় সামগ্রিক সমাজজীবনের এক মহামূল্য প্রামাণ্য ইতিহাস হয়ে উঠেছে এই তিন পর্বের 888sport alternative link। 888sport alternative linkটি প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘আমি একে সমসাময়িককালের ঐতিহাসিক 888sport alternative link হিসাবে উপস্থাপিত করেছি। চরিত্রসমূহ যদিও ঐতিহাসিক নয়, ঘটনা বিকৃত হতে দিইনি।’

প্রকৃত অর্থে গোপাল হালদারের 888sport alternative linkগুলো এক বিশেষ সামাজিক চেতনার সময়সারণি। তাঁর 888sport alternative linkগুলো একটি 888sport alternative linkেরই বারোটি পর্যায়। এই পর্যায়ক্রমে ধরা আছে বাঙালি জীবনের কথারূপ। বাঙালি মধ্যবিত্ত যেন সময়ের তরণী বেয়েই সাম্যবাদে পৌঁছেছে। তবে এ পৌঁছানো ভাবনায়, চেতনায়; কাজেও অনেকটা। বাস্তবে? মধ্যবিত্ত কুঠুরির ঘেরাটোপে বাঙালি স্বচ্ছন্দবোধ করে, চিরস্থায়ী ভূমিজ সংস্কৃতির আবহে গড়ে ওঠা মধ্যবিত্ততা, মন্ত্রিত্বে, ক্ষমতায় থিতু হয়, সাম্যবাদে উত্তরণ দূর অতিদূর আলোকবর্ষে বিরাজ করে। গোপাল হালদার মৃত্যুকাল পর্যন্ত মধ্যবিত্ততার এই সংস্কৃতি-চেতনার মধ্যেই ছিলেন। হিন্দু উচ্চবর্গীয় বাঙালি মধ্যবিত্ততার অবয়ব নির্মাণের যে-স্বপ্ন সকল – আইনসভার সদস্যপদ, শান্তি সম্মেলন বা লেখক সম্মেলন উপলক্ষে বারবার বিদেশ 888sport slot game, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য –  গোপাল হালদার এর সবকটি সোপানই অর্জন করেছিলেন। মধ্যবিত্ততার কেন্দ্রচ্যুতি তাঁর নিজের ক্ষেত্রেও ঘটেনি। হয়তো  এ-কারণেই এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের নানা ভাঙাগড়ার সাক্ষী থাকলেও আজীবন তিনি সাংবিধানিক বামপন্থার অনুষঙ্গেই স্থির ছিলেন।

গোপাল হালদারের 888sport live football-সৃষ্টিকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া যায় – সংস্কৃতিভাবুক গোপাল হালদার, 888sport live football-সমালোচক আর অন্যভাগে তিনি সৃজনকর্মী। এমত ভাগ নিছকই পাঠাভ্যাসের তাগিদে, বস্ত্তত একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতিকে দেখা, বোঝা আসলে এর ইতিহাসকেও জানাচেনা। সে-কারণেই তিনি উৎসাহিত হয়েছিলেন বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস রচনায়। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন – ‘বাঙলা 888sport live footballের ইতিহাসও বাঙলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অঙ্গ এবং বাঙালীর ইতিহাসের একটি শাখা।’ তিনি মনে করতেন, সামাজিক ইতিহাসের বিন্যাস না জানলে সংস্কৃতির বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। এ-কারণেই ‘888sport live footballের ইতিহাসের’ প্রচলিত ধারাটিকে মান্যতা দিয়েও (প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক যুগ) প্রথম পর্বের প্রথম পরিচ্ছেদে তিনি আলোচনা করেন ‘বাঙলাদেশ ও বাঙালি জাতি’, ‘প্রাচীন বাঙলা 888sport live footballের পরিবেশ’ এবং ‘সামাজিক বুনিয়াদ’। এভাবেই তিনি পৌঁছান ‘সাংস্কৃতিক পরিচয়ে’। 888sport live footballের ইতিহাসকে তিনি মিলিয়ে দিতে চেয়েছেন জাতির সমগ্র ইতিহাসের সঙ্গে। তাই 888sport live football বিচারে ‘ধর্ম’কে দেখেছেন অন্যমাত্রায়, মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘সামন্ত যুগ পর্যন্ত রাজার ধর্মই ছিল প্রজাসাধারণের ধর্ম – সাধারণ মানুষের না ছিল ভূমিতে নিজস্ব অধিকার, না ছিল স্বতন্ত্র ধর্মাধিকার’। ধর্ম কখনো কখনো এক জীবনবোধ, শাসক সংস্কৃতি ও সাধারণের সংস্কৃতির নানা দ্বন্দ্বের এক জারণ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াই তাঁর 888sport live football সমালোচনার অন্তে ‘মানুষের 888sport live footballে’ বিশ্লেষিত।

সংস্কৃতির রূপান্তর তাঁর অন্যতম 888sport liveসমষ্টি। এখানেও তাঁর আলোচনা কেন্দ্রীভূত মধ্যবিত্ততায়। অভ্যস্ত সমাজব্যবস্থা পালটে যাচ্ছে, কোন প্রকরণের মধ্যবিত্ততায় পালটে যাচ্ছে, ভাঙাগড়ার শেষে কোথায় গিয়ে এই সমাজ পৌঁছাতে পারে – এসব কথা ভাবার লোক সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগে খুব বেশি ছিল না। তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এই কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম নিয়েও তিনি প্রচুর ভেবেছেন এবং লিখেছেনও। এখানেই তিনি অন্যতর, স্বতন্ত্র। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পরিক্রমাও তাই একটু অন্যরকম।

