মার্চের সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলো-রাতগুলো

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু বন্দি হওয়ার আগে মার্চের দিনগুলোতে স্বৈরাচার একনায়ক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরের যে নাটক ও ষড়যন্ত্র করেছিল ফিরে দেখা সেই ঘটনাবলি।

লারকানায় বুনো হাঁস শিকার

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এলো ঐতিহাসিক গণরায়। কিন্তু এ-রায়কে দিনের পর দিন উপহাস করেছেন জেনারেল  ইয়াহিয়া।

সেদিন ছিল ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ। এদিন এই জেনারেল পাকিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণ করেন।। এর ঠিক দু-বছর পর আরেক ২৫ মার্চে তিনি বাঙালিদের গণহত্যার হুকুম দেন। সাতচল্লিশে দেশভাগ। ১৯৭০ সালে হলো পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচন।

 এটি ছিল দুই পাকিস্তানের ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচন। ১৬৯টি আসন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। এর মধ্যে ১৬৭ আসনে এক অকল্পনীয় বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে পাকিস্তান পিপলস পার্টি পেয়েছিল ৮১টি আসন। ৭ ডিসেম্বর এই আকাশছোঁয়া বিজয়ের ফলে পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল। এই অভাবনীয় বিজয় এনে দেয় কেন্দ্রে সরকার গঠনের অধিকার। কিন্তু কী এক অদৃশ্য সুতার টানে সেই সরকার আর গঠিত হয় না।

সেটা ছিল ১৯৭০ সালের ২০ ডিসেম্বর। তখন জুলফিকার আলী ভুট্টো লাহোরে এক জনসভায় ঘোষণা দিলেন, ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় আসনে বসতে রাজি নয়।’ চতুর ইয়াহিয়া এমনই একটি সুযোগ খুঁজছিলেন। তিনি একে দেশের জন্য এক বিরাট রাজনৈতিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করেন। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য ১২ জানুয়ারি 888sport appয় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি ভুট্টোর পিপলস পার্টিকে সংবিধান তৈরিতে অংশীদার হিসেবে রাখার কথা বলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সংবিধান রচনার অধিকার একমাত্র তাঁর দলের। কারো সাহায্যের দরকার নেই।

ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ইয়াহিয়া তিন সদস্যের একটি কমিটি করেন। ড. জি ডব্লিউ চৌধুরী ছিলেন এ-কমিটির অন্যতম সদস্য। তিনি তাঁর দ্য লাস্ট ডেজ অব ইউনাইটেড পাকিস্তান বইয়ে লেখেন, ১২ জানুয়ারি ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আওয়ামী লীগ যে নতুন শাসনতন্ত্র তৈরি করবে, এর একটি খসড়া তাঁকে দেখানোর জন্য অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইয়াহিয়াকে বলেন, এখন তাঁর একমাত্র কাজ হলো দ্রুত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকা। তিনি যদি সেটা করতে ব্যর্থ হন, তাহলে এর পরিণতির দায় তাঁকেই নিতে হবে। এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি ইয়াহিয়া। কিন্তু তারপরও বঙ্গবন্ধুকে জানান, তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ ঘোষণা করবেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইয়াহিয়ার দ্বিতীয় বৈঠক হয় ১৩ জানুয়ারি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় অবস্থান ইয়াহিয়াকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।

তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে আসেন। তারপর বুনো হাঁস শিকারের নামে ভুট্টোর লারকানার জমিদারবাড়িতে যান এবং ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলক এক গোপন বৈঠকে করেন। সে-বৈঠকে আরো ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খান, ইয়াহিয়ার প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা, পাঞ্জাব আর সিন্ধের পিপলস পার্টির দুই নেতা গোলাম মুস্তাফা খান ও মমতাজ ভুট্টো।

‘লারকানা ষড়যন্ত্র’ সম্পর্কে রাও ফরমান আলী লিখেছেন, ভুট্টোর তত্ত্বকেই সেখানে গ্রহণ করা হয়। তত্ত্বটি ছিল, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হবে। তারপর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের ‘আনুগত্য’ পরীক্ষা করবেন। শেখ মুজিব যদি ওই স্থগিতাদেশ মেনে নেন, তাহলে তিনি ‘অনুগত পাকিস্তানি’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। আর মেনে না নিলে প্রমাণিত হবে তিনি পাকিস্তানের প্রতি ‘অনুগত নন’। আওয়ামী লীগসহ অনেকেই সেদিন বুঝতে পেরেছিল যে, লারকানায় হাঁস শিকারের আড়ালে অন্য কিছু ঘটছে। লারকানার সেই গোপন বৈঠকেই চূড়ান্ত হয় – আওয়ামী লীগের কাছে কখনো ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে না।

তখন রাওয়ালপিন্ডিতে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতর। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে এই দফতরে সামরিক জান্তাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসে। বৈঠকে সেনাবাহিনীপ্রধান, জেনারেল পীরজাদা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান এসএ রিজভিসহ গুরুত্বপূর্ণ জেনারেলরা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় যে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হবে। দরকার হলে সব রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করে সামরিক আইন জারি করা হবে (অপারেশন ব্লিৎস)। প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারবে। তাতেও যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে সেনাবাহিনী চূড়ান্ত অ্যাকশনে যাবে।

