বালক, তুমি একদিন আমাদের কবি হবে, উড়ে যাবে কালের ফুৎকারে –
আমি সেই শিরোনাম ছেপে দিচ্ছি আজকের মেঘাবৃত সংবাদপত্রে।
দূরপ্রান্ত বালক, তোমাকে স্বাগত এবং শোকের ভেতরে টানটান আমি
তোমার ওষ্ঠের ভেতরে উপস্থিত, তোমার অভিষেকে আমি উপস্থিত।
এই ঝকঝকে দুরবিন, ওই প্রজ্বলিত নীলাঞ্চল, এই চোখ, ওই নক্ষত্র,
এই বিকাশমান দিন, ওই অস্তমান বিস্তার, এ সকলই একদা ছিলো আমার –
আমি তারও দানপত্র লিখে দিতে এখন প্রস্তুত, শুধু স্বাক্ষরের অপেক্ষা।
তুমি যে আমারই মতো একদিন এসে দাঁড়াবে, ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারে,
তুমি যে প্রার্থনা করবে, দয়া দাও, বিদ্যা দাও, ইতিহাস দাও, মহর্ষি নদ,
উত্তরে তুমি যে দেখবে জলবক্ষে লাশ এবং জল নয় রক্তের ভাসান,
সে বিষয়ে তোমাকে অবহিত করবার জন্যে আমি রেখে যাচ্ছি প্রতিনিধি
সে আমারই ভাষা, আমারই তাল এবং মান, আমারই উপমাসমূহ।
দূরপ্রান্ত বালক, আমি তোমাকে জামা দিয়ে যাচ্ছি কয়েক প্রস্থ, কারণ
প্রথমেই তুমি যা হারাবে সে তোমার ভাষা নয় – বস্ত্র, শীতের হিমবাতাস,
রৌদ্রের তাপ এবং লোকদৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করবার বস্ত্র, ওই বস্ত্র
বস্তুত আর কিছু নয়, বালক, আমাদেরই ইতিহাসজ্ঞান – আমি রেখে যাচ্ছি।
এবং এই দ্যাখো, আমি বহন করে এনেছি মুমূর্ষু আমার মায়ের পীতদেহ,
এই আশায় যে যদি পারো তো ফুৎকারে উড়ে যাবার আগে তুমি এঁকে
হয় নিরাময় দিও, অথবা যদি সেটাই – তুমি দাফন করো তোমার মাটিতে।
বালক, আমি বলেছি এ সকলই এখন আমার স্বাক্ষরের অপেক্ষায় শুধু।
কী সে স্বাক্ষর আমাকে বলে নিতে হবে তাও, জেনে নিতে হবে তোমাকে।
যদি আমার মৃত্যুর পরেই পঠিত হবার মতো হতো আমার 888sport app download apk, তবে
দরকার হতো না স্বমুখেই আবার সমস্ত বলবার। হা, উচ্চাশা তো উচ্চই,
কিন্তু তার ভিত্তিতে যে অবিরাম ইস্পাতের ধারালো কুঠার এবং সমুদয়
সবুজ ও পুষ্পবান বৃক্ষের ছেদন যজ্ঞ, তা আমি এখন স্পষ্টই জেনে গেছি
আয়ুর এই ধাপে পৌঁছে; কিন্তু তোমাকে, হে তুমি বালক যে একদিন হবে
কবি, আমাদেরই কবি, তোমাকে বিশুদ্ধ করছি কুঠারের কথা না ভাবতে,
না তার শব্দ শুনতে; বরং তোমার কান শুনুক তান এবং জলপরীদের গান;
হ্যাঁ, তোমাকেই তারা শোনাবে বলে গাইছে; এখন তারা আমার জন্যে আর
গান করে না, এখন তারা পরিণত প্রান্তরের ডাইনিতে। বালক, তুমি এখনো
বালক বটে, এখনো তোমার শিশ্ন নয় সঙ্গমের জন্যে প্রস্তুত, কিন্তু এখনি তা
মাঝে মাঝেই সেই যে দণ্ডায়মান হয়ে পড়ে, আর নামে না, থামে না;
