মা বলেছিলেন তাঁর সঙ্গে গিয়ে (আরাকাতাকায়) বাড়িটা বিক্রি করে আসতে। সেদিনই ভোরে মা এসে পৌঁছেছেন দূর সেই শহরটা থেকে, যেখানে পরিবারটা থাকে, আর তাঁর কোনো আন্দাজই ছিলো না আমায় কী ক’রে খুঁজে পাবেন। চেনাজানা লোকেদের শুধিয়ে বেড়ালেন মা, আর তাঁকে জানানো হলো যে, আমায় পাওয়া যাবে হয় লিব্রেরিয়া মুন্দোয় আর নয়তো তার আশপাশের কোনো কফিখানায়। যে তাঁকে এ-সব বলেছিলো সে তাঁকে আবার সাবধানও ক’রে দিয়েছিলো : ‘হুঁশিয়ার কিন্তু, কারণ এদের সব কটাই বদ্ধ পাগল।’ মা এসে পৌঁছুলেন কাঁটায়-কাঁটায় বারোটায়। তাঁর ওই হালকা পায়ে বইপত্তর ঠাশা টেবিলগুলোর মধ্য দিয়ে পথ ক’রে নিয়ে ঠিক আমার সামনে এসে থামলেন। সরাসরি আমার চোখে তাকিয়ে আছেন, মুখে সেই হারানো সুদিনের দুষ্টু-দুষ্টু হাসি; আমি কিছু করে ওঠবার আগেই বললেন, ‘আমি তোর মা।’
কিছু-একটা যেন বদলে গিয়েছে তাঁর মধ্যে আর তাইতেই আমি প্রথম দেখে তাঁকে চিনতে পারিনি। তাঁর বয়েস পঁয়তাল্লিশ। এগারোজন সন্তানের জন্ম যোগ করলে দাঁড়ায়, প্রায় দশ বছর কেটেছে গর্ভধারণ ক’রে, আর অন্তত আরো দশ বছর কেটেছে তাদের বুকের দুধ খাইয়ে। যথাসময়েরআগেই চুল গেছে সাদা হয়ে, তাঁর প্রথম বাইফোকালের পেছনে চোখ দুটোকে দেখাচ্ছে যেন আরো বড়ো আরো বিস্ফারিত। পরনে, তাঁর মায়ের মৃত্যুর জন্যে, যথাযথ-গম্ভীর শোকপালনের পোশাক। কিন্তু এখনও তাঁর মধ্যে বেঁচে আছে বিয়ের ছবির সময়কার রোমক সৌন্দর্য, এখন হেমন্তের হাওয়ায় সম্ভ্রমই জাগায়। আর, কোনো কিছুর আগে, এমনকী আমায় বুকে জড়িয়ে ধরবারও আগে, তিনি তাঁর অভ্যাসমতো আনুষ্ঠানিক ধরনে বললেন, ‘বাড়িটা বিক্রি করবার জন্যে, দোহাই, তুই আমার সঙ্গে চল।’
… আচ্ছা, এমন যে-একটা বইয়ের শুরু, সেটি সত্যি-সত্যি কি বই হতে পারে? বানানো কোনো গল্প-888sport alternative link, না-কি অন্য কোনো ধরনের কাহনের সূত্রপাত, যাতে বাস্তবজীবনের বিকল্প – কিংবা সমান্তর-হিসেবেই দাঁড় করানো হচ্ছে অন্য-কোনো ধরনের কাহিনী? কীসের সূত্রপাত? জীবন888sport sign up bonusর? সমাজবাস্তবের? ইতিহাসের? কিন্তু কারু জীবন আবার ইতিহাস, পরিবেশ, সমাজ-সংসার বাদ দিয়ে হয় না-কি? গল্প-888sport alternative linkই কি হয়? 