মেয়েটির নাম আনোয়ারা, ডাক নাম মিতা। সেই নামটাও বোধহয় এক সময় তার স্বামীর মুখে ছিল মিতু। এখন অনেকের মুখে মুখেই মিতু চালু হয়ে গেছে। তাকে যদি কেউ হঠাৎ পাগল মনে করে, তাহলে খুব একটা ভুল হবে না। আসলে তার জীবনীশক্তি সাধারণ মানুষের থেকে এতই বেশি যে অনেক সময় সে নিজেই তা ঠিকঠাক ধারণ করতে পারে না, সে যখন তখন কেঁদে ওঠে, তখন আপাতভাবে কান্নার কোনো কারণই নেই। পুরোনো কোনো কথা মনে পড়ে যায় বোধহয়, আবার এক এক সময় হাসতে শুরু করলে থামতে পারে না কিছুতেই।

তার কাজের লোকেরা জানে, মিতুর মন খুবই নরম আর সরল, অথচ তার রাগ সাংঘাতিক! রাগ ব্যাপারটা কোনো কোনো মানুষের খুব বেশি আর কোনো কোনো মানুষের বেশ কম হয় কেন তা আজও নির্ণয় করা যায়নি। এটা রক্তচাপের ওপরেও নির্ভর করে না।

কেউ কেউ একেবারেই ক্রোধ সংবরণ করতে পারে না, সব যুক্তিবোধ নষ্ট হয়ে যায়, অনেকক্ষণ ধরে রাগে গরগর করে। আর কারুর কারুর রাগ

একবার দপ করে জ্বলে উঠেই বাদে একেবারেই নিভে যায়, তারপর শুরু হয় অনুতাপ ।

মিতু যখন রাগ করে তখন হাতের সামনে যা পায়, তাই-ই ভাঙে, এমনকি লোকজনের সামনে তার স্বামীকেও চড়-চাপড় মারতে শুরু করে, তখন সে কোনো কথাই শোনে না। তারপর হঠাৎ শুরু করে দেয় কান্না। সামনে যে থাকে, তারই পা ছুঁয়ে ক্ষমা চায় ।

এ রকম মেয়েকে নিয়ে ঘর-সংসার করা সহজ কথা নয়। আমরা বাইরের লোক, আমাদের হয়তো এসব দেখতে মজা লাগে, কিন্তু এর স্বামীটির ধৈর্য ও সহ্যশক্তি অসীম হওয়া দরকার। শামীমের চেহারাটা যেমন পাহাড়ের মতন বিরাট, তেমনই শান্ত। সর্বসমক্ষে সে তার স্ত্রীর নানারকম পাগলামি দেখে মৃদু মৃদু হাসে, কখনো দু’একটা চিমটি কাটা মন্তব্য করে উস্কেও দেয়। দু’জনের মধ্যে যে গভীর ভালোবাসা রয়েছে, তা বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না।

আমি প্রতিবছর অন্তত একবার-দু’বার 888sport appয় যাই। কোনো-না-কোনো আমন্ত্রণে। সাধারণত হোটেলেই ওঠার কথা, দু’-একবার 888sport app ক্লাবেও থেকেছি, আর কোনো কোনো বন্ধু ও শুভার্থীর বাড়িতেও আতিথ্য পাই। গাজী শাহাবুদ্দিনদের বাড়িতে আমি সস্ত্রীক থেকেছি বেশ কয়েকবার। এমনও হয়েছে, আমন্ত্রণকারীদের ব্যবস্থাপনায় উঠেছি কোনো হোটেলে, গাজী ও তাঁর স্ত্রী বীথি এসে জোর করে আমাদের ধরে নিয়ে গেছেন নিজেদের বাড়িতে ।

হোটেলের বদলে কারুর বাড়িতে আতিথ্য নিলে গৃহকর্ত্রীকে অনেক ঝঞ্ঝাট সহ্য করতে হয়। দলে দলে ছেলেমেয়েরা আসে দেখা করতে, তাদের চা-নাস্তা পরিবেশন করে যেতে হয় অবিরাম। বীথির এক আশ্চর্য ক্ষমতা আছে, অনেকটা ম্যাজিকের মতন। দুপুরবেলা যারা বসে থাকে, তাদের সে ভাত খেয়ে যেতে অনুরোধ করে। একদিন বেলা দুটোর সময়েও ঠিক এগারোজন 888sport promo code-পুরুষ আড্ডা ছেড়ে উঠছিল না। বীথি তাদের সবাইকেই গিয়ে বসতে বললো খাবার টেবিলে । কয়েকজন বললো তারা আগেই খেয়ে এসেছে। তাতে কী, তবু কিছু মুখে দিতেই হবে। টেবিলে প্লেটের পর প্লেট নানারকম সুখাদ্য আসতে লাগলো । অত লোকের খাওয়ার পরেও বেশি রইলো অনেক কিছু। আমি তাজ্জব হয়ে ভাবতে লাগলাম, বীথি কি আগে থেকেই এতজন মানুষের জন্য রান্না করে রেখেছিল? এই মানুষগুলি না এলে এত খাদ্য নষ্ট হতো? মনে হয়, আরও একডজন মানুষ বেশি হলেও বীথি সবাইকে খাইয়ে দিতে পারতো। এ যেন মহাভারতের দ্রৌপদী!

