সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চলে যেতে হয় কী কাজ করেছি আর কী কথা বলেছি- জীবনানন্দ দাশ
অনুরোধ এসেছে ভাষা আন্দোলনের 888sport sign up bonusকথা লেখার। বয়স আশি অ টুইটুই করছে, বার্ধক্যে পৌঁছে 888sport live নিবন্ধ লেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি কিন্তু লেখার বিষয় যখন ভাষা আন্দোলন, তখন সম্মতি না দিয়ে পারি না। ভাষা আন্দোলনের দিনগুলি আমার জীবনের সবচেয়ে অবি888sport app download for androidীয় সময়কাল, এই আন্দোলনে সম্পৃক্ততা আমার গৌরব, আমার অহঙ্কার।
‘বাহান্নর ভাষা আন্দোলন’-এই বাক্যাংশটি প্রায়ই দেখি পত্রপত্রিকায় ছাপা 888sport liveে-নিবন্ধে, উচ্চারিত হতে শুনি সভা-সমিতিতে ও টেলিভিশনের পর্দায়। বহুল প্রচলিত এই বাক্যাংশটি পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের কাছে এমন একটা ধারণা দিতে পারে যে ভাষা আন্দোলন বুঝি ১৯৫২ সালের পরিধিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। দ্বিমতের অবকাশ নেই যে ভাষার দাবিতে বিশ্বের এই প্রথম ও অদ্বিতীয় আন্দোলন উনিশ শ’ বাহান্ন সালে তার তীব্রতর পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই আন্দোলনের সক্রিয় পর্যায়টি আরম্ভ হয় ১৯৪৮ সালে। সক্রিয় বলতে আমরা বুঝি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই স্বপক্ষে আলোচনা, মিটিং, মিছিল, পোস্টারিং এবং গণসংযোগ কার্যকলাপ। প্রথমে এই সক্রিয়তা ছাত্রসমাজ ও শিক্ষাঙ্গনে সীমাবদ্ধ থাকলেও, ক্রমেই তা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থন লাভ করতে থাকে এবং বাহান্নয় এসে গণআন্দোলনে পরিণত হয়।
ভারত বিভাগের দুতিন মাস আগে ১৯৪৭-এর জুন থেকে ১৯৪৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিস্তৃত সময়কালে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যে নীরব আন্দোলন পর্বটি চলে তা সীমাবদ্ধ ছিল 888sport live-নিবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে। অবিভক্ত বাংলার রাজধানী 888sport appর কতিপয় তরুণ সাংবাদিক, 888sport live footballিক ও বুদ্ধিজীবীর লেখা এবং বিবৃতির আকারে প্রকাশিত মতামত মননে অন্তঃসলীলার মতো প্রবাহিত হয়ে তরুণ ও যুবসমাজকে সচেতন করে তুলেছে এবং আন্দোলনের জন্য তাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি রচনায় যে সকল চিন্তাবিদের লেখনী সচল হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আব্দুল হক, ফররুখ আহমদ, আবদুল গণি হাজারী, আহসান হাবীব, মাহবুব জামাল জাহেদী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ এবং আবুল কাসেম অন্যতম। এঁদের লেখা 888sport live, বক্তব্য ইত্যাদি সাধারণত প্রকাশিত হতো দৈনিক ইত্তেহাদ, দৈনিক আজাদ, সাপ্তাহিক মিল্লাত, মাসিক সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায়। ভাষা আন্দোলনের আদিপর্বে অংশগ্রহণকারী এইসব লেখক ও চিন্তাবিদের অবদান যেন যেন বিস্মৃত না হই এবং তাঁদের প্রথম সারির ভাষাসৈনিকের সম্মান দিতে কুণ্ঠিত না হই।
ভাষা আন্দোলনের আদিপর্বের গোড়ার দিকে আমি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। রাজনীতির প্রতি এক দুর্জয় আকর্ষণ পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে আমাকে একাত্ম করে তোলে। সাতচল্লিশে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন যে সফল হতে যাচ্ছে—এতে আমরা তখন এতই উল্লসিত যে ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যে নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও আচার-আচরণের এবং ভাষার ভিন্নতা সমস্যা ও বিরোধের সৃষ্টি করবে তা আমাদের কল্পনায় আসেনি। পাকিস্তান আন্দোলনের সাফল্য এবং নতুন রাষ্ট্রে জীবন ও জীবিকার অঙ্গনে 888sport free betগরিষ্ঠ জনগণের ন্যায়য্য অধিকারপ্রাপ্তির নিশ্চিত সম্ভাবনা আমাদের এতই আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল যে অন্য কোনো চিন্তা বা দুশ্চিন্তা আমাদের উপর প্রভাব ফেলতে পারেনি। রাজনীতিতে এবং ফার্স্ট এমবিবিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ততা পত্রপত্রিকা পড়ার অবসর দিত না মোটেই। পরবর্তী সময়ে, 888sport appয় এসে আবদুল গণি হাজারীর সঙ্গে সখ্যতা এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে আবদুল হক সাহেবের সঙ্গে পরিচয় ও হৃদ্যতা ভাষা-আন্দোলনের সেই আদিপর্বের সঙ্গে আমার পরিচিতি ঘটায়।
আটচল্লিশের মার্চ থেকে শুরু করে প্রায় পাঁচ বছর বিস্তৃত ভাষা-আন্দোলনের সক্রিয় পর্বটি কখনো চলে মন্থর গতিতে, কখনো বা দ্রুত তালে। যে আন্দোলন প্রথমে ছিল ছাত্র ও তরুণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাই ক্রমে সকল শ্রেণির মানুষের সমর্থন পেয়ে বাহান্নতে রূপ নেয় এক গণআন্দোলনে। এ আন্দোলনের কর্মকাণ্ড চলে স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেডিক্যাল কলেজে, কারিগরি মহাবিদ্যালয়ে শুধু 888sport appয় নয় ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’, এ দাবির পক্ষে মানুষ সোচ্চার হয় শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে।