888sport sign up bonusর পটে জীবনের কথা লিখে যায় কোন নাছোড় অদৃশ্য একগুঁয়ে কলম? অন্তত গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের আপন কথা কিন্তু শুধু তাঁর নিজেরই কাহিনী নয়; দেশকাল, ইতিহাস, অনেক মানুষজন, হাজার দিনের যুদ্ধ (১৮৯৯-১৯০২), লা ভিওলেন্সিয়া (যার সূত্রপাত ৯ এপ্রিল ১৯৪৮), কোলোম্বিয়ার ক্যারিবিয়ানের তীর থেকে রিও আচা, সিয়েনাগা, কার্তাহেনা, বাররামকিয়া, বোগোতা – সবকিছুরই কথা, কত ঘটনা-দুর্ঘটনা কাকতালীয় সমাপতনের কথা। যেমন হয় তাঁর বাস্তবের কুহকে ভরা গল্প-888sport alternative linkে, হুবহু তারই মতো – চমৎকার, আশ্চর্য, সাবলীল, কৌতুকস্ফুরিত, (রক্তাপ্লুত বা ভয়াবহও), – লৌকিক থেকে অলৌকিকে পৌঁছে যাবার অমোঘ বৃত্তান্ত।
জন্মেছিলেন ৬ মার্চ, ১৯২৭-এ। আর এই বই শেষ হচ্ছে ১৯৫৫-য়, যখন তাঁর বয়েস সাতাশ-আটাশ, জীবনে প্রথমবার যখন তাঁর প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে ইউরোপে যাচ্ছেন। নিজেরই কথা, কিন্তু আমরা প্রত্যেকে কতটা শুধু নিজেই, আর কতটা সবকিছু জড়িয়ে মড়িয়ে মিলেমিশে সময় আর সংসারের তৈরি? সাধারণত তিনি যেটা করেন না, সেই রকম একটা বৈশিষ্ট্যও আছে বটে প্রায় পাঁচশো পাতার এই বইয়ে – এক, দুই, তিন … নম্বর দিয়ে-দিয়ে পরিচ্ছেদ ভাগ করা। তার মানে কিন্তু এটা নয় যে, সময় একটা ‘ক’ বিন্দু থেকে শুরু হয়ে অনুস্বার বিসর্গ চন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে গেছে, কোনো সরলরেখার সোজা টানের মতো। সময় তো বরং একটা গোলকধাঁধাই, অন্তত 888sport sign up bonus যে-সময়টাকে হাতড়াতে চায়।
সেই প্রথম পরিচ্ছেদেই মার সঙ্গে বারে বারে তাঁর একই কথা : মা বলেন তোর বাবাকে গিয়ে কী বলবো, তুই কি সত্যিই আর পড়বি না – আর গাবিতো বলে পড়াশোনা ওই শিকেয় উঠলো, আমি লিখতে চাই, আমি লেখক হবো। প্রায় গানের ধুয়োর মতোই বারে-বারে ঘুরে-ফিরে এসেছে দুজনের এই কথোপকথন, এই দ্বৈতালাপ, কৌতুকে ভরা, একরোখা, অঙ্গীকারে দৃপ্ত। হয়ত তিনি যে লেখক হতে চান, এই একগুঁয়ে জেদ আর ঘোষণা ছাড়া লিভিং টু টেল দা টেল (বির্বি র্পা কোর্ন্তালা) শুরুই হতে পারত না।
‘যা কেউ যেমনভাবে বেঁচেছিল, জীবন তা নয়।
বরং যা-কিছু কেউ মনে ক’রে রাখে
এবং কেমনভাবে মনে রাখে সে যখন গুনে খুলে বলে’
সেটাই তো জীবন, কিংবা জীবন888sport sign up bonusর গুপ্তভাণ্ডার, বলনরীতি, যেমন বলা আছে বইয়ের একেবারে গোড়াতেই। যেমনভাবে মনে পড়েছে সব, ঠিক ধারাবাহিক সরলরেখায় তো আর মনে পড়েনি, পরিবার (এগারোজন সহোদর ভাই-বোন ছাড়াও বাবার তো বিবাহ-বহির্ভূত আরো ছেলেমেয়ে ছিল, মা যাদের বুকে ক’রে আপন ক’রে নিয়েছেন), স্কুল-কলেজ, কাজ-লোকজন, পুঁথিপত্র, দেশী বই-বিদেশী বই, গান (বোলেরো থেকে ধ্রুপদী), live chat 888sport (সত্যি বলতে কোলোম্বিয়ার প্রথম সিনেমার কাগজও তো তাঁরই