888sport app download apk latest version : আশফাক স্বপন
আনিসুজ্জামানের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে-প্রজন্ম জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে অংশ নিয়েছিল, তার মূল্যবোধকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছিল, সেটি আরো একজন সহযোদ্ধা ও আপনজন হারাল। আমাদের স্বাধীনতার চারটি মূল স্তম্ভ – গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতন্ত্র – আনিসের মতো আর কেউ অমন অনড় দৃঢ়তার সঙ্গে গ্রহণ করেছে, এবং নিজেই তার প্রতীক হয়ে উঠেছে, তেমন লোকের 888sport free bet অঙ্গুলিমেয়।
সেই ১৯৫৭ সালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সময় থেকে আনিস আর আমি বন্ধু, সহকর্মী।
পুরনো কলাভবনে শিক্ষকদের কমনরুমে সেই প্রথম আলাপ। তখন সে মিতভাষী লাজুক তরুণ, বিনয় আর ভদ্রতার আড়ালে তার অসামান্য বুদ্ধি আর বৈদগ্ধ্য লুকিয়ে রাখে।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক – আমরা যারা তাঁকে চিনতাম তাদের সবার কাছে তিনি ‘স্যার’, তাঁর মাধ্যমেই আমাদের যোগাযোগ। তিনি বাকি জীবন আমাদের গুরু ছিলেন। স্যারের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। বিদ্যাচর্চার নানান শাখা থেকে, বা নানান পেশার থেকে যাদের তিনি তাঁর মতো উদার আলোকিত মুক্তবুদ্ধিতে বিশ্বাসী বলে মনে করতেন, তিনি তাদের একত্র করতে পারতেন।
স্যার সবসময় আনিসকে আমাদের শিক্ষক-গবেষক সমাজের রত্ন মনে করতেন। আত্মপ্রচারের ব্যাপারে আনিসের সংকোচ তার গবেষণার গভীর মেধার বহিঃপ্রকাশে অন্তরায় ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার লেখা বা বক্তৃতার মাধ্যমে তার নিবিড় গবেষণার অসামান্য ক্ষমতা, তার সৃষ্টিশীল মন, তার প্রকাশনার ব্যাপকতা, তার প্রকাশভঙ্গির নির্মেদ মাধুর্য এবং তার আত্মবিনয়ী রসবোধ আর চাপা থাকেনি।
তার গবেষণাকর্মে অর্জনের মাপকাঠি হিসেবে 888sport appsের বাইরে, বিশেষ করে ভারতের বিদ্বৎসমাজে তার উচ্চাসন উল্লেখ্য। ভারতে নানা সম্মাননার মাধ্যমে তার কাজ ব্যাপক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এর মধ্যে ভারতের প্রেসিডেন্টের স্বহস্তে প্রদত্ত ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি অন্যতম।
আনিস তো শুধু স্বনামধন্য গবেষক ছিল না। জাত শিক্ষক ছিল সে। সারাজীবন তাই করে গেছে। চট্টগ্রাম ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করেছে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের এই বৌদ্ধিক অভিভাবক, পথপ্রদর্শক, চিন্তক, বন্ধুর মোহে আজ অবধি মুগ্ধ।
জীবনের শেষদিকে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ওর জাতীয় অধ্যাপক হওয়া, 888sport cricket BPL rateে পদক আর স্বাধীনতা 888sport app download bd পাওয়া তাই অত্যন্ত সংগত।
আমাদের সমাজে আনিসুজ্জামানের অবদান তার বিদ্যাচর্চার পরিধির বহু বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত। তার গবেষণালব্ধ নতুন দিশা যে বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি তৈরি করেছে সেটা আমাদের জাতীয় পরিচয় সৃজনে ও তার উপলব্ধিতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে।
জাতীয় পরিচয়ের বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ফলে আনিস অবধারিতভাবে ১৯৫২-র ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬০-এর দশকে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের সপক্ষে সংগ্রামসহ আমাদের প্রজন্মের সব নিয়ামক রাজনৈতিক সংগ্রামগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।
তার মত আর রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার ফলে এক পর্যায়ে সে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধিকারের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের অন্তিম পর্যায়ে আনিসুজ্জামান সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। ১৯৭১ সালে যে প্রবাসী সরকার স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, তার সঙ্গে আনিস সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার তীক্ষ্ণধী মনন আর বাক্সময় লেখনী ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন, তাই জনসমক্ষে তাঁর নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সময় আনিসুজ্জামানের শরণ নিয়েছেন।