888sport appয় আমি যে কদিন থাকি, তার মধ্যে একটি সন্ধ্যে শামীম- আনোয়ারার কাছে যেতেই হয়। না গেলে সে বোধহয় আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে যেতেও পারে। শামীম ইতিহাসের অধ্যাপক এবং পড়ুয়া মানুষ। মিতু কিন্তু আমার কোনো লেখাই পড়েনি। সে শুধু জানে, আমি একজন লেখক, অনেক অল্পবয়েসী ছেলেমেয়ে আমার কাছ থেকে সই নেয়।

মিতুর কাছে আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়, আমার জন্ম ফরিদপুরের একটি গ্রামে। তার ঠিক পাশের গ্রামেই মিতুর বাপের বাড়ি। সুতরাং আমি তার খুব নিকট আত্মীয়।

ফরিদপুরের সেই গ্রামের সঙ্গে বহুকাল আমার কোনো সম্পর্ক নেই, জন্মস্থান সম্পর্কে আমার কোনো মোহও নেই। কিন্তু আমাকে নিয়ে মিতুর আদিখ্যেতাও প্রায় পাগলামির পর্যায়ে পড়ে। আমার সামনে বসে অবিরাম সেই গ্রামের গল্প, সেখানকার নদী আর বিলের গল্প করে যায়, আর মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, আপনার মনে আছে?

আমি শুধু ঘাড় নাড়ি ।

গাজী-বীথিদের বাড়িতে যেমন সর্বক্ষণ বহু লোকের সমাগম, এ বাড়িতে তার ঠিক বিপরীত, মাত্র চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর আমন্ত্রণ হয়। শামীম গল্প জমাতে পারে না, চুপচাপ থাকে, সব কথা বলার দায়িত্ব নেয় মিতু।

সে বাড়িতে আমি প্রত্যেকবারই মিতুর কোনো না কোনো রাগের ঘটনা দেখেছি।

ওদের এক বন্ধু আজিজ ইচ্ছে করে মিতুকে রাগায়

আজিজ একবার খুব নিরীহভাবে আমায় জিজ্ঞেস করেছিল, সুনীলদা, আপনার ছোটবেলার কিছু মনে নাই? আপনার কখনো জুতা চুরি যায়নি? ফরিদপুরের লোকেরা খুব জুতাচোর হয়!

আমি কিছু উত্তর দেবার আগেই মিতু ফোঁস করে উঠে বললো, কী কইলা? কী কইলা?

আজিজ বললো, আমাদের শমীম ভাই যখন প্রথমবার শ্বশুরের গ্রামে গেল, সেবারেই তার এক পাটি জুতা চুরি হয় নাই?

আর যাবে কোথায়? দাপাদাপি শুরু করে মিতু, আজিজের হাত থেকে পানীয়ের গেলাশ কেড়ে নিয়ে ফেলে দিল ছুড়ে। সে গেলাশটা গিয়ে লাগলো দেয়ালের একটা সুদৃশ্য ঘড়িতে। তাতেও ভ্রূক্ষেপ না করে সে শমীমের ঘাড় খামচে ধরে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, তোমার জুতা চুরি হইছিল না কুকুরে নিয়া গেছিল, বলো, বলো, সত্যি কথাটা বলো !

আমি অবশ্য মিতুর এরকম কোনো রাগের কারণ ঘটাইনি কখনো। শামীম আর মিতু কলকাতায় বেড়াতে আসেনি কখনো, প্রায়ই প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তা রাখে না। মিতুর ইচ্ছে আছে খুবই, কিন্তু শামীম সহজাত অলস, সে বিশেষ ঘোরাঘুরি পছন্দ করে না।

একবার শান্তিনিকেতনে একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ পেয়েছিল শমীম। তখন মিতুও তার সঙ্গে আসবে। সব ঠিকঠাক। প্লেনের টিকিট কাটা হয়ে

গেল, হঠাৎ আগের দিন শামীমের ধুম জ্বর আসা হলো না। জ্বর তো মানুষের হতেই পারে, কিন্তু মিতুর ধারণা, আসতে চায় না বলেই শামীম ইচ্ছে করে জ্বর বাধিয়েছে।

এই নিয়ে সে স্বামীর সঙ্গে কতটা রাগারাগি বা মারামারি করেছে, তা জানি না।

বীথি আর গাজী শাহাবুদ্দিন প্রায়ই আসে কলকাতায়। এ জন্য বীথিকে খুব হিংসে করে মিতু। মিতুর তুলনায় বীথি অনেক রূপসী। সেটাও একটা হিংসের কারণ।

স্বাতী অনেকবার মিতুকে বলেছে, তুমি একলা চলে এলেই তো পারো! মিতু জিজ্ঞেস করে, একা যাবো? কোনোদিন যাইনি। কিছু চিনি না।

থাকবো কোথায়?

স্বাতী বলেছে, আমাদের বাড়িতে থাকবে। তোমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করে নেব।

মিতু বলেছে, যাবো, নিশ্চয়ই যাবো। একাই যাবো। শান্তিনিকেতন দেখতে যাওয়ার কতদিনের শখ আমার ।

কিন্তু তার আসা হয়নি। শামীম না এলে সে ঝগড়া করবে কার সঙ্গে। মাঝখানে এক বছর আমার 888sport appয় যাওয়া হয়নি। অন্যদেশে গিয়ে কয়েকমাস ছিলাম, তাই যোগাযোগও থাকেনি কারুর সঙ্গে।

ফিরে আসার পর, বর্ষাকালের এক বিকেলবেলা একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটলো।