সৃষ্টি), সবকিছুই আছে। আর আছে বিরাট বিপুল অবিশ্রাম এক সংঘর্ষ : বেঁচে থাকার বটে, তবে লেখক হিসেবে বেঁচে থাকার। খবরের কাগজে কাজ, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে গুলতানি, অনেক মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, কঠোর দারিদ্র্যের মধ্যে নাকাল হ’তে হ’তেও লক্ষ্যভ্রষ্ট না-হওয়ার কঠোরতর সংগ্রাম – সবকিছু। দারিদ্র্য মোটেই মহান করে না, শুধু জেদ বাড়িয়ে দিয়ে যায়, একগুঁয়ে করে দিয়ে যায়। আর তারই মধ্যে আমরা পেয়ে যাই তাঁর গল্প-888sport alternative linkের মালমশলা, ঘটনার ঘনঘটা, ব্যানানা কম্পানির ভয়াবহ আগপাশতলা, চরিত্রের মিছিল, যেখানে রোজকার শরীরী কাজ-কারবারের মধ্যে থেকেই উঁকিঝুঁকি মারে অশরীরীরা, ভূত, পেত্নি, কুহক, ইন্দ্রজাল, পরাবাস্তব, বাস্তবকে ছাপিয়ে দূরে সরে গিয়ে নয়, বাস্তবের মধ্যেই। যে দুঃসহ বাস্তবের মধ্যে কেউ বেঁচে থাকে তারই মধ্যে ইচ্ছে করে সচেতনভাবে বিকল্প কোনো বাস্তবকে সৃষ্টি করে নিতে চায় কেউ – নিছক তত্ত্ব বা চিন্তা হিসেবে নয়, বরং শরীরী কোনো ফ্যান্টাসির মধ্যেই, শুধু লক্ষ রাখতে হবে কেমন করে কীভাবে সাজিয়ে কোন ভঙ্গিতে বলা হচ্ছে। লা কাসা (ভবন) কেমন করে, কবে, সিয়েন আনিশোস দে সোলেদাদ (একশো বছরের নিঃসঙ্গতা না-কি নিঃসঙ্গতার একশো বছর) হয়ে উঠবে সেটি এখন জানা কাহনই। কিন্তু এ-বই লেখার আগে জানা ছিলো না কেমন করে অনবরত কাটাকুটি, ঘষামাজা, মেরামত ক’রে ক’রে তৈরি হয়ে উঠবে পাতার ঝড়, দুঃসময় বা অশুভ লগ্ন, বড়ো মায়ের অন্ত্যেষ্টি বা কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না-র মতো বইগুলো। ক-দিন ধরে, মায়ের কথায়, লিখবার আগে অপেক্ষা করতে হবে একটি পূর্বঘোষিত মৃত্যুর কালপঞ্জি-র (বেলাল চৌধুরীর তর্জমায় যা মৃত্যুর কড়া নাড়া) জন্য? মা-বাবার প্রেমকে নিয়ে গ’ড়ে উঠবে একদিন কলেরার সময়ে প্রেম, কিংবা দাদু কীভাবে হ’য়ে উঠবেন কলোনেল আউরেলিয়ামো বুয়োনদিয়া চরিত্রটির ছাঁচ বা নির্মোক। এরই মধ্যে এক নিশ্বাসে লেখা হয়ে যায় ‘মঙ্গলবারের সিয়েস্তা’র মতো আশ্চর্য গল্প, দুবার কলম চালাবার কারসাজি ছাড়াই। যাকে মনে করা হতো কুহকের বাস্তব আর বাস্তবের কুহক, তা-ই উঠে এসেছে সরাসরি জীবন থেকেই, কিন্তু জীবন যে-রকম সে-রকমভাবে নয়, জীবনকে আমরা যে-রকমভাবে মনে রেখে তার কথা শোনাই সে-রকমভাবেই।
