মানবিক আখ্যান

মহি মুহাম্মদ
মোহনা
হরিশংকর জলদাস
প্রথমা প্রকাশন
888sport app, ২০১৩
২২০ টাকা

মোহনা বারাঙ্গনা রমণী। মোহনা রূপসী, মোহনা অপরূপা। তাকে ঘিরে যে-কাহিনির সূত্রপাত হয়েছে, তার নাম মোহনা। মোহনা – একটি 888sport alternative link (২০১৩)। দুটি ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধ, রাজ্য দখলের। পাল রাজা আর সাধারণ কৈবর্তরা। কৈবর্তদের ডমরনগরের বারাঙ্গনাপল্লির বারাঙ্গনা মোহনা, মোহনীয় মোহনা কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে। কাহিনির ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে, পালনগর, কৈবর্তনগর আর বারাঙ্গনাপল্লিকে ঘিরে। চণ্ডক আর মোহনা হয়ে উঠেছে 888sport alternative linkের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সদ্যসমাপ্ত 888sport cricket BPL rateের বইমেলার এটি একটি অন্যতম গ্রন্থ। ঔপন্যাসিক হরিশংকর জলদাসের (জ. ১৯৫৫) পঞ্চম 888sport alternative link। তাঁর অন্য 888sport alternative linkগুলো হলো – জলপুত্র (২০০৮), দহনকাল (২০০৯), কসবি (২০১১), রামগোলাম (২০১২) ও হৃদয়নদী (২০১৩)।
জলপুত্র আর দহনকাল এ দুই 888sport alternative linkে জেলে সম্প্রদায়ের অপ্রাপ্তির বেদনা, হতাশা, বঞ্চনা, ক্ষুধা-শোষণের হাহাকার, কাম-ক্রোধ ও অশিক্ষার অন্ধকার – সবই অসাধারণ বিশ্বস্ততার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে।
বিষয়ের আবর্তে কসবি গণিকাদের রক্ত-মাংস-পুঁজময় জীবন ও এদের ভাব-ভালোবাসা, স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়ার কাহিনি নির্মাণ করেছেন কথা888sport live footballিক হরিশংকর জলদাস। রামগোলাম হরিজনদের জীবনকাহিনি। ভদ্রজনের সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য রামগোলামরা আজীবন খেটে যায় আর তাদের জীবিকার পথ রুদ্ধ করে দিয়ে পদে পদে তাদের জীবন সংকটে ফেলবে এ-সমাজের দায়িত্ববান মানুষেরা। সমাজের দলিত-নিগৃহীত মানুষ মেথররা। তাদের জীবনকাহিনি নিয়েই রামগোলাম। রামগোলাম অনুসন্ধানী পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করেছে।
মোহনা একাদশ শতাব্দীর এক গণিকা। বরেন্দ্রভূমির কালিন্দী নদীর উচ্ছলতা তার সমস্ত অবয়বে। বাংলা 888sport live footballে গণিকাদের নিয়ে স্বতন্ত্র অনেক কথা888sport live football রচিত হয়েছে। সেসব 888sport alternative linkে  শুধু তাদের জীবনচিত্র নয়, অনেক 888sport alternative linkে এসেছে তার বাস্তব বর্ণনা। সেসব 888sport alternative linkে অন্য এক জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। সে-জগৎ পুঁতিগন্ধময়, রক্ত-মাংস-পুঁজ ইত্যাদির সমন্বয়ে সে-জগৎ গঠিত। সেসব জগতের মানুষ স্বাভাবিক জীবনবিচ্ছিন্ন। ভাবনা তাদের দেহকেন্দ্রিক, লোভ-লালসাময় এবং একান্তভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক।  