সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমার শ্রদ্ধেয় কবি অসীম সাহা বাংলা একাডেমির পাশেই একটা কলোনিতে সাবলেট নিয়ে থাকতেন। আজ চাকরি আছে তো কাল নেই। আমরা দুয়েকজন, আরশাদ আজিজ, আমি বা আর কেউ সেই ছোট ঘরে আড্ডা দিতে যাই। অঞ্জনা বউদি ছোট ছোট কাপে চা দেন, সঙ্গে মুড়ি, পেঁয়াজ, মরিচ, তেল দিয়ে মাখা। এ সময়টায় অসীমদা ভীষণ উদ্বেগে থাকতেন চাকরিহীনতার বাজার নিয়ে ভেবে ভেবে। কিন্তু তাঁর নৈতিক অবস্থান থেকে কোনোদিন এক চুল নড়েননি। এ সময় অসীমদার পাশে যে দুয়েকজন মানুষ গভীর মমতার সঙ্গে থেকেছেন তাঁদের মধ্যে কবি মাশুক চৌধুরী একজন। আড্ডাশেষে দুই পা ফেলে বাংলা একাডেমিতে যাই আরেক দফা রফিকভাইয়ের দফতরে আড্ডা দিতে। এমনি একদিন একতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে উঠছি আমি আর অসীমদা। ওপর থেকে বেশ গম্ভীর গলায় একজন বলে উঠলেন, ‘এই যে সীমার মাঝে অসীম তুমি!’ আমরা ওপরে উঠছি, তিনি নামছেন। অসীমদা আমাকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি তাঁকে চিনতাম, লেখা পড়েছি। শুনেছি ফরিদপুর জেলা স্কুলে পড়ুয়া আমার কাজিনদের কাছে তাঁর শিক্ষক পিতা কাজী আম্বর আলীর কথা, যিনি ছিলেন সে-সময়কার খুব নামকরা শিক্ষক। এরপর মাঝে মাঝে এখানে-সেখানে বইয়ের দোকানে তাঁকে দেখেছি, সামান্য কথা হয়েছে। কিন্তু আশির গোঁড়ায় তাঁর সঙ্গে আড্ডায় আমরা মেতে উঠলাম কবিরভাইয়ের নিউমার্কেটের বইয়ের দোকান ‘প্রগতি’তে। তিনি আমার সঙ্গে পরিচয়ের সময় ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এরপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে আমাদের ‘প্রগতি’র আড্ডা শুরুর বছর দুই-তিন পরই এলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হয়ে। কেন জানি না, পরিচয়ের পর থেকেই এই আপাত ‘দাম্ভিক’ মানুষটি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। বই বেরোলে তা উপহার দিতেন, তাঁর কোনো লেখা পড়ে, বিশেষ করে 888sport live পড়ে জানালে জিজ্ঞেস করতেন কেমন লেগেছে। ‘প্রগতি’র আড্ডার সময়ই আমি মাটি হেরে যায়ের একটি দীর্ঘ গ্রন্থ-সমালোচনা লিখি, যা একটি দৈনিকের 888sport live football সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। সেটি পড়ে তাঁর ভালো লেগেছে জানিয়েছিলেন।
আমাদের আড্ডার সম্পর্কটি ঘনিষ্ঠ হয় বই আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে। ভীষণ দ্রুতগতিতে বই পড়তেন, আর সেই পড়ার ক্ষুধাও ছিল বেশ প্রখর। বন্ধুরা কলকাতা যেতেন বেড়াতে, আমি যেতাম বই কিনতে। 888sport appয় পেঙ্গুইনের বইয়ের যে দাম ছিল, তারচেয়ে অনেক কম দামে একই বই কলকাতা থেকে কেনা যেত, টাকা বদলের হিসাবের পরও। আর কলকাতার 888sport live football পত্রিকা সাড়ে তিনগুণ দাম দিয়ে ম্যারিয়েটা থেকে কিনতে কষ্ট লাগত। তাই সামান্য টাকায় কলকাতা গিয়ে ‘পাতিরাম’ থেকে বছরখানেকের অনেক পত্রিকা আর এক সুটকেস বই নিয়ে ফিরতাম। সেসব বইয়ের মধ্যে কবি মনজুরে মওলার দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বইও থাকত। এছাড়া আমদানিকারক হিসেবে কবিরভাইও এনে দিতেন অনেক বই। এ সময়টায় মনজুরে মওলা নিজেও বছরে কয়েকবার সরকারি কাজে বিদেশ যেতেন, ফেরার সময় খুঁজে খুঁজে নিজের পছন্দের বই সুটকেস ভর্তি করে নিয়ে আসতেন। এগুলো পড়তেন দ্রুত। তাই আশির দশকের গোড়ায় বিলেতে বা ভারতে ইংরেজি ভাষায় যেসব বই বেরোত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রায় সব বই-ই তিনি সংগ্রহ করতেন। তাঁর আরেকটি শখের মধ্যে ছিল, ইউরোপের যে-কোনো দেশে গেলেই, তিনি লন্ডনে থামতেন দু-চারদিনের জন্য। ‘ফয়েলস’ ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। অনেকদিন আমি তাঁকে নিয়ে নিউইয়র্কের বইয়ের দোকান ঘুরেছি, কিন্তু তিনি সবসময় ‘ফয়েলসে’র কথাই বেশি বলতেন। মনে আছে একবার আশির দশকের মাঝামাঝি ভারতের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে কেতকী কুশারী ডাইসনের একটি ইংরেজি বই রবীন্দ্রনাথ এবং ভিকটোরিয়া ওকাম্পোকে নিয়ে বের হয়। সেটি বন্ধু রাশিদা জিয়াউদ্দিন আমাকে এনে দিলে তাঁকে অনেক বইয়ের মতোই পড়তে দিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, এটির একটি কপি তাঁর সংগ্রহে রাখবেন। তাই দ্বিতীয় কপিটি আমি তাঁর জন্য সংগ্রহ করেছিলাম। এমন অনেক প্রিয় বই নিয়েই তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ 888sport sign up bonus আছে। দেখতে দেখতে, আড্ডা দিতে দিতে তিনি একসময় বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে এলেন। এটি তাঁর পছন্দের পদায়ন ছিল না। সে-সময়ের সংস্থাপন সচিব একদিন তাঁকে ডেকে পাঠান। তাঁকে জানানো হয় যে, তাঁর ওপর নির্দেশ আছে তাঁকে বাংলা একাডেমিতে পাঠানোর জন্য। মনজুরে মওলা খুব ভয় পেলেন। কারণ তিনি জানতেন, এই জায়গাটি আমলা হিসেবে তাঁর জন্য খুব ভালো জায়গা হবে না। