জলে ভাসমান জীবন-বৃত্তান্ত নিয়ে প্রখর শক্তিসম্পন্ন অন্তত দুজন বাঙালি 888sport live footballিক তাঁদের মহিমান্বিত লেখনী চালনা করেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অদ্বৈত মল্লবর্মণ। অবশ্য একটি 888sport liveে একদা অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল পদ্মা নদীর প্রথম মাঝি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের নামোল্লেখ করেছিলেন। সেই অর্থে, মানিক ছিলেন, তাঁর মতানুসারে দ্বিতীয় মাঝি। অধ্যাপক কামালের প্রদর্শিত পথে চললে আমরা অদ্বৈতকে কি তাহলে তৃতীয় মাঝি হিসেবে উল্লেখ করব! অবশ্য পদ্মা নদীর নয়, এই যা! তিনি দূরবর্তী তিতাসের।
মাঝির অভিধা মেনে নিলেও মানিক ও অদ্বৈতে পার্থক্য বিস্তর। মানুষে মানুষে যে-ভিন্নতা তা-তো উপরিস্তরের – ভেতরের শ্রেণিগত আরোপিত বৈষম্য কিন্তু বহুদূরপ্রসারী। এখানে তার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। এ-কথা সত্য যে, দুজনই মাঝিদের জীবনালেখ্য রচনায় উৎসাহী। একজন বাইরে থেকে প্রবেশ করেছেন, অন্যজন ভেতর থেকেই অস্তিত্বের উদ্ভাসন ঘটিয়েছেন। দুজনই শক্তিসম্পন্ন সন্দেহ নেই। তবে একজনের কলম জেলেদের জীবনপ্রবাহ ছুঁয়ে তার অন্তর-নিবিষ্ট নর-888sport promo codeর চিরন্তন চিত্ত-চাঞ্চল্যের প্রতি অধিকতর পক্ষপাত দেখিয়েছে – তিনি স্বখ্যাত মানিক; অন্যজন সেখানে জীবনের স্বভাবগত-প্রবাহ জন্ম-মৃত্যু-বিবাহের স্বচ্ছন্দতাকে মাত্র দেখিয়ে কর্মসম্পন্ন করেননি, সেই বিশেষ সম্প্রদায়গত বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত জীবন-যাত্রার মর্মস্পর্শী চির পরিণতির চালচিত্রও দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কিত করেছেন, যা শেষাবধি বৃত্তান্তের ব্যঞ্জনা থেকে সরে এসে নিরুপায় বৃত্তের স্তরে আবদ্ধ হয়েছে।
তবু আমরা এমন জীবন-চিত্রায়ণের সগৌরব মুখরতা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে পারি না। বুঝতে পারি, পক্ষান্তরে এ-যেন আমাদেরই জীবন-বিকাশের অন্য একটি দিক। কেননা, হাস্যকর উক্তির মতো শোনালেও বাস্তবে লক্ষণীয় যে, আমাদের জীবনায়নে মৎস্যের ভূমিকা প্রায় অপরিহার্য। সেই পুষ্টিকর খাদ্যপ্রাণ-সংবলিত অতি উপাদেয় বস্তুটি যারা জল থেকে সংগ্রহ করেন, তাদের কথকতা তাই যেন, একটি সম্প্রদায়-বিশেষের মধ্যে আটকে থাকে না – আমাদের সবার অনুভবযোগ্য ভাবনার মধ্যবর্তী স্থানে এসে দাঁড়ায়। আমাদের আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলে।
সেই আগ্রহ জীবন্ত রেখে চোখ খুললে দেখতে পাই : প্রবল মানবসমাজের একাংশের জীবনচিত্র চিরকালীন ধ্রুপদী মহিমায় দুটি 888sport alternative linkে কেমন চিত্রিত! অথচ সময়সীমার দিকে তাকালে আমাদের আশ্চর্য হতে হয়। পদ্মা নদীর মাঝি ১৯৩৮ এবং তিতাস একটি নদীর নামের পত্রিকায় প্রকাশের সাল ১৯৪৫। মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে দুই আকাশভেদী মূর্তিমন্ত মহীরূহ পরিপূর্ণ অভিনিবেশে আমাদের জ্ঞানে আসে, 888sport alternative linkদুটির রচনাকাল ১৯৪৭-এর ভারতীয় স্বাধীনতার পূর্বপ্রান্তিক পর্বের হলেও সামগ্রিক উপাখ্যানদ্বয়ে পরাধীনতাজনিত বেদনা-ব্যর্থতার লেশমাত্র কাউকে বিদ্ধ করেনি। তখন স্বভাবত প্রশ্ন জাগে, সমাজের একেবারে প্রান্তিক সীমায় অবস্থানকারীদের কি উপনিবেশী শাসনরজ্জু কোনো ক্ষতি করে না? তার বন্ধন কি মাত্র উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে আবদ্ধ থাকে? যা-ই হোক, আমাদের স্বীকার করতেই হয়, কি পদ্মা নদীর মাঝি অথবা তিতাস একটি নদীর নাম 888sport alternative linkদুটির প্রেক্ষাপট আঞ্চলিক, সীমিত অবস্থিতির মধ্যেই তার ওঠানামা। এর মধ্যেও অদ্বৈত মানিকের কৃতিবিষয়ে উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন – ‘Master Artist, কিন্তু বাউনের পোলা – রোমান্টিক।’
দুই
নিজেদের জীবন নয়, জেলেদের ভিন্নধর্মী সংগ্রামমুখর জীবনের অভ্যন্তরে নেমে পড়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবন দেখার জন্য, গল্প সংগ্রহের জন্য। সে-কাজ তিনি নিশ্চিন্ত নির্ভরতায় সমাপন করেছেন। দেখেছেন, ছোট জীবনের ফাঁদে-পড়া মানুষের বিচিত্র ভঙ্গি, তাঁর বাঁচার একান্ত নিজস্ব প্রয়াস, প্রচেষ্টা। এখানে যেন সত্য-মিথ্যা একাকার, একই হাটের সামগ্রী। জীবন তাদের যেমন শিক্ষা দিয়েছে, কোনোমতে মুখে দুটি গ্রাস তুলবার আপ্রাণ প্রয়াসে তারা যখন যে-রকম, তখন সে-রকম কথার বেসাতিতে আগ্রহী হয়। বিচারসাপেক্ষ সততার, সত্যবাদিতার সামান্য স্পর্শও তাতে থাকে না – বলা ভালো, থাকলে তাদের জীবন চলে না। বাইরে থেকে আগত জীবন-888sport live chatীর শতচক্ষুর আগ্রাসী-অবলোকন তাদের আব্রুর ঘেরাটোপ অতিক্রম করে মর্মস্থলে পৌঁছে যায়। আমরা হতবাক হয়ে লক্ষ করি, বিত্তহীন দরিদ্রের অবলীলাক্রমিক মিথ্যা ভাষণ – আপন স্বার্থের পশরাবাহী জীবনযাপন। মানিক অবশ্য এটাকে সরল স্বাভাবিকতায় গ্রহণ করেন। ঘটনা-বর্ণনার অন্তে তাদের স্বরূপকে ঘৃণ্য বলে প্রত্যাখ্যান করেন না। বরং এ-জীবনে এমনটাইতো স্বাভাবিক, এ-রকম মানসিকতার পরিচয় দেন।
‘ধনঞ্জয় নৌকায় আসিলে মাথা উঁচু করিয়া কুবের জিজ্ঞাসা করিল, কতটি মাছ হইল আজান খুড়া? শ-চারের কম না অ্যাঁ?