প্রত্যক্ষদর্শীর 888sport sign up bonusকথা ইতিহাসের উপাদান হতে পারে—ইতিহাস নয়। একই ঘটনার 888sport sign up bonusকথায় দুজন কথকের বর্ণনায় ভিন্নতা থাকে, কারণ বস্তুর মতো একই ঘটনাও ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান বা দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন ভিন্ন রূপ নেয়। ভাষা আন্দোলনের বিশাল ক্যানভাসের যে ঘটনাগুলি ধরা পড়েছিল আমার চোখে, আবহসহ তারই কয়েকটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে আজকের 888sport sign up bonusচিত্রণ।
888sport app মেডিক্যাল কলেজের জন্ম ১৯৪৬ সালে, সাতচল্লিশেও ছাত্রদের কোনো হোস্টেল তৈরি হয় নি, তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকত বিশ্ববিদ্যালয়ের এ হলে হলে। ভারত বিভাগের পর সাতচল্লিশের শেষার্ধে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের যে জনা পঞ্চাশেক ছাত্র আমরা বুক বেঁধে 888sport app মেডিক্যাল কলেজে পড়তে চলে এলাম, কর্তৃপক্ষ তাদের বাসের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদের জন্য নির্মিত পুরাতন পলাশী ব্যারাকের একটা দোতলা বাঁশ- কাঠের ব্যারাক নির্দিষ্ট করে দিল। আমি অবশ্য এই ব্যারাকে থাকতাম না, আশ্রয় নিয়েছিলাম মগবাজারে আমার বোনের বাসায়। তবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে নিয়মিত আসতে হতো এখানে। রৌদ্রস্নাত সকালে মিন্টো রোড ধরে, রমনার শ্যামল প্রান্তর আর কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় 888sport app মসৃণ পিচঢালা পথ বেয়ে কলেজ আর এখানে আসতে ভালোই লাগত—ভালো লাগত ছাত্রাবাসে বন্ধুদের সাহচর্য, আর সমসাময়িক বিষয়ের অন্তহীন আলোচনা।
একদিন ভরদুপুরে পলাশীর সেই অস্থায়ী ছাত্রাবাসের সামনের যে রাস্তাটি সে আমলে লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে সোজা সলিমুল্লাহ হলের সামনে এসে মিশত, সেই রাস্তা বেয়ে জন পঞ্চাশেক লোকের এক মিছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার স্বপক্ষে স্লোগান দিতে দিতে নাজিরাবাজার ও মৌলভীবাজারের দিক থেকে এসে হাজির হলো। 888sport appর নবাব উর্দুভাষী খাজা গোষ্ঠীর বশংবদ, যারা 888sport appর আদিবাসী ও সে সময়ে ‘কুট্টি’ বলে পরিচিত ছিল, তাদেরই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে রাস্তায় নামিয়েছিল নবাব পরিবার—হাতে প্ল্যাকার্ড আর মুখে শালীনতাহীন বাংলা বিরোধী স্লোগান। মুহূর্তে প্রতিরোধ এল, মিছিলের অগ্রগতিকে বাধা দিতে বেরিয়ে এলাম মেডিক্যাল ছাত্ররা শুরু হলো খণ্ডযুদ্ধ। মিছিলের সাথে মোমিন কোম্পানির যে বাসটি ছিল তার ভিতর থেকে লুকিয়ে রাখা লাঠি ও রড নিয়ে ওরা আক্রমণ করল ছাত্রদের। রেললাইনের পাশে রক্ষিত প্রস্তরখণ্ড নিক্ষেপ করে এবং হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তা-ই দিয়ে পাল্টা আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমরা। অদূরে ইনজিনিয়ারিং হোস্টেলের ছাত্ররা বেরিয়ে এসে যোগ দেয় আমাদের সাথে। কয়েক মিনিটের সেই খণ্ডযুদ্ধ সম্ভবত ভাষার প্রশ্নে প্রথম প্রত্যক্ষ সংগ্রাম। আসাদুজ্জামান, মনিরুজ্জামানসহ মেডিক্যাল ছাত্রদের অনেকেই সেদিন আহত হয়েছিল, কেটে-ছিঁড়ে গিয়েছিল তাদের অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ, কিন্তু দৃঢ় মনোবল নিয়ে তারা সেদিন ভাষা ও সংস্কৃতির শত্রুদের আক্রমণ প্রতিহত করেছিল, প্রতি-আক্রমণ করেছিল দুর্জয় সাহস আর ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ নিয়ে।
আরেকটি 888sport cricket BPL rate তারিখ, ফেব্রুয়ারি নয় মার্চ, বাহান্ন নয় আটচল্লিশ। মধ্যাহ্নের সূর্য তখনো মাথার উপরে উঠেনি। ফুলার রোডে আমাদের জন্য নবনির্মিত তিন সারিতে বিশটি ব্যারাকের হোস্টেল থেকে বেরিয়ে জনতার সাথে এগিয়ে চলেছি রমনার পথ বেয়ে ঘোড়দৌড়ের মাঠে। পাকিস্তান সংগ্রামের অগ্রনায়ক মুহম্মদ আলী জিন্নাহর ভাষণ শোনার উন্মাদনা, সেই সাথে দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব। লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুসলিমপ্রধান বেঙ্গল ও আসামের পূর্ব ভারতীয় অঞ্চল সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি পাবে, জীবন ও জীবিকার সর্বস্তরে বঞ্চনার অবসান হবে এবং 888sport live chat-888sport live football-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের আত্মবিকাশের পথ মুক্ত ও প্রশস্ত হবে—এই আশাতেই আমরা বাঙালি মুসলমান পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। চৌচল্লিশের দিল্লি কাউন্সিলে পাকিস্তানের একক সরকারের রূপরেখা গ্রহণ আমাদের ততটা আলোড়িত করেনি, যতটা নৈরাশ্য ও বিক্ষুব্ধ হয়েছিলাম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের অপতৎপরতায়। এই প্রশ্নই জাগছিল মনে—প্রিয় নেতা জিন্নাহর চিন্তাধারা গণতান্ত্রিক মোড় নেবে কি, পূর্ণ স্বীকৃতি দেবে কি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়ে?