আমরা থাকি দক্ষিণ কলকাতার একটি আকাশচুম্বী বাড়ির দশতলার ফ্লাটে। দক্ষিণদিকের বারান্দায় দাঁড়ালে, সামনে আর কোনো উঁচু বাড়ি নেই, দিগন্ত পর্যন্ত দেখা যায়। একেবারে প্রান্তরেখাটি সবুজ। কোনো বন্ধু জিজ্ঞেস করেছিল, ঐ দিকে সুন্দরবন নাকি? আমি বেলাল চৌধুরীকে একবার বলেছিলাম, জানো না, আমার দশতলার বারান্দা থেকে 888sport app পর্যন্ত দেখা যায়।

খুব মিহি বৃষ্টি পড়ছে, এ রকম বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে ।

আমার হাতে কফির কাপ, আমি দেখছি রাস্তায় মানুষের স্রোত। অনেকেই ছাতা মাথায় দেয়নি। একদল বাচ্চা ছেলেমেয়ে ছোটাছুটি করছে মাঝ রাস্তায়

হঠাৎ দেখি, একদল লোক একটি মেয়েকে ঘিরে এগিয়ে আসছে আমাদেরই বাড়ির দিকে।

এত ওপর থেকে মানুষদের একটু ছোট ছোট দেখায়। আমার মনে হলো, জনতায় ঘেরা মহিলাটি যেন চেনাচেনা। অথচ, রাস্তায় কোনো পাগলকে যেমন লোকজন ঘিরে দাঁড়ায়, দৃশ্যটি সেরকম।

আমি স্বাতীকে ডেকে বললাম, স্বাতী, একবার এদিকে এসে দেখো তো! ঐ মেয়েটি কে?

স্বাতী সব সময় চশমা পরে না। আবার চশমা ছাড়া অনেক কিছুই

দেখতে পায় না।

একবার উকি মেরে ও আবার ভেতরে চলে গেল চশমা আনার জন্য । আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঐ মেয়েটিকে অনেকটা 888sport appর মিতুর মতন দেখতে না?

স্বাতী বললো, মিতুই তো! ওমা, ওর কী হয়েছে?

এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, মেয়েটি কাঁদছে। দশতলা থেকে নিচে নামতে কয়েক মুহূর্ত লাগে মাত্র।

ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গেলাম। কোনো সন্দেহ নেই, এ মেয়েটি আনোয়ারা মিতুই বটে। কাঁদছে একটি অভিমানী বালিকার মতন ।

আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে একটা হাত জড়িয়ে ধরলো। আমাকে এ পাড়ায় অনেকেই চাক্ষুষভাবে চেনে না। নাম জানে হয়তো কয়েকজন। সেরকম মুখচেনাও কেউ নেই এখানে।

আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই একজন যুবক বললো, এই ভদ্রমহিলা শুধু কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, আমি সুনীলদার বাড়ি যাবো! ঠিকানা জানেন না, আর কিছুই বলতে পারেন না। আপনি একে চেনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, চিনি। ঠিক আছে, আমি নিয়ে যাচ্ছি! সেই যুবকটি আবার জানালো, সিগারেটের দোকানদার বললো, এই বড় বাড়িতে একজন সুনীলবাবু থাকে, তাই আমরা এদিকে নিয়ে আসছিলুম । উনি কাঁদছেন কেন? কোনো বিপদ হয়েছে?

মিতু কখন এবং কেন কাঁদে, তা বুঝিয়ে বলা শক্ত। বললাম, আপনাদের জনতাকে গেটের বাইরে রেখে আমরা দু’জনে এসে দাঁড়ালাম লিফটের ধন্যবাদ। আমি ওপরে নিয়ে যাচ্ছি। ইনি 888sport apps থেকে আসছেন।

জনতাকে গেটের বাইরে রেখে আমরা দু’জনে এসে দাঁড়ালাম লিফটের সামনে।

চোখের জল মুছে ফেলেছে। ঝলমলে বিস্মিত মুখে মিতু বললো, আপনেরা এত বড় বাড়িতে থাকেন?

আমি বললাম, হ্যাঁ, আমার এ বাড়িতে দু’জনের সংসার।

888sport appতে এর থেকেও আরও অনেক বড় এবং বেশি আধুনিক ধরনের ফ্ল্যাট বাড়ি আছে। মিতু

তার একটাও দেখেনি? দেখুক বা না দেখুক, এই প্রশ্ন তার সারল্যের সঙ্গে মানিয়ে যায়।

এখন তার মুখে ঝলমলে হাসি। বোঝবার কোনো উপায়ই নেই, একটু আগেই সে অঝোরে কাঁদছিল।

বাবারে! খুব জোর বাইচ্যা গেছি। – এ কথা বলার সময়েও তার ঠোঁটে হাসি লেগে আছে।

লিফটে উঠে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এরকম হঠাৎ চলে এলে? আগে একটা খবর দাওনি কেন? শামীম কোথায়?

সে আসে নাই ।

তুমি একা এসেছো? আগে থেকে খবর দিলে তোমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করার ব্যবস্থা করতাম।

কী করে খবর দেব? আমি তো আপনাগো ঠিকানা জানি না। ফোন নাম্বারও জানি না। আমি বিমানেও আসি নাই !