‘ধনঞ্জয় মুখে একটা অবজ্ঞাসূচক শব্দ করিয়া বলিল, হ, চাইরশ না হাজার। দুইশ সাতপঞ্চাশখান মাছ। সাতটা ফাউ নিয়া আড়াইশর দাম দিছে।
‘কুবের উঠিয়া বলিল।
‘ইটা কি কও খুড়া? কাইল যে এক্কেরে মাছ পড়ে নাই, কাইল না দুইশ সাতাইশ মাছ হইছিল।’
ধনঞ্জয়ের মিথ্যা ভাষণে অবদমিত কুবেরের মননশীলতার পরিচয় মানিক এভাবে দেন, ব্যাখ্যা এভাবে করেন –
‘গরিবের মধ্যে সে গরিব, ছোটলোকের মধ্যে আরও ছোটলোক। এমনভাবে তাহাকে বঞ্চিত করিবার অধিকারটা সকলে তাই প্রথার মত, সামাজিক ও ধর্মসম্পর্কীয় দশটা নিয়মের মতো, অসঙ্কোচে গ্রহণ করিয়াছে সে।’
অথচ বঞ্চিত ও প্রতারিত কুবের এমন পিষ্টতায় অভ্যস্ত হয়ে নিজেও কোনো কোনো সময়ে চোর ব’নে যায়। স্ত্রী মালার প্রসূতিগৃহের জন্য সে ‘দেবীগঞ্জের রেল কোম্পানির কয়লা চুরি করিয়া আগুনের ব্যবস্থা’ করে। এতে সে কোনোরূপ মর্মপীড়া অনুভব করে না। চির অভাবের নিপীড়ন কিন্তু একার কুবেরের নয়, তাদের গোষ্ঠীর সবারই ন্যায়-অন্যায়ের অনুভূতিকে কোনো সুদূরে বিসর্জন দিতে বাধ্য করে। উপরন্তু যে-জীবনের সঙ্গী-সাথি তারা, তাতে অল্প প্রাপ্তিতেও সন্তুষ্টির বাহুল্য ঘটে থাকে। ‘একটি কাঁঠাল, দুটি আনারস, আধসের বাতাসা – এই দরিদ্রের উপনিবেশেও যে দরিদ্রতম পরিবার শুধু নুন, আর অদৃষ্টকে ফাঁকি দিয়া ধরা পুঁটির তেলে ভাজা পুঁটিমাছ দিয়া দিনের পর দিন আধপেটা ভাত খাইয়া থাকে – খুশি হইয়া উঠিতে আর তাহাদের অধিক প্রয়োজন কীসের?’ আর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি? তাদের পরিসর সংকীর্ণ, কিন্তু তা তাদের দৃষ্টিকে সংকীর্ণ করতে অপারগ হয় – সাম্প্রদায়িকতার নিম্ন সোপানে বসতে দেয় না। মানিক তারও ব্যাখ্যা করেন এভাবে – ‘ধর্ম যতই পৃথক হোক দিনযাপনের মধ্যে তাহাদের বিশেষ পার্থক্য নাই। সকলেই তাহারা সমভাবে ধর্মের চেয়ে এক বড় অধর্ম পালন করে – দারিদ্র্য।’ নজরুল ইসলামের সেই অদ্বিতীয় চরণ ‘হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান’, তা যেন এই এদের অর্থাৎ জেলেদের জীবনে এসে সার্থকতালাভ করে।
কিন্তু নিরন্তর দারিদ্র্যের হতকুৎসিত চেহারা-অঙ্কনে মানিক যেন ইতস্তত করেন। ‘দুর্নীতি, দারিদ্র্য, অন্তহীন সরলতার সঙ্গে নিচু স্তরের চালাকি, অবিশ্বাস ও সন্দেহের সঙ্গে একান্ত নির্ভয়, অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে ধর্ম অনায়াসে সহিয়া চলা’ এ-সবের অতিরিক্ত অন্য এক কথকতা মানিক জুড়ে দেন। সেটা হোসেন মিয়ার বিষয়। ছেনাল-ধর্মী কপিলার প্রসঙ্গ। এখানে যেন দারিদ্র্যের দুরন্তপনা কিঞ্চিৎ শমিত আকার পায় এবং এ-সকলের উপস্থাপনায় মানিক অদ্বৈতের চোখে রোমান্টিক বলে গণ্য হতে থাকেন।
লক্ষ করা যায়, দুটি মানুষের ক্রীড়নকে পরিণত হয় কুবের। অতি সাধারণ আর দশজনের মতো সামান্য মানুষ কুবের কেন এই টানাপোড়েনের শিকার? বোঝা যায় না। সে অতি বিশ্বস্ত, বড়ো অপরাধে অনভ্যস্ত এবং প্রথম ডাকের মাথায় তাকে পাওয়া যায় বলে? কাহিনীতে লভ্য হয়, পুরুষ হোসেন, মেয়ে কপিলা দুদিক দিয়ে তাকে মহিমান্বিত করে – বিপর্যস্তও করে। কারণ, সত্যি অর্থে কুবেরের কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই – বলতে গেলে বৈশিষ্ট্যহীনতাই তার বৈশিষ্ট্য – এজন্যে সে মানিকের নায়ক – পরস্পরবিরোধী হোসেন ও কপিলার উদ্দেশ্যসাধনের একমাত্র হাতিয়ার।
কুবেরের দিক দিয়ে দেখলে, এই দ্বৈতপ্রয়াস তাকে অন্যদের তুলনায় পৃথক করে। তার বেসামাল দারিদ্র্যের মধ্যে তাকে কিছুটা স্বস্তি ও সান্ত্বনা দেয়। পঙ্গু মালা, তার গর্ভজাত তিন সন্তান তার মনে যে-নিরাকার একঘেয়েমির আবর্ত সৃষ্টি করে, এই দুই সিঁড়ি তার থেকে তাকে উদ্ধারের এক বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য হয়। কারণ যে-স্রষ্টার সন্তান তারা, সেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী-নির্মাণে তাদের এমনতর হয়ে যেতে হয়। নইলে জীবন ও জগতের নির্বিকার পৌনঃপুনিকতা তাঁর লেখনীকে স্তব্ধ করে। বাইরের স্থূলতাকে ছাপিয়ে অন্তরের কল্পনাপ্রবণতাকে উসকে না দিলে সেটি দৈনন্দিনতার রঙহীন ফ্যাকাশে সংবাদ-পরিবেশনের পর্যায়ে আটকে থাকে। 888sport live football পদবাচ্য হয়ে ওঠে না।
মনুষ্যজাতির অন্তরধর্মের যৌনাবেদনমূলক প্রেম-ভাবনার রূপায়ণ তাই যেন এক আবশ্যিক কর্মকাণ্ড হয়ে দাঁড়ায়। সে-কারণে কপিলাকে ছাড়া যায় না। তার চিন্তাকে মনের গহীন আঁধারে সুপ্ত রাখতে হয়। কখনো বা ধ্রুবতারাসদৃশ সচেতনতায় তার আলোকে পথ চলতে হয়। কুবেরের ভাঙাচোরা স্বপ্নবিহীন প্রাত্যহিকতায় কপিলা ‘কোনদিন একটি চিমটি কাটিয়া, হাসি চাপিয়া চোখের পলকে উধাও হইয়া – ঘুম আসিবার আগেই কপিলা তাহাকে স্বপ্নও আনিয়া দেয়।’