বালক, আমি তোমাকে ঈর্ষা করি, তোমাকেই আমি স্থাপন করি তবু
আমার বেদিতে, আমার পায়ের নিচে পাথরের ভিতে, সেই পাথর আমাকে
ফেলে দিতে এখন দুলে উঠছে সংক্ষোভে, সেই সংক্ষোভের ভেতরেই তো
সূর্য ছেঁড়া বস্তুপিণ্ডের উচ্চাশা গ্রথিত যে সেও অচিরে হয়ে উঠবে গ্রহ।
বালক, তুমি বিষণ্ন নয় বিশদ হবে, তুমি শোকে নয় স্বাগতে হবে পূতঃ –
তোমার জন্যেই আবার আমাকে বলতে হচ্ছে আমারই 888sport app download apkর সারসমূহ।
আমার এ কাল – এখন পূর্ণিমারই চাঁদ, কিংবা কৃষ্ণপক্ষ, নির্ণয় করা যায় না।
যে খাত আমরা খনন করেছিলাম একদা, তার দু’পাশ ভেঙে এসেছে বহুকাল,
জানি না সেখানে এখন বহে যাচ্ছে ধবল ধাত্রীর দুধ, নাকি সেই নহরে
বিষ ঢালবার জন্যে ফণা তুলে আছে সাপ; আমার রচনাসমূহের বাইরে এখন
শেয়ালের শব্দই কি আমরা শুনছি কিংবা সিংহের ডাক। বস্তুত আমাদের
প্রত্যেকের বুকে আজ পেরেক প্রোথিত, করতলে বমি, ঘুণকাটা নষ্ট গুঁড়ো
কাঁধের ওপরে, রক্তে ঢং ঢং; কিন্তু এও সত্য, হাতে আমাদের পাখি –
আমাদের প্রত্যেকের হাতে আজো পাখি – বাংলার শোলায় তৈরি;
চাই একটি বীজমন্ত্র; তাহলেই প্রাণ পাবে, উড়ে যাবে নীলকণ্ঠ; আমরা তো
তারই অপেক্ষায় বুকচেরা আকাশের নিচে ক্রমাগত নিঃশব্দে 888sport free betয় বাড়ছি।
আমার ভেতরে আর এই দুঃস্বপ্ন ভোরে নিরন্তর জেগে উঠছে এই আহ্বান :
এসো, এই মাটি ছুঁয়ে দ্যাখো, ছুঁয়ে দ্যাখো ক্রমাগত ধূসরতা বালিগ্রাস করা
এই মাটির ভেতর থেকে উদ্গত চারা যার সম্প্রতি সবুজ ফলা
জন্মেই হয়ে গেছে বিবর্ণ হলুদ। একবার আমরা ছুঁয়ে দেখি শিশুটির প্লীহা,
যুবকের বুকের পাঁজর, যুবতীর হাতের আঙুল, বৃদ্ধের চোখের ছানি,
জননীর দুগ্ধহীন স্তন, একবার ছুঁয়ে দেখি গ্রামত্যাগী কংকালের মিছিলের হাড়।
অবিরাম ক্রমাগত দিবা পরে দিন আর রাত্রি পরে রাত এইসব ছুঁয়ে ছুঁয়ে
আমরা এক অন্ধকারে স্থাপিত এখন। চারদিকে সব বাড়িঘর বসে গ্যাছে
যেন রগ কেটে দেয়া বিদ্যার্থী তরুণ; উড়ছে ওই অক্ষরসমূহ শিশুশিক্ষার –
যেন ত্রসরেণু; ঘাসের বীজ পাগলের মতো উপড়ে তুলে দাঁতে কাটছে
আদমের বংশধর যেনবা জন্তুরা; সজল পায়ের ছাপ একদা ধরতো যার গলুই
সেই নৌকোটি এখন আদিগন্ত বালুচরে প্রোথিত প্রকৃতপক্ষে নিমজ্জিত
এখন মুসার সম্প্রদায় লোহিত সাগরে। অবিরাম ক্রমাগত দিবা পরে দিন
আর রাত্রি পরে রাত আমি এইসব দেখে দেখে দেখে দেখে অন্ধ এখন।
এইখানে এখন কান পাতলেই শুনি, কিভাবে বাতাস আজ কেমন সঙ্গীত
করে বহে যাচ্ছে বুনো ঘন বাঁশবন দিয়ে অদূরেই লাশকাটা ঘর অভিমুখে –