বাকি কাহিনীটি শোনা গেল ওপরে এসে।

তার চেহারাটা খানিকটা বিপর্যস্ত। একটা দামি শাড়ি পরেছে বটে। কিন্তু মাথায় চুল উস্কোখুস্কো, মুখখানা ধূলিমলিন ।

বীথি শাহাবুদ্দিনের । সঙ্গে তুলনা হয় না বটে, কিন্তু মিতুরও চোখে পড়ার মতন নিজস্ব রূপ আছে। বীথির সৌন্দর্য খানিকটা ক্লাসিকাল ধরনের। মিতু ফর্সা নয়, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ যাকে বলে, হিলহিলে লম্বা, কোমর ও বুকের গড়ন নিখুঁত, পাখির মতন বিস্ময়মাখা দুটি ডাগর চোখ। কোমর ছাড়িয়ে যাওয়া একঢাল চুল ।

একটা কাধে ঝোলানো ব্যাগ ছাড়া তার সঙ্গে কোনো মালপত্রও নেই। প্রথমেই সে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে এলো। তারপর বললো, আপনাদের বারান্দা থেকে অনেকখানি আকাশ দেখা যায়। একবার ঐ বারান্দায় যাবো?

স্বাতী তাকে মৃদু ধমক দিয়ে বললো, পরে বারান্দায় যাবে। চুপটি করে বসো। আগে বলো, তুমি রাস্তায় কাদছিলে কেন ? তার কাহিনীটি খুবই বিস্ময়কর।

সে বিমানে আসেনি। এসেছে বাসে, বর্ডার পার হয়ে। যখনকার কথা বলছি, তখনো 888sport app-কলকাতা সরাসরি সৌহার্দ্য বাস চালু হয়নি। 888sport apps সীমান্ত পর্যন্ত বাসে এসে, তারপর খানিকটা পায়ে হেঁটে, এদিক থেকে আবার বাস বা ট্রেনে চাপতে হয়। দু’দিকেরই সীমান্তরক্ষী এবং শুল্ক- কর্মচারীদের হাতে অনেককে হয়রান হতে হয় শুনেছি। সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করে আনন্দ পায়, তারাও সাধারণ মানুষ।

কিন্তু আমাদের ঠিকানা না জেনে সেই বনগাঁ থেকে এতদূর এলো কী করে?

সীমান্ত পার হবার সময় এদিকে কিংবা ওদিকে তাকে ঝঞ্ঝাটে পড়তে হয়েছিল কিনা, সে বিষয়টা সে এড়িয়ে গেল। বারবার বলতে লাগলো, না, কিছু হয় নাই ।

কান্না শুরু হলো বনগাঁয় এসে। সেখানে সে লোকজনদের বলতে লাগলো, কলকাতায় সুনীলদার বাসায় কীভাবে যাবো?

ঠিকানা জানে না শুনে অনেকেই হেসেছিল।

আমার নাম শুনলেই লোকে আমার বাড়ির সন্ধান দিয়ে দেবে, আমি মোটেই তেমন বিখ্যাত নই। কেউ কেউ বলেছিল, কলকাতা কি একটা গ্রাম: যে একজন মানুষের নাম দিয়ে বাড়ির ঠিকানা হয় ?

যাই হোক, দয়াপরবশ হয়ে একটি দম্পতি তাকে ট্রেনে সঙ্গে নিয়ে আসে। শিয়ালদা স্টেশন পর্যন্ত। এর মধ্যে একটা ব্যাগে সে স্বাতীর জন্য কিছু উপহার দ্রব্য নিয়ে এসেছিল, সেই ব্যাগটি নিয়ে কেউ সরে পড়ে।

শিয়ালদা স্টেশনে নেমে সেই একই ব্যাপার। লোকের কাছে আমার নাম বলে কোনো কাজ হয়নি।

স্বাতী তাকে কোনো একবার বলেছিল, আমাদের বাড়ির কাছেই আছে আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়। খুব বড় দোকান, 888sport apps থেকে অনেকেই সেই দোকান থেকে শাড়ি কিনতে আসে।

এবারে সে বুদ্ধি করে সেই দোকানের নাম বলায়, একজন তাকে তুলে দিয়েছিল বাসে। নেমেছে গাড়িয়াহাটের মোড়ে।

আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ে ঢুকে জিজ্ঞেস করেছিল আমার কথা। ঐ দোকানের একজন মালিক আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে অবশ্য, কিন্তু সে তখন দোকানে ছিল না। অন্য কর্মচারীরা সেই সময় খদ্দেরদের ভিড় সামলাতে ব্যস্ত। তারা পাত্তা দেয়নি।

তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে কান্না।

শেষ পর্যন্ত যে পৌঁছেছে আমাদের বাড়িতে, সেটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। কিন্তু এইভাবে কেউ আসে?

সারল্য ব্যাপারটা আমরা সবাই পছন্দ করি। কিন্তু সেই সারল্য মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে যখন বোকামির পর্যায়ে পড়ে, তখন বেশ রাগ হয়।

মিতুর শরীরে রূপ ও যৌবন আছে, মেয়েদের ঐ শরীর লুট করার জন্য দস্যুরা ওত পেতে আছে যেখানে-সেখানে। এর মধ্যে এদেশ-ওদেশের বিভেদ নেই। ওর হাতে ও গলায় গয়নাও রয়েছে, অর্থাৎ প্রলোভনের আরও বস্তু। আমাদের বাড়িতে আসবার জন্য ওর কোনো গুরুতর বিপদ হলে আমাদের মনের অবস্থা কী হতো?