গত শতকের তিরিশের দশকে কারান্তরালে নিক্ষিপ্ত একদল বাঙালি যুবক যখন কংগ্রেস থেকে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন, কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হলেও গোপাল হালদার যোগ দিলেন সুভাষচন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লকে। কয়েক মাস তিনি ফরওয়ার্ড পত্রিকা সম্পাদনাও করেন। এরপর তিনি যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। তাঁর স্বতোৎসারিত উদারতাবোধ তাঁর আদর্শবোধকে একপেশে হতে দেয়নি।  যে-কোনো মানুষকে তিনি মানুষ হিসেবেই 888sport apk download apk latest version করতেন, যা তাঁর সমগ্র 888sport live footballচর্চার মধ্যে আমরা দেখতে পাই। তাঁর দুই খন্ডের আত্মজীবনী রূপনারায়ণের কূলে আমরা পেয়ে যাই এমনই এক মানুষকে, যিনি দেশজ সংস্কৃতির লোকহিতৈষিণীর সন্ধান করছেন; ব্রাত্য কেউ নয়, খোঁজ ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। এই লক্ষ্যেই তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা প্রয়োগ নিয়ে ভাবছেন, বিবেকানন্দের চিন্তার স্বচ্ছতা নিয়ে উন্মুখ হচ্ছেন, তাঁর প্রিয় ইংরেজি 888sport live footballের শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা শেক্সপিয়রের জিজ্ঞাসা নিয়েও চর্চা করছেন। তাঁর একমাত্র গল্পগ্রন্থ ধূলিকণাতেও এই জিজ্ঞাসার বার্তা রয়েছে। কতদিন আগে তিনি 888sport promo codeর ভুবন অন্বেষণ করেছেন, তাদের যাপনচিত্রের বিষবৃক্ষ উন্মোচন করেছেন।  আপাত-নিরীহতা ও নীরবতার মধ্যে বিদ্রোহের বীজ অন্তর্লীন – 888sport promo code চরিত্রের এই বিশেষ দিক গোপাল হালদারের ছোটগল্পের পাঠপরিক্রমায় ধরা পড়ে।

বুদ্ধিজীবী বলতে কেতাবি, চিন্তাবিলাসী, বাস্তব জীবনবিমুখ যে ছবি পাঠকের সামনে ভেসে ওঠে, গোপাল হালদার তাতে বিশ্বাসী ছিলেন না। দেশের আমজনতার অধিকারের স্বীকৃতির মধ্যেই তিনি সমস্যার সমাধানের পক্ষে ছিলেন। তথাকথিত ভাষা-সমস্যার ক্ষেত্রেও সমাধানের চাবিকাঠি সাধারণের হাতে থাকার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীর হাতে নয়। এক্ষেত্রেও নিজেকে ‘কলকাতার’ নাগরিক বললেও  তিনি কখনোই ‘কলকাত্তাইয়া’ সংস্কৃতির অনুসারী ছিলেন না। প্রতিটি ভাষার পূর্ণ স্বীকৃতি ও বিকাশের পক্ষে তাঁর মতপ্রকাশে দ্বিধা করেননি কখনো। এক্ষেত্রে পার্টি লাইনের বিরোধিতা করতেও পিছপা হননি।

অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে ছিল। ১৯৬৮ সালের ২০ অক্টোবর পার্টির মুখপত্র ন্যু এজে এ-প্রসঙ্গে য-প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল, তিনি তার বিরোধিতা ও খন্ডন করেন। বাংলা ভাষার স্বাধীনতার প্রশ্নে পূর্ববঙ্গের মানুষের সংগ্রাম ও আহূতি তাঁর জাতি-চেতনার যে-পরিপূরক ছিল তা তো স্বাধীন 888sport appsের জন্মের মধ্যেই নিহিত আছে। এক্ষেত্রেও তিনি হয়তো একটু বেশিই বাঙালি ছিলেন।

‘আমার কাছে পৃথিবীতে সবচেয়ে আশ্চর্য মনে হয়েছে মানুষের মুখ। সাধারণ মানুষের, অসাধারণ মানুষের, সকল মানুষের। তাতেই তো বুঝেছি এ জগৎ মিথ্যা নয়।’ অর্থাৎ ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ – এই আত্মান্বেষণ ও আবিষ্কারই ছিল তাঁর জীবনসাধনা। বিবেকানন্দ যাঁকে বোধন করেছেন, শোধন করেছেন রবীন্দ্রনাথ, মার্কসবাদ যাঁর সম্যক জীবনোপলব্ধি – তিনিই গোপাল হালদার। প্রকৃত বিচারে গত শতকের অন্যতম ‘স্বদেশি বাঙালি’ ছিলেন তিনি। ‘বহু বিষয়ক সন্ধানী’ প্রাজ্ঞ এই মানুষটির মৃত্যু হয় ১৯৯৩ সালে। তাঁর 888sport live footballকর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানভান্ডারে হয়তো কোনো আলো ফেলবে না, কিন্তু ‘মানুষের মুখের’ খোঁজের সন্ধানীরা চেষ্টা করলে পেয়ে যেতে পারেন উনিশ ও বিশ শতকের মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনালেখ্যর  এক প্রাণবন্ত দলিল, যা আজো সমান প্রাসঙ্গিক।