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়সহ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের, বিশেষ করে বাংলা বা অন্য 888sport live footballের অধ্যাপকরা এই পদটিকে নিজেদের ‘সম্পত্তি’ মনে করেন। কোনো আমলা এলে যে তাঁকে হাজার রকমের ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টা হবে তা তিনি জানতেন। তাই সংস্থাপন সচিবের সঙ্গে যে দেড় ঘণ্টা এ-বিষয়ে তাঁর বাদানুবাদ হয়, তাতে তিনি বিভিন্ন কৌশলে কাজটি এড়ানোর চেষ্টা করেন। একদিন এই গল্প তিনি আমাদের কয়েকজনকে বলেছিলেন। কীভাবে দেড় ঘণ্টা তিনি একটি বাংলা শব্দ উচ্চারণ না করে ইংরেজিতে এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এই কাজ তাঁর মতো আংলিসাইজড লোকের পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু এতে তেমন ফল হয়নি। তবে তিনি সংস্থাপন সচিবের কাছ থেকে কিছু বিষয় অঙ্গীকার করিয়ে নিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁকে সবরকম আর্থিক এবং আইনি সাহায্য দেবেন। কারণ তিনি জানতেন একাডেমিতে বিপুলসংখ্যক অকাজের মানুষ আছে, কাজহীন বেতনেরও মানুষ আছে। আছে জরাজীর্ণ কিছু বিভাগ, এগুলোকে ঠিক করতে হলে টাকা এবং সচিবালয়ের সহযোগিতা জরুরি হবে। সেসব প্রতিশ্রুতি নিয়েই তিনি একাডেমিতে আসেন।
একাডেমিতে এসেই তিনি প্রায় অর্ধডজন কর্মকর্তাকে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় তাঁদের চাকরি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করেন। এতে ভীষণ বাজে প্রতিক্রিয়া হয়। এঁদের মধ্যে অনেকেই স্বাধীনতার পরে ও আগে নিয়োগ পাওয়া লেখক-888sport live footballিক ছিলেন। পুরনো দিনের জমাকৃত পাণ্ডুলিপি নতুন করে ছাপার উদ্যোগ নেন, বইমেলাকে ঢেলে সাজান, বইমেলাকে সামনে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে একশ একটি বই বিভিন্ন তরুণ-প্রবীণ লেখককে দিয়ে লেখান এবং স্বল্প সময়ে বের করার ব্যবস্থা করেন। এরপর তিনি আমাদের ভাষা এবং ইতিহাসের ঐতিহ্য ‘বর্ধমান হাউজ’কে সংস্কারের ব্যবস্থা করেন। এই ভবনটির পুরনো নকশা দেখে একেবারে রেপ্লিকা হিসেবে নতুন বিল্ডিং করেন। এটি আমার বিবেচনায় একটি বড় কাজ। এছাড়া একাডেমির প্রেসকে নবায়ন করেন, কয়েকটি নতুন হল তৈরি, দেশের খ্যাতনামা পণ্ডিতকে ফেলোশিপ দেওয়া – এসব হাজার কাজের উদ্যোগ নেন এবং সফল হন। এসব কথা সবাই জানেন এবং লিখেছেন। কিন্তু কখনো কখনো দেশের সম্মানিত মানুষকে অখুশি করতে পারেননি বলে কিছুটা দুর্নামও তাঁকে সইতে হয়েছে। এর মধ্যে শেক্সপিয়রের হ্যামলেট 888sport app download apk latest version অন্যতম।
বাংলা একাডেমিতে থাকাকালে অনেক সময় সন্ধ্যায় অফিসে যেতেন নিজের কাজ করতে, সে-সময় মাঝেমধ্যে আমাকে নীরবে ডাকতেন সেখানে। একদিন হঠাৎ উত্তরাধিকারের বিষয়ে কিছু কথা জিজ্ঞেস করেন, যার উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে একটু বিব্রতকর ছিল। কারণ তিনি জানতেন আমি রফিক আজাদভাইয়ের খুব স্নেহধন্য তরুণ, তাছাড়া রফিকভাই দেশের শক্তিমান কবি। তিনি নিজেও রফিকভাইকে ভীষণ 888sport apk download apk latest version করেন। কিন্তু ওখানে আরো দুয়েকজন লেখক ছিলেন যাঁরা গোপনে উত্তরাধিকারটা সম্পাদনা করার খুব ইচ্ছা বহুদিন ধরে পোষণ করতেন। তাঁরা মনজুরে মওলাকে কিছু কান ভারী করেছেন রফিকভাইয়ের বিরুদ্ধে। সেসব অভিযোগ একেবারে মিথ্যা নয়, কিন্তু আবার সম্পূর্ণ সত্যও নয়। আমি তাঁকে বলেছিলাম, রফিকভাইয়ের হাত থেকে উত্তরাধিকার নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বহুদিন ধরে খুবই যোগ্যতার সঙ্গে পত্রিকাটি সম্পাদনা করছেন। কিন্তু মনজুরে মওলা সেটির দায়িত্ব আরেকজনকে দেন, এতে রফিকভাই ভীষণ অপমানিত বোধ করেন। তিনি হুট করে চাকরিতে ইস্তফা দেন। আমি বহু করে রফিকভাইকে অনুরোধ করেছিলাম ইস্তফা না দিতে। তাছাড়া মনজুরে মওলাও ভাবেননি রফিকভাই এতটা আহত হবেন এবং চাকরি ছেড়ে দেবেন।