আমরা কুবেরের চোখে এই নতুন স্বপ্ন আনার কথাটিই পরিষ্কার করতে চাই। নিঃস্বতার, নিঃসহায়তার এ-এক অমোঘ অস্ত্র, যা দিয়ে পরিকীর্ণ পঙ্কিলতাকে কেটে অগ্রসর হতে হয়। ‘চিরদিনের শান্ত নিরীহ কুবেরকে কোথায় যেন সে লইয়া যাইবে’ কপিলার ওপর এমন আস্থাও অনুক্ষণ সজীব রাখতে হয়।
আত্মীয়ের অন্নধ্বংসকারী উপস্থিতির অবশ্যম্ভাবী পরিণতির কথা ভাবতে ভাবতে ব্যাকুল হওয়া কুবেরকে নদীর ঘাটে কপিলা নিজ হাতে তামাক সেজে এগিয়ে দিতে যায়। হয়তো কপিলার স্নেহ, হয়তো উন্মুক্ত পদ্মার বন্ধনহীন বাতাস অবশেষে তার চিত্তজ্বালা কমায়। কুবের মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়ে। তখন আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি। আসে প্রলয়ংকরী ঝড় – কালবোশেখির চেয়ে ভয়ংকর। মালোপাড়ার বাড়িঘরের তাতে সমূহ ক্ষতি হয়। আমিনুদ্দির ঘর গাছ পড়ে শুধু চূর্ণই হয় না, মারা পড়ে তার স্ত্রী – সর্বস্বান্ত হয় সে। ‘যে মেয়েকে পর্দায় রাখিবার জন্য গরিব আমিনুদ্দি কুটির ঘেরিয়া উঁচু বেড়া দিয়াছিল, আজ যার খুশি তাকে দেখিয়া যাও – অবস্থান্তরে এমন দৃশ্যেরও দেখা মেলে।
কুবের ফিরে এলে তার ঘর পড়ে যাওয়ার বেদনায় সে মোহ্যমান হয়। কুবেরের মেয়ের পা ভাঙে। কপিলা সবকিছু সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সর্বস্বান্ত কুবেরের ঘর নতুন বাঁশ-খুঁটি দিয়ে হোসেনের নির্দেশে মজুররা ঠিক করে। হোসেন, কুবের-কন্যা গোপীর জন্য, বড়ো দরদও দেখায়। হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। সর্বগ্রাসী অজগর যেন আপন শিকার ঠিক করে – নিজ-অবস্থান পূর্ণাঙ্গ সচেতনতায় স্থির করে রাখে।
কপিলার তাকও কম নয়। মহকুমা হাসপাতালে গোপীকে নিয়ে যাওয়ার লগ্নে সে-ও কুবেরের সঙ্গী হয়। এবং সবাই চলে গেলেও গোপীকে আরেকবার দেখার প্রত্যাশী হয়ে থেকে যায়। তারা মিলিতভাবে হোটেলে খায় এবং রাত কাটায়।
পরদিন গাঁয়ের ঘাটে নেমে কুবের কপিলাকে আগে বাড়ি পাঠাতে চায়। আশা, প্রথম ঝাপটা কপিলার ওপর দিয়ে যাক। কিন্তু সে রাজি হয় না। রুখে উঠে বলে – ‘আরে পুরুষ!’
দুদিন পরে গোপীকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার লগ্নে কুবের ও কপিলার কথোপকথন :
‘খাইয়া উঠ্যাই আমিনবাড়ি রওনা দিমু কপিলা।
ফিরবা না আইজ?
কেডা জানে?
থাইকো, মুক্তার বাবুগো বাড়ি থাইকো।’
এসব বলে কপিলা মিষ্টি মিছা কথার বহর ছুটায়। আর কুবের? সে মাত্র লজ্জায় ঘাড় হেট করে। মনে তার এক অবিশ্বাস্য ভাবনা দৃঢ় হয় : ‘বড় নির্মম কপিলা, বড়ো দুর্বোধ্য তাহার ব্যবহার।’
এমন রঙ্গরসের, ভাব-ভালোবাসার কপিলা অতঃপর তার স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি রওনা দিয়ে কুবেরের ‘অবিশ্বাস্য ভাবনা’কে শক্ত ভিত দেয়। পর888sport promo code-সংক্রান্ত চিন্তার আপাতত এখানে ইতি। কিন্তু তা যে সর্ম্পূণ বি888sport sign up bonusর পর্যায়ে পৌঁছে না, তা পরবর্তীকালে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কুবেরের সংসারে অভাব নামে। চাষিদের ঘরে টাকা না থাকলেও পাট আছে – কিন্তু কুবেরের কিছুই নেই। কুবের কাজ মাঝিগিরি করা – সেটিও এখন ভালোমতো জুটছে না। এরপরে গোপী হাসপাতাল থেকে ফিরেছে শক্ত হাঁটু নিয়ে। তার পক্ষে হাঁটা প্রায় অসম্ভব। সুতরাং মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা তার লুপ্ত। কী করবে এখন সে? হেনকালে কর্মহীন কুবেরের কাছে হোসেন মিয়া প্রস্তাব রাখে : ‘কাম করবা আমার নায়?’ এমন প্রস্তাবে পুরাতন সন্দেহ ঘনীভূত হয়, তবু বাহ্যিক আগ্রহ দেখাতে কুবের কসুর করে না। কথার ফাঁকে গণেশকে সঙ্গে নেওয়ার অনুরোধ রাখে। তা মঞ্জুরও হয়।
এভাবে একদিকে কুবের বাঁধা পড়ে। বরং বলা ভালো, তার আর্থিক দৈন্য ও কর্মাভাবের ছিদ্র দিয়ে পরাক্রান্ত এক শক্তি তাকে কব্জা করে নেয়। হয়তো সে-শক্তি ময়না দ্বীপের ভবিষ্যৎ-নাগরিক হিসেবেও তাকে গণনা করে রাখে।
হোসেনের কাজে কুবেরের অর্থকষ্টের কিছুটা সমাধান হয়। সে জেলেবৃত্তি সম্পূর্ণ ত্যাগ করে। দূরদূরান্তরে এমনকি সুদূরবর্তী ময়না দ্বীপ পর্যন্ত নৌকার মাঝিগিরি করে। সঙ্গে থাকে হাবা-বোকা গণেশ। হোসেন-প্রদত্ত কর্মবৃত্তি তাকে গোপীর বিবাহের সমস্যাতেও স্বস্তি দেয়। হোসেন স্বয়ং তার গার্জেন হয় – তবে কথা একটাই, বিয়ের পরে একদিন সে-দম্পতির ময়না দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। সবদিকে ভালো হলেও এতে কুবের, রাসুর আক্রোশে পড়ে। তাকে কন্যার পাত্র হিসেবে বাতিল করায় সে প্রতিশোধ নেওয়ার আক্রোশে অস্থির হয়।
