ব্যক্তিত্বের বহুমাত্রিক বর্ণচ্ছটা

হারিসুল হক

স্বপ্ন ও সত্যের অদ্ভুত দোলাচলে সৃষ্টিশীল মন উদ্বেল হয়ে থাকবে – এ আর নতুন কী! কাইয়ুম চৌধুরীও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। ফলে যে অপার সুড়ঙ্গপথে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন, সে-পথ তিনি যথার্থ অর্থেই একসময় খুঁজে পেয়েছিলেন। একসময় হাজারো বিনিদ্র মুহূর্তের ভাবনাপুঞ্জ একীভূত হয়ে পাখা মেলল তাঁর সৃষ্টির আকাশে এবং তার সে অনিবার্য যাত্রা ছিল স্বদেশের দিকে, মাটি আর সবুজের দিকে। একসময়ে প্রবল আগ্রহে সঞ্চিত এসব মাণিক্যকণায় আকীর্ণ হয়ে উঠল তাঁর 888sport live chat-মনোভূমি। উদিত সূর্যের প্রথম আবির্ভাবের লালিমায় দীপ্ত হয়ে উঠল তাঁর 888sport live chatী-মানসপট। আহ্ বাংলা! বাংলার চিরায়ত রূপকে তিনি আঁকতে লাগলেন নিজের মতো করে। ফলে তাঁর ক্যানভাসে ভেসে উঠল কিষান আর কিষানির মুখ, নাঙা কাস্তে, জ্যামিতিক রেখার টানে শ্রমজীবী মানুষের ক্লিন্ন মুখ, লাল মাছ, কলাপাতা রঙে দুলে ওঠা কুঁড়ের পেছনটা…

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক-সময়টাতে কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর প্রমুখের যে-সাহসী ভূমিকা, বাঙালি জাতি তা চিরদিন মনে রাখবে। একটি জুতসই মুক্তিসংগ্রামের শক্ত বুনিয়াদ গড়ে তোলার অন্তরালে যে সুশৃঙ্খল শক্ত বুনোটের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সংগঠন জরুরি, এটা তিনি মর্মে মর্মে বুঝে উঠতে পেরেছিলেন। ফলে ছাত্রজীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন নানা 888sport live chat-888sport live football ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে। ছোটবেলা থেকে পারিবারিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা কাইয়ুম চৌধুরীর চেতনায় যুক্ত হলো প্রগতিশীল রাজনৈতিক হাওয়া। এবং এসবের সঙ্গে কায়মনোবাক্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলেই বোধকরি কাইয়ুম চৌধুরী ব্যক্তিত্বে অবলীলায় মিশে গিয়েছিল বাংলার নৈসর্গিক রূপ-তাপ-জল। কাজেই কাইয়ুম চৌধুরীর ব্রাশ বাংলার খন্ডাংশ আর রং মানেই প্রাণহারিণী সবুজে আপ্লুত হলো। উজ্জ্বল হলুদ আর রক্তলাল বর্ণে আঁকা হলো মুক্তির উচ্ছ্বাস। ছবিতে রঙের উচ্চকিত সম্মিলন অথচ পরিমিত উচ্চারণ তাঁর শীলিত অভিব্যক্তিরই চিন্ময় প্রকাশ। যে-কেউ ভাবতে পারে, ব্যক্তি কাইয়ুম চৌধুরীকে নিয়ে লিখতে বসে তাঁর ছবি অথবা বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের কথাই বা আসছে কেন? আশ্চর্যের বিষয় এই যে, নিখাদ এই প্রগতিশীল মানুষটি উচ্চতায় যতটুকু ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বা গণতন্ত্রের লড়াইয়ের কথা বলতে গেলে তার থেকে হাজারগুণ বেশি উচ্চতায় উঠে যেতেন এক লহমায়। তিনি গর্ব অনুভব করতেন এই ভেবে যে, তিনি তাঁর সময়কালে গণতন্ত্রের দীর্ঘ সংগ্রামের অগ্নিক্ষরা বোধের মধ্যে বেঁচে ছিলেন। তিনি আনন্দ প্রকাশ করতেন এই বলে যে, পৃথিবীতে খুব কমসংখ্যক লোকের ভাগ্যেই স্বাধীনতা-আন্দোলন দেখে যাওয়ার সুযোগ ঘটে থাকে এবং তিনি এই সুযোগ পেয়েছেন। এই বিরল আনন্দ তিনি উপভোগ করতে চাইতেন তাঁর সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে, প্রকাশের সবকটি স্নায়ুযন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে।