যা হোক বিষয়টি নিয়ে মনজুরে মওলার কিছুটা বেদনাবোধ ছিল, কিন্তু কাউকে কিছু জানতে দেননি। আমাকে শুধু একটু বলেছেন, এমন হবে তিনি ভাবেননি।
এক সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির দফতরে বসেই তিনি বললেন, তিনি একটি 888sport live football পত্রিকা বের করতে চান। আমি ভাবলাম একাডেমির নতুন কোনো পত্রিকা। কিন্তু তিনি জানালেন, না, এটা তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সম্পাদনা করতে চান। কিন্তু মওলার নিজের ইচ্ছা ছিল কোনোদিন সম্ভব হলে তাঁর শিক্ষক অধ্যাপক খান সারোয়ার মুরশিদের নিউ ভ্যালুজের মতো একটি ইংরেজি বৌদ্ধিক পত্রিকা সম্পাদনা করা। আমি তাঁকে বলেছি, সে-ধরনের পত্রিকার জন্য ভালো ইংরেজি লেখা পাওয়া আমাদের দেশে কঠিন হবে।
দেখতে দেখতে তাঁর বাংলা একাডেমির মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। আমাদের ‘প্রগতি’র আড্ডা যথানিয়মেই চলত। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইপির মহাপরিচালক হয়ে গেলেন। সেখানেই প্রায় সপ্তাহে দু-তিনদিন দুপুরে বা বিকেলে তিনি আমাদের কয়েকজনকে আড্ডায় ডাকতেন পত্রিকা নিয়ে আলোচনার জন্য। একদিন তিনি আমাকে কয়েকটি নাম দিতে বললেন, যাঁরা এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকলে ভালো হয়। আমি কয়েকজনের নাম দিয়েছিলাম। তিনি অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে খুব ভালোবাসতেন এবং লেখক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন, তাই সম্ভবত তাঁর কাছেও সহযোগী সম্পাদকদের সম্ভাব্য নাম চেয়েছিলেন। এভাবেই আমরা কয়েকজন নিয়মিত বসে কয়েকজনের নাম স্থির করি এবং মনজুরে মওলা সবাইকে আমন্ত্রণ জানান এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হতে। সবাই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে পত্রিকার নাম নিয়ে আলোচনা হয়। এভাবেই আমাদের ত্রৈমাসিক পত্রিকা শ্রাবণ জন্মলাভ করে। পত্রিকাটি কেমন হবে, কী হবে এর 888sport live football বা সম্পাদনা আদর্শ, তা সবাই বসেই নির্ধারণ করা হতো। কবি মনজুরে মওলা সম্পাদক, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সুব্রত বড়ুয়া, সেলিনা হোসেন, আর আমি সহযোগী সম্পাদক। প্রকাশক হলেন আনোয়ার হোসেন খান। আমার নিজের ধারণা, পত্রিকাটির আদর্শ হিসেবে মনজুরে মওলা পরিচয় পত্রিকাকে মনে রেখেছিলেন। পরিচয়ের যে-লেখকগণ ছিলেন, সেরকম মানের লেখক 888sport appয় পাওয়া ছিল দুষ্কর; কিন্তু আমাদের সবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। মনজুরে মওলার যেহেতু সারা জগতের সম্প্রতি বের হওয়া বইয়ের প্রতি ছিল ভীষণ ঝোঁক, তাই তিনি আমাকে সারাক্ষণ তাড়া দিতেন যেমন করে হোক বিদেশ থেকে বই জোগাড় করতে। আমি আমার বন্ধুদের মাধ্যমে অনেক বই সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন আমার বন্ধু রাশিদা জিয়াউদ্দিন, যিনি পরে হন রাশিদা দাহদওয়ালা। এছাড়া বিভিন্ন দূতাবাসের মাধ্যমে মনজুরে মওলা বই সংগ্রহ করতেন। মনজুরভাই নিজেও বিদেশ থেকে বই সংগ্রহ করে দিতেন। অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ বিলেত থেকে কিছু বই পাঠিয়ে দিয়েছেন। একবার কবি ওমর শামসকে আমি অনুরোধ করলে তিনি কিছু বই পাঠিয়েছিলেন, তার মধ্যে গার্ডেন অফ এডেন বইটি ছিল। অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ 888sport appয় বেড়াতে এলে নিয়ে আসতেন কিছু বই। এভাবেই আমরা সাম্প্রতিক বই সংগ্রহ করতাম। আমাদের সম্পাদকীয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতি 888sport free betয় আমরা চল্লিশটি বইয়ের আলোচনা ছাপবো। কিন্তু 888sport appর অধিকাংশ বইয়ের মান নিয়ে আমাদের যেহেতু দ্বিধা ছিল, তাই আলোচনা যদি কাউকে আহত করে সে-ভয় ছিল। আমি সেসব দিনে খুব দুর্বিনীত ছিলাম। আড্ডায় অনেক লেখকের লেখা নিয়েই বেশ কড়া মন্তব্য করতাম, বিশেষ করে ‘প্রগতি’র আড্ডায়, যা ছিল আমার ওই বয়সের ধরন, বা আমার মনে হতো আমাদের লেখকরা সমকালীন লেখকদের বই বিষয়ে সত্যভাষণ করেন না। এটা আমার কাছে এক ধরনের নৈতিক অসততাই মনে হতো। মনজুরে মওলা আমাকে একদিন বলেন, ‘আকা, আপনি ঠিক এভাবেই এ-ভাষাতেই বইয়ের আলোচনা লিখুন।’ আমি ভয় পেলে তিনি বলেন, ‘কিছু হবে না।’ এরপর দেখা গেল সৈয়দ মনজুরভাইও এতে সায় দিলেন, তিনি নিজেও একেবারে নির্মম ভাষায় সত্যিকার 888sport live football আলোচনা করতেন বইয়ের। সবচেয়ে বেশি গ্রন্থ সমালোচনা লিখেছেন সৈয়দ মনজুরভাই ও আমি। সৈয়দ আনোয়ারভাই, সুব্রত বড়ুয়াও বেশ কিছু আলোচনা লিখেছেন। সকল আলোচনা সম্পাদক নির্মম হাতে কাটাছেঁড়া করে একেবারে আলাদা ধারালো এক রূপ দিতেন। এই সময়ই আমি প্রথম জানতে পারি কী অসাধারণ সম্পাদনাশক্তি মনজুরে মওলার।