বর্বর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী রেসকোর্সের যে কালীমন্দিরকে সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে দেয় একাত্তরে, তারই উত্তর দেয়াল ঘেঁসে বসেছিলাম, বন্ধু ও সহপাঠীদের নিয়ে বক্তৃতা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে। একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্সের যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠ, সেই মঞ্চস্থান থেকে কয়েকশ গজ দক্ষিণে তৈরি হয়েছিল জিন্নাহর বক্তৃতামঞ্চ। সেদিনের ছোট্ট 888sport appর বাস্তবতায় দেড় দুলাখের জনসমাগমকে বৃহৎই বলতে হবে। নেতা বক্তৃতা দিলেন, জাতীয় সংহতিকে দৃঢ় করার আবেদন জানালেন, প্রাদেশিকতা বর্জন করার আহ্বান জানালেন, কিন্তু ভাষার প্রশ্নে বাংলার দাবিকে নস্যাৎ করবার যে মনোভাব তিনি ব্যক্ত করলেন তাতে আমাদের সব সংশয়ের নিরসন ঘটল। তিনি বললেন, ‘আমি আপনাদের বলতে চাই যে আপনাদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা বিদেশের অর্থে পুষ্ট হচ্ছে এবং আপনাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে। এরা বলে বেড়াচ্ছে যে পাকিস্তান সরকার এবং পূর্ব বাংলা সরকার আপনাদের ভাষাকে ধ্বংস করতে চায়। এর চেয়ে বড় মিথ্যা কথা কেউ কখনো বলেনি। আমাকে জানানো হয়েছে যে প্রদেশের কোনো কোনো অংশে অবাঙালি মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করা হচ্ছে। কিছুসংখ্যক কম্যুনিস্ট এবং রাজনৈতিক সুবিধাবাদী ভাষার প্রশ্নকে সামনে তুলে প্রাদেশিক প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে চাইছে এবং এ কাজে ছাত্র সমাজকে হাতিয়াররূপে ব্যবহার করছে। আমার সরকার এই অন্তর্ঘাতকদের হাত থেকে প্রদেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। প্রদেশের সরকারি ভাষা কী হবে তা প্রদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যথাসময়ে স্থির করবে। তবে আমি আরো পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতে চাই যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা—অন্য কোনো ভাষা নয়। এ প্রশ্নে যে দ্বিমত সৃষ্টি করতে চাইবে সে পাকিস্তানের শত্রু। শুধু একটিমাত্র ভাষাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে। উর্দুই হবে পাকিস্তানের সেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ সেদিন মনে কষ্ট ক্ষোভ নিয়ে ব্যারাকে ফিরে এসেছিলাম। আমাদের কায়েদের ধারণা ভ্রান্ত বলে মনে হয়েছে।
অর্ধশতাব্দীরও আগে দেয়া কায়েদে আজমের সে ভাষণের পোস্টমর্টেম নিরীক্ষা করতে গিয়ে যে কথাটা মনে পড়ে সেটা হলো এই যে কায়েদে আজম তখন মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে। আমরা অনেক সময় ভুলে যাই যে গুরুতর অসুস্থতা রাজনীতিবিদদের ক্রিয়াকাণ্ডকে দারুণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি সুস্থ ছিলেন না বলেই পাকিস্তানের জন্মের সাত মাস পরে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বাস যে প্রদেশে সেখানে প্রথম পদার্পণ করেছিলেন। তিনি অসুস্থ ছিলেন বলেই সব কাজে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা বেড়ে গিয়েছিল। পূর্ববাংলার (তখনো পূর্ব পাকিস্তান নামকরণ হয়নি) পরিস্থিতি সম্পর্কে এই প্রদেশের মুসলিম লীগ সরকার ও নাজিমউদ্দীন, নূরুল আমিন প্রমুখ রাজনীতিবিদ তাকে যা বুঝিয়েছিলেন তিনি তা-ই বুঝেছিলেন; তাঁর বক্তৃতার মধ্যে ‘আমাকে জানানো হয়েছে যে, এই বাক্যাংশটিই তার প্রমাণ।
২৪ মার্চ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রভাষার উপর বক্তব্য রাখার সময় তিনি বাধাগ্রস্ত হন। এরপরে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎকার দেন। সম্ভবত এ সময়েই তিনি বুঝতে পারেন বাংলাভাষা পাকিস্তান প্রদেশের জনগণের ভাষা, 888sport app ভাষা থেকে বাংলা অনেক উন্নত এবং এই ভাষার 888sport live footballসম্ভারে মুসলমানের অবদান কত মূল্যবান। কায়েদে আজম ফিরে গিয়ে বেশিদিন বাঁচেননি—মাত্র ছমাস পরে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। জীবন সায়াহ্নের দিনগুলি তিনি কাটিয়েছিলেন জিয়ারতে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন কর্নেল এলাহী বকস। মাঝেমধ্যে তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্য বহির্ভূত বিষয়েও কথাবার্তা হতো। এমনি এক আলাপচারিতায় জিন্নাহ বলেছিলেন, ‘দেখ ডাক্তার, আমার রাজনৈতিক জীবনে দুটো বড় ভুল করেছি। প্রথম ভুল করেছি পাকিস্তান প্রস্তাবকে সংশোধন করে। আর দ্বিতীয় ভুল করেছি 888sport appয় রাষ্ট্রভাষার উপরে ভাষণ দিতে গিয়ে; রাষ্ট্রভাষা নিয়ে কথা বলা আমার উচিত হয়নি—এর মীমাংসা হবে পার্লামেন্টে। আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব মানবে না।’ কায়েদের রেসকোর্স আর কার্জন হলের বক্তৃতা যায়নি, বৃথা যায়নি তার জাতীয় ঐক্যকে দৃঢ় করবার আহ্বান। কারণ জিন্নাহর এই বক্ততা দুটিই সম্ভবত সর্বপ্রথম বাংলার তরুণ ছাত্রদের মধ্যে আত্মোপলব্ধির ডাক দিল, তাদের মনে জাগাল বাঙালি জাতীয়তাবাদের নবচেতনা, এনে দিল নব প্রত্যয়, দুর্জয় সাহস।