সে-জগৎ বারবণিতাদের; সহজভাবে যাকে বলা হয় – বেশ্যালয়। বারবণিতাদের কথা রয়েছে এমন কিছু 888sport alternative linkের নাম। এ ধরনের কিছু 888sport alternative link হলো -শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৭৬-১৯৩৮) দেবদাস, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৯৮-১৯৭১) কবি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের (১৯৪২-২০১২) সেই সময় (১৯৮৬), রিজিয়া রহমানের (১৯৩৯) রক্তের অক্ষর, সমরেশ বসুর (১৯২৪-৮৮) বারো বিলাসিনী, সমরেশ মজুমদারের (১৯৪১) সুধারানী ও নবীন সন্ন্যাসী, শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপদবধূ, সেলিনা হোসেনের (১৯৪৭) মোহিনীর বিয়ে (২০০২) এবং হরিশংকর জলদাসের (১৯৫৫) কসবি (২০১১) উল্লেখযোগ্য।
‘আমি ওরকম নমঃশূদ্র বংশে জন্মেছি’ – এই সাহসী উচ্চারণ একজনই করতে পারেন। তিনি কথা888sport live footballিক হরিশংকর জলদাস (জ. ১৯৫৫)।  আরো সাহসী উচ্চারণ আমরা তাঁর কাছে প্রায় শুনি। 888sport appsের কথা888sport live footballে তিনি এখন আবির্ভূত হয়েছেন নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে। তাঁর বিষয়-আশয় শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ, নোংরা ঘিনঘিনে পরিবেশ থেকে উঠে আসে তার চরিত্ররা। অকপটে  গাল দেয়, ভালোবাসে, ঘৃণা করে, কষ্ট পায়, হাসে-কাঁদে। কেউ কেউ বলেন নিম্নবর্গীয় মানুষের জীবনের রূপকার। আবার কেউ কেউ বলেন – ডোম, মুচি, ধাঙর, গণিকা আর কৈবর্তসমাজের প্রতিনিধি। তিনি এই সময়ের একজন শক্তিশালী কথা888sport live footballিক। এরই মধ্যে তিনি কথা888sport live football রচনায় স্বীয় মেধার পরিচয় তুলে ধরেছেন। আর তার স্বীকৃতিস্বরূপ কথা888sport live footballে পেয়েছেন ২০১২ সালের বাংলা একাডেমী 888sport app download bd।
এ-888sport alternative linkের সময়কাল একাদশ শতাব্দী। ভৌগোলিক সীমারেখা – বরেন্দ্রভূমি। এখানের দুটি সম্প্রদায় হচ্ছে পাল রাজা আর সাধারণ কৈবর্তরা। এরা পরস্পর দ্বন্দ্ব-সংঘাতে সংক্ষুব্ধ। 888sport alternative linkের শুরুতেই আমরা একটি ভৌগোলিক বিবরণ পাই।
কালিন্দী নদী বরেন্দ্রি ছাড়িয়ে দক্ষিণে এগিয়ে গেলে তার নাম হয়ে যায় রায়মঙ্গল। রায়মঙ্গল আরও দক্ষিণে গিয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। সর্বদা কালিন্দীর ভরা যৌবন; বর্ষায় তার যৌবনে ষোড়শীর চাঞ্চল্য – খলখল, ছলাচ্ছল; অন্য ঋতুতে রমণীর রমণীয় গাম্ভীর্য – শান্ত, সৌম্য। (মোহনা, পৃ ৭)