তখন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক কমান্ডার ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান, গভর্নর ছিলেন ভাইস অ্যাডমিরাল এসএম আহসান। সিদ্ধান্ত হয়, তাঁদের অপসারণ করে সেখানে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে বসানো হবে। টিক্কা খানকে বলা হতো ‘বেলুচিস্তানের কসাই’, কারণ বেলুচিস্তান কখনো পাকিস্তানি শাসন মানতে চায়নি। এ-শাসনের বিরুদ্ধে তাঁরা প্রথম থেকেই আন্দোলন করে আসছিল। ১৯৫৮ সালে বেলুচিস্তানে এক সামরিক অপারেশনে টিক্কা খানের নির্দেশে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই তাঁকে ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ বলা হতো। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য টিক্কা খানকে আরো দুই ডিভিশন সৈন্য দেওয়া হবে।

এই সংকট নিয়ে সামরিক বাহিনীতে দুই ধরনের উদ্বেগ ছিল। প্রথমত, একটি কার্যকর কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দেশের অখণ্ডতা রক্ষা। দ্বিতীয়ত, সামরিক বাজেট, নিয়োগ, পোস্টিং, প্রমোশন ইত্যাদিকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে রেখে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখা। তাঁরা ছিলেন প্রায় এক যুগ ধরে আইয়ুবের কালের সুবিধাভোগী জেনারেল। কোনো গ্যারান্টি ছাড়া তাঁরা বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে ইচ্ছুক নন। তারপর বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে তাঁদের সন্দেহ অনেক বেশি। আর ক্রমাগত এ-সন্দেহ উসকে দিচ্ছেন ভুট্টো। এরপর যা চলছিল তা হলো, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধ করার প্রস্তুতি – সামরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রহসনও চালানো।

পরিকল্পনামতো ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ 888sport appয় নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে 888sport appসহ পূর্ব পাকিস্তান। হাসান আসকারি রিজভি তাঁর দ্য মিলিটারি অ্যান্ড পলিটিকস ইন পাকিস্তান বইতে মন্তব্য করেছেন, ‘মূলত ২ মার্চ ১৯৭১ থেকে প্রমাণিত হয় যে অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণা একটি বিভ্রম মাত্র। শেখ মুজিব পরিণত হন পূর্ব পাকিস্তানের কার্যত শাসকে। তার প্রকাশ ঘটে ৭ মার্চের অবি888sport app download for androidীয় ভাষণে।’

ফেব্রুয়ারির শেষদিকে জেনারেল ইয়াকুব ও গভর্নর আহসান রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে যান। ফিরে এসে ২৬ ফেব্রুয়ারি জেনারেল ইয়াকুব উচ্চপদস্থ সব সামরিক কর্মকর্তাকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন।

বৈঠকে তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করবেন। তাই খুব কম সময়ের নোটিশে যেন সামরিক আইন জারি করা যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন মহকুমা ও জেলায় পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের পাঠানো হয়।

কিন্তু ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছিল। সেজন্য সামরিক জান্তা সামরিক আইন জারির সাহস পায়নি। সে-সময়ে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। সর্বত্র জনতার ঢল জান্তাদের  কাঁপিয়ে দেয়। তাঁরা রাওয়ালপিন্ডিকে জানিয়ে দেন, 888sport appর পরিস্থিতি এমন যে, রাজনৈতিকভাবে ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে সমাধান সম্ভব নয়। ইয়াহিয়াও শেষ পর্যন্ত বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।

হৃদয়ে জন্ম নিল 888sport appsের মানচিত্র …

ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ৩ মার্চ সংসদের অধিবেশন বসবে বলে ইয়াহিয়া কথা দিয়েছিলেন; কিন্তু সে-কথা তিনি রাখেননি। ১ মার্চ অধিবেশন স্থগিত করেন। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কবর রচিত হয় পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রেই।

নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু ভুট্টো-ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রে বারবার ভেস্তে যায় তা। এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ পাকিস্তানিদের চরম রাজনৈতিক দরকষাকষি ও সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা।

মাত্র দুদিন পরই পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছিল। অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিল পূর্ব বাংলার মানুষ। এ-জনপদে সেদিন অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা ছিল হিরোশিমার বোমার চেয়ে ভয়ংকর। আরো একবার ওয়াদা ভঙ্গ করল পাকিস্তানিরা। এটা ছিল চরম বিশ্বাসঘাতকতা। দেশের মানুষ সেদিন প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। জ্বলে ওঠে 888sport app শহর। জনতার হাতে বাঁশের লাঠি, রড, হকিস্টিক থেকে শুরু করে পাতাবিহীন নারকেলের ডগা পর্যন্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু তখন পূর্বাণী হোটেলে জরুরি মিটিংয়ে। জনতার কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান। স্বাধীনতার দাবি। পোড়ানো হলো পাকিস্তানের পতাকা। দ্রুত ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল জনতার বিদ্রোহ।