যেনবা রবীন্দ্রনাথ বর্তমানে শ্মশান-চণ্ডাল; কিভাবে বাংলার এই বর্তমান
রাজধানী 888sport appর স্কোয়ারে গণপ্রতিনিধিগণ শব্দের তাঁতে বস্ত্র বুনে চলেছেন –
যেনবা উলঙ্গ রাজার জামা; সংসদ ভবনে ওদের করতালি যেন এক
সদ্যোজাত শিশুর পাঁজরের হাড় কড়কড় শব্দে ভেঙে যাচ্ছে অবিরাম।
এই শব্দ, এই শোক, এই বিচ্ছুরণ ও বিভা এবং চন্দ্রিমার ভেতরে 888sport slot game
কিম্বা অমাবস্যার কার্নিশ থেকে ঝুলে পড়া অথবা ইস্পাতেরই তণ্ডুল,
এ সকল এবং এ জাতীয় এবং এক বাজপড়া বৃক্ষের ডালে শুক ও সারি,
আকাশে ভাসমান মঙ্গার শানকি ও ইস্টিশানের প্ল্যাটফরমে ভিকিরি ধর্ষণ,
এসো জামগাছের তলায় যেখানে পিতৃবন্ধুরা গ্রীষ্মের তপ্ত হাওয়ায় কাৎ
তাদের কাঁঠাল কাঠের চেয়ারে ও হাওয়া করছে হাতপাখায়, হা বালক,
তুমি তো জানতেই তারা একদা ছিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং এখন
তারা শনির হাটে সাপের বিষের শেকড় বেচতে ব্যস্ত মাত্র বিশ পয়সায়।
বালক, একদিন তুমি কবি হবে এবং দৃষ্টিপাতমাত্র বুঝে যাবে তুমি, যে,
আমি নিহত হতে দেখেছি আমারই যুক্তিক্রম ও উপমা তুলনার সঙ্গতি;
আমি কালির বদলে ব্যবহার করেছি আমার আঙুলকাটা রক্ত এবং কলম
আমাকে দিয়েছে বাল্যকালের সেই ভৌতিক বাঁশবন যার ভেতর দিয়ে
অনবরত এখনো চলাচল করে শ্রীকান্তের সঙ্গে হাত ধরে পাগলা গহর।
বালক, যে-গোলাপ পড়ে যায় তাকে তুলে নিতে নেই, কিন্তু যে ঘৃণা –
তাকে বহন করতে হয় অক্ষরে অক্ষরে বাক্যে বাক্যে প্রতিটি পদ্যেই,
যে-ক্রোধ আমাকে নির্মাণ করেছে প্রতিমারই প্রতিভায় এক মৃৎ888sport live chatী –
বালক, সেও তোমাকে নির্মাণ করবে মাঠ থেকে কুড়োনো খড়ে ও
বেশ্যালয়ের চৌকাঠের মাটিতে – কেননা পবিত্রতার জন্যেই প্রয়োজন
পাপ এবং ক্লেদ, পতন এবং মূর্ছা – র কিন্তু চোখের জলেও যাবে না
ধুয়ে বা বিসর্জনেও তা যমুনায় ঠুকরে খাবে না ইলিশ – আমাদের সেই
বিখ্যাত ইলিশ। তুমি রন্ধন করবে ক্রোধের সম্ভারে স্বাদু ব্যঞ্জন এবং
ইস্পাতও তোমার তাপে হবে আমনের মতো সুসিদ্ধ, দেবে স্বাস্থ্য,
দেবে কান্তি – যদি দেয় – যদি – সেই প্রত্যাশার ভেতরেই পূর্ণিমাসকল
আমাদের প্রান্তরে পড়বে আছড়ে, স্বর্গ থেকে উবুড় হয়ে পড়বে ভাণ্ড,
ভেসে যাবে জনপদ এবং স্নান করে উঠবে মানুষ, নিঃশেষে ধুয়ে যাবে
মুখের সব কালি, দাঁতের সব ময়লা ও চোখের সব পিঁচুটি। বালক,
তুমি কবি হবে একদিন, আমার শোকের পত্রিকায় স্বাগত তুমি লিখবে ॥
১৭ই অগ্রহায়ণ ১৪১১

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.