কী রুচিশীল ব্যক্তিই না ছিলেন 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী – বাহ্যিক আচরণেই হোক কিংবা ক্যানভাসে তুলির আখরে, বইয়ের প্রচ্ছদ অঙ্কনে হোক অথবা শাড়ির নকশা চয়নে। সবকিছুতেই চমৎকার এক মার্জিত কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের বিস্ময়ের পরিসীমাকে আকাশসমান প্রলম্বিত করে দেন, ছুঁয়ে যায় দ্বিতীয় আকাশের সুউচ্চ চূড়া। 888sport live chatীর কাজ যখন দ্রষ্টার হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়, দ্রষ্টার হৃদয়ে তখন রঙের বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে। ফলে দৃশ্যপটে স্রষ্টা ও দ্রষ্টার অনুভূতি একই সংগতে গীত হতে থাকে, যার পরিণাম – মনে গেঁথে যাওয়া। ভালোলাগার শক্ত পেরেকে কখনো মরিচা ধরে না। এ-কারণেই বোধকরি 888sport live chatীর 888sport live chatকর্ম কালজয়ী হয়ে ওঠে। অথবা বাঙ্ময় অনুভূতি আর তাঁর সফল রেখায়ন একধরনের তুমুল বহুমাত্রিকতা সৃষ্টি করে, ফলে দ্রষ্টার চেতনাজগতে মুহুর্মুহু সাংগীতিক আলাপ বিস্তার লাভ করতে থাকে। এসব কিছুরই যোগ এবং সূক্ষ্ম রাসায়নিক ক্রিয়ার সংগঠনই 888sport live chatকে কালোত্তীর্ণ করে তোলে। কাইয়ুম চৌধুরীর আলাপচারিতায়, তাঁর অনুসন্ধানের ঠিকুজিনামায় এবং 888sport live chatভাবনার পরতে পরতে এ-উপলব্ধির প্রতি তাঁর আনুগত্যের সুস্পষ্ট প্রকাশ রয়েছে।

মানুষ যূথবদ্ধ থাকতে চায়। যুক্তি888sport apkের অভিধায় এ-প্রতিজ্ঞাটি স্বতঃসিদ্ধ হলেও মাঝেমধ্যেই এর ব্যত্যয়ও আমরা দেখে থাকি। ব্যক্তিক চাহিদা যখন ব্যষ্টিক প্রয়োজনীয়তাকে ছাড়িয়ে যেতে চায়, তখনই নানা ধরনের উৎকট সংকট ঘনীভূত হতে থাকে। ফলে জন্ম নেয় ঈষাণকোণে অকাল বৈশাখিঝড়। সংসারে খুব কম জনই আছেন, যারা এই পরাবৃত্তের বাইরে থাকতে পারেন। কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন সেই বিরলপ্রজ মানুষের একজন। সংঘাতমুখর পরিবেশেও তিনি স্বভাবসুলভ হাসি-হাসি মুখ নিয়ে সমস্যার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সংঘাত ও দ্বন্দ্ব নিরসনে সচেষ্ট হতেন। অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ী না হলে কারো পক্ষে এমন পদক্ষেপ নেওয়া নিঃসন্দেহে দুঃসাধ্য। ব্যক্তিসত্তা যখন ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যায়, তখন সেই অঙ্গুলির ঋজুত্বও হয় সুদৃঢ় ও অবিনাশী। স্থূল আস্ফালন ক্ষণিকের ব্যঞ্জনা সৃষ্টিতে পারঙ্গম হলেও এর স্থায়িত্ব স্বল্পকালীন। মানুষের কাছে তথা সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্যতালাভের সুবর্ণ চাবিটি হচ্ছে আস্থা। এ-আস্থা কাইয়ুম চৌধুরী অর্জন করতে পেরেছিলেন। তিনি যেচে কখনো কোথাও বলেননি যে, আমাতে আস্থা রাখো, আমায় বিশ্বাস করো; বরং সুধিসমাজ আপনাতেই তাঁকে স্থান করে দিয়েছিল উচ্চতর আসনে, সম্মানের সিংহাসনে।