শ্রাবণ প্রথম 888sport free bet বের হয় একটি স্লোগান নিয়ে, ‘এই শ্রাবণের বুকের মাঝে আগুন আছে।’ প্রথম 888sport free betটি অনেক পাঠকের মাঝে সাড়া জাগায়। এরপর দ্বিতীয় 888sport free betর পরিকল্পনা শুরু হয়। এই পত্রিকা বের করতে প্রকাশক আনোয়ার হোসেন খানের শ্রম ছিল অনেক। বিজ্ঞাপন, প্রেসের কাজ, এছাড়া তরুণ গল্পকার মোস্তফা পান্না অসাধারণ যত্নের সঙ্গে প্রুফ দেখতেন এবং প্রেসের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতেন। দ্বিতীয় 888sport free betটির পরিকল্পনা করা হয় রবীন্দ্রনাথের একশত পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে। তাই রবীন্দ্রনাথবিষয়ক 888sport appয় প্রকাশিত সকল বইয়ের আলোচনা এতে স্থান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আর ’৬১ সালে রবীন্দ্রশতবর্ষ উপলক্ষে 888sport appয় যে-কমিটি হয়েছিল এবং তাদের সেই উৎসবের ওপর একটি দীর্ঘ লেখা সংবাদপত্র ঘেঁটে আমরা তৈরি করেছিলাম। আমরা কয়েকজন এই কাজ করি, খণ্ড খণ্ড লেখা মনজুরে মওলা একত্র করে নিজে সম্পাদিত একটি রূপ দেন। আর সেই কমিটির প্রধান অধ্যাপক খান সারোয়ার মুরশিদের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। মনজুরে মওলা নিজে আমাদের সবার কাছে সম্ভাব্য প্রশ্ন চান সাক্ষাৎকারের। আমি ও বাকি কয়েকজন প্রশ্ন দিলে তিনি লিখিত প্রশ্নের তালিকা আমাকে দিয়ে অধ্যাপক মুরশিদের কাছে পাঠান। বেশ কয়েকদিন আমি অধ্যাপক মুরশিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁর লেখা সাক্ষাৎকারটি সংগ্রহ করি। আমাদের বিবেচনায় 888sport appsের 888sport live football এবং কিছুটা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে রবীন্দ্রশতবার্ষিকী আইয়ুবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উদ্যাপন একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আমরা খবরের কাগজের সংবাদ ঘেঁটে সেই উৎসব নিয়ে যে-নিবন্ধ তৈরি করি সেটিও আজকের পাঠকদের কাছে খুব আকর্ষণীয় বলেই আমার মনে হয়। আমাদের রবীন্দ্রচর্চার এই ইতিহাস আজ অনেকেই বিস্মৃত হয়েছেন। এই 888sport free betর জন্য মনজুরে মওলা ভাবছিলেন রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আবু সয়ীদ আইয়ুবকে নিয়ে একটি 888sport live ছাপতে। কিন্তু সেরকম কাউকে আমরা পাইনি। একদিন মনজুরে মওলা বললেন, ‘আকা, এটি আপনি লিখুন।’ আমি আকাশ থেকে পড়লাম! আইয়ুব আমার প্রিয়তম লেখকদের একজন, কিন্তু তাঁকে নিয়ে লেখার সাহস আমার কোনোদিন হয়নি। তাই আমি এড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মওলার কাছ থেকে এড়ানো যে কী ভীষণ কঠিন তা আমি জানতাম। যা হোক আমি একটা লেখা দাঁড় করালাম। কিন্তু মনজুরে মওলা তাতে নির্মম ছুরি চালালেন। আবার লিখতে কিছু পরামর্শ দিলেন। এভাবে লেখাটি আমি সাতবার লিখেছিলাম, সাতবার মনজুরে মওলা তা পরিমার্জন করেছিলেন। আমার জীবনে কোনো একটি লেখা নিয়ে আমি কোনোদিন এত পরিশ্রম করিনি। যা হোক লেখাটি সেই 888sport free betয় ছাপা হয়েছিল। আমাদের সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লেখকের নামহীন। যদিও তিনি লেখাটি আমার গ্রন্থে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন পরে। এভাবেই শ্রাবণ আমাদের দেশের 888sport live football পত্রিকার ইতিহাসে সামান্য হলেও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল নতুন ধরনের পত্রিকা হিসেবে।
