অলোক বসু
888sport appsের নাটক বলতে এখন শুধু বাংলা ভাষার নাটক বোঝায় না। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও মাঝেমধ্যে নাটক হচ্ছে আমাদের দেশে, সেই ধারায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে মণিপুরি ভাষার নাটকও। বাংলা ভাষাভাষীদের বাইরে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তাদের ভাষায় নাট্যচর্চা হলেও তা কখনো এ-দেশের মূলধারায় এসে মিশতে পারেনি। তারা যেন ব্রাত্যই থেকে গিয়েছিলেন এতদিন ধরে। 888sport app থেকে অনেক দূরের একটি নাট্যদল মণিপুরি থিয়েটার এবার ‘মণিপুরি’ ভাষায় নাটক নির্মাণ করে প্রমাণ করে ছেড়েছে, তারাও কম কিছু নন। লেইমা নামে এ-নাটকটি শুধু যে 888sport appsের নাটকের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে তা নয়, আমাদের দেশে যে বিভিন্ন আদিবাসী, জাতি-নৃগোষ্ঠী আছে, তাদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি আছে, তাদেরও সাহসী করে তুলবে তাদের ভাষায়, তাদের সংস্কৃতিতে নাটক নির্মাণে। লেইমা নাটকের নির্দেশক শুভাশিস সিনহার মতো যদি অন্যরাও এগিয়ে আসেন তাহলে আমরা আমাদের মঞ্চে দেখতে পাব চাকমা, গারো, সাঁওতালসহ নানা ভাষা-সংস্কৃতির নাটক। আর তখনই সম্ভবপর হবে 888sport appsের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির পরিপূর্ণ জাগরণ।
মণিপুরি থিয়েটার বরাবরই নিষ্ঠার সঙ্গে থিয়েটারের কাজ করে থাকে। সুদূর কমলগঞ্জের একটি গ্রামে বসে তারা একের পর এক নাটক নির্মাণ করে সারাদেশের, এমনকি দেশের বাইরের হাজার হাজার দর্শকের মনোযোগ কাড়তে সমর্থ হয়েছেন। লেইমা নাটকের পূর্ববর্তী প্রযোজনা কহে বীরাঙ্গনা দিয়ে মণিপুরি থিয়েটার যাকে বলে তোলপাড় সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছিল। সমঝদার নাট্য-দর্শকদের কাছে মণিপুরি থিয়েটারের কোনো নাটকের প্রদর্শনী মানে বাড়তি কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। সম্প্রতি ২১, ২২ ও ২৩ মে মণিপুরি থিয়েটার তাদের নতুন নাটক লেইমা নিয়ে পরপর তিনদিন 888sport appর তিনটি মঞ্চে ‘এক নাটকের উৎসব’ আয়োজন করেছিল।
মণিপুরি থিয়েটার নিয়ে আমাদের কৌতূহলের কারণ হলো তাদের সুন্দর সুন্দর নাট্য-প্রযোজনা। তারা কখনো দর্শকদের হতাশ করেননি বরং 888sport app থেকে অনেক দূরে একটি নিভৃত গ্রামে বসে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের আধুনিক নাট্যচর্চা যেমন আমাদের আগ্রহী করে তোলে, তেমনি তাদের নান্দনিক সব প্রযোজনার 888sport live chatসৌকর্যও আমাদের বিস্মিত করে। একটি ভালো নাটক দেখার উত্তেজনা নিয়ে উৎসবের শেষদিন সন্ধ্যায় 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমন্ডল প্রাঙ্গণে যখন হাজির হলাম, দেখা গেল মণিপুরি থিয়েটারের কর্মীরা তখনো নাটমন্ডলের প্রবেশদ্বারের সামনের নিরিবিলি সবুজ অঙ্গনটিতে ফুলের পাপড়ি ছিটাতে ব্যস্ত। দর্শকদের অভ্যর্থনা জানাতে এটা হয়তো মণিপুরি সম্প্রদায়ের একটি কৃত্য বা আচার। মিলনায়তনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মণিপুরি সুর আর বাদ্যযন্ত্রে লেইমা নাটকের আবহ তৈরি করে চলেছেন মণিপুরি থিয়েটারের একদল 888sport live chatী।