এ-সময় হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু। শান্ত হলো জনগণ। তিনি ২ মার্চ 888sport appয় ও পরদিন সারাদেশে বিরতিহীন ধর্মঘট পালনের কথা বলেন। আরো জানিয়ে দেন, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তখন থেকেই শুরু হয় ২৫ দিনব্যাপী গণবিক্ষোভের সূচনা। বাঙালিরা এবার তাদের সাহস ও প্রতিরোধের ক্ষমতা দেখাবে। ৩ মার্চ সর্বাত্মক হরতাল পালিত হলো। আওয়ামী লীগের নির্দেশে সামরিক বাহিনীর খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা হলো।

এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি এমভি সোয়াত জাহাজে সৈন্য ও গোলাবারুদ এসেছে। ৩ মার্চ রাতে সৈন্য-গোলাবরুদ নামানোর চেষ্টা করা হয়। শ্রমিকরা চারদিকে এ-খবর ছড়িয়ে দেন। তখন স্থানীয় জনতার সঙ্গে পশিচম পাকিস্তানি সৈন্য ও নাবিকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের একটি ইউনিট বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। পরে তাঁদের সাতজনকে কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এই ঘটনা বিক্ষোভের তীব্রতা আরো বাড়িয়ে দেয়।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৩ মার্চ থেকে শুরু হলো প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বিকাল পর্যন্ত বিরতিহীন হরতাল।

এই সময় থেকে ব্যাংকের দরজা, সরকারি অফিস-আদালত, ডাক-তার, বিমান, ট্রেনসহ বাংলার প্রায় সব জায়গায় সরকারি কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি পতাকার বদলে উড়তে থাকে কালো পতাকা। রেডিও-টেলিভিশনে পাকিস্তানের জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে দেশাত্মবোধক গান বাজতে থাকে। সবাই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মানছে। 888sport app স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন জায়গায় জনসভা হয়। এক সুযোগে ৩৪১ জন কয়েদি 888sport app জেলের তালা ভেঙে স্টেডিয়ামের জনসভায় আসেন। কয়েদির কাপড় পরে তারা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এমন দৃশ্যও কর্তৃপক্ষকে অসহায় দৃষ্টিতে দেখতে হয়।

অতিরিক্ত সৈন্যও গণবিদ্রোহ দমনে যথেষ্ট ছিল না। সামরিক বাহিনীর মূল শক্তি ছিল পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস। তাদের মধ্যেও ছিল চরম অসন্তোষ। এই বিদ্রোহ বন্ধ করার শক্তি ইয়াহিয়ার নেই। তাই তিনি রাজনৈতিক সমাধানের কথা না ভেবে সামরিক অভিযানকে অনিবার্য করে তুললেন। টিক্কা খাক তাকে বললেন, ‘আমাকে আরো ক্ষমতা দিন। আমি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এদের ঠান্ডা করে দেব।’ ইয়াহিয়ার কাছে এটাই মহামূল্যবান যুক্তি মনে হলো। তিনি কখনোই ভাবতে পারতেন না যে, তাঁর দুর্ধর্ষ সেনাদের বিরুদ্ধে বাঙালিরা রুখে দাঁড়াতে পারে। ৫ মার্চ তিনি পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করলেন। এবার তাঁর কৌশল হলো আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ। এই সুযোগে সামরিক অভিযান চূড়ান্ত করা। ইয়াহিয়া যখন জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করলেন, তখনই এ-অঞ্চলের মানুষ বুঝে গিয়েছিল, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কিছুতেই বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দেবে না। সেইদিনই বিক্ষুব্ধ বাঙালির হৃদয়ে জন্ম নিল 888sport appsের মানচিত্র।

ভুট্টোর কাছে ছিল ষড়যন্ত্রের কলকাঠি …

৬ মার্চ ইয়াহিয়া এক ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় তিনি ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার তারিখ নির্ধারণ করেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সেদিনই সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুকে টেলিফোন করেন। বঙ্গবন্ধু জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি তাঁর পূর্ণ মর্যাদা রাখবেন বলে কথা দেন। কিন্তু এটা ছিল ইয়াহিয়ার এক ভয়ানক কুটচালের অংশ। রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করার জন্য তিনি এটা বলেননি, বরং ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সামরিক আক্রমণের জন্য যে-সময়টুকু তার দরকার ছিল, সেটা পাওয়ার জন্য তিনি এ-নাটক করেছেন।