১৯৪৮ সালের শেষার্ধ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত এ কয় বছরের ইতিহাস, আওয়ামী লীগের জন্ম ও জনপ্রিয়তা বাড়বার ইতিহাস এবং সেই সাথে মুসলিম লীগ ও লীগ সরকারের অন্তর্বিরোধ ও দুর্বল হয়ে পড়ার ইতিহাস—কম্যুনিস্ট পার্টির গোপন সক্রিয়তার ইতিহাস, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ফেডারেশন এবং যুবলীগের সুসংগঠিত কর্মকাণ্ডের ইতিহাস। ইতিহাসের সে ক’টা পাতা এড়িয়ে এবারে ১৯৫২ সালের কথায় আসি।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পল্টন ময়দানে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুই হবে’–এই ভাষণের প্রেক্ষিতে বার লাইব্রেরিতে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে যে বৈঠক হয় তাতে যে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয় তাতে 888sport app মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি গোলাম মওলা অন্তর্ভুক্ত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রবল উদ্দীপনাময় এক সভায় 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দেশব্যাপী হরতাল, সভা, বিক্ষোভ মিছিল এবং চলমান বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় স্মারকলিপি পেশসহ ক্ষোভ প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বাহান্নর ২০ ফেব্রুয়ারির একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিকেল। মেডিক্যাল ছাত্রাবাসের প্রতিটি ছাত্রকর্মী এবং সাধারণ ছাত্রদের অধিকাংশই ছিল ২০ ফেব্রুয়ারির রাত থেকে শহরে সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে। আমাদের মনে সংশয় ছিল যে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ, যার সভা ঐ দিন বসবে, সেই সভা প্রতিকূল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই আমরা ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সর্বদলীয় পরিষদের সভায় আমাদের প্রতিনিধি কলেজ ইউনিয়নের ভিপি গোলাম মওলাকে বক্তব্য রাখার জোর তাগিদ জানিয়ে দেই। এই সভায় আমাদের প্রতিনিধি যাতে প্রতিকূল কোনো নেতাকর্মীর দ্বারা প্রভাবিত না হয়, সে জন্য ছাত্রকর্মী আহমেদ রফিক সভার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য সন্ধ্যারাতে একাধিকবার সভাস্থলে যাতায়াত করে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এই সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙা নয়- মেনে চলা এবং আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ১১-৩ ভোটে গৃহীত হয়। সান্ত্বনা এই যে আমাদের ভিপি এই সভায় আমাদের মনোভাবকেই তুলে ধরেছিল তার বক্তব্যে এবং ভোট প্রয়োগে। ইতিহাস সাক্ষী দেবে, ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে যে তিনটি ভোট পড়েছিল, যে তিনটি কণ্ঠ সোচ্চার হয়েছিল, তার একটি ছিল আমাদের প্রতিনিধি, আমার সতীর্থ শ্রেণিবন্ধু গোলাম মওলার।
888sport cricket BPL rateের ভোর হয় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার রাত পেরিয়ে। ভোরের কুয়াশা ভেঙে সূর্য উঠেছে, কিন্তু শ্যামল ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু তখনো শুকায়নি। কর্মসূচি অনুযায়ী শোভাযাত্রা বের করার প্রতিজ্ঞায় অটুট আমরা। আমাদের সক্রিয়তা শুরু হয়েছে ঘুমভাঙা প্রত্যুষেই। একদল দাঁড়িয়েছে ব্যারাক এলাকার ১নং গেটে আলী আজমলের নেতৃত্বে। সে আমলে 888sport appয় যানবাহনের 888sport free bet এমনিতেই ছিল কম, তার উপর হরতালের ডাক। যে দুএকটা রিকশা বেরিয়েছে তার গতিরোধ করে পাম্প ছেড়ে দিচ্ছে ছাত্ররা, ধাওয়া করছে ত্বরিত আসা সরকারি গাড়ি। স্কুল- কলেজে আজ ধর্মঘট। বেলা বাড়ছে, অনেক পরিচিত মুখ মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল আর হোস্টেলের প্রান্তরে। উঠতি বয়সের কিশোর আর যুবকরা আসছে দু’একজন অথবা ছোট ছোট দলে 888sport appর নানা স্কুল-কলেজ থেকে। নবকুমার স্কুল, পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসেছে ওরা, এসেছে জগন্নাথ কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। ওরা এসেছে বকশিবাজারের পথ ধরে ব্যারাক প্রাঙ্গণের পশ্চিমের গেট দিয়ে। কেউবা রেললাইনের পাশের তারের বেড়া ডিঙিয়ে। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রকর্মীরা তাদের স্বাগত জানিয়ে ভাঙা পাঁচিলের গলিপথ ধরে নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল ভবনের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনের চত্বরে। পাঁচিল পেরিয়ে মধুর ক্যান্টিন বাঁয়ে রেখে একটু এগুতেই সেই আমতলা- যেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কী হবে। কলাভবনে যাওয়ার পথে হাসপাতালে গিয়ে দেখি অপেক্ষাকৃত সুস্থ রোগীদের ডিসচার্জ করে দিচ্ছে। বেড খালি করে রাখছে। সরকার কি বুঝতে পেরেছিল 888sport appর বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজকে ১৪৪ ধারার ভয় দেখিয়ে ক্ষান্ত করা যাবে না—তাদের গতিকে স্তব্ধ করতে শক্তি প্রয়োগের প্রয়োজন হবে, আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে—এ কথাও কি তারা জানত, কিসের জন্য এ প্রস্তুতি?