এ নাটকের নামচরিত্র ‘লেইমা’ একজন 888sport promo code। মূল নাটকে যার নাম ‘ইয়ের্মা’। ইয়ের্মা ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকার এক অভিনব নাট্যসৃষ্টি। স্প্যানিশ ভাষায় ‘ইয়ের্মা’ শব্দের অর্থ হলো ‘নিষ্ফলা’ বা ‘বন্ধ্যা’। তেমনি এক নিষ্ফলা 888sport promo codeর মনোযন্ত্রণার কাহিনি ইয়ের্মা। ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা তাঁর নাটকে স্পেনের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘ইয়ের্মা’ নামে এক বিবাহিত নিঃসন্তান তরুণীর যে মনোজাগতিক দৃশ্যকল্প তৈরি করেছেন, শুভাশিস সিনহা তাকেই বীক্ষণ করার প্রয়াসী হয়েছেন 888sport appsের নিভৃত একটি অঞ্চল কমলগঞ্জের মণিপুরি সম্প্রদায়ের পটভূমিতে। সন্তানহীনা ‘ইয়ের্মা’ বা ‘লেইমা’র সত্তাজুড়ে থাকে একটি সন্তানের জন্য উদগ্র আকাঙ্ক্ষা। সে ক্রমেই যেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এক 888sport promo codeতে পরিণত হয়। অন্যদিকে তার স্বামী জয় (হুয়ান) নিজের পারিবারিক মর্যাদাকে অর্থনৈতিকভাবে উচ্চে তোলার জন্য মরিয়া এক কৃষক। তার কাছে সন্তান জীবনযুদ্ধের গতিতে একটা বিঘ্ন মাত্র। ফলে উপেক্ষিত হতে থাকে শাশ্বত এক 888sport promo codeর মাতৃত্বলাভের আকাঙ্ক্ষা। এ নিয়ে চলে দুজনের দ্বন্দ্ব। তার মধ্যে আবির্ভাব ঘটে ব্রজর, যার সঙ্গে কেবল শ্রেণিগত অসাম্যের কারণে লেইমার বিয়ে হয়নি। লেইমার একাকিত্বের সময় ব্রজ কাছে আসে। ব্রজ তার বাল্যবন্ধু ও পুরনো প্রেমিক। এ নিয়ে সন্দেহ জাগে জয়ের মনে। যদিও জয়ও ব্রজের বাল্যবন্ধু। ত্রিমুখী এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় লেইমা, জয় ও ব্রজের মধ্যে। ব্রজ গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।
নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাতের এক পর্যায়ে নিজের 888sport promo code-অস্তিত্বের পূর্ণতা পেতে মরিয়া লেইমা হত্যা করে তার স্বামী জয়কে। এক সময় সে উপলব্ধি করে, সে আসলে হত্যা করেছে তার সন্তানকেই। শেষের এই ঘটনাটুকু ছাড়া এ-নাটকের গল্পটিও খুব অপরিচিত নয় আমাদের কাছে। তাহলে এ-নাটকের বিশেষত্বটা কী? লোরকার শক্তিশালী লেখনী এক 888sport promo codeর অস্তিত্বকে জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছে। জ্বালা-যন্ত্রণা আর অপ্রেমের সংসারে লেইমার সন্তান-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সনাতনী 888sport promo codeর নিজস্ব অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা রয়েছে এ-নাটকে।