এদিকে বাঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণ দেবেন। এটা নিয়ে ইয়াহিয়াসহ সামরিকজান্তা উদ্বিগ্ন।। মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা তার আ স্ট্রেনজার ইন মাই ওউন কান্ট্রি গ্রন্থে লিখেছেন, ‘তাঁর ভাষণের সময় আমি আগ্নেয়াস্ত্র, ট্যাংকবহরসহ আমার বাহিনী নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে প্রস্তুত থাকব। শেখ মুজিব যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বসেন, তাহলে আমি আমার অধীন সব শক্তিকে মার্চ করিয়ে দেব। যদি দরকার হয়, 888sport appকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেব।’ এ-পরিকল্পনা তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছেও দেন।

এদিকে প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর ওপর স্বাধীনতা ঘোষণার চাপ বাড়ছে। পাকিস্তানিদের দীর্ঘ সময়ের স্বৈরাচারী শাসনে এদেশের মানুষ দিশেহারা। বাংলার মাটিতে থাকার অধিকার তারা চিরতরে হারিয়েছে। এত হুমকি ও প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণে ছিল মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ণ প্রস্তুতির চূড়ান্ত আহ্বান।

৬ মার্চ ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন, ‘আমি পরিষ্কার বলে দিতে চাই, যা-ই ঘটুক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বে রয়েছি, ততক্ষণ পাকিস্তানের পরিপূর্ণ সংহতি নিশ্চিত করব।’ বঙ্গবন্ধু শর্ত দিলেন, সেনাবহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, হত্যাকাণ্ডের বিচার ও সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তা না হলে তিনি সংসদে যাবেন না। আবার ভুট্টোর কাছে ষড়যন্ত্রের কলকাঠি। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ছয় দফা বাদ দিতে বলেন। আওয়ামী লীগ ও তার পিপলস পার্টির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বলেন। মূলত এই ইস্যু নিয়ে ইয়াহিয়া পানি ঘোলা করছিলেন।

নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার জন্য ২৭ জানুয়ারি ভুট্টো প্রথম 888sport appয় আসেন। আসার আগে তিনি কয়েক দফা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। সেবার তিনি প্রায় চারদিন 888sport appয় ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে অনেক দেনদরবার হয়। ছয় দফার বিরুদ্ধে নানা যুক্তি দিলেন। কিন্তু তারা কী চান, কোন ক্ষেত্রে ছয় দফার পরিবর্তন চান বা কী ধরনের সংবিধান চান, এর কিছুই বললেন না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘোরতর মাতবিরোধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ তার যুক্তি মানছে না বা আলোচনা ভেস্তে গেছে, এমন কিছুও বললেন না। সে-যাত্রায় আবার দেখা হবে বলে চলে গেলেন। তার এই নীরবে চলে যাওয়ার মধ্যে একটা বড় অশুভ ইঙ্গিত ছিল।

একটি সবুজ পিঙ্গল বর্ণের হেলিকপ্টার …

৭ মার্চের ভাষণের পর বাংলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে আসে। বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি হয়ে ওঠে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সদর দফতর। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনী প্রস্তুত ছিল না। এরই মধ্যে পূর্ব বাংলায় আনা হয় জেনারেল টিক্কা খানকে। তিনি একাই সামরিক বাহিনী ও গভর্নরের দায়িত্বে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে বাংলায় ২৪ বছরের পাকিস্তানি  শাসনের  প্রায়  অবসান  হলো।  সেনাছাউনি  ছাড়া কোথাও তেমন কেন্দ্রের শাসন নেই। কেন্দ্রের শাসন যতটুকু ছিল, এর সঙ্গে পূর্ব বাংলায় বঙ্গবন্ধুর একটি সমান্তরাল সরকার চালু হলো, যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাঙালি মালিকানাধীন দুটি ব্যাংকে টাকা জমা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে অগ্রাহ্য করা সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সহিংসতা ছাড়া এ-ধরনের প্রতিবাদ ছিল রিবল। এটা দেখে খান আবদুল ওয়ালি খান বলেছিলেন যে, এমন অহিংস প্রতিবাদ দেখে গান্ধীজিও বিস্মিত হতেন।

৮ মার্চ শেয়ারবাজারের দাম পড়ে গেল। পাকিস্তানিদের মধ্যে চরম অনিশ্চয়তা। কী হবে তাদের কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের। তখন বাঙালিদের কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়েও দায়িত্ব দিতে পারেনি তারা। সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তাঁর এক লেখায় উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর এক বাঙালি বন্ধু তাঁর দুই সন্তানকে 888sport appয় নিয়ে আসেন। তারা যেন নিজের চোখে 888sport appsের জন্মের ইতিহাস দেখে।

পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানিরা আতঙ্কিত। বিশেষ করে সাতচল্লিশের দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। সে-সময় লাখ লাখ বিহারিকে সব হারিয়ে পথে নামতে হয়। বাঙালিরা তাদের আশ্রয় দেয়। এরাই পরে বাঙালিদের শত্রু মনে করে তাদের সঙ্গে চরম রূঢ় আচরণ করে। তারা বাংলায় কথা বলত না। এদেশকে নিজেদের দেশ মনে করত না। তাদের শাস্তি না হয়ে পারে না – এমন  ভয় তাদের মনে ছিল। তারা বুঝে গেল, এদেশে আর তারা থাকতে পারবে না। সে-সময় আবার পাকিস্তানে যাওয়ার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য সবাই ভিড় করল এয়ারপোর্টে। তখন পাকিস্তান সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে লোক পারাপার শুরু করল।