আমি ওকে মৃদু ভর্ৎসনা করতে যাচ্ছিলাম, স্বাতী নিষেধ করলো চোখ দিয়ে

মিতুর পিঠে হাত দিয়ে নরম করে বললো, আহা, মেয়েটার খুব টেনশন গেছে। ভালো করে বিশ্রাম নিক। তারপর কাল-পরশু ওকে শান্তিনিকেতন নিয়ে যাবো । কাল হবে না। পরশু দশটার ট্রেনে ।

মিতু বললো, আমি তো পরশু পর্যন্ত থাকবো না। কাল চলে যাবো। এবার আমাদের আবার অবাক হবার পালা। বলে কি মেয়েটা? কালই চলে যাবে। এত অল্প সময়ের জন্য এমন ঝুঁকি নিয়ে আসার কী মানে হয়?

স্বাতী বললো, যাব। কাল আমি তোমাকে মোটেই যেতে দেব না। একগাল হেসে মিতু বললো, বউদি, কাল আমাকে যেতেই হবে। প্লেনের টিকিট কাটা আছে।

এ কথাটা শুনে আমার খটকা লাগলো। এসেছে বাসে, বর্ডার পেরিয়ে। আর ফিরবে প্লেনে, এ রকম তো ভিসা পাওয়া যায় না। যে পথ দিয়ে আসা, সেই পথ দিয়ে ফেরাই নিয়ম।

মিতু বললো, আমি তো 888sport appয় ফিরবো না। যাবো সৌদি আরব। আপনাদের সাথে শুধু দেখা করতে আসছি।

যাঃ, কী বললো মিতু? কলকাতা থেকে তো সৌদি আরবে কোনো ফ্লাইট নেই ।

আগে তো দুবাই যাবো। সেইখান থিকা আবার প্লেন বদল। তুমি তো 888sport app থেকেই দুবাই কিংবা সৌদি আরবে সরাসরি যেতে

পারতে। এত কষ্ট করতে গেলে কেন?

বাবু, তাইলে তো আপনাগো সাথে দেখা হইত না!

শুধু আমাদের সঙ্গে একবার দেখা করার জন্য সে এমন ঘোরাপথ নিয়েছে, এটা আমাদের পক্ষে আনন্দের কথা বটে, কিন্তু ঠিক যেন বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তুমি সৌদি আরবে যাবে কেন?

এমনিই । বেড়াইতে । অন্য কাজও আছে।

তুমি একা একা অতদূরে যাচ্ছ। শামীম তোমাকে ছেড়ে দিল?

হ্যার কিছু আসে যায় না। আমি বাঁচি কিংবা মরি-

ও. স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে?

না, না, ঝগড়া হয় নাই। সেসব কিছু না। দুবাইতে আমার ভাই থাকে। সে তোমাকে সৌদি আরবে নিয়ে যাবে?

না, সে যাবে না। ঐখানেও আমাদের চেনা মানুষ আছে। আমি স্বাতীকে এই মেয়েটির কথা আমার কেমন যেন বললাম, উল্টোপাল্টা মনে হচ্ছে। তুমি ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে দেখো তো! সত্যি কী পাগলামি করছে!

সন্ধ্যেবেলা বেরিয়ে গিয়ে আমি বাড়ি ফিরলাম গভীর রাতে। ততক্ষণে মিতু ঘুমিয়ে পড়েছে। স্বাতীরও ঘুমচোখ। কোনো কথাই হলো না । যত রাতেই শুতে যাই, আবার ঠিক সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙে। চা ও খবরের কাগজের তৃষ্ণায়। অনেকদিনের অভ্যেস।

আমাদের শুধু স্বামী-স্ত্রীর সংক্ষিপ্ত পরিবার। অতিথি কেউ এলে তাঁকে যতক্ষণ ইচ্ছে ঘুমোতে দেওয়া হয়। বেশির ভাগ দিনই আমি স্বাতীকেও না জাগিয়ে দরজার কাছে এসে খবরের কাগজ খুঁজি। কোনো কোনোদিন হকার আসতে দেরি করে। তখন আমি বারান্দায় গিয়ে উন্মুখভাবে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি। যেন প্রেমিকার প্রতীক্ষায়।

খবরের কাগজের জন্য এতটানের কোনো মানে হয় না। বেশিরভাগ দিনই তো খারাপ খবর থাকে। শুধু খুনোখুনি আর যুদ্ধ-বিগ্রহ। আর ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে কথা। প্রথম পৃষ্ঠায় যেন চটচটে রক্ত লেগে থাকে তবু কাগজ পড়তেই হয় ।

মিনিট পনেরোর মধ্যেই উৎপল এসে পড়ে। চা বানায়। একেকদিন উৎপলই বগলে করে খবরের কাগজগুলো নিয়ে আসে।

ছোট

বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে আমি সকালটা উপভোগ করি। আজও আকাশ মেঘলা। রোদের তেজ নেই, বাতাস বেশ সুস্বাদু ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসছে, আমাদের বাড়ির কাছেই এক বিরাট স্কুল। বাচ্চা ছেলেদের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমার শৈশবের কথা মনে পড়ে না। মনে পড়ে আমার ছেলের ঐ বয়েসের কথা। এক একটি শিশুর সঙ্গে আমার ছেলের যেন খুব মিল।

আমার নিজের শৈশব এখন বড় বেশি দূর হয়ে গেছে।

এক কাপ চা নিয়ে এসে স্বাতী একটা মোড়া টেনে বসলো আমার পাশে। ফিস ফিস করে বললো, জানো, কাল অনেকক্ষণ কথা বললুম মিতুর সঙ্গে। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে মেয়েটার জন্য। ও কিছু একটা গণ্ডগোল করতে যাচ্ছে ওর মাথায় ঠিক নেই। ও একগাদা গয়না নিয়ে এসেছে, নিজের কোমরে একটা পুঁটলি বেঁধে। সেগুলো আমার কাছে রেখে যেতে চায়। আমার কি রাখা উচিত?