হাজার তিনেক ছাত্রের উপস্থিতিতে সভা শুরু হয় বেলা এগারটায় কলাভবনের আমতলায়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সুঠামদেহী ছাত্রনেতা গাজীউল হক। সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হকের বক্তব্যে ১৪৪ ধারা অমান্য করলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তার সুযোগ গ্রহণ করে সরকার দেশব্যাপী আসন্ন নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারেন—এই যুক্তি মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না সভায় উপস্থিত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসাধারণ। তাঁর এবং একই তারে বাঁধা খালেক নেওয়াজের বক্তৃতার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল মতিনের আবেগপূর্ণ বক্তৃতা এবং সভাপতি গাজীউল হকের তেজোদীপ্ত ভাষণ ছাত্রজনতাকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। বিপরিত হয়ে ওঠে সভাস্থল —’রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘১৪৪ ধারা মানি না মানবো বিদ্যুৎস্পর্শের মতো চকিতে উত্তপ্ত হয়ে তারা। মুহূর্তেই স্লোগানে স্লোগানে না’। তর্ক-বিতর্ক, ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা এবং সংঘবদ্ধ নেতৃত্বের অভাবে আমতলার সভা যে ছিল তা বলা যাবে না। এইসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে ত্বরিত গৃহীত। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছাত্রদের আট-দশজনের খণ্ড খণ্ড মিছিলের রাজপথে নেমে আসা। তাদের মুখে সরকারবিরোধী স্লোগান, হাতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড। কলাভবনের গেটে, যে গেট বর্তমানে 888sport app মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেনসি, তার বাইরে তখন পুলিশের সতর্ক বেষ্টনী। সে বেষ্টনী ভেদ করে ছাত্রদের অ্যাসেম্বলি অভিমুখে এগুনোর প্রয়াস, আর নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর হাফ-প্যান্ট পরা, পায়ে পট্টিবাঁধা পুলিশের ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য—এখনো চোখে ভাসে। প্রথমে কে বেরুবে এই ইতস্ততাবোধ কেটে গেছে যখন গৌরবর্ণ দীর্ঘদেহী হাবিবুর রহমান শেলী বেরিয়ে পড়ল কয়েকজন সাথি নিয়ে। প্রথমদিকে বের হওয়া দলগুলির কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে ট্রাকে ওঠায়। ওদের ভিতরেই ছিল কয়েকটা চেনা মুখ—আবদুস সামাদ আজাদ, আনোয়ারুল হক খান, আলী আজমল। কালো মোটা ফ্রেমের চশমা পরা সবলদেহী মেডিক্যাল কলেজের আজমলের উদ্যত বজমুষ্ঠি আজও দেখতে পাই, তাঁর কণ্ঠের তেজোদীপ্ত স্লোগান ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এখনো যেন শুনতে পাই। এরপর ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ, পুলিশের লাঠি চালনা, জঙ্গি ছাত্রদের প্রস্তর নিক্ষেপ, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সেই চিরাচরিত কাহিনী।
মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা এই পরিস্থিতিতে যে অসাধারণ পদক্ষেপটি গ্রহণ করে তা হলো ঐ দুপুরেই ২০ নং ব্যারাকের ১নং কক্ষে ‘কন্ট্রোল রুম’ স্থাপন। ১৪৮৪ বা ছিলো কন্ট্রোল রুম স্থাপনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মী—বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিন আহমদ এবং ভিপি গোলাম মওলার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই কন্ট্রোল রুম স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এখানে 888sport app download for android করা যেতে পারে, আমাদের কন্ট্রোল রুম থেকে অ্যাসেম্বলির দূরত্ব ছিল মাত্র একশ-দেড়শ গজ। ইউনিয়নের নিজস্ব মাইক ছিল, এর শক্তিশালী লাউড স্পিকার লাগানো হয় ছাত্রাবাস এলাকার উত্তর- পশ্চিম কোণের একটা আম গাছের ডালে অ্যাসেম্বলির দিকে মুখ করে। প্রচারযন্ত্র ও কন্ট্রোল রুমের সার্বিক দায়িত্বে ছিল ইয়াহিয়া, মটরু’ নামেই যে বেশি পরিচিত ছিল বন্ধুদের কাছে। সার্বক্ষণিক প্রচারে যাদের ভরাট কণ্ঠ সেই মুহূর্তে এক বিশেষ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে শরফুল আলম ও আবুল হাশিমের নাম মনে পড়ছে। ওদিকে পরিষদ ভবনে গমনেচ্ছু সদস্যদের কাউকে কাউকে নিয়ে আসা হচ্ছিল ব্যারাকে বোঝানো হচ্ছিল পরিস্থিতির গুরুত্ব। আজ এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, কন্ট্রোল রুমের বলিষ্ঠ প্রচার ও গণসংযোগের প্রভাবেই পরিষদ কক্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছে।
দুপুর গড়িয়ে অপরাহ। এ সময়ে আমার চোখের সামনে যে ঘটনাটি সমগ্র আন্দোলনের চরিত্রটাই পাল্টে দিল, তা হলো নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ। মুহূর্তে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো বিস্ফোরন্মুখ আন্দোলনের পটভূমি উত্তপ্ত হয়ে উঠল। আর কেমন করে যেন আমাদের ছাত্রাবাস হয়ে উঠল ভাষা আন্দোলনের স্নায়ুকেন্দ্র।
গুলি চলার পরে কন্ট্রোল রুম থেকে প্রচারের ভাষ্যে আসে পরিবর্তন। নাজুক পরিস্থিতিতে নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর পুলিশি জুলুমের উপর এক মুলতুবি প্রস্তাব আনেন মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন পরিষদের সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং পুলিশের গুলি চালনা সমর্থন করে বক্তৃতা দেন। পরিষদ কক্ষে নূরুল আমিনের এই নির্লজ্জ ভূমিকা গ্রহণের খবর পেতে আমাদের দেরি হয়নি। মহর্তে মাইকে আওয় মুহূর্তে আওয়াজ ওঠে, ‘রক্তের বদলে রক্ত চাই’, ‘খুনি নূরুল আমিনের বিচার চাই’, ‘জান দেব, তবু ভাষা ছাড়ব না’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”, “আহ *আহতদের বাঁচান, ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দিন’ ‘ আমিনের কল্লা চাই”। গুলিবর্ষণের খবর কিছুটা অতিরঞ্জিত হয়ে শহরময় ছড়িয়ে নূরুল পড়ার উৎস হয়ে দাঁড়ায় আমাদের কন্ট্রোল রুমের সম্প্রচার। মাইকের উত্তেজক বক্তৃতা শুনে পলাশী আর নীলক্ষেত ব্যারাকবাসী অফিস ফেরত সরকারি কর্মচারী বাড়ি ফেরার কথা