কত যে বলয় দিয়ে বেষ্টিত থাকে একজন মানুষের সামষ্টিক জগৎ! কোনো এক বলয়ে থাকে বাল্যের সখা, কোনো বলয়ে জীবনের দুর্দান্ত লম্ফন, কোনো এক বলয়ে থাকে পরিবেশ, কোনো এক বলয়ে থাকে পারিবারিক সম্পর্কজট, কোনো এক বলয়ে থাকে একান্ত কিছু জন, যাদের সঙ্গে অনেকদূর হেঁটে যাওয়া যায়, দুস্তর পথ পাড়ি দেওয়া যায়। এমনি শত-সহস্র বলয় একজন ব্যক্তি নির্মাণ করতে থাকেন তাঁর জীবনভর। আর যিনি যত বেশি উদ্যমী, যত বেশি সামাজিক, যত বেশি প্রফুল্ল, তার বলয়ের 888sport free betও সংগত কারণে তত বেশি। একান্ত বলয়টুকু বড় বেশি কাছের, ফলে টানটাও এর প্রতি অধিক। এমন বলয় থেকে কেউ একজন যদি গ্রন্থিচ্যুত হয়ে পড়েন, তখন বেদনাটা একটু বেশি পরিমাণেই বাজে বৈকি! বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সুবীর চৌধুরীর দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তের খবর শোনার পর থেকে তাঁর যে চিত্তচাঞ্চল্য আমরা চাক্ষুষ করেছি, এটা তারই সাক্ষ্য বহন করে। আমার উপলব্ধি এই যে, এই বলয়েই আছেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, 888sport live chatী রফিকুন নবী। বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের সংগীত ও 888sport live chatপ্রেমকে তিনি গভীর 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে বিবেচনায় রাখতেন। আনিসুজ্জামান এবং কবি সৈয়দ শামসুল হকের প্রতি ছিল দুর্মর টান – নানা সময়ে তাঁর সঙ্গে খন্ডকথন থেকে বেশ বোঝা যেত।

প্রবল নিষ্ঠা এবং একাগ্র চিন্তা একজন মানুষকে যে কত বড় করে তুলতে পারে, কাইয়ুম চৌধুরীর সামগ্রিক সামাজিক অবস্থান এর এক উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। নিরলস অধ্যবসায় এবং অকৃত্রিম দেশপ্রেম এই 888sport live chatীকে যে অহম দিয়েছে, তা রীতিমতো ঈর্ষাযোগ্য। বইয়ের অলংকরণের জন্যও যে ভাবতে হয়, টাইপের বিন্যাস, প্রথম থেকে শেষ অবধি যে ছান্দিক বিন্যাস, চাই সেটা বর্ণ কিংবা বইয়ের সাইজ গোটা ব্যাপারটাকে তিনি একটা কর্মযজ্ঞ হিসেবে বিবেচনায় নিতেন বলেই তাঁর কাজ এতটা সাংগীতিক, এতটাই মনোহর, এতটাই অর্থদায়ক এবং এতটাই প্রাসঙ্গিক। যাঁরা তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে, পান্ডুলিপি না পড়ে তিনি কখনো কোনো প্রচ্ছদের কাজে হাতই দিতেন না। ভেতরের মূল সুরটাকে আত্মস্থ করে তবেই তিনি আঁচড় বসাতেন মলাট প্রাচীরে। ফলে কাইয়ুমের প্রচ্ছদ আর শুধুই বাণিজ্যিক কাজ হয়ে থাকল না কারণ এতে মিশে যেতে থাকে বুদ্ধিমত্তা, চিন্তার প্রাখর্য এবং 888sport live chatের রক্ত-অনুকণা। এ-প্রসঙ্গে প্রায়োগিক বা ফলিত 888sport apkের কথা পাঠককে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, যেখানে বিশেষ চিন্তার প্রতিফলন প্রথমে একটা হাইপোথিসিস বা তাত্ত্বিক তত্ত্বের উন্মেষ ঘটায় এবং পরবর্তীকালে এর ব্যবহারের মাধ্যমে তত্ত্বের প্রায়োগিক দিকটির সবগুলো দিককে বিচারের নৈর্ব্যক্তিক কাঠামোতে ফেলা হয়। ঠিক এমনিতরো কর্মকুশলতায় কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। বয়সে প্রবীণ এ-ব্যক্তির তারুণ্যের কাছে মাথা হেঁট হয়ে যেত তাঁর উদ্যম দেখে।