শ্রাবণ পত্রিকা বের করার সময়ের কয়েকটি বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনার একটি এবং আমার কাছে খুব মূল্যবান তাহলো, এই পত্রিকার কাজ বিষয়ে আমাদের কয়েকজনের নিয়মিত সভার পর অধিকাংশ দিন আমরা আড্ডায় বসতাম দু-তিনজন। আমি, সৈয়দ মনজুরভাই, কবি মনজুরে মওলা এবং মাঝেমধ্যে আনোয়ার হোসেন খান। মনজুরে মওলা এবং আনোয়ারভাই পূর্বাণী হোটেল থেকে দামি মুরগির মাংসের পেটিস আনাতেন, সঙ্গে অপূর্ব কফি। এ-সময়টাতে আমাদের 888sport live footballবিষয়ক আড্ডা শুরু হতো। অনেকদিন সে-আড্ডা কয়েক ঘণ্টা চলত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইপিতে, বা সচিবালয়ে তাঁর দফতরে, সব সময় বিকেল বা সন্ধ্যায়। সেখানেই মনজুরে মওলা আমাদের সমকালীন 888sport live football নিয়ে আলোচনা করতেন। আর আলোচনা হতো তাঁর প্রিয় ইংরেজি 888sport live football নিয়ে। অনেকটা সময় জুড়ে থাকত এলিয়ট ও ইয়েটস এবং 888sport app কবির লেখা বিষয়ে। একদিন তিনি তাঁর শিক্ষক অধ্যাপক খান সারোয়ার মুরশিদ যে অসাধারণ পড়াতেন ইয়েটস তা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘He could take the discussion to an unimaginable philosophical height!’ সৈয়দ মনজুরভাইও এই আলোচনায় অংশ নিতেন। তাঁদের দুজনের কাছে এখানেই আমি সবচেয়ে বেশি শিখেছি। আলোচনার একটি বিশেষ দিক ছিল তরুণ লেখকদের লেখা বিষয়ে। আমি জানতাম সৈয়দ মনজুরভাই আমাদের বয়সী একেবারে কিশোর-তরুণদের লেখাও পড়েন, কিন্তু মনজুরে মওলাও যে ভীষণ তীক্ষ্ণ চোখে তরুণ লেখকদের লেখা নিয়মিত পড়েন তা আমি জানতাম না। এই আড্ডাগুলোতেই তিনি মাঝেমধ্যে অনেক তরুণ কবির সঙ্গে কবি তুষার দাশের 888sport app download apk ও গদ্য নিয়ে কথা বলতেন। সে-সময়ে তুষারের কবি আহসান হাবীবের ওপর দীর্ঘ গবেষণামূলক বই নিঃশব্দ বজ্র বেরিয়েছে। আমার খুব প্রিয় সেই বই। মনজুরে মওলা তুষারের 888sport app download apk ও সেই বইটি নিয়ে অনেক কথা বলেছেন আর তাঁর ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন আমাদের। বুঝতে পারতাম তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে আমাদের সমকালীন 888sport live football এবং তরুণ লেখকদের লেখা নিয়মিত পড়েন। এর অনেক বছর পর 888sport appয় তাঁর বাড়িতে এক সন্ধ্যায় আড্ডায় তিনি কবি সরকার আমিন এবং কবি কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নিয়েও অনেক কথা বলেছেন আমাকে ও কবির খানভাইকে। সেবার ২০১৫ সালে আমি বছর দেড়েকের জন্য একটা গবেষণার কাজে সিঙ্গাপুর যাই। আমাদের তরুণ শ্রমিকরা যারা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় কাজ করেন তাদের নিয়ে একটি এথনোগ্রাফিক গবেষণার কাজ। তিনি এই কাজ নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করেন। আমি আর কবিরভাই সামান্য পানাহারের ফাঁকে ফাঁকে তাঁর পড়ার ঘরে বসে সেই সন্ধ্যায় জানালাম, আমি আমাদের Constitution Making-এর দুর্বলতাগুলো নিয়ে অনেক বছর ধরে একটু একটু করে কাজ করছি, কিন্তু সংসদ ভবনের লাইব্রেরিটা আর যদি পাকিস্তানের পার্লামেন্টের লাইব্রেরিটায় কাজ করা যেত তাহলে বইটা শেষ করতে পারতাম। আমাদের শাসনতন্ত্রকে সবাই খুব প্রশংসা করেন, কিন্তু একটি সদ্য স্বাধীন হওয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসনতন্ত্র হিসেবে এর ত্রুটিগুলো নিয়ে কেউই তেমন ভালো আলোচনা করেননি, বা গবেষণা করেননি। বিশেষ করে আমাদের শাসনতন্ত্রে সম্পত্তি আইন, বিবাহ আইন এবং ধর্মের সীমাবদ্ধতা কীভাবে গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে, 888sport promo codeর সমঅধিকারকে ক্ষুণ্ন করে সে-বিষয়ে। এসব নিয়ে সেই সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে আমার ও কবিরভাইয়ের অনেক কথা হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে 888sport appয় ফিরে কাজ শুরু করতে বললেন। আমি গরম একেবারে সহ্য করতে পারি না, তাছাড়া 888sport appয় কাজ করা সত্যিই খুব কষ্টের জানালাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, তাঁর বাড়িতে অনেক ঘর খালি পড়ে আছে, তিনি একটিতে এসি লাগিয়ে পরিপূর্ণ কাজের উপযোগী করে দেবেন আমাকে, তবু আমি যেন দ্রুত শুরু করি কাজ। বিষয়টা আমাকে ভীষণ স্পর্শ করেছিল। কবিরভাইও বলেছিলেন, আমি যেন ওখানে থেকেই কাজ করি। সংসদ লাইব্রেরিতে কাজের সব ব্যবস্থা মনজুরে মওলা নিজে করবেন। সিদ্ধান্ত নিই আমি সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে 888sport app যাব কয়েক বছরের জন্য, এসব ভাবতে ভাবতেই সময় গড়িয়ে গেল। এরপর প্রতিবছর 888sport app গেলে তাঁর বাড়িতে সন্ধ্যায় ডাকেন আমাকে ও কবিরভাইকে। আমি আর কবিরভাই নিভৃতে বসে আড্ডা দিই, তাঁর কথা শুনি, পান ও সান্ধ্য আহার করি। শেষবার ২০১৯ সালে গেলে তিনি বললেন, এবার কয়েকজন পছন্দের মানুষ ডাকবেন আমাকে নিয়ে। কাজলদা, কবি তুষার দাশ এবং কবি সরকার আমিনকে ডাকলেন। আমি আর কবিরভাই, সঙ্গে নিয়ে যাই আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু অধ্যাপক হামীম কামরুল হককে। সেই সন্ধ্যাটি ছিল সত্যিই অসাধারণ। বহুদিন আমাদের 888sport sign up bonusতে থাকবে।
