সন্তোষ ঘোষ
মাজহারুলদা চলে গেলেন, খবরটি পরে পেলাম। মর্মাহত হয়ে অনেক 888sport sign up bonus এসে গেল। মাজহারুল ইসলাম আমার চেয়ে দশ-বারো বছরের বড় ছিলেন বয়সে। আমরা দুজনেই বিখ্যাত বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়েছি। মাজহারুলদা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলেন, পরে আমেরিকায় স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়েন। তাঁর সহপাঠী বন্ধু বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি বিশুদা নামেই সর্বজনবিদিত ছিলেন তিনিও তাই করেছিলেন। মাজহারুলদা ছিলেন 888sport appয় সরকারি স্থাপত্যবিভাগের কর্ণধার। যখন মাজহারুলদা কলকাতায় আসতেন তখনই বিশুদা আমাকে ডাকতেন। বিশুদা পশ্চিমবঙ্গের চিফ আর্কিটেক্ট (chief govt. architect) ছিলেন।
একসময় মাজহারুলদা রাজনৈতিক কারণে 888sport app ছেড়ে কলকাতায় এসে কিছুদিন থাকেন। তখন সুবিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্টের (Development Consultant, DCPC) এর কর্ণধার সাধন দত্ত তাঁকে নিয়োগ করেন পরামর্শদাতা হিসেবে। সম্ভবত সাধন দত্ত মাজহারুলদার সমকালীন বা সহপাঠী ছিলেন কলেজে। তবে তখনকার 888sport appsের রাজনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনা নিয়েও অনেক আলোচনা হতো। এখনো মনে পড়ে, কলকাতায় এক বিখ্যাত রেস্তোরাঁয় আমি, বিশুদা ও মাজহারুলদার আলোচনার কথা। আমি ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে পাঁচ খণ্ড সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করি এবং অনায়াসেই কলকাতা মহানগরীর উন্নয়ন সংস্থার চিফ আর্কিটেক্ট হই। কাজেই আমার কাজকর্ম সম্পর্কে মাজহারুলদার খুব আগ্রহ ছিল।
আমি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিটেক্সের (Indian Institute of architects) পশ্চিমবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান হই। ১৯৮৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে কলকাতায় স্থপতিদের জাতীয় সম্মেলন করা হয়। ঠিক করা হয় যে, তৃতীয় বিশ্ব, দক্ষিণ এশিয়া এবং ভারতের একজন করে স্থপতি যিনি স্থাপত্য নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করেছেন, স্থানীয় মাল-মসলার ব্যবহার করেছেন এবং যিনি নবীন স্থপতিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন Ñ তাঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মিশরের হাসান ফাতি, দক্ষিণ এশিয়ার মাজহারুল ইসলাম এবং ভারতের লরি বেকারকে নির্বাচিত করা হয়।
কলকাতার রবীন্দ্রসদনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে অন্যদের সঙ্গে মাজহারুল ইসলামকে সম্মানিত করা হয়। আমাদের অনুরোধে তিনি তাঁর স্থাপত্যকীর্তির কিছু ছবি এনেছিলেন। সেগুলো আমরা আকাদেমি অব ফাইন আর্টসে প্রদর্শন করি।
পরের বছর ১৯৯০ সালে কলকাতার ৩০০ বছর উদযাপিত হয়। আমরা এক বিরাট আন্তর্জাতিক সম্মেলন করি। কিন্তু মাজহারুলদা আসতে পারেননি। তিনি অনেক ছাত্রছাত্রী এবং নবীন স্থপতিদের পাঠিয়েছিলেন। তবে এর কিছুদিন পরেই এসেছিলেন চিকিৎসার জন্যে। উঠেছিলেন দক্ষিণ কলকাতায় গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশনের অতিথিনিবাসে। খবর দেওয়াতে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যাবেলায় তখন ওখানে চা না পাওয়ায় হাঁটতে হাঁটতে গড়িয়াহাটের মোড়ে এসে ফুটপাতের এক চায়ের দোকানে মাটির ভাঁড়ে চা খেয়েছিলাম। আমার সঙ্গে সেই শেষ দেখা। সেই সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পরা মাজহারুলদা গল্প করে চলে গেলেন। ২০০০ সালে নগর পরিকল্পনা বিষয়ে এক সেমিনারে গোলাম রহমানের আমন্ত্রণে 888sport app গিয়েছিলাম, যেদিন পৌঁছালাম সেদিন কেটে গেল সেমিনার সম্বন্ধে আলোচনা করতে, অনেকে দেখা করতে এসেছিলেন, পরের দিন মাজহারুলদার বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় জানতে পারলাম, গতকালই তিনি আমেরিকায় চলে গিয়েছেন। আফসোস হলো, 888sport app পৌঁছেই দেখা করতে গেলাম না কেন। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে 888sport appর বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক সেমিনার হয়, যাওয়ার সব ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় যাওয়া হয়নি।