জীবনযাত্রার প্রাথমিক ঝামেলামুক্ত কুবের অতঃপর কপিলার চিন্তায় মগ্ন থাকে। আধা-স্বপ্ন আধা-জাগরণে তার ভাবনা এক জটিল জালে আটকে পড়ে। সর্বশক্তিমান হোসেনকে সে যেন বলে, কপিলাকে পেলে সে ময়না দ্বীপে বাস করবে।
একদিন কুবের টের পায়, বিপজ্জনক আফিম-বহনের কাজও তাকে দিয়ে করানো হয়।
এতে একবার সে ভাবে হোসেনের কাজ ছেড়ে দেবে। কিন্তু প্রথম সচ্ছলতার স্বাদ পাওয়া কুবেরের এ-চিন্তা অবশেষে ভেস্তে যায়। উপবাসের কষ্টকর চিন্তা তাকে নীরব থাকতে বাধ্য করে। বরং তার আবোল-তাবোল চিন্তা প্রখর হয় : হোসেনের কালো বেল্ট থেকে একতাড়া নোট উপহার হিসেবে আসে। চার ভিটায় চার বড়ো ঘর তোলে সে। আর কপিলাকে নিমন্ত্রণ করে এনে তার দুপা জড়িয়ে ধরে যেন বলতে থাকে : ‘ও কপিলা আমারে ফেইলা যাইস না – আমি নি মইরা গেলাম কপিলা তোরে না দেইখা।’ বোঝা যায়, হোসেন ছাড়া অন্যদিকেও এবার আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়েছে কুবের। দুর্দান্ত হোসেন মিয়া ও দুঃশীলা কপিলা সুন্দরী দুদিক থেকে তাদের রজ্জু শক্ত বাঁধনে এঁটেছে।
এই বাঁধনের তীব্রতর বাস্তবতা অতঃপর একদিন দুজনকে কাছে টানে। ভেসে যায় তাতে মালা, তার দুই পুত্র, এক কন্যা। জগৎ-সংসার, ভালো-মন্দের ভাবনা – সব, সবকিছুই।
‘কপিলা বলে, ধর মাঝি, কলস ধর।
বলে, আমারে ধর ক্যান? কলস ধর।
হ, ভীত চোখে চারিদিকে চাহিয়া কলসীর মতই আলগোছে কপিলা ভাসিয়া থাকে, তেমনি ত্রাসের ভঙ্গিতে স্তন দুটি ভাসে আর ডোবে। চোখের পলকে বুকে কাপড় টানিয়া হাসিবার ভান করিয়া কপিলা বলে, কথা যে কও না মাঝি?
কুবের বলে, তর লাইগা দিবারাত্র পরানডা পোড়ায় কপিলা। উদ্ধৃতি এখানে শেষ। কুবের মাঝি এখন প্রেমিকে রূপান্তরিত। এই নতুন প্রবৃত্তি কুবেরের সংসার-বন্ধন আলগা করে দিয়েছে। তাকে রোমান্টিক করে তুলেছে। বিপদের শত বাধা, সাংসারিক দায়িত্ববোধ, এমনকি মনুষ্যত্ববোধ পর্যন্ত সব শিথিল হয়ে গেছে কুবেরের।
তবু বোধকরি শেষটুকু না বললেই নয়। গোপীর বিয়ের পর মেয়ে-জাইমাকে উঠিয়ে দিয়ে কুবের জরুরি কাজে বাইরে যায়। সেখান থেকে ফিরতে রাত হলো। নিজেদের বাড়ির ঘাটে এসে দ্যাখে সাদা কাপড় বাতাসে উড়িয়ে কে যেন এক মেয়ে দাঁড়িয়ে। সে কপিলাই।
কপিলা তাকে এক ভয়ংকর বার্তা শোনানোর অপেক্ষায় আছে। বিকেলে বাড়িতে পুলিশ এসে ঢেঁকিঘরের পাটখড়ির বোঝার তলে পীতম মাঝির চুরি যাওয়া ঘটিটা পেয়েছে। বাড়ি ঢুকলেই চৌকিদার তাকে ধরবে। রাসুকে ঠকানো হয়েছে, মেয়ে দেওয়া হয়নি – তার প্রতিশোধস্বরূপ সে এভাবে কুবেরকে জব্দ করতে চেয়েছে। এটা বুঝে শেষ আশ্রয় হোসেন মিয়ার কাছে যায় কুবের। সঙ্গ ধরে কপিলা। সব শুনে লালচে দাড়ি মুঠোয় ধরে হোসেন কুবেরকে ময়না দ্বীপে যাওয়ার প্রস্তাব রাখে। তাহলে সে চুরি সামাল দেবে।
অবশেষে শেষদৃশ্যে আমরা কী দেখতে পাই? জেলখাটার ভয়ে কুবের শেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। নীরবে ময়না দ্বীপগামী নৌকায় উঠে বসে। সঙ্গে থাকে কপিলা।
এবার মানিকের ভাষায় বর্ণনাটি শুনি :
‘ছইয়ের মধ্যে গিয়া সে (কপিলা) বসিল। কুবেরকে ডাকিয়া বলিল, আমারে নিবা মাঝি লগে?
হ, কপিলা চলুক সঙ্গে। একা অতদূরে কুবের পাড়ি দিতে পারিবে না।’
আমরা বুঝতে পারি, ময়না দ্বীপে পৌঁছে কুবেরের মাঝিবৃত্তি চিরদিনের মতো শেষ হয়ে যাবে, নতুনতরভাবে শুরু হবে হলকর্ষণের চিরন্তন বৃত্তি। এভাবে মানিকের হাতে কুবেরের শ্রেণিবিপর্যয় ঘটে। চিরপরাজিত কুবের মাঝি পরস্পরবিরোধী দুই শক্তির হাতে নিষ্পেষিত হতে হতে নতুন মানুষে রূপান্তরিত হয়।
তিন
তিতাস একটি নদীর নাম 888sport alternative linkে ব্যবহৃত ভাষাকে শ্রেষ্ঠ গদ্য বলে উল্লেখ করেছেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। শ্রেষ্ঠ গদ্য নিশ্চয়ই, তবে তার সঙ্গে তার সামগ্রিক কাহিনী-পরিকল্পনা ও স্ফুটনোন্মুখ কারুকর্মিতাও প্রশংসার দাবিদার। একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের জীবন, তার বাঁচন ও মরণ, একটি মনোরম মালার সূত্রে এখানে গ্রথিত। বাংলায় কতরকম সম্প্রদায় আছে? কেউ যদি সেখান থেকে একটি একটি করে তুলে নিয়ে আলাদা কাহিনী রচনা করেন, তবে তা পড়ে পাঠকের কত বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না হতে পারে! মনে হবে কত বৈচিত্র্যময় এই 888sport apps!