রাজ্য শাসনভার গ্রহণ করার জন্য উভয় সম্প্রদায় মরিয়া। রাজ্যশাসন কাদের করতলগত হবে, শূদ্রদের নাকি বৌদ্ধদের? ঘটনার ঘনঘটায় জড়িয়ে পড়ল কৈবর্তরা। সম্মুখযুদ্ধে মুখোমুখি হলেন পালরাজা রামপাল আর কৈবর্তরাজ ভীম। কৈবর্তরাজ্যের একমাত্র শক্তি ভীমের পালকপুত্র চণ্ডক। চণ্ডকের শরীরে বইছে বৌদ্ধ রক্ত। তার জন্ম রহস্যাবৃত। আর সে গভীরভাবে মগ্ন গণিকা মোহনার রূপ ঐশ্বর্যে। মোহনার সৌন্দর্য চণ্ডককে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। চণ্ডকের জন্মপরিচয়সূত্রে পাওয়া যায় – ভীম একদা বিশাখা নদীর তীরে বেড়াতে এসেছিলেন। সেখানে একটি ছেলেকে দেখতে পান। ছেলেটি ধূলিধূসরিত। ছেঁড়া এক টুকরো কাপড়-জড়ানো কোমরে। ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, ধুলোমলিন। উদোম শরীরের নানা স্থানে আঁচড়ের দাগ। শিশুটির বয়স দু থেকে আড়াই বছর। কাঁদছিল সে। তখন ভীম ওর পরিচয় জানতে চাইলে এক বৃদ্ধ লোক জানাল, বছর তিনেক আগে বৌদ্ধরা মোরোদের রাজ্য আক্রমণ করেছিল। তখন যুদ্ধে না পেরে তারা এই পথে পালাচ্ছিল। পালাতে পালাতে তারা ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। সেইসঙ্গে মেয়েমানুষদের বলাৎকার করেছে। ওই গাঁয়ের নকুলের মেয়ে কৌশল্যাকে কজন মিলে বলাৎকার করেছিল তখন। কৌশল্যা পাগল হয়ে গিয়েছিল। গাছের ডাল ভেঙে শুধু নিজের পেটে আঘাত করত কৌশল্যা আর বলত – ‘মর মর, তুই মর’। বৃদ্ধটি আরো জানালেন, শিশুটি জন্মানোর পরও মেয়েটি বেঁচেছিল। তারপর কেন জানি পাঁচদিন আগে বিশাখায় ঝাঁপ দিয়ে মরে গেল কৌশল্যা। পাগলি মরে যাওয়ার পর ছেলেটি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে শুধু কাঁদছে। লোকে এখানেই তাকে দুমুঠো খাবার দিচ্ছে। ভীমের দয়া হলো।  তিনি ছেলেটিকে তুলে এনে নিজের ছেলের মতো মানুষ করলেন তিনি। সে এখন ডমরনগরের অনেক বড় যোদ্ধা। মহারাজ ভীমের তিন সন্তান। শর্বদেব,কপর্দী ও শম্ভু। ভীম মনে করেন তার চার সন্তান। যেহেতু তিনি চণ্ডককে পুত্রবৎ লালন-পালন করছেন। কিন্তু চণ্ডক আর শর্বদেবের মধ্যে একটা অদৃশ্য দেয়াল। তারা এক অন্যকে অপছন্দ করে। তাই 888sport alternative linkের এক পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই, শর্বদেব তার স্ত্রীর জন্য যে নবরতেœর হার এনেছিল, চণ্ডক তা জোর করে ছিনিয়ে নেয়। সে-হার ছিনিয়ে নিয়ে সে তার প্রিয়তমা বারাঙ্গনা মোহনীয় মোহনাকে অর্পণ করে।
বাণিজ্যকেন্দ্রের অদূরে বারাঙ্গনাপল্লিটি। রাজধানীর বাইরে কালিন্দীর উত্তর পাড় ঘেঁষে, যে-ঘাটে মাঝিরা নৌকা ভেড়ায় তার পশ্চিমে এই পল্লি। কালিন্দী জোয়ার-ভাটার নদী। বারাঙ্গনাপল্লি থেকে একটা গলিপথ নদীপাড় বিস্তৃত। এই পথেই গণিকারা এসে গা-গোসল ধুয়ে যায়। ডমরনগরের বারাঙ্গনাপল্লির একমাত্র আকর্ষণ মোহনা। মোহনার সম্পর্কে লেখকের বর্ণনা –
উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা মোহনা। জালিকদের ঘরে ফর্সা রঙের 888sport promo code নেই। ফরসা রঙটা বামুনদের জন্য। ক্ষত্রিয়-বৈশ্য 888sport promo codeরাও ফরসা হয়। শূদ্রের শূদ্র নমঃশূদ্র। চাঁড়াল, মুচি, দুলিয়া কেওড়া, ধীবর – এরা নমঃশূদ্র। নমঃশূদ্রের কন্যাদের ফরসা হতে নেই – এটাই যেন বিধির বিধান। মোহনাও তাই ফরসা নয়, শ্যামলা। তবে এ শ্যামলার সঙ্গে ফরসা রঙের একটু আভা যেন মিশে আছে। এই ফরসা আভাটাই মোহনার শ্যামলা রংকে রসময় করে তুলেছে।
মোহনার চুল কোকড়ানো। কোঁকড়া চুল খুব বেশি লম্বা হয় না, বিপুল হয়। কিন্তু মোহনার চুল নিয়ম মানেনি। তার চুল বেশ লম্বা। কোঁকড়ানো লম্বা বিপুল চুল মোহনার পিঠজুড়ে। ছিপছিপে শরীর তার। তার চোখেমুখে গ্রামজীবনের শৈশব লেপ্টে আছে। সেই ছোট্ট বয়সটিতে মোহনা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। গ্রামের শস্যময় খেত, শিশিরভেজা মেঠোপথ, কলাপাতার কচি রং, পাখি ডাকা বোর কবে  ফেলে এসেছে মোহনা! কিন্তু এখনো তার চোখেমুখে মেঠোপথের শিশিরসিক্ত ঘাসের কোমলতা, তার গায়ের রঙে কচি কলাপাতার সবুজাভা। মোহনা সর্বাঙ্গশোভনা।’ (মোহনা, পৃ ২৬-২৭)

মোহনা এই পল্লির মেয়ে নয়, তাকে গাঙ্গী থেকে চুরি করে এনেছে সনকা। মোহনার বয়স তখন তিন বছর। আর নিজের পেটের মেয়ের মতো লালন-পালন করেছে তাকে জানকি। যেদিন বারাঙ্গনা হিসেবে মেয়েটি নতুন জীবনে প্রবেশ করতে যাবে –
সেদিন ভোর সকালে নাপিতানি এসে নখ খুঁটে দিয়ে যায়। হাত-পায়ের দশ আঙুলের নখে খুর ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে নাপিতানি বলে, পুরুষরা যাতে তোর এই পায়ের নখে বাঁধা থাকে রামা, তোর হাতের নখের আঁচড়ে রক্তাক্ত হয়েও যেন পুরুষরা প্রফুল্ল বোধ করে, এই কামনা মোর।’ (মোহনা, পৃ ২৩)
এ মেয়েটিকে ঘিরে আরো কিছু নিয়মনীতি পালন করা হয় বারাঙ্গনাপল্লিতে।
সামন্তদের মনোভাব খুব সংকীর্ণ। তারা ভাবে রাজ্যশাসন করবে ক্ষত্রিয় বা বৌদ্ধরা, কৈবর্ত নয়। কারণ কৈবর্ত একটা হীন জাতি। তাদের রাজ্যশাসন মানায় না। তাই পালরা চেয়েছে – নিশ্চিহ্ন হোক কৈবর্তশাসন। কিন্তু পালবংশে তিনজন শাসক যথা মহীপাল, শূরপাল, রামপাল তিনজনই পরিকল্পনা আর বিচক্ষণতার অভাবে বারবার পরাজিত হয়েছে কৈবর্তদের হাতে। তাই রামপাল আর ভুল করতে চায় না। এবার সে সর্বশক্তির সমন্বয়ে যুদ্ধাভিযান করতে চায়।
ডমরনগর ঐশ্বর্যমণ্ডিত। সামরিক শক্তিতে দুর্ভেদ্যও। এই কৈবর্তনগরকে করতলগত করতে হলে সীমান্তে আর নদীপাড়ে সৈন্য সমাবেশ করতে হবে। তৈরি করতে হবে নতুন স্কন্ধ। রামপাল তাই পুরনোকে মেরামত করছে আর নতুন নতুন দুর্ভেদ্য স্কন্ধ নির্মাণ করছে।