888sport appয় দশ বছরের সরকারি চাকরিজীবনে হাজারটা প্রতিকূলতায় তিনি ও সচিব আতাউল হক ছিলেন আমার সারাক্ষণের সহায়। সেসব প্রতিকূল দিনের কথা আমার 888sport sign up bonusকথায় বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে। তাঁর 888sport live football, বিশেষ করে 888sport app download apk এবং কিছু 888sport live, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথবিষয়ক 888sport live নিয়ে একসময় অবশ্যই লিখব আশা করি।
১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাস, আমি আর কাজী সালাউদ্দিন আকবর মাত্র টেলিভিশন বার্তা বিভাগ থেকে বদলি হয়ে ডিএফপি মানে ফিল্মস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সে যোগ দিয়েছি। একদিন আমি আর সালাউদ্দিন এবং কবি খালেদা এদিব চৌধুরী – তিন সহকর্মী বসে কথা বলছি, হঠাৎ সচিবালয় থেকে একজন কর্মচারী একটা বড় হলুদ খামে একটা ভারী পাণ্ডুলিপি আমাকে দিয়ে গেলেন। আমি খুলে দেখি সেটি একটি ছোট চিঠিসহ পাঠিয়েছেন কবি মনজুরে মওলা। এটি ছিল টিএস এলিয়টের মার্ডার ইন দ্য ক্যাথিড্রালের 888sport app download apk latest version। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন মূলের সঙ্গে মিলিয়ে পড়ে দেখতে এবং অন্য কোনো পরামর্শ থাকলে জানাতে। আমি কয়েকদিন ধরে কষ্ট করে পড়ি। আমি যেহেতু ক্লাসরুমে এলিয়ট পড়িনি, সবটাই নিজে নিজে পড়া। ছাত্রজীবনে আমি তেমন ক্লাস করিনি, তাই এলিয়ট বা ইয়েটস ও 888sport app আধুনিক ইংরেজি 888sport app download apk বিশেষ করে দুই যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ের ইংরেজি 888sport app download apk আমি খুব ভালো করে শিখেছি তিনজন শিক্ষকের কাছে। তাঁরা হলেন – কবি মনজুরে মওলা, কবি রফিক আজাদ এবং কথা888sport live chatী সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সবই আড্ডা বা বিভিন্ন ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যমে। তাঁরাই আমাকে বিভিন্ন বই দিয়েছেন সে-সময়ের 888sport app download apk বোঝার জন্য। সত্তরের মাঝামাঝি সময়ে রফিকভাই আমাকে হেলেন গার্ডনারের দ্য আর্ট অফ টি এস এলিয়ট বইটি পড়তে বলেন, যা আমি সংগ্রহ করে খুব ভালো করে পড়ার চেষ্টা করি। এরপর অধ্যাপক মঞ্জু জৈনের এলিয়টকে নিয়ে লেখা বইটি পড়েও মুগ্ধ হয়েছি, যা আমি কবি মনজুরে মওলাকে পাঠিয়েছিলাম নিউইয়র্ক থেকে।
আমি গির্জায় খুন দেখে কবি মনজুরে মওলাকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মার্জিনে অনেক মন্তব্যের মধ্যে একটি মন্তব্য লিখেছিলাম যে, বিলেতের ‘চার্চ স্টেট বিতর্কের’ সঙ্গে এলিয়টের এই লেখার কোনো সম্পর্ক আছে কি না তা যেন তিনি ভেবে দেখেন। এর মাস তিনেক পর আমি দেশ ছেড়ে নিউইয়র্ক চলে আসি। কিন্তু ১৯৯৯ সালে আমি মনজুরে মওলার একটি দীর্ঘ চিঠি পাই, তাতে তিনি জানিয়েছেন আমার সেই মার্জিনে মন্তব্যের কথা এবং আমি যেন ‘চার্চ স্টেট বিতর্ক’ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা বা বই লাইব্রেরি ঘেঁটে তাঁকে পাঠাই। আমি তখন সমাজ888sport apkের ছাত্র। আমি নিউ স্কুলে আমার অধ্যাপকদের মধ্যে যাঁরা ‘সোশিওলজি অফ রিলিজিয়ন’ বিষয়ে পণ্ডিত, সেই অধ্যাপক হোজে ক্যাসানোভা ও অধ্যাপক এরাটোর পরামর্শ অনুযায়ী এ-বিষয়ে বেশ কিছু 888sport live ফটোকপি করে এবং কয়েকটি বই সংগ্রহ করে তাঁকে পাঠাই, যা তিনি পরে গির্জায় খুনের ভূমিকা লেখা বা অন্য বিষয়ে ব্যবহার করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