তবে অদ্বৈত মল্লবর্মণ এখানে, এই তিতাস নদীর উপাখ্যানে, জীবনের বৈচিত্র্য দেখাতে চেয়েছেন, এমন কথা সত্য না-ও হতে পারে। তিনি একনিষ্ঠভাবে তিতাস নদীর ভরভরন্ত প্রবহমানতা এবং অবশেষে একদিন চর জেগে উঠে অকস্মাৎ অপঘাত মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার তীরে বসবাসকারী ও ওপরে নির্ভরশীল মালো সম্প্রদায়ের তীব্র তিক্ত করুণ মৃত্যুর চিত্র বড়ো নিপুণ হস্তে এঁকেছেন, এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। যে-কয়েকটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করে তিনি এ-888sport alternative linkের আখ্যান গড়ে তুলেছেন, তার মধ্যে প্রথমটি বাদে আর সবকটিতে হতাশ্বাস মৃত্যুর আতুর অন্ধকারকে অবলোকন করা যায় সহজেই। মনে হয়, তিনি যেন জীবনের নয়, মরণের আর্তিকে অবলম্বন করে এমন কাহিনী-বুননে আগ্রহান্বিত হয়েছেন। আসলে সমাজের প্রান্তিক-সীমায় অবস্থানরত মানুষ যে কত শীঘ্র মৃত্যুর গহীন অন্ধকূপে অকস্মাৎ ঝাঁপ দিতে পারে, তারই আলেখ্য বড়ো নিদারুণ কথামালায় এখানে অভিব্যক্ত।
প্রথম শিরোনাম : তিতাস নদীর পরিচয়ে লেখকের দার্শনিকতা বেশ প্রবল। সঙ্গে কবিত্বের মুডও অসংশয়িত আবেগে উচ্ছল। তবে তার মধ্য থেকে একটি-দুটি সংবাদও লভ্য। পদ্মা নদীর মাঝিতে মালোদের স্থান সংকুচিত অথচ – এখানে এই তিতাসের তীরের প্রসারিত ভূমিতে বসবাসকারীদের নদীর প্রবাহিত তরঙ্গে মাছধরা ও আকাশ-মাটি-নদী এই ত্রয়ীর মিলন-সঙ্গমে যাপিত উদ্ভিন্ন জীবনযাত্রার মনোরম ভঙ্গি এক কাব্যিক পরিবেষ্টনী রচনা করে। তাই এখানে মানুষের মন উদার। অতি ছোটত্বের অমানবিক স্থূলতা ও সেই সঙ্গে চৌর্যবৃত্তির, মিথ্যাভাষণের ও লোক ঠকানোর কলুষতা তাদের স্পর্শ করে না। অন্তত অদ্বৈত এখানে মনুষ্যধর্মের এই বিপরীত ব্যঞ্জনা-অঙ্কনে পরান্মুখ থাকেন।
কাহিনীর সূত্রপাত প্রবাসখণ্ড থেকে।
জেলেদের একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতালব্ধ জীবনায়ন। অন্য কারু সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। অন্যেরা তাই সহজ বর্ণনার এ-কাহিনী বড়ো মনোযোগ দিয়ে পড়েন – তার ভেতরের বাস্তবতাকে স্পর্শ করতে চান। বোঝেন, এমন কথকতা মাত্র এদের মধ্যে জাত কারু মুখনিঃসৃত হতে পারে! তাই সরস ও সত্যভাষণের আকর্ষণে মন উন্মুক্ত হয়ে থাকে।
তিতাসের জলে, তার কাছে দূরের কোনো অঞ্চলে, আর জালে-মাছে এক করা যাচ্ছে না। তাই ভেসে পড়তে হবে সুদূরবর্তী কোনো জায়গায়। আর সে-জন্যেই দুবন্ধুতে মিলে মাছের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে এক বৃদ্ধ। নাম তিলক।
নাও কিশোরের। সুবল সহযোগী।
যে-কালের গল্প এবং যাদের গল্প, সে-কাল ও সে-মানুষ, আজকের নয় – সে-কালে সে-মানুষের মনে পরের জন্য মমত্ববোধ ছিল। তাই, কিশোর ও সুবল স্থানে স্থানে আতিথ্য গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। খাতির পায়। গান-বাজনার আসরও বসায়। বোঝা যায়, নিস্তরঙ্গ জীবন হলেও তা অপসারণে আগ্রহের ও যোগ্যতার অভাব তাদের নেই।
এই নৌকাযাত্রার ঐকান্তিক কাহিনীর মধ্যে মালোদের বোধজনিত এক কাল্পনিক কিন্তু উত্তেজক খবর আমরা পাই। তা সামান্য ব্যাপার হলেও তা-ই আমাদের বলে দেয়, এটি জেলেদের কাহিনী বটে!
