
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
সৈয়দ ইকবালের কাজে অ্যানালিটিক্যাল কিউবিজমের প্রভাব স্পষ্ট। তিনি এই পদ্ধতিতে ভলিউম বিশদ করেছেন, একই সঙ্গে ভলিউম যুক্ত করেছেন শক্তভাবে ছবির ফ্ল্যাট জমিনের সঙ্গে। এই পদ্ধতি তিনি ধার করেছেন তিন বিখ্যাত ফরাসির কাছ থেকে : পিকাসো, ব্র্যাক এবং নেজের থেকে। পরে তিনি নিজের মতো এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। অবজেক্টের কন্টুর আস্তে আস্তে লয় পায়, অবজেক্টের ভেতরকার স্পেস তখন চারপাশের স্পেসের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। ডিজাইন ও ড্রইংয়ের মাধ্যমে ইকবাল একদিকে রং স্পন্দমান করেছেন, অন্যদিকে রংকে বিশদ করেছেন : এর ফলে রং উদ্ভাসিত হয়েছে।
ইকবাল কিউবিজমে যোগ দিয়েছেন ওই তিন বিখ্যাত ফরাসির অনুসরণে নয়, তিনি তাঁদের প্রভাব ব্যবহার করেছেন ফিউচারিজমে পৌঁছার জন্য। অবজেক্টে বিশ্লেষণ করলে দেখানো যায়, যা ইকবাল করেছেন, অবজেক্টের নড়াচড়া। তিনি এইভাবে দেখিয়েছেন পিক্টোরিয়ান ও ত্রি-আয়তনিক স্পেসের মধ্যকার পার্থক্য। তাঁর ভোকাবুলারির ভিত্তি সরলরেখা ও বঙ্কিমরেখা। তাঁর বঙ্কিমতার ভিত্তি ভালো লাইনের স্কেচ। ইকবাল তাঁর গোলাকৃতি মডেল করেছেন : নীল, লাল কিংবা সবুজ দিয়ে। এভাবে রঙের ব্যালান্স করেছেন, সব রঙে একই প্রগাঢ়তা। ভলিউমের বোধ একটা স্পেসে ঠাসা, চোখে বড় আকারের সারফেস উপস্থাপিত করেছেন এভাবে তিনি। অবজেক্টস কিংবা তার বিভিন্ন অংশ, দৃশ্যমানতার মধ্যে স্পষ্ট, অংশগুলির অদলবদল সম্ভব, কিংবা সারফেস গভীরতার মধ্যে দিয়ে ফিরে ফিরে আসে।
ইকবালের বিশ্লেষণের পদ্ধতি সরল। তিনি খন্ড-খন্ড করেন মোটা দাগে, অবজেক্টলি এবং ভলিউম ছড়িয়ে দেন ক্যানভাসজুড়ে। এখান থেকে তিনি পৌঁছে যান সরলতায় এবং সরলতার মধ্যে ছড়িয়ে দেন চেনা অবজেক্টগুলি : এভাবে তৈরি করেন অ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং। ইকবাল অ্যানালিটিক্যাল কিউবিজমকে তাঁর যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেন, অর্থাৎ অ্যাবস্ট্রাকশনে। তিনি নেহাত ফ্ল্যাটনেসে পৌঁছে যান কিংবা মনড্রিয়ানের মধ্যে ফ্ল্যাটনেসে উপনীত হন, কখনো কখনো কোলাজ মনে হয় তাঁকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে। একটা ভাস্কর্যের মায়াভাস তাঁর কাজে থেকেই যায়।
তিনি অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টে পৌঁছেছেন, আবার অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর একটা ঝোঁক আছে ওজন এবং ডেকোরেটিভ ব্যালান্সের দিকে, এখান থেকে তিনি ছবির মার্জিনে জোর দিয়েছেন। তাঁর ক্যানভাসে রিপ্রেজেন্টেশনাল ইমেজ নন-রিপ্রেজেন্টেশনাল হয়ে ওঠে এবং কখনো কখনো নন-রিপ্রেজেন্টেশনাল ইমেজ রিপ্রেজেন্টেশনাল হয়ে ওঠে।
একধরনের 888sport live chatকাজ শ্রেষ্ঠ কিংবা নিকৃষ্ট বলার অর্থ অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে বিচার করা। 888sport live chatের সমগ্র ইতিহাস কি অগ্রাধিকারের ইতিহাস? বোধহয় নয়। নান্দনিক অভিজ্ঞতা পূর্ব থেকে নির্ধারিত হলে, নান্দনিকতা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ 888sport live chatের মধ্যে প্রবেশ করতে হলে নান্দনিকতার মধ্যে দিয়েই প্রবেশ করতে হয়।