পালদের সব খবরাখবরই রাখে বরেন্দ্রী সূর্য ভীম। তার বিশ্বস্ত গুপ্তচর বাহিনী সব খবরই সংগ্রহ করে। তাই ভীমও হাত গুটিয়ে বসে নেই। তার নিয়মিত সৈন্যবাহিনী আছেই আর আছে দেশপ্রেমী জনগণ। তাঁর আহ্বানে জড় হচ্ছে – কৈবর্ত-পুলিন্দ-নিষাদ- তন্তবায়-স্বর্ণকার-তৈলকার-ডোম-চাষি-হালিক-জালিক-কবি ও মাঝি। ‘মোরাদের রাজা’ ভীমের পরাজয় মানে তো তাদের ধ্বংস। ভীমের পরাজয় হলে পালরা তাদের জীবন-জীবিকার সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। তাদের দেশছাড়া করবে। তাদের সামনে তাদের মা-বোন, স্ত্রী-কন্যাকে বলাৎকার করবে। ক্রীতদাসীর মতো নিজেদের ঘরে নিয়ে যাবে। পরিচারিকার কাজ করাবে। শয্যাসঙ্গিনী বানাবে। তাই বরেন্দ্রবাসী কিছুতেই তা হতে দেবে না। জীবন দিয়ে তারা পালদের রুখবে। শুরু হলো যুদ্ধ। কৈবর্তরা জিততে পারত, কিন্তু ঘরের শত্রু বিভীষণের কারণে তা সম্ভব হলো না। চণ্ডক গোপনে সামন্তদের সঙ্গে যোগ দিল। ঈর্ষা, ক্ষোভ, বঞ্চনা আর একরোখা একগুঁয়েমি মনোভাব পোষণ করে সে। অফলায় যুদ্ধ শুরু হলে চণ্ডক ভীমের বাহন হিমালয় নামক হাতিটির বাঁ-চোখে খড়গের অগ্রভাগ ঢুকিয়ে দিলো। এরপর হিমালয় দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়াতে শুরু করল। শত্র“ চক্রের মধ্যে ঢুকে গেল সে আর অনায়াসে পাল সৈন্যরা ভীমকে বন্দি করল। রামপাল ভীমকে নির্বংশ করার নির্দেশ দিলেন। ভীমের কোনো রক্তবীজ রইল না। চণ্ডকের প্রতারণায় ভীম সবংশে নিধন হলো। এ খবর বারাঙ্গনাপল্লিতে পৌঁছলে বরারামারা সব পালাতে শুরু করল। কিন্তু মোহনা? মোহনা পালাতে চাইল না। আমরা দেখি –

বঁটির গাঁয়ে হাত বোলাতে বোলাতে মোহনা বলে, ‘একটা ভুল চণ্ডক করে ফেলেছে। যদি বলো বিশ্বাসঘাতকতা, তা-ই সই; বিশ্বাসঘাতকতাই না হয় করেছে চণ্ডক, এই ত্রিভুবনে বিশ্বাসঘাতকের অভাব আছে নাকি? তাদের দরে একজন বাড়ল নাহয়। আর চণ্ডক তো আমাকে ভালোবাসে, তাকে ফেলে যাব কোথায় আমি?’ তারপর কণ্ঠ নামিয়ে মোহনা আবার বলে,‘ তাকে ফেলে আমার পালিয়ে যাওয়া তো উচিত নয়, মাসি। আমার যে বড় পাপ হবে।’ (মোহনা, পৃ ১২৩)
চণ্ডক এসে মোহনাকে ভোগ করে। রাতের শেষ প্রহরে চণ্ডক চলে যেতে চায়। কারণ পালরা তাকে পুরস্কৃত করবে। মোহনা চণ্ডককে তার কাছ থেকে 888sport app download bd নিয়ে যেতে বলে।
চমকে পেছন ফিরল চণ্ডক। বিহ্বল-বিস্ফোরিত চোখে দেখল, মোহনার প্রচণ্ড ঘৃণা মেশানো চোখ থেকে আগুন ঝরছে।
মোহনা, কী করছ, কী করছ, মোহনা বলতে চাইর চণ্ডক।
তার আগেই চণ্ডকের মস্তক বরাবর মোহনার হাতের বঁটিটি নেমে এল। ভূমিতে লুটিয়ে পড়ল মোহনার ভালোবাসার চণ্ডক, মোহনার ঘৃণার চণ্ডক। উন্মাদিনীর মতো মোহনা হেসে উঠল – খিল খিল খিল।’ (মোহনা, পৃ ১২৮)

চণ্ডক এবং মোহনা চরিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রে লেখকের মমত্ববোধের পরিচয় মেলে। চণ্ডক চরিত্রের গভীরে তার অন্তর্দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় পরিস্থিতির ইঙ্গিত লেখক বারবার দিয়েছেন। আমরা দেখতে পাই, চণ্ডক যখন কৃতঘœ হয় তখন সে বারবার নিজেকে নানা যুক্তি, ভেতর ফেলে নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার হয়ে নিচ্ছে। বন্দি হরিপালের বিচারসভায় সবার কাছে উপহাসের পাত্র হয়ে সে সিদ্ধান্ত নেয় ‘আর নয় কৃতজ্ঞতা, এবার কৃতঘœতার পালা’। কণ্ঠ ফাটিয়ে চিৎকার করে এ-কথা বলে চণ্ডক কান্নায় ভেঙে পড়ে। হয়তো এ-কান্নার ভেতর দিয়ে সে পিতৃঋণ ভুলে যায়। ছিন্ন করে সব বাঁধন।