মেঘনার বুকে আড়াআড়ি পাড়ি দেওয়ার লগ্নে নৌকা কূলহারা হয়ে নিরুদ্দেশ হতে বসে। সে-সময় : ‘হঠাৎ নৌকাটা কীসের উপর ঠেকিল, ঠেকিয়া একেবারে নিশ্চল হইয়া গেল। আতঙ্কিত হইয়া তিলক বলিয়া উঠিল, আর আশা নাই সুবল, কুমিরের দল নাও কান্ধে লইছে।’
বাস্তবে ঘটনাটি সত্য নয়। কিন্তু তিলকের আতঙ্কজনিত উচ্চারণে আমরা স্তব্ধ হয়ে ভাবতে বসি, এমনও হয়! সর্বক্ষণ স্থলে বিচরণশীল থেকে, অমন কথা আমাদের সম্পূর্ণ নতুন লাগে।
যা-ই হোক, অতঃপর একদা নতুন নদীতে এসে মোড়লের ছত্রছায়ায় দুবন্ধুতে মিলে মাছ ধরে। রোদে শুকায়। এ-সময়ে ঘটে কিশোরের জীবনের সবচেয়ে আনন্দকর ঘটনা। যদিও পরিণামে তা চরম বিপর্যয়কারী হয়ে দেখা দেয়। একটি মেয়েকে কিশোর ভালোবেসে ফেলে। মেয়েটির প্রেমেও ধন্য হয় সে। এই ভালোবাসাবাসি ফুলে ফলে সার্থকতা লাভ করে। মোড়ল ও তার গৃহিণীর সাহায্যে একে অপরের সঙ্গে মালাবদল পর্যন্ত হয়। সম্পূর্ণ বিবাহ কিশোরের আবাস-গৃহে পৌঁছে সম্পন্ন হবে, এমন কথা থাকে।
মোড়ল অবশেষে তাদের ত্বরিত বিদায় দেন। কারণ তার ও তার সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসছে ভয়ংকর আপতিক বিপদ। বহুদিনের জমে থাকা বিসম্বাদের সংঘাত-সংকুল পরিসমাপ্তি। তিনি বাইরের অতিথিদের এর মধ্যে জড়াতে চান না।
বন্ধু সুবল ও বৃদ্ধ তিলককে সঙ্গে নিয়ে কিশোর-দম্পতি নৌকায় ওঠে। অনেক দূর পর্যন্ত এসে কন্যার পিতা-মাতা তাদের বিদায় জানিয়ে ফিরে যায়।
তারপর সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। শ্রান্তিবশত নিদ্রামগ্ন থাকা অবস্থায় পরিশ্রমলব্ধ অর্থ অপহৃত হওয়া এবং সেই সঙ্গে নতুন বধূর বেপাত্তা হয়ে যাওয়া এবং এর বেগ সামলাতে না পেরে কিশোরের উন্মাদ অবস্থা-প্রাপ্তি। নৌকায় আকস্মিক এই ডাকাতি কিশোরের সচেতন জীবনের যেন চরম যবনিকাপাত ঘটিয়ে দিল। এতে তরুণ ও আশাপ্রদ যৌথজীবনের ভিত ধসে পড়ল। এভাবে অদ্বৈত আশা নয় বরং তার বিপরীত এক চিত্র-অঙ্কনে তৎপর হন।এরপর নয়াবসত এবং জন্ম-মৃত্যু-বিবাহপর্বের কাহিনী। এ-যেমন আকর্ষক তেমনি মর্মন্তুদও বটে! ডাকাতের হাত থেকে পালিয়ে কোনোমতে তীরে ওঠে নতুন বৌ। সেখানে একাকী চরে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পেয়ে বাড়িতে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় দুই বৃদ্ধ। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। একদিন অনন্ত ভূমিষ্ঠ হয়। অনন্তের মা সব ভুললেও স্বামীর গ্রামের নামটি 888sport app download for androidে থাকে। চার বছর পর সে-গ্রামের খোঁজে তারা নৌকা করে যায়। পাওয়া যায় সে-গ্রাম। বৃদ্ধেরা তাকে সেখানে রেখেও আসে। আমাদের বুঝতে হবে, এ-কাহিনী ’৪৭-এর স্বাধীনতাত্তোর শরণার্থী-সমস্যা-জর্জরিত কোনো সময়ের নয়। মানুষ তখনো বাইরের অমন প্রবল আঘাত ও তজ্জনিত সংকটের সম্মুখীন হয়নি। যুগযুগবাহী জীবনযাত্রার সেই পুরনো আদলটি তখনো অক্ষুণ্ন অবস্থায় ছিল। সুতরাং নতুন স্থানে নতুন মানুষের তেমন কোনো প্রবল সমস্যায় পড়তে হয়নি। একেবারে মাটিলগ্ন মানুষ অনন্তের মা-র জীবনে কোনো চাহিদাও ছিল না। তাই নতুন পরিবেশের মানুষেরা যেমন করে হোক, তাদের আপন করে নিয়েছে। এখানে পাগল কিশোর, বিধবা বাসন্তীদের সঙ্গে সাক্ষাৎও হয় তার। নানা টানাপড়েনে, কথোপকথনে, জীবননির্বাহের নানা লগ্নে প্রখর অনুভূতিবোধে সে যেন একেক করে সবাইকে চিনতে পারে। দ্যাখে, পাগলই তার হারিয়ে যাওয়া মালাবদল করা স্বামী। বন্ধু সুবলকে হারিয়ে সখী বাসন্তীর বিধবা বেশ। তাই আমাদের আলাদা করে কিছু বলবার থাকে না। তবে এটুকু বলব, অন্ত্যজ মালোদের আশা-আকাক্সক্ষার, চাহিদা-বাসনার প্রবল জগতের এমন পরিপূর্ণ চিত্রায়ণ সম্ভবত মানিকের উদ্দিষ্ট ছিল না। তিনি জীবনে বাঁচার কঠিন প্রয়াসের গূঢ় গভীর ও সেই সঙ্গে রহস্যাবৃত প্রেমের অভিধাকে আবরণমুক্ত করতে অধিকতর প্রয়াসী ছিলেন। কিন্তু অদ্বৈতের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি যে-জীবনের আখ্যান রচনা করেছেন, তা একান্তভাবে তার নিজের, স্বজাতিরও। এখানে মানুষের বেঁচে থাকা বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া ভিন্নমাত্রার পরিচয়বাহী। সুবলের মৃত্যু একান্তভাবে নৌকানির্ভর জীবনে ঘটে থাকে। আবার সমস্যা-সমাধানে সবার মিলিত সভায় যে-কথা উঠে আসে, তা-ও, জলে কর্মরত অথচ ডাঙায় বসবাসকারী মানুষের। যেমন – ‘ঘরের মালিক তার বাসিন্দা। কিন্তু মাটির মালিক জমিদার। জমিদারের সঙ্গে সে বাড়ির কোনো যোগ নাই। সে থাকে তার রাজসিক ঐশ্বর্যের মধ্যে ডুবিয়া। …জমিদার নিজে আসিয়া সেখানে বাড়ি বাঁধে না। বাঁধিলে অনেক জমিদারের প্রয়োজন হইত। তারা সত্য নয় বলিয়া 888sport free betয় কম। মানুষের মধ্যে তারা ব্যতিক্রম। রায়েতেরাই সত্য। তাই ঘুরিয়া ফিরিয়া মাটির মালিক হয় তারাই।’ উদ্ধৃতিটিতে সত্য-মিথ্যার টানাপড়েনে সত্যের জয়ের সঙ্গে 888sport free betধিক্য মানুষেরও জয়ধ্বনিত হয়।