লোরকার ইয়ের্মাকে যদি ওই সময়ের স্পেন রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী শাসকের হাত থেকে মুক্তির স্বপ্নপ্রতীক বলা যায়, তাহলে সুভাশিসের লেইমা? লেইমা হয়তো সাধারণ এক মণিপুরি 888sport promo code; আজকের দিনে তার প্রাসঙ্গিকতা কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব একটা জগৎ থাকে, সেই জগৎ সে নিজের মতো গড়ে তুলতে চায়। লেইমার সেই জগৎজুড়ে রয়েছে তার অনাগত কল্পিত এক সন্তান। নির্দেশক সুভাশিস সিনহা তাই বলতে চান, ‘নতুন যুগের হাসিরাঙা এক আশ্চর্য নবজাতকের অপেক্ষায় আমরাও আজ প্রাণ-হাতে-ধরে আছি। ইয়ের্মার পাঠ তাই আমাদের জন্য জরুরি।’
লোরকার বিষয়বস্ত্ত, দর্শন, ভাষা, রচনাশৈলী, আখ্যান-বর্ণ888sport promo codeতি মননশীল বাঙালি পাঠকদের কাছে পরিচিত। নাটক যেহেতু একটি প্রয়োগিক 888sport live chat, তাই ইর্য়েমার মণিপুরি রূপান্তর লেইমার কথা বলতে গেলে আমাদের লোরকার কথা না বলে শুভাশিসের কথাই বলতে হবে। শুভাশিস বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় নাটকটি রূপান্তর করেছেন। এ-ভাষায় নাটক দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের কম। যদিও মৈথিলি মণিপুরি ভাষায় নাটক দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই কমবেশি হয়েছে রতন থিয়ামের বিশ্বখ্যাত সব নাটকের কল্যাণে। সে-ক্ষেত্রে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় নাটক দেখানোর কৃতিত্ব শুভাশিসেরই। তাঁর এই সাহস দর্শকদেরও সাহসী করে তোলে।
লেইমা নাটকের নামচরিত্রে অভিনয় করেছেন জ্যোতি সিনহা। মণিপুরি থিয়েটারের পূর্ববর্তী নাটক কহে বীরাঙ্গনায় অভিনয় করে তিনি যেমন সবার মনোযোগ কাড়তে সমর্থ হয়েছিলেন, এ-নাটকেও তাঁর অনবদ্য অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শকদের সন্তুষ্টিদানে সমর্থ হয়েছেন। বলা যেতে পারে, এ-নাটকের প্রাণ হলো জ্যোতি সিনহার অভিনয়। জ্যোতি একাই টেনে নিয়ে গেছেন নাটকটি। কখনো কখনো দু-একজন অভিনয়888sport live chatীকে ঝিলিক দিয়ে উঠতে দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত জ্যোতি সিনহার জ্যোতির কাছে তাঁরা ম্লান হয়ে গেছেন। তবে ব্যতিক্রম বুড়ি চরিত্রে শুক্লা সিনহার অভিনয়। তিনি স্বল্পসময়ে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। প্রথমাংশে জয় চরিত্রে সুরজিৎ সিংহ মাঝেমধ্যে আড়ষ্টতায় ভুগেছেন। দ্বিতীয়াংশে জয় চরিত্রে বিধান সিংহ অত্যন্ত সচেষ্ট থাকলেও সাফল্য তাঁর কপালে জোটেনি। অথচ এঁদের দুজনের মধ্যেই সম্ভাবনা রয়েছে। জয় চরিত্রটি দুজন অভিনেতাকে দিয়ে করানোরও কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া গেল না। এই নাটকে আরো যাঁরা অভিনয় করেছেন – সঞ্জিত সিংহ, শুক্লা সিনহা জুনিয়র, উজ্জ্বল সিংহ, সমরজিৎ সিংহ, অনামিকা চ্যাটার্জি, সুস্মিতা সিনহা, দীপু সিংহ প্রমুখ। সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন শর্মিলা সিনহা, কৃষ্ণকুমারী সিনহা, বাবুচান সিংহ, অঞ্জনা সিনহা প্রমুখ।