ইকবালের কাজ উচ্চাভিলাষী, তাঁর পেইন্টিং আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে নিয়ে যায়। এই নিয়ে যাওয়ার অর্থ 888sport live chatে কী সম্ভব এবং কী সম্ভব নয় : এই বোধ তৈরি করে। পিকাসোর কিছু কাজ কিংবা মনড্রিয়ানের কিছু কাজ যদি 888sport live chat হিসেবে চিহ্নিত করা যায় তাহলে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে ইকবালের কাজও 888sport live chat। বড়মাপের 888sport live chatীরা যেমন 888sport live chat সম্বন্ধে নির্দিষ্ট বোধ ভেঙে ফেলেন, তেমনি ইকবালও 888sport live chat সম্বন্ধে নির্দিষ্ট বোধ ভেঙে ফেলেছেন। এই ভাঙার ফলে বড়মাপের 888sport live chat তৈরি হয়েছে কি না : এটি একটি স্বতন্ত্র প্রশ্ন। ভাঙাচোরা অস্তিত্ব থেকেও সুন্দর তৈরি হয়। রাইনের মারিয়া রিলকের অভিমত তো তাই : সুন্দর কিছুই না শুধু আতঙ্কের সূত্রপাত, যে-আতঙ্ক আমরা কেবল সহ্য করতে পারি। ইকবালের কাজ একদিকে যেমন সুন্দর ও আতঙ্কের সূত্রপাত, অন্যদিকে তেমন কেবল এই আতঙ্ক-উত্থিত সুন্দর আমরা সহ্য করতে পারি। রঙের বিভিন্ন অন্তরঙ্গ ব্যবহার আমরা তাঁর কাছ থেকে সহ্য করতে শিখেছি।
প্রশ্ন হচ্ছে : তাঁর ইমেজ আমাদের কোথায় নিয়ে যায়? কিংবা অন্যভাবে বলা যায়, কোন মহিলা, কোন রাধা, কোন প্রেমিকার হৃদয়ে কী আছে? জবাব হচ্ছে, কোথাও কিছু নেই, কিংবা কিছুই নেই। না-থাকা কিংবা থাকা কি ভালো অথবা মন্দ। ইমেজ অন্য কিছু হয় : রাধা, মহিলা, প্রেমিকা অন্য কিছুতে বদলে যায়। এই বদলে যাওয়ার দরুন তাঁর কিছু দরকার নেই। ইকবালের দরকার শুধু রং, হাত ও কবজিতে রং ছড়াবার শক্তি। এই শক্তির দিকে তাঁর কেবল চেয়ে থাকা। এই তাকানো হচ্ছে ইকবালের পেইন্টিং অথবা পেইন্টিং-উদ্ভূত আর্টিকুলেশন। এই আর্টিকুলেশন হচ্ছে তাঁর অভ্যন্তরীণ স্টাইলিস্টিক পরিবৃদ্ধি।
ইকবাল ফরাসি ও আমেরিকান ম্যাজর আর্ট আত্মস্থ করে তাঁর নিজের পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তিনি দুদিকের প্রভাব ও উদাহরণ জীবন্ত করে রেখেছেন তাঁর কাজে। আর্টিস্টিক সংস্কৃতি তিনি অর্জন করেছেন, বিশেষ করে আমেরিকান ম্যাজর আর্ট। আমেরিকান আর্ট-প্রভাবিত ইকবালের কাজ দেখে চমকে যেতে হয়, স্বতঃস্ফূর্ততার ওপর নির্ভর করে তিনি প্রতিক্রিয়া তৈরি করেন, কিংবা সারফেস তিনি উপস্থাপিত করেন পিক্টোরিয়াল ঘটনা ছাড়া। এসব কাজের ঝোঁক অ্যাবস্ট্রাক্ট ও এক্সপ্রেশনিজম : ইকবাল জার্মান কিংবা রাশান এক্সপ্রেশনিজমের অনেক কিছু ধার করে তাঁর নিজস্ব এক্সপ্রেশনিজম তৈরি করেছেন। তাঁর নিজস্বতার ভিত্তি কিউবিজম সম্বন্ধে তাঁর অস্থিরতা এবং সাধারণভাবে ফরাসিপনা সম্বন্ধে তাঁর অস্থিরতা ভেবে দেখার মতো। যাঁরা 888sport appsে এবং আমেরিকায় কাজ করেছেন, তাঁরা সবাই ফরাসিদের এবং আমেরিকানদের এবং জাপানিদের কাছ থেকে ধার করেছেন স্টাইল। 888sport appsে এই স্টাইল শক্তিশালী করেছেন আমিনুল এবং কিবরিয়া : এই স্টাইলের মিশ্রণ থেকে শিখেছেন ইকবাল, দেখেছেন আমেরিকানরা এই স্টাইল কীভাবে ব্যবহার করেন।
ইকবাল যা বলতে চান কিংবা আঁকতে চান, সবই নিয়মিতভাবে, ফরাসিদের অনুসরণে অথবা আমেরিকানদের অনুসরণে অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট তৈরি করেন। এর অর্থ এই নয় যে, ইকবালের কাজ প্রোগ্রাম্যাটিক, তিনি কখনো কখনো তাঁর কাজ সম্বন্ধে বিরল মুহূর্তে স্টেটমেন্ট করেন, কিন্তু কোনো ম্যানিফেস্টো নয়, কিংবা তিনি দলপতি নন, কিংবা বিবৃতিদাতা নন। তিনি ছবি অাঁকতে গিয়ে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন, সেসবের জবাব তিনি অনবরত খুঁজে বের করেন। তিনি অ্যাবস্ট্রাক্ট এবং প্রায়-অ্যাবস্ট্রাক্ট প্রকাশের নতুন সম্ভাবনা পরিব্রাজনা করেন, অনেকটা ক্লির মতো, অনেকটা গোর্কির মতো, অনেকটা ডি-কুনিগের মতো।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.