চাকরি থেকে অবসর নিয়ে মনজুরে মওলা ২০০৪ সালে কিছুদিনের জন্য নিউইয়র্ক আসেন সপরিবারে বেড়াতে। তখন আমি আমার ছাত্রজীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে, অভিসন্দর্ভ লেখার সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপনা করি আর একটা সাপ্তাহিক কাগজে, খণ্ডকালীন কাজ করি। সেবার কবি মনজুরে মওলাকে নিয়ে আমি কয়েকটি দিন সারাদিন বইয়ের দোকান ও মিউজিয়ামে ঘুরে কাটিয়েছিলাম। এত দীর্ঘ সময় ধরে সারাদিন আমি তাঁর সঙ্গে একান্তে কোনোদিন কাটাইনি আগে। প্রায় প্রতিদিন পুরনো বইয়ের দোকান Strand-এ কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে আমরা ইউনিয়ন স্কয়ারে বার্নস অ্যান্ড নোবেলে যেতাম। সেখানে বইয়ের দোকানের মধ্যে একটি ছোট রেস্তোরাঁ আছে, সেখানে বসে মাঝেমধ্যে মনজুরে মওলা এস্প্রেসো কফি খেতে ভালোবাসতেন। এভাবে দিনে কয়েকবার কফি ও লাঞ্চ সেরে আমরা সারাদিন বইয়ের দোকানে কাটিয়েছি। মাঝেমধ্যে নিচে নেমে কোনো রেস্তোরাঁয় সামান্য আহার ও আড্ডা। এভাবেই আমাদের পুরো একটা সপ্তাহ শুধু
বইয়ের দোকানে এবং মমাসহ কয়েকটি মিউজিয়ামে কাটানো হয়েছে। এমনকি একদিন তিনি নিউইয়র্কের ফোক মিউজিয়ামে যেতে চাইলে আমরা সেখানে গিয়েও কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েছি। একদিন ইউনিয়ন স্কয়ারে কফি খেতে খেতে বলেছিলাম, পাশের রাস্তাতেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়, যদি দেখতে চান চলুন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলেন। আমাদের সমাজ888sport apk বিভাগ নয়তলায়। সেখানে তাঁকে আমার কয়েকজন অধ্যাপকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। তিনি আমার অভিসন্দর্ভ ও গবেষণার সুপারভাইজার অধ্যাপক এরাটোর সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। এরাটো তাঁকে তাঁর ছাত্রজীবনের কথা বলেন, মনজুরে মওলা তাঁর হার্ভার্ডের ছাত্রজীবনের অনেক গল্প করেন। মনজুরে মওলা অধ্যাপক সামুয়েল হান্টিংটনের সঙ্গে তাঁর ক্লাসরুমের 888sport sign up bonus বলেন, যা এই দুই বিদগ্ধ মানুষ খুবই উপভোগ করেন। অনেকটা সময় নিউ স্কুলে কাটিয়ে ফেরার সময় অধ্যাপক এরাটো কবি মনজুরে মওলাকে তাঁর লেখা সিভিল সোসাইটি নামক বিশালাকার বইটি স্বাক্ষর করে উপহার দেন। নিউইয়র্কের এই একটি সপ্তাহের দীর্ঘ সময় তাঁর সঙ্গে কাটানোর সময়ই আমি মানুষ কবি মনজুরে মওলাকে ভিন্নভাবে চিনতে সমর্থ হই।
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মওলা ছেলেবেলা থেকে ভীষণ নাজুক ছিলেন শারীরিকভাবে। তাঁর পিতা ছিলেন আলীগড়ের ছাত্র। বেশ ধার্মিক এবং ভীষণ নীতিপরায়ন মানুষ। তাঁর জন্মের আগে তাঁর বাবা-মা কয়েকটি সন্তান হারান জন্মের পরপর। এরপর তাঁর মা প্রায় পাগলের মতো হয়ে আজমীর শরিফ যান আশীর্বাদ নিতে। এরপর মওলার জন্ম, নাম রাখা হয় মনজুরে মওলা। এসব গল্প তিনি আমাকে নিউইয়র্কের একান্ত আড্ডায় জানিয়েছেন, যা সাধারণত এই রাশভারী মানুষটির কাছে কেউ কোনোদিন শোনেননি। নিজের বাবা-মায়ের প্রতি ভীষণ দুর্বল ছিলেন মনজুরে মওলা।
কবি মনজুরে মওলার সঙ্গে প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছরের 888sport sign up bonus, কিন্তু নিউইয়র্কের একটি সপ্তাহ প্রায় সারাদিন তাঁর সঙ্গে কাটানোর 888sport sign up bonusই এই মানুষটির অন্তরকে জানার জন্য আমার সবচেয়ে সহায়ক হয়েছিল। আমার ধারণা, তাঁর পেশা আমলাতন্ত্র তাঁকে মানুষের কাছে ভুলভাবে উপস্থাপিত করেছে, কিন্তু ভীষণ কোমল এবং মানবিক এই হৃদয়ের হদিস আমাদের পাঠকরা খুব বেশি পাননি, যার ছবি তাঁর 888sport app download apk এবং রবীন্দ্রবিষয়ক 888sport liveগুলোর মাঝে ছড়িয়ে আছে। তাঁর 888sport app download apk নিয়ে আমার ভিন্নভাবে লেখার ইচ্ছে আছে।
গত কয়েক মাস ঘন ঘন ফোন করতেন গভীর রাতে, অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতেন শ্রাবণ নতুন করে বের করার পরিকল্পনা নিয়ে, আমাকে সার্বক্ষণিকভাবে এর সঙ্গে থাকতে প্রায় নির্দেশ দিলেন। আমি বলেছি, যেহেতু আমি দীর্ঘ সময়ের জন্য দেশে ফিরছি শিগগির, তাই এটা করতে অসুবিধা হবে না। আমাকে বইয়ের তালিকা করতে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আর কয়েকজনের ওপর বিশেষ 888sport live লেখার পরিকল্পনা করতে বলেছিলেন। শ্রাবণের তিনটি 888sport free bet একত্রে বই আকারে বের হবে শিগগির জানালেন। সকল সহযোগী সম্পাদক একটি করে সম্পাদকীয় লিখবেন, সবারটি নিয়ে প্রকাশক একটি লেখা হিসেবে গ্রন্থে সংযোজন করবেন। আমার লেখাটি যেন সপ্তাহখানেকের মধ্যে তাঁকে ই-মেইল করি। তিনি ফোনে আমার সময় ভোররাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন। একটি সম্ভাব্য তালিকা দিলেন আমাকে যাঁদের ওপর 888sport live লিখতে হবে, প্রয়োজনে কাউকে কাউকে দিয়ে লেখাতে হবে। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা লেখানোর চেষ্টা করতে হবে সিরাজউদ্দৌলাকে নিয়ে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা সম্পর্কে তাঁর মতে আমরা বলতে গেলে কিছুই জানি না। এছাড়া অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক খান সারোয়ার মুরশিদ, আবু মহামেদ হাবিবুল্লাহর নাম তালিকায় লিখে রাখতে বললেন, তাঁদের নিয়ে 888sport live লেখার জন্য। আরেকটি বই সংগ্রহ করে আমাকে পড়ে লেখা প্রস্তুত করতে বললেন, সেটি হলো বিখ্যাত আমলা পি এ নাজিরের আত্মজীবনী। আমি তাঁর কথা অনুযায়ী তালিকাটি লিখে রাখলাম এবং শ্রাবণ নিয়ে আমার লেখাটি সপ্তাহখানেকের মধ্যে তাঁকে ই-মেইল করব জানালাম। এটিই ছিল তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ এবং এটিই ছিল আমার ওপর তাঁর শেষ নির্দেশ। এর দিন-তিনেক পরই কবিরভাই জানালেন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন মেসেঞ্জারে বা ফোনে তাঁর সংবাদ দিতেন কবিরভাই। আমার ভয় ছিল তিনি আর ফিরবেন কি না।
তাঁর সঙ্গে গত পঁয়তাল্লিশ বছরের 888sport sign up bonusর কথা মনে হলে বুকের মধ্যে তীব্র ব্যথা বোধ করি। অনেক কথা মনে পড়ে। আশির দশকের গোড়ায় মাটি হেরে যায় নিয়ে 888sport appর একটি পত্রিকায় গ্রন্থ-সমালোচনা লিখেছিলাম। ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। মাঝে মাঝে বই পাঠাতে বলতেন। কিছুদিন আগে টিএস এলিয়টের কাব্য ও নাটক সমগ্রের একটি বিশেষ সংস্করণ চেয়েছিলেন। সেটি পাঠিয়েছিলাম লেখক মাহবুব তালুকদারের হাতে। সেটিই আমার পাঠানো শেষ বই। আর যে-বইগুলো সংগ্রহ করে রাখলাম তা আর পাঠানো হলো না। বছর বারো-চোদ্দো আগে এলিয়টের Murder in the Cathedral-এর কয়েকটি সংস্করণ নিউইয়র্কের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি থেকে ফটোকপি করে পাঠিয়েছিলাম তাঁর গবেষণার জন্য। আমি জানতাম না তিনি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে এলিয়ট বিষয়ে পিএইচ.ডি করছেন। কিছুই বলেননি। কিন্তু এলিয়টের বিভিন্ন লেখা এবং বিশেষ করে মার্ডার ইন দ্য ক্যাথিড্রালের একাধিক সংস্করণ বিষয়ে বিরামহীন খোঁজ করার অনুরোধ করে ই-মেইল করতেন প্রায় সপ্তাহে দু-তিনবার। এর মধ্যে একটি দুষ্প্রাপ্য ১৯৩৬ সালের মার্ডার ইন দ্য ক্যাথিড্রাল সংস্করণ পাঠাতে জরুরি চিঠি পাঠালেন। আমি অনেক লাইব্রেরি খুঁজে সেটি সংগ্রহ করে আবু ধাবিতে তাঁর মেয়ের ঠিকানায় পাঠাই ফটোকপি। কিন্তু ঠিকানা ঠিক লেখার পরও সেটি ফেরত আসে। তিনি তখন আবুধাবিতে। আমি ফোনে তাঁকে জানাই। এর কয়েকদিন পর সৈয়দ মনজুরভাই নিউইয়র্ক থেকে 888sport app যান, আমি তাঁর হাতে ফেরত আসা সেই বইটির ফটোকপি পাঠিয়ে দিই। খুব খুশি হয়ে প্রাপ্তিসংবাদ জানিয়েছিলেন। তাঁর সৌজন্যবোধ আমাদের সত্যিই বিস্মিত করত। বছর কয়েক আগে এক চিঠিতে জানান, তিনি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের একটি 888sport app download apk নিয়ে একটি বই লিখেছেন, বাংলা একাডেমি থেকে বের হচ্ছে, আমাকে উৎসর্গ করতে চান, আমার অনুমতি চেয়েছেন। বিষয়টি আমাকে এত বেশি স্পর্শ করেছিল যা তাঁকে লিখতে পারিনি। কিছুদিন আগে আরেকবার বিস্মিত হয়েছিলাম যখন তিনি পিএইচ.ডি ডিগ্রি পাওয়ার পর লিখেছেন একটি চিঠি, তাঁর সেই অভিসন্দর্ভে যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নাম উল্লেখ করে, তাদের মধ্যে আমার নাম উল্লেখ করেছেন তাঁর গবেষণার জন্য 888sport free bet login সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য। বিষয়টি পড়ে চোখ আর্দ্র হয়ে আসে। আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে, দাপুটে আমলার বর্মের নিচে এক কোমল কবিহৃদয় ছিল মানুষটির। ভালোবাসার ছিলেন ভীষণ কাঙাল, ভালোও বাসতেন বন্ধুদের গভীরভাবে, কিন্তু বোঝা যেত না, বুঝতে দিতেন না! আমি তাঁর বুকের উত্তাপ কিছুটা পেয়েছিলাম। কী অসাধারণ সৌজন্যবোধ ছিল মানুষটির! মানুষ মনজুরে মওলার প্রতি আমার ঋণ অপরিশোধ্য, তাঁর ভালোবাসা যা পেয়েছি তা এই ক্ষুদ্র জীবনে এক উজ্জ্বল ধন আমার!


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.