সংগীতের প্রতি কী দুর্বার টানই না ছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। কার কণ্ঠে রবীন্দ্র বা নজরুলের কোন গান শুদ্ধভাবে গীত হয়েছে এই নিয়ে তুমুল বিতর্কে মেতে উঠতেন রসজ্ঞ এই প্রাতঃ888sport app download for androidীয়। সুরের অন্তর্নির্হিত দোলায় দুলত কাইয়ুম চৌধুরীর রঙের কিস্তি। তাই বুঝি তাঁর তুলি রং ও রেখার সীমানা পেরিয়ে উচ্চকিত হয়ে উঠত ভিন্ন এক ছন্দের মহিমায়। গানের সাত সুর তাঁর মন ও রঙের আকাশে জন্ম দিত চিন্তার রাঙা শতদল। তাঁর 888sport live chat-অনুভব সুন্দরের স্পর্ধিত পর্দা সরিয়ে কুড়িয়ে আনত জীবনের সার পরমাণু। সত্যকে তথা সুন্দরকে অবিমিশ্ররূপে স্থান করে দিতে প্রজ্ঞার যে নিরলস উৎসব, তাতে তাঁর কোনো ক্লান্তি ছিল না বরং এতেই ছিল তাঁর অশেষ তৃপ্তি, পরমানন্দ। আর কে না জানে, সুরের পর্দা কেটে কেটে যে-মেঘ চিদাকাশে ভাসতে থাকে, ও শুধু নির্মলই হয় না, প্রাণদায়ীও হয়ে থাকে।

মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং পরবর্তীকালে জৈবিক নিয়মে প্রজন্ম রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে এবং একসময়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। ব্যাপারটা কেবল জন888sport free bet বৃদ্ধির কিংবা বার্ষিক মৃত্যু তালিকায় নতুনের অন্তর্ভুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। কাইয়ুম চৌধুরীদের জন্ম-মৃত্যু কিংবা যাপিত জীবনকে আর যাই হোক এই সাদাসিধা সমীকরণে ফ্রেমবন্দি করার জন্য মোটেও মানানসই নয়। এতে সত্যের অপলাপ হবে, বোধ ব্যাখ্যায় ভ্রষ্টাচার হবে। কোনো কোনো জন্ম আমাদের বিস্মিত করে, কোনো কোনো মৃত্যু স্তম্ভিত করে। যে-জীবন কাইয়ুম চৌধুরী যাপন করে গেছেন, সে-জীবন 888sport live chatীর জীবন, একজন বোদ্ধার জীবন, যোদ্ধার জীবন। আমৃত্যু সুন্দরের অর্চনা করতে করতে সংগীতযজ্ঞেই তিনি প্রাণার্ঘ্য নিবেদন করলেন – এরচেয়ে অধিক গৌরবের আর কী-ই বা হতে পারে।