চণ্ডকের প্রতারণা আমাদের 888sport app download for android করিয়ে দেয় বাংলার মোগল আমলের বিখ্যাত ঘৃণ্য চরিত্র মীরজাফরকে। মীরজাফরের ষড়যন্ত্র আর প্রতারণায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা বাংলার মসনদচ্যুত হন। আর চণ্ডকের প্রতারণায় ডমরনগরের কৈবর্ত রাজা ভীমকে সবংশে ধ্বংস করা হয়েছে।
ভৌগোলিক বিবরণ, বরেন্দ্রভূমির প্রকৃতি এ-888sport alternative linkের উল্লেখযোগ্য উপাদান। লেখকের বর্ণনার প্রসাদগুণ আর ইতিহাসের দুই সম্প্রদায়ের ক্ষমতার লড়াই 888sport alternative linkটির গ্রহণযোগ্যতা অনেকখানি বৃদ্ধি করেছে। কসবি 888sport alternative linkের দেবযানী আর মোহনার মোহনার মধ্যে পাঠক এক নিবির সম্পর্কের সাযুজ্য খুঁজে পাবে। সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে কথা888sport live footballিক হরিশংকর জলদাস মোহনা সম্পর্কে বলেন,
মোহনা অসাধারণ চরিত্র হয়ে উঠবে কিনা জানি না, তবে দেবযানির মতো মোহনাও একটি আকর্ষণীয় চরিত্র। ওই 888sport alternative link মূলত রাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রের দ্বন্দ্বের কাহিনী। একদিকে বৌদ্ধরাজা রামপাল। আর অন্যদিকে কৈবর্তরাজ ভীম। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে জারজ সন্তান চণ্ডক। চণ্ডকের গায়ে বৌদ্ধ রক্ত। চণ্ডক অনুরক্ত ধীবর তরুণী মোহনায়। সমরনীতির মারপ্যাচে ভীম যখন পরাজিত হল, ভীমের পালিতপুত্র চণ্ডক যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে বৌদ্ধদের পক্ষ নিল, তখন বরেন্দ্র ছেড়ে সবাই পালালেও মোহনা পালাল না। প্রতিশোধস্পৃহায় সে থেকে গেল বরেন্দ্রীর বারাঙ্গনা পল্লিতে। এবং শেষ পর্যন্ত ভীমবাহিনী যা করতে পারেনি, তা-ই করল মোহনা। ১৭৭৫ সালের সিরাজ-উদ্-দৌলার কথা ভেবে, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের কথা ভেবে আমার মোহনা চরিত্রের বিষয়টি মনে দানা বেঁধেছিল।’ (হরিশংকর জলদাসের সাক্ষাৎকার, কালের কণ্ঠ, ০১-০৩-১৩)
লেখকের 888sport live chatগুণ এই দুই চরিত্রকে বাংলা 888sport live footballে এক অমর সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। পাঠক এই দুই চরিত্রকে বহুদিন মনে রাখবে। আর সেইসঙ্গে এই চরিত্রের নির্মাতা হরিশংকর জলদাসকে। সার্বিক বিবেচনায় মোহনা লেখকের এক অনবদ্য সৃষ্টি এবং এটি পাঠকের চিত্তআকর্ষণ করবে – এ-আস্থা পোষণ করা যায়।