গয়না নিয়ে এসেছে? কেন?

বললো তো, এত গয়না নিয়ে বিদেশে যাওয়া সেফ না।

তাতো ঠিকই। কিন্তু এইসব গয়না 888sport appয় রেখে এলোনা কেন? ব্যাংকে

রেখে আসা উচিত ছিল।

সেটাই তো কথা। বারবার জিজ্ঞেস করেছি, শামীমের সঙ্গে ওর ঝগড়া হয়েছে কিনা। ও তো না না বলছে। একবার শুধু বলে ফেললো, শামীম নাকি ওর কোন্ ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করছে।

এই রে! এ তো গণ্ডগোলের ব্যাপার।

ওতো বলছে, সেই মেয়েটা নাকি খুব ভালো। মিতুও তাকে পছন্দ করে, তাই ও কিছুদিন শামীমের থেকে দূরে থেকে দেখতে চায়, শামীম মেয়েটিকে বিয়ে করতে চায় কিনা। তাহলে ও মেনে নেবে!

এ তো বেশ জটিল ব্যাপার। মিতু এত সহজে ওর দাবি ছেড়ে দেবে, আগে ওকে দেখে তো তা মনে হয়নি। বরং শামীমকে আঁচড়ে কামড়ে নিজের কাছে ধরে রাখলেই সেটা স্বাভাবিক হতো। এর মধ্যে বোধ হয় আরও কিছু গণ্ডগোল আছে।

মিতু বলছে, শামীম অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে চায়, করুক। কিন্তু ওর নিজের গয়না কারুকে দেবে না। তাই সঙ্গে নিয়ে এসেছে!

স্বামীর চেয়েও গয়নার দাম বেশি হলো?

ওদের বিয়ে হয়েছে এগারো বছর। কিন্তু এখনো কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। সেটাও একটা অশান্তির কারণ হতে পারে। ওর শাশুড়ি গ্রাম থেকে এসে ওদের সঙ্গে থাকেন মাঝে মাঝে

সন্তান না হলে শুধু মেয়েরাই দায়ি হবে কেন? পরীক্ষা টরিক্ষা কিছু করিয়েছে? দত্তক নিতে পারে। কত অনাথ শিশু আছে।

সেসব কিছু বললো না। আর একটা ব্যাপার। দুবাইতে ওর ভাইটাই কেউ নেই। এমনিতে তো মেয়েটা খুব সরল। সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে কথা বলতে পারে না। মুখের রেখায় ধরা পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ও স্বীকার করেছে যে ওসব দেশে ওর কেউ চেনা নেই। ও যাচ্ছে চাকরি করতে এই রে! তা হলেও নিশ্চয়ই কোনো র‍্যাকেটে পড়ে গেছে। ওকে আটকাতেই হবে!

এবার স্বাতী হঠাৎ সুর বদল করে বললো, কেন, ওকে আটকাতে হবে কেন? মেয়েরা চাকরি করতে অন্যদেশে যেতে পারে না? আমি যদি তেহরানের সেই চাকরিটা শেষ পর্যন্ত পেতাম, তুমি আমাকে আটকাতে?

আমি হেসে বললাম, তুমি এর মধ্যে নিজেকে টেনে আনছো কেন? তুমি যখন চাকরির চেষ্টা করেছিলে, তখন ইরানের অবস্থা অন্যরকম ছিল। তখনো খোমেইনি আসেননি। খোমেইনি এসে গিয়ে ফতোয়া জারি করলেন, তুমি একে বিদেশিনী, মুসলমানও নও, তাই আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেলে না! এর মধ্যে আমার আপত্তির কোনো প্রশ্ন নেই। মিতু কী চাকরি

করবে?

ও ছ’মাস নার্সিংয়ের ট্রেইনিং নিয়েছে ইতোমধ্যে।

যতদূর জানি, সৌদি আরবে মেয়েদের আব্রু নিয়ে খুব কড়াকড়ি আছে। মেয়েদের ইচ্ছেমতন চলাফেরা করার স্বাধীনতাও নেই সেখানে মিতু টিকতে পারবে? তাছাড়া, এ দেশ থেকে, 888sport apps থেকে আড়কাটিরা চাকরির লোভ দেখিয়ে মেয়েদের মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যায়, তারপর তাদের দিয়ে দাসি বাঁদির কাজ করায়। এসব তুমি জানো না?

সকলেরই যে সেরকম হবে, তার কী মানে আছে? নার্সের কাজ তো সম্মানের কাজ

অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আছে ওর কাছে?

সেকথা জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু গয়নাগুলো কি আমার কাছে রাখা ঠিক হবে? অনেক গয়না, বেশ দাম। পরের জিনিস রাখতে ভয় করে

আমার মতে মোটেই ঠিক নয়। গয়না ফয়নার দায়িত্ব তুমি কেন নিতে যাবে? আসল ব্যাপারটা কী হয়েছে, তা জানা দরকার। তুমি 888sport appয় টেলিফোন করে দেখো না।

শামীমের ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই। মিতুর ঘুম ভাঙলে জিজ্ঞেস করতে হবে। তার আগে, বেলাল চৌধুরীর কাছ থেকে কিছু খবর পাওয়া যেতে পারে।

সেই সময়ে, অর্থাৎ আশির দশকে কলকাতার সঙ্গে 888sport appর টেলিফোন সংযোগ তেমন সুগম হয়নি। এক-একদিন হাজার চেষ্টা করেও কোনো লাইন পাওয়া যায় না।