আর তাঁর বন্ধুভাগ্য? প্লিনিয়ো আনুলেইয়া মেন্দোসা (যাঁর সঙ্গে তাঁর কথাবার্তাই পেয়ারার গন্ধ বই হ’য়ে বেরিয়েছে), আলবারো সেপেদা সামুদিয়ো, অলফোনসো ফুয়েনমাইয়ের, হেরমান বার্গাস, এমনকী ওই-যে গায়ক রাফায়েল এস্কালোনা – যাঁরা এমনকি জ্যান্ত, সশরীরে, ঢুকে পড়ে তাঁর কথা888sport live footballে, একাধিক বার, কিন্তু তাঁকে যারা কত-শত পুঁথিপত্র লেখালিখিরও হদিশ দেয় সবসময় – তাঁকে পড়ায় ফ্রানৎস কাফকা, জেমস জয়েস, ভার্জিনিয়া উলফ, এবং অবশ্যই উইলিয়াম ফকনার, পড়ায় আলেহো কার্পেন্তিয়ের, হুলিয়ো কোর্তাসার, হোর্হে লুইস বোর্হেসকেও। কতদিন যে তার লেগেছিলো দোন কিহোতি-র মাহাত্ম্য টের পেতে। কী তাঁকে দিয়েছিল গ্রিক নাটক বা আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বা গ্র্যাহাম গ্রিন, এবং অন্য আরো কত-কত বই – সব যেন জরিপ করে দেখানো এখানে।
বই যেমন জীবনকে দেখার বোঝার (কিংবা না-বোঝারও) চোখ বদলে দেয়, তেমনিই দেয় গান বা live chat 888sportও – আর ইতিহাসের রোমহর্ষক সব সংঘটনও, প্রথমে যাদের মনে হয় বুঝি-বা অভাবনীয়ই সে-সব, একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় তেমন অভাবনীয় হয়তো-বা নয়, বরং কোনো ধুরন্ধর বদমাইশের মাথা থেকেই সে-সব বেরিয়েছে। ৯ এপ্রিল শুক্রবার ১৯৪৮-এ প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের চোখের সামনে খুন করা হ’লো সর্বজনপ্রিয় বামপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হোর্হে এলিয়েসের গাইতানকে, আর কোলোম্বিয়ায় আছড়ে পড়লো লা ভিওলেন্সিয়া, হিংসাহিংস্রতাবিভীষিকার দুঃসহ দিনগুলো; নেমে এ’লো সেন্সরশিপের খাঁড়া, হুনতার নির্বিচার নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ষাট-সত্তর হাজার লোকের ‘সগর্জন’ কিন্তু ‘মূক, শব্দহীন’ শোকমিছিলের পরেই। কী তফাৎ রক্ষণশীলদের সঙ্গে উদারনৈতিকদের? না, কে কখন খ্রিষ্টযাগে যায়, তার সময়েই বা তফাৎ। আর গাইতান এই স্বার্থান্বেষীদের কেউ নয় বলেই তাঁর ঘুমের ঘটনা নিরর্গল ক’রে দেয় ভয়ংকর আতঙ্কের দিনকাল।
‘আমার’ জীবন কি শুধুই আমার? আমি – সে কোথায় থাকে, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কোন গূঢ় অন্ধকূপে? সেই ৯ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরবেলায় কাগজের অফিসের দফতর থেকে বেরুতে যাবেন গাবিতো বা ‘জিরাফ’ (তখন এই ছদ্মনামে লিখতেন তাঁর সাময়িকী স্তম্ভ। এমন সময় খোদ সম্পাদকের বিস্ময় ও তিরস্কার: ‘এ-কী, কোথায় যাচ্ছো তুমি, অ্যাঁ?’ ‘লাঞ্চ খেতে যাচ্ছি।’ ‘বোকচন্দরের মতো কথা বোলো না। ওরা যখন এইমাত্র গাইতানকে খুন ক’রে গেল, তখন তুমি কি-না লাঞ্চ খেতে যাবার কথা ভাবতে পারলে?’