একটি পরিকল্পনা বোর্ড প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য যখন আমি জড়িত হয়ে পড়ি, কালবিলম্ব না করে আমরা অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন আর অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে আনিসুজ্জামানকেও দলভুক্ত করি। উদ্দেশ্য – স্বাধীন 888sport appsের পরিকল্পনা নীতির কর্মসূচিতে যেন সে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। এই পদে থেকে আনিস 888sport appsের অভ্যুদয় সম্বন্ধে ভারতের বিদ্বৎসমাজকে অবহিত করার উদ্দেশ্যে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছে।
888sport appsের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বঙ্গবন্ধু যখন কামাল হোসেনকে আইনমন্ত্রী হিসেবে স্বাধীন 888sport appsের সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব দিলেন, তক্ষুনি কামাল আনিসের সাহায্য চাইল। ততদিনে আনিস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেছে। আনিসের ওপর সংবিধানের বাংলা খসড়া রচনার মূল ভূমিকা গ্রহণের দায়িত্ব পড়ল।
আনিস শুধু 888sport app download apk latest versionের কাজে অপরিহার্য ভূমিকাই পালন করেনি, খসড়া প্রণয়ন কমিটির আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছে, তার নিজের গভীর বিশ্বাসের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে।
অবশেষে বঙ্গবন্ধু আনিসকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু আনিস বঙ্গবন্ধুকে বোঝাতে সমর্থ হয় যে, ওই দুর্দিনে স্বাধীন 888sport appsে পণ্ডিত গবেষকের বড্ড প্রয়োজন, ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেই সে দেশের সবচাইতে বেশি কাজে আসবে।
জীবনের বাকি সময় চট্টগ্রাম ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে আনিস শিক্ষকতা ও গবেষণায় সম্পূর্ণ নিবেদিত ছিল।
এই সময়ে, বিশেষ করে সেনানিবাসের শাসনের অন্ধকার দিনগুলোতে, আমাদের সংবিধানে যে-মূল্যবোধের অঙ্গীকার নথিবদ্ধ করায় সে সহায়তা করেছিল, তার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় সে আজীবন দায়বদ্ধ ছিল।
ফলে গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধর্মনিরপেক্ষতার জাতীয় অঙ্গীকার – যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলমন্ত্র – তার থেকে বিচ্যুতির বিরুদ্ধে নানা সংগ্রামে সে জড়িয়ে পড়ে। সেজন্যে ১৯৭১ সালের গণহত্যার দালালদের বিচারের আন্দোলনে সে জাহানারা ইমামের সঙ্গে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করে।
নীতি পর্যালোচনা মতবিনিময় কেন্দ্রের (Center for Policy Dialogue বা CPD) গোড়ার বছরগুলোতে, ১৯৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমি আনিসকে আমাদের বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্য হতে রাজি করাই। জীবনের শেষ ২৫ বছর আমাদের সংবিধানের মূলনীতি প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে CPD-র নানান কার্যক্রমে আনিস একজন সক্রিয়, মূল্যবান সহকর্মী ছিল।
আমাদের নানান প্রচেষ্টায় আনিসের অনুপ্রেরণা ছিল অমূল্য। আমাদের মাঝে ওর উপস্থিতিই নিশ্চিত করত, আমরা যেন আমাদের মৌলিক মূল্যবোধ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত না হই।
বড় বড় পণ্ডিত বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব হলেই যে বড় মানুষ হবে, আত্মম্ভরিতা ও আত্মাভিমানমুক্ত হবে, তা তো নয়। আনিস কিন্তু বরাবর অবারিতদ্বার ছিল, যে-ই তার সময় বা সাহায্য চেয়েছে, কখনো খালি হাতে ফেরেনি। এই যে তার হৃদয়ের বিশালতা, তার ফলে জীবনের শেষ কয়েকটা বছর স্বাস্থ্যের অবনতি সত্ত্বেও সে যখনই পারত বড় বড় অনুষ্ঠানে যোগ দিত।
এই বিশাল পণ্ডিত, খাঁটি দেশপ্রেমিক আর ক্ষণজন্মা মানুষটির বিদায়ে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এমন মানুষের দেখা আর কখনো মিলবে কি? ওকে বিদায় জানানোর মতো উপযুক্ত ভাষা আমার সাধ্যাতীত, তাই শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের হোরেশিওর সংলাপের থেকে একটুখানি উদ্ধৃত করছি :
বিদায়, প্রিয় রাজপুত্র
উড়ন্ত দেবদূতের ঝাঁকের সংগীতে সূচনা ঘটুক তোমার চিরবিশ্রামের।
(মূল পাঠ : Good night sweet prince/ And flights of angels sing thee to thy rest!)


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.