সময়টা তখন এমন ছিল যে, নানাভাবে পাকিস্তানিদের অপমানিত হতে হয়, স্বয়ং টিক্কা খানও বাদ যাননি। তিনি গভর্নর হাউসে উঠেছেন; কিন্তু তখনো তাঁর শপথগ্রহণ হয়নি। ৯ মার্চ তিনি শপথগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য প্রধান বিচারপতি বদরুদ্দীন আহমদ সিদ্দিকীকে বলা হলে তিনি শপথ পাঠ করাতে অস্বীকৃতি জানান।

বঙ্গবন্ধুকে সমর্থন জানাতে ৭ মার্চ লাখো বাঙালি রেসকোর্স ময়দানে এসেছিল – যার যা আছে তা-ই নিয়ে। সেদিন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের ময়দানের আশপাশে থাকার সাহস ছিল না। শুধু জনতার মাথার ওপর দিয়ে উড়ছিল একটি সবুজ পিঙ্গল বর্ণের হেলিকপ্টার। এর উদ্দেশ্য ছিল দিগন্তপ্লাবিত জনতাকে ভয় দেখানো, বিচলিত করা। বিপরীতে তারাই ভয় পেয়েছিল। হেলিকপ্টার থেকেই জনসমুদ্রের কঠিন প্রতিবাদ দেখেছিল তারা। এই জনসমুদ্র যদি তাদের তাড়া করে, তাহলে ট্যাংক, কামান, বন্দুক নিয়ে পালানোর পথ পাবে না। এভাবেই চলতে থাকে পাকিস্তানপর্বের শেষ দিনগুলো।

সেই ফোনকলটি আর আসেনি …

আলোচনার ভান করে সময় নষ্টের লক্ষ্যে ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান 888sport appয় আসেন। সেদিন সন্ধ্যায়ই তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। সে-বৈঠকে সামরিক অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়। এয়ার কমোডর জাফর মাসুদ সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিতে থাকলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তাঁকে থামিয়ে দেন। তারপর দ্রুত মিটিং শেষ করেন।

১৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার আড়াই ঘণ্টার বৈঠক হয়। বঙ্গবন্ধু গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে বৈঠকে যান। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে ছিল 888sport appsের মানচিত্রখচিত পতাকা ও দলীয় প্রতীক নৌকা। আলোচনাশেষে ইয়াহিয়া বারান্দার সিঁড়ি পর্যন্ত এসে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানান। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ভবনের প্রধান ফটকে পৌঁছলে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আলোচনা হয়েছে, আরো হবে। কাল সকালে আরেকটি বৈঠক। আপাতত আর বেশি কিছু বলার নেই।’

১৭ মার্চ বাংলার চলমান অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া দ্বিতীয় বৈঠক হয়। এদিনও আলোচনা চলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। প্রথমদিনের মতোই আলোচনাশেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আলোচনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তবে আলোচনার পরবর্তী সময়ও ঠিক হয়নি।’ এদিকে ভুট্টোকে 888sport appয় আসতে বলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া।

কিন্তু সে-সময় বিভিন্ন সেনানিবাসে চলতে থাকে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি। ১৭ মার্চ সন্ধ্যায় টিক্কা খান তাঁর উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও ১৪ ডিভিশনের জিওসি জেনারেল খাদিমের সঙ্গে বসেন। টিক্কা খান তাঁদের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা ঠিক করে পরদিন দেখাতে বলেন।

১৮ মার্চ রাও ফরমান 888sport app ও খাদিম দেশের বাকি অংশের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করে ঠিক্কা খানকে দেখান। তারা এ-অভিযানের নাম দেন ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

১৯ মার্চ সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো আলোচনা হয়। একান্ত এ-আলোচনায় তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের মধ্যে দেড় ঘণ্টা কথা হয়। বৈঠকশেষে বঙ্গবন্ধু নিজ বাসভবনে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পরদিন সকালে আবার বৈঠক হবে। তবে সে-বৈঠক একান্ত হবে না। দলের শীর্ষনেতারা তাঁর সঙ্গে থাকবেন। এর আগে সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে তাঁর দলের ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা আলোচনায় বসবেন।

২০ মার্চ প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও ইয়াহিয়ার উপদেষ্টারা আলোচনায় বসেন। এ-আলোচনায় আওয়ামী লীগ থেকে অংশ নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামাল হোসেন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান যোগ দেন। বৈঠকটিতে সামরিক আইন প্রত্যাহার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন – এই তিনটি বিষয় প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।  তারপর ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা রূপরেখা তৈরি করা হয়; কিন্তু বাদ সাধেন ভুট্টো। তাঁর প্রস্তাব হলো, প্রথমে জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করা হোক, অথবা বঙ্গবন্ধুকে আলোচনার জন্য আরো সময় দেওয়া হোক। এদিকে ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো 888sport appয় আসেন।