অর্থাৎ ক্ষুধা-তৃষ্ণা খাওয়া-দাওয়া সব কি কারু নিজেরই থাকে সবসময় – নিজের শরীরের চাহিদা বা মর্জিমাফিক চলে? অন্তত ৯ এপ্রিলে আমরা গাবিতোর সঙ্গে সঙ্গে জানতে পেরে যাচ্ছি আত্ম-পর ব্যক্তি-সমষ্টির সীমানা সরহদ্দ প্রায়ই বেমক্কা উলটে-পালটে যায়।
গত কয়েকদিন আহার নেই, নিদ্রা নেই, সারাক্ষণ কাজ করেছেন হোর্হে এলিয়েসের গাইতান, তারপর সেই ৯ এপ্রিল শুক্রবারে খবর বেরুলো যে, অবশেষে তাঁর এই কদিনের অহর্নিশ সংগ্রাম সফল হয়েছে, তিনি হেসুস মারিয়া কোর্তেস পোবেদাকে জল্লাদের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছেন, তাঁকে মিথ্যে জড়ানো হয়েছিল সাংবাদিক ইউদোরো গালারসা ওস্সার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। আটটার সময়ে সকালবেলাতেই তিনি এসে পৌঁছেছেন তাঁর আইন দফতরে, আগের রাতটা কেটেছে নির্ঘুম, সওয়াল-জবাব, যুক্তি-তর্ক, সাক্ষী-সাবুদ বিচার ক’রে। পরের কয়েক ঘণ্টায় তাঁর অনেকগুলো অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, বিভিন্ন বিষয়ে নানারকম কাজের সময়সূচি তৈরি হয়ে আছে, কিন্তু তবু দুপুরবেলায় তিনি কোনো দ্বিরুক্তি না-করেই প্লিনিও মেনদোসা নেইরার আমন্ত্রণ নিয়েছেন লাঞ্চ খেতে যাবার (প্লিনিও আপুলেইয়ে মেনদোসার বাবা তিনি), বেলা একটায়। তাঁর ছজন বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মী এসেছিলেন সকালে তাঁর কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানাতে, তাঁর ব্যক্তিগত ডাক্তার পেদ্রো এলিসেও ক্রুস্ সমেত।
তারপর লাঞ্চ খেতে বেরিয়ে, আচমকা, বলা নেই কওয়া নেই, কার বন্দুকের গুলিতে খুন – আর সঙ্গে সঙ্গে ফেটে পড়লো উত্তেজিত জনতার রাগ ক্ষোভ ঘৃণা। ঢ্যাঙা কেউ একজন (কেউ তাকে চেনে না), রাগী জনতার সে কেউ নয়, বরং সব সেই সামলাচ্ছে-তাতাচ্ছে, ছাইরঙের একটা দুর্ধর্ষ দামি নিখুঁত স্যুট পরা, যেন কোনো বিয়ের আসরে যাবে, লোকজনকে উসকে দিচ্ছে ‘তথাকথিত’ আততায়ীকে সেখানেই সাবাড় করে দিতে। আর ‘তাকে’ অর্থাৎ তথাকথিত ওই আততায়ীকে প্রায় সাবাড়ই করে দিলো লোকে, কোতোয়ালির লোক হাসপাতালে নেবার সময়ই সে মারা যাবে – কিছু না-ব’লেই। আর তারপরেই ওই চোস্ত স্যুটপরা নেতাগোছের ওই ঢ্যাঙা লোক অকুস্থল থেকে কোথায় যে মিলিয়ে গেল কেউ জানে না। সে কে, কোত্থেকে এসেছিল, ঠিক জায়গামতোই ওখানে ছিল কীভাবে – এইরকম হাজারো হিংটিংছট প্রশ্নের জবাব কিন্তু কখনো পাওয়া যায়নি।