অনন্তের মা-র কঠিন জীবন, ভাতের অভাব, তবু তার মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। কোথায় যাবে সে? ওইতো পাগল, তার স্বামী। ওই বাড়ির বুড়ো ও বুড়ি তার শ্বশুর-শাশুড়ি। পাগলকে সস্নেহে সপ্রেমে সে আগলে রাখতে যায়। কিন্তু বদ্ধ পাগল, তার বেলায় কি ওসব স্নেহ-মমতা খাটে? ফল হয় মারাত্মক। বসতবাড়ি পেয়েও তাতে আর বাস করা হয় না।
আবির-ছিটানো উৎসবে পাগলের সঙ্গে আবির মাখামাখির একপর্যায়ে পাগল তাকে কোলে উঠিয়ে নেয়। সঙ্গে অবিশ্রান্ত চিৎকার করে।
মেয়ে মানুষকে অপমান? ধেয়ে আসে উৎসব-আক্রান্ত মানুষের দল। তারা পাগলকে প্রহার করে – মাটিতে ফেলে দেয়। অনন্তের মাকে মূর্ছা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। অবশেষে বাসন্তী এসে তাকে ঘাড়ে তুলে ঘরে উঠিয়ে নেয়।
সেদিন ভোররাত্রে মারা যায় কিশোর। চারদিন পর জ্বরে আক্রান্ত অনন্তের মা। শেষ হয়ে যায় দ্বিতীয় পর্বের কাহিনী। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র মানুষের এই নগ্ন নির্মম মৃত্যু প্রকৃতি ও পরিবেশই যেন দারুণভাবে ত্বরান্বিত করে।
মল্লবর্মণের কাহিনী তবু থেমে থাকে না।
বাপ-মা-হারা সন্তান অনন্তের কথা এবার।
কোথায় সে আশ্রয় নেবে? বাসন্তীর কাছে অগত্যা সে থাকে। কিন্তু মায়ের শ্রাদ্ধ-শান্তি সমাপন হলে বাসন্তীর মা-র অত্যাচারে সে পড়শী উদয়তারার কাছে চলে যায়। সেখান থেকে তার ভাই বনমালীর কাছে, দূরের গ্রামে। এখানে পড়াশুনোর একটি সুযোগ অনন্তের আসে। গ্রহণ করে সে। অতঃপর একদা পরিচিত হয় অনন্তবালা নামে এক ছোট মেয়ের সঙ্গে। অনন্তবালা জানায়, তার বাবা-মা অনন্তকে জামাই হিসেবে পেতে চায়। একদিকে এই প্রাপ্তির হাতছানি, অন্যদিকে অনন্তের রামায়ণপাঠে মুগ্ধা বয়স্কা এক মহিলা তাকে শিক্ষার, স্কুল-কলেজে পড়বার ও সেই সঙ্গে বড়ো হওয়ার, বিদ্বান হওয়ার কথা শোনায়। মনোরম দুদিকের টানাপড়েনে আপ্লুত অনন্ত অবশেষে হৃদয় থেকে অনন্তবালার স্বপ্ন-কথা নিঃশেষে মুছে দিয়ে নতুন প্রার্থিত বস্তু শিক্ষার আলোকময় জগতের প্রতি আপন পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করে।
ভাসমান উপ-শিরোনামের কথকতা মালোদের জীবনের যেন শেষ অধ্যায়। 888sport alternative linkেরও এখানে পরিসমাপ্তি।
তিতাস নদী শুকিয়ে গেল। তার তলে চর জেগেছে। দুতিন বছর ধরে বর্ষায় প্রবল ও শুষ্ক মরসুমে জলশূন্যতার ধারাবাহিকতায় অবশেষে একদিন দারুণ পরাক্রমে চরই জেগে উঠল। আর জেলেদের মাছধরা জীবিকার সকল উপায় সাঙ্গ হয়ে গেল। ভাসমানদের পরাজয় ও চাষিদের জয় সূচিত হলো। কিন্তু কোন চাষির? প্রান্তিক অবস্থানের নিরন্ন চাষির নয়। তারা লড়তে এসে হটে গেছে। এমনকি জেলেদের মধ্যে রামপ্রসাদের মতো শক্ত লড়াকু মানুষরাও মারা পড়ল নির্ঘাত লাঠির আঘাতে। তবে নদীর বুকে নতুন জাগা চরের দখলদার হলো কারা? অদ্বৈতের ভাষায় : ‘যারা অনেক জমির মালিক, যাদের জোর বেশি, তিতাসের বুকের নয়ামাটির জমিনের মালিকও হইল তারাই।’ এভাবে ‘ঝঁৎারাধষ ড়ভ ঃযব ভরঃঃবংঃ’-এর জয়ধ্বজা উলটোভাবে উড্ডীন হলো।
এ-দুর্দিনে অনন্তবালার বাবারও বিপদ কম নয়। আর্থিক দৈন্যের সঙ্গে সোমত্ত কন্যা অনন্তবালার ভার তার মাথা নুইয়ে দিতে চায়। সে বনমালীকে খরচ দিয়ে কুমিল্লা পাঠায়। কিন্তু অনন্তের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। সাত বছর পরে খোঁজ যখন পায়, তখন অনন্ত অন্য মানুষ। শিক্ষিত। ভদ্রলোক। ছমাস পরে বি.এ পরীক্ষা দেবে। বনমালীকে খাইয়ে, রাতে নিজের কাছে রেখে বাসন্তী ও উদয়তারার জন্যে দুখানা কাপড় কিনে দেয় সে। পরদিন সকালে টিকেট কেটে গাড়িতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
বনমালী ফিরে এল। অনন্তবালা জিজ্ঞেস করে, কই তার জন্যে কিছু নেই? অনন্তবালা বোঝেনি অনন্ত অপরিচিত ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। তার একতরফা ভালোবাসার চিরসমাপ্তি ঘটেছে। নিরুপায় তারা অবশেষে আসামের উদ্দেশে স্থানত্যাগ করে। ওদিকে অনন্তেরও অন্য ট্র্যাজেডি। পড়াশুনোয়, চেহারা-স্বাস্থ্যে ভালো অনন্তকে ভুলিয়েছিল এক কায়স্থ কন্যা; কিন্তু সে-কন্যার বোধোদয় হয় তার মায়ের সাবধানবাণীতে ! ‘ওতো জেলের ছেলে, তোর সঙ্গে তার কি? সেই কন্যা বুঝিল, সত্যইতো তার সঙ্গে আমার কি?’ এভাবে অনন্তের প্রেমও উপসংহারে পৌঁছালো। জাত-পাতের কঠিন সমস্যা যেমন কোনোদিনই মনের কোমলবৃত্তির মূল্য দেয়নি – আজও তার ব্যতিক্রম ঘটল না।
বাসন্তীর পিতৃগৃহ থেকে উদয়তারার পিতৃগৃহ পর্যন্ত তিতাসের সমস্ত উপকূলবাসীর জীবনে নেমে এল বৃত্তিহারা মানুষের দুমুঠো অন্নের জন্য হাহাকার। কেউ মরল, কেউ পালাল, কেউ বা ভিক্ষাবৃত্তি সম্বল করে বাঁচার প্রয়াসী হলো।
এমন ক্ষণে রিলিফ নিয়ে এল অনন্ত। তখন পাড়ায় দুজন ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। একটি খালি ভিটায় রান্না হচ্ছে। বিতরণ করার সময় রামকেশব একটি মাটির সরা নিয়ে টলতে টলতে এলো। আর এলো সুবলের বউ। কিন্তু পাছে অনন্ত চিনে ফেলে, তাই সে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল।