বেলালকে ধরা গেল না। মিতু ইচ্ছে করে শামীমের ভুল নাম্বার দিল কিনা, কে জানে, সে নাম্বারে কোনো সাড়াশব্দই হলো না।

মিতুর কাছে চাকরির কোনো নিয়োগপত্র নেই। ওখানে গেলে নাকি সব

৫৮

ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার সৌদি আরবের ভিসা আছে? দেখি তো

পাসপোর্ট।

একেবারে নতুন পাসপোর্ট। সব পৃষ্ঠা সাদা। শুধু মাঝখানের একটা পাতায়, কী ভাষায় জানি না, দু’লাইন কিছু লেখা আছে। হাতের লেখা। তার সঙ্গে কোনো সিলমোহর কিংবা সরকারি ছাপ নেই।

এ আবার কী রকম ভিসা?

আমার মনে পড়লো, একবার ইওরোপ থেকে ফিরছি, ফ্র্যাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে আমাদের প্লেনে দুটি মেয়েকে তুলে দেওয়া হলো, তারা অঝোরে কাঁদছে। একজনকে বসানো হলো আমারই পাশে। এয়ার হোস্টেসকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, ওরা ফিলিপিনসের মেয়ে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কেউ ওদের বেইরুটে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ওদের কাছে ভিসা নেই দেখে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ ঠিক পরের প্লেনে তুলে দিয়েছে, সেটাই নিয়ম। এ প্লেনটা অবশ্য ফিলিপিন্‌সে যাবে না। থাই এয়ারলাইনস, যাত্রা শেষ হবে ব্যাংককে। সেখানেই বা এই মেয়ে দুটি নামবে কী করে, সে দেশেরও তো ভিসা নেই

আমার পাশের মেয়েটি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে। এক সময় সে হঠাৎ আমার কোর্টের হাতা চেপে ধরে খুবই ভাঙাভাঙা ইংরিজিতে যা বলতে লাগলো, অতি কষ্টে তার অর্থ উদ্ধার করা যায়। সে বলতে চাইছে, আমি যেন তাকে আমার দেশে নিয়ে যাই, সেখানে সে যে কোনো কাজ করতে রাজি। এমনকি বাসন মাজা, ঘর ঝাঁট দেওয়াও। আমি আশ্রয় না দিলে ব্যাংককে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে। অনেক অত্যাচার করবে।

আজকাল ভিসা-পাসপোর্টের এমন কড়াকড়ি যে পথের মধ্যে কোনো বিপন্না 888sport promo codeকে উদ্ধার করার কোনো উপায়ই নেই। ব্যাংককে নেমে আমাকে নিষ্ঠুরের মতন তার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে পালাতে হয়েছিল।

মিতুকে সে কাহিনী শোনালেও সে বিচলিত হলো না।

সে বললো, আমরা 888sport appsের সিটিজেন, সৌদি আরবে আমাদের ভিসা লাগে না।

এটা সত্যি কিনা আমি জানি না।

তবু আমার মনে হলো, এভাবে মিতুর যাওয়াটা একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। শামীমের সঙ্গে একবার কথা বলা অবশ্য দরকার। মিতু কি স্বামীকে কিছু না জানিয়ে চলে এসেছে?

রাত্তিরের দিকে তবু টেলিফোনের লাইন পাওয়া সহজ। আজ রাত্তিরে চেষ্টা করতে হবে, মিতুকে বললাম, তুমি আজকের দিনটা অন্তত থেকে যাও। প্লেনের টিকিট বদলাবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

মিতু তাতে রাজি নয়। তাকে আজই সন্ধ্যেবেলা যেতে হবে। কয়েক ঘণ্টা ধরে তাকে বোঝাবার চেষ্টা হলো। তার জেদ একেবারে তুঙ্গে, সে কোনো যুক্তিই মানবে না।

স্বাতী একবার গয়নার প্রসঙ্গ তুলতেই সে কেঁদে ফেললো ।

স্বাতীর হাঁটু চেপে ধরে বলতে লাগলো, গয়নাগুলো রাখতেই হবে। 888sport appয় সে বিশ্বাস করে কারুর কাছে রেখে আসতে পারেনি। তার এইসব গয়না যদি নীলোফার পরে, তা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। তাহলে তাকে আত্মহত্যা করতে হবে।

নীলোফার কে?

ঐ তো সেই মেয়েটা, হিস্ট্রিতে ফার্স্ট হইছে, যার জইন্যে শামীম একেবারে পাগল!

অর্থাৎ গয়নাগুলো নিরাপদে রাখার জন্যই মিতু আমাদের বাড়িতে এসেছে। অন্য কোনো টানে নয়।

দুপুরে ঝিঙে পোস্ত খাওয়ার জন্য মিতু ইচ্ছে প্রকাশ করলো। হিন্দুবাড়ির ঝিঙে পোস্তর মতন রান্না নাকি 888sport appয় হয় না। আরও দু’তিন রকম মাছও রান্না করলো স্বাতী, আরবদেশে মাছ পাওয়া যায় কিনা কে জানে।

সন্ধ্যেবেলা আমরা দু’জনে মিতুকে পৌঁছে দিতে গেলাম বিমানবন্দরে। আমার অন্য কাজ ছিল, তবু মনটা খটখট করছিল, মিতুকে এভাবে যেতে দেওয়ার জন্য খানিকটা অপরাধও বোধ করছিলাম।

কিন্তু একটি ছত্রিশ বছরের রমনীকে কি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে আটকে রাখা যায়? সে যে কোনো কথাই শুনবে না।