ভুলে হাসপাতাল আর হোস্টেলে ভিড় জমায় স্বচক্ষে অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য। গুলিবর্ষণের স্থানে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, রক্তে ভেজা শহীদদের জামাকাপড়, বারো তেরো চৌদ্দ আর বিশ নম্বর ব্যারাকের দেয়ালে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন সাধারণ মানুষের মনে আগুন ধরিয়ে দেয়; তারা সরকারের প্রতি ধিক্কার জানাতে থাকে। সরকার আরোপিত ১৪৪ ধারা ভেসে যায় জনতার স্রোতে। আন্দোলনের সঙ্গে শহরবাসী জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার অনন্যসাধারণ কাজটি সমাধা করার ক্ষেত্রে এই ক্রান্তিলগ্নে মেডিক্যাল কলেজের কন্ট্রোল রুম যে ভূমিকা গ্রহণ করে-তা ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকবে। কন্ট্রোল রুম তার আটাশ ঘণ্টা আয়ুষ্কালে সত্যিকার অর্থেই ভাষা-আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল, এর সক্রিয়তা আন্দোলনে এনেছিল নতুন গতি।
888sport app শহর নয়, ভাষা-আন্দোলন যে সমগ্র প্রদেশব্যাপী গণবিক্ষোভের রূপ নেবে তা নূরুল আমিন সরকার এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পূর্বাহ্ণে আঁচ করতে পারেনি। বস্তুত এই ঘটনা ছাত্রদের নিয়মতান্ত্রিক ভাষা-আন্দোলনকে এক ব্যাপক গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করে। বিশটা ব্যারাক ক্রোড়ে নিয়ে আমাদের ছাত্রাবাস এলাকা যুক্ত এলাকায় পরিণত হয়। ইউনিভার্সিটির সলিমুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হল থেকে ছাত্রনেতারা যখন পুলিশি অভিযানের কারণে বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং আন্দোলনে ভাটা পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, সেই সংকট পর্যায়ে আন্দোলনকে জিইয়ে রাখতে এবং এর নেতৃত্বকে সুসংগঠিত করতে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা এক অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা যেমন একদিকে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, সতর্ক দৃষ্টিতে লাশ পাহারা দিয়েছে, তেমনি মেডিক্যাল কলেজের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নেতৃত্বকে সুসংহত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
বিদ্রোহী দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি শনিবারের কথা। এ দিনই শোক থেকে শক্তিতে রূপান্তরিত তিনশ জোড়া হাত সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে একটি আরব্ধ কাজে শহীদ মিনার গড়তে হবে গড়তে হবে ঐ রক্তরঞ্জিত স্থানে, যেখানে ভাষা-আন্দোলনের প্রথম শহীদ অত্যাচারী সরকারের নির্মম বুলেটের আঘাতে ত্যাগ করেছে শেষ নিশ্বাস। কোনো আনুষ্ঠানিক সভা বা সমাবেশে প্রস্তাব নেয়া হয়নি বাইশের রাত থেকেই যে ইচ্ছেটা স্থান করে নেয় হয়তো মাত্র গোটা কয়েক ছাত্রের মনে তারই প্রতিধ্বনি আজ মেডিক্যাল ছাত্রাবাসের প্রতিটি ছাত্রকর্মীর হৃদয়ে। অনানুষ্ঠানিক এই সিদ্ধান্তের কথা ব্যাপ্ত হয়ে যায় হোস্টেলের তেইশটি ব্যারাকের প্রতিটি ঘরে রাজনীতিসচেতন বিদ্যার্থীর মধ্যে।
তারপর এল সেই ২৩ ফেব্রুয়ারির অবি888sport app download for androidীয় রাত, বাংলার প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের রাত। এ রাতেই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা শহীদ 888sport app download for androidে মিনার তৈরি করে করে আন্দোলনে যোগ করে এক নতুন মাত্রা। নকশা নেই, মজুর নেই, ইট, সিমেন্ট, নির্মাণ সামগ্রী নেই- কিন্তু যা আছে সে মুহূর্তে তারই তো প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি প্রস্তুতি আর দৃঢ় সংকল্প। কারফিউ জারি ছিল রাস্তায়, সেনাবাহিনীর সাহায্যে নিয়েছিল শাসকগোষ্ঠী। বালুচ রেজিমেন্টকে পালটে সেদিন টহল দিচ্ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। তাই মিনার নির্মাণের কাজে কোনো বাধা আসেনি, যদিও হোস্টেলের প্রধান ফটক পেরিয়ে কয়েক গজ পরেই ডান হাতে বারো নম্বর ব্যারাকের প্রায় সোজাসুজি (স্থানটা বর্তমান মেডিক্যাল কলেজ ডিসপেনসারির মধ্যে পড়ে) নির্মাণ স্থানটি ছিল টহলদারি সৈন্যদের দৃষ্টিসীমার মধ্যেই। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে হাতে হাতে ইট বয়ে এনেছে হাসপাতাল সম্প্রসারণের কাজের জন্য রাখা স্তূপ থেকে। ঠিকাদার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে স্ট্রেচারে বহন করে এনেছে সিমেন্ট আর বালি, হোস্টেল আর কলেজের মাঝের গলিপথ দিয়ে, ছাত্ররাই হোস্টেলের ট্যাপ থেকে বালতি ভরে পানি টেনে এনেছে, বালি-সিমেন্টের মর্টার তৈরি করেছে নিজ হাতে, আর তাৎক্ষণিকভাবে নিয়োজিত মাত্র দুজন রাজমিস্ত্রির নিপুণ হাতের সহায়তায় এক রাতে অক্লান্ত পরিশ্রমে সম্পন্ন করেছে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ, করেছে এক অসাধ্য সাধন—বাইরের কারফিউ আর হিমেল হাওয়াকে উপেক্ষা করে। ভোরের রক্তিম আলো ফুটে উঠবার আগেই অবাক বিস্ময়ে মানুষ দেখল দুমানুষ উঁচু মিনার আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে-বদরুলের যত্নের সাথে শহীদ 888sport sign up bonusস্তম্ভ’ লেখা কাগজের ফলকটি বুকে ধারণ করে।