মাজহারুল ইসলাম কর্মজীবনের প্রথমদিকে সরকারি স্থপতি ছিলেন এবং তখন যেসব বাড়ির নকশা করেছেন তা স্থাপত্য কলাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তী জীবনেও অনেক সৃষ্টি করেছেন, তাঁর স্থাপত্যকলার বৈশিষ্ট্য ছিল স্থানীয় আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং স্থানীয় মাল-মসলা – ইট-চুন-সুরকির ব্যবহার। শুনেছি – তাঁর কাজের সংগ্রহশালা করা হয়েছে 888sport appয়। মাজহারুলদা স্থাপত্যবিদ্যা, গবেষণা ও 888sport live chat প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নেন। তিনি নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা জুগিয়েছেন।
পাকিস্তানের অধীনে থাকার সময়ে 888sport appয় দ্বিতীয় রাজধানী করার প্রস্তাব আসে এবং সংসদ ভবন তৈরি করার ব্যাপারে মাজহারুল ইসলামকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি নিজে এর নকশা না করে পৃথিবীবিখ্যাত স্থপতিদের আনার প্রস্তাব দেন। তিনি দেখেছিলেন যে, ভারতের পাঞ্জাবের রাজধানী নির্মাণের ব্যাপারে বিখ্যাত ফরাসি স্থপতি লে কর্বুশিয়েরকে ভার দেওয়ায় ভারতের আধুনিক স্থাপত্যকলায় নতুন চিন্তাধারা আসে এবং অসংখ্য স্থপতিকে প্রভাবিত করে। মাজহারুলদা এই ফরাসি স্থপতি এবং ফিনল্যান্ডের আলভার আল ডোকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁদের না পাওয়ায় তিনি মার্কিন স্থপতি লুই কানকে বলেন। 888sport appয় জাতীয় সংসদ ভবন ও 888sport app কয়েকটি বাড়ির নকশা লুই কান করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্থপতিরা আসেন এটা দেখতে।
মাজহারুল ইসলাম আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি আগা খানের প্রতিষ্ঠিত স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের Aga Khan Award for Architecture-এর বিভিন্ন সময়ে প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন। তাঁদের সেমিনারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন।
শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্থপতি কে? এই প্রশ্নটা অনেকের মনেই উঠেছে। প্রথম ছিলেন বিদ্যাধর ভট্টাচার্য, এক বাঙালি স্থপতি, যিনি ১৭২৭ সালে রাজস্থানের জয়পুর শহরের পরিকল্পনা করেন এবং কয়েকটি বাড়ির নকশা করেন, যা দেখতে অসংখ্য পর্যটক আসেন জয়পুরে। ১৯৭৭ সালে জয়পুরের ২৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান হয়, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার। একটি নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে বিদ্যাধরের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানানো হয়। রাজস্থান রাজ্য সরকার একটি উপনগরীর নাম দিয়েছেন বিদ্যাধরনগর, একটি উদ্যানও তাঁর নামে। আমরা বাঙালিরা কিছু করিনি। মাজহারুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্থপতি, এটা দুই বাংলার স্থপতিদের চিরকাল মনে রাখতে হবে।
[লেখক পরিচিতি : অধ্যাপক সন্তোষ কুমার ঘোষ বর্তমানে সেন্টার ফর বিল্ট এনভায়রনমেন্টের সভাপতি। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারে কলকাতা পরিকল্পনা সংস্থার ও নগর উন্নয়ন দফতরের চিফ আর্কিটেক্ট ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্সের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতিও ছিলেন। তিনি ভারতে ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপত্যবিদ্যা ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি ৩০টি দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁর জন্ম 888sport appsের চাঁপাইনবাবগঞ্জে।]

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.