অবশেষে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের সেই শ্রেষ্ঠ গদ্যের উদ্ধৃতি দেওয়ার সময় হলো : ‘ধান কাটা শেষ হইয়া গিয়াছে। চরে আর একটিও ধানগাছ নাই। সেখানে এখন বর্ষার সাঁতার জল। চাহিলে কারো মনেই হইবে না যে এখানে একটা চর ছিল। যতদূর চোখ যায় কেবল জল। শূন্য ভিটাগুলিতে গাছ-গাছড়া হইয়াছে। তাতে বাতাস লাগিয়া সোঁ সোঁ শব্দ হয়। এখানে পড়িয়া যারা মরিয়াছে, সেই শব্দে তারাই বুঝিবা নিঃশ্বাস ফেলে।’
চার
আর্নেস্ট হেমিংওয়ের The old man and the sea 888sport alternative linkে বৃদ্ধ সাতাশি বার সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে শূন্য হস্তে ফিরেছে। অতঃপর একদিন বৃহৎ একটি মৎস্য আঁকড়ে তার সমস্ত হতাশাকে অতিক্রম করেছে; যদিও শেষ পর্যন্ত সে-মৎস্যটিও বাড়ি আনতে পারেনি। গভীর সমুদ্র বেয়ে ফিরবার সময় তা হাঙ্গর ইত্যাদিতে ভক্ষণ করে গেছে – তবু রাত্রে সুপ্তির মধ্যে সিংহের স্বপ্ন দেখে সে। না, অতি আশাবাদের এমন প্রতীকী চরিত্র সৃজন করতে পারেননি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অদ্বৈত মল্লবর্মণ। তাঁদের সৃষ্ট চরিত্র জলে ভাসমান কুবের, গনেশ অথবা কিশোর, সুবল আটপৌরে জীবনাবর্তে আটকা পড়ে বৃহতের বা মহতের কোনো ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে পারেনি। হেমিংওয়ের মতো উৎসাহী আশাবাদের অমোঘ চরিত্র-নির্মাণের ইচ্ছাও নিশ্চিত লেখকদ্বয়ের কোনোকালে ছিল না।
তৎকালীন পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ ভারতীয় জাতির সর্বপ্রান্তিক স্থানে আরূঢ় বৃত্তাবদ্ধ মালো সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা ও দৈনন্দিন কষ্টকর প্রহারে জর্জরিত জীবন-পরিণাম মাত্র দেখাতে উৎসাহী হয়েছেন দুই সৃষ্টিধর প্রতিভা। অবলোকনের দুস্তর পার্থক্য অবশ্য দুজনকে দুই মেরুতে অবস্থান করিয়েছে সন্দেহ নেই, তথাপি আকস্মিক আশাবাদের রঙিন কুশলতা কাউকে আবিষ্ট করতে পারেনি। এবং তা তাঁদের ক্ষেত্রে কোনোরকম নিন্দনীয় ব্যাপার হয়েও ওঠেনি অবশ্যই। তবে দুজনের ক্ষেত্রে একটি জিনিস লক্ষণীয় : মালোদের জীবনযাত্রার অনুপম বৃত্তান্ত-পরিবেশনে পারঙ্গম থেকেও তাদের তাঁরা বৃহত্তর মানবগোষ্ঠীর আনন্দ-বেদনার সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাননি, বলা উচিত ঘটাতে চাননি। একান্ত নিজস্ব জাতিগত আনন্দ-বেদনার আলোকে-অন্ধকারে তাদের বিচরণশীল রেখেছেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে এবং অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম ওই একই যুদ্ধের সমসাময়িককালের রচনা। অথচ দুটি 888sport alternative linkের কোনোটিরই মধ্যে বিশ্বের কোনো অনুপুঙ্খ কাউকে বিব্রত, বিস্রস্ত করেনি। বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীর সমস্যাসঙ্কুল পরিবেষ্টনী-চিত্রায়ণ থেকে উভয়ে বিরত থেকেছেন। একান্ত স্থানিক অথচ চিরকালীন অসুবিধা-পরম্পরা যেন স্বেচ্ছায় তাঁদের 888sport alternative linkে আপন আসন অধিকার করেছে। এই অসুবিধাসমূহ যে বিশ্বের আবহ থেকে উঠে আসা সূক্ষ্ম রন্ধ্রের ফাঁক-ফোকর গলে নিপতিত হয়েছে, এমন কথা ভাববার অবকাশও সেখানে কম। স্নায়ুবিধ্বংসী মানবিক পরাক্রমের বদলে এ-যেন নেহাত প্রকৃতির কারসাজি, দৈবদুর্বিপাকজনিত ঘটনা। এর আঘাত স্বাভাবিক মৃত্যুর নিঃসংশয় আহ্বান মাত্র। মানিকের প্রধান চরিত্র মাঝিবৃত্তি ত্যাগ করে চাষির কাজে উদ্যোগী হতে অগ্রসর হয়েছে। আর অদ্বৈতের চরিত্ররা নদীর নাব্যতার অভাবে কাজ হারিয়ে ধরাশায়ী হয়েছে নির্মমভাবে। তাই রাজনীতির নয়, অর্থনীতির বিপর্যয় এদের জীবনের সর্বনাশের মূলাধাররূপে বিবেচ্য হতে পারে। তাদের গৃহহীনতার বাস্তব-ভীতি কদাপি Stephen Spender -এর ‘Shapes of death haunt life’ 888sport app download apkয় ধৃত মনোভাবের মতো কদাপি নয়। সেখানে – ‘Neurosis eclipsing each in special shadowÕ-i দেখা মেলেনি।
ÔFrom a far, we watch the best of us-
Whose adored desire was to die for
the world.’ এমন চরিত্রের সাক্ষাৎ তাদের জীবনে মিলেছে অন্য ব্যঞ্জনায়। নিজের সাধপূরণের হাতিয়ার হিসেবে এক জায়গায় তাদের ব্যবহার করেছে হোসেন মিয়ার মতো ধুরন্ধর ব্যক্তি। অন্যত্র নির্লিপ্ত, নিস্পৃহ চরিত্র-বহনকারী অনন্তের মতো পরিবর্তিত মানসিকতার একজন স্বজাতি। তা-ও তাদের বর্তমান জীবন-ব্যবস্থার সার্বিক সমাপ্তির পর তার আগমন ঘটেছে। কারো কোনো সর্বনাশ সে ঠেকাতে পারেনি। এ-যেন এক অসহায় অন্ধত্বের কাছে আত্মসমর্পণের মহাকাব্য, যেখানে জীবনানন্দ দাশের গভীরতা-সঞ্চারী 888sport app download apkর দ্যোতনা মাত্র তার মর্মমূলের সর্বনাশা পরিণতির প্রতি সার্থক ইঙ্গিতদানে সক্ষম হতে পারে –
‘আঁধারে হিমের রাতে আকাশের তলে
এখন জ্যোতিষ্ক কেউ নেই।
সে কারা কাদের এসে বলে :
এখন গভীর পবিত্র অন্ধকার
হে আকাশ, হে কাল 888sport live chatী, তুমি আর
সূর্য জাগিয়ো না;
মহাবিশ্ব কারুকার্য, শক্তি, উৎস, সাধ :
মহনীয় আগুনের কি উচ্ছ্রিত সোনা?
তবুও পৃথিবী থেকে
আমরা সৃষ্টির থেকে নিভে যাই আজ।’ (মৃত্যু স্বপ্ন সংকল্প : বেলা অবেলা কালবেলা)


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.