তখন কুবা থেকে কোলোম্বিয়ার বোগোতায় পড়তে এসেছিল ফিদেল ক্যাস্ট্রো নামে কুবার এক তরুণ যুবক। তারও যদি কিছু হয়, এই ভেবে তাকেও তক্ষুনি লাবানায় ফেরত পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হলো-আর সত্যি বলতে, সে-ই হলো গাবিতোর সঙ্গে ফিদেলের বন্ধুত্বের সূত্রপাত, যেটি তারপরে দিনে-দিনে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হবে।
আর যখন লা ভিওলেন্সিয়া-র নৃশংস রক্তরঞ্জিত কাণ্ড হচ্ছে চারপাশে, তারই মধ্যে, তবু, সব অশান্তি সত্ত্বেও, কিংবা হয়তো সেইজন্যেই, মেরসেদেস বারচার সঙ্গে গাবিতোর প্রেমের আয়োজন চলে, কিন্তু মেরসেদেস সবসময়েই ভারি রহস্যময় হাসি হাসে, সরাসরি প্রেমের কথা বলে না, কেমন যেন দুর্বোধ্য কোনো প্রহেলিকাই ব’লে মনে হয় তাকে। প্রথমবার ইউরোপ যাবার সময়ে – খবরকাগজ থেকেই তাঁকে পাঠানো হচ্ছিলো – তাই মেরসেদেসকে বলতেই হ’লো, যদি তোমার কোনো চিঠি আমি বিদেশে না-পাই তো আর কখনো দেশেই ফিরবো না। মেরসেদেসের চিঠি অবিশ্যি এক হপ্তার মধ্যেই গিয়ে পৌঁছেছিল, আর সেখানেই এই আপনকথার প্রথম খণ্ড শেষ। অর্থাৎ আমরা পরের কোনো খণ্ডে জানতে পাবো, যখন ১৯৮৩-র মার্চ মাসে ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেসও এসেছিলেন নতুন দিল্লিতে, জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর অধিবেশনে যোগ দিতে, তখন কী যে এক দুর্ধর্ষ কাণ্ড ঘটেছিলো। সব সেপাইশান্ত্রি নিরাপত্তারক্ষীর চোখে বেমালুম ধুলো দিয়ে গার্সিয়া মার্কেস উধাও। পরে, দু-দিন বাদে তাঁকে পাওয়া গেল জামা মসজিদের সামনে, মাটিতে খড়ি দিয়ে আঁকজোঁক করে যাঁরা ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে, তাঁদের সামনে তিনি উবু হয়ে বসে আছেন। কী জানবার জন্য? কেমন করে ভবিষ্যৎ জানা যায় তার কোনো চটজলদি সন্ধান পাবার জন্য বুঝি? ‘কোর্ন্তালা’ কথাটার মধ্যে আছে গণনাক্রিয়া, বলনক্রিয়া দুইই। সেটাইতো বইয়ের নামে আছে বির্বি পারা কোর্ন্তালা – না-কি? গুনে-গুনে ব’লে দেওয়া – অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎও!
একেবারেই অন্যরকম এক জীবন888sport sign up bonus – জীবন যে-রকম, সে-রকম নয়। জীবন আমরা যেমনভাবে জানি তাকেই 888sport sign up bonus থেকে হাতড়ে গুনে-গুনে বের করে দেবার এই কাহিনী – কাহনইতো!
লিভিং টু টেল দা টেল (বির্বি পারা কোর্ন্তালা)। গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। জনাথান কেপ, ইংল্যান্ড।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.