নির্বাচনের পর এটা ছিল তাঁর দ্বিতীয় সফর। সে-সময় ভুট্টোর সঙ্গে ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল জেনারেল এ রহিম মিয়া, মাহমুদ আলী কাসুরি, গোলাম মোস্তফা, মমতাজ আলী ভুট্টোসহ মোট ১২ জন উপদেষ্টা। ২১ মার্চই তিনি আলোচনায় যোগ দেন। এদিন সরকারি দলের প্রতিনিধি কর্নেল হাসান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ঘোষণার একটি খসড়া বিবেচনার জন্য আওয়ামী লীগকে দেন। ২১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ খসড়াটি ভালোভাবে দেখে। তারপর ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক বসে। তাতে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন।

তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। ইয়াহিয়ার পক্ষে এস এম আহমেদ জানান যে, কিছু সংশোধন করে ছয় দফা কার্যকর করা যায়; কিন্তু লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা প্রস্তাব করেন, রাজস্ব ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এস এম আহমেদের আরো বসা উচিত। আওয়ামী লীগ এই প্রস্তাব মানতে অসম্মতি জানায়। কারণ তারা মনে করছিল, এটা ইয়াহিয়ার সামরিক অভিযান চালানোর একটা চাল; সেজন্যই তারা আলোচনা দীর্ঘ করতে আগ্রহী। কিন্তু তারপরও রাজি হয় আওয়ামী লীগ। ২৩ মার্চ পর্যন্ত এসব আলোচনা হয়। এখন আলোচনার খসড়া চূড়ান্ত করতে হবে। সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগের পক্ষে ড. কামাল হোসেন এবং ইয়াহিয়ার প্রতিনিধিদলের পক্ষে বিচারপতি কর্নেলিয়াস ২৪ তারিখ রাতে খসড়া চূড়ান্ত করবেন। কিন্তু আবারো বাধা হয়ে দাঁড়ান লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা। তিনি বলেন, আরো আলোচনা হোক। কাল সকালে তাঁরা আবার বসবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, পরদিন সকালে কখন বসা হবে! পীরজাদা বলেন, তিনি এটা ফোনে জানিয়ে দেবেন; কিন্তু সেই ফোনকলটি আর আসেনি।

গভীর ষড়যন্ত্র ও হেঁয়ালির নাট্যমঞ্চ গভর্নর হাউস

একটি আশ্চর্যের বিষয় হলো, এমন প্রহসনের আলোচনা, তাও ২৫ মার্চ পর্যন্ত ভেঙে যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেষ পর্যন্ত আলোচনায় ছিলেন। তিনি সবসময় সংলাপে আস্থা রেখেছেন। ভেবেছেন, হয়তো কিছু হতে পারে। সারাজীবন তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। একপর্যায়ে তিনি এও বলেছিলেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পর্কে আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি। আমি আশা করি প্রেসিডেন্ট এখন তা ঘোষণা করবেন।’ কিন্তু সামরিক বাহিনীর লোকেরা যে-কোনো মুহূর্তের নোটিশে গণহত্যার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে – নিঃশব্দে অপেক্ষা করছে সাঁজোয়া, ট্যাংক, কামান ও গোলাবারুদ নিয়ে। ইয়াহিয়া খান ৩০ হাজার ফুট ওপরে আকাশে বসে সাফল্যের হাসি হাসছেন। কারণ গত কিছুদিন ধরে ছলচাতুরী, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের খেলায় তিনি সফল হয়েছেন। রাজনীতিবিদদের তিনি পছন্দ করেন না। অথচ তাঁদের সঙ্গেই বিরতিহীন আলোচনা করেছেন। এসব বৈঠকের ব্যর্থতা তাঁর কাছে কোনো বিষয় নয়। কারণ এটি অনুষ্ঠিত হয়েছেই ব্যর্থতার জন্য। ১৫ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার গভর্নর হাউসটি ছিল রাজনীতির এক গভীর ষড়যন্ত্র ও চরম হেঁয়ালির নাট্যমঞ্চ। ২৪ মার্চ বেলা ১১টায় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করেন। বঙ্গবন্ধুও নিশ্চিত হয়ে যান যে, পাকিস্তান সরকার কোনোভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তারা রক্ত ঝরাবেই।

এরপর আসে ২৫ মার্চ। সন্ধ্যা ৭টায় জেনারেল ইয়াহিয়া কাউকে কিছু না জানিয়ে অত্যন্ত গোপনে 888sport app ছাড়েন। বাংলায় রেখে যান ভয়ংকর হিংস্র নরপশুদের। এরা তাঁর পাকিস্তানে পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করে। তারপর রাত এগারোটার দিকে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমন জানা যায় যে, ২৫ মার্চ 888sport app থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার সময় ইয়াহিয়া খান বিমানবন্দরে জেনারেল টিক্কা খানকে বলেছিলেন, ‘ওদের শেষ করে দাও!’ পরবর্তী সময়ে বাঙালি নিধনকালে অনেক পাকিস্তানি সেনা অফিসারের মুখে এর পুনরুক্তি শোনা গিয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে এই ষড়যন্ত্র ও হেঁয়ালির।