888sport appয় যতবার গিয়েছি, এই দম্পতিটিকে আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। মিতু আর শামীমের মধ্যে নানারকম ঝগড়াঝাটির যে খুনসুটি দেখেছি, তা প্রগাঢ় ভালোবাসারই লক্ষণ। শামীম শান্তপ্রকৃতির মানুষ, সে যে বিয়ে ভেঙে দিয়ে অন্য নতুন জীবনের ঝুঁকি নেবে, তা ঠিক যেন বিশ্বাস করা যায় না। অবশ্য মানুষের জীবনে অনেক অবিশ্বাস্য ঘটনাই তো ঘটে। অধিকাংশ মানুষের জীবনই নদীর মতন আঁকাবাঁকা, খালের মতন সরল নয়। কারুর কারুর জীবন আবার পাহাড়ি নদীর মতন হঠাৎ জলপ্রপাত হয়ে শূন্যে ঝাঁপ দেয়।

বিমানবন্দরগুলোতে শুধু যাত্রী ছাড়া অন্যদের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। প্রবেশদ্বারের কাছে গিয়ে সে হঠাৎ দৌড়ে ফিরে এসে কাঁদতে কাঁদতে আমাদের দু’জনের পা ছুঁয়ে কদমবুসি করলো। আর কোনো কথা না বলে আবার দৌড়েই ফিরে গেল ভেতরে।

দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, এক জায়গায় আরও জনাদশেক 888sport promo code জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মিতু ভিড়ে গেল তাদের মধ্যে । আবার আমার বুক কেঁপে উঠলো।

একা নয়, একটা দলের সঙ্গে সঙ্গে মিতু। এই মেয়েরা সকলেই নিশ্চয়ই কলকাতায় গয়না জমা রাখতে আসে নি। তবে 888sport app থেকে প্লেনে না উঠে কলকাতায় এলো কেন? 888sport promo code পাচারের কারবার হলে 888sport appয় ধরা পড়ে যেত।

কোনোক্রমে কি মিতুকে এখনো আটকানো যায় না? অসহায় বোধ করতে লাগলাম, আমার কী ক্ষমতা আছে! সরল মেয়েটা জেদ করে এ কোন সর্বনাশের পথে যাচ্ছে? শামীমের ওপরেও রাগ হলো খুব।

স্বাতী বললো, আমাদের কল্যাণ এয়ারপোর্টের ম্যানেজার না! সে হয়তো কিছু করতে পারে

কল্যাণকে এখন কোথায় পাবো? ভেতরে তো ঢুকতেই দেবে না ।

এই সময় একজন সিকিউরিটি অফিসার বেরিয়ে এসে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়ালো। তারপর বললো, আপনি স্যার, একটা অটোগ্রাফ দেবেন?

এত বছর ধরে লেখালেখি করার এইটুকুই যা সুফল। হঠাৎ হঠাৎ কেউ চিনতে পারে ।

দ্রুত সই করতে করতে বললাম, ভাই, এয়ারপোর্ট ম্যানেজারের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই, বিশেষ দরকার।

লোকটি বললো, আসুন আমার সঙ্গে। আপনাকে কে আটকাবে ? সৌভাগ্যবশত কল্যাণকে পাওয়া গেল তার ঘরে। সামনে অনেক লোক, তার দু’হাতে দুটো টেলিফোন।

কল্যাণ বললো, কী ব্যাপার সুনীলদা? আবার কোথায় যাচ্ছেন? কোন ফ্লাইট?

অন্য লোকদের অগ্রাহ্য করে বললাম, আমরা কোথাও যাচ্ছি না, শোনো, বিশেষ দরকার

সংক্ষেপে ঘটনাটা তাকে বুঝিয়ে বললাম।

তারপর বললাম, কল্যাণ, শিগগিরই পুলিশকে বলো, ওদের আটকাতে। নিশ্চয়ই গণ্ডগোল আছে।

কল্যাণ বললো, পুলিশের ওপর আমার কন্ট্রোল নেই। এটা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের সিকিউরিটির ব্যাপার। তবু দেখি চেষ্টা করে দেখছি—

টেলিফোনে সামান্য কথা বলেই কল্যাণ কাঁধ ঝাঁকিয়ে জানালো, রয়াল জর্ডন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এই মুহূর্তে টেক অফ করছে, আর কিছু করার নেই

আমার মনে হলো, সেই পাগলি মেয়েটাকে গভীর জলে বিসর্জন দেওয়া হলো!

ফেরার পথে গাড়িতে স্বাতী আর আমি অনেকক্ষণ চুপচাপ। মিতুর কথাই মনে পড়ছিল। কিন্তু মানুষের স্বার্থচিন্তাই সব সময় প্রবল, কখনো তা অবচেতনে থাকে, কখনো প্রকাশ্যে।

এক সময় স্বাতী বললো, মিতু অতগুলো গয়না আমার কাছে রেখে গেল। সবগুলোই ওর কি না, তা তো আমি জানি না। যদি অন্য কারুর, ধরো, ওদের বাড়িতে যত গয়না সব নিয়ে চলে আসে, তাহলে … আমরা … ধরো, এরপরে কেউ যদি 888sport app থেকে এসে আমাদের চার্জ করে … মিতু এরকম একটা অবৈধ, অন্যায় কাজ করে মিতু আমাদের বিপদে ফেলে যাবে? বিশ্বাস হয় না। আবার তার ওপর পুরোপুরি বিশ্বাসও রাখতে পারি না।