বাঙালি দর্শকদের কাছে এ-নাটকের সংলাপের ভাষা দুর্বোধ্য মনে হলেও নাটকের নিজস্ব যে একটি ভাষা আছে, তাকে অবলম্বন করে এগিয়েছেন নির্দেশক। তিনি এ-নাটকে মণিপুরি ভাষার মতো মণিপুরি সংস্কৃতি, কৃষ্টি বা কৃত্যের নানা উপাদান ব্যবহার করেছেন। তারপরও কোথায় যেন কিসের একটা অভাববোধ হয়, একটা ছন্দপতন অনুভূত হয়। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে, 888sport app থিয়েটারের টেম্পেস্ট নাটকের কথা। নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ এই নাটকটি ঢেলে সাজিয়েছিলেন মণিপুরি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ধারা মণিপুরি নাচের স্টেপিং ও নানা মুদ্রা ব্যবহার করে। টেম্পেস্ট নিয়েও নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা করা যেতে পারে, তবে তা নিয়ে কথা বলার জায়গা এটা নয়। এখানে যেটা না বললেই নয় তা হলো, নাসির উদ্দীন ইউসুফ কিন্তু টেম্পেস্ট নাটকের প্রচলিত অবয়বটি পালটে দিয়ে মণিপুরি সংস্কৃতির অবয়বে গড়তে সমর্থ হয়েছিলেন।
সুভাশিসের লেইমার ভাষা যদি মণিপুরি না হয়ে বাংলা হতো তাহলে কিন্তু আর দশটি বাংলাভাষার নাটক থেকে এ-নাটকটিকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে পড়ত। আমি যেটা বলার চেষ্টা করছি তা হলো, নাটকে ব্যবহৃত ভাষার থেকেও সংস্কৃতি অনেক বেশি শক্তিশালী। সুভাশিস তাঁর নাটকে মণিপুরি সংস্কৃতির নানা উপাদান ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন, সে-কথা আগেও বলেছি, তারপরও বলছি – সে-চেষ্টা যেন কোথায় গিয়ে মিলিয়ে যায়, কোথায় যেন একটা ছন্দপতন ঘটে যায়। দেহের ভেতরে যে-অন্তর থাকে সেই অন্তরের সঙ্গে পোশাক-পরিচ্ছদের জুতসই মিল না ঘটলে দেহের মানুষটাকেই খাপছাড়া মনে হয়। এ-নাটকটি দেখতে দেখতে সে-কথাই মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে। মণিপুরি সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। লেইমা নাটকে তার ব্যবহার আরো নিবিড় হওয়া দরকার ছিল। নাটকটির অন্তর্কাঠামোতে যদি নির্দেশক আরো গভীর মনোযোগ ও পরিমিতির সঙ্গে মণিপুরি সংস্কৃতির যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে পারেন, তাহলে এ-নাটকটি আরো ব্যাপকভাবে নন্দিত হবে বলে আশা করা যায়।
লেইমা নাটকের পোশাক ও কোরিওগ্রাফি চমৎকার। আলোর ব্যবহার হয়তো অনভ্যস্ত মঞ্চে অনুশীলনের অভাবে যথাযথ হয়ে ওঠেনি। সেটাকে কখনো ত্রুটি মনে হয়নি। নিরাভরণ মঞ্চের ব্যাপারটিও সাহসের পরিচয় দেয়। তবে মণিপুরি জীবনযাত্রার আইকন হিসেবে স্থানান্তরযোগ্য দু-একটি প্রপস ব্যবহার করা গেলে মনে হয় মন্দ হতো না। নাটকের আবহসংগীত নিয়েও আরো একটু ভাবার প্রয়োজন আছে। আবহ নির্মাণে যন্ত্রানুষঙ্গের বহুল প্রচলিত গৎ বা বোল ত্যাগ করে মণিপুরি থিয়েটার নতুন কিছু সৃষ্টি করবে – এ-প্রত্যাশা রাখছি। উৎসবের নাটক প্রদর্শনী সমাপনান্তে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের বক্তব্যের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, মণিপুরি থিয়েটার আমাদের ভবিষ্যতে আরো চমৎকৃত করবে – সে-প্রত্যাশায় থাকলাম।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.