বাঙালির রক্ত দেখতে চেয়েছিলেন ভুট্টো

একটা রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বিভিন্ন দলের নেতারা 888sport appয় এসেছিলেন। তাঁরা মনে করছিলেন, একটা সমাধান হলেও হতে পারে। ২৪ মার্চের মধ্যে এসব নেতার প্রায় সবাই পাকিস্তানে ফিরে যান। স্বয়ং ইয়াহিয়াও ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় 888sport app ছাড়েন। তিনি যেন পথে ভারতীয় বিমানবাহিনীর দ্বারা আক্রমণের শিকার না হন সেজন্য তাঁর করাচি পৌঁছানোর পর পূর্ব বাংলায় গণহত্যা শুরু করার নির্দেশ দিয়ে যান। এমনভাবে সব চূড়ান্ত করে তিনি 888sport app ত্যাগ করেন।

কিন্তু যিনি এতদিন দাবার ঘুঁটি চেলেছেন সেই জুলফিকার আলী ভুট্টো ও তাঁর কয়েকজন নেতা তখনো 888sport appয়।

জানা যায়, ভুট্টো বাঙালির রক্ত নিজ চোখে দেখতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ভুট্টো ২৫ মার্চ রাতের 888sport sign up bonus মনে করেন এভাবে, সেদিন রাত সাড়ে দশটায় ডিনার সেরে তিনি ঘরে যান। এক ঘণ্টা পর গুলির শব্দে জেগে ওঠেন। হোটেল থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা মিলিটারিদের অপারেশন দেখেন। ইংরেজি দৈনিক পিপল পত্রিকার অফিস ধ্বংস হতে দেখেন। তাঁর ভাষায়,  এটি সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিত। তিনি ভাবছেন, তাঁরা কি পৌঁছে গেছেন কোনো অমোচনীয় প্রান্তে। সময় কি এই ক্ষতের উপশম করবে। পাকিস্তানের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে? এসবের উত্তর যদি তিনি জানতেন! তিনি সেদিনের কথা আরো মনে করেন যে, শাসক যদি ২৫ তারিখ রাতে ব্যবস্থা না নিত তাহলে আওয়ামী লীগ পরদিন 888sport appsের স্বাধীনতা ঘোষণা করত। বাঙালিদের সশস্ত্র প্রস্তুতি গ্রহণ, শক্তির সমাবেশ ও রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড ছিল। ২৭ মার্চের হরতালের উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাজের পর 888sport appsের স্বাধীনতা ঘোষণা করা।

এদিকে প্রায় সারারাত পাকিস্তানিদের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখে ২৬ মার্চ সকালে তড়িঘড়ি 888sport app ছাড়েন ভুট্টো। করাচিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘থ্যাংক গড, পাকিস্তান হ্যাজ বিন সেভড।’ ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানিদের গণহত্যা থেকে শুরু সর্বাত্মক যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলা থেকে মুছে যায় পাকিস্তানের ইতিহাস।

ভুট্টোর লারকানার ড্রিঘ লেকে হাঁস শিকারের পাশাপাশি কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল সে-সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায় না। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের ধারণাটা সেখানেই রাজনৈতিক ও সামরিক অনুমোদন পেয়েছিল। শুরুতে এ-অভিযানের নাম ছিল ‘ব্লিৎজ’। পরে আরো পরিবর্ধন করে নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

এই দুনিয়ায় আমাদের আর দেখা হবে না

সে-সময় 888sport appয় পাকিস্তানের অন্য দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন সরদার শওকত হায়াৎ, মাওলানা মুফতি মাহমুদ, খান আবদুল ওয়ালি খান প্রমুখ। তাঁরা বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। পাকিস্তানি লেখক আহমেদ সেলিমের পাকিস্তানের কারাগারে শেখ মুজিবের বন্দিজীবন বই থেকে জানা যায়, ২৪ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক আবেগঘন টেলিফোন আলাপের কথা মনে করে সরদার শওকত বলেন যে, একাত্তরের ২৪ মার্চ তাঁরা 888sport app ছাড়েন। তার আগে বিদায় নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে ফোন করেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখনো আলোচনায় ছিলেন। শওকত হায়াৎদের মনে আশা জেগে ওঠে। তাঁরা ভাবছিলেন যে, আলোচনা দীর্ঘ হলেও ভালো কিছু হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের হতাশই হতে হয়। দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু তাঁদের ফোন করে বলেন যে, তিনি হেরে গেছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁদের সেদিনই 888sport app ছাড়তে বলেন। তিনি প্রায় নিশ্চিত ছিলেন যে, ইয়াহিয়া সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবেন।

বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘শওকত ভাই, এই দুনিয়ায় আমাদের বোধ হয় আর দেখা হবে না, তবে আমি নিশ্চিত পরের দুনিয়ায় আমরা একত্রে থাকব। যেমন আমরা ছিলাম পাকিস্তানের সৃষ্টিতে।’ বঙ্গবন্ধুর এমন কথায় শওকত হায়াৎ সেদিন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে  খান আবদুল ওয়ালি খান তাঁর শেষ সাক্ষাতের কথা 888sport app download for android করে বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন যে, তিনি ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলেছেন। নীতিগতভাবে সবাই একমত হয়েছেন। এখন খুঁটিনাটি বিষয় ঠিক করে নিলেই হলো। তাঁদের যেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট চলে যেতে দেন। উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, ওয়ালি খান প্রথম যে ফ্লাইট পান, তাতে করেই এই দুর্ভাগা দেশ ত্যাগ করুন।’

ওয়ালি খান বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি এত হতাশ কেন? বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘গতকাল দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জেনারেলরা মিটিং করেছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে অস্ত্রের জোরেই তাঁরা পথ করে নেবেন।’ বঙ্গবন্ধু ওয়ালি খানকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘ওয়ালি খান, আমাদের জন্য দোয়া করুন। ওই লোকেরা আমাদের জনগণের রক্ত চায়। আর ঝরানোর মতো বাঙালির প্রচুর রক্ত তারা পাবে। এটাই হয়তো আমরা শেষবারের মতো পরস্পরকে দেখছি।’ বঙ্গবন্ধু যখন এ-কথা বলছিলেন, তখন তাঁর চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত।

সরদার শওকত হায়াৎ খান, মাওলানা মুফতি মাহমুদ, খান আবদুল ওয়ালি খান, কাইয়ুম খান, মমতাজ আলী ভুট্টিসহ আরো নেতা ২৪ মার্চ 888sport app ছাড়েন।

করাচি পৌঁছে ইয়াহিয়ার প্রতারণামূলক ভাষণ

করাচি পৌঁছে ২৬ মার্চ রাতে ইয়াহিয়া পাকিস্তানের জনগণের জন্য ভাষণ দেন। সে-ভাষণে তিনি বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁর দল আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের শত্রু মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মুজিবের অপরাধের শাস্তি না হয়ে পারে না।’ তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিব ও তাঁর দল তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আইনসিদ্ধ কর্তৃপক্ষকে অস্বীকার করেছে। তারা পাকিস্তানের পতাকা অপমানিত করেছে। জাতির পিতার ছবি কলঙ্কিত করেছে। তারা একটি সমান্তরাল সরকার পরিচালনার চেষ্টা করেছে। তারা নিরাপত্তাহীনতা, বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আমাদের লাখ লাখ বাঙালি ভাই ও অন্য যারা পূর্ব পাকিস্তানে বসতি গড়েছে সবাই বাস করছে সন্ত্রস্ত অবস্থায়। পূর্ব পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সব ধরনের উপহাস ও অপমানের শিকার হতে হয়েছে। সপ্তাহকাল আগেই শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিতাম। কিন্তু আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম ঘটনা এমনভাবে সামাল দিতে যাতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমার ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা বিঘ্নিত না হয়। এই লক্ষ্য অর্জনে আমার আগ্রহ থেকে আমি একের পর এক অবৈধ কাজ সহ্য করেছি। একই সঙ্গে একটি যৌক্তিক সমাধানে উপনীত হতে সম্ভাব্য সব উপায় যাচাই করে দেখেছি।

 ইয়াহিয়া আরো বলেন যে, মুজিব গঠনমূলকভাবে তাতে সাড়া দেননি। এমনকি তিনি যখন 888sport appয় তখনো সরকারের কর্তৃত্ব লঙ্ঘন করেছে আওয়ামী লীগ। তাই মুজিবকে তিনি শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন না। তাঁরা পাকিস্তানের শত্রু। পূর্ব পাকিস্তানকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। মুজিব দেশের ঐক্য ও সংহতিতে আঘাত করেছে। কতিপয় ক্ষমতা-উন্মত্ত দেশপ্রেমবর্জিত লোকের দ্বারা সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা, দেশকে ধ্বংস করা, আমরা মেনে নিতে পারি না।

লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফের সাংবাদিক ও সে-সময়ের দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধি ডেভিড লোশাকে মনে করেন, এই ব্যতিক্রমী, অসৎ ও প্রতারণামূলক বক্তৃতা পাকিস্তানের সংহতির মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেয়। এ-ভাষণের উদ্দেশ্য হলো, বাঙালি জনগণকে নিধন করার গোপন ও অপ্রকাশিত সত্য আড়াল করা। বাংলায় গণহত্যার যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা। তিনি জনগণকে বোঝাতে চেয়েছেন, সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রের বিধিবদ্ধতা প্রতিষ্ঠার আদেশ দিয়েছিলেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরেও তিনি আন্তরিক। এসবই ছিল তাঁর প্রতারণা।