প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার 888sport sign up bonus নিয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, এই মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নির্মাণ সমাপ্তি পর্যন্ত সব কৃতিত্ব মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদের একার। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বা ছাত্ররা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। প্রথম শহীদ মিনার ছিল মেডিক্যাল ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা- চেতনার প্রকাশ, তাদের সমিতির শ্রমের ফসল। গোলাম মওলা ও শরফুদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধান নির্মাণকাজে সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চার করতে পারে, মিনারের নকশা তৈরিতে বদরুল ও আমার সম্পৃক্ততা গৌরবের হতে পারে, আবুল হাশিম আর মনজুরের সবল পেশির সক্রিয়তা নির্মাণে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহিত করতে পারে, আহমেদ রফিক, আলী আজগরের সক্রিয়তা এ কাজে সুসমন্বয় আনতে পারে, মামুনুর রশিদ, আব্দুর রশিদ, ফজলে রাব্বি, আসাদুজ্জামান, জাহেদ, সিরাজ জিন্নত, কবির, সালাম, হাই, রাকিব, জিয়া, জোরো, আরো অনেকের হাত নির্মাণকাজকে ত্বরান্বিত করতে পারে কিন্তু এ কথা ধ্রুব সত্য যে এর সফল বাস্তবায়নের পেছনে ছিল সকল ব্যারাকবাসীর প্রাণের আবেগ ও যৌথ কর্মকুশলতা। শহীদ মিনার ছিল সেদিনের মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসের সকল ছাত্রের এক যৌথ প্রয়াস। কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার নির্দেশে নয়, মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও শ্রমেই এক রাতে গড়ে উঠেছিল প্রথম শহীদ মিনার।
স্থাপত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথম শহীদ মিনারের হয়তো কোনো শৈল্পিক ব্যঞ্জনা ছিল না। দ্রুতগতি যেখানে ছিল ঈপ্সিত লক্ষ্য, সেখানে তা আশা করাও যায় না; কিন্তু এক রাতে মেডিক্যাল ছাত্রদের সমষ্টিগত শ্রমে গড়া এই শহীদ মিনার এক অসাধ্য সাধন করল; যা ছিল মূলত ছাত্রদের আন্দোলন তাকে উৎসারিত করে দিল এক গণআন্দোলনে, এখানেই এর তাৎপর্য। ত্বরিত গতিতে শহরময় ছড়িয়ে পড়ল শহীদ মিনারের খবর, দলে দলে ছুটে এল মানুষ-বৃদ্ধ- বৃদ্ধা, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া, তরুণ-তরুণী, শিশুর দল শহীদ মিনারের পাদদেশে শহীদদের প্রতি তাদের 888sport apk download apk latest version জানাতে। আমাদের হোস্টেল প্রাঙ্গণ পরিণত হলো এক পবিত্র তীর্থক্ষেত্রে। ফুলে ফুলে ঢেকে গেল প্রতিবাদের প্রতীক সেই প্রথম শহীদ মিনার।
২৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিতেও পূর্ণ হরতাল পালিত হচ্ছিল, দিনটি ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত অথচ ভাবগম্ভীর। সেদিন শহীদ মিনার আকর্ষণ করেছিল 888sport appর সর্বস্তরের সর্বশ্রেণির গণমানুষকে।
পেশাগত জীবনে কাজের আঙিনায় বহু মানুষের সাথে আমার নিত্য পরিচয়। এরা নানা বয়সের, নানা পেশার। তারা শুধু অসুখ-বিসুখের কথাই বলে না, শুনি তাদের জীবনের টানাপোড়েনের কথা। আমি যেমন তাদের নাড়ির খবর জানি— তেমনি হাঁড়ির খবরও। তাদের প্রায় সবারই জীবনে নৈরাশ্য, নানা অনুযোগ, নানা প্রশ্ন তাদের অহরহ পীড়া দেয়।
স্বাধীনতার মূল চেতনাকে কি ফিরিয়ে আনা যায় না? বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাতাবরণে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক জনকল্যাণমূলক সুখী 888sport apps গড়ার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে? রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দলাদলি আর গালাগালি বন্ধ হবে কবে? দেশের হতদরিদ্র নিরন্ন মানুষগুলির দিকে চেয়েও তো তারা গলাগলি না হোক, কথা বলাবলি তো করতে পারেন। ভোটের আগে তারা জনগণের কাছে যেসব অঙ্গীকার করেন—যেমন বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করবেন, রেডিও-টেলিভিশনকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করবেন, ন্যায়পাল নিয়োগ করবেন—ক্ষমতায় গেলে সব ভুলে যান কেন? দেশের পার্লামেন্ট কবে কার্যকর হবে? দেশ কি পক্ষপাতহীন স্পিকারের ভূমিকা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে? বিরোধীদল অনুপস্থিত থাকবে—কোরাম হবে না, দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা না, বিতর্ক হবে না, এমন কেন হবে? পার্লামেন্টে এখন আর রাজনীতিবিদ নেই, সবাই কালো টাকার মালিক তারা রাজনীতিজীবী। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি চরমে উঠল কেন? ছোটখাট চুরি- ডাকাতি, ঝগড়া-ফ্যাসাদ আগেও ছিল, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে লুণ্ঠন, দস্যুতা, ছিনতাই, প্রতিপক্ষকে নৃশংসভাবে হত্যা, ব্যাংক লুট, বাড়ি ঘেরাও করে আগুন দিয়ে গৃহবাসী সকল মানুষকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া, অফিসে অথবা বাড়িতে ঢুকে দিনদুপুরে মানুষ খুন- এ সব কিসের আলামত? আরো রয়েছে শিশু অপহরণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, 888sport promo code ধর্ষণের মতো অমানবিক অপরাধ। গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা চরম অরাজকতার লক্ষণ। মানবতার এই মৃত্যু কেন? ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এ বাক্যটি নিরর্থক হয়ে গেল কেন? আমাদের জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ল কেন? জরিপে পরপর তিনবছর দুর্নীতিতে 888sport apps তালিকার শীর্ষে। প্রশাসনের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে ট্যাঁকে হাত না দিয়ে কাজ পাওয়া যায়। এক কলেজ, চিকিৎসালয়ের ন্যায় সময় জনকল্যাণ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দুর্নীতিমুক্ত বলে মনে করা হতো। পুলিশ ঘুস খায় এটাই মানুষ জানত—কিন্তু অর্থাভাবের কারণে ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলেও যে খরচ আছে তা কে জানত? পুলিশ বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। বাড়িতে চুরি- ডাকাতি বা কোনো অপরাধজনক ঘটনা ঘটলে মানুষ পুলিশকে জানাতে চায় না। এতে নাকি দুর্ভোগ বাড়ে—সময় ও অর্থ দুয়েরই অপচয় ঘটে। পুলিশ সরকারি দলের ঠ্যাংগাড়ে বাহিনীর ভূমিকা ত্যাগ করবে কবে? নাগরিক জীবনে ট্রাফিক জ্যাম’ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রশাসনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। কর্ম কমিশনকে পাশ কাটিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিলেই কি নয়? প্রশাসনে গতি সঞ্চার করার জন্য নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক বিবেচনাকে গুরুত্ব দিতে হবে কেন? দেশের বহুসংখ্যক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছে এবং জাতীয় উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শিক্ষিত বেকারের 888sport free bet বাড়ছে। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা কবে হবে দেশে? জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়ছে—তবে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের জীবনে তার ছাপ পড়ছে না কেন? নিত্যব্যবহার্য ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির উর্ধ্বগতি কি থামবে না? ভাষা-আন্দোলন সফল হলো। সেই সাফল্যের পথ মুক্তিযুদ্ধে সফল বিজয়-স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলনের অর্ধশত বছর পরেও জীবন ও ও জীবিকার সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করা গেল না কেন? এত প্রশ্নের সামনে আমি বিমূঢ় হয়ে যাব তাই তো স্বাভাবিক। আমাদের জীবনভর সংগ্রাম, সুখীসমৃদ্ধ 888sport apps গড়ার স্বপ্ন কি কোনো দিন আলোর মুখ দেখবে না? ক্ষণিকের বিহ্বলতা কাটিয়ে তাই বলে উঠি-না, না, না; তোমরা পরাজিত হতে পারো না। অমৃতের সন্তান তোমরা, শহীদের উত্তরসূরি তোমরা তোমাদের ভয় নেই, ক্ষয় নেই।
. নিশ্চুপ দর্শকের মতো চেয়ে চেয়ে দেখবার দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। স্থিতধী বুদ্ধিজীবীদের বুঝতে হবে যে স্বগত কথনের দিন ফুরিয়েছে, এখন দিন হলো সংলাপ আর সংগ্রামের, প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের। এত অনাচার, অবিচার, অবক্ষয়ের পরেও বাংলার বিরাট 888sport free betগরিষ্ঠ মানুষ তোমাদের মতোই সত্যনিষ্ঠ, সৎ, শান্তির প্রয়াসী। সমাজ পরিবর্তনে বিশ্বাসী তোমাদের 888sport free betই বেশি। তোমাদের দুর্বলতা তোমরা সংগঠিত নও। তোমাদের একত্রিত শক্তি এতই বিশাল যে তোমাদের ঐক্যবদ্ধ ক্ষমতার দুর্বার স্রোতের মুখে দুর্নীতি আর দুঃশাসনের সৌধ কালের অতলতলে তলিয়ে যাবে। বঞ্চিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, করভারে জর্জরিত সাধারণ মানুষ, হতাশাগ্রস্ত ছাত্রসমাজ এবং বুদ্ধিজীবী তরুণ- অমিত শক্তি তরুণী সবাইকে শামিল করতে হবে তোমাদের সংগ্রামে। ঐক্যবদ্ধ নিয়ে গণশত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হবে। এ লড়াই হবে গণতন্ত্রের পক্ষে— সন্ত্রাস আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে, এ সংগ্রাম চলবে নির্যাতিত গণমানুষের পক্ষে সন্ত্রাস আর কালো টাকার কালিমালিপ্ত রাজনীতির বিরুদ্ধে।
আজকে আমরা যারা প্রবীণ, বার্ধক্যপ্রপীড়িত মানুষ, আমরা যখন যুবক ছিলাম, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, তখন আমাদের শিরায় শিরায় প্রবাহিত হতো বিদ্রোহের শোণিত। আমাদের মধ্যেও ছিল রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা, কিন্তু জাতীয় জীবনের ক্রান্তিলগ্নে-মরণ-বাঁচন জাতীয় ইস্যুতে আমরা তীয় জীবনের লিগ হয়ে নিজের শক্তি ক্ষয় করিনি, পরস্পর বাদানুবাদ ও ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করিনি বরং সঠিক খাতে প্রবাহিত হওয়ার জন্য রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছি। তাই তো বিনিময়ে এসেছিল ভাষা-আন্দোলনের সাফল্য, ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে রক্তস্নাত সংগ্রাম ছিনিয়ে এনেছিল বিজয়ের রক্তিম সূর্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসোপযোগী 888sport apps গড়ার শপথ নিতে হবে তোমাদেরই-তোমরা যারা এই প্রজন্মের ছাত্র ও তরুণ। হতাশা যেন তোমাদের গ্রাস করতে না পারে, তমসা কাটিয়ে আলোর ঠিকানা বের করতে হবে তোমাদের। ভাষা শহীদের আর স্বাধীনতা যুদ্ধে তিরিশ লাখ লাখ মানুষের ও প্রাণবিসর্জন বৃথা যেতে পারে না। কে দেবে নেতৃত্ব? আমরা যেন ভুলে না যাই ভাষা আন্দোলনকে তার লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুসলিম লীগ সরকারের আরোপিত ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য কোনো রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসেনি। সেদিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ১৪৪ ধারা না ভাঙার পরে ভোট দিয়েছে, প্রগতিশীল কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিও ভোট দিতে বিরত থেকেছে। স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র ও যুবসমাজ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। আন্দোলনের ভিতর দিয়েই নেতার আবির্ভাব ঘটেছে—সফল হয়েছে হয়েছে ভাষা আন্দোলন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ই ছিল প্রতিটি আন্দোলনের প্রথম কাতারে। তাদের সক্রিয়তাই এই আন্দোলনকে গণআন্দোলনে পরিণত করে, রূপ দেয় জনযুদ্ধে। সেদিনের সেই তরুণ ও যুব সমাজ—যারা আজ বিলীয়মান প্রজন্মের শক্তিহীন মানুষ তারা চেয়ে আছে তাদের উত্তরসূরি দুটি প্রজন্মের ছাত্র ও যুবমানুষের দিকে শুরু করতে নতুন যুদ্ধ। স্থবিরতা কাটিয়ে । অবিচার, অনাচার, অনাসৃষ্টির বিরুদ্ধে হোক এ যুদ্ধ। এ পথে তার পাথেয় হবে হবে নিখাদ দেশপ্রেম আর সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যের আলো ঝলমল জাতীয় পতাকা। বিলীয়মান আমাদের প্রজন্ম, তোমাদের কি কিছুই দিয়ে যাইনি আমরা? দিয়ে গেলাম বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন তার ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বুকে নিয়ে চির উন্নত শির জাতীয় 888sport sign up bonusসৌধ ও শহীদ মিনার। 888sport sign up bonusসৌধ 888sport app download for android করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধে উৎসর্গীকৃত কৃষক-শ্রমিক লাখো শহীদের রক্তের আহ্বান। একরাতে গড়া সেই প্রথম শহীদ মিনার-আমাদের স888sport sign up bonusর মিনারের উত্তরসূরি। আজকের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রতিটি জাতীয় সংকটে ও সংগ্রামে প্রেরণা যোগায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের, তরুণ প্রজন্মকে ডাক দিয়ে যায় একতাবদ্ধ প্রতিরোধ সংগ্রামের।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.